Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নিষিদ্ধ – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প347 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    হুমায়ূন আহমেদ : পুরুষতন্ত্রের সম্রাট

    হুমায়ূন আহমেদ : পুরুষতন্ত্রের সম্রাট

    হুমায়ূন আহমেদের যে ক্যানসারটি হয়েছিল, সেই একই ক্যানসার আমার মায়ের হয়েছিল। আমার মা মারা যান সাতান্ন বছর বয়সে, হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন তাঁর চৌষট্টি বছর বয়সে। এক দশকের বেশি হল আমার মা মারা গেছেন, আর এই সেদিন মারা গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার মা নামি দামি কেউ ছিলেন না, সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের ভয়ংকর জন প্রিয় লেখক। হুমায়ূন আহমেদএর মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। মার কথা মনে পড়েছে, একই রকম অসুখে তিনিও ভুগেছিলেন।

    নাহ, নিউইয়র্কের স্লোন কেটেরিং বা বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা করার সামর্থ আর সুযোগ কোনওটাই আমার মার ছিল না। একরকম বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা গেছেন। আমার মা দেশের লক্ষ লক্ষ দুর্ভাগা মায়ের মত এক মা। অসুখের শেষ অবস্থায় যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়, যখন তাদের বাঁচাবার আর সময় থাকে না, আমার মা তেমন এক মা। কোলন ক্যানসার বড় হয়ে হয়ে খাদ্যনালী বন্ধ করে ফেললে অথবা লিভারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে গিয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা করলে কেউ হয়তো তাদের দয়া করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, তার আগে নয়।

    যতদিন বেঁচে থাকি আমার মার জন্য আমি কাঁদব, আরও শত শত মার জন্য কাঁদবো, চিকিৎসার অভাবে যারা মৃত্যুকে বরণ করতে বাধ্য হয়। কাঁদবো দারিদ্র আর। পরাধীনতার শেকলে বন্দি বাংলার সহস্র মার জন্য। কাঁদবো সেই লক্ষ কোটি অসহায় মানুষের জন্য, প্রচুর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে যাদের অন্ধকারে পড়ে থাকতে হয়, যাদের কোনও স্বপ্নই সফল হতে দেওয়া হয়না।

    হুমায়ূন আহমেদকে ভুগতে হয়নি, কারণ তিনি পুরুষ। তাঁকে হাঁটতে হয়নি কোনও অমসৃণ পথে, যে পথে প্রতিটি মেয়েকেই হাঁটতে হয়। হুমায়ূন আহমেদের জন্য সম্ভ বত আমার কষ্ট হবে না দীর্ঘদিন। কারণ হুমায়ূন আহমেদ জীবনে যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন, যা ইচ্ছে করেছেন, তাই করেছেন। রাজা হতে চেয়েছেন, রাজা হয়েছেন। বাদশাহী উপভোগ করতে চেয়েছেন, উপভোগ করেছেন। পৃথিবীর খুব কম মানুষই জীবনে এত ভোগ বিলাস করার সুযোগ পান। খুব কম মানুষই নিজের যাবতীয় স্ব প্নকে সফল করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এই জীবনে কে কার চেয়ে বেশি যশ আর খ্যাতি লাভ করতে পারে, তার একটা ভীষণ প্রতিযোগিতা চলে। হুমায়ূন আহমেদ সেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের হাজার মাইল পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে ছিলেন। তার নাগাল কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর মতো সৌভাগ্যবান মানুষ আমার জীবনে আমি আর দেখিনি। তিনি চলে গেছেন। এরকম সবাই যাবে, কেউ দুটো বছর আগে যাবে, কেউ দুটো বছর পরে। এই সম্ভাবনা আমার মনে হয় না খুব বেশি ছিল যে বেঁচে থাকলে তিনি নতুন ধরনের কোনো লেখা লিখতেন বা সাহিত্য জগতকে বিশাল কিছু দান করতেন। আমরা মানুষটিকে হারিয়েছি, এটাই যা ক্ষতি, তাঁর চলে যাওয়ায় সত্যি বলতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতের কোনও ক্ষতি হয়নি।

    হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমি পড়তাম আমার কিশোরী বয়সে। যখন থেকে আমি বাংলায় এবং অন্যান্য ভাষায় উন্নতমানের সাহিত্য পড়তে শুরু করেছি, হুমায়ূন আহমেদ পড়া আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি, এবং যখন থেকে আমার ভালো নাটক দেখার রুচি গড়ে উঠলো, আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখা। কিন্তু কী করে লক্ষ লক্ষ মানুষ হুমায়ূন আহমেদের শত শত রম্যরচনা পড়ে গেছে যুগের পর যুগ? এর উত্তর হতে পারে, তারা রম্য-রচনারই পাঠক, রম্য-রচনা ছাড়া আর কোনও রচনার যোগ্য নয় তারা, অথবা পাঠক হিসেবে তাদের বিবর্তন ঘটেনি, অথবা অল্প শিক্ষিত বলে হুমায়ূন আহমেদের বই আর নাটকের ছোটো ছোটো সুখ দুঃখ আর সহজ সরল কৌতুক বোঝা তাদের জন্য বড় সুবিধের। বাংলাদেশের জনগণ যদি এত বিপুল পরিমাণে অশিক্ষিত আর অর্ধশিক্ষিত না হত, হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে এত প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করা সম্ভব হত না। বাংলার প্রকাশকরা, হুমায়ুনের বন্ধু সাহিত্যিক সুনীলগঙ্গোপাধ্যায়-সমরেশমজুমদাররা বছরের পর বছর প্রবল চেষ্টা করেও পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে হুমায়ূন আহমেদকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেননি। এর কারণ সম্ভবত একটিই, ওই রাজ্যে শিক্ষিতের মানটা বাংলাদেশের তুলনায় সামান্য বেশি।

    হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় তিনি বেজায়রকম বিখ্যাত হওয়ার আগে। তাঁর যে গুণটি আমার প্রথমেই চোখে পড়েছে, তা হল তিনি গল্প বলে ঘরোয়া আসর জমিয়ে রাখতে পারেন। অসাধারণ স্টোরি টেলার। একবার তিনি আমাদের ময়মনসিংহের বাড়িতে হঠাৎ চলে এলেন। বললেন, নেত্রকোণা গিয়েছিলেন, ঢাকায় ফেরার পথে ভাবলেন আমার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। আমাদের বাড়িটা কল্পনা করে নিয়েছেন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে একটা লাল বাড়ি। সেই কল্পনার বাড়িটা তিনি খুঁজছি লেন, যত লাল বাড়ি আছে নদীর পাড়ে, দরজা ধাক্কিয়ে বাড়ির লোকদের ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আছি কি না। শেষে নাকি তাঁর রিক্সাওয়ালাই নিয়ে এসেছে, ঠিক বাড়িটিতে সারাদিন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। একাই গল্প বলে গেলেন, বাড়ির সবাই মুগ্ধ হয়ে হুমায়ূন আহমেদর গল্প শুনে ছিল। আমার বিশ্বাস তিনি যদি সারা রাতও ঠিক এভাবে গল্প বলে যেতেন, সবাই মুগ্ধ হয়ে ওভাবেই শুনতো আর থেকে থেকে ঘর ফাটিয়ে হেসে উঠতো। হাসাতে জানতেন। অনেক গুণ ছিল হুমায়ূন আহ মেদের। ইস্কুলের সিলেবাসের বাইরে কোনও বই পড়ার অভ্যেস যাদের নেই, সেসব মানুষকে তিনি তাঁর বই পড়িয়ে ছেড়েছেন। এমন অনেকে আছে জীবনে একটিই গল্পের বই পড়েছে, গল্পের বইটি হুমায়ূন আহমেদের। একসময় ভাবা হত, হুমায়ূন আহমেদ পাঠক তৈরি করেছেন। তাঁর বই পড়ে পড়ে পাঠকের বই পড়ার অভ্যেস গড়ে উঠবে, বোধোদয় হবে, রুচি পাল্টাবে, তখন আর হুমায়ূন আহমেদ না পড়ে অন্য লেখকের বই পড়বে। ভাবনাটি ভূল ছিল। হুমায়ূন আহমেদ পাঠক তৈরি করেছেন বটে, তবে সেই পাঠককে জীবনভর নিজের বই পড়ার জন্যই তৈরি করেছেন, অন্য কারও বই পড়ার জন্য নয়। তাঁর পাঠককূল খুব কমই বিবর্তিত হয়েছে।

    হুমায়ূন আহমেদের নেইকে নাই লেখাটা আমাকে বরাবরই বড় পীড়া দিয়েছে। জানিনা পরে তিনি নাই এবং আরও কিছু ভাষার দোষ কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন কি না। অর্ধশিক্ষিত পাঠকদের জন্য পৃথিবীর সব দেশেই কিছু লেখক আছেন, তাঁদের কাজ চটুল বই লেখা। তাঁদের প্রায় সবারই মান হুমায়ূন আহমেদের চেয়ে অনেক ওপরে। স্টিফেন কিং, টেরি প্র্যাটচেট। বাংলা ভাষার লেখক শংকর এর চটি বইয়ের মানের কথাই ধরা হোক না কেন। ভাষার তুলনা চলুক। শংকর অনেক ওপরে। ভাষায় দক্ষতা না থাকলে ভালো সাহিত্যিক হওয়া যায়না। ঘরোয়া আসর মাতিয়ে রাখতে পারা বা প্রকাশকের চাপে এক সপ্তাহে বা দুরাত্তিরে একটা বই লিখে ফেলতে পারা বা তিন দশকে বইয়ের সংখ্যা তিনশর বেশি করে ফেলতে পারা– এসব বড় সাহিত্যিক হওয়ার গুণ নয়। আজ অবশ্য অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক ইত্যাদি বলছেন। বাংলা ভাষা এবং এর সাহিত্যকে এই অপমানটি কি না করলেই নয়? ম্যাজিক রিয়ালিজম-এর কথাও উঠছে। আহ, ওরা যদি জানতো ম্যাজিক রিয়ালিজম ঠিক কাকে বলে! গরু ছাগলকে দিয়ে কথা বলানো ম্যাজিক রিয়ালিজম নয়।

    আরও একটি ব্যাপারে আমি বিস্মিত হই। হুমায়ূন আহমেদের মতো বুদ্ধিমান লোক স্ত্রী পুত্র কন্যা ফেলে গোঁড়ালির বয়সী একটা মেয়েকে কেন বিয়ে করেছিলেন। দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি দেখেছি, তা আমাকে ততটা বিস্মিত করেনি, তা হল মিডিয়ার মুখ বুজে থাকা। মিডিয়া চিরকালই ক্ষমতার দাস। খুব কম মিডিয়াই নিরপেক্ষ হওয়ার এবং সত্য কথনের সাহস দেখাতে পারে। আমি বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হাড় মজ্জা অবধি চিনি। ওই সমাজে আমি বড় হয়েছি, ওই সমাজ আমার সঙ্গে কারও সম্পর্কের বা বিয়ের গুজব শুনেই হায়েনার মতো দৌড়ে এসেছে আমাকে আক্রমণ করতে। আমার বিরুদ্ধে বিস্তর মিথ্যে কথা রটিয়ে মিডিয়ার বিস্তর আমোদ জুটেছে। আমিও জনপ্রিয় লেখক ছিলাম এককালে। আমি যদি আমার স্বামী সন্তান সংসার ত্যাগ করে আমার পুত্রের কোনও বন্ধুকে বিয়ে করে তাকে নিয়ে কোনও বাগান-বাড়ি বানিয়ে বাস করতে শুরু করতাম, লোকে আমাকে আক্ষরিক অর্থে ছিঁড়ে ফেলতো, আক্ষরিক অর্থেই কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখতো রাস্তায়, আগুনে পুড়িয়ে মারতো অথবা পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতো অথবা জ্যান্ত কবর দিয়ে দিত। কারও আমার বই পড়ার তো প্রশ্ন ওঠে না। শুধু আমি নই, অন্য কোনও মেয়েকেও একই রকম করতো এই নষ্ট সমাজ। কোনও অন্যায় না করেও দেশ হারানোর শাস্তি আমি পোহাচ্ছি, অন্যায় করলে পরিণতি কী হত, তা আমি বেশ অনুমান করতে পারি। নারীর মুক্তির জন্য আর মানবাধিকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে গেছি, নিরন্তর লিখে গেছি। আর আমাকেই কিনা দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য জঘন্য অন্যায় যারা করেছে, যারা আমার মাথার দাম ঘোষণা করেছে, তাদের দিব্যি দুধ কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে, আর দেশ থেকে জন্মের মতো তাড়ানো হয়েছে আমাকে আজ উনিশ বছর আমাকে দেশে ফিরতে দেয় না কোনও সরকার। মুখ বুজে মজা দেখছে দেশের তথাকথিত জ্ঞানী গুণী পণ্ডিত এবং মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করা হিপোক্রিটস। লেখক গোর ভিডাল বলেছিলেন, ভালো কাজের সবসময় একটা শাস্তি পাওনা থাকে। মিডিয়া যদি পুরুষতান্ত্রিক না হত, আমার বিরুদ্ধে সরকারের অগুনতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো। যেহেতু সমাজ পুরুষতান্ত্রিক, মিডিয়াও পুরু যতান্ত্রিক, সে কারণে হুমায়ূন আহমেদ সমালোচিতও হন না, নিন্দিতও হন না বত্রিশ বছরের সংসার ভেঙে সন্তানের বন্ধুকে বিয়ে করার পরও। মিডিয়া তাঁকে নিন্দিত হওয়ার কোনও সুযোগই দেয়নি। শুরু থেকে শেষ অবদি তাঁকে সম্বোধন করে গেছে নন্দিত লেখক বলে। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং মানুষ প্রচণ্ড পুরুষতান্ত্রিক বলে হুমায়ুন আহমেদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে চরমতম নিন্দার কাজ করেও জীবনভর নন্দিত থেকে যাওয়া।

    হুমায়ূন আহমেদ নিজে ছিলেন পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাঁর ছিল এত আদর। সমাজের নারী-বিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র আরও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর। গুলতের্কিন হুমায়ুন আহমেদের শোক সভায় এসে কেঁদেছেন, এই কান্নার জন্য তাঁকে মহিয়সী রমণী খেতাব দেওয়া হচ্ছে। স্বামী লোচ্চামি, বদমাইশি যা খুশি করুক, তুমি স্বামীকে নিরবধি শর্তহীন ভালোবেসে যাও। স্বামী সাত জনের সঙ্গে শুয়ে বেড়াক, হাজার হলেও পুরুষ তো, মেয়ে হয়ে জন্মেছো, তুমি ভাই সতী সাধ্বী থেকে যেও। স্বামী তোমাকে লাথি দিলেও তুমি স্বামীর জন্য কেঁদে বুক ভাসিও। স্বামী তোমাকে ছেড়ে চলে গেলেও, অন্য কারও সঙ্গে বাকি জীবন রং তামাশা করলেও স্বামীর যে কোনও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িও, সমাজ তোমাকে বাহবা দেবে। আমরা ভোগ করবো, তোমরা আমাদের ভোগের বস্তু হবে, বা আমাদের ভগবান জ্ঞান করবে, বা আমাদের স্তুতি গাইবে, আমাদের মঙ্গলের জন্য জীবনপাত করবে। এই না হলে তোমরা আর মেয়ে কেন? হুমায়ুন আহমেদের সন্তানের বয়সী স্ত্রী নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তুচ্ছ করে স্বামীর সেবা করে গেছে, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য, তাকেও অনেকে বাহবা দেবে। কেউ কেউ আবার কোনও ত্রুটি খুঁজে পেলে তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেবে। স্বামী-দেবতার সেবায় একটু এদিক ওদিক হলে যে রক্ষে নেই!

    কদিন আগে আমার এক বন্ধু হুমায়ুন আহমেদের একটা লেখা, তাঁর তিন কন্যাকে নিয়ে, পড়তে দিল আমাকে। কন্যাদের সম্ভবত প্রায় দশ বছর পর তিনি দেখেছেন, আমি ভেবেছিলাম পিতা হয়ে যে অন্যায় তিনি করেছেন তার জন্য ক্ষমা চাইবেন। আবেগে কাঁপবে তাঁর কলম। কিন্তু তা নয়, পুরো লেখাটিতেই নিজের গুণগান গেয়েছেন। তিনি নিজে খুব মেধাবী, তাঁর জিন পেয়েছে কন্যারা, সে কারণে তাঁর। কন্যারাও মেধাবী। আমি তাজ্জব! হৃদয় বলে কিছু কি ছিল না হুমায়ুন আহমেদের। দেখতে শুনতে গ্রামীণ, সরল সোজা। কিন্তু ভেতরে খুব কঠিন একটি মানুষ। নির্বি কার। নিজের সুখ আনন্দ ছাড়া দুনিয়ার অন্য কিছু থোড়াই হয়তো কেয়ার করেছেন। জনপ্রিয়তা তাঁকে আকাশে বসিয়ে দিয়েছিল, তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান না করলেও বড় তুচ্ছ কিছু একটা জ্ঞান করেছিলেন, ধরার মানুষগুলোকেও হয়তো তা-ই করে ছিলেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন, কটা টাকা দেশের মানুষের দারিদ্র দূর করতে, অশিক্ষা, কুশিক্ষা দূর করতে খরচ করেছিলেন? ক্যানসার হাসপাতাল করবেন, ক্যানসার না হলে বলতেন? নিজের শরীরে বড় রোগ ধরা পড়লে ভয়ে ভয়ে সব লোকই মানত করে, এই গড়বো, সেই বানাবো।

    যে কন্যারা অভিমানে দূরে সরে ছিল, কারণ তাদের পিতা তাদের গড়ে তোলার চেয়েও বৃদ্ধ বয়সে এক কন্যাসম কিশোরীর সঙ্গে স্বপ্নের ফানুস ওড়ানোটাকেই যৌক্তিক বলে মনে করছিলেন, সেই কন্যারা অসুখের খবর শুনে কাছে এলে মিডিয়া খুশি হয়, মানুষ খুশি হয়। ক্ষমতাবানের সামনে সকলে নত হয়। সে বেঁচে থাকলেও হয়, সে মরে গেলেও হয়। পুরুষের ক্ষমতা বলে কথা। সাফল্যের মুখ পুরুষের মুখ। যাদের একসময় পায়ে ঠেলে দিয়েছিলে তুমি, তারাই এখন তোমার পায়ের কাছে এসে কাঁদছে। কারণ তুমি পুরুষ, তুমি ধনী, তুমি জনপ্রিয়, তুমি রাজা, তুমি বাদশাহ, তুমি সম্রাট, তোমার সাত খুন মাপ।

    হুমায়ূন আহমেদ অনেকটা ঈশ্বরের মতো। নিজের কারণে নয়, ঈশ্বরভক্তদের কারণেই ঈশ্বর টিকে আছেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফরাসি প্রেমিক – তসলিমা নাসরিন
    Next Article নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    লজ্জা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার মেয়েবেলা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    উতল হাওয়া – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    দ্বিখণ্ডিত – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    কিছুক্ষণ থাকো – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ভালোবাসো? ছাই বাসো! – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }