Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীটফল

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প189 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩১-৪০. কাছাকাছি এসে থমকে গেল

    ৩১.

    প্রায় হাসতে হাসতেই আসছিল দুজনে, কাছাকাছি এসে থমকে গেল।

    বাড়ির সামনে বাপী মোটরবাইকে, তার পিঠে সংলগ্ন হয়ে নীরার ছোটভাই সোমন। স্টার্ট দিচ্ছে সবে।

    এ আবার কী অদ্ভুত দৃশ্য।

    শানুই বন্দনার আগে এগিয়ে এল, কী ব্যাপার রে ছোড়দা?

    বাপী তার নিজস্ব অগ্রাহ্যের ভঙ্গিতে বলল, ব্যাপার বিশেষ কিছু না। তোর মহারানি একটা ক্যাডাভ্যারাস কাণ্ড করে বসে আছে, এখুনি ব্লাড দরকার–আচ্ছা পরে কথা হবে।

    বন্দনা ব্যাকুল ভাবে বললেন, খোকা কই? খোকা?

    সে তো আগেই চলে গেছে।

    বেরিয়ে গেল গর্জন তুলে।

    কিন্তু ভবদেব?

    বন্দনা বাড়ি ঢুকে এসে ছুটলেন দোতলায়। নেই সেখানে। মরতে মরতে ছাতের ঘরে উঠলেন, হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ব্যাপার কী বল তো? বাপী–

    ভবদেব ক্লান্ত গলায় বললেন, আমায় একটু একা থাকতে দাও।

    .

    হ্যাঁ ভবদেবের একটু একা থাকার দরকার।

    একটু আগে এ বাড়ির অন্য আর একটা ঘরে যে অভাবিত নাটকটা অভিনীত হয়ে গেছে, ভবদেব সেটাকে আর একবার দেখতে চান। একটি একটি করে শুনতে চান তার ডায়লগ।

    টেপ ক্যামেরা ইত্যাদি আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক যন্ত্রপাতিই ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ভবিষ্যতের জন্যে যথাযথ তুলে রাখতে পারে, কথা, ভঙ্গি, দৃশ্য। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৃতিও কি এই শক্তিগুলো মানুষের মধ্যে ভরে রাখেনি চিরকালীন নিয়মে?

    না রাখলে ভবদেব সেই নাট্য খণ্ডকে আবার এমন যথাযথ দেখতে পাচ্ছেন কী করে?

    ভবদেব দোতলায় নিজের ঘরে ছিলেন।

    বন্দনা আর শানু বেরিয়ে যাবার পর বাড়িটা খালি খালি লাগছিল। দুপুরে তো ঘুমোতে পারেন না।

    বাপী তো কোনও সময়ই বাড়ি থাকে না, টিপু তার নিজের ঘরে গুঁজে বসে আছে, সাড়াশব্দ নেই।

    খোকা নামের বয়স্ক ছেলেটিও নাকি আছে বাড়িতে, কারণ আজ বারটারবিবার। ভবদেবের তো এখন সব বারই রবিবার, বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও প্রায় তাই। শানুর পড়াশোনায় ইতি পড়ে গেছে। টিপুর ব্যাপারটা হাতের বাইরে, বাপী পরের চাকর নয়, কাজেই তার কোনওদিনটাই ছুটির বার নয়। একমাত্র ভবদেবের এই বড়ছেলেটির সূত্রে ছুটির বার শব্দটা কানে আসে, কিন্তু সে আর কতক্ষণ? শুধু সকালটুকু। নটা দশটা বাজলেই তো খোকা স্নানটান সেরে সেজেগুজে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি রওনা দেয়। ছুটির দিন মাত্রেই সেখানে হোল ডে প্রোগ্রাম।

    আজই হঠাৎ দেখা গেছে খোকা বাড়িতে। যদিও নীরা দিন পাঁচ-ছয় আগে থেকেই বাপের বাড়ি।

    কোনও এক সময় যেন জিজ্ঞেস করেছিলেন, নীরাকে একবারও দেখছি না যে?

    বন্দনা সংক্ষেপে বলেছিলেন, বাপের বাড়ি গেছে।

    ওঃ।

    ভবদেব বোধ করি কী একটা অনুমান করে বলেছিলেন, এখন ওখানেই থাকবে বুঝি?

    এর পর বন্দনার ব্যাজার গলা থেকে যে উত্তরটি এল, সেটা আর সংক্ষিপ্ত নয়, কী করে জানব? বউয়ের বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি যাওয়া আসার খবর শাশুড়ি জানবে, সে যুগ আর আছে নাকি? জিজ্ঞেস করাটাও তো অপরাধ। আমারই ছেলে মুখনাড়া দিয়ে বলবে, মেয়ে মা বাপের কাছে যাবে তার আবার কেন কী বৃত্তান্ত কী মা? নজরবন্দি আসামি নাকি? তাদেরই তো জানি কোথাও যেতে হলে থানায় জানিয়ে যেতে হয়। তবে, এরপরও আমি জিজ্ঞেস করতে যাব কবে আসবে? কদিন থাকবে? দেখলাম কাঁধে বাহারি থলি ঝুলিয়ে নীচে নামল, বুঝলাম শাড়িজামা নিয়েছে, আজ আর ফিরছে না। বেরোবার কালে শুধু বলে গেল, একটু ওবাড়ি যাচ্ছি। ব্যস। তারপর তো দেখছি এই তিনদিন এল না। অথচ খোকা দিব্যি নিশ্চিন্দি। বুঝলাম ঠিক করাই ছিল। আবার হঠাৎ কোনদিন দেখব, সন্ধেবেলা খোকার সঙ্গে বাড়ি ফিরছে।

    একটানা এতখানি উত্তর শোনার পর ভবদেব কোনওদিন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাননি। না স্ত্রীকে, না পুত্রকে।

    কাজেই–আজ যখন বন্দনা আর শানু চন্দনার বাড়ি যাবার জন্যে একটু সকাল সকাল খেয়ে নিতে বললেন, তখন বড়ছেলেকে টেবিলে এসে বসতে দেখেও, জিজ্ঞেস করে বসেননি, আজ ও বাড়ি গেলি না?

    দেখলেন, খেয়ে নিয়ে ঘুমোতে গেল খোকা। ভাবলেন, এই বয়েসে যে কী করে পড়ে পড়ে দুপুরে ঘুমোতে পারে।

    ভবদেবের তো রবিবার দুপুরগুলোই ছিল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করার, খেলা করার, বই পড়ার দিন।

    যাক, বাড়িটা সুনসান ছিল তখন।

    ভবদেব তাঁর বাবার খাতাখানা খুলে পাঠোদ্ধার করছিলেন।

    চোখটা আটকে গেল একটা জায়গায়, ঘরবাড়ির ইট কাঠ ছাদ দেয়ালের যদি তার দেখা সব ঘটনা, সব দৃশ্য, এই এখনকার মতো টেপ করে রাখবার ক্ষমতা থাকত, তা হলে–সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসটা ধরা থাকতে পারত। এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন আমার বাবা ভূদেব সেন। তিনি পঁয়তাল্লিশ ইঞ্চির বিলিতি মিলের লাট্ট মার্কা ধুতি পরতেন। গায়ে দিতেন মার্কিনের বেনিয়ান! ভারী সুখী আর ভারী রাজভক্ত প্রজা ছিলেন বাবা। ডোবা পুকুরে ভরা এই ঢাকুরে তখন একটা পাড়াগাঁ। তবু বাবার সুখের সীমা ছিল না।

    আমার মায়ের গায়ে কখনও শেমিজ জামা দেখিনি, ঘোমটা ছাড়াও দেখিনি। আমি সত্যদেব সেন বংশের জ্যেষ্ঠ সন্তান, আমার সেই পরম রাজভক্ত আর শান্তিপ্রিয় বাপের ছেলে হয়ে আমি হলাম স্বদেশি। হ্যাঁ, তখন ওই ছিল আমাদের পরিচয়। স্বদেশি। যাদের ধ্যান জ্ঞান মন প্রাণ ব্রিটিশ বিতাড়ন।

    বাবা বলতেন, এ হচ্ছে বেইমানি। নেমকহারামি। যারা অন্নদাতা, যারা তোদের সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের হেতুকারক, তাদের উৎখাত করতে উঠেপড়ে লেগেছিস তোরা? ধর্মে সইবে? ওদের রাজ্যপাট, ওদের সৈন্যবল, ওদের গোরাপুলিশ, তোরা পারবি ওদের সঙ্গে?

    ধর্মে সয়েছে কিনা জানি না, তবে ওদের তাড়ানো হয়েছে অবশ্যই। কিন্তু সত্যি কি তা হয়েছে? ওরা সশরীরে চলে গেছে হয়তো, কিন্তু ওদের অশরীরী আত্মাটাকে এদেশের বুকের ওপর চাপিয়ে যায়নি কি? সেই অশরীরীরা ক্রমশ কবন্ধ মূর্তি ধরে দেশের বুকে সমাজের বুকে প্রেতনৃত্য করে চলেছে না?

    পড়তে পড়তে একটু হেসেছেন ভবদেব, বয়েস হলে সেন্টিমেন্টটা একটু বাড়ে লোকের। বাড়ে ভাষার অলংকার।

    পাতা উলটোতে উলটোতে আবার এক জায়গায় চোখ আটকে গেল।…

    কিন্তু আমি কি দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত স্বদেশি থেকেছি? তা তো থাকিনি। আমি হঠাৎ যেন কোথায় ধাক্কা খেয়েছিলাম, পরবর্তী স্বদেশিদের সঙ্গে সুর মেলেনি। ফিরে এসেছি।

    এসে দেখলাম ছোট ভাইয়েরা ইতিমধ্যে বিবাহ করে সংসারী হয়ে বসেছে। আমি সংসার থেকে বিরত থাকতে চেয়েছিলাম। এ পরিস্থিতিতে টোপর পরাটা হাস্যকর। তবু–মার নির্বোধ সেই হাস্যকর কাজটাই করে বসলাম।

    ভাল করেছি কি ভুল করেছি তা জানি না। তবে ভূদেব সেনের বংশের একটি ধারা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছি বটে। তবে সংসার না করলে তো আমি সুষমার মতো একটি মেয়েকে দেখতে পেতাম না। সেটাই লাভ। কিন্তু বড় তাড়াতাড়ি চলে গেল সুষমা। আমার মতো পরমায়ু থাকলে দেখতে পেত তার পৌত্রীরা বিলেত আমেরিকায় গিয়ে ফ্রক পরে, কোট পেন্টুল পরে সিগারেট খাচ্ছে।

    কী তাড়াতাড়িই ঘটছে এসব।

    কিন্তু এগুলো তো নিঃশব্দে ঘটেনি। অথচ ইতিহাসটা নিঃশব্দ। তাই ভাবি, দেয়ালের ইট কাঠে যদি এই এখনকার টেপ-এর মতো যন্ত্র-টন্তু কিছু বসানো থাকত।

    পড়তে পড়তে ভবদেব যেমন কৌতুক অনুভব করছিলেন, তেমনি বিস্ময়ও।

    বাবার চেহারাটা মনে পড়ছে, ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে সর্বদা কাতর, গরমকালেও গলায় মাথায় মালার জড়ানো, মাথার কাছের জানলাটা বলতে গেলে সিল করা থাকত।

    যেখানে সেখানে কিছু কিছু সাদা পাতা। মনে হচ্ছে আর বুঝি লেখা হয়নি, হঠাৎ আবার এক জায়গায় কিছুটা লেখা!

    সেদিন ওরা এসেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রাপ্য পাওনা, ভাতা বাগাবার কৌশল বাতলাতে। শেষ অবধি আমায় বোকা বলে রাগ করে চলে গেল। আজ আবার জীবনকালী এসেছিল। আমার থেকে বয়েসে দু তিন বছরের বড়, তবু এখনও খুব অ্যাকটিভ আছে। সোজা তিনতলায় উঠে এসেছে।

    দেখলাম খুব উত্তপ্ত। ঢুকেই বলে উঠল, ব্রিটিশ আমলে দেশের সাধারণ লোকেরা এর থেকে অনেক সুখে ছিল।

    শুনে বুকটা ধক করে উঠল। আমি ওর হাতটা প্রায় খামচে ধরে বললাম, জীবনকালী, তোমার পিঠের জামাটা ওঠালে, এখনও তাদের বুটের দাগ দেখা যাবে।

    বলল, জানি। কিন্তু এখন? সত্যদেব, এখনও বুটের ঘা খাচ্ছি বুঝলে? কোথায় জানো?

    বুকের উপর একটা থাবড়া মারল, এই এখানে।…বুঝলে? এখন আমি বিশ্বাস করতে শুরু করছি, তখন সাধারণ গেরস্ত লোকেরা, যেটাই দেশের বৃহৎ অংশ, অনেক সুখে ছিল। তাদের নিশ্চিত ছিল, নিরাপত্তা ছিল, ভবিষ্যতের গ্যারান্টি ছিল।

    আর লোকগুলো? লোকগুলো ছিল অনেক অনেস্ট, অনেক নির্ভীক।

    এখন স্বাধীন দেশের নাগরিকদের চোখের সামনে একটা খুন হতে দেখলেও, রুখে দাঁড়াবার সাহস নেই। মানুষ সততা শব্দটার বানান ভুলে যাচ্ছে সত্যদেব!…পোকা ধরে গেছে, ঘুণ ধরে গেছে।…দেশের মানুষগুলো এবার থেকে চোর-জোচ্চর ঠকবাজ, স্বার্থপর খুনে গুণ্ডা হয়ে যাবে। এই যদি স্বাধীনতার ফল হয়, তা হলে

    উত্তেজনায় বেদম কাশতে শুরু করল। জল খেতে দিলাম। আবার বলল, বলতে পারো, নবাবি আমলের সঙ্গে তফাতটা কোথায় এখন? কর্তারা বিলাসিতার স্রোতে ভাসছেন, আর গরিবরা ফুটপাথে পড়ে মরছে। এই স্বাধীনতার জন্যে আমরা বুটের ঘা খেয়েছিলাম সত্য? স্বাধীনতা মানে কিছু লোকের আখের গোছাবার মওকা? স্বাধীনতা মানে দেশের মানুষগুলোকে উদ্ধত অবিনয়ী অসভ্য আর ছোটলোক করে তোেলা? স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচার?

    তুমি এই নির্লজ্জতা আর স্বেচ্ছাচারিতাকে যদি স্বাধীনতা বলে সুখ পেতে চাও, পাও সত্য! আমি নয়।

    যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিল তেমনি ঝড়ের বেগে চলে গেল!

    এরপর আর কোনও লেখা নেই।

    .

    ৩২.

    ভবদেব ভাবলেন, এটা কতদিন আগের লেখা! সাল তারিখ তো দেখছি না। বাবার থেকে তিন চার বছরের বড় সেই বন্ধুটি কি এখনও বেঁচে আছেন? যদি এখনও থেকে থাকেন, তা হলে

    অতঃপর সেই নাটকটা শুরু হয়ে গেল।

    হঠাৎ টেলিফোনটা বেজে উঠল।

    উঠে এলেন তাড়াতাড়ি।

    বাড়ির সকলের সুবিধের জন্যে যন্ত্রটাকে সিঁড়ির সামনের দেয়ালে রাখা আছে। ফোন ধরে হ্যালো, কে বলছেন? বলেই ভবদেব চমকে উঠলেন। পার্কসার্কাসের একটা নার্সিং হোম থেকে বলছে, সুদেব সেনকে জানান নীরা সেন আজই অপারেশনের জন্যে চলে এসেছেন। ঘণ্টা দুই পরেই অপারেশন হবে। ভবদেব একটা গভীর শূন্যতার গহ্বরে পড়ে গেলেন, এ কোন্ নীরা সেন? কোন্ সুদেব সেন?

    রংনাম্বারে দুটো নাম মিলে যাচ্ছে?

    ব্যাকুলভাবে, প্রায় বোকার মতো বলে উঠলেন, কত নাম্বার চাইছেন? হ্যাঁ, এই নাম্বারই তো।

    কিন্তু অপারেশন কীসের? কার?

    উত্তরটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়ে বললেন, ধরুন ডেকে দিচ্ছি।

    ডেকে দিতে হল না, টেলিফোনের আওয়াজে নিজেই চলে এসেছে সুদেব। এসেই রিসিভারটা চেপে ধরল।

    চাপা গলায় বলল, কে? পরেশ? হ্যাঁ আমি বলছি। আজই কেন? কী আশ্চর্য! আচ্ছা যাচ্ছি এখুনি।

    রিসিভারটা নামিয়ে রেখে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, আমায় এক্ষুনি বেরোতে হবে–

    জানি!

    ভবদেবের গলা থেকে যে আওয়াজটা বেরোল সেটা তাঁর নিজের কাছেই অপরিচিত।

    অতঃপর নাটকের সংলাপ এইরূপ।

    দাঁড়াও! জবাবটা দিয়ে যাও।

    জবাব? জবাব মানে?

    মানেটা আমিই জানতে চাইছি। তোমার সহজ সুস্থ স্ত্রীর হঠাৎ অপারেশনটা কীসের?

    জেনে আপনার কোনও লাভ হবে না। ওই কীসব মেয়েলি ব্যাপার।

    থামো! চুপ কর। ভবদেব সেনকে ছেলে ভুলোতে এসো না। আমি জানতে চাই, ভবদেব সেনের ভাবী বংশধরকে হত্যা করবার স্বাধীনতা তোমাদের কে দিল? জবাব দাও!

    কিন্তু যে জবাব দেবে, সে কি হাউমাউ করে চেঁচিয়ে বলে উঠবে, আমি কী করব বলুন? আমি কি এটা ঠেকাবার জন্যে কম চেষ্টা করেছি? দিনের পর দিন বোঝাতে চেষ্টা করিনি? পার্ক সার্কাসে ওর পিসতুতো দাদা পরেশ গুপ্তর যে নার্সিং হোমটায় ভর্তি হবার জন্যে ও গোড়া থেকে ঝুলোঝুলি করেছে, সেই পরেশ গুপ্তকে আমি চুপিচুপি বারণ করে রাখিনি তুমি টালবাহানা করে করে দিন এগিয়ে দিয়ে শেষে বোলো যে এখন বেশি রিস্ক নেওয়া হবে।

    হ্যাঁ এসব করেছি আমি। ওর মাও ওকে খুব বুঝিয়েছে। কিন্তু ও যদি পাগল হয়ে ওঠে? কী করার থাকে আর? হ্যাঁ পাগল হয়ে উঠেছিল ও! দিনরাত খ্যাপা জানোয়ারের মতো করেছে। বিশ্বাস করবেন আপনি, প্রতিক্ষণ আমায় ইতর বলেছে, ছোটলোক বলেছে, মতলববাজ, জোচ্চোর, শয়তান, রাস্কেল আরও সব অকথ্য কথা বলেছে। শেষ অবধি একদিন আমার হাত কামড়ে জামা ছিঁড়ে ফালাফালা করে দিয়েছে। তবে? সত্যি পাগল হয়ে গেলে তাকে নিয়ে আমি কী করতাম? ও ওর মাকে শাসিয়েছে, এখন থেকে ওকে যদি জব্দ করে ফেলা হয়, ও ওর ইচ্ছেমতো ফ্রি লাইফ না পায় তো সুইসাইড করবে।

    না, এইসব কথা তো বলে ওঠা যায় না? ভিতরটা যতই চেঁচিয়ে উঠতে চাক, বহিরঙ্গে তো আত্মমর্যাদাটা বজায় রাখতে হবে।

    অতএব সংলাপের ধারাটা এইভাবে প্রবাহিত হয়

    এটা আপনার একটা ছেলেমানুষি কথা। ও যদি না চায়–

    কী বললে? ও যদি না চায়, বলে তুমি বাপ হয়ে তোমার প্রথম সন্তানকে

    আপনার এই কথাগুলো গত শতাব্দীর মতো হচ্ছে বাবা! প্রত্যেকেরই ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে একটা জিনিস থাকে। ছেলেমেয়ে অ্যাডাল্ট হলে তাদের জীবন তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। এ যুগে কেউ এই তুচ্ছ সেন্টিমেন্টটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তবে আমি অবশ্য বাধা দিতে চেষ্টা করেছিলাম

    ওঃ। করেছিলে। তা তোমার সম্মতি ব্যতীত তো কোনও ডাক্তার ছুরি ধরতে পারে না।

    একটু হাসির শব্দ শোনা গিয়েছিল।

    কোন্ যুগে আছেন এখনও? আইন এখন অনেক উদার হয়ে গেছে। যে কোনও সাবালক মেয়ে ইচ্ছে করলে–ইস কত দেরি হয়ে গেল।

    চলে গিয়েছিল সুদেব।

    আর ভবদেব নামের মানুষটা কাঠ-পাথরের মতো বসে ছিল।

    একটু পরে বাপী এল নাচতে নাচতে, বাড়িতে কেউ নেই নাকি? মা, শানু!

    ভবদেব আস্তে বললেন, বাড়ি নেই।

    যাব্বাবা! জননী আবার কোটর ছেড়ে গেলেন কোথায়?

    সুকুমারদের ওখানে। তোমার ভাতটাত বোধহয় টেবিলে ঠিক করা আছে।

    ভাত! আরেব্বাস। দারুণ খেয়ে আসা হয়েছে। দেবু, এই দেবু, কোথায় পড়ে ঘুমোচ্ছিস? আমার ভাতগুলো খেয়ে নে।

    কী আশ্চর্য। ও তো খেয়েছে।

    তাতে কী, ওরা অমন পারে। মাদার তো তাঁর পুত্তুরের জন্যে ভাল-মন্দ কিছু রেখে গেছেন। দেখে ড্যাম গ্ল্যাড হয়ে যাবে। দেবু, এই আগে এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল দে, তারপর ওই কীসব আছে খুলে দেখ

    বলতে বলতেই দরজার কলিংবেলটা তীব্রভাবে বেজে উঠল। এই তীব্রতা অসহিষ্ণুতার পরিচয়। দেবু দরজা খুলে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় হুড়মুড়িয়ে ছুটে এল নীরার ভাই সোমন। আর্তভাবে বলল, মেসোমশাই, সুদেবদা আমায় আপনার কাছে পাঠিয়ে দিল এক্ষুনি কিছু টাকা চাই। দিদিকে ব্লাড দিতে হবে। দেরি হয়ে গেলে বোধহয় দিদি

    থেমে গেল।

    ভবদেব শান্ত গলায় বললেন, কত টাকা?

    তা জানি না। যতটা দিতে পারেন। অনেক তো লাগবে।

    বাপী একটু শুনে নিল। তারপর বলল, ঠিক আছে। তুই আমার বাইকে উঠে আয়, কী লাগবে না লাগবে আমি দেখছি। আমার গ্রুপে মিললে তো কোনও প্রবলেমই নেই। চল চল।

    ভবদেব আস্তে বললেন, বেরিয়ে যাচ্ছ? টাকা তোমার সঙ্গে আছে?

    বাপী প্যান্টের দুপকেটে দুটো থাবড়া মেরে দেবদূতের হাসি হেসে বলল, আপাতত হয়ে যাবে মনে হয়। হাজার দুই মতো আছে

    চলে গেল সোমেনকে পিঠে চাপিয়ে।

    ওর গাড়ির গর্জনটা যতক্ষণ কানে বাজতে লাগল, একভাবে বসে রইলেন ভবদেব। তারপর আস্তে তিনতলায় বাবার ঘরে উঠে গেলেন। আর তার একটু পরেই বন্দনার উদ্বেলিত প্রশ্নে ক্লান্ত গলায় বললেন, আমায় একটু একা থাকতে দাও।

    .

     ৩৩.

    যে যার নিজেকে নিয়ে আবর্তিত। কদিন পরে নন্দনা এল হইহই করতে করতে, দিদির সংসারের আপাত চেহারা তো যথাযথ, বরং আগের থেকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত! কে বুঝতে আসছে সংসারের মর্মস্থলের কোথায় কী ভাঙন। নন্দনার ছেলেমেয়েরা নাছোড়বান্দা, মাকে একবার নিয়ে যাবেই। বাবার সম্পর্কে আশা রাখে না, কিন্তু মা তো আর বাবার মতো অত কট্টর নয়? টিকিট-ফিকিট যা করবার সব করে পাঠাচ্ছে, ব্যবস্থা রেডি। খবরটা জানিয়ে এখন নন্দনার বক্তব্য, দিদি তোর মেয়েরাও তো বলে বলে হদ্দ হয়ে যায়। চল না বাবা দুই বোনে আকাশ পাড়ি দিই।

    বন্দনা হাসলেন, আমি যখন আকাশ পাড়ি দেব, আর কোনওখানের মাটিতে নামব না।

    আচ্ছা খুব পাকামি হয়েছে। আমার থেকে তো মাত্র তিন বছরের বড়, এমন করিস যেন কতই বুড়ি। এই তো আমি তিন-তিনখানা রঙিন পিওর সিল্ক কিনে ফেললাম, একটা শিফন! আরও দুটো জংলা মুর্শিদাবাদী কিনব। তা ছাড়া মিঠুর আইবুড়ো বেলার কিছু শাড়ি পড়ে রয়েছে, ওগুলোও নিয়ে নেব।

    শানু হেসে ফেলে বলল, সেগুলো তো সবই লাল নীল হলদে সবুজ, তুমি পরবে? মাসি একটু অলৌকিক হাসি হেসে বলল, পরব না কেন? প্রবাসে নিয়ম নাস্তি। আমরা বাঙালি মেয়েরাই সাততাড়াতাড়ি বুড়ি সাজি। আর কোনওখানে এমন ব্যবস্থা নেই। মিঠু আমায় অনেক আগে থেকে লিখেছে, মা, তুমি যেন আর তোমার সেই হাতিপাড় ধনেখালি শাড়িগুলো সম্বল করেই এসো না, রঙিন-টঙিন এনো। কালার্ড ফটো তুলব। আমি বাবা ঠিক করলাম সংস্কারমুক্ত হওয়া দরকার। দারুণ ফটো তুলতে শিখেছে মিঠু। তা ভজা না তোদের মাকে, মিঠু আর রীতা তো দুজনেই বাবা এক জায়গায়। খুব আসা যাওয়া আছে। সুনন্দ অবিশ্যি ক্যালিফোর্নিয়ায়, অনেকটা দূরে, তা ছাড়া ওর ভাবটাও ছাড়া ছাড়া। তবে হ্যাঁ যেতে সেও অনেক বলে। আর বুলাই তো প্রতি চিঠিতে মা মা। রীতা অমৃতারাও তো

    শানু বলল, হ্যাঁ প্রতি চিঠিতেই তো লেখে।

    তবে? চল না দিদি?

    বাপী তার বিলাসবহুল নবনির্মিত স্নানের ঘর থেকে মোছা মাথা আবার শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছিল, বলল, কে কোথায় যাচ্ছে?

    এই যে মেজ মাসি আমেরিকা যাচ্ছে

    গুড নিউজ!

    মাকে, হি হি, মাকে বলছে, তুইও চল। হিহি।

    তা হি হি করার কী হল? এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব। জননী, যাবে তো বলো? আমি দু দিনের মধ্যে তোমার পাশপোর্ট বার করে দেব।

    বন্দনা হেসে ফেললেন, শুধু পাশপোর্ট হলেই হবে?

    তো আর কী চাই? প্যাসেজ মানি? হয়ে যাবে। শানু লিস্ট দে কী কী চাই। মেজ মাসি তুমি কবে স্টার্ট করছ?

    এই সামনের মাসে সাতাশে।

    ওঃ! সে তো অনেক সময়। জননী ইতিমধ্যে তোমার পাঁচফোড়নের শিশি আচারের বোতল-টোতল সাফলে ফেল। আমি আজই তোমার পাশপোর্টের জন্যে

    পাগলামি করিস না বাবা।

    বন্দনা বিব্রত গলায় বললেন, কোথাও কিছু না, এখন বিদেশ ছুটি। তোর টাকা বড় সস্তা হয়েছে না?

    বাপীর মুখে আবার দেবদূতের হাসি।

    টাকা জিনিসটাই তো সব থেকে সস্তা মাদার! জীবনের কোনও কিছুই গেলে আর আসে না, কিন্তু টাকা? গেলে আবার আসে। এই যে তোমার এই সময়টা, বয়েসটা, মেজ মাসির সঙ্গের সুযোগটা, জীবনে আর আসবে? আসবে না। বাপী সেনের টাকা, যাবে আবার আসবে। এই শানু মাকে টোয়া গাড়ি কেনার জন্যে যে টাকাটা রেখেছি, ওটাই এখন ব্যয় হয়ে যাক।

    থাম বাপী।

    বন্দনা এখন গম্ভীর হলেন, তোর মতন হালকা জীবন কি তোর মার। তাই

    হালকা করতে পারলেই হালকা জননী! তোমাদের স্বভাবই হচ্ছে স্বেচ্ছায় পায়ে বেড়ি পরা। এতবড় দীর্ঘজীবনের কিছুই তো করলে না, পাঁচ-ছটা মাস নিজের জন্যে চুরি করে নিতে পারবে না?

    বন্দনা নিশ্বাস ফেলে বললেন, কই আর পারছি! শুনলি তো তোর দাদার কথা, বউমা নার্সিং হোম থেকে বাপের বাড়ি না গিয়ে, এখানেই চলে আসতে চায়। মার শরীর খারাপ, অধিক চাপ পড়বে

    রাখো ওসব ভড়কিবাজি! বাপী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে গেল, লারে লাপ্পারমাদার তো সাফ জবাব দিয়ে দিয়েছে, নেবে না ঝামেলা।

    নন্দনা গালে হাত দিয়ে বলল, ও মা তাই নাকি? তা ব্যাপারটা সত্যি বড় দুঃখের। গাছের প্রথম ফলটি নষ্ট হয়ে গেল! স্বাস্থ্যটাও ভাঙল। এখনকার মেয়েরা তো নিয়মকানুন মানে না। এ সময় পায়ের আঙুলে একটা আংটি পরতে হয়। শনি মঙ্গলবারে ভরসন্ধেয় রাস্তাঘাটে বেরোনো চলে না–

    শানু হেসে উঠল।

    মেজ মাসি! তুমি না সংস্কারমুক্তির সংকল্প করে ফেলেছ। রঙিন শিফন পরে আমেরিকা যাচ্ছ।

    মেজ মাসি ঝংকার দিয়ে ওঠেন, যাচ্ছি তা কী? বিদেশ বেড়াতে যাচ্ছে বলে বিদেশি হয়ে যাব নাকি? চিরকালে বিশ্বাসটা কে ত্যাগ করব? জগতে ভূত ভগবান বুঝলি? সবই আছে ওইসব শনি মঙ্গল বাচবিচার-টিচার হচ্ছে ভূতের অ্যান্টিবায়োটিক।

    হি হি হি মেজমাসি। যা একখানা দিলে? বিদেশে গিয়ে এটা প্রচার করতে পারো।

    শানুর মনে হল, আচ্ছা সে তো তা হলে বদলে যায়নি। আগের মতোই হেসে উঠতে পারছে। ঠাট্টা করতে পারছে। কিছুদিন যাবৎ কেবলই কেন মনে হত, আমি বুঝি সহজ হবার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলেছি।

    তবু একটু গম্ভীরও হল।

    বলল, ভগবান আছে কিনা জানি না, তবে ভূতের ব্যাপারে আমি তোমার সঙ্গে একমত। ভূত আছে, এবং হঠাৎ হঠাৎ মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে ঘাড় মটকায়। ও তোমার শনি মঙ্গলের ঝাড়ান কাটান কোনও কাজে লাগে না।

    ভাবল, সবাই জানে, মানে জানানো হয়েছে ভাগ্য বিপর্যয়ে বেচারি নীরার প্রথম সন্তানটি পৃথিবীর আলো দেখতে পেল না। যাক বউ যে বেঁচেছে এই ঢের, এটাই সকলের অভিমত।

    বন্দনাকে এখন এই মিথ্যা সমাচারই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বন্দনার সাহস নেই আসামিদের মুখের উপর কিছু শুনিয়ে দেবার। যেমন দিয়েছেন নীরার মা!

    একটা অসতর্ক মুহূর্তে বলে ফেলেছিল খোকা, সে ভদ্রমহিলা তো ঝেড়ে জবাব দিয়ে দিলেন। বাধ্য হয়েই নীরাকে এ সময় এখানে চলে আসতে হচ্ছে।

    বন্দনা?

    তাঁর উপায় নেই ঝেড়ে জবাব দেবার। তাঁকে ওই বাধ্য হয়ে আসাটাকেই পরম স্বাগত জানিয়ে, দায়টাকে বইতে হবে সম্ভ্রমের সঙ্গে, সম্মানের সঙ্গে, কৃতাৰ্থমনা হয়ে। আর প্রতিক্ষণ নিজের ত্রুটির জন্যে

    অপ্রতিভ হয়ে থাকতে হবে।

    দোষটা কিন্তু বন্দনারই নয় কী?

    বন্দনা যদি এত ভদ্র না হতেন, যদি এত সভ্য আর শান্তিপ্রিয় না হতেন, যদি লোকের মুখের উপর উচিত কথা শুনিয়ে দেবার ক্ষমতা থাকত তাঁর, তা হলে কি অবস্থা ঠিক এমনটা হত? বুকের পাটা বলে যাদের কিছু নেই, যারা ভালবাসা হারাবার ভয়ে সন্ত্রস্ত (সেই ভালবাসাটা আছে কিনা তা না জেনেই), তাদের এই দশাই ঘটে।

    ভবদেবই বা কী?

    সেই যা একদিন একবার ধৈর্যচ্যুত হয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, তারপরই তো স্তব্ধ স্থির। এমনকী পুত্রের কাছে পুত্রবধূর স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্পর্কে প্রশ্নও করেছেন। খুব সংকটজনক অবস্থাই তো হয়েছিল বউয়ের।

    তার মানে এ যুগ ভদ্র আর শান্তিপ্রিয়দের মর্যাদা দেবার দায় অনুভব করে না।

    .

    ৩৪.

    শানু বাবার বইগুলো গোছাচ্ছিল।

    শানুর কেবলই ভিতর থেকে একটা কান্না ঠেলে ঠেলে উঠছিল। তবু শানু মনকে বোঝাতে চেষ্টা করছিল, মেয়েদের তো মা বাপকে ছেড়ে চলেই যেতে হয়। পিতৃগৃহ থেকে পতিগৃহে। এত মন কেমন করলে চলবে কেন? আবার ভাবছিল, বাবা এখনও তাকে তাঁর চিন্তার ফলটা জানাননি। বলেছিলেন জয়েনিং ডেটটা তো ও মাসের পয়লা, একটু সময় পাওয়া যাচ্ছে।

    আজ ঘরময় বই ছড়ানোর মধ্যে রুক্ষচুল ধূলিধূসর শানুকে দেখতে পেয়ে ঘরে ঢুকে এলেন ভবদেব, বললেন, তুই এখানে? আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।

    খাটের ধারে বসলেন।

    বললেন, তোকে আমি বারণ করছি না, তবে বলছি চাকরিটাই যদি তোর জরুরি হয়ে থাকে এখানেই বিননাদিনী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাইমারি সেকশানে একটা কাজ পাওয়া শক্ত হবে না। ধরে নে হবেই।

    বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয়!

    যেটা পার্থদের গলির মুখোমুখি।

    শানুর ভিতরটা তোলপাড় করে উঠল। শানু আস্তে বলল, পাড়ার মধ্যে হঠাৎ দিদিমণিগিরি! খুব লজ্জা করবে না বাবা?

    ভবদেব একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, হয়তো করবে! জানি না। তবে মনে হচ্ছে

    চাকরি পাওয়া থেকে সুন্দরবনে যাওয়াই বোধহয় তোর এখন বেশি জরুরি। তবে আর কী করে বারণ করি।

    ভবদেবের মুখে একটা গভীর দুঃখ আর ক্লান্তির ছাপ। ভবদেব তো নিঃশঙ্কই ছিলেন। শুধু ভেবেছিলেন এটা শানুর একটা খেয়াল। এতকাল পরে, যখন সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে, তখন কিনা বন্দনা স্বামীর কাছে ব্যক্ত করে বসলেন তাঁর মেয়ের পার্থর প্রতি আকৈশোর দুর্বলতার সংবাদ।

    বললেন, ও যে কেন এমন একটা খেয়াল করে বসছে, সেটা কি আর বুঝতে পারিনি আমি? তবু ভাবছিলাম আটকে ফেলে দেখেশুনে একটা ভাল পাত্তর জোগাড় করে বিয়ে দিতে পারলে, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

    ঠিক হয়ে যাবে!

    তা সময়ে সবই সয়। ঘরকন্না করা বউ মরে যাওয়ার পর লোকে আবার টোপর পরে।…তবে

    একটু থেমে বলেছিলেন, আপাতত না হয় চলেই যাক। আজ সকালে ছাতে উঠেছিলাম, ওদিকের কোণটা থেকে দেখতে পেলাম শরৎবাবুর ছাতে প্যান্ডেল বাঁধার বাঁশ তুলছে। দেখে আমারই বুকে যেন বাঁশ ডলল। মেয়েটার তা হলে–

    ভবদেব হঠাৎ একটা খাপছাড়া কথা বলে বসেছিলেন। বলেছিলেন, প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে? শরৎবাবু তোকই নেমন্তন্ন চিঠি দিতে আসেননি। মেয়ের বিয়েতে তো

    নেমন্তন্ন পত্তর? কোন লজ্জায় আর দেবে?

    ভবদেব অবাক হয়ে বলেছিলেন, মানে উনিও কি এসব জানেন-টানেন।

    না জানে আবার!

    ভবদেব আরও অবাক হয়ে ভেবেছিলেন, আশ্চর্য। তিনিই কেউ না বলে দিলে কোনও কিছু জানতে পারেন না।

    এখন কিন্তু তিনি শানুর মুখটা দেখে অনেক কিছুই জানতে পারলেন। তবু হেসে বললেন, তবে বিনোদিনী বাতিল, মহামায়ারই অগ্রাধিকার। কী বলিস? আচ্ছা, চল তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

    বাবা!

    আরে কী হয়েছে। বেশততা একটু আউটিং হয়ে যাবে। ভাল লেগে গেলে একটা আস্তানা জোগাড় করে ফেলে থেকেও যেতে পারি।

    বাবা! থাক, আমি যাব না।

    এই সেরেছে। ওরে বাবা, কান্নার কী হল? আসলে সত্যিই ইচ্ছে হচ্ছে রে কোথাও দুদিন ঘুরে এলে হয়। গিয়ে পরিস্থিতিটা দেখি। তেমন বুঝলে শ্ৰীমতী শান্তস্মিতা সেনের ওই তিন বছরেরবন্ডটা নাকচ করে দিয়ে, মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়ে আসব।

    বেশ হেসে উঠলেন এখন।

    .

    ৩৫.

    বাবা মত দিলেন।

    শানু ভাবল, অথচ, আমি ভাবছিলাম, মত না দিলেই বাঁচা যায়। এখন আমার মনে হচ্ছে বড় বেশি মূল্য দিয়ে বসেছিলাম সেদিন পার্থর ওই ঘটনাটাকে।

    ওই তো ওদের ছাতে প্যান্ডেল বাঁধার তোড়জোড় চলছে, কই আমার তো প্রাণ ফেটে যাচ্ছে না। একটা ঘেন্না ঘেন্না ভাব আসছে এই পর্যন্ত। আসলে সেদিন অপমানটা বড় বেশি লেগেছিল। সেই জ্বালায় দিশেহারা হয়েই বোকার মতো ফট্‌ করে! এই আশ্চর্য চাকরিটা হয়েও গেল।

    ভাবল, তবু ভাগ্যি সেই চিঠির কুচিগুলো নর্দমার জন্যে আশ্চর্য আশ্রয় পেয়েছিল। যদি ঠিকানাটা জানা থাকত, যদি পোস্ট করা হয়ে যেত! ইস কী লজ্জা! কী লজ্জা! নির্ঘাত ওই ছোটলোকটা পরে হেসে হেসে তার নতুন বউকে দেখাত।

    তারপর ভাবল, আচ্ছা ধর আমি যেন এখানেই রয়ে গেছি, পাড়ার লোক শরৎবাবু যথারীতি ছেলের বিয়ের নেমন্তন্ন করে গেছেন বাবাকে। সপরিবার এবং সনির্বন্ধ।

    শানু খুব সেজেগুজে মার সঙ্গে নেমন্তন্নে গেছে, ভদ্রা তত নিশ্চয়ই আসবে, খুব হাসিখুশি করছে তার সঙ্গে। কেউ কি তা হলে ধরতে পারবে এ বাড়ির ওই ছেলেটা শানুকে ভীষণ একটা অপমান করেছিল। বরং শানুর এই বিয়েবাড়িতে এসে হইচই আমোদ দেখে বিয়ের বরটারই মনে যা লাগবে। ভাববে সে একটা ভুল ধারণায় কাটিয়েছে। আর সেই ধারণায় আঘাত লাগার যন্ত্রণায় তাড়াতাড়ি জীবনটাকে বিকিয়ে বসলাম।

    চোখ বুজে শুয়ে শুয়ে ভাবতে ভাবতে শানুর যেন একটা আক্ষেপই এসে গেল। ইস! বাবা মতটা দিয়েই বসলেন। যদি না দিতেন তা হলে শানু পরাজয়ের অন্ধকারে হারিয়ে না গিয়ে, বিজয়িনীর মূর্তিতে ঝলসাতে পারত। বেশ হত, ঠিক হত!

    হয়তো তখন বিয়ের বরটা অবাক অবাক হয়ে একবার ওই বিজয়িনীর চোখের উপর চোখ ফেলবার টেষ্টায় বারবার তাকাত, কিন্তু পেরে উঠত না। দেখত তার চোখ সাদা দেয়ালের দিকে, আলো ঝলমল পরিবেশটার দিকে।

    কিন্তু পাওয়া হল না সে বিজয় গৌরব।

    কোথায় যেতে হবে, কী তার পরিবেশ, বাবা কি সত্যি সত্যিই আমার সঙ্গে যাবেন? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আবার কখন পার্থদের বাড়ির সেই দালানের দরজাটার কাছে পৌঁছে গেছে শানু।

    আচ্ছা, সেদিন আমি ভদ্রার কথার উত্তরে কী কী বলেছিলাম? তাতে কি আমার অহংকার প্রকাশ পেয়েছিল? ভদ্রা আমার সেই অহংকার নিয়ে কী জানি কী বলেছে। হয়তো বানিয়ে বানিয়ে এমন কিছু বলেছিল কুটিল কুচক্করে মুখপুড়ি ভদ্রাটা, যাতে ও বাড়ির সবাই শানুর প্রতি বিরূপ হয়ে গিয়েছিল। আর–

    আর পার্থ রাগে দুঃখে অপমানে—

    অজ্ঞাতসারেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়াতে থাকে শানুর।

    .

    ৩৬.

    মা অফারটা না নেওয়ায় গাড়িটা কিনেই ফেলেছে বাপী।

    অতএব কোথায় না কোথায় ঘুরছে। পাড়া থেকে বহুদূরে হঠাৎ একটা সিনেমা হল থেকে দুটো চেনা মানুষকে বেরোতে দেখে থমকে গেল। তার নিজের গতিবিধি অবশ্যই সীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়, গাড়িটা কিনে তো আরও, কিন্তু দমদম চিড়িয়ামোড়ের কাছে এই একটা নোংরা সিনেমা হল থেকে ওরা বেলোয় কেন?

    বাপী গাড়িটা থামিয়ে ভাল করে লক্ষ করল। পেনো এসেছে। চুলোয় যাক। ওর সঙ্গে ওই মস্তানটাকেও যেন দেখা-দেখা মনে হচ্ছে। সেটাও জাহান্নামে যাক। কিন্তু ওই মেয়েটা? ও মেয়েটা ওদের সঙ্গে কেন? মেয়েটা পাড়ার শরৎবাবুর ছোট মেয়েটা না?

    ওরা হল থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট অভিমুখে এগোচ্ছিল, বাপী আস্তে আস্তে গাড়িটাকে নিয়ে গিয়ে ঘ্যাঁচ করে দাঁড় করিয়ে নেমে এল। আর এসেই বসে উঠল, এই, তুমি শরৎবাবুর মেয়ে চন্দ্রা না? তুমি এখানে?

    দ্বিতীয় ছেলেটা একটু পিছিয়ে গেল, পানু এগিয়ে এল। একগাল হেসে বলল, এই যে বাপীদা। তুমি এখানে? ও আমাদের সঙ্গে এসেছে।

    বাপী দুই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলল, যাকে জিজ্ঞেস করছি, তাকে বলতে দে। বলছি, তুমি এখানে কেন?

    বাপী চন্দ্রার অচেনা নয়, চিরকালই দেখছে। তা ছাড়া ইদানীং বাপীর সর্বদা পাড়া দাপিয়ে বেড়ানোর জন্যে, পাড়ার বাপীকে কার না মুখস্থ?

    চন্দ্রার কি সাধ হয়নি ওর সঙ্গে একটু ভাব করে? কিন্তু ওর ভঙ্গিটা কী ডাঁটুস। মানুষকে যেন মানুষ বলে গণ্যই করে না। মেয়েমানুষদের তো আরও দৃকপাত মাত্র করে না।

    কিন্তু এখন বোঝা গেল, দিব্যি চেনে সবাইকে। অর্থাৎ দৃকপাত করে ঠিকই।

    চন্দ্রা ভাবল, সঙ্গে দুদুটো পৃষ্ঠবল, ওকে আমি ভয় করতে যাব কীজন্যে? চন্দ্রা তাই ফিক করে একটু হেসে বলল, কেন আবার? দেখলেনই তো সিনেমা দেখতে এসেছি।

    সিনেমা দেখতে তুমি ঢাকুরে থেকে দমদমে এসেছ? ও পাড়ায় হল নেই?

    থাকবে না কেন? এদের সঙ্গে চলে এলাম!

    বাপী আরও কড়া গলায় বলল, এদের সঙ্গে চলে এলে? এরা খুব ভাল ছেলে?

    এই অপমানকর প্রশ্নের পর তো আর পিছনো জন পিছনে থাকতে পারে না! এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলে, আঃ আপনি কে মোশাই, আঃ আপনি ওর গার্জেন?

    টিকটিকি আরশোলার প্রতি লোকে যেভাবে দৃষ্টিপাত করে সেইভাবে তার দিকে একবার তাকিয়ে, বাপী বলল, পেনো চন্দ্রাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে আয়।

    এ আবার কী আদেশ!

    পানু বজ্রাহত!..কারণ আদেশটা যেন অমোঘ অনতিক্রম্য।

    বজ্রাহত পানু কষ্টে আড়চোখে তার সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে দেখল, দেখল চন্দ্রার দিকেও, আদেশ পালনের সাহস পেল না। সাহস সঞ্চয় করে বলল, একসঙ্গে তিনজনে এয়েছি–

    জাহান্নামে যাক একসঙ্গে। তোরা উঠে আসবি? না কি কান ধরে তুলে আনতে হবে?

    বন্ধুর সামনে এই হেনস্থা! পানুর কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে এল, আর চন্দ্রার রাগের চোটে বুকের পাটাটা যেন বেড়ে গেল। চন্দ্রা তাই বুকজোর করে বলল, আপনি যেখানে যাচ্ছিলেন যান না। পরের চরকায় তেল দিতে এসেছেন কেন?

    বাঃ! বেড়ে! সঙ্গগুণ তো ভালই ধরেছে। শরৎবাবুকে তো এটা জানানো দরকার!…পেনো, কী বললাম।

    শরবাবুর নামে চন্দ্রা একটু মুষড়ে গেল। আর পানু ঝট করে তার একটা হাত বাগিয়ে ধরে টান মেরে, উঠে আয় বলে হুড়মুড়িয়ে গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই পানুর প্রাণের বন্ধু একটা জান্তব গলায় চিৎকার করে উঠল, শালা পেনো, বিশ্বাসঘাতক বেইমান। বেরিয়ে আয় বলছি। বড়গাছে নৌকো বাঁধতে যাচ্ছিস শালা শুয়োরের বাচ্…কথা শেষ করতে হল না।

    কী? কী? বললি বদমাশ!…ঠাঁই করে তার গালে বাপীর ভারী পুরু বলিষ্ঠ হাতের একটা থাপ্পড় পড়ল। আর তার চোখের অন্ধকারটা কাটাবার অবকাশে গাড়ির দরজাটা দমাস করে নিজ ভূমিতে স্থির হয়ে উঠে বসে স্টিয়ারিঙে হাত দিয়েই হা হা করে হেসে উঠল বাপী। ও পেনো, ছুঁচোটা যে আবার ছুরি বার করে রে! হা হা হা!…ছুরির দিকে তাকাবার আগেই পানু আর চন্দ্রা দেখতে পেল হঠাৎ যেন আকাশ থেকে একটা রিভলবার পড়ে বাপীর বাঁ হাতে নাচতে লেগেছে। বাপী একহাতে স্টিয়ারিং-এ পাক দিয়ে বলে উঠল, বাপী সেনকে ছোরা দেখাতে আসা! হা হা হা হা! ছুঁচোটার নাম কী রে পেনো? চিনে রাখা ভাল।

    পানু অবশ্য জবাব দিল না। ঘাড় গুঁজে বসে রইল। আর চন্দ্রা ভয়ে সিঁটিয়ে সিটের গায়ে সেঁটে বসল। হয়তো পানুর গায়েই সাঁটত, কিন্তু সে বেয়াদপির সাহস করল না। চালকের সামনের কাত করা আরশিটায় চন্দ্রার ছায়া।

    জবাব দিল সেই ছুঁচোই।

    নাঃ নাঃ ম! এই দিগেন বিঃ বিশ্বাস ফঃ যঃ দিনা তোকে বাঃ বাঃপের নাঃ নাবঃ স ভুলিঃ ভুলিয়ে ছাঃ ছাঃ ড়ে–তো কী বলেছিঃ।

    হা হা হা, ছুঁচোটা আবার তোতলা! ও পেনো, আড্ডা দিস কী করে?

    ও যে রাগলে তোতলা হয়ে যায় সে কথা বলে উঠতে পারে না পানু। চোখের সামনে রিভলবারটা নাচছে, গালাগাল দেওয়া ছাড়া আর বেশি কিছু করার উপায় নেই, অতএব অকথ্য দুএকটা গালি দিয়ে পানুর বন্ধু বলে ওঠে, ম ম মন্ত্রীর জামাইয়ের সঙ্গে ব ব. বখরার কাঃ কারবার করে কেঁঃ ফেঁ ফেঁপে গেল ঢোঃ ঢোল-হয়ে শালা সাসা সাপের পা দেখেছে।…তো তোর লক্লাটে একদিন মিত্যু আছে আছে স শশালা।

    গাড়িতে গর্জন উঠল।

    তার সঙ্গে বাপীর খোলা গলার উদ্দাম হাসি, আছে বুঝি? আর তোর ললাটে কোনওদিন মৃত্যু নেই, কেমন? অ্যাঁ?

    এখন স্টিয়ারিঙে দুহাত।

    গাড়ি হুশ করে বেরিয়ে গেল দিগেন বিশ্বাসের নাকের উপর দিয়ে।

    .

    ৩৭.

    পরশু বিয়ে, অথচ ছেলে এখনও এসে পৌঁছল না, শরৎবাবু অস্থির হয়ে বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছেন! ছাদের উপর বাঁশ বাখারির ফাঁকা কাঠামোটা যেন কঙ্কালের শূন্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডেকরেটারের লোক বাণ্ডিল করা ত্রিপল আর রঙিন কাপড়গুলো রেখে গেছে কাজ এগিয়ে। তাদেরই একজন এসে টুনি বাবের দর বলতে এসেছিল। এখন যাও বলে ভাগিয়েছেন তাকে শরৎ। খ্যাঁচ করে একখানা গাড়ি এসে থামল সামনেই।

    উল্লসিত শরৎকুমার তাকিয়েই স্তিমিত হয়ে গেলেন। ট্যাক্সি নয়, প্রাইভেট কার! নতুন ঝকঝকে। ভিতরে ভবদেব সেনের হঠাৎ বড়লোক হয়ে ওঠা ছেলেটা!

    ও আবার কী করতে?

    কিন্তু গাড়ির মধ্যে থেকে তাঁর নিজের জনও যে নামছে। তবে ছেলে নয়, মেয়ে।

    হতভম্ব শরৎ গুপ্তর স্থলিত কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়, কী ব্যাপার?

    ব্যাপার কিছু নয়! বলছি মেয়েকে আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে বেড়াতে ছেড়ে দেন কেন মেলোমশায়? কতরকম বিপদ আসতে পারে। এই যে আমার এই ভাই পানুবাবু, এ কি খুব ভাল ছেলে? হতে পারে পাড়ার ছেলে, ছোট থেকে চেনাজানা, তা হলেও এদের সঙ্গে সিনেমা ফিনেমা দেখতে যাবার দরকারটা কী?..তাও কোথায়? না সেই চিড়িয়ার মোড়ের কাছে। দেখতে পেয়ে বকুনি দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে ধরে নিয়ে এলাম।…মাসিমাকে বলবেন একটু শাসনে রাখতে।…ধরে নিয়ে আসায় এ অবিশ্যি খুব রেগে গেছে–

    হাসল একটু বাপী, খুব আশা করে রেস্টুরেন্টে ঢুকছিল চা-টা খেতে। কী দরকার? বাড়িতে চায়ের অভাব?…পেনো তুই এটুকু হেঁটে চলে যা। আমার গাড়িতে চড়েছিস দেখলে, তোর বাবার তো আবার প্রেস্টিজ পাংচার।

    বাকশক্তিরহিত শরৎ গুপ্ত আর তাঁর কাঠের পুতুলে পরিণত মেয়ে চন্দ্রা গুপ্তর সামনে দিয়ে গাড়িটা হুশ করে বেরিয়ে গেল।

    .

    ৩৮.

    ভবদেব যতটা বলেছিলেন ততটা অবিশ্যি নয়। গোসাবা মহামায়া প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দিদিমণির কোয়ার্টার্সটা দরমার দেয়াল উলুখড়ের চাল সংবলিত নয়। বেশ শক্তপোক্ত গুঁড়িকাঠের খুঁটি গেড়ে গেড়ে তার উপর দিব্যি মজবুত অতি সুন্দর কাঠের বাংলো।!

    ভিতরে মোটামুটি আসবাবপত্র। ভিতর দিকে শোয়ার আর সামনের ঘরটা বসবার ঘর হিসেবে অথবা অফিস ঘর হিসেবে সাজানো।…মাটি থেকে বেশ গোটাকতক কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠে ল্যান্ডিং, সামনে ঘর। দরজায় পরদা।…ভবদেব বললেন, দেখে যে মোহিত হয়ে যাচ্ছি রে শানু। আমাকেও একটা চাকরি দেয় তো থেকে যাই।

    স্কুলের সেক্রেটারি অতি বিনীত ভঙ্গিতে ভবদেবকে সব দেখিয়ে শুনিয়ে বারবার আশ্বাস দিতে লাগলেন, আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন। মায়ের কোনও অসুবিধে হবে না।…আর এই যে এই মেয়েটা, এ মা জননীর সব কাজকর্ম করে দেবে। কামিনী, আয় বাবুকে গড় কর।

    কালোকোলো গাঁট্টাগোট্টা একটা মেয়ে, বয়েস শানুরই কাছাকাছি হবে। ছাপা শাড়ি পরা, আঁটো করে চুলবাঁধা, এসে তিনজনকেই আভূমি প্রণাম করল।

    সেক্রেটারি জগন্নাথবাবু বললেন, খুব ভাল মেয়ে। রান্নার হাতও খুব ভাল। রেফিউজি মেয়ে তো মানে পূর্ববঙ্গের। রান্নার জন্যে বিখ্যাত। বিশেষ করে মাছের পদ। মাছ এখানে প্রচুর। দুই বেলাই মাছ। ভাত, যত ইচ্ছে মাছ খাবেন মা জননী। আর বর্ষায় তো এই সিঁড়িতে বসেই মাছ ধরা যায় ছিপ নামিয়ে। ইয়া ইয়া কই, বড় বড় আড় মাছ, ওই খুঁটির নীচে তো জল খলবলায়। তার মধ্যে মাছও খলবলায়।

    শুধু মাছ?

    কামিনী গ্রাম্য মেয়ের চিরভঙ্গিতে মুখে আঁচল চেপে হেসে উঠল, আর সাথে সাপ খলবলায় না?

    অ্যাঁ।

    ভবদেব বিদ্যুতাহতের মতোই আঁতকে উঠলেন, সাপ!

    তাঁর একটু আগের ভাললাগাটা নিঃশেষে অন্তর্হিত!

    সাপ? দেখা যায়?

    কামিনী আবারও হেসে ওঠে, দেখা যায় কী বাবু, এখেনে তো সাপ নিয়েই ঘরকন্না!

    জগন্নাথবাবু কামিনীর দিকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ভবদেবের দিকে তাকিয়ে মোলায়েম গলায় বললেন, ও স্যার নামেই সাপ! শিঙি মাগুরের অধম! জলসাপ, কিছু করে না।

    তা সত্যি বাবু

    জ্বলন্ত দৃষ্টির ঘায়ে অবহিত হয়ে যাওয়া কামিনীবালা তার বোকামির ফুটোটা রিপু করতে বলে, সেক্কেটিবাবু যা বলতেচে ঠিক। জল সাপ!নক্কী সাপ। কিচু করে না। বুনো নোকেরা তো ধরে নে গিয়ে খায়! বিষ নাই!

    বিষ নাই।

    এ আশ্বাসে কি নিশ্চিন্ত হন ভবদেব? সাপ শুনে পর্যন্তই তাঁকে সাপে ছোবল দিচ্ছে না?

    জগন্নাথ চক্রবর্তী চতুর লোক।

    মুখ দেখেই অবস্থা অনুমান করে বলেন, তবে বলি স্যার, আপনাদের শহরেই বা কী এত নির্ভয়? আমার তো রাস্তার ওই রাক্ষসের মতো ছুটে আসা দোতলা বাস, ঢাউস ঢাউস লরি গাড়ি…ছারপোকার মতো বিছিয়ে থাকা গাড়ি ট্যাক্সি রিকশা ঠ্যালা আরও কত কী দেখলে হার্টফেল হতে বসে!…তো আপনারা তো তার মধ্যেই জানপ্রাণ বাঁচিয়ে টিকে আছেন? অবিশ্যি সবাই টিকছে না, অ্যাকসিডেন্ট তো নিত্য ঘটনা। তা এখানেও সেই ব্যবস্থা। সাপে কাটা নিত্য ঘটনা। তবে সে সব সাপ তো আর এই জলে-টলে থাকে না।…ওঃ! আপনারা শহরের লোকেরা মশাই বড় ভিতু!

    ভবদেব বললেন, তাই বোধহয় আপনার স্কুলে টিচাররা বেশিদিন টেকে না?

    জগন্নাথ চমকালেন, কে বলল ট্যাকে না? অ্যাঁ! এ কথা কে বলল আপনাকে?

    কেউ বলেনি। অনুমান করছি।

    না। তা নয়। তবে কী জানেন? সকলের তো সমান ধাত নয়? জলহাওয়া সয় না। আমি বলছি একটু ধৈর্য ধরে চেপে থাকলে, অব্যেস হয়ে যাবে।..আয় কামিনী, এখন আমার বাসা থেকে চা-টা নিয়ে আসবি চল। ও বেলা থেকে এখানেই ব্যবস্থা করে ফেলবি।…রাত্রে আপনাদের জন্যে কী বানাবে? ভাত মাছ?

    রাত্রে এখানে থাকা খাওয়া! ভবদেব এখনই চোখের সামনে রাতের অন্ধকারটাকে দেখতে পেলেন। তবু কষ্টে বললেন, রুটি সম্ভব হবে না?

    কেন হবে না? নিশ্চয় নিশ্চয়। এই কামিনী মেয়েটা যা চমৎকার রুটি বানায়! আয় কামিনী।

    .

    ৩৯.

    ওরা চলে গেলে ভবদেব অসহায় ভাবে বললেন, তুই কী ভাবছিস শানু! এখানে থাকা সম্ভব?

    শানু বাবার মুখ দেখে অধিক উল্লাসের গলায় বলে ওঠে, কেন বাবা? আমার তো খুব সুন্দর লাগছে। একেবারে সম্পূর্ণ নতুন একটা জগৎ! এ রকম পরিবেশে থাকার কথা তো কখনও ধারণায় ছিল না।

    নতুন মানেই তো অচেনা শানু!

    শানু হেসে উঠল, তা হলে তো বাবা আপনার সেই প্রিয় গানটা গেয়ে ফেলতে হয়, অচেনাকে ভয় কি আমার ওরে!

    বাস্তব জীবনটা যদি গান হত রে! এখন ভাবছি তোর সঙ্গে না এলেই বোধহয় ভাল হত। আমার ছেলেদের বিদেশে চাকরিটাকরি হলে যেমন ইস্টিশান থেকে টা টা করা হয়, তেমনি করে ছেড়ে দিতাম। সর্বদা ওই সাপগুলো কামড়াতো না।

    শানু জোরে হেসে উঠল।

    কামড়াবে কী বাবা! ও তো জলসাপ নক্কী সাপ। কিছু করে না। বিষ নাই।

    কামিনীবালার কথার এই নকলে ভবদেবও অবশ্য হেসে ফেললেন। তারপরই গম্ভীর গলায় বললেন, তোদের মাকে গিয়ে বলতে হবে। আমার শানুকে এমন জায়গায় রেখে এলাম, যেখানে পায়ের তলায় মাটি নেই, মাটির বদলে জল। আর সেই জলে মাছের সঙ্গে সাপও খলবল করে।

    শানু বাবার ক্লিষ্ট মুখের দিকে তাকাল।

    শান্ত গলায় বলল, পায়ের তলায় মাটি সত্যিই কি কোথাও থাকে বাবা?

    ভবদেব বললেন, এটা তো দার্শনিক কথা শানু।

    শানু ফের হেসে উঠল, ও বাবা, আপনাকে এবার আমি জ্ঞান দিই। দেখে দেখেই তো দর্শন? সাপটাপেরাই বা কোথায় নেই? তবে তারা দেখতে মানুষের মতো, তাই বোঝা যায় না।

    শানুর তার বন্ধু ভদ্রার মুখটা মনে পড়ল।

    তারপর আবার বলল, এটাও তো একটা দেখার জিনিস বাবা যে মানুষ কত সামান্য উপকরণেও জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। অথচ আমরা জিনিস জমিয়ে জমিয়ে পাহাড় করে তুলে জীবনকে ভারী করে তুলি।…এই যে এখানে সামান্য একটা কাঠের বাংলো, এর মধ্যে যা নইলে নয় এমন কিছু আসবাব, এতেই তো কত লোকের সারাটা জীবনই কেটে যায়।

    ভবদেব গম্ভীর কৌতুকে বললেন, তা জ্ঞান-ট্যান দিতে শিখেছিস বটে।…তবে বলি শুধু সেই কেটে যাওয়াটাই তো বাইরে থেকে দেখা যায়? জীবনটাকে কাটতে কাটতে কুচোতে কুচোতে যায় কিনা সেটা কে দেখতে যায়?…আমি তো মনকে কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না। ভাবছি কাল একা ফিরে যাব, না তোকে নিয়েই পালিয়ে যাব?

    না। এবার আপনি ঠিক মার মতো ছেলেমানুষি করছেন বাবা।…দেখবেন ঠিক থাকবে শানু।

    .

    ৪০.

    কামিনী যেতে যেতে বলল, আচ্চা, সেকেটিবাবু, এমন একটা রাজাপারা বাপ থাকতি মাস্টার দিদিটা ক্যানো মরতে এই সোঁদরবনে কাজ করতে এল?

    কী, কী বললি?

    জগন্নাথ অনায়াসে কামিনীর ফুলো ফুলো গালে ঠাশ করে একটা চড় কষিয়ে বললেন, ফের এই রকম ঘরভেদী কথা? খবরদার, যদি ওই মাস্টার দিদিকে এ কথা বলিস তো তোকে জ্যান্ত পুঁতব।

    কামিনী কি চড় খেয়ে ঠিকরে উঠল?

    কই? কামিনী গালে হাত বুলোতে বুলোতে ফিক করে একটু হেসে বলল, কামিনীর মুকে ভ্যামান যে ছুঁচের ফোঁড় দিতি ভুলে গেচে গো!

    .

    ভবদেবের পরদিন সকালেই চলে যাবার কথা। কিন্তু শোনা গেল পরদিন লঞ্চ ছাড়বে না। অতএব কী আর করা? শানু বলল, আর একদিন মেয়ে আগলাননা।

    কিন্তু এই আগলানোর ব্যবস্থাটা মনঃপূত না হবার কিংবা নেহাতই সৌজন্যের খাতিরে জগন্নাথ পিতাপুত্রীকে নিজের বাড়িতে দুপুরে খাবার নেমন্তন্ন করলেন।

    ভবদেব অবশ্য না না করলেন, বললেন, এসব হাঙ্গামায় কী দরকার? এই তো বললেন ওই মেয়েটি রান্নায় এক্সপার্ট।

    আহা সে নমুনা তো গতরাত্রে কিছুটা পেয়েছেন, আজ রাতেও পাবেন। এই দুপুরটা গরিবের কুঁড়েয় দুটো মাছ ভাত হোক। না করলে মনে দুঃখ পাব।

    তবে আর কী করা? মানুষকে দুঃখ দেওয়া তো সম্ভব নয় ভবদেবের।

    অন্তঃপুরে জগন্নাথের একটি গিন্নি আছেন বোঝা গেল, কিন্তু দেখা গেল না। জগন্নাথই পরিবেশন করলেন।

    কী আশ্চর্য! আপনি কেন?

    কী বলব স্যার! উনি বাইরের পুরুষের সম্মুখে বেরোতে নারাজ।

    কিন্তু আপনি কখন খাবেন?

    পরে হবে।

    তা আমার এই মেয়েই রান্নাঘর থেকে এনে-টেনে দিকনা। আপনি নিজে

    জগন্নাথ আত্মপ্রসাদের ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন, তার সারার্থ, তাঁর পরদানশিনা গৃহিণী চাকরি করা মেয়েদের পুরুষের সম্মান দিয়ে থাকেন। ঘোমটা দেন, কথা বলেন না। তাঁর কাছে মাস্টার বাবু আর মাস্টার দিদিতে কোনও পার্থক্য নেই। কাজেই ওনার রান্নাঘরে ঢোকার কথাই ওঠে না।

    মাস্টারবাবু আর মাস্টারদিদিতে তফাত নেই।

    বাড়ি ফিরে ভবদেব বললেন, এইখানে তোকে রেখে যাব আমি। এখনও বুঝে উঠতে পারছি না–

    এখনও ভয়ের থাবা দেখতে পাচ্ছে না শানু। তাই হেসে ফেলে বলে উঠল, সে কী বাবা, খারাপ কী। এ তো বেশ আদর্শ জায়গা! মেয়ে হয়ে পুরুষের প্রাপ্য সম্মান লাভ। উইমেন্স লিব আর বেশি কী চাইতে পারে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএই তো সেদিন
    Next Article রাতের পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }