Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প246 Mins Read0

    সপ্তম পর্ব—মানুষের শরীরের শরীরের ধুলো

    ১।

    সাইগারসন বলে নিয়েছিলেন শুরুতে আজ তিনিই কথা বলবেন। প্রয়োজনে তাঁর কথা অনুবাদ করে দেবে প্রিয়নাথ। অবশ্য প্রিয়নাথের কিছু বলার থাকলে সেটাও সে বলতে পারে। সাইগারসনের মুখ থমথমে। সচরাচর যে ফূর্তিবাজ মানুষটাকে দেখা যায় সে যেন কোথায় হারিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে তারিণীর কেবিনে এঁরা দুজন ছাড়াও রয়েছে গণপতি। গতকাল রাতে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছিল গণপতিকে। ডাক্তার সরকারের ওষুধে ম্যাজিকের মতো  কাজ করেছে। তারিণী মাথা তুলে বসেছে। জ্বর কমেছে। আজ ডাক্তার তাকে দুধ বার্লি পথ্য দিয়েছেন।

    ব্রায়ার রুট পাইপে তামাক ভরতে ভরতে সাইগারসন বললেন, “ব্রিটিশদের এই এক সমস্যা। তাঁদের দেশের ঘটনার আসল প্রভাব ঠিক কী বা কতটা সেটা ইংল্যান্ডে থেকে বোঝা যায় না। বোঝা সম্ভব না। আমি শুরুতে ঠিক সেই ভুলটাই করতে যাচ্ছিলাম। ভাবতাম আমি পৃথিবীর সেরা কনসাল্টিং ডিটেকটিভ, ফলে আস্তিনের ভিতরে তাস লুকিয়ে রাখার অধিকার একমাত্র আমারই আছে। প্রথমবার ভুল ভেঙেছিল চার বছর আগে। আপনার আর তারিণীচরণের সাহায্য ছাড়া ওই কেস সমাধান করা যেত না। অবশ্য সেটাকে সমাধান বলা যায় কি না তা নিয়ে আমার নিজের মধ্যেই এখন সন্দেহ জাগছে। বুঝতে পারছি ওটা শেষ তো না-ই, বরং শুরুর সূচনা ছিল। অশুভের ইঙ্গিত।

    আজ এই ঘরে আমরা যে চারজন আছি, প্রত্যেকের কাছে কিছু কিছু তথ্য আছে, যা আমরা পরস্পরের থেকে গোপন রেখেছি। কারণ হয়তো অবিশ্বাস, ভয় কিংবা সন্দেহ। মুশকিল হল যারা এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রে মেতেছে, তারা ঐক্যবদ্ধ। তাই তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদেরকেও এক হতে হবে। ফলে যেটা দরকার, যে যা কিছু জানি, সব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেব। সম্পূর্ণ চিত্রটা পরিষ্কার না হলে বিপদ ঠেকানো যাবে না। আর যদি আমার ধারণা সঠিক হয়, তবে বিপদ ভয়ংকর। এত ভয়ংকর যা আমরা কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারছি না।”

    পাইপের আগুন নিভে গেছিল। দেশলাই কাঠি ঠুকে আবার পাইপ ধরিয়ে সাইগারসন বললেন, “চার বছর আগে আমি এই দেশে যখন আসি, তখন তার দুটো কারণ ছিল। ইংল্যান্ডে অপরাধীদের চালনা করতেন কোনও প্রতিষ্ঠান না, এক সম্মাননীয় প্রফেসর। তাঁর নাম জেমস মরিয়ার্টি। ১৮৮০-র শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের গুপ্তচর বিভাগের কাছে খবর ছিল, এই প্রফেসরের সঙ্গে ফ্রিম্যাসনদের একটা দল নিয়মিত সম্পর্ক রেখে চলেছে। এরা কারা জানবার চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। কিন্তু চুনোপুঁটিদের নামই জানা গেছে। কোনও অদ্ভুত উপায়ে রাঘব বোয়ালরা পর্দার আড়ালে থেকে গেছে বারবার। তবু যাঁর দিকে প্রথম থেকেই ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের নজর ছিল, তিনি বেডলামের এক ডাক্তার। এলি হেনকি জুনিয়র। আমি আগেও এঁর কথা বলেছি। এটাও বলেছি যে ফ্রিম্যাসনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু আসল কারণ আরও গভীরে। বেডলামে থাকাকালীনই এলি কিছু একটা আবিষ্কার করেন, যার প্রকৃত স্বরূপ আমরা এখনও জানতে পারিনি। তবে সে আবিষ্কার মানবজাতিকে ধ্বংস অবধি করে দিতে পারে, এমনই নাকি তার ক্ষমতা। বেডলামে আমাদের গুপ্তচর জানিয়েছিল, হেনকি আর তাঁর শিষ্যরা, যার মধ্যে ডাক্তার রিচার্ড হ্যালিডেও ছিল, এই আবিষ্কারে দারুণ উৎফুল্ল হয়ে গেছিলেন। সরকারের টনক নড়ল। সেই আবিষ্কার যাতে হাসপাতালের গণ্ডি না ছাড়াতে পারে, সেইজন্য দুবেলা হেনকি, আর তাঁর বন্ধুদের সার্চ করা হতে লাগল। নজর রাখা হল তাঁদের উপরে। কিছু পাওয়া গেল না। আসলে যে-কোনো বড়ো যন্ত্রে একেবারে ছোটো কগ চাকাটাই কাজের কাজ করে। এখানেও তাই করেছিল।

    হেনকিদের দলের পিছনে যে মরিয়ার্টির শয়তানি বুদ্ধি কাজ করছিল, সেটাকে সরকার উপেক্ষাই করেছিল ততদিন। সেই আবিষ্কার নিশ্চিন্তে বেডলামের প্রাচীর পার করল। নিয়ে বেরোল এমন একজন, যাকে সন্দেহ করার কথা কেউ ভাবতেই পারবে না। সাফাইওয়ালাকে আর কে গুরুত্ব দেয়? মরিয়ার্টি জানত সেই ঘটনা সরকার জানে। লন্ডনে বসে সেটা নিয়ে কিচ্ছু করা যাবে না। সেই সাফাইকর্মীকে দিয়ে জিনিসটা পাঠিয়ে দেওয়া হল কলকাতায়। ইংরেজরা যাকে দ্বিতীয় লন্ডন বলতেন। ভেবে দেখুন, এখানে লন্ডনের প্রায় সব সুবিধাই আছে, কিন্তু ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের চোখরাঙানি নেই। ফলে এই অস্ত্র নিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা অনেক বেশি। এমন সময় একটা ঘটনা ঘটল, যার জন্য তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না। সেই সাফাইকর্মী এ দেশে এসে বেশিদিন শান্ত থাকতে পারল না। আমাদের এই ইন্সপেক্টর প্রিয়নাথই তাকে কবজা করলেন।”

    “হিলি?”

    “একদম তাই। কিন্তু হিলি ধরা পড়ার আগে কাজের কাজটি করে দিয়েছিল। পুলিশ কমিশনার আমাকে হিলির কাগজপত্র দেখিয়েছেন। হিলি এ দেশে এসে প্রথমেই যায় হুগলীতে। সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন উইলিয়াম পামার। যাঁকে অনেক আগেই সরকারবিরোধী কাজের জন্য ইংল্যান্ড থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। খুব ভুল না হলে হিলি পামারকে হেনকির আবিষ্কারটা দেয়। এই অবধিই তার কাজ। জেলে হিলির সঙ্গে ওয়ার্নারের আলাপ হয়। ওয়ার্নারের সঙ্গে সমাজের উঁচুতলার পরিচয় ছিল। সে হিলিকে কী বুদ্ধি দিয়েছিল জানি না, দুই বছর বাদে দুজনেই পালাল। মাঝের এই দুই বছর হিলির চুরি করে আনা জিনিস কোথায় ছিল জানা নেই।”

    “এটা কত সালের ঘটনা?”

    “১৮৮৭ সালের। কারণ তখন বেকার স্ট্রিটের বাড়িতে আমি একা থাকি। আমার সঙ্গীর সদ্য বিয়ে হয়েছে। আমার দাদার কাছে খবর আসে, পামারের সঙ্গে একজন দেখা করতে গেছিল। কিন্তু সেটাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। আসলে হিলিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ১৮৮৯-এ হিলি জেল থেকে পালালে লন্ডনের অপরাধীরাও নড়েচড়ে বসে। বেডলামে প্রায়ই দরজা বন্ধ করে মিটিং শুরু হয়। তখন গোটা লন্ডন উত্তেজনায় ফুটছে। গোয়েন্দা বিভাগের প্রায় সবাই নিশ্চিত, জ্যাক দ্য রিপার নামে পতিতাদের যে বা যারা খুন করছে তারা শল্যচিকিৎসক না না হয়ে যায় না। ফলে তাঁদের উপরে নজরদারি ছিলই। সেই পরিবেশে এই ধরনের মোলাকাত সরকার ভালো চোখে নেয়নি। এদিকে এতজন নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া কিছু সম্ভব না। ১৮৯১- এর মার্চে সরকারি গোয়েন্দা বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। আসল বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। মরিয়ার্টিকে মরতে হবে। আর সেই খুনের দায়িত্ব পেল আইনের সবচেয়ে বড়ো রক্ষক। আমি।”

    সবাই চুপ। আবার খোলা জানলা দিয়ে দুটো মৌমাছি ভিতরে ঢুকে গুনগুন করছে। সাইগারসন একটু অন্যমনস্ক হয়ে সেইদিকে তাকালেন। ম্লান হেসে বললেন, “এইসব শেষ হয়ে যাক। মৌমাছির একটা খামার খুলব। আজকাল বড়ো ক্লান্ত লাগে। যাক যা বলছিলাম। প্রায় এক বছর আমাকে লুকিয়ে রাখা হল। প্রচার করে দেওয়া হল রাইখেনবার্গ জলপ্রপাতে পড়ে মরিয়ার্টির সঙ্গে আমিও মারা গেছি। কিন্তু ১৮৯২ নাগাদ দুটো সমস্যা দেখা দিল। মরিয়ার্টির মৃত্যুর পরেও তাঁর সঙ্গীরা বিশ্বাস করত আমি বেঁচে আছি। ফলে আমাকে লন্ডনে রাখা কঠিন হয়ে গেল। দ্বিতীয় কারণটা তোমরা জানো। রিচার্ড হ্যালিডে নাম বদলে ম্যাজিশিয়ান কার্টারের দলে ঢুকে পড়ল। অন্যদিকে ইন্ডিয়া থেকে খবর এল পামার মৃত্যুশয্যায়। বেডলামে গোপনে হ্যালিডেরা কিছু পরীক্ষা চালাত, কিন্তু সেটা ঠিক কী, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা ছিল না। হ্যালিডের ওপরে নজর রাখতে আমায় এ দেশে পাঠানো হল।”

    “আপনি হ্যালিডে বা কার্টারের ঘর গোপনে পরীক্ষা করেননি?” প্রিয়নাথ জিজ্ঞাসা করল। “করেছি। বহুবার। সন্দেহজনক কিছু পাইনি। মাঝে মাঝে আমারও মনে হতে লাগল আমরা বুনো হাঁসের পিছনে ধাওয়া করছি। এ দেশে এসে শুনি আর-এক কাণ্ড। বোম্বে নিয়ে যাওয়ার পথে হিলি পালিয়েছে, বদলে যাকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয় সে অন্য কেউ।”

    “একেবারেই তাই সাহেব”, প্রিয়নাথ বলে ওঠে। “আমি নিজে তার প্রমাণ। আমি বলেছিলাম। সংবাদপত্রেও ছাপা হয়েছিল। কিন্তু কেউ মানেনি। সবচেয়ে বড়ো কথা, কঠিন শাস্তি পাবে জেনেও সেই লোকটি বারবার দাবি করছিল সে-ই হিলি।”

    “এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?”

    “যা মনে হয়, সরকারি দারোগা হিসেবে তা বলার এক্তিয়ার আমার নেই।”

    “এখানে তো সরকারি কেউ নেই। নির্ভয়ে বলুন।”

    “আমার বিশ্বাস আসল হিলিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়তো মেরে ফেলা হয়েছে। আর সেই জায়গায় প্রচুর অর্থ ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে এই লোকটিকে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়। বিচার শেষ হতে না হতে একে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”

    “আর এই কাণ্ডটি কে বা কারা করতে পারে?”

    “সরকারের কোনও বড়ো পদাধিকারী।”

    “ব্রাভো ইনস্পেকটর! এবার বুঝলেন তো, ভয়টা ঠিক কোথায়? এদের হাত কোথায় আর কতদূর ছড়িয়ে তার আন্দাজটুকু আমাদের নেই। তবে আমার ধারণা ছিল কার্টার আর হ্যালিডে এই খেলার দুই বড়ো গুটি। রক্ত পরিবর্তনের যে ঘটনাটা গতবার শুনেছিলাম সেটা আদৌ সত্যি কি না তা নিয়ে আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে। দুটো ব্যাপার পরিষ্কার। পলের মতো কার্টার আর হ্যালিডের খুনও নেহাত উত্তেজনার বশে না। হিলিকে যেমন কাজ হতে না হতেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এদেরও তাই। এই খেলায় এরাও বোড়ে। এক মাসের উপরে সোনাগাজির এক ঘরে ডালান্ডা হাউসের পাগলদের উপরে কোনও একটা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। করছিল স্বয়ং হ্যালিডে। আমাদের বোঝানো হয়েছিল, সেই পরীক্ষা নেহাত রক্ত বদলে পাগলামো সারানোর পরীক্ষা আমরাও বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম পলের মৃত্যু নেহাত দুর্ঘটনা। কিন্তু গণপতির কাছে যা শুনলাম, তাতে এটা পরিষ্কার, পলকে যে খুন করা হবে, সেটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। এক সপ্তাহ আগে থেকে। কিন্তু কেন? জানি না।”

    “রমণপাষ্টি।” ক্ষীণ কণ্ঠে বলল তারিণী।

    এতক্ষণ সে যে ঘরে আছে সেটাই কারও খেয়াল ছিল না। সাইগারসন একলাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন। তারিণী অসুস্থ না হলে বোধহয় তাকে জড়িয়ে ধরেই নাচতেন।

    “তুমি আমায় বলেছিলে। প্রথম দিনই বলেছিলে। আমি শুধু মেলাতে পারিনি। তার মানে পলের মৃত্যু খুন না, দুর্ঘটনা না। একেবারে রিচুয়ালিস্টিক ডেথ। বড়ো কাজে হাত দেবার আগে আত্মবলিদান। তাও সেই সাধু অরিজেনের কায়দায়। শুধু এক্ষেত্রে কাটা অণ্ডকোশ মুখে পুরে দেওয়া হয় না। কি, তাই তো?”

    “হ্যাঁ। এক্ষেত্রে সেই অণ্ডকোশ পাঠিয়ে দেও হয় তার কাছে, যাকে এই পরের চাল দিতে হবে।”

    “ঠিক। ঠিক। কিন্তু দ্যাখো, তারপরেই সব চুপচাপ। যেন কিছুই হয়নি। আমরাও নিশ্চিন্ত।” সাইগারসন বলে চললেন, “গোটা ইংল্যান্ডে ডাক্তারদের কড়া নজরে রাখা হল। বেড়লাম আর বার্ট হাসপাতালের সন্দেহে থাকা সব ডাক্তারকে ছাঁটাই করা হল। আমি নিজেও ছোটোখাটো মামলায় জড়িয়ে পড়লাম। ভাবলাম ভারতে আর আসতে হবে না। একটা ছোটো কাটা আমার মনে বিঁধে ছিল। গত চার বছরে বারবার যেটা ভেবেও কূল করতে পারিনি। এই গোটা কাহিনিতে একজন আড়ালে থেকে গেছে। সে কোথা থেকে এল আর কোথায় গেল, কিছুই জানি না। শুধু কয়েকটা ব্যাপার ছাড়া। ডালান্ডা হাউসে আমি আর প্রিয়নাথ তাকে দেখেছিলাম, কার্টারের ম্যাজিক শো-তে সে ছিল, কার্টারের গলায় তার আঙুলের ছাপ আমি দেখেছি। তবে সে নিতান্ত নেটিভ ছোকরা, ব্রিটিশ সরকারের তাকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই ভেবে অবজ্ঞা করেছিলাম। গণপতি আমার চোখ খুলে দিল। সেই প্রথম আমি খেয়াল করলাম ওয়ার্নার, হিলি, লখন থেকে শুরু করে কার্টার, হ্যালিডে সবাই হয় জারজ সন্তান, নয় হাফবর্ন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। ১৩১৪ সালের ১৮ মার্চ ফ্রিম্যাসনদের গ্র্যান্ডমাস্টার জ্যাকোয়া দ্য মলির দেহ ছিন্নভিন্ন করে পুড়িয়ে মারে রাজা আর পুরোহিত। এই জ্যাকোয়ার পিতা কে তা সঠিক জানা যায় না। ফলে ম্যাসন আর জাবুলনদের মধ্যে রক্তের শুদ্ধতার বাছবিচার নেই। বরং উলটোটা। আমাদের শ্বেতাঙ্গ সমাজ বা নেটিভ ভারতীয় সমাজ যাদের ঘৃণা করে দূরে ঠেলেছে, তাদেরই জাবুলন এক ছাতার তলায় এনেছে। তাই লখন এই খেলার বোড়ে না। রীতিমতো ঘোড়া বা নাইট। একটাই সমস্যা। চার বছর আগে তাকে দেখেছিলাম। তারপর কেউ তাকে দেখেনি। আমি নিশ্চিত, আড়ালে থেকে সে গোটা খেলাটা খেলছে। কিন্তু সেটার ভয়াবহতা বুঝলেও সেটা ঠিক কী হতে পারে, বিপদ কোন দিক থেকে আসবে, তা ধরতে পারছি না। তাই সবার আগে একটা কাজ করতে হবে। ভালো আঁকিয়ে দিয়ে তার একটা ছবি আঁকিয়ে নিতে হবে আমাদের স্মৃতি থেকে।”

    প্রিয়নাথ এই অংশটা বাংলায় বলতেই গণপতি বলে উঠল, “দরকার নেই। আমি দুদিন আগেই লখনকে দেখেছি।”

    “নিজের চোখে?”

    “নিজের চোখে। তবে সশরীরে না। যেদিন দারোগাবাবু আমায় শো থেকে তুলে নিয়ে এলেন, সেই শো-র আগে আমার বন্ধু হীরালাল ছায়াবাজি দেখাচ্ছিল। ওরই তোলা ছবি। তাতে কলকাতার নানা জায়গার ছবির সঙ্গে রাজভবনের ছবিও আছে। সেই রাজভবনের সামনেই আমি লখনকে দেখেছি। ও খেয়াল করেনি ওর ছবি তোলা হয়ে গেছে। “

    “এক্সেলেন্ট!” শিস দিয়ে উঠলেন সাইগারসন। “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে ছবি আমাদের জোগাড় করতে হবে। এবার তারিণী বলো। দু-একটা ছোট প্রশ্ন। ইংল্যান্ডে আমায় জানানো হল, ভারতে, বিশেষ করে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় কিছু মানুষ হঠাৎ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। মানুষ খুন করছে।আবার পরমুহূর্তেই সে ঘটনা ভুলে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, চোখের সামনে যাকে খুন করতে দেখা যাচ্ছে, তার হাতের ছাপের সঙ্গে মৃতের দেহে পাওয়া হাতের ছাপ মিলছে না। আমাদের বিজ্ঞান এর কোনও ব্যাখ্যা দেয় না। আমি নিজে ভূতে বিশ্বাস করি না। যাকে বাঁচানোর জন্য অনেক কিছু জেনেও লুকিয়েছ, তাকে তো ওরা মেরেই ফেলেছে। শৈল তোমার এত কাছের বন্ধু। তুমিই ওকে ম্যাসনদের কাছে নিয়ে গেছিলে। তোমায় কি ও কোনও দিন কিছু বলেছে? জানো ওরা কী করতে চলেছে?”

    তারিণী মাথা নাড়ল। তার দুচোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। ধরা গলায় বলল, “আমি ওকে অনেকবার বারণ করেছিলেম। ন্যাশনালের ঘটনাটা ঘটার পর একেবারে মনমরা হয়ে গেছিল। দুই-তিনবার নিজের প্রাণ নেবার চেষ্টাও করেছিল। বিষ খেয়ে। আমি বাঁচিয়েছি। তারপর আমি বললেম, চল আমাদের সংগঠনে যাবি। যেতে চায়নি। আমিই জোর করে নিয়ে গেলাম। তারপরেই কেমন যেন বদলে গেল। আমি নিয়মিত যেতে পারতাম না। ও যেত। একদিন দেখি খেস্টান হয়েছে। বললাম, কী দরকার? বলল, দরকার আছে। লেখার হাত ভালো ছিল। নাটক লেখা বন্ধ করে বিজ্ঞাপন লিখত। তারপর এক বছর ঘুরল না। ওকে যারা অত্যাচার করেছিল সব একে একে মরল। সন্দেহ হল। বললাম, তুই কি কিচু জানিস? বলল, যিশু শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু যিশু তো সবাইকে ভালোবাসেন জানি। তিনি কেন শাস্তি দেবেন? পুলিশে জানাতে পারতাম। জানাইনি। বন্ধুকে ধরিয়ে দেব? তারপর সেদিন দারোগাবাবু বেরিয়ে যেতে ওর লেখা নাটকটা পড়লাম। পড়েই আমি ভয় পেয়ে গেছি। এ যদি সত্যি হয় তবে শৈল আগুন নিয়ে খেলছে। ঠিক করলাম ওর এই নাটক কিছুতেই প্রকাশ পেতে দেব না। ওকে বলব পুলিশকে সব জানাতে। ও ফিরল না। বাধ্য হয়ে আমি দারোগাবাবুকে নাটকটা দিয়ে এলাম। মুখে কিছু বললাম না। যদি তাতে শৈলর কিছু ক্ষতি হয়।”

    “আমি নাটকটা পড়েছি। কিন্তু তাতে ভয় পাবার মতো কিছু তো দেখতে পেলাম না!” প্রিয়নাথ বললে।

    “আপনি ভালো মানুষ দারোগাবাবু। প্যাঁচের কথা বুঝবেন কেমন করে? তাও ভেবেছিলাম যদি বোঝেন। নিজের হাতে বন্ধুকে ধরিয়ে দিতে মন চাইছিল না। এখন সেই বন্ধুই যখন নেই… দেখি, নাটকের বইটা। এনেছেন? সেদিন। খুব সম্ভব এটার বাকি কপিগুলো খুঁজতেই ওরা এসেছিল। আমি মাঝে চলে আসায়…”

    প্রিয়নাথ পকেট থেকে বইটা এগিয়ে দিল। তারিণী পাতা উলটে বলল, “এই দেখুন চতুর্থ অঙ্কে। কাপালিকের গৃহে একজন প্রবেশ করেছে। কাপালিক তাকে প্রশ্ন করছে। এই প্রশ্ন একেবারে ম্যাসনিক ব্রাদারহুডে যোগ দেবার দিন যখন দীক্ষা হয়, সেদিন করা হয়। ম্যাসনিক ব্রাদাররা জানেন। তারপরেই এই ভূতের কথা। এই ভূতের কথাই বাবু প্রসন্নকুমার আমায় বলেছিলেন। সেটা ঠিক কী কেউ জানে না। হতে পারে হিলির চুরি করে আনা সেই অজানা জিনিষ, হতে পারে অন্য কিছু। কিন্তু ম্যাসনে এই ভূত খুব কুখ্যাত। জাবুলনরা এটা নিয়ে কিছু করার চেষ্টায় আছে সেটা ম্যাসনরাও জানে। তারা শান্তিপ্রিয়। তাই তারাও চায় এই ভূতের খোঁজ

    পেতে, যাতে তারা ভূতকে নিরস্ত করতে পারে। আমার যেভাবেই হোক শৈল সেই ভূতের খবর জানতে পেরেছিল।”

    “কিন্তু এই ভূতটা ঠিক কী আর এটা দিয়ে জাবুলন কী করতে চাইছে?” এবারে বেশ অধৈর্য হয়েই বললেন সাইগারসন।

    “ভূত কী তা জানি না, তবে… আমায় একটা পেনসিল দেবেন?” দুর্বল গলায় বলল তারিণী। সাইগারসন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পকেটবুকে রাবারব্যান্ডে বাঁধা পেনসিলটা বার করে তারিণীর হাতে দিলেন। তারিণী প্রিয়নাথের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি বাংলায় আপনাকে বলছি। আপনি সাহেবকে ইংরাজিতে বলে দেবেন।” এই বলে বইয়ের এক জায়গায় পেনসিল দিয়ে হালকা হালকা দাগ দিতে থাকল।

    “ফ্রিম্যাসনদের যে কটা কোড আছে তার মধ্যে এটা ম্যাসনদের প্রায় সবাই জানে। পুরোনো কোড। রিভার্স রিড। কেউ কেউ একে অক্স-টার্নও বলেন। যেভাবে গোরু খেতে লাঙল দেয়। সামনে থেকে পিছনে গিয়েই আবার সেই পথে পিছনে ফেরা। বাক্যের সামনে থেকে পিছনে পড়লে একরকম। উলটো পড়লে আলাদা। বাংলায় এর নাম বিপরীত সম্পাতি। বড়ো একটা লেখাকে ছোটো ছোটো ভাগে ভেঙে দেওয়া হয়। সাধারণভাবে পড়লে একটা অর্থ অবশ্যই থাকে। কিন্তু আসল অর্থ লুকিয়ে আছে উলটো করে পড়লে। ম্যাসনরা যখন জেরুজালেমে ছিল তখন এই কোড চালু হয়। এখানে শেষ বাক্য থেকে শুরু করতে হবে। তারপর পড়তে হবে শেষ থেকে শুরুতে। প্রথমে একটা শব্দ দিয়ে দ্বিতীয় শব্দ। এই দেখুন। পরের বাক্যে দুটো বাদ দিয়ে তৃতীয় শব্দ। এইভাবে। দেখুন, আমি দাগ দিয়ে দিলাম। এবার নিচ থেকে উপরে পড়ুন।”

    প্রিয়নাথ একবার পড়ল। দুইবার পড়ল। বারবার পড়ল। এ যে অবিশ্বাস্য! সে এতটাই অবাক হয়ে গেল যে পাশে দাঁড়িয়ে উশখুশ করা সাইগারসনকে ইংরাজিতে অনুবাদ করে দেবার ভাষা জোগাচ্ছিল না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার
    Next Article আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.