Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ১.১৫

    ১.১৫

    জালালি লাল চোখ দুটোর সঙ্গে জলের ভিতর তামাশা করছিল। সেই চোখ দুটো এগোচ্ছে পিছোচ্ছে। জলের নিচে ডুব দিলে ঘন নীল অথবা সবুজ রঙ চারদিকে প্রেতের মতো ভেসে বেড়ায়। নিচে সূর্যের আলো যতটুকু পৌঁছায় ততটুকু আবছা দেখা যায়। কিন্তু গভীর জলের ভিতর জালালি আদৌ বুঝতে পারেনি, বড় রাক্ষুসে গজার মাছটা ওকে মরণ কামড় দেবার তালে আছে। ফাঁক পেলেই এসে খুবলে মাংস তুলে নেবে। কারণ মাছটা তার আস্তানায় জালালির উপদ্রব আদৌ সহ্য করতে পারছে না।

    জালালি জলের ভেতর ডুবে দেখল, মাটি খুব মসৃণ। কোনও মাছের আস্তানা হলেই–বড় মাছ হতে হয়, রুই কাতলা অথবা কালিবাউস, বড় প্রকাণ্ড হতে হবে, হলেই নিচে, গভীর জলের নিচে বৃত্তাকার সমতল আবাস। চারপাশের ঘন ঝোপ-জঙ্গলের ভিতর মাছের এই নিঃসঙ্গ নিবাস। নিবাসের আশেপাশে যত জালালি শালুকের জন্য ঘুরঘুর করছিল তত মাছটা ক্ষেপে যাচ্ছিল। তত মাছটার লেজ কাঁপছে জলের নিচে। তত এগুচ্ছে পিছোচ্ছে। ভয় পাচ্ছে মানুষ দেখে, অথবা ভয় পাচ্ছে না, ঘোড়ার মতো কদমে পাখনা নাড়াচ্ছে। মাছটার শরীরে বড় বড় চক্র। অজগর সাপের গা যেন। বড় একটা কালো রঙের থাম যেন। শরীরে তার মানুষের চেয়ে কত অধিক শক্তি, সেই শক্তি নিয়ে দুর্বল জালালির বুক থেকে খুবলে মাংস তুলে নেবার জন্য জোরে এসে ধাক্কা মারল। জালালির মাথাটা নিচের দিকে ছিল তখন। জলের নিচে শালুক, মাটিতে শালুক—জালালি দু-ঠ্যাং ফাঁক করে প্রায় ব্যাঙের মতো ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছিল। ঠিক নিচে নেমে যাবার মুখে মাছটা এসে বুকে ধাক্কা মারল।

    জালালির এবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। জলের ভিতর মাছটা অতিকায় পশুর মতো দাপাচ্ছে। ফলে জলে ঘূর্ণি উঠছিল। জলের ভিতর মাছটা ঘাস লতাপাতাগুলি উল্টে পাল্টে ক্ষীণকায় জালালি ক সাপটে ধরল। শেষবারের মতো সে ঘাস-লতাপাতা ফুঁড়ে ওপরে ভেসে ওঠার দুবার চেষ্টা করতে গিয়ে একটা ঢেকুর তুলল। একটা বড় শ্বাস নিতে গিয়ে জল গিলে ফেলল অনেকটা। ফের উঠতে গিয়ে যখন আর পারছিল না, তখন জলের ভিতরই শ্বাস নেবার চেষ্টা করতে গিয়ে মনে হল রাজ্যর সব জল পেটে ঢুকে যাচ্ছে। যত অন্ধকারের ভিতর শালুকের লতা এবং সেইসব পদ্মপাতার শক্ত লতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাইছিল এবং প্রাণের যাতনায় ছটফট করছে তত লাল চোখ দুটো বড় হতে হতে এক সময় আগুনের গোলা হয়ে গেল, তারপর ফস করে নিভে যাওয়ার মতো, জলের সঙ্গে জল মিশে গেলে যেমন হয় ঠিক তেমনি আগুনের গোলা দুটো জলের সঙ্গে মিশে একটা কুসুমের মতো রঙ নিয়ে খানিকক্ষণ জেগে থাকল। তারপর জালালির প্রাণটুকু ফুটকরি তুলে জলের উপর ভেসে উঠলে কুসুমের রঙটাও আর থাকল না। ঘোলা জলটা ক্রমে থিতিয়ে আসতে থাকল। জলজ জঙ্গল, লতাপাতা ঝোপ-ঘাস সব জলের নিচে চুপ হয়ে আছে। আর নড়ছে না। লতাপাতার ভিতর একটা মানুষ আটকা পড়ল। আজব জীব মনে হচ্ছে এখন জালালিকে। ঘাড় গলায় লতাপাতা পেঁচিয়ে আছে। পায়ের নিচে এবং বুকের চারপাশে অজস্র কদম ফুলের মতো জলজ ঘাস লেপ্টে আছে। জালালি উপুড় হয়ে আছে। পা দুটো উপরের দিকে মাথাটা নিচের দিকে হেলানো। একটা ছোট মাছ রূপালী ঝিলিক তুলে জালালির নাকে মুখে এবং স্তনে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।

    গজার মাছটা নড়ছিল না। সে দূরে লেজ খাড়া করে একদৃষ্টে ঘটনাটা দেখছে। যখন দেখল আজব জীবটা লতাপাতায় আটকে গিয়ে আর নড়তে পারছে না তখন নিজের আস্তানার চারপাশে বিজয়ীর মতো পাক খেল। তারপর দ্রুত পাখনা ভাসিয়ে তীরের মতো দক্ষিণের দিকে ছুটতে থাকল। সকলকে যেন খবর দিতে হয়-দ্যাখো এসে আমার আস্তানায় একটা আজব জীবকে আমি ধরে ফেলেছি।

    মাছটা এত বড় আর কপালে মনে হয় সিঁদুর দেওয়া—মাছটা কত প্রাচীনকালের কে জানে! মাছটার গায়ে কত মানুষের আজন্মকাল থেকে কোঁচ অথবা একহলার শিকারচিহ্ন। মাছটার ডান ঠোঁটে দুটো বোয়ালের বঁড়শি নোলকের মতো দুলছে। মাছটার গায়ে কোচের ছোট ছোট কালি। খুঁজলে, একটা দুটো নয়, অনেক কটা যেন মাংসের ভিতর থেকে বের করা যাবে। সেই মাছটা এবার আনন্দে এবং উত্তেজনায় বিলের ভিতর জল ফুঁড়ে আকাশের দিকে লাফিয়ে উঠল। তারপর সেই পাড়ের লোক, যারা পাতিল একা ভেসে যায় বলে হায় হায় করছিল, তারা দেখল বিলের জলে এমন একটা মাছ নয়, যেন হাজার লক্ষ মাছ সেই প্রাচীন বিলের জল ফুঁড়ে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে, নেমে আসছে। ভয়ে এবং বিস্ময়ে মানুষগুলি দেখল অনন্ত জলরাশির ভিতর বড় বড় রাক্ষুসে সব গজার মাছ কুমিরের মতো জলের উপর ভেসে উঠেছে। ওরা যেন সন্তর্পণে সকলকে সাবধান করে দিল—বাপুরা দ্যাখো, আমাদের তামাশা দ্যাখো। আমরা জলের জীব, তাবৎ সুখ আমাদের জলে।

    সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। বিলের জলে সূর্যের লাল রঙ। আকাশে লাল রঙ। মানুষগুলির মুখে আগুনের মতো উজ্জ্বল এক রঙ। গরিব দুঃখী মানুষেরা অসহায় মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শীত। উত্তুরে হাওয়ায় সব শীত এসে এই বিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। জলে ডুবে ডুবে ওদের হাত পা সাদা হয়ে গেছে। ওরা একসঙ্গে সেই হাজার রাক্ষুসে গজার মাছের ডুব দেওয়া এবং কখনও কখনও জল ফুঁড়ে বাতাসের দিকে উঠে যাওয়া দেখছে। এমন হয়। সেই প্রাচীন বৃদ্ধা যার শরীরে প্রায় কোনও বাস ছিল না, যে আগুন জ্বালাবার জন্য ঘাসপাতা সংগ্রহ করছে এবং যে আগুন জ্বালাতে না পারলে, গামছার মতো জ্যালজ্যালে শাড়িটা শুকিয়ে নিতে না পারলে প্রচণ্ড শীতে এই বিলের পাড়েই মরে পড়ে থাকবে; সে ঘাসপাতায় আগুন জ্বেলে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলছে—কী বলছে বোঝা যাচ্ছে না, শুধু চোখমুখ দেখলে ধরা যাচ্ছে—যেন বলার ইচ্ছা, হে তোমরা বাপুরা মনুষ্যজাতিগণ দ্যাখো, মাছের খেলা দ্যাখো। আনন্দের দিনে একসঙ্গে ওরা কেমন ঘোরাফেরা করছে দ্যাখো। তোমরা খবর রাখ না মনুষ্যগণ, নোয়া নামক এক নবি জলে নৌকা ভাসিয়েছিলেন। সেই মহাপ্লাবনের দিন স্মরণ কর। এমন সব কথাই বুঝি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে চাইছিল বৃদ্ধা কিন্তু এসব বলবার অর্থ কি! জালালি, যার স্বামী আবেদালি, যে গয়না নৌকার মাঝি, যার বিবি এখন জলের নিচে দুই ফেরাস্তার আলোর জন্য প্রতীক্ষা করছে, তার আর মহাপ্লাবনের খবর নিয়ে কী হবে! সুতরাং বৃদ্ধার দিকে কেউ আর তাকাল না। সকলে শীতের ভিতর শুধু আগুনটুকুর জন্য লোভী হয়ে উঠল। সকলে জালালি জলে ডুবে যাওয়ার ঘটনাটা পর্যন্ত ভুলে গেল সহসা। ওরা নিজেদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিলের পাড় থেকে ঘাসপাতা এনে শুকনো সব ঘাসপাতা খড়কুটো এবং ঝোপজঙ্গল থেকে ডালপালা এই অগ্নিকুণ্ডে সকলে নিক্ষেপ করতে থাকল। বিলের ভিতর ক্রমে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। পাড়ে আগুন মাথার ওপর উঠে গিয়ে প্রায় আকাশ ছুঁয়ে দিতে চাইছে। কী লেলিহান জিহ্বা! সেই আগুনের প্রচণ্ড উত্তাপ পেয়ে মনে হল সেই সহস্র মাছ বিলের দিকে চলে যাচ্ছে।

    পাড়ে দাঁড়িয়ে তখন বিশাল মানুষ পাগলঠাকুর। তিনি আগুন দেখে শীত নিবারণের জন্য ছুটে গেলেন না। তিনি হাত কচলে শুধু বললেন, গ্যাৎচোরেৎশালা। কারণ বিলে মানুষ ডুবে গেল। দুই পদ্মকলির নিচে মানুষ ডুবে গেল। জলে ডুবে শালুক তুলতে গিয়ে মানুষটা আর উঠল না।

    শীতের জন্য পাড়ের মানুষেরা আগুনের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিলের সেই পাতিলটা নড়ছে না। বাতাস পড়ে গেছে। দূরে পদ্মপাতার ভিতর পাতিলটা ভাসতে ভাসতে আটকে গেল। বিলের জলে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল বলে ক্রমে জলটা রক্তবর্ণ, ফিকে রক্তিম আভা, ক্রমশ ফিকে হতে হতে একেবারে নীল হয়ে গেল। নীল থেকে সবুজ এবং পরে কালো জল। এখন এই অনন্ত জলরাশি মনে হচ্ছে স্থির। জলে কোনও ফুটকরি ভাসছে না। শীতের ভয়ে মাছগুলি পর্যন্ত নড়তে সাহস পাচ্ছে না। পাগলঠাকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ফের উচ্চারণ করলেন, গ্যাৎচোরেৎশালা।

    মোষের কাটা মুণ্ড তেমনি বিলে পড়ে থাকল! মানুষগুলি যারা কাটা মোষ নিয়ে শীতলক্ষ্যার পাড়ে যাবে তাদের কাছে বুঝি মাথাটা আদৌ লোভনীয় নয়। মাথাটা এখানে ওখানে ফেলে দিতেই হয়। মোষের সব মাংস খাওয়া যায় না। তবু নিতে হয়। প্রসাদ ফেলতে নেই। মাথা নিলে চালডালের পরিমাণটা বাড়ে। সুতরাং এই বিলের ভিতর কাটা মুণ্ড মোষের আগুনের উত্তাপে কান দুটো খাড়া করে দিল। আহা, সেই কখন শীতের ভোরে অবলা কচি মোষটাকে স্নান করানো হয়েছিল, তেল-সিঁদুর মাথায় দিয়ে কচি ঘাস খেতে দিয়েছিল। গলায় করবী ফুলের মালা। পায়ে রক্তজবার মালা ঠিক নূপুরের মতো। যেন ধর্মক্ষেত্রে কচি মোষের বাচ্চাটা এবার মরণ নাচন নাচবে।

    অবলা মোষের এই বাচ্চা শীতের সকালে স্নান করে হাড়িকাঠের পাশে শুয়েছিল। শীতে নড়তে পারছিল না। রাজার মতো তার আপ্যায়ন। ছোট কচিকাচা ছেলেরা নূতন জামা-কাপড় পরে, কী সুন্দর ফুটফুটে মেয়েরা নূতন ফ্রক পরে কচি ঘাস রেখে গেছে সামনে। সারা সকালটায় ওর কত সোহাগ ছিল। বুড়ো বামুনঠাকুরের মাথায় বড় টিকি, টিকিতে রক্তজবা বেঁধে সেই যে এক সের ঘি নিয়ে বসে গেল, আর কিছুতেই ওঠে না। ঘাড়ে গলায় ঘি মেখে মোষের, চবর চবর সে পান চিবুচ্ছিল। ঘাড়ে-গলায় ঘি মেখে মাংসের ভিতরটা নরম করে দিচ্ছিল। যেন খাঁড়া আটকে না যায়। কি প্রাণান্তকর চেষ্টা সফল বলির জন্য। কিন্তু হলে কী হয়, মোষের প্রাণবায়ু গলায় আটকে আছে। সব খেতে বিস্বাদ ঢাকঢোলের বাজনায়, ধূপধুনোর গন্ধে, চন্দনের গন্ধে, ফুল-বেলপাতার গন্ধে এবং ভয়ঙ্কর শীতে মোষটা বড় নির্জীব ছিল সারাদিন। এখন একটু আগুনের তাপ এসে গায়ে লাগতেই কাটা মুণ্ড কান খাড়া করে দিল। পাগলঠাকুর এইসব দেখে, না হেসে এবং না বলে পারলেন না—গ্যাৎচোরেৎশালা।

    তখন গ্রামে গ্রামে খবর রটে গেল—এ সালেও বিলের জলে মানুষ ডুবেছে। এমন কোনও সাল নেই, বছর যায় না, মানুষ ডুবে না মরে এই জলে। কিংবদন্তীর পাঁচালিকে রক্ষা করে আসছে যেন। সুতরাং সর্বত্র খবর—ফাওসার বিলে, যে বিল বিশাল, যে বিলের তল খুঁজে পাওয়া যায় না, মানুষ যে বিলে পড়লে পথ হারিয়ে ফেলে, তেমন বিলে এ সালে আবেদালির বিবি জালালি ডুবে মরল। টোডারবাগের আবেদালি গয়না নৌকা চালাতে সেই যে বর্ষার দিনে নেমে গেছে আর উঠে আসে নি। জব্বর বাবুর হাটে গেছে। সুতরাং মানুষজন পাঠাতে হয়, না হলে বিল থেকে লাশ তোলা যাবে না। কোথায় কোন জলে ডুবে আছে অথবা কিংবদন্তীর রাক্ষসটা জালালিকে নিয়ে কোথায় ডুব দিয়েছে কে জানে!

    বিলের মানুষগুলি আগুন নিভে গেলে যে যার গাঁয়ের দিকে রওনা হল। এখন জ্যোৎস্না নামবে বিলের উপর। সমস্ত বিলটা জ্যোৎস্নায় সারা রাত ডুবে থাকবে, পাতিলটা ভেসে যেতে যেতে এক সময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। হাওয়া উঠলে সেই পাহাড়ের মতো কালো বস্তুটা বিলের ভিতর থেকে ফের ভেসে উঠতে পারে। কি বস্তু, কোন জীব, কোথায় এর নিবাস—দৈত্যদানো অথবা অন্য কিছু বোঝা ভার। কেউ কেউ জীবটাকে দেখেছে, এমন একটা প্রচলিত ধারণা আছে অঞ্চলের মানুষদের। বিলের পাড় ধরে হাঁটলেই কথাটা মনে হয়। এত বড় বিল এবং কালো জল দেখে অবিশ্বাস করা যায় না যেন। প্রাচীন বিল—কথিত আছে, নবাব ঈশা খাঁ এই বিলে সোনাই বিবিকে নিয়ে ময়ূরপঙ্খী নৌকায় কত রাতের পর রাত কলাগাছিয়ার দুর্গের দিকে মুখ করে বসে থাকতেন। চাঁদ রায়, কেদার রায় কলাগাছিয়ার দুর্গ তছনছ করে দিয়েছে। সোনাইকে উদ্ধারের জন্য জলে জলে সপ্তডিঙা যায়—সোনাইকে উদ্ধারের জন্য সাতশো মকরমুখী জাহাজ পাল তুলে দিয়েছে! জলে বৃদ্ধ ঈশা খাঁর মুখে লম্বা সাদা দাড়ি ফকির দরবেশের মতো মাথায় তাঁর সোনার ঝালর, কোমরে অসি আর পিছনে কালো রঙের বোরখার ভিতর প্রতিমার মতো সোনাই, সোনাই বিবি—স্থির অপলক দৃষ্টি সামনে। ওরা বিলের ভিতর আত্মগোপন করে ছিল। এই আত্মগোপনের ছবি কিংবদন্তীর পাঁচালির মতো বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। ফলে তামাক খেতে খেতে ফেলু ভাবল, জালালি এখন কিংবদন্তীর দেশে যেফৎ খেতে চলে গেছে। এবার ঈশা খাঁ, সোনাই বিবি, সেই পাহাড়ের মতো দানোটা এবং বিলের হাজার হাজার রাক্ষুসে গজার মাছ ফেরাস্তার অলৌকিক আলোতে জলের নিচে পথ দেখিয়ে নবাববাড়ির অন্দরে নিয়ে যাচ্ছে জালালিকে।

    কেবল পাগল ঠাকুরই এখন একা দাঁড়িয়ে। প্রথমে পাতিলটা যে জায়গায় ছিল আর যে জায়গায় জালালি ডুব দিয়েছিল, সেই জায়গাটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। ডান দিকে কাঁশবন পার হয়ে কিছুটা জলের ভিতর নেমে যেতে হয়। দুটো বড় পদ্মের কলি জল ফুঁড়ে ফুটে উঠেছে এবং ঠিক তার পাশেই জালালি শেষবারের মতো ডুব দিয়ে আর উঠতে পারেনি। পাতিলটা ভেসে ভেসে দূরে সরে গেল বলে আর দেখা গেল না। জ্যোৎস্নায় অদৃশ্য সব। ঠিক পায়ের নিচে শুধু সেই কাটা মুণ্ড। কাটা মুণ্ড পাগল ঠাকুরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে চায় যেন। রক্তবীজের বংশ। যেখানে এক ফোঁটা রক্ত সেখানে সেই রক্তবীজ দৈত্য—হাজার হাজার, লাখে লাখে। রক্তবীজ অসুরের মতো এই মোষের মুণ্ডটা প্রাণ পেয়ে যাচ্ছে। পাগল ঠাকুর বিস্ময়ে দেখছিলেন, দেখতে দেখতে মনে হল মোষের মুণ্ডটা প্রশ্ন করছে, ঠাকুর তুমি কী দেখছ?

    পাগল ঠাকুর বললেন, আমি বিলের জ্যোৎস্না দেখছি।

    —ঠাকুর তুমি জ্যোৎস্না ছাড়া আর কি দেখতে পাচ্ছ?

    —তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।

    —আমি কে?

    —তুমি এক অবলা জীব মোষ।

    —মোষের বুঝি ঠাকুর প্রাণ থাকে না?

    —থাকে।

    —তবে তোমরা আমাকে অযথা হত্যা করলে কেন?

    —তোমাকে হত্যা করা হয়নি, দেবতার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে।

    —দেবতা সে কে?

    —দেবতা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আলো দিচ্ছেন, ফুল ফোটাচ্ছেন, সংসারের যাবতীয় পাপ মুছে পুণ্য ঘরে তুলে আনছেন।

    —আর কিছু করছে না?

    —আরও অনেক কিছু করছেন। জীবের পালন, সৃষ্টি, স্থিতি, লয় সব তাঁরই হাতে।

    —তবে আমি নিমিত্ত মাত্র! ভোগের নিমিত্ত!

    —নিমিত্ত মাত্র। ভোগের নিমিত্ত

    মোষটা এবার হেসে উঠল।

    পাগল ঠাকুর বললেন, তুমি হাসছ কেন?

    —ঠাকুর, তোমার কথা শুনে।

    পাগল ঠাকুরকে এবার খুব বিমর্ষ দেখাল। তিনি মোষটার দিকে তাকাতে পারছেন না। তাকালেই ফের হেসে উঠবে। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেন। দুই পদ্মকলির নিচে জালালি ডুবে আছে দেখতে থাকলেন। সামনে শুধু জলরাশি। হাওয়ার জন্য এখন জলে ঢেউ উঠছে। জলের শব্দ ভেসে আসছিল তীরে। দূর থেকে ঢাক-ঢোলের শব্দ তেমনি ভেসে আসছে। কেমন গুমগুম শব্দের মতো মনে হচ্ছে। যেন ঝড় আসছে। অথবা মনে হয় হাজার বছর ধরে সেই রাক্ষস ছুটে আসছে। রাজপুত্রের হাতে পাখি পাখির ডানা ছিঁড়ে ফেলছে রাজপুত্র। পড়ি-মরি করে সেই হাজার লক্ষ রাক্ষসের দলটা রাজপুরীর দিকে ছুটে আসছে। কান পাতলে মনে হয় সেই রাক্ষসেরা অনন্ত কালের গর্ভে পাখির রক্তপানের লোভে ছুটছে। পাখি রাজপুত্রের হাতে। খুশিমতো ডানা পা এবং মুণ্ড ছিঁড়ে দিলেই শেষ। কিন্তু হায়, রাজপুত্র পাথরের, পাখি পাথরের! সুখী রাজপুত্র রাতের বেলায় পাখি হাতে স্বপ্ন দেখতে দেখতে পাথর হয়ে গেছে।

    মোষটা বলল, কী ঠাকুর, তাকাচ্ছো না কেন?

    পাগল ঠাকুর জবাব দিলেন না।

    —ঠাকুর, তুমি সামান্য কাটা মুণ্ডের হাসি সহ্য করতে পার না, আর আমি কী করে খাঁড়ার ঘা সহ্য করেছি বল!

    পাগল ঠাকুর বললেন, দ্যাখো তোমাকে বাপু আমি কিছু বলছি না! তুমি আমার পিছনে লাগবে না।

    —ঠিক আছে। তবে আমি উড়াল দিলাম। বলে মুণ্ডটা দু’পাশে পলকে দুটো ডানা গজিয়ে নিল, তারপর বিলের ওপর উড়তে থাকল।

    —আরে কর কি, কর কি! পাগল ঠাকুর কাটা মুণ্ড ধরতে গেলেন।

    —কেন আমাকে তোমার ভগবানের চেয়ে খারাপ দেখাচ্ছে এখন! বাদুড়ের মতো দেখাচ্ছে না! অতিকায় বাদুড়ের মতো! বলে মোষের মাথাটা পাগল ঠাকুরের সামনে পেণ্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে বলল, কেমন লাগে দেখতে! বাদুড়ের মতো লাগছে না! লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর বুকে এমন সব বাদুড় ছিল। এখন আর তারা নেই। একদল আরও বড় সরীসৃপ এসে ওদের খেয়ে ফেলল। কিন্তু তারা তোমাদের মতো আর যাই করুক, ধর্মের নামে ভণ্ডামি করেনি। ঈশ্বরের নামে সব অপকর্ম চালায়নি।

    কাটা মুণ্ডটার কাণ্ডকারখানা দেখে পাগল ঠাকুর বড় বেশি বিরক্ত হলেন। বড্ড জ্বালাতন করছে মুণ্ডটা, ভালো মানুষ পেলে যা হয়। তিনি পাড় ধরে হাঁটতে থাকলেন—কিন্তু আশ্চর্য, সব সময় সেই মোষের মুণ্ডটা দুটো বড়ো পাখা নিয়ে ওর চোখের সামনে ঠিক পেণ্ডুলামের মতো ঝুলছে তো ঝুলছেই কেউ যেন অদৃশ্য এক সুতো দিয়ে মোষের মুণ্ডটাকে আকাশ থেকে ছেড়ে দিয়েছে। পাগল ঠাকুর হাঁটছেন, মোষের মুণ্ডটা ক্রমশ পিছনে সরে যাচ্ছে। পাগল ঠাকুর পিছনে হাঁটছেন, মোষের মুণ্ডটা এবার এগুচ্ছে। এ তো বিষম জ্বালাতন হল! তিনি এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য থেকে মুক্ত হবার জন্য ছুটতে থাকলেন। একবার সামনে, একবার পিছনে। যেন একা একা মাঠে গোল্লাছুট খেলছেন। একবার উত্তরে, একবার দক্ষিণে। পশ্চিমে পুবে যেদিকে গেছেন, মোষের মুণ্ডটা ওঁর চোখের উপর একটা অতিকায় বাদুড় হয়ে ঝুলছে। কখনও মুণ্ডটা হাসছে, কখনও কাঁদছে। কখনও বলছে, শালা মনুষ্যজাতির মতো ইতর জাতি দেখিনি বাপু। খুশিমতো ঈশ্বরের নামে আমাকে দু’টুকরো করে বিলের পাশে ফেলে চলে গেল।

    পাগল ঠাকুর যে পাগল ঠাকুর, তাঁর পর্যন্ত ভয় ধরে গেল। তিনি সব ভুলে মাঠময় ছুটে বেড়াতে থাকলেন। এবং সেই এক চিৎকার অতিকায় বাদুড়কে উদ্দেশ করে, গ্যাৎচোরেৎশালা! সামসুদ্দিন ঢাকা থেকে ফিরেই শুনল, জালালি ডুবে গেছে জলে। গ্রামের কেউ একবার খোঁজ করতে যায়নি পর্যন্ত। সে তাড়াতাড়ি দলবল নিয়ে মাঠে বের হয়ে পড়ল। দু’জন লোককে দু’জায়গায় পাঠিয়ে দিল। একজন আবেদালি এবং অন্যজন জব্বরকে খবর দিতে চলে গেল। সে তার দলবল নিয়ে বিলের পাড়ে পৌঁছাতে বেশ রাত করে ফেলল। ওরা পাড়ে পৌঁছেই দেখল, জ্যোৎস্নার ভিতর মাঠময় কে যেন ছুটে বেড়াচ্ছে। দেখলে মনে হবে ঘটনাটা আধিভৌতিক। মনে হবে কোনও জিনপরী, ঈশ্বরের ভয়ে পাগলের মতো ছুটে পালাচ্ছে। সামসুদ্দিন পর্যন্ত হকচকিয়ে গেল। দলের লোকেরা বলল, ভাই সামু, চলি রে। কার কপালে কি আছে কওয়ন যায় না।

    সামু এবার চিৎকার করে উঠল, মাঠের ভিতর কে জাগে কও!

    উত্তরে এক পরিচিত শব্দ, গ্যাৎচোরেৎশালা। মাঠের ভিতর মনুষ্য জাগে। সকলের প্রাণে এবার জল এসে গেল। পাগল ঠাকুর সাদা জ্যোৎস্নায় এই মাঠের ভিতর ছুটাছুটি করছেন। ভূত প্রেত, দৈত্য-দানোর ভয় ওদের আর থাকল না। সামু চিৎকার করে প্রতিধ্বনি তুলল, বড়কর্তা, আমি সামু! আবেদালির বিবি জালালি জলে ডুইবা গ্যাছে! তারে আমরা তুলতে আইছি।

    সুতরাং কিংবদন্তীর ভয়টা ওদের মুহূর্তে উবে গেল। ওরা এবার অলস অথবা মন্থর পায়ে জলের কাছে নেমে গেল। যারা বিলে শামুক তুলতে এসেছিল তাদের দু’একজন সঙ্গে আছে। সামসুদ্দিন তদের একজনকে নিয়ে বিলের ধারে ধারে ঘুরতে থাকল। কোথায় শেষবার ওরা জালালিকে দেখেছে এবং তখন বেলা ক’টা তার একটা আন্দাজ করতে চাইল সামু। হাসিমদের বড় নৌকাটা জলের নিচ থেকে তুলে আনার জন্য কয়েকজন লোক চলে গেছে। নৌকা এলেই জলের ভিতর অন্বেষণে নেমে যাবে। জালালির কাপড় জলে ভেসে থাকতে পারে, ফুলে ফেঁপে জালালি জলের ওপর ভেসে উঠতে পারে।

    কিন্তু নৌকা ভাসিয়ে মনজুর যখন এল, যখন জয়নাল গলুইতে লগি বাইছে এবং নৌকার ওপর প্রায় পঁচিশ-ত্রিশজন লোক, জ্যোৎস্না রাতে বিলের জলে ঢেউ উঠছে—পদ্মপাতার উপর কোনও গাঙফড়িঙের শব্দ, রাতনিশুতি হচ্ছে অথবা জালালির কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন মনে হল দূরে কি ভেসে যায়! ওরা বিলের ভিতর ঢুকে দেখল সেই পাতিল, পাতিলে কিছু শালুক, শালুকের ওপর চাঁদের আলো মায়াময়। গোটা আট-দশ শালুক সারাদিনে ডুবে ডুবে জালালি সংগ্রহ করেছিল। শালুকের ভিতর একটা বড় ঝিনুক। বড় ঝিনুক জলের তলায় মিলে গেলে স্বপ্ন দেখা—ঝিনুকে যদি মুক্তো থাকে, বোধ হয় জালালি জলের নিচে স্বপ্ন দেখেছিল, বেগম হবার স্বপ্ন। সামসুদ্দিন নুয়ে পাতিলটা পাটাতনে তোলার সময় কাতর গলায় হাঁকল, চাচি, তর রাজ্যে এখন কারা জাগে!

    জল থেকে কোনও উত্তর উঠে এল না। সে এবার চারদিকে তাকাল। বিলের পাড়ে একের পর এক ছোট ছোট গ্রাম। গরিব-দুঃখীদের নিবাস। গ্রামে যারা মোল্লা-মৌলবী মানুষ, হাটে তাদের সুতোর অথবা পাটের কারবার আছে। আর আছে হিন্দু মহাজন। এবং হক সাহেবের ঋণসালিশী বোর্ড! মানুষগুলি আত্মরক্ষার কৌশল ধীরে ধীরে জেনে ফেলছে। সে অন্যান্য সকলকে লক্ষ করে বলল, তবে দ্যাখছি পাওয়া গ্যাল না।

    কেউ কোনও শব্দ করল না। করলেই সামু ওদের জলের নিচে ডুব দিতে বলবে। এই শীতে জলে নামলে হিমে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। ওরা কেমন ইতস্তত করতে থাকলে সামু বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আপনারা নৌকায় থাকেন, জলে ডুব দিয়া আমিই খুঁজি। বলে, দলের মানুষেরা যেখানে শেষবার জালালিকে দেখেছে বলেছে, সামু গামছাটা পরে সেখানে ডুব দিল।

    বিলে এত মানুষজন দেখেই বুঝি মোষের মুণ্ডটা চোখের উপর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। পাগল ঠাকুর সামান্য সময় পেলেন ভাববার। তিনি ভাবলেন, এমন কেন হল! সামান্য এক অবলা জীবের এত রোষ! তিনি তাড়াতাড়ি সেই রোষ থেকে রক্ষা পাবার জন্য সামুদের নৌকার দিকে হাঁটতে থাকলেন। নৌকাটা জলের উপর এক জায়গায় থেমে আছে। এবং একজন মানুষ একা জলে সাঁতার কাটছে। জলে ডুব দিচ্ছে। ভয়-ভীতির তোয়াক্কা করছে না! এতগুলো মানুষ নৌকার উপর দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছে। আর একটা মানুষ দামের ভিতর শীতের রাতে আটকে পড়বে? কে এমন অবিবেচক মানুষ! পাগল ঠাকুর প্রায় জলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। জালালি যেখানে ডুবেছে তার চেয়ে অনেক দূরে ওরা খোঁজাখুঁজি করছে। সামুর এই অনর্থক পরিশ্রমের জন্য পাগল ঠাকুর রুষ্ট হচ্ছিলেন। তাছাড়া একা একা মাঠে হাঁটলে ফের মোষের কবলে পড়ে যাবেন ভেবে পাড়ে দাঁড়িয়ে তালি বাজালেন। যেন তোমরা আমায় নৌকায় তুলে নাও এমন বলার ইচ্ছা।

    মনজুর পাটাতনে দাঁড়িয়ে হাঁকল, তালি বাজায় কোন্ মাইনষে?

    উত্তর নেই। কেবল কে অনবরত বিলের পাড়ে তালি বাজাচ্ছেন। ওর বুঝতে আদৌ কষ্ট হল না, ঠাকুরবাড়ির পাগল ঠাকুর তালি বাজাচ্ছেন। নৌকায় ওঠার জন্য তালি বাজাচ্ছেন। মনজুর এবার চিৎকার করে বলল, যাইতাছি কর্তা, খাড়ান।

    নৌকা পাড়ের কাছে গেলে কোথায় পাগল ঠাকুরনৌকায় উঠে আসবেন—তা না, জলে ঝাঁপ দিয়ে সেই দুই পদ্মকলির দিকে ছুটে যেতে থাকলেন। পাগল মানুষের শীত গ্রীষ্ম সব সমান। মানুষটা বুঝি পুরোপুরি ক্ষেপে গেছে। তিনি সকলকে পিছনে ফেলে দুই পদ্মকলির উদ্দেশে একটা বড় সাদা রাজহাঁসের বেগে চলে যেতে থাকলেন। দশাসই মানুষ, তল্লাটে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। যেমন লম্বা তেমনি অসীম শক্তির ধারক মানুষটি। সকল কিংবদন্তীর দৈত্যদানোকে কলা দেখিয়ে দুই পদ্মকলির ভেতরে ডুবে গেলেন। দাম, লতাপাতা, পদ্মের লতা ছিঁড়ে ফুঁড়ে জালালির জীর্ণ লাশটাকে টেনে বের করে ফেললেন। তারপর চুল ধরে জলের ওপর ভেসে সাঁতরাতে থাকলেন। তীরের বেগে সাঁতার কাটছেন। মানুষগুলি ভয়ে বিস্ময়ে রা করতে পারছে না। ঠিক এক পীর, দরগার পীর পাগল মানুষ যেন। সকলকে বিস্মিত করে শরীরটা কাঁধে ফেলে জল ভেঙে উপরে উঠে গেলেন তিনি। কোনওদিকে তাকালেন না। কাঁধে মৃতদেহ, সামনে ফসলবিহীন মাঠ, আকাশে কিছু নক্ষত্র জ্বলছিল, আর দূরে তেমনি ঢাকের বাদ্যি বাজছে। পাগল ঠাকুরের সহসা মনে হল তিনি জালালিকে নিয়ে হাঁটছেন না। যেন সেই ফোর্ট উইলিয়ামের দুর্গ, দুর্গের মাথায় কবুতর উড়ছে এবং র‍্যামপার্টে ব্যাণ্ড বাজছিল! এখন ঢাকের বাদ্যি শুনে সেসব মনে করতে পারছেন। কাঁধে তাঁর জালালি নয়, যুবতী পলিন। পলিনকে নিয়ে হাঁটছেন। এটা ফসলবিহীন মাঠ নয়, এটা যেন সেই র‍্যামপার্ট। পাশে দুর্গ। একদল ইংরেজ সৈন্যের কুচকাওয়াজের শব্দ, ওরা পিছন থেকে পলিনকে কেড়ে নেবার জন্য ছুটে আসছে। পাগল ঠাকুর এই ভেবে ছুটতে থাকলেন।

    ওরা দেখল মাঠের ওপর দিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন। পাগল মানুষ তিনি, কোনদিকে চলে যাবেন জালালিকে নিয়ে কে জানে! তা ছাড়া তিনি বিধর্মী মানুষ। সেই মানুষের কাঁধে মৃত জালালি। ওরা ছুটতে থাকল। মৃত জালালিকে নিয়ে অন্য কোনও মাঠে অথবা নদীর ওপারে চলে গেলে ইসলামের গুনাগার হতে তবে আর বাকি থাকবে না। এখন জালালিকে ধর্মমতে আবেদালি পর্যন্ত দেখতে পাবে না। আর কিনা এই পাগল মানুষ বিধর্মী মানুষ সব পিছনে ফেলে মাঠ ধরে ছুটছেন। ওরা তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে মাঠের মাঝখানে পাগল ঠাকুরকে ঘিরে ফেলল। ধীরে ধীরে ওরা পাগল ঠাকুরের নিকটবর্তী হতে থাকল। ওরা বুঝতে দিচ্ছে না জালালিকে কাঁধ থেকে তুলে নেবার জন্য ওরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। ওদের এই কৌশল ধরে ফেলতে পারলে তিনি ফের ছুটবেন। যেমন এক হেমন্তের বিকেলে মুড়াপাড়ার হাতি নিয়ে মাঠে ঘাটে বের হয়ে পড়েছিলেন।

    ওরা ওকে ঘিরে ফেলে চারদিকে সতর্ক নজর রাখল। সামু কাছে গিয়ে বলল, চাচিরে দ্যান।

    অদ্ভুত ব্যাপার। একেবারে ভালোমানুষ তিনি। খুব ধীরে ধীরে, যেন রু অসুস্থ মানুষকে কাঁধ থেকে নামাচ্ছেন। ধীরে ধীরে তিনি জালালিকে শুইয়ে দিলেন। শুইয়ে দেবার সময় গলগল করে ভিতর থেকে জল উগলে দিল জালালি। শরীরটা সাদা ফ্যাকাসে। চোখের মণি দুটো স্থির। অপলক তাকিয়ে সকলকে দেখছে। ডুরে শাড়িটা আলগা হয়ে গেছে। সামু কাপড়টা খুলে জলটা চিপে ফেলে দিল। তারপর শাড়িটা দিয়ে লাশটা ঢেকে দিল। তারপর জালালির সঙ্গে কার কি সম্পর্ক, কে এই লাশ বহন করে নেবার অধিকারী—যারা পুত্রবৎ তারাই শুধু লাশ বহন করে নিয়ে যেতে পারবে এইসব ভেবে সে চার-পাঁচজন মানুষকে লাশটা বেঁধে ফেলতে বলল। একটা বাঁশের সঙ্গে বেঁধে যেমন কাটা মোষ নিয়ে মানুষেরা গিয়েছিল, জয় যজ্ঞেশ্বর কি জয় বলে জয়ধ্বনি করছিল, তেমনি ওরা আল্লা রহমানে রহিম বলে চলে যাচ্ছিল মাঠ ধরে!

    আবেদালির বিবি শালুক তুলতে এসে জলে ডুবে মরে গেল। কিংবদন্তীর দেশে জালালি শহীদ হয়ে গেল। এই নিয়ে ফের একটা সাল উত্তেজনা থাকবে—যেমন রসো এবং বুড়ি সেই কোন এক সালে জলে ডুবে মরেছিল, কেউ টের পায়নি, হেমন্তের কোন অপরাহ্ণে কঙ্কাল আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়েছে অঞ্চলের মানুষেরা। তারপর সব গালগল্প। অশিক্ষিত অথবা অর্ধশিক্ষিত মানুষেরা যখন রাত হয়, যখন কেউ জেগে থাকে না, তখন অঞ্চলের এইসব খালবিল, শ্মশানের অথবা কবরখানার অলৌকিক ঘটনা নিয়ে তারা ডুবে থাকে। ভূত-প্রেতের বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে ভালোবাসে।

    ওরা যত এগুচ্ছিল ততই ঢাক এবং ঢোলের শব্দ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সারারাত ঢাক ঢোল বাজবে। হ্যাজাকের আলো এখন মাঠময় আর মাঝে মাঝে বাজি পুড়ছে। হাউই উড়ছে আকাশে। মালতীর চোখে ঘুম আসছিল না। পার্বণের খাওয়া চালকলা, তিলাকদমা ফুলেফলে ভরা। তারপর খিচুড়ি পায়েস। বড়বৌ আলাদা ডেকে আবার পায়েস খেতে দিয়েছিল মালতীকে।

    মালতী লেপ কাঁথার ভিতর শুয়ে জানালা দিয়ে মাঠের জ্যোৎস্না দেখছিল। বাস্তুপূজার দিনে জ্যোৎস্না বড় রহস্যময়। ঠিক যেন কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা। বাজি, আতসবাজি আর নাড়ু মোয়া। খেতে খেতে আকণ্ঠ। এই জ্যোৎস্নায় বিলের জলে জালালি ডুবে আছে। কথাটা ভাবতেই মালতীর কেমন দম বন্ধ ভাব হচ্ছে। সে উঠে বসল। ওরা এখনও আসেনি। এলে গোপাটে ওদের কথাবার্তা থেকে টের পাওয়া যেত জালালিকে খুঁজে পাওয়া গেছে কিনা!

    মালতী অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারল না। লেপ-কাঁথা গায়ে জড়িয়ে কেমন চুপচাপ উদাস ভঙ্গিতে জানালার কাছে বসে থাকল। সারাদিন শরীরে খুবই ধকল গেছে। নৈবেদ্য সাজাবার জন্য পেতলের হাঁড়ি মেজে সাফসোফ করেছে। নরেন দাসের নানারকম বাতিক। এই বাস্তুপূজা জমির জন্য, ফসলের জন্য। প্রাণের চেয়ে মূল্যবান ফসল। সুতরাং কোথাও ত্রুটি থাকলে রক্ষা নেই। বিষয়ী মানুষ নরেন দাস অমূল্যকে পর্যন্ত ছুটি দিয়েছে এই দিনে। মালতী সেই কোন ভোর থেকে দুধের বাসন, পেতলের হাঁড়ি মেজে সাফসোফ করেছে। তারপর সারাদিন মাঠ আর বাড়ি। বাস্তুপূজা মাঠে হয়। মাঠে সব টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। আবার মাঠ থেকে টেনে বাড়িতে তুলতে হয়েছে। প্রায় এক হাতে সব কাজ, শোভা আবু সামান্য সাহায্য করেছে। অমূল্য দুপুর পর্যন্ত ছিল, তারপর সে বাড়ি চলে গেছে। ফলে মালতী সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্বাস ফেলার সময় পায়নি। তাড়াতাড়ি সেজন্য হাত পা ধুয়ে শুয়ে পড়েছে ঘুমোবে বলে। কিন্তু হায় কপাল, ঘুম আসে না চোখে। কিসের আশায় কি যেন কেবল বুকে বাজে। মনে হয় এই জ্যোৎস্না রাতে চুপচাপ মাঠে একা দাঁড়িয়ে থাকতে। পাশে এক ভালোবাসার মানুষ থাকবে শুধু। ওর প্রিয় সেই স্বার্থপর দৈত্যটির কথা মনে হল।

    দৈত্যটি তার সারাদিন মাঠে মাঠে প্রসাদ খেয়ে বেড়িয়েছে—একবার মালতীর পূজা দেখতে এল না। সে, সরকারদের বাস্তুপূজা দেখতে ওর জমির পাশ দিয়ে চলে গেল অথচ ওর এমন নিয়মনিষ্ঠার পূজা দেখে গেল না। ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে মরে যাচ্ছিল। যেন মানুষটার ওপর রাগ করেই সে সারাদিন ক্রমান্বয়ে কাজ করেছে। এই ক্ষোভের জ্বালা ভয়ঙ্কর। সে ভিতরে বড় কষ্ট পাচ্ছিল। মানুষটার বড় বেশি গরিমা মনে মনে। দেশের কাজ করে বেড়ায় বলে অহঙ্কারে পা পড়ে না।

    জ্যোৎস্নায় মাঠ এখন ভেসে যাচ্ছে। গাছগাছালি সব সাদা হয়ে গেছে। এতটুকু অন্ধকার নেই কোথাও। এমন জ্যোৎস্না যেন কতকাল ওঠেনি। এমন জ্যোৎস্নায় ঘুম আসে না চোখে।

    মালতীর প্রথম মনে হয়েছিল বেশি খাওয়ার জন্য ভিতরটা হাঁসফাস করছে এবং ঘুম আসছে না চোখে। ক্ষোভে অভিমানে ঘুম আসছে না, অথবা মানুষটাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছা হচ্ছে। ফলে জ্বালা ভিতরে, বুকের ভিতর কী এক ভীষণ জ্বালা। মাঝে মাঝে বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠছে। বুঝি সে এল। চুপিচুপি ওর জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। কিন্তু না, কেউ এল না। কেউ আসবে না। শুধু একা জেগে বসে থাকা। মালতী ফের শুয়ে পড়ল। জ্যোৎস্নায় মাঠ আদিগন্ত ভেসে যাচ্ছে। ওর মুখে জ্যোৎস্নার লাবণ্য ছড়িয়ে পড়ছে। সে নিজের ঘাড় গলা ছুঁয়ে দেখল। কি মসৃণ ত্বক, কী মনোরম এই শরীর। সে ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে পড়ছে। সে রঞ্জিতকে ভুলে থাকার জন্য স্বামীর স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করল। স্বামীর সঙ্গে সহবাসের দৃশ্য ভাববার চেষ্টা করল—যদি মনের ভিতর তার অস্থির ভাবটা কাটে। কিন্তু সেই পুরানো দৃশ্য, একঘেয়ে দৃশ্য নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। পুরানো সহবাসের দৃশ্য কোনও আর উত্তেজনার জন্ম দেয় না। সে মনে মনে ভাবল, না কোথাও আর জ্যোৎস্না নেই। সে লেপটা গোটা মাথায় মুখে ছড়িয়ে দিয়ে ভিতরটা অন্ধকার করে দিল। এখন শুধু মালতীর চারপাশে অন্ধকার। সব স্বপ্ন শহরের দাঙ্গা শেষ করে দিয়েছে। নূতন করে স্বপ্ন দেখলে পাপ। মালতী এই পাপের ভয়ে লেপের নিচে মুখ লুকিয়ে ফেলল, অন্ধকারে নিজে নিজে পাপ করে বেড়ালে কে আর টের পাবে! স্বামীর মুখ যখন কিছুতেই মনে আসছে না, পুরানো সহবাসের ছবি যখন চোখের উপর ক্যালেণ্ডারের পাতার মতো নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে গেছে তখন অন্ধকারে সরু সুন্দর আঙুলের স্পর্শ শরীরে রোমাঞ্চ এনে দিচ্ছে। আঙুলগুলো শরীরের ভিতর নানারকম পাপ কাজ করে বেড়াচ্ছে, শরীরে আবেশ এনে দিচ্ছিল। সতী সাবিত্রীর মতো পুণ্যবতী না হয়ে মনে মনে অন্ধকারের ভিতর রঞ্জিত নামক এক যুবকের স্মৃতিভারে আপন শরীরের ভিতর পাপকে অন্বেষণ করে বেড়াল—গোপনে এই পাপকার্য বড় ভালো লাগে। প্রাণের চেয়েও আপন মনে হয়। আহত সাপ মরে যাবার আগে শরীর যেমন গুটিয়ে আনে আবার সবটা ছেড়ে দেয় এবং এক সময় সোজা লম্বা হয়ে পড়ে থাকে, তেমনি মালতী শরীর ক্রমে গুটিয়ে আনছে এবং সহসা শরীর ছেড়ে দিচ্ছিল। তুলে দিচ্ছিল। তার এখন অসহায় আর্তনাদ এই শরীরের ভিতরে। কী যেন নেই পৃথিবীতে, কী যেন তার হারিয়ে গেছে। সারা শরীরে এখন তার ভালোবাসার অনুসন্ধান চলছে শুধু। কত আপন আর কত প্রিয় অনুসন্ধান। হায়, মানুষের অন্তরে এই ভালোবাসার ইচ্ছা কী করে হয়, কোন অন্ধকার থেকে সে উঁকি মারে, কখন সে সব পাপ-পুণ্য বিসর্জন দিয়ে মরমিয়া সন্ন্যাসিনীর মতো পাগল-পারা হয় কেউ বলতে পারে না। মালতী ঘন ঘন শ্বাস ফেলছিল। বুঝি সেই এক বাউল শরীরে নৃত্য-গীত বাজায়, আমারে বাজাও তুমি রসের অঙ্গুলি দিয়া। তারপর কোড়াপাখির ডাকের মতো শব্দ—ডুব্‌ ডুব। মালতী একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেল। কিন্তু এ-কি! গোপাটে কারা এখন ছোটাছুটি করছে! কে যেন আকাশফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ছে! মালতীর গলা চিনতে কষ্ট হল না। জব্বর কাঁদছে। ওর মা শালুক তুলতে গিয়ে ডুবে মরেছে। জব্বর এমনভাবে কবে কাঁদতে শিখল! ঠিক শিশুর মতো আকাশ বিদীর্ণ করে কেঁদে উঠছে—মা মা। মালতী ছুটে সাদা জ্যোৎস্নায় নেমে গেল। বাঁশে ঝুলিয়ে লাশটা নিয়ে সামু গোপাট ধরে এবার বুঝি উঠে আসবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }