Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ১.১৬

    ১.১৬

    গোপাটের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা প্রায় সকলেই জেগে গেল। তা ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে পাড়ার বৌ-ঝিরা কুয়োতলায় অথবা পুকুরপাড়ে, কখনও আতাবেড়ার ফাঁকে উঁকিঝুঁকি মেরেছে—এই বুঝি এল! সামসুদ্দিন যখন তার দলবল নিয়ে গেছে তখন লাশ তুলে আনতে কতক্ষণ! কিন্তু যারা বয়সে প্রাচীন, যারা বিলের অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখে, তাদের কাছে এটা সামুর পণ্ডশ্রম। ওরা বৈঠকখানায় অথবা উঠোনে এবং গোয়ালের পাশে বসে তামাক খাচ্ছিল। আর বিলের সব অলৌকিক গল্পের ফোয়ারা ছোটাচ্ছিল। প্রতিবেশীদের ছোট ছোট শিশুরা, নাবালকেরা সেইসব প্রাচীন পুরুষদের পাশে বসে দলে দলে গল্প শুনছিল।

    ঈশম সোনাকে সেই কিংবদন্তীর গল্প শোনাচ্ছিল।

    হেমন্তের এক বিকেলে সোনাবাবু জন্মালেন। ঈশম তরমুজ খেতে তরমুজের লতা পাহারা দিচ্ছিল। তখন সোনালী বালির নদীর চরে কাশফুল ফুটে থাকার কথা। ধান কাটা হয়ে গেছে তখন। সোনাবাহু ম্যাউ ম্যাউ করে বেড়ালের মতো অসুজ ঘরে কাঁদছেন। সোনা ঈশমের কাছে সেই ম্যাউ ম্যাউ কান্নার কথা শুনে বলল, যান! আপনে মিছা কথা কন।

    —না গ কর্তা, মিছা কথা কই না। যেন তার বলার ইচ্ছা, সংসারে এমনটা হয় কত! মাথায় পাগড়ি বাইন্দা রওনা দিলাম, ধনকর্তারে খবর দিতে। তারপর বোঝালেন নি কর্তা, রাইত, কি ঘুটঘুইটা আনধাইর। মনে হইল বামুন্দির মাঠের বড় শিমুল গাছটা, মাথায় একটা চেরাগ জ্বালাইয়া আমার দিকে হাঁইটা আইত্যাছে। কি ডর, কি ডর! বিলের পানিতে মনে হইল কে য্যান আমরে ডুবাইয়া মারতে চায়।

    —মারতে চায়! সোনা প্রায় চোখ কপালে তুলে কথাটা বলল।

    —হ। কি কমু কর্তা। বিলের লক্ষ্মীরে ত আমরা দেখি নাই কোনদিন। রূপবতী কন্যা–সোনার নাও পবনের বৈঠাতে পানি থ্যাইক্যা ফুস কইরা ভাইসা ওঠে। আনধাইর রাইতে ভাসে না, রাইত ফর্সা হইলে ভাসে। চান্দের আলো থাকলে ভাসে। পূর্ণিমার দিনে সেই নাও দেখলে তাজ্জব। কী সাদা কী সাদা! সেই জলে ডুইবা গ্যালে আর ভাসে না জলে, বলে গান ধরে দিল ঈশম।

    সোনার এই গল্প কেন জানি ভালো লাগছিল না। বিলের অলৌকিক গল্প শুনে ওর ভয় ধরে যাচ্ছে। সেই জলে ডুইবা গেলে আর ভাসে না জলে। এখন কেন জানি বার বার মার কথা মনে আসছিল সোনার। মা বিকেলে বকাবকি করেছেন, তুমি কোনখানে যাও সোনা, কোনখানে থাক ঠিক থাকে না। কোনদিন তুমি জলে ডুইবা মরবা।

    সোনার মনে হল মা ঠিকই বলেছেন। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর সখ বড় বেশি ওর। কবে থেকে এমন অভ্যাস গড়ে উঠেছে সোনা নিজেও জানে না। ছোট মানুষের যা হয় সোনার তাই হল। ভয় ধরে গেল প্রাণে। কোনওদিন সে না বলে না কয়ে মাঠে নেমে যাবে—তারপর সেই বিল, প্রকাণ্ড বিলে নেমে যাবার নেশা, কোনদিন সে জলে ডুবে মরে থাকবে কেউ টের পাবে না। সেজন্য সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, না আর না। আর কোনদিন সে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে না। সে একা অথবা পাগল জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে কোথাও চলে যাবে না। গেলে সেই যে গল্প অথবা কিংবদন্তীর পাঁচালি-জলে ডুইবা গ্যালে আর ভাসে না জলে—সেই জলে অথবা ডাঙায় যেখানেই হোক সে আর একা যাবে না। মা সারাদিন চিন্তা করেন। মার চোখে ভয়ের চিহ্ন দেখে এখন সে কেমন অতি কর্তব্যপরায়ণ অথবা যেন সদা সত্য কথা বলিবে, যেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গল্প—মায়ের জন্য ঝড় জলের ভিতর অবলীলাক্রমে দামোদর নদী পার হয়ে যাচ্ছেন-সোনা এবার ভাবল, সে মায়ের অবাধ্য কোনও দিন হবে না। সেও মায়ের জন্য সব করবে। কেন জানি তার মার কথা মনে হলেই ঈশ্বরচন্দ্রের কথা মনে হয়। সে কেমন যেন মনে মনে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো আদর্শবাদী সত্যবাদী হতে চাইল। ঈশ্বরচন্দ্রের মতো সেও মায়ের জন্য সব করবে। মার যা অপছন্দ তা করবে না, যা পছন্দ তা করবে। ঈশম গান করছে তেমনি, ডুইবা গ্যালে আর ভাসে না জলে।

    এখন বড়ঘরে ঠাকুর্দা কাশছেন। ওরা এই উঠোনের পাশে বসে সব শুনতে পেল।

    ঈশম একসময় গান থামিয়ে বলল, বোঝলেন নি কর্তা, সাঁজ লাগলেই রাজকন্যা বিলের পানিতে সূর্য হাতে ডুব দ্যায়।

    —আর ভাসে না জলে?

    —ভাসে। সারা রাইত পানির তলে দুই হাত সূর্যেরে লইয়া সাঁতার কাটে। কাটতে কাটতে নদী ধ‍ইরা সাগরে যায়। সাগরে সাগরে মহাসাগরে। ভোর হইতে না হইতে পুবের আকাশে ভাইস্যা ওঠে। আসমানে সূর্যটারে টানাইয়া দ্যান রাজকন্যা। তারপর পলকে তিনি অন্তর্ধান করেন।

    —কোনখানে তিনি অন্তর্ধান করেন?

    —বিলের পানিতে।

    —আপনে দ্যাখছেন।

    —আমি দ্যাখমু কি গ কর্তা। আপনের মায়রে জিগাইয়েন। পাগল কর্তারে জিগাইতে পারেন। সোনা ভাবল, হয়তো হবে। এত বড় যখন বিল আর সোনার নাও পবনের বৈঠা যখন রাজকন্যার জিম্মায়, তখন তার নদী ধরে সাগরে পড়তে কতক্ষণ! সাগরে সাগরে কতদূর চলে যায় রাজকন্যা। এখন রাজকন্যা তবে কোন সাগরে আছে—দক্ষিণের না উত্তরের? ওর প্রশ্ন করার ইচ্ছা, কোন সাগরের নিচে এখন রাজকন্যা সাঁতার কাটছে? সূর্য হাতে রাজকন্যা নীল জলের ভিতর সোনালী মাছের মতো মুখে রুপোলী সূর্য নিয়ে কোন জলের নিচে সাঁতার কাটছে? এসবও জানার ইচ্ছা। ঈশম তখন বলছিল, সকাল হইলে রাজকন্যা পুব সাগরে ভাইস্যা ওঠে। সুর্যটারে আসমানে টানাইয়া দ্যায়। তারপর রাজকন্যা টুপ কইরা পানির নিচে ডুইবা যায়। সোনা যেন এবার কতদিন পর এই সূর্য ঠাকুরের চালাকিটা ধরে ফেলেছে।

    ওর বার বার এক প্রশ্ন ছিল, সূর্য তুমি যাও কোথা? বাবা বলেছেন, সে বড় হলে রহস্য জানতে পারবে। এখন কিন্তু তার কাছে সব রহস্য পরিষ্কার হয়ে গেল। সূর্য যায় মামার বাড়ি। বিলের নিচে মামা-মামিদের ঘরে যায়।

    সোনা চুপচাপ বসেছিল। ঈশম গোয়ালে কি কাজের জন্য উঠে গেল। ঈশম চলে গেলে উঠোনের উপর একা ওর ভয় করতে থাকল। সে তাড়াতাড়ি ছুটে বড় ঘরে উঠে গেল। ঘরে ঠাকুমা আছেন, ঠাকুরদা তক্তপোশের উপর কাঁথা বালিশ চারদিকে রেখে বসে আছেন। বড় বড় বালিশ দিয়ে ঠাকুরদাকে ঘিরে রাখা হয়েছে। বালিশগুলি ওঁর অবলম্বনের মতো কাজ করছিল। মাথার কাছে পিলসুজে বাতি জ্বলছে। রেড়ির তেলের প্রদীপ। নীলচে রঙ এই আলোর। মুখে-চোখে বিদ্যুতের মতো আলোটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। ঠাকুমা সন্ধ্যাহ্নিকের জন্য ঠাকুরঘরে চলে যাবেন এবার। যতক্ষণ ঠাকুমা ঘরে ছিলেন, সোনা পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করেছে। ঘুরঘুর করার সময়ই ঈশ্বরচন্দ্রের কথা ফের মনে হল। দামোদর নদীর কথা মনে হল। সে আবার ভাবল, মায়ের জন্য সব করবে। আর ঘুরেফিরে সেই কথা মনে হল—বিলে রাজকন্যা, মাঠে ফতিমা। ফতিমা ওকে ছুঁয়ে দিয়েছে। সে স্নান করেনি। এসব শুনলে মা রাগ করবেন। মার কঠিন মুখের কথা ভাবতেই ওর প্রায় কান্না পেতে থাকল। মা আজ গরদের শাড়ি পরেছেন, পূজা-পার্বণের দিনে মা সারাদিন গরদ পরে থাকেন। মাকে তখন ভালো মানুষের ঝি মনে হয়। মাকে জলের মতো নির্মল মনে হয়, সাদা শাপলা ফুলের মতা পবিত্র মনে হয়। সুতরাং সেই পবিত্র এবং নির্মল জলের পাশে অশুচি শরীর নিয়ে থাকলে পাপ। সোনা এখন কি করবে ভাবতে পারছিল না। বলবে, ফতিমা আমাকে ছুঁয়ে দিয়েছে। না কিছুই বলবে না—চুপচাপ থেকে যাবে, সে কিছুই স্থির করতে পারছে না। ওর ভিতর থেকে ভয়ে ভয়ে কেমন শীত উঠে আসছিল, সে দাঁড়াল না। এক দৌড়ে পশ্চিমের ঘরে ঢুকে গেল। কী শীত, কী শীত! কী ঠাণ্ডা, এই ঠাণ্ডায় স্নান করা বড় কষ্ট! সোনা গায়ের চাদরটা আরও ভালোভাবে জড়িয়ে নিল। তারপর মায়ের পাশে বসে পড়ল। ওর স্নান করবার কথা মনে থাকল না। এখন কেবল বিলের সেই রাজকন্যার কথা মনে আসছে। রাজকন্যার মুখে রুপোলী সূর্য। সূর্য মুখে রাজকন্যা একটা মাছের মতো জলের নিচে সাঁতার কাটছে।

    উৎসবের দিনে এই ছুটাছুটি সোনাকে খুব ক্লান্ত করেছিল। সে রাতে খেল না পর্যন্ত। তক্তপোশে উঠে সকলের অলক্ষ্যে শুয়ে পড়ল। ওর আজ পড়া নেই। উৎসবের জন্য ছুটি। আজ উঠোনে লাঠিখেলা ছোরাখেলা বন্ধ। লালটু পলটু সেই যে ছোটকাকার সঙ্গে পূজার চরু রান্না করতে গেছে, ফেরেনি। সারা বিকেল সে একা ছিল। বড় জেঠিমা এখনও রান্নাঘরে, রাত্রে আজ কোনও রান্নার কাজ নেই। ঠাকুরদা সামান্য ফল সেদ্ধ খাবেন। ঠাকুরমা গরম দুধ খাবেন। তাঁদের সেই কাজটুকু করতে পারলে মা-জেঠিমার ছুটি। মা এখন ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। সে এখন একা এই ঘরে। হারিকেনের আলোটা নিবু নিবু টিনের চাল, চালে কুয়াশা জমেছে। ফোঁটা ফোঁটা জল জমে নিচে পড়ছে। টুপ টাপ শব্দ হচ্ছিল। কান পেতে রয়েছে সোনা। যেন কে বা কারা উপরের কাঠের পাটাতনে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সোনা মাকে ডাকতে পারত। তার ভয়ের কথা বলতে পারত। অন্যদিন কোনও ভয় থাকে না, আজ ভয়ের কথা বললে মা বিরক্ত হবেন। সে মাকে ডাকতে সাহস পেল না।

    একটা মানুষ জলে ডুবে মরে গেছে আর কাটা মুণ্ড পেটে নিয়ে মোষ যায় মাঠে, দৃশ্যটা মনে পড়তেই সে লেপ দিয়ে মাথা ঢেকে দিল। মনে হল তার শরীরটা অশুচি। সে ফতিমাকে ছুঁয়ে স্নান করেনি। শরীর অশুচি থাকলে অপদেবতা ঘাড়ে চাপতে সময় নেয় না। সে নিজেকে অশরীরী আত্মাদের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য লেপ দিয়ে শরীর মুখ ঢেকে দিল। ছোট মানুষ, মনে কত রকমের ভয়, ওর বার-বারই মনে হচ্ছিল ফাঁক পেলেই সেই বিলের অপদেবতাও লেপের ভিতর ঢুকে যাবে। ওকে সুড়সুড়ি দেবে। ওকে হাসিয়ে মেরে ফেলবে অথবা ওর নাকে-মুখে কল্পিত এক ঘ্রাণ দেবে মেখে। মেখে দিলেই সে দাসানুদাস–সেই অপদেবতা তাকে বিলের জলে হেঁটে যেতে বলবে। অপদেবতার পিছনে-পিছনে সে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে গেলেই ডুবে যাবে। ওর ভিতরে-ভিতরে বড় কষ্ট হচ্ছিল। মা-বাবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে ক্রমে লেপের নিচে গুটিয়ে আসছে। কারা যেন এখন ঘরটার চারপশে ফিসফিস করে কথা বলছে। সোনা মনে মনে দেবতাদের নাম স্মরণ করছে। তখন ঘরের আলোটা ক’বার দপদপ করে নিভে গেল। ঘর অন্ধকার। সোনা এবার লেপ থেকে মুখ বার করতেই দেখল জানালায় সাদা জ্যোৎস্না এবং সেখানে যেন কার মুখ। বুঝি জালালি উঁকি দিয়ে সোনাকে দেখছে। সোনা এবার ভয়ে চিৎকার করে উঠল। কাটা মোষের গলা নিয়ে জালালি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

    চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ধনবৌ ছুটে এসেছে। সোনা থরথর করে কাঁপছিল। জানালায় আঙুল তুলে কি যেন দেখাতে চাইছে। ধনবৌ দেখল, জানালায় এখন শুধু জ্যোৎস্না খেলা করে বেড়াচ্ছে।

    ধনবৌ বলল, চিৎকার দিলি ক্যান!

    সে বলল, মানুষ।

    —মানুষ কই থাইকা আইব! শুইয়া পড়।

    সোনা এবার ভয়ে কেঁদে ফেলল–মা, আমারে ফতিমা ছুঁইয়া দিছে।

    —আবার সেই মাইয়াটার লগে তুমি গেছ!

    সোনা নিজের দোষ ঢেকে বলল মা, আমি অরে ছুঁই নাই।

    ধনবৌ সোনাকে কিছু আর বলল না। সে ঠাকুরঘরের দিকে হাঁটতে থাকল। পরনে গরদের শাড়ি, ফুল-বেলপাতার গন্ধ, চন্দনের গন্ধ শরীরে। মাকে পবিত্র ফুলকুমারী মনে হচ্ছে সোনার। সে মায়ের পিছনে আল্‌ল্গা হয়ে হাঁটছে। অন্ধকার ছিল না। জ্যোৎস্নায় মাঠ-ঘাট ভেসে যাচ্ছে। ঈশম বোধ হয় এতক্ষণে তরমুজ-খেতে পৌঁছে গেছে। রঞ্জিতও বৈঠকখানা ঘরে বসে কি লিখছিল মনোযোগ দিয়ে—সে ক্রমাগত লিখে যাচ্ছে। আর ধনবৌ উঠোন পার হয়ে যাচ্ছে। সোনা প্রথম ভেবেছিল মার যা রাগ—তিনি নিশ্চয়ই ওকে পুকুরে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে হিমের মতো জল, জলে ডুব দিতে বলবেন। সে ভয়ে ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপছিল।

    মা ঠিক শেফালি গাছটার নিচে এসে বললেন, সোনা তুমি দাঁড়াও।

    সোনা দাঁড়াল।

    মা পুকুরের দিকে নেমে গেলেন না। ঠাকুরঘরের দরজা খুলে তামার পাত্র থেকে তুলসীপাতা নিলেন, সামান্য চরণামৃত নিলেন। জলটা সোনার শরীরে এবং নিজের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে হাঁ করতে বললেন সোনাকে। হাঁ করলে তুলসী-পাতাটা সোনার মুখে আল্গা করে ছেড়ে দিয়ে বললেন, খাও! এবং সঙ্গে সঙ্গে মনে হল সোনার, শরীর থেকে তার সমস্ত ভয় মন্ত্রের মতো উবে গেছে। সে মাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, মা আমি আর একা মাঠে যামু না।

    ধনবৌ সোনার কথার জবাব দিল না। তামার পাত্র থেকে গণ্ডুষ করে জল নিল এবং দ্রুত ছুটে গেল ঘরে। ঘরের ভিতর, বিছানায় তক্তপোশে জলটা ছিটিয়ে দেবার সময়ই শুনল, গোপাটে হৈ-চৈ। জব্বর কাঁদছে।

    বড়বৌ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে এল। রঞ্জিতও সব ফেলে নেমে এল উঠোনে। ধনবৌ দরজায় শেকল তুলে দিল। এক সঙ্গে ওরা পুকুরপাড়ের দিকে হেঁটে গেল। সোনা পিছনে। সেও সন্তর্পণে ওদের পিছু পিছু পুকুরপাড়ে নেমে গেল।

    দীনবন্ধু আর ওর দুই বৌ সুখী দুঃখী এসে দাঁড়াল বুকলতলায়। প্রতাপ চন্দ এসে দাঁড়াল চিলাকোঠার পাশে। ওর তিন স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি অনেক। ওরা ছাদের উপর দঁড়িয়ে জালালিকে দেখার জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকল। শ্রীশ চন্দ, অবিনাশ কবিরাজ এবং গৌর সরকারের ছেলে-মেয়ে বাঁশঝাড়ের নিচে দাঁড়িয়েছিল—দলটা আসছে। কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছে সব। জলে ডোবা মানুষ উঠে আসছে। জোৎস্না পর্যন্ত কেমন মরা-মরা, সাদা ফ্যাকাসে। এমন কি এখন হাওয়ায় একটা কলাপাতা নড়লে পর্যন্ত টের পাওয়া যায়। চুপচাপ। নিঃশব্দ। আকাশে এতটুকু মেঘ নেই। সাদা মেঘ থাকলে, হাওয়া থাকলে এবং ঝোপ জঙ্গলে কোন কীট-পতঙ্গ শব্দ করলে বোধহয় ব্যাপারটা এত বেশি ভৌতিক মনে হতো না। এমন কি ঢাকঢোলের বাজনা থেমে গেছে! ভয়ঙ্কর সাদা জ্যোৎস্নায় ওরা দেখল গোপাট ধরে মানুষগুলি উঠে আসছে। সোনা এবার মাকে জড়িয়ে ধরল, কারণ সেই মুখটা, কাটা মোষের মুণ্ড পেটে নিয়ে যেন ফের উঁকি দেবে।

    ধনবৌ সোনাকে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিল।

    লাশটা বাঁশে বাঁধা। লাশটা ঝুলে-ঝুলে উঠে আসছে। রঞ্জিতও ভাবল একবার ডেকে সামসুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু মাঠের দিকে তাকাতেই মনে হল এখনও উৎসবের ছবি জেগে আছে। একটু পরে অর্থাৎ শেষ রাতের দিকে সরকারদের পুকুরপাড়ে বাজি পোড়ানো হবে। রঞ্জিত ডাকতে সঙ্কোচ বোধ করল।

    আর সোনার মনে হল দুপুরের ছবি যায়। কাটা মোষ পেটে মাথা নিয়ে যায়। সব স্পষ্ট নয়, তবু মনে হয় জালালির মাথাটা নিচের দিকে ঝুলে আছে। চুলগুলি শণের মতো খাড়া হয়ে আছে। সোনা ভয়ে এবার মাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু মার কোনও সাড়া-শব্দ পাচ্ছে না। তিনি এই দৃশ্য দেখে কেমন শক্ত হয়ে গেছেন।

    সাধারণত এমনি হয় মানুষের। শোকের ছবি দেখলে কষ্ট নামক একটা বোধ সংক্রামিত হতে থাকে ভিতরে। মনে হয় একদিন না একদিন সকলকে সব কিছু ছেড়ে যেতে হবে। ভুবনময় সাদা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আছে। বড়বৌ অর্জুন গাছটার নিচে। জালালির লাশ নিয়ে ওরা মাঠ পার হয়ে চলে গেল।

    তারপরই ওরা সকলে দেখল, সেই মানুষ, কিংবদন্তীর মানুষ গোপাট ধরে রাজার মতো উঠে আসছেন।

    সাদা জ্যোৎস্নায় পাগল ঠাকুরকে সন্ন্যাসীর মতো দেখাচ্ছে।।

    সোনা দেখল, জ্যাঠামশাই এখন কোনও দিকে তাকাচ্ছেন না। সোজা গোপাট ধরে হেঁটে আসছেন। সামনে এসে পড়তেই বড় জেঠিমা ছুটে গোপাটে নেমে গেলেন। রঞ্জিতও নেমে গেল। জ্যাঠামশাইকে দেখে সোনার সব ভয় উবে গেল। সে ছুটে গিয়ে গোপাটে নেমে ডাকল, জ্যাঠামশাই।

    বড়বৌ, পথ আগলে আর মানুষটাকে বেশি দূরে যেতে দিল না। সে পাগল মানুষের হাতে হাত রাখল। হাত রাখলে এই মানুষ একেবারে সরল বালক বনে যান। তাঁর খালি গা, হাত-পা ঠাণ্ডা, শীতে মানুষটা আরও সাদা হয়ে গেছে। কাপড় ভিজা। মানুষটার সর্দিকাশি পর্যন্ত হয় না। আর বড়বৌ পারছে না। মানুষটার দিন-দুপুর নেই, কখন কোথায় চলে যান, কখন আসেন ঠিক থাকে না। এত বড় উৎসবের দিনে মানুষটকে সে আহার করাতে পারেনি। আলাদা করে সব রেখে দিয়েছে—যদি মানুষটা রাতে আসে, যদি মানুষটা ভোরের দিকে ফিরে আসে—সেই আশায় বড়বৌ শ্বেতপাথরের বাটিতে সব কিছু ভাগে ভাগে আলাদা করে রেখেছে।

    পাগল ঠাকুর বেশিক্ষণ শক্ত হয়ে থাকতে পারলেন না। বড়বৌর চোখে সেই এক বিষণ্ণতা। সাদা জ্যোৎস্নায় সেই বিষণ্ণতা যেন আরও তির্যক্। মানুষটা এবার চুপচাপ বড়বৌর হাত ধরে ঘরের দিকে উঠে যেতে থাকলেন। চারদিকে একবার চোখ মেলে তাকালেন, কেন যে বের হয়েছিলেন মনে করতে পারছেন না। কিসের উদ্দেশে এই বের হওয়া। কার স্মৃতির জন্য এমন উতলা হওয়া। কারা ওঁর জীবনের সোনার হরিণটি বেঁধে রেখেছে। কোথায় এমন হেমলক গাছ আছে—যার নিচে এক সোনার হরিণ বাঁধা—কল্পিত সেই সোনার হরিণটি কোন মাঠে—পাগল ঠাকুর ভাবতে-ভাবতে বিচলিত বোধ করলেন। কে সে? যুবতী পলিন কি চাঁদের বুড়ির মতো? অপলক কি তার চোখ! সে কি কোনও ঝরনার পাশে খরগোশের ঘরে বাস করছে! অথবা প্রতিদিন ঝরনার জলে স্নান, যুবতী পলিন হায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে…দুর্গের মাথায় জালালি কবুতর এবং সামনে কত জাহাজ। জহাজে করে যুবতী এসেছিল এ-দেশে বাপের কাছে। সে জাহাজঘাটায় বাপের সঙ্গে তাকে রিসিভ করতে গেছিল। কিছু কিছু স্মৃতি ফের মনে পড়ছে। স্পষ্ট নয়, ভাসা-ভাসা। যুবতীর মুখে কি অপরূপ লাবণ্য, নীল চোখ। আর ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে প্রতিদিন দুর্গের র‍্যামপার্টে বসত। এসব মনে এলেই কেমন উদাস হয়ে যান। তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা মাথার ভিতর। আবার স্মৃতিভ্রষ্ট। যুবতীর চোখ মুখ এবং শরীরের লাবণ্য কেবল পাগল প্রায় মাঠে মাঠে ঘুরিয়ে মারছে তাঁকে। তিনি কিছুতেই সেই নীল চোখ, লাবণ্যভরা মুখ স্মরণ করতে পারলেন না। প্রিয়জনের মুখ এবং স্মৃতি স্মরণ করতে না পারলে যা হয়—রাগে দুঃখে বেদনায় এবং হতাশায় ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠেন। ফলে সেই আক্রোশের চিৎকার, গ্যাৎচোরে শালা।

    রঞ্জিতও দেখল মাঠে সে একা। দূরে ইতস্তত এখনও মাঠের ভেতর হ্যাজাকের আলো জ্বলছে। মাঠ, বিশাল বিলেন মাঠ, মাঠে আলো—বিশ্বাস পাড়াতে হ্যাজাকের আলো, সরকারদের পুকুরপাড়ে হ্যাজাকের আলো এবং দু-একজন মানুষ এখনও প্রসাদ পাবার লোভে মাঠ পার হয়ে চলে যাচ্ছে। রঞ্জিত একা-একা কিছুক্ষণ ঠাণ্ডার ভিতর পায়চারি করল। ওকে খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। বোধহয় মনের ভেতর আখড়ার কাজকর্মগুলি সম্পর্কে সে সমস্যা-পীড়িত। সে সকলের অলক্ষ্যে, প্রায় গোপনে কাজটা চালাচ্ছে—সমিতির এই নির্দেশ। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে ওর লাঠিখেলা, ছোরাখেলার আখড়া সম্পর্কে সামসুদ্দিন এবং তার দলবল ভালোভাবেই জেনে গেছে। ওরা অর্থাৎ এই সব হিন্দুরা নিজেদের সাহসী এবং শক্তিশালী করে তুলছে। আত্মরক্ষার নিমিত্ত এইসব হচ্ছে। পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস। হিন্দুরা জনসংখ্যায় কম। ওরা কম-বেশি সব মধ্যবিত্ত। এবং নিচু জাতি যারা, যেমন নমশূদ্র সম্প্রদায়—তাদের ভিতর এই লাঠিখেলা, ছোরাখেলার হুজুগ এসে গেছে। এইসব কারণে পরস্পর নির্ভরতা ক্রমশ কমে আসছিল। ভিন্ন দুই জাতি, ফলে ক্রমশ দুই দিকে ধাবিত হচ্ছে। বোধহয় সমিতির কাছে দীর্ঘ এক চিঠিতে এইসব ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিল রঞ্জিত। এবং এই মৃত্যু, জালালির জলে ডুবে মরা প্রায় জীবন-সংগ্রামের জন্য বলা যায়। শালুক তুলতে গিয়ে জালালি পদ্মপাতায় আটকে মরে গেল। বোধহয় রঞ্জিতকে মানুষে-মানুষে এই প্রকট আর্থিক বৈষম্যও পীড়িত করছিল। সে সমিতিকে এইসব লিখেও জানাবে ভাবল।

    ঠিক তখনই মনে হল নরেন দাসের জমিতে সাদা কাপড়ে কে এক মানুষ দাঁড়িয়ে তাকে দূর থেকে দেখছে। রঞ্জিত বুঝল মালতী মাঠে নেমে এসেছে। সে সবার সঙ্গে ফিরে যায়নি। সে ক্রমে সন্তর্পণে এদিকে এগিয়ে আসছে। নিঃসঙ্গ এই মালতীর জন্য ভেতরটা তোলপাড় করে উঠল। সে নিজেকে অর্জুন গাছটার পাশে অদৃশ্য করে রাখল। কিন্তু হায়, কে কাকে লুকায়, কে কাকে অদৃশ্য করে! মালতীর চোখ বড় প্রখর এবং বুকের ভিতর যে সুখ পাখিটা ডাকছিল, দূরে জ্যোৎস্নায় রঞ্জিতকে দেখে সেই সুখপাখি ফের কলরব করতে থাকল। ধিকধিক করে বুকের ভিতরটা জ্বলছে। এমন দিনে কার না ইচ্ছা হয় সামনের দিগন্ত প্রসারিত মাঠে অদৃশ্য হতে! যখন জ্যোৎস্নায় সমস্ত জগৎ সংসার ডুবে আছে, কার না ইচ্ছা করে অগাধ সলিলে ডুবে মরতে

    আর কার না ইচ্ছা করে এমন সুপুরুষ দেখলে ভালোবাসতে। বড়বৌ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। টেবিলের ওপর হারিকেন জ্বলছে। পাগল মানুষ এখন প্রায় নগ্ন। বড়বৌ ভিজা কাপড় শরীর থেকে খুলে ফেলল। শ্বেতপাথরের মতো শক্ত অবয়ব। বুকের পেশি এত প্রবল যে মনে হয় একটা বড় হাতি অনায়াসে বুকের ওপর তুলে নাচাতে পারেন। পেটে চর্বি নেই। পাতলা মাংসের ওপর সাদা চামড়া—ঠিক যেন নদীরেখার মতো কোমল লোমশ বুকের পেশি থেকে একটা রেখা নাভি বরাবর নিচে নেমে এক আদিম অরণ্য সৃষ্টি করেছে। বড়বৌ সাদা তোয়ালে দিয়ে শরীরের সব বিন্দু-বিন্দু জলকণা খুব যত্নের সঙ্গে শুষে নিল। পাগল মানুষ মণীন্দ্রনাথ ঠিক যেন একটা বড় কাঠের পুতুল। কল লাগানো কাঠের পুতুল। এতটুকু নড়ছে না। এতটুকু অন্যমনস্ক হচ্ছে না—কেবল বড়বৌর সেই বড় বড় চোখ, ভালোবাসার চোখ অপলক দেখছেন। হাত তুলে দিতে বললে হাত তুলে দিচ্ছেন। বসতে বললে বসে পড়ছেন।

    উৎসবের দিন। বড়বৌ সব খাদ্যবস্তু ভিন্ন ভিন্ন থালাতে সাজিয়ে রেখেছে। তিনি কিছু খাবেন, কিছু খাবেন না। আবার হয়তো সবটাই খেয়ে ফেলতে পারেন। তারপর আরও খাবার জন্য বড়বৌর হাতটা কামড়ে ধরতে পারেন। দিতে না পারলে সাপ্টে তুলে নেবেন পাঁজাকোলে। এবং ছুটতে থাকবেন মাঠ-ময়দানে। অথবা এই খাটের ওপর নিরন্তর মানুষটা বড়বৌকে ফেলে রেখে, কখনও উলঙ্গ করে দেন, কখনও এক সুন্দর যুবতীর মুখের ঘ্রাণ নেবার মতো মুখে মুখ দিয়ে পড়ে থাকেন—কখন যে কি করবেন কেউ বলতে পারে না। সবই প্রায় তাঁর অত্যাচারের শামিল এবং এই অত্যাচারের আশায় বড়বৌ সারা দিনমান অপেক্ষা করে। দিনের শেষে তিনি ফিরে না এলে জানালায় বড়বৌ দূরের মাঠ দেখে। সেই মাঠ দেখতে দেখতে কত রাত শেষ হয়ে যায় তবু পাগল ঠাকুর ফিরে আসেন না। হয়তো তিনি কোনও গাছের নিচে শুয়ে নীল আকাশের গায়ে নক্ষত্র গুণছেন। তখন তাঁর মুখে কত সব কবিতা উচ্চারণ। ভালোবাসার কবিতা শুয়ে শুয়ে নক্ষত্র দেখতে দেখতে উচ্চারণ করেন। কবিতার সেই পক্তি সব বড়বৌকে এক নীল চোখ এবং সোনালী চুলের কথা বার বার মনে করিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে শ্বশুর ঠাকুরের উদ্দেশে আবেগে বলার ইচ্ছা, আপনি কেন মানুষটাকে পাগল করে দিলেন বাবা! আপনার ধর্মাধর্ম মানুষটার চেয়ে বড় কেন ভাবলেন। কেন আপনি ওঁকে কলকাতা থেকে তার করে নিয়ে এলেন। জোর করে তাঁকে বিয়ে দিলেন। ঘরে একজন ম্লেচ্ছ বৌ থাকলে, এর চেয়ে কী বড় ক্ষতি হতো আপনার চোখে জল এসে গেল বড়বৌর। কাপড় পরবার সময় চোখের জলটা আচ্ছন্ন করে দিল সব কিছু। মণীন্দ্রনাথকে বড় ঝাপসা দেখাচ্ছে এখন। পাট-ভাঙা কাপড় পরাবার সময় বড়বৌ কিছুক্ষণ বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে রাখল। কাঠের পুতুলটা এতটুকু নড়ছে না। যদি তাঁর সামান্য অত্যাচার আরম্ভ হয়, যদি তিনি দু’হাতে জোরজার করে বড়বৌকে উলঙ্গ করে দেন—কিন্তু পাগলঠাকুর আজ এতটুকু উত্তেজিত হলেন না। তিনি যেন এখন সন্ন্যাসীর মতো ফলদানের নিমিত্ত প্রতীক্ষা করছেন। হাতে বুঝি দণ্ডি দিলে তাই হতো।

    উৎসবের দিন বলে তসরের জামা গায়ে দেওয়া হল। কোঁকড়ানো চুলে চিরুনী দেওয়া হল। ঠিক যেন বরের সাজে পাগল মানুষ এখন দাঁড়িয়ে আছেন। এমন দৃশ্য বড়বৌ দেখে আবেগে গলে পড়ল।—এমন সুপুরুষ হয় না গো, বলতে বলতে সে প্রায় কেঁদে ফেলল। হাত ধরে এনে বড়বৌ পাগল মানুষটাকে আসনে বসাল। তারপর এক-এক করে উৎসবের ফুল-ফল বাতাসা, তিলাকদমা, পায়েস এবং খিচুড়ি—কত রকমারি খাবার থালার পাশে; বড়বৌ মাঝে-মাঝে এটা-ওটা এগিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু আজ পাগল মানুষ মণীন্দ্রনাথের কোনও খাবার স্পৃহা দেখা গেল না। তিনি সব নেড়েচেড়ে উঠে পড়লেন। তারপর নরম বিছানাতে সুন্দর এক রাজপুত্র যেমন শুয়ে থাকে, রুপোর কাঠি সোনার কাঠি যেমন পায়ে মাথায় দিয়ে শুয়ে থাকে, ঠিক তেমনি শুয়ে থাকলেন মণীন্দ্রনাথ। এতটুকু পাট ভাঙেনি কাপড়ের গোড়ালি পযন্ত টানা কাপড়, কোঁচা সোজা পায়ের কাছে নেমে এসেছে। দু’হাত আড়াআড়ি করে বুকের ওপর রাখা। তিনি বুকের ওপর হাত রেখে ঘরের কড়িকাঠ গুণছেন। স্থির অপলক দৃষ্টি। পাশে বড়বৌ। বসে আছে তো আছেই। চোখে ঘুম আসছে না। বার বার দু’গালে চুম খাচ্ছে। জামার নিচে বুকের ভিতর নরম হাতের আঙুল ক্লিবিল করে বেড়াচ্ছিল—যদি মানুষটা সোনা রুপোর কাঠির স্পর্শে মুহূর্তের জন্য জেগে ওঠে। না মানুষটা আজ কিছুতেই জাগছে না। এমন উৎসবের দিন বিফলে গেল! সে মানুষটার রোমশ বুক থেকে হাত তুলে নিল এবার। কোনও উত্তেজনা নেই দেখে লেপ গায়ে দিয়ে কাঠের পুতুল বুকে নিয়ে শুয়ে থাকল সারা রাত। কাঠের পুতুলটা ঘুমায় না—কিন্তু কালঘুম বড়বৌর—কখন দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে, কখন মণীন্দ্রনাথ ধীরে-ধীরে রাজপুত্রের খোলস ছেড়ে হাঁটু কাপড়ে বের হয়ে যান, বড়বৌ টের পায় না। কালঘুম বড়বৌর সব কিছু হরণ করে নিয়েছে।

    .

    তাবুদের ভিতর ততক্ষণে জালালিকে রাখা হয়ে গেছে। মালতী সেই অর্জুন গাছটার উদ্দেশে পা টিপে টিপে হাঁটছে। আর তখন, ফেলু পাড়ে দাঁড়িয়ে জালালির কবর ঠিক মতো খোঁড়া হল কিনা দেখছে।

    বিলে তখন গজার মাছটা আপন আস্তানায় ফিরে এসেছে এবং সন্তর্পণে পদ্মলতার ভিতর আজব জীবটাকে দেখতে না পেয়ে বিস্ময়ে লেজ নাড়ছে। কে চুরি করে নিয়ে গেল—কোথায় কোন জলে আজব জীবটা ভেসে বেড়াচ্ছে! অনুসন্ধানের জন্য গজার মাছটা জলের ওপর পাখনা ভাসিয়ে সাঁতার কাটতে থাকল।

    তাবুদের ভিতর জালালির মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা। নতুন কাপড়ের কফিন দিয়েছেন হাজিসাহেব। হজিসাহেবের তিন বিবি উষ্ণ জলে গোসল করিয়েছে। সব কাজ-কর্ম ওরাই দেখেশুনে করছে। চুলে বেণী বেঁধে দিয়েছে, আতর দিয়েছে, চন্দনের গন্ধ দিয়েছে—এখন আর কে বলবে সামান্য গয়না নৌকার মাঝি আবেদালির বিবি জালালি!

    তাবুদে জালালি, মসজিদে ইমাম। আল্লার কাছে জালালির জন্য দোয়া চাইছে সবে। তিন সারিতে গ্রামের সব পুরুষ মসজিদের ভিতর দাঁড়িয়ে কান স্পর্শ করে—হে আল্লা, এমন বিরাট বিশ্বময় তোমার অপার মহিমা—আমরা সামান্য মানুষ, আমাদের আর কি করণীয় আছে, বিশ্বময় সৌরজগতের অপার লীলা তুমি ছড়িয়ে দিয়েছ, হে আল্লা, যে ঘাস মাঠ ফসল এবং পাখিদের সব কলরব শুনছি, তোমার করুণার কথা কে না জানে—তুমি সকলকে আশ্রয় দাও, তুমি আমাদের এই দুঃখী জালালিকে তোমার অপার মহিমার আশ্রয়ে তুলে নাও—ওরা বোধ হয় ওদের দোয়া ভিক্ষার ভিতর এমন কিছুই বলতে চাইছিল।

    জ্যোৎস্না রাত, ঢাক-ঢোল বাজছে, ইতস্তত হ্যাজাকের আলো মাঠে ঘাটে এবং তাবুদের ভিতর জালালি মুখ ফিরে শুয়ে আছে। সামসুদ্দিন ইমামের কাজ করছিল। মসজিদের পাশে আতাফলের গাছ, গাছে রাজ্যের সব পাখির নিবাস, অসময়ে এত লোক দেখে ওরা সকলেই জেগে গেল, কলরব করতে থাকল এবং কিছু আতাফলের পাতা প্রায় ফুলের মতো তাবুদের ওপর ঝরে পড়তে থাকল।

    তারপর সকলে মিলে লা ইলাহা ইল্লাল্লা মোহম্মদ রসুলাল্লা—তাবুদ কাঁধে নিয়ে মানুষগুলি মাঠে যাবার সময় আল্লা এক, মহম্মদ তার রসুল, এইসব বলছে। তখনও সরকারদের পুকুরপাড়ে ঢাক বাজছে ঢোল বাজছে। তখনও মাঠময় জ্যোৎস্না। ওরা লণ্ঠন হাতে, কেউ কুপি হাতে, বোরখা পরে বিবিরা—যাদের নামার কথা নয় কবরে তারা পর্যন্ত দুঃখী মানুষ জালালির জন্য বটগাছের নিচে নেমে এসেছে। গাঁয়ের পুরুষেরা চারপাশে দাঁড়াল। হাজিসাহেব অসুস্থ, তিনি আসতে পারেননি। অন্যান্য প্রায় সকলে কবরের চারপাশটায় দাঁড়িয়ে আছে। তাবুদ থেকে জালালিকে বের করা হল। একপাশে সামু, জব্বর অন্য পাশে। ওরা নিচে নেমে গেল। ফেলু ডান হাত দিয়ে কাটা বাঁশগুলি সামু কবর থেকে উঠে এলেই সাজিয়ে দেবে। উত্তরের দিকে মাথা এবং দক্ষিণের দিকে পা রেখে জালালিকে শুইয়ে দেওয়া হল। মুখটা ঘুরিয়ে দিল পশ্চিমে—মক্কা মদিনা দেখুক জালালি—এই করে ওরা উপরে উঠে এলে ফেলু এক হাতে কাটা বাঁশগুলি কবরের ওপরে বিছিয়ে দিল, কিছু ইস্তাহার বিছিয়ে দিল—তাতে লেখা আছে, মুসলিম লীগ—জিন্দাবাদ যেন কবরে সাক্ষ্য হিসাবে ওরা ওদের শপথপত্র রেখে দিল। এই শপথপত্র কবরে মাটি ঝুরঝুর করে পড়ে না যাবার জন্য এবং গরিব মুসলমানদের বেঁচে থাকবার উত্তরাধিকারের দৌলতকে কেউ যেন অস্বীকার করতে না পারে; অথবা যেন সামুর বলার ইচ্ছা—চাচি, আমরা এই ফসল এবং মাঠ আমাদের জাতভাইদের দিয়ে যাব, আমরা এমন সব সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছি। ধর্ম আমাদের সকলের ওপরে—রসুল আমাদের মহম্মদ, আল্লা এক—তাঁর কোন শরিক নাই।

    সকলেই একটু একটু করে কবরে মাটি দিল। তারপর সব মাটি কবরের ওপর তুলে দেওয়া হল। চেপে মাটি দিল, মাটির ওপর গোসলের বাকি জল ঢেলে দিল জব্বর। তিনটা জীয়ল গাছ পুঁতে, ওরা পেছনের দিকে তাকাল না, ওরা গ্রামের দিকে উঠে যেতে থাকল। ঠিক ওরা সকলে আড়াই পা গিয়েছে, তক্ষুনি এক অলৌকিক আলো কবরের ভিতরে ঢুকে গেল। ফতিমা বাপের পাশে হাঁটছিল। বাপ তাকে ফেরাস্তার গল্প বলছে। সেই যেন এক কিংবদন্তীর গল্প—বেহেস্তের এক সিঁড়ি পড়ে গেল, আলোর সিঁড়ি। কবরের ভিতর অলৌকিক আলোর প্রভায় জালালি জেগে গেল।

    দুই ফেরাস্তা প্রশ্ন করল, তুমি কে?

    জালালি বলল, আমি জামিলা খাতুন।

    —তোমার ধর্ম কি?

    —ধর্ম ইসলাম।

    —আল্লা কে?

    —আল্লা এক, তাঁর কোন শরিক নেই।

    —রসুলের নাম?

    —হজরত মহম্মদ।

    —এঁকে চেন? বলেই দুই ফেরাস্তা আলো ফেলল মুখে।—কে তিনি?

    হজরত মহম্মদ। জালালি ফের ঘুমের ভিতর যেন ঢলে পড়ল।

    জালালিকে দুই ফেরাস্তা কোলে তুলে নিলেন। অলৌকিক আলোয় জালালির শরীর লীন হয়ে গেল। ঠিক যেন এক কিংবদন্তীর সূর্য—যায় যায়, বিলের জলে ডুবে যায়। বিল থেকে নদীতে, নদী থেকে সাগরে, মহাসাগরে—শেষে এক সময় রাজকন্যা টুপ করে জলে ভেসে উঠে দুই ডানা মেলে দেয় আকাশে, পুবের আকাশে সূর্য লটকে দিয়ে আবার সাগরের জলে ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

    তখন সোনা মায়ের পাশে শুয়ে একটা ঘোড়ার স্বপ্ন দেখল। একটা ঘোড়ার দুটো মুখ। ঘোড়াটা অন্ধ। সারকাসের তাঁবু থেকে ঘোড়াটাকে ক্লাউন টেনে বের করে এনেছে। তারপর ফাঁকা মাঠে ঘোড়াটাকে ছেড়ে দিল। অন্ধ ঘোড়া এখন একবার পুবে আবার পশ্চিমে ছুটছে। ঘোড়ার পিঠে এক হতভাগ্য মানুষ—সে একবার পুবে আবার পশ্চিমে ডিগবাজি খাচ্ছে। প্রায় সারকাসের খেলার মতো। দর্শক মাত্র দুজন। সোনা এবং ফতিমা। সোনা এবং ফতিমা এমন মজার খেলা দেখে হাততালি দিতে থাকল। পিছনে পাগল জ্যাঠামশাই দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ওদের, মাঠে সারকাসের খেলা যেন দেখাতে এনেছেন।

    জ্যোৎস্না মরে আসছে, ভোর হতে দেরি নেই। গ্রামের সবাই জালালিকে কবর দিয়ে উঠে যাচ্ছে। বাগের পথে ফেলু দাঁড়াল। সারা মাঠময় কুয়াশার জন্য দৃষ্টি এগুচ্ছে না। ক্রমশ কুয়াশা চরাচর এত আচ্ছন্ন করে দিল যে ফেলু প্রায় নিজেকেই দেখতে পাচ্ছিল না। ভোর রাতের ঠাণ্ডা—হাত পা সব বরফ হয়ে যাচ্ছে। আন্নু সবার আগে উঠে গেছে, ঘুমের বাতিক বড় বেশি বিবির। মনজুর উঠে গেল, হাজি সাহেবের বড় বিবি উঠে গেল। জব্বরকে সামু ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সামুর বিবি পেছনে পেছনে উঠে আসছে। বোরখা দেখে চেনা যাচ্ছিল সব—কার বিবি, বিবির কি রকমফের, শুধু সেই বোরখাটার চোখে সাদা গুটি সুতার কাজ। জ্যোৎস্নায় সহসা দেখে ফেললে প্রায় ভূত বলে বিভ্রম হতে পারে। সেই বোরখার নিচে যুবতী মাইজলা বিবি। তোর সনে পীরিত আমার ওলো সই ললিতে, ফেলু মনে মনে মরিয়া হয়ে উঠল। আবার সেই বুকের ভিতর আঁকুপাঁকু শব্দটা হচ্ছে। কাজটা খুব নিমেষে করে ফেলতে হবে। যেন অন্য মানুষ টের না পায়। কুয়াশা এত ঘন যে এক হাত সামনের মানুষটাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। অস্পষ্ট কুয়াশার ভিতর, সেই বোরখাটা চিনে ঠিক মতো ধরতে না পারলে ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে যাবে। সে শীতে হি হি করে কাঁপছিল। মাত্র একটা হাত তার সম্বল। জবরদস্ত বিবিকে কাবু করতে কতক্ষণ সময় নেবে। ভাববার সময়ই মনে হল কুয়াশার পর্দার ওপর মাইজলা বিবি ভেসে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে খপ করে সাপটে ধরল এক হাতে। ওর ভিতরে প্রায় যেন এখন অযুত হস্তীর বল। সে মুখে ডান হাতটা চেপে ঠেলতে ঠেলতে ঝোপের ভিতর ফেলে বাঘের মতো হঙ্কার দিল, রা করবি না বিবি। আমি তর পরাণের ফেলু।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }