Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ১.২৪

    ১.২৪

    অন্দরের দিকে যেতে সারাদিন আর সোনার ইচ্ছা হচ্ছিল না। গাছের পাতার মতো নিরিবিলি এক লজ্জা অথবা সংকোচ ওকে ঘিরে ধরেছে। সুতরাং সে সারাদিন কাছারিবাড়ির বারান্দায় বসেছিল। এবং চারপাশে যে মাঠ আছে, সেখানে সে ঘোরাফেরা করছে। সে কিছুতেই অমলা কমলার সঙ্গে দেখা করেনি।

    আজ নবমী। সুতরাং মোষ বলি হবে। সকাল থেকেই এই উৎসবের বাড়ি অন্যরকম চেহারা নিচ্ছে। লালটু পলটু কাছে কোথাও নেই। ওরা বাবুদের বাড়ি-বাড়ি দুর্গাঠাকুর দেখে বেড়াচ্ছে। নদীর পাড়ে সড়ক। নদীর পাড়ে প্রাচীন মঠ। মঠের পাশ দিয়ে পুরানো বাড়ির দিকে একটা পথ গেছে, সেই পথে সোনা গতকাল পাগল জ্যাঠামশাইর হাত ধরে গিয়েছিল পুরানো বাড়িতে। সঙ্গে রামসুন্দর ছিল। সুতরাং এমন একটা নিরিবিলি পথ দুপাশে বাবুদের ইটের দালান-কোঠা, এবং দীঘির কালো জল তার কাছে আতঙ্কের মনে হয়নি। দীঘির পাড়ে বড় অশ্বত্থ গাছ, গাছের নিচে আশ্রম। আশ্রমের পাশ দিয়ে পথটা কতদূরে গেছে সোনা জানে না। কেবল ওর মনে হয়েছিল, এই পথ ধরে গেলেই সেই বুলতার দীঘি, এবং দীঘির দু’পাড় দেখা যায় না। বড় বড় মাছ, মাছের কপালে সিঁদুরের ফোঁটা। নদীর সঙ্গে যোগাযোগ দীঘির জলের, কালো জল, জলে অজস্র রূপালী মাছ, এবং একটা জলটুঙি আছে দীঘির মাঝখানে। মাঝে অতল জলের ভিতর বড় একটা দ্বীপ। সোনার এসব কোনও বড় দীঘি দেখলেই মনে হয়। আর মনে হয় বার-বার অমলার মুখ, এবং এটা যে কী একটা হয়ে গেল! সে পাগল জ্যাঠামশাইর সঙ্গে আর তেমন বেশি কথা বলতে পারছে না। কেবল চুপচাপ দীঘির পাড়ে কোনো অশ্বত্থের ছায়ায় বসে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে। কেবল ভাবছে অমলা তাকে রূপালী মাছের খেলা, জলের নিচে খেলা, কী-যে এক খেলায় সুন্দর এক রাজপুত্র বানিয়ে তাকে নদীর পাড়ে ছেড়ে দিয়েছে।

    সোনা সেই পুরানো বাড়ি-বাড়ি বলতে আর কিছু নেই, শুধু ইট-কাঠ, ভাঙা দালান এবং চুন-বালি খসা নাটমিন্দর। মন্দিরে পূজা হয় দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে। এই বাড়িতেই বাবুদের প্রথম জমিদারী আরম্ভ হয়েছিল। কি যেন নাম সেই পূর্ব পুরুষের! সোনা এখন আর তা মনে করতে পারছে না। রামসুন্দর যেতে যেতে অন্য এক হাতির গল্প করছিল, হাতি, নদী পার হতে গিয়ে শেকলে পরশমণির স্পর্শ, এবং হাতি বাবুদের নসিব বদলে দিয়ে গেছে। এমন সব কিংবদন্তী রামসুন্দর কী সুন্দরভাবে গাছের ছায়ায় বসে বলতে ভালোবাসে। আর সে কাছারিবাড়ির একটা টুলে নিরিবিলি বসে দেখতে পাচ্ছে, মাঠের ভিতর নবমীর মোষটা ঘাস খাচ্ছে। মোষটা বলি হবে বলে সব ছেলেমেয়েরা ঘুরে ফিরে অথবা একটু দূরে বসে মোষটার খাওয়া দেখছে। একটু বাদে রামসুন্দর মোষটাকে স্নান করাতে নিয়ে যাবে। সোনা, একবার মোষের মাথা নিয়ে এক কাটা মোষ যায়, সে মাঠে কাটা মোষের মাথা দেখে ধড় দেখে বনের ভিতর পথ হারিয়ে ফেলেছিল। সে জ্যান্ত মোষ কোনওদিন দেখেনি। ওর মোষটার কাছে যেতে কষ্ট হচ্ছে। একবার ভেবেছিল মোষটার কাছে গিয়ে বসে থাকবে এবং ঘাস খাওয়া দেখবে। কিন্তু বলি হবে বলে ওর ভিতরে ভিতরে মোষটার জন্য কষ্ট হচ্ছিল। কাছে যেতে তার খারাপ লাগছে। মোষটার পিঠে একটা শালিক পাখি বসে আছে. পিঠে শালিক পাখি দেখেই সোনার কেন জানি মোষটাকে দুটো ঘাস ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছা হল। মোষটা জানে না কিছুক্ষণ পরই সে মরে যাবে।

    সোনার খবর নিতে অমলা দুদু’বার বৃন্দাবনীকে পাঠিয়েছে। দু’বারই সোনা কাছারিবাড়ির কোথাও না কোথাও লুকিয়ে রয়েছে। সে সাড়া দেয়নি। বৃন্দাবনী তারপর হতাশ হয়ে চলে গেছে। সোনা শুনেছে এই বৃন্দাবনীই ওদের বড় করে তুলছে। মানুষ করে তুলছে। অমলা কমলার মা খুব সুন্দর। এবং চুপচাপ কলকাতায় নির্জন ঘরে একা বসে থাকেন। বড় একটা জানালা আছে। জানালায় দুর্গের র‍্যামপার্ট দেখা যায়। মেয়েদের জন্মের পর তিনি আর সেই ঘর থেকে বের হন না। রবিবারে শুধু গীর্জায় যান। কমলার বাবার চোখমুখ দেখলেও সোনার কেন জানি কষ্ট হয়। কেমন বিষণ্ণ আর উচ্ছ্বাস। সেজন্য সোনা অমলা অথবা কমলার সঙ্গে যতটা সহজে ভাবে সে আর ভাব করবে না, কথা বলবে না, তত ভিতরে ভিতরে সে নিজেই যেন কেমন দুর্বল হয়ে যায়। তবু সেই ঘটনাটা মনে হলেই ওর কেমন ভয় করে। অমলা নিজেও কমলার সঙ্গে কাছারিবাড়ি চলে এসেছে। এই, তোরা সোনাকে দেখেছিস। সোনা কোথায় সোনাকে দেখছি না! রামসুন্দরকে তখন জিজ্ঞাসা করলে বলেছিল, মইষডার কাছে বইসা আছিল সোনাবাবু।

    ওরা মাঠে নেমে গেল। যেখানে মোষটা ঘাস খাচ্ছে সেখানে একদঙ্গল ছেলেপিলে। ওরা মোষটার চারপাশে বসে রয়েছে। অমলা সোনাকে সেখানে দেখতে পেল না।

    সোনাকে ওরা দেখতে পাবে না, কারণ সোনা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। চুপি চুপি অমলাকে দেখছে। সে অমলাকে ডাকতে পারছে না। সেই ঘটনার পর থেকেই সোনা কেমন নদীর পাড়ের সোনা হয়ে গেছে। সে যতটা পারল, কমলা অমলার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইছে। অথবা পালিয়ে পালিয়ে এ-কটা দিন কাটিয়ে দিতে পারলেই ফের নৌকায় দেশে ফিরে যাওয়া। ওর আর ভালো লাগছে না। মায়ের জন্য ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, সে জানে না মায়ের কাছে কবে কীভাবে যাবে, কবে তাকে সকলে সেই ছোট্ট নদীটির পাশে পৌঁছে দেবে।

    মেজ জ্যাঠামশাইকে সে কাছেই পায় না। তিনি কোথায় কখন চলে যান সোনা টের পায় না। মাঝে মাঝে স্নানের অথবা আহারের আগে তিনি বাক্স থেকে জামাপ্যান্ট বের করে দেন। সোনা যেন তাড়াতাড়ি লালটু পলটুর সঙ্গে স্নান আহার শেষ করে নেয়। কারণ, উৎসবের বাড়ি, কে কার দেখাশুনা করে! শুধু পাত পেতে বসে পড়া।

    অন্যদিন সকালবেলা সোনা, অন্দরে ঘি আর সুগন্ধ আতপ চালের ভাত মেখে ডাল দিয়ে অথবা কচু-কুমড়ো সেদ্ধ, বাবুদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে খেতে বসে যায়। কাল সকালবেলা সে পুরোন বাড়ি চলে গিয়েছিল না হলে খেতে গেলেই দেখা হয়ে যেত অমলার সঙ্গে। আজ কোথাও যেতে পারেনি বলে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে খেতে ডাকবে কেউ-না-কেউ। বৃন্দাবনী এসেছিল, অমলা কমলা খুঁজে গেছে। তার ভাত নিয়ে ছোট বৌরানী বসে রয়েছে। সোনা এ-বাড়িতে এসে ছোট বৌরানীরও বড় প্রিয় হয়ে গেছে। সেই সোনাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। দু’দিন থেকে সে অন্দরে ছোটদের সঙ্গে বাল্য-ভোগ খেতে আসছে না। বৌরানী সোনার খোঁজে বার বার কাছারিবাড়ি লোক পাঠিয়েছে।

    ভূপেন্দ্রনাথ পূজামণ্ডপ থেকে নেমে আসার সময় এক ঠোঙা সন্দেশ এনেছিলেন। সেই খেয়ে সোনা নবমী পূজা দেখবে বলে সকাল সকাল পাগল জ্যাঠামশাইর সঙ্গে নদী থেকে স্নান করে এসেছে। পূজার নূতন জামা-প্যান্ট পরেছে। মোষ বলি হবে। ছোট শিং বলেই সোনার মনে হল মোষটার বয়স কম। কম বয়েসের এই মোষ এখনও ঘাস খাচ্ছে। ঘাস খেলে ঘস ঘস শব্দ হয়। সোনা শব্দটা শুনতে শুনতে চারপাশে তাকাল। আর কী সমারোহ—কী কচি-মোষ! ঘাস, ফুল ফল খেতে দিচ্ছে মোষটাকে। সেই এক রক্তজবার মালা, এখন মালা পরে মোষটা যেন ঘাসের ভিতর রাজার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ক্রমে যত কচি কাঁচা বালক সেই সকাল থেকে যারা জড়ো হচ্ছিল চারপাশে তারা এখন মোষটার নীল রঙের চোখ দেখছে। বলির সময় চোখদুটো লাল-রঙের হয়ে যাবে। সোনা হাঁটতে হাঁটতে মোষটাকে পিছনে ফেলে কাছারিবাড়ির সিঁড়িতে এসে দাঁড়াল। লম্বা ঘর পার হয়ে নাটমন্দিরের চত্বরে ঢুকে গেলে দেখল, কি লম্বা আর চকচকে দুটো খঙ্গ নিয়ে বসে রয়েছে রামসুন্দর। কিছু ছাগশিশু, অথবা পাঁঠা বলি হবে। মোষ বলি হবে। রামসুন্দর বসে আছে তো আছেই। দোতলার বারান্দায় কে যেন সব চিকগুলি ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। মোষ বলির সময় পাঁঠাবলির সময় সব বৌরানী, আর পরিজন যত আছে, চিকের ভিতর মুখ রেখে নৃশংস ঘটনা দেখতে দেখতে হা-মা দেবী কল্যাণী, তুমি কল্যাণব্রতী, সুন্দরী, মহাকালের আদ্যাশক্তি বলে করজোড়ে প্রণাম করবে। ভূলুণ্ঠিত হবে।

    নবমী পূজার প্রসাদ এইসব াঠার মাংস। মহাপ্রসাদ। পূজা শেষ হলেই এইসব আস্ত পাঁঠা গণ্ডায় গণ্ডায় রান্নাবাড়িতে চলে যাবে। বড় বড় টাগারি ধোয়া মোছা হচ্ছে। ছাল ছাড়াবার জন্য নকুল তিনজন মানুষকে নিয়ে রান্নাবাড়ির বারান্দায় দড়ি ঝুলিয়ে রাখছে। যেন বলি শেষ হলে আর কিছু পড়ে না থাকে নিমেষে বড় বড় কড়াইয়ে এসব পাঁঠার মাংস জ্বাল হবে। মোষটাকে সেই বাঁশে ঝুলিয়ে নিয়ে যাবে শীতলক্ষ্যার ওপারের মানুষেরা। রক্ষিত জ্যাঠামশাই কাটা-মোষ যারা নিতে এসেছে তাদের সঙ্গে পাওনা গণ্ডা নিয়ে রফা করছেন।

    সোনা রামসুন্দরের পাশে চুপচাপ বসল। রামসুন্দর রামদা ধার দিচ্ছে। দুটো রামদা। উল্টে পাল্টে রামসুন্দর কি নিবিষ্ট মনে ধার দিয়ে চলেছে। সেই যে সোনা একবার সোনালী বালির নদীর চরে প্রথম তরমুজ খেতে হারিয়ে গিয়েছিল—ঈশম ছইয়ের ভিতর তামাক টানছে, সে নদীর জল থেকে একটা মালিনী মাছ ধরে এনে তরমুজের পাতায় রেখেছিল, এবং মাছটা এক সময় মরে যাবে ভাবতেই সে যেভাবে দ্রুত ছুটে গিয়ে বালির ভিতর গর্ত করে জল রেখে মাছটা ছেড়ে ভেবেছিল এবার আর ভয় নেই, মাছটা বেঁচে যাবে, এবং গর্তের পাড়ে বসে নিবিষ্টমনে প্রতীক্ষায় ছিল মাছটা বেঁচে যাচ্ছে কি না—ঠিক তেমনি যেন রামসুন্দরের নিবিষ্ট মনে প্রতীক্ষা রামদায় ধার উঠছে কি না! সে দু’বার ঘষেই হাতের আঙুলে জিভ থেকে একটু থুতু লাগিয়ে ধার পরীক্ষা করছে। এত বড় একটা জীবের গলা এক কোপে কাটা প্রায় যেন বিলের গভীর জলে ডুব দেওয়া। ভেসে উঠতে পারবে কিনা কেউ বলতে পারে না।

    ঠিক দশটায় বলি। হাঁকডাক চারপাশে। কেউ যেন চুপচাপ বসে নেই। দু’বার ওকে অতিক্রম করে মেজ জ্যাঠামশাই লম্বা বারান্দা পার হয়ে গেলেন, দু’বার রামসুন্দর ধার দিতে দিতে চোখ তুলে লক্ষ করেছে ছোট একটা মানুষ এইসব দেখে তাজ্জব বনে যাচ্ছে। বড়দা, মেজদা, বাবুদের ছেলেরা সবাই ছুটে ছুটে কোথাও যাচ্ছে। ওকে কতবার যাবার সময় দেখছে—অথচ কেউ কথা বলছে না। নবমীর পূজা শেষ হলেই যেন আবার সবাই সবাইকে চিনতে পারার কথা ভাববে। সেজন্য সোনাও চুপচাপ আছে। ওর খুব খিদে লাগছে। কাউকে বলতে পারছে না। সকালে সে ভাত খায়নি। সকালে ওর ফ্যানা ভাত খাবার অভ্যাস। কষ্টটা প্রায় সেইদিনের মতো—যেদিন সে ফতিমাকে ছুঁয়ে দিয়েছিল বলে মা ভাত খেতে দেয়নি। সোনা চুপচাপ রামদা দুটো দেখছে। কি চকচক করছে। সোনার একবার রামদা দুটোতে হাত দিতে ইচ্ছা হল। কিন্তু রামসুন্দর দা দুটো পাশাপাশি সাজিয়ে রেখেছে। একটা পাঁঠা কাটার, একটা মোষ কাটার! সে দা দু’টোকে অপলক দেখছে। রামসুন্দরের এমন চোখ মুখ সে কোনওদিন দেখেনি। ওর কেমন ভয় ভয় করতে লাগল।

    বলি হবে দশটায়। ঠিক ঘড়ি ধরে দশটায়। সবাই যেন এখন ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব জোরে জোরে মন্ত্র পাঠ হচ্ছে মণ্ডপে। তন্ত্রধার দ্রুত মন্ত্র পড়ে যাচ্ছেন। দশটা ঢাক বাজলে দশটা ব্যাগপাইপ বাজবে। ঢোল বাজবে দশটা। সব দশটা করে। পাঁঠাও দশটা, শুধু মোষ একটা। মোষটা বলি হবে—কী আতঙ্ক তার! সোনা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মোষ বলির কথা মনে হলেই বুকটা কেঁপে উঠছে। ঠিক সেই ঠাণ্ডা ঘরটার মতো। যেমন সে লুকোচুরি খেলার রাতে কোনও এক প্রাচীন ঠাণ্ডা ঘরে শ্যাওলার ভিতর—একটা কাক কা কা করে ডাকছিল—রাত্রে কাক ডাকা ভালো না, অমঙ্গল হয়, সারাক্ষণ অমলা যে ওকে নিয়ে কী করছিল…! এখন রামসুন্দর দায়ে ধার উঠে গেছে বলে নিশ্চিন্তে গোঁফে তা দিচ্ছে।

    এই রামসুন্দর আজ মোষ বলি দেবে। সকাল থেকেই সে অন্য মানুষ। সকাল সকাল সে নদী থেকে স্নান করে এসেছে। টিকিতে জবাফুল বেঁধেছে। ঘরে বসে সে গাঁজা খেয়েছে। সে এখন একটা আসনে পদ্মাসন করে বসে আছে। রামদা দুটো সামনে। ডাকলেই সে মণ্ডপের দিকে দুই দা দুই কাঁধে নিয়ে ছুটে যাবে। সিঁদুরের ফোঁটা চক্ষুর মতো এঁকে দেবে দায়ের মাথায়। তারপর আর কার সাধ্য আছে ওর সামনে যায়!

    সোনাকে এমন চুপচাপ পাশে বসে থাকতে দেখে বিরক্তিতে কেমন বলে উঠল, সোনাকর্তা এহনে যান। আমি দেবীর আরাধনা করতাছি। তারপর আর কোনও কথা নয়। একেবারে গুম মেরে বসে আছে।

    তা চুপচাপ বসে থাকবে! এতবড় একটা জীবকে সে এক কোপে দু’খান করবে সোজা কথা! কি বড় আর মোটা গর্দান মোষের। কালো কুচকুচে সবল মোষ। দশটা বিশটা মানুষের যে মোষ সামলানো দায় সেই মোস এক কোপে কাটতে চায়। মোষ যারা ধরবে তারা এক এক করে এসে পড়ল, গোল হয়ে বসল এবং গাঁজা খেল। ওরা উৎকট চিৎকার করে উঠল দু’হাত তুলে। সোনা তেমনি উবু হয়ে বসে আছে। সে নড়ছে না। সে কেমন এইসব মানুষজন দেখে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। দেয়ালে সেই সব সড়কি, বল্লম, নানারকমের লম্বা ফলা এবং তরবারি সাজানো এবং এই ঘরটাতেই রামসুন্দর দিনমান পড়ে থাকে বুঝি। হাতে তার নানারকমের শিকারের ছবি। বাঘ ভাল্লুকের ছবি এঁকে রেখেছে সে সারা শরীরে। সে যতবার ভাওয়ালের গজারি বনে বাবুদের সঙ্গে বাঘ শিকারে গেছে ততবার সে হাতে, বুকে পিঠে অথবা কব্জিতে উল্কি পরে এসেছে নারানগঞ্জ থেকে। সে ক’টা বাঘ শিকার করেছে, ক’টা হরিণ এবং অজগর ওর শরীর দেখলেই তা টের পাওয়া যাবে। সোনা মাঝে মাঝে রামসুন্দর পাশে বসে থাকলে উঁকি দিয়ে গুনত—এক, দুই, তিন। তারপর বলত, আপনে তিনটা বাঘ মারছেন। রামসুন্দর হাসত। তারপর সে তার হাত তুলে বগল দেখাত।— দ্যাখেন, এখানে একটা বাঘ আছে। বাঘটারে বগলের নিচে লুকাইয়া রাখছি।

    সোনা বলত, ক্যান লুকাইয়া রাখছেন?

    —বাঘটার লগে আমার খুব ভাব-ভালবাসা আছিল।

    —ভাব-ভালবাসা কি?

    —আপনের বিয়া হইলে টের পাইবেন।

    সোনা বলত, যান! সে ঠেলে ফেলে দিত রামসুন্দরকে। তারপর বলত, আমাকে একটা হরিণের বাচ্চা আইনা দিবেন?

    সোনার ধারণা বনে গেলেই হরিণের বাচ্চা ধরা যায়। এই যে চিড়িয়াখানা বাবুদের এবং চিড়িয়াখানায় বাঘ, কুমীর এবং জোড়া হরিণের খাঁচা, সবই এই মানুষের জন্য। যেন এই মানুষ যাবতীয় বন্য জন্তু এনে পোষ মানাচ্ছে।

    সে বলত, বনে গেলে ধইরা আনবেন ত?

    —রাখবেন কোনখানে?

    —বাড়ি নিয়া যামু।

    —খাওয়াইবেন কি?

    —ঘাস খাওয়ামু।

    —ঘাস খাইতে চায় না। বন থাইকা ধইরা আনলে গোসা কইরা থাকে।

    —গোসা করব ক্যান?

    —জঙ্গলের জীব যে জঙ্গলে যাইতে চায়।

    —অমলা কমলার হরিণ আছে। অরা গোসা করে না ক্যান?

    —সুন্দর মুখ, কি সুন্দর চক্ষু অগ কন? রঙখানা কি? অরা কথা বললে আপনের গোসা থাকে? কথা কইলে খেলা করতে ইসছা হয় না, ভালবাসতে ইসছা হয় না?

    —যান। আপনে কেবল মন্দ কথা কন।

    সেই মানুষটা এখন গুম মেরে আছে। কথা বলছে না। এমনকি এদিকে বড় এখন কেউ আসতেও যেন সাহস পাচ্ছে না, কপালে বড় রক্তচন্দনের ফোঁটা দিয়ে বসে রয়েছে, কাউকে সে ভ্রূক্ষেপ করছে না। এমনকি অমলার বাবা মেজবাবু একবার এসেছিলেন এদিকটাতে, তিনি রামসুন্দরকে এমন অবস্থায় পা ছড়িয়ে বসে থাকতে দেখে পালিয়েছেন। কারণ ওর চোখ জ্বাফুলের মতো লাল। সকাল থেকে পাশের ঘরটায় ঢুকে কি খাচ্ছে পালিয়ে পালিয়ে—একটা উৎকট গন্ধ এবং ঝাঁজ। সোনা দু’বার ঘরটায় ঢুকে পালিয়ে এসেছে। সে এখন মণ্ডপের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁ-দিকে ঝাড়-লণ্ঠনে একটা জালালি কবুতর সেই কখন থেকে ডাকছে। সে ঝাড়-লণ্ঠনে নিজের মুখ দেখার চেষ্টা করল। বাতাসে ছোট কাচের নকশি কাটা পাথরগুলি দুলছে। ঠিক প্রজাপতির মতো নকশি কাটা কাচগুলি ঘুরে ঘুরে দুলছে। কেমন রিনরিন শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দে চকিতে মুখ তুলতেই দেখল, মণ্ডপে দেবী ওর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন। সে সরে দাঁড়াল। মনে হল চোখ ঘুরিয়ে ওকে দেখছেন দেবী। সে কেমন ভয়ে ভয়ে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। বলল, ঠিক অমলা কমলার মতো বলা, ভয় পেলে সে বইয়ের ভাষায় কথা বলতে চায় অথবা বড় জেঠিমা যেমন বলেন, তেমন ভাবে সে বলল, মা দুগ্‌গা, আমার জ্যাঠামশাইকে ভাল করে দাও।

    গর্জনে দেবীর মুখ চকচক করছে। ধূপের ধোঁয়ায় যেন মুখ, নাকের নোলক কাঁপছে। হাতের ত্রিশূল দেবী আরও শক্ত করে চেপে ধরেছেন। মেজ-জ্যাঠামশাই একটা গরদের কাপড় পরে সারাক্ষণ চণ্ডী পাঠ করছেন। পুরোহিত ফুল-বেলপাতা চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছেন। রাশি রাশি ভোগের নৈবেদ্য এবং ফলমূলের গন্ধ। এখন বলির সময়। ঢাক বাজছে দশটা। মোষটাকে কারা আনতে গেছে মাঠে। দেবীর চোখ যেন ক্রমে লাল হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো বলি দেখার জন্য জায়গা করে নিচ্ছে। সোনা সেই দেয়ালে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর নড়তে পারছে না।

    তখন সেই মানুষটা সহজে দু’কোপে দুটো বাচ্চা পাঁঠা কেটে ফেলল। সে চোখ বুজে ফেলছে। চোখ খুলতেই দেখল ধড়টা এবং পাগুলো তিড়িং তিড়িং করে লাফাচ্ছে। সে বলল, মা, আমি আর পাপ কাজ করব না।

    সে একটা থামের আড়ালে আছে। দোতলার চিক ফেলা। বাবুদের পরিজনেরা, দাসদাসী সবাই সেই চিকের আড়ালে। ওরা বলি দেখার জন্য চলে এসেছে। অথচ কী যে করবে সোনা, ভয়ে সে নড়তে পারছে না, সারাক্ষণ দেবী তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন।—তুমি কী করেছ সোনা, এটা কী করেছ, এমন বলছে। দেবীর রক্তচক্ষু। এই তবে দেবী মহিমা!

    সে বলল, আমি কিছু করিনি মা। তেমনি বাতাস বইছে। নকশি কাঁথার মতো ছোট ছোট বরফি কাচ আবার আগের মতো বাতাসে দুলছে। রিনরিন করে বাজছে। জালালি কবুতরটা চুপচাপ একটা ধুতুরা ফুলের মতো কাচের গেলাসে বসে পাঁঠা বলি দেখছে। জায়গা নেই। পাখিটা বেশ জায়গা মতো বসে গেছে। সারা মণ্ডপে এবং নিচে, চারপাশের বারান্দায় সর্বত্র লোক। আর দোতলার চিক ফেলা। অমলা কমলা এই ভিড়ের ভিতর পাঁঠা বলি দেখছে না, সোনাকে খুঁজছে। কোথায় যে গেল!

    এখন কেউ তাকে দেখতে পাবে না। তাকে তার সামনের মানুষজন ঢেকে ফেলেছে। দুগ্‌গা ঠাকুর ওকে দেখতে পাচ্ছেন না। সে চুপি চুপি মাথা নিচু করে ভেগে পড়ার জন্য কিছু মানুষ ঠেলে সিঁড়ির মুখে আসতেই কে তার হাত খপ করে ধরে ফেলল। আর সেই মানুষটা তাকে কাঁধে তুলে দাঁড়িয়ে থাকল।

    আর মোষটাকে তখন কারা টেনে টেনে আনছে। ধূপধুনোর গন্ধে কেমন নেশা ধরে গেছে। দুগ্‌গা ঠাকুরের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ধোঁয়ায় একেবারে সব অস্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মোষটা সব দেখে ফেলেছে। নাকে বড় নোলক দুলছে দুগ্‌গা ঠাকুরের। আর কী অপার মহিমা দু’ চোখে। মোষটা এবার আরাধনা করছে এমন মুখ তুলে তাকাল। তখনই ঠেলেঠুলে বিশ-বাইশজন লোক মোষটাকে হাড়কাঠে ফেলে দিল। পায়ে দড়ি বাঁধা। গলাটা টেনে জিভ বের করে চারটা মানুষ পায়ের দড়িতে হ্যাঁচকা মারতে সবল জীবটা হুড়হুড় করে নিচে গাইগরুর মতো পড়ে গেল।

    জিভ থেকে লালা বের করছে। গঁ গঁ শব্দ করছে। এবারে ঘাড়টা চেপে দিতেই শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল। কেউ মোষের আর্তনাদ শুনতে পেল না। ঢাক এত জোরে বাজছে আর চারদিকে দালান কোঠা বলে এমন গমগম শব্দ যে, এই বাড়িঘর প্রাসাদ, প্রবল প্রতাপান্বিত মোষ আর সোনা দুলছে। সেই রিনরিন শব্দ বাতাসে জলতরঙ্গের মতো কাচের বরফি কাটা নকশাতে। সেই দুগ্‌গা ঠাকুরের মুখ ঝলমল করছে আর কেবল রক্তপাত হচ্ছে সামনে। পশু বলি হচ্ছে, মেজ জ্যাঠামশাই পশুর মুণ্ড নিয়ে মণ্ডপে সাজিয়ে রাখছেন। মাথায় ঘিয়ের ছোট ছোট মাটির প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া হচ্ছে। সব শেষে মোষ বলি। বাদ্যি যারা বাজাচ্ছে, তারা নেচে নেচে বাজাচ্ছে। হাত তুলে সকলে জয়ধ্বনি করছে, দুগ্‌গা ঠাকুর কি জয়! শ্রীশ্রী, চণ্ডীমাতা কি জয়! মা অন্নপূর্ণা কি জয়! আদ্যাশক্তি মাহামায়া কি জয়! অসুরবিনাশিনী, মধুকৈটবনাশিনী কি জয়! মা অন্নপূর্ণা কি জয়! রামসুন্দর সেই খাঁড়াটা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। প্রতিমার মুখ কাঁপছে। যেন সে এখন মহিষমর্দিনী, এবং এই মহিষের রক্তপানে খড়্গা হাতে নিজেই নেচে বেড়াবে।

    মোষটাকে যারা ঠেলেঠুলে হাড়িকাঠে ফেলে দিয়েছিল তারা সবাই মোষটার পিঠে চেপে বসেছে। তাঁবুর খোঁটা পোঁতার মতো চারজন লোক চারপাশে দড়ি টেনে রেখেছে। মানুষগুলির চাপে ঘাড়টা লম্বা হয়ে যাচ্ছে মোষের। কালো চামড়া নীল নীল হয়ে যাচ্ছে অথবা ফেটে যাচ্ছে মনে হয়। ক্রমান্বয়ে ঘি মাখানো হচ্ছে গর্দানে। সোনা উঁকি দিয়ে আছে। ওকে কে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন দেখার সময় নেই। সে চিকের আড়ালে আছে। এ-পাশে দাঁড়ালে চিক চোখে পড়ে না। সে এখন অপলকে একবার দেবীর মুখ দেখছে আর রামসুন্দর যে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে খঙ্গ হাতে এবং এসেই দেবীর শ্রীচরণে ভূপাতিত হয়ে—মাগো, তুই মা অন্নপূর্ণা, তোর কী করুণা মা, বলে হাউহাউ করে কাঁদছে রামসুন্দর, এসব দেখে সে কাঠ হয়ে যাচ্ছে! এই যে খড়কুটো দিয়ে তৈরি মাটির প্রতিমা, চিমটি কাটলে রঙ এবং মাটি উঠে আসবে, এখন তার কী মাহাত্ম্য, করজোড়ে বাবুরা সব দাঁড়িয়ে আছেন। আর পুরোহিত ঘণ্টা বাজাতেই, ফুল-বেলপাতা দিতেই রামসুন্দর মোষটার সামনে দাঁড়াল। এখন মোষটা লেজ গুটিয়ে নিচ্ছে। একটা লোক চুলের বেণীর মতো লেজটাকে দুমড়ে ধরে আছে। লেজটা সেজন্য কাঁপছে।

    তখন রামসুন্দর মা মা বলে চিৎকার করে উঠল, মা তোর এত লীলা, মা মা, বলতে বলতে খ উপরে তুলল না বেশি। হাতখানেক উপর থেকে কোপ বসিয়ে দিল। খড়্গা সোনার চোখের সামনে দুলে উঠেই অদৃশ্য হয়ে গেল—কি যে হয়ে যাচ্ছে মুণ্ড ছিটকে পড়েছে, ধড়টা গড়িয়ে পড়ছে। কলসী থেকে জল পড়ার মতো মোষের ঘাড়টা এখন রক্ত ওগলাচ্ছে। মেজ জ্যাঠামশাই সেই মুণ্ডটা মাথায়া তুলে নিলেন। তিনি যে কত শক্ত মানুষ, দেবীর সামনে তিনি যে কী মহাপাশে আবদ্ধ, এখন যেন সোনা তা টের পাচ্ছে। তিনি মাথায় মুণ্ড নিয়ে হাঁটতে থাকলেন। সোনা বস্তুত রামসুন্দর উপরে খড়্গা তুলতেই চোখ বুজে ফেলেছিল। সে চোখ খুলতেই দেখল জ্যাঠামশাই মোষের মুণ্ড নিয়ে মণ্ডপে যাচ্ছেন। সেই মানুষটা সোনাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে এখন মোষের রক্ত ধরার জন্য খুরি নিয়ে হাড়িকাঠের নিচে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। রক্ত নিয়ে সকলের কপালে ফোঁটা টেনে দিচ্ছে। মা ঈশ্বরী করুণাময়ী! চিমটি কাটলে তোর মা রঙ মাটি উঠে আসবে, খড় বেরিয়ে পড়বে, তুই মা দেখালি বটে খেলা! সেই পাগল মানুষ এখন এইসব মানুষের উন্মত্ত অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছেন। সোনা ভিড়ের ভিতর জ্যাঠামশাইকে দেখতে পাচ্ছে না। যারা রক্ত কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে কচুপাতায় অথবা কলাপাতায়, যারা খুরি আনতে ভুলে গেছে তাদের থেকে সোনা সরে দাঁড়াল। ওরা কেমন পাগলের মতো হাতে পায়ে রক্ত লাগিয়ে ছুটোছুটি করছে। সে ভয়ে সিঁড়ির মুখে যেখানে পথটা অন্দরের দিকে চলে গেছে, তার একপাশে একটা থাম, সে থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। এইসব দেখতে দেখতে ওর যে খুব খিদে পেয়েছে ভুলে গেল। নিজেকে বড় একা এবং অসহায় লাগছে। মার কথা মনে হল। কতদিন সে মার পাশে শুচ্ছে না। মার পাশে না শুলে তার ঘুম আসে না। মায়ের শরীরে একটা পা তুলে না দিলে, মাকে পাশবালিশের মতো ব্যবহার না করলে সোনার ঘুম আসে না। ভিতরে ভিতরে সে এখন মায়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছে।

    মার জন্য না ক্ষুধার জন্য বোঝা যাচ্ছে না—কারণ সোনা এখন থামের আড়ালে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সকাল থেকে সে প্রায় কিছুই খায়নি, চোখ-মুখ কি শুকনো দেখাচ্ছে, সে চারপাশে এত লোক দেখছে, অথচ কিছু বলতে পারছে না। সে আজ মেজ জ্যাঠামশাইকে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছে। বড়দা মেজদা ওকে আমল দিচ্ছে না। মোষ বলি হলেই ওরা আবার বাড়ির ছেলেদের সঙ্গে কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন রান্নাবাড়িতে দশটা পাঁঠার মাংস রান্না হচ্ছে। মহাপ্রসাদ হলেই পাত পড়বে বড় উঠোনে। সকলে খেতে বসবে, তখন সোনাও দুটো খাবে—সে থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে চুপি চুপি রান্নাবাড়ি থেকে কখন খাবারের ডাক আসে সেই আশায় দাঁড়িয়ে আছে। এবং তখন কেন জানি মায়ের কথা মনে হলেই চোখ ফেটে জল আসছে সোনার।

    সিঁড়িতে তখন দ্রুত নেমে আসছে মনে হল কেউ। সে পিছনে ফিরে দেখল অমলা কমলা। ওরা বলল, সোনা, তুই ফোঁটা দিসনি?

    সোনা বলল, না।

    —আয়, ফোঁটা দিবি। বলে অমলা কোথা থেকে একটা খুরি নিয়ে এল। জমানো রক্ত। সেই রক্ত থেকে সোনার কপালে ফোঁটা দিয়ে দিল। বলল, এদিনে ফোঁটা না দিলে তুই বড় হবি কী করে? তোর পুণ্য হবে কী করে?

    কিন্তু সোনা কিছু জবাব দিচ্ছে না। সে অন্ধকার মতো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সে কেবল ওদের দেখছে। সেই এক জরির কাজ করা ফ্রক গায়ে। হাতে ছোট্ট দামি ঘড়ি এবং বালা, সরু আঙুলে হীরের আংটি! ববকাট চুলে সাদা রিবন বাঁধা। গায়ে পদ্মফুলের মতো সুবাস।

    সেই আবছা অস্পষ্ট জায়গাটিতেও অমলা ধরতে পারল, সোনা কাঁদছিল। সে বলল, কি রে, তোকে আমরা সেই সকাল থেকে খুঁজছি। তুই ছিলি কোথায়?

    সোনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

    কমলা বলল, চল, ছোট কাকিমা তোকে ডাকছে।

    সোনা বলল, মোষ বলি আমি কোনকালে দেখিনি।

    অমলা বলল, সোনা তুই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলি?

    —যা, আমি কাঁদব কেন।

    —তুই ঠিক কেঁদেছিস! আমি সব দেখেছি।

    সোনা ধরা পড়ে গেছে ভাবতেই বলল, ফোঁটা দিলে আমার কোন পাপ থাকবে না?

    —না। বলেই অমলা সোনার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, এদিকে আয়। সে সোনাকে একটু ভিতরের দিকে নিয়ে গেল। বলল, কি রে, কাউকে বলিস নি ত?

    —না।

    —তুই আমাকে পিসি বলতে পারিস না! আমি তো তোর চেয়ে কত বড়।

    —পিসি ডাকতে আমার লজ্জা লাগে অমলা।

    —তবু তুই আমাকে পিসি ডাকবি। মান্য করবি, কেমন!

    সোনা জবাব দিল না।

    —আজ আসবি সন্ধ্যার পর ছাদে।

    —ধ্যেৎ। বলেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেল।

    আর সেই নাটমন্দিরে এখন কাটা মোষ পড়ে। মণ্ডপে দশটা পাঁঠার মাথা, মাঝখানে মোষের মাথা। মাথায় প্রদীপ, প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে কোনটা নিভে গেছে। সবক’টা মাথার চোখ এখন দেবীর দিকে তাকিয়ে আছে। এখন ভিড়টা নেই। একটু রক্ত হাড়িকাঠে পড়ে নেই। ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে। সোনা সোজা দীঘির পাড়ে চলে এল। রোদ উঠেছে খুব। শরতের বৃষ্টি সকালে হয়ে গেছে। সবকিছু তাজা, ঘাস ফুল পাখি সব। তবু কেন জানি সোনার কিছু ভালো লাগছে না। সে তখন দেখল পাগল জ্যাঠামশাই ময়ূরের ঘরটাতে বসে রয়েছেন। উত্তরের আকাশে একটা কালো মেঘ। সেই মেঘ দেখে ময়ূর পেখম মেলেছে। পাগল জ্যাঠমশাই সেই ময়ূরের পেখম দেখতে দেখতে কেমন তন্ময় হয়ে গেছেন।

    সোনা ডাকল, জ্যাঠামশায়!

    মণীন্দ্রনাথ যেন ধরা পড়ে গেছেন এমনভাবে তাকালেন। কেমন অপরাধী মুখ। সোনা সেসব লক্ষ করল না। শুধু চুপি চুপি বলল, চলেন, বড়ি যাই গিয়া। ওর যে ভালো লাগছে না আর, এমন কথা বলল না।

    কিন্তু মণীন্দ্রনাথ যেন ধরতে পেরেছেন সোনা কিছু খায়নি এখনও পর্যন্ত। ওর ক্ষুধায় চোখ মুখ কোথায় ঢুকে গেছে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন তিনি। এবং সোনাকে নিয়ে সোজা রন্নাবাড়িতে ঢুকে কোনওদিকে আর তাকালেন না। দুটো কলাপাতা নিজেই নিয়ে এলেন। মাটির গ্লাসে জল রাখলেন। তারপর বারান্দা পার হয়ে ঠাকুরকে হাত তুলে ইশারা করলেন।

    নকুল বুঝতে পারছে, এই পাগল মানুষ তাঁর নাবালক ভাইপোটিকে খেতে দিতে বলছেন। মহাপ্রসাদ এখনও নামেনি। বড় উঠোনে লম্বা পাত পড়ছে। সেখানে সে উঠে যেতে বলতে পারত। কিন্তু তিনি যখন এসেছেন তখন কার সাধ্য না দেয়। নকুল নিজেই ওকে ভাত বেড়ে দিল। পাগল মানুষ নিবিষ্ট মনে ভাত মেখে সোনাকে বড় বড় গ্রাসে খাওয়াতে লাগলেন। জল খেতে দিচ্ছেন। নুন মেখে দিচ্ছেন। যেমনটি করলে সোনার খেতে ভালো লাগবে তেমনটি করছেন।

    অথচ সোনা খেতে পারল না। কারণ আসার সময় সে মণ্ডপের সামনে কাটা মোষটাকে পড়ে থাকতে দেখেছে। এমন কুৎসিত দৃশ্য আর এই পাঁঠার মাংস—ওর কেমন ভিতর থেকে ওক উঠে আসছিল।

    জ্যাঠামশাই খেয়ে এলে সে ওঁর সঙ্গে ঘুমাতে পারল না। সে দেখল পাগল জ্যাঠামসাই চুপচাপ একটা ইজিচেয়ারে শুয়ে আছেন বারান্দায়। আশ্বিনের কুকুরটার জন্য তিনি আলাদা খাবার এনেছেন ঠোঙা করে। পেটভরে খেয়ে কুকুরটা পায়ের কাছে ঘুমাচ্ছে। তিনি ঘুমাননি। মেজ জ্যাঠামশাই সারাদিন পর দুটো খেয়ে শুতে-না-শুতেই নাক ডাকাচ্ছেন। সে বুঝল এ-ই সময় বের হয়ে যাওয়ার। সে জ্যাঠামশাইকে নিয়ে এখন পিলখানার দিকে চলে যাবে। এ-ই সময়। হাতিটার কাছে গিয়ে একটু বসা যাবে। সেখানে গেলে বুঝি এই যে ভয়, এক ভয়, কাটা মোষ পড়ে আছে, কাটা মোষের ভয়ে সে যেন হাতিটার কাছে চলে যাচ্ছে অথবা এখন দেখে মনে হবে সে তার পাগল জ্যাঠামশাইকে হাতি দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। হাতি দেখিয়ে, ঘাস ফুল পাখি দেখিয়ে সে তার পাগল জ্যাঠামশাইকে নিরাময় করে তুলবে।

    বাগানের ভিতর দিয়ে ওরা হাঁটতে থাকল। সামনে শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর পাড়ে ওরা হাঁটবে। মাথার উপর নির্মল আকাশ। দু’পাশে পাম গাছ আর নদীর পাড়ে পাড়ে কত মানুষ। ওরা প্রায় পালিয়ে হাতি দেখতে চলে যাচ্ছে। কেউ দেখছে না এমনভাবে চুপি চুপি সোনা জ্যাঠামশাইর হাত ধরে চলে যাচ্ছে। কেবল কাছারিবাড়ি পার হলে যাত্রা পার্টির অধিকারী মানুষটি দেখে ফেলল। সে রামায়ণ পাঠ করছিল, চশমার কাচ ঘসে বাগানের ভিতর দিয়ে কারা যাচ্ছে লক্ষ করতেই বুঝল সেই পাগল মানুষ তাঁর নাবালক ভাইপোর হাত ধরে কোথায় যাচ্ছেন। এই মানুষকে দেখলেই কেন জানি রাজা হরিশচন্দ্রের কথা মনে হয় অধিকারী মানুষটির। গাছপালার ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আবছা আবছা মুখ, হাত পা এবং কুকুরের ছায়া চোখে পড়ছে। সে যেন সারা জীবন পালাগানে এমন একজন উদাস মানুষের ভাব ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে—যিনি কেবল সামনের দিকে হাঁটেন, কোনওদিকে তাকান না। সে পারেনি। মানুষটাকে দেখেই ওর কেন জানি বড় একটা নিঃশ্বাস উঠে এল।

    সোনা কিন্তু জ্যাঠামশাইর সঙ্গে বের হতে পেরেই যাবতীয় দুঃখ ভুলে গেল। সে আগের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে। সে বার বার জ্যাঠামশাইকে সাবধান করে দিচ্ছে, যেন হাতির সঙ্গে জ্যাঠামশাই কোন দুষ্টুমি না করে। করলেই সে তার বাবাকে না হয় মেজ জ্যাঠামশাইকে বলে দেবে এমন ভয় দেখাতে লাগল।

    ওরা কালীবাড়ি যাবার পথে এসে পড়ল। বাজারের ভিতর দিয়ে কালীবাড়ি যাবার একটা রাস্তা আছে। কিন্তু পিলখানায় যেতে হলে অতদূরে যেতে হবে না। ডানদিকের উমেশবাবুর মঠ, মঠের উত্তরে সুপুরির বাগিচা। বাগিচা পার হলেই একটা আমবাগান। বাগানের ভিতর হাতিটা বাঁধা থাকে। কিন্তু সে এখন কোথায় জায়গাটা আবিষ্কার করতে পারছে না। সে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েই ঘণ্টার শব্দ পেল। এবং মনে হল বাগানের ভিতর ঢুকে গেলেই সে হাতিটাকে আবিষ্কার করে ফেলবে। কিন্তু কোনদিকে যে হাতিটা আছে! তারপরই মনে হল সকালে পিলখানায় থাকে, দুপুর হলে জসীম হাতিটাকে নদীতে স্নান করাতে নিয়ে যায়, তারপর বনের ভিতর কিছুক্ষণ বেঁধে রাখে। খাবার দেওয়া হয়। কলাগাছ আর যত মাদারের ডাল। দশমীর দিনে হাতি থাকবে না। সকাল হলেই জসীম বাবুদের বাড়ি বাড়ি হাতি নিয়ে যাবে। চালচিড়া মুড়ি মোয়া সন্দেশ হাতির জন্য চেয়ে নেবে। খুব সকাল সকাল সে হাতিটার কপালে চন্দনের তিলক পরাবে। শোলার রঙ-বেরঙের লাল নীল অথবা জরির চাঁদমালা বেঁধে দেবে মাথায়। কমলা বলেছে ওরা কাল হাতির পিঠে চড়ে দশহরা দেখতে যাবে। অমলা বলছে, সোনা, তুই আমাদের সঙ্গে যাবি। সোনা কিছু বলেনি। সে এখন হাতিটা কোনদিকে, কোন্ বনের ভিতর এবং মাঠের পাশ দিয়ে যাবে, না সোজা দৌড়াবে বুঝতে পারল না। কেবল কুকুরটা সোজা বনের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে এবং ঘেউঘেউ করছে। সে বুঝল হাতিটাকে দেখে ফেলেছে তার আশ্বিনের কুকুর।

    তাড়াতাড়ি ওরা কুকুরটাকে অনুসরণ করে ভিতরে ঢুকে গেল। বনের ভিতর ঢুকে সোনা দেখল হাতিটা দুলছে, সামনে পিছনে দুলছে। এই বন গাছপালা পাখি নিয়ে তার হাতি বেশ আছে। হাতির পায়ে শেকল। সে বেশিদূর এগোতে পিছোতে পারছে না। সোনা, জ্যাঠামশাইর পাশে—যেন ওরা দুই মুগ্ধ বালক হাতিটাকে নিবিষ্ট মনে দেখছে। তখনই হাতিটা হাঁটুমুড়ে বসে পড়ল। এবং সোনাকে, পাগল জ্যাঠামশাইকে চিনতে পেরে সেলাম দিল!

    আর আশ্বিনের কুকুরটাও হিজ মাস্টার্স ভয়েসের মতো ওদের পাশে বসে ঘেউঘেউ করে উঠল। যেন বলতে চাইল, আমাকে চিনতে পারছ না, আমি আশ্বিনের কুকুর। সোনাদের বাড়িতে আমি থাকি। তোমার সঙ্গে একবার নদী পার হয়েছিলাম, মনে নেই!

    সোনা এবার হাতি না দেখে জ্যাঠামশাইর মুখ দেখল। শিশুর মতো হাতির দিকে তাকিয়ে হাসছেন তিনি। এই হাসি দেখে সহসা কেন জানি মনে হল, জ্যাঠামশাই ভালো হয়ে যাবেন। চোখে মুখে সরল অনাবিল হাসি। সে মায়ের কথা, অমলা কমলার কথা অথবা ফতিমার কথা ভুলে আনন্দে জ্যাঠামশাইর পিঠে দু’হাতে গলা জড়িয়ে দুলতে থাকল। সোনা বলল, জ্যাঠামশয় বলেন ত, এক। পাগল মানুষ বললেন, এক। বলেন, দুই। তিনি বললেন, দুই। হাতিটা তখন শুঁড় দোলাচ্ছে। গলায় তার ঘণ্টা বাজছিল। জ্যাঠামশাই এক-দুই-তিন করে ক্রমান্বয়ে ঠিক ঠিক গুনে যাচ্ছেন। সোনা পাগল মানুষ মণীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক দুই তিন অথবা একে চন্দ্র, দু’য়ে পক্ষ, তিনে নেত্র—যেন দুই নাবালক বনের ভিতর জীবনের নামতা পাঠ নূতন করে ফের আরম্ভ করেছে—সোনা সুর করে পড়ে যাচ্ছে, জ্যাঠামশাই ঠিক ঠিক অবিকল উচ্চারণ করে নামতা পড়ছেন।

    সোনা হঠাৎ এই নির্জন বনের ভিতর আনন্দে দু’হাত তুলে চিৎকার করে উঠল, বাবা, মা, মেজদা, বড়দা, ছোটকাকা, জেঠিমা, আমার জ্যাঠামশয় ভাল হইয়া গ্যাছে। এই বলতে বলতে সে বনের ভিতর ছুটে ছুটে ঘুরে বেড়াতে থাকল। কুকুরটাও ছুটে বেড়াচ্ছে। হাতির গলায় ঘণ্টা বাজছে। পাগল মানুষ চুপচাপ বসে কেবল গুনে যাচ্ছেন—এক দুই তিন, চার, পাঁচ, ছয় সাত, আট, নয়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }