Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ১.২৬

    ১.২৬

    বিকেলের রোদ এখন জানালায়। বৃন্দাবনী সব দরজা খুলে দিচ্ছে। এই ঘরে আয়নার সামনে অমলা কমলা এখন সাজবে। বারান্দায় অমলা কমলা দাঁড়িয়ে আছে। দূরে শীতলক্ষ্যার পাড়। পাড়ে পাড়ে কাটা মোষ নিয়ে যাচ্ছে যারা, অমলা কমলা তাদের দেখছিল।

    বৃন্দাবনী ডাকল, বড় ঠাকুরানী, আসুন।

    ওরা দেখল বৃন্দাবনী বড় আলমারি খুলছে। ওদের ফ্রক বের করছে। এখন সে ওদের চুল বেঁধে দেবে। বেলা পড়ে আসছে। অন্দরে ল্যাণ্ডো লেগে রয়েছে। ওরা বিকালে অন্যান্য বাবুদের বাড়ি ঠাকুর দেখতে যাবে। সঙ্গে যাবে রামসুন্দর। আর বৃন্দাবনী ডাকলেই ওদের যেন এক খেলা আরম্ভ হয়ে যায়। মার্বেল পাথরের মেঝে—খুব একটা জোরে ছোটা যায় না। অথচ এই দুই মেয়ে কি সুন্দর মসৃণ মেঝের উপর ছুটতে পারে। বৃন্দাবনী ডাকলেই—ওরা ছুটে পালাবে, কারণ সে ওদের চুল এত আঁট করে বেঁধে দেয় যে মাথায় বড় লাগে।

    সুতরাং বৃন্দাবনী আর ডাকল না। ডাকলেই ওরা পালাবে। সে পা টিপে টিপে কাছে গিয়ে ধরে ফেলবে ভাবল। কিন্তু তার আগেই দুষ্টু মেয়েরা টের পেয়ে গেছে। ওরা সেই খেলায় মেতে গেল—ঠিক যেন ওরা ছোট্ট দুই পরী হয়ে যায়—ওরা মেঝের উপর সন্তর্পণে পা টিপে টিপে হাতের অদ্ভুত ব্যালেন্স রেখে ছুটতে থাকে—ঠিক ব্যালেরিনা যেন। হাত তুলে নদীর পাড়ে অথবা অদ্ভুত কায়দায় ওরা যেন ক্ষণে ক্ষণে মসৃণ বরফে পা তুলে তুলে নাচে। তখন বৃন্দাবনীর রাগ হয়। সে কেন ওদের ছুটে ধরতে পারবে! তখন সে অভিমান করে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলে না। মুখ দেখলে ওরা টের পায় সে রাগ করেছে। তখন ওরা আর দেরি করে না। এসে ধরা দেয়। কারণ এই বৃন্দাবনীর কাছেই ওরা শিশুবয়স থেকে বড় হয়ে উঠেছে।

    অমলা বলল, আমি আজ চুল বাঁধব না পিসি

    বৃন্দাবনী কাজের ফাঁকে চোখ তুলে তাকাল। কিছু বলল না।

    অমলার ইচ্ছা ওর চুল ফাঁপানো থাকুক। ঘাড় পর্যন্ত বব করা চুল। চুলটা পিঠের নিচে নামলেই কেটে ফেলা ঠিক নয় বলার ইচ্ছে। এখন তোমাদের বয়স হচ্ছে মেয়ে। এই বয়সে চুল আর একটু বড় হতে দাও। আমি বেশ এঁটে বেণী বেঁধে দি। তবে চুলের গোড়া শক্ত হবে। মাথা থেকে, বড় হলে ঝুরঝুর করে চুল উঠে যাবে না।

    অথচ ওদের মুখ ববকাটা চুলে বড় সুন্দর দেখায়। তাজা গোলাপের মতো। কতবার ভেবেছে মাথা ন্যাড়া করে দেবে, ন্যাড়া করে দেবে শুনলেই ওরা পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে। বৃন্দাবনীর তখন কষ্ট হয়।। মেজবাবুকে আর চুল কাটা নিয়ে পীড়াপীড়ি করে না।

    মেজবাবুকে বৃন্দাবনী যেমন ছোট থেকে বড় করে তুলেছে, যে যত্ন এবং সেবা ছিল প্রাণে—সেই যত্নে এই দুই মেয়ে বৃন্দাবনীর হাতে ক্রমে মানুষ হচ্ছে। ওরা ফের ছুটতে চাইলে বৃন্দাবনী ধমক দিল। রাগ করতে চাইল। দুমদাম আলমারির দরজা বন্ধ করে দিতে চাইল। মেয়েরা আসছে না। যে যার মতো সারা ঘরে ফের ছুটে বেড়াচ্ছে।

    কলকাতার বাড়িতে হলে বৃন্দাবনী জোর ধমক দিতে পারত। কিন্তু এখানে সে কিছু করতে পারে না। কলকাতার বাড়িতে সে-ই সব। সে না থাকলে এই দুই মেয়ে মায়ের মতো ব্যবহারে কিঞ্চিৎ ভিন্নধর্মী হতো। কি সুন্দর বাংলা বলে ওরা। পূজা-আর্চায় অগাধ ভক্তি। পূজা এলেই ওরা কবে দেশের বাড়িতে যাবে এই বলে মেজবাবুকে পাগল করে দেয়। সন্ধিপূজার সময় বাড়ির সব মেয়ের মতো করজোড়ে চিকের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। মোষ বলি হলে রক্তের ফোঁটা কপালে, ফোঁটা দিলেই শরীরের সব পাপ মুছে যায়, শুধু তখন পবিত্র এক ভাব থাকে শরীরে। বৃন্দাবনী যেন ওদের মুখ দেখলেই টের পায়। মেজবাবুর স্ত্রী এসব পছন্দ করেন না, করেন কি করেন না সেও তিনি ভালো করে জানেন না, তবু প্রতিবারে ওঁদের পূজা দেখতে আসা নিয়ে একটা মনোমালিন্য এবং ক্রমে তা প্রকট হতে হতে কখন জানি ওঁরা দুজনেই পরস্পর দূরের মানুষ হয়ে যান। বৃন্দাবনী টের পায়—মেজবাবু ওদের নিয়ে স্টিমার ঘাটে নামলেই একেবারে সরল বালক, যেন কতদিন পর ফিরে আসা, কতদিন পর মুক্তি, নদীর পাড়ে নেমেই জন্মভূমিকে তিনি গড় হয়ে প্রণাম করেন, মেয়েদের বলেন, এই তোমার দেশ, বাংলাদেশ, এই তোমাদের পিতৃভূমি, তারপর চুপচাপ হাঁটেন। গাড়িতে উঠে তিনি বাড়ি যান না। চারপাশে নদীর জল, মাঠের ঘাস এবং সারি সারি পামগাছের ছায়ায় নিজের বাল্যকাল স্মরণ করে কেমন অভিভূত হয়ে যান। এই পথে তিনি কৈশোরে কতদিন ঘোড়ায় চড়ে নদীর পাড়ে পাড়ে কতদূর চলে গেছেন।

    বৃন্দাবনী দেখেছে, এই নিয়ে কোনও বচসা হয় না, মেজবাবু কলকাতা থেকে রওনা হবার আগে ক’দিন সকালে মহাভারত পাঠ করেন শুধু। সন্ধ্যায় ক্লাবে যান না। মেজবৌরানী তখন গীর্জায় যান। ফাদার আসেন বাড়িতে। দক্ষিণের দিকে যে দোতলা সাদা পাথরের হলঘর আছে সেখানে ফাদারের পায়ের নিচে তিনি বসে থাকেন।

    এবার অমলা দেখেছে, বাবা পূজার আগের ক’দিন মার ঘরের দিকে যাননি। মার মুখ ভীষণ বিষণ্ণ এবং ক্লান্ত। রাতে বাবা নিজের ঘরে শুয়ে থাকেন। দুপুর রাতে সহসা বাবা ফ্রুট বাজান। কেন যে এমন হচ্ছে দু’জনের ভিতর—ওরা ত কিছুই অনুমান করতে পারত না। সকাল হলেই দু’বোন চুপ-চাপ স্কুলে চলে যায়। স্কুল থেকে এসে আর সারা বাড়িতে ছুটতে সাহস পায় না। মার মুখ বিষণ্ণ প্রতিমার মতো হয়ে গেছে। মা ক্রমে পাথর হয়ে যাচ্ছেন। এ-দেশে মা যেন বাবার সঙ্গে কিসের খোঁজে সমুদ্র পার হয়ে চলে এসেছিলেন। চোখ দেখলে মনে হয় তিনি তা পাননি। অথবা কখনও কখনও মনে হয় কোথাও তিনি কিছু ফেলে চলে গেছিলেন, এদেশে ফিরে আসায় তা আবার তাঁর মনে হয়েছে। তিনি সারাক্ষণ মাঠের দিকের বড় জানালাটায় দাঁড়িয়ে থাকেন। মাঠ পার হলে সেই দুর্গ, দুর্গের মাথায় হাজার হাজার জালালি কবুতর উড়ছে। মা সেসব দেখতে দেখতে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যান। কী যেন খোঁজেন সব সময়।

    এই যখন দৈনন্দিন সংসারের হিসাব, তখন বৃন্দাবনী দুই মেয়েকে বাংলাদেশের মাটির কথা শোনায়। শরৎকালে শেফালি ফুল ফোটে, স্থলপদ্ম গাছ শিশিরে ভিজে যায়, আকাশ নির্মল থাকে, রোদে সোনালী রঙ ধরে—এই এক দেশ, নাম তার বাংলাদেশ, এদেশের মেয়ে তুমি। এমন দেশে যখন সকালে সোনালী রোদ মাঠে, যখন আকাশে গগনভেরি পাখি উড়তে থাকে, মাঠে মাঠে ধান, নদী থেকে জল নেমে যাচ্ছে, দু’পাড়ে চর জেগে উঠেছে, বাবলা অথবা পিটকিলা গাছে ছেঁড়া ঘুড়ি এবং নদীতে নৌকা, তালের অথবা আনারসের, তখনই বুঝবে শরৎকাল এ-দেশে এসে গেল। তুমি অমলা এমন এক দেশে নীল চোখ নিয়ে জন্মালে। সোনালী রঙের চুল তোমার। তুমি যদি কোনওদিন কোনও হেমন্তের মাঠ ধরে ছুটতে থাক তবে তুমি এক লক্ষ্মীপ্রতিমা হয়ে যাবে। এমন মেয়েরা দুষ্টুমি করে না। এস তোমার চুল বেঁধে দি।

    বৃন্দাবনী ওদের এবার নিখুঁতভাবে সাজিয়ে দিল। ওরা যতক্ষণ সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে না গেল ততক্ষণ সে তাকিয়ে থাকল। ওরা ঘুরে ঠাকুমার ঘর হয়ে গেল কাকিমাদের ঘরে, দেখা করে গেল। মেজবাবু এই সংসারে ম্লেচ্ছ মেয়ে বিয়ে করার জন্য নানারকমের অবহেলা পাচ্ছেন—এই বলে হয়তো এই দুই মেয়ে যারা উত্তরাধিকার-সূত্রে সম্পত্তির একটা বড় অংশ দখল করে আছে অথচ কিছুই হয়তো শেষপর্যন্ত পাবে না—এমন আশংকা থাকায়, কিছু করুণা কিছু ভালোবাসা এই মেয়েদের প্রতি কম-বেশি সকলের। ওরা এমন তাজা আর স্নিগ্ধ, এত বেশি অকারণ হাসে, আর এমন অমায়িক—মনে হয় কেবল দুই জাপানী কল দেওয়া পুতুল, কেবল হাত-পা তুলে ঘুরছে-ঘুরছে-ঘুরছে। সুতরাং তারা নিচে নেমে গেলেই, কেমন ফাঁকা ফাঁকা ঠেকে অন্দর

    ওরা ক্রমে নামছে, আর চারিদিকে তাকাচ্ছে। সোনাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। একবার দুপুরের দিকে সিঁড়ির মুখে সোনাকে পেয়েছিল, কিন্তু কপালে রক্তের ফোঁটা দিতে-না-দিতেই ছুটে পালিয়েছে সে যে গেল কোথায়!

    নিচে নেমে দেখল খালেক মিঞা গাড়িতে বসে নেই। মাহুত জসীম এসেছে গাড়ি নিয়ে। পিছনে রামসুন্দর তকমা এঁটে দাঁড়িয়ে আছে।

    অমলা খালেককে না দেখে বিস্মিত হল। বলল, তুমি জসীম!

    —হ্যাঁ, মা ঠাইরেন। আমি।

    —খালেক কোথায়?

    —অর অসুখ মা-ঠাইরেন।

    —কি হয়েছে?

    —জ্বর, কাশি।

    সকালের রামসুন্দর আর এই রামসুন্দরকে চেনাই যায় না। এ-দিনের জন্য সে কারও বান্দা নয়। কেবল দেবীর বান্দা। কিন্তু যেই শুনেছে বড় খুকুরানী আর ছোট খুকুরানী পুজো দেখতে, অন্য বাবুদের নাটমন্দিরে যাবে, কুলীন পাড়ার ঠাকুর দেখতে যাবে—সে তখনই উর্দি পরে দৌড়েছে। এখন দেখলে মনে হবে রামসুন্দরকে সে দেবীর বান্দা আর বান্দা এই দুই মেয়ের।

    রামসুন্দর নাগরা জুতো পরেছে, সাদা উর্দি পরেছে, কোমরে পেতলের বেল্ট। বেল্টের পাতে এই পরিবারের প্রতীকচিহ্ন। ওর মাথায় নীল রঙের পাগড়ি, জরির কাজ করা পাগড়ি দেখতে বুলবুল পাখির বাসার মতো। ভিতরটা উঁচু হয়ে টুপির মতো উঠে গেছে। সোনা এখন দেখলে বলত, রামসুন্দর তুমি কোন্ দেশের রাজা?

    অমলা কমলা এসব কিছুই দেখল না। খুব গম্ভীর মুখে গাড়িতে উঠে গেল। বাড়ির দাসী বাঁদী অথবা ভৃত্যদের সামনে অথবা বের হবার মুখে কোনও চাঞ্চল্য প্রকাশ পায়, সে ভয়ে দুই বোনই একেবারে চুপচাপ পাশাপাশি বসে আবার চারদিকে কাকে যেন খুঁজল। সোনা যে কোথায়! অথবা এ অবেলায় সে কি ঘুমোচ্ছে! অমলার বলতে পর্যন্ত সাহস হল না ল্যাণ্ডো কাছারিবাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যাও। এখানে এলেই কিছু আইনকানুনে পড়ে যেতে হয়। যেখানে সেখানে একা একা গেলে ঠাকুমা রাগ করেন। যে বাবা ওদের এত ভালোবাসেন তিনি পর্যন্ত অন্দরের বাইরে বের হতে দেখলে বলেন তোমরা এখানে কেন। ভিতরে যাও। অথচ কলকাতার বাড়িতে ওরা একেবারে স্বাধীন। মালীদের ছেলেরা ওদের হয়ে কতরকমের কাজ করে দেয়। পুতুলের ঘর বানিয়ে দেয়। এবং ওরা বাড়িময়, সেও তো বড় বাড়ি, বড় প্রাসাদের মতো বাড়ি ছুটে শেষ করা যায় না, তেমন এক বাড়িতে ওরা মানুষ হচ্ছে বলে এখানে এইসব নিয়ম মাঝে মাঝে ওদের খুব দুঃখী রাজকুমারী করে রাখে। অমলার বড় ইচ্ছা হচ্ছিল সোনাকে নিয়ে পূজা দেখতে যায়। দু’বোনের মাঝে সোনা বসে থাকবে—কী যে ভালো লাগছে না, সোনার শরীরে চন্দনের গন্ধ লেগে থাকে, এমন একটা গন্ধ যে সে পায় কোথায়? অথবা কেন যে মনে হয়েছে, গত রাতে দাতাকর্ণের পালা হয়েছে, বৃষকেতুর সেই উজ্জ্বল মুখ, টানা টানা লম্বা চোখ, ছোট মানুষ এবং কী অসীম পিতৃভক্তি, সোনা যেন ওর কাছে সারাক্ষণ বৃষকেতু হয়ে আছে। গত রাতে অমলা চিকের আড়াল থেকে দেখেছে, সোনা তার পাগল জ্যাঠামশাই-র পাশে বসে ছিল আসরে। যাত্রা দেখতে দেখতে সে পাগল জ্যাঠামশাইর হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    কী আশ্চর্য সেই মানুষ পাগল ঠাকুর! সারাক্ষণ শক্তভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে বসেছিলেন। হাত- পা নড়লেই সোনার ঘুম ভেঙে যাবে। আর অমলা দেখছিল, ওদের পিসিরা অথবা কাকিমারা—সবাই ফাঁকে ফাঁকে চুরি করে পাগল মানুষটাকে দেখতে দেখতে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। ঝাড়লণ্ঠনে তখন নানারকমের লাল নীল আলো জ্বলছিল।

    গাড়িটা ক্রমে গাছের ছায়ায় নুড়ি বিছানো পথে বের হয়ে যাচ্ছে। ঘোড়ার পায়ে ক্লপ ক্লপ শব্দ হচ্ছে। দীঘির নিরিবিলি জলে কিছু পদ্মফুল ফুটে আছে। আর শরতের বিকেল মরে যাচ্ছে। নীল আকাশ, গাছের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র মানুষ দেখা যাচ্ছে নদীর পাড়ে। সবাই ঠাকুর দেখতে বের হয়ে পড়েছে।

    অমলা কেমন বিরক্ত গলায় বলল, সোনাটা যে কি না!

    —কেন কি হয়েছে?

    —ওকে দেখছি না কোথাও।

    অমলা দীঘির এ-পাড় থেকে ও-পাড়ের কাছারিবাড়ি লক্ষ রাখছে। মঠের সিঁড়িতে সে যদি একা বসে থাকে, অথবা ময়ূরের কিংবা হরিণের ঘরগুলি পার হয়ে সে যদি কুমীরের খাদে উঁকি দেয়। না কোথাও গাছের ফাঁকে অথবা পাতার অজস্র বিন্দু বিন্দু জাফরিকাটা খোপের ভিতর সে সোনাকে আবিষ্কার করতে পারল না। তখন কমলা বলল, সোনা আর আমাদের কাছে আসবে না।

    এমন কথায় অমলার বুকটা কেঁপে উঠল।—আসবে না কেন রে?

    —ও রাগ করেছে।

    —আমরা তো ওকে কিছু বলিনি।

    —রাগ না করলে এমন হয়! আমাদের দেখলেই পালায়।

    অমলার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে গেল। সোনা আবার কমলাকে বলে দেয়নি তো!

    এখন গাড়িটা নদীর পাড়ে এসে পড়েছে। দুই সাদা ঘোড়া গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তেমনি ক্লপ ক্লপ শব্দ ঘোড়ার পায়ে। তেমনি সূর্য অস্ত যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার পাড়ে, তেমনি মানুষজন, গাড়ি দেখলেই দু’পাশে দাঁড়িয়ে এই প্রতিমার মতো দুই বালিকাকে গড় করছে! রাস্তা একেবারে ফাঁকা। ঘোড়া দুটো নিঃশব্দে দুলে দুলে কদম দিচ্ছে।

    অমলা বলল, সোনাকে কোথাও দেখলেই এবারে সাপ্টে ধরব, বুঝলি। জোর করে ধরে আনব দেখি ও যায় কোথায়!

    কমলা বলল, তুই ওর হাত দুটো ধরবি, আমি পা দুটো। চ্যাঙদোলা করে ছাদে তুলে নিয়ে যাব। সিঁড়ির দরজা বন্ধ করে দিলে সোনা কি করে দেখব!

    অমলা ভাবল সোনাকে রাগালে চলবে না, ওকে তোয়াজ করে রাখতে হবে। সে যে কী করে ফেলল সোনাকে নিয়ে! সে এমনটা কমলাকে নিয়ে কতবার করেছে। কিন্তু সোনাকে নিয়ে। সে যেন আলাদা রোমাঞ্চ। আলাদা স্বাদ। ওর ভয়, সোনাকে কমলা না আবার লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলে। সে বলল, ওকে চ্যাঙদোলা করে ছাদে তুলে আনব না। সোনা খুব ভালো ছেলে। ওকে আমি ভালোবাসব।

    কমলা দিদির দিকে তাকিয়ে বলল, আমিও তবে ভালোবাসব।

    অমলা এমন কথায় কি যেন দুঃখ পেল ভিতরে।—তোর এটা স্বভাব কমলা। আমার যা ভালো- লাগবে সেটা তোর চাই।

    —আমার না তোর?

    অমলা আর কথা বলল না। পিছনে রামসুন্দর দাঁড়িয়ে আছে। সে প্রায় একটা কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সামনে শীতলক্ষ্যার চর। চরে মনে হল সেই পাগল মানুষ একা একা হেঁটে কোথায় চলে যাচ্ছেন।

    কমলা বলল ঐ দ্যাখ দিদি, সোনার পাগল জ্যাঠামশাই।

    অমলা পিছন ফিরে দেখল সেই বালক, সঙ্গে সেই আশ্বিনের কুকুর। নদীর চর পার হয়ে ওরা কোথাও যাচ্ছে।

    কমলা বলল, পিছনে সোনা না!

    অমলা বলল, রামসুন্দর, পিছনে কে সোনা না?

    রামসুন্দর বলল, আজ্ঞে তাই মনে হয়।

    —জসীম, গাড়ি চালাও। জোরে চালাও। বলে অমলা ফ্রক টেনে ঠিক-ঠাক হয়ে বসল।

    প্রাচীন মঠ নদীর পাড়ে। মঠের ত্রিশূলে একটা পাখি বসে আছে। সোনা এবং তার পাগল জ্যাঠামশাই মঠ পর্যন্ত উঠে আসতে না আসতেই ওরা মঠের আগে উঠে যাবে। স্টিমার ঘাট পার হয়ে যাবে। এবং সোনা আর তার জ্যাঠামশাইকে ধরে ফেলবে। সোনাকে সঙ্গে নেবে, ওর পাগল জ্যাঠামশাই সঙ্গে থাকবে। ওরা চারজন, ঠিক চারজন কেন, রামসুন্দর জসীম আর আশ্বিনের কুকুর মিলে সাতজন, এই সাতজন মিলে বাড়ি বাড়ি দুগ্‌গা ঠাকুর দেখে বেড়াবে। সব শেষে যাবে পুরানো বাড়ি, সে বাড়ির ঠাকুর দেখা হলেই ওরা ল্যাণ্ডোতে একটা বড় মাঠে নেমে যাবে। আশ্বিনের শেষাশেষি হিম পড়বে সাঁজ নামলেই। সাদা জ্যোৎস্না থাকবে। ওরা সকাল সকাল না ফিরে একটু রাত করে ফিরবে। সঙ্গে রামমুন্দর আছে—ভয় কি! সে উর্দি পরে একেবারে বীরবেশে ল্যাণ্ডোর পিছনে কাঠের পুতুলের মতো সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।

    আর তখন সোনাও দেখতে পেল, নদীর পাড়ে দুই ঘোড়া কদম দিচ্ছে। গাড়ির পিছনে যাত্রাপার্টির মানুষের মতো কে একজন সোজা দাঁড়িয়ে আছে. দূর থেকে সোনা, রামসুন্দর যে এমন একটা রাজার বেশে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ভাবতে পারল না। অমলা কমলা হাত তুলে ওকে ইশারায় ডাকছে।

    সোনা তাড়াতাড়ি জ্যাঠামশাই-র হাত টেনে ধরল। সোনাকে দেখেই নদীর পাড়ে ওরা ল্যাণ্ডো থামিয়ে দিয়েছে। যেন সোনাকে তুলে নেবার জন্য ওরা দাঁড়িয়ে আছে। সে আর ওদিকে হাঁটল না। আবার সে পিলখানার মঠের দিকে উঠে যাবে। সে জ্যাঠামশাই-র হাত ধরে ঠিক উল্টোমুখে হাঁটতে থাকল।

    অমলা বলল, রাম, তুমি যাবে। সোনাকে নিয়ে আসবে।

    কমলা বলল, দেখলি, কেমন সোনা আমাদের দেখেই পালাচ্ছে।

    রামসুন্দর গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামল। সে সারি সারি পামগাছের আড়ালে আড়ালে এসে সোজা চরে নেমে গেল। এখানে বাবুরা নদীর পাড় বাঁধিয়ে দিয়েছেন। সে সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে কাশবনের দিকে ছুটতে থাকল।

    সোনা দেখল, সেই রাজার বেশে মানুষটা চরের ওপর দিয়ে ওদের দিকে ছুটে আসছে। কাশবনের আড়াল পড়ায় ওদের আর দেখা যাচ্ছে না। সে তাড়াতাড়ি জ্যাঠামশাইকে নিয়ে সেই কাশের বনে কোথাও লুকিয়ে পড়বে ভাবল। অমলা কমলা ওকে ধরে নিয়ে যাবার জন্য পাঠিয়েছে মানুষটাকে। কিন্তু সে পালাতে গিয়েই দেখল কুকুরটা লেজ নাড়ছে, আর ঘেউঘেউ করছে। কুকুরটা রামসুন্দরকে তেড়ে যাচ্ছে।

    সোনা আর পালাতে পারল না। সে তাড়াতাড়ি চরের উপর দিয়ে ছুটতে থাকল। সে কাছারিবাড়িতে উঠে গিয়ে মেজ জ্যাঠামশাই-র পাশে গদিতে বসে থাকবে চুপচাপ। সে কিছুতেই অমলা কমলার সঙ্গে আর কোথাও যাবে না, লুকোচুরি খেলবে না।

    তখন বেশ মজা পাচ্ছিল আশ্বিনের কুকুর। পাগল জ্যাঠামশাই একা একা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তালের আনারসের নৌকা যাচ্ছে। হাঁড়ি-পাতিলের নৌকা পাল তুলে যাচ্ছে। নৌকা যাচ্ছে উজানে। কেউ কেউ গুণ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পাগল মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছেন। সোনাকে নিয়ে চরের ভিতর এখন ছুটোছুটি আরম্ভ হয়ে গেছে, অমলা কমলা পর্যন্ত নেমে এসেছে—তিনদিক থেকে তিনজন ধীরে ধীরে সাঁড়াশি আক্রমণ করে সোনাকে ছেঁকে তুলবে, তারপর ল্যাণ্ডোতে নিয়ে উধাও হবে—সেসব তিনি খেয়াল করছেন না। তিনি যেন এখন নদীতে যেসব পালের নৌকা যাচ্ছে তা এক দুই করে গুনছেন।

    মজা পেয়েছে আশ্বিনের কুকুর। সূর্যাস্তের সময় এ-একটা আশ্চর্য খেলা। সে পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘেউঘেউ করছে। এদিক ওদিক ছুটছে সোনা, ছুটে পালাবার চেষ্টা করছে। সোনার সঙ্গে সেও ছোটাছুটি করছে।

    রামসুন্দর বলল, আপনেরা ক্যান নাইমা আইলেন!

    অমলা বলল, এই সোনা, শোন। অমলা রামসুন্দর কি বলছে শুনছে না।

    সোনা বলল, আমি যামু না।

    —আমরা দুগ্‌গা ঠাকুর দেখতে যাচ্ছি।

    —যাও। আমি যামু না। সে তিনদিকে তিনজনের ভিতর আটকা পড়েছে। ওর আর পালাবার উপায় নেই।

    রামসুন্দর বলল, আপনে না গ্যালে ওনারা কষ্ট পাইব।

    —আমি যামু না। সে কেমন একগুঁয়ে জেদি বালকের মতো একই কথা বার বার বলে চলল। তখন অমলা ছুটে এসে খপ করে সোনাকে জড়িয়ে ধরল।—কোথায় যাবি?

    আর আশ্চর্য, সোনা এতটুকু নড়তে পারল না। কি কোমল সুগন্ধ শরীর, কি আশ্চর্য রঙের চোখ মুখ, সব নিয়ে অমলা সোনাকে নদীর চরে জড়িয়ে ধরেছে। এমনভাবে জড়িয়ে ধরলে কেউ বুঝি কখনও কোথাও আর ছুটে যেতে পারে না।

    —চল্, আমাদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাবি। ফেরার পথে বড় মাঠে নেমে যাব। সাদা জ্যোৎস্না থাকবে। তোকে তখন একরকমের পাখি দেখাব। কোমল পাখিগুলি উড়ে উড়ে ডাকে। কি সাদা রঙ পাখিগুলির! তুই দেখলে আর নড়তে পারবি না।

    সোনা বলল, কিন্তু তুমি আমারে…! বলেই সে অমলার মুখ দেখে কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখে কী মিনতি মেয়ের, কী করুণ মুখ-চোখ করে রেখেছে অমলা। সোনা যথার্থই আর কিছু বলতে পারল না। সে জ্যাঠামশাইকে ডাকল, চলেন আমরা ঠাকুর দেইখা আসি। ল্যাণ্ডোতে যামু আর আমু।

    পাগল জ্যাঠামশাই এবার মুখ ফেরালেন। সোনা মেজবাবুর মেয়েদের সঙ্গে উঠে যাচ্ছে। তিনি তাড়াতাড়ি নৌকা গোনা বন্ধ করে দিলেন যেন। তিনি সোনাকে ধরার জন্য উঠে যেতে লাগলেন।

    অমলা বলল, তোর জ্যাঠামশাইকে সঙ্গে নিবি?

    সোনা পিছন ফিরে দেখল, জ্যাঠামশাই সুবোধ বালকের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। সে বলল, যাইবেন?

    কোনও জবাব না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন তিনি।

    কমলা বলল, তুই আমার পাশে বসবি।

    অমলা বলল, যা সে কি করে হবে! বাকিটুকু বলতে না দিয়ে সোনা বলে ফেলল, আমি জ্যাঠামশাই-র পাশে বসমু।

    কমলা বলল, বস কিরে? বসব বলবি।

    —বসব। সোনা কথাটা শেষ করতেই জসীম দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।

    সোনা বলল, কি জসীম, আমার জ্যাঠামশয়রে চিন না!

    —আপনের মায় ক্যামন আছে?

    সোনা তো জানে না মা তার কেমন আছে! এ ক’দিনেই মনে হয়েছে দীর্ঘদিন সে মাকে ছেড়ে চলে এসেছে। এবং মাঝে মাঝে ওর কেন জানি মনে হয় বাড়ি গিয়ে সে আর মাকে দেখতে পাবে না। সে গেলেই দেখবে, জেঠিমা চুপচাপ ঘাট পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর কেউ নেই। কেন জানি এটা তার বার বার অমলার সঙ্গে পাপ কাজে লিপ্ত হবার পর থেকে মনে হয়েছে। সে কিছু জবাব দিতে পারল না। সে জোর করে বলতে পারল না, ভালো আছে—আমরা কবে যাব, এমন বলতে পারছে না মেজ জ্যাঠামশাইকে। বার বার মেজদা বড়দা ওকে শাসিয়েছে ভ্যাক করে কেঁদে দিলে চলবে না। বাড়ি যামু আমি, বললে চলবে না। যখন নৌকা ছাড়বে ঘাট থেকে তখন তুমি যেতে পারবে। সে বার বার কেন জানি আজ ঈশমের নৌকায় উঠে যাবে ভাবল। সেই নৌকায় গিয়ে বসে থাকলে ওর মনে হয়, সে তার গ্রাম মাঠের কাছাকাছি আছে।

    জসীম সোনার কোনও সাড়া না পেয়ে বলল, মার জন্য মনটা আপনের ক্যামন করতাছে বুঝি?

    জসীম ঠিক বলেছে। মার জন্য মনটা আশ্চর্য রকমের ভারী হয়ে আছে।

    জসীম ফের বলল, আবার যামু আপনেগ দ্যাশে। শীতকাল চইলা আইলেই হাতি নিয়া চইলা যামু। আপনের মার হাতে পিঠাপায়েস খাইয়া আমু।

    সোনা এসব কিছুই শুনছে না। সে ঘোড়ার দিকে মুখ করে বসে আছে। দুই ঘোড়া, সাদা রঙের ঘোড়া পায়ে ক্লপ ক্লপ শব্দ, পিছনে রাজার বেশে রামসুন্দর, মাথার উপর কত সবুজ গাছপালা পাখি এবং নিরন্তর এই ঘোড়া যেন তাকে নিয়ে কোন্ দূরদেশে চলে যেতে চাইছে। সে দেখল, অমলা অপলক ওকে চুরি করে দেখছে। সে লজ্জা পেয়ে কী ভেবে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর কী যেন আশ্চর্য মজা জীবনে এসে যাচ্ছে টের পেয়ে মনটা প্রসন্ন হয়ে উঠল। অমলার দিকে তাকিয়ে শেষে ফিক করে হেসে ফেলল।

    অমলাও হাসল।—আমার পাশে বসবি?

    সোনা জ্যাঠামশাই-র মুখ দেখল। মুখে যেন তাঁর সায় নেই। সে বলল, না।

    অমলা বলল, কাল দশমী। বাবা বিকেলে ফ্রুট বাজাবেন। তুই আমি আমাদের ব্যালকনিতে বসে বাবার ফ্রুট বাজনা শুনব।

    সোনা এখন নির্মল আকাশ দেখছে। সে শুনতে পাচ্ছে না কিছু।

    অমলা ফের বলল, বাবা ফ্রুট বাজাবেন। কত লোক, হাজার হাজার মানুষ আসবে নদীর পাড়ে। বাবার ফ্রুট বাজনা শুনতে আসবে। আমাদের ব্যালকনিতে তুই আমি আর কমলা। কী আসবি ত?

    সোনা বলল, পিসি, পুরানবাড়ি কতদূর!

    কমলা বলল, এ কিরে দিদি, সোনা তোকে পিসি ডাকছে।

    অমলা কেমন গুম মেরে গেল। সে বলল, অনেক দূর।

    অমলার অভিমান টের পেয়ে সোনা বলল, আমি বিকালে যাব।

    কমলা বলল, বিকাল নারে, ওটা হবে বিকেল।

    —আমি জানি।

    —বলতে পারিস না কেন?

    —মনে থাকে না।

    —তুই আমাদের সঙ্গে কলকাতা গেলে কথা বলবি কি করে?

    সোনা চুপ করে থাকলে কমলা ফের বলল, তুই এভাবে বললে, তোকে সবাই বাঙাল বলবে। কলকাতার কথা মনে হলেই কোন রাজার দেশের কথা মনে হয়। কত বড় বড় সব প্রাসাদের মতো হাজার হাজার বাড়ি, গাড়ি, ঘোড়া, দুর্গ, র‍্যামপার্ট, জাদুঘর, হাওড়া ব্রীজ, এসব ভাবতে ভাবতে সে একটা গোটা সাম্রাজ্যের কথা ভেবে ফেলে। রাজা পৃথ্বীরাজের কথা মনে হয়। রাজা জয়চন্দ্রের কথা মনে হয়। স্বয়ম্বর সভার কথা মনে হয়। সে যে কোন বন-উপবনে তার ঘোড়া লুকিয়ে রেখেছে। রাজকন্যা দেউড়িতে এসে মূর্তিতে মাল্যদান করলেই ঘোড়ার পিঠে তুলে সে দ্রুত ছুটবে আর কেন জানি দৃশ্যটাতে একটা সাদা ঘোড়া, ঘোড়ার পিঠে সে এবং তার পিছনে অমলা বসে রয়েছে। সে যেন অমলাকে নিয়ে নদী বন মাঠ পার হয়ে জ্যাঠামশাই-র নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজতে যাচ্ছে। সোনা এবার পাশের মানুষটির দিকে মুখ তুলে তাকাল। তিনি চুপচাপ নিরীহ শান্ত মানুষের মতো বসে আছেন।

    সোনা বলল, অমলা, তুমি ঘোড়ায় চড়তে জান না?

    কমলা বলল, এই ত বেশ কথা বলতে পারিস্।

    সোনা বলল, আমার জ্যেঠিমা কলকাতার ভাষায় কথা বলে।

    —তাহলে তুই এতদিন বলিসনি কেন?

    —আমার লজ্জা লাগে।

    কমলা বলল, দিদি খুব ভালো ঘোড়ায় চড়া শিখেছে; ঘিরিদরপুরের মাঠে সকাল হলেই ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে যায় দিদি।

    সোনা চুপচাপ। বাড়ি বাড়ি ঠাকুর দেখে ফের মাঠের পাশ দিয়ে বড় মাঠে নেমে যাওয়া। মাঠময় সাদা জ্যোৎস্না, পাশে নদীর চর, কাশ ফুল। অস্পষ্ট নদীর জল, আকাশে অজস্র নক্ষত্র। তার প্রতিবিম্ব নদীর জলে। ঘোড়া সেই সাদা জ্যোৎস্নায় ছুটছে। ওদের গলায় ঘণ্টা বাজছিল। আশ্বিনের কুকুর সেই ঘণ্টার শব্দে নেচে নেচে পিছনে আসছে। ওরা মাঠের ভিতর নেমে যেতেই ওপারের বাঁশবন থেকে কিছু পাখি উড়ে আসছে মনে হল। ওরা গাড়িতে বসে রয়েছে। বড় বড় পাখি সাদা জ্যোৎস্নায় উড়ে উড়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। আর কক্ কক্ করে ডাকছে। কেমন ভয়াবহ মনে হল। অজস্র পাখি এই রাতে যেন বিশ্ব চরাচরে উড়ে উড়ে কিসের নিমিত্ত শোক জ্ঞাপন করছে।

    তখনই মনে হল নদীর চরে একটা ঘূর্ণি ঝড় উঠেছে। রাশি রাশি কাশফুল হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। পাখিগুলি বনের ভিতর হারিয়ে গেল। পাখিদের আর কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু কাশফুলের রেণু, অজস্র রেণু প্রায় তুষারপাতের মতো ওদের ওপর এখন ঝরে পড়ছে।

    কমলা বলল, সোনা, চোখ বন্ধ কর। কাশফুলের রেণু চোখে পড়লে অন্ধ হয়ে যাবি।

    সোনা চোখ বুজে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে, সবাই চোখ বুজে বসে থাকল। যতক্ষণ তুষারপাতের মতো এই কাশের রেণু পড়া বন্ধ না হচ্ছে ততক্ষণ ওরা চোখ বুজে থাকবে। অমলা না বললে গাড়ি ঘুরবে না বাড়ির দিকে। অমলা সোনাকে একটা আশ্চর্য ছবি দেখাতে এনেছে। সে জ্যোৎস্নায় তার ঘড়ি দেখল। স্টিমার আসার সময় হয়ে গেছে। স্টিমারের আলো এই মাঠে যখন পড়বে, ডানদিকে অথবা বাঁদিকে আলোটা যখন পাশের ডাঙা, নদীর চর খুঁজবে তখন মাঠে পাখিগুলির শরীরেও আলো পড়বে। অদ্ভুত মায়াবিনী এক রহস্যময় দৃশ্য ফুটে ওঠে তখন। উজ্জ্বল আলোর ভিতর পাখিদের চোখ, নীলাভ চোখ, সাদা ডানা এবং হলুদ রঙের পা যেন গভীর নীলজলে অজস্র মাছের মতো, একটা ঘূর্ণিস্রোতে মাছগুলি ঘুরে ঘুরে নেমে আসছে—অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, আবার ঘুরে ঘুরে ফিরে আসছে। কী এক নেশায় পেয়ে যায়। দাঁড়িয়ে কেবল দেখতে ইচ্ছা হয়—প্রায় ছায়াছবির মতো ঘটনাটা। সোনাকে সে সেই দৃশ্য দেখাতে এনেছে। স্টিমারের আলো দূর থেকে দেখলেই পাখিগুলি জঙ্গলের ওপরে চক্রাকারে উড়তে থাকে।

    অমলা চোখ বুজেই বলল, সোনা, তোকে আমরা আজ কত খুঁজেছি।

    সোনা কিছু বলল না। সে এবার চোখ খুলে তাকাল। আর দেখল সকলেই কেমন সাদা হয়ে গেছে। সে কাউকে চিনতে পারছে না। ওরা যেন সবাই গল্পের দেশের মানুষ হয়ে গেছে। অথবা সেই যে, সে একটা ছবির বই দেখেছিল—ইংরেজি ভাষায় ছোটদের গল্পের বই, কেবল পাইন গাছ, গাছে গাছে বরফ পড়েছে, এক বৃদ্ধ সেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, ছোট এক বালক দাঁড়িয়ে আছে হাত ধরে, ওদের পোশাকের ওপর, মাথায় বরফের কুচি পড়ে সাদা হয়ে গেছে—সে যেন তেমনি। সে একা কেন হবে, সকলে। জ্যাঠামশাই চোখ খুলছেন না, সোনা বললেই চোখ খুলবেন—তিনি সেই বুড়ো মানুষ হয়ে গেছেন। এতক্ষণ শুধু ঘোড়া দুটোই সাদা ছিল, এখন ঘোড়া, গাড়ি, রামসুন্দর, জসীম সকলে তার সেই গল্পের দেশের মানুষ। আশ্বিনের কুকুর পর্যন্ত সাদা হয়ে গেল।

    তখনই সোনা দেখল এক আশ্চর্য আলো চারপাশের আকাশ, নদী, নদীর চর, কাশবন এবং মাঠের সব গাছপালা আলোকিত করে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। সোনা চিৎকার করে উঠল, ঐ আলো ইস্টিমারের আলো।

    সকলে চোখ মেলে সেই আলো দেখল। ওদের গাড়িতে এসে আলো পড়েছে। বলা যায় হাজার ডে-লাইট যেন জ্বেলে দেওয়া হয়েছে সর্বত্র, সেই আলোতে আবার বন থেকে পাখিরা উড়ে এসেছে। ওরা সাদা হয়ে গেছে, মাঠে সাদা জ্যোৎস্না, সাদা পাখি এবং নীলাভ চোখ, সোনা আপলক দেখছে, দেখতে দেখতে তন্ময় হয়ে যাচ্ছে। পাগল মানুষ নিজেকে দেখছেন। সে কি সহসা পলিনের দেশে চলে এসেছে! এত কাশফুল তুষারপাতের মতো, চারপাশে সাদা–আর নীলাভ চোখ পাখিদের। জ্যাঠামশাই সেই পাখিদের ধরার জন্য কেমন লাফ দিয়ে নামতে চাইলেন। জসীম বুঝতে পেরে বলল, এবারে গাড়ি ফিরাতে হয় খুকুরানী।

    রামসুন্দর বলল, তাই হয়।

    কিন্তু অমলা কিছু বলছে না। ঘূর্ণিঝড় এসে ওদের এমন একটা গল্পের দেশের মানুষ করে দিয়ে যাবে সে নিজেও তা ভাবতে পারেনি। সে বলল, সোনা কী দেখছিস?

    —পাখি দেখছি।

    —আলো দেখছিস না?

    —দেখছি।

    —আর কি দেখছিস?

    সোনা বলল, ইস্টিমার।

    কিন্তু অমলা পাগল মানুষকে কিছু বলছে না বলে কেমন ক্ষেপে যাচ্ছেন তিনি। তিনি কী বলতে যাচ্ছিলেন, তখনই মনে হল কী যেন একটা অতিকায় জীব উঠে আসছে চর থেকে। প্রথমে ওরা কিছুই বুঝতে পারেনি, একটা সাদা রঙের জীব, প্রায় হাতির মতো উঁচু লম্বা, এই মাঠের দিকে উঠে আসছে। সোনা এবং সবাই হতবাক হয়ে দেখছে। আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল, ওটা কী জসীম! ওটা কী উঠে আসছে! আলোটা এতক্ষণে সরে গেছে। কিন্তু সকলের আগে পাগল মানুষ চিনতে পেরেই লাফ দিয়ে নেমেছেন—সেই হাতি, কাশফুলে সাদা হয়ে গেছে—সেই অজস্র বন কাশের। ফুলে ফুলে হাতিটা পর্যন্ত সাদা হয়ে গেছে। এবং শেকল ছিঁড়ে সে ছুটে পালাচ্ছে। অথবা জসীম ওর কাছে যায়নি বলে সে জসীমের জন্য এই মাঠে চলে এসেছে।

    সোনা তাড়াতাড়ি নেমে জ্যাঠামশাইর হাত চেপে ধরল। সে এ-ভাবে ধরলে তিনি কোথাও যেতে পারেন না। অথচ চোখে কী মিনতি তাঁর। তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও। হাতিতে চড়ে আমি আবার কোথাও চলে যাব।

    সোনা পাগল মানুষের হাত ছাড়ল না। জসীম বলল, আমি চলি রে, ভাই। সেই রামসুন্দরকে বলল, আবার লক্ষ্মী আমার খেইপা গেছে। বলে সে লাফ দিয়ে নামল এবং হাতিটা যেদিকে ছুটে যাচ্ছে ক্রমে সে চিৎকার করতে করতে সেদিকে ছুটে গেল। আর ওরা দেখল জসীমের ডাক শুনেই হাতিটা কেমন সাদা জ্যোৎস্নায় পলকে থেমে গেছে, থেমে দাঁড়িয়ে আছে আর দুলে দুলে শুঁড় নাড়ছে।

    সোনা বলল, জ্যাঠামশাই, আমি বড় হলে আপনাকে নিয়ে কলকাতা চলে যাব। আপনি এখন গাড়িতে ওঠেন।

    এই শুনে মণীন্দ্রনাথও একেবারে শান্ত হয়ে গেলেন। চুপচাপ হাতিটা দেখতে দেখতে মগজের ভিতর নিরন্তর যে ছবি পোরা আছে তা আবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখলেন—যেন সেই নদীর জলে ময়ূরপঙ্খী ভাসে, দুর্গের গম্বুজে পাখি ওড়ে এবং হুগলী নদীর দু-পাড়ে চটকলের সাইরেন—আর তখন ইডেনের নীল রঙের প্যাগোডার নিচে পলিন তাকে পাশে নিয়ে বসে থাকে। হাতে হাত রেখে বলে—তুমি অনেক বড় হবে মণি। বাবা তোমার কাজে খুব খুশি। বাবাকে বলে তোমার বিলেত যাবার ব্যবস্থা করব। একবার ঘুরে এলেই তুমি কত বড় হয়ে যাবে, আরও বড় কাজ পাবে। কার্ডিফে আমাদের বাড়ি আছে। ক্যাসেলের গা ঘেঁষে ছোট্ট ব্রীজ, তারপর রাউদ ইঞ্জিনিয়ারিং ডক এবং দূরে এক পাহাড়ের মাথায় লাইট হাউস। গ্রীষ্মের বিকেলে তুমি আমি লাইট হাউসের নিচে বসে থাকব। সমুদ্র দেখব। আমরা জাহাজে যাব, জাহাজে ফিরে আসব, মাই প্রিন্স। শুধু তুমি রাজি হলেই হয়ে যাবে।

    এবং ঠিক তক্ষুনি অমলা এসে সোনার পাশে বসেছে। ওর শরীর থেকে কাশফুলের রেণু তুলে দিতে দিতে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। কানে কানে কি বলছে। এই মেয়ের মুখ দেখলেই পলিনের অনুভূতি পাগল মানুষের মাথায় ফিরে ফিরে আসে—যেন, তাঁর সামনে ছোট পলিন, তিনি যে এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না—কারণ পলিন ওকে সন্ত মানুষের মতো হতে বলছে। পলিন সে রাতে অধীর আগ্রহে পিয়ানো বাজাচ্ছিল। উজ্জ্বল সাদা রঙের সিল্কের গাউন পরেছিল পলিন। ওর চাঁপা ফুলের মতো নরম আঙুল কী দ্রুত চলছে! অধীর উন্মত্ত এক ইচ্ছা—সে রাতে পলিন সারারাত ঘুমোতে পারেনি, আমাকে বাড়ি যেতে হবে পলিন। বাবা টেলিগ্রাম করেছেন। বাবা বড় অসুস্থ। এ যাত্রায় তোমার সঙ্গে আমার বুঝি যাওয়া হল না। তারপর কী, তারপর আর ভাবা যাচ্ছে না—আবার সব ঘোলা ঘোলা অস্পষ্ট। পাগল মানুষ কিছুতেই আর বাকিটা মনে করতে পারলেন না।

    অমলা এবার আরও কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলল, কাউকে বলিসনি তো?

    সোনা কেমন বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। জসীম হাতি নিয়ে পিছনে ফিরছে। রামসুন্দর বাড়ির দিকে ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে দিয়েছে। ওরা হাতি নিয়ে ঘোড়া নিয়ে মিছিল করে রাজার মতো ফিরছে।

    —তুই না সোনা, কিছু বুঝিস না।

    তখনই পাগল মানুষ এক রহস্যময় কবিতা আবৃত্তি করতে থাকলেন—

    Still still we hear her tender taken breath And to
    live ever or else swoon to death, death, death,
    death-

    বার বার পুনরাবৃত্তি—ডেথ, এবং ঘোড়ার পায়ের শব্দ ক্লপ ক্লপ। হাতিটা সকলের পিছনে আসছে। আশ্বিনের কুকুর সকলের আগে যাচ্ছে। মাঝখানে দুই সাদা ঘোড়া, গাড়ি, প্রাসাদে যেন রাজা ফিরছেন। নিজেকে আজ সোনার উপকথার নায়কের মতো মনে হচ্ছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }