Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ২.২

    ২.২

    সেদিনই শশীমাস্টার খবর নিয়ে গেলেন মুড়াপাড়া। শচীন্দ্রনাথকে সন্তোষ দারোগা ধরে নিয়ে গেছে। কিছু খোঁজখবর পেতে চায় রঞ্জিত সম্পর্কে। কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মী এখানে ওখানে ধরা পড়েছে। জেলে নিয়ে যাচ্ছে। শচীন্দ্রনাথ, উমানাথ সেনের মতো বড় কর্মী নয়। সাধারণ সদস্য সে। সে যতটা না কর্মী তার চেয়ে বেশী সৎ এবং সাহসী মানুষ। এই অসময়ে ওকে ধরে নেবার অর্থ হয় না। একমাত্র অর্থ থাকতে পারে সব কংগ্রেস কর্মীদের যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন ফাঁক বুঝে শচীন্দ্ৰনাথকে একটু ঘুরিয়ে আনা। ওরা শচীন্দ্রনাথকে আগামী কাল নারায়ণগঞ্জে চালান করে দেবে। এবং ভূপেন্দ্রনাথ যদি শহরে-গঞ্জে গিয়ে উকিল ধরে জামিনে খালাস করে আনতে পারেন—এমন উদ্দেশ্য নিয়ে শশীমাস্টার মুড়াপাড়া রওনা হয়ে গেলেন।

    ছোটকাকা বাড়ি না থাকায় বাড়িটা খালি লাগছে। মাস্টারমশাই দুপুরে রওনা হয়ে গেলেন। এখন একমাত্র বাড়িতে পুরুষ বলতে ঈশম আর পাগল জ্যাঠামশাই। ঠাকুর পূজা কে করবে? জ্যেঠিমা বড়দাকে পশ্চিমপাড়া যেতে বলেছে। সেখানে আর এক ঘর ব্রাহ্মণ পরিবার আছে। গোলক চক্রবর্তী খবর পেয়েই চলে এসেছে। ঠাকুমা পূজার আয়োজন করে দিয়েছেন। শ্বেত চন্দন রক্ত চন্দন বেটে এবং কোষাকুষি ঠিক করে, ফুল জল সাজিয়ে তিনি বসে আছেন। সোনা ঠাকুরঘরের দাওয়ায় বসে রয়েছে। ছোটকাকা বাড়ি নেই। কাজকর্ম দেখেশুনে করতে হবে। সে, ঠাকুমা কি আনতে বলবেন, কখন কি আদেশ করবেন, সেজন্য বসে রয়েছে। ঠাকুমা আয়োজন করার সময় সারাক্ষণ স্তব পড়ছিলেন। এই মন্ত্রপাঠ সোনাকে মাঝে মাঝে বড় বেশি মুগ্ধ করে রাখে। জ্যেঠিমা আজ রান্নাঘরে। মার শরীর ভালো যাচ্ছে না। ক’দিন থেকে শুয়ে আছে কেবল। এবং ছোটকাকাকে ধরে নিয়ে যাবার পর থেকেই কি যেন এক বিষণ্ণতা সারা পরিবারে ছড়িয়ে আছে।

    ঈশম গরুগুলি গোপাটে দিয়ে এসেছে। সে জমিতে তরমুজের লতা লাগিয়ে দিয়েছে। হেমন্ত পার হলে শীতকাল আসবে, শীত পার হলেই বসন্ত। বসন্তে সেই বড় বড় তরমুজ। খুব রোদ, কাঠফাটা রোদে তরমুজের রস। এখন থেকে লতার যত্ন না নিলে গাছ বড় হবে না, লতা বাড়বে না। সে গাছ, লতা এবং মূলের প্রতি যত্ন নেবার জন্য মাথায় করে একটা ছই—যেমন নৌকায় ছই দেয়া থাকে, তেমনি সেই ছই চরের বুকে নিয়ে ফেলবে। কারণ বর্ষার আগে সে ছইটা তুলে এনেছিল ডাঙাতে, এখন জল নেমে গেছে চর থেকে, সে চরের বুকে আবার মাথায় করে ছই নিয়ে যাচ্ছে। ছোটকর্তা বাড়ি নেই বলে ঈশম বড় বেশি লক্ষ রেখে কাজকর্ম করছে। সোনা দেখল ছই মাথায় ঈশমদাদা নদীর চরে নেমে যাচ্ছে। কত যে কাজ সংসারে। সারাক্ষণ মানুষটা কোন-না-কোন কাজের ভিতর ডুবে থাকে। ছোটকাকা বাড়ি নেই বলে তার যেন আরও বেশি কাজ। সে আর সোনাকে দেখা হলেও কথা বলছে না। এ-বছর মামাবাড়ি যাবে। পরীক্ষা হয়ে গেলেই মামাবাড়ি যাবার কথা। কবে যাবে, সেও জানে ঈশম। সেই খবর আনবে, ফাউসার খাল থেকে জল নেমে গেছে কি-না। জল না নামলে ধনবৌ বাপের বাড়ি যেতে পারে না। বৌ-মানুষ খালের জল ভাঙে কী করে। এখানে বেহারা যারা আসে বিহার অথবা পূর্ণিয়া থেকে তারা আসেনি। ওরা আসবে পৌষে। ঈশমই খবর নিয়ে আসবে ওরা দক্ষিণপাড়াতে এসেছে কি-না। কিন্তু এবার খবর নিয়ে এলেও ওরা যেতে পারছে না। ছোটকাকা বাড়ি নেই। তিনি বাড়ি না থাকলে যাবার অনুমতি কে দেবে! সোনা কী ভেবে ছুটে গেল পুকুর পাড়ে।

    সে অর্জুন গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ক্রমে বড় হয়ে যাচ্ছে। সেই ফ্রুট বাজনা, অমলা-কমলার মুখ মনে পড়লে এই অর্জুনগাছটার নিচে এসে সে দাঁড়িয়ে থাকে। সামনে ভিটাজমি ফসলবিহীন। ফতিমা চলে গেছে ঢাকায়। ফতিমা বাড়ি থাকলে ওকে দেখতে পেত। দেখতে পেলেই চলে আসত চুপি চুপি। একা একা সে নানারকম গাছপালার ভিতর দিয়ে পালিয়ে চলে আসত। চলে এলেই মনের ভিতর সেই রহস্যটা জেগে যেত। অমলা রহস্যের স্পর্শ দিয়ে সহসা উধাও। কমলা কী করছে এখন! কলকাতায় বড় বাড়ি, কি প্রাচুর্য—এসব মনে হলেই ওর রাতের কথা মনে হয়, লুকোচুরি খেলার কথা মনে হয়, ছাদের কথা মনে হয়। আর মনে হয় এমন যে মাঠ সামনে পড়ে আছে—অমলা-কমলা যদি একবার এ-দেশে আসত! সে তাকে নিয়ে যেত নদীর চরে।

    সামনের মাঠে তার নেমে যেতে ইচ্ছা এখন। কারণ মার শরীর ভালো না। ওর কেন জানি কিছু ভালো লাগছে না। অথচ এই গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালেই তার মনের ভিতর অদ্ভুত একটা আশা জাগে। কেউ যেন কোথাও ওর মতো বড় হচ্ছে। কোথাও কেউ ওর মতো ছুটছে। এবং নিত্যদিনের এই যে গাছপালা, সবাই তাকে ভালোবাসছে। সোনার এভাবে এক মায়া বেড়ে যাচ্ছে। মায়ায় মায়ায় সে গাছপালার ভিতর বড় হয়ে গেলে তাকে কোন নদীর পাড়ে চলে যেতে হবে বুঝি। যেমন বাবা আছেন দূর দেশে। ন’মাসে ছ’মাসে আসেন। মা কেমন অসহায় চোখ তুলে তাকে আজ দেখছিল সারাদিন! সে যে কী করবে!

    তখন দেখল হন-হন করে কে মাঠ ভেঙে এদিকে আসছে। কাছে আসতেই বুঝল সেই পোস্টম্যান মানুষটি। সে এ-গাঁয়ে আসে। রোজ আসে না। সপ্তায় একদিন। সবুজ রঙের থলে থেকে বাড়ি বাড়ি চিঠি দিয়ে যায়। বাবার চিঠি, জ্যাঠামশাইর চিঠি। কখনও কখনও মামাবাড়ি থেকে চিঠি আসে। সে চিঠি পাবে বলে ছুটে গেল গোপাটে। বলল, চিঠি আছে? চিঠি?

    বলল সে, আছে।

    তারপর একটা চিঠি। নীল খামে চিঠি। সে বলল, কার চিঠি? কারণ সে বিশ্বাস করতে পারছিল না এ-চিঠি তার। নীল খামে সুন্দর হস্তাক্ষরে কে লিখেছে, অতীশ দীপঙ্কর ভৌমিক। কেয়ার অফ শ্রী শচীন্দ্রনাথ ভৌমিক। তার নামে চিঠি! তার নামে চিঠি কে দিল! মানুষটি বলল, অতীশ দীপঙ্কর কার নাম?

    –আমার। যেন অপরাধ করে ফেলেছে সোনা। সে যে কী করে হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নেবে বুঝতে পারছে না। তার নামে চিঠি। ছোটকাকা এসে শুনলে কী ভাববে! মা জ্যেঠিমা কী ভাববে! অমলা যদি চিঠিতে সেই কথা লিখে থাকে! ওর বুকটা কেমন কেঁপে উঠল।

    .

    তখন কবরভূমিতে জোটনের ভিতরটাও কেঁপে উঠল। সে বলল, কর্তা, কী কইলেন?

    —যা বললাম জোটন তা সত্যি। তুই মালতীর মুখ দেখলেই টের পাবি। মালতীকে জব্বর জননী বানিয়ে গেছে।

    জোটন আর কোনও কথা বলতে পারল না। তার মুখ ভীষণ কাতর দেখাচ্ছে। মালতী কাছে নেই। বোধহয় ফকিরসাহেবের কবরের পাশে সেই করবী ফুল গাছটার নিচে বসে রয়েছে। রঞ্জিত সামনে, একটা হোগলার আসনে বসে রয়েছে। ওর মাথার ওপর ডেফল গাছের ছায়া। গাছে ফল নেই। পাতা ঝরে যাচ্ছে। গাছটা নেড়া নেড়া। সূর্য মাঠের ওপাশে অস্ত যাচ্ছে। জোটন সব নিয়তি ভেবে বলল, তা’হলে কি করবেন এখন?

    —তাই ভাবছি, নরেন দাসের কাছে রেখে আসতে সাহস পেলাম না। হিন্দু বাড়ি, বিধবা যুবতীর পেটে জারজ সন্তান, সন্তানের বাপ যে কে, সুতরাং বুঝতেই পারছিস মালতীর অবস্থা! একবার কলসী বেঁধে ডুবে মর েগেল, আমরা তাকে মরতে দিলাম না। সে আবার মরতে যাবে, তুই তো দেখেছিস ওদের বাড়ির নিচে বড় গাবগাছটা, সারাটা দিন মালতী সেখানে বসে থাকত। বিড়বিড় করে বকত।

    ওরা দু’জনই আবার কিছুক্ষণ চুপ থাকল। রঞ্জিতের মুখে এখন দাড়ি গোঁফ নেই বলে এই সমস্যায় সে কতটা চিন্তিত বোঝা যায়। জোটন বুঝতে পারল, মানুষটি মালতীকে বড় ভালোবাসে। সেই শৈশবে সে দেখেছে মালতী এই মানুষের সঙ্গে কতদিন দালানবাড়ি থেকে স্থলপদ্ম চুরি করে এনেছে। কতদিন নৌকায় ঘোর বর্ষার মাঠে ছিপ দিয়ে দু’জনে মাছ ধরেছে। গ্রীষ্মের দিনে ঝড়ের বিকেলে এই দুইজন আর সঙ্গে থাকত সামু তিনজন মিলে বাগের পিছনে বড় সিন্দুরে গাছের আম কুড়াত। এই দু’জন আবাল্য এক সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে, তারপর এই বড়মানুষের শ্যালকটি নিরুদ্দেশে চলে গিয়েছিল। এবং কবে ফিরে এসেছে সে তা জানে না। এখন মালতীর দুর্দিনে সে আবার ফিরে এসেছে। সেই যে কবে একবার ফকিরসাব ওর বাড়িতে গিয়েছিলেন, সে না খেয়ে ফকিরসাবকে সব ক’টা ভাত খাইয়েছিল, কী যে তখন প্রাণের আবেগ, এই এক আবেগ সে এখন রঞ্জিতের মুখে ধরতে পারছে। সে দেখেছিল সেদিন বিধবা মালতী চুপচাপ ঘাটে তার হাঁসগুলি ছেড়ে দিয়েছে। এবং হাঁসের কেলি অথবা বলা যায় যৌনলীলা সে ঘাটে বসে চুপচাপ চুরি করে দেখেছে। ওর কেবল মনে হয়েছিল—হায় খোদা, এমন যুবতী শরীর বিফলে যায়। আল্লার মাশুল তুলছে না মালতী। বড় কষ্ট হয়েছিল তার। সে আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। সেই মালতী আবার এমনভাবে উঠে এল—কী বলবে এখন, কী করবে এখন, জোটন বুঝতে পারছে না।

    লোকালয়-বর্জিত এই এক কবরভূমি। মানুষজন দেখাই যায় না। দূরে হোগলার বন পার হলে অথবা শরবনের পর যে মাঠ, মাঠে কিছু গরু-বাছুর দেখা যাচ্ছে। খুব ছোট এবং অস্পষ্ট ছায়ার মতো গরু-বাছুর। এটা টিলার মতো জায়গা বলে অনেক দূর দেখা যায়। এবং মনে হয় জোটন তার নিবাস দেখে-শুনেই সবচেয়ে উঁচু ভূমিতে তৈরি করেছে এবং খুব দূরে দু’একজন চাষী মানুষ দেখা যাচ্ছে অথবা এই যে অঞ্চল, অঞ্চলের চারপাশে শুধু বেনা ঘাস, হোগলার বন শরের জঙ্গল সব পার হয়ে মানুষের আসা খুব কঠিন। অগম্য স্থান। এমন একটা অঞ্চলে জোটন থাকে। রঞ্জিত শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ঢুকে গেছে। সুতরাং আর কোনও ভয় নেই। মুখে-চোখে সেই নিশ্চিন্ত ভাবটাও কাজ করছে রঞ্জিতের। জুটির এখন আর সেই খেটে-খাওয়া চেহারা নেই। পীরের নিবাসে বাস করে ওর মুখে-চোখেও কেমন পীরানি-পীরানি ভাব। সে শরীরটা ডেফল গাছের গুঁড়িতে এলিয়ে দিল। সে যে এসব বলছে, মালতী শুনতে পচ্ছে কি-না আবার এই ভেবে চারদিকে তাকাতেই দেখল মালতী দূরে কবরের নিচে করবী গাছের ফুল তুলছে কোঁচড়ে।

    জোটন আবার কথা আরম্ভ করল।—পানি আইনা দেই। গোসল করেন। ছাগলের দুধ আছে আতপ চাউল আছে, সীম আছে। সিদ্ধ ভাত খান। মালতীরে খাইতে দ্যান। পরে ভাইবা যা হয় কিছু ঠিক করতে হইব

    জোটন এবার কবরের কাছে গেল। রঞ্জিত পিছনে-পিছনে হাঁটছে। একটা লাউ এর টাল, সেটা অতিক্রম করে যেতে হয়। ওরা দু’জনই টালের নিচে গুঁড়ি মেরে ওপারে উঠে গেল। জোটনের শীত-শীত করছে। সে ওর কাপড় দিয়ে শরীর ভালো করে ঢেকে নিল। ওরা দেখল কবরের ওপারে দু’পা ছড়িয়ে এখন মালতী বসে রয়েছে। কোঁচড়ে করবী ফুল। ফুলগাছগুলির ভিতর হাত ঢুকিয়ে কেবল কী খুঁজছে যেন। বুঝি সে তার যা হারিয়েছে তা ফিরে পেতে পারে কি-না, ফুলের ভিতর হাত রেখে তার অনুসন্ধান। এখানে উঠে এসেই তার ফের মনে পড়ছে পেটের ভিতর এক বৃশ্চিক বাড়ে দিনে-দিনে। লেজে হুল, মুখে কাঁটা, দু’পায়ে সাঁড়াশি। মাঝেমাঝে এটা ওর চোখের সামনে খুব বড় হয়ে যায়। যেন সেই নির্জন মাঠের উপর দিয়ে অতিকায় এক বৃশ্চিক যার পা যোজন প্রমাণ, যার হুল আকাশে উঠে গেছে, প্রায় হাতির শামিল এক জীব ওকে দলে-পিষে মেরে ফেলার জন্য ছুটে আসছে। অথবা সাঁড়াশি দিয়ে গলা টিপে মারবে। সে তখনই হাঁসফাঁস করতে থাকে। সে পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে—না-না-না। যেন সেই হুল ভিতরে বারেবারে দংশন করছে। আতঙ্কে সে শিউরে উঠছে। তার লাবণ্য আর নেই। সেও মরে যাচ্ছে বুঝি! আগামী শীতে এভাবে বাঁচলে সে মরে যাবে।

    জোটনের চোখ ফেটে জল আসছিল। কী সুন্দর মুখ কী হয়ে গেছে! জোটন যতটা পারল কাছে গিয়ে বসল, ওঠ মালতী।

    রঞ্জিত দেখল জোটনের কথায় মালতী উঠে দাঁড়িয়েছে। এবং জোটনের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে। সেও হাঁটছিল। কোনও কথা নেই। পায়ের নিচে ঘাস এবং শুকনো পাতা। ওরা আবার লাউ গাছের টাল অতিক্রম করে এল। ডেফল গাছটা পার হলেই জোটনের চটি। চটির ভিতর ঢুকলে জোটন বলল, হাত পা পানিতে ধুইয়া নে। কর্তা দুধ গরম কইরা দ্যাউক, তুই খা। খাইলে শরীরটা ভালো লাগবে।

    জোটন ছাগল দুয়ে দিল। নতুন মাটির হাঁড়িতে দুধ। সে তিনটে কচার ডাল কেটে আনল। তিনটে ডাল খোঁটার মতো পুঁতে ওপরে দুধের হাঁড়ি রেখে সে বলল রঞ্জিতকে, ইবারে আগুনডা জ্বালেন।

    শুকনো ঘাস পাতা এনে দিয়েছে জোটন। এত বড় বনে জ্বালানির অভাব নেই। সে ঘর থেকে টিন বের করেছে। চিড়া বের করে দিয়েছে হাঁড়িতে। মালতীকে জল আনতে বলেছে কুয়ো থেকে। সব কিছু বের করে দেবার সময় জোটনের কত কথা—এত-এত খাইছি ঠাকুরবাড়ি। ধনমামী বড়মামী কি না খাওয়াইছে। ঠাইনদি ভাল যা কিছু হইছে আমারে না দিয়া খায় নাই। অর্থাৎ এসব বলে জোটন পুরানো দিনের স্মৃতি স্মরণ করছে। সে কী করতে পারে তার মেমানদের জন্য! এই মেমান এসেছে ঠাকুরবাড়ি থেকে। ঠাকুরবাড়িতে সে অভাবে অনটনে খেয়ে বড় হয়েছে। খুদকুড়া যা কিছু উদ্বৃত্ত থাকত, বড়মামী জোটনকে ডেকে দিয়ে দিত। সে যে একটু ওদের আদর আপ্যায়ন করতে পারছে, সে যেন সবই আল্লার মেহেরবানি।

    ওরা জোটনের অতিথি। জোটন এখন দু-চার-দশজনকে ইচ্ছা করলে দু’দশ মাস ধরে খাওয়াতে পারে। যখন মেলা হয়েছিল, মানুষজন এসেছিল কত। দোকানপসরা, লাল-নীল বেলুন, তালপাতার বাঁশি, পীরের মাজারে কত পয়সা, বাতাসার থালায় কত চৌআনি, টাকা। সে সবই পীরানির প্রাপ্য। সে এভাবে দু’বিঘা ধানের ভুঁই—কারণ মোড়লের বেটা হয়নি, পীরের মাজারে মানত করে বেটা হয়েছে, সে দুই বিঘা ভুঁই লিখে দিয়ে গেছে জোটনকে। সকালের দিকে কেউ-কেউ আসে, ব্যারামি নাচারি মানুষকে তারা ধরাধরি করে তুলে নিয়ে আসে। জড়িবুটি যা কিছু ছিল ফকিরসাবের, সে অসুখে-বিসুখে সে-সব ব্যবহার করে। কেউ এলেই দরগার অনেক নিচে দাঁড়িয়ে হাঁক দেয়, পীরের দরগায় মানুষ উইঠা যায়। হাঁক পেলেই জোটন তাড়াতাড়ি চটিতে উঠে যায়—কারণ জোটনের কাছে এই বন উদাসী এক জগৎ। ওর চোখে-মুখে পীরানি পীরানি ভাব। বনের দিকে তাকালে মনে হয় আল্লা কিছুই দিয়ে পাঠায়নি কাউকে। শরীরের বসন-ভূষণ অধিক মনে হয়। লজ্জা নিবারণের কী আছে এত বড় বনে! বনের ভিতর একা-একা জ্যোৎস্নায় তার হিন্দুদের দেবীর মতো হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছা হয়। সে শরীরে বাস রাখে না। খালি অঙ্গে সে ঘুরে বেড়ায় বনে, মানুষ দরগায় উঠে এলেই বেনা ঘাসের অন্তরালে উঁকি দেয়। তারপর হাঁকে—মানুষ উইঠা যায়। কেয়ামতের দিন কবে জানতে চায়। কে জাগে দরগায়?

    পীরানি তাড়াতাড়ি তখন জোটন হয়ে যায়। বসন-ভূষণ পরে গলায় মালাতাবিজ পরে সে তাড়াতাড়ি পীর সাহেবের ছইটার নিচে গিয়ে বসে থাকে। তারপর হাঁকে, পীরানি জাগে। তখন মানুষটা দরগায় উঠে আসতে সাহস পায়। নতুবা সে যতক্ষণ হাঁক না দেবে, পীরানি জাগে—ততক্ষণ সেই জড়িবুটির জন্য যারা আসবে ঘাসের অন্তরালে বসে প্রতীক্ষা করবে। কখন বনের ভিতর থেকে ডাকটা ভেসে আসবে—পীরানি জাগে। পীর মুর্শিদ নিয়ে রঙ্গরস করা যায় না, চুরি করে তাদের লীলাখেলা দেখা পাপ। সুতরাং সোজাসুজি কেউ দরগায় উঠে আসতে সাহস পায় না। কেবল বছরের যেদিন অষ্টমী তিথিতে মেলা বসবে সেদিন হাঁক দেবার নিয়ম নেই। সোজা তুমি দরগায় উঠে আসবে—এমন একটা নিয়ম এ ক’মসাই চালু হয়ে গেছে।

    জোটন মনে মনে বড় প্রসন্ন। কতদিন পর দরগায় বাপের দেশ থেকে মেমান এসেছে। মালতী যে গর্ভবতী এবং রঞ্জিত যে পলাতক-ওরা দু’জন পুলিশের চোখে ধুলা দিয়ে পালিয়ে এসেছে—সে-সব ভুলে কোথায় কি পাওয়া যাবে এখন, যেমন সীমের মাচানে সীম, লাউয়ের মাচানে লাউ সে তুলে বেড়াচ্ছে। অতিথিদের রাতের খাবার ব্যবস্থা করছে। সে মালতীকে ডাকল, আয়, দেইখা যা। সে তার নিজের হাতে লাগানো সীমের মাচান, লাউয়ের মাচান এবং পুঁই মাচায় হলুদ রঙের উচ্ছে ফুল দেখাল। সে যে এখন পীরানি, তার নসিব পাল্টে গেছে এবং বড় মায়ায় চারদিকে সে তপোবনের মতো এক দরগা গড়ে তুলছে, সে-সবও দেখাল মালতীকে।

    আজকাল রাত হলে আর ভয় থাকে না জোটনের। কবর দিতে আসে যারা তারা পর্যন্ত পীরের দরগায় কিছু দিয়ে যায়। অথবা নোমবাতি জ্বালাতে আসে কেউ। সে তখন রসুনগোটার তেলে প্রদীপ জ্বেলে, গলায় মালা-তাবিজ পরে এবং মুসকিলাসানের লম্ফ জ্বালিয়ে অন্ধকারে চোখ রক্তবর্ণ করে বসে থাকে। মানুষের এক ভয়, মৃত্যুভয়। যম-দুয়ারে দিয়া কাঁটা আমার ভাইয়েরে দিলাম ফোঁটা। জোটন যেন ভাইফোঁটার মতো বিড় বিড় করে কী বলে তখন। মানুষেরা অনেক দূরে হাঁটু মুড়ে বসে থাকে। মানুষেরা তার কাছে পর্যন্ত আসতে সাহস পায় না তখন।

    জোটন বলল, তর কোন অসুবিধা হইব না মালতী। ল, তুই সান করবি।

    রঞ্জিত মালতীকে দুধ গরম করে খেতে দিল। দুধটা খেয়ে মালতী স্নানের জন্য বসে থাকল। ছাগলটা আনতে গেছে জোটন। সে ছাগলগুলি বেঁধে রাখল ডেফল গাছে। বলল, ল যাই। সান করলে শরীর ঠাণ্ডা হইব।

    জোটনের আছে বলতে এক ছই। আর চটিতে আছে দুটো ঘর। ভাঙা ইঁটের পাঁচিল। সে ঘর দুটোর একটাতে ছাগল-গরু এ সব রাখবে বলে করেছে। অন্য ঘরটা করেছে মেলার সময় তার বাপের দেশ থেকে কেউ এলে থাকবে। তার সারাটা দিন বনে বনে কেটে যায়। কখনও সে ছইয়ের নিচে বসে নামাজ পড়ে। অথবা মালা-তাবিজের ভিতর পা মুড়ে কেমন মাথা নিচু করে বসে থাকে। ঘর দুটো তার ব্যবহারের দরকার হয় না।

    যেটাতে এলে বাপের দেশের মানুষ থাকার কথা সে-ঘরে এখন চুপচাপ রঞ্জিত একটা কাঠের জলচৌকিতে বসে রয়েছে। জোটন মালতীকে স্নান করাতে নিয়ে যাচ্ছে। দরগায় থাকে বলে কেমন বন্য স্বভাব জোটনের। রঞ্জিত এসেই যেন সেটা টের পেয়ে গেছে। জোটন রাতে ছইয়ের ভিতর থাকে এবং বাইরে রসুনগোটার গাছে মুশকিলাসানের লম্ফটা সারারাত জ্বললে সে নির্ভয়ে ঘুম যেতে পারে।

    জোটন কবর পার হয়ে এসেই কেন জানি মালতীকে একটু থামতে বলে আবার ডেফল গাছটার নিচে চলে গেল। বলল, কর্তা মালতীর কাপড়টা ঘাটের সিঁড়িতে রাইখা আসেন।

    রঞ্জিত মালতীর পোঁটলা থেকে সাদা এক থান বের করল। জোটন ওদের কিছুই ধরছে না। হিন্দুর ধর্মাধর্ম এই। অন্য জাতি ছুঁলে জাত বাঁচে না। সে ছুঁয়ে দিলে মালতী সারারাত না খেয়ে থাকবে। এমন কী সে যে সীম, বরবটি, লাউ এবং দুটো পেঁপে পেড়েছে—সব একসঙ্গে আলাদা রেখে দিয়েছে। জোটন রান্না করার জায়গাটা গোবর দিয়ে লেপে দিয়েছে। গোবরে লেপে দিলেই সব পবিত্র হয়ে যায়। চারপাশটা গোবর ছড়া দিয়ে জায়গাটাকে একজন হিন্দু বিধবা রমণীর উপযুক্ত করে তুলেছে। অথচ পেটে মালতীর জারজ সন্তান। গাছপালায় বাতাসের শনশন শব্দ। জোটন নিরামিষাশী। ফকিরসাবের মৃত্যুর পর মাছ-মাংস আহার করে না–যেন ফকিরসাবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মাছ মাংস বলতে যা কিছু সম্পর্ক বোঝায় তা ছেড়ে দিয়েছে। সে আর আল্লার মাশুল তুলছে না ভেবে বলে না, আমারে একটা পুরান-দুরান যা হয় ঠিক কইরা দ্যান। কিন্তু মালতীর এমন কাঁচা বয়স, রঞ্জিতের এমন সুন্দর মুখ, এক ঘরের এক বিছানায় ওদের বড় মানাবে।

    মালতী তার মেমান। রঞ্জিতও। ওর দিদি ক্ষুধার দিনে কত যত্ন নিয়ে খাইয়েছে তাকে। সে-সব মনে পড়লে কৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে। সে রঞ্জিতকে বলল, সিঁড়িতে নিয়া রাইখা দ্যান। মালতী কাপড় ছোঁবে না। জোটন একটা গাছে বিচিত্র নীল রঙের ফুল দেখবার সময় মালতীকে ছুঁয়ে দিয়েছে। স্নান না করা পর্যন্ত মালতী পবিত্র হবে না। সে মালতীকে বড় এক সরোবরে নিয়ে যাচ্ছে। চারপাশে সব বড়-বড় ঝাউ গাছ। গাছের নিচে কত সব বিচিত্র ঘাস ফুল। কাঠবিড়াল গণ্ডায় গণ্ডায়। সাদা রঙের ডাহুক। ডাহুকের ছানা।

    রঞ্জিত হাতে কাপড় নিয়ে ওদের সঙ্গে হেঁটে গেল! জোটন আগে, মালতী মাঝে এবং রঞ্জিত পিছনে। ওরা টিলা থেকে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এই পথেই জোটন সারাদিন মরা ডাল, শুকনো পাতা, গাছের ফল কুড়িয়ে বেড়ায়—সে এই পথেই নেমে যাচ্ছে। সূর্যাস্তের আলো পাতার ফাঁকে ওদের মুখে পড়েছে। চারপাশে সব গাছ, বড় গরান গাছ, গজারি গাছ, রসুনগোটার গাছ—নিচে তিন মানুষ, এবং ক্রমে শুধু নেমে যাওয়া। যেন জোটন এবং রঞ্জিত এক বন্দিনী বনদেবীকে খোলা মাঠে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। দূরের বিল থেকে হাঁস উড়ে আসে এ-সময়। কচ্ছপেরা উঠে আসে ডিম পাড়ার জন্য। এখানে সব জীবজন্তু, এমন কি কচ্ছপেরা জোটনকে ভয় পায় না। জোটন তাদের মতো জলে-জঙ্গলে থাকে বলে বনের জীব হয়ে গেছে। রঞ্জিত যেতে-যেতে দেখল দুটো কচ্ছপ খালের পাড়ে উঠে রোদ পোহাচ্ছে। রোদ পোহাচ্ছে কি ডিম পাড়ছে বোঝা যাচ্ছে না। ওরা রঞ্জিত এবং মালতীকে দেখেই জলে নেমে গেল। জোটন একা থাকলে কচ্ছপেরা ভয় পেত না। সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই কেমন ডেকে যাবার মতো বলে গেল, আমার মেমান। ডর নাই জীবেরা। তোমার কেউ অনিষ্ট করব না।

    অদ্ভুত এক ছায়াচ্ছন্ন সরোবর। আস্তানাসাবের দরগা এটা। মাঝে একটা জলটুঙি। সেখানে আস্তানাসাবের কবর। পাশে ফকিরসাবের দরগা। এক সময় আস্তানাসাবের দৌলতে এই সরোবর কাটা হয়েছিল এবং কথিত আছে, এই সরোবরের ঠিক মাঝখানে জলের উপর বসে আস্তানাসাব নামাজ পড়তেন, খড়ম পায়ে জল পার হয়ে যেতেন, মৃত্যুর আগে তিনি মন্ত্র-বলে চলটুঙি বানিয়ে গেলেন একটা। সেই জলে স্থলে তাকে সমাহিত করা হল। জোটন আস্তানাসাবের দরগায় ঢুকেই বলল, পীর সাহেব আপনের সরোবরে সান করাইতে আনছি মালতীরে। অরে মুক্ত কইরা দ্যান।

    সিঁড়িতে নেমে রঞ্জিত মালতীর কাপড় রেখে দিল।

    জোটন বলল, ডুব দেওয়নের সময় মনের বাসনা আস্তানাসাবের কাছে কইস।

    মালতী ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভেঙে জলে নেমে গেল।

    —তর যা বাসনা, তুই যদি সরোবরে ডুব দিয়া কস তবে বিফলে যাইব না।

    জলে দাঁড়িয়ে মালতী কি ভাবছে! জলটা নাড়ছে। কি কাচের মতো স্বচ্ছ জল। দুটো একটা মাছ ওর পায়ের কাছে এসে ঘোরাফেরা করছে। সে জলের নিচে এই সব ছোট ছোট মৌরালা মাছ দেখে—জীবন এভাবে কতদিন আর, এমন ভাবছিল।

    জোটন দেখল মালতী জলে ডুব দিচ্ছে না। সে পিছনে দাঁড়িয়ে দেখল রঞ্জিত দাঁড়িয়ে আছে। জোটন কাছে এসে বলল, আপনে যান। মালতীর সান হইলে আমি নিয়া যামু।

    রঞ্জিত হেঁটে হেঁটে চলে এল। এই কবরভূমিতেই জব্বর মালতীর পিছনে ছুটেছিল। আর সেই লোকগুলি। মালতী বলেছিল, সে তিন চারজনের মুখ এক সঙ্গে পয়ের কাছে ভেসে উঠতে দেখেছিল। তিন চারজন মিলে সারারাত ওর ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। এই যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে, সে কে! তার অবস্থা এখন কি! এ কোন দেবতার আশীর্বাদ! জন্ম নিলে তার পরিচয় কী হবে! জোটন কী এই অশুভ দেবতার হাত থেকে মালতীকে রক্ষা করতে পারবে না! সে তো পীরানি। জড়ি-বুটি আছে তার। সে কী বলবে, জোটন এখন তুমি দ্যাখো কী করতে পার! একে তুমি রক্ষা কর।

    তখন জলে ডুব দিল মালতী। যেন একটা মাছরাঙা পাখি জলের নীচে ডুবে অদৃশ্য হয়ে গেল। কত বড় সরোবর! পাড়ে পাড়ে বিচিত্র সব গাছপালা। একটা অপরিচিত পাখি বার বার একই স্বরে ডেকে চলেছে। জোটন পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মালতী কেবল ডুব দিচ্ছে। জোটন বলল, উইঠা আয় মালতী। তর বাসনার কথা কইতে কিন্তু ভুইলা যাইস না।

    জোটনের কথামত ডুব দিয়ে তার বাসনার কথা বলল।—আমারে আস্তানাসাহেব মুক্তি দ্যান। যেন বলার ইচ্ছা—আমাকে আগের মালতী, পবিত্র এবং সুখী মালতী করে দিন। আমি আবার নদীর পাড়ে পাড় হাঁটি।

    মালতী স্নান করে উঠে এলেই বড় পবিত্র লাগছে চোখ-মুখ। জোটন বলল, কি কইলি?

    ছলছল চোখে মালতী বলল, আমারে মুক্তি দিতে কইছি।

    জোটন আর তাকাতে পারছে না মালতীর দিকে। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। বোধ হয় জোটন আর মালতীর সঙ্গে কথাও বলতে পারত না। যদি না মালতী হেসে বলত, জুটি, তর একলা ভর করে না?

    —না।

    মালতীর এই হাসি জোটনকে কেমন সাহসী করে তুলল। বলল, আমার লগে আয়। তর কোন ডর নাই।

    —কত বড় বন! আগের বার চোখ খুইলা সব দ্যাখতে পারি নাই।

    —এই বনে ঢুইকা গ্যালে আর যাইতে ইচ্ছা হয় না।

    ওরা ফিরে এলে রঞ্জিত দেখল মলতী খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এমন কী মালতী ওকে স্নান করে নিতে বলছে। এতটা পথের কষ্ট, স্নান করলেই দূর হয়ে যাবে এমনও বলেছে। মালতী আবার যেন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সে কতক্ষণ! এই বন, নির্জনতা, এবং জোটনের কাছে সাময়িক আশ্রয়, জোটনের অতিথিপরায়ণতা কিছুক্ষণের জন্য ওকে মুগ্ধ করে রেখেছে। পেটে যে একটা আজব জীব বাড়ছে এবং রক্তের অন্তরালে সে জীবটা, অতিকায় নৃশংস এক জীব, মুখ কেবল ব্যাদান করে আছে—সেই মুখ স্মৃতিতে ভাসলেই মালতী আবার অধার্মিক হয়ে যাবে। ভ্রূণ হত্যার জন্য সে নিজের শরীরের ভিতর অন্য একটা শরীর খুঁজে বেড়াবে।

    শুধু এই এক ভয় রঞ্জিতের। সে এই যুবতীকে নিয়ে যায় কোথায়! কারণ, এই অঞ্চল থেকে তার সরে পড়ার একমাত্র পথ নারায়ণগঞ্জে উঠে যাওয়া। এবং সেখান থেকে রেল অথবা স্টিমারে দূর দেশে সরে পড়া। কিন্তু সে জানে তাকে ধরার জন্য জাল পাতা আছে শহরে-গঞ্জে। ওর সব বয়সের ছবি আছে পুলিশের ঘরে। সে একা থাকলে ভয় পেত না, কিন্তু এই যুবতী মেয়ে—পেটে হাত পড়লেই হিক্কা এবং বমির ভাব, চারদিকে তখন পাগলের মতো থুথু ছিটাতে থাকে।

    রঞ্জিতের ইচ্ছা মালতীর সন্তান নাশের ব্যাপারে একটা পরামর্শ করে জুটির সঙ্গে। মালতী দলাদলা হিং খেয়েছে। আভারানী এনে খাইয়েছে। কিছুই হয়নি। মূল এবং গাছের শেকড়-বাকড় আছে, তা ব্যবহার করা হয়নি। আভারানী সাহস পায়নি এটা দু’কান করতে। নরেন দাস, যত বমি করছে মালতী তত ভালোমানুষ হয়ে যাচ্ছিল। এখন জুটিকে বলার সময় নয়। দু’চারদিন থাকার পর কথাটা সে তুলবে। আপাতত এই এক জোটন যে তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে আছে। প্রায় সে আত্মসমর্পণের মতোই এসে উঠেছে। এবং জোটনের এই আশ্রমের মতো জায়গায় মালতীর যদি একটা ব্যবস্থা করা যায়! সে নিজে কথাটা পাড়তে পারছে না। জোটন এই নিয়ে কথা তুললেই সব পরিষ্কার করে খুলে বলতে হবে। তুই কিছুদিন ওকে রাখ জোটন। অন্তত সন্তান প্রসবের দিন ক’টা পর্যন্ত। তারপর আমি ওর আস্তানা ঠিক করে নিয়ে যাব। আর তার আগে যদি গর্ভপাত হয়ে যায়, তবে তো কথাই নেই। আমি আর মালতী কোনদিকে চলে যাব। ঘর বাঁধব।

    রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে জোটন বলল, এত ভাবছেন! বলে সে হা হা করে হাসল। বলে সে হাঁড়ি-পাতিল সব বের করে দিল। সবই নতুন। কিছু সাদা পাথর। মেলা থেকে সে কিনেছে। সাদা পাথর সে কোনটা কত দিয়ে কিনেছে, তা এক এক করে বলছে। রঞ্জিত বসে বসে দেখছে সব। ওর শৈশবের কথা মনে পড়ছে। এই জুটি কচ্ছপের ডিম পেলে, হিন্দু গ্রামে উঠে যেত, সে শাকপাতা, যেমন গীমাশাক এবং গন্ধ পাদাল, বেতের নরম ডগা কেটে হিন্দু বাড়ি উঠে কচ্ছপের ডিম, শাকপাতা দিয়ে খুদকুঁড়া চেয়ে নিত। ধান ভেনে চিঁড়া কুটে তার আহার সংগ্রহ। ওর স্বামী তালাক দিলেই আবেদালির কাছে চলে আসা। আবেদালির কথা মনে হতেই রঞ্জিত বলল, আবেদালির নয়া বিবি এখন ওকে ঠিকমতো খেতে দেয় না। যেন জোটন ইচ্ছা করলে এখন আবেদালিকে কাছে এনে রাখতে পারে।

    জোটনের মুখ বড় কাতর দেখাল। সে এটা পারে না। সে পীরানি, পীরানির ভাব-ভালোবাসা থাকতে নাই। সংসারে তার আপনজন থাকতে নাই। তার আপনজন সকলে।

    —এই যে আমরা আইলাম।

    —সকলে আমার আপনজন কর্তা। কিন্তু কোন মায়া নাই। অর্থাৎ কোনও মায়ায় আর জড়িয়ে পড়তে চায় না জুটি। সে একা। কেবল একা থাকতে চায়। আর আল্লা অথবা নবীদের নামে সে মনের ভিতর ডুবে থাকে। রাত বাড়ালেই ছই-এর নিচে ঢুকে কালো রঙের আলখাল্লা পরবে ফকিরসাবের। গলায় মালা-তাবিজ ঝোলাবে এবং কোরানের পর পর বয়াত মুখস্থ, বলবে মুশকিলাসানের লম্ফের দিকে চোখ রেখে।

    রঞ্জিতকে মালতী রান্না করতে দিল না। জোটন ভাজা মুগের ডাল বের করে দিল। গরুর দুধের ঘি। তেল-ঘিতে দোষ নেই। বাটনা বাটার শীলনোড়া আছে। ওটা জোটন ব্যবহার করে বলে দিল না। কোনওরকমে রাতের রান্না আজ সেরে ফেললে কাল জোটন সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। মালতী হলুদ এক টুকরো আস্ত ডালে ফেলে দিল। হলুদ না দিলে রান্নার ত্রুটি থেকে যায়। হলুদ দিতেই হয়। কোথায় এখন বাটা হলুদ পাবে। সে আস্ত হলুদ ফেলে দিল গরম ডালে, মেতি মৌরি তেজপাতা সম্ভারে মুগের ডাল, বেগুন ভাজা, পেঁপে এবং সীম সেদ্ধ। আতপ চালের ফেনা বাত। বড় কলাপাতা কেটে এনেছিল জোটন। ওরা খেলে পর যা থাকবে, একপাশে আলগা হয়ে খেয়ে নেবে। সে নিজের জন্যও একটা কলাপাতা কেটে রেখেছে।

    জোটন খেতে বসে মালতীকে অপলক দেখছিল। জব্বর এই যুবতীকে বিনষ্ট করেছে। মালতী বছরের পর বছর আল্লার মাশুল না তুলে আছে কী করে! অথচ জব্বর জোরজার করে পবিত্র যুবতীকে অশুচি করে দিল। জোটনের নিজেরই কেমন শরীর গোলাচ্ছে। সে জব্বরকে শিশু বয়স থেকে বড় করেছে। জব্বর এই কাজ করেছে। অপরাধের দায়ভাগ জোটনের। সে ভিতরে ভিতরে জব্বরকে কাছে পেলে যেন গলা টিপে ধরত, এমন চোখ-মুখ এখন। মালতী রঞ্জিতকে খাইয়ে আলাদা পাতায় যত্নের সঙ্গে ভাত এবং ডাল বেড়ে দিল জোটনকে। মালতী রঞ্জিতের পাতায় ভাত বেড়ে নিয়েছিল। ওরা আল্ল্গা হয়ে একটু দূরে বসে পরস্পর নিবিষ্ট মনে খাচ্ছে। কিন্তু জোটন খেতে পারছে না। সে অপলক চুরি করে মালতীকে দেখছে, যেন সেই ঠাকুরবাড়িতে বসে সে খাচ্ছে। সে খেতে খেতে মালতীর রান্নার খুব তারিফ করল।

    রঞ্জিত পাশে দাঁড়িয়েছিল। অন্ধকার রাত। লম্ফের আলোতেই দুই নারী মূর্তি বনের ভিতর চুপচাপ খাচ্ছে। এক সময় জোটন বলল, মামা-মামিরা কেমন আছে?

    —ভাল। বস্তুত সারাদিন পর এই খাওয়া, একটু ঘি, সীমসিদ্ধ, বেগুন সিদ্ধ ভাত এবং মুগের ডাল বেগুন ভাজা অমৃতের শামিল। আর মালতীর এতদিন পর, স্বপ্ন তার সফল হচ্ছে—সে তার প্রিয়জনকে দুটো রান্না করে দিতে পারছে, তার পাতে খেতে পেরেছে, পেটের ভিতর যে এমন একটা দানব দিনে দিনে বাড়ে চন্দ্রকলার মতো, সে আদৌ ভ্রূক্ষেপ করছে না—ঘরে লম্ফ জ্বেলে রেখে এসেছে জোটন—একই ঘরে আজ রঞ্জিত আর মালতী থাকবে। জুটি সেই কবে থেকে প্রায় বলা যায় মালতীর জন্ম থেকে বড় হওয়া, ওর বিয়ের সব সে চোখের ওপর দেখেছে। স্বামীর মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর মালতীর ফিরে আসা। সেই শোক বিহ্বল চেহারা জোটন যেন ইচ্ছা করলে এখনও মনে করতে পারে—তারপর দীর্ঘকাল একা একা মালতী একটা গাছের নিচে সারাদিন বসে থাকল, কেউ এল না হাত ধরে নিয়ে যেতে—নদীর পারে যাবার ইচ্ছা তার বার বার। কিন্তু সে একা। গাছের পাতা কেবল সারা মাসকাল ওর মাথার উপর ঝরে পড়েছে। গাছের নিচে আজ তার সত্যি একটা মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে। মালতী আজ কিছুতেই রঞ্জিতের দিকে তাকাতে পারছে না। কেবল ফুঁপিয়ে কাঁদছে। উচ্ছিষ্ট এক যুবতী সে। সোনার মতো মানুষ, তার কাছে দেবতার শামিল রঞ্জিত এখন ঘরে চুপচাপ হোগলার উপর শুয়ে আছে। সে গেলে মানুষটা আলো নিভিয়ে দেবে। অথচ রঞ্জিতকে ডাকতে সাহস পাচ্ছে না। সে তার কাছে কিছুতেই যেতে সাহস পাচ্ছে না। তার হাত-পা কাঁপছে।

    এখানে থাকলে মালতী ঘরের ভিতর ঢুকবে না। জোটন তাড়াতাড়ি ছইএর নিচে ঢুকে যাবার জন্য কবর পার হয়ে চলে গেল। পিছনের দিকে তাকাল না। কেবল মনে মনে হাসল। মালতী তুই মনে করিস আমি কিছু বুঝি না। তুই বিধবা বইলা তর বুঝি কিছু ইচ্ছা থাকতে নাই! মাচানে উঠেই জোটনের মনে হল সরোবরে আজ দুটো মাছ সারাদিন জলের নিচে ঘুরে বেড়াবে। সরোবরে দীর্ঘদিন একটা মাছ ছিল। জোয়ারের জলে আর একটা ভেসে আসতেই সরোবরের মাছটা লাফিয়ে জলে ভেসে উঠল। ওর কাছে সরোবরের মাছ মালতী। কি যে দুঃখ মেয়েমানুষের স্বামী বিহনে জীবনযাপন—সে মর্মে মর্মে তা জেনেছে। জোটন মুশকিলাসানের আলোতে এবার নিজের মুখ দেখল। সে কেমন তান্ত্রিক সন্ন্যাসিনীর মতো হয়ে যাচ্ছে। এক সুদূর আলোর রেখা ক্রমে বড় হতে হতে গাছপালা ভেদ করে উপরে উঠে যাচ্ছে। মালতী ক্ষুধায় পীড়িত। একটা মানুষ তাকে আজ কী যে আনন্দ দিচ্ছে। আহা, বসুন্ধরার মতো, অথবা আবাদের মতো, ফসলের জমি খালি ফেলে রাখতে নেই। আজ, আজ রাতে দারুণ গ্রীষ্মের দাবদাহের পর আকাশ ভেঙে ঢল নামবে। জোটনের আরামে চোখ বুজে এল। সে ফকিরসাবের উদ্দেশে মাথা নিচু করে এবার বসে থাকল। মনে হচ্ছে সামনে সেই সোনালী বালির চর—আকাশ ভেঙে ঢল নেমেছে। একটা সাদা বিনষ্ট পবিত্র ফুল জলে চুপি চুপি ভিজছে। সে এবার মনে মনে উচ্চারণ করল, খুদা মেহেরবান। সে বিনষ্ট হতে দেবে না ফুলকে। আবার, আবার পরিচ্ছন্ন করে তুলবে সব। মালতীর পেটে জারজ সন্তান। জারজ সন্তান পেটে রেখে সে কিছুতেই এমন নিষ্পাপ যুবতীকে বিনষ্ট হতে দেবে না। হাতে তার কত তন্ত্রমন্ত্র আছে, গাছ-গাছালি আছে—সে কী না পারে! কারণ তার নিজের মানুষ ফকিরসাব। মরার আগে সব তন্ত্রমন্ত্র ঝাড়ফুঁক ওকে দিয়ে গেছে। সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। সারাজীবন ধরে যে মাশুল আল্লাকে দেবার কথা, আজ সে তাই বিনষ্ট করতে যাচ্ছে। সে তার লাখেটিয়া চিজ সেই মাশুলের ওপর ছুঁড়ে দেবে। তবু মালতী আবার পবিত্র হোক সুখী হোক। সে মুশকিলাসানের লম্ফ নিয়ে চুপিচুপি উঠে এল। এসে দেখল মালতী তখনও একা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। রঞ্জিত পরিশ্রান্ত। সে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। সে ডাকল, এই মালতী। মালতী কাছে গেলে বলল, ভিতরে যাস নাই?

    —না।

    —পানি আন।

    মালতী ভেবে পেল না, কেন এসব! সে তবু জোটনের এমন রুদ্র চোখ-মুখ এবং পীরানি পীরানি ভাবটা দেখে কেমন আবিষ্টের মতো এক গ্লাস জল নিয়ে এল। জোটন বলল, নে, হাত পাত। পানিতে গিলা খা। জলটা খেয়ে ফেললে বলল, যা ভিতরে। আর ডর নাই। বলেই সে যেমন এসেছিল সহসা তেমনি ছইয়ের ভিতর লম্ফ নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর সে ছইয়ের নিচে বসে এই মুহূর্তে হাজার হাজার অথবা লক্ষ লক্ষ শয়তানের বিরুদ্ধে করতালি বাজাল। সে গুনাহ্ করল অর্থাৎ মহাপাপ, ভ্ৰূণ হত্যার মহাপাপ। সে জোরে জোরে হাঁকল, ফকিরসাব, কবরে জাইগা আছেন? সে চিৎকার করে বলল, কন খুদা আমারে বেহেস্তে পাঠাইব না দোজকে পাঠাইব? কন ত কি হইব জবাবড়া! বলেই সে লক্ষ লক্ষ শয়তানকে কলা দেখিয়ে কাঁথা-বালিশ টেনে শুয়ে পড়ল। তারপর খুব ফিসফিস গলায়, যেন ফকিরসাব কবরে নেই, মাচানে এসে তার পাশে শুয়েছে—জোটন এমনভাবে নালিশ দিচ্ছে—কি, জবাবড়া দ্যান! কিন্তু ফকিরসাব কিছু বলছেন না। পাশ ফিরে শুলেন। এবার তার যেন বলার ইচ্ছা, এই ভ্রূণ হত্যার জন্য দায়ী কে? আমি, মালতী, আপনি, না জব্বর! কেডা হইব কন? সে দু’হাতে বুক চাপড়ে মাচানে পড়ে তার এই মহাপাপের জন্য বনের ভিতর কাঁদতে থাকল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }