Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প1046 Mins Read0

    নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – ২.৭

    ২.৭

    জানালা খোলা। কামরাঙা গাছের অন্ধকারে কিছু জোনাকি জ্বলছে। বেতঝোপ পার হলে মাঠ। মাঠে আশ্চর্য সাদা জ্যোৎস্না। বড়বৌ সেই সাদা জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়েছিল, না ঘরের আয়নায় নিজের মুখ দেখছিল বোঝা যাচ্ছে না। গলায় চন্দ্রহার পরেছে বড়বৌ। নীল রঙের বেনারসী পরেছে। হাতে চূড়। চোখে বড় করে কাজল টেনেছে। মুখে স্নিগ্ধ প্রসাধন। মানুষটা যদি আসে, এই আশায় দরজা খোলা রেখে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

    সকালে এ-বাড়িতে কিছুটা উৎসবের মতো ঘটনা ঘটেছে। কারণ ভুপেন্দ্রনাথ দু’জন মানুষ নিয়ে এসেছিলেন। ওরা সন্ন্যাসী মানুষ। ওরা এ-বাড়িতে সারা রাত ধুনি জ্বালিয়ে বসেছিল। এবং পাগল মানুষকে নিরাময় করার জন্য অপার্থিব সব ঘটনা ঘটিয়ে বাড়ির মানুষদের তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছিল। ওদের ভোজনের নিমিত্ত নানাবিধ পায়েস হয়েছে। বড়বৌ সারাদিন খেটে স্বামীর শুভ কামনায় রাত হলে নিজের ঘরে চলে এসেছে। তিনি এখনও আসছেন না। এলেই দরজা বন্ধ করে দেবে বড়বৌ। শীতকালটা অন্যবার বেশ শান্ত থাকেন। এবারে তাও না। আজকাল রাত হলে বড়বৌ নানাভাবে সাজতে থাকে। যে যে চেহারায় ওকে বিদেশিনী মনে হতে পারে সে তা করার চেষ্টা করে। কখনও কখনও বড়বৌ একেবারে অন্য জগতের ভিতর ডুবে যায়। সে যেন তার স্বামীকে নিয়ে পুতল খেলতে বসে। সেই ছোট্ট বয়সের মুখ-চোখ তার চারপাশে খেলা করতে থাকে তখন। খেলা করতে করতে কবে সে প্রথম এ-মানুষের সঙ্গে সহবাসের আনন্দ পেয়েছে এমন ভাবে। বোধহয় সেটা এক বসন্তকালই হবে, এবং বোধহয় আকাশে সেদিন আশ্চর্য সাদা জ্যোৎস্না ছিল।

    কেন জানি বড়বৌ’র, আজ ঠিক সেই দিনটি, এমন তার মনে হল। সে জানে এখনও মানুষটা দক্ষিণের বারান্দায় বসে রয়েছেন। না ডাকলে বোধহয় আসবেন না। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কেবল বারান্দায় একটা হ্যারিকেন জ্বলছে। তবু ভারি লজ্জা করছে এই সাজে উঠোনে নেমে যেতে। প্রায় অভিসারে যাবার মতো। গেলেই তিনি উঠে পড়বেন। তাঁর মনে হবে তখন বড়বৌ তাঁর জন্য প্রতীক্ষা করছে জানালায়। এ-সব ভাবতে ভালো লাগে। সে নেমে যাবে কি-না ভাবছিল, তখন দেখল তিনি হেঁটে এদিকে আসছেন। তাড়াতাড়ি বড়বৌ জানালায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। মানুষটার জন্য যে তার প্রতীক্ষা, তিনি না এলে যে বড়বৌ’র অভিমানে চোখে ঘুম আসে না এমন বুঝতে দিতে চাইল না। সে শক্ত হয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকল।

    মানুষটা এসেই আজ কেমন পাগলের মতো বড়বৌকে জড়িয়ে ধরল। দরজা খোলা। কেউ দেখে ফেলতে পারে। দরজা বন্ধ করে দিলে ভালো হতো। কিন্তু এমন আবেশ মানুষটার যদি দরজা বন্ধ করতে গিয়ে হারিয়ে যায়, দরজা বন্ধ করতে গেলে তিনি যদি রাগ করেন, অথবা পাগলের মতো চোখ মুখ আলগা করে রাখেন তবে এ-রাতের নিঃসঙ্গতা ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। সে এমন কী মুখ ঘুরিয়ে মানুষটাকে দেখল না। মানুষটা তার নীল রঙের এমন সুন্দর শাড়িটা টেনে খুলে ফেলল। ফের হুঁস হল বড়বৌর। দরজা খোলা। তবু সে দরজা বন্ধ করতে ছুটে গেল না। মানুষটা যা খুশি করুক। অন্যদিন এই মানুষই দরজা বন্ধ করলে ক্ষেপে যান। হঠাৎ হঠাৎ টেবিল ঠেলে ফেলে দেন। থাম ধরে ঝাঁকাতে থাকেন। কখনও কখনও টেবিলে ঘুষি মেরে সব কাচের বাসন ঠেলে ফেলে দেন। তারপর এক প্রলয় নাচন নাচতে আরম্ভ করলেই বড়বৌ ডাকে, ঠাকুরপো, ও ছোট টাকুরপো! দেখুন এসে কি আবার আরম্ভ করেছেন! সঙ্গে সঙ্গে ভীতু মানুষের মতো মণীন্দ্রনাথ খাটের ওপর উঠে লেপের ভিতর ঢুকে যান। যেন কিছুই করেননি। তিনি বড় ভাল ছেলে। আর সেই মানুষ কী যে করছেন তাকে নিয়ে। বসন ভূষণ খুলে ফেলছেন। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। প্রায় যেন স্বপ্নের মতো ঘটনা। এমন ভালাবাসা সে কতদিন চেয়ে চেয়ে তবে পেয়েছে। ভিতরে ভিতরে বড়বৌ অস্থির হয়ে পড়ছিল। দু’হাতে যা খুশি করুন এমন ইচ্ছাতে বড়বৌ শরীর খাটে বিছিয়ে দিল। নরম শরীর, স্তন এবং কোমল হাত এবং কোথায় যেন প্রপাতের মতো জলের শব্দ শোনা যাচ্ছে, সে ঠেলে সেই মানুষকে সেখানে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু মানুষটা যেন প্রপাতের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না—কী যে করণীয় এই শরীর নিয়ে বুঝতে পারছেন না যেন। মানুষটাকে এবার জোরে চুমু খেল। এবং পাগলের মতো অস্থির হয়ে পড়তেই মণীন্দ্রনাথ একেবারে ঠাণ্ডা মেরে গেলেন। মণীন্দ্রনাথ খাট থেকে নেমে জানালায় এসে দাঁড়ালেন।

    বড়বৌ বলল, এই শোন। আমি আর এমন করব না।

    মণীন্দ্রনাথ শক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থাকলেন।

    —আমি কিছু করব না বলছি। এস আমার পাশে শোবে।

    মণীন্দ্রনাথ সাদা জ্যোৎস্না দেখছেন এখন

    —তুমি আমার পাশে শুধু শোবে। বলে হাতটা নিয়ে বুকের ভিতর খেলা করতে থাকল।

    দরজা খেলা। সে দরজা বন্ধ করে দিল এবার। এবং জানালার পাশে এসে দাঁড়াল।

    ঘরে মৃদু আলো জ্বলছে! একটা পাখি ডাকছিল। তারপর একসঙ্গে অনেকগুলি পাখি ডেকে উঠল। ভিতরে বড় কষ্ট বড়বৌর। মানুষটা এখন পাহাড় বেয়ে ছুটতে পারেন, আবেগে ডুবে যেতে পারেন—তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সে যেন স্বপ্ন দেখে উঠে এসেছে। সব বৃথা। কারণ কতভাবে—বড়বৌ যে চেষ্টা করছে! এই দ্যাখো আমার শরীর, এই দ্যাখো নীল শিরা উপশিরায় কি প্রসন্ন আলো খেলা করে বেড়াচ্ছে। তুমি একটু ছুঁয়ে দ্যাখো, মনে হবে তোমার, দীর্ঘদিন তুমি বনবাসে ছিলে। দ্যাখো এই চোখ, মুখ। তুমি আমার কপালে হাত রাখো। আমি তো তোমার কাছে কিছু চাইনি। কিছু চাইনি! কেবল তুমি যদি একবার আমাকে অপলক দেখতে। আমার মনে হয় তবে তুমি এমনভাবে গ্রামে মাঠে ঘুরে বেড়াতে না। আমাকে আর একবার জড়িয়ে ধর না গো। আমি কিছু করব না। সত্যি বলছি। তিন সত্যি।

    মানুষটা বড়বৌকে কিছুতেই আর স্পর্শ করলেন না। চোখ দেখলেই টের পাওয়া যায় মানুষটা আর রক্তমাংসের পৃথিবীতে নেই। ফোর্টের গম্বুজে তিনি জালালি কবুতর উড়ছে দেখতে পাচ্ছেন।

    বড়বৌ ডাকল, শুনছ!

    তিনি কিছুই শুনছেন না। নদীর জলে তিনি শুনতে পাচ্ছেন শুধু ঝমঝম শব্দ। জাহাজের প্রপেলার ঘুরছে। কিছু অপরিচিত পাখি মাস্তুলে। রেলিঙে সেই সোনার হরিণ দাঁড়িয়ে! হাত দিলেই যে দূরে হারিয়ে যায়। কাছে যা কিছুতেই পাওয়া যায় না। পলিন রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

    বড়বৌ বলল, আমি সত্যি বলছি কিছু করব ন। তোমার যা খুশি যেমনভাবে খুশি আমাকে নাও।

    বড়বৌ বড় অবুঝ হয়ে গেছে। চোখ দেখলেই সব টের পাওয়া যায়। সে কেন যে এমন করছে তবু, সে কেন বুঝতে পারছে না মানুষটা আর মানুষ নেই। মানুষটার ভিতর নদীর নীল জল খেলা করে বেড়াচ্ছে।

    বড়বৌ এবার হাত ধরে খাটে নিয়ে যেতে চাইল তাঁকে। তিনি গেলেন না। তিনি জানালার একটা পাট বন্ধ করে দিলেন। তারপর দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। নিজের বসন-ভূষণ সব আলগা করে ছুঁড়ে ফেললেন খাটে। শেষে কী দেখলেন, বড়বৌর মুখে। মুখ দেখে হাসলেন। দুষ্টু বালকের মতো হাসিতে মুখ ভরে গেল। যেন বললেন, এস, আমরা সাদা জ্যোৎস্নায় হেঁটে হেঁটে নদীর চরে চলে যাই। কেউ দেখবে না। আমরা চুপি চুপি সেখানে দু’জনে পালিয়ে বসে থাকব। আকাশের নিচে সাদা জ্যোৎস্নায় বসে থাকতে কী যে ভালো লাগবে না!

    বড়বৌ কিছু বুঝতে পারল না। কেন এমন সরল বালকের মতো তিনি হাসছেন! সে কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তিনি তখনও হাসছেন। হাসতে হাসতে দরজা খুলে ফেলছেন। বড়বৌ তাড়াতাড়ি আলোটা নিভিয়ে দিল। মানুষটা উঠোনে নেমে যাচ্ছেন। কি হবে এখন! বড়বৌ তাড়াতাড়ি সেই বেনারসী শাড়িটাকে কোনরকমে শরীরে জড়িয়ে নিল। পাগল মানুষের কাপড়টা খাট থেকে তুলে নিল। এই মানুষ এমন এক অবয়বে বের হয়ে গেলে কবে ফের ঘরে উঠে আসবেন কে জানে! লজ্জায় যেন তার মাথা কাটা যাবে। অন্তত কাপড়টা পরিয়ে দিতে পারলে মানুষটাকে আর পাগল মনে হবে না। নিরীহ মানুষ, অবলা জীবের মতো তাঁর চোখ তখন। গ্রামের পর মাঠ, মাঠে মাঠে তিনি এক সন্ত পুরুষের মতো হেঁটে যাবেন।

    বড়বৌ উঠানে নেমে দেখল ধীরে ধীরে বাঁশতলা দিয়ে তিনি নেমে যাচ্ছেন। সে শেকল তুলে দিয়েছিল ঘরের। শেকল তুলে চারপাশে তাকাল। কোনও ঘরে আলো জ্বলছে না। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনও সাড়াশব্দ নেই। একবার ভাবল শচীন্দ্রনাথকে ডাকে, উঠে দেখুন কিভাবে বের হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজের প্রসাধনের কথা ভেবে ডাকতে সংকোচ বোধ করল। বরং সে গিয়ে সামনে দাঁড়ালে, দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়ালে আর তিনি নড়তে পারবেন না।

    কুয়োতলায় এসে দেখল মণীন্দ্রনাথ দ্রুত মাঠে নেমে হাঁটছেন। সেও মাঠে নেমে এল। স্বামী তার এমন বেশে গ্রামে মাঠে ঘুরে বেড়াবে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। সে, যে করে হোক কাপড়টা পরিয়ে দেবে। তারপর যেমন খুশি, যেদিক খুশি তিনি চলে যাবেন। সে মানুষটার সঙ্গে মাঠের উপর দিয়ে দ্রুত ছুটতে থাকল।

    বসন্তের মাঠ ফসল নেই। শুধু কিছু জমিতে পেঁয়াজ রসুনের গাছ, লঙ্কা গাছ। চারপাশে জমির বেড়া। মাঠে নেমেই মনে হল মানুষটা কোথাও যেন তার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সে কেবল ছুটে নাগাল পাচ্ছে না। সে দেখল তখন তিনি দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। বড়বৌকে মাঠে নেমে আসতে দেখে বুঝি সামান্য বিস্মিত হয়েছেন। বড়বৌ জমির ওপর দিয়ে ছুটছে। ছুটে ছুটে আর পারছে না। হাঁপিয়ে উঠছে। কাছে গিয়ে সে কথা বলতে পারছে না। তুমি এ-ভাবে বের হয়ে গেলে লোকে কি বলবে! এসব বলতে গিয়ে গলায় কথা আটকে যাচ্ছে।—লক্ষ্মী, কাপড় পরে নাও। তারপর যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও আমি আর তোমাকে বিরক্ত করব না। এমনও বলার ইচ্ছা। কাপড়টা বড়বৌ পরিয়ে দেবে, পরিয়ে দিলেই সোনার হরিণের খোঁজে অথবা নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজতে বের হয়ে যাবেন। এমন সময় এক সুদৃশ্য শরীরে পাশে টান টান হয়ে দাঁড়ালে, বড়বৌর আর ভয় থাকবে না। ভাবল, কাপড়টা পরিয়ে দিয়েই বলবে, হ্যাঁ গো, আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবে না? একা আমি যাব কী করে!

    সে কী ভাবল আর কী হয়ে গেল! হতভম্ব সে। ভেবেছিল কাপড় পরিয়ে দিলেই মানুষটা তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। তাকে এত বড় মাঠে একা ফেলে যাবেন না। কিন্তু মানুষটার চেহারা অন্যরকম। বড় বেশি হাসি হাসি মুখ। তিনি এক টানে বড়বৌর কাপড় খুলে ফেলেছেন। খুলে ফেলেই একেবারে বালক। বালকের মতো সাদা জ্যোৎস্নায় দাঁড়িয়ে হা হা করে হাসছেন। কুয়াশার ভিতর মাঝে মাঝে মুখ তাঁর অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাদা জ্যোৎস্নায় আবছা কুয়াশার ভিতর এক রহস্যজনক ভাব তাঁর মুখে। বগলে কাপড় নিয়ে চিরদিনের তীর্থযাত্রীর মতো তাঁর যেন ভ্রূক্ষেপহীন যাত্রা। বড়বৌকে এসব ভীষণ আড়ষ্ট করে দিল। কিছু সে বলতে পারল না। খেলাচ্ছলে তিনি যেন এমন সব করছেন। দূরে দূরে সব বন মাঠ, সাদা জ্যোৎস্না এবং হালকা কুয়াশা দেখে বড়বৌকে নিয়ে স্থির থাকতে পারছেন না। কেবল ছোটার ইচ্ছা তাঁর। কোথাও সেই যে তিনি একটা নীল বর্ণের লতা নিয়ে এসেছিলেন কলকাতা থেকে, যেখানে ঈশম নদীর চরে একা রাত যাপন করে, এবং এক নীল বর্ণের লতা থেকে কত হাজার নীলবর্ণ লতা ফুল ফল সৃষ্টি হচ্ছে এখন—তেমন জায়গায় তাঁর চলে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে।

    কিছু ভালো লাগছে না তাঁর। তিনি যখন কলকাতা থেকে শেষবারের মতো ফিরে এলেন, সঙ্গে সব নানারকমের গাছ ছিল তাঁর। এখন আর মনে করতে পারছেন না কী গাছ সে-সব। কী লতা সে-সব। কেবল মনে পড়ছে, একটা নীলবর্ণের লতা ছিল। সবাই সেটা ফেলে এসেছিল নৌকায়। কেবল ঈশম তুলে এনে চরের জমিতে লাগিয়ে দিয়েছিল। যখন কিছু ভালো লাগত না, তিনি তখন নদীর চরে নেমে লতার গোড়ায় সারা বিকেল জল ঢালতেন। এই মাঠে নেমে বড়বৌর আড়ষ্ট মুখ-চোখ দেখে তাঁর সে-সব মনে পড়ছিল।

    বড়বৌ ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। সে বলল, দাও লক্ষ্মী। আমার কাপড়টা দাও।

    আমরা কোথাও যাব বলে বের হয়েছি। সংসারে কোথাও যাব বলে বের হলে ফিরতে নেই।

    —তুমি কী চাইছ বল! কী পেলে তুমি সুখী হবে বল, সব দিচ্ছি। আমি চলে যাব এ-দেশ ছেড়ে। আমি চলে গেলে সুখী হবে! বল তুমি? তুমি যা বলবে আমি তাই করব!

    এ-ভাবে কিছু হয় না। আমরা শেষপর্যন্ত কিছু করতে পারি না। তবু হাঁটি। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হই। মনে হয় সামনেই একটা সরাইখানা আছে। একটা অদৃশ্য সরাইখানার পিছনে সবাই আমরা ছুটছি।

    —কেউ দেখে ফেললে কি হবে বলতো! মান-সম্মান সব যাবে। তোমার বৌ আমি। কেউ দেখে ফেললে কত বড় অসম্মান হবে বলতো!

    জীবনের নানারকমের খেলা আছে। লাল নীল বল নিয়ে তেমন একটা খেলা। কোনটা যে কী রকমভাবে চোখের ওপর ফেঁসে যাবে জানি না। তবু খেলি। মনে হয় খেলার মাঠে জয়-পরাজয় হবে। এবং খেলার মাঠ পার হয়ে এলে একটা সেতু দেখতে পাই। সেতুর ওপর একজন ফকির মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন। যে বলটা ছিল আমাদের খেলার বস্তু, সেই বলটা ফকির সাহেবের প্রাণ মনে হয়।

    —শোন, এ-ভাবে আমাকে কতদূর পিছু পিছু নিয়ে যাবে? তুমি কী ভেবেছো! আমরা টোডার বাগের কাছে চলে এসেছি। ছিঃ ছিঃ, কী বিপদে আমাকে ফেললে বলতো! সামনে নদী। নদীর চর। একটু দূরে তরমুজ খেত। তুমি আমার মান-সম্মান রাখলে না। দাও। শাড়িটা দাও। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। কী করে ফিরব! এত বড় মাঠ পার হয়ে একা যাব কী করে! কেউ দেখে ফেললে কী হবে বলতো? আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

    মাঠ কেউ পার হতে পারে না বড়বৌ। পার হব হব বলে সবাই বের হয়ে পড়ি। তারপর রাতদিন ক্রমান্বয় হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত বিষণ্ণ। কোথাও কোনও জলছত্রের কাছে তারপর নিরিবিলি বসে থাকা। কেউ আমাদের বলে দিতে পারে না কতদূর গেলে এই মাঠ শেষ হবে। শুধু জলছত্রের মানুষটি তোমাকে জলদান করবে আর বলবে, জল খেলে তৃষ্ণা নিবারণ হয়। সামনে যে বন আছে, তার ওপারে একটা কদম ফুলের গাছ পাবে। সেখানে আমার মতো আর একজন মানুষ জলছত্র খুলে বসে রয়েছে। মাঠ পার করে দিতে কেউ পারে না বড়বৌ। আমরা সবাই ইচ্ছা করলে শুধু তেষ্টার সময় জলদান করতে পারি। আর কিছু পারি না।

    —তুমি কী কিছু বলবে না! নদীর চরে তোমার কী আছে। তুমি ওদিকে হাঁটছে কেন! আমি তোমার সঙ্গে জোর করে কিছু ফিরে পাব না জানি। আমাকে এ-ভাবে কেউ দেখে ফেললে ঠিক আত্মহত্যা করব বলছি।

    এবারে পাগল মানুষ স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। শাড়িটা বগল থেকে বের করে বড়বৌর হাতে দিলেন। তারপর হাঁটতে থাকলে সহসা কেন জানি বড়বৌ’র মনে হল, মানুষটার অভিমানে বুক ফেটে যাচ্ছে। এই সাদা জ্যোৎস্নায় তিনি তাকে নিয়ে হয়তো এভাবেই হাঁটতে চান। এবং কেন জানি ওর মনে হল–আর সে একা ফিরে যেতে পারবে না। এক অত্যাশ্চর্য মায়া, এখন এই নিরিবিলি সাদা জ্যোৎস্নায় এবং কুয়াশার ভিতর। বড়বৌ মানুষটার পিছু পিছু হেঁটে গেল। নদীর চর, চরের পারে ছইয়ের ভিতর ঈশম ঘুমোচ্ছে। ওরা দু’জন চুপচাপ নদীর চরে বসে থাকলে কে আর টের পাবে! কুয়াশার ভিতর সবই অস্পষ্ট এবং মায়াজালে ঢাকা। বড়বৌ তার পাগল স্বামীকে নিয়ে নির্জনতায় ডুবে গেল। বলল, আমার কে আছে! তুমি বাদে আমার আর কী আছে?

    .

    ঈশম খকখক করে কাশছিল। কাশির জন্য সে ঘুমোতে পারছে না। খুব বেশি কাশি পেলে সে উঠে তামাক খায়। তার হুঁকা-কলকি এবং পাতিলে আগুন সব ঠিকঠাক। এখন রাত ক’প্রহর সে টের পাচ্ছে না। ছইয়ের বাইরে এলে সে আকাশে চাঁদের অবস্থান দেখে টের পেত—রাত কটা বাজে! অথবা সে চুপচাপ শুয়ে থাকলে টের পায়—ক’প্রহর রাত। প্রথম প্রহর, ঠাকুরবাড়ির আরতির ঘণ্টা বাজে, দক্ষিণের ঘরে আলো জ্বালা থাকে। যে-সব খরগোশ হাসান পীরের দরগা থেকে বের হয়েছে নদীর চরে আসবে বলে, তরমুজের পাতা ওদের বড় প্রিয়, তারা প্রথম প্রহর শেষে জমির আলে এসে পড়লে টেরা পায় ঈশম, ওরা আসছে। সে কান পেতে রাখলে টের পায়—ওরা খরগোশ না সজারু। সে এখন খুব কাশছে বলে টের করতে পারছে না, সজারু কী খরগোশ, খাটাশ না শেয়াল—কারা এসে আলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাত গভীর হলেই ওরা চুপি চুপি ঢুকে পড়বে জমিতে, ঈশম ওদের তাড়ানোর জন্য টিনের ডঙ্কা বাজায়। প্রহর শেষ হলেই সে ডঙ্কা বাজায়। আর তখন যত এইসব খরগোশ, খাটাশ অথবা শিয়াল সজারু সব ছুটতে শুরু করে নদীর দিকে।

    তখন ওর মনে হয় কে যেন হাঁকছে নদীর চরে—কে জাগে?

    —আমি আল্লার বান্দা ঈশম জাগি। সে খালি মাঠে চিৎকার করে ওঠে।

    এই নদীর চর, সাদা জ্যোৎস্না, বড় বড় তরমুজ এবং নদীর জল তার কাছে তখন এক বেহেস্তের শামিল। সে হাতে তালি বাজায়। চুপচাপ এই নিশীথে ধরণী কি শান্ত! কেবল সব নিশীথের জীবেরা আহারের অন্বেষণে বের হয়েছে। সে টের পাচ্ছে না তারা কতদূর এসে গেছে। সে উঠে বসল। তামুক না খেলে তার কাশি কমবে না। সে ছইয়ের বাতা থেকে কলকি টেনে নিল। তামাক ভরে খড়কুটো জ্বেলে সামান্য আগুন নিল কলকিতে। ওর কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে যেমন অন্যদিন তরমুজের জমিতে একা নিশীথে দাঁড়িয়ে তামুক খায়, পাখ-পাখালি অথবা বন্য জীব তাড়ায় তামুক খেতে খেতে, আজ তা পারছে না। কাশিটা ওকে বড় বেশি জব্দ করে ফেলেছে। সে তামুক খেতে খেতে টিনের ডঙ্কা বাজাল। ছইয়ের বাইরে কী সাদা জ্যোৎস্না! কালো কালো ঐ পাখির ডিম! চুপচাপ সেই ডিমের ওপর বসে থাকা, তামুক খাওয়া, নদীর জল যেন কলকল করে সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে। সে-সব শব্দ শোনা বড় মনোরম। আর আকাশের অজস্র নক্ষত্র দেখতে দেখতে ঈশম যে বারবার কতবার এই জমিতে রাত কাবার করে দিয়েছে, একফোঁটা ঘুমায় না, এখন ঈশমকে দেখলে তা বোঝা যাবে না। আজ ঈশম এমন সাদা জ্যোৎস্না দেখেও ছইয়ের বাইরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হল না। সামান্য কুয়াশা নদীর পাড়ে পাড়ে। এই কুয়াশার ভিতর সে অস্পষ্ট এক ছবি দেখে চমকে উঠল।

    সে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে ভাবল, ওরা কারা এল। ওর তরমুজ খেতে এমন গভীর রাতে কারা আসতে পারে! তরমুজ চুরি করতে আসে যারা, তাদের চাল চলন অন্যরকম। সে দেখলেই টের পায়, মানুষেরা তরমুজ চুরি করতে এসেছে। কিন্তু সে যে দেখছে তরমুজের ওপর ওরা নিবিষ্ট মনে বসে রয়েছে। দু’জন দু’মুখে। একজন পুবে, অন্যজন পশ্চিমে। ওরা যেন একটা তরমুজের উপর বসে পূর্ব পশ্চিম দেখছে। এবং ওরা যেন একেবারে শরীর নাঙ্গা করে রেখেছে—এই কুয়াশার ভিতরও যেন তা স্পষ্ট। কুয়াশা প্রবল নয়। হালকা। জমির ওপর নদীর পাড়ে কুয়াশা একটা পাতলা সিল্কের মতো বিছিয়ে আছে। সবুজ সব তরমুজের পাতায় শিশির জমেছে। আর দুই মানুষ, মনে হল একজন স্ত্রীলোক হবে, তা হউক, সংসারে কত জীব ঘুরে বেড়ায়, ওরা নিশীথে এই পৃথিবীর মায়ায় নেমে আসে, ওদের যা কিছু আকাঙ্ক্ষা, অথবা বলা যায়, এমন নদীর পাড়ে, তরমুজ খেতে নিশীথে নেমে আসতে না পারলে তাদের আত্মা বড় কষ্ট পায়।

    তা তোমরা নেমে এসেছ জীবেরা, আত্মা তোমাদের কান্নাকাটি করছে, এই জমিতে সাদা জ্যোৎস্নায় বেড়াবার সখ তোমাদের, বেড়াও। আমি ঈশম আল্লার বান্দা চক্ষু বুইজা থাকি। দ্যাখি না কিছু। তোমাদের লীলাখেলা দেখতে নাই। সে এই ভেবে আর বের হল না ছইয়ের ভিতর থেকে। এমন মায়া এই গাছপালা পাখির, কেউ যেন তা ফেলে চলে যেতে চায় না। আবার ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা। এবং তারা নিশীথে নেমে আসে।

    ওর মনে হল সেও এই জমিতে আবার একদিন নেবে আসবে। তখন সে থাকবে না। তার আত্মা বিনষ্ট হবে কি-না সে তা জানে না। সে নিজ হাতে তৈরি করেছে এই মাটি, মাটির প্রতিটি খণ্ড অংশ। সে যেন মাটি হাতে নিলেই বলতে পারে চাষের সময় কত বাকি! কোন লতা এবারে জমিতে লাগালে বড় বড় তরমুজ হবে। সে তখন তার বড় বড় তরমুজ দেখতে নেমে আসবে।

    অথবা তার মনে হল সংসারে কিছুই বিনষ্ট হয় না। কারণ, যারা এই মাটিতে জন্মেছে, মরেছে এবং যারা এখন আকাশে বাতাসে ঘোরাফেরা করছে, তারা এমন সুন্দর এক জগৎ দেখে স্থির থাকতে পারেনি। মানুষের অবয়বে এই তরমুজ খেতে নেমে এসেছে।

    এবং এও সে ভেবেছে, দুই ফেরেস্তা, অথবা জীন পরী ঘোরাফেরা করছে এই জমিতে। সে ছইয়ের বাইরে বের হয়ে ওদের এমন লীলাখেলায় বাধার সৃষ্টি করল না। এমন কী সে যে কাশছিল, তাও দম বন্ধ করে থামিয়ে রাখছে। ধীরে ধীরে তামাক টানছে। তামাক টানলেই বুকটা হালকা লাগে। কাশি কমে যায়। সে কাশি কমাবার জন্য তামাক খাচ্ছিল, আর দূরে ফেরেস্তার লীলাখেলা দেখছে। ঈশম নিশীথের মানুষ। দিনে তার ঘুম যাবার অভ্যাস। সে যৌবনে গয়না নৌকার মাঝি ছিল। তার মনে আছে, সে রাতে রাতে গয়না নৌকা চালাত। ওর গয়না নৌকা বামন্দি, ফাওসার খালে খালে পরাপরদির নদীতে পড়ত। তারপর মহজমপুর হয়ে, আলিপুরার বাজার পার হয়ে মাঝের চর এবং পরে নাঙ্গলবন্দ, শেষে সকাল হতে না হতে নারায়ণগঞ্জের ইস্টিমার ঘাটে নৌকা লাগিয়ে বসে থাকা। আবার সাঁজ নামলে মানুষ নিয়ে ফিরে আসা ঈশমের। সেই নিশীথের যাত্রা সুগম ছিল না। নানা জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন কিংবদন্তী, ফাঁসির মানুষ ঝোলে কোথাও, পেঁচার আর্তনাদ বড় নিম গাছটায় রাতে কী যে ভয়াবহ লাগে! একবার সে ফাওসার বিলে বড় শিমুল গাছের মাথায় আগুন জ্বলতে দেখে পথ হারিয়ে ফেলেছিল—এই সবই এখন ঈশমকে নানাভাবে ভাবাচ্ছে। এই যে সে শিশু বয়স থেকে মাটির কাছাকাছি বড় হচ্ছে, সে পাইক খেলত, সামসুদ্দিনের বাপ ছিল তার শাগরেদ, ঠাকুরবাড়িতে তখন দুগ্‌গাঠাকুর আসত শরৎকালে। সামসুদ্দিনের হাত ধরে ওর বাপ আসত অষ্টমীর দিনে, আর পাইক খেলা, ছোট লাঠি হাতে ঈশম বুকের শক্ত পেশী তুলে দাঁড়ালে গ্রামের সব মানুষ ভেঙে পড়ত। ওর অসীম শক্তি ছিল তখন। লাঠি খেলায় সে সামসুদ্দিনের বাপকে কতদিন হারিয়ে দিয়েছে; দিয়েই ওরা দুই দোস্ত হাতে পায়ে কাদা যে যার মতো ধুয়ে ফেললে কে বলবে—কিছুক্ষণ আগে রক্তচক্ষু দুইজনের, দুইজনের লড়ালাড়ি, কে মরে কে বাঁচে ঠিক থাকে না তখন।

    আর ঠাকুরকর্তা শেষে পূজা বন্ধ করে দিলেন। সেই দিন, এক দুঃখের দিন বড়, বড় ছেলে পাগল হল, তিনি প্রতিমা নদীর জলে ফেলে দিয়ে এসে বসলেন বারান্দায়, মা, আমার তুমি তামাশা দ্যাখলা! পোলা আমার ভালো না হইলে তোমার পূজা কে দেয়! তিনি পূজা বন্ধ করে দিলেন। ঈশমের লাঠি খেলা সেই থেকে বন্ধ হয়ে গেল। সে মহরমের দিনে লাঠি খেলায় জুত পেত না। কী যেন সে দেবীর সামনে এতদিন দেখিয়েছে, পূজা বন্ধ বলে তার মনে ভয়, সে ভয়ে ভয়ে আর হাওয়ায় লাঠি দোলাতে পারত না। কেবল যেন এক দেবী, মা জননী, ঈশমকে বলত, তুই আমাকে আর লাঠি খেলা দেখাবি না ঈশম? আমাকে নদীর জলে রেখে আসবি না?

    দশমীর দিনে ওরা যখন নৌকা ভাসাত দুগ্‌গা প্রতিমা নিয়ে—কি যে বিজয় উৎসব! সে তো তখন লাখের ভিতর এক। সে বড় নৌকার বড় মাঝি। সে জানত প্ৰতিমা দুলবে কি-না, সে জানত, স্রোতের মুখে নৌকা পড়ে গেলে দেবীর চালচিত্র উল্টে যাবে কি-না। সে হালে দাঁড়িয়ে হাঁকত, মার টান হেইয়! দুই দিকে মাঠ, সামনে নদী, পানিতে শাপলা ফুল, মা জননী ভাইসা যায় জলে। এই ছিল ঈশম, সে কতবার প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেবীর তরবারি জল থেকে ডুবে-ডুবে তুলে এনেছে। তরবারি, শঙ্খ, গদা-পদ্ম, সব সে এক-এক করে তুলত। কারণ, প্রতিমা, জলে উপুড় হয়ে ভাসত। সে ডুবে ডুবে মাছের মতো গিয়ে তুলে আনত। কারণ, বাড়ি গেলে দোস্তের বেটা সামু জেগে বসে থাকবে। যতক্ষণ এই তরবারি সামুকে না দিতে পারবে, ততক্ষণ মনে তার শান্তি থাকে না। একবার কর্তাঠাকুরের কোন আত্মীয় এসেছিল, সে বিসর্জনের আগেই সব খুলে নিতে চেয়েছিল। কারণ বাবুর সখ, ছেলেপুলের হাতে তরবারি, চক্র এবং সেই লম্বা টিনের পাতে তৈরি ত্রিশূল দিয়ে দেবেন। নদীর জলে ডুবে গেলে তুলে আনা যাবে না।

    কিন্তু ঈশম হেসে বলেছিল—কি কইরা হয়! জননীর গায়ে হাত দিতে নাই। পানিতে জননীরে না ভাসাইলে কার হিম্মত দেবীর গায়ে হাত দেয়!

    সেই আত্মীয়, এমন এক চাকর মানুষের মুখে এত বড় কথা শুনে হেঁকে উঠেছিল, কেরে বেটা তুই! নাক টিপলে দুধ গলে, ভাতেরে কস অন্ন।

    ঈশম বলেছিল, কর্তা, অত সোজা না। আমার নাম ঈশম। দেবীর গায়ে হাত দ্যান ত দ্যাখি।

    লাগে মারামারি আর কী। ভূপেন্দ্রনাথ, চন্দ্রনাথ, ওরা কত ছোট তখন। মণীন্দ্রনাথ তখন শৈশবের মানুষ। মণীন্দ্রনাথ বলেছিল, মামা, তা হয় না। সংসারে এমন নিয়ম ছিল তখন। ঈশম পূজার ক’দিন গয়না নৌকার কাজ বন্ধ রাখত। পূজার ক’দিন তার নানাভাবে কেটে যাবে। সে-সব দিনে সে ভাবতেও পারেনি, ঠাকুরবাড়ির এই উড়াট জমিতে কখনও বড়-বড় তরমুজ ফলবে। সে যদি তখন থেকে এই জমিতে এসে নামতে পারত জমির চেহারা কত পাল্টে যেত আরও! বড় সে দেরি করে ফেলেছে। কত সে আত্মার বিচিত্রলীলা দেখতে পেত। অথবা তার সেই সব ফেরাস্তারা, কে যে নেমে এসেছে এখন সে টের পাচ্ছে না। সে চুপচাপ ছইয়ের নিচে বসে দেখতে পাচ্ছে না। ওরা এখন বালিয়াড়িতে কী একটা বিছিয়ে দিল। প্রায় মন্ত্র পাঠের মতো জোরে জোরে কী সব বলছে। যেন প্রায় কেউ নদীর জলে দাঁড়িয়ে কোরান শরিফ পাঠ করছে। অথবা মনে হয় নদীর জলে কেউ তর্পণ করছে। গুরুগম্ভীর আওয়াজ, আকাশ বাতাস মথিত করে উপরে উঠে যাচ্ছে। বৃদ্ধ ঈশম চুপচাপ দেখতে দেখতে এমন ভাবছে। সে আরও ভাবছে কিছু, সে মনে করতে পারছে না, সেটা কোন সাল, কোন সালে বড়কর্তার বিয়ে হল। বিয়ের বছরই তিনি পাগল হলেন, না পরে! বিয়ের পর তিনি সাত-আট মাস এখানে ছিলেন না। চাকরিতে গিয়ে সাত-আট মাস নিজের এই পাগলামি রোখার চেষ্টা করেছিলেন। সরকারি চাকরি, কতদিন আর পাগলামি করে রাখা যায়। সেবারেই তিনি ঘরে ফিরে আসেন, নানা রকমের লতাপাতার ডাল এবং মূল নিয়ে আসেন। অদ্ভুত মানুষের ইচ্ছা। সবাই ওঁকে আনতে গেল, ফাওসার খালে গয়না নৌকা লেগে আছে। ঈশম নৌকা বেঁধে বসে রয়েছে। এত গাছপালা, বিচিত্র সব গাছ, সে জানেও না কোনটা কী গাছ। বাড়িতে খবর পাঠিয়ে লোক আনিয়েছে সে। যারা এসেছিল তারা দেখল মণীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে সব বিদেশী লতা এবং মূল নিয়ে এসেছেন। তার ভিতরে ছোট একটা পাইন গাছ, কিছু ঝাউ জাতীয় গাছ, এবং একটা তরমুজের লতা। বুড়োকর্তা নিজে এসে যখন এমন দেখলেন, চোখ ফেটে তার তখন জল আসছিল। একেবারে মাথাটা গেছে। কিছু নেই সঙ্গে। শুধু কিছু গাছপালা এবং কীট-পতঙ্গ নিয়ে ফিরছেন।

    নৌকা খালি করে সব তুলে নিয়ে যেতে হল। না নিলে মানুষটা ঘরে ফিরবেন না, কেবল অলক্ষ্যে যা-কিছু ফেলে দেওয়া যায়। ওঁরা অর্থাৎ ভূপেন্দ্রনাথ, চন্দ্রনাথ এবং শচি সব কীট-পতঙ্গ মাঠে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিছু ফুলের ডাল, যেমন বোগেনভেলিয়ার ডাল, ম্যাগনোলিয়ার শাখা এবং নানা জাতীয় ঝাউ গাছের চারা টবে ওঁরা বাড়ি এনে হাজির করেছিলেন। ঈশম নৌকা সাফ করতে গিয়ে দেখল একটা লতা, এ অঞ্চলে তরমুজ হয় না, ক্ষিরাই হয়, ওর মনে হয়েছিল ওটা ক্ষিরাই-লতা। কিন্তু নীল-নীল আভা এবং পাতাগুলি বিচিত্র রঙের। সে ওটা নিয়ে গয়না নৌকার গেরাফি ফেলে উঠে এসেছিল। এসে বলল, ঠাইনদি এডা রাখেন। এডা একডা লতা। কি লতা দ্যাখেন।

    সবাই দেখল। বড়বৌ কেবল দেখল না। সে বিছানায় পড়ে তখন নাবালিকার মতো কাঁদছে। শিয়রে শচীন্দ্রনথ বসে ছিলেন। দক্ষিণের ঘরে, মানুষজনের ভিড়। ভূপেন্দ্রনাথ সবাইকে ভিড় করতে বারণ করছে। তরমুজের লতাটা কেউ ভালোভাবে দেখল না। একটা বিষাদ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে আছে। কেউ এ-নিয়ে কিছু বলছে না। সে লতাটা ফেলে দিতেও পারছিল না। সে কী যে করে তখন—সে ভাবল যেখানে নদীতে চর জেগে উঠেছে, এবং উড়াট জমি, কিছুই ফলছে না, বালি জমিতে কোনও চাষাবাদ হয় না, সেখানে এই লতা রোপণ করে রাখলে হয়। যদি ক্ষিরাই হয়, তবে মাস না ঘুরতেই ফুল ফুটবে। হেমন্তকালেই লতা লাগানো হয়। সে বড় নৌকার মাঝি, এবং দায়ে-অদায়ে সে বাড়ির মানুষের শামিল, তার কিছুতেই লতাটা ফেলে দিতে ইচ্ছা করল না। সে নদীর চরে নেমে খুব যত্ন করে লতাটা রোপণ করল। চারপাশে মাদারের ডাল দিয়ে বেড়া দিল। এবং প্রতি সন্ধ্যায় সে গিয়ে দেখতে পেত, গাছটা ক্রমে বড় হচ্ছে—কী গাছ অর্থাৎ কী লতা এটা, কী ফল দেয়, কোন মাসে ফল ধরে, নাকি কোন বন্য লতা, এসব দেখার এক অতীব বাসনা ঈশমের। সে গয়না নৌকা নিয়ে এলেই, ফাওসার খালে গেরাফি ফেলে উঠে আসত। সে বিবির কাছে প্রথম উঠে স্থা গিয়ে এই গাছটার পাশে দাঁড়াত। বড় বেশি সজীব এই গাছ। সে একদিন দেখল কী সুন্দর লতা ছড়িয়ে চারপাশে। সে একদিন এসে দেখেছিল গাছটায় পাগল ঠাকুর নদী থেকে জল এনে দিচ্ছে। এবং হলুদ রঙের ফুল ফুটলে সে দেখল গোড়ায় তার কালো রঙের ফল। কুমড়ো নয়তো আবার। না তা হবে কেন। সে সব জানে, গাছ চেনে, শুধু এ গাছটা চেনে না। বিবি তার মাঝে-মাঝে বিরক্ত হতো। কী এত আকর্ষণ সেই গাছে! সারাক্ষণ একটা লতা নিয়ে উড়াট জমিতে সে ডুবে আছে!

    আর কিনা সেই বৎসরই দুটো বড় তরমুজ হল। তরমুজের লতা তবে এটা। ভিতরটা কী লাল। যেন চিনির রসে ভেসে যাচ্ছে ভিতরে। সে তরমুজ তুলে সব লতা কেটে-কেটে জাগ দিয়ে রাখল। এবং যখন গয়না নৌকার কাজ বন্ধ হয়ে গেল, দুই গরু নিয়ে সে হাল চাষে নেমে পড়ল। বুড়োকর্তা বললেন, তুই কী পাগল! ও জমিতে কিছু হয় না। উড়াট জমি। তর এই প্রাণপাতে কী কাজ! বলে তিনি বুঝি বুঝতে পেরেছিলেন, অভাব-অনটনে ঈশম এবার কাজ চায়। বয়স হয়ে যাচ্ছে। আর মুরদ নাই শরীরে গয়না নৌকার দাঁড় বাইবার। সে এবার কাছে-পিঠে বিবির কাছে থাকার জন্য একটা কাজ চায়।

    তিনি বললেন, তুই তবে বাড়িতে থাক। কাজ-কাম কর। তর বৌটার অসুখ। তারিণী কবিরাজের কাছ থাইকা অষুধ নিয়া আয়।

    সেই থেকে সে বুঝি থেকে গিয়েছিল। না, ঠিক সেই থেকে নয়। ওঁরা যা বুঝেছিলেন তা নয়। জমি বন্ধ্যা, চাষ-বাস হবে না, এমন নদীর পাড়ের জমি, জমিতে তরমুজ ফলবে, জমিতে সব ফসল হয় না—যার যা, তার তা। আসলে সে প্রাণপাত করে এই মাটির সঙ্গে প্রায় সেদিন লড়াইয়ে নেমেছিল।

    সেই এক লড়াই। মাটির সঙ্গে মানুষের লড়াই। পুরকালে যেমন মানুষ আগুন জ্বালতে জানত না, পশুপাখি মেরে কাঁচা খেত, ফলমূল আহার করত, ঈশমের মুখ দেখলে তখন এমনই মনে হতো। সবাই কী হাসাহাসি করত ঈশমকে নিয়ে। সবাই বলত, ঈশমটাও পাগল হয়ে গেছে। দু’তিন বিঘার মতো শুধু বালির চর। এ-অঞ্চলে এমন জমিতে কে আবার চাষাবাদ করে! কিন্তু ঈশম সূর্যের মতো লাল রঙ নিয়ে এল মাঠে। চৈত্র মাসে মানুষের চোখে বিস্ময়। ঈশম নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে খেতের তরমুজ কেটে খাওয়াচ্ছে। ভিতরটা তরমুজের কী লাল! কী লাল! সে সবাইকে বলত, ক্যামন লাগে? মিসরির শরবত কইরা দিছি। চৈত মাসের আগুন জ্বলছে চারপাশে। খরা দাবদাহে সূর্য পর্যন্ত আকাশ ছেড়ে পালাচ্ছে আর তখন কিনা ঈশম বলছে, কি লাল দ্যাখেন ভিতরটা। খান। য্যান মিসরির দানা।

    সেই ঈশম এখন কাশছে। সে তরমুজের সব লতার ভিতর থেকে দেখতে পাচ্ছে—ওরা নদীর পাড়ে-পাড়ে এবং তরমুজ খেতের ভিতর হাঁটাহাঁটি করছে। কখনও ছুটছে স্ত্রীলোকটি। পুরুষটি পিছনে তাড়া করছে। কখনও ওরা চুপচাপ একটা তরমুজের ওপর পাশাপাশি বসে থাকছে। কিছু বলছে না। আকাশে কি সব দেখছে। আবার কখনও ধীরে-ধীরে ওরা ঘন হচ্ছে, সংলগ্ন হয়ে আলিঙ্গনে দীর্ঘ সময় আবদ্ধ থাকছে। ঈশম নিজেকে বলল, হ্যাঁ, মনুষ্যকুলের তুমি, দেব-দেবীর সুধা পান কর।

    সে ভেবেছিল কিছু দেখবে না। কিন্তু এমন খেলা না দেখে থাকা যায়! নতুন কিংবদন্তী ফের ধর্মের মতো একদিন ঢাক-ঢোল বাজাবে! এই নদীর চরে, তরমুজ খেতে মনুষ্যকুলের কেউ হবে। ইহলীলা সাঙ্গ হলে ওরা সবাই আবার নেমে আসে। পৃথিবীর যাবতীয় সুন্দর দৃশ্য এখন এই জমিতে। সে কিছুতেই কাশছে না। দম বন্ধ করে পড়ে আছে। এখানে একজন মনুষ্য জাগে, টের পেলেই ওরা অনন্তৰ্ধান করবে।

    আহা, কী সুন্দর সুদৃশ্য এই জগৎ! পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কী সুখ! অনন্তকাল এই পৃথিবী এবং সৌরজগৎ আপন মহিমায় আবর্তন করছে। মানুষ কীট-পতঙ্গ পশু-পাখি দলে-দলে মিছিলের মতো, ঘুরছে-ফিরছে। হাজার লক্ষ অথবা কোটি-কোটি বছর ধরে ঘুরছে-ফিরছে। এই যে এক তরমুজের জমি, এখানে এবার নেমে এস তোমরা। এলেই দেখতে পাবে—প্রায় সাদা মোমের মতো এক নারী-মূর্তি, এবং হাতির মতো শক্ত অবয়বে এক পুরুষের আশ্চর্য লীলা। কেউ টের পেল না। একমাত্র ঈশম চুরি করে সব দেখে ফেলেছে। সে বলল, আমি ঈশম, বড় ভাগ্যবান মানুষ। যেন বলার ইচ্ছা, আমার আর কষ্ট কী! আমার জমিতে জিন ফেরেস্তার আবাস। সুখের আমার অন্ত নাই।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ঘরবাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }