Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নীল পাহাড় – ওবায়েদ হক

    ওবায়েদ হক এক পাতা গল্প166 Mins Read0

    নীল পাহাড় – ৭

    সাত

    বিলাপ স্বল্পস্থায়ী কিন্তু কান্না দীর্ঘস্থায়ী। বলিপাড়ার মারমা পাড়ায় এখন আর বিলাপ শোনা যায় না, মাঝে মাঝে কেউ কেউ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠ শুধু। কালো ছাই রং পোড়া বাড়ির মেরামতে লেগে গেছে সবাই। অনেকে ঘরের ছাই ফেলে রেখে, জমি-জিরাত ছেড়ে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। বাঙালি সুদের কারবারিদের উদ্ভব ঘটেছে। এরা শকুনের মতো লাশের গন্ধ পেয়ে ঠিক চলে এসেছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঘর তুলছে পাহাড়িরা, জুমের ফসলের পুরোটাই বেচতে হবে আগামীবার, জুমও আগের মতো করা যায় না, বন কর্মকর্তা এসে বাগড়া দেয়, ফসল নষ্ট করে দিয়ে যায়। সব জুম মহাজন নিলে তারা কী খাবে তবে তা নিয়ে চিন্তা করে কিন্তু উপায় খুঁজে পায় না। উপায় একটা আছে অবশ্য, যারা ভিট ছেড়ে চলে যায়, তারা যোগ দেয় জেএসএস, ইউপিডিএফ অথবা গহিন জঙ্গলের কোনো সংগঠনে। সেখানে খাওয়া পরার কোনো কমতি নেই, শুধু প্রাণের মায়া ত্যাগ করতে হবে, তবুও ভালো, প্রাণ যে এখানে খুব একটা নিরাপদ তাও নয়। অন্তত বউ-মেয়েকে কেউ অত্যাচার করে মেরে ফেলবে না, থান কাপড় নিয়ে তাদের লাশ খুঁজতে হবে না।

    রং ফিরতে থাকে ধীরে ধীরে মারমা পাড়ায়, ছোপ ছোপ কালো রং কিছু রয়ে যায়, যারা আসলে চলে গিয়েছে তাদের হিসাবটা যেন এই কালো পোড়া বাড়িগুলো দেখেই বের করা যায়। বাকি ঘরগুলো কাঁচা-পাকা বাঁশ আর খড়ের বাদামি রঙে ছেয়ে যায়। তার মাঝেই হঠাৎ হঠাৎ দুই-একটা কান্না ভেসে আসে। গত বর্ষার আগে বুড়ো চিংমাই ছেলেকে সাথে নিয়ে ঘর মেরামত করেছে, এই বছর ছেলের বিয়ে দিবে ঠিক করেছিল। ছেলে ছন, বাঁশ এগিয়ে দিত, চিংমাই তা দিয়ে নিজের ঘর আরো পোক্ত করত। এখন আবার ঘর বাঁধছে সে, মাঝে মাঝেই মনের ভুলে ছেলের নাম ধরে ডাকে, হাত পাতে ছনের জন্য। তারপর ডুকরে কেঁদে ওঠে।

    এত শোকের মাঝে ক্রাসিমার কথা কালেভদ্রে মনে আসে মানুষের। ক্রাসিমার বাবাও মৃতদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল, এই নিরীহ বাবাকেও অনুকম্পা করেনি ঘৃণায় মত্ত হিংস্র মানুষগুলো। প্রাণ যাওয়া পর্যন্ত তার ক্রাসিকে ডেকেছে। কেউ কিছু বলে না কিন্তু মনে মনে সবাই ক্রাসির একটাই পরিণতি ভেবে রেখেছে। সে ভাবনা কেউ প্রকাশ করে না, আবার যদি দুমুর্খের অপবাদ দেয় কেউ। কিন্তু মানিক ভুলতে পারে না, পাহাড়ের সেই ঝোপটার কাছে গিয়ে বসে থাকে। নিজেকেই দোষারোপ করে সে। তার মনে দাগ কেটে যায় অপরাধবোধ, নাকি সেই ঘৃণা ভরা দৃষ্টি, সে বুঝতে পারে না। শুধু জানে ক্রাসিমা নামক মেয়েটা তাকে একটা অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছে, সেই অস্তির কারণ অনুসন্ধান করে খুঁজে পায় না সে।

    দুর্যোগ বিপদে দেবতাদের সমাদর বেড়ে যায়। দেবতাকে তুষ্ট করতে ভোগ চড়ানো হয়, দেবতার তাতে মনঃপূর্তি হয় কিনা না জানা গেলেও পুরোহিত মশাইয়ের উদরপূর্তি ঠিকই হয়। ক্রাসিমার হারিয়ে যাওয়াতে দেবতারাও হয়তো তুষ্ট হবেন, তাদের ভাগের পূজার ফুল তারা আবার অধিকার করে নিয়েছেন। মারমারা নিজেদের দায়ভার, দায়িত্ব সব দেবতার উপরে চাপিয়ে একটু নির্ভার হলো। কান্নার পাশাপাশি মাঝে মাঝেই হাসি শোনা যায় মারমা পাড়ায়। হেসেই যেন অনুশোচনায় ভোগে, অনুশোচনা ভুলে আবার হয়তো হাসে।

    এভাবেই ক্ষত শুকাতে থাকে কিন্তু ঘৃণা শুকায় না, তা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে বহুগুণে।

    আশেপাশে ফিসফাস শব্দগুলো বিগত দুর্যোগের কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত, আর আসন্ন দুর্যোগের ভবিষ্যদ্বণীও হয় ফিসফাস গলায়। বরকত আলীকে শান্তি বাহিনী মেরেছে কথাটা খুব বাতাস লেগেছে। শফিক সাহেব ফিরে এসেছেন কিন্তু তিনি কোনো কেইস করেননি। থানার দারোগার সাথে তার দহরম-মহরম। বিডিআর, আর্মিতেও বেশ জানাশোনা। কিন্তু তিনি নির্বিকার, তিনি বলেন, ‘যার কর্ম তার ফল’ মানিক সেই ফিসফাসগুলো এড়িয়ে চলে। পাহাড়কে সে মনে ধারণ করেছে, এখানে কূটচালের গন্ধ খুঁজতে তার ভালো লাগে না। এই নির্মল এলোমেলো বয়ে চলা বাতাসে সে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায় না, বরং গহিন পাহাড় থেকে আসা কোনো এক বুনো ফুলের সুবাস পায় সে। ঝরনা দিয়ে বয়ে চলা টলটলে পানিতে কোনো কলুষতা নেই, পাহাড়ি শিশুদের গা ভিজিয়ে তারা বয়ে যায় আপন মনে। পাহাড়ের বুকে জুম ফলে, মাতৃদুগ্ধ স্তনের মতো বুক চিরে খাওয়ায় সে। কিন্তু কতজন হতে পারে পাহাড়ের সন্তান। যাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে তারাই ছিড়ে-ফেঁড়ে খাচ্ছে পাহাড়কে।

    মানিক যেন নিজের পরিচয় খুঁজে পায়, এই পাহাড়ে সবচেয়ে বড় পরিচয়, পাহাড়ের সন্তান। কিন্তু মানিকের অন্য বাস্তব জীবন মানিককে এত সহজে ছেড়ে দেয়নি। তাকে টেনেহিচড়ে নিয়ে গেছে সেখানে, যেখান থেকে সে শুরু করেছিল। নতুন পাতানো পরিচয়ের আত্মতৃপ্তি মুছে দিয়েছিল এক লহমায়, একটিমাত্র চিঠিতে।

    হাশেমের হাতে চিঠিটি, মানিককে এগিয়ে দিল। কার্তিক কি আবার চিঠি লিখল, ভাবতে ভাবতেই চিঠিতে প্রেরকের নামটি দেখে একটু আশ্বস্ত হলো, চন্দনবাবু চিঠি পাঠিয়েছেন। আশ্রমে বোধ হয় কিছু প্রয়োজন। কেউ মানিককে প্রয়োজনে স্মরণ করলে তার ভালো লাগে কারণ প্রয়োজনে প্রিয়জনদের কথাই মানুষ মনে করে। ভাতের আঠা দিয়ে মুখ বন্ধ করা খামটির। মানিক একপাশটা যত্ন করে ছিঁড়ল। চন্দনবাবুর লেখা অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, গুটি গুটি অক্ষরে চিঠিটি নিতান্ত আনমনে পড়া শুরু করল সে। কিন্তু একটু পড়তেই অক্ষরগুলো একটার সাথে সাথে আরেকটা মিলে মানিকের চোখে যেন ঝড় তুলে দিয়েছিল। ছিন্নভিন্ন পালের জাহাজের মতো উদ্ভ্রান্ত হয়ে সে পড়তে লাগল। বারবার ঝাপসা হয়ে যাওয়া চিঠিটি পড়তে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল, হাত দিয়ে চোখ মুছে পড়তে লাগল সে। শেকড় সন্ধানী মানিক আজ যেন অকাতরে নিজের অনুসন্ধিৎসু মনটাকেই দোষ দিচ্ছিল। সে মিথ্যায় বেঁচে ছিল, তাই বেশ ছিল। চিঠিটি আবার পড়ল, আবার এবং আবার। বারবার পড়েও কোনো পরিবর্তন এলো না অক্ষরগুলোতে।

    জ্বলজ্বল করতে লাগল তার চোখের সামনে। চিঠিটি ও তন্ন করে খুঁজে শুধু বেদনা খুঁড়েছে মানিক, কিন্তু বেদনা খুঁড়ে একটা রত্নও পেয়েছে, মা পেয়েছে। কালো বর্ণের মা নয়, কার্তিকের কখনো না-ফেরা মা নয়, জড় মাটির পাহাড় মাও নয়, আসল মা। যতবার পড়ছে, সেই রত্ন যেন ততই পরিশোধিত হয়ে আরো মহিমান্বিত হয়েছে।

    মনে গড়ে ওঠা পাহাড়ি আবেগ যেন ফুঁৎকরেই উবে গেল। স্বার্থপরের মতো সব ভুলে গেল মানিক, কোনো বৃদ্ধার হা-হুতাশ, বাচ্চার কান্না, সহজ-সরল মানুষদের কষ্ট এখন তাকে স্পর্শ করছে না। সিভিল সার্জনের কাছে ছুটির দরখাস্ত লিখে হাশেমের হাতে দিয়ে ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল মানিক। দরখাস্ত না লিখলেও কোনো ক্ষতি ছিল না, এই জঙ্গলে ডাক্তার থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক, দরখাস্ত একটা কৌতুকই হবে বটে। বুক পকেটে বারবার হাতিয়ে চিঠির সুরক্ষা নিশ্চিত করছে মানিক। হাশেমকে থানচি পাঠিয়ে সে হাঁটতে লাগল পাহাড়ি রাস্তায়, এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে পারছে না সে, বাস দেখলে উঠে পড়বে কিন্তু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার মতো ধৈৰ্য্য তার নেই এখন।

    দূর থেকে কে যেন ডাকছে, ‘ডাক্তার বাবু, ও ডাক্তার বাবু’। দৌড়ে কাছে আসল এক পাহাড়ি। তাঁতে তৈরি চেক লুঙ্গি পরা, গায়ে শার্ট এবং অবধারিতভরে শার্টের বোতাম খোলা, মানিক তাকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। কাছে এসে বলল—

    আপনারে খুছলাম (খুঁজলাম) বাড়িতে, আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন? যাক ভালো হইল আপনেরে পাইলাম, নাইলে সর্বনাশ হইত।

    মানিক না থেমেই বলল, এখন কোথাও যেতে পারব না, আমাকে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে।

    লোকটা বলল, আমি আপনেরে পৌঁছায় দিব। সামনে রাস্তার মোড়েই আমার ঘর, বাস আইতে আইতে এট্টু দেইখা যান, একটা রোগী আছে।

    মানিক না করতে পারল না, নিতান্ত অনিচ্ছায় বলল—

    ঠিক আছে চলো।

    কিছুক্ষণ পরেই তারা রাস্তার মোড়ে চলে এলো, কিন্তু সেখানে কোনো ঘরবাড়ির কিংবা জনবসতির চিহ্নমাত্র নেই। শুধুই পাহাড়, আর রাস্তার পাশে অন্ধকারের মতো ঘন বৃক্ষ, গুল্মের সারি। পিচঢালা রাস্তাটির পাশে জঙ্গলের দিকেও একটি ছোট প্রায় ম্রিয়মাণ রাস্তা আছে। খুব ভালোভাবে না তাকালে সে রাস্তা নজরে পড়ে না। লোকটি মানিককে জঙ্গলের সেই সরু রাস্তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল—

    বাবু জঙ্গলেই আমার ঘর, দয়া করো বাবু। খুব বেশিক্ষণ লাগব না।

    অনুনয়টা মানিক এড়াতে পারল না, কিন্তু সে বান্দরবানের বাসটিও মিস করতে চায় না। সে লোকটিকে বলল—

    দুই মিনিট হাঁটব, এর মধ্যে যদি তোমার ঘরে না পৌঁছাই, তবে আমি ফিরে আসব।

    লোকটি মাথা নত করে সম্মত হলো। ছোট ছোট লতানো গাছগুলোর দৌরাত্ব যেন বেড়ে চলছে। পায়ে জড়িয়ে ধরছে, সূর্যের আলোর ফুসকুড়ির মতো সবুজ বনে কোনোমতে প্রবেশ করেছে। যত ভেতরে ঢুকছে এই ফুসকুড়ির পরিমাণ যেন কমছে সাথে আদিম আঁধার যেন জাঁকিয়ে বসছে। মানিক থামল, লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল—

    আর যাব না, ক্ষমা করো। আমাকে ঢাকা যেতে হবে, আমি বাসটা মিস করতে চাই না।

    লোকটি কিছু বলল না কিন্তু মুখে যেন একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ল। মানিকের দিকে তাকিয়ে বলল—

    বাবু যাইতে তো হইবই। চলেন।

    লোকটার মধ্যে রহস্যজনকভাবে এরই মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। লোকটাকে মোটেই সহজ-সরল মনে হচ্ছে না এখন। তার চোখের তারায় কোনো দুরভিসন্ধি চিকচিক করছে। মানিক ঘুরে দাঁড়াল, পেশিগুলো শক্ত করে আছে, দৌড় দিবে মনস্থির করল।

    মানিক উল্টো ঘুরে পা চালানো মাত্রই হঠাৎ বড় গর্জন গাছের আড়াল থেকে কিছু একটা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। পাঁজরের কাছে প্রচণ্ড ধাক্কায় শুকনো পাতার বিছানায় ধসে পড়ল সে। কিছুক্ষণ যেন সবকিছু অন্ধকার দেখল। আকস্মিক আক্রমণে মানিক হকচকিয়ে গেল, চিৎকার করতে পারছে না, নড়াচড়াও করতে পারছে না। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ তার মুখটা কালো কাপড়ে ঢেকে দিল। অচিরেই সে আবিষ্কার করল তার হাত দুটি বাঁধা।

    দুই পাশে দু’জন ধরে তাকে দাঁড় করাল। পাহাড়ে বালি জমে অনেক সময় বিশাল শিলা তৈরি হয়, সেগুলো খুব শক্ত থাকে, অনেকে এই শিলাগুলোকে অসুরের হাড় বলে। মানিকের বাহু ধরা দুটি হাত যেন সেই অসুরের হাড়ের মতো শক্ত। ব্যথায় মানিকের মুখটা কুঁচকে গেল কিন্তু কাপড়ে ঢাকা থাকার কারণে অসুররা তা বুঝতে পারল না। আরেকটি নতুন কণ্ঠ শুনতে পেল মানিক।

    ডাক্তার বাবু আপনেরে আমরা মারব না, যতক্ষণ আপনি আমাদের কথা শুনবেন।

    মানিক নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলল—

    আপনারা কারা? দেখুন আমাকে ঢাকা যেতে হবে, এক্ষুনি যেতে হবে। নাতো আপনারা যেখানেই বলতেন আমি যেতাম।

    লোকটা গলায় উদাসীনতা ফুটিয়ে বলল—

    ঢাকায় যাইবেন, যেইখানে ইচ্ছা সেইখানে যাইবেন। কিন্তু এখন আমাদের সাথে যাইবেন। কোনো প্রশ্ন না করে শুধু হাঁটবেন! হাঁটতে না পারলে বলবেন, আপনাকে ঘাড়ে করে নিয়া যাব।

    মানিক অস্থিরভাবে বলল—

    আপনারা বুঝতে পারছেন না, আমাকে যেতেই হবে। প্লিজ। আমি ফিরে আসার যেখানে বলবেন সেখানে যাব, কথা দিলাম।

    সেই লোকটি এবার গম্ভীরভাব বলল—

    আর কোনো কথা না, চলেন।

    মানিকের পাশে দুজন হাঁটতে শুরু করল, সে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না, দুজন অসুর তাকে প্রায় টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর মানিক নিজেই হাঁটতে শুরু করল, কিন্তু অসুরের দুটি হাত তাকে মুক্তি দিল না। কেউ কোনো কথা বলছে না। শুকনো পাতা পা দিয়ে মাড়িয়ে চলার শব্দ হচ্ছে শুধু। একটু পরে পাতা মাড়ানোর শব্দটা নিস্তেজ হয়ে গেল, পায়ের নিচে এখন সজীব ঘাস অথবা ছোটখাট বীরুৎ। শ্বাস ধরে এলে সে বুঝতে পারে পাহাড় ডিঙ্গাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু অজানা ডাক কানে আসে। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাক বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে, সাথে মশাদের গুনগুনও। সব ছাপিয়ে হঠাৎ কিসের কোলাহলের শব্দ যেন দূর থেকে ভেসে কানে লাগছে। কোলাহলটা একসময় গর্জনে রূপ নেয়। এই গর্জন কোনো মানুষের কিংবা কোনো জন্তুর নয়।

    পাহাড়ের গর্জন। মানিক বুঝতে পারে কাছে কোথাও পাহাড় চিরে ঝরনা বইছে। এতক্ষণ পরে মানিকের ডান পাশের অসুরটি কথা বলে ওঠ। কাকে যেন লক্ষ করে বলে,

    একটা পনাম কইয়া আসি দেবতারে। কত দিন দেখি না। আগে পত্যেক দিন পনাম করতে আসতাম।

    দেবতাদের বিচরণ আসলেই সর্বত্র। জনমানবহীন এই স্থানেও তারা আসন পেতেছে। একটু আগে কথা বলা লোকটির গলা আবার শুনতে পেল মানিক। সে সম্ভবত তাদের দলপতি। বলল—

    না এখন সময় নাই, খায়াচিং তুই আর ঝামেলা করিছ না।

    লোকটি অনুনয় করে বলল—

    তোমর আগাও না মংতোদা, আমি একটা পনাম কইরা চলি আছবো। তোমার ধরতে বেশি সময় লাগব না।

    লোকটি আর কিছু বলল না, মানিকের একটি বাহু মুক্তি পেল। তারা আবার হাঁটতে শুরু করল। ঝরনার গর্জন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছে। মানিক বুঝতে পারল তারা চারজন আছে, এদের মধ্যে তিনজনের কথা শুনেছে, আরেকজন যে তার বাম বাহুটি ধরে রেখছে সে একেবারে চুপ। একটি কথাও বলেনি সে। তিনজনের মধ্যে দুইজনই সম্ভবত বিতাড়িত পাহাড়ি। গহিন বনের পাহাড়িরা কখনো নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলে না।

    কয়েকটা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আর বেশ খানিকটা জঙ্গলি পথ হেঁটে মানিক আর চলতে পারছে না, এলিয়ে পড়েছে নিশ্চুপ অসুরটার উপর। ঝরনার শব্দ অনেক আগেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। মশাদের গুনগুন আর ঝিঁঝিঁ পোকাদের চিৎকারের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের শব্দ পাওয়া যায়, কিছু আর্তনাদ, কিছু হুংকার। তাদের গতিও কমে এলো, সম্ভবত খায়াচিং-এর জন্য। প্রথম কথা বলা লোকটি, নিজের উষ্মা জাহির করল, মারমা ভাষায় কথা বলল লোকটি, তাই মানিক কিছুই বুঝতে পারল না। কিন্তু এতটুকু বুঝা যাচ্ছে, খায়াচিং-এর দল থেকে আলাদা হওয়া সে পছন্দ করছে না। তারা একসময় থামল, মানিককে বসতে দেয়া হলো। মানিক ক্লান্ত কণ্ঠে বলল—

    হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটতে খুব কষ্ট হয়, মুখে কাপড় থাকলে নিঃশাস নেয়া যায় না। আমি তো পালাতে পারব না, পালিয়ে যাবই বা কোথায়। একটু এগুলো খুলে দিন।

    দলপতি মংতো কিছুক্ষণ চুপ মুরে রইল, তারপর আবার সেই লোকটির সাথে কথা বলতে লাগল। লোকটির নাম সম্ভবত আংসাই। আংসাই একটু বাক-বিতন্ডা করে রাজি হলো। মানিকের হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হলো, নিজের হাত দুটিকে ইচ্ছামতো নড়াচড়ার মতো খুশির যেন আর কিছু নেই। মানিক নিজেই মুখে কালো কাপড়টি সরিয়ে নিল। আগুন জ্বালানো হয়েছে, সেই আগুনের আলোই যেন তার চোখে বজ্রপাত করল। ধীরে ধীরে সয়ে এলো আলোটা। চারপাশে ঘন জঙ্গল। এখানে কিছু জায়গা কেটে বসার জায়গা করেছে তারা। মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে তাতে রান্না হচ্ছে সম্ভবত। মানিকের পেট মোচড় দিয়ে উঠল, ক্ষুধাটা অনুভব করেনি এতক্ষণ। সে অবাক হয়ে লক্ষ করল, যাকে সে অসুর ভেবেছিল সে তো একেবারে লিকলিকে একটা ছেলে। এই লিকলিকে ছেলেটির গায়ে এত শক্তি! শার্ট পরা লোকটি, শার্ট খুলে ফেলেছে, তাকে দেখতে একেবারে কৃষকদের মতো লাগছে। এখানে সবার মধ্যে সেই সম্ভবত বয়সে বড়। তাদের সবার মধ্যে মতো একেবারে পরিপাটি। সে একটা চাদর সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে রেখেছে।

    রান্নাটা সে নিজেই করছে। তার চেহারার মধ্যেই একটা গম্ভীর ভাব আছে, বুঝা যায় সে কৃষক শ্রেণির নয়। তাকে দেখেই বলে দেয়া যায়, এই দলের নেতা সে।

    সবার মুখে আগুনের আভা পড়েছে, মানিক ছাড়া কারো মুখে ক্লান্তির চিহ্নমাত্র নেই; মানিক না থাকলে কিংবা খায়াচিং দেবতা দর্শনে না গেলে হয়তো তারা এখানে থামতও না। তাদের সাথে অনেকগুলো বস্তার মতো পুঁটলি, সেগুলো বহন করার পরও ক্লান্তি তাদের গ্রাস করতে পারেনি। একটা পুঁটলি খুলে সেখান থেকে চাল বের করল মংতো। একটা বাঁশের কঞ্চির উপর ফুটো করে চালগুলো ঢেলে দিল সাথে একটু ডাল, একটা শুঁটকি একটা লঙ্কা আর পানি দিল। তারপর বাঁশের পাতা গুঁজে মুখটা বন্ধ করে দিল। এরকম পাঁচটা তৈরি করল। আংসাই আগুনটাকে একটু উসকে দিল, আগুনের কয়লায় বাঁশের কঞ্চিগুলো ছেড়ে দেয়া হলো। মংতো কিছুক্ষণ পরপর কঞ্চিগুলো নাড়িয়ে দিচ্ছিল আর চোখ রাখছিল জঙ্গলে। খায়াচিং-এর জন্য চিন্তাটা মনে হয় বাড়ছে তার। মশাদের রাজত্ব এই জঙ্গলে। সারাক্ষণ হাত নেড়েও মশাদের নিবৃত্ত করতে পারছে না মানিক; গাছের পাতা দিয়ে সবাইকে একটা ঝাড়ুর মতো বানিয়ে দিল লিকলিকে অসুরটি। গরুর লেজের মতো সবাই ব্যবহার করছে তা। কিন্তু মশাদের উৎপাত বন্ধ হচ্ছে না। বাঘ-সিংহের চেয়ে ভয়ানক মনে হচ্ছিল মশাগুলোকে। হঠাৎ খসখস শব্দ শুনে সবাই সচকিত হলো, আংসাই পুটলি থেকে একটা লম্বা ছোরা বের করে ফেলেছে, নিরাপত্তার জন্য নয় শিকার করার জন্য, তার মুখটা পুলকিত হলো কিন্তু শব্দটা কাছে আসতেই সে ছোরাটা তার পুটলিতে ঢুকিয়ে ফেলল। হতাশ হয়ে মংতোর দিকে তাকিয়ে বলল—

    খায়াচিং।

    মংতো আশ্বস্ত হতে পারল না, সে নিজের ছোরাটা তাক করে ধরে থাকল। একটু পরে আসলেই গাছের আড়ালে মানুষের ছায়া দেখা গেল। খায়াচিং-এর এক হাতে ঘাসের বোঝা অন্য হাতে বাসের ডগায় বাঁধা অনেকগুলো মাছ। সে মাছগুলো উঁচিয়ে সবাইকে দেখিয়ে বলল—

    দেবতার প্রসাদ। বিষালি গাছের বিষ দিয়া ধরচি।

    এতক্ষণে বুঝা গেল তার দেবতাভক্তির মাহাত্ম। বাঁশের কঞ্চি থেকে ফটফট শব্দ বেরুতে শুরু করেছে ততক্ষণে। আগুন থেকে তুলে নিয়ে ঠাণ্ডা করার পর উপরের দিকটা কেটে গর্জন পাতায় ঢালা হলো। একটি পাতা মানিকের দিকে এগিয়ে দেয়া হলো, দিয়েই পূৰ্বাভিজ্ঞতায় সবাই একটু দূরে সরে গেল। মানিক চার আঙুলে কয়েকটি ভাত কিংবা খিচুড়ি মুখে পুরে দিল। সাথে সাথেই ভেতর থেকে সব ঠেলে বেরিয়ে এলো। সে জন্যই সবাই একটু দূরে সরে গিয়েছিল। এই খাবার খেয়ে প্রথম বার কোনো বাঙালি বমি করে নাই সে ইতিহাস নেই। মানিক তাকিয়ে দেখল, সবাই একপলক তার দিকে তাকিয়ে হেসে গোগ্রাসে গিলছে এই অখাদ্য। তাদের খাওয়া দেখেই সাহস করে আবার দুটো মুখে দিল। অনেক কষ্টে পেটে চালান করল। তারপর আরো দুটো, খেতে আর কষ্ট হচ্ছে না, বরং ভালো লাগছে। একসময় দেখল সব শেষ। গাটা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মশাদের জন্য বসে থাকাও দায়। খায়াচিং তার হাতের ঘাসগুলো চিপে রস বের করে নিল। নারকেলের বাটিতে ঢেলে এগিয়ে দিল মানিকের দিকে।

    নেন ডাক্তার বাবু, গায়ে মাইখা নেন। মশা কিছু করতে পারব না।

    সবাইকে অনুকরণ করে মানিক সবুজ রসটা হাতে, পায়ে, মুখে মেখে নিল, গন্ধটাও বেশ সুন্দর, বাতাবী লেবুর গন্ধ। আসলেই মশারা আর কিছু করতে পারেনি। নীল প্লাস্টিকের একটা ঝিল্লি বের করল লিকলিকে ছেলেটি, সেটা বিছিয়ে দিল আগুনের কাছে।

    মানিককে ইশারায় শুয়ে পড়তে বলল। মানিক জিজ্ঞাসা করল,

    তোমার নাম কী?

    ছেলেটা নিজের জন্য বিছানা তৈরি করছে, মানিকের প্রশ্ন যেন শুনতেই পায়নি। এই অগ্রাহ্যে মানিক মনে একটু ব্যথা পেল। আংসাই জেগে রইল পাহারা দেয়ার জন্য। পালা করে পাহারা দিবে তিনজন।

    কাঠের আগুন এই দমে আসতেই যেন আদিম আঁধার আরো জেঁকে বসল। মানিকের কাছে পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছে, দুঃস্বপ্ন কি না তা বুঝতে পারছে না। আমাবস্যার ঘন কালো অন্ধকার গাছের ডগাতে কালি মেখে দিয়েছে, আকাশটা দেখা যাচ্ছে না, পাতার আড়ালে দুই-একটা তারা মাঝে মাঝে জ্বলজ্বল হয়ে উঠছে। আগুনটা আরো একটু ঝিমিয়ে পড়ামাত্রই যেন আকাশের সব তারা পাতা ভেদ করে নেমে এলো, পাতায় পাতায় নাচছে, জ্বলছে-নিভছে। কয়েকট তারা ভেসে মানিকের মাথার উপর চলে এলো, কাছে আসতেই সে বুঝল, সবগুলো জোনাকি পোকা। অমাবস্যা রাতেও জোছনার হাট বসিয়েছে। এই হাটে মানিকের থাকার কথা ছিল না, অন্তত আজ নয়, আগামীকালও নয়। হয়তো অন্য কোনোদিন সে এই হাটের খদ্দের হতে পারত। মুঠা ভরে জোছনা ওড়াত।

    বুক পকেটে হাত দিয়ে চোখ মুদল সে।

    ভোরবেলায় খায়াচিং-এর ডাকে ঘুম ভাঙল মানিকের। কিন্তু ঘুম ভেঙেই বুঝতে পাৱল সারা গায়ে ব্যথা। সূর্যের আলো সবে বন রাঙাতে আরম্ভ করেছে। রাতে বনটা যত ঘন মনে হচ্ছিল এখন তত ঘন মনে হচ্ছে না। আগুন জ্বালানো হয়েছে আবার কিন্তু এখন সেই লাল আভাটা নেই, শুধু ধোয়া দেখা যায়। আগুনের উপর পাতলা পাথরের চাঙার রেখে তাতে মাছ সিদ্ধ করা হচ্ছে লবণ দিয়ে। আংসাই বন থেকে পাহাড়ি পেঁপে নিয়ে আসল। মানিক খায়াচিং-এর দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিতে বলল—

    আমাকে যেতে হবে।

    বাবু আপনে কাইল থেকে এই কথাই কচ্ছেন। আপনার জানের ভয় কইরেন না, আমাদের হুকুম হইল, আপনারে যাতে সমাদর কইরা নিয়া যাই, আবার আপনেরে আমরা কান্ধে কইরা দিয়া যাব।

    না না, সেই যাওয়া নয়। সকালে সবাই যে যায়।

    ও আচ্ছা। বাইরে যাবেন?

    মানিক মনে মনে বলল—

    এখন কোন ভেতরে আছি, তবুও সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। খায়াচিং মানিকের হাতে তিনটি কচি পাতা ধরিয়ে দেয়। লিকলিকে ছেলেটিকে ইশারায় মানিকের সাথে যেতে বলে। কিছু দূর হাঁটার পর একটা অশ্বথ গাছের নিচে বেশ বড় ঝোপ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছেলেটা। মানিক ছেলেটিকে বলে—

    তুমি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াও। ছেলেটি নির্বিকার। সে দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে চায় না। মানিক একটু ক্ষুব্ধ হয়েই ছেলেটিকে বলল—

    তুমি যদি দেখবেই তাহলে এত দূর হেঁটে ঝোপের আড়ালে আসার কী দরকার ছিল?

    ছেলেটি মনে হয় রাগটা একটু বুঝতে পারল, পেছনে সরে দাঁড়াল। মানিকের খুব অস্বস্তি লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই, যথা স্থান যথাচার। একটু পরেই ছেলেটি হঠাৎ তিন হাত উপরে লাফিয়ে উঠে ‘ভেউ অ ও’ ইত্যাদি শব্দ করতে করতে এগিয়ে এলো। মানিক ছেলেটির এরকম অসভ্য আচরণে বিরক্ত এবং বিচলিত হলো, কৃত্রিমভাবে গলা খাঁকারি দিয়ে সতর্কও করল। কিন্তু ছেলেটি থামছে না, গলা খাঁকরির অর্থও বুঝল না, দুর্বার গতিতে মানিকে উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতায় মানিক স্তব্ধ হয়ে রইল। ছেলেটি আঙুল দিয়ে মাথার উপর দেখাল, একটি বিশাল চন্দ্রবোড়া পেঁচিয়ে আছে ডালে। মুখটা নামিয়ে এনেছিল, আরেকটু হলেই হয়তো মানিকের মাথাটা পেঁচিয়ে ধরতে পারত। চেঁচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে এলো। মানিক সাপটা দেখে একটু ভয় পেল বটে কিন্তু ছেলেটির আচরণে বিরক্তি কমল না। সে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল—

    সাপ দেবে মুখে বলতে পারলে না, এ রকম ভুত শব্দ করছিলে কেন?

    আংসাই মানিকের দিকে তাকিয়ে বলল—

    বাবু পারলে কি সে না বলত, কিন্তু সে তো কতা কইতে পারে না, বোবা কালা।

    মানিকের মনটা অনুশোচনায় ভরে উঠল। ছেলেটির নাম কাজাচাই। বাপ-মা নেই। বড় অনাদরে বড় হয়েছে। বোবা বলেই কারো কাছে আদরের আবদারও করতে পারেনি। ফুট-ফরমায়েশ খেটে খাবার জোগাড় করে। এক বেলা খাবারের জন্য সারাদিন পাহাড়ে কাজ করে। মংতোর মায়া হয় কাজাচাই-এর জন্য। তাই সে তার সাথে কাজে নিয়েছে। সে কৃতজ্ঞতায় কাজাচাই এখনো নুয়ে থাকে। মংতোর বোঝা ইচ্ছে করে নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়, সব কাজে এসে হাত লাগায়, তবুও তার কৃতজ্ঞতা শেষ হয় না।

    মানিক খাওয়ার সময় তার মাছ থেকে অর্ধেকটা কাজাচাই-এর পাতায় তুলে দেয়। হাত দিয়ে নিজের পেটের দিকে ইঙ্গিত করে দেখায় যে পেট ভরে গেছে। কাজাচাই মাথা নুয়ে থাকে, মুখের ভাষা বুঝতে না পারলেও সে চোখের ভাষা বুয়ে। পেট ভরে গেছে বলে এই মাছ তার ভাগ্যে জুটেনি, এই বাঙালি বাবুটির চোখে কৃতজ্ঞতা আর মায়া ফুটে উঠেছে, মাছের অর্ধাংশে সেই মায়া আর কৃতজ্ঞতার নিদর্শন। কাজাচাই লজ্জা পায়, সে কৃতজ্ঞ হতে জানে, কৃতজ্ঞতা পেতে জানে না। একটু মায়াতেই তার মন ভরে যায়। এই বাঙালির মায়ায় তার মন ভরে গেছে। রাজ্যের খাবারে কিংবা দামি রত্নে সে বিকায় না, কিন্তু একটু মায়ায় সে বশ হয়ে যায়। মানিকের প্রতি তার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে গেল। এই বাঙালি ডাক্তার বাবুর জন্য সে অজগরের মুখে মাথা পেতে দিতেও রাজি এখন।

    পাহাড়ের নিজস্ব ভাষা আছে নিঃশব্দে ডাকতে পারে। সবাই সে ডাক শুনতে পায় না। মানিক পায়। বহু কষ্টে খায়াচিং আর কাজাচাই-এর ঘাড়ে চড়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে তখন ভাবে আর এক পাও ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু চুড়ায় উঠেই যখন দেখে দূরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে অনেকগুলো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে, সে যেন তাদের ডাক শুনতে পায়। আবার পেছন থেকেও শুনতে পায়, তার মা যেন ডাকছে তাকে। কোনোটাই অগ্রাহ্য করতে পারে না সে।

    মানিকের পায়ে বেশ কিছু ফোস্কা পড়েছে, হাঁটতে গেলেই পা থেকে তীব্র একটা ব্যথা ঢেউয়ের মতো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কাজাচাই-এর ঘাড়ে হাত রেখে বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে বসে পড়ল মানিক। মংতো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। ঘন গাছের জন্য সূর্যের আলো ঠিকমতো পৌছায় না বনের নিচের দিকে। পানি ভর্তি চামড়ার থলেটি মানিকের দিকে এগিয়ে দিল খায়াচিং। মানিক ঢকঢক করে অনেক পানি খেয়ে নিল। এক নিঃশ্বাসে খেয়েছে, এখন শ্বাস নেয়ার জন্য হাঁপাচ্ছে। খায়াচিং বন থেকে কিসের পাতা যেন বেটে এনে মানিকের পায়ে লাগিয়ে দিল, একটু ভালো লাগছে। খায়াচিং-এর ভেষজ জ্ঞান দেখে মানিক তাকে জিজ্ঞাসা করল—

    কোথা থেকে শিখলে?

    আমরা পাহাড়ে থাকি, আমগো ছানতেই (জানতেই) হয়। জঙ্গল আমাগো সব দেয়, খালি বুছে নিতে হয়। আর ছম্মান করতে হয়। আমার বা (বাবা) বলত, একটা পাতা ছিঁড়লেও যাতে গাছের কাছে কমা (ক্ষমা) চাই। আমার বাবার মতো বৈদ্য পাহাড়ে আর নাই।

    তোমার বাবা কোথায়?

    খায়াচিং একটু উদাস হয়ে গেল বলল—

    বারে মুইরে দেখি না অনেক দিন, খাগরাছড়িতে আমাগো বাড়ি আছে। কত দিন বাড়িতে যাই না।

    সব ছেড়ে এখানে এসে পড়ে আছ কেন?

    খায়াচিং কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু আংসাই তখনি ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করল। তিনকোনা বাঁশ আর জাল দিয়ে তৈরি একটা ফাঁদ হাতে সে এগিয়ে চলছে ঝোপের দিকে। ঝোপের কাছে গিয়ে সন্তর্পনে ফাঁদটি নিচে নামাতে থাকল।

    একসময় বিদ্যুৎ গতিতে মাটিতে চেপে ধরল। ভেতরে কিছু একটা ছটফট করে বেরিয়ে যেতে চাইছে। আংসাই জালের ভেতর হাত দিয়ে একটা বড়সড় খরগোশ বের করে আনল। তার মুখে বিস্তৃত হাসি। দুই হাতে মাথাটা মুচড়ে ঘাড়টা ভেঙে দিল। খরগোশটা নড়াচড়ার সুযোগও পেল না।

    আগুন জ্বালিয়ে সেখানেই রান্না শুরু হলো। খরগোশের ভর্তা বানানো হয়েছে, মানিক দ্বিধা-দ্বন্দে খানিকটা মুখে দিয়েছে, অপূর্ব স্বাদ। গোগ্রাসেই গিলল। খেতে খেতেই আংসাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল—

    তুমি তো বেশ ভালো শিকারি, কী কী শিকার করেছ? আংসাই মুখে এক লোকমা খাবার পুরে দিয়ে খেতে খেতেই বলল—

    অনেক জানোয়ার মারছি—পাখি, খরগোশ, বন মোরগ, বাগডাশ, ভাল্লুক আর বাঙালি।

    অদ্ভুত হিংস্রতা ফুটে উঠল আংসাইয়ের চোখে। মানিক করুণা নিয়ে তাকিয়ে থাকল তার দিকে।

    আবার হাঁটা শুরু হলো, হাঁটা না বলে আরোহণ আর অবরোহণ বলাই ভালো। ছোট ছোট টিলা পেরিয়ে যাচ্ছে তারা, এখন পর্যন্ত কোনো জনমানব চোখে পড়েনি। মানিকের মনে এখন কোনো বিদ্রোহ নেই, কোনো অনুভূতি নেই, পায়েও নেই। জুতা খুলে ফেলেছে অনেক আগেই, ক্ষতগুলো ধারালো ঘাসের আঘাতে আরো গভীর হয়েছে, কিন্তু এখন আর ব্যথা করছে না। হয়তো খায়াচিং-এর সেই পাতা কাজ করেছে। ছোট একটি টিলার উপর উঠ একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখল সে, নিচে ঘন বনে বড় বড় পাহগুলো মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করছে, লুটিয়ে পড়েছে একটা আরেকটার উপর। আংসাই সবাইকে হাতের ইশারায় বসতে নির্দেশ দিল। মানিক মংতোকে নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করল—

    কী হচ্ছে এখানে?

    মংতো দাঁত চিবিয়ে উত্তর দিল—

    বনের ডাকাইত, কাঠ চুরি কইরছে।

    বন কর্মকর্তারা জানে না?

    জানব না কেন, তারাই তে চুরি কইরছে। জানোয়ারের দল।

    কিন্তু এখান থেকে শহরে এই কাঠ কীভাবে নিয়ে যাবে?

    এই প্রশ্নের উত্তর মংতো দিল না, দিল খায়াচিং। বলল—

    সাঙু নদী বেশি দূরে না, নদীতে ভাসাই নিয়া যাইব।

    মংতো খায়াচিং-এর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে থাকল, কিন্তু এই পাকানো চোখের মর্মার্থ খায়াচিং বুঝতে পারল না। সে বিগলিত হাসি দিয়ে মংতোর দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টির অর্থ হলো, দেখেছ আমি সব চিনি। খায়াচিং-এর ভৌগোলিক জ্ঞানে মংতো খুশি হতে পারেনি, তাদের অবস্থান সে ডাক্তার বাবুকে জানাতে চায়নি, তাকে অনেক সাবধান থাকতে হয়।

    টিলা থেকে নেমে দুর পথে তারা আবার চলতে শুরু করল। একটা বড় খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠল কিন্তু নামার উপায় নেই। পাহাড়টা চূড়া থেকে প্রায় পঞ্চাশ ফুট গভীর পর্যন্ত ধসে গিয়েছে। কাছে গিয়ে দেখল একটা লম্বা শিমুল গাছে খাঁজ কেটে সিড়ি বানানো হয়েছে। সেটা বেয়ে আংসাই অবলীলায় নেমে গেল। খায়াচিং-এর পেছনে মানিকও নেমে গেল, নিজেকে তাদের থেকে আলাদা কেউ মনে হচ্ছে না তার।

    রাতে একটি খোলা জায়গা দেখে ক্যাম্প করা হলো। আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে গুটি পাকিয়ে শুয়ে আছে সবাই। খায়াচিং জেগে আছে পাহারায়। একা একা চুপচাপ বসে থাকতে তার ভালো লাগে না। মানিকের চোখে ঘুম নেই, সে চিত হয়ে শুয়ে তারা দেখছে। মাঝে মাঝে শীতল বাতাস শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর বনে একটা তক্ষক ডেকে ওঠ, বাতাসটা সে ডাকের কিছুক্ষণ পরেই এসে গা ছুঁয়ে যায়, তক্ষকটা যেন সেই বাতাসের পূর্বাভাস দেয়। মানিক খায়াচিং-এর অস্বস্তি কিছুটা ঘুচাল, বলল—

    আর কত দূর যেতে হবে?

    আর তো অল্প এট্টু, ঝিরি ধইরে হাঁটলে এক দিন, দেড় দিন লাগব।

    এক দিন-দেড় দিন হাঁটা অল্প একটু? মানিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—

    তুমি ঘরবাড়ি ছেড়ে এত দূরে এই গহিন পাহাড়ে কেন এলে?

    পিরিতের লাইগা বাবু।

    মানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শীতল বাতাসের পরশে, আগুনের আঁচে, তাৱা আকাশের নিচে এক পাহাড়ি যুবকের গল্প শুনছে মানিক।

    মহালছড়িতে দেবতার পুকুর পাড়ে বসে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই দিন কেটে যেত খায়াচিং-এর। একদিন দেবতার সামনে পাথরের বেদিতে বসে উথাই-এর গলায় মালা দিবে সে। উথাইকে ছোট ডিঙ্গিতে বসিয়ে সাঙ্গু পাড়ি দেবে সে। একসাথে বসে সূর্যাস্ত দেখবে। রাতে কুপির আলোতে উথাই-এর মুখটা দেখবে, তারপর মুখে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে ফু দিয়ে বন্ধ করে দিবে কুপিটি। স্বপ্ন দেখতে দেখতেই ঘাসের উপর ঘুমিয়ে পড়ে খায়াচিং ঘুমন্ত মুখেও প্রশান্তি লেগে থাকে। একদিন তার ঘুম ভেঙে যায় উথাই-এর হাসির শব্দে। উথাই হাসতে হাসতে পাথরের বেদিতে এক বাঙালি ছেলের উপর ঢলে পড়েছে। তাদের দুজনের গলায়ই মালা। উথাই সে মালা পরে ছেলেটির হাত ধরে চলে গিয়েছিল।

    মারমা পাড়ায় ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল। উথাইয়ের বাড়িতে মাতম। তার বাবা সমাজের সবাইকে ডেকে মেয়েকে মৃত ঘোষণা করল, ঘরে মেয়েরা বিলাপ করল। ঘি, কাঠ, ঢোল, বাদ্য দিয়ে উথাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হলো। চিতা জ্বালানো হলো, দেবতাকে ভোগ দেয়া হলো সাথে সমাজের সবাইকেও। খায়াচিং কিছুতেই যোগ দিল না। সে বসে রইল দেবতার পুকুর পাড়ে। দেবতার পায়ে ফুল দিয়ে সে উথাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করল। প্রতিদিন সে দেবতার কাছে প্রার্থনা করত, তার উথাই যেন ভালো থাকে। কিন্তু দেবতা খায়াচিং-এর প্রার্থনা শুনেনি।

    দুই মাস ঘর করে একদিন বাঙালি ছেলেটি উধাইকে ফেলে চলে গিয়েছিল, আর ফিরে আসেনি। কাঁদতে কাঁদতে উথাই ফিরে এলো মারমা পাড়ায়। কিন্তু মৃত মানুষের স্থান নেই তাদের সমাজে। সবাই ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে কিন্তু খায়াচিং পারেনি। উথাইকে নিয়ে সমাজ ছেড়েছে সে, আশ্রয় নিয়েছে গহিন পাহাড়ে।

    আগুনটা প্রায় নিভে গেছে, রাত প্রায় দ্বিপ্রহর। খায়াচিং-এর পাহারার পালা শেষ। এবার সে ঘুমাতে পারবে। আংসাই জেগে উঠেছে। আবার আগুনটাকে উসকে দিয়েছে সে। মানিক বুক পকেটে হাত দিল আবার। তার ঘুম আসছে না।

    .

    মন বিদ্রোহ না করলেও শরীর ঠিকই বিদ্রোহ করে বসল মানিকের। হালকা জীবন-যাপন করা মানুষ দুই দিন পাহাড়ে হাঁটলে যা হয় আর কি। শরীরে তীব্র ব্যথার সাথে যোগ হয়েছে জ্বর, চোখে যেন জবা ফুল ফুটেছে। মানিক একটা ঘোরের মধ্যে আছে, ঘোরের মধ্যে থেকেও মংতোর চিন্তিত মুখটা দেখতে পেল সে। কাজাচাই একটু পরপর এসে মানিকের কপালে হাত রাখছে, আর হাত উঁচু করে জ্বরের তীব্রতা বুঝাচ্ছে। খায়াচিং কী একটা বিদঘুটে গন্ধের পাতার রস খাইয়ে দিল, তাতে জ্বরের বিশেষ ক্ষতি হলো না, শুধু মানিক বার দুয়েক বমি করল। তার মধ্যেই কোথা থেকে মেঘগুলো সব মুখ কালো করে চোখ পাকিয়ে তাদের মাথার উপর দম মেরে বসে পড়ল। মংতোর চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠল, তার গম্ভীর ভাবটা আর নেই। মংতোর আশঙ্কা সত্যি হলো, ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো পাহাড়ে। মানিককে একটা বাবলা গাছের নিচে বসিয়ে এলোমেলো হাঁটছে মংতো। আংসাই-এর কোনো বিকার নেই, সে বৃষ্টির পানি চামড়ার থলেতে জমাচ্ছে। কাজাচাই মানিকের পাশে বসে আছে, খায়াচিং আর কোন পাতার রস খাওয়ানো যায় তাই চিন্তা করছে। বাবলা গাছে পাতা, কাঁটা ভেদ করে ফোঁটা ফোটা বৃষ্টি অনিয়মিতসবে মানিকের ঘাড়-মাথা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ছন্দহীন বৃষ্টির ফোটা ভালো লাগে না, সুরহীন বালিকার কর্কশ সা রে গা মা-র মতো মনে হয়। মানিকের ইচ্ছা করছে সরাসরি বৃষ্টিতে ভিজতে।

    পাহাড়ে ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে নেই, মানিক অবশিষ্ট বল দিয়ে উঠে দাঁড়াল, তার হাঁটু দুটি কাঁপছে, দেহের ভার সইতে তাদের বেজায় কষ্ট হচ্ছে। মানিক দুই হাত ছড়িয়ে খোলা জায়গায় বৃষ্টি আলিঙ্গন করল। কাজাচাই এসে তার পাশে ভিজতে থাকল। মংতো সব চিন্তা বাদ দিয়ে এই শিশুতোষ আচরণ উপভোগ করছিল। মানিকের গায়ে যেন বৃষ্টির ফোটাগুলো সেতার বাজাচ্ছিল, চোখ খুলে দু’ চোখে বৃষ্টি ভরে নিল। তারপর লুটিয়ে পড়ল ঘাসে।

    দড়ি দিয়ে পাকানো দোলনায় শোয়ানো হয়েছে মানিককে। বাঁশ দিয়ে দুপাশে চারজন মিলে বয়ে চলছে তাকে। মানিক জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে—

    মা, মাগো। আমার মাথায় হাত রাখো মা, ঊনত্রিশ একে ঊনত্রিশ, ঊনত্রিশ দুগুণে আটান্ন, চন্দন বাবু আমি সব নামতা পারি, আমার মা কই? চন্দন বাবু। কার্তিক কার্তিক তোর তাজেলকে বাঁচা, তোর মার মতো হারিয়ে যাবে তাজেল। মা, মা।

    পানির উপর পায়ের ছপাত ছপাত শব্দে মানিকের মোহভঙ্গ হলো, চোখ খুলে দেখল পৃথিবী দুলছে, আসলে সে নিজে দুলছে। দুই পাশে পাথুরে পাহাড়, নিচে পানির শব্দ, এটাই বুঝি পাহাড়ি ঝিরি। মানিক আবার চোখ বন্ধ করল, একসময় ঘুমিয়ে পড়ল অথবা মূর্ছা গেল। হাতটা বুক পকেটে স্থির ছিল।

    .

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleও হেনরি রচনাসমগ্র
    Next Article তেইল্যা চোরা – ওবায়েদ হক

    Related Articles

    ওবায়েদ হক

    তেইল্যা চোরা – ওবায়েদ হক

    July 17, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.