Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নুটি মন্তর

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌতিক গল্প এক পাতা গল্প8 Mins Read0

    নুটি মন্তর

    হাবু— নাপিতের ছেলে, সুতরাং রীতিমতো তার বুদ্ধি।

    পায়রাগাছির গুণিন রোজা (ওঝা) এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ, সে নাকি মন্ত্রবলে সাপ হতে পারে, বাঘ হতে পারে, কী না-হতে পারে! লোহার সিন্দুকে কিংবা বাড়িতে বড়ো বড়ো হবসের-চবসের কুলুপ লাগানো আছে— পায়রাগাছির রোজা এসে কী একটা মন্তর বিড়-বিড় করে বলে দু-বার তালা ঝম-ঝম করে নাড়লে, আর তালা সব গেল বেমালুম খুলে। এ কত লোকের স্বচক্ষে দেখা। রায়েদের কলম আমবাগানে বিকাল বেলা কেউ কেউ নাকি দেখেছে, রোজা কলমের আম পাড়ছে; হয়তো লোকে ধরতে গিয়ে দেখলে— একটা খরগোশ লাফাতে লাফাতে বাগানের উত্তর দিকের বেড়া ডিঙিয়ে পালিয়ে গেল।

    পায়রাগাছির রোজার মস্ত বড়ো নাম।

    কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়— এত বড়ো নাম করা রোজা যে, তাকে কেউ কখনো দেখেনি। কোথায় সে কখন কীভাবে থাকে, তা কেউ বলতে পারে না।

    হাবুর বড্ড ইচ্ছে সে কিছু মন্তর-তন্তর শেখে। এ তার অনেক দিনের ইচ্ছে। এখন তার বয়েস আঠারো-উনিশ। যখন তার বয়েস চোদ্দো-পনেরো, তখন থেকে সে যেখানেই শুনেছে রোজা-গুণিন এসেছে; অমনি তার পিছু পিছু ছুটে গিয়েছে। একবার তাদের পাশের গ্রামের হাই স্কুলে একজন বড়ো জাদুকর এসে নানারকম তাসের খেলা, টাকার খেলা দেখালে। একটা তাস বেমালুম গোলাপ ফুল হয়ে গেল, এর মুঠোবাঁধা টাকা ওর হাতে গেল, এক গ্লাস জল হয়ে গেল মিষ্টি শরবত।

    তাদের গাঁয়ের দু-চারজন লোকের সঙ্গে হাবুও গিয়েছিল খেলা দেখতে। একখানা তাসকে তার চোখের সামনে গোলাপ ফুল হতে দেখে সত্যিই সে কী আশ্চর্যই না হয়ে গিয়েছিল!

    ফিরবার পথে সন্ধে হয়ে এসেছে। ওর কীরকম গা ছমছম করতে লাগল।

    কালি স্যাকরা দলের মধ্যে প্রবীণ। হাবু বললে— আচ্ছা কালিজ্যাঠা, ওসব কী করে করলে?

    কালি স্যাকরা এটা তাচ্ছিল্যসূচক ভঙ্গি করে বললে— আহা এসব তো সোজা—

    —সোজা, কালিজ্যাঠা?

    —খু-উ-ব সোজা।

    —কীরকম সোজা?

    —ওসব মন্তর-তন্তরের কাণ্ড। আমিও ইচ্ছে করলে পারি।

    —তুমিও পারো?

    —কেন পারব না!

    —একদিন করে দেখাবে জ্যাঠা?

    কালি স্যাকরার কথায় কিন্তু হাবুর বিস্ময়বোধ দূর হল না। সে গিয়ে জাদুকরকে পরদিন সকালে পাকড়ালে। সোজাসুজি তাকে জানালে, সে ওইসব খেলা শিখতে চায়। শাকরেদ হতে সে রাজি আছে। জাদুকর কলকাতার লোক, মাথায় নরম বুরুশ দিয়ে চুল আঁচড়ে থাকেন, হাতে ঘড়ি পরেন, চোখে থাকে চশমা। তিনি নাক উঁচু করে বললেন— ওসব হয় না। অনেক টাকার খেলা, অনেক টাকা প্রিমিয়াম দিলে তারে শাকরেদ করি।

    হাবু বললে— প্রিমিয়াম কী?

    —প্রিমিয়াম টাকা হে, টাকা; পারবে আমায় দিতে?

    মরিয়া হয়ে হাবু বললে— আজ্ঞে কত টাকা?

    —এক-শো। পারবে দিতে?

    —আজ্ঞে না। অত টাকা কখনো একসঙ্গে দেখিনি।

    —তবে ফিরে যাও। এসব এমনি হয় না।

    —কিছু কম করে নিন—

    —দু-শো করে প্রিমিয়াম নিই, তোমায় এক-শো বলেছি।

    হাবু সেখান থেকে সরে পড়ল। অত টাকার সিকিও দেবার ক্ষমতা নেই তার। জাদুবিদ্যা শেখবার সৌভাগ্য কি সকলের ঘটে?

    কেটে গেল বছর তিনেক। এই তিন বছরে তার জীবনে নতুন কিছু ঘটল না। এ-অজ পাড়াগাঁয়ে জীবন একরঙা ছবির মতো একঘেয়ে।

    ঠিক এমন সময়ে একদিন হাবু দুপুরে মাছ ধরতে গেছে নদীতে, সেইসময়ে দেখলে একটা লোক আমবাগানের ছায়ায় বসে বসে আপন মনে কতকগুলো ঢিল নিয়ে খেলছে। হাবু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলে লোকটা একটা ঢিল হাতে নিয়ে ছুড়ে দিতেই সেটা মস্ত একটা কোলা ব্যাঙ হয়ে গেল, লাফিয়ে লাফিয়ে পালাল। আর একটা ঢিল ছুঁড়তেই সেটা হয়ে গেল ছেলেদের দু-চাকার একটা খেলনাগাড়ি, কিন্তু সে গাড়ি গড়গড় করে গড়িয়ে চোখের বাইরে অদৃশ্য হল; আর একটি ঢিল হিল-হিল করতে করতে একটা সাপ হয়ে চলে গেল, একটা ঢিল একমুঠো আবির হয়ে ছত্রাকারে ছড়িয়ে মাটি রাঙিয়ে দিলে। হাবু সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটা মুখের দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে বললে— কী?

    স্তম্ভিত ও ভীতু হাবু কোনো কথা না-বলে একবারে লোকটার পা জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ল।

    গাছতলায় লোকটা নেই।

    হাবু বিভ্রান্ত চোখে চারিদিকে চেয়ে দেখলে। অতবড়ো আমবাগানের কোথাও সে নেই। দু-মিনিট হাবু দাঁড়িয়ে রইল আড়ষ্ট হয়ে। হঠাৎ সে দেখলে, হাত-দশেক দূরে সেই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে মৃদু মৃদু হাসছে।

    হাবু কাতর কণ্ঠে বললে— আমাকে দয়া করুন!

    —কী দয়া?

    —পায়ে ঠেলবেন না এমন করে! আমাকে আপনার চাকর করে রেখে দিন! আমি অনেক ভাগ্যে আপনার দেখা পেয়েছি!

    —আমি গরিব লোক, চাকরে আমার কী দরকার? তা ছাড়া আমার হাতে অনেক চাকর। এই দেখ— বলেই লোকটা একটা ঢিল গাছের উপরের ডালের দিকে অবহেলার ভরে ছুড়ে মারতেই ঝর-ঝর করে একরাশ আম পড়ল। হাবু একবারে স্তম্ভিত। আম আসে কোথা থেকে এই কার্তিক মাসে? পাড়াগাঁয়ে কোনো গাছেই এ-সময়ে আম দূরের কথা, আমের বউলও নেই। পাকা আম ঝুড়ি খানেক তার সামনে।

    লোকটা বললে— খাবার জল? এই—

    যেমন একটা ঢিল ছোঁড়া, অমনি গাছের গুঁড়ির এক জায়গা একেবারে ফুটো হয়ে কলের মুখে যেমন জল পড়ে, তেমনি জল পড়তে লাগল। লোকটা হাত নেড়ে ইঙ্গিত করে বললে— খাও— ভালো জল।

    হাবু কাতর স্বরে বললে— আমায় শাকরেদ করে রাখুন!

    —কী সর্বনাশ, শাকরেদ! আমি ওস্তাদ নই।

    —আমায় দয়া করুন!

    লোকটা হি-হি করে হেসে উঠল। ওকী! মুখের ফাঁক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল-নীল-বেগুনি রঙের ডানাওয়ালা প্রজাপতি উড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

    —লোকটা কে?

    এর উত্তর লোকটা দিলে। বললে— পায়রাগাছি জানো? উত্তর দিকে। আমার সঙ্গে সেখানে দেখা কোরো।

    হাবু হাঁ করে রইল। ইনিই তবে পায়রাগাছির সেই গুণিন! সবাই বলে উনি ‘নুটি মন্তর’ জানেন, অর্থাৎ মন্ত্রবলে অদৃশ্য হতে পারেন। আজ সে নিজে তার প্রমাণ পেয়েছে। হাবু হাতজোড় করে বললে— আমায় দয়া করুন!

    পায়রাগাছির রোজা এবার নরম সুরে বললে— শেখাতে পারি নুটি মন্তর। কিন্তু ছোকরা, তুমি এ-পথে কেন? এ-পথে কেবল তারাই আসতে পারে, যাদের বাসনা কামনা শেষ হয়ে গেছে। কত লোভের পথ খুলে যাবে— দেখো! আচ্ছা বোসো, দিচ্ছি তোমায় মন্তরটা শিখিয়ে।

    কিছুদিন কেটে গেল।

    হাবু এখন নুটি মন্তর শিখে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হতে শিখেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে আবিষ্কার করলে, সে একজন ভীষণ চোর। যে-ঘরে যায়, ভালো ভালো জিনিস সব চুরি করতে ইচ্ছে হয়। খাবারের দোকানে গেলে ইচ্ছে হয় খাবারের হাঁড়ি ফাঁক করে। সে যে চোর, তা সে কখনো জানত না। একদিন এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখলে, মস্ত বড়ো একটা ইলিশ মাছ এনেছে বন্ধুর বাবা। রোয়াকে সেটা পড়ে আছে, বন্ধুর মা ঘরে ঢুকেছেন বঁটি আনতে। ওর লোভ হল মাছটাকে নিয়ে দৌড় দেয়।

    হাবু ভয়ে তখুনি আবার দৃশ্যমান হয়ে গেল।

    বন্ধুর মা ওকে দেখে বললেন— ওমা, হাবু কোথা দিয়ে এলি? তোকে তো দেখলাম না দরজা দিয়ে আসতে! এইমাত্তর তো ঘরে বঁটি আনতে গিয়েছি!

    হাবু হেসে চুপ করে রইল।

    একদিন আরও গুরুতর ব্যাপার ঘটল। পাড়ার গাঙ্গুলিরা বড়োলোক, তাদের বাড়ির ওপরের তলায় খাটে একছড়া দামি সোনার হার কে ফেলে রেখেছে। হাবু কৌতূহলবশত গাঙ্গুলিদের তেতলায় অদৃশ্য অবস্থায় বেড়াতে গিয়ে লোভ সামলাতে না-পেরে সেই হার হাতে নেমে এল। সে তো অদৃশ্য, তার কাছে যে-জিনিস থাকবে তাও অদৃশ্য।

    কেউ কিছু টের পেলে না।

    তারপর যখন জানা গেল হার চুরি গিয়েছে, তখন গাঙ্গুলিদের বাড়িতে হইচই পড়ে গেল। গাঙ্গুলিদের বড়ো মেয়ের হার সেটা, তার কী কান্না! সবাই মিলে তাকে অপমান-উৎপীড়ন করতে লাগল। সে কেন এত অসাবধান, কেন সে হার খাটের উপর ফেলে রেখেছিল? অবশেষে সন্দেহ গিয়ে পড়ল এক বৃদ্ধা দাসীর ওপর। তার ওপর শুরু হল নির্যাতন। পুলিশে খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও হতে লাগল।

    কিন্তু হাবুর সবচেয়ে অসহ্য হল গাঙ্গুলিদের মেয়ের সেই হাপুস নয়নে কান্না। মেয়েটির সঙ্গে তার স্বামীর বনিবনাও নেই, বাপের বাড়ি পড়ে থাকে। এমন মেয়ের কোনো মান থাকে না বাপের বাড়ি। বউদিরা একেই তো তাকে দাঁতে পেষেন, তার ওপরে সে বাপের দেওয়া হারছড়া খুইয়ে ঘোর অপরাধে অপরাধিনী।

    হাবু অদৃশ্য হয়ে সব দেখছিল, হারও তার পকেটেই ছিল। আর সহ্য করতে না-পেরে হারছড়াটা সে বালিশের তলায় রেখে দিলে। সেখান থেকে সেই মেয়েই প্রথম হার আবিষ্কার করলে। তখন কী হাসি তার মুখে!

    তা তো হল, কিন্তু হাবু পড়ে গেল মহা বিপদে।

    সে চোর হয়ে গেল শেষপর্যন্ত? এ কী ভয়ানক প্রলোভনে সে পড়েছে! পদে পদে প্রলোভন, পদে পদে সচ্চরিত্রতার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাকে! মনের বল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। লোভ সামলাতে সামলাতে গলদঘর্ম। অদৃশ্য না-হয়ে থাকা যায় না, অদৃশ্য হলেও বিপদ। এ কী সর্বনাশা মন্ত্র!

    মাসের পর মাস কাটে এই ঘোর অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে।

    হাবু ইতিমধ্যে এক বিয়েবাড়ির ভাঁড়ারে ঢুকে সের খানের সন্দেশ মেরে দিলে। পরক্ষণেই জাগল অনুতাপ। সে কোথায় নেমে চলেছে দিন দিন! পায়রাগাছির রোজা এ কী সর্বনাশ তার করে গেল? কিছুতেই অদৃশ্য হবার প্রলোভন সামলানো যায় না! কিছুতেই ভোলা যায় না নুটি মন্তর! নুটি মন্তর তার জীবনের অভিশাপ!

    বছর খানেক এভাবে কেটে গেল। কত খুঁজল পায়রাগাছির রোজাকে— কেউ সন্ধান দিতে পারলে না।

    একদিন হাবু সেই আমবাগান দিয়ে যেতে যেতে সেই একই গাছের তলায় দেখলে, পায়রাগাছির রোজা সেইরকম ঢিল দিয়ে ছুড়ে ছুড়ে খেলা করছে। ওর দেহে বিদ্যুতের স্রোত বয়ে গেল! সন্ধান মিলেছে এতদিন পরে! ও ছুটে এগিয়ে কাছে গেল। একটা ঢিল ব্যাঙ হয়ে লাফাতে লাফাতে পালাল। একটা ঢিল সদ্য-কাটা ধাড়ি ছাগলের মুণ্ড হয়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে চলে গেল। একঝাঁক ছাতারে পাখি রোজার মুখের মধ্যে থেকে বের হয়ে উড়ে গেল।

    হাবু ছুটতে ছুটতে (পাছে রোজা অদৃশ্য হয়ে যায়) গিয়ে ওর পায়ের ওপর পড়ল।

    রোজা প্রশান্ত হাসির সঙ্গে বললে— কী হয়েছে?

    —আমায় বাঁচান!

    —কী ব্যাপার?

    —আপনি সব জানেন! আপনি অন্তর্যামী! ওস্তাদজি, নুটি মন্তরের কবল থেকে আমায় উদ্ধার করুন! আমার চরিত্র গেল, মনের শান্তি গেল— সব গেল! এ আপনি ফিরিয়ে নিন!

    রোজা মৃদু মৃদু হেসে বললে— একবার মন্তর দিলে আর ফেরত হয়?— হয় না।

    হাবু ভয়ে শিউরে উঠল। তবে কী জীবনভর এই সর্বনেশে মন্তরের ভার বইতে হবে তাকে! এই অশান্তি— পদে পদে এই পরীক্ষা সারাজীবন চলবে?

    হাবু পা আঁকড়ে ধরে বললে— বাঁচান আমায়! আমি মরে যাব!

    —তবে চাও না নুটি মন্তর?

    —আজ্ঞে না।

    রোজা হেসে বললে— তবে যাও, দিলাম না। মোটেই তোমাকে মন্তর দিইনি। পরীক্ষা করছিলাম।

    হাবু অবাক! সে কী কথা! এক বছর ধরে তবে সে কীসের ভার-বোঝা বয়ে মরল?

    সে কী বলতে যাচ্ছিল, রোজা হেসে বললে— মোটে সাত মিনিট কেটেছে। এই প্রথম দেখা তোমার সঙ্গে আমবাগানে। নুটি মন্তর তোমাকে দেওয়া যায় কি না পরীক্ষা করছিলাম। আমি বিশ বছর এই মন্তরের ভার বয়ে আসছি, আর তুমি এর দায়িত্ব সাত মিনিট নিতে পারলে না?

    হাবু বললে— তবে আমি গাঙ্গুলিদের বাড়ির হার চুরি করিনি? ময়রার দোকানে খাবার খাইনি চুরি করে? তবে আমি—

    —না, মোটে সাত মিনিট কেটেছে। আমার সামনে ছাড়া তুমি কোথাও যাওনি। এই তো প্রথম তোমার সঙ্গে আমবাগানে—

    বলে কী! হাবু আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পায়রাগাছির গুণিন হা-হা করে হেসে উঠল।

    সঙ্গেসঙ্গে একঝাঁক চামচিকে তার হাঁ-করা মুখের মধ্যে থেকে পট-পট শব্দে বের হয়ে ইতস্তত উড়ে গেল।

    ভাদ্র ১৩৫২, ক্ষণভঙ্গুর

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleতিরোলের বালা
    Next Article পথিকের বন্ধু

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ধীরেন্দ্রলাল ধর ভৌতিক গল্প

    তান্ত্রিক

    March 13, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }