Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নূরজাহান – ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প2063 Mins Read0

    ১.১১-১৫ পশ্চিম উত্তরের ভিটার পাটাতন ঘর

    ১.১১

    পশ্চিম উত্তরের ভিটার পাটাতন ঘর দুইটার মাঝখান দিয়ে পথ। সেই পথে খানিক দূর আগালে দুই তিনটা বাঁশঝাড়, তিন চারটা আম আর একটা কদমগাছ। সারাদিন আবছা মতন অন্ধকার জায়গাটা। পাটাতন ঘরের চালা আর গাছপালার মাথা ডিঙিয়ে রোদ এসে কখনও এখানকার মাটিতে পড়তে পারে না। যদিও বা পড়ে দুই এক টুকরা, বাঁশঝাড় তলায় জমে থাকা শুকনা বাঁশপাতার উপর রোদের টুকরাগুলিকে দেখা যায় মাটির নতুন হাঁড়ির ভাঙা চারার মতো। রাজা মিয়ার মা যেদিন বাড়িতে এলেন সেদিন থেকে এদিকটায় কাজ করছে আলফু।

    বাঁশঝাড় ছাড়িয়ে দূরে, বাড়ির নামার দিকে পায়খানা ঘর। বিক্রমপুর অঞ্চলের বাড়িগুলি তৈরি হয় বাড়ির চারদিক থেকে মাটি তুলে উঁচু ভিটা তৈরি করে তার ওপর। এই ভিটার ওপর আবার ভিটা করে তৈরি হয় ঘর। যদি পাটাতন ঘর হয় তাহলে ভিটা করবার দরকার হয় না। বাড়ির যেদিকটা সবচাইতে দরকারি, বাড়ি থেকে বের হবার জন্য দরকার, সেদিকটাকে বলা হয় বারবাড়ি। বাড়ি তৈরির সময় বারবাড়ির দিক থেকে মাটি তোলার পরও বের হবার সময় খানিকটা নিচের দিকে নামতে হয়, ওঠার সময় ও উঠতে হয় কয়েক কদম। বর্ষাকালে চকমাঠ ভরে পানি যখন বাড়ির ভিটার সমান উঁচু হয়ে ওঠে তখন বাড়িগুলিকে দেখা যায় ছাড়া ছাড়া দ্বীপের মতন। এক বাড়ির লগে। আরেক বাড়ির যোগাযোগের উপায় ডিঙিনৌকা, কোষা নৌকা।

    বনেদি বাড়িগুলির পায়খানা ঘর থাকে বাড়ির সবচাইতে কম দরকারি, জঙ্গলা মতন দিকটায়। ঘরদুয়ারের পিছনে, অনেকটা দূর এগিয়ে একেবারে নামার দিকে। গাছপালার আড়ালে এমনভাবে থাকবে ঘরখানা যেন দূর থেকে না দেখা যায়।

    এই অঞ্চলের মানুষের রুচির পরীক্ষা হয় পায়খানা ঘর দেখে। মেয়ের বিয়ার সম্বন্ধ আসলে পাত্রপক্ষের কোনও না কোনও মুরব্বি কোনও না কোনও অছিলায় বাড়ির ওই ঘরখানা একবার ঘুরে আসবেন। ওই ঘর দেখে বাড়ির মানুষ আর মেয়ের রুচি বিচার করবেন। এইসব কারণে বড় গিরস্ত আর টাকা পয়সাআলা লোকের বাড়ির পায়খানা ঘরখানা হয় দেখবার মতন। ভাঙনের দিকে চারখানা শালকাঠের মোটা খাম (থাম) পুতে বাড়ির ভিটা বরাবর টংঘরের মতো করে তৈরি করা হবে ঘরখানা। কড়ুই কাঠ দিয়ে পাটাতন করা হবে। মাথার ওপর ঢেউটিনের দো কিংবা একচালা। চারদিকে ঢেউটিনের বেড়া। কখনও কখনও বেড়া চালা রং করা হয়। খামগুলি পোতবার আগে আলকাতরা, মাইট্টাতেলের (মেটেতেল) পোচ দেওয়া হয়। তাতে কাঠে সহজে ঘুণ ধরে না।

    বাড়ির ভিটা থেকে পায়খানা ঘরে যাওয়ার জন্য থাকে লঞ্চ স্টিমারে চড়ার সিঁড়ির মতো সিঁড়ি। সিঁড়ির দুইপাশে, পুলের দুইপাশে যেমন থাকে রেলিং, তেমন রেলিং। বাড়ির বউঝিরা যেন পড়ে না যায়।

    রাজা মিয়াদের বাড়ির পায়খানা ঘরখানা ঠিক এমন। বাঁশঝাড়তলা ছাড়িয়ে। এই জায়গাটা নিঝুম, ঝরাপাতায় ভর্তি। সারাদিন এই দিকটাতেই কাজ করছে আলফু। বাঁশঝাড় পরিষ্কার করছে, ঝরাপাতা ঝাড়ু দিয়ে এক জায়গায় ভুর দিচ্ছে। আগাছা ওপড়াচ্ছে। সাপখোপের বেদম ভয় রাজা মিয়ার মার। তার পায়খানায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার না থাকলে মুশকিল। আলফু সেই পথ পরিষ্কার রাখছে।

    কুট্টি এসব জানে। জানে বলেই সোজা এদিকটায় এল। এসে একটু অবাকই হল। আলফু নাই। পরিষ্কার বাঁশঝাড়তলা নিঝুম হয়ে আছে। থেকে থেকে উত্তরের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ায় শন শন করছে বাঁশপাতা।

    আলফু গেল কোথায়!

    পশ্চিমের ঘরটার পিছন দিয়ে একটুখানি পথ আছে দক্ষিণ দিককার পুকুর ঘাটে যাওয়ার। সেই পথের মাঝ বরাবর পুরানা একটা চালতাগাছ। কুট্টি আনমনা ভঙ্গিতে সেই পথে পা বাড়াল। একটুখানি এগিয়েই আলফুকে দেখতে পেল উদাস হয়ে চালতাতলায় বসে আছে। হাতে বিড়ি জ্বলছে কিন্তু বিড়িতে টান দিচ্ছে না।

    কুট্টি অবাক হল। রাজা মিয়ার মা আছেন বাড়িতে তারপরও কাজে ফাঁকি দিয়ে চালতাতলায় বসে আছে আলফু! এতবড় সাহস হল কী করে!

    দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আলফুকে দেখতে লাগল কুট্টি।

    জোঁকের মতো তেলতেলা শরীর আলফুর। মাথার ঘন চুল খাড়া খাড়া, কদমছাট দেওয়া। পিছন থেকে দেখছে বলে আলফুর মুখ কুট্টি দেখতে পাচ্ছে না। পিঠ দেখছে, ঘাড় দেখছে আর দেখছে মাজা। পরনে সবুজ রঙের লুঙ্গি। মাজার কাছে গামছা বাঁধা। গামছাটা এক সময় লাল ছিল, দিনে দিনে রঙ মুছে কালচে হয়ে গেছে।

    চালতাপাতার ফাঁক দিয়ে আলফুর তেলতেলা পিঠে, ঘাড়ের কাছাকাছি এসে পড়েছে একটুকরা রোদ। সেই রোদের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই শরীরের ভিতর অদ্ভুত এক উষ্ণতা টের পেল কুট্টি। অদ্ভুত এক উত্তেজনায় ভরে গেল তার শরীর। মুহূর্তের জন্য মনে পড়ল ফেলে আসা স্বামী মানুষটার কথা। রাত, অন্ধকার ঘর, পুরুষ শরীর, শ্বাস প্রশ্বাসের গন্ধ, ভিতরে ভিতরে দিশাহারা হয়ে গেল কুট্টি। ভুলে গেল সে কেন এখানে আসছে, কী কাজে!

    মানুষের পিছনে যত নিঃশব্দেই এসে দাঁড়াক মানুষ, কোনও না কোনও সময় নিজের অজান্তেই মানুষ তা টের পায়। বুঝি আলফুও টের পেল। বিড়িতে টান দিয়ে আনমনা ভঙ্গিতেই পিছনে তাকাল সে। তাকিয়ে কুট্টিকে দেখে অবাক হয়ে গেল। কুট্টির দিকে তাকিয়ে রইল।

    কুট্টির তখন এমন অবস্থা কিছুতেই আলফুর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। চোখ মুখ নত হয়ে গেছে গভীর লজ্জায়। এক পায়ে আঁকড়ে ধরেছে আরেক পায়ের আঙুল।

    ধীর গম্ভীর গলায় আলফু বলল, কী?

    লগে লগে স্বাভাবিক হয়ে গেল কুট্টি। নিজেকে সামলাল। আলফুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, বুজানে কইলো দবির গাছিরে ডাইক্কা আনতে। মনে অয় হালদার বাইত্তে গেছে গাছ ঝোড়তে। যান তাড়াতাড়ি যান।

    বিড়িতে শেষটান দিল আলফু তারপর উঠে দাঁড়াল। আর একবারও কুট্টির মুখের দিকে তাকাল না, একটাও কথা বলল না, বারবাড়ির দিকে চলে গেল।

    তারপরও চালতাতলায় খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল কুট্টি।

    .

    ১.১২

    দোতলা ঘরের সামনের দিককার বারান্দায় খেতে বসেছে ছনুবুড়ি। টিনের খাউব্বা (গামলা মতন) থালায় ভাত তরকারি নুন সব এক সঙ্গে দিয়েছে কুট্টি। টিনের মগের একমগ পানি দিয়েছে। তারপর নিজে চলে গেছে মাঝের কামরায়।

    মাঝের কামরার একপাশে কালো রঙের কারুকাজ করা উঁচু পালঙ্ক। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে সেই পালঙ্কে কাত হয়েছেন রাজা মিয়ার মা। কুট্টি তার পা টিপে দিচ্ছে। রাজা মিয়ার মা যতক্ষণ চোখ না বুজবেন, মুখ হাঁ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঙো ঙো করে শব্দ করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ছুষ্টি নাই কুট্টির। চোখ বুজে মুখ হাঁ করে ওরকম শব্দ করার মানে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। বুজান ঘুমালে তবে খেতে যাবে কুট্টি। দুপুর বয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধায় পেট পুড়ে যাচ্ছে তার।

    বুজানের পা টিপছে আর ভোলা দরজা দিয়ে তাকিয়ে ছনুবুড়ির খাওয়া দেখছে কুট্টি। কুঁজা হয়ে বসে ফোকলা মুখে হামহাম করে খাচ্ছে। একটার পর একটা লোকমা (নলা) দিচ্ছে মুখে। কোনওদিকে তাকাচ্ছে না।

    এই বয়সেও এত খিদা থাকে মানুষের।

    কুট্টির ইচ্ছা হল ছনুবুড়িকে জিজ্ঞাসা করে, ও বুজি আট্টু ভাত লইবানি? আট্টু ছালুন!

    বুজানের ভয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় না। এখনও ঘুমাননি বুজান। তার পা টিপা ফেলে ছনুবুড়ির খাওয়ার তদারকি করছে কুট্টি এটা তিনি কিছুতেই সহ্য করবেন না। পায়ের কাছে বসে থাকা কুট্টিকে লাথি মারবেন। ও রকম মোটা পায়ের একখানা লাথথি খেলে পাঁচদিন আর মাজা সোজা করে দাঁড়াতে হবে না কুট্টির।

    তবে ছনুবুড়িকে একবারে যতটা ভাত দিয়েছে কুট্টি, তরকারি যতটা দিয়েছে তাতে পেট ভরেও কিছুটা ভাত থেকে যাওয়ার কথা। সেইটুকুও ফেলবে না বুড়ি। জোর করে খেয়ে নিবে।

    তাহলে কুট্টির কেন ইচ্ছা হল ছনুবুড়িকে জিজ্ঞাসা করে, আটু ভাত লইবানি?

    বোধহয় বুড়ির খাওয়ার ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে।

    কিন্তু বুজান আজ ঘুমাচ্ছেন না কেন? মুখ হাঁ করে ঙো ঙো শব্দ করছেন না কেন? খিদায় তো পেট পুড়ে যাচ্ছে কুট্টির!

    শরীরের সব শক্তি দিয়ে জোরে জোরে বুজানের পা টিপতে লাগল কুট্টি।

    ঠিক তখনই দক্ষিণের বারান্দার দিকে কার গলা শোনা গেল। বুজান বলে বাইত্তে আইছেন? বুজান ও বুজান।

    এই ডাকে মাত্র বুজে আসা চোখ চমকে খুললেন রাজা মিয়ার মা। মাথা তুলে বারান্দার দিকে তাকালেন। ক্যাডা?

    আমি দবির, দবির গাছি।

    হাছড় পাছড় করে বিছানায় উঠে বসলেন রাজা মিয়ার মা। দউবরা, খাড়ো।

    তারপর কুট্টির কাঁধে ভর দিয়ে পালঙ্ক থেকে নামলেন। কুট্টির একটা হাত ধরে দক্ষিণের বারান্দার দিকে আগালেন। সেই ফাঁকে খেতে বসা ছনুবুড়ির দিকে একবার তাকাল কুট্টি। বুড়ির খাওয়ার গতি এখন আরও বেড়েছে। একটার পর একটা লোকমা যেন নাক মুখ দিয়ে খুঁজছে সে। কুট্টি বুঝে গেল দবির গাছির গলা শুনেই খবর হয়ে গেছে বুড়ির। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাত শেষ করে পালাবে। কূটনামি ধরা পড়ার আগেই চোখের আঐলে (আড়ালে) চলে যাবে।

    দুইমুঠ ভাতের জন্য যে কেন এমন করে মানুষ!

    দক্ষিণের বারান্দায় এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালেন রাজা মিয়ার মা। কীরে গোলামের পো, এতবড় সাহস তর অইল কেমতে?

    রাজা মিয়ার মাকে দেখে মুখটা হাসি হাসি হয়েছিল দবিরের। এখন তার কথায় সেই মুখ চুন হয়ে গেল। কিয়ের সাহস বুজান?

    জানচ না কিয়ের সাহস?

    সত্যঐ জানি না বুজান। খোলসা কইরা কন।

    আমারে না জিগাইয়া আমার বাড়ির গাছ ঝোড়ছস ক্যা? আমার বাড়ির রস আইজ থিকা বেচতে বাইর অইছস!

    বুজানের কথা শুনে দবির আকাশ থেকে পড়ল। আপনে এই হগল কী কইতাছেন বুজান! আপনেরে না কইয়া আপনের বাড়ির গাছ ঝুড়ুম আমি! আপনে বাইত্তে না থাকলে বড়বুজানরে কমু না? আর রস বেচুম কেমতে? রস তো অহনতরি পড়েঐ নাই! পড়বো কেমতে, শীত পড়ছেনি? এই হগল কথা আপনেরে কেডা কইলো?

    দবিরের কথায় থতমত খেলেন রাজা মিয়ার মা। তবু গলার জোর কমল না তার। আগের মতোই জোর গলায় বললেন, যেই কউক, কথা সত্য কী না ক?

    দবির বুঝে গেল এটা ছনুবুড়ির কাজ। কাল বিকালে মিয়াদের ছাড়া বাড়ির খাজুরতলায় তাকে বসে থাকতে দেখেছে বুড়ি।

    দবির বলল, আমি কইলাম বুজছি কথাডা আপনেরে কেডা কইছে। তয় আমার কথা আপনে হোনেন বুজান, দশবারো বছর ধইরা আপনের বাড়ির গাছ ঝুড়ি আমি, কোনওদিন আপনের লগে কথা না কইয়া আপনের গাছে উডি নাই। আপনে বাইত্তে না থাকলে বড়বুজানরে কইয়া যাই। কাইল থিকা উততইরা বাতাসটা ছাড়ছে। লগে লগে ছ্যান লইয়া, ভার লইয়া বাইত থিকা বাইর অইছি আমি। আপনের ছাড়া বাড়ির খাজুরতলায় আইছি। আটখান হাড়ি রাখছি খাজুরতলায়। রাইক্কা বাইত্তে গেছি গা। আইজ বিয়ানে উইট্টা গেছি হালদার বাড়ি। হেই বাইত্তে আছে চাইরখান গাছ। চাইরখান হাড়ি রাইক্কাইছি গাছতলায়। মরনি বুজির লগে বন্দবস্ত কইরাইছি। তারবাদে আইলাম আপনের কাছে। আপনের লগে কথা কইয়া বাইতে গিয়া ভাত খামু তারবাদে যামু আমিনদ্দি সারেঙের বাড়ি। উত্তর মেদিনমন্ডল, দক্ষিণ মেদিনমন্ডল, মাওয়া কালিরখিল এই কয়ড়া জাগার যেই কয়ডা বাড়ির গাছ ঝুড়তে পারি ঝুড়ুম। যাগো লগে বন্দবস্ত অইবো তাগো গাছতলায় হাড়ি রাইক্কামু, যাতে গাছতলায় হাড়ি দেইক্কা অন্য গাছিরা ঐ মিহি আর না যায়। আপনের ছাড়া বাইত্তে হাড়ি রাইক্কা গেছি আমি, গাছে অহনতরি উডি নাই, ছানের একখান পোচও দেই নাই। আইজ আপনের লগে কথা কইয়া কাইল থিকা ঝুড়ুম। যুদি আমার কথা বিশ্বাস না অয় আলফুরে পাডান ছাড়া বাইত্তে গিয়া দেইক্কাহুক। যুদি আমি মিছাকথা কইয়া থাকি তাইলে আপনের জুতা আমার গাল।

    রাজা মিয়ার মা কথা বলবার আগেই কুট্টি বলল, আলফুর লগে আপনের দেহা অয় নাই?

    দবির অবাক গলায় বলল, না।

    বুজানে তো আলফুরে পাডাইছে আপনেরে ডাইক্কানতে!

    আলফুর লগে আমার দেহা অয় নাই।

    রাজা মিয়ার মা বললেন, তাইলে তুই আইলি কেমতে?

    আমি তো নিজ থিকাই আইছি আপনের লগে বন্দবস্ত করতে! বুজান, আলফু যহন বাইত নাই তয় কুট্টিরে পাডান। এক দৌড় দিয়া দেইক্কাহুক আমি মিছাকথা কইছি কিনা!

    রাজা মিয়ার মা মাথা দুলিয়ে বললেন, না তুই মিছাকথা কচ নাই। যা বোজনের আমি বুঝছি।

    কুট্টির দিকে তাকালেন তিনি। ঐ কুট্টি দেকতো কূটনি মাগি আছেনি না ভাত খাইয়া গেছে গা?

    কুট্টি গলা বাড়িয়ে সামনের দিককার বারান্দার দিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখতে পেল ভয় পাওয়া শিশুর মতো টলোমলো পায়ে যত দ্রুত সম্ভব সিঁড়ি ভেঙে উঠানে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছে ছনুবুড়ি। বারান্দায় পড়ে আছে তার শূন্য থালা। সেখানে ঘুর ঘুর করছে হোলাটা।

    পালিয়ে যাওয়া ছনুবুড়ির দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক মায়ায় মন ভরে গেল কুট্টির। দুইমুঠ ভাতের জন্য এক মানুষের নামে আরেক মানুষের কাছে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, গালাগাল খাচ্ছে। হায়রে পোড়া পেট, হায়রে পেটের খিদা!

    ছুনুবুড়িকে বাঁচাবার জন্য ছনুবুড়ির মতো করে ঠাইট না ঠাইট (জলজ্যান্ত) একটা মিথ্যা বলল কুট্টি। না, ছনুবুড়ি নাই বুজান। খাইয়া দাইয়া গেছে গা।

    তবু ছনুবুড়িকে বাঁচাতে পারল না কুট্টি। নিজের বাজখাঁই গলা দশগুণ চড়িয়ে গালিগালাজ শুরু করলেন রাজা মিয়ার মা। ঐ রাড়ি মাগি, ঐ কৃটনির বাচ্চা, এমনু ভাত তর গলা দিয়া নামলো কেমতে? গলায় ভাত আইটকা তুই মরলি না ক্যা? আয় গলায় পাড়াদা তর ভাত বাইর করি।

    কুঁজা শরীর যতটা সম্ভব সোজা করে, দ্রুত পা চালিয়ে মিয়াবাড়ি থেকে নেমে যেতে যেতে বুজানের গালিগালাজ পরিষ্কার শুনতে পেল ছনুবুড়ি। ওসব একটুও গায়ে লাগল না তার। একটুও মন খারাপ হল না। এইসবে কী ক্ষতি হবে ছনুবুড়ির! ভাতটা তো ভরপেট খেয়ে নিয়েছে! পেট ভরা থাকলে গালিগালাজ গায়ে লাগে না।

    .

    ১.১৩

    নূরজাহান মুখ ঝামটা দিয়ে ফেলল, আইজ তুমি আমারে বাইন্দাও রাকতে পারবা না। আইজ আমি বাইর অমুঐ। দুই দিন ধইরা বাইত থনে বাইর অই না। এমুন বন্দি অইয়া মানুষ থাকতে পারে?

    দুপুরের খাওয়া সেরে নূরজাহানকে নিয়ে ঘরের ছনছায় (দাওয়া) বসেছে হামিদা। নিজে বসেছে একটা জলচৌকিতে, জলচৌকির সামনে পিঁড়ি পেতে বসিয়েছে নূরজাহানকে। হাতের কাছে ছোট্ট বাটিতে একটুখানি নারকেল তেল, কোলে পুরানা, খানে খানে দাঁত ভাঙা কালো রঙের একখানা কাঁকুই আর লাল রঙের দুইখানা ফিতা। চুলের গোড়ায় গোড়ায় নারকেল তেল ঘষে অনেকক্ষণ ধরে বিলি দিয়ে, আঁচড়ে হামিদা এখন মেয়ের মাথার উকুন মারবে। তারপর লাল ফিতা জড়িয়ে দুইখানা বেণী বেঁধে দেবে। মাসে দুই তিনবার এই কাজটা করে সে। মেয়ে বড় হয়েছে, এই ধরনের যত্ন তার করতে হয়। তাছাড়া নূরজাহান হয়েছে পাড়া বেড়ান, চঞ্চল ধরনের দুরন্ত মেয়ে। সারাদিন এই বাড়ি ওই বাড়ি, সড়ক চকমাঠ ঘুরে যখন বাড়ি ফিরে চেহারায় তার রোদের কালিমা, হাত পায়ে কাদামাটি, মাথার ঘন কালো চুল ধুলায় ধূসর। কয়দিন পর পর এই মেয়েকে বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট পুকুরে নিয়ে পুকুরের পানি আর ডাঙ্গার মাঝামাঝি আড়াআড়ি করে ফেলে রাখা মরা খাজুরগাছ দিয়ে তৈরি ঘাটলায় বসিয়ে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করায় হামিদা। ধুন্দুলের ছোবায় (ছোবড়া) বাংলা সাবান মাখিয়ে বিলবাওড়ে চড়ে বেড়ানো গরু বাছুরকে যেমন খাল বিলের পানিতে নামিয়ে ঘষে ঘষে গোসল করায় রাখালরা ঠিক তেমন করে নূরজাহানকে গোসল করায় হামিদা। অতিযত্নে মায়া মমতায়ই করে কাজটা, তবে করার সময় বকাবাজির তুবড়ি ফোটায় মুখে। নূরজাহানের কিশোরী শরীরে যেমন দ্রুত চলে তার সাবান মাখা ধুন্দুলের ছোবা ঠিক তেমন দ্রুত চলে মুখ। এমুন মাইয়া আল্লার দুইন্নাইতে দেহি নাই। এমুন আজাজিল (আজরাইল) আমার পেডে অইছে! বুইড়া মাগি অইয়া গেছে তাও সবাব (স্বভাব) বদলায় না। ঐ গোলামের ঝি, তুই কী ব্যাডা যে সব জাগায় তর যাওন লাগবো! মাইয়া ছেইলাগো যে অনেক কিছু মাইন্না চলতে অয় এই প্যাচাইল তর লগে কী হারাজীবন পারতে অইবো আমার? আমি মইরা গেলে করবি কী তুই, আ?

    আজও নূরজাহানকে গোসল করাবার সময় এই ধরনের কথাই বলেছে হামিদা। যখন অবিরাম কথা বলতে থাকে সে তখন মুখে টু শব্দ থাকে না নূরজাহানের। মুখ ব্যাজার করে সব শোনে। কখনও কখনও রাগের মাথায় এত জোড়ে ধুন্দুলের ছোবা নূরজাহানের বুকে পিঠে ঘষতে থাকে হামিদা, শরীর লাল হয়ে যায় নূরজাহানের, ব্যথা পায়, তবু কথা বলে না।

    দুই দিন ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বলে মন মেজাজ তার খারাপ এজন্য ঘাটলায় বসে হামিদার মুখে মুখে দুই একটা কথা আজ সে বলেছে। হামিদা যখন বলল, আমি মইরা গেলে করবি কী তুই? লগে লগে উৎসাহের গলায় নূরজাহান বলল, কবে মরবা তুমি?

    নিজের কথার তালে ছিল বলে মেয়ের কথাটা প্রথমে বুঝতে পারেনি হামিদা। বলল, কী কইলি?

    নূরজাহান নির্বিকার গলায় বলল, আমারে নাওয়াইতে (গোসল) বহাইয়া, খাওয়াইতে বহাইয়া তুমি যে সব সময় খালি কও মইরা যাইবা, কবে মরবা?

    নূরজাহানের কথায় গা জ্বলে গেল হামিদার। ডানহাতে নূরজাহানের থুতনি বরাবর একটা ঠোকনা (ঠোনা) মারল সে। ক্যা আমি মইরা গেলে তুমি সরাজ (স্বরাজ) পাও! যা ইচ্ছা তাই কইরা বেড়াইতে পারো।

    হামিদার ঠোকনায় ব্যথা পেয়েছে নূরজাহান। ব্যথাটা সহ্য করল, করে বলল, হ সরাজ পাই, যেহেনে ইচ্ছা যাইতে পারি। তোমার লাহান বাইত্তে আমারে কে আটকাইয়া রাখবো না। দিনরাইত নিজের ইচ্ছা সাদিন (স্বাধীন) ঘুইরা বেড়ামু। কে কিছু কইবো না।

    তরে বিয়া না দিয়া আমি মরুম না। বিয়ার আগে আমার বাইত্তে তরে আটকাইয়া রাখুম, আর বিয়া দিলে জামাই বাইত্তে এমতেঐ তুই আইটকা থাকবি। হেরা তরে ঘর থিকা বাইর অইতে দিব না।

    নূরজাহান মুখ ভেংচে বলল, ইহ বাইর অইতে দিব না। আমি তাইলে বিয়াই বমু না।

    তারপরও বেশ অনেক কথা হয়েছে মা মেয়ের। শেষ পর্যন্ত বাংলা সাবান দিয়ে মাথার চুল পর্যন্ত ধুয়ে দিয়ে নূরজাহানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে হামিদা। ধোয়া লাল পাড়ের সবুজ একখানা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। শাড়ি পরাবার সময় আজ প্রথম খেয়াল করেছে নূরজাহানকে ব্লাউজ পরানো উচিত, মেয়ে বড় হয়ে গেছে।

    ফুল তোলা টিনের বাক্সে নাইওর যাওয়ার শাড়ি ব্লাউজ তোলা আছে হামিদার। বছর দুইবছরের বর্ষাকালে কেরায়া নৌকা করে স্বামী কন্যা নিয়ে বাপের বাড়ির দেশে যায় হামিদা। লৌহজং ছাড়িয়ে আড়াই তিন মাইল পুবে পয়সা গ্রাম, সেই গ্রামে বাপের বাড়ি হামিদার। বাপ মা কেউ আর এখন বেঁচে নাই। আছে একমাত্র ভাই আউয়াল। গিরস্তালি করে। অবস্থা ভালই। নাইওর গেলে বোন বোনজামাই আর ভাগ্নিকে ভালই খাওয়ায়।

    আজ দুপুরে মেয়ের জন্য নিজের নাইওর যাওয়ার লাল ব্লাউজখানা বের করেছে হামিদা। মেয়েকে পরিয়ে দিয়েছে। বেশ টাইট হয়ে ব্লাউজ গায়ে লেগেছে নূরজাহানের। সবুজ রঙের লাল পেড়ে শাড়ি আর ব্লাউজে হঠাৎ করেই রূপ যেন তারপর খুলে গেছে নূরজাহানের। এতক্ষণ ধরে বকাবাজি করা মেয়েটাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে হামিদা। সাবান দিয়ে গোসল করাবার ফলে, আসন্ন শীতকাল, মানুষের ত্বকে এমনিতেই লেগে গেছে হাওয়ার টান, নূরজাহানের হাত পা মুখ গলা খসখসা দেখাচ্ছিল। কোথাও কোথাও খড়ি ওঠা। মাথার চুল সাবান ঘষার ফলে উড়াউড়া। বেশ অন্যরকম লাগছে মেয়েটিকে দেখতে।

    হামিদা তারপর হাতে পায়ে মুখে গলায় সউষ্যার (সরষার) তেল মেখে দিয়েছে নূরজাহানের। চুলে হাত দেয়নি। বলেছে ভাত খেয়ে উকুন মেরে দেবে, চুল আঁচড়ে বেণী করে দেবে। এখন সেই কাজেই বসেছে।

    তবে নূরজাহানকে গোসল করার সময় মেজাজ যেমন তিরিক্ষি হয়েছিল এখন আর সেটা নাই। ভাত খাওয়ার ফলে মুখে মেজাজে প্রশান্তির ভাব আসছে। বাটি থেকে আঙুলের ডগায় তেল নিয়ে নূরজাহানের চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে দিচ্ছে। সেই ফাঁকে দুই একটা উকুন ধরে এক বুড়া আঙুলের নখের ওপর রেখে অন্য বুড়া আঙুলের নখে চেপে পুটুস করে মারছে। মাঝে মাঝে নূরজাহানকেও মারতে দিচ্ছে একটা দুইটা।

    একবার একটা বড় কালো উকুন মারতে মারতে নূরজাহান বলল, ও মা, উকুনের এই হগল নাম দিছে কেডা? বড় উকুনডিরে কয় ‘বুইড়া’ মাজরোডিরে (মেজ) কয় ‘পুজাই’ ছোডডিরে কয় ‘লিক’।

    হামিদা বলল, কইতে পারি না। মনে অয় আগিলা (আগের) দিনের ময়মুরব্বিরা দিয়া গেছে।

    আগিলা দিনেও উকুন আছিল?

    আছিল না! মাইনষের মাথা যতদিন ধইরা আছে উকুনও হেতদিন ধইরা আছে।

    তারপর উকুন নিয়ে আর একটা প্রশ্ন করল নূরজাহান। ও মা, চাইম্মা উকুন কারে কয়?

    ততক্ষণে মেয়ের মাথায় তেল দেওয়া শেষ করেছে হামিদা। এখন দাঁতভাঙা কাঁকুই দিয়ে যত্ন করে মাথা আঁচড়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় বলল, কোনও কোনও মাইনষের শইল্লের চামড়ায় এক পদের উকুন অয়। লালটা লালটা (লালচে)। হেইডিরে কয় চাই উকুন। চামড়ার লগে থাকে দেইক্কা এমুন নাম। তয় চাইম্মা উকুন অওন ভাল না। ময়মুরব্বিরা কয় চাইম্মা উকুন অয় বালা মসিবত দেইক্কা। যাগো শইল্লে অয় তাগো কপালে খারাপি থাকে।

    আমার শইল্লে মনে অয় চাইম্মা উকুন অইছে।

    হামিদা আঁতকে উঠল। নিজের অজান্তে হাত থেমে গেল তার। নূরজাহানের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে আর্তগলায় বলল, কী কইলি? চাইম্মা উকুন অইছে?

    নূরজাহান মজার মুখ করে হাসল। মনে অয়।

    কেমতে মনে অয়, দেকছসনি?

    না দেহি নাই।

    তয়?

    কইলাম যে মনে অয়।

    নূরজাহানের মুখ আবার আগের দিকে ঘুরিয়ে দিল হামিদা। জোরে টেনে টেনে বেণী বাঁধতে লাগল। নূরজাহান একবার উহ করে শব্দ করল তারপর বলল, এত জোরে বেণী বান্দ ক্যা? দুক্কু পাই না?

    হামিদা তবু নিজেকে সংযত করল না। আগের মতোই শক্ত হাতে বেণী বাঁধতে বাঁধতে বলল, আমার লগে অলঐক্কা (অলক্ষুণে) কথা কইলে এমুনঐ করুম।

    তুমি যুদি আমারে বাইত থনে আইজ না বাইর অইতে দেও তাইলে আরও বহুত কথা কমু দেইক্কোনে।

    যত যাই কচ বাইর অইতে দিমু না।

    তখনই মুখ ঝামটা দিয়ে ওই কথাটা বলল নূরজাহান। আইজ তুমি আমারে বাইন্দাও রাকতে পারবা না। আইজ আমি বাইর অমুঐ। দুই দিন ধইরা বাইত থনে বাইর অই না। এমনু বন্দি অইয়া মানুষ থাকতে পারে?

    হামিদাও নূরজাহানের মতো মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, পারবো না ক্যা? আমরা পারি কেমতে?

    তুমি আর আমি কি এক অইলাম?

    একঐ। আমি মা তুই মাইয়া। দুইজনেঐ মাইয়ালোক।

    ততক্ষণে লাল ফিতা দিয়ে চমৎকার দুইটা বেণী বেঁধে ফেলেছে হামিদা। এখন তেলের বাটি আর কাঁকুই হাতে উঠে দাঁড়াল। শাসনের গলায় মেয়েকে বলল, বাড়ির বাইরে একহান পাও তুই দিতে পারবি না। তর বাপে হেদিন আমারে কইছে আমি যেমতে তরে চালামু অমতেঐ তর চলন লাগবো।

    হামিদা উঠে দাঁড়াবার পরও মুখ ব্যাজার করে বসেছিল নূরজাহান। এবার ঘেরজালে আটকা পড়া নলা মাছের মতো লাফ দিয়ে উঠল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল, না আমি চলুম না, তোমার ইচ্ছায় আমি চলুম না, আমি আমার ইচ্ছায় চলুম।

    এ কথা শুনে মাথায় রক্ত লাফিয়ে উঠল হামিদার। হাতে ধরা কাঁকুই তেলের বাটি ছুঁড়ে ফেলে থাবা দিয়ে নূরজাহানের একটা বেণী ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, তর ইচ্ছা মতন তরে আমি চলাইতাছি, বাইত থনে তরে আমি বাইর করতাছি, খাড়া।

    বেনী ধরে টানতে টানতে নূরজাহানকে রান্নাচালার সামনে নিয়ে এল। রান্নাচালার মাথার কাছে সব সময় থাকে একগাছা দড়ি। একহাতে নূরজাহানের একটা বেণী ধরে রেখেই অন্যহাতে দড়িটা টেনে নামাল সে। সেই দড়ি দিয়ে কষে হাত দুইখানা বাঁধল নূরজাহানের। দড়ির অন্যমাথা বাঁধল রান্নাচালার একটা খুঁটির সঙ্গে। তারপর ধাক্কা দিয়ে নূরজাহানকে বসিয়ে দলি মাটিতে। পারলে অহন বাইর অ বাইত থন, দেহি কেমতে বাইর অছ!

    রাগে দুঃখে নূরজাহানের তখন চোখ ফেটে যাচ্ছে। হাত দুইটা বাধা, পা ছড়িয়ে রান্নাচালার মাটিতে বসা নূরজাহান তারপর ঙো ঙো করে কাঁদতে লাগল।

    .

    ১.১৪

    দবির গাছি বাড়ি ফিরল বিকালবেলা। শেষ হেমন্তের রোদ তখন গেন্দা (গাঁদা) ফুলের পাপড়ির মতন ছড়িয়েছে চারদিকে। চকমাঠ গাছপালা আকাশ ঝকঝক করছে। থেকে থেকে বইছে উত্তরের হাওয়া। এই হাওয়ায় মনের ভিতর অপূর্ব এক অনুভূতি হচ্ছে দবিরের। গভীর আনন্দে ভরে আছে মন মৌশুমের প্রথম গাছ ঝুড়ল আজ। খুব সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেছে মিয়াদের ছাড়াবাড়িতে। তারপর থেকে একটানা গাছ ঝুড়েছে। নাওয়া খাওয়ার কথা মনে ছিল না। আটখানা গাছ ঝুড়তে বিকাল হয়ে গেছে। তারপর প্রতিটা গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে এইমাত্র বাঁশের বাখারির শূন্য ভার কাঁধে বাড়ি ফিরল। হাতের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠেছে ক্ষুধা। সেই ক্ষুধা এখন আরও তীব্র হয়েছে। একদিকে মনের আনন্দ অন্যদিকে ক্ষুধা সব মিলিয়ে আশ্চর্য এক অনুভূতি এখন। বাড়িতে উঠে সারেনি চিৎকার করে হামিদাকে ডাকল। ও নূরজাহানের মা, তাড়াতাড়ি ভাত বাড়ো। খিদায় জান বাইর অইয়া গেল।

    ঘরের সামনে সেই জলচৌকিতে বসে পুরানা ছেঁড়া মোটা একখানা কাঁথায় তালি দিচ্ছে হামিদা। কাঁথা কোলের ওপর রেখে অতিযত্নে কাজটা করছে আর রান্নাচালার দিকে তাকাচ্ছে। সেখানে দুইহাত বাঁধা নূরজাহান মাটিতে শুয়ে আছে করুণ ভঙ্গিতে। বাঁধা হাত দুইটা রেখেছে বুকের কাছে। অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে খানিক আগে থেমেছে। এখন চোখ বোজা। যে কেউ দেখে ভাববে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা। কিন্তু হামিদা জানে ঘুমায়নি নূরজাহান। চোখ বুজে পড়ে আছে।

    মেয়েকে এভাবে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখে এখন মায়া লাগছে হামিদার। ইচ্ছা করছে হাতের বাঁধন খুলে ছোট্ট শিশুর মতো টেনে কোলে নেয় মেয়েকে। দুইহাতে বুকে চেপে আদর করে।

    কিন্তু এই কাজ করতে গেলেই লাই পেয়ে যাবে নূরজাহান। মাকে পটিয়ে পাটিয়ে এখনই ছুটে বের হবে বাড়ি থেকে। কোথায় চলে যাবে কে জানে! তারচেয়ে এই ভাল, শাসনের সময় শাসন, আদরের সময় আদর।

    তবে বাড়ির উঠানে এসে রান্নাচালায় হাত বাঁধা নূরজাহানকে শুয়ে থাকতে দেখে দবির একেবারে থতমত খেয়ে গেল। একবার নূরজাহানের দিকে তাকাল তারপর তাকাল হামিদার দিকে। ক্ষুধার কথা ভুলে বলল, কী অইছে? মাইয়াডারে বাইন্দা থুইছো ক্যা?

    কথাটা ঘরের ভিতর রেখে এসে হামিদা বলল, তয় কী করুম! তোমার মাইয়ায় কথা হোনে না। জোর কইরা বাড়িতথন বাইর অইয়া যাইতে চায়।

    এর লেইগা বাইন্দা থুইবা? আমার মাইয়ায় কি গরু বরকি (ছাগল)? হায় হায় করছে কী!

    শূন্য ভার কাঁধ থেকে নামিয়ে ছুটে নূরজাহানের কাছে গেল দবির। চটপটা হাতে বাঁধন খুলে দিল। নূরজাহান যেই কে সেই। যেমন শুয়েছিল তেমনই শুয়ে রইল। এমন কী বাঁধা হাত যেভাবে ছিল সেভাবেই রইল, একটুও নড়াল না। যেন গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে সে, অচেতন হয়ে আছে, এই অবস্থায় হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে, উদিসই পায়নি। দেখে হামিদা বলল, ইস কুয়ারা (ঢং) দেইক্কা মইরা যাই। এই ছেমড়ি ওট, অইছে।

    দবির বলল, এমুন করতাছ ক্যা মাইয়াডার লগে? মাইয়াডা তো ঘুমাইয়া গেছে।

    হ কইছে তোমারে! কিয়ের ঘুম, ও তো জাগনা।

    নূরজাহানের দুইহাতে দড়ির মতো ফুটে উঠেছে দড়ির দাগ। সেই দাগ দেখে হায় হায় করে উঠল দবির। হায় হায়রে হাত দুইখান শেষ কইরা হালাইছে মাইয়াডার।

    তারপর হাছড় পাছড় করে টেনে কোলে তুলল নূরজাহানকে। ওট মা ওট। আমি দেখতাছি কী অইছে!

    নূরজাহান সত্যি সত্যি ঘুমায়নি। বাপের আদরে বুকের ভিতর উথাল দিয়ে উঠল তার অভিমানের কান্না। নাক টেনে ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে লাগল সে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, হারাদিন বাইত্তে বইয়া থাকতে ভাল্লাগেনি মাইনষের? বাইর অইলে কী হয়? আমি কি ডাঙ্গর অইয়া গেছিনি, আমার কি বিয়া অইয়া গেছেনি যে বাইত থনে বাইর অইতে পারুম না!

    হামিদা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, না ডাঙ্গর অন নাই আপনে, আপনে অহনতরি নাননা (ছোট) বাচ্চা।

    এবার হামিদাকে ধমক দিল দবির। এই চুপ করো তুমি। হারাদিন খালি মাইয়াডার লগে লাইগগা রইছে!

    তারপর কোল থেকে নামাল নূরজাহানকে। এই আমি তরে ছাইড়া দিলাম মা। যা যেহেনে ইচ্ছা ঘুইরা আয়, দেহি কেডা তরে আটকাইয়া রাখে?

    আঁচলে ডলে ডলে চোখ মুছল নূরজাহান। একবার মায়ের দিকে আর একবার বাবার দিকে তাকাল তারপর হি হি করে হেসে বাড়ির নামার দিকে ছুটতে লাগল। চোখের পলকে হিজল ডুমুরে জঙ্গল হয়ে থাকা টেকের ওদিক দিয়ে শস্যের মাঠে চলে গেল। দবির মুগ্ধ চোখে ছুটতে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

    উত্তরের হাওয়ায় শাড়ির আঁচল উড়ছে নূরজাহানের, পিঠে দুলছে বেণী, পায়ের তলায় সবুজ শস্যের মাঠ, মাথার ওপর হলুদ রোদে ভেসে যাওয়া বিশাল আকাশ, এই রকম পরিবেশে হরিণীর মতো ছুটতে থাকা নূরজাহানকে বাস্তবের কোনও মানুষ মনে হয় না, মনে হয় স্বপ্নের মানুষ।

    এই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে ক্ষুধার কথা ভুলে গেল দবির। আজ প্রথম গাছ ঝুড়েছে, ভুলে গেল। হামিদার দিকে তাকিয়ে বলল, দেহে, চাইয়া দেহো কত সোন্দর দেহা যাইতাছে মাইয়াডারে। এর থিকা সোন্দর কিছু আল্লার দুইন্নাইতে আছে, কও? বনের পাখিরে কোনওদিন খাঁচায় আটকাইয়া রাকতে অয় না, পাখি যেমতে উইড়া বেড়ায়, বেড়াউক।

    হামিদা গম্ভীর গলায় বলল, তোমার আল্লাদে যে কোন ক্ষতিডা একদিন অইবো মাইয়ার, বোজবা। তহন কাইন্দাও কূল পাইবা না।

    .

    ১.১৫

    দেশগ্রামের যে কোনও বাড়িতে ঢোকার আগে নিজেকে একটু পরিপাটি করেন মান্নান মাওলানা। মাথার গোল টুপিখানা খুলে টাক পড়া মাথায় একবার দুইবার হাত বুলান তারপর টুপিখানায় দুই তিনটা ফুঁ দিয়ে মাথায় পরেন। নাদুসনুদুস দেহ তাঁর ঢাকা থাকে হাঁটু ছাড়িয়ে বিঘতখানেক নেমেছে এমন লম্বা পানজাবিতে। লুঙ্গি পরেন গুড়মুড়ার ওপরে। লম্বা পানজাবিতে ঢাকা পড়ে থাকার ফলে পায়ের কাছে লুঙ্গির অল্প দেখা যায়। পানজাবি পরেন ঢোলাঢালাই, হলে হবে কী, দিন যত যাচ্ছে, বয়স যত বাড়ছে ভূড়িখানাও ততই বাড়ছে তার। নাভির কাছে গিট দিয়ে পরেন লুঙ্গি। এমনিতেই অতিকায় ভুড়ি তার ওপর লুঙ্গির গিট, পেটের কাছে এসে ঢোলা পানজাবিতেও বেড় পায় না তাঁর দেহ। টাইট হয়ে অনেকটা গেঞ্জির কায়দায় ভুঁড়িতে সেটে থাকে।

    মুখখানা মান্নান মাওলানার মাঝারি মাপের চালকুমড়ার মতন। ছোট্ট খাড়া নাকখানার তলা নিখুঁত করে কামানো। দুই পাশের জুলপি থেকে ঘন হয়ে নেমেছে চাপদাঁড়ি। থুতনির কাছে এসে সেই দাঁড়ি যোগ হয়ে নেমেছে বুক বরাবর। বেশ অনেককাল আগেই পাক ধরেছে দাঁড়িতে। তখন থেকেই নিয়মিত মেন্দি (মেহেদি) লাগাচ্ছেন। ফলে পাকা দাঁড়িগুলিতে লাল রঙ ধরেছে, কাঁচাগুলি হয়েছে গভীর কালো।

    চোখ দুইটা মান্নান মাওলানার ষাড়ের মতন, যেদিকে তাকান তাকিয়েই থাকেন, সহজে পলক পড়ে না চোখে। যেন কথা বলবার দরকার নাই, হাত পা ব্যবহার করবার দরকার নাই, দৃষ্টিতেই ভস্ম করে ফেলবেন শত্রুপক্ষ। এইজন্য মান্নান মাওলানার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না কেউ। ভুল করে অচেনা কেউ তাকালেও দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে পলকেই সরিয়ে নেয় চোখ।

    আজ বিকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন মান্নান মাওলানা। চক বরাবর হাঁটতে শুরু করেছেন, শোনেন খাইগো (খানদের) বাড়ির মসজিদে আছরের আজান হচ্ছে। এই মসজিদের আজান শুনলেই বুকের ভিতর মৃদু একটা ক্রোধ টের পান তিনি। খানেরা কী যেন কী কারণে মান্নান মাওলানাকে একদমই দেখতে পারেন না। বাড়ির লাগোয়া লাখ লাখ টাকা খরচা করে মসজিদ করলেন। চারখানা মাইক লাগালেন মিনারের চারদিকে। দেশগ্রামে বিদ্যুৎ নাই, ব্যাটারিতে চলে মাইক, ব্যাপক খরচ। সেই খরচের তোয়াক্কা করেন না তারা। অবশ্য চারমুখি চারখানা মাইক দেওয়াতে আজানের ললিত সুর হাওয়ার টানে পলকে পৌঁছে যায় চারপাশের গ্রামে। এক মসজিদের আজানে কাজ হচ্ছে অনেক গ্রামের। এ এক বিরাট ছোয়াবের কাজ।

    কিন্তু মসজিদ করতে গিয়ে কেন যে নিজ গ্রামের লোকের দিকে তাকালেন না তারা, কেন যে মান্নান মাওলানাকে মসজিদের ইমাম না করে ইমাম আনালেন নোয়াখালী থেকে, এই রহস্য মাথায় ঢোকে না মান্নান মাওলানার। মসজিদ তৈরি হওয়ার সময় সারাদিন ঘুরঘুর করেছেন খান বাড়িতে। মন দিয়ে তদারক করেছেন মসজিদের কাজের, আজানের সময় আজান দিয়েছেন, মসজিদের কাজ করছে যেসব ওস্তাগার জোগালু সেই সব ওস্তাগার জোগালুদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন, ইমামতি করেছেন। কিন্তু মসজিদ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর আর ডাক পড়ল না। ক্রোধটা সেই থেকে তৈরি হয়ে আছে মান্নান মাওলানার বুকে। যদিও তিনি বোঝেন ইমাম সাহেবের কোনও দোষ নাই, তাঁকে আনা হয়েছে বলেই এসেছেন, চাকরিও করছেন ধর্মের কাজও করছেন, তার জায়গায় মান্নান মাওলানা হলেও একই কাজই করতেন, তবু ক্রোধটা হয়। পাঁচ ওয়াক্তের আজানে পাঁচবার মনে পড়ে তার ইমামতি আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছেন খান বাড়ির কর্তারা। তার ক্ষমতা চলে গেছে আরেকজনের হাতে। তবু আজান আজানই, যেই দেউক, আজান হলেই নামাজ পড়তে হরে, ধর্মের বিধান।

    মান্নান মাওলানা নামাজ পড়তে বসলেন। চকের কয়েকটা খেতে কলুই (মটর) বোনা হয়েছে, সরিষা বোনা হয়েছে, কোনও কোনও খেত ফাঁকা, আগাছা পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে শস্য দেওয়ার জন্য। কোনও কোনওটায় গজিয়েছে গাঢ় সবুজ দূর্বাঘাস। এরকম এক দূর্বাঘাসের জমিতে নামাজ পড়তে বসেছেন তিনি। হু হু করে বইছে উত্তরের হাওয়া। হাওয়ায় শীত শীত ভাব। তবে হেমন্তের রোদ কম তেজাল না, রোদে বসে নামাজ পড়ছেন বলে শীতভাব টের পেলেন না মান্নান মাওলানা। মোনাজাত শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনে পড়ল মেন্দাবাড়ির বড়সারেঙের বড়মেয়ের বড়ছেলে এনামুল ঢাকার টাউনে থান কাপড়ের ব্যবসা করে, কন্ট্রাক্টরি করে অঢেল টাকা পয়সার মালিক হয়েছে। ধর্মপ্রাণ নরম স্বভাবের যুবক। মান্নান মাওলানা কয়েকবার তাকে দেখেছেন। বিধবা খালা দেলোয়ারা থাকে বাড়িতে। তাকে দেখতে আসে। খালার জন্য বেদম টান। এনামুলের। খালার কথায় ওঠে বসে।

    আছরের নামাজ শেষ করার পর মান্নান মাওলানার আজ মনে হল দেলোয়ারার কাছে গেলে কেমন হয়! তাকে যদি বলা যায়, বাড়ির লগে একখান ছাড়াবাড়ি পইড়া রইছে তোমগো, কোনও ভাই বেরাদর নাই, দুই বইন তোমরা, বড় বইন থাকে টাউনে তুমি থাক দ্যাশে, বইনপোর (বোনের ছেলে) এতবড় অবস্থা, তারে কও ছাড়া বাইত্তে একখান মজজিদ (মসজিদ) কইরা দিতে। আল্লার কাম তো অইবোঐ, দ্যাশ গেরামে নামও অইব। ইমাম লইয়া চিন্তা করতে অইবো না, আমি ইমামতি করুম। টেকা পয়সা বেশি লাগবে না।

    এসব কথা ভেবে মনের ভিতর বেশ একটা আনন্দ টের পেলেন মান্নান মাওলানা। দ্রুত হেঁটে মেন্দাবাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন। নিজেকে যেভাবে পরিপাটি করার করলেন, সব শেষে পানজাবির পকেট থেকে বের করলেন গোলাপি রঙের ছোট্ট একখানা চিরুনি। চিরুনির দাঁতের ফাঁকে কালো তেলতেলে ময়লা জমে পুর (পুরু) হয়ে আছে। এক হাতে ফরফর করে চিরুনি পরিষ্কার করলেন তারপর মন দিয়ে দাঁড়ি আঁচড়াতে লাগলেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান – ইভন রিডলি
    Next Article শ্রেষ্ঠ গল্প – ইমদাদুল হক মিলন

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.