Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প108 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৭. শেষ বিকালে ক্যাম্পে এসে

    ০৭.

    শেষ বিকালে ক্যাম্পে এসে পৌঁছোল অনীশরা। ঘুর পথে চীনা সেনাদের গুলি এড়িয়ে ফিরতে বেশ সময় লেগেছে। তাছাড়া সে পথে তুষারপাতও হচ্ছিল খুব। যদিও এদিকে তুষারপাত থেমেছে এখন। ক্যাম্পের পিছনে বরফ পাহাড়ের মাথায় শেষবারের মতো উঁকি দিচ্ছে সূর্য। তার মৃদু আলো ছড়িয়ে পড়েছে তুষারমোড়া ক্যাম্প চত্বরে। গাড়ি প্রবেশ করল ক্যাম্পের ভিতর। লেফটানেন্ট ড্রাইভারকে বললেন, গাড়িটা বাড়ির পিছন দিকে নিয়ে চলো। বস্তার মধ্যে যদি নেকড়ে থাকে তবে তো আপাতত সেগুলোকে খাঁচার মধ্যে রাখারই ব্যবস্থা করতে হবে।

    সেইমতো গাড়িটাকে নিয়ে আসা হল বাড়ির পিছন অংশে খাঁচাগুলোর সামনে।

    গাড়ি থেকে প্রথমে নামল সবাই। গাড়ির মাথায় তুষারের আড়ালে চাপা পড়ে আছে বস্তাগুলো। সেগুলো সাবধানে মাটিতে নামানো হল। একজন সেনা প্রথমে আর্মি নাইফ দিয়ে একটা বস্তা কাটতেই তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল পাতলা পাইন কাঠের তৈরি বেশ বড় একটা বাক্স। অনায়াসে তার মধ্যে একটা ঘুমন্ত নেকড়েকে রাখা যায়। সেই সেনা কান পাতল বাক্সর গায়ে। তারপর লেফটানেন্ট ছেত্রীর উদ্দেশ্যে বলল, সম্ভবত প্রাণীটার ঘুম ভাঙেনি। কোনও শব্দ আসছে না। হয়তো বা প্রাণীটা মরে গিয়েও থাকতে পারে।

    তবুও সাবধানের মার নেই। অনীশকে কিছুটা তফাতে দাঁড়াতে বলে বাক্সটার দিকে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে সেটাকে ঘিরে দাঁড়াল সেনারা। লেফটানেন্ট ছেত্রীও কোমর থেকে তার রিভলবার খুলে হাতে নিলেন। যাতে ঘুম ভেঙে প্রাণীটা কাউকে আক্রমণ করার চেষ্টা করলেই তাকে এতগুলো আগ্নেয়াস্ত্রর গুলিতে আঁঝরা করে দেওয়া যায়।

    একজন সৈনিক গাড়ি থেকে শাবলের মতো একটা স্প্যানার নামিয়ে আনল। তারপর সেটা দিয়ে সন্তর্পণে চাপ দিল বাক্সটার ঢাকনার খাঁজে। নরম পাইন কাঠের ঢাকনাটা খুলে মাটিতে খসে পড়ল। এক পা এগিয়ে সেই সৈনিক উঁকি দিল বাক্সর ভিতর। তারপর বিস্মিতভাবে চিৎকার করে উঠল, নেকড়ে নয়। ডেডবডি স্যার! চীনা সৈনিকের বডি।

    তার কথা শুনে অন্য সবাইও ঝুঁকে পড়ল বাক্সটার ওপর। অনীশও এগিয়ে এল বাক্সটার কাছে। হ্যাঁ, বাক্সটার ভিতর দুমড়ে মুচড়ে রাখা আছে একটা মানুষের মৃতদেহ। গায়ে তার সামরিক পোশাক। চীনা সেনাবাহিনীর সামরিক উর্দি!

    সবাই নিস্তব্ধ। এরপর একে একে খুলে ফেলা হল চটের চাদর মোড়া অন্য তিনটে বাক্সও। তাদের মধ্যেও তিনটে মানব দেহ!

    লেফটানেন্ট ছেত্রীর নির্দেশে এরপর দেহগুলোকে বাক্স থেকে বার করে পরপর পাশাপাশি শোয়ানো হল। অনীশের যেন কেমন চেনা লাগল তাদের হিমশীতল মুখগুলো। তাদের দিকে তাকিয়ে লেফটানেন্ট ছেত্রী বলে উঠলেন, আরে এদেরই তো খুঁজছিলাম আমরা!

    বিস্মিত অনীশ বলে উঠল, কারা এরা?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, মাস ছয় আগে চীনা সেনাদের এই দলটা সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করেছিল এদেশে। পাঁচজনের দল ছিল। তার মধ্যে চারজনের দেহ পড়ে আছে এখানে। আমার ফাইলে এদেরই ছবি দেখেছেন আপনি। আমাদের সেনারা গুলি করে এদের মারে। ভালো করে দেখুন এদের শরীরে গুলির ক্ষত আছে। এ জায়গার কাছাকাছি ঘটনাটা ঘটেছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কীভাবে যেন লোপাট হয়ে যায় এদের দেহ। আমাদের একটা সন্দেহ হয়েছিল যে ভাইমার হয়তো তার এই নেকড়ে খামারে এনে লুকিয়ে ফেলেছেন এদের দেহ। গত ছ মাস ধরে হন্যে হয়ে তল্লাশি চালিয়েও এই দেহগুলোর খোঁজ পাইনি আমরা। তিন দিন আগে এদের খোঁজ করতে গিয়েই নেকড়েদের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। যদিও একজনের দেহ এখানে নেই। ওদের দলনেতার দেহ। আমাদের অনুমান তবে সত্যি। ভাইমার দেহগুলোকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন, তারপর ওদেশে পাচার করছিলেন। এজন্যই চীনা সেনাদের এত আগ্রহ ছিল বস্তাগুলোর ওপর।

    লেফটানেন্ট ছেত্রীর কথা শেষ হলে বিস্মিত অনীশ বলল, দেহগুলো এমন অবিকৃত রইল কীভাবে? মনে হয় লোকগুলো ঘুমিয়ে আছে।

    লেফটানেন্ট জবাব দিলেন, বরফের নীচে থাকলে মানুষের দেহ শুধু ছমাস কেন, বছরের পর বছর অবিকৃত থেকে যায়। নিশ্চয়ই বরফের নীচে চাপা রাখা ছিল দেহগুলো। এ কথা বলে লেফটানেন্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন সেই মৃতদেহগুলো।

    হঠাৎ একটা মৃতদেহর ওপর ঝুঁকে পড়লেন তিনি। তার মুখে কী যেন গেঁথে আছে। তার মুখ থেকে জিনিসটা তিনি খুলে নিলেন। ঈষৎ নীলাভ একটা কাচের টুকরো। জিনিসটা দেখেই অনীশের অন্য একটা জিনিসের কথা মনে পড়ে গেল। তার ঘরের বাতির কাঁচটাও এমন। নীলাভ ছিল! যেটা সে ছুঁড়ে মেরেছিল নেকড়ের মুখ লক্ষ্য করে।

    ভালো করে মরদেহগুলো খুঁটিয়ে দেখার পর লেফটানেন্ট গম্ভীরভাবে নির্দেশ দিলেন, আপাতত এই মরদেহগুলোকে একটা খাঁচার ভিতর রেখে তালা দাও। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। কাল সকালে যা করার করা যাবে। সত্যিই তখন সূর্যদেব মুখ লুকিয়েছেন বরফ পাহাড়ের আড়ালে। শুধু তার লাল আভাটুকু জেগে আছে পাহাড়ের মাথায়।

    লেফটানেন্ট ছেত্রীর নির্দেশমতো তার সেনারা মৃতদেহগুলোকে ধরাধরি করে একটা খাঁচার ভিতর রাখতে লাগল। অনীশ, লেফটানেন্ট ছেত্রীকে প্রশ্ন করলেন, তবে ভাইমার তার নেকড়েগুলোকে নিয়ে গেলেন কোথায়?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী জবাব দিলেন, জানি না। হয়তো তিনি তাদের নিয়ে আত্মগোপন করেছেন পাইনবনে অথবা এই বরফরাজ্যের কোথাও। লুকিয়ে থাকার জায়গার এখানে অভাব নেই। তবে এতগুলো প্রাণী নিয়ে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবেন না তিনি। রাতে টহল দেবে সেনারা। সীমান্ত সিল করার ব্যবস্থা করছি। কাল সকাল থেকে বড় সেনাদল তল্লাশি অভিযান চালাবে চারপাশে। ভাইমার ঠিক ধরা পড়ে যাবেন।

    দেহগুলোকে একটা খাঁচার মধ্যে ঢোকানো হয়ে গেল। হঠাৎ অনীশের মনে পড়ে গেল ড্রাইভার পবনের কথা। সে কই?

    অনীশ লেফটানেন্টকে বলল, আমার ড্রাইভার পবনকে দেখতে পাচ্ছি না। সে মনে হয় ঘরেই আছে। ও ঘরে আমার মালপত্রও আছে।

    লেফটানেন্ট বললেন, হ্যাঁ, সেগুলো নিয়ে নিন। ড্রাইভারকেও সঙ্গে নিন। আজ রাতে এখানে নয়, আমাদের ক্যাম্পে থাকবেন আপনি। কাল ভোরে ফেরার পথ ধরবেন।

    লাশগুলোকে খাঁচায় ঢোকানো হয়ে যাবার পর যে লোকটা বাক্সগুলো খুলেছিল সে লোকটা আর একজনকে খাঁচার সামনে পাহারায় রেখে অনীশ আর অন্য সেনাদের নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন লেফটানেন্ট ছেত্রী। গাড়িটা বাড়ির পিছন থেকে এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনের বারান্দার কাছে। গাড়ি থেকে নেমে অনীশের সঙ্গে বারান্দায় উঠে এলেন ছেত্রী আর তার সেনারা।

    অনীশের ঘরের দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ। অনীশ বার কয়েক হাঁক দিল পবনের নাম ধরে। কিন্তু ভিতর থেকে কোনও সাড়া এল না। আশঙ্কার মেঘ তৈরি হল অনীশের মনে। ছেত্রী সাহেবের দিকে তাকালেন তিনি। লেফটানেন্ট ছেত্রী একজন সেনাকে বললেন, দরজা ভেঙে ফেলো।

    সে অনীশকে জিগ্যেস করল, দরজার ছিটকিনিটা কোথায়? ওপরে, মাঝে, না নীচে?

    অনীশ জবাব দিল, ওপরে।

    আন্দাজ মতো সে জায়গা লক্ষ্য করে হাতের অস্ত্র থেকে গুলি চালাল লোকটা। অন্য একজন লোক এরপর দরজাটা ধাক্কা দিতেই ছিটকিনি ভেঙে দরজাটা খুলে গেল। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ঘরে ঢুকল সবাই। কিন্তু ঘরে কেউ নেই!

    কোথায় গেল পবন?

    একজন সেনা তার অস্ত্র উঁচিয়ে ঘর সংলগ্ন বাথরুমটাও দেখে এল। না সেখানেও কেউ নেই!

    লেফটানেন্ট বিস্মিতভাবে বললেন, ঘর বন্ধ, অথচ কোথায় গেল লোকটা?

    হঠাৎ একটা খচমচ শব্দ শোনা গেল। শব্দটা আসছে খাটের নীচ থেকে।

    সঙ্গে সঙ্গে খাটের নীচের দিকে সবার অস্ত্রের নল ঘুরে গেল। কয়েক মুহূতাঁর মধ্যে খাটের নীচ থেকে উঁকি দিল একটা মাথা। না নেকড়ে নয়, পবন! অনীশ বিস্মিতভাবে বলে উঠল, ওখানে কী করছিলে তুমি?

    কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল পবন। তারপর আতঙ্কিতভাবে বলল, নেকড়ে! নেকড়ে!

    অনীশ বলল, কোথায় নেকড়ে?

    কয়েক মুহূর্ত ধাতস্থ হতে লাগল পবনের। তারপর সে বলল, আপনারা চলে যাবার পর এই ফাঁকা ক্যাম্পে কেমন যেন গা-ছমছমে ভাব লাগছিল আমার। তাই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তুষারপাতও শুরু হয়েছিল বাইরে। খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ বিকালের দিকে ঘুম ভেঙে গেল একটা শব্দে। উঠে দেখি একটা বিশাল নেকড়ে দরজার নীচের ওই ফোকর দিয়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে!

    আমি চিৎকার করলাম। তারপর আপনার ব্যাগটা ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে। দেখুন ওই যে ব্যাগটা দরজার কোণে পড়ে আছে। কিন্তু প্রাণীটা তারপরও ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল, কিন্তু বাইরে কীসের যেন শব্দ পেয়ে সম্ভবত চলে গেল এ জায়গা ছেড়ে। কিন্তু প্রাণীটা যদি আবার ফিরে আসে সে ভয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে ছিলাম আমি।

    অনীশ বলল, প্রাণীটা যদি ঘরে ঢুকত তবে তো খাটের তলা থেকেই টেনে বার করত তোমাকে। তুমি বাঁচতে না। নেকড়েগুলো পরপর দু-রাত এভাবে আমাকেও ধরার চেষ্টা করেছিল এ ঘরে। হয়তো আমাদের ফিরে আসার শব্দ শুনেই সে পালিয়েছে। বেঁচে গেছো তুমি।

    পবন বলল, তাই হবে স্যার। আমিও বাইরে আপনাদের কথাবার্তা তারপর ডাকাডাকি টের পাচ্ছিলাম। কিন্তু ভয়ে আমার গলা দিয়ে শব্দ হচ্ছিল না। হাত-পা অসাড় হয়ে গেছিল। খাটের নীচ থেকে বেরোতেও পারছিলাম না।

    লেফটানেন্ট বলল, অর্থাৎ নেকড়েগুলো খুব কাছাকাছিই আছে। অন্তত একটা নেকড়ে তো আছেই। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। দেখুন বাইরে অন্ধকার নামা শুরু হয়েছে। আশা করছি কাল পাইনবনে তল্লাশি চালালে ওদের সবার হদিশ মিলবে। চলুন এবার ফেরা যাক।

    অনীশের মালপত্র উঠিয়ে নিয়ে পবন সহ ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল সকলে। ঠিক সেই সময় যেন ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল চারপাশে। বারান্দা থেকে নেমে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে সকলে, ঠিক সে সময় সবাইকে চমকে দিয়ে বাড়ির পিছন থেকে ভেসে এল নেকড়ের ডাক! সঙ্গে সঙ্গে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সকলে। লেফটানেন্ট বলে উঠলেন, তবে নেকড়েটা এখনও এ চৌহদ্দি ছেড়ে যায়নি।

    কথাগুলো বলেই রিভলবার খুলে তিনি এগোলেন বাড়ির পিছন দিকে যাবার জন্য। আবার শোনা গেল নেকড়ের ডাক। এক নয়, একাধিক নেকড়ের সম্মিলিত হিংস্র গর্জন! তবে কি সবকটা নেকড়েই এখানেই আছে!

    বিস্মিত অনীশরা সবাই এগোচ্ছিল বাড়ির পিছন দিকে। কিন্তু সেদিক থেকে ঊধ্বশ্বাসে দৌড়ে আসতে দেখা গেল খাঁচার কাছে প্রহরারত দুই জওয়ানকে। অস্ত্র হাতে থাকলেও ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তাদের মুখ। অনীশদের সামনে তারা উপস্থিত হয়ে আতঙ্কিত স্বরে একসঙ্গে বলে উঠল, নেকড়ে! নেকড়ে!

    লেফটানেন্ট বলে উঠলেন, কোথায়?

    আতঙ্কিত স্বরে একজন বলে উঠল, খাঁচার মধ্যে আটকে আছে স্যার।

    অন্যজন বলল, ওদিকে যাবেন না স্যার।

    খাঁচার মধ্যে! লোক দুজনকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে ছেত্রী ছুটলেন বাড়ির পিছন দিকে। অনীশ সহ অন্য সেনারাও অনুসরণ করল তাঁকে। এমনকী সেই আতঙ্কিত সেনা দুজনও নিরুপায় হয়ে পিছনে এল। নেকড়েদের ক্রুদ্ধ গর্জন ভেসে আসছে। বাড়ির পিছনে খাঁচাগুলোর সামনে উপস্থিত হল সবাই। যে খাঁচাটার ভিতর চীনা সৈনিকদের শবদেহগুলো রাখা ছিল সেখানে একসঙ্গে অনেকগুলো টর্চের আলো ফেলা হল। খাঁচার ভিতর দাঁড়িয়ে আছে চার চারটে নেকড়ে! টর্চের আলোতে ভঁটার মতো জ্বলছে তাদের চোখ, টকটকে লাল জিভ আর হিংস্র দাঁতের ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়ছে ফেনা!

    কে যেন বলে উঠল, মৃতদেহগুলো কোথায় গেল?

    খাঁচার সামনে প্রহরারত সেই আতঙ্কিত সেনাদের একজন বলে উঠল, অন্ধকার নামতেই মৃতদেহগুলো যেন ঘুম ভেঙে প্রথমে নড়ে উঠল। তারপর ওরা ধীরে ধীরে আমাদের চোখের সামনেই নেকড়ে হয়ে গেল!

    লোকটার কথা শেষ হবার সঙ্গে-সঙ্গেই চারটে নেকড়ে খাঁচার গরাদের ওপর এসে কঁপাতে শুরু করল। আর তার সঙ্গে কী বীভৎস চিৎকার তাদের। যেন খাঁচার বাইরে একবার আসতে পারলেই তারা ছিঁড়ে খাবে সবাইকে। আদিম হিংসার প্রতিমূর্তি যেন প্রাণীগুলো। নাকি প্রেতমুর্তি?

    হতভম্ব অনীশের পাশে দাঁড়ানো লেফটানেন্ট ছেত্রী বিস্মিতভাবে প্রাণীগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, সত্যিই তবে এরা ওয়্যার উলফ! সত্যিই এরা আছে!

    অনীশ যেন নিজের চোখ কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু সে ব্যাপারটা অবিশ্বাসও করে কীভাবে। চীনাদের শবগুলো তো এ খাঁচাতেই রাখা হয়েছিল। তাছাড়া লোকদুটোও তো নিজের চোখে…।

    হতভম্ব হয়ে খাঁচার দিকে চেয়ে রইল সবাই। নেকড়েগুলো খাঁচার গরাদগুলোর ওপর ঝাঁপাচ্ছে, সীমাহীন আক্রোশে কখনও কামড় বসাচ্ছে লোহার গরাদগুলো ভেঙে ফেলার জন্য। রক্তাক্ত হয়ে উঠছে প্রাণীগুলোর মুখ। বীভৎস এক দৃশ্য!

    সম্বিত ফিরে পেয়ে এক জওয়ান হঠাৎ বলল, গুলি চালাব স্যার?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, সম্ভবত এদের ওপর গুলি চালিয়ে কোনও লাভ হবে না। চীনা আর্মির লোকরা তো গুলি খেয়েই মরে ছিল…।

    অন্য একজন বলল, তাহলে স্যার?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, এদের ব্যবস্থা সম্ভবত কিছু সময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে। ওই দেখো…।–এই বলে তিনি আঙুল নির্দেশ করলেন পাইনবনের দিকে। সার সার মশালের আলো সেদিক থেকে এগিয়ে আসছে কাঁটাতারের দিকে। অন্ধকার নামতেই গ্রামবাসীরা ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিতে আসছে হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য।

    লেফটানেন্ট এরপর বললেন, এখন আর আমাদের এখানে থাকার দরকার নেই। বলা যায় না ভুল বোঝাবুঝি হয়ে তাদের আক্রমণ আমাদের ওপরও বর্ষিত হতে পারে। তখন আমাদেরও বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হবে। অযথা কিছু মানুষের প্রাণহানি হবে।

    এ কথা বলে তিনি এগোলেন জায়গাটা ছেড়ে যাবার জন্য। বাড়ির সামনের অংশে এসে গাড়িতে উঠে বসল সবাই। কাঁটাতারের বাইরে এসে পবন আর্মি গাড়ি থেকে নেমে উঠে বসল নিজের গাড়িতে। গ্রামবাসীরা তখন পৌঁছে গেছে কাঁটাতারের গায়ে। খুঁটি উপড়ে ফেলল তারা। তারপর চিৎকার করতে করতে ছুটল বাড়িটার দিকে। গাড়ি দুটোও সে সময় একইসঙ্গে রওনা হল সেনা ছাউনির দিকে। শেষবারের মতো নেকড়ে খামারটার দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস যেন চোখে পড়ল অনীশের। মশাল হাতে বাড়িটার দিকে ধাবমান জনতার প্রথম লোকটাকে যেন ভাইমারের মতো লাগল! কিন্তু তা কী করে সম্ভব?

    গাড়ি দুটো সেনা ছাউনির দিকে যেতে যেতেই নেকড়ে খামারের দিকে আকাশটা লাল হতে লাগল। সেদিক থেকে ভেসে আসতে লাগল জনতার আক্রোশধ্বনি আর নেকড়েগুলোর আর্তনাদ। বাড়িটাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ওরা।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনা ছাউনিতে পৌঁছে গেল অনীশরা। এটাও কাঁটাতার ঘেরা। অনেক লোকজন সেখানে। অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে সামরিক বাহিনীর লোকজন। নিরাপত্তার চাদরে মোড়া জায়গাটা। দুটো গাড়ি প্রবেশ করল সেখানে। অনীশ আর পবনের জন্য দুটো আলাদা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা হল। লেফটানেন্ট ছেত্রীর তত্ত্বাবধানে রাতের খাওয়া সাঙ্গ হবার পর অনীশকে তার ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন লেফটানেন্ট। বিদায় নেবার আগে তিনি বললেন, আমরা আজ যা দেখলাম, যা শুনলাম তা শুধু আমাদের অভিজ্ঞতা থাকাই বাঞ্ছনীয়। বাইরের কেউ এ কথা বিশ্বাস করবে না। আমাদের পাগল ভাববে। আমার চাকরি যাবে আর আপনার ওয়াইল্ড লাইফের পদও।

    অনীশ হেসে বলল, হ্যাঁ, ঠিক কথা। আমি ওয়াইল্ড লাইফকে রিপোর্ট করব যে ক্যাম্পের নেকড়েগুলো বাইরে বেরিয়ে গ্রামবাসীকে মেরেছিল। তাই তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পটা। নেকড়েগুলোও মারা পরেছে তাতে। কিন্তু ভাইমার এবং আর একটা নেকড়ে?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, সম্ভবত তাদের খুঁজে বার করব আমি। নেকড়েটাকে পুড়িয়ে মারব আর ভাইমারকে গ্রেপ্তার করব। আমিও আপনার মতো একই রিপোর্ট দেব সরকারের ঘরে।

    অনীশ এবার শেষ প্রশ্নটা করল, আমি তাহলে কাল রওনা হতে পারি তো?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই। আপনাকে আর আটকে রাখব না। যা তুষারপাত শুরু হয়েছে তাতে হয়তো পরশুই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি আর ফিরতে পারবেন না। কাল ভোরের আলো ফুটলেই রওনা হয়ে যাবেন আপনি।

    এ কথা বলার পর ছেত্রী সাহেব একটু যেন ইতস্তত করে বললেন, কিছু মনে করবেন না। আপনাকে একটা শেষ প্রশ্ন করি–গত দু-দিন কি অন্ধকার নামার পর সত্যিই ক্যাম্পের বাইরে বেরোননি আপনি?

    অনীশ জবাব দিল, না, বেরোইনি।

    ছেত্রী বললেন, তাহলে হয়তো ভুল দেখেছিল আমার লোকরা। রাতের ব্যাপার তো, এমন ভুল হয়। যান এবার নিশ্চিন্তে ঘুম দিন। আশা করি ভাইমার সাহেবের নেকড়েরা এখানে আপনাকে আর বিরক্ত করবে না। শুভরাত্রি। এই বলে অনীশের থেকে বিদায় নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন লেফটানেন্ট ছেত্রী। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বিছানাতে শুতেই ক্লান্ত-অবসন্ন অনীশের চোখে ঘুম নেমে এল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }