Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত এক পাতা গল্প108 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৮. সূর্যদেব সবে উদয় হচ্ছেন

    ০৮.

    ভোর। অনীশ যখন তার ঘরের দরজা খুলল তখন সূর্যদেব সবে উদয় হচ্ছেন বরফ পাহাড়ের মাথায়। তবে ঝিরিঝিরি তুষারপাত হচ্ছে। হয়তো বা সারা রাত ধরেই এমন তুষারপাত হয়েছে। সেনা ছাউনির ঢালু ছাদগুলো ঢাকা পড়ে আছে সাদা তুষারের তলায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াল অনীশ। পবন হাজির হয়ে গেছে তার দরজার বাইরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন লেফটানেন্ট ছেত্রীও।

    দুজনে সুপ্রভাত বিনিময়ের পর লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, আপনি বেরোবার পর আমিও বেরোব ভাইমার আর তার নেকড়েটার খোঁজে। সেনারা তৈরি হচ্ছে। সমস্ত রাস্তা ইতিমধ্যে সিল করে দেওয়া হয়েছে। আপনি ছাড়া কেউ এখান থেকে বেরোতে পারবে না। যেভাবেই হোক শেষ ওয়্যার উলফটার হদিশ পেতে হবে ভাইমারের কাছ থেকে।

    অনীশ বলল, ক্যাম্পটার শেষ অবস্থা কী?

    লেফটানেন্ট জবাব দিলেন, সম্পূর্ণ ভস্মীভূত। সারা রাত সেখানে তাণ্ডব চালিয়ে নিজেদের আক্রোশ মিটিয়ে ভোরবেলা গ্রামে ফিরে গেছে লোকগুলো। চারটে নেকড়েকেই পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শুনলাম নাকি গায়ে আগুন লাগার পর নেকড়েগুলো আবার চীনা সৈনিকদের রূপ ধারণ করেছিল। ভকে ভকে রক্তবমি করছিল তারা। একজনের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। একটা কাটা আঙুল। সে আঙুলে একটা আংটি ছিল। যা দেখে গ্রামের লোকরা সেটা সেই নিহত ছেলের আঙুল বলে সনাক্ত করেছে। এই সুন্দর ভোরে, এসব কথা আর বেশি শুনতে ইচ্ছা করল না। অনীশ তার স্মৃতি থেকে যথাসম্ভব দ্রুত মুছে ফেলতে চায় এই অবিশ্বাস্য ভয়ংকর ঘটনাগুলোকে।

    সে বলল, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। হয়তো আপনার জন্যই ফেরা হচ্ছে আমার। তবে ভাইমার আর তার ওয়্যার উলফের সন্ধান পেলে আমাকে জানাবেন। সেই নেকড়েটা আমি দেখেছিলাম। ধবধবে সাদা রং, আকারে অন্য নেকড়েগুলোর প্রায় দ্বিগুণ। এবার তাহলে আমি চলি।

    লেফটানেন্ট ছেত্রী তার সঙ্গে করমর্দন করে বললেন, হ্যাঁ, আসুন। আমাকেও বেরোতে হবে।

    কিছুটা এগিয়ে অনীশ পবনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল। সেনা ছাউনি ছেড়ে ফেরার জন্য রওনা হয়ে গেল অনীশ। সেই নেকড়ে ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ফেরার পথে ক্যাম্পের সামনে গাড়ির গতি মৃদু কমিয়ে সেদিকে তাকাল পবন। অনীশও শেষ বারের মতো সেদিকে তাকাল। চারপাশের কাঁটাতারের বেড়াগুলোকে সব উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাড়িটার বদলে বিশাল জায়গা জুড়ে ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে শুধু দু-একটা অগ্নিদগ্ধ খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। তখনও কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে।

    অনীশ স্বগতোক্তির স্বরে বলল, সবই ঠিক হল। একটাই শুধু ভয়, এখানে তো আরও নেকড়ে আছে, ভবিষ্যতে তাদের সবাইকেই না ওয়্যার উলঙ্ক ভেবে পুড়িয়ে মারে গ্রামবাসীরা।

    তার কথা কানে যেতে বিষণ্ণ হেসে আবার গাড়ি গতি বাড়াল পবন।

    পিছনে পড়ে রইল নেকড়ে খামার। একসময় রাস্তার পাশের সেই পাইনবনও হারিয়ে গেল। সে রাস্তা ছেড়ে পাসে প্রবেশ করল অনীশের গাড়ি। পাসের ভিতর অনেক বেশি তুষারপাত হচ্ছে। পথ, দু-পাশের প্রাচীর সবই তুষারে আচ্ছাদিত। শনশন শব্দে বাতাসও বইছে। শক্ত হাতে হুইল ধরে তুষার ভেঙে পাকদণ্ডী বেয়ে নীচে নামতে শুরু করল পবন। অনীশ আর পবন দু জনেই নিশ্চুপ। হয়তো তারা দুজনেই ভাবছিল তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা। তুষারপাতের মধ্যে দিয়ে একটার পর একটা বাঁক অতিক্রম করে নীচের দিকে নামতে লাগল গাড়ি। এ রাস্তাতেও আর আগের দিনের মতো দু-একজন লোকও চোখে পড়ছে না। নাগাড়ে কদিন ধরে তুষারপাতের ফলে লোকজনের চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই দেখে অনীশ একসময় মন্তব্য করল, রাস্তার যা অবস্থা তাতে ওপরে আর একদিন থাকলে আর ফেরা হত না।

    তার কথা শুনে ঘাড় নাড়ল পবন।

    সামনেই একটা বাঁক। তার একপাশে বরফ মোড়া পাহাড়, অন্য পাশে খাদের ভিতর থেকে উঠে এসেছে গভীর পাইনবন। তাদের মাথাগুলো সব তুষারের চাদরে মোড়া। সেই বাঁকের মুখে পৌঁছে হঠাৎই যেন একটা ঝাঁকুনি খেয়ে থেমে গেল গাড়িটা। পবন চাবি ঘুরিয়ে বার কয়েক গাড়িটাকে চালাবার চেষ্টা করল ঠিকই কিন্তু তাতে গোঁ গোঁ শব্দ হল কিন্তু গাড়ি স্টার্ট হল না। গাড়ি থেকে নেমে পবন প্রথমে গাড়ির সামনের বনেটটা খুলল। ইঞ্জিনটা দেখতে লাগল সে।

    গাড়ির ভিতরে বসে অনীশ জানতে চাইল, কী হয়েছে? পবন জবাব দিল, ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার। একবার গাড়ির নীচে ঢুকে দেখি। নইলে মেকানিক ডাকতে হবে ফোন করে। এই বলে পবন গাড়ির বনেট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে গাড়ির তলায় ঢুকে গেল। গাড়ির তলায় খুটখাট শব্দ শুরু হল। অনীশ তাকিয়ে রইল রাস্তার পাশের পাইনবনের দিকে। খাদের ভিতর যে জায়গা থেকে গাছগুলো ওপরে উঠে এসেছে সে জায়গাটাতে কী অন্ধকার। সূর্যের আলো প্রবেশ করে না সেখানে। হয়তো বা ওরকম জায়গাই নেকড়েদেরও প্রিয়। সেদিকে তাকিয়ে এ সব নানা কথা ভাবতে লাগল অনীশ। সময় এগিয়ে চলল।

    একটা সময় সে জায়গায় বেশ তুষারপাত শুরু হল। ঠিক সে সময় অনীশের খেয়াল হল গাড়ির তলা থেকে আর যেন কোনও শব্দ কানে আসছে না। ইতিমধ্যে মিনিট পনেরো সময় কেটে গেছে। অনীশ হাঁক দিল–পবন? পবন? কিন্তু পবনের কোনও সাড়া মিলল না। পবন কি তবে অনীশকে গাড়িতে একলা রেখে মেকানিকের খোঁজে গেল? কিন্তু এ রাস্তায় সে। মেকানিক পাবে কোথায়?

    ব্যাপারটা বোঝার জন্য গাড়ি থেকে অনীশ লাফিয়ে নীচে নামল। গাড়ির বাইরে ঠিক সেই মুহূর্তে প্রবল তুষারপাত শুরু হল। তার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র কনকনে বাতাস। কিছুটা তফাতেই সব কিছু যেন তুষার ঝড়ে অদৃশ্য লাগছে। পিছনের পথটাতে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল অনীশ। তারপর শেষ একবার গাড়ির নীচের দিকে তাকিয়ে বলল, পবন তুমি কি গাড়ির তলাতেই আছ?

    অনীশের কথার প্রত্যুত্তরে প্রথমে একটা অস্পষ্ট খসখস শব্দ হল গাড়ির তলা থেকে। তারপর পবনের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, হ্যাঁ, আমি এখানে। বেরোচ্ছি…।

    গাড়ির সামনে থেকে অনীশ কয়েক হাত তফাতে সরে এল পবনকে বাইরে আসার সুবিধা করে দেবার জন্য। কিন্তু গাড়ির তলা থেকে তুষার ঝড়ের মধ্যে গুঁড়ি মেরে যে ধীরে ধীরে বাইরে বেরোতে শুরু করল তাকে দেখে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেল অনীশের হৃৎপিণ্ড।

    বিশাল একটা ধবধবে সাদা নেকড়ে বেরিয়ে আসছে গাড়ির তলা থেকে। জ্বলন্ত চোখ, চোয়ালে সার সার হিংস্র দাঁতের পাটির আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে লাল জিভ, সাদা ফেনা ঝরছে তার থেকে। মুহূতাঁর মধ্যে তাকে চিনে ফেলল অনীশ। ভাইমারের সেই পালের গোদা ওয়্যার উলটা। যে হানা দিয়েছিল অনীশের ঘরে।

    গাড়ির তলা থেকে বেরিয়ে একবার হাঁ করল প্রাণীটা। ভয়ঙ্কর দাঁতগুলো দেখিয়ে সে যেন হেসে অনীশকে বলল, এবার কোথায় পালাবে তুমি? সত্যিই অনীশের পালাবার পথ বন্ধ। রাস্তার একপাশে খাড়া পাথুরে দেওয়াল, অন্যপাশে পাইনবনের অন্ধকার খাদ। তার পিছনের রাস্তাটা তুষারঝড়ে অদৃশ্য আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে নেকড়েটা!

    অনীশ তবুও কিছুটা ছুটে পাথরের দেওয়ালের একটা খাঁজে আত্মরক্ষার জন্য পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু কীভাবে আত্মরক্ষা করবে অনীশ? তার কাছে একটা লাঠিও নেই। নেকড়েটা এবার এগোতে লাগল তার দিকে। ধীরে সুস্থে একটু যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছে সে। শিকার ধরার কোনও তাড়া নেই তার। কারণ সে বুঝতে পেরেছে শিকারের পালাবার সব পথ বন্ধ। তার ধবধবে সাদা দেহ তুষারের সঙ্গে মাঝে মাঝে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তুষার ঝড়ের মধ্যে শুধু দেখা যাচ্ছে তার জ্বলন্ত চোখ দুটো আর টকটকে লাল জিভটা। জিভ চাটছে বীভৎস প্রাণীটা। জ্বলন্ত চোখ দুটো ক্রমশ এগিয়ে আসছে অনীশের দিকে।

    হঠাৎ অনীশ তার পায়ের সামনেই বরফের মধ্যে পড়ে থাকা একটা পাথরখণ্ড দেখতে পেল। বাঁচার জন্য একটা শেষ চেষ্টা করল অনীশ। সে পাথরটা তুলে নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে মারল। প্রাণীটাকে লক্ষ্য করে। পাথরটা আছড়ে পড়ল নেকড়েটার পিঠের ওপর। একটা রক্ত জল করা গর্জন করে প্রাণীটা প্রথমে লাফিয়ে উঠল। তার নখের আঘাতে ছিটকে উঠল বরফের ধুলো। আর এরপরই সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দ্রুত এগোতে লাগল অনীশের দিকে।

    অনীশের হাত দশেক দূরে এসে থামল প্রাণীটা। কী হিংস্র তার চোখের দৃষ্টি। আদিম জিঘাংসার প্রতিমূর্তি যেন এই প্রাণীটা। পৃথিবীর সব বীভৎসতা, সব অশুভ শক্তি যেন সঞ্চারিত হয়েছে তার মধ্যে।

    ধীরে ধীরে খাড়া হয়ে উঠতে লাগল সেই ভয়ংকর, অশুভ জীবটার ঘাড় ও পিঠের রোমগুলো। থাবার থেকে উঁকি দিল ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ নখর। সে এবার ঝাঁপ দেবে শিকারকে লক্ষ্য করে। অসহায় অনীশ হাত দিয়ে তার গলাটা আড়াল করল যাতে সে প্রথমেই গলায় কামড় বসাতে না পারে। ধনুকের ছিলার মতো ওপর দিকে বেঁকে গেল জন্তুটার পিঠ। লাফ দেবার ঠিক আগের মুহূর্ত! ঠিক এই সময় প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল চারপাশ। লাফ দিতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে কীসের যেন প্রচণ্ড আঘাতে ছিটকে পড়ল হিংস্র প্রাণীটা। রক্তজল করা একটা বীভৎস আর্তনাদ ছিন্নভিন্ন করে দিল চারপাশের নিস্তব্ধতাকে। আর এর পরক্ষণেই অনীশের মাথার ওপর পাথরের দেওয়ালের ওপর থেকে ঝুপঝুপ করে লাফিয়ে নীচে নামল বেশ কয়েকজন সামরিক পোশাক পরা লোক। তার মধ্যে লেফটানেন্ট ছেত্রীও আছেন। এরপর একযোগে বেশ কয়েকটা স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি একনাগাড়ে বর্ষিত হতে লাগল নেকড়েটার ওপর। গুলির আঘাতে উড়তে লাগল তার লোম, ছিটকে উঠতে লাগল তার রক্ত। বেশ কিছুক্ষণ গুলি বর্ষণের পর থামল সেনারা। ক্ষতবিক্ষত নেকড়ের দেহটার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তাকে গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়াল সেনারা।

    অনীশ এবার দেওয়াল ছেড়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল লেফটানেন্টের পাশে। তিনি অনীশের কাঁধে হাত দিয়ে আশ্বস্ত করে বললেন, আর এখন ভয় নেই আপনার। আপনি সত্যি বেঁচে গেলেন এ যাত্রায়।

    প্রত্যুত্তরে অনীশ কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ঠিক সেই সময় হঠাই নড়ে উঠল নেকড়ের মৃতদেহটা। একজন সেনা আবার গুলি চালাতে যাচ্ছিল কিন্তু ছেত্রীসাহেব ইশারায় থামতে বললেন। তাকে। এরপর দেহটার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত-অবিশ্বাস্য দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল উপস্থিত সবাই। মাথার ওপর থেকে তুষার ঝরে পড়ছে দেহটার ওপর। নেকড়ের দেহটা প্রথমে দুমড়াতে-মুচড়াতে আরম্ভ করল, গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগল মৃত নেকড়েটার মুখ থেকে। তারপর সবার চোখের সামনেই নেকড়ের দেহটা বদলে গেল একটা মানুষের মৃতদেহে। দীর্ঘকায় এক চীনার মৃতদেহ!

    তার মুখটা যেন কেমন চেনা চেনা মনে হল অনীশের। লেফটানেন্টের কথায় তার ভাবনার উত্তর পেয়ে গেল অনীশ। তিনি বললেন, এ লোকটার ছবি আমি আপনাকে আমার ফাইল থেকে দেখিয়েছিলাম। পাঁচটা লোকের ছবি ছিল ফাইলে যাদের গুলি করে মারে আমাদের বাহিনী। এদের দলপতি ছিল এ লোকটাই। চীনা সৈন্যদের মধ্যে সাধারণত এমন লম্বা চওড়া লোক দেখা যায় না। আমাদের সেনা ছাউনিতে নাশকতা চালাবার জন্য এরই নেতৃত্বে আরও চারজন এদেশে ঢুকেছিল সীমান্ত পেরিয়ে। যাই হোক শেষ পর্যন্ত ওদের দলের শেষ লোকটাকে, শেষ নেকড়েটাকে খুঁজে পেলাম আমরা। তবে এ দেহটাকেও এখন পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে হবে। নইলে অন্ধকার নামলেই বেঁচে উঠবে দেহটা।

    অনীশ বলল, কিন্তু ভাইমার? আসল যে লোকটা এই ওয়ার উলফগুলোকে আশ্রয় দিয়েছিল তার কী খবর। ধরতে পেরেছেন ভাইমারকে?

    লেফটানেন্ট প্রথমে হাসলেন। তারপর ফিরে তাকালেন পিছন দিকে। কখন যেন সেখানে নিঃশব্দে হাজির হয়েছে একটা সামরিক জিপ। তার থেকে নেমে তুষারঝড়ের মধ্যে এগিয়ে আসছে। একজন। লোকটা কাছাকাছি আসতেই তাকে দেখে আবারও অনীশের হৃৎপিণ্ড যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। এগিয়ে আসছেন স্বয়ং ভাইমার। তার হাতে ধরা একটা কাঠগোলাপের বোকে!

    খুঁড়িয়ে নয়, বেশ লম্বা লম্বা পা ফেলে লোকটা এসে দাঁড়াল অনীশের সামনে। তারপর মৃদু হেসে অনীশের উদ্দেশ্যে বলল, হ্যাঁ, আমিই ভাইমার। যে নেকড়ে খামারটা ছিল সেটা আমারই ছিল।

    অনীশের মুখ দিয়ে কোনও কথা বেরোল না। তাই দেখে লোকটা বলল, আমি খোঁড়াও নই আর এই কাঠগোলাপের গন্ধ আমার বেশ ভালোই লাগে। ওয়্যার উরা ভয় পায় এই বুনো কাঠগোলাপকে। আপনি ওয়্যার উলফ কিনা তা পরীক্ষা করার জন্যই প্রতি সকালে গ্রামবাসীরা এই কাঠগোলাপের স্তবক দিত আপনার হাতে। আমিই বনের ভিতর থেকে ফুল সংগ্রহ করে দিতাম নরবুকে। আপনার সঙ্গে আমার একদিন সত্যিই সাক্ষাৎ হয়েছিল পাইনবনের ভিতর। এটা আমার উপহার।–এই বলে তিনি ফুলটা ধরিয়ে দিলেন অনীশের হাতে।

    অনীশের মাথার ভিতরটা কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। সে অস্পষ্টভাবে বলল, আপনার সঙ্গে যদি আমার মাত্র একবার দেখা হয়ে থাকে তবে কোন ভাইমারের সঙ্গে তিনটে রাত নেকড়ে খামারে কাটালাম?

    ভাইমার মাটিতে পড়ে থাকা দেহটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওই লোকটার সঙ্গে। ওয়্যার উলরা আমার আপনার সবার দেহ ধারণ করতে পারে। ও করেও ছিল তা।

    অনীশ বলল, আমার মাথার ভিতর সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে! আপনারা কীভাবে এখানে উপস্থিত হলেন?

    লেফটানেন্ট ছেত্রী বললেন, চলুন আপনাকে পৌঁছে দেবার পথে সব কথা বুঝিয়ে দেব। ভয় নেই, আমরা কেউ ওয়্যার উলফ নই। আপনার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি সত্যি ভাইমার।

    অনীশ এবার চারপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে বলল, কিন্তু আমার ড্রাইভার পবন কোথায় গেল?

    লেফটানেন্ট সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন, সে আর কোনওদিন ফিরবে না।

    তারপর তিনি বললেন, মালপত্র নিয়ে আমাদের গাড়িতে উঠুন। যা তুষারপাত শুরু হয়েছে তাতে দেরি হলে আপনাকে গ্যাংটক শহরে পৌঁছে দিয়ে আমরা আর ওপরে ফিরতে পারব না।

    সৈনিকদের কয়েকজন চীনা সৈনিকের সেই দেহটাকে পোড়াবার প্রস্তুতি শুরু করল। তাদের সেখানে ছেড়ে রেখে লেফটানেন্ট অনীশ, ভাইমার আর দু-জন সেনাকে নিয়ে আর্মি গাড়িটাতে উঠে বসলেন। পাকদণ্ডী বেয়ে নামতে শুরু করল গাড়ি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ১ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 10, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র ২ – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    জাদুকর সত্যচরণের জাদু কাহিনি – হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    আঁধার রাতের বন্ধু – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    সূর্যমন্দিরের শেষ প্রহরী – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    December 9, 2025
    হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত

    অ্যাডভেঞ্চার ভয়ংকর – হিমাদ্রিকিশোর দাসগুপ্ত

    December 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }