Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প466 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১০. জেফরি বেগ অফিসে বসে আছে

    অধ্যায় ১০

    জেফরি বেগ নিজের অফিসে বসে আছে। তার সামনে চুপচাপ বসে আছে জামান। কিছুক্ষণ আগে নিহত হাসানের বাড়ি থেকে তারা বলতে গেলে শূন্য হাতে ফিরে এসেছে। তবে পাশের ফ্ল্যাটের মিলন সাহেবের দুই স্ত্রীর কর্মকাণ্ডে তারা যারপরনাই বিস্মিত। দুই মহিলার আচরণ শুধু অদ্ভুতই না, একেবারে বেখাপ্পা।

    নিজের স্বামী কোথায় গেছে সেটা না জানাটা অস্বাভাবিক ঘটনা নাও হতে পারে কিন্তু স্বামী কি করে সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাটা কি করে বিশ্বাস করা যায়? তারচেয়ে বড় কথা মিলন সাহেবের ফোন নাম্বার পর্যন্ত তার স্ত্রীদের কাছে নেই । মহিলা অবশ্য জানিয়েছে তার স্বামী ফোন ব্যবহার করে। তাহলে স্ত্রীদের কাছে সেই ফোন নাম্বার থাকবে না কেন?

    মাথা থেকে মিলন সাহেবের স্ত্রীদের রহস্যময় আচরণ আর কার্যকলাপের ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলে দিলো । এই ব্যাপারটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে ।

    এখন অন্য একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করলো জেফরি । হাসান সাহেবের বাড়ি থেকে চলে আসার সময়ই এই ব্যাপারটা তার মাথায় চট করে এসেছিলো। সঙ্গে সঙ্গে আবারো হাসান সাহেবের বাসায় চলে যায় তারা দু’জন। নিহত হাসানের শ্যালক লিটুর কাছ থেকে ছোট্ট একটা তথ্য জেনে নেয় জেফরি। আর সেই তথ্যটাই তাকে নতুন করে ভাবাচ্ছে এখন, বিশেষ করে তার টেবিলে রাখা একটা জিনিস দেখার পর থেকে।

    জামান চুপচাপ বসে আছে । তার সামনে একটা এভিডেন্স ব্যাগ।

    সেন্ট অগাস্টিনের টয়লেটে হাসান সাহেবের মৃতদেহ ছাড়াও একটা আধ খাওয়া সিগারেট পাওয়া গেছিলো। এভিডেন্স হিসেবে ওটা কালেক্ট করেছে জামান। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছিলো, সিগারেটটা নিহত হাসানের ছিলো কিনা ম্যাচ করে দেখার জন্য। সেটার ফলাফল হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই পাওয়া যাবে। কিন্তু জেফরি প্রায় নিশ্চিত, এটা নিহত হাসানের সিগারেট নয়। অন্য কারোর। সম্ভবত খুনির। হতে পারে ।

    হাসানের বাড়িতে দ্বিতীয়বারের মতো গিয়ে তার শ্যালক লিটুর কাছ থেকে শুধু জানতে চেয়েছিলো, তার বোনজামাই কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খেতো । ছেলেটা যে ব্র্যান্ডের কথা বলেছে সেটা আর তাদের কালেকশানে থাকা এই আধখাওয়া সিগারেটের ব্র্যান্ড এক নয় ।

    একজন স্মোকার সাধারণত নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সিগারেটই খেয়ে থাকে। খুব কমই এর ব্যত্যয় ঘটে। তবে শতভাগ নিশ্চিত হতে হলে ফরেনসিক পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাদেরকে।

    “আমি নিশ্চিত, এটা হাসানের সিগারেট না,” জামানকে বললো জেফরি ।

    “তাহলে আমরা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবো, স্যার,” জামান অনেকটা খুশি হয়েই বললো।

    “হ্যাঁ।”

    “তখন আবারো প্রশ্ন উঠবে, হাসান সাহেব টয়লেটে গেছিলেন কি জন্যে?”

    জামানের এ কথায় জেফরি মাথা নেড়ে সায় দিলো। আমি মনে মনে আশা করছি ফরেনসিক পরীক্ষার রেজাল্টটা যেনো এরকমই হয়।”

    “আমারও ধারণা এটা হাসান সাহেবের সিগারেট না।”

    “হাসান অন্য কোনো কারণে টয়লেটে গেছিলো তাহলে।”

    “কি কারণে হতে পারে, স্যার?”

    মাথা দোলালো জেফরি । “অনেক কিছুই হতে পারে…প্রাথমিক অবস্থায় কোনো কিছুই জোর দিয়ে বলা যাবে না। তবে এটা নিশ্চিত হাসানকে যারা খুন করেছে তারাই তাকে সেখানে নিয়ে গেছিলো । তাদের সাথে হয়তো ছেলেটার দেখা হয় নীচে,” একটু থেমে আবার বললো, “খুনের ধরণ দেখে প্রফেশনাল কারোর কাজ বলে মনে হয়েছে। সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে খুনি এক বা একাধিক যাইহোক না কেন, সে স্কুলের বাইরের কেউ।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো জামান।

    “স্কুলের ভেতরে যারা আছে তাদের মধ্যে ওরকম প্রফেশনাল খুনি থাকাটা বলতে গেলে অসম্ভব ব্যাপার…আপাতত সেরকম কিছু ভাবছি না আমি।”

    জামান এবার বুঝতে পারলো। “আমরা কি ধরে নেবো স্কুলের কেউ এ কাজে সাহায্য করেছে?”

    “সম্ভবত করেছে। আরেকটা কথা কি জানো, মনে হচ্ছে আমার ঐ বিগব্রাদার আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকিয়েছেন। উনার আচরণে সন্দেহজনক কিছু আছে ।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জামান। “তাহলে আমরা এখন কি করবো, স্যার?”

    “হাসান সাহেব ঠিক যে সময়টাতে সেন্ট অগাস্টিন স্কুলে খুন হয়েছে আমি সেই সময়টাতে ওখানে যেতে চাই। আমার মনে হচ্ছে এটা করা খুবই দরকার।”

    “আপনি একা যাবেন?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো কেবল।

    “আসতে পারি, স্যার?”

    একটা মিষ্টি নারীকণ্ঠ শুনে জেফরি আর জামান দরজার দিকে তাকালো। এডলিন ডি কস্টা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

    “আসুন,” বললো জেফরি বেগ ।

    মেয়েটা ভেতরে ঢুকতেই পারফিউমের গন্ধে ভরে গেলো সারা ঘর । এতো পারফিউম মেখে অফিসে আসার কোনো মানে হয়? ভাবলো জেফরি ।

    এডলিন চুপচাপ জামানের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।

    “কিছু বলবেন?” জেফরি জিজ্ঞেস করলো এডলিনকে ।

    পাশে বসে থাকা জামানের দিকে চকিতে তাকালো মেয়েটি। সঙ্গে সঙ্গে জামান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

    “স্যার, আমি এখন যাই।”

    জেফরি কিছু বলার আগেই তার সহকারী চুপচাপ ঘর থেকে চলে গেলো। একটা অস্বস্তি জেঁকে বসলো তার মধ্যে। এই মেয়েটা তার সামনে এলেই এমনটি হয়। এটা এজন্যে নয় যে, মেয়েটির প্রতি জেফরির কোনো গোপন আর্কষণ আছে। সত্যি বলতে, মেয়েটি তার সামনে এমন ভঙ্গি করে, এমন কিছু রহস্যময় চাহনি দেয় যেটা তার অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

    “বলুন, কি বলবেন?”

    এডলিন একটা এ-ফোর সাইজের কাগজ বাড়িয়ে দিলো জেফরির দিকে । “সিগারেটের সালিভা ম্যাচিং করা হয়েছে।”

    যথারীতি ‘স্যার’ বলা বন্ধ । এই মেয়েটা একান্তে জেফরিকে স্যার সম্বোধন করে না। ব্যাপারটা বাতিকের পর্যায়ে চলে গেছে।

    কাগজটা হাতে তুলে নিলো সে। এই জিনিস জামানের সামনে দিতে কী এমন অসুবিধা ছিলো? আজব!

    ‘সাবের কামাল না এসে রিপোের্টটা আপনি নিয়ে আসলেন যে?” রিপোর্টে চোখ বুলাতে বুলাতে বললো জেফরি বেগ।

    “কেন, আমি নিয়ে আসাতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?” এডলিন অপলক চোখে চেয়ে রইলো জেফরির দিকে ।

    “না, সমস্যা হবে কেন, এমনি বললাম।” আবারো চোখ রাখলো রিপোর্টে।

    “সাবের ভাইয়ের এক গেস্ট এসেছে, তাই আমি নিজেই নিয়ে এলাম, ভাবলাম রিপোর্টটা আপনার জন্য খুব জরুরি…”

    জেফরি কিছু বললো না । সে ভালো করেই জানে, এই মেয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সেটারই সদ্ব্যবহার করেছে। এখন।

    রিপোর্টটা ডেস্কে রেখে দিলো সে ।

    “ভিক্টিমের সাথে সালিভা ম্যাচিং করে নি,” এডলিন বলতে শুরু করলো।

    “হুম, আমি জানতাম এরকমই হবে।”

    “আপনি জানতেন?” কৃত্রিম বিস্ময় নিয়ে বললো এডলিন। “ওয়াও!”

    জেফরি কিছু বললো না। এই মেয়েটা তার অফিস থেকে যতো তাড়াতাড়ি চলে যায় ততোই ভালো। নইলে ডিপার্টমেন্টের গসিপপ্রিয় লোকজনের হাতে এক্সকুসিভ খোরাক তুলে দেয়া হবে।

    “তো আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?” এমনি এমনি জিজ্ঞেস করলো জেফরি বেগ।

    “ভালো।”

    “ব্যস্ততা কেমন?”

    “খুব বেশি ব্যস্ততা নেই,” পরক্ষণেই হাসিমুখে বললো, “এক কাপ চা কিংবা কফি খাওয়ার মতো সময় আছে।”

    ওহ, মনে মনে বললো জেফরি ।

    “চা খাবেন?”

    “খাওয়া যায়, আপনি যখন বলছেন।”

    আমি আবার কখন বললাম? জেফরি ঠিক করলো এড়িয়ে যেতে হবে। “ঠিক আছে, আপনি চা খেতে থাকেন আমি একটু স্যারের রুম থেকে আসছি।” কথাটা বলেই ইন্টারকম হাতে তুলে নিতে যাবে অমনি এডলিন বাধা দিলো।

    “থাক তাহলে,” মেয়েটার মুখ কালো হয়ে গেছে মুহূর্তে। “আমি এখন উঠি । আপনি স্যারের রুমে যান।”

    বিব্রত হয়ে রুম থেকে চলে গেলো এডলিন।

    চুপচাপ নিজের ডেস্কে বসে রইলো জেফরি । মেয়েটার জন্য তার মায়া লাগছে। তাকে কষ্ট দেয়ার কোনো ইচ্ছে তার ছিলো না।

    মোবাইল ফোনটা বের করে রেবার নাম্বারে ডায়াল করলো এডলিন সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য । কলটা রিসিভ করা হলে তার মুখে ফুটে উঠলো হাসি।

    “কি করছো?”

    অধ্যায় ১১

    শূন্য বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে অনেকক্ষণ ধরে কিন্তু চোখ বন্ধ করতে পারছে না । আজ তিনদিন ধরে রাতে তার ঘুম হয় না। দিনের বেলায় ক্লান্তিতে দুচোখ বন্ধ হয়, ঘুমের ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষণ বেঘোরে পড়ে থাকে । ছোটো ভাই আর বাবার কারণে দিনের বেলাটা কোনো রকম পার করে দেয়া যায় কিন্তু রাত একদমই অসহ্য হয়ে উঠেছে । রাত নেমে এলেই নিজেকে প্রচণ্ড একা মনে হয় তার। মনে হয় অন্ধকার সমুদ্রে ছোট্ট একটা ভেলায় করে ভেসে যাচ্ছে। কোথায় ভেসে যাচ্ছে তাও তার জানা নেই।

    ঘুমের ওষুধ খেলেও রাতে ঘুম আসে না । একটু আগে পর পর দুটো পিল খেয়েছে, কোনো কাজ হয় নি।

    বিছানার যেখানটায় হাসান ঘুমাতো সেখানে একদৃষ্টে চেয়ে থাকলো মলি । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করলো । মাত্র কয়েক দিন আগেও হাসান এখানে শুয়ে থাকতো। তাকে জড়িয়ে ধরে রাখতে সারা রাত । আদর করতো, গল্প করতো। মলি বার বার বলতো ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, সকালে স্কুলে যেতে হবে, তাড়াতাড়ি উঠতে হবে না? কিন্তু হাসান শুনতো না। এমনিতে স্বভাবে চুপচাপ হলেও মলির সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে যেতো। আজ সেই মানুষটি নেই। নেই মানে চিরতরের জন্যে নেই হয়ে গেছে। আর কখনও ফিরে আসবে না। তাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো আব্দার করে বলবে না, “আরেকবার, জান…প্লিজ?”

    মলির চোখের জল বিছানায় গড়াচ্ছে এখন। তাদের বিয়েটা প্রেমের বিয়ে ছিলো না। কিন্তু সেটেলড ম্যারেজও বলা যাবে না । হাসান ছিলো তার মায়ের মামাতো ভায়ের ছেলে । মাঝেমধ্যে দেখা হতো, কথা হতো কিন্তু প্রেম ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় সেটা হবার আগেই একদিন হাসানের বাপ তার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। প্রস্তাব দেবার পরের সপ্তাহেই তাদের কাবিন হয়ে যায়। এইচএসসি পাশ করে তখন ডিগ্রি পাস কোর্সে পড়ছে সে। মাত্র দু’বছর আগের কথা।

    বিয়ের পর মলি গ্রামেই ছিলো । ডিগ্রি পাস করার পরই তিন মাস আগে ঢাকায় নতুন সংসার জীবন শুরু করে তারা। এর আগে মাসে দুএকবার হাসান বাড়ি যেতো। সবচেয়ে বেশি কাছে পেতে ঈদের সময়টাতে। তাও তিন চারদিনের বেশি হবে না । একজন আরেকজনকে পাবার ব্যাকুলতা ছিলো। দিন দিন সেই ব্যাকুলতা বাড়তে থাকে। বছরখানেক আগেই হাসান জানায়, তাকে ঢাকায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে সে। ঢাকায় বাড়ি ভাড়া এতো বেশি, তার মাইনের টাকায় চলবে? মলির এ কথায় হাসান তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলো, সে টুকটাক শেয়ারের ব্যবসা শুরু করেছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। দুজনে মিলে কষ্ট করে হলেও একসাথে থাকবে। এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে আর ভালো লাগে না । কষ্ট করলে একসাথেই করবে ।

    কথাটা শুনে মলি যারপরনাই খুশি হয়েছিলো। তার নিজেরও কি ভালো লাগতো? কতো রাত একা একা ছটফট করে কাটিয়ে দিয়েছে। কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে নি । হাসান যখন বাড়িতে আসতো তখন অভিমানের সুরে, কপট রাগ দেখিয়ে প্রকাশ করতে নিজের ব্যাকুলতা, হাহাকার।

    সেই কষ্টের দিন শেষ হয়ে যায় তিন মাস আগে। ঢাকা শহরে ছোট্ট সংসার শুরু করে তারা । দিনগুলো কাটছিলো স্বর্গের মতো । শান্তশিষ্ট হাসান অফিস থেকে সোজা চলে আসতো বাসায়। মলিই ছিলো তার দুনিয়া। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো খুব জলদি।

    সকালে হাসান বেরিয়ে যায় স্কুলের কাজে। ফিরে আসে বিকেলে। সারাদিন মলি থাকে একা একা। এই ঢাকা শহরে তার মতো গ্রাম থেকে আসা মেয়ের জন্য কঠিন একটি ব্যাপার। কিন্তু এর সহজ সমাধান বের করে হাসান নিজেই । মলির ছোটো ভাই লিটু মাত্র এসএসসি পাশ করেছে, সদরের একটা সরকারী কলেজে ভর্তি হবার প্রস্ততি নিচ্ছে তখন। হাসান তার শ্বশুরকে প্রস্তাব দিলো, লিটু ঢাকায় চলে আসুক। এখানকার ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হোক। শ্বশুর আর না করে নি। মেয়ের এবং ছেলের দুজনেরই ভালো হবে। সুতরাং আপত্তি জানানোর কিছু ছিলো না।

    দু’মাস আগে তার ছোটো ভাই লিটু চলে আসে তাদের সাথে থাকার জন্য। হাসান তার শ্যালককে ভালো একটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। দুপুরের মধ্যে লিটু ফিরে আসতে কলেজ থেকে। তারপর বোনের জন্য এটা ওটা কিনে আনার কাজ করতো, তাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতো। বিকেলে হাসান ফিরে এলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তো টিউশনি করতে। হাসানই টিউশনিটা জোগার করে দিয়েছিলো লিটুর হাত খরচের জন্য।

    টিউশনি শেষে কিছু না কিছু মুখরোচক খাবার কিনে আনতো তার এই ছোটো ভাইটি । তারপর একসঙ্গে বসে টিভি দেখা, গান শোনা, গল্পগুজব চলতো রাত অবধি ।

    হায়, সেই সুখের দিনগুলো এতো দ্রুত ফুরিয়ে যাবে কে ভেবেছিলো!

    কোত্থেকে এক ঝড় এসে মলির ছোট্ট সংসারটাকে এলোমেলো করে দিয়ে। গেলো এক লহমায়।

    জোর করে কান্না চেপে রাখলো মলি । পাশের ঘরেই তার বাবা আর ভাই আছে। সে জানে, তার বাবার চোখে ঘুম নেই। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বৃদ্ধ বয়সে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন। কান্নার শব্দ যাতে পাশের ঘর থেকে শোনা না যায় সেজন্যে মুখ চেপে রাখলো সে।

    ঘণ্টাখানেক এভাবে বোবা কান্নায় ডুবে থেকে বিছানায় উঠে বসলো মলি । আলমিরা খুলে হাসানের শার্ট-প্যান্ট বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ। এখনও হাসানের গন্ধ লেগে রয়েছে তার জামা-কাপড়ে, শুধু মানুষটা নেই।

    হাসান যে শার্টটা বেশি পরতো সেটা বের করলো-সাদা রঙের একটি সূতির শার্ট । নাকে-মুখে ঘষে শার্টটার গন্ধ নিলো মলি । বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসতে চাইলো। জোর করে দমন করলো সেই কান্না। তবে নিঃশব্দ কান্নার জলে ভিজে গেলো শার্টটা।

    মলির ভেতরে তীব্র হাহাকার, হাসান এসে তাকে জড়িয়ে ধরুক। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তাকে গ্রাস করুক। শুধু গন্ধ না, রক্তমাংসের হাসানকে পেতে চাইছে সে। তার বুকে মুখ লুকাতে চাইছে । কিন্তু ভালো করেই জানে, হাসান আর কোনো দিন ফিরে আসবে না । অসাধারণ কোনো সঙ্গমের পনেরো মিনিট পরই তার কানে কানে আব্দারের সুরে বলবে না, আরেকবার, জান…প্লিজ!

    এভাবে শার্টটা বুকে জড়িয়ে কতোক্ষণ বসেছিলো সে জানে না, সম্বিত ফিরে পেলো ভোরের আজানের চড়া শব্দে। বাড়ির কাছেই একটি মসজিদ আছে। ভোরবেলায় সেই মসজিদের আজান কান ফাটিয়ে দেবার উপক্রম করে। চোখ মুছে শার্টটা আলমিরায় রাখতে গেলো মলি। ওজু করে নামাজ পড়বে । হাসান মারা যাবার পর থেকে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে। এর আগে কখনও নিয়মিত নামাজ পড়ে নি।

    ভোরের আলো খোলা জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। কিছুটা আলোকিত করে ফেলেছে ঘরটা। শার্টটা আলমিরায় রাখার সময় সেই আলোতে দেখতে পেলো হাসানের কাপড়চোপড়গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। খুব যত্ন করে কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একটা জিনিস তার নজরে পড়লো ।

    শোকে মুহ্যমান থাকার কারণে এটার কথা তার মনেই ছিলো না। এখন দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাতে তুলে নিলো।

    একটা ছোট্ট ডায়রি।

    অধ্যায় ১২

    সেন্ট অগাস্টিনে আজ একাই চলে এসেছে জেফরি বেগ। স্কুলের ছাত্রছাত্রিরা যেনো বুঝতে না পারে হোমিসাইডের একজন ইনভেস্টিগেটর তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। এ কারণে অরুণদাকেও কিছু জানায় নি।

    জেফরি যখন স্কুলে ঢুকলো তখনও ক্লাস চলছে। ছুটি হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। দাড়োয়ান আজগর আর তার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল বেশ সমীহ করে সালাম দিলো তাকে। এবার কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলো না। তাদের সাথে কোনো কথা না বলে সোজা চলে গেলো সেই টয়লেটের দিকে।

    চারপাশটা ভালো করে দেখলো । মেইনগেট থেকে একটা ড্রাইভওয়ে চলে গেছে প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সেখানে একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। কম করে হলেও আট-নয়টি গাড়ি পার্ক করা আছে। আরো চার পাঁচটি গাড়ি পার্ক করা যাবে। জেফরি জানে এখানে শুধুমাত্র শিক্ষক আর কর্মকর্তাদের গাড়ি রাখার অনুমতি দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রিদের জন্যে যেসব গাড়ি আসে সেগুলো স্কুলের বাইরে, মেইনগেটের দুদিকে পার্কিংলটে রাখা হয়। বলা বাহুল্য, প্রায় প্রত্যেক ছাত্রছাত্রির জন্যেই গাড়ি আসে । গাড়ি নেই এরকম কোনো লোকের সন্তান এ স্কুলে পড়ে না। স্কুল আওয়ারে, ছুটির সময় পুরো এলাকায় জ্যাম লেগে যায় শত শত গাড়ির আনাগোনার কারণে।

    পার্কিংলটের পাশেই স্কুলের মূল ভবনটি অবস্থিত। ছয় তলার এই ভবনটির বিভিন্ন রুমই ছাত্রছাত্রিদের ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল ভবনের সিঁড়ির পাশে বিশাল টয়লেটটি অবস্থিত। প্রতি তলায়ই এরকম টয়লেট রয়েছে।

    জায়গাটা ভালো করে দেখলো জেফরি । পুরো স্কুল কম্পাউন্ডটি আট ফিট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দেয়ালের উপর রয়েছে আরো তিন-চার ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া । নিরাপত্তা বেশ ভালো। বাইরে থেকে কারো পক্ষে এখানে এসে খুন করে চলে যাওয়াটা খুবই কঠিন কাজ।

    কিন্তু খুনটা যদি ভেতরের কেউ করে থাকে তাহলে একটা সমস্যা তৈরি হয়-কারণ সেই সম্ভাব্য খুনিকে হতে হবে পেশাদার কেউ। একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পেশাদার খুনি? ব্যাপারটা খুব বেশি কষ্টকল্পিত হয়ে যায় ।

    জেফরি ঠিক করলো বিশ্বজিৎ সন্ন্যালের সাথে আবারো দেখা করবে। তার সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছে, ভদ্রলোকের স্মৃতিশক্তি একটু দুর্বল। গতকালের করা প্রশ্নগুলো থেকে কথারছলে আবারো দুয়েকটা প্রশ্ন করবে । দেখবে, লোকটা একই জবাব দেয় কিনা। জেফরি ভালো করেই জানে, মিথ্যে কথা তারাই ভালো বলতে পারে যাদের স্মৃতিশক্তি প্রখর। দুর্বল স্মৃতির লোকজনের মিথ্যে ধরার জন্য সামান্য একটি কৌশল খাটাতে হয়। এখন সেই কৌশলটাই খাটাবে বিশ্বজিৎ সন্ন্যালের সাথে।

    গতকাল যখন বিশ্বজিৎ সন্ন্যালকে জেফরি প্রশ্ন করেছিলো হাসান সাহেবের সাথে স্কুলের কারো কোনো ঝামেলা হয়েছিলো কিনা তখন প্রিন্সিপ্যাল অরুণ রোজারিও আর সন্ন্যাল বাবুর মধ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় হয়েছিলো । ব্যাপারটা জেফরির চোখে ঠিকই ধরা পড়ে।

    প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় উঠে গেলো জেফরি বেগ ।

    .

    বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল গভীর মনোযোগের সাথে কিছু কাগজপত্র দেখছে । জেফরি যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা খেয়ালই করে নি ভদ্রলোক ।

    “কেমন আছেন, মি: সন্ন্যাল।”

    কথাটা শুনেই দরজার দিকে চমকে তাকালো হেড ক্লার্ক। জেফরিকে দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। “আপনি?”

    ঘরে ঢুকে সন্ন্যাল বাবুর সাথে হাত মেলালো জেফরি । এবার নমস্কার দেবার সুযোগ পেলো না ভদ্রলোক।

    “কাছেই অন্য একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম আপনাদের সাথে দেখা করে যাই,” একটু থেমে আবার বললো সে, “ব্যস্ত নাকি?”

    “না, ইয়ে মানে…একটা পুরনো ফাইল দেখছিলাম।” জেফরিকে একটা চেয়ার দেখিয়ে বললো বাবু, “বসুন।”

    চেয়ারে বসে পড়লো জেফরি । “আপনার কাজে ব্যঘাত ঘটালাম না। তো?”

    “না, না…সমস্যা নেই,” মলিন হাসি দিয়ে বললো বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল।

    স্কুল ছুটির ঘণ্টা শোনা গেলো এ সময়। কিছুক্ষণ পরই ছাত্রছাত্রিদের কোলাহল।

    “ড্রয়ার আর কম্পিউটার চেক করে কিছু পাওয়া যায় নি?” জিজ্ঞেস করলো সন্ন্যাল বাবু ।

    “না।”

    “এই কম্পিউটার আর অফিস ড্রয়ারে গুরুত্বপূর্ণ কী আর পাবে?” বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল আস্তে করে বললো।

    “তদন্ত করতে গেলে সবকিছুই খতিয়ে দেখতে হয়। আমিও জানতাম কিছু পাওয়া যাবে না। শুধু কনফার্ম হলাম আর কি।

    ভারি কাঁচের ভেতর দিয়ে জেফরির দিকে চেয়ে রইলো বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল । “ছেলেটাকে কে মারলো, বলুন তো?” দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইলো বাবু।

    “এখনও তদন্তের প্রাথমিক অবস্থায় আছি, নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে…” একটু থেমে বাবুর দিকে স্থিরচোখে তাকালো জেফরি বেগ। “মনে হচ্ছে খুনটা স্কুলের কেউই করেছে।”

    বাবুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো । ঢোক গিলে বললো, “এরকম নিরীহ একটা ছেলেকে স্কুলের কে খুন করতে যাবে? ওকে খুন করে কার কী লাভ হবে, বলুন?”

    “হুম,” মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি । একটু চুপ থেকে বললো, “মনে হচ্ছে হাসানের সাথে স্কুলের কারো কোনো ঝামেলা হয়েছিলো,” কথাটা বলেই বিশ্বজিৎ সন্ন্যালের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করার চেষ্টা করলো সে। তার কাছে মনে হলো লোকটা কেমন জানি ভড়কে গেলো।

    “না, তার সাথে আবার কার ঝামেলা হতে যাবে?” কথাটা বলেই চোখ নামিয়ে ফেললো বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল।

    স্থিরচোখে বাবুর দিকে চেয়ে রইলো জেফরি । বুঝতে পারলো, স্মৃতিশক্তির পরীক্ষায় বাবু উতরে গেলেও অভিব্যক্তি লুকাবার বেলায় আবারো ব্যর্থ হয়েছে ।

    “চা খাবেন?”

    চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই জেফরির কিন্তু মাথা নেড়ে সায় দিলো সে, বাবুকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবে বলে।

    ভদ্রলোক বেল বাজালে একটা ছেলে ঢুকলো ঘরে। ছেলেটাকে দু’কাপ চায়ের কথা বলে দিলো।

    “কারো সাথে যদি ঝামেলা না-ই হয়ে থাকে তাহলে খুনটা হলো কেন? নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছিলো,” বেশ জোর দিয়ে বললো সে।”

    যথারীতি বাবু নিজের অভিব্যক্তি লুকাতে ব্যর্থ হলো। আস্তে করে ঢোক গিলে জেফরির দিকে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। “কেউ কি আপনাকে এরকম কিছু বলেছে?”

    বাবুর অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে একটা ঢিল ছুড়লো জেফরি । “আমাকে অবশ্য একজন বলেছে, হাসান সাহেবের সাথে নাকি স্কুলে কী একটা ঝামেলা হয়েছিলো কয়েক দিন আগে।”

    “কে বলেছে?” বাবু অনেকটা ঘাবড়ে গেলো ।

    “কে বলেছে সেটা বড় কথা নয়, এরকম কিছু ঘটেছে কিনা সেটাই হলো আসল কথা।”

    বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল ভেবে পেলো না কী বলবে।

    “আমি ভাবলাম হাসান যেহেতু আপনার সাথেই কাজ করতো, আপনার অফিসরুম শেয়ার করতো, এই ব্যাপারটা আপনিই ভালো বলতে পারবেন।”

    চা চলে এলে জেফরি নিজের কাপটা তুলে নিলো কিন্তু সন্ন্যাল বাবু কাপ ছুঁয়েও দেখলো না।

    “আমার জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটে নি,” বললো বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল। “হাসান আমাকে এরকম কিছু বলেও নি। বললে আমার মনে থাকতো । বুঝতে পারছি না আপনাকে এ কথা কে বললো।”

    খুব দ্রুত চা শেষ করে ফেললো জেফরি বেগ। “আপনার কাজে আর ব্যঘাত ঘটাবো না, আপনি কাজ করুন। আমি একটু অরুণদার সাথে দেখা করে আসি।”

    জেফরি উঠে দাঁড়ালে বিশ্বজিৎ সন্ন্যালও উঠে দাঁড়ালো। ভদ্রলোকের সাথে করমর্দন করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

    সিঁড়ি দিয়ে যখন নীচে নামছে তখন ইনভেস্টিগেটর বেগ বুঝতে পারলো বিশ্বজিৎ সন্ন্যাল দারুণ টেনশনে পড়ে গেছে। লোকটার হাত বরফের মতো ঠাণ্ডা আর ঘামে ভিজে একাকার। একটা সামান্য প্রশ্নে এতোটা টেনশনে পড়ে যাবে কেন? ভাবনার বিষয়।

    নীচে নেমে জেফরি দারুণ অবাক। পুরো স্কুল কম্পাউন্ড হাতে গোনা কিছু ছাত্রছাত্রি ছাড়া একেবারে ফাঁকা । যারা এখনও রয়ে গেছে তারাও মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

    প্রশাসনিক ভবন থেকে সোজা চলে এলো অরুণদার রুম। কিন্তু রুমের দরজা বন্ধ । এক কর্মচারিকে জিজ্ঞেস করলে সে জানালো প্রিন্সিপ্যাল সাহেব কিছু গার্জেনের সাথে উপর তলায় কনফারেন্স রুমে মিটিং করছেন । জেফরি ইচ্ছে করলে ভিজিটর রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারে।

    কিন্তু ভিজিটর রুমে না গিয়ে সে চলে এলো পার্কিংলটের সামনে। মাত্র দুটো গাড়ি আছে এখন। তার মধ্যে একটা অবশ্যই অরুণদার হবে, ভাবলো

    অলস ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে বাস্কেটবল কোর্টের দিকে চলে এলো। চার পাঁচজন ছেলে প্র্যাকটিস করছে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর খেলা দেখতে লাগলো সে। স্কুলে শোকের পরিবেশ বিরাজ করলেও এই ছেলেগুলোর প্র্যাকটিস বন্ধ হয় নি । খুব সিরিয়াসলি তারা প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে।

    মোট পাঁচজন ছেলে। সবাই বেশ লম্বা। স্কুলের ছেলে হিসেবে মেনে নিতে কষ্টই হয়, কিন্তু জেফরি জানে, বাস্কেটবল খেলায় উচ্চতা একটি বিরাট ফ্যাক্টর। তাই স্কুলের লম্বা ছেলেরাই এই খেলার প্রতি বেশি ঝোঁকে।

    চারজন ছেলে একজোট হয়ে একজন ছেলের বিরুদ্ধে খেলছে। খুবই পরিচিত দৃশ্য। স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো তার। এ রকম একজনকে তারা বলতো ‘কুত্তা’ । শুনতে যতো খারাপই লাগুক, প্র্যাকটিসের সময় তারা এটা নিয়মিত করতো। সেই কুত্তা যার কাছ থেকে বল কেড়ে নিতো সে আবার ‘কুত্তা হয়ে যেতো। এভাবেই পালাক্রমে চলতে থাকতো তাদের প্র্যাকটিস । অবশ্য এখনকার দিনের ছেলেরা কুত্তা’ শব্দটি ব্যবহার করে কিনা সে ব্যাপারে তার সন্দেহ আছে।

    ছেলেগুলো আড়চোখে তার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। জেফরি সতর্ক হয়ে উঠলো। কোনোভাবেই এদের কাছে তার আসল পরিচয় দেয়া যাবে না । সে একজন গেস্ট। তাদের প্রিন্সিপ্যালের পরিচিত। এমনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে।

    জেফরি লক্ষ্য করলো ছেলেগুলো শুধু আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছেই না, মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে চাপাস্বরে কথাও বলছে। তাদের কথাবার্তার বিষয় যে সে নিজে, এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিত।

    আরেকটা ব্যাপারও লক্ষ্য করলো, ছেলেগুলো তাকে দেখার পর থেকে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের প্রতিযোগীতা শুরু করে দিয়েছে । কে কার চেয়ে বেশি ভালো এরকম এক অলিখিত প্রতিযোগীতায় যেনো তারা লিপ্ত।

    পাঁচজন ছেলের মধ্যে দুজনের নামও জেনে গেলো একে অন্যেকে সম্বোধন করার ফলে । নাফি নামের ছেলেটা যে এই দলের সবচাইতে ভালো খেলোয়াড় সেটা বুঝতে জেফরির খুব বেশি সময় লাগলো না। দুর্দান্ত স্কিল আর গতি, সেইসাথে নিখুঁত থ্রোয়িং। জেফরি নিজেও খুব ভালো বাস্কেটবল খেলতো। ইন্টারস্কুল টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকবার নেতৃত্বও দিয়েছে তাদের স্কুল টিমের।

    ছেলেগুলো জেফরিকে দেখে কি মনে করেছে সেটা বোঝা না গেলেও এটা বোঝা গেলো নিজেদেরকে প্রদর্শন করার তীব্র প্রতিযোগীতা শুরু করে দিয়েছে। অল্পবয়সী ছেলেরা সাধারণত এই বয়সে এমনটিই করে থাকে। সারা দুনিয়াকে তারা দেখিয়ে দিতে চায়। প্রতিভা থাকুক আর না থাকুক নিজেদের জাহির করার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহী থাকে তারা ।

    খুব মজা পাচ্ছে জেফরি । বাস্কেটবল কোর্টের বাউন্ডারি লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে চুপচাপ খেলা দেখে যাচ্ছে সে ।

    এক সময় বলটা একজনের হাত থেকে ছিটকে চলে এলো তার পায়ের কাছে । দ্রুত বলটা হাতে তুলে নিলো সে। বলটা নেবার জন্য নাফি নামের ছেলেটা এগিয়ে আসতেই হঠাৎ করে ছেলেমানুষি ভর করলো তার মধ্যে । হুট করে দূর থেকে বলটা থ্রো করে বসলো বাস্কেট লক্ষ্য করে । বলটা যখন শূন্যে ভাসছে, ছুটে যাচ্ছে বাস্কেটের দিকে তখনই তার মনে হলো একদম ছেলেমানুষির মতো কাজ করে ফেলেছে। কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো অবাক হয়ে হা করে চেয়ে রইলো শূন্যে ভেসে থাকা বলটার দিকে।

    সবাইকে বিস্মিত করে বলটা বাস্কেটে গিয়ে পড়লে জেফরি নিজেও বেশ অবাক হলো।

    “ওয়াও!” একটা ছেলে বলে উঠলো বেশ জোরে ।

    কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো সে।

    “নাইস শট, ম্যান,” তার সামনে এসে বললো নাফি নামের ছেলেটা । লম্বায় জেফরির চেয়েও দু’এক ইঞ্চি বেশি হবে । বেশ সুগঠিত শরীর ।

    বাকি ছেলেগুলো এখন জেফরির দিকে চেয়ে আছে অবাক চোখে ।

    “থ্যাঙ্কস,” লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো জেফরি বেগ।

    “রিয়েলি নাইস শট, নাফি নামের ছেলেটা প্রশংসার সুরে বললো ।

    বিব্রত হয়ে হেসে ফেললো সে। “ঝড়ে বক মরেছে মনে হচ্ছে।”

    “ওহ্ প্লিজ,” নাফি বললো । হাত বাড়িয়ে দিলো জেফরির দিকে। “আমি নাফি হাজ্জাদ।”

    ছেলেটার সাথে করমর্দন করলো সে। “নাইস টু মিট ইউ ।” কিন্তু নিজের নাম বললো না।

    “কোন টিমের কোচ, আপনি?”

    নাফির এই প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো জেফরি । “বুঝলাম না?”

    “আই মিন, আপনি কোন টিম থেকে এসেছেন? আমি শিওর আপনি একজন কোচ। অ্যাম আই রাইট?”

    “আরে না, আমি কোনো কোচটোচ নই,” বললো জেফরি বেগ । ছেলেগুলো তাকে বাস্কেটবলের কোচ ভেবেছে! মনে মনে হেসে ফেললো সে।

    “রিয়েলি?” অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইলো নাফি হাজ্জাদ নামের ছেলেটি।

    তার বন্ধুরা এক পা দুপা করে নাফির পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে এখন । তারাও কৌতূহল নিয়ে চেয়ে আছে জেফরির দিকে ।

    “সত্যি বলছি, আমি কোনো টিমের কোচ নই,” জোর দিয়ে বললো সে ।

    ভুরু কুচকে চেয়ে রইলো নাফি হাজ্জাদ নামের ছেলেটি। তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে ।

    জেফরির পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিলো নাফি। “তাহলে আপনি কে?”।

    “আমি তোমাদের প্রিন্সিপ্যালের একজন গেস্ট।” জেফরি বেগ দেখতে পেলো ছেলেগুলো হতাশ হলো তার কথা শুনে ।

    “ও,” বললো নাফি হাজ্জাদ। “সরি, আমি ভেবেছিলাম আপনি কোনো টিমের কোচ হবেন।”

    “আমাকে দেখে কি কোচ বলে মনে হয়?” হেসে জানতে চাইলো সে।

    “না, ঠিক তা না, ঐদিন আপনার মতোই একজন কোচ এসেছিলো তো তাই…” নাফি ঘুরে চলে গেলো তার বন্ধুদের কাছে ।

    জেফরি দেখতে পাচ্ছে ছেলেগুলো একটু হতাশ । নাফির সাথে চাপাস্বরে কথা বলছে, বার বার তাকাচ্ছে তার দিকে। তবে এবার একটু বিরক্ত হয়ে, যেনো অযাচিত একজন তাদের প্র্যাকটিস সেশনে ঢুকে পড়েছে।

    মুচকি হাসলো সে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঘুরে চলে গেলো বাস্কেট বলের কোর্ট থেকে। এতোক্ষণে হয়তো অরুণ রোজারিওর সাথে গার্জিয়ানদের মিটিং শেষ হয়ে গেছে। সে দেখতে পাচ্ছে সু-টাই পরা কিছু লোক মেইনগেটের দিকে চলে যাচ্ছে। এরাই হয়তো সেইসব উদ্বিগ্ন গার্জিয়ান।

    বলটা বাস্কেটে থ্রো করতে পেরেছে বলে ছেলেগুলো তাকে বাস্কেটবলের কোচ ভেবেছিলো। এটাকে কি কম্প্রিমেন্ট হিসেবে নেবে, নাকি…।

    আপন মনে আবারো হেসে ফেললো সে। প্রিন্সিপ্যালের রুমের বাইরে এসে দেখতে পেলো দরজা খোলা। দরজার কাছে আসতেই একটা ভাবনা তার মাথায় চলে এলো। আর ভাবনাটি বাস্কেটবল নিয়েই। থমকে দাঁড়ালো হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। কপালের বাম পাশটা হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে কখন যে উল্টো দিকে ঘুরে হাটা ধরেছে খেয়ালই করতে পারলো না ।

    অধ্যায় ১৩

    কলেজ থেকে লিটু দেরি করে ফিরে এসেছে আজ। তার কারণ কলেজের ক্লাস শেষ করে আজিমপুর গোরস্থানে গিয়েছিলো সে। হাসানের কবরটার চারপাশে বেড়া লাগানোর কথা ছিলো, কাজটা ঠিকমতো করা হয়েছে কিনা দেখতে গিয়েছিলো।

    তার আশংকাই ঠিক প্রমাণিত হয়েছে। হাসানের কবরের কবরের চারপাশে কোনো বেড়া নেই। কবরস্তানের যে কেয়ারটেকার লোকটাকে বেড়া কিনে দেবার জন্য টাকা দিয়েছিলো তাকে খুঁজে বের করতেই লোকটা নানান অজুহাত দেখাতে শুরু করলো । দুনিয়ার মানুষ মরেছে, একটার পর একটা লাশ এসেছে, তাই সেগুলো সামাল দিতে দিতেই তার জান বের হয়ে গেছে, বেড়া কিনতে যাবার সময় কই?

    কবরস্তানের লোকজন যে খুব একটা সুবিধার হয় না সে কথা কলেজের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে শুনেছে লিটু। এখানে নাকি প্রচুর ধান্দাবাজ লোকজন নানা রকম চিটিং-বাটপারি করে বেড়ায়। তার বিশ্বাসই হয় না, মৃতদের নিয়ে ধান্দাবাজি কিভাবে করে মানুষ!

    লিটু আর কথা বাড়ায় নি। লোকটার কাছ থেকে টাকাগুলো ফেরত নিয়ে নিয়েছে। লোকটা অবশ্য গাইগুই করছিলো, টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছিলো না। সন্ধ্যার আগেই নাকি কবরে বেড়া লাগিয়ে দেবে। কিন্তু লিটু আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ দেয় নি। টাকাগুলো ফেরত নিয়ে নিজেই চলে যায় বেড়া কিনতে। তারপর সেগুলো কবরস্তানে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে লাগিয়ে দিয়েছে। এ আর এমন কী কঠিন কাজ। গ্রামের ছেলে সে। এরকম কাজ তো ছোটো বয়স থেকেই করেছে।

    হাসানের কবরটা বেড়া লাগিয়ে সেখানে আগরবাতি জ্বালিয়ে সুরা ফাতেহা পাঠ করে চলে আসে বাড়িতে। তার বোন মলি বলে দিয়েছিলো, আগরবাতি জ্বালিয়ে সুরা ফাতেহা পাঠ করতে যেনো ভুলে না যায়।

    বাড়িতে এসে দেখে আসতে দেরি হয়েছে বলে তার বোন আর বৃদ্ধ বাবা অস্থির হয়ে আছে। দরজা খুলেই তার বোন তাকে জড়িয়ে ধরে । কদিন আগে স্বামীকে হারানোর পর তার বোন মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙে পড়েছে যে, খুব সহজেই ঘাবড়ে যায় ।

    তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন নেই, থাকলে বোনকে আর এতোটা দুশ্চিন্তায় রাখতো না।

    মোবাইল ফোন!

    সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেলো। তার বোন জামাই হাসান কদিন আগেই তাকে বলেছিলো সামনের মাসে তাকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেবে। কথাটা শুনে খুব খুশি হলেও মুখে বলেছিলো, খামোখা এতো টাকা খরচ করার কী দরকার । তার মোবাইল ফোন লাগবে না। হাসান হেসে বলেছিলো, ফোন তাকে ঠিকই কিনে দেবে কিন্তু সেই ফোন দিয়ে যেনো মেয়েছেলেদের সাথে প্রেমালাপ না করে । কথাটা শুনে কিছুটা লজ্জা পেয়েছিলো লিটু কারণ কথাটা তার বোনের সামনে বলেছিলো হাসান।

    তবে একটু পরই বুঝতে পারলো তার বোন অন্য একটা কারণে এতোটা অস্থির হয়ে আছে।

    তার বোন হাসানের একটি ডায়রি পেয়েছে আলমিরার ভেতর থেকে। হাসান নাকি ডায়রি লিখতো। লিটু অবশ্য বোনজামাইকে কখনও ডায়রি লিখতে দেখে নি। তার বোন ডায়রিটা পাবার পর থেকে বিরামহীনভাবে পড়ে গেছে। সে যখন সকালে কলেজে যাচ্ছিলো তখনও বোনকে দেখেছে গভীর মনোযোগের সাথে প্রয়াত স্বামীর ডায়রি পড়ছে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আর দুচোখ। বেয়ে নীরব অশ্রুপাত করছে। দরজা দিয়ে দৃশ্যটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিটু পা বাড়ায় কলেজের দিকে।

    দুপুরের পরই ডায়রির একটা জায়গায় এসে মলির খটকা লাগে। ওখানে এমন একটা কথা লেখা ছিলো যার মাথামুণ্ডু সে বুঝতে পারছিলো না। এরকম ঘটনার কথা হাসান তাকে কোনোদিনও বলে নি। ডায়রির ঐ লেখাগুলো পড়ে তার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না হাসান এসব কথা লিখেছে । তার প্রাণপ্রিয় স্বামী, যে কিনা সব কথা তাকে বলতো, এমন কি ঢাকায় কলেজে পড়ার সময় এক বড়লোকের মেয়ের সাথে তার খণ্ডকালীন প্রেমের কথাও মলিকে বলেছে অকপটে, সেই হাসান এরকম একটা কথা বেমালুম চেপে গেলো!

    .

    জেফরিকে আবারো বাস্কেটবল কোর্টের কাছে ফিরে আসতে দেখে নাফি হাজ্জাদসহ তার সঙ্গিরা বেশ অবাকই হলো । খেলার ফাঁকে ফাঁকে বার বার আড়চোখে তাকাতে শুরু করলো জেফরির দিকে।

    চুপচাপ বাস্কেটবল কোর্টের কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইলো সে । নাফি হাজ্জাদ নামের ছেলেটির সাথে তার চোখাচোখি হতেই হাত নেড়ে তাকে কাছে। ডাকলো ।

    খুব অবাক হলো মাফি। বন্ধুদের ইশারা করে খেলা থেকে নিজেকে তুলে নিয়ে চলে এলো জেফরির কাছে ।

    জেফরি লক্ষ্য করলো স্লিভলেস টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টার শর্ট পরা নাফি ঘেমে একাকার। দম ফুরিয়ে হাফাচ্ছে।

    “কি ব্যাপার…বলুন?”

    “একটু আগে তুমি কোচের কথা বলছিলে না?”

    “হুম,” হাটুতে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে বললো ছেলেটা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে ।

    “আমি সে ব্যাপারেই একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”

    নাফি ভুরু কুচকে চেয়ে রইলো। “আপনি আসলে কে, বলেন তো?”

    “বললাম না, তোমাদের প্রিন্সিপ্যালের গেস্ট।”

    এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। “আচ্ছা বলুন, কী জানতে চান?”

    “কোন্ টিমের কোচ এসেছিলো ঐদিন?”

    “অ্যাঞ্জেলসের।”

    জেফরি জানে এটা তাদের স্কুল সেন্ট গ্রেগোরিজের টিম। গ্রেগস নামের আরেকটা টিম আছে তাদের স্কুলে। এই দুটো টিমই এ দেশের বাস্কেটবলের চ্যাম্পিয়ন হয় পালাক্রমে । তারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। তার এক স্কুলবন্ধু এই টিমের সাথে জড়িত ছিলো। সেটা অবশ্য অনেক দিন আগের কথা। এখন সেই বন্ধু অ্যাঞ্জেলসের সাথে জড়িত আছে কিনা কে জানে।

    “কেন এসেছিলো?”

    এবার পেছন ফিরে বন্ধুদের দিকে তাকালো নাফি। গাট্টাগোট্টা গড়নের এক ছেলের সাথে চোখাচোখি হলো তার। ছেলেটা বুড়ো আঙুল তুলে হাই ফাইভ দেখালো তাকে। “প্লেয়ার হান্ট করতে।”

    “এটা কতো দিন আগের ঘটনা?”

    একটু মনে করার চেষ্টা করলো নাফি। “গত বৃহস্পতিবার মনে হয়।”

    বৃহস্পতি বার! জেফরি নড়েচড়ে উঠলো। “তুমি শিওর?”

    কাঁধ তুললো নাফি হাজ্জাদ। তারপরই পেছন ফিরে চিৎকার করে বললো, “দিপ্রো…অ্যাঞ্জেলসের কোচ বৃহস্পতিবার এসেছিলো না?”

    দূর থেকে মাথা নেড়ে সায় দিলো দিপ্রো নামের ছেলেটি।

    জেফরির দিকে ফিরে তাকালো এবার। “হ্যাঁ, বৃহস্পতিবারই।”

    আচ্ছা! মনে মনে বললো জেফরি বেগ । “বৃহস্পতিবার কখন এসেছিলো?”

    “এরকম সময়েই…আমরা তখন প্র্যাকটিস করছিলাম,” নাফি কিছুটা অধৈর্য হয়ে উঠছে। জেফরির এসব প্রশ্ন তার কাছে মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না।

    “তারপর ঐ কোচ কি করলো?”

    এই প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছে করলো না নাফির। একটু দ্বিধার সাথে বললো, “একটা ছেলের সাথে কথাবার্তা বলে চলে যায়। তুর্য নামের ছেলেটাকে যে অ্যাঞ্জেলসের কোচ রিক্রুট করেছে সেটা আর বললো না।

    “কথাবার্তা মানে?” জেফরি বুঝতে পারলো না । “কি নিয়ে কথাবার্তা?”

    কাঁধ তুললো নাফি। “তা তো বলতে পারবো না…হয়তো কন্ট্রাক্ট সাইন করার জন্য হতে পারে।” তার আর ভালো লাগছে না কথা বলতে । চাইছে তাড়াতাড়ি যেনো এই আলোচনাটা শেষ হয়ে যায়।

    “আচ্ছা,” বুঝতে পারলো জেফরি বেগ। “ঐ ছেলেটার নাম কি?”

    নাফি চেয়ে রইলো জেফরির দিকে। “তুর্য।” একান্ত অনিচ্ছায় বললো সে।

    “তোমার সাথে পড়ে নাকি অন্য ক্লাসে?”

    “আমার সাথেই পড়ে।”

    “ছেলেটা এখানে আছে?”

    “না । আজ ক্লাসে আসে নি।”

    নাফির অনিচ্ছুক ভঙ্গিটা জেফরির চোখ এড়ালো না । “ক্লাসে আসে নি? কেন?”

    এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না নাফি। মেজাজ বিগড়ে গেলো। “আরে, কে ক্লাসে এলো না এলো তা আমি কি করে জানবো…শিট!” বিরক্ত হয়ে জেফরির দিকে তাকালো । “আমি প্র্যাকটিস করছি…কয়েকদিন বাদেই ইন্টারস্কুল টুনামেন্ট আছে…ওকে?”

    জেফরি কিছু বলার আগেই নাফি হাজ্জাদ চলে গেলো কোর্টে, যোগ দিলো বন্ধুদের সাথে। ছেলেটার এমন আচরণে অবাক হলো সে । চুপচাপ কোর্টের সামনে থেকে চলে এলেও তার মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো।

    হাসান যেদিন খুন হয় সেদিন অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচ এসেছিলো। ঠিক স্কুল ছুটির পরই। প্লেয়ার হান্ট করতে। এটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় মোটেও। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বলেছে এদিন কোনো বহিরাগত স্কুলে প্রবেশ করে নি । তাহলে ঐ কোচ কিভাবে এরকম সুরক্ষিত স্কুলে প্রবেশ করলো?

    জেফরি সোজা চলে গেলো প্রিন্সিপ্যালের রুমে ।

    অরুণ রোজারিও নিজের ডেস্কে বসে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছেন । জেফরিকে ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি। তবে ইশারা করলেন বসার জন্য ।

    “কি ব্যাপার, জেফ?” ফোনটা রেখেই সামনে বসা জেফরিকে বললেন তিনি।

    “একটা ব্যাপার জানতে এলাম, অরুণদা।”

    “কি ব্যাপার, বলো?” অরুণদার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট।

    “হাসান যেদিন খুন হয় সেদিন এই স্কুলে বহিরাগত কেউ আসে নি…আপনি এবং দাড়োয়ান সবাই আমাকে সে কথা বলেছে।”

    “হ্যাঁ, অবশ্যই কেউ আসে নি। কেন, কি হয়েছে?”

    “কিন্তু বাইরে থেকে একজন এসেছিলো, অরুণদা।” দৃঢ়ভাবে বললো সে ।

    “বাইরের একজন এসেছিলো!” অবিশ্বাসে বিড়বিড় করে কথাটার প্রতিধ্বনি করলো প্রিন্সিপ্যাল।

    “হুম।”

    “কে এসেছিলো? আর তোমাকেই বা বললো কে?

    “অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচ।”

    “অ্যাঞ্জেলস টিম মানে?” অরুণ রোজারিও বুঝতে পারলেন না ।

    “একটা বাস্কেটবল টিম…তারাই এখন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন,” বললো জেফরি ।

    “আচ্ছা, কিন্তু এ কথা তোমাকে কে বললো? আমি তো কিছু জানি না!”

    “বাইরে বাস্কেটবল কোর্টে কিছু ছেলেপেলে প্র্যাকটিস করছে, তারা বলেছে।”

    অরুণ রোজারিও ঘাবড়ে গেলেন। “হোয়াট!” কিছুটা ভয়ও যেনো জেঁকে বসলো তার মধ্যে । “তুমি ইন্টেরোগেশন করেছে ওদেরকে? আই মিন, মার্ডার কেসটা নিয়ে কথা বলেছো?” জেফরি কিছু বলতে যাবার আগেই বলতে লাগলেন প্রিন্সিপ্যাল, “তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে, আমার কনসার্ন ছাড়া ছাত্রছাত্রিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না, আর করলেও–

    হাত তুলে থামিয়ে দিলো জেফরি । “অস্থির হবেন না, আমি তাদের সাথে এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলি নি।” অরুণ রোজারিওকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলো সে।

    “তাহলে? তুমিই না বললে ওরা তোমাকে এ কথা বলেছে।”

    “হ্যাঁ, ওরাই বলেছে, কিন্তু আমি যে এই কেসের তদন্ত করছি সেটা ওরা জানে না।”

    “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, জেফ?”

    “অরুণদা, আপনি একদম চিন্তা করবেন না । আমি ওদের সাথে এমনি কথা বলতে বলতে এটা জেনে নিয়েছি।”

    জেফরির এ কথা শুনে অরুণ রোজারিও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। “ওরা তোমাকে কথারছলে এ কথা বললো?!”

    মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো তার। একজন ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কারো কাছে এভাবে জবাবদিহি করতে ভালো লাগে না। অরুণ রোজারিওর জায়গায় অন্য কেউ হলে সমুচিত জবাব দিয়ে দিতো।

    “অরুণদা, আমি একটা হত্যা মামলা তদন্ত করছি, আর সেই হত্যাকাণ্ডটি এখানেই ঘটেছে। সুতরাং, আমি কার সাথে কিভাবে কথা বলে জেনে নিয়েছি সেটা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ দেখছি না।”

    জেফরির অভিব্যক্তি দেখে অরুণ রোজারিও চুপসে গেলেন। “না, মানে তুমি তো ভালো করেই জানো এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুব…”

    “হ্যাঁ, আমি সেটা জানি, অরুণদা । কিন্তু আপনি আমার উপরে আস্থা রাখুন। এমন কোনো কাজ আমি করবো না যাতে আপনার সমস্যা হয়।”

    “না, সেটা আমি অবশ্যই জানি…তুমি এমন কিছু করবে না…”।

    “তাহলে এটা আমার উপরেই ছেড়ে দেন…আমি কিভাবে জানলাম সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। ওকে?”

    অরুণ রোজারিও কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলেন জেফরির দিকে। তারপর নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিলেন কেবল।

    “এখন কাজের কথায় আসি,” বললো জেফরি ।

    ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন প্রিন্সিপ্যাল । “কাজের কথায়?”

    “হ্যাঁ,” একটু থেমে আবার বললো। “এই কোচ ভদ্রলোক কার মাধ্যমে, কিভাবে এখানে ঢুকতে পারলো সেটা আমাকে জানতে হবে।”

    গাল চুলকালেন অরুণ রোজারিও। “কার মাধ্যমে ঢুকবে…কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”

    “আমাকে জানতে হবে আপনার এই দূর্গে কোন ফাঁটল দিয়ে বাইরের লোকজন অনায়াসে ভেতরে ঢুকে ছাত্রদের মধ্যে থেকে প্লেয়ার হাট করতে পারে।”

    জেফরির কথাটা শুনে অরুণ রোজারিও কাচুমাচু খেলেন।

    অধ্যায় ১৪

    লিটুর ঘরে মলি আর তার বাবা বসে আছে। তাদের সবার মুখ থমথমে।

    একটু আগে হাসানের ডায়রি থেকে একটা ঘটনার কথা মলি তাদের দুজনকে জানিয়েছে। কথাটা শোনার পর থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কী করবে।

    হাসানের মতো নিরীহ নির্বিবাদি একটা ছেলেকে কারা খুন করতে যাবে-আজকের দুপুর পর্যন্ত এই প্রশ্নের কোনো জবাব তাদের কাছে ছিলো না। এখন তারা প্রশ্নের জবাবটা পেয়ে গেছে কিন্তু বুঝতে পারছে না কার কাছে এ কথা বলবে।

    মলির বৃদ্ধ বাবা ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একমাত্র মেয়ে অল্প বয়সে বিধবা হওয়াতে এমনিতেই তিনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, এখন ডায়রির এই ঘটনা শোনার পর থেকে তার হৃদকম্প বেড়ে গেছে। তিনি নিশ্চিত, এটা পুলিশের কাছে প্রকাশ করলে বিরাট একটা ঝামেলায় পড়ে যাবেন তারা সবাই। তাদের মতো সাধারণ পরিবারের লোকজন এরকম শক্তিশালী কোনো ব্যক্তির রোষাণলে পড়ে গেলে আর রক্ষা নেই।

    মেয়েকে তিনি বার বার বলেছেন, পুলিশকে কোনোভাবেই এটা বলা যাবে না। পুলিশ হলো ঐসব ক্ষমতাবান লোকদের পোষা কুকুর। যা হবার হয়েছে, আর কোনো বিপদ ডেকে আনতে চান না তিনি। কিছুক্ষণ আগে মনে মনে একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন ভদ্রলোক : মলিকে গ্রামে নিয়ে যাবেন দুএকদিনের মধ্যে। সমস্যা হলো ছেলেটাকে নিয়ে। মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। এখন তাকে একা রেখে যাবেন কোথায়? যে কলেজে ভর্তি হয়েছে সেটার কোনো আবাসিক হল নেই। থাকলে সেখানেই তুলে দিতেন। তারপরও মেয়েকে এই নির্মম শহরে একা রেখে যাবেন না, এই সিদ্ধান্তে তিনি অটল।

    “যে ইনভেস্টিগেটরটা এসেছিলো তাকে আমার খুব ভালো মনে হয়েছে, আপা। তাকে বললে মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে…”

    মলি তার ভায়ের দিকে চেয়ে রইলো । ইনভেস্টিগেটরকে তারও ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে কিন্তু পুলিশের লোকজনকে বিশ্বাস করা তার পক্ষেও কঠিন। সে কি ভুলে গেছে, তাদের গ্রামের এক গরীব মেয়ে জেসমিনকে কিভাবে একদল পুলিশ ধর্ষণ করে খুন করেছিলো। তার বয়স তখন বারো কি তেরো। মাত্র ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। নারীত্ব জেগে উঠছে তার মধ্যে। জেসমিন ধর্ষণের পর দুঃস্বপ্নের ভয়ে কতো রাত যে ঘুমাতে পারে নি সেটা শুধু সে-ই জানে।

    দুঃস্বপ্নে দেখতে একদল পুলিশ তাকে ঘিরে রেখেছে। তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তারা। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে মলি কুঁকড়ে যেতো। তারপরই ভীতিকর সেই দৃশ্যটা দেখতে পেতো সে-সবগুলো পুলিশ একসাথে প্যান্টের জিপার খুলছে।

    কথাটা মনে পড়তেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। ছোটো ভাই লিটুর দিকে তাকালো মলি ।

    “ঐ লোকটারে বলব তাহলে?”

    “তুমি কি বলতে ভয় পাচ্ছো, আপা?”

    মলি কিছু বলার আগেই তার বাবা মৃদু বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, “মারে, এসব করার কী দরকার? কোনো লাভ হবে না। খামোখা বিপদ ডেকে আনা কি ঠিক হবে?”

    বাবার দিকে চেয়ে রইলো মলি। কিন্তু হাসানের খুনের বিচার হবে না? তার নিরীহ গোবেচারা স্বামীকে যারা বীভৎসভাবে হত্যা করেছে তাদের কোনো শাস্তি হবে না?

    মলি মেনে নিতে পারলো না। “বাবা, হাসানের বিচার চাও না তুমি?”

    বৃদ্ধ স্কুলশিক্ষক মেয়ের দিকে চেয়ে রইলেন। এ প্রশ্নের অন্য কোনো জবাব নেই। “চাইবো না কেন, মা,” মাথা নীচু করে ফেললেন মলির বাবা । “আল্লাহর কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে হাসানের খুনিদের বিচার চাই।”

    “তাহলে কি ঐ ইনভেস্টিগেটরকে আমাদের সাহায্য করা উচিত না?”

    মলির এ কথায় তার বাবা চুপ মেরে রইলেন। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে তাকালেন স্কুল শিক্ষক। তার দু’চোখ আদ্র। “পাগলামি করিস না। ঐ ইনভেস্টিগেটর নিজের যোগ্যতা দিয়ে আসল খুনিকে বের করে ফেলবে। আমি নিশ্চিত। শুনেছি লোকটা নাকি খুবই মেধাবী অফিসার। দেখবি, ও ঠিকই হাসানের খুনিকে খুঁজে বের করতে পারবে।”

    বাবার কথায় মলি কিছু বললো না। স্থিরচোখে চেয়ে রইলো শুধু ।

    অধ্যায় ১৫

    অরুণ রোজারিওর অফিস থেকে বের হবার সময় জেফরি দেখতে পেলো বাস্কেটবল কোর্টে মাত্র একজন ছেলে আছে, বাকি সবাই চলে গেছে। জেফরি মনে করতে পারলো, এই ছেলেটাকে তার বন্ধুরা দিপ্রো বলে সম্বোধন করেছিলো।

    কী মনে করে যেনো ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো সে।

    ছেলেটা তার ব্যাগ খুলে কিছু একটা ঢোকাচ্ছে। একটা টাওয়েল ব্যাগটার পাশেই রাখা।

    “সবাই চলে গেছে?”

    জেফরির কথাটা শুনে পেছন ফিরে তাকালো দিলো। “হুম।” আবার নিজের কাজে মন দিলো সে।

    “তুমি রয়ে গেলে যে?”

    জেফরির দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো ছেলেটা। “এই তো, একটু দেরি হয়ে গেছে।”

    “ও,” বললো জেফরি ।

    “কি নাম তোমার?”

    “দিপ্রো।”

    “গুড়।”

    এবার দিপ্রো নামের ছেলেটা চেয়ে রইলো জেফরির দিকে। কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না ।

    “এতো লেট করে বাড়ি যাচ্ছো, মা-বাবা চিন্তা করবে না?” জেফরি খেয়াল করলো এ কথা শুনে ছেলেটার ঠোঁটে কেমন যেনো বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো । অবশ্য সেটা খুব ক্ষণিকের জন্য ।

    “আমাকে নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে অনেক ইম্পোর্টেন্ট কাজ তাদের আছে ।” ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে পা বাড়ালো সে।

    “তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

    থমকে দাঁড়ালো ছেলেটা। “বলুন, কি বলবেন?”

    “গত বৃহস্পতিবার একজন কোচ এসেছিলো…অ্যাঞ্জেলস টিমের…তাই না?”

    “হুম।”

    “তোমার সাথে তার কথাবার্তা হয়েছে?”

    “না।”

    “তাহলে কার সাথে হয়েছে?”

    “তুর্যের সাথে।”

    “তোমাদের বন্ধু?”

    “হ্যাঁ।”

    “ও কি খুব ভালো প্লেয়ার?”

    “আছে, মোটামুটি।”

    “মোটামুটি?” একটু চুপ করে থেকে আবার বললো সে, “তাহলে ভালো প্লেয়ার কে?”

    “নাফি…আপনি যার সাথে একটু আগে কথা বলেছেন।”

    “ও…হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ভালো খেলে ছেলেটা। আমি তোমাদের সবার খেলাই দেখেছি। তোমরাও বেশ ভালো খেলো।”

    দিপ্রো চেয়ে রইলো জেফরির দিকে। “আপনি কি আসলেই কোনো টিমের কোচ নন?”

    দুহাত তুলে বললো জেফরি বেগ, “আমি কোনো কোচ-টোচ নই, বিশ্বাস করো।”

    “কিন্তু যেভাবে বলটা বাস্কেটে ফেললেন…”

    “ওটা ঝড়ে বক মরার মতো হয়ে গেছে। স্কুলে থাকতে আমিও বাস্কেটবল খেলতাম। অনেকদিন পর হাতে বলটা পেয়ে ছুঁড়ে মেরেছিলাম, এই যা…”

    “তাহলে আপনি কে?”

    “আমি তোমাদের প্রিন্সিপ্যালের গেস্ট,” আবারো নিজেকে গেস্ট পরিচয় দিলো জেফরি।

    “ও,” দিপ্রো আর কিছু বললো না।

    “ঐ কোচ কি একাই এসেছিলো?” স্বাভাবিকভাবে জানতে চাইলো হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর।

    “হ্যাঁ।” হাতঘড়িতে সময় দেখলো দিপ্রো।

    জেফরি বুঝতে পারলো কোনোরকম সন্দেহের উদ্রেক না করে তাড়াতাড়ি কিছু প্রশ্ন করে নিতে হবে। “অ্যাঞ্জেলস টিমের ঐ কোচ কি তুর্য নামের ছেলেটাকে সিলেক্ট করে ফেলেছে?”

    “সিলেক্ট না, সাইন করে ফেলেছে…ভাবুন এবার,” বললো দিপ্রো।

    “তাই নাকি?…একেবারে সাইন?”

    “হুম…অথচ এই স্কুলের সবচাইতে সেরা প্লেয়ার হলো নাফি। তুর্য তো আমার চেয়েও ভালো খেলে না…ওকেই অ্যাঞ্জেলস টিম সাইন করালো! স্ট্রেইঞ্জ।”

    “তুর্য আজ তোমাদের সাথে প্র্যাকটিস করে নি?”

    “না।”

    “কেন?”

    “স্কুলেই আসে নি।”

    “তাই নাকি?”

    “হুম…মনে হয় অ্যাঞ্জেলস টিমের সাথে প্র্যাকটিস করছে।”

    “ও,” একটু থেমে যে-ই না কিছু বলতে যাবে অমনি একটা ফোন বেজে উঠলো। রিংটোনটা একটা থ্রাশ মেটাল গানের ।

    দিপ্রোর ফোনটায় রিং হচ্ছে। কয়েকবার রিং হতেই সেটা থেমে গেলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো সে। কেউ তাকে মিস কল দিয়েছে।

    “আমার গাড়ি এসে গেছে,” বলেই হাটা ধরলো গেটের দিকে।

    জেফরি চেয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যাচ্ছে মেইনগেটের দিকে।

    অ্যাঞ্জেলসস টিমের কোচকে এই স্কুলে কে ঢুকতে দিয়েছিলো সেটা দু’ভাবে বের করা সম্ভব। স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে কিন্তু সেটা খুব ঝামেলার কাজ। সময়সাপেক্ষও বটে। তবে আরেকভাবে সে কাজটা করতে পারে। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানতে পারবে অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচ কার মাধ্যমে স্কুলে ঢুকেছিলো ।

    আপন মনে হেসে সেন্ট অগাস্টিন স্কুল থেকে বের হয়ে গেলো জেফরি বেগ। রাস্তায় নেমে তাকিয়ে দেখলো কোনো খালি রিক্সা আছে কিনা । একটা রিক্সা আসতে দেখে ডাক দিলো সে।

    “রিক্সা?”

    অধ্যায় ১৬

    “ওই ব্যাটা, আমি কি ডাইলখোর নাকি?…অ্যাঁ! চা তো সরবত বানায়া ফালাইছোস…”

    ওয়েটার ছেলেটা অপরাধি চেখে চেয়ে রইলো তার ক্রেতার দিকে। মনে মনে প্রমাদ গুনলো এই বুঝি একটা থাপ্পর এসে পড়ে তার গালে ।

    “বালের চা, বুড়িগঙ্গায় ফালা,” চায়ের ক্রেতা রেগেমেগে কাপটা সরিয়ে রাখলো। “এইবার ভালা কইরা এক কাপ চা বানায়া আন…উল্টাপাল্টা বানাবি তো খবর আছে।”

    ছেলেটা ভয়ে ঢোক গিলে চায়ের কাপটা তুলে নিতেই একটা কণ্ঠ দরজার সামনে থেকে বলে উঠলো। “এক কাপ না, দু’কাপ চা নিয়ে আসো।”

    “আরে…তুমি!” চায়ের ক্রেতার মুখ থেকে রাগ-বিরক্তি মুহূর্তে উধাও হয়ে গেলো। উঠে এসে জড়িয়ে ধরলো জেফরি বেগকে। “আমাগো তো ভুইল্যাই গেছো ।”

    “কেমন আছো, ম্যাকি?” আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতেই বললো জেফরি।

    “আছি আর কি…ভালাই মনে হয়,” স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো ম্যাকি নামের পুরনো বন্ধুটি । জেফরিকে নিজের পাশে বসতে দিলো সে।

    “আমি আশা করি নি তোমাকে এখানে পাবো।”

    “কেন? আমারে কই আশা করছিলা?…শেরাটনে?” কথাটা বলেই হা হা করে হেসে উঠলো ম্যাকি।

    দরবার নামের এই রেস্তোরাঁয় স্কুলজীবনে প্রচুর আড্ডা মারতো তারা । এটা ছিলো তাদের প্রিয় জায়গা। জেফরি খুব অবাক হলো, এতোগুলো বছর পরও রেস্তোরাঁটির খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি।

    “কি মনে কইরা এই পুরানা বন্ধুরে ইয়াদ করলা?” ম্যাকি হাসি হাসি মুখে জানতে চাইলো।

    “কেন, এমনি এমনি আসতে পারি না?” বললো জেফরি।

    “তা তো আইতেই পারো।”

    বেয়ারা ছেলেটি দুকাপ চা নিয়ে হাজির হলো ।

    “সিগারেট খাইবা?” জানতে চাইলো ম্যাকি ।

    “না । ছেড়ে দিয়েছি?”

    “কবে ছাড়লা?”

    “অনেকদিন আগে।”

    “খুব ভালা একটা কাম করছো, আমি হালায় এহনও ছাড়বার পারি নাই।”

    চায়ের কাপটা তুলে চুমুক দিলো জেফরি । “তুমি এখন কি করছো?”

    “কি আর করমু,..আগের মতোনই আছি।” কাপ থেকে পিরিচে চা ঢেলে শব্দ করে চা খেতে লাগলো ম্যাকি। এটা তার চা খাওয়ার ধরণ।

    জেফরির খুব ভালো লাগলো, এতোটা সময় পরেও ম্যাকি প্রায় আগের মতোই আছে। শুধু বয়স বাড়া ছাড়া তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই।

    “ব্যবসা-বাণিজ্য কিছু করার কথা আর ভাবলে না?” জেফরি চা খেতে খেতে বললো।

    “আরে ধুর, ব্যবসা-ট্যাবসা আমারে দিয়া অইবো না। এমনিই ভালা আছি। বাপে একটা বাড়ি রাইখা গেছিলো…এহন ভাড়া দিয়া যা পাই তা দিয়াই চইলা যায়।”

    ম্যাকি হলো তার বাপ-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার মা অ্যাংলো, আর বাবা ছিলো স্থানীয় এক ব্যবসায়ি। ম্যাকির চেহারা দেখে যে কেউ তাকে বিদেশী ইউরোপিয়ান সাহেব ভাবলেও কথাবার্তা শোনার পর ভুল ভাঙবে, সেইসাথে বিস্ময়ও জাগবে।

    “তুমি কি এখনও অ্যাঞ্জেলসের সাথে জড়িত আছো?”

    “আবার জিগায়,” কথাটা বলেই পিরিচ থেকে সশব্দে চুমুক দিয়ে চা খেলো ম্যাকি । “ওইটা লইয়াই আছি, দোস্ত । একে একে সবাই কাট্টি মারছে মাগার আমি এহনও লাইগা আছি।”

    কথাটা শুনে জেফরি খুশি হলো। ম্যাকি এখনও অ্যাঞ্জেলসের সাথে জড়িত আছে। তার কাছ থেকে খুব সহজেই জানা যাবে ঐ টিমের কোচ কে, সেন্ট অগাস্টিনে সে গিয়েছিলো কিনা।

    “তোমার টিমের কি খবর?” জেফরি বললো তার পুরনো বন্ধুকে।

    “আরে ঐ টিম নিয়া মাথা খারাপ আছে,” অনুযোগের সুরে বললো ম্যাকি। নতুন পোলাপান আর পাই না। আজকাইলকার পোলাপান তো সব ডাইল খায়া শ্যাষ…আর আছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার গেম। ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল খেলোনের টাইম আছে নি ওগো!”

    “কিন্তু তোমার টিম তো পর পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।”

    “তা হইছে, সবই তোমাগো দোয়া, কিন্তু এইবার অবস্থা সুবিধার না।”

    “কেন?”

    “নতুন প্লেয়ার কই? আমাগো স্কুলের পোলাপান এহন আর আগের মতোন বাস্কেটবল খেলে না। যারা খেলে তাগোর মইদ্যে কোয়ালিটির প্লেয়ার নাই।”

    “তাহলে তো সমস্যা।”

    “হুম। পুরা ভেজালের মইদ্যে আছি । আমার বেস্ট তিনটা প্লেয়ার বিদেশ চইলা গেছে। চোখে আন্ধার দেখতাছি।”

    “তোমার টিমের কোচ কে এখন?” জানতে চাইলো জেফরি বেগ ।

    “কোচ?” চোখমুখ বিকৃত করে পাল্টা জানতে চাইলো ম্যাকি। “আরে টিম চালানোর পয়সা পাই না কোচ পামু কই?”

    “মানে?” অবাক হলো জেফরি ।

    “বুঝলা না?” ম্যাকি নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো।

    “তুমি বলতে চাচ্ছো তোমার টিমে কোনো কোচই নেই?” জেফরির মাথায় অন্য একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো । তাহলে সেন্ট অগাস্টিনে কে গেছিলো?

    “ঠিক ধরবার পারছো,” আক্ষেপে বললো ম্যাকি ।

    “কি বলো? পর পর দু’বার চ্যাম্পিয়ন টিমের কোনো কোচ নেই?”

    বাঁকা হাসি হাসলো ম্যাকি। “কি করুম কও? আইজকাইল তো পলিটিক্যাল পার্টি ছাড়া কেউ চান্দাফান্দাও দিবার চায় না। খেলাধুলা আর কালচারের লাইগা কোনো হালার রেসপনসিবিলিটি নাই। এমনে করলে চলবো, কও তো?” পিরিচ থেকে চা খেতে খেতে বলে চললো ম্যাকি।

    তার মানে খুনি অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচ সেজে সেন্ট অগাস্টিনে ঢুকেছে। মাইগড! মনে মনে বললো জেফরি । সামনে বসে থাকা ম্যাকি বুঝতেই পারলো না স্কুল জীবনের বন্ধুটি তার এসব কথা আর মন দিয়ে শুনছে না। তার মাথায় এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভাবনা খেলা করছে ।

    “নিজের পকেট থেইকা ট্যাকা দিয়া কয়দিন আর টিম চালামু? এমনে চলতে থাকলে এই টিম আর চালাইবার পারুম কিনা কে জানে।”

    ম্যাকি খেয়াল করলো জেফরি উদাস হয়ে আছে। কী যেনো একটা ভাবনায় ডুবে আছে সে।

    “কি ভাবতাছো?”

    সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখতে পেলো তার বন্ধু ম্যাকি অবাক হয়ে চেয়ে আছে তার দিকে।

    “কোনো কোচই নেই!” বিড়বিড় করে বললো জেফরি বেগ ।

    অধ্যায় ১৭

    রাত বাজে ন’টা। এ সময় ঢাকা শহরের লোকজন রাতের খাবারও খায় না। টিভি দেখে, গালগল্প করে। অথচ মলি তার নিজ ঘরে বাতি নিভিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার পাশে পড়ে আছে হাসানের সেই ডায়রিটা ।

    পাশের ঘরে তার ভাই আর বাপ আছে, তারাও রাতের খাবার খেয়ে-দেয়ে বাতি বন্ধ করে শুয়ে থাকার চেষ্টা করছে। মলি জানে, তার মতো ওদের চোখেও ঘুম নেই ।

    হাসান খুন হবার পর থেকে টানা কয়েক দিনে রাতের ঘুম না হবার কারণে তার চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। এমনিতে হালকা পাতলা গড়নের মলির শরীর আরো রোগাটে হয়ে গেছে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার ফলে।

    আজ সকাল থেকে ডায়রিটা পড়ার পর থেকে এক ধরণের অস্থিরতার মধ্যে নিপতিত হয়েছে সে। এরকম একটা মূল্যবান জিনিস হাতে পেয়েও সেটা কোনো কাজে আসবে না, ব্যাপারটা মেনে নিতে মলির খুব কষ্ট হচ্ছে। স্বামীর প্রতি কি তার কোনো কর্তব্য নেই? এরকম ভীরু আর কাপুরুষের মতো কাজ করলে হাসানের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে?

    একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে।

    বিছানায় গা এলিয়ে দেবে অমনি দরজায় টোকা পড়লো।

    “কে?” আস্তে করে বললো মলি । ভালো করেই জানে হয় তার বাপ নইলে ছোটো ভাই-ই হবে।

    “আপা আমি,” দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠলো লিটু।

    “দাঁড়া, বিছানা থেকে উঠে বাতি জ্বালিয়ে দরজাটা খুলে দিলো সে।

    লিটু চুপচাপ বিছানায় বসে পড়লো। মলি বুঝতে পারলো কোনো জরুরি কথা বলতে এসেছে তার ভাই।

    “কিছু বলবি?” ভায়ের পাশে বসে বললো মলি ।

    বোনের দিকে তাকালো লিটু। “আপা, অনেক ভেবে দেখলাম, বুঝলা…”

    মলি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার কলেজ পড়ুয়া ভায়ের দিকে । “কি?”

    “ডায়রিটা আমরা সরাসরি না দিয়ে অন্যভাবেও কিন্তু ঐ ইনভেস্টিগেটরের কাছে দিতে পারি।”

    মলি একটু অবাক হলো কথাটা শুনে। “কিভাবে?”

    “ধরো, নাম পরিচয় না জানিয়ে উনার কাছে কুরিয়ারের মাধ্যমে আমরা ডায়রিটা পাঠিয়ে দিতে পারি?”

    মলি হতাশ হলো। ভেবেছিলো তার ভাই বুঝি সত্যি কোনো দারুণ আইডিয়া বের করতে পেরেছে। এখন বুঝতে পারছে, সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া একটা ছেলের কাছ থেকে এতোটা আশা করা উচিত হয় নি। মাত্র দু’মাস আগে গ্রাম থেকে এই শহরে এসেছে লিটু। দিনক্ষণ হিসেব করলে মলির থেকেও কম সময় ধরে ঢাকায় বসবাস করছে সে।

    “কিছু বলছো না যে?” উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো লিটু।

    “তোর কি ধারনা এভাবে ডায়রিটা পাঠালে ঐ পুলিশের লোকগুলো কিছু বুঝতে পারবে না?”

    ফ্যালফ্যাল করে বোনের দিকে চেয়ে রইলো লিটু।

    “হাসানের ডায়রি আমরা ছাড়া আর কার কাছে থাকার কথা, বল?”

    মাথা নীচু করে ফেললো লিটু । নিজের বোকামি বুঝতে পেরেছে ।

    “যারা বড় বড় খুনখারাবির তদন্ত করে খুনিকে ধরে ফেলে তাদের কাছে এরকম মিথ্যে বললে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়তে হবে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো লিটু। “তাহলে কি ডায়রিটা দিয়ে কিছুই করবে না?”

    এবার ভায়ের দিকে স্থির চোখে তাকালো মলি। “বাবাকে কিছু বলবি না, বল?”

    “বলবো না।”

    “আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি…”

    “কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো, আপা?” কৌতূহলী হয়ে উঠলো সে।

    “বাবাকে হাসানের কবর জিয়ারত করতে পাঠিয়ে আমি ঐ ইনভেস্টিগেটরকে কাল আসতে বলবো।”

    .

    জেফরি বেগ এবার একটা কু পেয়ে ভেতরে ভেতরে চাঙ্গা অনুভব করছে । সেন্ট অগাস্টিনের জুনিয়র ক্লার্ক হাসানের খুনের জট পাকানো রহস্যের একটা সূত্র পাওয়া গেছে তাহলে । যে কোনো কেসে প্রথম সূত্রটা পাওয়াই সবচেয়ে কঠিন কাজ। একবার একটা সূত্র পাওয়া গেলে ধীরে ধীরে অনেক কিছুর জট খোলা সম্ভব হয়। সেন্ট অগাস্টিন থেকে সোজা এখানে চলে এসে দারুণ একটা কাজ করেছে, মনে মনে ভাবলো সে।

    “আমার টিমের দুরাবস্থার কথা শুনার পর থেইকা তুমি দেখি তবধা খায়া গেছো!”

    ম্যাকির কথায় জেফরি হেসে ফেললো। “আরে না, সেরকম কিছু না, বন্ধু।”

    “আমার কথা তো অনেক হইছে, এইবার তোমার কথা কও। বিয়া-শাদি তো করো নাই এহনও, এই বছর সানাই বাজবো নি?” ম্যাকি একটা সিগারেট ধরিয়েছে, সেটাতে জোরে টান মেরে ধোয়া ছাড়লো ।

    “হতে পারে,” ছোট্ট করে বললো জেফরি ।

    “কও কি! খুব খুশি হইলাম।”

    “তুমি বিয়ে করবে না?”

    “আরে আমারে বিয়া করবো কে?”

    “কেন, তোমার পছন্দের কোনো মেয়ে নেই?”

    “পছন্দের তো অনেকেই আছিলো, কিন্তু কেউ আমার উপর ভরসা রাখতে পারে না। একে একে সব শালি কাট্টি মারছে।”

    “কেন ভরসা রাখতে পারে না?”

    “সারাদিন বাস্কেটবল লইয়া পইড়া থাকি, কাজকাম কিছু করি না, ভরসা পাইবো কেমনে?” সিগারেটের আবার টান দিলো ম্যাকি ।

    “এইজন্যেই তো বলি কিছু একটা করো।”

    “হ, আমিও চিন্তা করছি, কিছু একটা করোনই লাগবো। সামনের বছর একটা ছোটোখাটো ব্যবসা শুরু করুম ভাবতাছি।”

    “সামনের বছর কেন, এখনই শুরু করে দাও,” সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো জেফরি বেগ।

    না। এই বছর আমার টাইম নাই। টিমটারে হ্যাঁট্রিক চ্যাম্পিয়ন করাইতে অইবো। এই সুযোগটা মিস্ করন যাইবো না, বুঝলা?”

    “তুমি কি সারাক্ষণই টিম নিয়ে ব্যস্ত থাকো নাকি?”

    “কি কও তুমি?” কৃত্রিম বিস্ময়ে বললো ম্যাকি। “আমি না থাকলে আমার টিম থাকবো? এতিম হইয়া যাইবো না?”

    “কী যে বলো, আরো লোকজন আছে না, তুমি কি একা একা টিম চালাও?”

    হা হা করে হেসে ফেললো ম্যাকি । “তুমি তো কোনো খবরই রাখো না।” সিগারেটটায় দুটো টান মেরে মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো সে । হাতের আঙুল গুনতে শুনতে বললো, “আমি হইলাম অ্যাঞ্জেলস টিমের সভাপতি, ম্যানেজার, পৃষ্ঠপোষক…”

    “বাপরে…” অবাক হবার ভান করে বললো জেফরি । “এতো কিছু!”

    “খাড়াও, এহনও সব শ্যাষ হয় নাই…আরেকটা বাকি রয়া গেছে।”

    “সেটা আবার কি?”

    ঐ যে একটু আগে কোচের কথা কইলা না…ছয় মাস ধইরা আমিই আমার টিমের কোচের কামটা করছি।”

    “কি!” একটা ধাক্কা খেলো জেফরি।

    “ওয়ানম্যান আর্মি, বুঝছো?” কথাটা বলে হেসে ফেললো ম্যাকি। “টিমের যা অবস্থা, ভাবতাছি এই বয়সে শিং কাইটা বাছুর হইয়া প্লেয়ার হিসাবে নাইমা যাইতে হয় কিনা কে জানে!” কথাটা বলেই হাসতে লাগলো সে।

    ম্যাকির দাঁত বের করা হাসির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ।

    অধ্যায় ১৮

    হোমিসাইডের ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে জেফরি । তার সামনে বসে আছে জামান। সকালে অফিসে এসেই ক্যান্টিনে বসে এক কাপ চা খাওয়াটা তার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এমন নয় যে চা খেতে এখানেই আসতে হবে, নিজের অফিসে বসে ইন্টারকমের বোতাম টিপেই সেটা করা যায়, কিন্তু ইচ্ছে করেই এখানে বসে চা খায় সে। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় অফিসের সবার সাথে বলতে গেলে দেখাই হয় না । তার কাজের সাথে সম্পর্কিত দুএকজন ছাড়া বাকিদের সাথে দেখা করার এই একটাই সুযোগ। এই সুযোগটা জেফরি হাতছাড়া করতে চায় না।

    গতকাল অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচের ব্যাপারটা জামানকে একটু আগেই সে বলেছে। সব কথা শুনে দারুণ আগ্রহী হয়ে উঠেছে ছেলেটা।

    তার বন্ধু ম্যাকি নিজেই তার টিমের কোচের কাজ করছে এখন ।

    কথাটা শুনে জেফরি কিছুক্ষণের জন্য অবাক হলেও পরক্ষণেই বুঝতে পেরেছে, আসলে এটা তার জন্য বাড়তি সুবিধা। কারণ ম্যাকি সেন্ট অগাস্টিনে গিয়েছিলো কিনা সে ব্যাপারে এখন শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে ।

    তাই হয়েছে। বন্ধুকে যখন বলে সে গত বৃহস্পতিবার সেন্ট অগাস্টিন স্কুলে গিয়েছিলো কিনা তখন ম্যাকি খুবই অবাক হয়। তাকে জানায়, বিগত এক সপ্তাহে সে এলাকার বাইরে এক পাও রাখে নি। নতুন কিছু ছেলেকে কোচিং দেয়া নিয়ে জঘন্য রকমে ব্যস্ত।

    “স্যার, তাহলে সেন্ট অগাস্টিনে যে লোকটা কোচ সেজে গিয়েছিলো সে ই আমাদের সন্দেহভাজন?” বললো জামান।

    “আমি অবশ্য সন্দেহভাজন মনে করছি না,” চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখলো জেফরি। অবাক হলো জামান। “এখন আমি অনেকটা নিশ্চিত খুনটা সে-ই করেছে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জামান।

    “স্কুলে ঢোকার জন্য কোচের পরিচয়টা ব্যবহার করেছে।”

    “কিন্তু অ্যাঞ্জেলস টিমের কোচ হলেই কি তাকে স্কুলে ঢুকতে দেবে?” জামান জানতে চাইলো। “তাকে নিশ্চয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়েছে স্কুলে ঢোকার জন্য?”

    জামানের এ কথায় মাথা দোলালো জেফরি । “অরুণদা তার স্কুলের জন্য যেরকম সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছেন তাতে তো মনে হয় না অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার আদৌ দরকার আছে।”

    “অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া দাড়োয়ান ঢুকতে দেবে?” জামান আগ্রহভরে জানতে চাইলো।

    “তা দেবে না।”

    “তাহলে?”

    “ভুলে যেও না, অরুণদার সাথে দেখা করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয় কিন্তু স্কুলের কোনো শিক্ষক-কর্মচারির সাথে কেউ দেখা করতে এলে শুধুমাত্র ঐ লোকের অনুমোদন থাকলেই চলে।”

    “তাহলে স্কুলের কোনো শিক্ষক-কর্মচারির মাধ্যমে ঢুকেছিলো?”

    “আমার ধারণা একজন শিক্ষক এ কাজে সহায়তা করেছে,” বললো জেফরি । এটা সে গতকাল রাতেই ভেবেছিলো।

    “শিক্ষক? তার মানে এই খুনের পেছনে একজন শিক্ষকও জড়িত?”

    “ব্যাপারটা ঠিক সেরকম না,” একটু থেমে আবার বললো জেফরি বেগ । “শিক্ষক হয়তো লোকটাকে ঢুকতে সাহায্য করেছে কিন্তু খুনের সাথে তার জড়িত হবার সম্ভাবনা নাও থাকতে পারে।”

    “বুঝলাম না, স্যার?”

    “আমি অনুমাণ করছি, আমাদের খুনি সেন্ট অগাস্টিনের একজন শিক্ষককে ম্যানেজ করে স্কুলে ঢুকেছে। আর সেই শিক্ষক স্পোর্টস টিচার কিংবা ফিজিক্যাল ট্রেইনার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”

    জামান মাথা নেড়ে সায় দিলো। তার বসের অনুমাণ সত্যি হতে পারে । প্রতিটি স্কুলেই একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার থাকে, তারাই খেলাধুলার ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করে সাধারণত।

    “তাহলে এখন কি করবেন, স্যার?”

    “একটু পরই আমি আর তুমি সেন্ট অগাস্টিনে যাবো। কোন শিক্ষক এ কাজে সাহায্য করেছে সেটা আশা করি বের করতে পারবো।”

    অধ্যায় ১৯

    লিটু আজ কলেজে যায় নি । একটু আগে তার বাপ গেছে হাসানের কবর জিয়ারত করতে। সঙ্গে করে নিয়ে গেছে এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিনকে।

    তার বোন মলি চাচ্ছে ওই অদ্ভুত নামের ইনভেস্টিগেটর ভদ্রলোককে বাড়িতে ডেকে আনতে। ডায়রিটা তার হাতেই তুলে দেবে। তবে এটা বলবে না, ডায়রিতে হাসান কি লিখেছে। মলি ভান করবে ডায়রিটা সে পড়ে দেখে নি। পড়ে দেখার মতো মনমানসিকতা এখন তার নেই। ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেটর ভদ্রলোক খুব সহজেই বিশ্বাস করবে ।

    মলি শুধু ডায়রিটা দিয়ে বলবে, গতকাল রাতে এটা সে খুঁজে পেয়েছে । হাসান যে নিয়মিত ডায়রি লিখতো সে কথা বলতে ভুলে গেছিলো ঐদিন। এটা হয়তো খুনের তদন্তে সাহায্য করতে পারে সেজন্যে তাকে দিতে চাইছে। ইনভেস্টিগেটর এসব কথা বিশ্বাস না করে পারবে না ।

    লিটুকে যখন মলি এই পরিকল্পনার কথা বলেছিলো তখনই সে বুঝে গেছিলো তার বোনের আসল উদ্দেশ্যটা কি বোনের বুদ্ধির প্রশংসা করেছে। মনে মনে।

    ইনভেস্টিগেটর নিজের উদ্যোগে ডায়রিটা পড়ে সব জেনে নিতে পারবে । ভদ্রলোক যদি সৎ আর দায়িত্ববান হয়ে থাকে-যেমনটি পুলিশে খুব কমই আছে বলে মনে করে তার বোন-তাহলে নিজের তাগিদেই তদন্ত করে দেখবে। আর যদি সেরকম না হয়ে থাকে তাহলেও খুব একটা সমস্যা নেই। লোকটা হয়তো পুরো ঘটনা চেপে যাবে। এতে করে মলি কিংবা তার বাপ-ভায়ের কোনো সমস্যা হবে না । সে ভাববে, তারা তো কিছুই জানে না।

    বোনের বুদ্ধির দৌড় এখানেই শেষ হয় নি। তাকে বলেছে সকাল সকাল নীলক্ষেতে গিয়ে পুরো ডায়রিটা ফটোকপি করে আনতে। নিজের কাছে এর একটা কপি রাখা জরুরি। ভবিষ্যতে যদি কখনও দরকার পড়ে তখন এটা ব্যবহার করা যাবে । লিটু নিজেও এ ব্যাপারে একমত । এরকম মূল্যবান একটি ডায়রির কপি তাদের কাছে থাকা উচিত। তবে সেটা তার বোন আর সে ছাড়া এ দুনিয়ার কেউ জানবে না ।

    এখন নীলক্ষেতে যাচ্ছে সে । ডায়রিটার ফটোকপি করা হয়ে গেলে ইনভেস্টিগেটরকে ফোন করে তাদের বাড়িতে আসতে বলবে। ব্যাপারটা খুবই জরুরি। তার বোন জামাইর একটা ডায়রি খুঁজে পেয়েছে তারা । দেরি না করে যেনো এক্ষুণি চলে আসে । কারণ আজ বিকেলেই বোনকে নিয়ে তার বাপ দেশের বাড়িতে চলে যাচ্ছে ।

    পুরোটাই তার বোন মলির পরিকল্পনা । লিটুও জানে, এ কথা শোনার পর ঐ ইনভেস্টিগেটর দ্রুত ছুটে আসবে তাদের বাড়িতে। তবে তার কাছে অদ্ভুত নামের ঐ ইনভেস্টিগেটরের ফোন নাম্বারটা নেই, আছে তার সাথে আসা সহকারী ছেলেটার নাম্বার । লিটু অবশ্য এ নিয়ে চিন্তা করছে না। সে নিশ্চিত, সহকারীকে ফোন করলেই কাজ হবে।

    .

    এখন জেফরিকে নিজের অফিসে ঢুকতে দেখলেই অরুণ রোজারিওর মুখে আর সেই আন্তরিকমাখা হাসিটা থাকে না। এক ধরণের কৃত্রিম হাসি এঁটে রাখেন। তিনি। সেই কৃত্রিম হাসিটা কোনোভাবেই আসল অভিব্যক্তি আড়াল করতে পারে না । এক ধরণের ভয় আর আড়ষ্টতা জেঁকে বসে তাকে দেখলে।

    এবারও তাই হলো। জেফরি আর জামানকে দেখে ভদ্রলোক কৃত্রিম হাসি মুখে এঁটে তাদের অভ্যর্থনা জানালেন।

    “আমি ভেবেছিলাম তুমি দুপুরের পর আসবে,” বানোয়াট হাসিটা মুখে এঁটেই বললেন সেন্ট অগাস্টিনের প্রিন্সিপ্যাল । “চা না কফি?”

    “কিছু না,” বললো জেফরি । “এইমাত্র চা খেয়েই অফিস থেকে বের হয়েছি।”

    অরুণ রোজারিও চুপ মেরে রইলেন। আগ বাড়িয়ে কিছু বলার ইচ্ছে তার নেই।

    “অরুণদা, একটা কাজ করতে হবে আপনাকে।”

    জেফরির এই কথাটা শুনে অরুণ রোজারিও ঢোক গিলে বললেন, “কি কাজ?”

    “এই স্কুলের ফিজিক্যাল ট্রেইনার যিনি আছেন তাকে ডাকুন। আমি তার সাথে একটু কথা বলবো।”

    অগাস্টিনের প্রিন্সিপ্যাল স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। তার এই ছোটো ভাইটি খুনের মামলা তদন্ত করতে এসে এসব কী বলছে? গতকাল বললো এক বাস্কেটবল কোচের গল্প, আজ আবার ফিজিক্যাল ট্রেইনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে । অদ্ভুত! খুনের সাথে স্পোর্টসের কী সম্পর্ক? মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি।

    “অরুণদা?” জেফরি তাড়া দিলো।

    উদাস ভাবটা কেটে গেলো মুহূর্তে। “ওহ, সরি,” কথাটা বলেই ইন্টারকমটা তুলে নিলেন তিনি। ফিজিক্যাল ট্রেইনারকে এক্ষুণি তার রুমে আসার জন্যে বলে দিলেন।

    “আমাদের ফিজিক্যাল ট্রেইনার হিসেবে আছেন কাজি হাবিব। ছাত্র জীবনে ভালো ফুটবলার ছিলেন।”

    “তাই নাকি,” বললো জেফরি।

    “হুম…” কথাটা বলেই একটু থেমে আবার বললেন, “আমাকে কি বলা যায় উনার সাথে কী নিয়ে কথা বলবে?”

    “হাসান সাহেবের কেসটা নিয়ে,” সোজাসাপ্টা জবাব দিলো জেফরি বেগ।

    “সেটা আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু উনার সাথে কেন কথা বলবে সেটা কি আমি জানতে পারি?”

    মুচকি হেসে প্রিন্সিপ্যালের দিকে চেয়ে রইলো জেফরি। “উনি এলেই বুঝতে পারবেন।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }