Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প466 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪০. হোমিসাইডের কমিউনিকেশন্স রুমে

    অধ্যায় ৪০

    হোমিসাইডের কমিউনিকেশন্স রুমে উত্তেজনার চোটে রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছে জামান আর রমিজ লস্কর। একটু আগে তারা সেন্ট অগাস্টিনের প্রিন্সিপ্যাল অরুণ রোজারিওর ল্যান্ডফোন আর সেলফোন দুটোয় আড়ি পাতছিলো। তাদের বস জেফরি বেগের ধারণা, হোমমিনিস্টার কিংবা তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের সাথে অবশ্যই অরুণ রোজারিওর যোগাযোগ হবে। তাই হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে তারা একটি ফোনালাপ শুনেছে একটু আগেই।

    পুরো সংলাপটি রেকর্ড করেছে তারা। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই আছে। বিশেষ করে, হাসানের খুনের সাথে তুর্যের সংশ্লিষ্টতার কিছু আভাস ইঙ্গিত রয়েছে বলে তারা মনে করে। তবে তাদের বস্ ফোনালাপটি শুনলে আরো ভালো বুঝতে পারবে ।

    ফোনালাপটি ছিলো বেশ সংক্ষিপ্ত, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, বিগত কিছুদিন ধরেই হোমমিনিস্টার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সেন্ট অগাস্টিনের প্রিন্সিপ্যালের সাথে যাতে করে হাসানের খুনের ঘটনায় কোনোভাইে তুর্যের নাম চলে না আসে।

    এখন রমিজ লস্কর আর জামান যে কাজটা করছে সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছে। তারা। যদিও একটু আগেই তাদের বস জেফরি বেগ জানিয়ে দিয়েছে কাজটা করার জন্য তারপরও হোমমিনিস্টারের ফোন ট্যাপিং করতে গিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরণের ভয় জেঁকে বসেছে।

    জামান ভেবেছিলো তার বস হোমমিনিস্টারের কথা শোনার পর এরকম আদেশ দেবেন না। কিন্তু আবারো তার বস তাকে অবাক করে দিয়ে এই শিক্ষাটাই দিয়েছেন, দায়িত্ব আর কাজের বেলায় তিনি কাউকে ছাড় দেন না।

    জামান ভালো করেই জানে, ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ।

    রমিজ লস্কর যেনো জামানের মনের কথাটা পড়ে ফেললো। পাশ ফিরে সে বললো, “আমাদের বসের ভয়ডর বলে কিছু নেই। একেবারেই অন্য রকম একজন মানুষ।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জামান। এই কয়েক বছরে সে যা দেখেছে, এই লোক মনে হয় না হোমমিনিস্টারকে ভয় পাবে। হয়তো কৌশলগত কারণে একটু বিরতি দেবে, অন্যদিকে নজর দেবে কিন্তু কোনোভাবেই ভুলে যাবে না, আর ছাড় দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

    তার স্পষ্ট মনে আছে এই হোমমিনিস্টার শপথ নেবার কিছুদিন পরই পেশাদার খুনি বাস্টার্ড যখন জেল থেকে জামিনে বের হয়ে এলো সেদিন জেফরি বেগ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলো । অন্য কেউ ব্যাপারটা না জানলেও সে আর মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ জানে, জেফরি তার রেজিগনেশন লেটার লিখে ফারুক সাহেবকে দিয়ে দিয়েছিলো। চিঠিটা জামানের সামনেই লিখেছিলো তার বস।

    ফারুক সাহেব এ কথা শোনার পর টানা দু’ঘণ্টা বুঝিয়েছে জেফরি বেগকে। এই ঘটনায় তার মতো একজন ইনভেস্টিগেটর চাকরি ছেড়ে দিলে রীতিমতো অন্যায় করা হবে। তার উচিত, এই অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা। একজন মিনিস্টার না হয় অন্যায়ভাবে এক খুনিকে জামিনে মুক্ত করিয়েছে, তাই বলে জেফরি কেন চাকরি ছাড়বে?

    অন্যায়-অবিচার, অনিয়ম এসব তো রাতারাতি দূর করা যাবে না । এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সব ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলে সেই লড়াই করা যাবে না । ভেতর থেকেই এটা করতে হবে ।

    ফারুক আহমেদের এমন জ্বালাময়ী বক্তৃতার পর জেফরি সেবারের মতো সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছিলো । জামানও হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলো তখন।

    “বুঝলেন লস্কর ভাই…স্যার আমাকে একটা কথা বলেছিলো।”

    রমিজ লস্কর মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো জামানের দিকে। “কি বলেছিলো?”

    “পণ্ডিতেরা বলে থাকে, পৃথিবীতে নাকি দুই ধরণের মানুষ আছে । একদল মনে করে গ্লাসটা অর্ধেক খালি, আরেকদল মনে করে গ্লাসে অর্ধেক পানি আছে…”

    “হুম…এটা তো শুনেছি,” বললো রমিজ লস্কর।

    “কিন্তু আমাদের স্যার মনে করে আসলে তিন ধরণের মানুষ আছে।”

    জামানের কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠলো রমিজ। “তাই নাকি?…সেটা কি রকম?”

    “তৃতীয় দলটার সংখ্যা খুবই কম। তারা ভাবে, অর্ধেক পানি খেলে কে?”

    রমিজ কপালে ভুরু তুললো। “ওয়াও!”

    “স্যার বলেছেন, আমরা যারা ইনভেস্টিগেশন করি তারা এই তৃতীয় দলের মধ্যে পড়ি।

    “বাপরে…মানতেই হচ্ছে, বস্ কঠিন একটা কথা বলেছেন।”

    হেসে ফেললো জামান। এবং সত্যি কথা! মনে মনে বললো সে।

    .

    জেফরি বেগ গেন্ডারিয়ায় চলে এলো রিক্সায় করে। তার পুরনো বন্ধু ম্যাকি সঙ্গে আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু সে রাজি হয় নি । তদন্তকাজে কারোর সাহায্য নেয়া এক কথা আর সঙ্গে করে তাকে নিয়ে ইনকোয়্যারি করতে যাওয়া আরেক কথা।

    ম্যাকিকে সে বলেছে, আজ অফিসে ফিরে যাচ্ছে। পরে কোনো এক সময় গেন্ডারিয়ায় দোলনের বাড়িতে তার সহকারীকে পাঠাবে খোঁজ নিতে।

    ম্যাকি তার কথা বিশ্বাস করেছে। বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে রিক্সা নিয়ে চলে এলো সাধনার গলিতে ।

    ঐতিহ্যবাহী সাধনা ঔষধালয় এখানেই অবস্থিত । রিক্সা ছেড়ে দিলো জেফরি। গলির ডান দিকে একটা লন্ড্রি, আর সেই লন্ড্রির পাশেই একটা পাঁচতলা বাড়ি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেবে গেলো সে। তারপর লন্ড্রির দোকানের দিকে পা বাড়ালো।

    এক লোক বসে বসে ছোটো একটা টিভি সেটে হিন্দি ছবি দেখছে। দোকানে আর কেউ নেই। জেফরিকে দেখে তার দিকে তাকালো।

    “আপনি তো এই দোকানেরই, তাই না?” বললো জেফরি ।

    লোকটা টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিলো। “হ।”

    “আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”

    “বলেন।”

    “এখানে দোলন নামের কাউকে চেনেন? আমাকে বলেছে এই গলিতেই থাকে।”

    “একটু মোটা কইরা?…দাড়ি আছে?”

    দোলন মোটা না পাতলা সে জানে না। তবে লুইচ্চা মাসুম বলেছে লোকটা হজ্ব করে এসেছে গত বছর। তাহলে দাড়ি থাকতে পারে।

    “হুম…দাড়ি আছে।”

    দোকান থেকে মাথাটা বের করে পাশের পাঁচতলা বাড়িটার দিকে ইশারা করলো দোকানি।

    “এই বিল্ডিংয়ের চাইর তলায় থাকে।”

    জেফরি এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলো এখানেই দোলন থাকে। “সিঁড়ি দিয়ে উঠলে কোন দিকে?”

    “ডাইনে।”

    দোকানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে গেন্ডারিয়া থানায় ফোন করলো সে। রিক্সায় ওঠার আগেই লোকাল থানায় ফোন করে ব্যাক-আপ রেডি রাখার কথা বলেছিলো, এখন তাদেরকে কনফার্ম করবে।

    কলটা শেষ করে সোজা ঢুকে পড়লো পাঁচতলা বাড়িতে, পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করলো না। পুরনো ঢাকার বেশিরভাগ বাড়ির মতোই গেটে কোনো দাড়োয়ান নেই। সুতরাং কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলো না কোথায় যাচ্ছে।

    চার তলায় উঠে ডান দিকের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ভাবলো জেফরি । দরজার দু’পাশে কলিংবেলের বোম নেই। পুরনো ধাঁচের দুই পাল্লার দরজা। কড়া আছে । জেফরি কড়া নাড়লো।

    একবার…দু’বার…তিনবার।

    দরজাটা সশব্দে খুলে যেতেই জেফরির চোখ ছানাবড়া।

    খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী!

    তার চোখেমুখে ভুত দেখার ভীতিকর বিস্ময়।

    অধ্যায় ৪১

    হোমিসাইডের ইন্টেরোগেশন রুমে ঢুকলো জেফরি বেগ। পুরো ডিপার্টমেন্ট এখনও জানে না আসল ঘটনা কি। তারা শুধু জানে সেন্ট অগাস্টিনে যে ক্লার্ক খুন হয়েছিলো তার একজন সন্দেহভাজন আসামী ধরা পড়েছে।

    ডিপার্টমেন্টটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রথমবারের মতো তাদের দু দু’জন অফিসার গুলিবিদ্ধ হয়েছে কিছুদিন আগে, আর সেই ঘটনায় যার নামে মামলা হয়েছে এই তরুণী তার স্ত্রী-হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ এরচেয়ে বেশি কিছু জানে না।

    মিলনের ছোটো ভাই দোলনের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে । মেয়েটা দরজা খুলে ভুত দেখার মতো ভিমড়ি খায়। সত্যি বলতে কি, জেফরি নিজেও বেশ অবাক হয়েছিলে । কয়েক মুহূর্তের জন্য তার মনে হয়েছিলো এভাবে একা একা কোনো ব্যাকআপ ফোর্স না নিয়ে চলে আসাটা ঠিক হয় নি। ভেতরে যদি মিলন থেকে থাকে তাহলে বিপদের আশংকা আছে।

    কিন্তু মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দেয় ভেতর থেকে। জেফরি শুনতে পায় দুটো নারীকণ্ঠ । তারা আতঙ্কিত হয়ে হৈহল্লা করছে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে জেফরি পকেট থেকে তার রুমালটা বের করে নেয়, দড়ির মতো লম্বা করে দরজার কড়ায় একটা শক্ত গিট লাগিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে পিস্তল হাতে নিয়ে ।

    গেন্ডারিয়া থানা থেকে সাদা পোশাকে চারজন পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত কেউ দরজা খোলার চেষ্টা করে নি । তবে ভেতর থেকে মোবাইলফোনে কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ঐ দুই মহিলা । পরে দেখেছে, মিলন আর দোলন দু’জনের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো তারা।

    মিলনের ভাই দোলন বাড়িতে ছিলো না। তার স্ত্রীকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয় নি । জেফরির ধারনা মিলন আর দোলন সব জেনে গা ঢাকা দিয়েছে । মিলনের স্ত্রীর মোবাইলফোনটা এখন তাদের কাছে। এই ফোনটা বেশ ভালো কাজে দেবে বলে আশা করছে সে। ইতিমধ্যেই রমিজ লস্করকে ফোনটার কললিস্ট চেক করার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।

    জেফরি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে চুপচাপ বসে পড়লো জামানের পাশে। মেয়েটি মুখ তুলে তাকে দেখেই আবার মাথা নীচু করে রাখলো । এরইমধ্যে তার হাতে পলিগ্রাফ ক্যাবল লাগানো হয়েছে । যথারীতি ক্যাবলগুলো লাগানোর সময় ভড়কে গেছিলো মেয়েটি।

    ঘরে জামান ছাড়াও একজন মহিলা কনস্টেবল এককোণে বসে আছে । কোনো মহিলাকে ইন্টেরোগেশন করার সময় একজন নারী কনস্টেবল রাখার নিয়ম আছে হোমিসাইডে । জেফরি কখনও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় না ।

    জামান বেশ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রীর মুখোমুখি। তার সামনে পলিগ্রাফ মেশিনের কানেকশান দেয়া একটি ল্যাপটপ ।

    মেয়েটির বয়স পঁচিশের বেশি হবে না। দেখতে সুশ্রী, সারাক্ষণ সেজেগুজে থাকে।

    “আসল নামটা বলুন এবার,” একেবারে সাদামাটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলো জেফরি বেগ । সে জানে, কঠিন প্রশ্ন দিয়ে শুরু না করে সাদামাটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা অনেক বেশি ফলপ্রসু। কেউ যদি মিথ্যে বলতে চায়, ঘটনা অন্যভাবে সাজাতে চায় তাহলে কঠিন আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেই কাজটা করে। একদম সহজ আর নিদোষ ব্যাপারগুলো খুব কমই আমলে নেয়া হয়। সুতরাং সহজ প্রশ্ন করার মধ্য দিয়েই মিথ্যের জাল ছিন্ন করা সম্ভব।

    মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী মাথা নীচু করেই রাখলো ।

    “কি হলো?” তাড়া দিলো জামান, অনেকটা ধমকের সুরে বললো, “কথা বলুন।”

    মাথা তুলে তাকালো তরুণী। “পলি।”

    “পুরো নাম বলুন।”

    “নাসরিন আক্তার,” আস্তে করে বললো মেয়েটি। “পলি আমার ডাক নাম।”

    “গুড। কে রেখেছিলো নামটা, আপনি নিজে?”

    “কোন্ নামের কথা বলছেন?” ঢোক গিলে বললো পলি।

    “আসল এবং ডাকনাম…দুটোই ।”

    আবারো মাথা নীচু করে ফেললো। “আসল নাম রেখেছে আমার নানি।”

    “আর ডাক নামটা?”

    “আরমান ভাই।”

    “আরমান ভাই?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো জেফরি বেগ । “উনি কে?”

    “ফিলের ডিরেক্টর…”

    “আপনি কি ফিল্মে কাজ করতেন?”

    “জি।”

    জামানের দিকে তাকালো জেফরি । “আচ্ছা,” মনিটরের দিকে তাকালো এবার । মেয়েটি সত্যি বলছে। “মিলনের সাথে পরিচয় কিভাবে হলো?”

    “এফডিসিতে,” মাথা নীচু করেই বললো সে।

    “আপনি কি নায়িকা ছিলেন?”

    “সাইড নায়িকা।”

    “কয়টা ছবি করেছেন?”

    এবার মুখ তুলে তাকালো মেয়েটি। “বেশি না। চার-পাঁচটা হবে…”

    “সবগুলোতেই সাইড নায়িকা ছিলেন?”

    “জি।”

    “মিলনের সাথে আপনার পরিচয় কবে থেকে?”

    “চার-পাঁচ বছর আগে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো সাইড নায়িকা পলি।

    “বিয়ে করলেন কবে?”

    “তিন মাস আগে।”

    জামানের দিকে তাকালো সে। মাত্র তিন মাস আগে! “আপনি কি জানতেন মিলন বিবাহিত, তার একটা বউ আছে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো পলি।

    “মিলন যে একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সেটাও নিশ্চয় জানতেন?”

    নিরুত্তর।

    “এতোদিন ধরে পরিচয় অথচ বিয়ে করলেন মাত্র কিছুদিন আগে…কেন?”

    “বিয়েটা আরো আগেই হত, কিন্তু প্রথম বউয়ের কারণে দেরি হয়েছে।”

    “তিন মাস আগে হঠাৎ করে রাজি হয়ে গেলো কেন?”

    মুখ তুলে তাকালো পলি। “মিলন যখন জেলে ছিলো তখন সে কোনো রকম যোগাযোগ রাখে নি…আমি রেখেছিলাম। জেল থেকে বের হয়ে ডিভোের্স দিতে চেয়েছিলো কিন্তু উনি আমাকে মেনে নিলে আর ডিভোর্স দেয়া হয় নি।”

    অবাক হলো জেফরি । মিলন যে জেলে ছিলো এ কথাটা তাহলে সত্যি! “মিলন কবে ধরা পড়েছিলো? বের হলো কবে?”

    “এক বছর আগে ধরা পড়েছিলো…চারমাস আগে বের হয়েছে।”

    “কেন ধরা পড়েছিলো?” আড়চোখে তাকালো মনিটরের দিকে। মেয়েটা সত্যিই বলছে ।

    “ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছিলো…”

    ইয়াবা! জামান তাকালো তার বসের দিকে। জেফরি বুঝতে পারলো, হাই প্রোফাইলের এক সন্ত্রাসী এই মিলন । নিশ্চয় পুলিশের রেকর্ডে তার নাম আছে।

    “আচ্ছা, তাহলে মিলন ইয়াবা ব্যবসাও করে?”

    ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো পলি।

    “ঐ বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন আপনারা?”

    “আমাকে দোলন ভায়ের বাড়িতে রেখেছে কিন্তু বড়জনকে কোথায় রেখেছে আমি জানি না।”

    “মিলনও আপনার সাথে থাকতো?”

    মাথা দোলালো শুধু। পলিগ্রাফ মেশিন জানাচ্ছে মেয়েটা সত্যি বলছে ।

    “তাহলে?”

    “সে কোথায় আছে আমি জানি না।”

    “দোলনের বাড়িতে সে আসে না? আপনার সাথে দেখা করে না?”

    “আমাকে দোলনের বাড়িতে রেখে যাবার পর সে আর আসে নি…শুধু ফোনে যোগাযোগ হয়েছে…”

    “ও কোথায় থাকে আপনি কিছু জানেন না?”

    মাথা দোলালো আবার । জানে না।

    “হাসানের খুনের ব্যাপারে আপনি কি জানেন?”

    অবাক হয়ে তাকালো পলি। “আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের হাসান সাহেব?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি ।

    “না। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”

    সত্যি ।

    “কিছু জানেন না?”

    “না।”

    এমন সময় জেফরির ফোনটা বেজে উঠলে পকেট থেকে বের করে নাম্বারটা দেখলো। অপরিচিত একটি নাম্বার। তার এই ফোনে খুব কমই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে । একটু ভেবে কলটা রিসিভ করলো সে।

    “হ্যালো?”

    ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।

    “হ্যালো?” তাড়া দিয়ে বললো আবার ।

    “আমার বউটাকে ছেড়ে দেন!” ফ্যাসফ্যাসে একটা কণ্ঠ বললো অবশেষে।

    মিলন! জেফরি যারপরনাই অবাক হলো। পাশে বসা জামানের দিকে তাকালো সে । সঙ্গে সঙ্গে লাউডস্পিকার মোডে দিয়ে দিলো ফোনটা।

    “কে বলছো?”

    “আমি আবারো বলছি, আমার বউটাকে ছেড়ে দেন।” বেশ দৃঢ়ভাবে কথাটা পুণরায় বললো সে।

    মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী পলি বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলো।

    “আগে নিজের পরিচয় দাও…!” বানচোত গালিটা মুখে চলে এলেও উচ্চারণ করলো না জেফরি ।

    “যে মেয়েটাকে ধরেছেন ওর হাজবেন্ড…”

    “শুনে খুশি হলাম । কিন্তু হাজবেন্ডের নামটা কি?”

    “আপনি আমার নাম ভালো করেই জানেন…আমার সাথে আপনার দেখাও হয়েছে। কিন্তু কিভাবে যে আপনি বেঁচে গেলেন বুঝতে পারছি না।” একটু থেমে আবারো বললো, “মনে আছে ঘটনাটা?”

    জেফরির ভালোই মনে আছে। এই ঘটনা সে কখনই ভুলতে পারবে না ।

    “ওকে ছেড়ে দেন…আপনার ভালো হবে।”

    “আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস, বানচোত!” এবার আর গালিটা না দিয়ে পারলো না।

    “মাথা গরম করবেন না,” শান্ত কণ্ঠে বললো মিলন।

    জেফরি বিশ্বাস করতে পারছে না একজন খুনি হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটরকে ফোন করে শাসাচ্ছে!

    “আমার ক্ষমতা এখনও টের পান নাই…”

    “হ্যাঁ, হ্যাঁ…জানি। তোর অনেক ক্ষমতা। হোমমিনিস্টারের কথা বলছিস তো?”

    “এতো কথা বলার টাইম নাই আমার । ফোনটা যেখান থেকে করেছি ওই জায়গাটা একদম সুবিধার না। এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। যা বলছি তাই করেন । নইলে অনেক পস্তাবেন।”

    “চুপ, শুয়োরের বাচ্চা!” রেগে গেলো জেফরি ।

    ওপাশ থেকে মৃদু হাসি শোনা গেলো শুধু।

    বানচোতটা হাসছে! “তুই আমাকে ফোন করে কতো বড় ভুল করেছিস একটু পরই টের পাবি।”

    “আচ্ছা? কি করবেন? আমার ফোনটা ট্র্যাকডাউন করবেন?” এবার অট্টহাসি। “এসব খেলা আমার সাথে খেলবেন না । আপনারা কিভাবে কাজ করেন আমি ভালো করেই জানি।”

    রাগে দাঁতে দাঁত পিষে ফেললো জেফরি বেগ । বদমাশটার সাহস কতো বড়!

    “আমি যা বলার বলেছি…আমার বউকে ছেড়ে দেন, নইলে এমন ক্ষতি করবো সারা জীবন পস্তাতে হবে!”

    “শুয়োরের বাচ্চা–!”

    কলটা কেটে দিলো মিলন।

    জামানের দিকে তাকালো জেফরি। “কমিউনিকেশন্স রুমে…” চেয়ার থেকে উঠে তাড়া দিয়ে বললো সে। জামানের জন্য অপেক্ষা না করেই রীতিমতো দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো জেফরি বেগ ।

    অধ্যায় ৪২

    দ্রুত কমিউনিকেশন্স রুমে ছুটে গিয়ে মিলনের ফোনটা ট্রেস করা সম্ভব হলেও তাতে কোনো লাভ হলো না। ফোনটা যে নাম্বার থেকে করা হয়েছে সেটার অবস্থান জানতে পেরেছে তারা। সেখানে স্থানীয় থানার পুলিশ গিয়ে কাউকে খুঁজে পায় নি । পাওয়ার কথাও না।

    ফার্মগেটের ব্যস্ততম এলাকার একটি পাবলিক টয়লেট ।

    লক্ষ লক্ষ লোকজনের মিছিলে একজন মিলনকে এভাবে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ফোন কলটা শেষ হবার পর ট্র্যাকডাউন আর লোকেট করতে যে সময় লেগে যায় সেটা সটকে পড়ার জন্য যথেষ্ট । অপরাধী যদি সচেতন না থাকে তাহলে এভাবে তাকে লোকেট করা যায় কিন্তু যে অপরাধী এই ব্যাপারটা বেশ ভালোমতো জানে তার পক্ষে স্থান ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট সময় থাকে ।

    মিলন তাদের ট্র্যাকডাউন করার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত। তাকে এভাবে ধরা সম্ভব হবে না। জেফরিকে কলটা করার পরই ওই নাম্বারটা বন্ধ হয়ে গেছে।

    দারুণ স্মার্ট! ভাবলো জেফরি । এখন পর্যন্ত এরকম প্রতিপক্ষের মোকাবেলা তাকে করতে হয় নি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকডাউন করার ব্যাপারটা এমনকি বাস্টার্ড নামের পেশাদার খুনিও জানতো না। শেষে জানলেও ততোক্ষণে জেফরি বেগ যা বোঝার, যা করার করে ফেলেছিলো।

    প্রায় আধঘণ্টা ধরে কমিউনিকেশন্স রুমে বসে রইলো সে। ইন্টেরোগেশন রুমে যে মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী আছে সেটা যেনো ভুলেই গেলো । কথাটা স্মরণ করিয়ে দিলো জামান।

    ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এলো ইন্টেরোগেশন রুমে।

    মিলনের স্ত্রী পলি চোখ বন্ধ করে বসে আছে। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। জামান আর জেফরি ঘরে ঢুকতেই চোখ খুলে তাকালো মেয়েটি।

    চেয়ারে বসলেও ইন্টেরোগেশন করার মতো মনমেজাজ নেই জেফরির। তার সহকারী জামান হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো । সে-ই শুরু করলো জিজ্ঞাসাবাদ ।

    “মিলন একটা নিরীহ ছেলেকে খুন করেছে, আমাকে আর আমার স্যারকেও গুলি করেছে…তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”

    জামানের কথা শুনে পলি চোখ পিটপিট করে চেয়ে রইলো শুধু।

    “আপনি যদি ভালোয় ভালোয় সব না বলেন তাহলে কপালে অনেক দুঃখ আছে,” জামান চোখমুখ খিচে বললো কথাটা ।

    “আমি তো এসবের কিছুই জানি না…আমাকে খামোখা ধরে এনেছেন, কাঁদো কাঁদো গলায় বললো পলি ।

    “চুপ!” রেগেমেগে ধমকে উঠলো জামান। মেয়েটা দারুণ ভয় পেলো । “অভিনয় করা হচ্ছে? সিনেমা পেয়েছেন? আমাদের সাথে নাটক করে…কতো বড় সাহস! “

    জেফরি আস্তে করে জামানের বাহুটা ধরে তাকে নিবৃত্ত করলো ।

    “দেখেন ভাই, আমি যা জানি সবই বলেছি। আমি কোনো খুনখারাবির সাথে জড়িত নই। গরীবঘরে জন্ম আমার…ভাগ্যের দোষে ফিল্ম লাইনে এসেছিলাম, মিলন যদি আমাকে আশ্রয় না দিতো তাহলে আমার ঠাঁই হতো খারাপ কোনো জায়গায়…” আবেগের সুরে বলে চললো পলি। “আমার মতোন মেয়েদের অবস্থা আপনারা বুঝবেন না।”

    জামান রেগেমেগে তাকালেও কিছু বললো না । জেফরি মাথা নীচু করে কপাল চুলকাচ্ছে ।

    “মিলন এখন কী করে না করে আমি জানি না । বছরখানেক আগে ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়েছিলো, অনেকদিন পর বের হয়ে আসে। আমার দুরাবস্থা দেখে অবশেষে প্রথম স্ত্রীর অনেক বাধা সত্ত্বেও বিয়ে করেছে…”

    “চুপ করুন!” ধমক দিলো জামান । “আপনার কাছ থেকে এসব কাহিনী শুনতে চেয়েছি আমরা?”

    পলি চুপ মেরে গেলো।

    “ফিলমি স্টাইলের কাহিনী বলে যাচ্ছে। যত্তোসব!”

    জামান কথাটা শেষ করতে না করতেই আবারো জেফরির ফোনটা বেজে উঠলো। চোখাচোখি হলো তাদের দুজনের মধ্যে । ঝটপট পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো সে।

    আরেকটা অপরিচিত নাম্বার ।

    কলটা রিসিভ করলেও কোনো কথা বললো না । লাউডস্পিকার মোডে আছে ফোনটা।

    “কথা বলছেন না কেন?” কণ্ঠটা একেবারে শান্ত।

    মিলন আবারো ফোন করেছে! জেফরি চেয়ে রইলো জামানের দিকে। সে কিছু বললো না।

    “আপনার পুলিশ কী খুঁজে পেলো?” টিটকারি মারার সুরে জানতে চাইলো মিলন।

    জামান কমিউনিকেশন্স রুমে যাবার জন্য উঠতে গেলে জেফরি তার হাত ধরে বিরত রাখলো। দরকার নেই । এই বদমাশটাকে এভাবে ধরা যাবে না।

    “দুর্গন্ধ ছাড়া কিছু পায় নি মনে হচ্ছে,” কথাটা বলেই হা হা করে হাসলো সন্ত্রাসী।

    “যখন আমার হাতে ধরা পড়বি তখন এমন হাসি থাকবে না,” যতোদূর সম্ভব শান্তকণ্ঠে বললো জেফরি বেগ।

    “ভাইজান অবশেষে কথা বলেছে তাহলে?” আবারো গা রি রি করা হাসি। “আমি তো ভাবছিলাম বোবা হয়ে গেছেন।”

    “হোমমিনিস্টার তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না, কথাটা মনে রাখিস।”

    “আচ্ছা, মনে রাখবো। এবার কাজের কথায় আসেন।”

    ভুরু কুচকে জামানের দিকে তাকালো জেফরি ।

    “কিসের কাজ?”

    “আমার বউ…ওর কোনো দোষ নেই। ওকে ছেড়ে দেন। ও কিছু জানে না । খেলাটা আপনার সাথে আমার…মেয়ে মানুষের সাথে বাহাদুরি না দেখিয়ে আমার সাথে দেখান।”

    “তোর কথা শেষ?” ঝাঁঝের সাথে বললো জেফরি ।

    “না। শেষ কথাটা শুনে রাখেন, এক ঘণ্টার মধ্যে পলিকে ছেড়ে দেবেন। নইলে আমি আমার মতো খেলবো?”

    “শুয়ো-” থেমে গেলো জেফরি । লাইনটা কেটে দিয়েছে মিলন।

    “স্যার, ট্র্যাকডাউন করা দরকার ছিলো,” অধৈর্য কণ্ঠে বললো জামান।

    “কোনো লাভ হবে না।” উদাস হয়ে বললো জেফরি । “ওকে এভাবে ধরতে পারবো না আমরা।”

    জামান চেয়ে রইলো তার বসের দিকে।

    জেফরি বেগ বুঝতে পারলো ছেলেটা কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু ইন্টেরোগেশন রুমে মিলনের স্ত্রীর সামনে নয় ।

    উঠে দাঁড়ালো সে। “চলো, একটু ব্রেক নেয়া যাক।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জামান। এটাই চাচ্ছিলো সে।

    .

    দশ মিনিট পর, জেফরি আর জামান বসে আছে কমিউনিকেশন্স রুমে। রমিজ লস্করও আছে সেখানে। জামানের প্রস্তাব মতে মিলনের শেষ কলটা খতিয়ে দেখছে তারা।

    জামান মনে করে, মিলন সত্যি সত্যি তাদের ট্র্যাকডাউন করার মেথড সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য শেষ কলটা ট্র্যাকডাউন করা দরকার। জেফরি তার কথাটা মেনে নিয়েছে।

    রমিজ লস্কর দেখছে শেষ কলটা মিলন কোত্থেকে করেছিলো।

    “স্যার!” পেছন ফিরে আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো রমিজ।

    জেফরি আর জামান মনিটরের দিকে তাকালো।

    “শেষ কলটা বেইলি রোড থেকে করেছে!”

    রমিজের কথা শুনে ভুরু কুচকে চেয়ে রইলো জেফরি। জামান রীতিমতো হতভম্ব।

    “আমাদের অফিসের খুব কাছেই!” যোগ করলো রমিজ লস্কর।

    মাইগড!

    মিলনের পরিকল্পনা কি? সে কি করতে চাইছে? জেফরির মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বদমাশটা আগ্রাসী আচরণ করছে। হয়তো তার নার্ভের শক্তি পরীক্ষা করে দেখতে চাইছে। নাকি দলবল নিয়ে হোমিসাইডে অক্রমণ করার পায়তারা করছে?

    অসম্ভব!

    তাহলে হোমিসাইডের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কেন?

    বদমাশটার এতো বড় আস্পর্ধা!

    অধ্যায় ৪৩

    হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদকে হোমমিনিস্টারের জড়িত থাকার কথা বাদ দিয়ে মিলনের ব্যাপারটা বিস্তারিত জানালো জেফরি বেগ । যা ঘটেছে তারপর মহাপরিচালককে না জানিয়ে আর কোনো উপায় রইলো না। মিলন নামের ধুরন্ধর বদমাশটা ভালো খেলাই শুরু করেছে । একেবারে হোমসািইডের আঙিনায় চলে এসে একধরণের ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা করছে, সে কতোটা ক্ষমতা রাখে; কততটা বেপরোয়া হতে পারে।

    সব শুনে ফারুক আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।

    একটা রাস্তার মাস্তান হোমিসাইডের দু দু’জন অফিসারকে গুলি করেছে, সে-ই কিনা এখন ফোন করে রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এতো সাহস সে পেলো কোত্থেকে?

    “হোমিসাইডের বাইরে ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলে দিচ্ছি আমি…” বললে ফারুক আহমেদ।

    “দরকার নেই, স্যার,” আস্তে করে বললো জেফরি বেগ ।

    অবাক হলো মহাপরিচালক ।

    “দরকার নেই?”

    “জি, স্যার। দরকার নেই।” একটু থেমে আবার বললো জেফরি, “ওই বদমাশটা মনে করবে আমরা সবাই ওর হুমকিতে ভয় পেয়ে গেছি।”

    “তাহলে আমরা কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো?” মাথা দোলালো ফারুক আহমেদ। “কিছু একটা তো করতেই হবে, নাকি?”

    “জি, স্যার। তাতো করতেই হবে।”

    “এনি আইডিয়া?”

    কমিউনিকেশন্স রুম থেকে ফারুক আহমেদের কাছে আসার পথে একটা আইডিয়া তার মাথায় এসেছে। এ মুহূর্তে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

    “আমি ঠিক করেছি মিলনের স্ত্রীকে ছেড়ে দেবো।” নির্বিকারভাবে বললো জেফরি বেগ ।

    “কি!” ফারুক আহমেদ যেনো নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলো না। “ছেড়ে দেবে মানে?”

    “আমার ধারনা মেয়েটা তেমন কিছু জানে না। ওকে আটকে রেখে আমাদের কোনো লাভ হবে না। মাঝখান থেকে ঐ সন্ত্রাসী বেপরোয়া হয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারে…”

    “মাইগড, আমি ভাবতেই পারছি না তুমি এ কথা বলছো!” জেফরির দিকে গোল গোল চোখে চেয়ে রইলো মহাপরিচালক।

    “এটাই সহজ সমাধান, স্যার,” নির্বিকারভাবে বললো জেফরি বেগ।

    “সহজ সমাধান?” মাথা দোলালো জেফরির বস্। “না না…এটা হবে সন্ত্রাসীর ভয়ে পিছু হটে যাওয়া।”

    “কৌশলগত কারণে কখনও কখনও পিছু হটতে হয়, স্যার।”

    হা করে চেয়ে রইলো ফারুক আহমেদ। তার এই প্রিয়পাত্র কি রাতারাতি বদলে গেলো নাকি? সেই দৃঢ়, একরোখা, হাল ছেড়ে না দেয়া জেফরি বেগ কোথায় গেলো!

    “মিলনের স্ত্রীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা যাবে না। আমি নিশ্চিত,” বসকে চুপ থাকতে দেখে বললো জেফরি।

    “তোমার এরকম মনে হবার কারণ কি?”

    “মিলন ধরে নিয়েছে তার বউ অল্প যেটুকু জানে সবই আমাদের বলে দিয়েছে। সে এখন আরো সতর্ক হয়ে গেছে।”

    “হুম,” মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললো ফারুক আহমেদ।

    “সেজন্যেই বলছি, খামোখা মিলনের স্ত্রীকে আটকে রেখে কী লাভ।”

    “কিন্তু তার স্ত্রীকে এভাবে ছেড়ে দিলে সে বুঝে যাবে আমরা তাকে ভয় পেয়ে গেছি। এটা আমাদের জন্যে ভালো হবে?”

    “স্যার, সত্যি বলতে কি, আমি আসলেই ভয় পেয়ে গেছি।”

    ফারুক আহমেদ যেনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। “তুমি ভয় পেয়ে গেছো? কী বলছো এসব? তুমি তো কখনও ভয় পাবার লোক ছিলে না!”

    “স্যার, আমি আমাকে নিয়ে নয়, অন্যদের নিয়ে ভয়ে আছি।”

    জেফরি সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথাটা বললো বলে ফারুক আহমেদও ঘাবড়ে গেলো কিছুটা।

    “অন্যদের নিয়ে মানে?”

    “আমাদের হোমিসাইডের কর্মকর্তাদের কথা বলছি। মিলন হয়তো মাথা গরম করে আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তার হুমকিতে এরকম কিছুরই ইঙ্গিত ছিলো।”

    “মাইগড!” ফারুক আহমেদ মুখে হাত দিয়ে বললো। “এই যদি অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে কি আমাদের উচিত হচ্ছে মিলনের হুমকি-ধামকিতে ভয় পেয়ে ওর স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়া?” মাথা দোলালো মহাপরিচালক। “নো মাই বয়…দিস ইজ অ্যাবসলিউটলি রং মুভ।”

    “তাহলে রাইট মুভটা কি, স্যার?”

    “ফাইন্ড হিম…অ্যান্ড শুট হিম লাইক অ্যা উগ!” ডেস্কের উপর একটা কিল মেরে বসলো ফারুক আহমেদ।

    জেফরির মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলে ভুরু কুচকে তাকালো হোমিসাইডের মহাপরিচালক।

    “হাসছো কেন?”

    অধ্যায় ৪৪

    বিকেল পাঁচটার দিকে মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী বেরিয়ে এলো হোমিসাইড থেকে । মেয়েটির চোখেমুখে বিস্ময়। মিলনের হুমকিতে এরকম কাজ হবে ভাবতেই পারে নি। আজব ব্যাপার!

    মিলন যখন প্রথম ফোন করেছিলো পুলিশের লোকটাকে তখন সে ভেবেছিলো পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠবে তার জন্য। মনে মনে মিলনের বোকোমির জন্য সে গালিও দিয়েছে। কী দরকার ছিলো পুলিশকে শাসানোর? তাকে তো রিমান্ডে নিয়ে টর্চার করে নি। একদম ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো ঐ লোকটা। পুলিশ রিমান্ড এ রকম হয় তার ধারনাই ছিলো না। তাছাড়া সত্যি বলতে কি, মিলনের ব্যাপারে সে খুব বেশি কিছু জানেও না।

    জেল থেকে বের হবার পর মিলনের জামিন করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, লাভ হয় নি। তারপর হঠাৎ করেই বেরিয়ে এলো মিলন। পদার আড়াল থেকে কারা তার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে নামি-দামি ব্যারিস্টার ধরেছে সে জানে না।

    যাইহোক, জামিনে বের হয়ে এসেই তাকে বিয়ে করে ফেলে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রথম স্ত্রী আম্বিয়া একটুও আপত্তি জানায় নি তাদের এই বিয়েতে। অথচ এই মহিলার কারণেই মিলন তাকে আলাদা বাড়িতে রেখেছিলো, সে ছিলো বলতে গেলে তার রক্ষিতা।

    বিয়ের পর তারা আলাদা বাসায় থাকতত, কিন্তু দু’মাস আগে আরামবাগের বাড়ি ভাড়া নিয়ে মিলন তার দুই বউকে একসাথে রাখতে শুরু করে। পলি এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে মিলন বলেছে, একটা জরুরি কাজের নাকি ভীষণ ব্যস্ত থাকবে কয়েক মাস। প্রায়ই বাসায় থাকতে পারবে না। সেজন্যে এই ব্যবস্থা। মাত্র দু’তিন মাসের ব্যাপার। তারপরই আম্বিয়ার একটা ব্যবস্থা করে তারা দু’জনে উঠবে নতুন ঠিকানায়।

    কিন্তু এখন বুঝতে পারছে, মিলন হয়তো বড়সড় কোনো কাজে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের লোকগুলো সেরকম কথাই বলছিলো তাকে। এক অজানা আশংকা জেঁকে বসলো পলির মধ্যে ।

    বিকেলের আলো কমে সন্ধ্যা নামি নামি করছে। বেইলি রোডের একটা ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে সে। ভ্যানিটি ব্যাগে কিছু টাকা ছিলো, বের হওয়ার সময় খুলে দেখেছে, সব কিছু ঠিকঠাক আছে । অদ্ভুত ব্যাপার। এর আগে যখন গ্রেফতার হয়েছিলো তখন তার ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতরে ছিলো দশ হাজার টাকা ছাড়া পাওয়ার পর একটা টাকাও ব্যাগে ছিলো না। সব টাকা মেরে দিয়েছিলো পুলিশের লোকগুলো!

    কিন্তু এবার যাদের কাছে ধরা পড়েছে তারা পুলিশ হলেও পোশাকে আশাকে ব্যবহারে পুলিশের ছিটেফোঁটাও নেই। এরা তাহলে কারা?

    কী যেনো একটা নাম বললো? হোমি…

    মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে একটা সিএনজি নেবার চেষ্টা করলো। এই রাস্তায় আবার রিক্সা চলে না। ধারেকাছে কোনো সিএনজিও নেই। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো সে। রাস্তার দু’পাশে তাকালো। এখান থেকে সিএনজি নিয়ে সোজা চলে যাবে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে । তারপর মিলনের সাথে যোগাযোগ করবে।

    আশেপাশে তাকালো। এবার সিএনজি’র খোঁজে নয়, তার পেছনে কোনো টিকটিকি লেগেছে কিনা দেখতে। না । সেরকম কাউকে দেখতে পেলো না । ছাড়া পাবার পরই তার মনে হয়েছিলো সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে ফলো করবে । তার ধারণা ভুল। কেউ তাকে ফলো করছে না।

    রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে থাকা কিছু লোক তার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। পলি দেখতে খুব সুন্দর । এরকম সুন্দরী একটা মেয়ে একা একা দাঁড়িয়ে থাকলে লোকজন তো তাকাবেই। ব্যাপারটা আমলে নিলো না সে।

    এক লোক রাস্তার ওপার থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। চোখে চোখ পড়তেই বদমাশটা মিটিমিটি করে হাসলো।

    ফাজিল কোথাকার! মনে মনে বললো পলি। তাকে অন্য কিছু ভেবেছে হারামজাদা। অস্থির হয়ে আবারো তাকালো রাস্তার দু’পাশে। কোনো সিএনজি নেই। আরেকটু হেঁটে সামনে এগোবে কিনা বুঝতে পারলো না ।

    পলি অবাক হয়ে দেখতে পেলো লোকটা রাস্তা পার হয়ে তার কাছেই। আসছে। মুখে এক ধরণের হাসি লেগে আছে। যেনো শিকার ধরতে পেরেছে ।

    পলির খুব কাছে এসে দাঁড়ালো বদমাশটা। বিরক্তি নিয়ে তাকালো সে। এদের জন্য ঢাকা শহরে একা একা বের হওয়াই দায়।

    “একা নাকি?” আস্তে করে বললো সেই লোকটি।

    পলি তাকালো তার দিকে । “আপনার সমস্যা কি?” একটু ঝাঝের সাথে বললো।

    “সমস্যা হইবো কেন?…একা থাকলে চলো একটু কথা কই,” প্রস্তাব দিলো বদমাশটা ।

    “আপনার সাথে আমি কথা বলবো কেন?”

    হে হে করে নীরব হাসি দিলো লোকটা । “এতো রাগ করো কেন, আমি তো বুঝবার পারছি তুমি কোন লাইনের…” কথাটা বলে পলির গা ঘেষে দাঁড়ালো। “কতো দিতে হইবো?” ফিসফিস করে পলির কানের কাছে মুখ এনে বললো সে।

    একটু সরে গেলো পলি। এরকম লোকজন এর আগেও সে ম্যানেজ করেছে । “অতো টাকা তো আপনার কাছে নেই, ভাইজান।”

    ভুরু কপালে তুললে লোকটা। “তুমার রেট কতো, শুনি?”

    “পঞ্চাশ হাজার!” বলেই মুচকি হাসলো পলি ।

    দাঁত বের করে হাসলো বদমাশটা । “ফ্ল্যাট বাড়ির মাইয়ারাও তো পাঁচের বেশি চায় না…আর তুমি তো রাস্তায় নামছে…” আরো কাছে এগিয়ে এসে চাপা কণ্ঠে বললো সে, “এক দিমু নি…চলো!”

    “কি হয়েছে?”

    কথাটা শুনে তারা দুজনেই তাকালো রাস্তার দিকে। একটা মোটরসাইকেল কখন এসে থেমেছে তাদের সামনে টেরই পায় নি। মাথায় হেলমেট পরা এক আরোহী। কালো রঙের জ্যাকেট আর জিন্স প্যান্ট। মোটরসাইকেলটাও কালো রঙের।

    পলি ভুরু কুচকে চেয়ে রইলো আরোহীর দিকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না । কণ্ঠটা চিনতে একদম ভুল হয় নি।

    “ওঠো!” আস্তে করে বললো মোটরসাইকেল আরোহী ।

    পলি চুপচাপ উঠে পড়লো মোটরসাইকেলের পেছনে।

    সাই করে চলে গেলো মোটরসাইকেলটা ।

    অধ্যায় ৪৫

    হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদের রুম থেকে বের হয়ে জেফরি বেগ চলে আসে কমিউনিকেশন্স রুমে। জামান আর রমিজকে জানায় তার পরিকল্পনাটি। মিলনের স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার কথা শুনে প্রথমে তারা অবিশ্বাসে চেয়ে থাকে। একটু পরই যখন জেফরি তাদেরকে সব খুলে বলে তখন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

    তবে জামানের মন খুব খারাপ, এই অপারেশনে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। পুরোপুরি বাদ পড়ে নি। তাকে কমিউনিকেশন্স রুমে থেকে জরুরি একটা কাজ করতে হবে।

    রমিজ লস্করসহ হোমিসাইডের আরো একজনকে নিয়ে দ্রুত একটা টিম তৈরি করে ফেলে জেফরি । তাকে নিয়ে টিমের সদস্য সংখ্যা তিন।

    জেফরি, রমিজ আর আমান নামের নতুন একটি ছেলে হোমিসাইডের পেছন দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবে । মিলনকে ফলো করার কাজ করবে তাদের এই টিমটা।

    এই কাজটা প্রচলিত পদ্ধতিতে করা হবে না। এরজন্য ছোট্ট একটা ডিভাইস ব্যবহার করা হবে । মিলনের স্ত্রীর সাথে সেই ডিভাইসটা জুড়ে দেয়া হবে সুকৌশলে।

    পুরো পরিকল্পনাটি ব্রিফ করে কাজে নেমে পড়তে দু’ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। তারা যখন মিলনের স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগটা ফিরিয়ে দিয়ে তাকে বলছিলো একটু পরই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে ঠিক তখনই মিলন কল করে বসে জেফরিকে।

    কলটা রিসিভ করে জেফরি ।

    “আমি যে আপনাকে সময় দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু শেষ হয়ে গেছে, ভাইজান!” ফ্যাসফাসে কণ্ঠে বলে মিলন।

    “শোনো, ইচ্ছে করলেই হুটহাট করে আসামী ছেড়ে দেয়া যায় না, এরজন্য সময় লাগে…”

    জেফরির এ কথা শুনে মিলন চুপ মেরে থাকে কয়েক মুহূর্ত। “আর কতোক্ষণ সময় লাগবে আপনার?”

    “উমমম…” মিলনের স্ত্রীর দিকে তাকায় জেফরি । “একটা শর্ত আছে। আমার।”

    “কি শর্ত?”

    “হাসানকে খুন করার জন্য তোমাকে কে ভাড়া করেছিলো?” জেফরি জানতো মিলন তার কাছে নির্ঘাত মিথ্যে বলবে, কিন্তু এটা এমনি এমনি বলা ।

    হা হা করে হেসে ফেলে মিলন। “আপনি এখনও জানেন না?” একটু চুপ থেকে আবার বলে, “আমার তো ধারণা ছিলো আপনি সব জেনে গেছেন।”

    “আমি জানি তুমি কাজটা করেছে, কিন্তু তোমাকে কে ভাড়া করেছে সেটা জানি না।”

    “আপনার কি মনে হয়? মানে কি আন্দাজ করছেন?”

    “কোনো আন্দাজ নেই। তুমি বলো?”

    “শোনেন, এসব প্যাচাল বাদ দিয়ে একটা আসল কথা বলি। এই কেসটা নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামাবেন না । আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে গেলে বিরাট ভুল করবেন।”

    “তুমি বলতে চাচ্ছো, হোমমিনিস্টার তোমাকে ভাড়া করেছে?”

    একটু চুপ থেকে মিলন বলেছিলো, “বউটাকে ছেড়ে দেন…তাহলে আপনার সাথে আমাদের লেনদেনও চুকে যাবে, ওকে?”

    “তুমি যদি মনে করে থাকো ভয় পেয়ে তোমার বউকে ছেড়ে দিচ্ছি তাহলে ভুল করছে।”

    “না। ভয় পান নাই। আমার অনুরোধে ছেড়ে দিচ্ছেন…এবার খুশি হয়েছেন?” মৃদু হাসি শোনা যায় ফোনের ওপাশ থেকে ।

    “তোমার বউ তেমন কিছু জানে না। তাকে আটকে রেখে লাভ নেই, বুঝলে?”

    “হুম । ঠিক লাইনে এসেছেন । ও আসলেই কিছু জানে না।”

    “দশ মিনিটের মধ্যে ওকে ছেড়ে দিচ্ছি…তুমি আমাদের ধারেকাছেও থাকার চেষ্টা কোরো না। তোমার কোনো লোকজনও যেনো না থাকে,” ইচ্ছে করেই এ কথাটা বলেছে মিলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

    “তাহলে আমার কথাটাও শুনে রাখেন। পলির পেছনে টিকটিকি লাগাবেন না। আমার আবার টিকটিকি পিষে ফেলতে দারুণ মজা লাগে।”

    এ কথা বলার পরই লাইনটা কেটে যায়।

    সঙ্গে সঙ্গে পলিকে ছেড়ে দেবার অর্ডার দিয়ে রুম থেকে চলে যায় জেফরি বেগ। ইন্টেরোগেশন রুমে তখন জামান আর রমিজ ছিলো। তারা পলিকে তার ভ্যানিটি ব্যাগটা বুঝিয়ে দেয় । ভেতরের সব কিছু ঠিকঠাকমতো আছে কিনা চেক করে দেখতে বলে। পলি অবশ্য চেক করার প্রয়োজন বোধ করে নি।

    জামান পলিকে বলে দেয়, এখান থেকে যেখানে খুশি সেখানে চলে যেতে পারে, কোনো সমস্যা নেই। সে এখন মুক্ত ।

    এ কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে পলি । মেয়েটার চোখেমুখে সন্দেহের ছ’টা দেখতে পায় জামান। তবে সে জানতো পলির সন্দেহটা খুব জলদিই দূর হয়ে যাবে, মেয়েটা বুঝতে পারবে তার পেছনে কোনো লোক লাগে নি । কিন্তু যেটা বুঝতে পারবে না সেটা হলো : মিলনের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এবার তার খেল খতম!

    অধ্যায় ৪৬

    মিলনের মোটরসাইকেলটা বেইলি রোড থেকে ইস্কাটনের দিকে চলে যাচ্ছে । যাবার জন্য তার কাছে তিনটি পথ ছিলো।

    ডান দিকে মগবাজার ক্রসিং। বাম দিকে ক্রিসেন্ট রোড, যেখান থেকে দু তিনটা রাস্তা চলে গেছে বিভিন্ন দিকে। আর সোজা গেলে ইস্কাটন। সে বেছে নিয়েছে ইস্কাটন । জায়গাটা নিরিবিলি । কেউ ফলো করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবে।

    পলি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

    “ভয় পেয়েছিলে?” হেলমেটের ভেতর থেকে চিৎকার করে বললো মিলন।

    “না।” মিথ্যে বললো পলি ।

    কথাটা শুনে হেসে ফেললো, তবে হেলমেটের কারণে তার হাসি দেখা গেলো না, আর প্রবল বাতাসের ঝাঁপটা, মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের আওয়াজের কারণে শোনাও গেলো না কিছু।

    “ওরা কি আমাদের ফলো করছে?” পলি পেছন থেকে মিলনের কানের কাছে মুখ এনে বললো।

    লুকিংগ্লাসের দিকে তাকালো সে। “এখন পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। মনে হয় না ফলো করছে।”

    “ঐ লোকটা কে ছিলো?”

    মিলন হেসে ফেললো। “আনু।”

    “নতুন ছেলে?”

    “হুম।”

    “আমি ভেবেছিলাম…”

    “জানি।”

    “ওকে যদি ওরা ধরে ফেলে তাহলে?”

    “ও ধরা পড়ে নি…” পলি অবাক হলো।

    “তুমি জানলে কিভাবে?”

    “একটু আগে কল করেছিলো। আমার এক কানে ইয়ারফোন আছে । ও জানিয়েছে কেউ আমাদের ফলো করছে না। তাকে আশ্বস্ত করে বললো মিলন।

    পলি কিছু বুঝতে পারলো না। এসব কী বলছে? কখন ফোন করলো?

    মিলনের কানে একটা ব্লটুথ ইয়ারফোন আছে । পাঁচ মিনিট পর সব কিছু ঠিকঠাক দেখলে আন নামের ছেলেটার ফোন করার কথা ছিলো। একটু আগেই সে ফোন করে জানিয়েছে, তাদের পেছনে কাউকে ফলো করতে দেখে নি ।

    তাদের মোটরসাইকেলটা কখন যে কাওরান বাজার পেরিয়ে পান্থপথে চলে এসেছে টেরই পায় নি ।

    “আমরা কোথায় যাচ্ছি?” জানতে চাইলো পলি।

    “নিরাপদ একটি জায়গায়।”

    .

    কমিউনিকেশন্স রুমে বসে আছে জামান। তার সামনে যে মনিটর তাতে দেখা যাচ্ছে পান্থপথের দিকে ছুটে যাচ্ছে লাল রঙের বিন্দুটি। চকোলেট সাইজের একটি জিপিএস ডিভাইস এই তথ্য জানাচ্ছে।

    এই লোকটা শুধু হাসানকে খুন করে নি, ঠাণ্ডা মাথায় তার পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে, তার বস জেফরি বেগকে আরেকটুর জন্যে মেরেই ফেলেছিলো। ভাগ্য ভালো, জেফরির জ্যাকেটের ভেতরের পকেটে ছিলো নিহত হাসানের ডায়রিটা।

    জামানের কানে ইয়ারফোন। “স্যার,” মনিটরের দিকে তাকিয়ে বললো সে। “পান্থপথে আছে…”

    লাল বিন্দুটি যে ভার্চুয়াল মানচিত্রের উপর টুকটুক করে এগিয়ে যাচ্ছে সেটার অবস্থান এখনও পান্থপথেই। তবে আরেকটু পরই চার রাস্তার মোড়ে চলে আসবে। জামান অপেক্ষা করলো তার জন্য । কোথায় যায় সেটা দেখতে হবে।

    লাল বিন্দুটি সোজা চলে গেলো ধানমন্ডির দিকে ।

    “স্যার…ধানমন্ডির দিকে…”

    জামান চুইংগাম মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলো। লাল বিন্দুটির গতি কমে থেমে গেলো হঠাৎ করে । “স্যার…থেমেছে…ট্রাফিক সিগনাল হবে হয়তো…”

    চুইংগাম চিবানো বন্ধ করে দেখলো লাল বিন্দুটি আনুমাণিক দশ সেকেন্ড পর আবার চলতে শুরু করেছে। গন্তব্য আগের মতোই ধানমন্ডির দিকে ।

    লাল বিন্দুটা এখন বায়ে মোড় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কলাবাগানের দিকে।

    “স্যার,..কলাবাগানের দিকে…” এবার ডান দিকে মোড় । “ধানমন্ডি আট নাম্বারে…

    পাঁচ মিনিট পর বিন্দুটা থেমে গেলো। তারপর বেশ ধীরে ধীরে এগোলো কিছুটা । অবশেষে স্থির হলো একটা জায়গায় এসে।

    নড়েচড়ে বসলো জামান। ভার্চুয়াল মানচিত্রে যে জায়গাটা দেখা যাচ্ছে সেটা অর্কিড ভ্যালি নামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ।

    ‘“স্যার…অর্কিড ভ্যালি…ধানমন্ডি আট…হাউজ নাম্বার ২৩…একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং!” উত্তেজনায় বলে উঠলো সে ।

    জামান ভাবতে লাগলো জেফরি আর বাকি দুজন এখন কোথায়। দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারলে মিলন আর পার পেতে পারবে না।

    অধ্যায় ৪৭

    জেফরি বেগ কান থেকে ইয়ারফোনটা খুলে ফেললো। “ডানে মোড় নাও…আট নাম্বারে।”

    আমান নামে নতুন রিক্রুট হওয়া এক ছেলে গাড়িটা চালাচ্ছে। ড্রাইভিংয়ে বেশ দক্ষতা আছে তার। রমিজ বসে আছে পেছনের সিটে । ফোনে কথা বলছে সে। ড্রাইভারের পাশে জেফরি বেগ। তাদের সবার কাছেই অস্ত্র রয়েছে। মিলনের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে মোকাবেলা করতে যাচ্ছে। এর আগে লোকটা জেফরি আর জামানের সাথে যা করেছে তার পুণরাবৃত্তি যেনো না হয় সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক তারা ।

    “স্যার, ধানমন্ডি থানাকে বলে দিয়েছি ব্যাকআপ টিম রেডি রাখার জন্য, বললো রমিজ লস্কর।

    “গুড।” জেফরির দৃষ্টি রাস্তার সামনে। ডান দিকের সবগুলো বাড়ি লক্ষ্য রাখছে । সন্ধ্যা নেমে গেছে। আলো কমে আসার কারণে চোখ কুচকে দেখতে হচ্ছে বাড়িগুলোর নাম্বার।

    “রাখো,” বললো জেফরি ।

    তাদের গাড়িটা থেমে গেলো রাস্তার বাম পাশে ফুটপাত ঘেষে । রমিজ লস্কর ডান দিকে তাকালো। “কোন্ বাড়িটা, স্যার?”

    “পেছনের তিনটা বাড়ির পর, সবুজ আর সাদা রঙের বিল্ডিংটা,” বললো পেছন ফিরে । ইচ্ছে করেই গাড়িটা রেখেছে অর্কিড ভ্যালি নামের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং থেকে একটু দূরে। মিলন হয়তো জানালা দিয়ে বাইরে নজর রাখতে পারে। সে চায় না মিলন ঘুণাক্ষরেও টের পাক।

    বদমাশটাকে চমকে দিতে হবে, মনে মনে বললো জেফরি বেগ।

    “নামবো, স্যার?” রমিজ লস্কর বললো।

    হাত তুলে রমিজকে অপেক্ষা করতে বলে কানে ইয়ারফোনটা লাগিয়ে নিলো আবার । লাইনটা এখনও চালু আছে। “জামান…কোনো মুভমেন্ট?…আচ্ছা…ওকে…ফাইন ।”

    “অ্যাপার্টমেন্টেই আছে। কোনো মুভমেন্ট নেই,” পেছন ফিরে রমিজকে বললো জেফরি ।

    “ব্যাকআপ টিমকে আসতে বলবো, স্যার?”

    “হুম, ওদেরকে সাদা পোশাকে আসতে বলো। এই বিল্ডিং থেকে বেশ দূরে এসে যেনো রিপোর্ট করে তোমার কাছে।”

    “ওকে, স্যার,” কথাটা বলেই ধানমন্ডি থানায় কল করলো রমিজ লস্কর।

    জেফরি মাথায় একটা সানক্যাপ পরে নিলো। “তোমরা গাড়িতেই থাকো । আমি না বলা পর্যন্ত বের হবে না।”

    আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো সে।

    .

    অর্কিড ভ্যালির পাঁচ তলার ৫-বি ফ্ল্যাটে ঢুকলো মিলন আর পলি । এই ফ্ল্যাটটা এক মহাক্ষমতাধর লোকের । ঢাকা শহরে তার কতোগুলো ফ্ল্যাট আছে সেটা বোধহয় মালিক নিজেও জানে না। অনেকে বলে পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্ল্যাটের মালিক সে। হতে পারে। এটা আর এমন কি । এই লোকের হয়েই সে কাজ করছে। খুবই রোমাঞ্চকর একটি কাজ। ঠিকমতো করতে পারলে তার জীবনটাই পাল্টে যাবে ।

    ধানমণ্ডিতে আসার পথে বত্রিশ নাম্বারের আগে একটা মোড়ে বাইকটা থামায় সে। আগে থেকেই সেখানে দু’জন লোক গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। বাইকটা একজনের কাছে দিয়ে মিলন আর পলি উঠে বসে গাড়িতে। গাড়িটা যে চালাচ্ছিলো সে তাদেরকে সোজা এই ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে।

    অর্কিড ভ্যালিতে ঢোকার সময় দাড়োয়ান তাদেরকে দেখতে পায় নি কারণ গাড়ির কাঁচ কালচে, ভেতরে কে আছে বাইরে থেকে বোঝা যায় না। সেই লোকটা অ্যাপার্টমেন্টের পার্কিংলটে গাড়িটা রেখে ফ্ল্যাট আর গাড়ির চাবি মিলনকে দিয়ে চলে গেছে। গাড়িটা যে কয়দিন দরকার মিলন ব্যবহার করতে পারবে ।

    যার হয়ে কাজ করছে সেই লোকের ক্ষমতার আরেকটি নিদর্শন হলো এসব।

    চাওয়ামাত্র গাড়ি-বাড়ি হাতের তুড়ি বাজিয়ে জোগার করে ফেলে সে ।

    পুরো ফ্ল্যাটটি খালি। মাত্র তিনঘন্টা আগে ফোন করে বলেছিলো থাকার জন্য তার একটি নিরাপদ আশ্রয় আর গাড়ির দরকার । ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এ দুটো জিনিসের ব্যবস্থা করা হয় । জাদুর মতো ব্যাপার।

    একেবারে রেডি ফ্ল্যাট। এমনকি আসবাবপত্র আর বিছানা পর্যন্ত আছে। মিলন অবাক হয়ে ভাবলো, এখানে কারা থাকতো? এতো দ্রুত তারা গেলোই বা কোথায়?

    এসব নিয়ে অবশ্য তার ভাবনার কিছু নেই। তার নিয়োগদাতা তাকে সব ধরণের সহাগীতা করবে, সুরক্ষা দেবে, এরকমই কথা হয়েছে তাদের মধ্যে।

    “এটা কার ফ্ল্যাট?” ভেতরে ঢুকে বললো পলি। কম করে হলেও আঠারো শ’ স্কয়ার ফুটের তো হবেই । সুন্দর করে সাজানো গোছানো ।

    “আপাতত তোমার,” মেইন দরজাটা লক করে পকেটে চাবি রেখে পলির কাঁধে হাত রেখে বললো মিলন।

    “আপাতত?” অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটা ভালো করে দেখে বললো, “ইস আমাদের যদি এরকম একটা ফ্ল্যাট থাকতো!”

    “এটা তোমার পছন্দ হয়েছে?” পলিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো মিলন ।

    স্বামীর বাহু-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ঘুরে তাকালো পলি । “আহা…এমনভাবে বলছো যেনো পছন্দ হলে আমাকে দিয়ে দেবে!”

    “দিতেও তো পারি,” রহস্য করে হেসে বললো সে।

    “সত্যি?” পলি বিস্মিত হয়ে গেলো ।

    মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। “এটা তাহলে তোমার,” কথাটা বলেই পকেট থেকে চাবিটা বের করে পলির হাতে তুলে দিলো। “এখন থেকে তুমিই এর মালিক।”

    “কী বলছো,” চাবিটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে গেলো পলি। “এটা আসলে কার ফ্ল্যাট, বলো তো?”

    “সময় হলে সব বলবো, এখন কিছু জানতে চেয়ো না। মনে করো এই ফ্ল্যাটের মালেকিন এখন তুমি,” পলির গালে আলতো করে টোকা দিলো মিলন।

    “তাহলে ওরা যা বলছে সেটাই সত্যি?”

    “ওরা কি বলছে?”

    “তুমি হোমমিস্টিারের হয়ে কাজ করছো…”

    মিলন চেয়ে রইলো পলির দিকে। কিছু বললো না।

    “কিছু বলছো না কেন?” মাথা নেড়ে সায় দিলো সে ।

    “কাউকে বোলো না। ঠিক আছে?”

    “ওরা আরো বলেছে, তুমি নাকি পাশের ফ্ল্যাটের হাসান সাহেবকেও খুন করেছো…”

    চুপ মেরে থাকলো মিলন।

    “আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না…হোমমিনিস্টার তোমাকে দিয়ে…”

    “এসব নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না তো,” কথাটা বলে পলির হাত ধরে ভেতরের ঘরে নিয়ে গেলো । “অনেক দিন ধরে তোমাকে পাই না…একেবারে পাগল হয়ে আছি।”

    তারা বিশাল একটি বেডরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখন। এক কথায় চমৎকার একটি রুম।

    মিলন আবারো তার বউকে জড়িয়ে ধরে গালে, ঘাড়ে, কানে চুমু খেলো।

    “আমার খুব ভয় হচ্ছে…”

    পলির কথা শুনে থেমে গেলো সে। “পাগল, ভয়ের কিছু নেই। আমরা আগে যে কাজ করতাম তারচেয়ে এই কাজটা অনেক নিরাপদ। আমাদের কিচ্ছু হবে না।”

    “তাহলে পুলিশ কেন-”

    মিলন তার বউয়ের মুখটা চেপে ধরলো। “ওরা আর আমাদের পেছনে লাগবে না। তুমি এ নিয়ে কোনো টেনশন কোরো না…”।

    এবার গাঢ় একটি চুম্বন হলো। প্রায় মিনিটখানেক দীর্ঘ। একে অন্যেকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেলো তারা।

    দম বন্ধ হয়ে এলো পলির। মিলনকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “খেয়ে ফেলবে নাকি?” তারপরই হেসে বললো, “দাঁড়াও।” পায়ের জুতোটা খুলে কাঁধের ভ্যানিটি ব্যাগটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললো সে।

    মিলন খপ করে জড়িয়ে ধরলো পলিকে। এবার চুমু না খেয়ে কোলে তুলে নিলো। হেসে ফেললো পলি। সোজা বিছানায় নিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো বউয়ের উপর । পাগলের মতো আদর করতে লাগলো তাকে। একটানে খুলে ফেললো শাড়িটা।

    পলি নিজেই ব্লাউজটা খুলে ফেললো এবার। সে জানে, তা না হলে একটু পর মিলন পাগল হয়ে গেলে তার ব্লাউজটা আর আস্ত থাকবে না।

    কয়েক মিনিট পরই পলি গোঙাতে লাগলো।

    অধ্যায় ৪৮

    অর্কিড ভ্যালির পার্কিংলটে দাঁড়িয়ে আছে জেফরি বেগ । প্রায় আট-নয়টা গাড়ি আছে এখানে। দাড়োয়ান বলছে গত দশ মিনিটে দুটো গাড়ি ঢুকেছে। কোনো মোটরসাইকেল ঢোকে নি।

    কোনো মোটরসাইকেল ঢোকে নি! অবাক হলো জেফরি । মিলন এখানে কিভাবে ঢুকেছে সেটা বুঝতে পারলো না। তবে, এই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়েই যে মিলন আছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত। জিপিএস ডিভাইস এটা জানাচ্ছে।

    গাড়িতে এক জোড়া নারী-পুরুষকে বের হতে দেখেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে দাড়োয়ান নেতিবাচক জবাব দিলো । গাড়ি থেকে কারা নেমেছে সেটা সে খেয়াল করে নি ।

    দাড়োয়ান জানিয়েছে, এই অ্যাপার্টমেন্টে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে । একটা আর্কিটেক্টচারাল হাউজ, একটা অ্যাডফার্ম আর দুটো কনসালটিং ফার্ম । প্রচুর লোকজন যাওয়া আসা করে সেসব প্রতিষ্ঠানে। অন্যসব অ্যাপার্টমেন্টের মতো এখানে রেজিস্ট্রি বইয়ে নাম স্বাক্ষর করে ঢোকার নিয়ম নেই।

    পুলিশের লোক পরিচয় দেয়ার পর থেকে দাড়োয়ান তার দিকে চোরা চোখে বার বার তাকাচ্ছে ।

    জেফরি একটু ভাবলো। পলির ভ্যানিটি ব্যাগে যে জিপিএস ডিভাইসটি আছে সেটা দিয়ে বোঝা যাবে না এখন ঠিক কতো তলার ফ্ল্যাটে আছে ওরা। কমিউনিকেশন্স রুমে জামান শুধু হরাইজন্টাল লোকেশন দেখতে পাচ্ছে । ভার্টিক্যাল লোকেশন ইন্ডিকেট করতে পারে না এই ডিভাইসটি। তাদের ভার্চুয়াল ম্যাপে পথঘাট আর রেসিডেন্সিয়াল অবস্থানগুলোর বিবরণ থাকলেও নির্দিষ্ট কোনো অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ভেতরকার আউটলেট দেয়া নেই। সুতরাং এই ছয় তলার অ্যাপার্টমেন্টটির পাঁচটি ফ্লোরের দশটি ফ্ল্যাটের যেকোনো একটিতে মিলন আর পলি আছে।

    “স্যার…” জেফরির ব্লুটুথ ইয়ারফোনে জামানের কণ্ঠটা বলে উঠলো। “কোনো মুভমেন্ট নেই…”

    “গুড ।” বললো জেফরি । লাইনটা কেটে দিয়ে রমিজকে কল করলো। “কি খবর?…ব্যাকআপ টিম এসেছে?”

    রমিজ জানালো তাদের সাথে কথা হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যে তারা এসে পড়বে । এলেই তাকে জানাবে।

    পার্কিংলটের চারপাশটা ভালো করে দেখে নিলো। একটা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে গেছে। মিলনের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে ধরতে গেলে গোলাগুলি হবার সম্ভাবনা একশ’ ভাগ। বুঝতে পারছে না কিভাবে কাজটা করলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।

    যদি জানতো ঠিক কোন ফ্ল্যাটে মিলন আছে, তাহলে কাজটা খুব সহজ হয়ে যেতো। দলবল নিয়ে ঝটিকা হামলা চালাতো । মিলন গোলাগুলি করলেও একা এতোগুলো মানুষের সাথে পেরে উঠতো না। কিছুক্ষনের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করতো নয়তো গুলি খেয়ে মরতো ।

    কিন্তু দশটা ফ্ল্যাটের মধ্যে মিলন কোটাতে আছে?

    ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিতে পারে সে। দাড়োয়ান লোকটা বলেছে দুই আর তিন তলায় কোনো ফ্যামিলি থাকে না । ওখানেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস।

    ঠিক আছে, বাকি থাকে চার, পাঁচ আর ছয় তলা । তিনটি ফ্লোরে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট। এই ছয়টির মধ্যে যেকোনো একটিতে মিলন আছে।

    ছয় সংখ্যাটি শুনতে অনেক কম মনে হলেও এক্ষেত্রে বিরাট একটি সংখ্যা। এটা যদি দুই বা তিন হতো জেফরি খুব সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু এখন কাজটা কঠিন হয়ে গেছে তার জন্য।

    কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়, মনে মনে বললো জেফরি বেগ।

    .

    দারুণ একটা সঙ্গমের পর মিলন চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, তার বুকে মাথা রেখে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে পলি।

    “ওরা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি তো?”

    “না, পলি বললো । “ওদেরকে আমার পুলিশ বলেই মনে হয় নি।”

    “তাই নাকি,” মুচকি হেসে বললো মিলন। “তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো নাকি?”

    “যা, কী যে বলো না,” কপট অভিমানের সুরে বললো পলি । হেসে ফেললো মিলন। “ওরা আসলেই খুব ভালো ব্যবহার করেছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম…পরে দেখি, না…লোকগুলো বেশ ভালো।”

    এক বাহুর উপর ভর দিয়ে একটু মাথা তুলে মিলনের চোখে চোখ রাখলো পলি। “জানো, আমার ভ্যানিটি ব্যাগে যা যা ছিলো সবই আছে। কোনো কিছু খোয়া যায় নি। আজব না?”

    মিলন ছাদের দিকে চেয়ে ছিলো, পলির কথাটা শুনে তার দিকে তাকালো।

    “এর আগেরবার পুলিশ যখন ধরেছিলো…ঐ যে, ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লাম যখন…তখন তো আমার ব্যাগে দশ হাজার টাকা ছিলো…একটা টাকাও ফেরত পাই নি। এইবার ওরা যখন ব্যাগটা ফেরত দিলো ভেবেছিলাম টাকা-পয়সা কিছু থাকবে না। কিন্তু একটা জিনিসও এদিকওদিক হয় নি।”

    উঠে বসলো মিলন। তার চোখেমুখে অন্য রকম এক অভিব্যক্তি। “ওরা তোমার ব্যাগ নিয়েছিলো?”

    পলির ভ্যানিটি ব্যাগের কথা মনেই ছিলো না তার। ব্যাগটা বেশ ছোটো, তাছাড়া পলির শাড়ির রঙের সাথে ম্যাচ করা বলে ওটা তার চোখেই পড়ে নি ।

    অবাক হলো পলি । সেও উঠে বসলো। “আমাকে ধরার পর ব্যাগটা ওরা চেক করেছে না?…তারপর ছেড়ে দেবার সময় ফেরত দিয়ে দিয়েছে…”

    তার মানে ব্যাগটা ওদের কাছে ছিলো?” মিলনের চোখেমুখে অজ্ঞাত ভীতি ।

    “হ্যাঁ। ছেড়ে দেবার সময় আমার কাছে ফেরত দিয়েছে।” পলি বুঝতে পারছে না মিলন কেন এসব জানতে চাইছে।

    “ব্যাগটা কোথায়?” ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাড়া দিয়ে বললো মিলন।

    পলি আবারো অবাক হলো। একটু আগেই তো বিছানার উপরে রেখেছিলো কিন্তু এখন সেটা নেই! এদিক ওদিক তাকালো সে।

    “ব্যাগটা কোথায়?” মিলন তাড়া দিলো।

    “বিছানার উপরেই তো রেখেছিলাম!”

    মিলনও তাকালো বিছানার আশেপাশে। পলির শাড়ি, ব্লাউজ আর ব্রাটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কিন্তু ব্যাগটা নেই।

    আশ্চর্য! ব্যাগটা গেলো কোথায়?

    অধ্যায় ৪৯

    ব্যাকআপ টিম আসতে এতো দেরি করছে কেন? অস্থির হয়ে অর্কিড ভ্যালির পার্কিংলট থেকে বের হয়ে এলো জেফরি বেগ । মেইনগেটের বাইরে এসে দেখতে পেলো ডান দিকের রাস্তার ওপারে, একটু দূরে তাদের গাড়িটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে । রমিজকে ফোন না করে সোজা চলে এলো সেখানে।

    রমিজ এখন বসে আছে সামনের সিটে। ড্রাইভার ছেলেটা স্টিয়ারিংয়ের উপর হাত দিয়ে চাপড় মেরে তাল ঠুকছে । অল্পবয়সী ছেলে, উত্তেজনায় অস্থির হয়ে উঠেছে।

    জেফরিকে জানালার কাছে দেখে রমিজ বললো, “স্যার?”

    “ব্যাকআপ টিমের কি খবর? ওরা এতো দেরি করছে কেন?”

    “জ্যামে আটকা পড়েছে…ধানমণ্ডিতে এখন বেশ জ্যাম থাকে, স্যার।”

    কথাটা সত্যি। ধানমণ্ডি এখন আর আগের ধানমণ্ডি নেই। শতশত স্কুল, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভরে গেছে। সেইসাথে আছে রেস্টুরেন্ট আর ফাস্টফুডের দোকান।

    “ওদের সাথে লাস্ট কন্ট্যাক্ট কখন হয়েছে?”

    “এই তো দু’এক মিনিট আগে…বললো জ্যামে আটকে আছে। চিন্তা করবেন না, স্যার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বে।”

    .

    কমিউনিকেশন্স রুমে বসে আছে জামান। লাল বিন্দুটা অনেকক্ষণ ধরেই স্থির হয়ে আছে। একটু আগেও তার বস জেফরি বেগকে সে জানিয়েছে কোনো মুভমেন্ট নেই।

    জামান আশা করছে অ্যাকশন শুরু হবার আগে এটা আর মুভ করবে না। সে জানে তার বস স্থানীয় থানার ব্যাকআপ টিম নিয়ে মিলনকে ঘিরে ফেলবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এবার মিলনের আর রক্ষা নেই।

    চুইংগামটা মুখ থেকে ফেলে দিলো পাশের বাস্কেটে। চোয়াল ব্যথা করছে। এক কাপ চা খেতে পারলে ভালো হতো। ইন্টারকম তুলে চায়ের অর্ডার দিয়ে দিলো সে।

    জামান মনে করছে, তার বস মিলনকে এবার কোনো সুযোগ দেবে না । জামানের পায়ে গুলি করেছে সে, তার বসের বুকেও গুলি চালিয়েছিলো, ভাগ্য সহায় না থাকলে ওই গুলিতেই প্রাণ হারাতো তার আইডল। সে জানে, ভেতরে ভেতরে জেফরি বেগ কতোটা ক্ষেপে আছে। এবার আর মিলন রক্ষা পাবে না।

    নো চান্স, মনে মনে বললো সে ।

    আরদার্লি এসে চা দিয়ে গেলে কাপটা তুলে একটা চুমুক দিলো । বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে । চা’টাও দারুণ হয়েছে । আরো কয়েকটা চুমুক দিলো দ্রুত।

    ঠিক তখনই বিপ বিপ শব্দ হলে চমকে উঠলো জামান। আরেকটুর জন্যে হাত থেকে কাপটা পড়েই যেতো। মনিটরের দিকে তাকিয়ে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। অসম্ভব!

    ডেস্কের উপর কাপটা রেখে ইয়ারফোনটা লাগিয়ে নিলো কানে।

    লাল বিন্দুটা এতোক্ষণ ধরে অর্কিড ভ্যালি নামক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ছিলো, এখন সেটা পাশের একটি ভবনে!

    মিলন লাফ দিয়ে পাশের ভবনে চলে গেছে?

    দ্রুত কল করলো সে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }