Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প322 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪০. জায়েদ রেহমানের বই

    অধ্যায় ৪০

    জায়েদ রেহমানের পাঁচ শ পৃষ্ঠার বইটি বিতর্কের ঝড় তুলেছে। এমন সব কথা লেখক স্বীকার করে গেছেন যা সব ধরণের পাঠককেই আগ্রহী করে তুলেছে ব্যাপকভাবে।

    শুধু যে নারীঘটিত কেলেংকারীর ঘটনাগুলোই তিনি অকপটে বলে গেছেন তা নয়, নিজের জীবনে এমন কোনো বিষয় নেই যে পাঠককে জানাননি তিনি। এমন কি বিশ্বসাহিত্যের কোন্ লেখকের কোন্ লেখা নকল করেছেন সেসবের বিস্তারিত ফিরিস্তিও দিয়ে গেছেন অবলীলায়।

    আর এসব কিছু পড়ে শুধুমাত্র নির্মল প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী কুদরত সাহেবই নয় বরং অনেক পাঠকের মনেও প্রশ্ন জাগছে, এই বই কি সত্যিই জায়েদ রেহমান লিখেছেন?

    নিজের সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র নীলকণ্ঠ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা না কি তিনি আশির দশকে জনপ্রিয় আমেরিকান টিভি সিরিজ হাইওয়ে টু হ্যাঁভেন থেকে নিয়েছেন। যেখানে মূল চরিত্রটি বেশ রহস্যময় আর অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, কিছুই করে না, পথে পথে ঘুরে বেড়ায় একটা হ্যাঁভারসেক নিয়ে। সব সময় একটি পোশাকই পরে থাকে সে : রঙচটা জিন্সপ্যান্ট আর লেদার জ্যাকেট।

    এই পথ চলতে গিয়ে বিচিত্র সব মানুষের সাথে তার পরিচয় হয়। সেইসব মানুষের সাথে গড়ে তোলে সখ্যতা, হয়ে ওঠে তাদেরই একজন, তারপর সেইসব মানুষের জীবনে বিশাল কোনো সমস্যার সমাধান অলৌকিক উপায়ে সমাধান করে সবার অগোচরে উধাও হয়ে যায়। শুরু করে আবার নতুন আরেকটি অভিযাত্রা।

    ঠিক যেন জায়েদ রেহমানের রহস্যময় চরিত্র নীলকণ্ঠের মতো!

    এই চরিত্রটি এ দেশে ভীষণ জনপ্রিয়। এতোটাই জনপ্রিয় যে তরুণদের মধ্যে বিশাল একটি দল নিজেদেরকে রহস্যমানব নীলকণ্ঠ বলে দাবি করে কিংবা সেরকম ভাবতে ভালোবাসে।

    সবচাইতে বিস্ময়কর তথ্য হলো লেখক জায়েদ রেহমান তার লেখায় সব সময় দেশপ্রেম আর ন্যায়নীতির কথা বললেও কথা নামের আত্মজীবনীতে নিদ্বিধায় স্বীকার করেছেন প্রতি বছর আয়কর হিসেবে তিনি বিরাট রকমের ফাঁকি দিতেন সরকারকে।

    বছরে যে লোকের আয় কোটি টাকার উপরে তিনি কি না আয়কর দিতেন মাত্র কয়েক হাজার টাকা। একটা বই থেকে যদি দশ লক্ষ টাকা পেতেন তাহলে সরকারী হিসেবে সেটাকে মাত্র দশ-পনেরো হাজার টাকা। দেখাতেন।

    কথা নামক বইয়ের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক অবশ্যই লেখকের নারীঘটিত কাহিনীগুলো। এতো খোলামেলা বর্ণনা রয়েছে যে অনেকের ভুরু কপালে গিয়ে ঠেকছে।

    জায়েদ রেহমানের নিজের স্বীকারোক্তিতে যতো নারীর (তার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে কিশোরী বলাই সঙ্গত) কথা এসেছে তার খুব কম অংশই জনসাধারণ জানতো। তালিকাটি এতো বড় যে এক জায়গায় লেখক নিজেই। স্বীকার করেছেন অনেকের নামই না কি তিনি ভুলে গেছেন!

    অল্প বয়সি মেয়েদের ব্যাপারে বরাবরই তার আগ্রহ ছিল। অনেক মেয়েকে তিনি তার নাটক আর ছবিতে অভিনয় করার আশ্বাস দেখিয়ে নিজের বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভোগ করেছেন।

    পুরো বইটি পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছে এটা জায়েদ রেহমানের আত্মজীবনী নয়, নয় এটা হলো তার আত্মবিধ্বংসী কাজ।

    তবে নিজের সুনাম বিনাশ করার পাশাপাশি আরেকজনের ভাবমূর্তিও প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন তিনি-তার দ্বিতীয় স্ত্রী বর্ষার।

    ছোট মেয়ের বান্ধবী বর্ষার সাথে তার সম্পর্কের খেসারত দিতে গিয়ে লেখককে তার পরিবার আর সন্তানদের পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয়েছে অথচ আত্মজীবনীতে সেই মেয়ে সম্পর্কে এমন সব কথা বলেছেন তিনি যা কি না তার নিন্দুকেরা বললইে বেশি মানাতো।

    হু হু করে বইটি বিক্রি হচ্ছে। কুদরত সাহেব আদালত থেকে কোনো ডিক্রি পাওয়ার আগেই নিঃশেষ হয়ে গেছে এক লক্ষ কপি। ফুলেফেঁপে উঠেছে অবয়ব প্রকাশনীর ব্যবসা। জেফরির সহকারী জামান জানতে পেরেছে। লেখকের প্রথম স্ত্রী, যার নামে বইটির সত্ত্ব দিয়ে গেছেন জায়েদ সাহেব, তিনি ইতিমধ্যেই ষাটলক্ষ টাকা পেয়েছেন রয়্যালটি বাবদ।

    টাকার এই অঙ্কের কথা শুনে জেফরির মনে সন্দেহটা আরো বেড়ে গেল। তার আশঙ্কা পেশাদার কাউকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে থাকবে লাভবান হওয়া এইসব লোকজন। কিন্তু ভাবনাটা যতো সহজ প্রমাণ করাটা ততো সহজ হবে না।

    আরেকটা বিষয় রয়েছে বইটিতে : লেখক জায়েদ রেহমান তার কিছু শত্রুর কথা ব্যক্ত করেছেন।

    পমি নামের এক উঠতি অভিনেত্রী, যাকে লেখক তার একটি ছবিতে নিয়েছিলেন, কিন্তু মেয়েটি ছবির মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে অজ্ঞাত এক কারণে ছবিটা ছেড়ে দেয়। লেখক স্বীকার করেছেন সেই অভিনেত্রীকে তিনি বাজে প্রস্তাব দেয়াতে মেয়েটি ক্ষেপে গিয়ে লেখকের সাথে দুর্ব্যবহার করে। বইতে নিজের আচরণের জন্য জায়েদ রেহমান অবশ্য ক্ষমা চেয়েছে সেই অভিনেত্রীর কাছে।

    এ রকম আশঙ্কা তিনি আরো দু’জনের কাছ থেকে করেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী বর্ষা আর তার গোপন প্রেমিক।

    বর্ষার একজন প্রেমিকের কথাও তিনি ইঙ্গিত করেছেন তবে স্পষ্ট করে নাম বলেননি। জীবনের শেষ দিনগুলো এই আশঙ্কাই তিনি করতেন যে, তার খুব কাছের লোকজন তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।

    অবিশ্বাস্য ব্যাপার!

    পুরো দেশ এই বইয়ের আলোচনায় মুখর। অনেকের মনেই প্রশ্ন, জায়েদ রেহমানের কি মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল?

    আবার অনেকে মনে করছে শেষ দিনগুলোতে এসে লেখক নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন। এ কথাটা অবশ্য জায়েদ রেহমান নিজেও তার বইয়ে বার বার বলেছেন।

    .

    অধ্যায় ৪১

    জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী বর্ষা জামিনে মুক্তি পেয়ে গেল। দু’বছরের এক শিশুসন্তান থাকার কারণে আদালত ভদ্রমহিলাকে জামিন দেন। এজন্যে অবশ্য নির্মল প্রকাশনীর কুদরত সাহেবকে দেশের নাম করা এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেয়া এক ব্যারিস্টারের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।

    তবে মিসেস রেহমানের প্রেমিক আলম শফিককে আদালত জামিন দেয়নি।

    খবরটা শুনে জেফরি বেগ একটুও অবাক হলো না। তার ভাবনায় এখন মিসেস রেহমান আর আলম শফিক নেই। লেখক জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে সে একেবারে প্রথম থেকে তদন্ত শুরু করতে চাইছে।

    ইতিমধ্যেই তার কাছে যে সব তথ্য রয়েছে তাতে করে পুরো মামলাটি নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে তাকে।

    তার সহকারী জামান ভিটা নুভায় যে সেলফোন কোম্পানির টাওয়ার আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে ঐ দিন তাদের কোনো মেইনটেনান্স কু ভিটা নুভায় যায়নি। মোট তিনজন ক্রু ঐ এলাকার টাওয়ারগুলো দেখাশোনা করে, তাদের কেউই লেখক খুন হবার অন্তত এক সপ্তাহ আগে ভিটা নুভায় যায়নি।

    তার মানে দাঁড়াল এক অজ্ঞাত যুবক সুকৌশলে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে মেইটেনান্স ক্রু সেজে ভিটা নুভায় ঢুকে পড়েছিল। সম্ভবত সেই যুবকই ভোরবেলায় ফজরের আজানের পর পর হানিফ সাহেবের পেছন পেছন অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে যায়।

    অজ্ঞাত সেই যুবক যে পেশাদার একজন সে ব্যাপারে জেফরির মনে কোনো সংশয় নেই। ভিটা নুভায় কখন মোবাইল ফোন কোম্পানির মেইনটেনান্স ক্রু আসে, কখন দারোয়ানদের বদলি হয়, সবই জানতো সে। আর এটা জানার জন্যে দীর্ঘদিন তাকে ভিটা নুভার সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে।

    কিন্তু কিভাবে?

    এই প্রশ্নের জবাব জানতে আবারো চলে এল ভিটা নুভায়। তবে এবার আর তার সঙ্গে জামান নেই।

    ভিটা নুভার গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান মহব্বত তাকে দেখে সালাম দিল। ছেলেটা ভয়ে ভয়ে আছে আবার বুঝি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাকে। কিন্তু জেফরি তাকে কিছু না বলে ভিটা নুভার চারপাশটা ভালো করে দেখতে শুরু করল।

    দুপুর বেলা। রাস্তাটা প্রায় ফাঁকা। ভিটা নুভা ধানমণ্ডির একটি নিরিবিলি রাস্তার কর্নার প্লটে অবস্থিত। এর দু’পাশ দিয়ে অর্থাৎ দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। পেছনে, উত্তর দিকে ধানমণ্ডি লেক। শুধুমাত্র পূর্ব দিকে আরেকটা অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। সেই অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে জায়েদ সাহেবের ফ্ল্যাট এবং ভিটা নুভার প্রধান প্রবেশপথটি দেখা যায় না সুতরাং সেখান থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।

    তাহলে?

    ভিটা নুভার প্রধান প্রবেশ পথের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপারে তাকাতেই বিশাল একটি খেলার মাঠ চোখে পড়ল তার। কোনো বাড়িঘর নেই। তবে ওখানেই একটা সম্ভাবনা দেখতে পেল ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ।

    রাস্তা পার হয়ে চলে এল ভিটা নুভার ঠিক বিপরীত দিকে ফুটপাতে।

    ইন্সপেক্টর এলাহী নেওয়াজ এখান থেকেই আরেক অজ্ঞাত যুবককে সন্দেহজনকভাবে জায়েদ রেহমানের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিল। জেফরির মনোযোগ গেল ফুটপাতের পাশেই ছোট্ট একটি চায়ের টংয়ের দিকে।

    টংয়ের দু পাশে দুটো কাঠের বেঞ্চি বসানো। দুটোই ফাঁকা, কোনো খদ্দের নেই। দোকানি অলস ভঙ্গিতে বসে বসে রেডিও শুনছে। বেগকে। আসতে দেখে সম্ভাব্য ক্রেতা ভেবে একটু নড়েচড়ে বসল।

    একটা বেঞ্চিতে বসল জেফরি বেগ। “এক কাপ চা দিন, চিনি কম,” দোকানিকে বলল সে।

    চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল লোকটা।

    একটু সময় পার হলে বলল, “কতো দিন ধরে আছেন এখানে?”

    “এক বছর তো অইবোই,” চা বানাতে বানাতে জবাব দিল লোকটা।

    “সকাল ক’টা থেকে দোকান খুলেন?”

    “আটটার দিকে,” কাপে চিনি মিশিয়ে চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল দোকানি। “আর বন্ধ করি…এই ধরেন, রাইত দশটা-এগারোটার দিকে।”

    জেফরির দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিলে সেটা হাতে নিয়ে সে বলল, “এই চা বিক্রি করে আপনার চলে?”

    লোকটা মলিন হাসি দিল। “চলে আর কি…গরীব মানুষ…কোনোরকম খায়া-পইড়া বাঁচি।”

    “আপনার নাম কি?”

    “তালেবর মিয়া।” দোকানি এতোসব প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছে না। এখানে অনেক ক্রেতাই চা খেতে খেতে এ রকম টুকটাক আলাপ করে তার সাথে। খুব একটা ভিড় না থাকলে তারও কথা বলতে ভালো লাগে।

    চায়ে চুমুক দিয়ে জেফরি এমন একটা ভাব করল যেন খুব ভালো স্বাদ পেয়েছে। আপনার চা তো খুব ভালো…”

    দোকানির চোখ খুশিতে চক চক করে উঠল। “চ্যাষ্টা করি ভালো কইরা বানাইতে।”

    “এই নিরিবিলি এলাকায় কাস্টমার কি খুব একটা আসে?”

    “দিনের বেলায় বেশি কাস্টমার আসে না, তয় সন্ধ্যার পর অনেক আসে।” মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার বলতে লাগল সে। “ডাইলখোর পোলাপান…”

    তার কথা শুনে হেসে ফেলল জেফরি। “আচ্ছা।”

    “এতো চিনি খাইবার পারে এরা…চিনি খাইলে না কি নেশা ধরে।”

    “শুধু ডাইলখোররাই আসে?”

    “না, অনেকেই আসে…তয় ডাইলখোরের সংখ্যাই বেশি।”

    “আচ্ছা, আপনার এখানে নিয়মিত আসতো কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে আর আসে না এ রকম কোনো কাস্টমার আছে কি?”

    এবার লোকটা জেফরির দিকে চেয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে এ লোক খামোখাই তার সাথে আড্ডা জমানোর চেষ্টা করছে না। আপনি কে? এইসব জানতে চাইতাছেন ক্যান?” সন্দেহের সুরে বলল দোকানি।

    জেফরি মুচকি হেসে বলল, “কেন জানতে চাইছি তার কারণ আছে। যা জানতে চাইছি বলুন।”

    লোকটা জেফরির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো। “আপনি কি পুলিশের লোক?” ভয়ে ভয়ে জানতে চাইল সে।

    মুচকি হেসে জেফরি মাথা নেড়ে সায় দিল। “আপনার চা’টা খুব ভালো। আমি এখানে প্রায়ই আসবো, আপনার চাও খাবো। আপনি আমাকে সাহায্য করলে আপনার লাভ হবে।”

    তালেবর মিয়া চুপচাপ শুনে গেল, কিছু বলল না।

    “আপনার এখানে কয়েক দিন আগে রোজ রোজ আসতো, এখানে বসে বসে চা খেতো, এখন আর আসে না, সেরকম একজনের কথা জানতে চাইছি আমি।”

    “সে কি করছে?” আস্তে করে জানতে চাইল দোকানি। বেগ মুচকি হেসে বলল, “এ রকম একজন তো আসতো, তাই না?”

    “তা আসতো…তয় ঐ বাড়িতে লেখক খুন অইবার পর থেইকা আর আসে না,” ভিটা নুভার দিকে ইঙ্গিত করে বলল সে।

    “আচ্ছা,” বলল বেগ। “কতো দিন আগে থেকে আসতো?”

    “উমমম…এই ধরেন এক মাস ধইরা…”

    “লোকটা দেখতে কেমন?”

    “অনেক সুন্দর…আপনার মতোই…”

    জেফরি একটু চমকে উঠল। এ নিয়ে দু’জন এ কথা বলল তাকে। বয়স কি রকম হবে?”

    “আপনার বয়সিই অইবো…ছোটও অইবার পারে।”

    “লোকটা কখন আসতো এখানে?”

    “ঠিক নাই। সকাল, বিকাল, রাইত সব সময়ই আসতো।”

    “কি করতো?”

    “চা খাইতো আর পেপার পড়তো। খুব বেশি কথা কইতো না।”

    “ঐ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতো?” ভিটা নুভা দেখিয়ে বলল জেফরি।

    “হ।”

    “লোকটা কোথায় থাকতো, জানেন?”

    “না। মনে হয় নতুন ভাড়া আইছিল…কিন্তু কুন বাড়িতে থাকতো কইবার পারুম না।”

    “লোকটাকে যদি আবার দেখেন চিনতে পারবেন?”

    “মনে হয় পারুম।”

    “তাকে যদি কখনও আবার দেখেন আমাকে জানাবেন।” কথাটা বলেই জেফরি তার একটা ভিজিটিং কার্ড বের করল। “লেখাপড়া জানেন?”

    দাঁত বের করে হেসে বলল দোকানি, “হ, জানি। তিন কেলাশ পর্যন্ত পড়ছিলাম।”

    “ভালো। ঐ লোকটাকে যখনই দেখতে পাবেন সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। আপনাকে অনেক বখশিস দেবো।”

    লোকটার দিকে কার্ডটা বাড়িয়ে দিলে সেটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে সে বলল, “স্যার, ঐ লেখকের খুনের ব্যাপার,?”

    জেফরি একটু ভেবে বলল, “হুমমম। কিন্তু কারোর সাথে এ নিয়ে আলাপ করবেন না। ঠিক আছে, তালেবর মিয়া?”

    “ঠিক আছে, স্যার। ঐ লোকটারে দেখলেই আমি আপনারে ফোন কইরা খবর দিমু। আমার নিজের মোবাইল আছে।”

    জেফরি একটু অবাক হবার ভান করল। “তাই না কি। তাহলে তো ভালোই হলো। আপনার মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দিন।”

    দোকানি তাকে তার মোবাইল নাম্বারটা বললে জেফরি সেটা নিজের সেলফোনে রেকর্ড করে রাখতে যাবে অমনি ফোনটা বিপ্ করে উঠল।

    ইনকমিং মেসেজের বিপ্। মেসেজটা ওপেন করল সে।

    এবার ইংরেজি বর্ণে বাংলা এসএমএস :

    কেমন আছো?

    একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল তার ভেতর থেকে। বুঝতে পারছে। তারচেয়ে রেবার কষ্টটাও কম নয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাদের নিয়তি নির্ধারিত হয়ে গেছে। আর সেই নিয়তি মেনে নিতে তাদের দু’জনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে।

    রেবাকে হারানোটা খুব সহজ কিছু নয়। এই হারানোর ব্যাপারটা ভেতরে ভেতরে তাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

    রেবা এখন কি করছে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে জেফরির। নববিবাহিত একটি মেয়ে তার প্রেমিকের জন্য দিনরাত মনোকষ্টে ভুগছে আবার নতুন সংসারে গিয়ে তাকে মানিয়েও চলতে হচ্ছে-জেফরির চেয়ে রেবার কষ্টটা যে আরো বেশি, এটা সে বোঝে।

    “স্যার?”

    তালেবর মিয়ার কথায় সম্বিত ফিরে পেল বেগ।

    “কি?”

    “নাম্বারটা নিলেন না যে?”

    বুঝতে পারল না বেগ। “কিসের নাম্বার?”

    “আমার মোবাইল ফোনের!” অবাক হয়ে বলল তালেবর মিয়া।

    “ও,” বুঝতে পারল সে। “হ্যাঁ, বলো…”

    তালেবর মিয়া তার নাম্বারটা বলে গেল আবার।

    .

    অধ্যায় ৪২

    মিসেস রেহমান জামিন নিয়ে বের হয়ে এলেও ভিটা নুভার নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেনি। ওটা এখনও পুলিশ সিজ করে রেখেছে। দু’বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে সোজা মায়ের বাড়িতে উঠেছে বর্ষা।

    সাত দিনের দুর্বিষহ স্মৃতি আর সারা দেশের মিডিয়ায় তার সম্পর্কে যে সব মুখরোচক কথাবার্তা প্রচার হচ্ছে তারচেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে অন্য আরেকটি বিষয় : জায়েদ রেহমানের আত্মজীবনী কথা।

    সে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না এ বই জায়েদ রেহমান লিখেছে। নির্মল প্রকাশনীর কুদরত সাহেব অবয়ব প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটির এক কপি পাঠিয়ে দিয়েছে তার কাছে। অনেকটুকু পড়ে ফেলার পর মিসেস রেহমান নিশ্চিত বইটি জায়েদ রেহমানের কথা নয়, এটি অন্য কারোর কথা!

    এক বছর আগে ওপেনহার্ট সার্জারির পর থেকেই জায়েদ রেহমান একটা আশঙ্কায় ভুগতেন, তিনি বুঝি যেকোনো সময় মারা যাবেন। তারপরই সিদ্ধান্ত নেন আত্মজীবনী লিখবেন। আস্তে আস্তে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তিনি এটা লিখতে শুরু করেন আজ থেকে প্রায় সাত আটমাস আগে-আরেকটা মারাত্মক স্ট্রোকের পর যখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লেন।

    মিসেস রেহমান মাঝেঝমধ্যে ল্যাপটপ থেকে সেই লেখাগুলো পড়ে দেখেছে কিন্তু কথা নামের যে বইটি এখন তার সামনে আছে সেটার সাথে অনেক জায়গারই কোনো মিল নেই। এটাই তাকে বিস্মিত করছে। বইটি যদি বানোয়াট হোতো তাহলে কিছু বিষয়ে মিল আর কিছু বিষয়ে অমিল থাকতো না। প্রথম দিকে লেখক নিজের শৈশব আর লেখালেখির জগতে কিভাবে এলেন এসব বিষয় ঠিকই আছে কিন্তু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া বিতর্কিত ঘটনাগুলো আর অকপটে স্বীকার করার ব্যাপারটি একদমই বানোয়াট বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। জায়েদ রেহমানকে সে ভালো করেই চেনে। নিজের সম্পর্কে এমন কথা কখনই খিতে পারবে না। সব সময় নিজেকে যে লোক নিষ্পপ, রহস্যময় আর সাধুপুরুষদের মতো করে

    উপস্থাপন করতে অভ্যস্ত সে এমন কাজ করতে পারে না।

    জায়েদ রেহমানকে তো আর তারচেয়ে বেশি কেউ চেনে না।

    পরক্ষণেই আরেকজনের কথা মনে পড়ে গেল তার।

    না।

    তারচেয়ে বেশি চেনে এ রকম আরেকজন আছে।

    গ্যাট।

    দীর্ঘ সাতাশ বছরের সম্পর্ক সেই মহিলার সাথে। সেদিক থেকে বর্ষার সাথে লেখকের সম্পর্কের বয়স টেনেটুনে পাঁচ বছর। বর্ষার ধারণা জায়েদ রেহমানের প্রথম স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। মহিলা অনেক দিন থেকেই প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ছিল।

    জায়েদ রেহমানের সাথে গ্যাটের ডিভোর্সের পর থেকেই মহিলা সব সময় বর্ষার বিরুদ্ধে যা-তা বলে বেড়াতো। কয়েকবার প্রকাশ্যে হুমকিও দিয়েছিল সে।

    তাদের দুজনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় আজ থেকে চার বছর আগে, যখন জায়েদ রেহমান গ্যাটকে ছেড়ে এই ভিটা নুভায় এসে থাকতে শুরু করেন বর্ষার সাথে। তখনও তাদের বিয়ে কিংবা গ্যাটের সাথে জায়েদ রেহমানের ডিভোর্স হয়নি।

    এক দিনের ঘটনা বর্ষা কখনও ভুলবে না। সেই লাঞ্ছনার কথা কখনও ভোলা সম্ভবও নয়।

    সন্ধ্যার দিকে প্রচুর মদ পান করে জায়েদ রেহমান লিখতে বসলে বর্ষা ঘরের কী যেন টুকটাক কাজ করছিল। এ সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলে কাজের মেয়েটা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই গ্যাট চিৎকার করে গালাগালি করতে করতে ঢুকে পড়ে তাদের ফ্ল্যাটে। হৈচৈ শুনে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়াতেই প্রচণ্ডক্ষিপ্ত আর উদভ্রান্তের মতো গ্যাটের মুখোমুখি হয় বর্ষা।

    “খানকি! বাপের বয়সি একজনের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে লজ্জা করে না!” বলেই বর্ষার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্যাট।

    চড়থাপড় আর কিলঘুষি চালাতে থাকে সমানে। চুল ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলে বর্ষাকে। মহিলার সাথে কোনোভাবেই পেরে ওঠেনি সে। কাজের মেয়েটা এই অবস্থা দেখে দৌড়ে গিয়ে জায়েদ রেহমানকে খবর দিলে তিনিও ছুটে আসেন ড্রইংরুমে কিন্তু মদ্যপ থাকার কারণে গ্যাটের হাত থেকে বর্ষাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন লেখক। নিজের লুঙ্গির গিট খুলে গেলে অনেকটা অর্ধনগ্ন লেখক অসহায় হয়ে পড়েন, সেই সুযোগে গ্যাট তাকেও বেশ কয়েকটা চড়-লাথি-ঘুষি মেরে বসে।

    বর্ষাকে বেদম মারপিট করে মাটিতে ফেলে দিয়ে গ্যাট এরপর যা করল সেটাকে পাগলামি বলাই সঙ্গত।

    লুঙ্গি নিয়ে বেসামাল জায়েদ রেহমানকে কষে কয়েকটা চড় মেরে তার লুঙ্গিটা টেনে পুরোপুরি খুলে ফেলে সে। জায়েদ সাহেব কিছুই করতে পারেননি। কাজের মেয়েটা অবস্থা বেগতিক দেখে পাশের ফ্ল্যাটে সাহায্যের জন্যে ছুটে যায়, এই ফাঁকে জায়েদ রেহমানকে পুরোপুরি লুঙ্গিবিহীন করে পাগলের মতো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে গ্যাট।

    পাশের ফ্ল্যাট থেকে এক ভদ্রমহিলা ছুটে এসে দেখতে পায় জায়েদ রেহমান ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে একটা সেন্ডো গেঞ্জি থাকলেও নিম্নাঙ্গে কিছুই নেই। লেখকের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে গ্যাট, তার হাতে জায়েদ রেহমানের লুঙ্গি।

    “শূয়োরের বাচ্চা! এটাই তোর আসল চেহারা। কেউ না জানুক, আমি জানি তুই কতো বড় খাটাশ!” পাশের ফ্ল্যাট থেকে ছুটে আসা মহিলার দিকে তাকিয়ে উন্মাদের বলতে থাকে গ্যাট, “দেখুন…দেখুন! এই হলো দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় লেখকের আসল চেহারা! শূয়োরের বাচ্চা নিজের মেয়ের বান্ধবীকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে ফুর্তি করছে।” তারপর কাছেই কার্পেটের উপর পড়ে থাকা বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে, “আর এই খানকিটা! ওকে আমি নিজের মেয়ের মতো দেখতাম! শুধুমাত্র খ্যাতি আর সহায়-সম্পত্তির জন্য বাপের বয়সি একজনের সাথে লিভটুগেদার করছে?”

    প্রচণ্ড ঘৃণায় বর্ষার উপর একদলা থুতু ছুঁড়ে মেরে চিৎকার করে বলতে থাকে সে, “খানকি হবার এতোই যখন শখ, বাজারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাক না, মাগি?”

    পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা ভয়ে ভয়ে তাকে প্রশমিত করার জন্য বলে, “আপা আপনি শান্ত হোন…প্লিজ-”

    “আমি শান্ত হবো!” চিৎকার করে বলে গোলনূর আফরোজ তরফদার। “এই বয়সে এসে আমাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দেবার পরও আমি শান্ত হবো! এ রকম একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে আমাকে ছোট করার পরও!? আপনি জানেন এটা একজন মেয়ের জন্য কতো বড় অপমান!?”

    “গো-গো-গোলনূর, জায়েদ রেহমান কাঁপতে কাঁপতে বলে তার প্রথম। স্ত্রীকে, “প্লিজ…প্লিজ…”

    জায়েদ রেহমানের দিকে চট করে ফিরে আরো জোরে চিৎকার করে বলে গ্যাট, “শূয়োরের বাচ্চা! তোর জন্যে আমি কি না করেছি! যখন নুন আনতে পান্তা ফুড়াতো…যখন তোর পকেটে ফুটা পয়সাও থাকতো না…এই আমি…এই আমি তখন তোর পাশে ছিলাম। আর এখন…টাকা কামাতে শুরু করতেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে খানকি নিয়ে ফুর্তি করতে শুরু করে দিলি??”

    “প্লিজ!…প্লিজ!” টলতে টলতে নগ্ন জায়েদ রেহমান তার স্ত্রীকে বলেন। তারপরই ঘটে সেই ঘটনাটি।

    গ্যাট নিজের বুক থেকে আচল সরিয়ে এক ঝটকায় ব্লাউজটা টেনে খুলে ফেলে। নিজের স্তন দুটোর দিকে ইঙ্গিত করে পাগলের মতো বলতে থাকে, “এখন আর এগুলো ভালো লাগে না, না? তোর চাই কচি কচি দুদু! এখন আর আমাকে পোষায় না, শূয়োরের বাচ্চা?!”

    পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা স্তম্ভিত হয়ে দৃশ্যটা দেখতে থাকে।

    “ছোটলোকের বাচ্চা! আর কতো ভণ্ডামি করবি?!” বলেই জায়েদ রেহমানের দিকে আরেকটু এগিয়ে যায় সে। “তুই কতো বড় বদমাশ সেটা আমি জানি…অল্পবয়সি মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না! তোর সারাজীবনের খায়েশ আমি মিটিয়ে দিচ্ছি…!” বলেই এক হাতে লেখকের অণ্ডকোষটা খপ্‌ করে ধরে ফেলে সে।

    “আ-আ…!” এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে লেখক জায়েদ রেহমান।

    পাশের ফ্ল্যাট থেকে দু’জন শক্তসামর্থ তরুণ ছুটে না এলে সেদিন যে কী ঘটতো কে জানে।

    বর্ষার জ্ঞান যখন ফিরে এল দেখতে পেল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে সে। মোট পাঁচটা সেলাই দিতে হয়েছিল তার মুখে। কপাল আর চিবুকের দু’জায়গায় কেটে গিয়ে খুব রক্তপাত হয়।

    বর্ষার তুলনায় লেখক জায়েদ রেহমানের অবস্থা আরো সঙ্গিন হলেও তিনি নিজের বাড়িতেই চিকিত্সা নেন। পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেবার জন্যে এ নিয়ে আর পুলিশের কাছে কোনো রিপোর্ট করেননি। একেবারে চেপে যাওয়া হয় ঘটনাটি।

    তারপরও এক সাংবাদিক কিভাবে যেন জেনে যায়। এ নিয়ে সে একটি রিপোর্টও তৈরি করে ফেলে তবে তার সেই রিপোর্ট কখনই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। এজন্যে অবশ্য জায়েদ রেহমানকে ছোট্ট একটা চালাকি করতে হয়েছিল।

    প্রতিবছর ঈদ সংখ্যায় এ দেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিকই বিশালাকারের ঈদসংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবে জায়েদ রেহমানের উপন্যাস ছাপানো নিয়ে পত্রিকাগুলোর মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায় তখন। তবে হাতেগোনা অল্প কয়েকটি পত্রিকাই এই সুযোগটি পেয়ে থাকে।

    জায়েদ রেহমান ঐ পত্রিকার সম্পাদককে নিজে ফোন করে আসন্ন ঈদ সংখ্যায় তার পত্রিকার জন্যে একটা ঈদসংখ্যা দেবার প্রস্তাব দিয়ে রিপোর্টটা ছাপানো বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

    *

    মোবাইলফোনের রিং হবার শব্দে অন্যমনস্কতা কাটিয়ে উঠল বর্ষা।

    নাম্বারটা অজ্ঞাত।

    “হ্যালো?”

    “মিসেস রেহমান বলছেন?” ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠ জানতে চাইল। বর্ষার কাছে কণ্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে।

    “জি, বলছি।”

    “আমি ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ।”

    বর্ষা চুপ মেরে গেল। বুঝতে পারছে না কী বলবে। এই লোক তাকে কেন ফোন করেছে?

    “হ্যালো…মিসেস রেহমান—”

    “জি, বলুন,” দ্বিধা কাটিয়ে জবাব দিল বর্ষা।

    “কেমন আছেন?” বেশ আন্তরিকতার সাথেই বলল জেফরি।

    বর্ষা আবারো অবাক। এই ইনভেস্টিগেটর ভদ্রলোককে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে। এমনিতে খুব ভালো ব্যবহার করে তারপরেও সে দ্বিতীয়বার এই লোকের মুখোমুখি হতে চায় না।

    “আছি আর কি…” কাটাকাটাভাবে বলল বর্ষা।

    “আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাই।”

    “আমার সাথে!” অবাক হলো সে। “কেন?”

    “সেটা দেখা হলেই বলবো।”

    একটু ভেবে বলল বর্ষা, “কবে দেখা করবেন?”

    “আজই।”

    “আজই!..কখন?”

    “আপনার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে আধঘণ্টার মধ্যেই?”

    দ্বিধায় পড়ে গেল বর্ষা। ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে।

    “হ্যালো?” ওপাশে থেকে আবারো তাড়া দিল বেগ।

    “ঠিক আছে, আসুন। আমি অবশ্য আমার মায়ের বাড়িতে আছি।”

    “আমি জানি। ধন্যবাদ। আধঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি।”

    ফোনটা রেখেই বর্ষা ভাবনায় পড়ে গেল। এই ইনভেস্টিগেটর তার সাথে আবার দেখা করতে চাচ্ছে কেন?

    একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে। এভাবে লোকটার সাথে দেখা করা ঠিক হবে না। কী বলতে কি বলে ফেলবে ঠিক নেই।

    একটা নাম্বারে ডায়াল করল বর্ষা।

    .

    অধ্যায় ৪৩

    সহকারী ইনভেস্টিগেটর জামান আহমেদ নিজের ডেস্কে বসে অলস সময় পার করছিল। সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে জায়েদ রেহমানের কেসের কিছু মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে বসল সে। কিছু দিন পরই এসব কাগজপত্র হয় পুলিশকে নয়তো মিসেস রেহমানের জিম্মায় ফিরিয়ে দিতে হবে।

    জায়েদ রেহমান হত্যাকাণ্ডটি প্রথম দিকে তার কাছে এতোটাই সহজ সরল বলে মনে হচ্ছিল যে এসব জিনিস নিয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হয়নি। যেখানে আসামী হাতেনাতে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হয়ে গেছে সেই কেসের আর থাকে কী। শুধুমাত্র কিছু রুটিনমাফিক কাজ করলেই হোতো, কিন্তু তার বস্ জেফরি বেগ এখন নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। জামানের কাছেও এখন মনে হচ্ছে এই কেসটা আসলে খুবই ঘোলাটে। অনেক বিষয় এখনও অস্পষ্ট তাদের কাছে।

    জায়েদ রেহমানের ঘর থেকে কিছু কাগজপত্র সিজ করা হয়েছে যার সবগুলোই আছে তার অধীনে। জামান সেগুলো নিয়ে বসল।

    তেমন কিছু না : বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস আর লন্ড্রির বিল, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, ওষুধ কেনার রশিদ, এ রকম কিছু সাধারণ জিনিস।

    জায়েদ রেহমান কোনো ডায়েরি লিখতেন না। তার হাতের লেখার কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি ফ্ল্যাটে। এসব মামুলি জিনিস থেকে কু বের করা দুরাশার সামিল। তারপরও কথা থাকে, মামুলি জিনিস থেকেও অনেক সময় বিরাট কিছু পাওয়া যায়। তুচ্ছ ভেবে উড়িয়ে দেয়াটা ঠিক না। তবে জামান জানে এসব জিনিস থেকে কিছু পাওয়া অসম্ভব।

    কাগজগুলো নাড়তে নাড়তে একটা জায়গায় এসে থেমে গেল সে। গ্যাস আর লন্ড্রির বিলের ফাঁকে ছোট্ট একটা কাগজ আঁটকে আছে। সিজার লিস্ট তৈরি করার সময় এটা তার চোখে পড়েনি। জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখল জামান : আইপিএস বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস রিসিপ্ট। তারিখটা দেখে বুঝতে পারল লেখক খুন হবার মাত্র তিন দিন আগের।

    সঙ্গে সঙ্গে জামানের মনে পড়ে গেল জায়েদ রেহমানের ঘরে একটি আইপিএস দেখেছিল। তার নিজের ঘরেও এ রকম একটি আইপিএস রয়েছে, সে জানে আইপিএস-এর ব্যাটারিতে প্রতি দুতিন মাস অন্তর অন্তর ডিস্টিল্ড ওয়াটার দিতে হয়। আইপিএস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানই গ্রাহককে এই সেবা দিয়ে থাকে।

    মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ারের মেইটেনান্স ক্রু সেজে ভিটা নুভায় এক লোক ঢুকেছিল…কথাটা মনে পড়তেই জামান কৌতূহলী হয়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে।

    *

    মিসেস রেহমান জেফরি বেগকে শীতল অভ্যর্থনা জানাল।

    তাকে একটা অপরিসর ড্রইংরুমে নিয়ে গেলে জেফরি দেখতে পেল ওখানে আগে থেকেই বসে আছে নির্মল প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী কুদরত সাহেব।

    এই ভদ্রলোককে সে মোটেও আশা করেনি। বুঝতে পারল মিসেস রেহমান হয়তো একা একা তাকে মোকাবেলা করতে চায়নি তাই ভদ্রলোককে ডেকে এনেছে।

    কুশল বিনিময়ের পর জেফরি আসল কথায় চলে এল। “মিসেস রেহমান, আমি আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”

    মহিলা কদরত সাহেবের দিকে তাকাল। “উনি আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আপনি উনার সামনেই বলতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই।”

    কুদরত সাহেব দুহাত বুকের কাছে ভাঁজ করে রেখেছে। তার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে মিসেস রেহমানের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় নেমেছে সে।

    আর কিছু বলল না জেফরি। বুঝতে পারছে এই ভদ্রলোককে এখান থেকে খুব সহজে সরানো যাবে না। তবে সে চাইলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভদ্রলোককে এখান থেকে ছুট্টি করে দিতে পারে।

    “মি. কুদরত, আপনাকে পেয়ে ভালোই হলো,” বলতে শুরু করল জেফরি। “আপনার কাছ থেকেও কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাবে।”

    কুদরত সাহেব কিছু বলার আগেই মিসেস রেহমান মুখ খুলল। “আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা একটু বলবেন কি?”

    “এই কেসটার ব্যাপারে কিছু তথ্য পেয়েছি…সেসব নিয়ে আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।”

    “উনি আসলে এই কেস নিয়ে উকিলের উপস্থিতি ছাড়া কারো সাথে আর কিছু বলবেন না,” মিসেস রেহমানের হয়ে জবাব দিল কুদরত সাহেব।

    মিসেস রেহমানের দিকে তাকাল জেফরি। “এটা অফিশিয়ালি কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না।”

    “তাহলে…?” অবাক হয়ে মিসেস রেহমান বলল।

    “আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছ থেকে কিছু বিষয় জানতে চাইছি। পুরোটাই আনঅফিশিয়ালি। এতে আমার অনেক সাহায্য হবে।”

    “আপনার সাহায্যে আসলে আমার তাতে কি! আমি কেন আপনাকে সাহায্য করতে যাবো?” বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল মিসেস রেহমান।

    “কারণ আমাকে সাহায্য করলে আপনার লাভ হবে…ক্ষতি হবে না।”

    “আপনি কি সব সময় আসামীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তদন্ত করেন?”

    মুচকি হাসল জেফরি বেগ। “না। সব সময় করি না।”

    “তাহলে কখন করেন?”

    “যখন আমার মনে হয় ভুল কাউকে আসামী করা হয়েছে তখন…!”

    কথাটা শুনে মহিলা ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইল তার দিকে। “মানে?”

    কুদরত সাহেব কিছু বলতে যাবে অমনি মিসেস রেহমান তাকে হাত তুলে বিরত রাখল। “আপনার মনে হচ্ছে আমাকে ভুল করে আসামী করা হয়েছে?”

    “হ্যাঁ।” দৃঢ়ভাবে বলল বেগ।

    “তো আপনার এ রকম মনে হবার কারণটা কি জানতে পারি?”

    “অবশ্যই পারেন। তবে সে কথা আমি আপনাকে একান্তে বলতে চাই। এটা আপনার ভালোর জন্যেই।”

    জেফরির এই কথাতে বেশ কাজ হলো। মিসেস রেহমান কুদরত সাহেবকে বাড়ির ভেতর ডেকে নিয়ে যাবার দশ মিনিট বাদে বিমর্ষ হয়ে চলে গেল অভদ্রলোক।

    “এবার বলুন,” উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইল মিসেস রেহমান।

    “বলছি, তার আগে আপনি বলুন, কথা নামের যে বইটি বের হয়েছে সেটা কি আপনি পড়েছেন?”

    “হ্যাঁ, পড়েছি।”

    “পড়ে কি মনে হলো?”

    একটু চুপ থেকে মহিলা বলল, “ওটা জায়েদ লেখেনি। অন্য কেউ লিখেছে।”

    “আপনার কেন এমন মনে হচ্ছে?”

    “কারণ কথা নামে ও যে আত্মজীবনীটা লিখতে শুরু করেছিল সেটার প্রায় সবটাই আমি পড়েছি। এই বইয়ের সাথে তার অনেক অমিল আছে।”

    “তার মানে কিছু মিলও আছে?”

    একটু ভেবে জবাব দিল মহিলা। “তা আছে, তবে যেসব বিতর্কিত বিষয় এবং জায়েদের অকপট স্বীকারোক্তি হিসেবে লেখা আছে বইটাতে সেগুলোর পুরোটাই বানোয়াট। এ রকম কিছু জায়েদ লেখেনি।”

    “ঠিক আছে। আপনি নিশ্চয় জানেন জায়েদ রেহমান খুন হবার আগে অবয়ব প্রকাশনীর আবেদ আলীর কাছে একটা ই-মেইল করেছিলেন, সেই সাথে কথা নামের বইটার পাণ্ডুলিপি?”

    “হ্যাঁ।”

    “এবার বলুন, খুন হবার রাতে শেষ কখন আপনি জায়েদ সাহেবের ঘরে ঢুকেছিলেন?”

    মহিলা মনে করার চেষ্টা করল। “রাত দশটার দিকে হবে।”

    “তখন কি আপনি তাকে ল্যাপটপে কাজ করতে দেখেছিলেন?”

    “হ্যাঁ।”

    “তার সাথে কোনো কথাবার্তা হয়েছিল?”

    “তেমন কিছু না। আমি বললাম কি করছো, সে জানাল নতুন একটা বইয়ের কাজ করছে। তারপর ওষুধ খেয়েছে কি না, এখন কেমন লাগছে এইসব কথা বলে গুডনাইট জানিয়ে চলে আসি নিজের ঘরে।”

    “আমি যতদূর জানি এরপর হাউজনার্স উনাকে ওষুধ খাইয়ে ল্যাপটপটা বেডের পাশে কফি টেবিলে রেখে তাকে শুইয়ে দিয়ে আসে।”

    “আমিও তাই জানি। ওর ঘর থেকে ফিরে এসে হাউজনার্স আমাকে সেটা বলেছে।”

    “তার মানে উনি এগারোটার পরই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?”

    “তাই তো হবার কথা।”

    “কিন্তু আপনি কি জানেন উনি মেইলটা করেছেন রাত ২টার পরে?”

    “২টার পরে? এটা কিভাবে সম্ভব?”

    “আমারও একই প্রশ্ন, এটা কিভাবে সম্ভব হলো!”

    “আপনি কি সন্দেহ করছেন?”

    “অবশ্যই কাজটা অন্য কেউ করেছে,” বেশ জোর দিয়ে বলল জেফরি।

    “অন্য কেউ মানে?”

    “আপনি বাদে কেউ।”

    “আমি বাদে কেন?”

    “কারণ কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারবে না। নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবে না।”

    মহিলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “তাহলে আপনি মনে করছেন। কাজটা শফিক করেছে?”

    “না।”

    জেফরির জবাবটা শুনে মহিলা বেশ অবাক হলো। “তাকে কেন সন্দেহের বাইরে রাখলেন?”

    “খুব সহজ। কারণ সে ঐরকম একটা বই আবেদ আলীকে মেইল করবে না। ওখানে আপনার বিরুদ্ধে অনেক কিছু লেখা রয়েছে। এমন কি আপনি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও ইঙ্গিত আছে।”

    মহিলা চুপ করে থাকল।

    “এ রকম কিছু মি. শফিক কেন করতে যাবে?”

    মিসেস রেহমান ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল তার দিকে। এই ইনভেস্টিগেটরকে এখন আর শত্রুভাবাপন্ন বলে মনে হচ্ছে না তার কাছে।

    “তাহলে কাজটা করল কে?” মিসেস রেহমান প্রশ্ন করল।

    “এমন একজন যেকিনা জায়েদ রেহমান কিংবা আপনার শত্রু। আপনাদের চরম ঘৃণা করে…”

    ভদ্রমহিলা আস্তে করে মাথা নেড়ে সায় দিল।

    “…আপনাদের উপর চরম প্রতিশোধ নিতে চায়!”

    “গ্যাট!” মহিলা চাপা কণ্ঠে বলল।

    “আপনি নিশ্চিত?”

    দৃঢ়তার সাথে মাথা নেড়ে সায় দিল মিসেস রেহমান। “এই পৃথিবীতে একজনই আছে যে আমাদেরকে চরম ঘৃণা করে…আমাদের সর্বনাশ করতে মরিয়া…আমাদের…” আর বলতে পারল না সে।

    “আর কেউ নেই? আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত?”

    মাথা দোলাল মহিলা। “এটা গ্যাটের কাজ। সে-ই করিয়েছে।”

    জেফরি কিছু বলতে যাবে অমনি তার সেলফোনটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বের করে ডিসপ্লেতে দেখতে পেল তার সহকারী জামান ফোন করেছে।

    “হ্যাঁ, জামান, বলো…?”

    ওপাশ থেকে জামান তাকে কী বলল সেটা মিসেস রেহমান শুনতে না পারলেও দেখতে পেল ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগের অভিব্যক্তিতে বিরাট একটি পরিবর্তন এসেছে। ফোনটা বন্ধ করে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল সে।

    “মিসেস রেহমান,” গম্ভীর হয়ে বলল সে। “আপনার জন্যে একটা সুসংবাদ আছে।”

    .

    অধ্যায় ৪৪

    সহকারী ইনভেস্টিগেটর জামান যে খবরটা নিয়ে এসেছে সেটা রীতিমতো অভাবনীয়। এই মূল্যবান তথ্যটি জেফরি বেগকে গোলকধাঁধাতুল্য তদন্ত থেকে বের হবার পথ দেখাচ্ছে।

    জায়েদ রেহমানের ঘরে যে আইপিএসটি আছে সেই কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আইপিএস-এর ব্যাটারিতে ডিস্টিলড ওয়াটার যারা ভরে দিয়ে আসে তারা লেখকের খুন হবার এক মাস আগেই শেষবার সার্ভিস দিয়ে এসেছে। জামানের কাছে যে রিসিপ্টটা আছে সেটা নকল। তাদের কোম্পানির রিসিপ্ট কি রকম হয় সেটার একটা নমুনাও তারা দেখিয়েছে তাকে।

    হোমিসাইডের নিজের অফিসে বসে আছে জেফরি আর জামান।

    “স্যার, জায়েদ সাহেব খুন হবার তিন দিন আগে যে লোক আইপিএস সার্ভিসম্যান পরিচয় দিয়ে ভিটা নুভায় গিয়েছিল সে খুবই পেশাদার একজন হবে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিল জেফরি। “শুধু পেশাদার না, বলতে পারো খুবই দক্ষ একজন। ভাড়াটে খুনিরা যেরকম হয় এই লোক সেরকম কেউ না।”

    “লেখককে খুন করার আগেই তাহলে এই লোক তার ঘরে ঢুকে সব দেখে এসেছিল!”

    “হ্যাঁ। আইপিএসটা তো তার ঘরেই।” জেফরি এবার টুকরো টুকরো সব তথ্য জোড়া দিতে লাগল। “লোকটা কয়েক সপ্তাহ ধরে ভিটা নুভার বাইরে একটা চায়ের টঙে বসে বসে রেকি করে গেছে। তারপর নিখুঁত একটি পরিকল্পনা করে সে। এতোটাই নিখুঁত যে সেটা ধরা প্রায় অসম্ভব।”

    “কিন্তু স্যার, এ রকম একজন পেশাদার লোককে ভাড়া করল কে?”

    খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইতিমধ্যে জেফরিও এটা ভেবেছে। তার কাছে মনে হয়েছিল ক্যানডিডেটের সংখ্যা দু’জন : আবেদ আলী আর গোলনূর আফরোজ তরফদার। তবে মিসেস রেহমানের সাথে কথা বলার পর তার কাছে মনে হচ্ছে প্রকাশক আবেদ আলীর জড়িত থাকার সম্ভাবনা কিছুটা কম। তার কাছে এ মুহূর্তে প্রধানতম সন্দেহভাজন হলো গ্যাট!

    “জায়েদ সাহেবের প্রথম স্ত্রী গোলনূর আফরোজ তরফদার কোথায় থাকে জানো?” জানতে চাইল জেফরি বেগ।

    “জানি না তবে সেটা খুব সহজেই জানা যাবে।”

    “কিভাবে?”

    “আমাদের ডিপার্টমেন্টের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট মুরতাজা ঐ মহিলার কেমন জানি আত্মীয় হয়।”

    “তাই না কি!”

    “জি, স্যার। আমি কি এক্ষুণি তার কাছ থেকে ঠিকানাটা নিয়ে আসবো?”

    “হ্যাঁ। মোবাইল ফোনের নাম্বারটাও নিয়ে নিও।”

    *

    গোলনূর আফরোজ তরফদার যাকে সবাই গ্যাট নামে চেনে কখনই নিজের আলোয় আলোকিত হতে পারেনি, কারণ মাত্র সতেরো বছর বয়স থেকেই জনপ্রিয় লেখক জায়েদ রেহমানের প্রবল আলোয় ম্রিয়মান হয়ে পড়ে সে। এ নিয়ে অবশ্য তার মনে কোনো খেদও ছিল না। নিজের স্বামীর উন্নতি, সমৃদ্ধি তাকে বরং আনন্দই দিতো।

    স্বামীর জন্যে মনপ্রাণ ঢেলে সংসার গুছিয়ে রাখতো সে। কোনো বিষয়েই জায়েদ রেহমানকে জড়াতো না লেখালেখির বিঘ্ন হবে বলে। সা সাংসরিক ঝঞ্জাট থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখতো। বলতে গেলে নিজের দুই ছেলে মেয়েকে একাই মানুষ করেছে। বিয়ের পর কতো কষ্ট করেছে সেটা হয়তো আজ অনেকেই ভুলে গেছে, কিন্তু গ্যাট জানে অমানুষিক কষ্ট করেছে এ জীবনে। ছোটখাট একটা চাকরি করতে জায়েদ রেহমান, টানাটানির সংসার। লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেবার জন্যে যখন চাকরিটাও ছেড়ে দিল তখন অভাব অনটনে জর্জরিত তারা। লেখালেখি করে প্রতিষ্ঠা পাবার আগে দীর্ঘ দশ বছর অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে গ্যাটকে।

    কিন্তু একটা সময় তাদের আর্থিক অনটন দূর হয়ে গেল, গাড়ি-বাড়ি সবই হলো তাদের। খ্যাতি আর সচ্ছলতা উপভোগ করতে শুরু করল পরিবারটি। দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় লেখকের স্ত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্বিত বোধ করতে শুরু করল গ্যাট, কিন্তু সেই সুখের সময়টা খুব বেশি দিন দীর্ঘ হলো না।

    প্রবল জনপ্রিয় হবার পর জায়েদ রেহমানের ঘাড়ে সিনেমা তৈরির ভুত চেপে বসে। হুটহাট করে দুটো সিনেমাও তৈরি করে ফেলেন তিনি। সেগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফল হলে টিভি নাটক আর সিনেমা বানাতে শুরু করেন নিয়মিত, আর এটাই তাকে বদলে দিল আমূল।

    চারদিক থেকে কানাঘুষা শোনা যেতে লাগল তার সম্পর্কে। অল্পবয়সি মেয়েদের জড়িয়ে দুয়েকটা রটানাও ছাপা হলো পত্রপত্রিকায়, তারপরেও গ্যাট সেগুলোকে আমলে নেয়নি, মনে করেছে শোবিজ জগতে এ রকম মিথ্যে রটনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রথম ধাক্কাটা খেলো পমি নামের এক উঠতি অভিনেত্রির সাথে জায়েদ রেহমানের একটি ঘটনায়।

    জায়েদ রেহমান তার তৃতীয় চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেছেন তখন। পমি ছিল মূল চরিত্রে। সেন্ট মার্টিনে আউটডোর শুটিংয়ের মাঝপথে পমি ঢাকায় চলে আসে। ছবির বাকি কাজ করতে অস্বীকার করে সে। চারপাশ থেকে গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে লেখক জায়েদ রেহমান পমির সাথে এমন বাজে আচরণ করেছেন যার জন্যে মেয়েটা বেঁকে বসেছে।

    এ নিয়ে গ্যাটের সাথে জায়েদ রেহমানের তুমুল বাকবিতণ্ডা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা আর বেশি দূর গড়ায়নি। তবে অনেক দিন পর গ্যাট আসল ঘটনা জানতে পারে, ততো দিনে অবশ্য জায়েদের সাথে তার সেপারেশন শুরু হয়ে গেছে।

    কলিংবেলের শব্দে বর্তমানে ফিরে এল গ্যাট। এক ঘণ্টা আগে হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ তাকে ফোন করে জানিয়েছিল তার সাথে একটা বিষয়ে কথা বলতে চায়। ইনভেস্টিগেটরকে ফিরিয়ে দেয়নি সে, কারণ তাতে করে লোকটা সন্দেহ করে বসতে পারতো। খুব সম্ভবত সেই লোকই এখন এসেছে।

    *

    হোমিসাইডের জামান আহমেদ নিজের ডেস্কে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে তার বস্ জেফরি বেগ চলে গেছে গোলনূর আফরোজ তরফদারের সঙ্গে দেখা করতে। মহিলা অস্বস্তি বোধ করতে পারে তাই জামানকে সঙ্গে নেয়নি। জেফরি বেগ মহিলার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চায়।

    জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি যে এভাবে জটিল হয়ে উঠবে সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি সে। তার বস্ যখন নতুন করে এই কেসটার তদন্ত করতে শুরু করে তখন তার কাছে এটাকে পাগলামি বলেই মনে হয়েছিল।

    ডেস্কে থাকা ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলে আনমনেই সেটা হাতে তুলে নিলো জামান।

    “সিটি হোমিসাইড থেকে বলছি।”

    ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।

    “হ্যালো…কে বলছেন?” জামান তাড়া দিল।

    “আমি ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগকে একটু চাচ্ছিলাম।” ফিসফিস করে একটা কণ্ঠ বলল।

    “সরি, উনি এখন অফিসে নেই, বাইরে আছেন…” বলল জামান। “আপনি কে বলছেন?”

    “আমি উনাকে একটা তথ্য দিতে চাই। লেখক জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে…”

    জামান স্তম্ভিত হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্যে। লোকটার পরিচয় নিয়ে আর মাথা ঘামালো না সে। “আমি সহকারী ইনভেস্টিগেটর জামান বলছি…আপনি আমার কাছে বলতে পারেন।”

    নীরবতা নেমে এল ওপাশ থেকে।

    “আমি জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে স্যারকে সহায়তা করছি,” বলল জামান।

    “আমি যে তথ্যটা আপনাকে দেবো সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার আগে আপনাকে কথা দিতে হবে আমার পরিচয় জানার চেষ্টা করবেন না।”

    “ঠিক আছে। আপনার পরিচয় নিয়ে আমি মাথা ঘামাবো না। বলুন, কি বলতে চাচ্ছেন?”

    একটু থেমে বলতে শুরু করল ওপাশের লোকটি। “জায়েদ সাহেব যে রাতে খুন হন সে রাতে তার অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে এক ছেলেকে সন্দেহজনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল ইন্সপেক্টর এলাহী নেওয়াজ…”

    “হুমম…বলুন?”

    “…আমি সেই ছেলের পরিচয় জানি!”

    নিজের চেয়ারে সোজা হয়ে বসল জামান। “হ্যাঁ, বলুন…?”

    “ইন্সপেক্টর কিন্তু সেই ছেলেটাকে গ্রেফতার করেছিল।”

    “গ্রেফতার করেছিল??”

    “হ্যাঁ।”

    “তারপর?” উদগ্রীব হয়ে উঠল জামান।

    “মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।”

    “ছেলেটা কে?”

    “বিশিষ্ট শিল্পপতি চৌধুরি ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর একমাত্র সন্তান ইরাম!”

    “কি!”

    ওপাশের লাইনটা কেটে গেলেও অনেকক্ষণ রিসিভারটা ধরে রাখল জামান।

    এ রকম উড়ো ফোনকলকে তারা খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও অনেক সময় এভাবেই মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। জামানের কেন জানি মনে হচ্ছে এইমাত্র পাওয়া তথ্যটি সত্যি। “আপনি এসব কি বলছেন!” জেফরি বেগ যখন গোলনূর আফরোজ তরফদারকে জানাল জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত এখন নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে তখন ভদ্রমহিলা অবিশ্বাসে এ কথা বলল।

    তারা বসে আছে ড্রইংরুমে। এই বাড়িটা ভদ্রমহিলা পৈতৃকসূত্রে পেয়েছে। জায়েদ রেহমানের সাথে ডিভোর্সের পর থেকে এখানেই এক মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে তবে গত বছর একমাত্র মেয়েটি বিয়ে করে দেশের বাইরে চলে গেছে। ছেলে দার্জিলিংয়ের একটি মিশনারি স্কুলে পড়ে। গ্যাট এখন একেবারেই একা।

    “আবেদ আলীকে আপনি গত সপ্তাহে অনেকবার ফোন করেছিলেন, তাই না?…কারণটা জানতে পারি কি?”

    মহিলা ভুরু কুঁচকে রইল। “আপনারা জানলেন কি করে?”

    “আমাদের জন্যে এটা জানা তেমন কঠিন কাজ নয়।”

    “আবেদ আলীর সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, তাকে আমি ফোন করতেই পারি।” কাটাকাটাভাবে বলল মহিলা।

    “তা পারেন…”

    “আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?” সরাসরি বলল গ্যাট।

    “তা করছি না, তবে কিছু বিষয় পরিস্কার হবার জন্যে আমাকে অনেক কিছু জানতে হবে। সেজন্যেই এসব জানতে চাচ্ছি।” শীতলকণ্ঠে বলল বেগ।

    একটু চুপ করে থেকে মহিলা বলল, “পাওনা টাকার জন্যে ফোন দিয়েছিলাম।”

    “পাওনা টাকা! কিসের?”

    “রয়্যালটির।” ছোট্ট করে বলল মহিলা।

    “রয়্যালটি মানে?” বেগ বুঝতে না পেরে বলল।

    “জায়েদের অনেক বইয়ের কপিরাইট সত্ত্ব আমার নামে। ওগুলোর প্রায় সবই আবেদ ভাইয়ের ওখান থেকে বের হয়েছে। প্রতি তিনমাস পর পর বইগুলোর রয়্যালটির টাকা আমি তুলে থাকি।”

    “আপনি কিন্তু উনাকে অনেকবার ফোন করেছেন?”

    “অনেকবার ফোন করে তাকে পাইনি…শুনেছি আজকাল আবেদ ভাই না কি ইন্টারনেট ব্রাউজ করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। বেশিরভাগ সময় উনার মোবাইল থাকে সাইলেন্স মুডে। এজন্যে অনেকবার ফোন করতে হয়েছিল।

    “আচ্ছা।” একটু থেমে জেফরি আবার বলল, “জায়েদ সাহেবের সাথে সম্পর্ক খুবই খারাপ ছিল এ রকম কারোর কথা কি আপনি জানেন?”

    “ওর শত্রুর কথা বলছেন?” মহিলা ভুরু উঁচিয়ে জানতে চাইল।

    “হ্যাঁ।”

    “জায়েদের শত্রু…?” বিড়বিড় করে বলল সে। “আপনার সামনেই বসে আছে। আমি!”

    জেফরি বেগ ভিমড়ি খেলেও সেটা প্রকাশ করল না।

    “আমি হলাম ওর এক নাম্বার শত্রু?”

    “আর দু’নাম্বার শত্রু?” চট করে জিজ্ঞেস করল জেফরি।

    মহিলা জেফরির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। “উমমম…পমি!”

    “পমি?”

    “অভিনেত্রি পমি। চেনেন?”

    “চিনি।” এই অভিনেত্রীকে জেফরি তেমন একটা না চিনলেও জায়েদ রেহমানের আত্মজীবনী কথায় তার উল্লেখ রয়েছে বলে নামটা শুনেই চিনতে পারল।

    “তাকে ছাড়া তো আর কাউকে দেখছি না।”

    “পমি কেন?” জানতে চাইল জেফরি।

    “জায়েদ ওকে ধর্ষণ করেছিল!” নির্বিকারভাবে বলল মহিলা।

    .

    অধ্যায় ৪৫

    ধানমণ্ডি থানার ইন্সপেক্টর এলাহী নেওয়াজকে ডেকে আনা হয়েছে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে। পুলিশ ভদ্রলোক মনে করছে জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে হোমিসাইড হয়তো তাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। পুলিশের অধীনে থাকা হত্যাকাণ্ডের কেসগুলোতে সাহায্য করাই হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের কাজ।

    জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডে এলাহীর অবদান অনস্বীকার্য। হোমিসাইডের সবচেয়ে মেধাবী ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগও সেটা জানে। এমনও হতে পারে জেফরি বেগ হয়তো তাকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ দেবার জন্যে এখানে ডেকে এনেছে। কারণ তার সহকারী জামান দু’ঘণ্টা আগে তাকে ফোন করে বলেছে হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ তাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছে।

    এফবিআই’র ট্রেনিং নেয়া লোক, তাই বোধহয় আমেরিকান স্টাইলে ধন্যবাদ দিতে চাচ্ছে, মনে মনে ভাবলো ইন্সপেক্টর ।

    এলাহী নেওয়াজ একা বসে আছে জেফরি বেগের অফিসে। প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে এখনও কারোর দেখা নেই। হোমিসাইডের একজন বলেছে ইনভেস্টিগেটর বাইরে আছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে। সহকারী জামান অবশ্য ছিল তবে কী একটা কাজে সেও কিছুক্ষণ আগে বাইরে চলে গেছে।

    জেফরি বেগের অফিসটা একেবারেই সাদামাটা তবে ডান দিকের দেয়ালে একটা ফ্রেমে এফবিআই’র ট্রেনিংয়ের যে সার্টিফিকেটটা আছে সেটার উপস্থিতি পুরো ঘরটায় এক ধরণের আভিজাত্য এনে দিয়েছে। চেয়ার থেকে উঠে সেই ফ্রেমটার সামনে দাঁড়াল এলাহী নেওয়াজ।

    আচ্ছা, তাহলে এফবিআই’র সার্টিফিকেট এমন হয়!

    ইংরেজিতে ভীষণ কাঁচা এলাহী নেওয়াজ সার্টিফিকেটের লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করল। না। ইংরেজি বোঝাটা তার কাজ না। তার ভাণ্ডারে খুব কম ইংরেজি শব্দই আছে। নিশ্চয় জেফরি বেগের অনেক প্রশংসা করা হয়েছে এখানে। এলাহী শুনেছে, এফবিআই’তে না কি জেফরি অনেক ভালোভাবে ট্রেনিং শেষ করেছে। এই লোকের সবই ভালো শুধু নামটা তার কাছে কেমন জানি খটকা লাগে। ডেস্কের এক কোণে ছোট্ট একটি ছবির ফ্রেম। এক খৃস্টান ফাদার, কোলে সাত-আট বছরের এক বাচ্চাছেলে। তাহলে খৃস্টান!? মনে মনে ভাবলো ইন্সপেক্টর।

    “সরি।” পেছন থেকে একটা আন্তরিকমাখা কণ্ঠ বললে এলাহী নেওয়াজ চমকে উঠেলো। ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে।

    “স্যার, স্লামালাইকুম, ইন্সপেক্টর বলল।

    “দেরির জন্যে দুঃখিত। কতোক্ষণ আগে এসেছেন?” এলাহী নেওয়াজের সাথে করমর্দন করে নিজের ডেস্কে বসল সে।

    “এই তো…দশ-পনেরো মিনিট হবে।”

    “বসুন।”

    এলাহী নেওয়াজ চেয়ারে বসল।

    “চা-টা কিছু দিয়েছে?”

    “না। তার কোনো দরকার নেই, স্যার।”

    তার কথাটা আমলে না নিয়ে ইন্টারকমে দুকাপ চায়ের জন্যে বলে দিল বেগ।

    “তো কেমন চলছে, ইন্সপেক্টর?”

    “জি, স্যার, চলছে আর কি। কাজের অনেক চাপ।”

    “ধানমণ্ডি থানায় তো খুব বেশি ক্রাইম হয় না। অন্য থানার চেয়ে এখানকার অবস্থা বেশ ভালো।”

    “তা ঠিক। তবে ভিআইপিদের সংখ্যা বেশি, কুলিয়ে উঠতে পারি না।”

    “জায়েদ সাহেবের কেসের খবর কি?”

    এই প্রশ্ন করাতে এলাহী নেওয়াজ একটু উৎসাহ বোধ করল। তার ধারণা এই কেসের জন্য কিছু দিনের মধ্যে সে একটা প্রমোশন পেতে যাচ্ছে। “স্যার, আশা করছি এক মাসের মধ্যে ফাইনাল ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দিতে পারবো।”

    “গুড।” একটু চুপ করে থেকে আবার বলল জেফরি, “আপনাদের ওসি তো আলী হোসেন সাহেব, তাই না?”

    “জি, স্যার।”

    এমন সময় দরজায় নক হলে জেফরি ভেতরে আসার জন্যে বলতেই পিয়ন চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

    “প্লিজ, চা নিন,” পিয়ন ছেলেটা চলে যাবার পর এলাহী নেওয়াজকে বলল জেফরি। “এই কেসটায় আপনি বেশ ভালো কাজ করেছেন, ইন্সপেক্টর।”

    “থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার,” বিগলিত হয়ে বলল এলাহী।

    “আপনার মতো দক্ষ পুলিশ অফিসার খুব কমই আমি দেখেছি।” চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিল জেফরি। কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছে না এতো বড় বোকামি আপনি কেন করলেন?”

    জেফরির মুখ থেকে শেষ কথাটা শুনে চমকে উঠল এলাহী। কানে ভুল শুনছে না তো। প্রশংসা করতে করতে ইনভেস্টিগেটর এ কী বলছে!

    “জি স্যার…বুঝলাম না?”

    “চৌধুরি ইরাম আহমেদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করার ঘটনাটি চেপে গেলেন কেন?”

    বিষম খেলো যেন। নিজের অভিব্যক্তি লুকাতে পারল না ইন্সপেক্টর। চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখল আস্তে করে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। তবে সে জানে ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগের কাছে এখন আর কোনো কিছু লুকাতে পারবে না। এই লোক সব জেনেই তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।

    তাহলে এজন্যেই ডেকে আনা হয়েছে আমাকে।

    “জায়েদ সাহেবের কেসে আপনার ভূমিকায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। আপনাকে আমি খুব পছন্দও করি…কিন্তু এতোবড় একটা ভুল আপনি করলেন কি করে মাথায় ঢুকছে না।”

    “স্যার, আমার কোনো দোষ নেই…হোমমিনিস্টারের রিকোয়েস্ট ছিল ওটা। উনি তো সি ই এ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ লোক। আমি ছেলেটাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাবার পর ওসি সাহেব ফোন করে ছেড়ে দিতে বললেন…”

    “হোমমিনিস্টার বছে?” জেফরির সন্দেহ হলো।

    “জি, স্যার। আপনি ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।”

    “কিন্তু আপনার কি একবারও মনে হলো না জায়েদ সাহেবের খুনের ঘটনায় ঐ ছেলেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?”

    “স্যার…আমার মনে হয়েছিল কিন্তু…ওসি সাহেব বললেন তাই…” মাথা নিচু করে অনুশোচনায় আক্রান্ত হলো এলাহী। সে বুঝতে পারছে প্রমোশনের বদলে এখন ডিমোশন জুটতে পারে তার কপালে।

    “ছেলেটা কি গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য দিয়েছিল আপনার কাছে?”

    “না, স্যার। পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত ছিল। কেন যে ঐ অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বুঝতে পারছি না। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ডাকাত দলের সদস্য কিন্তু পরে জানতে পারি তার বাবা হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি।”

    “আপনি বলছেন ওসি সাহেব হোমমিনিস্টারের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে ছেলেটাকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে আপনাকে বলেছে?”

    “জি, স্যার!” জোর দিয়ে বলল ইন্সপেক্টর।

    “তাহলে ওরা আপনাকে অতোগুলো টাকা দিল কেন?” কথাটা বলে স্থির চোখে চেয়ে রইল জেফরি।

    ঘাবড়ে গেল এলাহী নেওয়াজ। এই লোক এতো কিছু জানল কী করে! টাকা নেয়ার কথাটা অস্বীকার করে আরো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে চাইল ইন্সপেক্টর। “স্যার, বিশ্বাস করেন আমি টাকা চাইনি। সিদ্দিকী সাহেব থানায় এলে আমি সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলেকে তার হাতে তুলে দেই। কোনো টাকা দাবি করিনি। হোমমিনিস্টারের লোকের কাছে টাকা চাইবো এতো বড় আহাম্মক আমি নই–”

    “তাহলে?”

    “সিদ্দিকী সাহেবের উকিল পরে আমাকে এ টাকাটা দিয়ে গেছে। আমি নিতে চাইনি, বলতে পারেন জোর করেই দিয়ে গেছে।”

    জেফরি জানে কথাটা সত্যি। একটু চুপ থেকে বলল সে, “তারপরও আমি বলবো আপনি একটা আহাম্মক।” ।

    ইন্সপেক্টর আতঙ্কভরা চোখে তাকাল তার দিকে।

    “কারণ আপনি ভেবেছেন কথাটা কেউ কোনোদিন জানতে পারবে না। ভুলে গেছেন আপনার অনেক সহকর্মী আছে, হয়তো এ ব্যাপারটা তারা ভালো চোখে দেখেনি।”

    এলাহী বুঝতে পারছে এই ঘটনাটা কে ফাঁস করেছে। সাব-ইন্সপেক্টর সমীর দাস ছাড়া আর কেউ এ কাজ করার সাহস দেখাবে না। তাকে কিছু টাকা দিয়ে দিলে আজ আর এ রকম বিপদে পড়তো না সে। একটু লোভ সংবরণ করলে কেউ ঘুণাক্ষরেও ব্যাপারটা জানতে পারতো না।

    “মি. এলাহী, চৌধুরি ইরাম আহমেদ সিদ্দিকী এখন কোথায় আছে জানেন?” গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইল ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ।

    “জানি, স্যার, “ আস্তে করে বলল সে।

    “গুড,” বলল জেফরি। “যা হবার হয়েছে, এখন আমি চাইবো আপনি আমাকে পুরোপুরি সহযোগীতা করবেন।”

    আশার আলো দেখতে পেল ইন্সপেক্টর। “জি, স্যার। অবশ্যই করবো।”

    “ইরাম সিদ্দিকী এখন কোথায় আছে, বলুন?”

    .

    অধ্যায় ৪৬

    অভিনেত্রী পমিকে জায়েদ রেহমান ধর্ষণ করেছেন।

    কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে জেফরি বেগের। তবে জায়েদ সাহেবের সাবেক স্ত্রী গ্যাট যেভাবে বলল তাতে অবিশ্বাস করারও উপায় নেই। এটাও তো ঠিক কথা নামের আত্মজীবনীতেও লেখক এ রকম একটা ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

    “আপনি কি অভিনেত্রী পমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন?” জেফরির কাছ থেকে সব শুনে প্রশ্ন করল জামান।

    “আপাতত সেরকম কোনো ইচ্ছে আমার নেই।” একটু চুপ থেকে আবার বলতে লাগল জেফরি, “এভাবে একের পর একজনকে সন্দেহ করে তদন্তকাজ তো এগোচ্ছে না, বরং আরো বেশি জটিল হয়ে উঠছে।”

    “তাহলে…?”

    “আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে ঐ যুবকের উপর। সে কে সেটা খুঁজে বের করলে জানা যেতো কার হয়ে কাজটা করেছে। আমি এখন আসল কালপ্রিটকে না খুঁজে বরং নিজ হাতে যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।”

    “কিন্তু তাকে খুঁজে বের করাটা কি খুব সহজ হবে, স্যার?”

    “মোটেই না।” নিজের ডেস্ক থেকে উঠে দাঁড়াল সে। তার ছোট্ট পরিসরের অফিসের ভেতর পায়চারী করতে লাগল। “আমাদের খুনি শুধু খুনই করেনি…খুনটা সে করেছে এমন এক সময় যখন লেখকের স্ত্রী পাশের ঘরে তার প্রেমিকের সাথে গোপন অভিসারে লিপ্ত। এই দিনটি, মুহূর্তটি খুব বিচক্ষণতার সাথেই বেছে নিয়েছে সে। তারপর লেখকের কম্পিউটার থেকে বানোয়াট একটি পাণ্ডুলিপি মেইল করে পুরো ব্যাপারটি গোলকধাঁধার মতো করে ফেলেছে। আর এসবই করা হয়েছে লেখকের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে।”

    “শুধুমাত্র পেশাদার করো পক্ষেই এ কাজ করা সম্ভব।” জামান মন্তব্য করল। “আপনার কাছ থেকে সব শুনে আমার মনে হচ্ছে অভিনেত্রী পমিও এ কাজ করতে পারে।”

    “কেন এ রকম মনে হচ্ছে?” জেফরি একটু বাজিয়ে দেখতে চাইল তার সহকারীকে।

    “কারণ লেখক জায়েদ রেহমান কেবল খুনই হননি সেই সাথে তার ভাবমূর্তিও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। পমি যদি লেখকের হাতে ধর্ষিত হয়ে থাকে তাহলে সে এ রকমভাবেই প্রতিশোধ নিতে চাইবে।”

    “অবশ্য আমার কাছে মনে হচ্ছে কাজটা করতে পারে সম্ভাব্য তিনজন : গ্যাট, আবেদ আলী এবং পমি। তবে আবেদ আলী আর গ্যাটের ব্যাপারে আমার সন্দেহ একটু বেশি। পমির ব্যাপারটা আমার কাছে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে। ভুলে যেও না আবেদ আলী আর গ্যাট এ ঘটনায় বেশ লাভবান হয়েছে।”

    “আপনি কি আলম শফিক আর মিসেস রেহমানকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ রাখছেন?”

    “এতো কিছু জানার পর মনে হচ্ছে না কাজটা তারা করেছে।”

    “তাহলে সি ই এ সিদ্দিকী সাহেবের ছেলের কানেকশানটা কোথায়?”

    “ভালো প্রশ্ন করেছে। এদের তিনজনের যেকোনো একজনের সাথে যদি তার কানেকশান বের করা যায় তাহলে অনেক সহজ হয়ে যাবে কেসটা।”

    জামান এবার বুঝতে পারছে তার বস কিভাবে এগোতে চাচ্ছে। “তাহলে আপনি কি এখন তাকে খুঁজে বের করতে চাইছেন?”

    “হ্যাঁ, তা-ই চাইছি, তবে ছেলেটাকে সিদ্দিকী সাহেব বোম্বের এক রিহ্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছে। যতোদূর জানতে পেরেছি ছয় মাসের আগে সে দেশে ফিরবে না।”

    “আপনি কি তাহলে ছয়মাস অপেক্ষা করবেন?” জানতে চাইল জামান।

    “না।”

    “তাহলে?”

    “দেখি কি করা যায়। মুখে এ কথা বললেও হঠাৎ করেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে।

    *

    সি ই এ সিদ্দিকী নিজের বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের হেডঅফিসে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কয়েক দিনের জন্যে দেশের বাইরে গেলে এমনই হয়-একগাদা কাজ জমে থাকে। এই ব্যস্ততার মাঝেও নিজের একমাত্র সন্তান ইরামের সাথে ফোনে কথা বলতে ভুলে যাননি। লাঞ্চের পর একটু সময় বিশ্রাম নেন তিনি, সেই সময়টাতে ছেলের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। তার সাথে কথা বলার পর থেকেই তিনি বেশ রিলাক্স মুডে আছেন।

    টৃটমেন্টটা বোধহয় ভালোই চলছে, কারণ তার ছেলে আজ বেশ গুছিয়ে কথা বলেছে। তার কাছে মনে হচ্ছে ওখানে কয়েকটা মাস থাকলে ইরাম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।

    এমন সময় ইন্টারকমটা বেজে উঠলে তিনি সেটা তুলে নিলেন। তার পারসোনাল সেক্রেটারি তাকে জানাল সিটি হোমিসাইড থেকে ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ নামের এক লোক তার সাথে দেখা করতে চাইছে।

    মাইগড!

    কি বলবেন বুঝতে না পেরে সিদ্দিকী সাহেব সেক্রেটারিকে বলে দিলেন ইনভেস্টিগেটরকে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে। তিনি জরুরি একটা কাজ করছেন।

    ইন্টারকমটা রেখেই সঙ্গে সঙ্গে অমূল্য বাবুকে ফোন করে জানালেন ব্যাপারটা।

    “আপনি তার সাথে দেখা করেন। সমস্যা নেই। বরং না দেখা করলেই লোকটা উল্টাপাল্টা ভাবতে শুরু করবে।”

    “আপনার কি মনে হয় সে ইরামের ব্যাপারটা জেনে গেছে?” উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন তিনি।

    একটু চুপ করে থেকে বাবু বলল, “…খুব সম্ভবত ইরামের গ্রেফতারের ব্যাপারটা জেনে গেছে। এর বেশি জানার কথা নয়। আপনি একদম স্বাভাবিকভাবে কথা বলবেন।”

    “আপনি থাকলে অনেক সুবিধা হোতো…”

    “তা ঠিক। আপনি কথা বলতে শুরু করুন…আমি দেখি কতো জলদি আসতে পারি।”

    “তহলে তাকে আমি ভেতরে আসতে বলে দেই?”

    “অবশ্যই।”

    “আপনি কিন্তু দেরি করবেন না।”

    “একদম চিন্তা করবেন না…আমি আসছি।”

    ফোনটা নামিয়ে রেখে সিদ্দিকী সাহেব কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলেন। নিজেকে ধাতস্থ করে নিচ্ছেন তিনি। পাঁচ মিনিট পর ইন্টারকমটা তুলে সেক্রেটারিকে বলে দিলেন ইনভেস্টিগেটরকে ভেতরে পাঠিয়ে দেবার জন্য।

    দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল দেবদূতের মতো দেখতে এক যুবক। সিদ্দিকী সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে বেশ মার্জিতভাবে বলল সে, “আমি সিটি হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ।”

    কোনো কথা না বলে হাত মেলালেন সিদ্দিকী সাহেব, তারপর চেয়ারে বসার ইশারা করলেন ভিজিটরকে।

    “থ্যাঙ্কস,” সিদ্দিকী সাহেবের বিশাল ডেস্কের বিপরীতে একটা চেয়ারে বসে বলল বেগ।

    “তো কি মনে করে আমার এখানে আসা?” ভাববাচ্যে জানতে চাইলেন সি ই এ সিদ্দিকী।

    “আমি লেখক জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছি। সেই বিষয়ে

    একটু কথা বলতে এসেছি।”

    একটু অবাক হলেন সিদ্দিকী সাহেব। “আচ্ছা। বলুন কি জন্যে এসেছেন…আমার হাতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেই।”

    “আমি বেশি সময় নেবো না। ব্যাপারটা আপনার ছেলে ইরামকে নিয়ে…”

    “বলে যান,” আস্তে করে বললেন তিনি।

    “আমি জানতে পেরেছি জায়েদ রেহমান যে রাতে খুন হলেন সে রাতে ইরাম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।” একটু থেমে সিদ্দিকী সাহেবের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করল জেফরি। ভদ্রলোক নির্বিকার। “আপনি নিজে থানায় গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন…”

    ভদ্রলোক কিছুই বললেন না।

    “আমি কি ঠিক বলেছি?” প্রশ্ন রাখল জেফরি।

    “আপনি আসলে কি জানতে চাইছেন, ইনভেস্টিগেটর?” ভরাট কণ্ঠে বললেন তিনি।

    “আমার ধারণা আপনার ছেলে জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানে।”

    নিজের চেয়ারে সোজা হয়ে বসেলেন। “আপনি মনে করছেন ঐ লেখকের হত্যাকাণ্ডে আমার ছেলে জড়িত?”

    এভাবে সরাসরি বলাতে জেফরি একটু ভিমড়ি খেলো। “না। আমি তা বলছি না। সম্ভবত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানে।”

    “লেখক খুন হবার রাতে সে তার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল…এই তো?”

    “জি।”

    “আপনি আমার ছেলে সম্পর্কে কতোটুকু জানেন?”

    “খুব বেশি কিছু জানি না। শুধু জানি আপনার ছেলে বোধহয় মাদকাক্ত–”

    “বোধহয় না, সে বেশ ভালোভাবেই মাদকাসক্ত।”

    নিজের ছেলে সম্পর্কে এভাবে স্পষ্ট কথা বলাতে জেফরি আবারো অবাক হলো। শত কোটি টাকার মালিকেরা কি এভাবেই কথা বলে! মনে মনে বলল জেফরি।

    “আর কি জানেন?” জেফরিকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি জানতে চাইলেন।

    “আমি আসলে তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না।”

    “আপনি জানতে চাচ্ছেন সেই রাতে আমার ছেলে কেন জায়েদ রেহমানের বাড়ির সামনে গিয়েছিল, তাই না?”

    মাথা নেড়ে সায় দিল জেফরি।

    “আমার ছেলে লেখক জায়েদ রেহমানের অন্ধভক্ত। লেখক জায়েদ রেহমান রেহমানও সেটা জানতেন। এমনকি তিনি ইরামকে একটি বইও উৎসর্গ করেছিলেন। বলতে পারেন লেখক জায়েদ রেহমানের সবচাইতে বড় ভক্তের নাম হলো চৌধুরি ইরাম আহমেদ সিদ্দিকী।”

    জেফরি এটা জানতো না। কথাটা শুনে খুব অবাকই হলো সে। “তা বুঝলাম কিন্তু—”

    সিদ্দিকী সাহেবের অফিসের দরজা খুলে এক লোক ঢুকে পড়ল বিনা। অনুমতিতে।

    মেদহীন শরীরের এক পঞ্চাশোর্ধ লোক। কিছু না বলে সোজা জেফরির পাশের চেয়ারে এসে বসে পড়ল সে। সিদ্দিকী সাহেবের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালে তিনি বললেন, “ইনি হলেন অমূল্য বাবু। আমার…খুবই কাছের একজন। আপনি উনার সামনে বলতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই।”

    সিদ্দিকী সাহেবের আশ্বাস পেয়ে জেফরি আবার বলতে লাগল, “অতো রাতে আপনার ছেলে তার বাড়ির সামনে কেন গেল…আর আপনিই বা তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে সেদিনই বোম্বের এক রিহ্যাবে পাঠিয়ে দিলেন কেন?”

    মুচকি হেসে অমূল্য বাবুর দিকে তাকালেন সিদ্দিকী সাহেব।

    “কারণ পরদিন তাকে বোম্বের রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেয়া হবে সেজন্যে…” পাশ থেকে অমূল্য বাবু নামের লোকটি বললে জেফরি তার দিকে তাকাল। “..বাড়ি থেকে পালিয়ে লেখক জায়েদ রেহমানের সাথে হয়তো দেখা করার উদ্দেশ্যে সেখানে গেছিল।”

    মাথা নেড়ে কথাটার সাথে সায় দিলেন সিদ্দিকী সাহেব।

    জেফরি কিছু বলল না। স্থির চোখে চেয়ে রইল অমূল্য বাবু নামের লোকটির দিকে।

    “কি ভাবছেন, ইনভেস্টিগেটর সাহেব?” জানতে চাইলেন সিদ্দিকী সাহেব।

    “বুঝতে পেরেছি, কিন্তু আপনি কেন ধানমণ্ডি থানার ইন্সপেক্টর এলাহী নেওয়াজকে অতোগুলো টাকা দিতে গেলেন?”

    কিছুক্ষণ চুপ মেরে অমূল্য বাবুর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “খুব সহজ…পুলিশ যাতে আমার ছেলেকে হ্যারাজমেন্ট না করে। খামোখা তাকে নিয়ে টানাটানি না করে।”

    “কিন্তু আপনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক, আপনি কেন সামান্য একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে অতোগুলো টাকা দেবেন?”

    সিদ্দিকী সাহেব আর অমূল্য বাবু নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করে নিলেন।

    “পুলিশের মুখ বন্ধ করার জন্যে টাকা ছাড়া আর কিছু আছে!” অমূল্য বাবু বলল। “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক বললেই এরা মুখ বন্ধ রাখবে ভেবেছেন?”

    “এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ওদের মুখ বন্ধ রাখা কতোটা কঠিন।” সিদ্দিকী সাহেব বললেন।

    মাথা নেড়ে সায় দিল জেফরি বেগ। চৌধুরি ইরাম আহমেদ সিদ্দিকী আরেকটা কানাগলি! গোলকধাঁধার আরেকটা কানাগলিতে গিয়ে ঢুকে পড়েছে সে।

    “ইনভেস্টিগেটর?” জেফরির অন্যমনস্কতা ভাঙার জন্যে বললেন সিদ্দিকী সাহেব। “আমার একটা জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। আপনার যদি আর কিছু না জানার থাকে তাহলে…”

    “ওহ্ সরি,” কথাটা বলেই চট করে উঠে পড়ল জেফরি। “আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম। হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।”

    “নট অ্যাট অল,” বললেন তিনি। “আশা করি আপনি এখন পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।”

    “অবশ্যই। তাহলে আমি আর আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবো না। আসি।” কথাটা বলে সিদ্দিকী সাহেবের সাথে হাত মিলিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল জেফরি বেগ।

    .

    অধ্যায় ৪৭

    হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ তার প্রিয়পাত্র জেফরি বেগের উপর না রেগে পারল না।

    সিদ্দিকী সাহেব যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক সেটা জেনেও কোন্ আক্কেলে তার অফিসে গেল সে!

    যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্দিকী সাহেবের ছেলেকে থানা থেকে ছেড়ে দিতে বলেও থাকেন সেটা নিয়ে এতো বেশি ভাবার কী আছে? বড়লোকের নেশাখোর ছেলে তার প্রিয় লেখকের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল আর জেফরি সন্দেহ করতে শুরু করে দিল এই ছেলে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত!

    এতোটা স্টুপিডিটি জেফরির কাছে থেকে সে আশা করেনি। অন্তত সিদ্দিকী সাহেবের অফিসে যাবার আগে তাকে জানানো উচিত ছিল।

    “তুমি যদি আমাকে ওখানে যাবার আগে জানাতে তাহলে আমি তোমাকে যেতে বারণ করতাম,” তার সামনে বসে থাকা জেফরি বেগের উদ্দেশ্যে বলল ফারুক আহমেদ। সিদ্দিকী সাহেবের ওখান থেকে জেফরি চলে আসার পর পরই বেচারা মহাপরিচালক চাপের মধ্যে পড়ে গেছে। “ভদ্রলোক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন।”

    জেফরিও বুঝতে পারছে এভাবে হুট করে সি ই এ সিদ্দিকী সাহেবের অফিসে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। এই কেসে ইরামকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল সে। এখন দেখা যাচ্ছে নিতান্তই কাকতালীয় একটি ব্যাপার। সবচাইতে বড় কথা ইরাম হলো লেখক জায়েদ রেহমানের একজন অন্ধভক্ত। ভালো করে খোঁজখবর না নিয়েই তার ব্যাপারে কিছু জানতে চাওয়াটা একদম ভুল হয়ে গেছে।

    “আমি মন্ত্রী সাহেবকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। আপাতত উনাকে ঠাণ্ডা করা গেছে কিন্তু এ ব্যাপারটা নিয়ে আর কিছু করলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে।”

    “আমি কিন্তু বলিনি উনার ছেলেকে সন্দেহ করছি। বলেছি তার ছেলে হয়তো এই খুনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানে।”

    “সেটা ঠিক আছে…কিন্তু উনি পুলিশকে ঘুষ দিয়েছেন এ কথা বলতে গেলে কেন?”

    কিছু বলল না জেফরি বেগ।

    “যাইহোক, এই কেসের চিন্তা বাদ দাও। যা করার করেছে, এখন বাকিটা পুলিশ সামলাক।”

    “কিন্তু-”

    হাত তুলে কথার মাঝখানে তাকে বাধা দিয়ে বলল ফারুক আহমেদ। “ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আমি তোমাকে খুব স্নেহ করি বলে তোমার কথা মতো এই কেসটা আবার তদন্ত করতে দিয়েছি। কিন্তু তুমি ভুলে গেছো তোমাকে বলেছিলাম এটা হবে আনঅফিশিয়ালি…কোনো কিছু করার আগে আমাকে জানাতেও বলেছিলাম।”

    চুপ করে থাকল জেফরি। হঠাৎ বিপ করে উঠল তার মোবাইল ফোনটা। আরেকটা এসএমএস! মোবাইলটা বের করে দেখল না। উঠে দাঁড়াল সে। “স্যার, আমি তাহলে আসি…”

    “ঠিক আছে, যাও। এই ফালতু কেসটা নিয়ে খামোখা মাথা ঘামানোর দরকার নেই।”

    মহাপরিচালকের রুম থেকে বের হয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখল জেফরি বেগ।

    আই কানট ফরগেট ইউ

    রেবার উপর তার কোনো রাগ নেই বরং এখন মেয়েটার জন্যে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। তার খুব ইচ্ছে করছে রেবাকে একটা মেসেজ করতে কিন্তু কী এক সংকোচে করতে পারছে না। আমিও তোমাকে ভুলতে পারছি না। এক মুহূর্তের জন্যেও না।

    “হাই।”

    একটা মিষ্টি কণ্ঠ বলে উঠলে মোবাইলের ডিসপ্লে থেকে চোখ তুলে তাকাল জেফরি। এডলিন।

    সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা পকেটে রেখে দিল সে। “কেমন আছেন?”

    “ভালো। ক্যান্টিনে যচ্ছিলেন?” এডলিন জানতে চাইল। আশেপাশে কেউ না থাকেল এই মেয়ে তাকে স্যার সম্বোধন করে না। এখনও তাই করছে।

    “না।”

    মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে, জেফরি কিছু বলছে না। মেয়েটাও কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। অস্বস্তিকর একটি অবস্থা। অবশেষে এডলিন বলল, “আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছি।”

    জেফরি বুঝতে পারছে না কি বলবে। এডলিন তার চোখের দিকে তাকাল কিছু একটা শোনার আশায়। কিন্তু জেফরি কোনো কথা না বললে বিব্রত হয়ে চলে গেল এডলিন।

    নিজের অফিসের দিকে পা বাড়াল জেফরি বেগ। অফিসের দরজার কাছে আসতেই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। এবার আর কোনো মেসেজ নয়, ইনকামিং কলের রিং। অন্যমনস্কভাবেই ফোনটা বের করে কলটা রিসিভ করল সে।

    “স্যার, ঐ লোকরে তো দ্যাকছি…” বেশ উত্তেজিত হয়ে একটা কণ্ঠ বলল তাকে।

    “কোন্ লোক?” বুঝতে না পেরে বলল সে।

    “ঐ যে আমার দোকানে আসতো…চা খাইতো?”

    “আপনি কে বলছেন!?” এখনও চিনতে পারছে না জেফরি।

    “আমি, স্যার…তালেবর মিয়া…ঐ যে আমার চা খাইয়া কইলেন খুব ভালা চা হইছে?”

    …চা? চট করে মনে পড়ে গেল তার। “ও, হাঁ, মনে পড়েছে।”

    “স্যার, আপনে বলছিলেন না ঐ লোকটারে দেখলে আপনারে খবর দিতে?”

    “হ্যা!” জেফরি নড়ে চড়ে উঠল।

    “তারে আমি দ্যাকছি, স্যার।”

    “কি??”

    .

    অধ্যায় ৪৮

    ভিটা নুভার সামনের রাস্তা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুটো ছেলে-মেয়ে পাশাপাশি কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে।

    আচমকা তাদের সামনে একটা প্রাইভেট কার ব্রেক কষলে ছেলে-মেয়ে দুটো ভড়কে গেলেও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

    গাড়ি থেকে নেমে এল পঞ্চাশোর্ধ এক জাঁদরেল লোক।

    হন হন করে এগিয়ে এসে খপ করে মেয়েটির হাত ধরে ফেললে ছেলেটা হাত তুলে তাকে বাধা দিতেই বয়স্ক লোকটি ঠাস্ করে ছেলেটার গালে চড় বসিয়ে দিল…

    কাট!

    একটা কণ্ঠ শোনা যেতেই কেঁপে উঠল পুরো দৃশ্যটা..তারপর বিশৃঙ্খলা ।

    আলম শফিককে দেখা গেল হাতে একটা ক্লিপবোর্ড নিয়ে ছেলেমেয়ে দু’জন আর বয়স্ক লোকের কাছে এগিয়ে যেতে।

    এখানেই দৃশ্যটা শেষ।

    “চড় মারার ঠিক আগ মুহূর্তের দৃশ্যটায় যাও,” পাশে বসে থাকা জামানকে বলল জেফরি বেগ।

    তারা বসে আছে জেফরির অফিসে। প্রায় দশ মিনিট ধরে একটা ডিভিডি কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ছোট্ট একটি দৃশ্য বার বার দেখছে।

    একটু আগে মিসেস রেহমানের সাথে দেখা করে এই ডিভিডিটা নিয়ে এসেছে জামান।

    ভিটা নুভার বিপরীত দিকে রাস্তার পাশে ফুটপাতে চায়ের দোকানি তালেবর মিয়া কিছুক্ষণ আগে ফোন করে যখন জানাল সে সম্ভাব্য খুনিকে দেখেছে কথাটা শুনে জেফরির মনে হয়েছিল খুনি বুঝি তার চায়ের দোকানেই এসেছিল। কিন্তু এটা তো অসম্ভব! পেশাদার একজন খুনি এ রকম বোকামি করবে না।

    তবে তার এই ভাবনার স্থায়ীত্ব ছিল খুবই অল্প সময়ের জন্যে। এরপর তালেবর মিয়া যা বলল সেটা আরো বিস্ময়কর।

    গতকাল রাতে এক টিভি চ্যানেলে সিদ্ধান্ত নামের একটি টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছে। সেখানে একটি দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছিল ভিটা নুভার সামনে। সেই দৃশ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তালেবর মিয়ার চায়ের দোকান দেখা গেছে…আর সেই সাথে দেখা গেছে ওখানে বসে থাকা সম্ভাব্য সেই খুনিকে!

    এক মনে চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছে।

    মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটি দৃশ্য।

    তালেবর মিয়ার কথার সূত্র ধরে জেফরি নিজে ঐ টিভি চ্যানেলে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে কাকতালীয়ভাবেই টেলিফিল্মটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বি.জে এন্টারটেইনমেন্ট, যার সত্ত্বাধিকারী প্রয়াত লেখক জায়েদ রেহমান এবং মিসেস রেহমান।

    ঐ চ্যানেলে জেফরির কলেজ জীবনের এক বন্ধু বেশ উঁচুপদে চাকরি করে, জেফরি যখন তাকে সব খুলে বলল তখন সেই বন্ধুই তাকে জানাল টেলিফিল্মটিতে ঐ দৃশ্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য আছে, আর সেখানে লোকটার শুধুমাত্র এক পাশই দেখা গেছে, ভালো হয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে টেলিফিল্মের ফুটেজ সংগ্রহ করলে। রাশ ফুটেজে নিশ্চয় আরো ভালোভাবে দেখা যাবে লোকটাকে।

    বন্ধুর কথা মতোই মিসেস রেহমানকে ফোন করে সেই টেলিফিল্মের ফুটেজ চায় জেফরি, তবে ভদ্রমহিলাকে পুরো ব্যাপারটি খুলে বলেনি সে।

    মহিলা একটু অবাক হলেও তার অনুরোধ রক্ষা করেছে।

    জামান ফুটেজের একটি জায়গা স্থির করে রাখলে জেফরি একটু কাছে এগিয়ে ভালো করে দেখল। “হ্যাঁ, ঠিক এই অ্যাঙ্গেল থেকেই পুরো চেহারাটা দেখা যাচ্ছে।”

    বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুটো ছেলেমেয়ে পাশাপাশি হাঁটছে। তাদের পেছনে ফুটপাতে একটা চায়ের দোকান ফ্রেমে ঢুকে পড়েছে। এটা তালেবর মিয়ার দোকান। সেখানে একজনই ক্রেতা পত্রিকা হাতে আপন মনে চা খাচ্ছে। ঠিক এই দৃশ্যটায় এসে যুবক মুখ তুলে ক্যামেরার দিকে তাকিয়েছিল।

    দেবদূতের মতো চেহারার এক যুবক।

    সম্ভাব্য খুনি!

    এই সেই যুবক যে কি না ভিটা নুভার সামনে দিনের পর দিন তালেবর মিয়ার চায়ের দোকানে বসে পুরো অ্যাপার্টমেন্টটি পর্যবেক্ষণ করে গেছে। এই যুবকই মোবাইলফোনের টাওয়ারের মেইনটেনান্স ক্রু সেজে ঢুকেছিল, পরে ভোর বেলা জায়েদ রেহমানের খুন হবার পর ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার ভান করে ভিটা নুভা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।

    জেফরি নিশ্চিত এই সেই পেশাদার খুনি…লেখক জায়েদ রেহমানকে যে খুন করেছে।

    বার বার চেহারাটা দেখে গেল সে। তার সহকারী জামান বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। এভাবে এতো দ্রুত সম্ভাব্য খুনিকে নিজের চোখে দেখতে পাওয়াটা বিস্ময়করই বটে।

    “ঠিক এই ফ্রেম থেকেই স্টিলছবি নেবে,” জামানকে বলে গেল জেফরি বেগ। “জুম করে আরো কাছে আনা যাবে না?”

    “যাবে,” পর্দার দিকে চেয়েই বলল জামান।

    “ডিপার্টমেন্টের কাউকে কিছু বোলো না।”

    পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে জামান তার দিকে তাকাল।

    “আপাতত ব্যাপারটা তোমার আর আমার মধ্যেই রাখবে।”

    “ফারুক স্যারকে জানাবেন না?”

    “এখন না।”

    “ছবিটার কয়টি প্রিন্ট করবো, স্যার?”

    একটু ভেবে বলল জেফরি, “দুটো।”

    “এরপর কি করবেন?”

    “আমাদের আবারো ভিটা নুভায় যেতে হবে।”

    *

    এক ঘণ্টা পর ভিডিও ফুটেজ থেকে দুটো ছবি প্রিন্ট করে জামানকে সঙ্গে নিয়ে ভিটা নুভায় চলে এসেছে ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ। নাইটগার্ড আসলাম আর দারোয়ান মহব্বত দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে।

    জেফরি প্রথমে মহব্বতকে ছবিটা দেখাল। “দ্যাখো তো, এই লোকটাকে চিনতে পারো কি না?”

    ছবিটা হতে নিয়ে ভালো করে দেখে নিলো মহব্বত। “হ, স্যার। এইটা তো টাওয়ারের ঐ লোকটাই মনে হইতাছে!”

    “গুড।” এরপর আসলামকে দেখালে ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে। “হানিফ সাহেবের পেছন পেছন যে লোকটাকে তুমি বের হয়ে যেতে দেখেছো…এই লোকটা কি সেই লোক?”

    মাথা নেড়ে সায় দিল সে। “হ।”

    দারোয়ান দুজনকে বিদায় করে দিয়ে জেফরি আর জামান ভিটা নুভা থেকে বের হয়ে তালেবর মিয়ার চায়ের দোকানে চলে এল।

    চা খেতে খেতে কথা বলতে শুরু করল জেফরি।

    “শুটিং যেদিন হয় সেদিনের কথা কি তোমার মনে আছে, তালেবর?”

    “হ, স্যার। বেশি দিন আগের ঘটনা তো না। এই বাড়ির সামনে শুটিং হইতাছিল। রাস্তাটা এক্কেবারে নিরিবিলি আছিল ঐ দিন। আমি দোকান থেইকা বইসা বইসা তামশা দেখতাছিলাম…এমন সময় ঐ লোকটা আইলো। সেও বইসা বইসা তামশা দেখতে থাকল। তারপর আস্থা উইঠা চায়ের বিল দিয়া চইলা গেল।”

    চায়ে চুমুক দিয়ে বলল জেফরি, “লোকটা কোন দিক থেকে তোমার এখানে আসতো… চলে যেতো কোন্ দিকে?”

    “উমমম..আসতো ঐদিক থেইকা,” রাস্তার পশ্চিম দিকে নির্দেশ করে বলল। “আবার ঐদিকেই চইলা যাইতো, স্যার।”

    মাথা নেড়ে সায় দিল জেফরি। “কখনও কি দিনে দু’তিনবার আসতো?”

    “তা আসতো…মাজেমইদ্যে।”

    “সব সময় কি একাই আসতো?”

    “হ।”

    “সিগারেট খেতো?”

    “হ, খাইতো।”

    “পরনের জামাকাপড় কি খুব ফিটফাট থাকতো?”

    “সব সময়ই ফিটফাট থাকতো, স্যার।”

    “কোন্ পত্রিকা পড়তো?”

    “ইত্তেফাক।”

    “গুড।” জেফরি চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালে তার সাথে সাথে জামানও উঠে দাঁড়াল। চায়ের বিল দেবার সময় বলল, “তুমি অনেক বুদ্ধিমান একটা লোক। অনেক উপকার করেছে।”

    আনন্দে বিগলিত হয়ে উঠল তালেবর।

    তালেবর মিয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে চায়ের দামসহ কিছু বখশিস দিয়ে দিল সে। লোকটা অবশ্য প্রথমে টাকা নিতে না চাইলেও জেফরি জোর করলে আর না করল না।

    “আজ আসি। পরে দেখা হবে।”

    তালেবর মিয়ার ওখান থেকে সোজা পশ্চিম দিক ধরে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে জেফরি বেগ আর জামান।

    “আমার ধারণা সে আশেপাশেই কোথাও থাকতো,” বলল জেফরি।

    “আমারও তাই মনে হচ্ছে, স্যার।”

    “আশেপাশে লন্ড্রি আর সিগারেটের দোকান দেখলে তাদের কাছে ছবিটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে।”

    জামান সামনের দিকে তাকাল। “এই জায়গাটা আমি চিনি, স্যার। সামনেই একটা সিগারেটের দোকান আছে। আর বা দিকে মোড় নিলেই একটা লন্ড্রির দোকান।”

    সিগারেটের দোকানিকে ছবিটা দেখালে চিনতে পারল না।

    “সিগারেট বোধহয় তালেবরের কাছ থেকেই কিনতো,” জেফরি বলল।

    আরো সামনে এগিয়ে বায়ে মোড় নিতেই হাতের ডানে একটা লন্ড্রির দোকান দেখা গেল। একটা ছবি নিয়ে জামানই এগিয়ে গেল কথা বলার জন্য, জেফরি আর দোকানের ভেতর ঢুকলো না।

    বয়স্ক এক লোক বসে আছে দোকানে। জামান তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ছবিটা দেখালে লোকটা মাথা নেড়ে সায় দিল। দোকানের বাইরে থেকে জেফরি দৃশ্যটা দেখে এগিয়ে গেল সেদিকে।

    “স্যার, ইনি বলছেন এই লোককে চেনেন,” জেফরিকে দোকানের ভেতর ঢুকতে দেখে জামান বলল। “তবে কোন্ বাড়িতে থাকেন জানেন না। খুব সম্ভবত আশেপাশেই থাকেন।”

    আশেপাশের অনেকগুলো বাড়ির দারোয়ানকে ছবিটা দেখাল তারা, কেউ চিনতে পারল না।

    এভাবে খুঁজে যে পাওয়া যাবে না সেটা জেফরিও জানে। ডিপার্টমেন্টের সাহায্য ছাড়া এ রকম একজন লোককে ট্র্যাকডাউন করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কিন্তু এ মুহূর্তে ডিপার্টমেন্টকে এ ব্যাপারে কিছু জানাতে চাচ্ছে না সে।

    চট করেই একটা নাম তার মাথায় এসে পড়ল।

    সিদ্ধান্ত নিলো হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদকে সব খুলে বলার আগে আরেকজনের সাথে এ নিয়ে কথা বলবে।

    .

    অধ্যায় ৪৯

    ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক দিলান মামুদ সারাটা দিন ডক্টর জেডের সাথে ছিল। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি সংক্রান্ত এক সমস্যা নিয়ে ডক্টর খুব ব্যস্ত আছেন। এই রহস্যময় পণ্ডিতব্যক্তির সাথে যখনই থাকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে সে। আজও তাই করেছে।

    অবশেষে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে এলে বন্ধ থাকা মোবাইলফোনটা চালু করতেই দেখতে পেল একটা মেসেজ জমে আছে ইনবক্সে।

    জেফরি বেগ!

    মেসেজটা ওপেন করল সে।

    ইংরেজিতে লিখেছে। বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় :

    কল করে পাইনি। মেইল চেক করে দেখুন। জরুরি।

    দিলানের ইচ্ছে হলো কলব্যাক করার কিন্তু মেইলে কি আছে সেটা জানতে কৌতূহলী হয়ে উঠল সে।

    মেইলটা খুব সংক্ষিপ্ত। সাথে একটা ইমেজ অ্যাটাচ করা আছে।

    এই ছবির লোকটিকে যদি চিনে থাকেন আমাকে জানান। খুব জরুরি।

    সঙ্গে সঙ্গে অ্যাটাচ করা ছবিটা ওপেন করে দেখল সে। তার চোখের কোনো পলক পড়ল না। মাইগড!

    কম্পিউটারের ঘড়ির দিকে তাকাল। ১২:০৫

    এতো রাতে কি ফোন করা ঠিক হবে? ভাবলো দিলান মামুদ। তবে এটাও তো ঠিক ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ তার মতোই অবিবাহিত। অবশেষে ফোনটা তুলে নিয়ে ডায়াল করল সে।

    *

    জেফরি বেগের চোখে ঘুম নেই। এক সপ্তাহ ধরেই তার ঘুম ভালো হচ্ছে না। চোখের নিচটা কালচে হতে শুরু করেছে। রেবার বিয়ে হবার খবরটা শোনার পর থেকেই ঘুমে ব্যাঘাত হচ্ছে। একা থাকে, নিজের ঘরে এসে বিছানায় শুতে গেলেই নানান কথা মনে পড়ে। পুরনো সেসব স্মৃতি আরো দীর্ঘ করে তোলে নিঃসঙ্গ রাতটাকে।

    তবে আজকে রেবার জন্য নয়, জায়েদ রেহমানের হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে ভেবে যাচ্ছে সে। বিরাট অগ্রগতি হয়েছে আজ। সম্ভাব্য খুনির ছবি এখন তার হাতে। জেফরি নিশ্চিত এই খুনি পেশাদার কেউ।

    একজন পেশাদার খুনি দীর্ঘদিন ধরে লেখকের অ্যাপার্টমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে গেছে…তারপর প্রথমে আইপিএস সার্ভিসম্যান সেজে জায়েদ রেহমানের ঘরে ঢুকে দেখে এসেছে…অবশেষে ভিটা নুভার ছয় তলার উপর মোবাইলফোন কোম্পানির টাওয়ারের মেইনটেনান্স ক্রু সেজে দারোয়ান বদলি হবার ঠিক আগে সেখানে ঢুকে পড়েছে। খুব সম্ভবত টাওয়ারের উপরেই লুকিয়ে ছিল সে…তারপর রাত গম্ভীর হলে সেখান থেকে নেমে জায়েদ রেহমানের ঘরে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু কিভাবে?

    এটা এখনও জেফরি জানে না। তবে খুনি খুন করার পর আবার নিজের জায়গায় ফিরে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে মোক্ষম সময়ের জন্যে…আর সেই মোক্ষম সময়টি হলো ভোরবেলা…ফজরের আজানের পর পর!

    তাকে চমকে দিয়ে মোবাইল ফোনটা বাজতে শুরু করল এ সময়। ফোনটা তুলে নিলো সে।

    দিলান মামুদ!

    আজ সারা দিনে অনেকবার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তার মোবাইলফোন বন্ধ ছিল। শেষে খুনির ছবিটা তাকে মেইল করে দিয়েছে।

    “হ্যালো?” জেফরি বলল।

    “ছবিটা কোত্থেকে পেলেন?” সময় নষ্ট না করে সরাসরি জানতে চাইল দিলান মামুদ। তার কণ্ঠে উদ্বেগ।

    “লম্বা কাহিনী…আপনি তাকে চেনেন??”

    “হ্যাঁ।”

    বিছানা থেকে উঠে বসল জেফরি। “কে সে!?”

    “আগে আমাকে বলেন আপনি তাকে খুঁজছেন কেন?”

    “জায়েদ রেহমানের কেসে-”

    “জায়েদ রেহমানের খুন…?” তার কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল দিলান।

    “হ্যাঁ।”

    “মিসেস রেহমান আর তার ঐ প্রেমিক না খুনটা করেছে!?”

    “এর মাঝখানে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে…পরে আপনাকে সব বলবো। এখন বলুন এই লোকটা কে?”

    “ভয়ঙ্কর এক খুনি। একেবারে প্রফেশনাল। খুবই বিপজ্জনক লোক…”

    “আমিও তাই ধারণা করেছিলাম। লোকটার নাম কি? কোথায় থাকে?”

    “বাস্টার্ড!” আস্তে করে বলল দিলান মামুদ।

    “কী!?

    “ওর নাম। এটা যে আসল নাম না সেটা জানি, কিন্তু অল্প যে কয়েক জন মানুষ তাকে চেনে এ নামেই চেনে।”

    “থাকে কোথায়?” আবারো জানতে চাইল জেফরি ।

    “সেটা আমি জানি না…তবে তার ব্যাপারে খুব সাবধানে এগোবেন। খুবই বিপজ্জনক লোক।”

    “পেশাদার খুনি, বিপজ্জনক তো হবেই,” বলল জেফরি।

    “আমি আপনাকে নিয়ে আশঙ্কা করছি। সে আপনার পেছনে লাগতে পারে।”

    “আমার পেছনে!?”

    “হ্যাঁ সে যদি জানতে পারে আপনি তাকে খুঁজছেন তাহলে আপনার জন্য সেটা ভালো হবে না।”

    “এটা সে কি করে জানবে?”

    “সে জানবে। যেভাবেই হোক জেনে যাবে এটা।” একটু থেমে আবার বলল, “আপনি খুব সাবধানে থাকবেন।”

    দিলান মামুদের সাথে ফোনে কথা বলার পর জেফরি একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। এভাবে আনঅফিশিয়ালি তদন্ত করাটা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }