দমনক ও পিঙ্গলক
দক্ষিণ ভারতের এক প্রাচীন নগর-মহিলারোপ্য। সেখানে বাস করত এক বণিক-নাম বর্ধমান। তার অনেক টাকা। কিন্তু আরও টাকা চাই। কারণ টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। টাকা থাকলে সবই হয়। আত্মীয় হয়। বন্ধু হয়। বিদ্যা হয়। যশ হয়। মান হয়। পর আপন হয়। বৃদ্ধ যুবক হয়। কি-না হয়? তাই ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ’—একথা ভেবে সে স্থির করল—বাণিজ্যে যাবে।
কিন্তু কিসের বাণিজ্য করবে? অনেক ভাবল। তারপর স্থির হলো-গন্ধদ্রব্যের, কারণ মথুরায় তখন এর খুব চাহিদা। তাই বাড়ির দুটি ষাঁড় সঞ্জীবক ও নন্দনককে জোয়ালে জুড়ে রওনা দিল। সঙ্গে বণিকদল।
যমুনার তীর ধরে যাচ্ছে। রাধা-কৃষ্ণের লীলাভূমি এই যমুনার কূল। এর স্নিগ্ধ বাতাসে সকলের মন ভরে গেল।
হঠাৎ যমুনার জলাভূমিতে কাদায় পড়ে গেল সঞ্জীবক। পা মচকে জোয়াল ভেঙ্গে বসে পড়ল। বর্ধমানের খুব কষ্ট হলো! কারণ সঞ্জীবককে সে খুব ভালোবাসে। সঞ্জীবক সেরে উঠবে এই আশায় যাত্রা তিনদিন বন্ধ রাখা হলো। কিন্তু সঞ্জীবক সারছে না। দলের লোকেরা বলল—শেঠজি, এ বনে বাঘ আছে, সিংহ আছে। তুচ্ছ একটা ষাঁড়ের জন্য গোটা দলকেই বিপদে ফেলবেন! তাছাড়া অনেক পাওয়ার আশায় যে একটু ছাড়ে, কিংবা একটু ছেড়ে যে অনেক রাখে, সে-ইতো বুদ্ধিমান।
সত্য কথা! কিন্তু সে এখন কি করবে? একদিকে জীবনের মায়া, অন্যদিকে ভালোবাসা। শেষমেশ সঞ্জীবকের জন্য কয়েকজন পাহারাদার রেখে বর্ধমান চলে গেল।
কিন্তু চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা। একটা ষাঁড়ের জন্য তারা বেঘোরে প্রাণ দেবে কেন? তাই পরের দিন দলে ফিরে গিয়ে বর্ধমানকে বলল—শেঠজি, সঞ্জীবক মারা গেছে; আমরা তার সৎকার করে এসেছি।
শুনে বর্ধমান খুব কষ্ট পেল।
এদিকে যমুনার ঠাণ্ডা শিরশিরে হাওয়ায় ক্লান্তি দূর হলে সঞ্জীবক উঠে তীরের দিকে গেল। সেখানে পান্নার মতো কচিকচি ঘাস খেয়ে অল্পদিনেই সে শিবের বাহনের মতো নাদুস-নুদুস হয়ে উঠল। গায়ে এখন তার দ্বিগুণ বল। শিং দিয়ে উইয়ের ঢিবি ভাঙ্গে আর বিকট গর্জন করে।
এমন সময় যমুনায় জল খেতে আসছিল পিঙ্গলক নামে এক সিংহ—বনের রাজা। সঙ্গে তার দলবল। যমুনার পাড়ে এক অজানা জন্তুর গর্জন শুনে রাজার পিলে গেল চমকে কিসের জল খাওয়া! তেষ্টার চেয়ে জানটাই যে বড়! তাই সদলবলে ফিরে গেল বনের মধ্যে।
দূর থেকে এ ঘটনা দেখতে পেল করটক ও দমনক নামে দুই শেয়াল। ওরা দু-ভাই। পিঙ্গলকেরই মন্ত্রীর ছেলে। রাজার চাকরি করত। এখন বেকার।
দমনক বলল: চল ভাই, দেখে আসি ঘটনা কি? মহারাজ যে জল না খেয়েই ফিরে এল।
করটক বলল: রাজা-বাদশাদের ব্যাপার! কি দরকার এতে নাক গলানো? যার যা কাজ নয় তা করতে গেলে মরণ অনিবার্য—যেমন হয়েছিল ঐ গোঁজ-ওপড়ানো বানরের। দমনক: কি হয়েছিল?
করটক: শোন, বলছি…