হাঁস ও কচ্ছপ
এক জলাশয়ে থাকত এক কচ্ছপ। নাম তার কম্বুগ্রীব। শাঁখের মতো গলা বলে এই নাম।
সেখানে আরও থাকত দুটি হাঁস—সঙ্কট আর বিকট। তিনজনে ভীষণ ভাব। কত গল্প করে তারা—রাজা-রানি-রাজপুত্র-রাজকন্যা, আরও কত কি। সন্ধ্যা হলে আবার যার—যার ঘরে ফিরে যায়। এভাবেই সুখে কাটছিল তাদের দিন।
একবার ভীষণ অনাবৃষ্টি দেখা দিল। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির! চারদিক খাঁ-খাঁ করছে! পশু-পাখির জিহ্বা ভেতরে যাচ্ছে না! জলাশয়ের জলও গেছে শুকিয়ে। সঙ্কট আর বিকট কচ্ছপকে বলল: বন্ধু, তোমার কথা ভেবে তো আমরা অস্থির! এখন কি করি, বল তো?
কচ্ছপ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল: জল বিনে তো আমার গতি নেই, তাই উপায় একটা ভাব। কথায় বলে না:
সঙ্কটে যে ধৈর্য ধরে বুদ্ধি দিয়ে ভাবে।
বিপদে সে বাঁচার মতো উপায় খুঁজে পাবে।।
দেখ— সমুদ্রে জাহাজ ডুবলে সাহসীরা বাঁচার চেষ্টা করে, কিন্তু ভীতরা? সঙ্গেই সঙ্গেই ডুবে যায়। আর চাণক্য বলেছেন না:
সে-ই বন্ধু যে পাশে থাকে সুদিনে দুর্দিনে।
দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে কিংবা রাজদ্বারে শ্মশানে।।
তোমরা তো আমার পরম বন্ধু। তাই উপায় একটা নিশ্চয়ই ভাববে।
কচ্ছপের কথা শুনে হংসদ্বয় কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল: বন্ধু, ঠিক বলেছ। উপায় একটা হবেই।
একথা বলে তারা বাসায় ফিরে গেল এবং পরের দিন এসে বলল: আর চিন্তা নেই। ঐ দূরে বিশাল এক জলাশয় দেখে এসেছি। হাজার বছরও বৃষ্টি না হলে তলা জাগবে না। ভাবছি, তোমাকে ওখানেই নিয়ে যাব। ওটাই হবে আমাদের নতুন আবাস। কথামতো কাজ এগিয়ে চলল। হাঁসদুটি একটি শক্ত কাঠ এনে কচ্ছপকে বলল: বন্ধু, তুমি এর মাঝখানটা শক্ত করে কামড়ে ধরবে, আর আমরা দু-দিক ধরে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাব। তবে সাবধান! কথা বললে কিন্তু মহাবিপদ! পড়ে গিয়ে মারা যাবে! কচ্ছপ বলল: তা-ই হবে।
এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বন্ধু উড়ে চলল। অনেকটা পথ পার হয়ে এসেছে। নতুন ঠিকানার প্রায় কাছাকাছি। তারা তখন এক নগরের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। নগরবাসীরা এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে হৈ-চৈ করে উঠল। তা শুনে কচ্ছপ যেই বলতে যাচ্ছিল—কিসের গোলমাল অমনি ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসীরা দৌড়ে এসে ধরে নিয়ে কেটে খেয়ে ফেলল।
টিট্টিভী বলল: তাই বলছিলুম— হিতৈষীর কথা না শুনলে এভাবেই মরতে হয়। তাছাড়া:
স্ববুদ্ধি ক্ষণবুদ্ধি দৈববুদ্ধি আর।
আদি দুই বাঁচে, মরে শেষে নাম যার।।
টিট্টিভ বলল: সে আবার কি?
টিট্টিভী বলল: শোনো তাহলে…