কাক ও কেউটে
এক বনের ধারে ছিল এক বিশাল বটগাছ। সেখানে বাস করত এক কাক-দম্পতি। গাছের কোটরে থাকত এক কেউটে সাপ। প্রতিবারই কাকী ডিম পাড়ত আর বাচ্চা ফুটত। কিন্তু ঐ কেউটে এসে বাচ্চাগুলো খেয়ে ফেলত।
ঐ গাছের তলায় থাকত এক শেয়াল। তার সঙ্গে আবার কাক-দম্পতির ছিল গভীর বন্ধুত্ব। একদিন কাক-দম্পতি শেয়ালকে বলল: বন্ধু, তোমার সান্নিধ্যে ভালই ছিলাম! কিন্তু আর বুঝি এ-বনে আমাদের থাকা হলো না!
শেয়াল উদ্বেগের সঙ্গে বলল: কেন, বন্ধু! কি হয়েছে?
কাক বিমর্ষভাবে বলল: প্রতিবারই আমাদের বাচ্চা হয়, আর ঐ কেউটে বেটা কোটর থেকে এসে খেয়ে ফেলে! কাজেই এ অবস্থায় আর এখানে থাকি কি করে? কথায় বলে না:
নদীর ধারে ধানক্ষেত পরাসক্ত পরিবার।
সাপের সঙ্গে বসবাস কিসে হবে শান্তি তারা ॥
শেয়াল একটু ভেবে বলল: কিচ্ছু চিন্তা করো না, বন্ধু। কৌশলে সব করতে হবে। দেখ, অনেক সময় অস্ত্র-শস্ত্রে যা না হয়, কৌশলে তা সম্ভব হয়। কৌশল জানলে ক্ষুদ্র হয়েও বীরের সঙ্গে লড়া যায়, তাকে কুপোকাৎ করা যায়।
কাক-দম্পতি বলল: তা উপায়টা কি, শুনি! যদি কোনো উপায় করতে পার তাহলে আর তোমায় ছেড়ে যাব কোথায়?
শেয়াল: তোমরা নগরে যাও। দেখ, কোনো বড়লোকের স্ত্রী বা মেয়ের একটি দামি হার পাওয়া কি-না। পেলে সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে উড়ে আসবে, যাতে তারা দেখতে পায় তোমরা কোন দিকে আসছ। হারটা এনে কেউটের কোটরের মুখে রাখবে। তারপর দেখ কি হয়।
শেয়ালের কথামতো বায়স-দম্পতি ছুটে চলল নগরের দিকে। উড়তে উড়তে এক জায়গায় দেখে এক রাজার দুলালি মুক্তো-বসানো একটি সোনার হার খুলে রেখে স্নান করছে। কাল বিলম্ব না করে শাঁ করে নেমে কাকটি হারটি নিয়ে উড়ে এল। রাজার লোকেরা তার পেছনে পেছনে ছুটল। কাকটি হারটি এনে সাপের কোটরে রাখল। তা দেখে রাজার লোকেরা গাছে উঠে হারটি নামিয়ে নিল, আর কোটরে সাপটাকে দেখে মেরে ফেলল। এরপর থেকে কাক-দম্পতি সুখে বসবাস করতে লাগল।
দমনক খুব দৃঢ়তার সঙ্গে মাথা নেড়ে বলল: তাই বলছিলুম, গায়ের জোরে যা না হয়, কৌশলে তা সম্ভব।
করটক বলল: কিন্তু পিঙ্গলক বনের রাজা। অসীম তার শক্তি! সঞ্জীবকেরও বিশাল দেহ। এদের সঙ্গে তুমি পারবে কি করে?
দমনক: দেখ, শুধু শক্তি আর দেহ থাকলেই হয় না, বুদ্ধিই প্রধান। তা নাহলে হাতি কারো বশ হতো? কারো হাতে তার মৃত্যু হতো? কথায় বলে না—
বুদ্ধি যার বল তার নির্বুদ্ধির কোথা বল।
শশক হাতে পশুরাজ গেল তাই রসাতল ॥
করটক: কিভাবে?
দমনক: বলছি, শোন…