Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পঞ্চভূত – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক পাতা গল্প153 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ভদ্রতার আদর্শ

    স্রোতস্বিনী কহিল– দেখো, বাড়িতে ক্রিয়াকর্ম আছে, তোমরা ব্যোমকে একটু ভদ্রবেশ পরিয়া আসিতে বলিয়ো।

    শুনিয়া আমরা সকলে হাসিতে লাগিলাম। দীপ্তি একটু রাগ করিয়া বলিল– না, হাসিবার কথা নয়; তোমরা ব্যোমকে সাবধান করিয়া দাও না বলিয়া সে ভদ্রসমাজে এমন উন্মাদের মতো সাজ করিয়া আসে। এ সকল বিষয়ে একটু সামাজিক শাসন থাকা দরকার।

    সমীর কথাটাকে ফলাইয়া তুলিবার অভিপ্রায়ে জিজ্ঞাসা করিল– কেন দরকার?

    দীপ্তি কহিল– কাব্যরাজ্যে কবির শাসন যেমন কঠিন– কবি যেমন ছন্দের কোনো শৈথিল্য, মিলের কোনো ত্রুটি, শব্দের কোনে রূঢ়তা মার্জনা করিতে চাহে না– আমাদের আচারব্যবহার বসনভূষণ সম্বন্ধে সমাজ-পুরুষের শাসন তেমনি কঠিন হওয়া উচিত, নতুবা সমগ্র সমাজের ছন্দ এবং সৌন্দর্য কখনোই রক্ষা হইতে পারে না।

    ক্ষিতি কহিল– ব্যোম বেচারা যদি মানুষ না হইয়া শব্দ হইত তাহা হইলে এ কথা নিশ্চয় বলিতে পারি, ভট্টিকাব্যেও তাহার স্থান হইত না; নিঃসন্দেহ তাহাকে মুগ্ধবোধের সূত্র অবলম্বন করিয়া বাস করিতে হইত।

    আমি কহিলাম– সমাজকে সুন্দর সুশিষ্ট সুশৃঙ্খল করিয়া তোলা আমাদের সকলেরই কর্তব্য সে কথা মানি, কিন্তু অন্যমনস্ক ব্যোম বেচারা যখন সে কর্তব্য বিস্মৃত হইয়া দীর্ঘ পদবিক্ষেপে চলিয়া যায় তখন তাহাকে মন্দ লাগে না।

    দীপ্তি কহিল– ভালো কাপড় পরিলে তাহাকে আরও ভালো লাগিত।

    ক্ষিতি কহিল– সত্য বলো দেখি, ভালো কাপড় পরিলে ব্যোমকে কি ভালো দেখাইত? হাতির যদি ঠিক ময়ূরের মতো পেখম হয় তাহা হইলে কি তাহার সৌন্দর্যবৃদ্ধি হয়। আবার ময়ূরের পক্ষেও হাতির লেজ শোভা পায় না– তেমনি আমাদের ব্যোমকে সমীরের পোশাকে মানায় না, আবার সমীর যদি ব্যোমের পোশাক পরিয়া আসে উহাকে ঘরে ঢুকিতে দেওয়া যায় না।

    সমীর কহিল– আসল কথা, বেশভূষা আচারব্যবহারের স্খলন যেখানে শৈথিল্য, অজ্ঞতা ও জড়ত্ব সূচনা করে সেইখানেই তাহা কদর্য দেখিতে হয়। সেইজন্য আমাদের বাঙালিসমাজ এমন শ্রীবিহীন। লক্ষ্মীছাড়া যেমন সমাজছাড়া তেমনি বাঙালিসমাজ যেন পৃথ্বীসমাজের বাহিরে। হিন্দুস্থানীয় সেলামের মতো বাঙালির কোনো সাধারণ অভিবাদন নাই। তাহার কারণ, বাঙালি কেবল ঘরের ছেলে, কেবল গ্রামের লোক; সে কেবল আপনার গৃহসম্পর্ক এবং গ্রামসম্পর্ক জানে, সাধারণ পৃথিবীর সহিত তাহার কোনো সম্পর্ক নাই– এজন্য অপরিচিত সমাজে সে কোনো শিষ্টাচারের নিয়ম খুঁজিয়া পায় না। একজন হিন্দুস্থানি ইংরাজকেই হউক আর চীনেম্যানকেই হউক ভদ্রতাস্থলে সকলকেই সেলাম করিতে পারে– আমরা সে স্থলে নমস্কার করিতেও পারি না, সেলাম করিতেও পারি না, আমরা সেখানে বর্বর। বাঙালি স্ত্রীলোক যথেষ্ট আবৃত নহে এবং সর্বদাই অসম্বৃত– তাহার কারণ, সে ঘরেই আছে, এইজন্য ভাশুর-শ্বশুর-সম্পর্কীয় গৃহপ্রচলিত যে-সকল কৃত্রিম লজ্জা তাহা তাহার প্রচুর পরিমাণেই আছে, কিন্তু সাধারণ ভদ্রসমাজসংগত লজ্জা সম্বন্ধে তাহার সম্পূর্ণ শৈথিল্য দেখা যায়। গায়ে কাপড় রাখা বা না-রাখার বিষয়ে বাঙালি পুরুষদেরও অপর্যাপ্ত ঔদাসীন্য; চিরকাল অধিকাংশ সময় আত্মীয়সমাজে বিচরণ করিয়া এ সম্বন্ধে একটা অবহেলা তাহার মনে দৃঢ় বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। অতএব বাঙালির বেশভূষা চাল চলনের অভাবে একটা অপরিমিত আলস্য শৈথিল্য স্বেচ্ছাচার ও আত্মসম্মানের অভাব প্রকাশ পায়, সুতরাং তাহা যে বিশুদ্ধ বর্বরতা তাহাতে আর সন্দেহ নাই।

    আমি কহিলাম– কিন্তু সেজন্য আমরা লজ্জিত নহি। যেমন রোগবিশেষে মানুষ যাহা খায় তাহাই শরীরের মধ্যে শর্করা হইয়া উঠে, তেমনি আমাদের দেশের ভালোমন্দ সমস্তই আশ্চর্য মানসিক-বিকার-বশত কেবল অতিমিষ্ট অহংকারের বিষয়েই পরিণত হইতেছে। আমরা বলিয়া থাকি আমাদের সভ্যতা আধ্যাত্মিক সভ্যতা, অশনবসনগত সভ্যতা নহে, সেইজন্যই এই-সকল জড় বিষয়ে আমাদের এত অনাসক্তি।

    সমীর কহিল– উচ্চতম বিষয়ে সর্বদা লক্ষ স্থির রাখাতে নিম্নতন বিষয়ে যাঁহাদের বিস্মৃতি ও ঔদাসীন্য জন্মে তাঁহাদের সম্বন্ধে নিন্দার কথা কাহারও মনেও আসে না। সকল সভ্যসমাজেই এরূপ এক সম্প্রদায়ের লোক সমাজের বিরল উচ্চশিখরে বাস করিয়া থাকেন। অতীত ভারতবর্ষে অধ্যয়ন-অধ্যাপন-শীল ব্রাহ্মণ এই-শ্রেণী-ভুক্ত ছিলেন; তাঁহারা যে ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের ন্যায় সাজসজ্জা ও কাজকর্মে নিরত থাকিবেন এমন কেহ আশা করিত না। য়ুরোপেও সে সম্প্রদায়ের লোক ছিল এবং এখনো আছে। মধ্যযুগের আচার্যদের কথা ছাড়িয়া দেওয়া যাক, আধুনিক য়ুরোপেও নিউটনের মতো লোক যদি নিতান্ত হাল ফ্যাশানের সান্ধ্যবেশ না পারিয়াও নিমন্ত্রণে যান এবং লৌকিকতার সমস্ত নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন না করেন, তথাপি সমাজ তাঁহাকে শাসন করে না, উপহাস করিতেও সাহস করে না। সর্বদেশে সর্বকালেই স্বল্পসংখ্যক মহাত্মা লোকসমাজের মধ্যে থাকিয়াও সমাজের বাহিরে থাকেন, নতুবা তাঁহারা কাজ করিতে পারেন না এবং সমাজও তাঁহাদের নিকট হইতে সামাজিকতার ক্ষুদ্র শুল্কগুলি আদায় করিতে নিরস্ত থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে বাংলাদেশে, কেবল কতকগুলি লোক নহে, আমরা দেশসুদ্ধ সকলেই সকল-প্রকার স্বভাববৈচিত্র্য ভুলিয়া সেই সমাজাতীত আধ্যাত্মিক শিখরে অবহেলে চড়িয়া বসিয়া আছি। আমরা ঢিলা কাপড় এবং অত্যন্ত ঢিলা আদব-কায়দা লইয়া দিব্য আরামে ছুটি ভোগ করিতেছি– আমরা যেমন করিয়াই থাকি আর যেমন করিয়াই চলি তাহাতে কাহারও সমালোচনা করিবার কোনো অধিকার নাই– কারণ, আমরা উত্তম মধ্যম অধম সকলেই খাটো ধুতি ও ময়লা চাদর পরিয়া নির্‌গুণ ব্রহ্মে লয় পাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া বসিয়া আছি।

    হেনকালে ব্যোম তাহার বৃহৎ লগুড়খানি হাতে করিয়া আসিয়া উপস্থিত। তাহার বেশ অন্য দিনের অপেক্ষাও অদ্ভুত; তাহার কারণ, আজ ক্রিয়াকর্মের বাড়ি বলিয়াই তাহার প্রাত্যহিক বেশের উপরে বিশেষ করিয়া একখানা অনির্দিষ্ট-আকৃতি চাপকান গোছের পদার্থ চাপাইয়া আসিয়াছে; তাহার আশপাশ হইতে ভিতরকার অসংগত কাপড়গুলার প্রান্ত স্পষ্ট দেখা যাইতেছে– দেখিয়া আমাদের হাস্য সম্বরণ করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল এবং দীপ্তি ও স্রোতস্বিনীর মনে যথেষ্ট অবজ্ঞার উদয় হইল।

    ব্যোম জিজ্ঞাসা করিল– তোমাদের কী বিষয়ে আলাপ হইতেছে?

    সমীর আমাদের আলোচনার কিয়দংশ সংক্ষেপে বলিয়া কহিল– আমরা দেশসুদ্ধ সকলেই বৈরাগ্যের “ভেক” ধারণ করিয়াছি।

    ব্যোম কহিল– বৈরাগ্য ব্যতীত কোনো বৃহৎ কর্ম হইতেই পারে না। আলোকের সহিত যেমন ছায়া, কর্মের সহিত তেমনি বৈরাগ্য নিয়ত সংযুক্ত হইয়া আছে। যাহার যে পরিমাণে বৈরাগ্যে অধিকার পৃথিবীতে সে সেই পরিমাণে কাজ করিতে পারে।

    ক্ষিতি কহিল– সেইজন্য পৃথিবীসুদ্ধ লোক যখন সুখের প্রত্যাশায় সহস্র চেষ্টায় নিযুক্ত ছিল তখন বৈরাগী ডারুয়িন সংসারের সহস্র চেষ্টা পরিত্যাগ করিয়া কেবল প্রমাণ করিতেছিলেন যে, মানুষের আদিপুরুষ বানর ছিল। এই সমাচারটি আহরণ করিতে ডারুয়িনকে অনেক বৈরাগ্য সাধন করিতে হইয়াছিল।

    ব্যোম কহিল– বহুতর আসক্তি হইতে গারিবাল্‌ডি যদি আপনাকে স্বাধীন করিতে না পারিতেন তবে ইটালিকেও তিনি স্বাধীন করিতে পারিতেন না। যে-সকল জাতি কমিষ্ঠ জাতি তাহারাই যথার্থ বৈরাগ্য জানে। যাহারা জ্ঞানলাভের জন্য জীবন ও জীবনের সমস্ত আরাম তুচ্ছ করিয়া মেরুপ্রদেশের হিমশীতল মৃত্যুশালার তুষাররুদ্ধ কঠিন দ্বারদেশে বারম্বার আঘাত করিতে ধাবিত হইতেছে, যাহারা ধর্মবিতরণের জন্য নরমাংসভুক্‌্‌ রাক্ষসের দেশে চিরনির্বাসন বহন করিতেছে, যাহারা মাতৃভূমির আহ্বানে মুহূর্তকালের মধ্যেই ধনজনযৌবনের সুখশয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিয়া দুঃসহ ক্লেশ এবং অতি নিষ্ঠুর মৃত্যুর মধ্যে ঝাঁপ দিয়া পড়ে, তাহারাই জানে যথার্থ বৈরাগ্য কাহাকে বলে। আর আমাদের এই কর্মহীন শ্রীহীন নিশ্চেষ্ট নির্জীব বৈরাগ্য কেবল অধঃপতিত জাতির মূর্ছাবস্থামাত্র– উহা জড়ত্ব, উহা অহংকারের বিষয় নহে।

    ক্ষিতি কহিল– আমাদের এই মূর্ছাবস্থাকে আমরা আধ্যাত্মিক “দশা’ পাওয়ার অবস্থা মনে করিয়া নিজের প্রতি নিজে ভক্তিতে বিহ্বল হইয়া বসিয়া আছি।

    ব্যোম কহিল– কর্মীকে কর্মের কঠিন নিয়ম মানিয়া চলিতে হয়, সেইজন্যই সে আপন কর্মের নিয়মপালন উপলক্ষ্যে সমাজের অনেক ছোটো কর্তব্য উপেক্ষা করিতে পারে– কিন্তু অকর্মণ্যের সে অধিকার থাকিতে পারে না। যে লোক তাড়াতাড়ি আপিসে বাহির হইতেছে তাহার নিকটে সমাজ সুদীর্ঘ সুসম্পূর্ণ শিষ্টালাপ প্রত্যাশা করে না। ইংরাজ মালী যখন গায়ের কোর্তা খুলিয়া হাতের আস্তিন গুটাইয়া বাগানের কাজ করে তখন তাহাকে দেখিয়া তাহার অভিজাতবংশীয়া প্রভুমহিলার লজ্জা পাইবার কোনো কারণ নাই। কিন্তু আমরা যখন কোনো কাজ নাই, কর্ম নাই, দীর্ঘ দিন রাজপথপার্শ্বে নিজের গৃহদ্বারপ্রান্তে স্থূল বর্‌তুল উদর উদ্‌ঘাটিত করিয়া, হাঁটুর উপর কাপড় গুটাইয়া, নির্বোধের মতো তামাক টানি, তখন বিশ্বজগতের সম্মুখে কোন্‌ মহৎ বৈরাগ্যের কোন্‌ উন্নত আধ্যাত্মিকতার দোহাই দিয়া এই কুশ্রী বর্বরতা প্রকাশ করিয়া থাকি! যে বৈরাগ্যের সঙ্গে কোনো মহত্তর সচেষ্ট সাধনা সংযুক্ত নাই তাহা অসভ্যতার নামান্তর মাত্র।

    ব্যোমের মুখে এই-সকল কথা শুনিয়া স্রোতস্বিনী আশ্চর্য হইয়া গেল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল– আমরা সকল ভদ্রলোকেই যত দিন না আপন ভদ্রতা রক্ষার কর্তব্য সর্বদা মনে রাখিয়া আপনাদিগকে বেশে ব্যবহারে বাসস্থানে সর্বতোভাবে ভদ্র করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিব তত দিন আমরা আত্মসম্মান লাভ করিব না এবং পরের নিকট সম্মান প্রাপ্ত হইব না। আমরা নিজের মূল্য নিজে অত্যন্ত কমাইয়া দিয়াছি।

    ক্ষিতি কহিল– সে মূল্য বাড়াইতে হইলে এ দিকে বেতনবৃদ্ধি করিতে হয়, সেটা প্রভুদের হাতে।

    দীপ্তি কহিল– বেতনবৃদ্ধি নহে চেতনবৃদ্ধির আবশ্যক। আমাদের দেশের ধনীরাও যে অশোভন ভাবে থাকে সেটা কেবল জড়তা এবং মূঢ়তা-বশত, অর্থের অভাবে নহে। যাহার টাকা আছে সে মনে করে জুড়িগাড়ি না হইলে তাহার ঐশ্বর্য প্রমাণ হয় না, কিন্তু তাহার অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলে দেখা যায় যে, তাহা ভদ্রলোকের গোশালারও অযোগ্য। অহংকারের পক্ষে যে আয়োজন আবশ্যক তাহার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আছে, কিন্তু আত্মসম্মানের জন্য, স্বাস্থ্যশোভার জন্য যাহা আবশ্যক তাহার বেলায় আমাদের টাকা কুলায় না। আমাদের মেয়েরা এ কথা মনেও করে না যে, সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য যতটুকু অলংকার আবশ্যক তাহার অধিক পরিয়া ধনগর্ব প্রকাশ করিতে যাওয়া ইতরজনোচিত অভদ্রতা– এবং সেই অহংকারতৃপ্তির জন্য টাকার অভাব হয় না, কিন্তু প্রাঙ্গণপূর্ণ আবর্জনা এবং শয়নগৃহভিত্তির তৈলকজ্জলময় মলিনতা-মোচনের জন্য তাহাদের কিছু মাত্র সত্বরতা নাই। টাকার অভাব নহে, আমাদের দেশে যথার্থ ভদ্রতার আদর্শ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয় নাই।

    স্রোতস্বিনী কহিল– তাহার প্রধান কারণ, আমরা অলস। টাকা থাকিলেই বড়োমানুষি করা যায়, টাকা না থাকিলেও ধার করিয়া নবাবি করা চলে, কিন্তু ভদ্র হইতে গেলে আলস্য-অবহেলা বিসর্জন করিতে হয়, সর্বদা আপনাকে উন্নত সামাজিক আদর্শের উপযোগী করিয়া প্রস্তুত রাখিতে হয়, নিয়ম স্বীকার করিয়া আত্মবিসর্জন করিতে হয়।

    ক্ষিতি কহিল– কিন্তু আমরা মনে করি আমরা স্বভাবের শিশু, অতএব অত্যন্ত সরল। ধুলায় কাদায় নগ্নতায়, সর্বপ্রকার নিয়মহীনতায় আমাদের কোনো লজ্জা নাই– আমাদের সকলই অকৃত্রিম এবং সকলই আধ্যাত্মিক।

    শ্রাবণ ১৩০২

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপথের সঞ্চয় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    Next Article ধর্ম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }