Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প391 Mins Read0

    ২২. বারোয়ারি চড়কপূজা

    গ্রামে বারোয়ারি চড়কপূজার সময় আসিল। গ্রামের বৈদ্যনাথ মজুমদার চাঁদার খাতা গাতে বাড়ি বাড়ি চাঁদা আদায় করিতে আসিলেন। হরিহর বলিল, না খুড়ো, এবার আমার এক টাকা চাঁদা ধরাটা অন্যে হয়েছে-এক টাকা দেবার কি আমার অবস্থা? বৈদ্যনাথ বলিলেন-না হে না, এবার নীলমণি হাজরার দল। এ রকম দলটি এ অঞ্চলে কেউ চক্ষেও দেখেনি। এবার পালপাড়ার বাজারে মহেশ স্যা করার বালক-কেত্তিনের দল গাইবে, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া চাই-ই–

    বৈদ্যনাথ এমন ভাব দেখাইলেন যে নিশ্চিন্দিপুরবাসিগণের জীবন-মরণ এই প্রতিযোগিতার সাফল্যের উপর নির্ভর করিতেছে।

    অপু একটা কঞ্চি টানিতে টানিতে বাড়ি ঢুকিয়া বলিল-পাকা কঞ্চি বাবা, তোমার খুব ভালো কলম হবে, ডোবার ধারের বাঁশতলায় পড়ে ছিল, কুড়িয়ে আনলাম-পরে সে হাসিমুখে সেটা কতকটা উঁচু করিয়া তুলিয়া দেখাইয়া বলিল, হবে না বাবা তোমার কলম? কেমন পাকা, না?

    চড়কের আর বেশি দেরি নাই। বাড়ি বাড়ি গাজনের সন্ন্যাসী নাচিতে বাহির হইয়াছে। দুৰ্গা ও অপু আহার নিদ্ৰা ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসীদলের পিছনে পিছনে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া বেড়াইল। অন্য অন্য গৃহস্থ বাড়ি হইতে পুরানো কাপড় দেয়, চাল পয়সা দেয়-কেউ বা ঘড়া দেয়-তাহারা কিছুই দিতে পারে না। দুটো চাল ছাড়া-এজন্য তাঁহাদের বাড়িতে এ দল কোনো বারই আসে না! দশ বারো দিন সন্ন্যাসী-নাচনের পর চড়কের পূর্বরাত্রে নীলপূজা আসিল।

    নীলপূজার দিন বৈকালে একটা ছোট খেজুর গাছে সন্ন্যাসীরা কীটা ভাঙে-এবার দুৰ্গা আসিয়া খবর দিল প্রতি বৎসরের সে গাছটাতে এবার কাঁটা-ভাঙা হইবে না, নদীর ধারে আর একটা গাছ সন্ন্যাসীরা এবার পূর্ব হইতেই ঠিক করিয়াছে। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে দল বাঁধিয়া দুৰ্গা ও অপু সেখানে গিয়া জোটে। তারপর কাঁটা-ভাঙার নোচ হইয়া গেলে সকলে চড়কতলাটাতে একবার বেড়াইতে যায়। খেজুরের ডাল দিয়া নীলপূজার মণ্ডপ ঘিরিয়াছে—চড়কতলার মাঠের শ্যাওড়াবন ও অন্যান্য জঙ্গল কাটিয়া পরিষ্কার করা হইয়াছে। সেখানে ভুবন মুখুজ্যেদের বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে দেখা হইল-রানী, পুটি, টুনু–এদের বাড়িতে কড়া শাসন আছে, দুর্গার মতো টো টো করিয়া যেখানে সেখানে বেড়াইবার সুকুম নাহঁ-অতি কষ্টে বলিয়া কহিয়া ইহারা চড়কতলা পর্যন্ত আসিয়াছে।

    টুনু বলিল-আজ রাত্রে সন্নিসিরা শ্মশান জাগাতে যাবে—

    রানী বলিল-আহা, তা বুঝি আর জানিনে? একজন মড়া হবে। তাকে বেঁধে নিয়ে যাবে শ্মশানের সেই ছাতিমতলায়। তাকে আবার বাঁচাবে, তারপর মড়ার মুণ্ড নিয়ে আসবে।-ছাড়া বলতে বলতে আসবে।-ওর সব মন্তর আছে–

    দুর্গা বলিল-আমি জানি ওদের ছড়া, শূনবি বলবো?

    স্বগগো থেকে এলো রথ
    নামলো খেতৃতলে
    চব্বিশ কুটী বাণবৰ্ষা শিবের সঙ্গে চলে–
    সত্যযুগের মড়া আর শাওল যুগের মাটি
    শিব শিব বল রে ভাই ঢাকে দ্যাও কাঠি—

    পরে হাসিয়া বলে-কেমন চমৎকার এবার গোষ্টবিহারের পুতুল হয়েছে নীলুদা?…দশ কুমোরের বাড়ি দেখে এলাম-দেখিসনি রানু?

    পুটি বলিল-সত্যিকার মড়ার মুণ্ড রানুদি?

    —নয় তো কি? অনেক রাত্রে যদি আসিস তো দেখতে পাবি। চল ভাই আমরা বাড়ি যাইআজ রাতটা ভালো নয়-আয়রে অপু, দুগগাদি আয়।

    অপু বলিল-কেন ভালো নয় রানুদি? কী আজ হবে রাতে?

    রানু বলিল-সে সব কথা বলতে নেই-তুই আয় বাড়ি।

    অপু গেল না, কিন্তু দুৰ্গা ওদের দলের সঙ্গে চলিয়া গেল। তারপর হঠাৎ মেঘ করিল, সন্ধ্যার অন্ধকার মেঘে ঘনীভূত করিয়া তুলিল। অপু বাড়ি ফিরিতেছে, পথে জনপ্রাণী নাই, সন্ধ্যা হইতে শ্মশানের ও মড়ার মুণ্ডের গল্প শুনিয়া তাহার কেমন ভয় ভয় করিতেছে। মোড়ের বাঁশবনের কাছে আসিয়া মনে হইল কিসের যেন কটুগন্ধ বাহির হইতেছে। সে দ্রুতপদে চলিতে লাগিল। আর একটুখানি গিয়া নেড়ার ঠাকুরমার সঙ্গে দেখা। নেড়ার ঠাকুরমা নীলপূজার নৈবেদ্য হাতে চড়কতলায় পূজা দিতে যাইতেছে। অপু অন্ধকারে প্রথমটা চিনিতে পারে নাই, পরে চিনিয়া বলিল-কিসের গন্ধ বেরিয়েছে। ঠাকুরমা?

    বুড়ি বলিল-আজ ওঁরা সব বেবিয়েচেন কিনা?…তারই গন্ধ আর কি—

    অপু বলিল—কারা ঠাকুরমা?

    –কারা আবার-শিবের দলবল, সন্দেবোলা ওঁদের নাম করতে নেই।–রাম রাম–রাম রাম–

    অপুর গায়ে কাঁটা দিয়া উঠিল। চারিধারে অন্ধকার সন্ধ্যা, আকাশে কালো মেঘ, বাঁশবন, শ্মশানের গন্ধ, শিবের অনুচর ভূতপ্ৰেত-ছোট ছেলের মন বিস্ময়ে, ভয়ে, রহস্যে, অজানার অনুভূতিতে ভরিয়া উঠিল। সে আতঙ্কের সুরে বলিল-আমি কি করে বাড়ি যাবো ঠাকমা!…

    বুড়ি বকিয়া উঠিল।’—তা এত রাত করাই বা কেন বাপু আজকের দিনে?…এসো আমার সঙ্গে। নীল পুজোর থালাখানা দিয়ে আসি, তারপর এগিয়ে দেবো’খন। ধন্যি যা হোক—

    বারোয়ারি তলায় ঘাস চাচিয়া প্ৰকাণ্ড বাঁশের মেরাপ বাঁধিয়া সামিয়ানা টাঙানো হইয়াছে। যাত্রার দল আসে আসে—এখনও পৌঁছে নাই, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া গেলে, লোকে বলে কাল সকালের গাড়িতে আসিবে, সকাল চলিয়া গেলে বৈকালেব আশায় থাকে। অপুর স্নানাহার বন্ধ হইবার উপক্ৰম হইযাছে।…বাত্রে অপুর ঘুম হয় না, বাঁধ ভাঙা বন্যার স্রোতের মতো কৌতুহল ও খুশির যে কী প্রবল অদম্য উচ্ছাস! বিছানায় ছট্‌ফট্ৰ এপািশ-ওপাশ করে। যাত্রা হবে! যাত্রা হবে! যাত্রা হবে!

    মাযেব বারণ আছে অত বড় মেয়ে পাড়া ছাড়িয়া কোথাও না যায়, দুৰ্গা চুপি চুপি গিয়া দেখিয়া আসিয়া রাজলক্ষ্মীর কাছে আসর-সজ্জা ও বাঁশের গায়ে-ঝুলানো লাল নীল কাগজের অভিনবত্ব সম্বন্ধে গল্প করে, অপুর মনে হয়, যে পঞ্চাননতলায় সে দু’বেলা কড়িখেলা করে, সেই তুচ্ছ অত্যন্ত পবিচিত সামান্য স্থানটাতে আজ বা কাল নীলমণি হাজাবার দলের যাত্রার মতো একটা অভূতপূর্ব অবাস্তব ঘটনা ঘটবে, এও কি সম্ভব? কথাটা যেন তাহার বিশ্বাসই হয় না।

    হঠাৎ শুনিতে পাওয়া যায় আজ বিকালেই দল আসিবে। এক ঝলক রক্ত যেন বুক হইতে নাচিয়া চলাকাইয়া একেবারে মাথায় উঠিয়া পড়ে।…

    কুমার-পাড়ার মোড়ে দুপুরের পাব হইতেই সকল ছেলের সঙ্গে দাঁড়াইয়া থাকিবার পর দূরে একখানা গরুব গাড়ি তাহার চোখে পড়িল, সাজের বাক্স বোঝাই গাড়ি—এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ খান! পটু একে একে আঙুল দিয়া গুনিয়া খুশির সুরে বলিল–অপুদা, আমরা এদের পেছনে পেছনে এদের বাসায় গিয়ে দেখে আসি, যাবি? সাজের গাড়িগুলার পিছনে দলের লোকেরা যাইতেছে, সকলের মাথায় টেরিকাটা, অনেকের জুতা হাতে। পটু একজন দাড়িওয়ালা লোককে দেখাইয়া কহিল—এ বোধ হয় রাজা সাজে, না অপুদা?

    আকাশ-বাতাসের রং একেবারে বদলাইয়া গেল-অপু মহা উৎসাহে বাড়ি ফিরিয়া দেখে তাহার বাবা দাওয়ায় বসিয়া কি লিখিতেছে ও গুনগুনা করিয়া গান করিতেছে। সে ভাবে, যাত্রা আসিবার কথা তাহার বাবাও জানিতে পারিযাছে, তাই এত স্মৃর্তি। উৎসাহে হাত নাড়িয়া বলেসাজ একেবারে পাঁচ গাড়ি বাবা! এ রকম দল!–

    হরিহর শিষ্যবাড়ি বিলি করার জন্য বালির কাগজে কবচ লিখিতেছিল, মুখ তুলিয়া বিস্ময়ের সুরে বলে-কিসের সাজ রে খোকা? —

    অপু আশ্চর্য হইয়া যায়, এত বড় ঘটনা বাবার জানা নাই! বাবাকে সে নিতান্ত কৃপার পাত্র বিবেচনা করে।

    সকালে উঠিয়া অপুকে পড়িতে বসিতে হয়। খানিক পরে সে কাদোকাদো ভাবে বলে-আমি বারোয়ারিতলায় যাবো বাবা, সকলে যাচ্চে আর আমি এখন বুঝি বসে বসে পড়বো? এখখুনি যদি যাত্রা আরম্ভ হয়?

    তাহার বাবা বলে-পড়ো, পড়ো, এখন বসে পড়ো, যাত্রা আরম্ভ হলে ঢোল বাজবার শব্দ তো শুনতে পাওয়া যাবে? তখন না হয় যেয়ো এখন। শ্ৰীেড় বয়সের ছেলে, নিজে সব সময়ে আজকাল বিদেশে থাকে, অল্পদিনের জন্য বাড়ি আসিয়া ছেলেকে চোখছাড়া করিতে মন চায় না। অভিমানে বাগে অপুর চোখ দিয়া জল পড়িতে থাকে, সে কান্নাভিরা গলায় আবার শুভঙ্করী শুরু করে-মাস মাহিনা যাব যত দিন তার পড়ে কত?

    কিন্তু সকালে যাত্রা বসে না, খবর আসে ওবেলা বসিবে। ওবেলা অপু মায়ের কাছে। যাইয়া কঁদো কাদো ভাবে বাবার অত্যাচারের কাহিনী আনুপূর্বিক বর্ণনা করে। সর্বজয়া আসিয়া বলে–দাও না গো ছেলেটাকে ছেড়ে? বছরকারের দিনটা-তোমার ন মাস বাড়িতে থাকা নেই বছরে, আর ও একদিনের পড়াতে একেবারে তাঙ্কালঙ্কার ঠাকুর হয়ে উঠবে কিনা?

    অপু ছুটি পায়। সারা দুপুর তাহার বারোয়ারিতলায় কাটে। বৈকালে যাত্রা বসিবার পূর্বে বাড়িতে খাবার খাইতে আসিল। বাবা রোযাকে বসিয়া কবচ লিখিতেছে। অন্যদিন এ সময। তাহাকে তাহার বাবার কাছে বসিয়া বই পড়িতে হয়। পাছে ছেলে চটিয়া যায়। এই ভয়ে তাহার বাবা তাহাকে খুশি রাখিবার জন্য নানারকম কৌতুকের আয়োজন করে। বলে, খোকা চাটু করে সিলেটে লিখে আনো দিকি, ঐঃ ভূত বাপ রে! অপু সব অদ্ভুত ধরনের কথা শুনিয়া হাসিয়া খুন হয়, তাড়াতাড়ি লিখিয়া আনিয়া দেখায়। বলে-বাবা এইটে হয়ে গেলে আমি কিন্তু চলে যাবো, তাহার বাবা বলে-যেয়ো এখন, যেয়ো এখন, খোকা-আচ্ছা চাটু কবে লিখে আনো দিকি-আর একটা অদ্ভুত কথা বলে। অপু আবার হাসিয়া উঠে।

    আজ কিন্তু অপুর মনে হইল, বাহিব হইতে কি একটা প্ৰচণ্ড শক্তি আসিয়া তাহাকে তাহার বাবার নিকট হইতে সরাইযা লইয়া গিযাছে। বাবা নির্জন ছায়াভবা বৈকালে বাঁশ বন ঘেরা বাড়িতে একা বসিয়া বসিয়া লিখিতেছে, কিন্তু এমন শক্তি নাই যে, তাহাকে বসাইয়া রাখে। এখন যদি বলে—খোকা, এসে পড়তে বসো-আমুনি চারিদিক হইতে একটা যেন ভয়ানক প্রতিবাদের হট্টগোল উঠিবে। সকলে যেন বলিবে-না, না, এ হয় না! এ হয় না! যাত্রা যে বসে বসে!…কোনো উল্লাসের প্রবল শক্তি তাহার বাবাকে যেন নিতান্ত অসহায় নিরীহ দুর্বল করিয়া দিয়াছে। সাধ্য নাই যে, তাহার পড়িবার কথা পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করে। বাবার জন্য অপুর মন কেমন করে।

    দুৰ্গা বলিল-অপু, তুই মাকে বল না। আমিও দেখতে যাবো। অপু বলে—ম, দিদি কেন আসুক না। আমার সঙ্গে? চিক দিয়ে ঘিরে দিয়েচে, সেইখেনে বসবে?

    মা বলে-এখন থাক, আমি ওই ওদের বাড়ির মেয়েরা যাবে, তাদের সঙ্গে যাবো,-আমার সঙ্গে যাবে এখন।

    বারোয়ারিতলায় যাইবার সময় দুৰ্গা পিছন হইতে তাহাকে ডাকিল-শোন অপু। পরে সে কাছে আসিয়া হাসি-হাসি মুখে বলিল-হোত পাত দিকি! অপু হাত পাতিতেই দুৰ্গা তাহার হাতে দুটা পয়সা রাখিয়াই তাহার হাতটা নিজের দুহাতের মধ্যে লইয়া মুঠা পাকাইয়া দিয়া বলিল-দু দায়সায় মুড়কি কিনে খাস, নয়তো যদি নিচু বিক্রি হয় তো কিনে খাস।

    ইহার দিনসাতেক পূর্বে একদিন অপু আসিয়া চুপি চুপি দিদিকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল–তোর পুতুলের বাক্সে পয়সা আছে? একটা দিবি? দুর্গা বলিয়াছিল–কি হবে পয়সা তোর? অপু দিদির মুখের দিকে চাহিয়া একটুখানি হাসিয়া বলিল-নিচু খাবো-কথা শেষ করিয়া সে পুনরায় লজ্জার হাসি হাসিল। কৈফিয়তের সুরে বলে-বোষ্টমদের বাগানে ওরা মাচা বেঁধেচে দিদি, অনেক নিচু পেড়েচে, দু-কুড়ি-ইই-এক পয়সার ছটা, এই এত বড় বড়, একেবারে সিঁদুরের মতো রাঙা, সত্যু কিনলে সাধন। কিনলে-পরে একটু থামিয়া জিজ্ঞাসা করিল–আছে দিদি?

    দুর্গার পুতুলের বাক্সে সেদিন কিছুই ছিল না, সে কিছু দিতে পারে নাই। অপুকে বিরসমুখে চলিয়া যাইতে দেখিয়া সেদিন তাহার খুব কষ্ট হইয়াছিল, তাই কাল বৈকালে সে বাবার কাছে পয়সা দুটা চড়ক দেখিবার নাম করিয়া চাহিয়া লয়। সোনার ভাটার মতো ভাইটা, মুখের আবদার না। রাখিতে পারিলে দুৰ্গার ভারি মন কেমন করে।

    অপু চলিয়া গেলে তাহার মা ঘোট হইতে আসিয়া বলে—দুগগা একটা কাজ করতো! রানুদের বাগান থেকে দুটো সাদা গন্ধভেদালির পাতা খুঁজে নিয়ে আয় তো-অপুর শরীরটা অসুখ করেচে, একটু ঝোল করে দেবে!–

    মায়ের কথায় সে একছুটে রানুদের বাগানে যায়-বাগানে মানুষ-সমান উঁচু ঘন আগাছার জঙ্গলের মধ্যে গন্ধভেদালির পাতা খুঁজিতে খুঁজিতে মনের সুখে মাথা দুলাইয়া পিসিমার মুখে ছেলেবেলায় শেখা একটি ছড়া আবৃত্তি করে–

    হলুদ বনে বনে–
    নাক-ছবিটি হারিয়ে গেছে সুখ নেইকো মনে–

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅপরাজিত – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.