Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পথে প্রবাসে ও নির্বাচিত প্রবন্ধ – অন্নদাশঙ্কর রায়

    অন্নদাশঙ্কর রায় এক পাতা গল্প410 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আমাদের ভবিষ্যৎ

    এই সেদিন আর একটা দেশ ভাগ হয়ে গেল। ইন্দোচীন। অবশ্য দেশের লোক ইচ্ছা করলে নির্বাচনে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারবে, কিন্তু সকলেই জানে তা হবার নয়। কারণ আজকের দুনিয়ায় মতবাদ বলে একটা শক্তি কাজ করছে। মতবাদ বিভিন্ন ও বিরুদ্ধ হলে দেশ ভাগাভাগি হয়ে যায়। নয়তো গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। বাইরের লোক তাতে ইন্ধন জোগাতে থাকে। দেখতে দেখতে হয়ে দাঁড়ায় বাইরের সঙ্গে বাইরের যুদ্ধ। সেইজন্যে একালের গৃহযুদ্ধ সারা দুনিয়ার লোককে ভাবায়। তা সে কোরিয়ায় হোক বা ইন্দোচীনে হোক। সব জায়গায় ওটা শেষপর্যন্ত ক্যাপিটালিজমে-কমিউনিজমে বলপরীক্ষা। এই বলপরীক্ষার নিট ফল তোর অর্ধেক মোর অর্ধেক। তুই নে ন্যাজাটা মুই নিই মুড়োটা। মস্কো আর ওয়াশিংটন একমত না-হলে ভাঙা ইন্দোচীন আর জোড়া লাগবে না। ভাঙা কোরিয়া ভাঙা রয়ে যাবে। ভাঙা জার্মানিরও সেই দশা। এক যদি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধে, যদি এক পক্ষ অপর পক্ষকে পরাস্ত করে তবে অবশ্য অন্য কথা।

    আমাদের এখানেও মতবাদ নামক শক্তিটা সক্রিয়। তবে ঠিক ওই অর্থে নয়। এখানেও ক্যাপিটালিস্ট বনাম কমিউনিস্ট আছে, তাদের কাজ তারা করে যাচ্ছে, কিন্তু এখানে তার চেয়েও সক্রিয় ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বনাম বিশ্ব ইসলাম। ভারত যার নাম তার প্রতিষ্ঠা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বনেদের উপর। আর পাকিস্তান যার নাম তার ভিত্তি হল বিশ্ব ইসলাম। পাকিস্তান হচ্ছে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত একটি শৃঙ্খলের অঙ্গ। ভারত সে-শৃঙ্খলের ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করছে। আর করছে বর্মা ও সিংহল। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ভারতের অনুসরণে সেক্যুলার স্টেট স্থাপন করেছে, ইসলামিক স্টেট নয়। এবং ভারতেরই অনুসরণে ক্যাপিলাটিস্ট বা কমিউনিস্ট কোনো পক্ষের শিবিরে যোগ না দিয়ে নিরপেক্ষ রয়েছে। বর্মাও তাই। সিংহল এখনও দ্বিধাগ্রস্ত।

    আবার অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে কামাল পাশার কীর্তি নাশ করে তুর্কি এখন সেক্যুলার স্টেটের নীতি বিসর্জন দিতে বসেছে, এখন সেখানে ইসলামের দোহাই দিলে ভোটে জেতা যায়। জেতারা ব্যবসাদার শ্রেণির লোক, তাঁদের প্রধান মুরুব্বি আমেরিকা। টাকা দিচ্ছে স্যামচাচা, ভোট পাচ্ছে—যাক গে, ওদের নাম ভুলে গেছি। এর থেকে আমাদেরও শেখবার আছে। জনগণকে আফিং খাওয়ানো বড়োলোকদের চিরকেলে পেশা, আর আফিং হল জনগণের চিরকেলে নেশা। আজ আমরা সেক্যুলার স্টেট পত্তন করলুম আর অমনি জনগণের নেশা ছুটে গেল তা হয় না। তাদের ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে কেন আমরা সেক্যুলার স্টেট চেয়েছি। কার স্বার্থে? সেটা কি জনগণের স্বার্থ নয়?

    দুরকম পরাধীনতা আছে। একটা প্রত্যক্ষ, যেমন সাত বছর আগে ব্রিটিশ সরকার এদেশ শাসন করতেন, আমরা ছিলুম ইংরেজের প্রজা। আর একটা পরোক্ষ, যেমন নামে মিরজাফর বাংলাদেশ শাসন করতেন, আসলে করত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বাংলাদেশের লোক ছিল নবাবের প্রজা, অথচ ইংরেজের অধীন। এই হল মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলির মোটামুটি চেহারা। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই একটি করে মিরজাফর থাকেন, তাঁর পিছনে থাকেন হয় ইংরেজ, নয় ফরাসি, নয় মার্কিন ধনশক্তি। জনশক্তি সেসব দেশে নেশায় বুঁদ। এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল তুর্কির বেলায়, কামাল পাশার নেতৃত্বে। এখন নেতাবদল হয়েছে, তুর্কি এখন তাঁবেদারিতে ফিরে চলল। আর একটি ব্যতিক্রম এই সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে ইজিপ্টে। এর পরমায়ু কদ্দিন তা জোর করে বলা যায় না। মধ্য প্রাচী যখন, তখন নেশার দিকে ঝোঁকটাই স্বাভাবিক। এসব দেশকে দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপীয় শিক্ষা দেওয়া দরকার। ইন্দোনেশিয়া সেটা বুঝেছে। আমাদের ইন্দোনেশীয় বন্ধু বললেন, সেখানকার সরকার নিজের খরচে ছ-হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে ইউরোপে আমেরিকায় অস্ট্রেলিয়ায় ও ভারতে পাঠিয়েছে। আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে ইউরোপের ইতিহাস যারা মন দিয়ে পড়েছে তারাই কেবল সেক্যুলার স্টেট বস্তুটিকে ধারণ ও বহন করতে পারে। পত্তন যেই করুক-না-কেন। তবে এটাও ঠিক যে সেক্যুলার স্টেটকে ভেঙে যেতে দিলে যে মারটা কপালে আছে সে-মারটাই প্রকৃষ্ট শিক্ষা। মার খেতে খেতে ইউরোপ যা শিখেছে মার খেতে খেতেই ভারত তা শিখবে। আর মধ্য প্রাচী-র তো মার ছাড়া আর কোনো শিক্ষাই নেই। মধ্য প্রাচী বলতে আমি পাকিস্তানও বুঝি।

    কিন্তু কেন সেক্যুলার স্টেট? প্রত্যক্ষ পরাধীনতা থেকে মুক্তির উপায় সকলের জানা। কোথাও তা সশস্ত্র বিদ্রোহ, কোথাও নিরস্ত্র প্রতিরোধ। কিন্তু পরোক্ষ পরাধীনতার কী চিকিৎসা? আফিং-ছাড়ানো। সাধে কি আমরা মাদকবর্জন নীতি গ্রহণ করেছি! কিন্তু মাদক কেবল মাদ-গাঁজা-আফিং নয়। মাদকের তালিকায় পড়ে সেকেলে শিক্ষা। যে শিক্ষা টোল মাদ্রাসা মক্তবে দেওয়া হত। যেখানে স্কুল নেই হাসপাতাল নেই জল নেই জলনিকাশ নেই বাস নেই বস্ত্র নেই অন্ন নেই সেখানে বেগার খাটিয়ে মসজিদ বা মন্দির তৈরি করাও মাদক দ্রব্যের তালিকায় পড়ে। কেন, গাছতলায় বসে কি নামাজ পড়া যায় না, উপাসনা করা যায় না? বড়ো ইমারত না-হলে যদি ধর্মকর্ম না-হয় তবে সেটা রাষ্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া কেন? যারা সে-ভার বইতে পারে তারাই সে-ভার নিক। রাষ্ট্রকে বলো রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে। আধুনিক রাষ্ট্রের দায়িত্বটি বড়ো কম নয়। প্রত্যেকটি প্রজাকে কর্ম জোগানো আধুনিক রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব। যে দেশে বেকারসংখ্যা বেশি সেদেশের রাষ্ট্র তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করেনি বলতে হবে।

    জনগণের স্বার্থে সেক্যুলার স্টেট যেমন অবশ্য গ্রহণীয় তেমনি গ্রহণীয় নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক নীতি। ভারত কোনো শিবিরে যাবে না, সে ও তার মতো আরও দুটি-একটি দেশ মিলে নিরপেক্ষ থাকবে, তার ডাক শুনে যদি কেউ না আসে তা হলে সে একলা চলবে। দীর্ঘকালের দাসত্বের পর যে-দেশ সদ্য মুক্ত হয়েছে তার পক্ষে এ ছাড়া আর কোনো নীতি যুক্তিযুক্ত নয়। যেসব পন্ডিত এর মধ্যে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না, তাঁদেরকে আমেরিকার ইতিহাস পড়তে বলি। স্বাধীনতার পর আমেরিকাও এই নীতি গ্রহণ করে যে, আন্তর্জাতিক ব্যাপারে সে নিরপেক্ষ থাকবে। তার নিরপেক্ষতা শতাব্দীকাল স্থায়ী হয়েছিল। সেই শতাব্দীকালের আত্মবিকাশের ফলে সে ক্রমে প্রথম শ্রেণির শক্তি হয়ে ওঠে। নতুবা সে তৃতীয় শ্রেণিতেও স্থান পেত না। আমেরিকার সৈন্যদল তার সীমান্তরক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিল। সেইজন্যে আকারে প্রকারে ক্ষুদ্র ছিল। সামরিক ব্যয়ে যে টাকাটা বরবাদ হতে পারত সে-টাকা জনকল্যাণে লাগল। প্রথম থেকেই আমেরিকা শিক্ষার জন্যে বহুধন ব্যয় করে। প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষাও ব্যাহত হয় গোড়ার দিকে। প্রাথমিক শিক্ষা সেক্যুলার পদ্ধতিতে হত। রাষ্ট্র ব্যতীত আর কাউকে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালাতে দেওয়া হত না। এবং রাষ্ট্র তার বিদ্যালয়গুলিতে ধর্মমত শেখাত না। যার যার শিক্ষা তার তার ঘরে। তা বলে রাষ্ট্র যা শেখাত তা অধর্ম নয়। তা সকলের শিক্ষণীয় সাহিত্য-গণিত-বিজ্ঞান-ইতিহাস। প্রাথমিক শিক্ষার পরে বেশিরভাগ ছাত্র কাজকর্ম খুঁজে নিত। যারা কলেজে যেত তারা ইচ্ছা করলে খ্রিস্টান কলেজে খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা করতে পারত। কিন্তু কলেজ রাষ্ট্রের হলে তাতে ধর্মরক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। আমেরিকা খ্রিস্টানদের দেশ। অখ্রিস্টান অল্প কয়েক জন ছিল, তাদের অনুপাত পশ্চিম পাকিস্তানের হিন্দুর চেয়েও কম। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুর চেয়ে তো অনেক কম। তা সত্ত্বেও কেন সেদেশ তার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মকে সযত্নে বাদ দেয়? এর মূল কারণ তার স্বাধীনতাপ্রিয়তা। স্বাধীনতাকে সর্বতোভাবে রক্ষা করতে হলে সেক্যুলার মনোভাবকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই প্রোথিত করতে হবে। তার জন্যে যে খরচটা হবে সেটা আসবে সামরিক ব্যয়সংকোচের ফলে। এবং সামরিক ব্যয়সংকোচ সম্ভব হবে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক নীতির ফলে। ইতিহাসে আমাদের নীতি নজির আছে। স্বাধীনতাপ্রিয় সুইসরাও নিরপেক্ষ তথা সেক্যুলার। তা বলে তারা ধর্মবিরোধী নয়। সেক্যুলার কথাটা ধর্মের বিপরীত নয়। ধর্ম থাক, কিন্তু তা যেন জনগণের আফিং না হয়। ধর্মের নেশায় যেন তারা স্বাধীনতা বিকিয়ে না দেয়।

    পাকিস্তানের জনগণ ক্রমে এসব বুঝবে। তার আগে অনেক দুর্ভোগের ভিতর দিয়ে যাবে। তাদের ঐতিহ্য মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে মেলে। ভারতের সঙ্গে মেলে না। তারা ইউরোপীয় শিক্ষা বয়কট করেছিল। বয়কট প্রায় অর্ধ শতাব্দী স্থায়ী হয়েছিল। যদি-বা তারা ইউরোপীয় শিক্ষায় ব্রতী হল সেইসঙ্গে আলিগড়ের মতো বিদ্যাপীঠে ধর্মকেও তার সঙ্গে জুড়ে দিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের অধিকাংশ আলিগড়ি বা আলিগড়পন্থী। প্রধান প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদালি ঝিনাভাই খোজানি—যিনি মহম্মদ আলি জিন্নাহ নামে প্রখ্যাত—আলিগড়ি বা আলিগড়পন্থী ছিলেন না। কিন্তু জনগণের সঙ্গে তাঁর সংস্পর্শ না থাকায় সেক্যুলার স্টেট যে কাদের জন্যে দরকার, কেন দরকার, সে-অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। পাকিস্তান তার ঐতিহ্যকে অতিক্রম করতে এখনও অর্ধ শতাব্দী সময় নেবে। ততদিন তার ভাগ্য তার, ভারতের ভাগ্য ভারতের। পাকিস্তান ও ভারত একই যুগে বাস করলেও একই যুগের নয়। ভারতকে আধুনিক করে তোলা যত কঠিন পাকিস্তানকে আধুনিক করে তোলা তার চেয়ে অনেক কঠিন। তার ভবিষ্যৎ ও ভারতের ভবিষ্যৎ একইরকম হলে আমি সুখী হতুম। কিন্তু একইরকম হবার সম্ভাবনা নেই।

    আমি বিশ্বাস করিনে যে পাকিস্তানকে ভারতের শামিল করলেই তার সমস্যার সমাধান হবে; বরং উলটোটি হবে। তার সমস্যা আরও জটিল হয়ে দাঁড়াবে। তার সমস্যার সমাধান হল ইন্দোনেশিয়ার মতো অতীতকে এক দিনে ঝেড়ে ফেলা। ইন্দোনেশিয়ার লোক শিক্ষাবিস্তারের সুবিধার জন্যে রোমকলিপি গ্রহণ করেছে। তার আগে ছিল আরবিলিপি। কিন্তু পাকিস্তানের লোক প্রাণ ধরেও রোমকলিপি নেবে না। পাকিস্তানিরা বলে বটে তাদের শিশুরাষ্ট্র, শিশুজাতি; কিন্তু কার্যকালে দেখা যায় সে-শিশু নতুন কিছু করবে না, যা চিরকাল হয়ে এসেছে তাই চিরকাল হবে—এই তার জীবনদর্শন। আমি অনেকসময় হাঁফ ছেড়ে বাঁচি এইজন্যে যে এ শিশুর জন্যে আমার কিছুমাত্র দায়িত্ব নেই। তার পরেই মনে পড়ে যায় আমি তো জনগণকে এক ও অবিভাজ্য বলে বিশ্বাস করি। তাদের স্থিতি যে রাষ্ট্রেই হোক-না কেন তাদের জন্যে আমার সমান দায়িত্ব। আমি তো হিন্দু-মুসলমানে ভেদ করিনে। তাহলে আমি কী করে এ দায়িত্ব এড়াতে পারব? একশো বার ভাবি পাকিস্তানের ব্যাপারে কথা কইব না। একশো বারের পরের বার ভাবি, কথা কওয়া দরকার। একটা পা পেছিয়ে থাকবে, আর একটা পা এগিয়ে যাবে এ কি কখনো হতে পারে? পাকিস্তানকে টেনে নিয়ে চলতে হবে আমাদের, যেমন চলেন সাহেবি-পোশাক-পরা বিলেতফেরত স্বামী, পিছনে শাড়িপরা ঘোমটা মাথায় দেওয়া বঙ্গললনা।

    পাকিস্তান স্বতন্ত্র হয়েছে, স্বতন্ত্রই থাকুক। কিন্তু তাকে পর করে দেওয়াও বিজ্ঞতা নয়। তাকে আপন করতে হবে। নিজেদের আদর্শ বা কর্মপন্থা বিসর্জন না-দিয়ে কী করে এটা সম্ভব? আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা নীতি ত্যাগ করা কিছুতেই চলতে পারে না। তেমনি আভ্যন্তরিক ক্ষেত্রে সেক্যুলার স্টেট নীতি বিসর্জন দেওয়া কোনো মতেই চলবে না। আমরা যদি এই দুটি পদতলভূমির উপর অটল থাকি তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা কি কোনোদিন হবে? আরও পরিষ্কার করে বলছি। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র নয়। সেক্যুলার স্টেট। এ রাষ্ট্রে হিন্দু কে আর মুসলমান কে আর খ্রিস্টান কে তা আইন আদালত আপিস আর্মি মিল ফ্যাক্টরি ডক ইয়ার্ড ইত্যাদি কোনোখানেই খোঁজ করা হয় না, যদি হয় তবে তা কনস্টিটিউশন-বিরুদ্ধ। তলে তলে হয়তো অনেকে ভেদবুদ্ধি জিইয়ে রেখেছে। কিন্তু তারজন্যে রাষ্ট্র দায়ী নয়। যে রাষ্ট্র সকলের কল্যাণের দায়িত্ব নিয়েছে, যে কাউকে ধর্মভেদের জন্যে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না, সে রাষ্ট্রে নিশ্চয় কাশ্মীরি মুসলমানদেরও স্থান আছে। তারা যে মুসলমান তার চেয়েও বড়ো কথা তারা ভারতীয়। চার কোটি মুসলমান যদি ভারতীয় হতে পারে তাহলে কয়েক লক্ষ কাশ্মীরি মুসলমান কেন তা পারবে না? কেনই-বা আমরা ধরে নেব যে তারা মুসলমান বলেই তাদের স্থান এখানে নয়, পাকিস্তানে? অথচ পাকিস্তান এ বিষয়ে স্থির নিশ্চয় যে কাশ্মীর পাকিস্তানের অঙ্গ। ভারত তাকে বঞ্চিত করেছে। এ দুই দৃষ্টিভঙ্গির কোনোটা বেঠিক নয়। সেইজন্যে এ প্রশ্নের মীমাংসা এখনও হয়নি, হবেও না। এও সেই মতবাদের দ্বন্দ্ব। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বনাম বিশ্ব ইসলাম। গৃহযুদ্ধ এড়াবার জন্যে অখন্ড ভারত দ্বিখন্ড হয়েছে। গৃহযুদ্ধ রহিত করার জন্যে কাশ্মীরেও লাইন টানা হয়েছে। সে-লাইন তুলে দেওয়ার সঙ্গে মতবাদের প্রশ্ন, ভারসাম্যের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। কাশ্মীরকে গায়ের জোরে এক রাষ্ট্রভুক্ত করতে হলে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে। সে-যুদ্ধ কাশ্মীরের সীমানায় আবদ্ধ থাকবে না। তার ফলে মার্কিন ও রুশ দুই দিক থেকে হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে। তার থেকে আর একটা বিশ্বযুদ্ধ।

    যেমন সেক্যুলার স্টেট বনাম ইসলামিক স্টেট নিয়ে মতবাদঘটিত বিরোধ, কাশ্মীর যার পরীক্ষাস্থল, তেমনি নিরপেক্ষতা নীতি বনাম কোনো এক পক্ষে যোগদান নীতি নিয়ে নীতিঘটিত বিরোধ। মার্কিন পক্ষে যোগদান এখানেও অনেকে চায়, কিন্তু এদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। জনগণ কোনো পক্ষে যোগ দেবে না। রুশ পক্ষেও না। কমিউনিস্টরা তাদের রুশ পক্ষে যোগ দেওয়াতে পারবে না। তাদের মোটা মোটা অভাবগুলো মিটিয়ে দেবার জন্যে জওহরলাল ও বিনোবা উভয়ই তৎপর। অপরপক্ষে পাকিস্তানের মোটা মোটা অভাবগুলো মেটাবার দায় চলে যাচ্ছে বিদেশি বান্ধবদের কাঁধে। এ নীতি আমাদের নয়। এর পরিণাম ভেবে আমরা সতর্ক। সমঝোতা তাহলে হবে কোন সূত্রে? আমি তো সাহিত্য ব্যতীত আর কোনো উপলক্ষ্য দেখতে পাচ্ছিনে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআগুন নিয়ে খেলা – অন্নদাশঙ্কর রায়
    Next Article আর্ট ও বাংলার রেনেসাঁস – অন্নদাশঙ্কর রায়

    Related Articles

    অন্নদাশঙ্কর রায়

    বাংলার রেনেসাঁস

    April 7, 2025
    অন্নদাশঙ্কর রায়

    আর্ট ও বাংলার রেনেসাঁস – অন্নদাশঙ্কর রায়

    April 7, 2025
    অন্নদাশঙ্কর রায়

    আগুন নিয়ে খেলা – অন্নদাশঙ্কর রায়

    April 7, 2025
    অন্নদাশঙ্কর রায়

    পুতুল নিয়ে খেলা – অন্নদাশঙ্কর রায়

    April 7, 2025
    অন্নদাশঙ্কর রায়

    পুতুল নিয়ে খেলা – অন্নদাশঙ্কর রায়

    April 7, 2025
    অন্নদাশঙ্কর রায়

    কন্যা – অন্নদাশঙ্কর রায়

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }