Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস – খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক

    খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক এক পাতা গল্প35 Mins Read0

    পদবী-বিবর্তন

    সংখ্যাতীত পদবীগুলির উৎপত্তি হয়েছে নানা কারণে। পদবী, উপাধি ও খেতাবগুলির উৎপত্তিগত বৈচিত্র্য রয়েছে বটে কিন্তু নামের শেষে একাকার হয়ে ব্যবহারের দরুণে এগুলি মৌলিকত্ব হারিয়েছে এবং কোনগুলি পদবী, কোনগুলি উপাধি আর কোনগুলি খেতাব তা এখন আর সাধারণত চেনার উপায় নেই। ইংরেজরাজ যেমন সমাজের উচ্চ স্তরের লোক অর্থাৎ বিদ্যায়, বদ্ধিতে, জ্ঞানে, মর্যাদায়, সম্পদে এবং জনসাধারণের উপর প্রভাবে শীর্ষস্থানীয়দের ‘রায়বাহাদর’, ‘স্যার’, ‘নাইট’ প্রভৃতি উপাধি বিতরণ করতেন এবং ভারত সরকারও ‘ভারতরত্ন’, ‘পদ্মভূষণ’ প্রভৃতি উপাধি বিতরণ করছেন, ঠিক তেমনি পর্বে হিন্দু রাজন্যবর্গ এবং মুসলমান সম্রাটগণ সম্ভ্রান্ত ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নানারূপ উপাধি বা খেতাবে ভূষিত করতেন। সেই সব উপাধি বা খেতাবের অনেকগুলি তাঁরা তাঁদের নামের শেষে পদবীরূপে ব্যবহার করতেন। এবং তা-ই তাঁদের বংশধরগণ পরপরাগতভাবে ব্যবহার করে আসছেন। মুসলমান রাজত্বে বিভিন্ন সরকারী পদের বিভিন্ন নাম ছিল। ঐ নামগুলিতে বা নামগুলির শব্দার্থে রাজকর্মচারিগণ পরিচিত হতেন এবং তাঁরা ঐ নামগুলি তাঁদের নিজ নিজ নামের শেষে পদবীরূপেও ব্যবহার করতেন। তাঁদের বংশের সন্তানগণ তাঁদের নামের শেষেও ঐগুলি পদবীরূপে ব্যবহার করে আসছেন।

    এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, প্রচলিত বিভিন্ন নামের জাতগুলির অনেকের নাম ও অনেক ক্ষেত্রে পদবীরূপে বংশপরম্পরায় চলে আসছে। আবার, বসবাসের অঞ্চল ও স্থানের নামও পদবীরূপে বংশপরম্পরায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শিক্ষিত লোকেরা অনেক সময় নিরক্ষর ও দরিদ্র লোকদের অবজ্ঞাসূচক কোন কোন শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করেছেন; তা-ও পদবীরূপে বংশপরম্পরায় চলে আসার নজির রয়েছে। তাছাড়া দেবতা, প্রাণী ও দ্রব্যের নামও পদবীরূপে বংশপরম্পরায় প্রচলিত। ব্যক্তির কর্মের নামে ও নামার্থে, গুণর নাম বা নামার্থেও বংশগত পদবীর সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন পদবী আবার পরিচ্ছন্ন অর্থবহও নয়, অথচ সেগুলি বংশপরম্পরায় ব্যবহারের দৃষ্টান্ত বিরল নয়।

    পিতামাতার দেওয়া নাম ও বংশগত পদবী অনেকেই চিরকাল বহন করে না, পরিবর্তনও করে নেয়। ব্রিটিশ ভারতে ১৮৭৫ খ্রীস্টাব্দের পর নাম ও পদবী পরিবর্তনের আইনসম্মত অধিকার স্বীকৃত হয়। আর, ঐ সময় থেকে নাম ও পদবী পরিবর্তিত হয়ে আসছে। নাম ও পদবী যেমন ভিন্ন তেমনি ঐ দুটি পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যও ভিন্ন। বাপমায়ের দেওয়া সেকেলে অসুন্দর নামের কারণে যে-পরিহাসের সম্মুখীন হতে হয় তার থেকে পরিত্রাণের ইচ্ছা নাম পরিবর্তনের একটি বিশেষ ও মুখ্য কারণ। পদবী পরিবর্তনের কারণ কিন্তু অনেক এবং বিচিত্র। আইনানুগ তিনটি পদ্ধতিতে পদবী পরিবর্তিত হয়ে আসছে। প্রথমত, প্রচলিত প্রথা ও আইন অনুযায়ী বিবাহের পরে স্ত্রী তার পৈত্রিক পদবী ত্যাগ করে স্বামীর পদবী গ্রহণ করেন অর্থাৎ স্বামীর পদবীতে পরিচিতা হন। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যদি কোন মহিলা বিবাহের পর্বে তার পৈত্রিক পদবীতে বিশেষ পরিচিতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করেন তবে তিনি বিবাহের অব্যবহিত পরেই তার পূর্ব পরিচিতির সচেক পদবীটিকে সহসা ত্যাগ করেন না। আবার, অনেক ক্ষেত্রে পৈত্রিক পদবীর সংগেই স্বামীর পদবী যুক্ত করে নাম প্রকাশ করে থাকেন। দ্বিতীয়ত, ধর্মান্তরিত হলে পদবীর পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে শুধু পদবীই নয় নামেরও পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু ব্যতিক্রম এখানেও রয়েছে—কোন কোন ক্ষেত্রে নাম ও পদবীর কোনটিরই পরিবর্তন হয় না। তৃতীয়ত, শ্রুতিমধুর নয় বা নিজের ভাল লাগে না এরূপ পদবী পরিবর্তন করে প্রচলিত পদবীগুলির মধ্যে রুচিসম্মত একটি গ্রহণের ঝোঁক ছাড়াও পদবীসূত্রে সমাজে অপেক্ষাকৃত উচ্চ মর্যাদা লাভের মানসিকতা পদবী পরিবর্তনের কারণ বলেই ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণী, গোষ্ঠী প্রভৃতির অন্তর্ভুক্ত মানুষের পদবী পরিবর্তনের প্রবণতা এত বেশী। বিশেষ করে পদবী পরিবর্তন করেও আইনানুগ সু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না-হওয়ায় তফসিলী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের পদবী পরিবর্তনের প্রবণতা আরও বেশী। অর্থাৎ যে-সব পদবীতে জাত, সম্প্রদায়, শ্রেণী, কুল বা গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ পায় বা বংশানুক্রমিক জীবিকার ইংগিত বহন করে সেই পদবীগুলি লোকে পরিবর্তন করে নিতে চান, এবং এই মর্মে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদালতে আইনসম্মত এফিডেভিটও করে নেন।

    প্রসংগক্রমে উল্লেখযোগ্য, ভারতে কোন কোন স্থানে অবাঙ্গালী হিন্দু, সমাজে ঝনঝুনওয়ালা, পালকীওয়ালা, বাটলিওয়ালা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক পদবী রয়েছে এবং পাশ্চাত্ত্য দেশগুলিতেও বংশান ক্রমিক কারপেনটার, বুচার, পটার প্রভৃতি বৃত্তিমূলক পদবী আছে। কিন্তু এঁরা এই সব বৃত্তিজ্ঞাপক পদবীর জন্য কোন লজ্জা বা সংকোচ বোধ করেন না যেহেতু এদের সমাজে বৃত্তি বা কর্মের বিচারে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় না। অতএব এরা পদবী পরিবর্তনের চিন্তাও করেন না। কিন্তু এ দেশে বিশেষ করে বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে বিভিন্ন নামের অসংখ্য জাত বা সম্প্রদায়, কুল বা গোষ্ঠীর উৎপত্তি কর্ম বা বৃত্তির ভিত্তিতে এবং ঐ কর্ম বা বৃত্তি সামাজিক মর্যাদা নিরূপণের মাপকাঠি হওয়াতে অর্থাৎ কর্ম বা বৃত্তির নিক্তিতে সমাজে উচ্চ-নীচ স্থান নির্দিষ্ট থাকায় প্রচলিত পদবীর মধ্যে যেগুলির দ্বারা বিশেষ করে কায়িক শ্রমোপজীবী গোষ্ঠীগুলি নির্দেশিত হয় সেই সব পদবী সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সকলেই বর্জন করছেন এমন নয়। তবে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর যাঁরাই শিক্ষায়-দীক্ষায়, ধনে-মানে উন্নত হচ্ছেন তাঁরা গোষ্ঠীগত পদবী পালটে এমন পদবী নিচ্ছেন যাতে তাঁদের বংশগত কর্মের সন্ধান মেলে না। আবার, এইসব গোষ্ঠীভুক্ত এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বংশগত কর্ম আর করছেন না অথচ বংশগত বা কৌলিক পদবী ব্যবহার করে যাচ্ছেন এবং তার দরূণ প্রচলিত নিয়মেই সমাজে অবজ্ঞার পাত্র বলে চিহ্নিত হচ্ছেন। এরাও পদবী পরিবর্তন করছেন মূলত সামাজিক অবজ্ঞা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এইভাবে যিনিই পদবী বদল করে নিচ্ছেন তাঁর পরবর্তী বংশধরগণ নূতন পদবীতেই পরিচিত হচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার পরিবারসুদ্ধ সকলেরই পদবী একসংগেই বদলে নেওয়া হচ্ছে। এইরূপ বদলানোর ফলে অনেক পরিবারই তাদের আত্মীয়, শ্রেণী বা গোষ্ঠীগত পরিচয় থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বংশপরম্পরায় আত্মীয়তা থাকায় বা একই শ্রেণীর বা গোষ্ঠীর লোক হিসাবে পরিচিত থাকায় পদবী বদলানোর পরেও তাদের শ্রেণী বা গোষ্ঠীগত সামাজিক বন্ধনের হেরফের হয় নি। কিন্তু দেশবিভাগের ফলে ও জীবিকা অর্জনের কারণে একই শ্রেণী বা গোষ্ঠীর লোক বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় ও স্বেচ্ছামত পদবী পরিবর্তন করায় আত্মীয়তা ও গোষ্ঠীগত সমাজ-বন্ধন উত্তরোত্তর শিথিল হয়ে যাচ্ছে। দুই-এক পুরুষ পরে একই গোষ্ঠীর লোক হয়েও তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও আত্মিক ঐক্য বিনষ্ট হওয়াটা বিচিত্র নয়। এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, একই বংশের অনেকেই তাদের কৌলিক পদবী পালটে বিভিন্ন পদবী গ্রহণ করলেও পদবীর দ্বারা বংশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনে নতুন নেওয়া পদবী পালটে পুনরায় কৌলিক পদবীতে ফিরে আসতেও দেখা যায়। আবার, পরিবর্তিত নূতন পদবীতে সম্পত্তি ও জমি-জমা সংক্রান্ত দাবি প্রমাণের অসুবিধা হওয়ায় দলিলাদিতে লিখিত কৌলিক পদবীতে প্রত্যাবর্তনের নজিরও রয়েছে।

    পদবী পরিবর্তনের ফলে বাঙ্গালী হিন্দুর জাতকুল বা সম্প্রদায়, শ্রেণী বা গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয় যেমন লোপ পাচ্ছে তেমনি অবাঙ্গালী হিন্দু সমাজে বাঙ্গালী নামকরণের ধরনটি অনুকরণের দরূণ বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী হিন্দু সমাজের লোককেও তাদের নিজ নিজ গণ্ডিতে চিহ্নিত করার উপায় থাকছে না। বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী নামকরণে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার দ্বারা কে বাঙ্গালী হিন্দু আর কে অবাঙ্গালী হিন্দু তা বুঝতে পারা যায়। যদিও উপাধ্যায়, মিশ্র, ত্রিবেদী প্রভৃতি অনেকগুলি পদবী হিন্দু বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী উভয়ের মধ্যে প্রচলিত তবু বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী নামের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য থাকায় পদবী এক হলেও কে বাঙ্গালী আর কে অবাঙ্গালী, এতদিন তা বুঝা যেত। কিন্তু বাঙ্গালী ধরনে রঞ্জন, প্রদীপ, চিত্ত, প্রশান্ত, চন্দন প্রভৃতি নামগুলি অবাঙ্গালীর দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ায় বাঙ্গালী অবাঙ্গালী চেনার উপায় থাকছে না। এ ছাড়াও অগণিত পদবীর মধ্যে এমন অনেক পদবী রয়েছে যেগুলির ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে বাঙ্গালী অবাঙ্গালীকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করাও এক সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ঐরূপ পদবীর আগে বাঙ্গালী ধরনের নাম দেখলে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

    বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী হিন্দু ছাড়াও হিন্দু ও মসলমানের গণ্ডি চিহ্নিত করার ব্যাপারেও অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। চৌধুরী, বিশ্বাস, মণ্ডল, মজুমদার, সরকার, সিকদার ইত্যাদি খেতাব/উপাধি যেমন হিন্দু সমাজের অনেক সম্প্রদায়ের কৌলিক পদবী হিসাবে ব্যবহৃত তেমনি মুসলমান সমাজেও পদবীরূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে হিন্দু-মুসলমান ভেদে নামকরণের স্বাতন্ত্র্যে পদবীর মিল থাকলেও এবং অবাঙ্গালী হিন্দুর ন্যায় মুসলমানদের বাঙ্গালী ধরনে অনিরুদ্ধে, অভিজিত, সব্যসাচী প্রভৃতি নামকরণ চালু হলেও কাজী, সিরাজ প্রভৃতি পদবীগুলি নামের আগে ও পরে থাকায় হিন্দু, মুসলমান চেনার অসুবিধা দেখা দেয় নি। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যেও হিন্দু ধরনে নামকরণের ব্যাপক প্রচলন এবং কাজী, সিরাজ প্রভৃতি পদবী ব্যতিরেকে সেই নামগুলির শেষে চৌধুরী, বিশ্বাস, মণ্ডল, মজমদার, সরকার, সিকদার (হিন্দু-মসলমান উভয়ের মধ্যে প্রচলিত) ইত্যাদি পদবী যক্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে হিন্দু ও মুসলমানের গণ্ডি চেনারও উপায় থাকে না।

    বাঙ্গালী খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে নাম ও কৌলিক পদবীর পরিবর্তন করতে হয় না। তবে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আলফ্রেড, ইমানুয়েল, পল, পিটার, মার্টিনা, মাইকেল প্রভৃতি খ্রীস্টীয় মহাপুরুষদের নাম অনেকেই তাঁদের বাঙ্গালী নাম ও পদবীর আগে ব্যবহার করায় আলফ্রেড ঘোষ, ইমানুয়েল দিলীপ বাড়ৈ, পল পরমানন্দ বিশ্বাস, পিটার প্রসুন বিশ্বাস, মার্টিনা হালদার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রভৃতি নামে পরিচিত হওয়ায় বাঙ্গালী খ্রীস্টানদের পৃথক গণ্ডি চেনার অসুবিধা হয় না। কিন্তু খ্রীস্টীয় মহাপুরুষদের নাম বর্জন করলে প্রাথমিক পর্যায়ে বাঙ্গালী হিন্দু ও বাঙ্গালী খ্রীস্টানদের গণ্ডি চেনার উপায় থাকে না। আদিবাসী সমাজের মধ্যে গোত্রের (CLAN) খুব প্রচলন। এই গোত্রের নাম হয়ে থাকে জীবজন্তুর, গাছপালার কিংবা কোন জড় পদার্থের নাম থেকে। গোত্রের নামকে ওঁরা পদবী হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। ওঁদের নামকরণের বেলাতেও বাঙ্গালী নামের সংগে অনেক ক্ষেত্রে অর্থ—গত সামঞ্জস্য থাকলেও ভাষাগত পার্থক্য থাকায় এবং তার সংগে গোত্রগত পদবী যুক্ত  হওয়ায় শ্রীমঙ্গরা (মঙ্গলবার জাত) কুজুর, শ্রীবিষা টির্কে, শ্রীবুদ্ধ (বুধবারে জাত) কচ্ছপ প্রভৃতি নামের দ্বারা আদিবাসী সমাজের লোক হিসাবে তাঁদের পরিচয় বিশিষ্ট হয়ে ওঠে।

    আদিবাসী সমাজের যাঁরা খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন তাঁরা বাঙ্গালী খ্রীস্টানদের ন্যায় অ্যালেকসাস, এন্টনী, উইলিয়ম, বার্নার্ড, মার্টিনা, পাটরাস, এডওয়ার্ড, ইলিয়াস, জোসেফ, জন, বেনাদিক, জেভিয়ার, ডোমিনিক, পিটার, এম্যানুয়েল, হিলারিয়াস, অ্যালোইস, ইয়ারটিউস, ইয়াকুব, ফ্রান্সিস, জেমস, বেয়াতর প্রভৃতি খ্রীস্টীয় মহাপুরুষদের নাম গ্রহণ করে তা তাঁদের গোত্রগত পদবীর আগে ব্যবহার করায় শ্রীঅ্যালেকসাস কুজুর, শ্রীএন্টনী লাকড়া, শ্রীইলিয়াস এক্কা প্রভৃতি নামের ব্যক্তিকে আদিবাসী খ্রীস্টানরূপে চিনতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু আজকাল আবার অনেক ক্ষেত্রে বাঙ্গালী হিন্দু ধরনে কালীপদ, শান্তি, সুধীর, দিলীপ ইত্যাদি নামকরণও চালু হয়েছে। তবে অবাঙ্গালী হিন্দু, মসলমান ও বাঙ্গালী খ্রীস্টানদের ন্যায় আদিবাসী সমাজে বাঙ্গালী ধরনে নামকরণ হলেও সেই নামের পরে তাঁদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গোত্রগত পদবী যুক্ত হলে আদিবাসী সমাজের লোক হিসাবে চিনতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু আদিবাসী সমাজের মুন্ডা জাতির মধ্যে নাগ ও ইদানীং রায়, সিং, মণ্ডল, সরদার ইত্যাদি পদবী; খারিয়া জাতির মধ্যে মণ্ডল, সরদার; ওঁরাও জাতির মধ্যে মণ্ডল, সরদার; এবং সাঁওতাল জাতির মধ্যে মাঝি ইত্যাদি বাঙ্গালী পদবীগুলি ব্যবহার করায় প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের আদিবাসী সমাজের লোক হিসাবে চিহ্নিত করার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতেও যদি বাঙ্গালী ধরনে নামকরণ ও পদবী গ্রহণের দ্বারা শ্রীকালীপদ সরদার, শ্রীশান্তি রায়, শ্রীসুধীর নাগ, শ্রীদিলীপ মণ্ডল প্রভৃতি নাম ব্যাপক হারে চালু হয় তা হলে দৃশ্যত নামের ভিত্তিতে বাঙ্গালী হিন্দু ও আদিবাসী সমাজের লোক আলাদা করে চেনার সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েই যাবে।

    আবার, বাঙ্গালী পদবীধারীর সহিত খ্রীস্টান পদবীধারিণীর বিবাহজাত পাত্রের, শ্যেন প্যাটরিক সিংহ, ও কন্যার, স্যারন প্যাটরিসিয়া সিংহ নামকরণে পিতার কৌলিক পদবীর সংগে মাতার কৌলিক পদবীও যুক্ত হওয়ার নজির দেখা যায়। কিন্তু পিতার “সিংহ” (কৌলিক) পদবীটি যুক্ত না-হলে পত্রকন্যাকে বাঙ্গালী হিন্দু বংশসম্ভূত-রূপে কিছুতেই চিহ্নিত করা যেত না। আবার, বিবাহসূত্রে আবদ্ধ পার্শী সম্প্রদায়-ভুক্ত মহিলার “এঞ্জিনিয়ার” (কৌলিক পদবী) ত্যাগ ও প্রাক্-বৈবাহিক “জারিন” (নাম) রেখে তার সংগে স্বামীর “চৌধুরী” পদবী যক্ত “জারিন চৌধুরী” উল্লেখ করতে দেখা যাচ্ছে। এঞ্জিনিয়ার পদবী-বিহীন জারিন নামের দ্বারা তাঁর কৌলিক সম্প্রদায় চিহ্নিত করা কিছুটা দুষ্কর। কারণ বাঙ্গালী হিন্দু স্ত্রী-পুরুষের নামকরণে এখন ততটা গোঁড়া হিন্দুয়ানী দেখা যায় না। তবে আলোচ্যক্ষেত্রে যেহেতু শ্রীমতী জারিনের কৌলিক পদবী ও বিবাহোত্তর চৌধুরী পদবীর সূত্রে আমাদের জানা (এঁর স্বামী স্যার আশুতোষ চৌধুরীর নাতি) সুতরাং একজন অহিন্দু মহিলার হিন্দু পদধী গ্রহণের নজির হিসাবে জারিন চৌধরী উল্লেখযোগ্য। সুইডিস রমণী “লিশা” বিবাহসূত্রে বাঙ্গালীর “চৌধুরী” পদবীতে “লিশা চৌধুরী”। আর, তাঁর গর্ভজাত কন্যা চেহারায় মেমসাহেব, নিজের নাম উচ্চারণে “অনীটা” বললেও পিতৃ-পরিচয়ে পুরোপরি বাঙ্গালী মহিলারূপে “অনীতা চৌধুরী”-র নামও উল্লেখযোগ্য। অনুরূপভাবে উল্লেখ্য, ইংরেজ মহিলা, বাঙ্গালী হিন্দু ডঃ সুখেন্দু বিশ্বাসের পত্নী আইলিন লেভিনা বিশ্বাসের নাম। বাঙ্গালী মহিলারাও অবাঙ্গালী তথা অহিন্দুদের সংগে বিবাহের সূত্রে তাঁদের নামের শেষে কোথাও কোথাও নিজ নিজ স্বামীর পদবীর সংগে তাঁদের কৌলিক পদবী যুক্তভাবেও ব্যবহার করে থাকেন। যেমন : গৌরী আয়ুব দত্ত, কেতকী কুশারী ডাইসন ইত্যাদি।

    গৌতমবুদ্ধের প্রবর্তিত “বৌদ্ধ ধর্ম” জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই গ্রহণ করার সূযোগ রয়েছে। পদবী দ্বারা এই ধর্মাবলম্বীদের চিহ্নিত করার উপায় নাই। বড়ুয়া পদবী এদের মধ্যে বেশী প্রচলিত থাকলেও বাঙ্গালী হিন্দুর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবহৃত পদবী—দাশগুপ্ত, রায়, বিশ্বাস, হোড়, সিংহ, সিনহা, মুৎসদ্দী, দাস, মজুমদার, তালুকদার, যাদব, কার্বারী, নাগ, পাল, দেওয়ান, সেন, সাহা, সরকার, রুদ্র, ঠাকুর এবং আদিবাসী সমাজের—চাকমা, লামা, শেরপা প্রভৃতি পদবী এই ধর্মাবলম্বীদের নামের শেষে দেখা যায়। অর্থাৎ, ধর্মান্তর গ্রহণ সত্ত্বেও তাঁদের সম্প্রদায়গত কৌলিক পদবী অবিকৃত থাকে। একইভাবে, শ্রীশ্রীচৈতন্যদেব প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বহুল প্রচলিত অধিকারী, গোসাই, গোস্বামী প্রভৃতি পদবী বা অন্য কোন পদবী দ্বারা এই ধর্মমতের কাকেও চিহ্নিত করার উপায় নাই। কারণ, এগুলি সবই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কৌলিক পদবী, যা তাঁরা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের পূর্বে ও ব্যবহার করতেন। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রচারিত বৈদিক ধর্মানুসারে সদাচারী আর্য সমাজভুক্ত লোকদেরও পদবীর দ্বারা আর্যসমাজী বলে চেনার উপায় নাই। সমাজের নামানুসারে “আর্য” শব্দটি কেউ কেউ পদবী হিসাবে ব্যবহার করলেও অনেকেই তাঁদের নিজ নিজ কৌলিক পদবীই নামের শেষে ব্যবহার করে থাকেন। ব্রাহ্মসমাজীরাও তাঁদের কৌলিক পদবীই অবিকৃতভাবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে তাঁদের মধ্যে আচার্য পদ যাঁরা পান তাঁরা তাঁদের নামের পর্বে আচার্য শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।

    এমন কিছু উপাধি আছে যেগুলি শুধু কর্মের সংগেই সম্পর্কিত এবং জাতিধর্ম নির্বিশেষে তাঁদেরই প্রাপ্য যাঁরা শুধু সেই সব কর্মে লিপ্ত। এ ধরনের উপাধি পরিবর্তনের ঝোঁক দেখা যায় না, কারণ এ উপাধিগুলি বংশপরম্পরায় ব্যবহার করার রীতি নেই। আবার, এমন উপাধি বা খেতাবও রয়েছে যেগুলি বিতরিত হয় সেই সব মানুষের মধ্যে যাঁরা এ উপাধি বা খেতাবগুলি পাওয়ার যোগ্য। এরূপ উপাধি বা খেতাবও তাঁদের বংশে ধারাবাহিকরূপে ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না।

    পর্বে বলা হয়েছে যে, প্রাচীন হিন্দু সমাজ ছিল উদার—মানুষে গুণে ও কর্মের ভিত্তিতে বর্ণের মর্যাদা লাভ করত অর্থাৎ গুণ ও কর্মের বলে ক্ষত্রিয়ের ব্রাহ্মণত্ব লাভে বাধা ছিল না। অনুরূপভাবেই বৈশ্য হতে পারত ক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণ এবং শূদ্রে লাভ করত বৈশ্য, ক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণের বর্ণমর্যাদা। পরবর্তীকালে তথা আধুনিক যুগে সমাজে যেমনটি চলছে অর্থাৎ জন্মের ভিত্তিতে বর্ণ ও জাতি নির্দিষ্ট হচ্ছে তার বদলে যদি পর্বের মতোই গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে বর্ণ ও জাতি নির্ধারিত হত এবং প্রধানত বৃত্তি বা কর্মের মানদণ্ডে সামাজিক মর্যাদা ও স্থান নিরূপণের বিভেদাত্মক ব্যবস্থাটি যদি না-থাকত তাহলে পদবী পরিবর্তনের এমন ব্যাপকতা হয়ত দেখা যেত না।

    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    Next Article বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.