Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাঁচকড়ি রচনাবলী ২ – পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়

    পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প20 Mins Read0

    পঞ্চ ‘ম’কার

    পঞ্চ ‘ম’কার

    মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন–ইহাই তন্ত্রসাধনার পঞ্চ মকার বা পঞ্চ তত্ত্ব। শ্লীলবাদী বাবুরা জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন যে, এই পঞ্চ তত্ত্বের কি কোন আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা আছে, কোন esoteric অর্থ আছে, না উহা সোজাসুজি সাধারণ ভাবে বুঝিতে হইবে? এই জিজ্ঞাসার সহিত এটুকু ইঙ্গিতও করা হয়, যেন সোজা অর্থে উহা বেজায় মন্দ, ধৰ্ম্মের নামে পাপের প্রশ্রয় দেওয়া হয়, উহা Black Art বা কালা বিদ্যা, বামমার্গ বা সজ্জন-সমাজের হেয় ব্যাপার। তন্ত্রগ্রন্থসকল পাঠ করিয়া আমাদের যাহা ধারণা হইয়াছে, তাহাতে ত আমরা বুঝি–পঞ্চ তত্ত্বের তিন প্রকারের প্রয়োগ আছে। (১) এক, মোটামুটি সোজাসুজি অর্থ; মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন বাহ্য পূজায় এবং স্কুল সাধনায় উহার নিয়মিত প্রয়োগ আছে; (২) মানস পূজায় উহার অর্থ স্বতন্ত্র নহে, তবে তাহা কাল্পনিক ব্যাপার মাত্র; মনে মনে কল্পনা করিতে হইবে যে, আমি সাধক দেবীকে সুরার সাগর, মাংসের পর্বত, মৎস্যের স্তৃপ, মুদ্রার সম্ভার দিতেছি এবং পদ্মিনী নারীর সহিত মৈথুন সাহায্যে কুণ্ডলিনীকে জাগরিতা করিতেছি; (৩) ষট্‌চক্রভেদে পঞ্চ তত্ত্বের অর্থ স্বতন্ত্র, প্রয়োগও স্বতন্ত্র, সেখানে উহার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা বা ইসটরিক অর্থ আছে। কিন্তু তন্ত্রের পদ্ধতিমত ষট্‌চক্ৰভেদ কয় জন করিতে পারে? কয় জন বাহিরের শক্তির সহায়তা ব্যতিরেকে কুণ্ডলিনীর উদ্বোধন ঘটাইতে পারে? পারে না-সচরাচর হয় না বলিয়াই উহার সোজা অর্থ ধরিতে হয়, সাধারণতঃ লোকে পঞ্চ মাকারে যাহা বুঝে, তাহাই ধরিয়া লইতে হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, ইহাতে লজার বা সঙ্কোচের বিষয় কি আছে? তন্ত্রধৰ্ম্ম প্রচারের ধৰ্ম্ম নহে, উহা গুপ্ত—গোপ্য সাধনার ধৰ্ম্ম; যাহার যেমন শক্তি, যাহার যেমন অধিকার, তাহাকে তেমনই কৰ্ম্মপদ্ধতি দেখাইয়া দিয়া তন্ত্র, জীবমাত্রেরই উদ্ধারের পথ প্রশস্ত করিয়া দিয়াছেন। তন্ত্র ভাবের ঘরে চুরি করে না, ভিতরের পর্দা ও বাহিরের পর্দা রাখে না; তুমি যেমন, তোমার প্রবৃত্তি যেমন, তেমনই সাধনপদ্ধতির ব্যবস্থা করিয়া থাকে। সুতরাং পঞ্চ মাকারে লজাবোধ করিবার ত কোন হেতু দেখি না।

    পূর্বেই বলিয়া রাখিয়াছি যে, আত্মশক্তি, উম্মেষ সাধনই তন্ত্রসাধনা। তন্ত্র নিজের দেহস্থ আত্মা ছাড়া অন্য কোন বাস্থ শক্তিকে দেবতা, ঈশ্বর বলিয়া মানে না। তন্ত্র বলেন যে, আমার দেহমধ্যে যে এক জন বিরাজ করিতেছেন, তাহা আমি বুঝি; তিনি জগৎকে বুঝিতে চাহেন, সৃষ্টিপ্ৰহেলিকাকে উদঘাটন করিতে চাহেন। তাই অনুমান করিতে হয় যে, যিনি আমার ভিতরে আছেন, তিনিই বিশ্বসৃষ্টির মধ্যে আছেন। আমার ভিতরের ঠাকুরকে আমি চিনিতে পারিলে বাহিরের ঠাকুরটি আপনি আসিয়া ধরা দিবেন। এখন দেখিতে হইবে, আমার ভিতরের ঠাকুরের বিকাশ কেমন করিয়া হয়। আহারে বিহারে, জীবনের উপভোগে ভিতরের ঠাকুরটি যেন একটু জাগিয়া উঠেন। বিশেষতঃ কাম ও মদনের চেষ্টায় ভিতরের ঠাকুরের যেন কতকটা নাগাল পাওয়া যায়; কারণ, কামচৰ্চার ফলে নরনারীর সংযোগে একটা নূতন জীবের সৃষ্টি হইতেছে। অতএব মৈথুন হইতেই কুণ্ডলিনীর জাগরণের পদ্ধতি অনেকটা বুঝা যায়। তন্ত্র স্পষ্ট বলিয়াছেন, সিস্মৃক্ষ বা সৃজন ইচ্ছা কামের নামান্তর মাত্র। যে পরমাত্মা ‘এক আমি বহু হইব’ বলিয়া সৃষ্টিপ্ৰহেলিকার বিকাশ করিয়াছিলেন, সেই পরমাত্মা তোমার দেহস্থ থাকিয়া এক আমি বহু হইবার সাধ অন্য নারীতে উপগত হইয়া মিটাইয়া থাকে। অ্যাদি সৃষ্টিতে যেমন আদ্যা শক্তির জাগরণের ফলে বিশ্বাত্মার মনে সিস্বাক্ষা জাগিয়া উঠিয়াছিল, তেমনই নারীদেহাভ্যন্তরে আদ্যা শক্তি কুণ্ডলিনী জাগিয়া উঠিলে, তবে সে নারী পুরুষকে আকর্ষণ করে এবং সেই আকর্ষণের ফলে, স্ত্রীত্ব-পুত্বের সংযোগে নূতন জীবসৃষ্টি হয়। কুণ্ডলিনী না জাগিলে কোন স্ত্রীই গর্ভবতী হইতে পাৱে না, কুণ্ডলিনী না জাগিলে কোন পুরুষের রেতঃপ্রবাহের সহিত আত্মশক্তির নিঃসরণ হয় না, নারীর জরায়ুতে নব জীবের আধান হয় না। অতএব প্রকৃত মৈথুনপদ্ধতির বিশ্লেষণ করিতে পারিলে আত্মশক্তির কতকটা পরিচয় পাওয়া যায়।

    ইহাই হইল তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্বের থিওরি বা সিদ্ধান্তকথা। একা তন্ত্র কেন—উপনিষদে, পুরাণে, বৈষ্ণব শৈব সকল শাস্ত্রে এই একই সিদ্ধান্ত নানা ভাবে, নানাপ্রকারের ভাষায় বর্ণিত আছে। অন্য সকল শাস্ত্ৰ যাহা থিওরির হিসাবে ব্যাখ্যা করিয়া নিরস্ত আছেন, তন্ত্র তাহাকে করিয়া কৰ্ম্মিয় দেখাইয়া দিয়াছে। এইখানে একটা কথা বলিব। আমাদের দেশে কতকটা হঠযোগের প্রভাবে, কতকটা খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মের প্রভাবে নারী বা স্ত্রীজাতি সমাজে যেন একটু নিম্ন স্থান অধিকার করিয়াছেন। অথচ বেদ হইতে পুরাণ তন্ত্ৰ পৰ্য্যন্ত সকল ঋষিপ্রণীত শাস্ত্রই বার বার বলিয়া রাখিয়াছে যে, নারী নরের অৰ্দ্ধাঙ্গস্বরূপিণী, ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের সহচরী! বেদের কোন যজ্ঞই পত্নী ব্যতীত হইবার জো নাই; অগ্নিহোত্ৰী হইতে হইলে পত্নী চাহি। পৌরাণিক ক্রিয়াকৰ্ম্ম পত্নীর সহিত করিতে হয়; পত্নীসঙ্গবৰ্জিত হইয়া তীর্থদর্শন করিলে সে দর্শন ব্যর্থ হয়; শ্ৰাদ্ধ শান্তিও পত্নী সহ করিতে হয়। শক্তিশূন্য হইয়া কোন যজ্ঞ করিবার উপায় নাই। দীক্ষা গ্ৰহণ করিতে হইলে পতি পত্নী একসঙ্গে লইতে হইবে; জপ যজ্ঞ করিতে হইলে পতি পত্নী একসঙ্গে করিতে হইবে; মহানির্বাণতন্ত্র স্পষ্টই বলিয়াছেন যে, ভৈরবীচক্ৰে পত্নীকে শক্তিরূপে পাইলে অন্য নারীর প্রয়োজন হয় না। অন্য নারীকে শক্তি করিতে হইলে শৈব পদ্ধতিমতে তাহাকে বিবাহ করিয়া, পত্নীর পদে বরণ করিয়া, তবে চক্ৰে বসিতে হইবে। যাহার পত্নী নাই, তাহার কোন বৈধ কৰ্ম্মে অধিকার নাই; সে গৃহস্থাশ্রমে থাকিতেই পারে না। তাহাকে হয় প্ৰব্ৰাজ্য গ্ৰহণ করিতে হইবে, নহিলে বানপ্ৰস্থ অবলম্বন করিতে হইবে। গৃহস্থাশ্রমে থাকিতে হইলে বিপত্নীক পুরুষকে বিবাহ করিতেই হইবে। অবশ্য যদি কোন গৃহীর পঞ্চাশ বৎসর বয়স অতিক্রান্ত হইলে স্ত্রীবিয়োগ হয়, তাহা হইলে তিনি ইচ্ছা করিলে বানপ্ৰস্থ আশ্রম অবলম্বন করিতে পারেন। কিন্তু গৃহী কািন্ত্রী থাকিতে হইলে তাঁহাকে শৈব মতে বিবাহ করিয়া ঘর সংসার চালাইতে হইবে। ইহাই তন্ত্রের আদেশ। শঙ্করাচাৰ্য্য নারীকে নরকের দ্বার বলিয়াছেন, এই হেতু ব্ৰহ্মানন্দ গিরি শঙ্করাচাৰ্যকে খুব একহাত তিরস্কার কুরিয়াছেন। তন্ত্রমতে নারীই আদ্যাশক্তিস্বরূপিণী—জগন্ময়ী—জগজ্জননী; সুতরাং নারী পূজনীয়া, অৰ্চনীয়া, সাদরে রক্ষণীয়া। খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মে নারীকে শয়তানের প্রলুব্ধ জীব বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে। খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্ম অনুসারে নারীসঙ্গ শয়তানের প্ররোচনায় হইয়া থাকে। অতএব মেয়েমানুষ ও মৈথুন খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মের সিদ্ধান্ত অনুসারে মহাপাপজ। মনীষী শ্ৰীযুত রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদী বলেন যে, খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মের এবং হঠযোগী নিষ্কামধৰ্ম্মীদিগের নারীর প্ৰতি এই বিতৃষ্ণার ভাব গোড়াকার বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রভাবেই ঘটিয়াছিল। আমরা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করিতে পারি না। কিন্তু মজা এই, যে ধৰ্ম্ম বা সাধনপদ্ধতিতে নারীর অত্যন্ত নিন্দা আছে, সেই ধর্মের ধাৰ্ম্মিকগণ পরে লাম্পট্যদোষে দুষ্ট হইয়া অধঃপাতে গিয়াছে। বৌদ্ধ ধর্মের অধঃপতন লাম্পট্যদোষেই ঘটিয়াছিল; খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মের অধঃপতনও ঐ লাম্পট্যদোষেই ঘটে। পরে প্রটেষ্টাণ্ট ধৰ্ম্মের প্রচার হইলে খ্ৰীষ্টান ইউরোপ একটু সামলাইয়াছিল বটে, পরন্তু আবার বর্তমান বিলাসপ্রধান সভ্যতার দংশনে আধুনিক ইউরোপে লাম্পট্যের অতিবিস্তার ঘটিয়াছিল। এখন যে ভয়ানক যুদ্ধ চলিতেছে, তাহার পরিণামে ইউরোপের লাম্পট্যদোষের কতকটা সংবরণ হইতে পারে।

    সে যাহা হউক, এই নারীর নিন্দা হইতেই আমরা মৈথুন কাৰ্য্যের নিন্দা করিতে শিখিয়াছি। যে কাৰ্য্যের ফলে জীবসৃষ্টি হইবে, প্ৰজাবৃদ্ধি হইবে,–প্ৰজাবৃদ্ধি ও জীবসৃষ্টির জন্যই যাহার বিধান, তাহার নিন্দা করিতে নাই; উহাকে একটা গুপ্ত কাণ্ড বলিয়া উহার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিতে নাই। উহাকে চাপিলেই-লুকাইলেই লাম্পটার বৃদ্ধি হইবে, লোকে গুপ্ত পিশাচে পরিণত হইবে। কেবল তাহাই নহে, নরনারীর সঙ্গমটাকে জঘন্য ব্যাপার বলিয়া পরিচিত করিলেই, তাহার পর হইতে দুর্বল পুত্ৰ কন্যা উৎপন্ন হইবে, যথাশাস্ত্ৰ বংশরক্ষা দুষ্কর হইবে। জৰ্ম্মন মনীষিগণ এইটুকু বুঝিতে পারিয়াই গত কুড়ি বৎসর কাল জৰ্ম্মানির চিকিৎসকগণ মৈথুনের সায়ান্স-সম্মত পদ্ধতি প্ৰকাশ্যভাবেই ব্যাখ্যা করিতেছেন। অধ্যাপক শেঙ্ক ইহার প্রধান ব্যাখ্যাতা। চিকিৎসক ও তত্ত্বজ্ঞগণের পরামর্শ অনুসারে পরিচালিত হওয়ায় জৰ্ম্মন জাতির মধ্যে বন্ধ্যা নাই বলিলে অত্যুক্তি হইবে না; তাই আজ সংখ্যায় জৰ্ম্মান জাতি ইউরোপের শিরোমণি; কেবল তাঁহাই নহে, সুপুষ্ট সবলকায় পুত্র কন্যায় আজ জৰ্ম্মনি পূর্ণ। জৰ্ম্মনির বিদ্বজ্জনসমাজে জীবসৃষ্টির পদ্ধতির ব্যাখ্যা লজ্জাজনক নহে। আমাদের দেশে যখন তন্ত্রধৰ্ম্ম প্রবল ছিল, তখন মৈথুনটা গোপ্য, নিন্দনীয় ও জঘন্য ব্যাপার বলিয়া পরিচিত ছিল না। খ্ৰীষ্টানী বুদ্ধিতে এখন তন্ত্রের পঞ্চ মকারের নিন্দা করিলে চলিবে কেন? আবার মজা এই, যাঁহারা প্রকাশ্যে পঞ্চ মকারের নিন্দা করেন, তাঁহাদের অনেকে ভিতরে ভিতরে এক একজন মিথুন-মাস্টার। কাহারও পত্নী প্রতি একাদশ মাসের শেষে এক একটি নব কুমার বা কুমারী স্বামিচরণে উপঢৌকন দিতেছেন এবং বর্ষে বর্ষে এমনই উপঢৌকন দিতে দিতে শেষে ক্ষয়রোগে তনু ত্যাগ করিতেছেন। কেহ বা গুপ্তভাবে দুই তিনটি কামপত্নী রাখিয়াছেন; কেহ বা পরনারী দেখিলে নয়নপথে তাঁহাদের আড়ে গিলিতে চাহেন। তন্ত্রের দৃষ্টিতে এবম্প্রকারের লাম্পট্য অতিপাতক, মহাপাতক বলিয়া পরিচিত। বাহিরের লেপাফাদোরস্ত সাধুতা তন্ত্রের হিসাবে বেজায় দোষের—মহাপাপজ। তন্ত্র ভাবের ঘরে চুরি করিতে, প্রবৃত্তি লইয়া লুকাচুরি করিতে বার বার নিষেধ করিয়াছেন। তন্ত্র, প্ৰকাশ্য দুষ্ট নষ্ট নর নারীকে ক্ষমা করিতে পারেন, পরন্তু কপট শঠকে কখনই ক্ষমা করেন না। তন্ত্র বলেন, গুরুর কাছে হৃদয়ের কপাট খুলিয়া দেখাইবে, লজ্জাবোধ করিবে না। তাই তন্ত্র শিষ্যের কাছে—তন্ত্রপাঠকগণের কাছে কিছুই লুকাইয়া রাখেন নাই। ইহা দোষের নহে, বরং শ্লাঘার বিষয়।

    অবশ্য ইহা স্বীকাৰ্য যে, তন্ত্রধৰ্ম্মের বেজায় অধঃপতন ঘটিয়াছিল। মানুষের ব্যবহারে ধৰ্ম্মমত উন্নত হয় বা অধঃপতিত হয়। মানুষ ভাল হইলে ধৰ্ম্ম ভাল হয়, মানুষ মন্দ হইলে ধৰ্ম্মকৰ্ম্মও মন্দ হইয়া যায়। মানুষের প্রকৃতি ও প্ৰবৃত্তির দোষে পৃথিবীর সকল প্ৰধান ধৰ্ম্মই নষ্ট হইয়াছে, মানুষের ব্যবহারের গুণে অনেক সামান্য ধৰ্ম্ম উন্নত হইয়াছে। জাতির অধঃপতন ধৰ্ম্মের দোষে ঘটে না। বিলাসে মানুষকে নষ্ট করে, হীন হেয় করিয়া তোলে; মন্দ লোকের প্রভাবে ধৰ্ম্ম ও কপটতার আশ্রয় হইয়া উঠে। ধৰ্ম্মের দোহাই দিয়া কত বিলাসী জাতি যে কত পাপ করিয়াছে, কত পশুত্বের প্রচার করিয়াছে, তাহা হিসাব করিয়া বলা যায় না। জাতি বিলাসী না হইলে ধৰ্ম্ম বিলাসের আশ্রয় হয় না। সুতরাং ধৰ্ম্মকে নিন্দা করিতে নাই; যেমন মানুষে যে ধৰ্ম্মের। যেমন ভাবে আচরণ করিবে, সেই ধৰ্ম্ম তেমনই ভাবে ফুটিয়া উঠিবে। মানুষের দোষে তন্ত্রধৰ্ম্ম নষ্ট হইয়াছে, মানুষের দোষে ভারতবর্ষের অন্য সকল ধৰ্ম্মও নষ্ট হইয়া গিয়াছে। তবে এখনও যেখানে সাধনা, যেখানে আরাধনা, সেইখানেই তন্ত্রের প্রভাব পরিস্ফুট। আত্মশক্তির উন্মেষ যিনিই করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, তাঁহাকেই তন্ত্রের আশ্রয় গ্ৰহণ করিতে হইয়াছে। ইসলাম ধৰ্ম্মের সুফীগণ, খ্ৰীষ্টানধৰ্ম্মের মঙ্কগণ-যাহারাই সাধনা করিয়াছেন, র্তাহাদিগকেই জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তন্ত্রের আশ্রয় গ্ৰহণ করিতে হইয়াছে। অর্থাৎ সাধনার একটা পদ্ধতিই এখন পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই প্ৰচলিত আছে। সে পদ্ধতি আমাদের দেশে তন্ত্রপদ্ধতি বলিয়া। পরিচিত, অন্য সকল দেশে অন্য নামে পরিচিত; পরস্তু আসলে সকল দেশের সাধনাই একই রকমের। এই যে পঞ্চ তত্বের বা পঞ্চ মকারের সাধনা, ইহা তান্ত্রিকদিগের মধ্যে যেমন ভাবে প্ৰচলিত, অন্য সকল ধৰ্ম্মাবলম্বীদিগের মধ্যেও দেশভেদে ও রুচিভেদে কিঞ্চিৎ আকারান্তরিত হইয়া প্ৰচলিত আছে। কেহ বা মোটামুটি বাহিক হিসাবে করে, কেহ বা মানস পূজার হিসাবে করে, কেহ বা ষট্‌চক্ৰ ভেদের পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া করে। আবার তন্ত্রে পঞ্চ মকারের অনুকল্পের ব্যবস্থাও আছে। যথা-সুরার পরিবর্তে ডাবের জল, মিছরির সরবৎ, এমন কি, তাম্রাধারে জল পৰ্য্যন্ত অনুকল্প বিধান করা হইয়াছে। যাহার যেটা সহে, যাহার যেমন জীবন, যেমন রুচি প্ৰবৃত্তি, তাহার জন্য তেমনই ব্যবস্থা করা হইয়াছে। তন্ত্র বলেন-তোমার আত্মা যখন তোমার ইষ্ট, তখন আত্মতৃপ্তির জন্য তুমি যাহা করি, তাহাই ইষ্টদেবকে নিবেদন করিয়া করিবে। তুমি মদ্যপান নিয়মিত করিয়া থাক, মদ্যপানে বেশ আনন্দ বোধ করিয়া থাক, অথচ তুমি সুরা নিবেদন করিয়া পান কর না। যদি সত্যই বুঝিয়া থাক যে, মদ্যপান করিলে পাপ হয়, তাহা হইলে উহার পরিহার কৰ্ত্তব্য। তেমনই মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, যাহাঁই তুমি উপভোগ করিবে, তাহাই দেবতার প্রসাদ করিয়া খাও,–ইষ্টদেবীকে দিয়া আত্মতুষ্টি সাধন কর। দেবতাকে উপভোগ করাইয়া, অর্থাৎ দেবতাকে নিবেদন করিয়া, প্ৰসাদবোধে সকল সামগ্ৰী উপভোগ করিলে, উপভোগের মুখে একটা গণ্ডী পড়ে। মানুষের মধ্যে যে পশু আছে, সে পশু অবাধে প্ৰবৃত্তির পথে নাচিয়া খেলিয়া বেড়াইতে পারে না। তুমি তখন যেখানে সেখানে মদ্যপান করিয়া বেড়াইতে পরিবে না। যেখানে সেখানে মৎস্য, মাংস, মুদ্রার উপভোগ করিতে পারিবে না। সংযমের পক্ষে ইহা একটা প্রশস্ত উপায়। তন্ত্র বলিতেছেন, তোমার সঙ্গেই তোমার দেবতা ফিরিতেছেন, তোমার দেহাভ্যন্তরেই আছেন। তাঁহাকে তোমার সকল উপভোগ্য সামগ্ৰী নিবেদন করিতেই হইবে; কারণ, মায়ের ছেলেকে মায়ের প্রসাদ ছাড়া অন্য কিছু খাইতে নাই। যেমন করিয়া প্ৰসাদ করিতে হয়, তাহার পদ্ধতি তন্ত্রে লেখা আছে; সেই পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া তোমার উপভোগ্য সকল সামগ্ৰী প্ৰসাদ করিয়া লইবে। তন্ত্রের এই আদেশ মান্য করিয়া চলিলে, যেখানে সেখানে, যখন তখন মদ্যপান করা বা মৎস্য মাংস,মুদ্রার উপভোগ করা চলে না। মৈথুনেরও বেজায় বন্ধন আছে, সে সব জপ তপ করিয়া, মন্ত্র পাঠ করিয়া লতাসাধনা যে-সে মানুষের কৰ্ম্ম নহে।

    ইহা ত গেল এক পক্ষের কথা। সাধনার হিসাবে, আত্মশক্তির উন্মেষের হিসাবে এই সকল সামগ্রীর একটা উপযোগিতা আছে। যে সাধনার পথে অগ্রসর হয় নাই, বস্তুতত্ত্বের খবর রাখে না, তাহদের সে উপযোগিতার কথা ভাষার সাহায্যে বুঝান যায় না। আত্মশক্তির উন্মেষ কেবল মনুষ্যদেহেই হয় না, জীব জন্তুর দেহেতেও আত্মার বিকাশ ঘটে, এক একটা অপূর্ব শক্তির উন্মেষ হয়। সাধকের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে সেই সকল শক্তির প্রয়োজন হইয়া থাকে। তখন সাধক বিশেষকে জীববিশেষের জীবন-সাধন করিতে হয়। যাঁহারা শিবাসাধনা করেন, তাহারা শৃগালের ন্যায় কিছু কাল অবস্থিতি করেন। ইহা অঘোরপন্থার কথা। কোথায়—কোন জীবে কোন আত্মশক্তি কেমন ভাবে ফুটিয়াছে, তাহা ত আমরা জানি না; যখন যেটা জানিতে পারি, তখন সেইটার সাধন করিয়া আয়ত্ত করিবার চেষ্টা করি। ঠিকমত, আয়ত্ত হইলে একটা সিদ্ধির লাভ হয়। এক একটি করিয়া সিদ্ধি সঞ্চয় করিয়া যখন বিশেষ ঐশ্বৰ্য্যশালী হওয়া যায়, তখনই তামসুদৰ্শন ঘটে, দেহগত আত্মার এবং বিশ্বব্যাপী আত্মার পরিচয় হয়। শক্তি সর্বত্র সমানভাবে ছড়ান আছে,–সর্ববস্তুতে, সর্বপদার্থে শক্তি আছেই। কোথায় সে শক্তির কেমন ক্রিয়া হইতেছে, তাহা কে বলিতে পারে? বিষ্ঠা মনুষ্যদেহে থাকিলে মহাবিষে পরিণত হয়, কিন্তু মাটিতে পড়িলে উহা শ্ৰেষ্ঠ সার, শূকরের উহা প্রধান ভোজ্য। তোমার পক্ষে যাহা হেয়, অন্যের পক্ষে তাহা শ্ৰেয়:। অতএব সংসারে হেয় শ্ৰেয়; কিছু নাই, পাপ পুণ্য কিছু নাই। অবস্থা গতিকে পাত্রের হিসাবে কোনটা কখন বা হেয়, কখন বা শ্ৰেয়ঃ, কখন বা পাপজ, কখন বা পুণ্যাত্মক। এই সংসারে তোমার আমার বুদ্ধির মাপকাঠিতে যাহা কিছু সদসৎ আছে, তাহদের মধ্যে যে শক্তি আছেন, তিনিই আৰ্দ্ধাশক্তি, তিনিই মহামায়া। তাঁহাকে যেখান হইতে পার, সেইখান হইতে টানিয়া বাহির করিতে হইবে। এই শক্তিসংহরণের নামই সাধনা। মাতাল না হইলে গোটকয়েক আত্মশক্তির বিকাশ হয় না-তা ভাবেই মাতাল হও, ভক্তিতেই মাতাল হও, কীৰ্ত্তনানন্দে মাতাল হও, তোমাকে মাতাল হইতে হইবে,–নইলে শক্তির বিকাশ ঘটিবে না। তন্ত্র এক সম্প্রদায়ের সাধকের জন্য সোজাসুজি মদের ব্যবস্থাই করিয়াছেন। রিরংস হইতে আর এক শ্রেণীর শক্তির বিকাশ হয়; এ কথাটা সকল সম্প্রদায়ই স্বীকার করেন। সহজিয়া, বৈষ্ণব, শৈব, কিশোরীভজা, কৰ্ত্তাভজা, পরকীয়া সাধনা—সবই রিরংসার উপর প্রতিষ্ঠাপিত। তন্ত্র উহার উপর ভাবের আবরণ রং চড়াইয়া, উহাকে মধুরতর না করিয়া, সোজাসুজি পঞ্চতত্ত্বে মৈথুনের ব্যবস্থা করিয়াছেন। ইঙ্গিতে যতটুকু পারিলামবলিলাম; ইহার অধিক আর বলা যায় না, বলিতে নাই। আবার বলিয়া রাখি, তন্ত্রের মধ্যে শক্তিসাধনার অসংখ্য ও অনন্ত পদ্ধতি নির্দিষ্ট আছে। যাহা তোমার ভাল লাগে, তাহা তোমার পক্ষে ভাল; যাহা আমার ভাল লাগে বা উপযোগী, তাহা আমার পক্ষে ভাল। তুমি নিজের পন্থার যশ কীৰ্ত্তন করিতে পার, আমি আমার পন্থার বিজয় ঘোষণা করিতে পারি; কিন্তু আসলে সব এক, সেই আত্মদর্শনচেষ্টা, ইষ্টের সাক্ষাৎকার।

    (‘প্রবাহিণী’, ২৭ আষাঢ় ১৩২২)

    1 2 3
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী – আবুল ফজল
    Next Article পাঁচকড়ি দে রচনাবলী ৫ (৫ম খণ্ড)

    Related Articles

    পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়

    আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী – আবুল ফজল

    September 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }