Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প453 Mins Read0
    ⤷

    ০১. স্যাম এবং রেমি ফার্গো

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল। অনুবাদ: রাফায়েত রহমান রাতুল। প্রথম প্রকাশ একুশে বইমেলা ২০১৮

    চরিত্রসমূহ :

    ১২১৬

    নরফোক, ইংল্যান্ড

    উইলিয়াম দ্য মার্শাল-পেমব্রুকের আর্ল, কিং জনের অনুগণ।

    রবার্ট ডি ব্রুজ কিং জনের সৈনিক, যে পরবর্তীতে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল।

    হিউ ফিটজ হিউবার্ট-উইলিয়াম দ্য মার্শালের বিশ্বস্ত সৈনিক।

    জন ডি লেসি-কিং জনের গার্ড।

    কিং জন-ইংল্যান্ডের রাজা।

    বর্তমান সময়

    উইলিয়াম দ্য মার্শালের বংশধর এবং তাদের শত্রুসমূহ

    গ্রেস হারবার্ট-স্যার এডওয়ার্ড হারবার্টের দূর সম্পর্কের আত্মীয়া।

    স্যার এডমুন্ড হারবার্ট-(কাল্পনিক) দ্বিতীয় লর্ড মর্টিমার এডমুন্ড মর্টিমারের অবৈধ সন্তান।

    হিউ লি ডেসপেন্সর-দ্বিতীয় কিং এডওয়ার্ডের কথিত প্রেমিক, রজার মর্টিমারের বিরোধী।

    ক্যাপ্টেন ব্রিজম্যান-পাইরেট হেনরি এভোরির মিত্র, পারিবারিক সূত্রের মাধ্যমে হিউ লি ডেসপেন্সরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

    হেনরি ম্যাকগ্রেগরগ্রেস হিউবার্টের জ্ঞাতি ভাই, নটিংহাম রাজ্যের সম্পদের উত্তরাধিকারি।

    পিকারিং-এর ব্যবহৃত এবং বিরল বইসমূহের দোকান

    জেরাল্ড পিকারিং-স্যান ফ্রান্সিসকোর বই বিক্রেতা, ব্রি মার্শালের চাচা।

    মি. উইকহ্যাম-মি. পিকারিং-এর বিড়াল।

    ব্রি মার্শাল-রেমি ফার্গোর কল্যান তহবিলের কর্মী।

    ল্যারেইন পিকারিং-স্মিথ-ব্রির জ্ঞাতি বোন, জেরাল্ড পিকারিং-এর মেয়ে।

    ডাকাত-পরবর্তীতে নাম জানা গেছে ওর। জ্যাকব জ্যাক স্তানিস্লাভ।

    ফার্গো টিম

    স্যাম ফার্গো

    রেমি (লংস্ট্রিট) ফার্গো।

    যোলতান-হাঙেরিতে জন্ম নেওয়া রেমির জার্মান শেফার্ড।

    সেলমা ওয়ান্ডার্শ-ফার্গোদের গবেষক সহকারী।

    সান্ড্রা-ফার্গো জেটের ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট।

    প্রফেসর লাযলো কেম্প-গ্রেট ব্রিটেনের নাগরিক। সেলমার গবেষণায় সহায়তা প্রদানকারী।

    পিট জেফকট-সেলমার গবেষক-সহকারী, কোর্ডেনের বয়ফ্রেন্ড।

    ওয়েন্ডি কোর্ডেন-সেলমার গবেষক-সহকারী, জেফকটের গার্লফ্রেন্ড।

    সাবেক ডারপা (DARPA) সদস্য

    রুবেন রুব হেওয়ার্ড-সিআইএর অপারেশন ডিপার্টমেন্টের কেস অফিসার।

    নিকোলাস আর্চার-আর্চার ওয়ার্ল্ডওয়াইড সিকিউরিটির মালিক।

    এভেরি কোম্পানি

    চার্লস এভেরি-কর্পোরেট দুনিয়ার ডাকাত।

    কলিন ফিস্ক-এভেরি সিকিউরিটি টিমের প্রধান।

    মার্টিন এডওয়ার্ডস-এভেরির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার।

    আলেক্সান্দ্রা এভেরি-এভেরির স্ত্রী।

    কিপ রজার্স-আলেক্সান্দ্রা এভেরির ব্যক্তিগণ তদন্তকারী।

    উইন্টন পেজ-চার্লস এভেরির অ্যাটোর্নি বা আইনজীবী।

    জ্যাক স্তানিস্লভ-ফিস্কের পোষা গুণ্ডাদের একজন।

    মারলো-ফিস্কের পোষা গুণ্ডা।

    ইভান-ফিস্কের পোষা গুণ্ডা।

    ভিক্টর-ফিস্কের নতুন গুণ্ডা।

    রোজেন-ফিস্কের নতুন গুপ্ত।

    স্কলার এবং শিক্ষাবিদগণ

    প্রফেসর ইয়ান হপকিন্স-অ্যারিজোনার অধিবাসি। ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক।

    মেরিল ওয়ালশ, মিস ওয়ালশ-ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিউরেটর।

    মেজ ক্রাওলি-কিংস লিনের লাইব্রেরিয়ান।

    নাইজেল রিজওয়েল-কিংস লিনের ভ্রমণ প্রদর্শক, পুরোনো যুগের ইংরেজির সাবেক প্রফেসর ও বিশেষজ্ঞ।

    পার্সিভাল পার্সি ওয়েন্ড-নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর।

    আগাথা ওয়েন্ড-ওয়েন্ডর্ফের স্ত্রী।

    রেস্টুরেন্ট ও হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাভেল গাইডগণ

    স্যান ফ্রান্সিসকো।

    মি. ব্রায়ান্ট-রিটজ-কার্লটন হোটেলের অন-ডিউটি ম্যানেজার।

    অ্যারিজোনা

    শেফ মার্সেলিনো ভেরিঞ্জো-মার্সেলিনো রিস্টোরান্টে, স্কটসডেলের মালিক।

    সিমা-ভেরিঞ্জোর স্ত্রী।

    জ্যামাইকা

    মেলিয়া-রেস্টুরেন্টের ওয়েইট্রেস।

    জে-জে-জ্যামাইকার বাইকার বারের মালিক।

    কিমার-কার রেন্টালের কর্মচারী।

    আন্তোয়ান-জে-জে বারের বাইকার।

    বিলি-জে-জে বারের বাইকার।

    ব্রাজিল

    অ্যান্তোনিও আলভেজ-ভাড়াটে ড্রাইভার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সাও পাওলোর অধিবাসি।

    হেনরিক সালাজার-অ্যান্তোনিও আলভেজের চাচা।

    ক্যাপ্টেন দেলগাদো-গলফিনহোর ক্যাপ্টেন।

    নুনো-গলফিনহোর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য।

    পুলিশ অফিসার

    সার্জেন্ট ফথ-ডিটেক্টিভ, স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।

    সার্জেন্ট ট্রেভিনো-ফথের পার্টনার, স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।

    ডেপুটি ওয়াগনার-কারট্রিট কাউন্টি শেরিফের ডেপুটি।

    .

    প্রারম্ভ

    বিশপস লিন, নরফোক, ইংল্যান্ড
    অক্টোবর ৯, ১২১৬

    যাত্রার মাঝপথে এসে স্ট্যালিয়ন ঘোড়াটা থামালেন পেমব্রুকের আর্ল উইলিয়াম দ্য মার্শাল। তাকে অনুসরণ করলো পিছনে থাকা নাইট তিনজনও। শীতের প্রথম দমকা হাওয়া এসে লাগছে গায়ে। সন্ধ্যা বাড়ার সাথে প্রকৃতির তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। তাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিশাল এক ঘন জঙ্গল। ঘুটঘুঁটে অন্ধকারের জন্য কোনো পথই পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

    সন্ধ্যায় ধাওয়া করা ঘোড়সওয়ারিদের না দেখে একমুহূর্তের জন্য উইলিয়াম ভাবলেন তারা হয়তো পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু না, যতদূর মনে আছে আঁকাবাঁকা ওক গাছটা হাতের বাম দিকেই ছিলো।

    তিনি এবং তার তিনজন নাইট পথটা নিরাপদ কিনা তা খতিয়ে দেখতে এসেছেন। পরদিন এই পথ দিয়েই রাজার সম্পদ নিয়ে যাওয়া হবে। যদিও এই কাজটায় উইলিয়ামের তেমন সায় নেই, তিনি আরো কিছু সৈনিকের এসে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজার উপদেষ্টা জোর খাঁটিয়ে বলেছেন যে সম্পদগুলোর নিরাপত্তা দেওয়াই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইতিমধ্যেই ফ্রান্সের প্রিন্স লুইস লন্ডন দখল করে নিজেকে ইংল্যান্ডের রাজা বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। এই কাজে লুইসকে সহায়তা করেছে কিং জনেরই অনুগণ কয়েকজন। তাই উপদেষ্টা চাচ্ছেন রাজকীয় সম্পদগুলো নিরাপদস্থানে সরিয়ে ফেলতে, যেন এগুলো দখলদারদের হাতে না পড়ে।

    রবার্ট ডি ব্রুজ উইলিয়ামের কাছে এসে বলল, আমার লোকদের তো এতক্ষণে এখানে এসে পড়ার কথা।

    হয়তো ঠাণ্ডার কারণে আসতে দেরি হচ্ছে, বলে হঠাৎই হাত উঁচিয়ে সবাইকে চুপ করার নির্দেশ দিলেন উইলিয়াম। একটা ক্ষীণ শব্দ কানে আসছে তাঁর, শুনো…।

    আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।

    আবারো শোনা গেলো শব্দটা। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের সাথে অন্য একটা শব্দও মিশে আছে।

    পাশ থেকে ধাতব খসখসে শব্দ শুনতে পেলেন উইলিয়াম। রবার্ট খোপ তার তলোয়ারটা বের করে এনেছে। সাথে সাথেই বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ারি হুঙ্কার তুলে বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ারি বেরিয়ে এলো জঙ্গল থেকে। তারাও তলোয়ার বের করে রেখেছে। অপ্রত্যাশিত আক্রমণে কিছুটা চমকে গেছে উইলিয়ামের ঘোড়া। পিছিয়ে যেতে চাচ্ছে শুধু। উইলিয়ামে কোনোরকমে ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসে থাকার চেষ্টা করছেন। ঠিক তখনই বাতাস কাটার শব্দ শুনতে পেলেন তিনি, তাকিয়ে দেখলেন রবার্টের তলোয়ারটা এগিয়ে আসছে তার দিকে।

    সাথে সাথে শিল্ডটা উঁচিয়ে ধরলেন উইলিয়াম। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেছে। রবার্টের ব্লেড ধারালো প্রান্তটা ঠিকই তার বুকে এসে আঘাত করেছে। শক্ত চেইনমেইলটা আঘাতটা প্রতিহত করার পরও, ঠিকই ব্যথা পেয়েছেন তিনি।

    রবার্ট কি ভুল করে তাকে শত্রু ভেবে বসেছে নাকি?

    অসম্ভব, ভাবতে ভাবতে তিনিও তলোয়ার বের করে আনলেন। হালকা একটা পাক খেয়ে আক্রমণ করলেন তার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা ঘোড়সওয়ারিকে। উইলিয়ামের সবচেয়ে তরুণ নাইট আর্থার ডি ক্লেয়ারের পায়ের কাছে উড়ে গিয়ে পড়লো লাশটা।

    ক্রোধে গা জ্বলছে উইলিয়ামের। রবার্টের দিকে ঘুরে বললেন, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? রাজার নিজ হাতে বাছাই করে নেওয়া মানুষটার আক্রমণের শিকার হয়ে রীতিময়ে হতভম্ব হয়ে গেছেন তিনি।

    ভালোভাবে বললে, বলে আবারো তলোয়ার ঘুরালো রবার্ট। তবে এবারের আক্রমণটা কোনো চমক ছিলো না, তাই উইলিয়াম খুব সহজেই প্রতিহত করে ফেলেলেন আঘাতটা। দুটো তলোয়ার একত্রিত হওয়ার ধারব শব্দ শোনা গেলো শুধু। অবশেষে আমার মাথায় সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে।

    আমাকে আক্রমণ করে তুমি রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কেন?

    তোমার রাজা, আমার নয়। আমি এখন ফ্রান্সের লুইসের অনুগণ।

    বেঈমানিটা একদমই মেনে নিতে পারছেন না উইলিয়াম। তুমি আমার বন্ধু ছিলে।

    ঘোড়ার পেটে লাথি মেরে সামনের দিকে ঝুঁকে গেলো রবার্ট। তলোয়ার বাগিয়ে রেখেছে উইলিয়ামের দিকে। আঘাত হানতে যাবে ঠিক ঐ মুহূর্তেই আবার পিছিয়ে নিলো তলোয়ারটা।

    এই নকল আক্রমণটারই আশা করছিলেন উইলিয়াম। রবার্টকে এগুতে দেখেই শিল্ড উঁচিয়ে ধরলেন। শিল্ডের আঘাতে ঘোড়া থেকে উলটে মাটিতে পড়ে গেছে রবার্ট! সওয়ারি পড়ে যেতেই ঘোড়াও দৌড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের পিছনে থাকা হিউ ফিটফ হিউবার্টও ঘোড়াচ্যুত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বিদ্রোহি নাইটদের একজনকে মেরে ফেলেছে হিউবার্ট। তারপর ঘোড়ায় করে পালিয়ে যেতে থাকা অন্য নাইটকে ধরে ফেলেছে। লড়াইটা এখন দুই বনাম দুই পরিণত হয়েছে। আর এখন উইলিয়ামই একমাত্র ঘোড়সওয়ারি। দৃশ্যপটটা ভালোই লাগছে তার, ঘোড়া নিয়ে রবার্টের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললেন, আমি তোমাকে তলোয়ার চালানো শিখিয়েছি। তোমার দুর্বলতা জানি আমি।

    এবং, আমিও তোমারটা জানি। মেঘ সরে যেতেই চাঁদের আলোয় রবার্টের হাতে থাকা অস্ত্রটা ভালো ভাবে দেখতে পেলেন উইলিয়াম। এক প্রান্ত বিশিষ্ট একটা তলোয়ার, তবে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ওটাকে একইসাথে কুঠার এবং তলোয়ার দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা যাবে। হালকা বাকানো প্রান্তটা আলাদা একটা ভয়ঙ্কর মাত্রা দিয়েছে অস্ত্রটাকে। উইলিয়াম দেখতে পেলেন তলোয়ারটার শেষ প্রান্তে শক্ত করে একটা চেইনমেইল পেঁচিয়ে রাখা আছে।

    রবার্টের অস্ত্রটা বেশ ভারী ওজনের। সেই তুলনায় উইলিয়ামের দ্বি-ধার বিশিষ্ট লম্বা তলোয়ারটা অনেকটাই হালকা ওজনের। অস্ত্রের দিক থেকে রবার্টের সুবিধাই বেশি। তবে ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ায় লড়াইয়ে খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবে ও। ভাবনাটা মাথায় আসতেই উইলিয়াম দেখলেন রবার্ট তেড়ে আসছে তার দিকে। অস্ত্রটাকে কুঠারের মতো ধরে রেখেছে। লক্ষ্য ঘোড়ার পা-গুলোর দিকে।

    হুমকিটা বুঝতে পেরেই পিছিয়ে গেলেন উইলিয়াম। রবার্টদের পরিকল্পনা হলো-তাদের ঘোড়াগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, যাতে করে লড়াইয়ে বেঁচে গেলেও উইলিয়ামদের কেউ যেন রাজাকে সুর্ক করার জন্য সঠিক সময়ে ফিরে যেতে না পারে।

    ঘোড়া থেকে নেমে গেলে লড়াইয়ের সুবিধাটা হারাবেন উইলিয়াম, কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। যতদ্রুত সম্ভব শত্রুকে খতম করে রাজার কাছে ফিরে যেতে হলে ঘোড়াটাকে লাগবেই। তাই ঝট করে ঘোড়া থেকে নেমে গেলেন উইলিয়াম। ঘোড়ার পেটে হালকা চাপড় দিয়ে প্রাণীটাকে দূরে লুকিয়ে যেতে বললেন। ওদিকে হিউবার্ট অবশিষ্ট বিদ্রোহি নাইটের সাথে তলোয়ারযুদ্ধে মেতে আছে।

    রবার্টের দিকে তাকালেন উইলিয়াম। একে-অপরের দিকে চোখ রাঙিয়ে বৃত্তাকার পথে ঘুরপাক খাচ্ছেন। সাথে সাথে রবার্টের ধাতব বর্মটার দিকেও তাকিয়ে আছেন উইলিয়াম। বর্মটার খুঁত বের করার চেষ্টা করছেন। কেন? প্রথম আঘাতের সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন উইলিয়াম। তাঁর উত্তর জানা দরকার। তাকে বাঁচতে হবে।

    তার দিকে চোখ রাঙাতে রাঙাতে তলোয়ারটা হাতবদল করে নিলো রবার্ট। তোমার রাজার ক্যাম্পে পুরো একটা আর্মি পালার মতো স্বর্ণ আছে। তোমার অযোগ্য রাজার কৃতকর্মের কারণে যেসব সম্পদ হারিয়েছে সেসব ফিরিয়ে নিতে এসেছি আমি।

    রাজা তার ইচ্ছেমতোই কাজ করবে, ধাতুর সাথে ধাতুর সংঘর্ষের শব্দ হলো-সেটা তোমার পছন্দ হোক বা না হোক।

    আমার পরিবার সব হারিয়েছে তোমার রাজার জন্য, উইলিয়ামের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল রবার্ট। আঘাত করার জন্য সুবিধাজনক অবস্থান খুঁজছে। আমাদের স্বর্ণ দিয়ে রাজা তার অর্থ-ভান্ডার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড়ো করেছে। আমাদের রক্ত দিয়ে। আমার সৎভাইকে জেলে পাঠিয়েছে ঐ রাজা। বলে বেশ কয়েকবার তলোয়ার দিয়ে কোপ দিলো রবার্ট। সম্পদগুলো আমাদের, এগুলো যেখানে যাবে, আমরাও সেখানেই থাকবো।

    হাত জ্বলতে শুরু করেছে উইলিয়ামের। খুব দ্রুতই তাঁর শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। তরুণ এবং শক্তিশালী রবার্ট খুবই ভয়ঙ্কর এক শত্রু। একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে তাঁরা, ফোঁসফোঁস করে ক্ষুব্ধ নিঃশ্বাস ছাড়ছে। হিউবার্ট আর অন্য বিদ্রোহী নাইটের ওপর থেকেও মনোযোগ সরে গেছে। উইলিয়ামের। অন্ধকার থেকে তাদের লড়াইয়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন শুধু। তুমি হেরে যাবে, উইলিয়াম বললেন।

    নাহ। তোমার রাজা ইতিমধ্যেই মৃত্যুশয্যায় আছে।

    ভয়ে গা শিউরে উঠলো উইলিয়ামের। ভয়টাকে কাজে লাগিয়ে শেষবারের মতো সর্বশক্তিতে উঁচিয়ে ধরলেন তলোয়ারটা। আঘাতটা প্রতিহত করে ফেলেছে রবার্ট উইলিয়াম এমনটাই আশা করেছিলেন। তলোয়ারটা আস্তে আস্তে ওপরের দিকে হুট করে সর্বশক্তিতে ঠেলে দিলেন চেইনমেইলের আড়ালে থাকা রবার্টের হাতের ভিতর। সাথে সাথে দুই হাত ঠেলা দিয়ে রবার্টকেও মাটিতে ফেলে দিয়েছেন।

    রবার্টের ওপর গিয়ে দাঁড়ালেন উইলিয়াম। একই সাথে ভয় এবং ঘৃণা দুটোই মিশে আছে তার অভিব্যক্তিতে। রবার্টের তলোয়ার ব্যবহার করা হাতটা অকেজো করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তারপর নিজের অস্ত্রটা ঠেকালেন রবার্টের কণ্ঠনালীতে। এখন কী বলবে তুমি?

    লড়াই কিন্তু আমরাই জিতেছি।

    কিভাবে? তোমার আসন্ন মরণ দিয়ে? মুহূর্তটা উইলিয়ামের জন্য বিজয়ের সমতুল্য। বিশ্বাসঘাতককে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলার পথ থেকে মাত্র এক কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

    কিন্তু তখনই হাঁপাতে হাঁপাতে উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো রবার্ট। তোমার কি মনে হয় রাজাকে তার সম্পদ নিরাপদে সরিয়ে ফেলতে বলার বুদ্ধিটা কার? কিংবা তোমাদেরকে অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনাটা? পুরোটাই একমাত্র বৈধ রাজা প্রিন্স লুইসের চাল। লন্ডনে আসন গেড়ে এখন তিনি তোমার নকল রাজার লোভের সুবিধা ভোগ করবেন… সম্পদগুলো হবে আমাদের। বলে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে নিলো। প্রতিটা জায়গাতেই আমাদের গুপ্তচর রয়েছে। তোমার রাজার সম্পদের পুরোটাই ছিনিয়ে নিব আমরা, শেষ বিন্দু পর্যন্ত সব। আর সেগুলো দিয়ে লুইসের ক্যাম্পেইনের অর্থায়ন করা হবে। ইংল্যান্ড হবে তার। এই সপ্তাহ পেরুনোর আগেই তুমি এবং তোমার মতো লোকেরা কিং লুইসের সামনে মাথা নত করে তার আনুগণ্য মেনে নিতে বাধ্য হবে।

    হয়তো আমার লাশ মেনে নিবে, আমি না।

    বলে রবার্টের তলোয়ারটা ঢুকিয়ে দিলেন উইলিয়াম। জোরে একটা মোচড়া দিতেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে বাধ্য হলো রবার্ট। লাশটা ওভাবেই ফেলে রেখে ফিট হিউবার্টের দিকে তাকালেন। আহত হয়েছে?

    বুকের পাঁজর ভেঙেছে, মনে হয়।

    কিছু শুনেছো?

    হ্যাঁ।

    কোনোরকমে শুধু একটা ঘোড়াই যোগাড় করতে পারলো ওরা। উইলিয়ামের ঘোড়াটা। যেহেতু হিউবার্ট আহত হয়ে আছে, তাই দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে, উইলিয়ামই ঘোড়ায় চড়ে রাজাকে সুর্ক করতে যাবেন।

    ঘোড়ায় করে বিশপ লিনের ক্যাম্পে যেতেই অনেকগুলো মুখ দেখতে পেলেন উইলিয়াম। তাদের মধ্যে জন ডি লেসি দাঁড়িয়ে আছে রাজার তাঁবুর সামনে। কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না ভিতরে। এমনকি উইলিয়ামকেও না। রাজা অসুস্থ। আমাশয় হয়েছে। কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছা নেই উনার।

    আমার সাথে ঠিকই দেখা করবে। সরে দাঁড়াও নয়তো প্রাণ খোয়াও।

    কী

    জন ডি লেসিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাঁবুতে ঢুকে গেলেন উইলিয়াম। ভিতরের বিকট গন্ধে নাক কুঁচকে গেছে তার। রাজার চিকিৎসক এবং দুই স্টুয়ার্ড রয়েছে শুধু তাঁবুতে। রাজার শয্যার সাথে রাখা মোমবাতির আলোগুলো তাদের নড়নে টিমটিম করছে। মোমের অনুজ্জ্বল আলোয় রাজার নিস্তেজ দেহটা দেখতে পেলেন উইলিয়াম। খুব বেশি নিস্তেজ। রাজা মরে গেছে ভেবে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছেন উইলিয়াম। তবে কাছে এগুতেই দেখলেন যে রাজার বুক খুব ধীরে ধীরে উঠা-নামা করছে। তারমানে শ্বাস-প্রশ্বাস এখনো সচল আছে রাজারমহামান্য রাজা। বলে রাজার বিছানার পাশে হাটু গেড়ে বসলেন উইলিয়াম। মাথা নত করে বললেন, আমি ব্যর্থ হয়েছি।

    রাজার চোখের পাপড়িটা আলতো করে নড়ে উঠলো। জলপট্টির কাপড়টা উনার ভ্রূগুলোকে ঢেকে রেখেছে। কিভাবে?

    কথাগুলো আপনাকে একান্তে বলতে চাই, মহামান্য।

    কিং জন প্রথমে কিছু বললেন না, শুধু উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইলেন একদৃষ্টিতে। তারপর হালকা কব্জির ইশারায় বললেন, বের হয়ে যাও। সবাই।

    তবুটা পুরোপুরি খালি হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন উইলিয়াম। সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরও খবরটা জানাতে অস্বস্তি লাগছে তার। আপনার দরবারে থাকা বিশ্বাসঘাতককে চিনতে পারিনি আমি। অন্তত পক্ষে ঐ লোককে কখনোই সন্দেহ করিনি। রবার্ট ডি ব্রুজ। সে বলেছে আপনি মারা যাচ্ছেন। কিন্তু আপনার শারীরিক অসুস্থতার খবরটা তার জানারও কথা না।

    আমাশয়।

    আমার তা মনে হয় না।

    কথাটা শুনে চোখ বুজলেন কিং জন। দৃশ্যটা দেখে একমুহূর্তের জন্য উইলিয়ামের মনে হলো যে রাজা হয়তো আর কখনো চোখ খুলবে না। কে আমাকে মারার পরিকল্পনা করেছে?

    এটা আমি জানি না। তবে যে বিশ্বাসঘাতক হারামি এই কাজটা করেছে, সে জানে আপনি আপনার সাথে করে রাজসম্পদগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। এই সম্পদ দিয়ে তারা প্রিন্স লুইসকে ইংল্যান্ডের সিংহাসন দখল করতে সহায়তা করবে। তারা জানে এটাকে লুকানো হচ্ছে। এজন্যই আপনার অসুস্থতার সৃষ্টি করেছে, যাতে সকলেই আপনার শোকে কাতর থাকার সময় তারা সম্পদগুলো চুরি করতে পারে।

    আমার ছেলে… কোনোরকমে কাঁপতে কাঁপতে হাত বাড়িয়ে উইলিয়ামের কবজি আঁকড়ে ধরলেন কিং জন। জ্বরে হাত পুড়ে যাচ্ছে তাঁর। হেনরির কী হবে?

    সে নিরাপদেই আছে, এবং তাই থাকবে। নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাকে রক্ষা করবো আমি। রাজার বড়ো ছেলে হেনরির বয়স মাত্র নয় বছর। ছেলেটার ভিতরে তার বাবা বা অন্যান্য আত্মীয়দের মতো অসুতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার সৃষ্টি হয়নি এখনো। ইংল্যান্ড যদি কোনো আশা রাখতে চায়, তাহলে সেটা রাখতে হবে এমন এক সম্রাটের ওপর যার মধ্যে লোভ বা খুনে লালসা নেই। আমরা মনে হয়, সম্পদের প্রলোভনে আমাদের তরুণ যুবরাজ এই বয়সেই বখে যেতে পারে। প্রলোভন সামলানোর মতো সামর্থ্য এখনো এতোটা দৃঢ় হয়নি তাঁর।

    পুনর্গঠনের জন্য হলেও তার সম্পদের দরকার রয়েছে। আমাদের ভূমিগুলো আবার লুটতরাজদের দখলমুক্ত করতে হবে তার।

    মহামান্য, আমাকে যদি স্পষ্টভাবে স্যুটা বলার অনুমতি দেন, তাহলে বলি-যতদিন সম্পদগুলোর অস্তিত্ব থাকবে, তততদিনই এর পিছনে চরেরা লেগে থাকবে। ফ্রান্সের লুইস এদের মাত্র একজন। এছাড়াও তো আরো অনেকেই আসবে। আর ভুলে যেয়েন না, গণ কয়েকমাসে লড়াই করা বিদ্রোহী সেনাদেরও কিন্তু কোনো ভরসা নেই, তারা বিশ্বাসের যোগ্য না। অন্ততপক্ষে হাতের নাগালে এতো সম্পদের প্রলোভন থাকার পর তো নয়ই। বলে থামলেন উইলিয়াম। চাচ্ছেন রাজা যেন তার কথাগুলো শুনে ভালোভাবে বুঝতে পারেন। কিন্তু একটা গরীব রাজ্যের প্রতি কিন্তু কারো এতোটা আগ্রহ থাকবে না। সবচেয়ে বড়ো কথা, কোনো তরুণ বালকের শাসন করা একটা গরীব রাজ্যকে কিন্তু কেউ হুমকিও মনে করবে না…

    কী বলতে চাচ্ছো তুমি?

    কেমন হয় যদি রাতে আপনার সম্পদগুলো স্থানান্তরের সময় কোনো এক ফাঁকে হারিয়ে যায়? আপনি যদি অর্থের ভান্ডার হারিয়ে ফেলেন, তাহলে কিন্তু আপনার ছেলের কোনো শত্রু থাকবে না।

    কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন রাজা। গভীরভাবে শ্বাস ছাড়ছেন শুধু।

    আপনি অর্ধমৃত, মহারাজ, যদিও কথাটা উইলিয়ামের নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তারপরও এটাই স্যু। রাজা কোনো রোগে আক্রান্ত নন। আমাশয় রোগী তিনি আগেও দেখেছেন। একটা মন্থরগতির বিষ ভিতর থেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তার রাজাকে। রাজা হয়তো আর এক সপ্তাহ বা এর থেকে কয়েকদিন বেশি বাঁচতে পারেন। মৃত্যুর অপেক্ষা করার সময় অবর্ণনীয় একটা যন্ত্রণা সইতে হবে তাকে। অপেক্ষা না, মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা হবে শব্দটা। একমাত্র এই কাজের মাধ্যমেই তরুণ হেনরিকে নিরাপদে রাখা যাবে।

    আর যদি আমার ছেলের অর্থভাণ্ডারের প্রয়োজন হয়? বয়স বাড়লে তখন?

    তাঁর এটা লাগবে না। সম্পদটা যতদিন হারানো অবস্থায় থাকবে, ততদিন সে নিরাপদেই থাকবে।

    চূড়ান্ত উত্তর দেওয়ার আগে আবারো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন রাজা। তারপর বললেন, আচ্ছা। কাজটা তুমি নিজ দায়িত্বে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করবে।

    .

    ০১.

    স্যান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া
    বর্তমান সময়

    সাইডওয়াক ধরে ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে স্যাম এবং রেমি ফার্গো। চায়নাটাউনের প্যাগোড়া-স্টাইলের সবুজ রঙের গেটে ওপারে গিয়ে ভিড় কিছুটা কমেছে। গেট পেরুনোর পর রেমি তার সেল ফোনের ম্যাপ চেক করতে করতে বলল, আমার মনে হচ্ছে আমরা কোথাও একটা ভুল করেছি।

    হ্যাঁ, রেস্টুরেন্টটা, মাথা থেকে পানামা হ্যাটটা খুলতে খুলতে বলল স্যাম। পর্যটকদের জন্য একটা ফাঁদ ওটা। দেখলেই বুঝা যায়।

    স্বামীর দিকে তাকালো রেমি। স্যাম এখন তার বাদামি চুলগুলোর ভিতর দিয়ে হাত বুলাচ্ছে। রেমির থেকে হালকা কিছুটা লম্বা ও, চওড়া কাঁধ, অ্যাথলেটিক শরীর। মু শু পোর্ক নেওয়ার সময় তো তোমাকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি আমি।

    কোথায় ভুল করেছি আমরা?

    মঙ্গোলিয়ান বিফ অর্ডার করাটা। নিশ্চিতভাবেই বড়ো একটা ভুল ছিলো ওটা।

    আরে বাবা, ম্যাপের কথা বলছি আমি।

    ম্যাপটা জুম করে নিলো রেমি, রাস্তাগুলো দেখছে। সম্ভবত চায়নাটাউনের ভিতর দিয়ে যাওয়া শর্টকাটটা আসলে খুব একটা ছোটো না।

    তুমি যদি আমাকে অন্ততপক্ষে জানাতে যে আমরা কোথায় যাচ্ছি, তাহলে হয়তো আমি সাহায্য করতে পারতাম।

    ট্রিপের এই অংশটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ, রেমি বলল। তুমি নিজেও কিন্তু এখনো তোমার প্ল্যানের ব্যাপারে কিছুই বলোনি আমাকে।

    এটার কারণও আছে, বলে মাথায় আবার টুপিটা লাগিয়ে নিলো স্যাম। রেমির হাতের সাথে হাত পেঁচিয়ে হেঁটে সামনের দিকে এগুচ্ছে এখন। সলোমন আইল্যাণ্ডে তাদের সর্বশেষ ভ্রমণে ছুটিটা খুব একটা উপভোগ করতে পারেনি বলেই এই ট্রিপটার আয়োজন করেছে ও। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই ছিলো ঐ ট্রিপে। তাই ওসব থেকে মুক্তির জন্য এই ভ্রমণের আয়োজন। আমি তোমাকে কোনো কিছুরই কথা দিতে পারবো না, তবে এই ট্রিপ তুমি শুধু বিশ্রাম আর আরাম করবে। অন্তত এই একটা সপ্তাহ কেউ আমাদেরকে খুন করার জন্য তেড়ে আসবে না।

    পুরো এক সপ্তাহ ছুটি, স্যামের আরো কাছে ঘেষে বলল রেমি। ওদিকে মেঘপুঞ্জটাও সূর্যের আরো কাছে ঘেষে গেছে, সাথে সেপ্টেম্বর বিকালের উষ্ণতাও নেমে গেছে কিছুটা। সবশেষ এরকম নির্ঝঞ্ঝাট ছুটি কবে কাটিয়েছিলাম আমরা? মনে নেই আমার।

    আমারও মনে পড়ছে না।

    ঠিক তখনই রেমি বলে উঠলো, ঐ তো, পেয়ে গেছি। একটা বইয়ের দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে রেমি। দোকানের জানালায় সোনালি হরফে লেখা আছে পিকারিংর ব্যবহৃত ও বিরল বইসমূহ। আমার সাথে এতোটা পথ ক্লান্তভাবে হাঁটার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে দিতে পারবো না, তাই অন্যভাবে প্রতিদান দিলাম, কৌতুক করে বলল রেমি। স্যামের স্বর্গবাসী বাবা ছিলেন নাসার ইঞ্জিনিয়ার, পুরোনো বিরল বই সংগ্রহ করার শখ ছিলো লোকটার। স্যামও একজন ইঞ্জিনিয়ার, এবং তারও বই সংগ্রহের নেশা আছে।

    বইয়ের দোকানটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার রেমির দিকে তাকালো স্যাম। ওখানে গেলে যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু ঘটে?

    ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে, যেহেতু ওখানে শুধু বইই আছে।

    বলে হেসে উঠলো তারা। তারপর রাস্তা ক্রস করে এগিয়ে গেলো দোকানটার দিকে। রেমির প্রবেশের জন্য দরজাটা ঠেলা দিয়ে ধরে রেখেছে স্যাম। দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজার ওপরে থাকা বেলগুলো টুংটাং করে উঠলো। তাদের ঢোকার শব্দ পেয়ে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালো একটা সিয়ামিজ বিড়াল। জানালার কাছে থাকা এক গাদা বইয়ের স্তূপের ওপর বসে আছে বিড়ালটা। দোকানের ভিতরটা পুরোনো কাগজের গন্ধে ভরে আছে।

    বইয়ের তাকগুলোর দিকে তাকালো রেমি। ব্যবহৃত কিছু হার্ডকভার ও পেপারব্যাক বই ছাড়া আর তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। মনে মনে হতাশ হলেও সেটা প্রকাশ করলো না ও। শুধু প্রার্থনা করছে তাদের এখানে আসাটা যেন বৃথা না যায়।

    তখনই দোকানের পিছনের অংশ থেকে হাত মুছতে মুছতে একটা লোক বেরিয়ে এলো। লোকটার চুলগুলো ধূসর, চোখের ওপর সোনালি চশমা পরে আছে। তাদেরকে চোখে পড়তেই মুচকি হেসে উঠলো লোকটা। কোনো বই খোঁজায় আপনাদের সাহায্য করতে পারি কি?

    রেমি কিছু বলতে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই স্যামের ফোন বেজে উঠলো। স্যাম ফোনটা পকেট থেকে বের করে বলল, বাইরে গিয়ে ফোনে কথা সেরে আসছি আমি।

    অবশ্যই। তুমি বাইরে গেলেই ভালো। যেহেতু এখানে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতেই নিয়ে এসেছি।

    ফোনটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো স্যাম। স্যাম পুরোপুরি বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো রেমি, দরজাটা পুরোপুরি লেগে যেতেই দোকানিকে বলল, মি. পিকারিং?

    মাথা ঝাঁকালো লোকটা।

    আমি শুনেছি আপনার কাছে দ্য হিস্ট্রি অফ পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারসর কপি আছে?

    রেমির কথা শুনে মুহূর্তের জন্য মি. পিকারিংর হাসি মিলিয়ে গেলো, তবে পরমুহূর্তেই সামলে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। এদিকে আসুন।

    বলে পিকারিং রেমিকে নিয়ে একটা শেলফের দিকে এগিয়ে গেলেন। শেলফে পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারসর আরো বেশ কিছু কপি দেখতে পেলো রেমি। সে জানে বইগুলো পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে, তবে তারপরও ওগুলোকে দেখে শতাব্দী বছর আগের বইয়ের কপির মতই দেখাচ্ছে। নিপুণ দক্ষতায় সোনালি চামড়ার বাইন্ডিং-এর কারণেই এমনটা লাগছে।

    পিকারিং শেলফ থেকে একটা বই বের করে তা টুকরোটা দিয়ে বইয়ের ওপর থেকে ধুলো মুছে বাড়িয়ে দিলেন রেমির দিকে। আপনি কিভাবে জানলেন যে আমাদের এখানে এই বিশেষ বইটি আছে?

    আমার সাথে কাজ করা এক মহিলা বলেছে। আমার স্বামীর হারানো আর্টিফ্যাক্ট ও বিরল বই সংগ্রহের শখটার ব্যাপারে জানে ও। সে ই জানিয়েছে। বলল রেমি। তবে বইটা যে পুনর্মুদ্রিত সেটা বুঝতে পারলেও এটা নিয়ে পিকারিংকে কিছু বলল না। বললে হয়তো লোকটার খারাপ লাগতে পারে। অবশ্য মলাট উল্টাতেই দেখতে পেলো বইটাতে খুব দক্ষতার সাথে অ্যান্টিক ছাপ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। মনে মনে কাজটার প্রশংসা করতে বাধ্য হলো রেমি। বইটা খুবই সুন্দর… কিন্তু আমি আসলে এটা চাচ্ছিলাম না।

    পিকারিং চশমাটা নাকের ডগায় নামিয়ে এনে বললেন, এটা এর ভিতরের সাজসজ্জার জন্যই জনপ্রিয়। বিরল বইয়ের বদলে কফি টেবিলে সাজিয়ে রাখার মতো করে করা হয়েছে এই বইটা। অবশ্য মাঝেমধ্যে আমিও ঐতিহাসিক গুণাবলী সমৃদ্ধ বইগুলোর পুরোনো কপির খোঁজে বেরিয়ে পড়ি। আপনার বন্ধু মনে হয় চার্লস জনসনের এ জেনারাল হিস্ট্রি অফ পাইরেটস বইটার কথা বলেছিলো। ওটার অরিজিনাল কপি আছে আমার কাছে।

    আমাদেরও আছে। আমি পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারস বইটা আমাদের সংগ্রহশালায় যুক্ত করতে চাচ্ছিলাম। আমার বন্ধু নামটাই ভুল বলেছিলো, কোনো সন্দেহ নেই তাতে।

    কে আপনাকে এখানে আসার কথা বলেছিলো?

    ব্রি মার্শাল।

    ওহ, তাহলে বলতে যাবে ঠিক তখনই দরজার বেলটা টুংটাং শব্দ করে উঠলো। শব্দটা শুনে বলতে গেলে পিকারিং কিছুটা চমকেই গেছেন। দুজনই একই সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো দরজার দিকে, আশা করছিলো স্যাম ফিরে এসেছে হয়তো। কিন্তু না। স্যামের থেকে খানিকটা খাটো, চওড়া কাঁধের এক লোক এসেছে। দোকানের জানালার আলোর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকায় চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।

    লোকটার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে আবার রেমির দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলেন দোকানি। মুচকি হেসে বললেন, দিন, বইটার ওপর থেকে ধুলো মুছে আপনাকে প্যাক করে দিই। রেমি বাধা দিয়ে বলতে যাবে যে, পুনর্মুদ্রিত বই নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার-কিন্তু এর আগেই তার হাতে বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলেন পিকারিং। এখনই ফিরে আসছি।

    ব্রি নিশ্চিতভাবেই তার চাচার দোকানে থাকা বইটার ব্যাপারে ভুল করেছে। যাই হোক, ব্যাপার না। এই কপিটাতেও ভালো অ্যান্টিক ছাপ আছে। স্যামের অফিসে দেখতেও ভালো লাগবে। স্যাম তো নিশ্চিতভাবেই উপহারের আবেগটা বুঝতে পারবে। ওটা নিয়ে আর না ভেবে শেলফের অন্যান্য বইগুলোর দিকে তাকালো রেমি। গালিয়াজির অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি বইয়ের দিকে চোখ পড়েছে ওর। বইটা দেখে প্রথম এডিশনের বলেই মনে হচ্ছে, কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এতো বিরল একটা বইকে কেন এইভাবে ফ্রন্ট কাউন্টারে ফেলে রাখা হয়েছে!

    আপনি কি এখানে কাজ করেন? নতুন আগুন্তুকলোকটা জিজ্ঞেস করলো।

    কথাটা শুনে ঘুরে তাকালো রেমি। জানালার আলোর সামনে থেকে সরে আসায় লোকটাকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে এখন। লোকটার চুলগুলো কালো, চোখ বাদামি, মুখ হালকা বর্গাকৃতির। দুঃখিত। না, আমি এখানের কেউ নই। দোকানি পিছনের দিকে গেছে। আমার জন্য একটা গিফট র‍্যাপ করছে।

    মাথা ঝাঁকিয়ে আবার চলে গেলো লোকটা। ওদিকে পিছনের রুম থেকে মি. পিকারিংও বেরিয়ে এসেছেন। কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এরপর? আর আগন্তুক লোকটা তার কালো চামড়ার কোটের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের ঠিক পাশেই। লোকটার উপস্থিতিতে কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে রেমি। যদিও লোকটা এখনো তাদের দিকে খুঁতখুঁতে নজরে তাকিয়ে থাকা ছাড়া বিরক্ত লাগার মতো তেমন কিছু করেনি। তবে লোকটা একবারো পকেট থেকে হাত বের করছে না। এই ব্যাপারটাই অস্বস্তি লাগছে রেমির কাছে। কারো হাত নজরের আড়ালে থাকাটা রেমি ঠিক পছন্দ করতে পারে না।

    কাউন্টারের ওপর বাদামি কাগজে মোড়ানোর পারসেলটা রাখলেন মি. পিকারিং। রেমি তাকিয়ে দেখলো লোকটার কুঁচকে যাওয়া আঙুলগুলো কিছুটা কাঁপছে। ভয়ে কাঁপছে নাকি বয়সের জন্য কাঁপছে? নিজেকেই জিজ্ঞেস করলো।

    তবে মুখে বলল, ধন্যবাদ। এটার জন্য কত দিতে হবে আমাকে।

    উনপঞ্চাশ ডলার পঁচানব্বই সেন্ট। সাথে ট্যাক্স। আর গিফট র‍্যাপিং-এর জন্য কিছু দেওয়া লাগবে না। ওটা ফ্রি।

    যদিও র‍্যাপিংটা রেমির খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে এটা না বলে বলল, যাই হোক, খুব একটা বেশি না। আমি ভেবেছিলাম আরো বেশি লাগবে হয়তো।

    চীনে ছাপা হয়েছে তো, তাই একটু কমই দামটা, হেসে বললেন পিকারিং। যদিও তার হাসিটা দুর্বল দেখাচ্ছে।

    বিল পরিশোধ করে বইটা নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো রেমি। বেরিয়ে পড়তে যাবে তখনই জানালার উচ্চাসনে থাকা সিয়ামিজ বিড়ালটাকে চোখে পড়লো ওর। লেজ নাড়ছে প্রাণীটা। বিড়ালটার কাছে গিয়ে আলতোভাবে হাত বুলাতে শুরু করলো রেমি, সেই সাথে একফাঁকে আগন্তুক লোকটার দিকেও তাকালো। লোকটা এখনো আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে, তবে হাতটা এখন আর পকেটে নেই।

    বরং হাতে একটা পিস্তল দেখা যাচ্ছে এখন। অস্ত্রটা তাদের দিকে তাক করে লোকটা বলে উঠলো, লেডি, সময় থাকতে থাকতে চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো আপনার। যাই হোক, এখন হাত দুটো শূন্যে তুলে ধরুন।

    .

    ০২.

    মাত্রই হোটেল ম্যানেজারের সাথে ফোনে কথা বলে শেষ করেছে স্যাম। রেমির জন্য তাদের সুইটে আইস শ্যাম্পেইন এবং গিফট ঠিকঠাক মতো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে লোকটা। তাই এখন শুধু রেমির অপেক্ষা করছে। হাতের ঘড়িটা চেক করতে করতে বইয়ের দোকানটার দিকে তাকালো একবার। ভাবছে রেমি এতো দেরি করছে কেন! আন্দাজ করছে রেমি হয়তো এখন বই বিক্রেতার সাথে কোনো বিষয় গভীর আলোচনায় মত্ত হয়ে গেছে, কিংবা হয়তো সে বের হয়ে আসার একটু পর পরই ঢাকা ক্রেতার সাথে কথা বলছে। এই রহস্যময় বইটা খুঁজে পাওয়া নিয়ে গণ কয়েকটা দিন বেশ উত্তেজনায় ছিলো রেমি। সে পুরোপুরি নিশ্চিত যে এই বইটাকে স্যাম তার সংগ্রহে রাখতে চাইবে। তবে আসল কথা হলো, একটা বই খুঁজে ওটার টাকার দিতে তো এতোটা সময় লাগার কথা না।

    জলদি কেনাকাটা শেষ করার জন্য রেমিকে তাড়া দেওয়া দরকার। নয়তো তারা হোটেল রুমের ফিরতে ফিরতে রুমের তাপমাত্রায় শ্যাম্পেইনটা নষ্ট হয়ে যাবে। দোকানের কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে তাকালো স্যাম। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না ভিতরে। এমনকি, বইয়ের ওপর বসে থাকা বিড়ালটাকেও না। শুধু দেখতে পেলো কাউন্টারে একটা ব্যাপ করা পার্সেলের ওপর রেমির পার্সটা পড়ে আছে।

    রেমি তো তার পার্স ফেলে যাওয়ার মতো মেয়ে না, ভেবে দরজায় ধাক্কা দিলো স্যাম। আবারো টুংটাং শব্দ করে উঠলো দরজার বেলটা। রেমি?

    দোকানটা পুরোপুরি শূন্য হয়ে আছে।

    রেমি?

    আবারো ডাকলো স্যাম। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। কাউন্টারে পড়ে থাকা পার্সটার দিকে আরো একবার তাকিয়ে প্রতিটা অংশেই খুঁজতে শুরু করলো স্যাম। শেষমেষ খুঁজে পেলো দোকানের পিছনের অংশে থাকা একটা দরজার সামনে। খুব সম্ভবত কোনো অফিস বা স্টোরেজ রুম হবে ওটা। অবশেষে পেলাম তাহলে।

    তোমার কিন্তু বাইরে অপেক্ষা করার কথা। মনে আছে?

    সব ঠিক আছে, রেমি?

    ঐ রান্নার বইটা খুঁজে পেয়েছি আমি। অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলাম ওটা। দোকানি এখন ওটাই র‍্যাপ করছে আমার জন্য। এখন যাও ভাগো, নাহলে তোমার চমক নষ্ট হয়ে যাবে।

    কয়েকসেকেন্ড হতভম্ভ হয়ে রেমির দিকে তাকিয়ে রইলো স্যাম। রেমির চেহারা দেখে ঠিক কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সবুজ চোখগুলোতে একটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি লেগে আছে, কিন্তু স্যাম তা ধরতে পারছে না। তাই শেষমেশ বলল, আচ্ছা, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি। বেশি দেরি করো না।

    তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিহাসি উপহার দিলো রেমি। দরজার মুখ থেকে এক পাও নড়ছে না। দেরি করবো না।

    জায়গাটা থেকে সরে গেলো স্যাম। দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজায় টান দিতেই আবারো টুংটাং করে উঠলো ওপরে থাকা ঘন্টিটা। তবে কী মনে করে যেন দরজাটা বন্ধ করে দোকানেই রয়ে গেলো স্যাম।

    রেমির জন্য রান্নাঘর অপরিচিত কিছু না, সে মাঝে মাঝেই কৌতুক করে বলে রান্না করা কোনো ক্রিয়াপদ না, বরং এটা নাকি বিশেষ্যপদ।

    কথাটা মাথায় আসতেই হুট করে স্যামের মনে পড়লো রেমিকে তো সে। আগে কখনো রান্নার বই কিনতে দেখেনি। কেনা তো পরের কথা, তাকে এসব নিয়ে ঘাটাঘাটিও করতে দেখেনি। অন্তত তাদের বিয়ের পর থেকে একবারো দেখেনি।

    এর মানে রেমি তাকে সংকেত দিচ্ছিলো কিছুর। কোনো একটা বিপদের মধ্যে আছে ও।

    এই মুহূর্তে পিস্তলটাও স্যামের সাথে নেই। সাধারণত স্মিথ অ্যাণ্ড ওয়েসনের ৩৫৭ ম্যাগনামের একটা পিস্তল সাথে রাখে স্যাম। কিন্তু সান ফ্রান্সিস্কোতে কোনো কাজে আসেনি ওরা, এসেছে ছুটি কাটাতে। তাই পিস্তলটাও প্লেনেই রেখে এসেছে।

    তাহলে এখন কী করবে? নাইন-ওয়ান-ওয়ানে ফোন করবে? পুলিশ কি সময় মতো এসে পৌঁছাতে পারবে?

    নাহ, স্ত্রীর জীবন নিয়ে এতো বড়ো ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব না ওর পক্ষে। তাই ফোনটা সাইলেন্ট করে নিলো ও। তারপর হ্যাট খুলে রাখলো কাউন্টারের ওপর। নিঃশব্দে কাউন্টারের ড্রয়ারগুলোতে খুঁজে দেখছে কোনো অস্ত্র আছে কিনা। অন্তত তার কাছে থাকা ছোটো পকেটনাইফটার থেকে একটু শক্তিশালী কোনো অস্ত্র দরকার এখন। হালকা একটা খোঁজাখুঁজি করতেই চার ইঞ্চি ফলার একটি ফোল্ডিং নাইফ পাওয়া গেলো ড্রয়ারের ভিতর। খোপ থেকে ফলাটা বের করে আনলো স্যাম। চাকুটার ওজন বেশ ভালোই, একদম ব্যালেন্সড, ফলার মাথা একদম সূঁচালো। ধারালো প্রান্তে আঠা আঠা লেগে থাকায় স্যাম ধারণা করলো এটা হয়তো বাক্স-টাক্স খোলার কাজে ব্যবহার করা হয়। যাই হোক, এখন কাজ হলো কারো নজরে না পড়ে পিছনের ঐ রুমটাতে আবার ফিরে যাওয়া।

    রেমির পার্সে হাত দিতেই একটা ছোটো মেকাপে ব্যাগ খুঁজে পেলো স্যাম। ওটাতে থাকা আয়নাটা বের করে প্যান্টে ঘষা দিয়ে পাউডারগুলো মুছে নিয়ে আস্তে আস্তে সামনের এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো এরপর। সাথে সাথে স্টোররুম থেকে তাকে যেন কেউ দেখতে না পায় সেই ব্যাপারেও সুর্ক রয়েছে।

    তুমি! গমগম স্বরে খেঁকিয়ে উঠলো কেউ।

    সাথে সাথেই জমে গেলো স্যাম।

    কম্বিনেশনটা আরেকবার ভুল করলে, তোমাকে মরতে হবে।

    মাফ করবেন, বলল আরেকটা কণ্ঠস্বর। স্যাম ধারণা করল এটা হয়তো পিকারিং-এর গলা। আমি নার্ভাস।

    প্লিজ, রেমি বলল। এখানে পিস্তল ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন দেখছি না।

    চোপ! অই, বুড়ো, সেফটা খুলো, দ্রুত।

    আ-আমি চেষ্টা করছি।

    শ্বাস নিতে গিয়ে রীতিমতো খাবি খাচ্ছে স্যাম। তার স্ত্রী রয়েছে ঐ রুমটাতে, বিপদের মধ্যে। সে শুধু এখন চাচ্ছে দৌড়ে গিয়ে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। কিন্তু এখন তাড়াহুড়ো করার মানে রেমির মৃত্যু ডেকে আনা। ফোল্ডিং নাইফ দিয়ে বন্দুকধারীর বিপক্ষে লড়াই! অসম্ভব ব্যাপার প্রায়। ডারপায় কাজ করার সুবাদে অস্ত্র ও নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে স্যামের। এইসব মুহূর্তগুলোয় প্রশিক্ষণ নেওয়াটা প্রচণ্ড কাজে দেয় ওকে।

    শেলফের সারির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আয়নার সাহায্যে কোনার দিকে তাকালো স্যাম। স্টোররুমের দরজার মুখ থেকে আলো ঠিকরে আসছে আয়নাতে। স্যাম সুর্ক রয়েছে যেন তার কোনো ছায়া না পড়ে। আয়না ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমের চারপাশটাও দেখে নিচ্ছে।

    আয়নায় রেমির লালচে বাদামি চুলের প্রতিবিম্ব দেখে স্বস্তি পেলো। রেমি এখন একটা এলোমেলো ডেস্কের সামনে রাখা চেয়ারে বসে আছে। যদিও তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না স্যাম, আয়নাটা হালকা একটু ঘুরাতেই দেখতে পেলো যে ষণ্ডামার্কা একটা লোক দোকানির পিঠে একটা সেমিঅটো পিস্তল ধরে রেখেছে। তারা দুইজনই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটা ফ্লোর সেফের সামনে। দোকানি সেফের ডায়ালটা ঘুরাচ্ছে। স্যাম যদি এখন আড়াল থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে রেমি বন্দুকধারী এবং তার মধ্যে আটকা পড়ে যাবে।

    প্রতিকূলতাটা পছন্দ করতে পারছে না স্যাম। কিন্তু এই মুহূর্তে এছাড়া আরো কোনো উপায়ও নেই।

    কাম অন, রেমি। ঘুরো একবার, তাকাও আমার দিকে…

    ভাবতে ভাবতে হাতের ছোটো আয়নাটা নাড়াচ্ছে, যাতে আয়নায় প্রতিফলিত আলোটা রেমির মুখে পড়ে। দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, সেফের লক খোলার খুট শব্দটা শুনে রেমির নজর এখন ওদিকেই ঘুরে গেছে। টেবিলের ওপর ঝুঁকে একদৃষ্টিতেই ওদিকেই তাকিয়ে আছে ও। সেফের দরজাটা খুলতেই দেখা গেলো মসৃণ কাঠের বড়ো বাক্স রয়েছে ওখানে। দুইটা ওয়াইনের বোতল রাখার মতো বড়ো হবে বাক্সটা।

    বন্ধুকধারী সেফের আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, বাক্সে কী আছে?

    একটা পুরোনো বই। অ্যান্টিক।

    ডেস্কে রাখো ওটা।

    পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে রাখায় বাধা দেওয়ার কোনো উপায় নেই পিকারিং এর। বাক্সটা বের করে এনে টেবিলের ওপর রাখতেই বাধ্য হলেন তিনি।

    অন্যমনস্কতার সুযোগটা নিতে কোনো দ্বিধাই করলো না স্যাম। আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চাকুটা বন্দুকধারীর দিকে তাক করে ছুঁড়ে মারলো।

    টাইমিংটা বোধহয় এর থেকে ভালো আর হতে পারবে না। কারণ ঠিক মুহূর্তেই রেমিও তার আসন থেকে উঠে পিতলের টেবিলল্যাম্পটা ছুঁড়ে মেরেছে। বন্দুকধারীর হাত লক্ষ্য করে।

    বন্দুকধারীর কাঁধে এসে বিঁধেছে স্যামের ছোঁড়া চাকুটা। সেই সাথে ল্যাম্পের আঘাতে পিস্তলটাও ছিটকে পড়ে গেছে হাত থেকে।

    পরিস্থিতির সুবিধা কাজে লাগাতে স্টোররুমের দিকে ছুট লাগালো স্যাম। তবে বন্দুকধারীও ঐদিকে থেমে নেই। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বাক্সটা খাবলে নিয়ে পিকারিংকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো রেমির দিকে। তারপর বাক্সটা দিয়ে স্যামের মাথায় আঘাত করে দৌড় লাগালো সদরদরজার দিকে।

    স্যাম নিশ্চিত না আঘাত পাওয়ার কারণেই মাথায় টুংটাং শব্দ বাজছে কিনা! নাকি আসলেই দরজার বেলটা শব্দ করছে।

    স্যাম…?

    সাড়া দিতে কয়েক সেকেন্ড দেরি লাগলো স্যামের। মাথায় আঘাতের প্রভাবটা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি এখনো। কোনোরকমে বলল, সবাই ঠিক আছ তো?

    তুমি ঠিক আছো? পালটা প্রশ্ন করলো রেমি।

    হ্যা…. বলে মাথায় হাত দিতেই চটচটে তরলের স্পর্শ পেলো স্যাম। হাত দুটো সামনে আনতেই দেখে রক্তে ভরে আছে আঙুলগুলো। মনে হচ্ছে। আগেরবার একদম সময় মতোই এসেছিলাম আমি।

    পিস্তলটা তুলে ডেস্কে রাখলো রেমি। তারপর স্যামকেও টেনে নিয়ে বসালো চেয়ারে। তারপর দুই হাত দিয়ে স্যামের দুই গালে ধরে তাকালো তার চোখের দিকে। স্যাম আসলেই ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে। আমার কাছে তোমার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। অ্যাম্বুলেন্স ডাকবো?

    দরকার নেই।

    মাথা ঝাঁকিয়ে স্যামের কাটা ক্ষতটা একবার দেখে নিলো রেমি। তারপর তাকালো বই বিক্রেতার দিকে। টেবিল ধরে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে শুধু লোকটা। মি. পিকারিং, লেট মি হেল্প ইউ।

    আমি ঠিক আছি, বললেন বৃদ্ধ লোকটা। মি. উইকহ্যাম কোথায়?

    মি. উইকহ্যাম? রেমি জিজ্ঞেস করলো।

    আমার বিড়াল। উইকহ্যাম…? কিটি, কিটি, কিটি… ডাক শোনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমে এসে হাজির হলো সিয়ামিজ বিড়ালটা। তড়িঘড়ি করে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিলেন পিকারিং।

    আচ্ছা, তাহলে, রেমি বলল, কেউই নিখোঁজ হয়নি। পুলিশকে জানানোর সময় হয়েছে।

    রেমিকে ফোনের রিসিভার তুলে নিতে দেখে পিকারিং বললেন, এটার কি কোনো দরকার আছে?

    অবশ্যই দরকার আছে, বলে কিপ্যাডে ৯১১ চাপলো রেমি।

    পাঁচ মিনিটের মধেই পুলিশ এসে হাজির হলো দোকানটাতে। সাইরেনের শব্দ আসছে পুলিশের গাড়ি থেকে। যদিও রেমি তাদেরকে জানিয়েছে ডাকাত অনেক আগেই পালিয়ে গেছে।

    অফিসারদের একজন স্যামকে পাশে ডেকে নিলো তার স্টেটমেন্ট নেওয়ার জন্য। বেশ কয়েকটা প্রশ্নের পর অস্ত্র পড়ে যাওয়ার সময় ডাকাত লোকটা ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো তা জানতে চাইলো অফিসার। ডেস্কের পাশে ডাকাতের দাঁড়ানো জায়গাটায় দাঁড়িয়ে অফিসারকে পুরো ব্যাপারটাই বর্ণনা করে বলল স্যাম। রেমির ছুঁড়ে দেওয়া ল্যাম্পের আঘাতে লোকটার নড়নচড়নও বাদ রাখলো না। আর অফিসার দাঁড়িয়ে আছে স্যামের পূর্বে দাঁড়ানো অবস্থানটায়। আশেপাশে দেখছে। আর চাকু ছুঁড়ে মারার সময় আপনি ঠিক কোথায় ছিলেন?

    দরজার মুখে।

    ওখানে গিয়ে একটু দাঁড়ান, প্লিজ।

    তাই করলো স্যাম।

    অফিসার তার কাছে এগিয়ে এসে দরজার চৌকাঠে আঙুল বুলিয়ে দেখছে। এইতো পেয়েছি। বুলেটটা এখানেই লেগেছে।

    স্যাম তাকিয়ে দেখলো তার মাথা থেকে মাত্র অল্প কয়েক ইঞ্চি দূরে গেঁথে আছে বুলেটটা। ভাগ্য ভালো ছিলো দেখছি। আরেকটু হলেই তো…

    মি, ফার্গো। আপনার কাজটা প্রশংসনীয় হলেও আমি বলবো বোকামি করেছেন। ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে অবশ্যই পুলিশকে জানাবেন।

    যদি এমন কিছু ঘটে, তাহলে অবশ্যই আগে পুলিশকে জানাবো।

    সে জানে অন্যান্য অনেকবারের মতো এবারও রেমি নেতৃত্বের ভারটা নিয়ে নিবে। রেমির অনেকগুলো গুণাবলির মধ্যে এটাকেও অনেক ভালোবাসে স্যাম। কথাটা ভেবেই রেমির দিকে তাকালো ও। মেয়েটা অনেক আগেই তার স্টেটমেন্ট দিয়ে ফেলেছে, এখন দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।

    ঐদিকে মি. পিকারিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সাদা পোশাকে থাকারবারি ইউনিটের ডিটেক্টিভ সার্জেন্ট ফথ। মি. পিকারিংকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। বয়স এবং পরিস্থিতির বিবেচেনায় অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। লোকটা এখনো খুলে রাখা সেফটার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর কিছু কি নিয়ে গেছে? জিজ্ঞেস করলো সার্জেন্ট ফথ।

    না। শুধু বাক্সটা। ওটার ভিতরে একটা বই ছিলো। মূল্যবান কিছুই ছিলো না বাক্সটাতে। সেফে তো কয়েকটা পুরোনো মুদ্রাও ছিলো, স্প্যানিশ স্বর্ণমুদ্রা। ওগুলো দেখেন, এখনো আগের জায়গাতেই পড়ে আছে।

    কী ধরনের বই ওটা?

    শ্রাগ করলো পিকারিং। জলদস্যুদের নিয়ে লেখা পুরোনো একটা বইয়ের পুনর্মুদ্রিত কপি। বইটার খুব একটা বেশি দাম নেই। আমার দোকানে এরকম বই আরো বেশ কয়েকটা কপিই আছে। চাইলে দেখাতেও পারি আপনাকে। বলে এগিয়ে গিয়ে বুকশেলফ থেকে ঐ বইয়েরই একটা কপি বের করে এনে রাখলেন ডেস্কের ওপর।

    তাহলে যে বাক্সে রেখেছিলেন, ওই বাক্সটার কি কোনো আলাদা মূল্য ছিলো?

    না, তেমন একটা না।

    তাহলে ওটাকে এভাবে সেফে রেখে দিয়েছিলেন কেন?

    কেউ যদি ওটাকে মূল্যবান ভেবে ওটা আসলে কী সেটা না ভেবেই নিতে চায়, সেই আশায় রেখেছিলাম।

    মি. পিকারিং, বলে একবার নিজের নোটবুকের দিকে তাকালো সার্জেন্ট ফথ। তারপর আবার বই বিক্রেতার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কী মনে হচ্ছে, লোকটা কেন আপনার দোকানকে টার্গেট করেছিলো?

    চোখের ওপর থেকে ঘাম মুছছে লোকটা। হাত কাঁপছে তার। ডাকাতির ফলে নিশ্চিতভাবেই ভালো একটা প্রভাব পড়েছে লোকটার ওপর। মনে হয় আমার এখানে একটা পুরোনো বইয়ের অরিজিনাল কপি আছে এই গুজবটা ছড়ানোর কারণেই এটা হয়েছে। কেন বা কে এটা ছড়িয়েছে, তা আমি জানি না। তবে ডাকাত যেটা নিয়ে গেছে সেই কপিটার সাথে টেবিলের কপিটার কোনো পার্থক্যই নেই। সেম টু সেম। পুনর্মুদ্রিত একটা কপি মাত্র। বলে টেবিলে রাখা দ্য হিস্ট্রি অফ পাইরেটস অ্যান্ড প্রাইভেটিয়ারস বইটার দিকে ইশারা করে দেখালেন মি. পিকারিং।

    তথ্যটা টুকে নিয়ে নোটবুকটা বুক পকেটে রেখে দিলো সার্জেন্ট ফথ, তারপর ধন্যবাদ জানালো পিকারিংকে। ওদিকে সিএসআই দলও চলে এসেছে। আঙুলের ছাপ এবং ছবি তোলার জন্য। তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সার্জেন্ট ফথ স্যাম এবং পিকারিংকে তার বিজনেস কার্ড দিয়ে বলল, যদি কোনো কিছু মনে পড়ে আপনাদের বা কোনো সন্দেহ জাগে-তাহলে আমাকে ফোন করতে দ্বিধা করবেন না। বলে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেছিলো, তারপর আবার পিকারিং-এর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কাউকে কি খবর দিবো? পরিবারের কেউ বা বন্ধুদের, যাতে আপনাকে এসে সাহায্য করতে পারে?

    না, কেউ নেই তেমন। আর আমি ঠিকই আছি।

    এরপর আর কোনো কথা না বলে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো সার্জেন্ট ফথ।

    লোকটা চলে যাওয়ার পর সিএসআইর লোকদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো স্যাম। তারপর তাকালো মি. পিকারিং-এর দিকে। লোকটা একা একা থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার। আপনি নিশ্চিত যে আমাদের সাহায্য লাগবে না?

    না। ধন্যবাদ, মি. ফার্গো। ভাবছি সিএসআইর কাজ হয়ে গেলে ওপরতলায় গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবো।

    রেমি এগিয়ে এসে পিকারিংকে জড়িয়ে ধরে বলল, যা ঘটেছে তার জন্য সমবেদনা জানানোর ভাষা জানা নেই আমার।

    পিকারিং একটা গভীর শ্বাস নিয়ে রেমির দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষাও জানা নেই আমার। আপনার সাহসীকতাই আমার জীবন বাঁচিয়েছে।

    তাহলে চলে, যাওয়া যাক? পার্সটা রেমির দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল স্যাম। আর বেশি দেরি করতে চাচ্ছে না।

    হ্যাঁ, চলো।

    দাঁড়ান, মি. পিকারিং পিছন থেকে ডেকে উঠে বললেন, আপনার পার্সেলটা নেননি। এতো কিছুর পরও এটাকে এখানে ফেলে গেলে সময়টাই বৃথা যাবে শুধু।

    ধন্যবাদ, বলে পিকারিং-এর হাত থেকে পার্সেলটা তুলে নিলো রেমি। তারপর বাইরে বেরিয়ে সেটা বাড়িয়ে দিলো স্যামের দিকে।

    আমাকে দিচ্ছো, তারমানে তো ধরা যায় এটা রান্নার বই না? স্যাম জিজ্ঞেস করলো।

    আমি যেটার জন্য এসেছিলাম সেই বইও না। এটা আসলে খালি-হাতে বাসায় ফিরতে-চাই-না টাইপের একটা বই মাত্র। তবে মনে হয় তোমার অফিসের টেবিলের জন্য খারাপ হবে না বইটা।

    অসুবিধা নেই। অন্তত বই কেনার ইতিহাসটা তো মনে থাকবে এতে।

    রাস্তা পার হয়ে রিটজ-কার্লটন হোটেলের দিকে পা বাড়ালো ওরা। দোকানের ঘটনার থেকে বাজে অবস্থারও মুখোমুখি হয়েছে ওরা আগে। ভবিষ্যতেও যে পড়বে না সেটারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। যদিও স্যামের তার স্ত্রীর সামর্থ্যের প্রতি পুরোপুরিই আস্থা রয়েছে, তারপরও সে কখনো তার জন্য দুঃচিন্তা করা থামাতে পারে না।

    সবসময়ই সব জায়গাতেই রেমির চিন্তাটাই ওর মাথায় আসে আগে। এসব ভাবতে ভাবতেই কাছে ঘেঁষে রেমির হাতটা চেপে ধরলো ও। রেমিও তার স্পর্শে সাড়া দিয়ে মাথা এলিয়ে দিলো তার কাঁধে। তুমি ঠিক আছো? কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    আমি? একদম ঠিক। আর রক্ত কিন্তু আমার মাথা থেকে পড়ছে না।

    ছোটোখাটো ক্ষত ওটা। রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে।

    স্যামের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রেমি বলল, হোটেলে ফিরে গেলেই বুঝা যাবে তা।

    আচ্ছা, বুঝা যাবে। যাই হোক, পিকারিংর সেফে থাকা স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখেছো?

    অদ্ভুত, তাই না? ডাকাত স্বর্ণগুলো ফেলে বাক্সে থাকা একটা বই নিয়ে গেলো। এমনকি ওটা খুলেও দেখেনি একবারো।

    আর বইটারও তেমন কোনো মূল্য নেই। শুধুই একটা পুনর্মুদ্রণ মাত্র।

    নিশ্চিতভাবেই অদ্ভুত ব্যাপারটা, হোটেলের স্টোকস্টন স্ট্রিটের দিকে যেতে যেতে বলল রেমি। মনে হচ্ছে যেন মি, পিকারিং ইচ্ছা করেই চুরি যাওয়া বইটার মূল্য কমিয়ে বলছিলেন। এটারও কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি নিজেও পুনর্মুদ্রিত বইয়ের জন্য হুমকির মুখে পড়তে ঘৃণা করবো। যাই হোক, এটা বলতে গিয়ে মনে পড়লো, তোমার প্রমিজের কী হলো? বলেছিলে তো আগামী এক সপ্তাহ কেউ খুন করতে আসবে না আমাদের।

    তুমি নিশ্চয় ভেবে বসোনি যে আমি আজকের কথা বলেছি? কাল থেকে সপ্তাহ শুরু হবে।

    আচ্ছা, আচ্ছা। ভেঙে বলায় খুশি হলাম।

    লবিতে পৌঁছে স্টাফ ডেস্কে থামলো ওরা। রেমি ওখানের কর্মরত মহিলাকে বই এবং সকালে এক অ্যান্টিক শপ থেকে কিনা বড়া সিরামিক রোস্টারটা তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিতে পারবে কিনা সেটার কথা জিজ্ঞেস করছে। সিরামিক রোস্টারটা কিনেছে তাদের গবেষক সেলমা ওয়ান্ডার্শকে উপহার দেওয়ার জন্য। সেলমা অনেকদিন ধরেই তার রান্নাঘরের জন্য একটা রোস্টার খুঁজছিলো।

    ইনস্যুরেন্স করা লাগবে? মহিলা জিজ্ঞেস করলো। নাকি স্পেশাল প্যাকের নির্দেশ দিবো?

    না, এতো ঝামেলায় যেতে হবে না, রেমি বলল। শুধু একটা বইই তো এটা।

    রোস্টারের অ্যাড্রেসটাতেই?

    হ্যাঁ, একই ঠিকানা।

    আচ্ছা, মিসে ফার্গো, চিন্তা করবেন না। আমি পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

    ধন্যবাদ।

    স্যুইটের সামনে পৌঁছে কী-কার্ড দিয়ে দরজাটা খুলে নিলো স্যাম। রেমিকে ভিতরে ঢুকতে বলার আগে নিজে একবার দেখে নিচ্ছে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। সন্তুষ্ট হয়ে দরজাটা খুলে ধরে রেমিকে বলল, সব ঠিক আছে, আসতে পারো ভিতরে।

    রেমি রুমে ঢুকতেই দেখলো সোফার সামনের টেবিলে প্লেটে ফালি করে কাটা সবুজ আপেলের টুকরো, পনির ও আইস বাকেটের ভিতর বিলেকার্ট স্যামন ব্রুট রোজ শ্যাম্পেইনের একটা বোতল রাখা আছে। তাদের আসতে দেরি হওয়ার কারণে রুম সার্ভিসের কেউ একজন আইস বাকেটটা বদলে দিয়ে গেছে। ব্যাপারটা দেখে কিছুটা খুশি হলো স্যাম। বদলে না দিলে শ্যাম্পেইনের নিখুঁত স্বাদটা পাওয়া যেতো না, রেমিকে দিতে চাওয়া তার গিফটটাও ভেস্তে যেতো। শ্যাম্পেইনের বোতলের পাশে কাঁচের দুটো স্বচ্ছ গ্লাসও রয়েছে। রেমি বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুমটার দিকে। এরই ফাঁকে স্যাম নীল বর্ণের ছোটো একটি টিফানি বক্স গছিয়ে দিলো রেমির হাতে।

    তুমি এতো কিছু করলে, আর আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি।

    আমাকে একটা বই দিয়েছো তো তুমি।

    হু, তাও আবার পুনর্মুদ্রিত একটা কপি।

    স্যাম শ্যাম্পেইনের ছিপিটা খুলতে খুলতে বলল, আমি জানি পরে কোনো একসময় ওটা পুষিয়ে দিবে তুমি।

    হয়তো, বলে বাক্সের ফিতেটায় টান দিলো রেমি। ওপরের ঢাকনাটা উঠাতেই হীরকখচিত চাবি আকৃতির আকর্ষণীয় গড়নের একটা নেকলেস বেরিয়ে এলো বাক্সটা থেকে। তোমার অন্তরের চাবি?

    ওটার জন্য কোনো চাবিই লাগে না। এমনিতেই খোলা থাকে তোমার জন্য।

    আশা করছি এটা হয়তো আমার নতুন সদরদরজার চাবি না? বলে মাথা গলিয়ে নেকলেসটা গলায় ঝুলিয়ে দিলো রেমি। যদি হয়, তাহলে ভাবো প্রতিবার তালা বদলানোর সময় চাবি বানাতে কেমন খরচ যাবে।

    নতুন করে যেই পরিমাণ নিরাপত্তার সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে এবার, সেই সবের তুলনায় এই হীরার চাবির খরচ খুব একটা বেশিও না। তাদের বাড়িটাকে প্রকাণ্ড এক দুর্গে পরিণত করতে গিয়ে বলতে গেলে বিশাল অর্থই ব্যয় করতে হয়েছে তাদেরকে। অবশ্য শখে করেনি কাজটা। ভয়ঙ্কর এক আক্রমণের শিকার হয়ে আগের বাড়িটা পুরোপুরিই গুঁড়িয়ে গিয়েছিলো প্রায়। তাই নতুন করে সাজানো ছাড়া গতি ছিলো না।

    যাই হোক, ওসব নিয়ে না ভেবে এখন মন শান্ত করা দরকার, ভেবে রেমির হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস বাড়িয়ে দিলো স্যাম। তারপর নিজেরটা উঁচিয়ে টোস্ট করে বলল, নতুন প্রমিজ। কাল থেকে বিশ্রাম এবং আরাম ছাড়া আর কিছুই করা হবে না। এবং এই এক সপ্তাহ কেউ আমাদের মারতে আসবে না। আর, হা… আমার মনোযোগের পুরোটাই থাকবে শুধু তোমার জন্য।

    তোমার প্রমিজের শেষ অংশটার বিশেষ নজর থাকবে আমার, ফার্গো।

    কোনটা? কেউ মারতে আসবে না? নাকি আমার পূর্ণ মনোযাগ?

    দুটোর দিকেই, বলল রেমি।

    *****

    সকালে বেশ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে স্যাম। রেমি এখনো ঘুমাচ্ছে। নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমে রুম সার্ভিসকে নাস্তা পাঠিয়ে দিতে বলল স্যাম। নাস্তা আসতে আসতে রেমিও বিছানা থেকে উঠে পড়েছে। ক্রিম সিল্ক একটা রোব পরে আছে ও। শাওয়ার নেওয়ায় তার লালচে বাদামি চুলগুলো এখনো ভিজে আছে। স্যামকে একটা চুমু খেয়ে টেবিলে বসলো এরপর।

    রেমি আসার আগ পর্যন্ত পত্রিকা পড়ছিলো স্যাম। সে টেবিলে বসতেই তার দিকে কফির মগটা বাড়িয়ে দিলো। তারপর আবার পত্রিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে বলল, ঘুম হয়েছে ঠিকমতো?

    হ্যাঁ, ভালোভাবেই ঘুমিয়েছি, বলতে বলতে মুখে এক চামচ গ্রিক ইয়োগার্ট পুরে নিলো রেমি। তো, আজ কোথায় যাচ্ছি আমরা?

    এটা বলে চমক নষ্ট করে দিবো? এখনই বলছি না। ক্রনিক্যালর আর্টিকেলগুলো দেখতে দেখতে জবাব দিলো স্যাম। ঠিক তখনই তার নজর পড়লো ডাকাতির শিকার হওয়া ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে শিরোনামের একটি আর্টিকেলের ওপর। এটা তো সব কিছুরই অর্থ পালটে দিচ্ছে…

    কী?

    পত্রিকা নিচে নামিয়ে রেমির দিকে তাকালো স্যাম। বইবিক্রেতা জেরাল্ড পিকারিং। মারা গেছে লোকটা।

    .

    ০৩.

    চেয়ারে বসে কফি খেতে খেতে স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিক্যালর পাতা উলটে দেখছে চার্লস এভেরি। লোকটার বয়স পঞ্চাশের কোঠার প্রায় শেষ দিকে। কপালের দিকের কালচে চুলগুলো হালকা হালকা ধূসর বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। অবশ্য তার মতে নাকি বয়সের তুলনায় সে যথেষ্ট ফিট আছে। এমনকি গতরাতে ব্যক্তিগত জেটে করে ইস্ট কোস্ট থেকে স্যান ফ্রান্সিসকো আসার পরও ক্লান্তিবোধ করছে না। সকালে দুই কাপ কফি খেয়ে জেট লেগের ক্লান্তি একেবারেই দূর হয়ে গেছে বলা যায়।

    পত্রিকায় বই বিক্রেতা জেরাল্ড পিকারিংর মৃত্যুর খবরটা দেখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটের কোণে। খবরটা তার জন্য চমকে যাবার মতো কিছু না। অন্তত গতকাল যা ঘটেছে তারপর তো নয়ই।

    যদি তার লোকেরা বইটা খুঁজে বের না করতে পারে এবং খুঁজে পাওয়ার পরও যদি এটাই সেই নির্দিষ্ট বইটা কিনা তার নিশ্চয়তা না দিতে পারে, তাহলে এই বইবিক্রেতার মৃত্যু বা দোকানে হানা দেওয়ার কোনোটারই কোনো মূল্য থাকবে না।

    গুড রিডেন্স, পিকারিং, ভাবতে ভাবতেই দেখলেন তার সিকিউরিটি টিমের প্রধান কলিন ফিস্ক হাতে করে একটা বড়ো, পলিশ করা কাঠের বাক্স নিয়ে আসছে তার দিকে। অবশেষে পেয়েছো তাহলে, বলল এভেরি।

    বইয়ের দোকানটা? হ্যাঁ, পেয়েছি। বইটা? না, পাইনি।

    লম্বা করে একটা শ্বাস নিলেন এভেরি, কোনোরকমে রাগটা আটকে রেখেছেন। পাওনি বলতে কী বলতে চাচ্ছো?

    বাক্সটা টেবিলের ওপর রেখে ডালাটা উঁচিয়ে ধরলো ফিস্ক। বাক্সের ভিতরে একটা মোটা বই দেখা যাচ্ছে। এটা নকল। পুলিশ চলে যাওয়া পর আমরা আবার গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার লোকেরা পৌঁছানোর আগেই পিকারিং বইটা অন্য আরেক সংগ্রাহকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলো।

    তোমার লোকেরা কি তাকে আমার পরিচয় বলেছে?

    হ্যাঁ।

    আর বইটা না দিলে আমি তার কী অবস্থা করতে পারি সেটা?

    হ্যাঁ।

    অন্ততপক্ষে কার কাছে বিক্রি করেছে সেটা তো জানতে পেরেছো?

    না। এই তথ্যটা বের করার সুযোগ পাইনি। এর আগেই মরে গিয়েছিলো বুড়োটা।

    কাপটা নামিয়ে মেহগনি কাঠের টেবিলের ওপর রাখলেন এভেরি। তারপর আরো একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন ফিস্কের দিকে। ভাবছেন ফিস্কের সুপারিশ করা দলটাকে ভাড়া করে কি তিনি কোনো ভুলই করেছেন কিনা। দলটার তো সেরাদের সেরা হওয়ার কথা, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা আসলেই সেরাদের সেরা। কোনোরকম প্রশ্ন তোলা ছাড়াই নির্দেশ পালন করে যায় ওরা। পিকারিংকেও খুব সহজেই খুঁজে বের করে ফেলেছিলো। এমনকি এভেরির নিজের লোকেরাও এই কাজটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পিকারিং কি এভেরির মতলবটা বুঝে ফেলেছিলো? কোনোভাবে কি বুঝে ফেলেছিলো যে অরিজিনাল বইটা তার দোকানে থাকা মানে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসা?

    বিশ বছর ধরে এভেরি বইটা খুঁজছেন…

    কিভাবে বইটা হাতের এতো কাছে চলে এসেও আবার ফসকে গেলো?

    বাক্স থেকে বইটা বের করে মলাট উল্টালেন এভেরি।

    প্রথম পৃষ্ঠা দেখেই বুঝতে পারছেন যে বইটা নকল। প্রথম সংস্করণ থেকে নকল করা হয়েছে। খুব সম্ভবত দুইশো বছর আগে তার পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া বইটারই কপি এটা। কিভাবে এতো নিখুঁতভাবে মানচিত্র ও শব্দগুলো পুনর্মুদ্রণ করা সম্ভব? ভেবে কোনো কুল পাচ্ছেন না এভেরি। সবদিক দিয়েই এই কপিটা একদম অরিজিনালটার মতোই। এই কপিতে শুধু একটা জিনিসই নেই এবং এভেরি নিশ্চিত পিকারিং যে বইটা লুকিয়ে রেখেছে ওটাতেই জিনিসটা আছে। জিনিসটা হলো বইয়ের ভিতরের মানচিত্রে থাকা সংকেতগুলোর অর্থ বের করার সূত্র। অর্থ বের করার উপায়ই যদি না থাকে, তাহলে এই মানচিত্রেরই বা কী মূল্য আছে?

    তুমি নিশ্চিত জায়গাটায় ভালোভাবে তল্লাশি করে দেখা হয়েছে? এভেরি জানতে চাইলো।

    একদম নিশ্চিত। যদিও একটা সূত্র পাওয়া গেছে। পুলিশের রিপোর্টে ভিক্টিম ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দুজনের নাম রয়েছে। আমি তাদের ব্যাপারে কিছুটা খতিয়ে দেখেছি। তারা আসলে গুপ্তধন শিকারি।

    গুপ্তধন শিকারি? তাদের অভিযানের পিছনে অর্থায়ন করে কে? ঐ লোকের পিছনে লাগে, তাহলেই শিকারিদের দৌড় থেমে যাবে।

    তারা নিজেরাই নিজেদের অর্থায়ন করে, ফিস্ক বলল। আর যতোটা জেনেছি, অন্য কেউও তাদের পিছনে লেগে সুবিধা করতে পারেনি। ফার্গোরা আসলে সাধারণ কোনো টাকার পিছনে ছুটে বেড়ানো দম্পতি না। তারা নিজগুণেই মাল্টিমিলিয়নিয়রে পরিণত হয়েছে। আর অভিযানে প্রাপ্ত সম্পদগুলোর অর্থ। তারা দাঁতব্য কাজে ব্যয় করে।

    রবিনহুড নাকি? তাদেরকে তো সহজেই ধরে ফেলা যাবে।

    উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রবিনহুড ওরা।

    কফির দিকে হাত বাড়ালো এভেরি। তারা তো এখনো আমার সাথে লাগেনি, তাই না?

    না, স্যার লাগেনি। তবে তাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিলে সেটা তাদেরকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবানের মতো হয়ে যাবে।

    .

    ০৪.

    এখনো পাওনি? জিজ্ঞেস করলো স্যাম। আবারো ব্রি মার্শালকে কল করেছে রেমি। মাত্রই তারা মিসন বের ধারে অবস্থিত স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে এসে পৌঁছেছে। সার্জেন্ট ফথ কিছু প্রশ্ন করার জন্য আরো একবার ওদেরকে ডেকে পাঠিয়েছে।

    ওর ফোন হয়তো বন্ধ, ফোন কাটতে কাটতে বলল রেমি। কোনো ভয়েস মেইল দেওয়ার ইচ্ছা নেই ওর। ডাকাতির পর গতরাতে একবার দিয়েছিলো, সেই সাথে সকালেও-বলেছিলো যে ব্রি যেন যত দ্রুত সম্ভব রিটজ কার্লটন হোটেলে বা সরাসরি রেমির সেলফোনে কল করে। ফোন মেসেজের মাধ্যমে বন্ধুকে তার চাচার খবরটা জানাতে চাচ্ছে না ও। খুবই খারাপ লাগছে আমার। একে তো ডাকাতি, আর তারওপর এখন এটা

    আমি নিশ্চিত ও ফোন করবে। এখন চলো দেখি ইনভেস্টিগেটররা কী কী জানতে পেরেছে।

    ভালো কিছুর আশাই করছি, বলে জ্যাকেটটা আরো শক্ত করে শরীরে জড়িয়ে নিলো রেমি। শীতল বাতাস বইছে শরীরে কাপ ধরে যাচ্ছে প্রায়। ব্রি কল করলে তাকে কী বলবো?

    হয়তো ও ইতিমধ্যেই জেনে গেছে। এজন্যেই হয়তো ফোন ধরছে না।

    বলে কাঁচের দরজাটা টেনে ধরলো স্যাম। দরজা দিয়ে ঢুকে বামের লবির দিকে পা বাড়ালো ফার্গো দম্পতি। লবিতে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা তাকিয়ে আছে তাদেরকে।

    গার্ডদেরকে পেরিয়ে আসার পর কাঁচের জানালার অন্যপাশে থাকা অফিসারের কাছে গিয়ে স্যাম বলল, মি, অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। সার্জেন্ট ফথের সাথে দেখা করতে এসেছি।

    স্যার কি আপনাদের আগমনের ব্যাপারে জানেন?

    হ্যাঁ। সার্জেন্ট নিজেই ডেকেছেন আমাদের। গতকালের ডাকাতির ব্যাপারে কথা বলার জন্য।

    ফোন তুলে নিয়ে রিসিভিং প্রান্তে থাকা মানুষটাকে স্যামের কথাগুলোই জানালো জানালার ওপাশে থাকা মহিলা অফিসার। তারপর স্যামের দিকে ফিরে বলল, সার্জেন্ট ফথ এখন উপস্থিত নেই। তবে তার পার্টনার সার্জেন্ট ট্রেভিনো আছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।

    মিনিট দুয়েক পর কালো চুলের এক লোক বেরিয়ে এলো এলিভেটরের ভেতর দিকে। তাদের দিকে এগিয়ে এসে পরিচয় দিয়ে বলল, আমার পার্টনারের অনুপস্থিতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। একটা কাজে বেরিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ইন্টারভিউ রুমে নিয়ে যেতে যেতে তাদেরকে জানালো ট্রেভিনো। আর এমনিতেও, আপনাদেরকে এখন পর্যন্ত ডেকে আনার জন্যও যথেষ্ট দুঃখিত আমরা। তবে জেরাল্ড পিকারিংর মৃত্যুর কারণে কেসটা এখন হোমিসাইড কেসে পরিণত হয়েছে।

    চেয়ারে বসতে বসতে স্যাম বলল, পত্রিকার খবর পড়ে আমরা যতটা জেনেছি হার্ট অ্যাটাকের কারণে লোকটার মৃত্যু হয়েছে।

    হ্যাঁ, এবং এটা ভালোভাবে সাজানোও যেতে পারে কিন্তু। অবশ্যই, অটোন্সি রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে মৃত্যুর সময়টাই আসলে সন্দেহের উদ্রেক করছে। সবগুলো দৃষ্টিকোন থেকেই ভেবে দেখেছি আমার। যাই হোক, ডাকাতিটা বেশ হিংস্র ছিলো মি. পিকারিংর জন্য। অপরাধীকে দ্রুত সময়ের ভিতর ধরার চেষ্টা করছি। বলে নোটবুকটা খুললো ট্রেভিনো। কয়েক পাতা উলটে দেখার পর আবার বলল, আমার পার্টনারকে বলেছিলেন গতকাল একটা নির্দিষ্ট বই কেনার জন্য চায়নাটাউনে গিয়েছিলেন আপনারা। আমাকে জানাবেন কেন ঐ নির্দিষ্ট দোকানটাতেই গিয়েছিলেন?

    আমাদের এক বন্ধু সুপারিশ করেছিলো, রেমি বলছে। আমার স্বামীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট বই খুঁজছিলাম আমি। দোকানটার ব্যাপারে আমি জেনেছি মি. পিকারিংর ভাতিজি ব্রি মার্শালের কাছ থেকে।

    মহিলার সাথে আপনার পরিচয়ের সূত্রতা?

    ব্রি আমাদের ফার্গো ফাউন্ডেশনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে।

    পারিবারিক ব্যবসা?

    পারিবারিক দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান, বলল রেমি। ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস অ্যাজেন্সী ডারপা ছেড়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরুর পরই রেমির সাথে পরিচয় হয় স্যামের। এরপর বিয়ে। রেমির উৎসাহেই স্যাম আর্গন লেজার স্ক্যানার আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। এটা একটা ডিভাইস যেটা কিনা অনেক দূর থেকেও খাদ মেশানো ধাতু শনাক্ত করতে পারে। খুব দ্রুতই মার্কেট দখল করে নিয়েছিলো ডিভাইসটা। এর চার বছর পর ফার্গো গ্রুপটা হায়েস্ট বিডারের কাছে বিক্রি করে দেয় ওরা। ওটার প্রাপ্য অর্থ তাদের সারাজীবন চলে যাওয়ার থেকেও অনেক বেশি ছিলো। সেখান থেকেই সূচনা হয় ফার্গো ফাউন্ডেশনের।

    লা জোলা লাইব্রেরিতে আমাদের সর্বশেষ দাঁতব্য শাখা খোলার ব্যাপারে ব্রি আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে। তখনই সে আমাকে তার চাচার ব্যাপারে বলেছিলো, লোকটা নাকি আঠারশো শতাব্দীর শুরুর দিকের জলদস্যু ও উপকূলবর্তী মানচিত্র সমেত একটা বই তুলে দেওয়ার জন্য ভালো কোনো সংগ্রাহক খুঁজছেন।

    ট্রেভিনো নোটবুকের ওপর থেকে চোখ তুলে বলল, আর এই বইটাই তো সেফ থেকে চুরি গেছে?

    আমি আসলে সেফ থেকে বইটা বের করতে দেখিনি ঠিক। শুধু বাক্সটাই দেখেছি। তবে ব্রি যেভাবে বলেছিলো, তাতে আমি নিশ্চিত যে সে প্রথম মুদ্রণের কপির ব্যাপারেই নির্দেশ করছিলো।

    কারণ…?

    সে বারবারই বলছিলো তার চাচা বইটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝবে এমন কোনো সংগ্রাহকের হাতে তুলে দিতে পারলেই খুশি হবেন।

    নোটবুকে লেখা থেমে গেছে সার্জেন্ট ট্রেভিনোর। ফার্গো দম্পতির দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, আমার শুনেছি আপনারা পেশাদার গুপ্তধন শিকারি?

    হ্যাঁ, বলল স্যাম। ওখান থেকে যা পাই সেসব ফার্গো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দাঁতব্য কাজে ব্যবহার করা হয়।

    আগেই বলে নিচ্ছি বিরল বইয়ের ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুবই কম। তবে যেহেতু বইটা জলদস্যু ও ম্যাপ নিয়ে ছিলো, তাহলে কি এটা সম্ভব যে কেউ জলদস্যুদের হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধনের সন্ধানে এই বইটা চুরি করেছে?

    হেসে উঠলো রেমি। আমার মনে হয় না এমন কিছু আদৌ সম্ভব কিনা। যদি মি. পিকারিংর ভাতিজি প্রথম এডিশনের কপি বিক্রির কথা না বলতে এবং একই সময়ে আমরাও এখানে ঘুরতে না আসতাম, তাহলে আমার মনে হয় না আমিও আর ওটা নিয়ে খুব একটা ভাবতাম।

    আচ্ছা, ধরে নিলাম চুরি যাওয়া বইটা প্রথম এডিশনেরই। ওটার দাম কেমন হতে পারে?

    বইয়ের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে…. স্যামের জন্য বইটা কিনতে আসার আগে মূল্য নিয়ে কিছুটা ঘাটাঘাটি করে এসেছে রেমি। এসব কপির দাম কয়েকশো থেকে শুরু করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে সাধারণত। এমনটাই দেখে ছিলাম। অবশ্য এই বইটা খুব একটা মূল্যবানও না, একটা সময় যথেষ্টই জনপ্রিয় ছিল, এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া প্রথম এডিশনের কয়েকটা কপিও এখনো অবশিষ্ট আছে। আমরা শুধু বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে কিনতে চেয়েছিলাম, বলে স্যামের হাতে হাত রাখলো রেমি।

    হ্যাঁ, বলল স্যাম। উপকূলীয় ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে আমাদের।

    নোটবুকটা বন্ধ করলো সার্জেন্ট ট্রেভিনো। আপাতত এটুকুই জানার দরকার ছিলো আমার। এছাড়া কি আর কোনো তথ্য আছে আপনাদের কাছে যেটা আমাদের কাজে আসতে পারে?

    এই মুহূর্তে কিছুই নেই, জবাব দিলো স্যাম।

    সাথে রেমি যোগ করলো, কিছু মনে পড়লে সাথে সাথেই কল করবো আমরা।

    অবশ্যই। কষ্ট করে এখানে আসার জন্য আবারো ধন্যবাদ আপনাদেরকে।

    লবি পর্যন্ত তাদেরকে এগিয়ে দিলো ট্রেভিনো।

    স্যাম ঐদিকে দরজা পর্যন্ত চলে গেছে, রেমিও তাকে অনুসরণ করছে। কিন্তু তখনই পিছনে ঘুরে জিজ্ঞাস করলো, মি. উইকহ্যামের কী হবে?

    প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সার্জেন্ট ট্রেভিনো।

    মি. পিকারিংর বিড়াল।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ। খুবসম্ভবত পিকারিংর প্রতিবেশি নিয়ে গেছে প্রাণীটাকে। পিকারিংর ভাতিজি বা মেয়ে আসার আগ পর্যন্ত ওখানে থাকবে উইকহ্যাম। তারাই এসে প্রাণীটার সাথে কী করবে সেটার সিদ্ধান্ত নিবে।

    ওদের কারো সাথে যোগাযোগ হয়েছে আপনাদের? রেমি জিজ্ঞেস করলো।

    এখনো না। আমার মনে উনার মেয়ে ইস্ট কোস্টে থাকে। আর আপনার থেকে নেওয়া নাম্বারটাতেই তার ভাতিজির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, বলে আবারো তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে এলিভেটরের দিকে পা বাড়ালো সার্জেন্ট ট্রেভিনো।

    হোটেলে ফিরে দরজা দিয়ে ঢোকার সময় স্যাম বলল, স্যান ফ্রান্সিসকোয় ছুটি কাটানোর আশায় এলেও, বিশ্রামে কিন্তু থাকা হচ্ছে না।

    দীর্ঘশ্বাস ফেললো রেমি। আমার মনে হয় দোষটা আমারই। শুরুতেই বইয়ের দোকানটায় যাওয়া ঠিক হয়নি। আমি ভেবেছিলাম বইটা হয়তো তোমার নতুন অফিসে নাবিক জাতীয় একটা আবহ যোগ করতে পারে।

    পুনর্মুদ্রণটা নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। প্রথম এডিশনের মতোই উপভোগ করবো ওটা। বিশেষ এটার পিছনে জড়িয়ে থাকা স্মরণীয় ইতিহাসের জন্য।

    আর এখন আমরা কোথায় যাবো? লবির দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    প্রথমে আমাদের লাগেজগুলো নিয়ে নিই। তারপর উপকূল ধরে মনটেরিতে যাবো।

    তাহলে রয়এ ডিনার সাড়বো আমরা?

    উত্তরটা দেওয়ার আগেই অন-ডিউটি ম্যানেজারের সাথে দেখা হলো তাদের। উদ্বেগে মুখ কুঁচকে আছে লোকটার। মি. অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। আপনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা জানা নেই আমার। আপনাদের জন্য যদি কিছু করতে পারি… আসলে আমাদের এখানে আগে কখনোই এমন কিছু ঘটেনি। অন্তত আমি যতদিন ধরে আছি ততদিন ধরে না।

    কী ঘটেনি আগে? জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    পুলিশ এসেছিলো। ওয়ারেন্ট দেখিয়ে আপনাদের জিনিসপত্র সার্চ করে গেছে।

    ওয়ারেন্ট? রেমি বলল। কোনোভাবেই ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না তার। জীবনে সে কখনো এটা ভাবেনি যে তাদের করা কোনো কিছু একসময় পুলিশের তদন্তের অংশ হয়ে দাঁড়াবে।

    আমরা আপনাদের কল করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সরাসরি ভয়েস মেইলে চলে গিয়েছে কলগুলো।

    সার্জেন্ট ট্রেভিনোর সাথে সাক্ষাতের সময় ফার্গো দম্পতির দুইজনই তাদের ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।

    স্যাম জিজ্ঞেস করলো, আপনি তাকে তাদের ওয়ারেন্টের কোনো কপি রেখেছেন?

    কপি?

    ওয়ারেন্টের একটা কপি রেখে যাওয়ার কথা পুলিশদের।

    এটা মনে হয় আপনি নিজে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। তারা এখন আপনাদের রুমেই আছে।

    ঠিক বলেছেন, বলে রেমিকে নিয়ে সরাসরি এলিভেটরের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। ম্যানেজারও আসছে তাদের পিছে পিছে। এখন বুঝেছি সার্জেন্ট ফথ সকালে কেন ওখানে ছিলো না। রেমিকে বলছে স্যাম। লোকটা আমাদের রুম সার্চ করার জন্য ইন্টারভিউয়ের নাম করে তার পার্টনারকে দিয়ে আমাদের আটকে রেখেছিলো পুলিশি স্টেশনে।

    সার্চই বা করছে কেন? রেমি বলছে। আমরাও তো মি. পিকারিংর মতোই ডাকাতির শিকার। আর সত্যি বলতে, আমাদেরকে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করলেই হতো। ওটা তো আর এতো লজ্জার হতো না। বলে অস্ফুট হেসে ম্যানেজারের দিকে তাকালো রেমি। লোকটা তাদের প্রতিটা কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। সত্যি বলতে স্যাম লোকটাকে নিচেই অপেক্ষা করতে বলেনি দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে ও। তবে একটু পরই বুঝতে পারলো যেহেতু পুলিশ তাদের রুম তল্লাশি করে দেখছে (যেটা সে এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না, ব্যাপারটা প্রচণ্ড অপমানজনক লাগছে তার কাছে), তাই একজন সাক্ষী থাকা খারাপ কিছু হবে না।

    এলিভেটরে ম্যানেজার তার চাবিটা লাগালো যাতে করে এটা দিয়ে উচ্চপ্রহরায় থাকা ফ্লোরটায় যাওয়া যায়। গন্তব্যে পৌঁছেই পা বাড়ালো তাদের স্যুইটের দিকে। কালো স্যুট পরে রাখা দুইজন লোককে দেখতে পেলো রেমি। দুইজনের হাতেই ল্যাটেক্স গ্লাভস লাগানো। একজন বিছানায় থাকা তার স্যুটকেসটা ঘেটে দেখছে। স্যুটকেসের প্রান্তগুলোর দিকেই বেশি মনোযোগ লোকটার। ভাবছে ওখানে হয়তো কিছু লুকানো আছে। আর অন্যজন বারের ক্যাবিনেটগুলো খুলে খুলে দেখছে।

    সার্জেন্ট ফথকে দেখতে পাচ্ছি না আমি, স্যামকে ফিসফিসিয়ে বলল রেমি।

    বারের দিকে লোকটার চোখ পড়েছে তাদের ওপর। তীর্যক ও কঠিন দৃষ্টিতে তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল, এটা পুলিশের কাজ। আপনারা বাইরে যান।

    রেমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো স্যাম। সম্মুখ বিপদ থেকে রেমিকে আড়াল করে রাখতে চাইছে। এটা তো সম্ভব হচ্ছে না। আপনাদের আইডি দেখালে ভালো হয়, দাবি করে বলল স্যাম। আর আপনাদের ওয়ারেন্টের একটা কপি।

    এই যে আপনার ওয়ারেন্ট। বলে বুক পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা একটা কাগজে বের করে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো লোকটা। তার সঙ্গীও এগিয়ে আসছে।

    কাগজটা স্যামের গিয়ে ঠেসে ধরে তাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের দিকে ঠেলে দিলো। অবশ্য স্যাম অতো সহজে ছেড়ে দেয়নি লোকটাকে। কাঁধ খাবলে ধরে চরকির মতো একটা পাক খেয়ে লোকটাকে দেয়ালে আছড়ে মেরেছে। দরজার মুখে লড়াইয়ের মতো সৃষ্টি হয়ে গেছে এতে করে। হঠাৎ করে লোকটার সঙ্গীও এসে জড়ো হলো হট্টগোলের মধ্যে। পেছন থেকে এসে স্যামকে ঝাঁপটে ধরেছে লোকটা। মুষ্টি পাকিয়ে প্রথম লোকটার চোয়ালে জোরালো ঘুষি হানলো স্যাম, তারপর ঝট করে ঘুরে লাথি মারলো দ্বিতীয় লোকটার গায়ে। উড়ে ম্যানেজারের গায়ের ওপর গিয়ে পড়লো লোকটা, দুজনেই মাটিতে আছড়ে পড়েছে। ওদিকে রেমি অস্ত্রের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। টেবিলের কাছেই থাকা ফুলদানিটা দেখে ওটাই তুলে নিলো হাতে আঘাত করার ভঙ্গিতে ফুলদানিটা ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় লোকটা রেমির হাতের অস্ত্রটা দেখতে পেয়েছে। অবস্থা বেগতিক বুঝে স্যাম ও তার সঙ্গীর দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

    ওদিকে এখনো প্রথম লোকটার সাথে লড়াই করছে স্যাম। লোকটা পাক খেয়ে ঘুরে আঘাত করতে চাইলো স্যামকে, কিন্তু স্যাম তার বাম হাত দিয়ে আঘাতটা ঠেকিয়ে ডান মুষ্টি দিয়ে সজোরে ঘুষি মারলো লোকটার পেটে। ঘুষি খেয়েই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়েছে লোকটা। তবে বেশিক্ষণ পড়ে রইলো না। স্যামকে আবারো এগিয়ে আসতে দেখে সেও উঠে দৌড়ে লাগালো তার সঙ্গীর পিছে পিছে। স্যাম তাদেরকে তাড়া করতে শুরু করেছিল, তবে বেশিদূর এগুলো না। এর বদলে রুমে ফিরে এসে দরজার তালা লাগিয়ে তাকালো। রেমির দিকে। রেমি এখনো হাতে দানিটা ধরে রেখেছে। ওটা কি আমার জন্য নাকি তাদের জন্য?

    এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি আমি। বলে মেঝেতে পড়ে থাকা ম্যানেজারের দিকে ইশারা করলো রেমি।

    স্যাম এগিয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো লোকটাকে। আপনি ঠিক আছেন?

    অনেক বেশি হতভম্ব হয়ে আছি, গায়ের পোশাকটা ঝেড়ে নিতে নিতে বলল ম্যানেজার। এটা তো দেখি রীতিমতো আক্রমণ ছিলো আপনাদের ওপর। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফোন করে এটা নিয়ে অভিযোগ জানাবো আমরা।

    তারা কিন্তু পুলিশ ছিলো না, বলল স্যাম।

    কিন্তু আমি যে ওয়ারেন্টটা দেখলাম।

    মেঝে থেকে ওয়ারেন্ট নামের কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে স্যাম বলল, নকল। কোনো সাক্ষর নেই এটায়। খুব সম্ভবত ইন্টারনেট থেকে পুরোনো কোনো কেসের ওয়ারেন্ট প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছিলো। বলে রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো কাগজগুলো।

    চটজলদি কাগজগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিলো রেমি। স্যামের কথাই ঠিক। তোমার কি মনে হয় তারা কী খুঁজছিলো?

    খুব সম্ভবত মি. পিকারিংর সেফে তারা যেটা খুঁজে পাওয়ার আশা করছিলো, সেটাই।

    পুলিশের কাছে কল করে জানা গেলো যে ঐ লোকদুটো পুলিশের কেউ নয়। সত্যি বলতে তাদেরকে ধরার আশায় কয়েকমিনিটের মধ্যেই পুলিশ অফিসার এবং আইন প্রণয়নকারী অফিসারে ভরে গেলো জায়গাটা।

    হাসপাতালের মর্গ থেকে সরাসরি হোটেলেই চলে এসেছে সার্জেন্ট ফথ। পিকারিংর অটোন্সির জন্যই ওখানে চলে যেতে হয়েছিলো বলে সকালে ইন্টারভিউয়ের সময় লোকটা থাকতে পারেনি। ফার্গো দম্পতির কাছে এটার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলল, আপনাদের কোনো ধারণাও নেই তারা কী খুঁজছিলো?

    না, বলল স্যাম। সত্যি বলতে, সার্চের কথা শুনে ভেবেছিলাম আপনিই হয়তো আমাদেরকে আপনার পার্টনারের সাথে আটকে রেখে এখানে তল্লাশি চালাতে এসেছেন।

    অবৈধ তল্লাশির কথা বাদ দিলেও, আমরা আসলে কিন্তু নকল ওয়ারেন্ট নিয়ে আসতাম না। খুব সম্ভবত তারা আপনাদের ওপর নজর রাখছিলো। আপনারা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলো হয়তো। এরমানে হলো, তারা ভাবছে মি. পিকারিংর কাছে থাকা জিনিসটা এখন আপনাদের কাছে আছে।

    রেমি তার স্যুটকেস থেকে কিছু খোয়া গেছে কিনা তা চেক করতে করতে বলল, জিনিসটা যেটাই হয়ে থাকুক না কেন, খুব একটা বড়ো না সম্ভবত। তারা স্যুটকেসের লাইনিংয়েও খুঁজে দেখেছে। এমনকি ছোটো কম্পার্টমেন্টেও। আমি যে বইটা কিনেছি সেটা ওখানে ফিট হবে না।

    বইটা কোথায়?

    কুরিয়ার লোকেরা যদি ঠিকঠাক মতো তাদের দায়িত্ব পালন করে থেকে থাকে, তাহলে এটা খুব সম্ভবত আজ বিকালের মধ্যেই আমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে বইটা।

    ওখানে ওটা রিসিভ কে করবে?

    আমাদের গবেষক, সেলমা। আমি তাকে কল করে জানিয়ে দিচ্ছি।

    ধন্যবাদ বুঝতে পারার জন্য।

    রেমি তার পার্স থেকে ফোনটা বের করে সেলমার অফিসের নম্বরে ফোন করলো। কোনো সাড়া না পেয়ে একটা ভয়েস মেইল রেখে দিলো শুধু।

    ফোনটা কান থেকে নামাতেই সার্জেন্ট ফথ বলল, তো সহজ করে বললে-আপনার পুলিশ স্টেশন থেকে হোটেলে ফিরে আসতেই ম্যানেজারের থেকে শুনলেন যে পুলিশ আপনাদের রুমে তল্লাশি করছে?

    হ্যাঁ, ঠিক, স্যাম বলল। আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার পরেই এসে ঢুকেছে।

    ম্যানেজার এখনো আতঙ্কে কাঁপছে কিছুটা। মাথা ঝাঁকিয়ে স্যামের কথায় সায় দিয়ে বলল, ওয়ারেন্ট দেখাতেই আমি ফার্গো দম্পতিকে কল করার চেষ্টা করেছি। তবে তাদের কেউ ফোন ধরেননি। আর আমিই বা কী করবো বলেন? অফিসিয়াল কাগজ আর পিস্তল দেখে তো আমার…

    পিস্তল? সার্জেন্ট ফথ বলে উঠলো।

    মাথা ঝকালো ম্যানেজার। আমার মনে হয় তাদেরকে আইডি দেখানোর কথা বলা উচিৎ ছিলো আমার, কিন্তু…

    মি….?

    ব্রায়ান্ট।

    মি, ব্রায়ান্ট, সার্জেন্ট ফথ বলল। লোকদুটোর কেউ কি বলেছিলো তারা কী খুঁজছে?

    হ্যাঁ। তারা জানতে চাইছিলো ফার্গোরা কি কোনো চাবির ব্যাপারে কিছু বলেছে কিনা। অথবা আমাদের সেফে এই জাতীয় কিছু রেখেছে কিনা। আরো কী কী যেন… আমার এতোটা মনে নেই। তবে তারা একটা চাবির কথা বলেছিলো, এটুকু স্পষ্ট মনে আছে আমার।

    চাবি?

    হ্যাঁ। আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো মিসেস ফার্গোর গলায় ঝুলানো নেকলেসের ব্যাপারে বলাবলি করছে।

    কথাটা শুনেই হীরার নেকলেসটার ওপর হাত চলে গেলো রেমি। স্যামকে জিজ্ঞেস করলো, এটার ব্যাপারে কি কিছু লুকিয়েছো আমার কাছে?

    এটা অবশ্যই দামি একটা অলংকার। তবে শুধু একটা অলংকারই মাত্র।

    সার্জেন্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রেমি। গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলল, আমার মনে হয়, আমরা এটা ধরে নিতে পারি যে ঐ লোকগুলো যেটা খুঁজছে সেটা আমাদের কাছে নেই। তো যদি আর কিছু না থেকে থাকে…, তাহলে আমরা আসলে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। নাহলে…

    সার্জেন্ট তাদের স্যুটকেসের দিকে তাকালো একবার। লবিতে থাকা ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ দেখা দরকার আমার। মনে হয় মি. ব্রায়ান্ট আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।

    নিজের স্যুটকেসের দিকে হাত বাড়ালো স্যাম। বলল, আপনার কাছে আমাদের সেল নম্বর তো আছেই, যদি দরকার লাগে কল করবেন। সার্জেন্টের জবাবের অপেক্ষা না করেই রেমিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করলো স্যাম। ম্যানেজার তাদের পিছে আসতে চাইছিলো, তবে স্যাম থামিয়ে দিলো লোকটাকে। আমরা নিজেরাই বেরিয়ে যেতে পারবো।

    অবশ্যই, বলে পিছিয়ে গেলো ম্যানেজার।

    লাগেজগুলো নিয়ে এলিভেটরে ঢুকলো ফার্গো দম্পতি। এলিভেটরের দরজাটা বন্ধ হতেই রেমি বলল, আমাদের বিশ্রামের ছুটিটা আসলে কোনদিন থেকে শুরু হবে?

    আমি কি আজকের কথা বলেছিলাম? আসলে আগামীকাল হবে ওটা।

    হুমম…

    আর সত্যি বলতে, কেউ কিন্তু আমাদেরকে মারা চেষ্টা করছে না।

    কিন্তু তাদের সাথে তো পিস্তল ছিলো, স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল রেমি। আর আমরা আমাদেরগুলো প্লেনেই রেখে এসেছি।

    এটা বলার উপযুক্ত সময় হয়েছে কি যে ঐ বইয়ের দোকানে যাওয়ার আইডিয়াটা তোমারই ছিলো?

    মোটামুটি নিশ্চিত যে এই কথাটা বলার মতো উপযুক্ত সময় তুমি কখনোই পাবে না।

    .

    ০৫.

    স্যাম সিদ্ধান্ত নিলো রাতে তাদের স্প্যানিশ বের হোটেলে যাওয়া এবং মনটেরি পেনিনসুলার রয়-এ ডিনারটা একদিন পিছিয়ে দিলেও চলবে। তার ফ্লাইট ক্রুদেরকে বলল যেন মনটেরি এয়ারপোর্ট থেকে স্যান ডিয়েগোতে নিয়ে যায় ওদের। রেমি ওদিকে এখনো ব্রির সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে বেশ দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। এটার সাথে সকালের ঘটনাগুলো একত্রিত হয়ে স্যামের সপ্তাহব্যাপি পরিকল্পনাটায় পানি ঢেলে দিয়েছে যেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জি ৬৫০ বিমানে করে আকাশে উডডয়ন করলো ওরা। বিমানের ভিতরে বসে বিথোবিয়ানের রিলাক্সিং মিউজিক শুনছে। ওদিকে সেলমা রেমিকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে যে বইটা আজ সকালেই তাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছে। কন্ডিশনও বেশ ভালোই আছে। কুরিয়ার করার সময় ঝাঁকি খেয়ে ওপরের পরতে একটু চাপ পড়েছে শুধু। এছাড়া ভিতরে কিছুই হয়নি, এবং এটার সাথে কোনো চাবি বা অতিরিক্ত কিছুও যায়নি।

    সেলমার মেসেজ পাওয়ার পরও দুঃশ্চিন্তা দূর হলো না রেমির। স্যাম রেমিকে ফোন চেক করে আবার টেবিলে রেখে দিতে দেখেছে। স্ত্রীর চেহারার হতাশাটা ভালোভাবেই চোখে পড়ছে তার। কোনো সন্দেহ নেই যে বন্ধুর জন্য অনেক বেশি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে মেয়েটা। রেমিকে স্বস্তি দিতে না পারার আক্ষেপ হচ্ছে তার মনে। স্যাম ব্রি মার্শালকে অতোটা ভালো করে চিনে না। তবে মেয়েটার সাথে গত কয়েকসপ্তাহ ধরে কাজ করছে রেমি এবং কাজের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।

    ****

    স্যান ডিয়েগো এয়ারপোর্টে পৌঁছেই সরাসরি লা জোলায় ব্রির অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা করলো ওরা।

    এয়ারপোর্ট থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের দোতলায় থাকে ব্রি। ওখানে পৌঁছুতেই দেখলো পার্কিং লটের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো পাম গাছে। উপকূলীয় বাতাসের গাছের পত্ররাজিগুলো দুলছে যেন।

    কমপ্লেক্সে পৌঁছেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল ওরা। ডোরবেল চাপলো রেমি। কয়েকমিনিট অপেক্ষা করে আবারো চাপলো। কোনো সাড়া আসছে না ভিতর থেকে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজায় করাঘাত করতে শুরু করলো স্যাম।

    কিছুক্ষণ পর পিছনের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেলো। এক মহিলা দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে বলল, কেউ নেই ওখানে।

    ব্রির সাথে যোগাযোগ করার অন্য কোনো উপায় জানা আছে আপনার? রেমি জানতে চাইলো।

    আপনারা…?

    আমি রেমি ফার্গো। ও আমার স্বামী, স্যাম। আমরা

    ফাউন্ডেশনের। ব্রিকে ওখানে কাজ করতে শুনেছি, বলে তাদের দুজনকে একবার দেখে দরজাটা পুরোপুরি খুলে দিলো মহিলা। আমি শুধু নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম যে আপনারা সাধারণ কোনো আগন্তুক কিনা। যাই হোক, ব্রি হুট করেই চলে গেছে।

    কখন? রেমি বলল।

    কাল রাতে। আমি বাসায় আসছিলাম তখন। দেখি ব্রি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে আসছে। বলেছিলো তার চাচাকে দেখতে যাচ্ছে।

    স্যাম তার ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিলো মহিলার হাতে। যদি তার সাথে আপনার যোগাযোগ হয়, তাহলে কি ওকে বলতে পারবেন আমাদেরকে কল করতে? জরুরি দরকার ছিলো।

    অবশ্যই। আপনাদেরকে এর বেশি সাহায্য করতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

    গাড়িতে ফিরে স্যাম তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, ব্রি মনে হয় খুব সম্ভবত স্যান ফ্রান্সিসকোয় আছে এখন।

    আমি নিশ্চিত যে তোমার কথাই ঠিক। মেয়েটার মনের অবস্থা চিন্তা করতেই খুব খারাপ লাগছে আমার।

    তার কাছে আমাদের নম্বর আছে। আমাদেরকে কল করতে পারবে। আর এর ফাঁকে চলো বাসায় ফিরে যাই। সেলমাকে সাথে নিয়ে মি. পিকারিংর বইটা একটু ঘেটে দেখা দরকার।

    লা জোলা গোল্ডফিশ পয়েন্ট থেকে তাদের সমুদ্র তীরবর্তী বাসার দূরত্ব খুব বেশি না। মাত্র কয়েক মাইলের পথ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের গ্যারেজের সামনে গিয়ে পৌঁছুলো ওরা। গ্যারেজে ঢুকতেই দেখতে পেলো যে তাদের বিশাল জার্মান শেফার্ড কুকুর যোলতান দৌড়ে আসছে তাদের দিকে।

    যোলতান কাছে আসতেই উবু হয়ে কুকুরটা কান চুলকে দিলো রেমি। আদর পেয়েই রেমির কোলে লুটিয়ে পড়লো কুকুরটা। আট্টিলা দা হানের সমাধি অনুসন্ধানের সময় হাঙ্গেরিতে কুকুরটাকে খুঁজে পেয়েছিলো রেমি। কুকুরটাকে ভালো লেগে যাওয়ায় ওটাকে বাড়িতেই নিয়ে আসে। তবে সমস্যা একটাই, যযালতান শুধু হাঙ্গেরিয়ান ভাষাতেই সাড়া দিতে পারে। কপাল আলো, তাদের গবেষক সেলমাও হাঙ্গেরির নাগরিক। এখনো তার গলার স্বরে কিছুটা হাঙ্গেরিয়ান টান মিশে আছে। সে ই যোলতানকে হাঙেরিয়ানের পাশাপাশি ইংরেজি শব্দেও সাড়া দেওয়ার ট্রেইনিংটা দিচ্ছে। সেলমার মতে, যোলতানই একমাত্র ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান কুকুর যেটা দুটো ভাষাতে সাড়া দিতে পারে।

    গুড বয়, রেমি বলল যোলতানকে। চল, তোকে একটা ট্রিট দেই।

    ইংরেজি শব্দগুলোর মধ্যে ট্রিট শব্দটাতেই সবার আগে সাড়া দিয়েছিলো যোলতান। এখন রেমির মুখে শব্দটা শুনেই লেজ নাড়তে শুরু করলো প্রাণীটা। রেমি আরো একবার তার কানের পিছনে চুলকে দিয়ে পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে। যোলতানও লেগে আছে তার সাথে সাথে। গিয়ে বসলো কুকুরের বিস্কুট রাখা ক্যাবিনেটটার সামনে গিয়ে। বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেমির দিকে।

    কয়েক মুহূর্ত পর সেলমাও পা ফেললো রান্নাঘরে। কালো একটা ইয়োগা প্যান্ট এবং সচারচের মতোই বহুরঙা একটা শার্ট পরে রেখেছে ও। এখনের শার্টটা সবুজাভ নীল এবং উজ্জ্বল গোলাপি রঙের। ছোটো করে ছাটা তার বাদামি চুলগুলোকে বরাবরের থেকে একটু বেশি খাড়া দেখাচ্ছে। এমনকি চেইন লাগানো চশমাটাও নেই তার চোখে। এর বদলে মোটা ফ্রেমের একটা সানগ্লাস লাগিয়ে রেখেছে এখন।

    মি, অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। ওয়েলকাম হোম।

    আর স্যাম ভেবেছিলো মেয়েটাকে হয়তো অবশেষে তার প্রথম নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে রাজি করাতে পেরেছে। ফর্মালিটিতেই ফিরে গেলে? বলল ও। স্যাম ও রেমি বলে ডাকা কই গেলো?

    অনেক চেষ্টা করেছি, মি. ফার্গো। অস্বস্তি লাগে। আমি আপনাদের হয়ে কাজ করি। ফর্মালিটিতে ডাকতেই ভালো লাগে আমার।

    তাহলে আমাদেরও তাই ভালো লাগবে, রেমি বলল।

    রেমির দিকে তাকালো সেলমা। যোলতানকে দ্বিতীয় আরেকটা বিস্কুট খাওয়াতে দেখে বলল, আপনি তো দেখি কুকুরটাকে মোটা বানানোর তালে আছেন, মিসেস ফাগো।

    কই? সে পারফেক্টলি ফিট আছে।

    এর কারণ, আপনারা বাড়িতে থাকার সময় আমি ওকে দ্বিগুণ সময় ধরে বাইরে হাঁটাই। আপনারা তো ওকে খাওয়ানোয় কোনো কার্পণ্যই করেন না। তাই কারো একজনের তো বেচারার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে হলওয়ের কাছে থাকা ক্যাবিনেটটা খুলে শিকল বের করে আনলো সেলমা ষোলন শিকলের শব্দ পেয়েই উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে চলে এসেছে সেলমার কাছে। সেলমা উবু হয়ে প্রাণীটার কলারে শিকল লাগাতে লাগাতে বলল, বিচের দিকে যাচ্ছি আমরা। দরকার লাগলে ওখানেই পাবেন।

    বইটার ব্যাপারে বলো। রেমি জানতে চাইলো। ওটাতে অদ্ভুত কিছু চোখে পড়েনি?

    সাথে সাথেই কিছু পড়েনি। তবে লাযলো বেশ মুগ্ধ হয়েছে, বলল সেলমা। সে আসলে লায়লো কেম্পের কথা বলছে। সেলমাকে গবেষণার কাজে সাহায্য করার জন্য তাকে নিয়োগ করেছে ওরা। সাথে সাথে নিজেও অসুস্থতা থেকে সেরে উঠছে। মেক্সিকোয় কেটজালকোয়াটলের সমাধি অন্বেষণের সময় গুরুতর সাথে আহত হয়েছিলো লাযলো। লোকটাকে সেলমার সাথে মিশে যেতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে ওরা। সেলমার স্বামী ছিলো একজন পাইলট, লোকটা মারা গেছে প্রায় দশ বছরের মতো। তারা অবশ্য এটা নিশ্চিতভাবে জানে না যে লাযলোর ব্যাপারে সেলমার অনুভূতি কী। তবে তাদের সম্পর্কটা এভাবে আপনগতিতে এগিয়ে যেতে দেখে বেশ খুশি ওরা। যদিও সম্পর্কের ব্যাপারটা আন্দাজে ধরে নিয়েছে ওরা।

    কুকুরের বিস্কুটের বাক্সটা ক্যাবিনেটে রাখতে রাখতে রেমি সেলমার কাছে জানতে চাইলো, তো, লাযলোর মন্তব্য কী বইটার ব্যাপারে?

    বলেছে– সে বইয়ের ব্যাপারে এতো ভালো করে কিছু জানে না। তাই বলতে পারছে না এটার জন্য আসলেই কাউকে খুন করা সম্ভব কিনা। এটা তার ফিল্ডের কিছু নয়। তবে বইয়ের ব্যাপারে আলোচনার জন্য ইয়ান। হপকিন্সের সাথে আপনাদের মিটিংর ব্যবস্থা করেছে ও। লাযলোর মতে এই বিষয়ে আলোচনা করার মতো হপকিন্সই দক্ষ ব্যক্তি। আর এছাড়া অন্য কাউকে এতো স্বল্প সময়ে পাওয়াও সম্ভব না। হয়তো রিটায়ার্ড প্রফেসর হওয়াতেই পাওয়া গেছে তাকে। তবে কপাল খারাপ, তিনি এখন অ্যারিজোনার ফিনিক্সে আছেন।

    সমস্যা নেই, রেমি বলল। শরতের অ্যারিজোনা ভালো লাগে আমার। বলে স্যামের দিকে তাকালো। আশা করছি এতে তোমার পরিকল্পনার খুব একটা ব্যাঘাত ঘটছে না?

    আমার পরিকল্পনার সৌন্দর্যতাই হলো এর পরিবর্তনশীলতা, বলল স্যাম।

    তোমার আসলে কোনো প্ল্যানই নেই, তাই না?

    এই তো কথার ফাঁকফোকর ধরা শুরু করলে। বলে সেলমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তো, এই রহস্যময় বইটা কই আছে এখন?

    আপনার সেফে রেখে দিয়েছি।

    যাই, গিয়ে দেখে আসি একটু।

    নিয়েই আসো সাথে করে, রেমি বলল। একসাথেই দেখবো।

    সেফ থেকে বইটা বের করলো স্যাম। এখনো ফেডএক্সের বাক্সেই মোড়ানো আছে বইটা। সে নিশ্চিত না সেলমা কেন এই বইটাকে সেফে রেখে দিয়েছে। হয়তো এটা কিনতে গিয়ে ডাকাতের শিকার হওয়া এবং বিক্রেতা মি, পিকারিংর আকস্মিক হার্টঅ্যাটাকের কারণেই এমনটা করেছে।

    বইটা নিয়ে পুনরায় ফিরে আসতেই দেখতে পেলো রেমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে সে আসলে ড্রাইভওয়ে ধরে হেঁটে যাওয়া সেলমা ও ঘোলতানকে দেখছে। সূর্যের আলোয় যেতেই মনে হচ্ছে, তার চুলগুলো আসলেই তার শার্টের সাথে ম্যাচ করেছে। গোলাপি এবং নীলচে আভা।

    স্যামও তাকালো বাইরের দিকে। রেমির কথাই ঠিক। চমৎকার একটা মিল দেখা যাচ্ছে সেলমার চুলের সাথে তার পোশাকের। আগে এই ঝলকানিটা ছিলো না। ভাবতেই অবাক লাগে, আমাদের সেলমা আগে তার অস্তিত্বও দেখাতে চাইতো না। তোমার কী মনে হয়—

    লাযলো? রেমি শেষ করে দিলো বাক্যটা।

    চোখের আড়াল হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেলমা আর কুকুরটার দিকেই তাকিয়ে রইলো ওরা। তারপর মনোযোগ ফিরালো বইটার ওপর। ফেডএক্সের খাম থেকে বের করে কিচেন টেবিলের ওপর বইটা রাখলো স্যাম। তারপর ওপরের বাদামি কাগজের প্রলেপটা খুলতেই চামড়ার প্রচ্ছদের ওপর সোনালি হরফে লেখা শিরোনামের বইটা উন্মোচিত হলো তার চোখের সামনে। সে এখন বুঝতে পারছে রেমি কেন এটার প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলো। কালেকশনের রাখার মতো খুবই ভালো একটা বই খুঁজে বের করেছে।

    ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করতে করতে রেমি বলল, এটায় অ্যান্টিক ভাব ফুটানোর জন্য বেশ কষ্ট করেছে ওরা। খরচ কম রাখার জন্য চীন থেকে ছাপিয়ে এনেছে।

    মি. পিকারিং বলেছে এটা কপি?

    দুই গ্লাস পানি ঢেলে নিলো রেমি। হ্যাঁ, অনেকগুলো কপির একটি। কেন?

    স্যাম তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় তোমার আরো একবার ভেবে দেখা উচিৎ।

    খুবই তৃষ্ণার্ত আমি।

    আমি বইটার ব্যাপারে বলছি। রেমিকে বইটা দেখানোর জন্য পাশে সরে গেলো স্যাম। এটা কোনোভাবেই চীন থেকে আনা নকল কপি না, রেমি। এটা একদম অরিজিনাল।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
    Next Article দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Our Picks

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }