Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প453 Mins Read0
    ⤶

    ৫১. চার গুহা

    ৫১.

    এটাই চার গুহা, বললেন পার্সি। খুবই বিপজ্জনক জায়গা। অনেক মোড় ও বাক আছে। কয়েকটা চেম্বার আবার অনেক গভীর। ওগুলো দিয়ে পড়ে যাওয়া খুবই সোজা। তবে এগুলো, বলে দর্জির দোকানটা দেখালেন আবার, এগুলোতে যাওয়া খুবই সোজা। জায়গাটাও ভালো। আমার নামা প্রথম গুহা এটা। আগে এটা ওয়াইন সেলার ছিলো।

    পার্সির কাঁধে হাত রাখলো রেমি। আমারও খুব প্রিয় ওগুলো। তবে এগুলো, ম্যাপে চার গুহার দিকে নির্দেশ করে দেখিয়ে বলল, এগুলো কোথায় খুঁজে পাব আমরা?

    আইভিলতার পিছনে আছে। ওখানের অনেকগুলো গুহাই এখন দালানের পিছনে আড়াল হয়ে গেছে। ওখানে পার্কে একটা প্রাচীন পাথর আছে। আইভিলতাটা ওটার ওপর দিয়েই জন্মেছে। এখানে ক্রস টু চিহ্নটা দেখতে পাচ্ছো?

    স্যাম কাছে ঝুঁকতেই দেখলো যে আসলেই প্রবেশমুখটা ক্রস চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এটার একটা ছবি তুললে কি কোনো সমস্যা হবে?

    কোনো সমস্যাই হবে না, পার্সি বললেন।

    ফোন বের করে ম্যাপের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো স্যাম। আর এই ফাঁকে রেমি জিজ্ঞেস করলো, আপনি সর্বশেষ কবে গিয়েছিলেন ওখানে?

    অনেক বছর আগে। ছাত্রদের নিয়ে ট্যুরে যেতাম প্রায়ই। এখনো ওখানেই আছে ওটা, বলে অলড্রিজের দিকে তাকালেন পার্সি। আমার সাথে তুমিও একবার গিয়েছিলে। মনে আছে?

    স্পষ্ট মনে আছে। একসাথে অনেকগুলো গুহাতেই গিয়েছিলাম আমরা।

    মাথা ঝাঁকালেন পার্সি। আমি এই গুহাটা পছন্দ করি, কারণ এটা এখানে আছে, আমার খুব কাছে। কিন্তু কেউই জানে না এটার কথা। আর ওটা আইভিলতায় ছেয়ে থাকলেও অনেকেই ওটার সম্পর্কে জানতে চায়। আইভিলতায় হারিয়ে যাওয়ার ভয় থেকেও কেউ পিছপা হয় না। আর এটা, বলে আবার দোকানের পিছন থেকে পাথরের সিঁড়ির দিকে নির্দেশ করলেন তিনি, কিন্তু একদম হাতের নাগালেই আছে। আমার নামা প্রথম গুহা এটা। আগে ওয়াইন সেলার ছিলো।

    ****

    নটিংহ্যাম পার্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো স্যাম ও রেমি। এই জায়গাটা একসময় নটিংহ্যাম ক্যাসলের হরিণের চারণভূমি হিসেবে পরিচিত ছিলো।

    তারা যে এলাকাটা খুঁজছে-মানে পার্সি তাদেরকে যে এলাকাটার কথা বলেছে-সেটাতে অনেকগুলো বড়ো বড়ো দালানের ফাঁকে একটা সবুজ চারণভূমি আছে। তবে কপাল খারাপ যে তাদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। গাড়ি চালাতে চালাতে স্যাম দেখলো বর্ণনাটার সাথে অনেক এলাকারই মিল আছে।

    .

    সেলমা ফোন করে ধাঁধার টুকরোটা মিলিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত অন্ধকারেই পড়েছিলো ওরা। আবার বলতে পারবে? বলে গাড়িটা থামিয়ে ফোনের স্পিকার অন করলো স্যাম। তোমার কথাটা ঠিকঠাক মতো শুনেছি কিনা তা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।

    গ্রেস হারবার্ট-মিলারের কাজিন, সেলমা বলল। উত্তরাধিকারে নটিংহ্যামের এস্টেটের মালিকানা পাওয়া লোকটা।

    কী যেন ম্যাকগ্রেগর নাম লোকটা? স্যাম বলল।

    হেনরি ম্যাকগ্রেগর। আমি বেশ কয়েকবার চেক করে দেখেছি। তার মালিকানা পাওয়া এস্টেটটাও এই এলাকাতেই রয়েছে, বলে ঠিকানাটা জানালো সেলমা। সম্পদটা তিনি বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন, আর এই মুহূর্তে ওখানে কেউ থাকছেও না। তবে আমরা কল করেছিলাম মি. ম্যাকগ্রেগরকে। আপনারা চাইলে তার এস্টেটের যেকোনো জায়গায় গিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন। ভদ্রলোক এতে কিছু মনে করবেন না।

    ফোনের জিপিএসটা চালু করে নিলো রেমি। জায়গার লোকেশনের চিত্রটা আসতেই পার্সির দেওয়া ম্যাপটার সাথে মিলিয়ে দেখলো। ক্রস চিহ্নটা দিয়ে এই স্থানকেই নির্দেশ করা হয়েছে।

    ****

    গুহায় হানা দেওয়ার জন্য ব্যাকপ্যাক থেকে দরকারি জিনিসগুলো বের করে নিচ্ছে স্যাম। কপাল ভালো হলে গুহাগুলো খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। স্যাম ও রেমি দুইজনেই একটা একটা করে স্টিংগার ফ্ল্যাশলাইট, চার ইঞ্চি গলার বাক নাইফ আর ম্যাগনেটিক কম্পাস নিয়ে নিচ্ছে। স্যাম তার পিস্তলটা ফিশিং ভেস্টের গোপন হোলস্টারে করে এবং চাকুটা বেল্টের খোপে করে নিয়ে যাচ্ছে। আর রেমি তার পি-৯৩৮ নয় মিলিমিটারের পিস্তলটা নিয়ে যাচ্ছে প্যানকেক হোলস্টারে করে। কারো চোখে পড়ার জন্য পিঠের আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছে হোলস্টারটা।

    গাড়ি দিয়ে ম্যাকগ্রেগরের প্রোপার্টিতে গিয়ে পৌঁছুলো ওরা। বাড়ির সামনে এস্টেট বিক্রির সাইনবোর্ডটা ছাড়া জায়গাটাকে চিহ্নিত করার মতো আর কোনো নিদর্শন নেই। সম্পদের সীমারেখা কয়েকশো বছরে বেশ কয়েকবার বদলেছে হয়তো। আমার মনে হয় না হারবার্ট বা ম্যাকগ্রেগরদের পূর্বপুরুষেরা ওই সময়ে কোনো সীমারেখা দিয়ে গিয়েছিলো কিনা। খুব সম্ভবত এটাতে ঢোকার প্রবেশমুখটাও হয়তো অন্য কারো সম্পদের ওপর রয়েছে। এখানে কোনো আইভিলতাও নেই। পার্সি ওয়েন্ডফ কিন্তু অনেকবারই আইভির কথাটা তুলেছে।

    রেমি কথা শুনে গ্যাস প্যাডাল থেকে পা সরিয়ে জায়গাটার দিকে ভালো করে তাকালো স্যাম। রেমি ঠিকই বলেছে।

    এখন কী? জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    ঘুরে অন্য পাশে যাবো, দেখি ওদিকে আইভিলতা পাওয়া যায় কিনা, বলে রিয়ারভিউ মিররে তাকাতেই তাদের পিছনে রাস্তায় একটা গাড়ি থামতে দেখলো স্যাম।

    ঐ দেখো! ম্যাকগ্রেগরের প্রোপার্টির ডান দিকে নির্দেশ করে বলল রেমি। পার্কটাতে কিন্তু প্রচুর আইভিলতা আছে।

    ওটা আসলে ঠিক পার্ক না। দুই দালানের মধ্যে থাকা একটা সবুজ চারণভূমি মাত্র। যদিও স্যাম এখন তাদের পিছনে থামা গাড়িটা নিয়েই বেশি দুঃশ্চিন্তায় আছে। তবে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে এক মহিলা ও তরুণ ছেলেকে দেখে ভয় কেটে গেলো তার। এদের সাথে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব বা শত্রুতা নেই।

    গাড়ি নিয়ে সবুজ চারণভূমিটার দিকে এগিয়ে যেতে যাবে, ঠিক তখনই প্রফেসর অলড্রিজের কল আসলো স্যামের ফোনে। ফোন রিসিভ করে স্পিকার অন করতেই শোনা গেলো, হালকা একটু সমস্যা হয়েছে। আমার মাত্রই সুইফটের স্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। লোকটা কিছুক্ষণ আগেই কারো সাথে গুহার ব্যাপারে আলোচনা করে ফিরে এসেছে। আমার মনে হয় আপনাদের পিছনে লাগা ঐ লোকগুলোই সুইফটকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো।

    সুইফট যে আসলেই ফিস্কদের সাথে মিটিং করে এসেছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই স্যামের। এরমানে ফিস্ক আর তার দলবলও এই গুহাগুলো। দেখতে আসছে। জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

    বলে আবারো গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে চলতে শুরু করলো স্যাম।

    রেমিও তার সিট থেকে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। আমি এই এলাকায় আর কোনো আইভি দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো এটাই ঐ প্রবেশমুখটা।

    দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। তবে আমার এখন আসল চিন্তা গাড়িটা মানুষের নজরের আড়ালে পার্ক করা নিয়েই।

    তোমার কি মনে হয় ওটা ওখানে আছে?

    কী? গুপ্তধন? স্যাম বলল। থাকলে কি তোমার মনে হয় না এতোদিনে প্রফেসর ওয়েন্ডর্ফ ওটা বের করে ফেলতেন? অথবা গত আটশো বছরে তো যে কেউই বের করে ফেলতে পারতো।

    আমি সূত্র আছে কিনা তা নিয়ে ভাবছিলাম, বলে দুর্বলভাবে হাসলো রেমি। আর কে জানে, আছে কিনা! আমাদের ভাগ্য তো ভালোও হয়ে থাকতে পারে, তাই না?

    দুনিয়া এখনো প্রচুর গুপ্তধন লুকিয়ে আছে। আমরা এটা খুঁজে না পেলেও তো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না, বলতে বলতে গাড়ি নিয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে ইউ-টার্ন নিলো স্যাম। আবারো বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।

    রেমি তখন তার ফোনটা বের করে বলল, গতি কমাও। যেতে যেতে কয়েকটা ছবি তুলে নিই আমি।

    রেমিকে আইভিলতার ছবি তোলার সুযোগ দেওয়ার জন্য গ্যাস প্যাড়াল থেকে পা সরিয়ে নিলো স্যাম। সাথে সাথে সে নিজেও পাথুরে দেয়ালে ছেয়ে থাকা আইভিলতার দিকে তাকিয়ে। ভালো করে দেখার পরই বুঝতে পারলো যে নিচু পাহাড়ের পাশে থাকা এই ভঙ্গুর, আইভি-ছাওয়া দেয়ালটাকে আসলে দৃশ্যপটের সাথে ঠিক মানাচ্ছে না। খুব সম্ভবত অন্য কোনো স্থাপনার দেয়ালের অংশাবশেষ এটা।

    এটাই হবে হয়তো, ভেবে সামনের দিকে তাকাতেই একটা নীল বিএমডব্লিউকে এগিয়ে আসতে দেখলো স্যাম। সাথে সাথেই গিয়ার পরিবর্তন করে গাড়িটা পার্ক থেকে পিছিয়ে নিতে শুরু করলো।

    কী হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    সঙ্গীরা হাজির হয়ে গেছে।

    .

    ৫২.

    উইন্ডশিল্ডে বৃষ্টির ঝাঁপটা পড়ায় সামনের দৃশ্যটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে না ওরা। কিন্তু তারপরও চোখে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ওয়াইপার চালু করার সাহস পাচ্ছে না স্যাম। অন্ততপক্ষে পার্কে বিএমডব্লিউটাকে থামতে দেখে তো আরো সাহস পাচ্ছে না।

    ইভান ও আলেক্সান্দ্রা বসে আছে বিএমডব্লিউয়ের সামনের সিটে। জ্যাক ও নাইজেল রয়েছে পিছনের সিটে। গাড়ি থামানোর পর ড্রাইভার সিট থেকে বের হয়ে পিছনের সিট থেকে নাইজেলকে টেনে বের করে আনলো ইভান। জ্যাক ও আলেক্সান্দ্রাও বেরিয়ে এসেছে। চারজনই হেঁটে এগিয়ে আসছে পার্কের ওপর দিয়ে।

    কিছুক্ষণ পর ফিস্কের কালো মার্সিডিজটাও এসে থামলো বিএমডব্লিউয়ের পিছনে। ফিস্কের সাথে সাথে আরো দুইজনই লোককেও নামতে দেখা গেলো। দুইজনই তাদের বাদামি কোটের নিচে নিজেদের হ্যান্ডগানগুলো লুকিয়ে রেখেছে। দৃশ্যটা দেখে স্যাম বলল, ফিস্ক দেখি আরো সাহায্য নিয়ে এসেছে।

    দেয়ালের কাছে এসেই আইভিলতায় ছাওয়া দেয়ালটা পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করলো জ্যাক ও ইভান। নাইজেল আপাতত আলেক্সান্দ্রার পাহারায় রয়েছে। লাঠি নিয়ে দেয়ালের আইভিলতার প্রলেপটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছে জ্যাক ও ইভান। গুহার প্রবেশমুখটা খুঁজছে খুব সম্ভবত। কিছুক্ষণ খোঁজার পর নাইজেলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বললো ইভান। শুনে নাইজেলও আইভিলতার দিকে ইশারা করে এমনভাবে মাথা নাড়লো যেন এই জায়গার সম্পর্কে তার প্রচুর জানাশোনা রয়েছে।

    আমাদের কিছু একটা করা উচিৎ, স্যাম। নাইজেলকে আমরা তাদের সাথে ওখানে ঢুকতে দিতে পারি না।

    আমি এত লোকের আশা করিনি। এখন তাড়াহুড়ো করলে আমাদেরকেও সরাসরি ভাইপারের কবলে গিয়ে পড়তে হবে।

    অন্ততপক্ষে তারা তো আর সোনালি লেন্সহেড ভাইপার না।

    ওদিকে ফিস্কও তার দুই সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে দেয়ালের কাছে পৌঁছে গেছে। নাইজেলকে পাহারা দিতে আলেক্সান্দ্রাকে কী যেন বলছে ফিস্ক।

    পরিস্থিতিটা কাউকে উদ্ধার করার জন্য খুব ভালো না এখন। তারা গাড়ি থেকে বেরুনোর সাথে সাথেই ফিস্কের লোকদের নজরে পড়ে যাবে। এই মুহূর্তে নজরে পড়ে গেলে ফলটা তাদের জন্য খুব একটা ভালোও হবে না।

    তো প্ল্যান কি এখন? রেমি জিজ্ঞেস করলো।

    তুমি মিরাকলের কথা বলছো? এমনিতেই জায়গাটায় কভার নেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। আর প্রতিপক্ষে রয়েছে পাঁচজন সশস্ত্র পুরুষ। খুব সম্ভবত মহিলার কাছেও অস্ত্র আছে। এই অবস্থায় এদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কাউকে উদ্ধার করে আনাটা খুবই খুবই কঠিন একটা কাজ।

    আমাদের জন্য কিন্তু ব্রির অপশনটা ভোলাই আছে, বলল রেমি।

    শুনে তার দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো স্যাম। তাকে দিয়ে কী হবে?

    সে আগেও তার কাজিনের কাছে তথ্য পাচার করেছে। তাহলে এখন করলেই বা সমস্যা কি? তার মাধ্যমে আমরা তো ফিস্ককে জানিয়ে দিতে পারি যে তারা ভুল জায়গায় এসেছে। আর পরে তাদেরকে অনুসরণ করে সুযোগ মতো নাইজেলকে উদ্ধার করে আনবো।

    ঝুঁকিটা ভেবে দেখছে স্যাম। এমনিতেই ব্রিকে তার কাজিনের কাছে তাদের ব্যাপারে তথ্য পাচার বন্ধের জন্য লাযলো ও সেলমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এমনভান করতে হয়েছে তারা কেউই স্যাম ও রেমির অবস্থানের ব্যাপারে কিছুই জানে না। ফিস্করা একটা ভালো চক্রই গড়ে তুলেছিলো। ব্রি কথার ছলে ল্যারেইনকে তথ্য জানাতো, ল্যারেইন তা জানাতে জ্যাক বা ইভানকে। সেখান থেকে ফিস্ক। রেমির আইডিয়াটা ভালো। আইডিয়াটা কাজে লাগলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এভেরির লোকেরা অন্য জায়গার সুড়ঙ্গ খোঁজার জন্য ছুটে যেতে পারে।

    আর যদি এটা কাজ না করে এবং এই লোকগুলোও সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখটা পেয়ে যায়, তাহলে নাইজেলকেও তাদের সাথে করে ভিতরে নিয়ে যাবে। একবার ভিতরে ঢুকলে লোকটার আর বেঁচে বাইরের ফেরার খুব একটা সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা স্যামের। এখন তো ব্রি ছাড়া আর কোনো অপশনও নেই আমাদের হাতে।

    ফোন বের করে সেলমাকে কল করে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল রেমি। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোনটা স্যামের দিকে বাড়িয়ে দিলো ও। সেলমা বলছে, লাযলো নাকি অনুবাদটা শেষ করে ফেলেছে।

    লায়লোর অনুবাদের ব্যাপারে পরেও জানা যাবে। এখন তাদের মূল কাজ নাইজেলকে মুক্ত করা। তাই ফোন ধরে ভণিতায় না গিয়ে স্যাম সরাসরি বলল, আমাদের কী লাগবে তা তো রেমিই বলে দিয়েছে। তো, ওটা কি ব্যবস্থা করা যাবে?

    অবশ্যই যাবে, বলল সেলমা। স্নেক আইল্যান্ডের ঘটনার পর থেকে আমরা ব্রি আর তার কাজিনের সবগুলো কলই মনিটরিং করে দেখেছি। ল্যারেইনের জানামতে, আপনাদের অবস্থান সম্পর্কে আমরা কেউই কিছু জানিনা।

    তাহলে তো সব ঠিকঠাকই আছে দেখছি। এখন ব্রিকে বলো ল্যারেইনকে কথায় কথায় আমাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য বাধ্য করতে। সরাসরি তথ্য দিতে গেলে ল্যারেইনের সন্দেহও জাগতে পারে।

    বুঝেছি। আর ল্যারেইন জিজ্ঞেস করলে আমরা তাকে কী ভুল তথ্য জানাবো?

    এমনকিছু বলবে যাতে তারা গুহার প্রবেশমুখ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। তারা গুহার সাধারণ অবস্থানটা জানে, তবে এখনো প্রবেশমুখটা খুঁজে পায়নি। ফিস্কের লোকদেরকে গুহা থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছি আমরা, নাহলে নাইজেলকে কখনোই মুক্ত করা যাবে না।

    রবিনহুডকে সমাধিস্ত করা মঠটার কথা বলতে পারি আমরা।

    আমার মনে হয় কিং জনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিছু একটার কথা বললেই তা বিশ্বাসযোগ্য হবে।

    তাহলে নটিংহ্যাম ক্যাসলের কথা বলা যায়, সেলমা বলল। ক্যাসলের বিবরণে অনেকগুলো সুড়ঙ্গ ও গুহার উল্লেখ আছে। এমনকি ম্যাপের নামগুলোর সাথেও এগুলোর পুরোপুরি মিল আছে।

    তাহলে ক্যাসলের কথাই বলো। তাদেরকে এই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলে নাইজেলকে মুক্ত করার একটা ভালো সুযোগ পেতে পারি আমরা।

    আপনারা ভিতরে খুঁজবেন না?

    খোঁজার মতো কোনো কারণও তো নেই। এমনকি আমরা গুহায় ঢুকতে পারলেও, আমরা ঠিক কোথায় খুঁজবো তাই তো জানি না ভালো করে।

    আপনাকে এতক্ষণ ধরে এটাই বলার চেষ্টা করছিলাম। লায়লোর অনুবাদের কাজ শেষ করেছে। এটা একটা ধাঁধা। ওপরে মৃত্যু, নিচে মৃত্য, সাথে আমার শেষ আহার।

    মানে কি এর?

    লাযলোর ধারণা, ধাঁধার সাথে সাইফার হুইলের কেন্দ্রে থাকা কেল্টিক নটের নকশাটার যোগসূত্র আছে। নকশার ঐ প্যাটার্নটাকে ইন্টারলেসিং বলে। অনেকটা ঝুড়ি বুননের মতো। কেল্টরা প্যাটার্নের আড়ালে জিনিস লুকানোয় বিখ্যাত ছিলো। ওপরের ইন্টারলেসিংয়ের স্তরটা সরিয়ে ফেললেই প্যাটার্নের আড়ালে থাকা জিনিসটা পাওয়া যায়। হয়তো এই প্যাটার্নটা দিয়ে গুপ্তধনের কাছে যাওয়ার সুড়ঙ্গকেই নির্দেশ করছে। ধাঁধার উত্তরটা এখনো পুরোপুরি ভেবে বের করতে পারিনি আমরা; এখনো কাজ করছি ওটা নিয়ে।

    ধাঁধা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। তাই স্যাম বলল, ব্রি কে তার কাজিনকে ফোন করাও। জলদি।

    .

    ৫৩.

    কয়েক মিনিট পরই সেলমা ফোন করে জানালো যে তাদের প্রত্যাশা মতো সংবাদটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তথ্যটা তারা বিশ্বাস করেছে। তো কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন আপনারা।

    সত্যিই দেখা গেলো তা। জ্যাক দেয়ালে থাকা আইভিলতার প্রলেপটা পরীক্ষা করে দেখছিলো। প্রবেশমুখটা খুঁজে পেয়ে ভিতরে মাথা ঢুকাতে যাবে তখনই পিছিয়ে এলো হঠাৎ করে। তারপর পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে কিছুক্ষণ কথা বলে এগিয়ে গেলো ফিস্কের দিকে।

    নাইজেলকে দেখো একবার, রেমি বলল। আমার মনে হয় তারা তাকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে।

    আলেক্সান্দ্রার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নাইজেল। আর আলেক্সান্দ্রা তাকিয়ে আছে পিছনে থাকা ফিস্ক ও জ্যাকের দিকে। ফিস্কের ইশারা পেয়েই আলেক্সান্দ্রার থেকে সরে আইভি লতার দিকে এগিয়ে গেলো নাইজেল, লতিকাগুলো সরিয়ে ভিতরের দিকে ঢুকছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাইজেলকে আইভিলতার আড়ালে গায়েব হয়ে যেতে দেখলো ওরা।

    এরপর ঢুকলো জ্যাক ও ইভান। যদিও গুহাতে ঢোকার ব্যাপারে খুব একটা সায় ছিলো না তাদের। কিন্তু ফিস্ক পিস্তল তাক করে ধরায় না ঢুকেও উপায় নেই তাদের হাতে। তাদেরকে অনুসরণ করলো আলেক্সান্দ্রা। এই মহিলাও গুহায় ঢোকার ব্যাপারে এভোটা ইচ্ছুক ছিলো না। এরপর এগিয়ে গেলো ফিস্ক। তবে আইভিলতা সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে গিয়েও কী মনে করে। যেন পিছিয়ে এলো আবার। খুব সম্ভবত নটিংহ্যাম ক্যাসলের ব্যাপারে আসা ফোন কলটা নিয়ে ভাবছে। ঘুরে নতুন লোকদুটোর দিকে কী যেন ছুঁড়ে দিলো এরপর। খুব সম্ভবত গাড়ির চাবি, যেহেতু দুইজনই মার্সিডিজটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এখন। এরপর অন্যদের অনুসরণ করে ফিস্কও ঢুকে গেলো গুহার ভিতরে।

    মনে হয় আমাদের পরিকল্পনাটা কাজে লেগেছে, মার্সিডিজটাকে চলে যেতে দেখে বলল স্যাম।

    ঠিক যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে লাগেনি।

    অন্তত দুইজনকে তো সরানো গেছে। আপাতত এটাই শুরু। সেলমাকে মেসেজ করে জানাও যে নাইজেলকে মুক্ত করার জন্য গুহায় ঢুকছি আমরা।

    তারমানে সাহায্য কোথায় পাঠানো লাগবে তা সেলমা জানে?

    এটা ব্যাকআপ প্ল্যান।

    গাড়ি থেকে নামার আগে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো ওরা। আইভিলতার আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে আসছে না দেখে নিশ্চিত হয়েই গাড়ি থেকে নেমে পার্কের দিকে পা বাড়ালো।

    আইভিলতা পেরিয়ে প্রথমে ভিতরে ঢুকলো স্যাম। তাকে অনুসরণ করে প্যাসেজওয়েতে পা রাখলো রেমি। ভিতরে ঢুকেই পিস্তল হাতে বের এনেছে। ওরা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্ধকারটা চোখে সয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। ওদিকে তাদের পিছনে তুমুলবর্ষণে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে এখন। বৃষ্টির শব্দের কারণে আপাতত তাদের পায়ের শব্দ কেউ শুনতে পাবে না ভেবে সামনের দিকে পা বাড়লো স্যাম। তার পিছনে পিছনে আসছে রেমি। সুড়ঙ্গ পথটা এতো চাপা যে একজনের পিছনে পিছনে করেই যেতে হবে আরেকজনকে। তাছাড়া সুড়ঙ্গের মেঝেতে বালি থাকায় হেঁটে এগিয়ে যাওয়াটাও খুব সহজ হচ্ছে না।

    হেঁটে যেতে যেতে চাপা সুড়ঙ্গটা প্রশস্ত একটা চেম্বারে পরিণত হলো একসময়। পার্সির সাথে আগেও এমনই একটা চেম্বারে গিয়েছিল ওরা। চেম্বারটায় পৌঁছেই হুট করে থেমে গেলো স্যাম। তারপর আবার পিছিয়ে ফিরে এলো। সরু সুড়ঙ্গের ওপাশ থেকে কিছু পায়ের শব্দ ভেসে আসছে, এর কিছুক্ষণ পরই কেউ বলে উঠলো, এই পথে।

    সাথে সাথেই থমকে গেলো রেমিও। পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুড়ঙ্গেই লুকিয়ে রইলো ওরা। শব্দটা মিলিয়ে যেতেই আবার বেরিয়ে এলো চেম্বারে।

    হাতে থাকা ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালিয়ে বেলেপাথরের দেয়ালের ওপর আলো ফেললো স্যাম। মেইন চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়া রুক্ষ পাথরের বেশ কয়েকটা সুড়ঙ্গ দেখতে পাচ্ছে ও। হঠাৎ সুড়ঙ্গের ওপরে থাকা কিছু একটা দেখতে পেয়ে সেদিকে নির্দেশ করলো রেমি। আলো ফেলতেই বেলেপাথরের ওপরে খোদাই করা সেল্টিক নটের চিহ্নটা দেখতে পেলো ওরা। পার্সি ওদেরকে এমন সেল্টিক নটের কথাই বলেছিলো। এক এক করে গুহা থেকে বেরিয়ে যাওয়া অন্য সুড়ঙ্গগুলোর দিকেও তাকালো রেমি। পাঁচটি সুড়ঙ্গ বেরিয়ে গেছে এখান থেকে। এরমধ্যে চারটার ওপরেই সেল্টিক নট খোদাই করা আছে। তবে পঞ্চম সুড়ঙ্গের ওপরে কোন চিহ্ন নেই, এই সুড়ঙ্গটাই ওপরের পার্কের দিকে চলে গেছে।

    স্যামও তাকালো চিহ্নগুলোর দিকে। এই সুড়ঙ্গগুলোই নিশ্চয় লায়লোর বলা চার চেম্বারের দিকে চলে গেছে। এক এক করে প্রতিটি সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখেই আলো ফেললো স্যাম। একমাত্র তৃতীয় সুড়ঙ্গমুখের মেঝেতেই পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। অন্যগুলোর সামনে কোনো ছাপ নেই।

    তৃতীয় সুড়ঙ্গমুখটার দিকেই পা বাড়ালো ওরা। এই সুড়ঙ্গটা দুইজন মানুষের পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার মতো যথেষ্ট চওড়া। তবে সামনে আগানোর সাথে সাথে সুড়ঙ্গটাও বাঁকতে শুরু করেছে। এমনকি এই সুড়ঙ্গটার পার্শ দেয়াল থেকেও আরো বেশ কয়েকটা প্যাসেজওয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তারা সুড়ঙ্গের মূল প্যাসেজওয়েটা ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে।

    যত এগুচ্ছে ততোই সরু হয়ে ঢালের মতো নিচে নামতে শুরু করেছে মূল প্যাসেজওয়েটা। তারপর হুট করেই ডানে মোড় নিয়ে চলে গেছে বিশ গজ সামনের এক পানির গর্তের দিকে। গর্তে পা পড়তেই পানিতে শব্দের সৃষ্টি হলো। বদ্ধ জায়গায় খুবই জোরালো শোনালো শব্দটাকে। সাথে সাথেই ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়লো স্যাম।

    কিসের শব্দ ওটা? বলে উঠলো জ্যাক। মনে হচ্ছে মেইন চেম্বার থেকে কেউ এগিয়ে আসছে এদিকে।

    ভিক্টর আর রোজেন আসছে, ফিস্ক বলল। আশা করছি ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে এসেছে ওরা। তোমরা গাধারা তো সেল ফোন ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসোনি।

    ভিক্টর আর রোজেন ফিরে আসছে মানে তাদের প্ল্যানটা কাজে লাগেনি!. আর এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে দিলো ইভানের পরের কথাটা। ল্যারেইনের ফোন কলটার ব্যাপারে কী করবেন? ঐ ক্যাসলটাতে কেউ যাচ্ছে না কেন?

    কারণ সাইফারে চার গুহার কথা বলা আছে।

    মানে চার চেম্বারের কথা বলছো তুমি? তাকে শুধরে দিয়ে বলল আলেক্সান্দ্রা। ওটা তো যে কোনো জায়গায়ই হতে পারে।

    আপনি গুপধনটা চান তো? বিরক্ত শোনালো ফিস্ককে। তারপর ইভান ও জ্যাককে নির্দেশ করে বলল, তাড়াতাড়ি ঐ টুর গাইডকে খুঁজে বের করো। সে বলেছিলো গুপ্তধন এখানেই পাবো। যদি না পাই, তাহলে হাড়গোড় ভেঙে গুঁড়িয়ে মারবো ওটাকে।

    তারপর আবারো সুড়ঙ্গের গভীরে মিলিয়ে গেলো তাদের পদশব্দ।

    কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্যাম আর রেমি আবারো অনুসরণ করতে যাচ্ছিলো তাদেরকে, ঠিক তখনই পিছনের মেইন চেম্বার থেকে ভারি বুটের এগিয়ে আসার শব্দ ভেসে আসতে শুনলো ওরা।

    ভিক্টর আর রোজেন ফিরে এসেছে।

    ফাঁদে পড়ে গেছে স্যাম ও রেমি।

    .

    ৫৪.

    রেমিকে টান দিয়ে নিয়ে আবারো ওপরের চেম্বারে ফিরে যাওয়ার সুড়ঙ্গ ধরে পা বাড়ালো স্যাম। যাওয়ার সময় অন্ধকার সুড়ঙ্গের দেয়ালে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে সুড়ঙ্গের পার্শ্ব দেয়ালে থাকা প্যাসেজওয়েটা খুঁজে পেয়েই ঢুকে পড়লো ওটাতে। ভিতরে ঢুকে প্যাসেজওয়ের মুখে দাঁড়ালো স্যাম। আর রেমি দাঁড়ালো তার পিছনে।

    কিছুক্ষণ পরই পাথুরে দেয়াল ও মেঝের ওপর ফ্ল্যাশলাইটের উজ্জ্বল আলো উঠলো। আলো জ্বলে উঠতেই বালিতে পড়ে থাকা তাদের পায়ের ছাপগুলো চোখে পড়লো স্যামের। ছাপটা দেখলে যে কেউই তাদের অবস্থান ধরে ফেলতে পারবে।

    আলো নিভে যেতেই রেমিকে নিয়ে আবারো সুড়ঙ্গমুখের দিকে দৌড় লাগালো স্যাম। বাইরে মাত্র একজনই দাঁড়িয়ে আছে। তাই যাওয়ার সময় বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল ঠেকিয়ে এগুচ্ছে স্যাম।

    সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে ঠিক তখনই একটা মৃদু শব্দ শুনে থেমে গেল স্যাম। ভিক্টর বা রোজেনদের যে ই হোক, সে এখন সুড়ঙ্গ মুখের। ঠিক বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। বাতাস নড়ার শব্দ শুনেই স্যাম বুঝতে পারলো, লোকটা এখন তার দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরই লোকটা তার হাতের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ডেকে উঠলো, ভিক-

    দৌড়ে গিয়ে লোকটার কলার ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে গুহার দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো স্যাম! মাথায় আঘাত পেতেই রোজেনের হাত থেকে ফ্ল্যাশলাইটটা ছিটকে দূরে পড়ে গেছে। আঘাতের প্রভাবটা কাটিয়ে উঠার আগেই আবারো হাতের পিস্তলটা দিয়ে রোজেনের মুখে ঘুষি মারলো স্যাম। সাথে সাথেই টলে নিচে পড়ে গেলো রোজেন। তবে মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে বাম হাত দিয়ে স্যামের শার্ট খাবলে ধরলো রোজেন। ডান হাতের বন্দুকটা স্যামের দিকে তাক করে ট্রিগার চাপা চেষ্টা করছে। স্যাম তার হাতের পিস্তলটা ফেলে দিয়ে দুই হাত দিয়ে খাবলে ধরলো রোজেনের বন্দুক ধরা হাতটা। রোজেনকে ট্রিগার চাপা থেকে বাধা দিতে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে হাতটা মোচড়াতে শুরু করেছে স্যাম। কিছুক্ষণ এভাবেই লড়াইয়ের পর হাড় ভাঙ্গার শব্দ দিয়ে শেষ হলো লড়াইটা। হাত ভেঙ্গে যেতেই পিস্তলটা পড়ে গেছে রোজেনের হাত থেকে। সাথে সাথেই পিস্তলটা খাবলে নিয়ে আবারো রোজেনের মাথায় আঘাত করলো স্যাম। এরপর হাত দিয়ে রোজেনের ঘাড় ধরে চোকহোল্ডে আটকে ফেললো তাকে। আর বাধা দিতে পারলো না রোজেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর ঝুলে পড়লো ওর।

    একটা শেষ, আর পাঁচটা বাকি…

    এগিয়ে এসে পিস্তুলদুটো মেঝে থেকে তুলে নিলো রেমি। তারপর স্যামকে পিস্তলটা ফিরিয়ে দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বলল, সে যদি ভিক্টরকে ডেকে থাকে, তাহলে ভিক্টর কোথায়?

    ভালো প্রশ্ন। রোজেনের ডাক শুনেও ভিক্টরের এখানে না আসার একটা কারণই থাকতে পারে বলে ভাবছে স্যাম। কেউ একজনকে তো মূল গুহাটা পাহারা দিতে হবে। ভিক্টর পাহারা দিচ্ছে ওটা।

    মূল গুহার দিকে নির্দেশ করে ইশারা করলো স্যাম রেমিও সায় দিলো তাতে। সাথে সাথেই ওদিকে পা বাড়ালো ওরা। গুহা থেকে বেরুনোর আগে ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে নিলো স্যাম। সুড়ঙ্গের ঠিক বাইরে থেকে একটা আলোর প্রতিফলন আসছে। রেমিকে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো স্যাম।

    বাইরে ভিক্টর শুধু গুহাই পাহারা দিচ্ছে না, নাইজেলকেও পাহারা দিচ্ছে। স্যাম বাইরে বেরিয়ে আসতেই এক হাতে ফ্ল্যাশলাইটটা তার দিকে তাক করে ধরলো ভিক্টর। আর অন্য হাতে থাকা পিস্তলটা ঠেকিয়ে রেখেছে নাইজেলের মাথায়।

    আমার ভাইকে ফাঁকি দিয়ে আসলে কিভাবে?

    ওহ, সে তোমার ভাই ছিলো? স্যামও তার বন্দুকটা ভিক্টরের দিকে তাক করে ধরে গুহার পরিধি ধরে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো সামনের দিকে। ভিক্টরও তার দিকে ফ্ল্যাশলাইটের আলো তাক করে রেখে ঘুরছে।

    রোজেনের কী করেছো?

    কোনো জবাব দিলো না স্যাম। সে শুধু তার মতো করে গুহার ঘেড় ধরে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে। ফ্ল্যাশলাইটটা রেমির অবস্থান থেকে সরার আগ পর্যন্ত থামার কোনো ইচ্ছা নেই তার।

    কোথায় সে?

    কথা বলতে বলতে পিস্তলটাও নাইজেলের দিকে সরিয়ে আস্তে আস্তে স্যামের দিকে তাক করতে শুরু করেছে ভিক্টর। ঠিক তখনই সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে রেমি তার চাকুটা ছুঁড়ে দিলে ভিক্টর দিকে।

    ভিক্টরের পিঠে এসে গেঁথেছে চাকুটা। চাকুটা লাগতে ব্যথায় ঝাঁকিয়ে উঠলো ভিক্টর। ফ্ল্যাশলাইট আর পিস্তলটাও পড়ে গেছে তার হাত থেকে। তারপর ধুপ করেই হুমড়ি খেয়ে নাইজেলকে সাথে নিয়ে আছড়ে পড়লো মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই হাঁচড়েপাঁচড়ে ভিক্টরের কবল থেকে সরে এলো নাইজেল। তারপর তাকিয়ে রইলো ভিক্টরের পড়ে থাকা শরীরটার দিকে।

    চমৎকার, মিসেস ফার্গো। আমার সাহায্য লাগতে পারে বলে ভেবেছিলেন?

    হা, মনে হলো লাগতে পারে।

    পুরোটাই তো আমার নিয়ন্ত্রণে ছিলো, বলল স্যাম। ওদিকে নাইজেলও সরে গিয়ে রেমির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

    লোকটা কি মরে গেছে? জিজ্ঞেস করলো নাইজেল। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে লোকটার।

    হয় মরে গেছে, নয়তো শরীর অবশ হয়ে গেছে, বলে ভিক্টরের দেহটার। দিকে এগিয়ে গেলো স্যাম। রেমির ছুড়িটা পুরোপুরি গেঁথে গেছে ভিক্টরের মেরুদণ্ডে। এই লোকের আর এখন কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ওদিকে লাশ দেখে নাইজেলের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। লোকটার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অবস্থা প্রায়। আপনাকে কিভাবে ধরলো ও? লোকটার মন থেকে লাশের ভাবনাটা সরানোর জন্য বলল স্যাম।

    আমি ঐ পাশ্বসুড়ঙ্গগুলোর একটাতে লুকিয়েছিলাম। মনে হয় পায়ের ছাপ দেখে ফেলেছিলো ওরা।

    আরেকবার রেমির চাকুর দিকে তাকালো স্যাম। মনে হয় না ঐ চাকুটা তুমি আবার ফেরত পেতে চাইবে।

    না। ওটা ফেরত পাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে তার পিস্তলটা নিব আমি, বলে মেঝে থেকে ভিক্টরের পিস্তলটা তুলে নিয়ে কোমড়ে গুঁজে রাখলো রেমি।

    এবার এখান থেকে বেরিয়ে যাবার ব্যাপারে সায় আছে তোমার?

    পুরোপুরি সায় আছে, ফার্গো।

    তবে ভাগ্য তাদের পক্ষে নেই। তারা বেরুনোর জন্য পা বাড়াতে যাবে, ঠিক তখনই গুহাকক্ষে এসে হাজির হলো ফিস্ক ও তার সঙ্গীসাথীরা।

    .

    ৫৫.

    গুলি করতে শুরু করলো স্যাম। আচমকা গুলি ছোঁড়ার ফলে আবারো সুড়ঙ্গে ফিরে যেতে বাধ্য হলো ফিস্ক, ইভান ও জ্যাক। নতুন প্ল্যান, বলে রেমির দিকে তাকিয়ে প্রথম সুড়ঙ্গটার দিকে ইশারা করলো স্যাম।

    মাথা ঝাঁকিয়ে সাড়া দিলো রেমি। তারপর ফ্ল্যাশলাইট বন্ধ করে নাইজেলকে নিয়ে সরে গেলো জায়গাটা থেকে।

    এখন গুহায় একমাত্র তৃতীয় সুড়ঙ্গমুখ থেকেই একমাত্র আলো আসছে। ফিস্ক ও তার সঙ্গীসাথিরা ওখানেই লুকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাথে সাথেই লাইটটা বন্ধ করে দিলো ফিস্ক। আবারো পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেছে গুহাটা।

    তাদের দিকে গুলি তাক করে ধরে আস্তে আস্তে চতুর্থ প্যাসেজটার দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে স্যাম। কয়েক পা এগিয়েছে মাত্র ঠিক তখনই সুড়ঙ্গ থেকে কাউকে হোঁচট খেয়ে বেরিয়ে আসতে শুনতে পেলো। শব্দটার সাথে সেলফোনের হালকা মৃদু আলোও জ্বলে উঠেছে। সাথে সাথেই আলোটার দিকে বন্দুক তাক করে ধরলো স্যাম। আলেক্সান্দ্রা দাঁড়িয়েছে ওখানে। মহিলার হাতে কোনো অস্ত্র নেই। স্যামের বুঝতে কোনো অসুবিধা হলো না যে ফিস্ক মহিলাকে স্যামের জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে।

    ঠিক তখনই সুড়ঙ্গমুখ থেকে ফিস্ক বলে উঠলো, একদম নড়বে না তোমরা! যদি এক পাও নড়ো, তাহলে তোমাদের দুইজনকেই মেরে ফেলবো আমি।

    সাথে সাথেই জমে গেলো আলেক্সান্দ্রা। স্যামের হাতের পিস্তলটার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত ওপরের দিকে ধরে রেখেছে মহিলা।

    কী চাও তুমি, ফিস্ক? জোরালো স্বরে বলল স্যাম।

    আমার সাইফার হুইলটা। তুমি ঐ সরাইখানায় ছিলে… ভিক্টর! লাশটা চোখে পড়তেই বলে উঠলো ফিস্ক। কী হয়েছে ওর?

    চাকুর ভুল প্রান্তের দিকে দৌড়ে গিয়েছিলো, জবাব দিলো স্যাম।

    তোমার পিস্তল মাটিতে ফেলো। এখনই!

    ধীরে ধীরে পিস্তল মাটিতে নামিয়ে রাখলো স্যাম।

    এখন লাথি দিয়ে তোমার থেকে দূরে ঠেলে দাও।

    তাই করলো স্যাম। আলতো একটা লাথি দিয়ে সরিয়ে দিলো পিস্তলটা।

    এখন ভিক্টর আর রোজেনের পিস্তলগুলোও ফেলে দাও।

    সাথে সাথেই কোমড়ের গুঁজে থাকা বন্দুকটা বের করে ছুঁড়ে দিলো স্যাম।

    অন্যটাও ফেলো।

    আমার কাছে এই একটাই ছিলো, অন্যটা আছে রেমির কাছে, তবে এটার কথা সে উল্লেখ করতে চাচ্ছে না।

    তার মানে তোমার স্ত্রীর কাছে আছে ওটা। সে কোথায়?

    ভালো প্রশ্ন! কোথায় সে?

    এখনই তাকে বেরিয়ে আসতে বলো, নাহলে তোমাকে মরতে হবে।

    কিছু না বলে চুপ করে রইলো স্যাম।

    এখনই বেরিয়ে আসতে বলল, নাহলে তোমাকে মেরে ফেলবো আমি।

    আমি এখানে, বলে প্রথম সুড়ঙ্গের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো রেমি। ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে হাত ওপরের দিকে তুলে গুহায় দাঁড়ানো স্যামের দিকে এগিয়ে আসছে ও। তবে নাইজেল তার সাথে নেই। যাক, অন্তত নাইজেল তো নিরাপদ অবস্থানে আছে।

    তোমার হাতের অস্ত্রটা ফেলে দাও।

    সাথে সাথেই সিগ সয়্যার পিস্তলটা নিচে নামিয়ে আনলো রেমি।

    আমি ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলেছি।

    তাই করলো রেমি। স্যামের কিছুটা সামনে ছুঁড়ে ফেললো পিস্তলটা।

    তখনই ফিস্ক তার লাইটটা চালু করে বেরিয়ে এলো সুড়ঙ্গ থেকে। হাতের পিস্তলটা স্যাম ও রেমির দিকে তাক করে ধরে রেখেছে লোকটা। জ্যাক আর ইভান রয়েছে তার দুই পাশে। তোমার ফ্ল্যাশলাইট, রেমির দিকে তাকিয়ে বলল ফিস্ক, বন্ধ করে ফেলল ওটা।

    আস্তে আস্তে আলোটা নিচে নামিয়ে স্যামের পায়ের কাছে এক সেকেন্ডের মতো তাক করে ধরে রেখে বন্ধ করে দিলো রেমি। পায়ের কাছে পড়ে থাকা সিগ সয়্যারটা দেখার জন্য এই এক সেকেন্ডই যথেষ্ট ছিলো স্যামের জন্য। তবে ফিস্ক তা লক্ষ্য করেনি।

    এখন তোমার সেল ফোনের লাইটটা বন্ধ করে দাও, আলেক্সান্দ্রার দিকে পিস্তল তাক করে ধরে বলল ফিস্ক। সাথে সাথেই লাইট বন্ধ করে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো আলেক্সান্দ্রা।

    এখন একমাত্র আলো শুধু স্যাম ও রেমির দিকে করে ধরে রাখা ফিস্কের ফ্ল্যাশলাইটটা থেকেই আসছে। হাত ওপরে তুলে রাখো তোমরা, বলল ও।

    ঠিক তখনই হঠাৎ করে ফিস্কের দিকে খেঁকিয়ে উঠলো আলেক্সান্দ্রা। তোমার কি সাইফার হুইলের দিকে কোনো মনোযোগই নেই? ফার্গোরা তো কখনোই তোমার থেকে ওটা নেয়নি।

    শুনেই তার দিকে আলো ফেলে ধরলো ফিস্ক। কী বলতে চাচ্ছো তুমি?

    আলেক্সান্দ্রা তার পকেট থেকে হুইলটা বের করে বলল, টুর গাইড বলেছে এটাই গুপ্তধনের ম্যাপ। আসো, নিয়ে যাও এটা। বলে ফ্রিসবির মতো করে বামের সবচেয়ে দূরের সুড়ঙ্গটার দিকে জিনিসটা ছুঁড়ে মারলো আলেক্সান্দ্রা।

    সাথে সাথেই হুইলটার দিকে মনোযোগ ঘুরে গেলো ফিরে। আলেক্সান্দ্রার ছেঁড়া জায়গাটার দিকে আলো ধরে ইভানকে ইশারা করে বলল, যাও, নিয়ে আসো ওটা।

    ফিস্কের নির্দেশ পেয়েই সুড়ঙ্গের দিকে দৌড় লাগালো ইভান।

    সাথে সাথেই সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুটো পিস্তল খাবলে নিলো স্যাম। রেমির ফ্ল্যাশলাইটটা থেকে এখনো মৃদু আলো আসছে। ঐ আলোতেই ইভানের দিকে তাক করে দুবার গুলি করলো স্যাম।

    ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করে ফেললো ফিস্ক। আবারো অন্ধকার হয়ে গেছে গুহাটা। অন্ধকারেই একবার গুলি ছুড়লো ফিস্ক। পিস্তলের মাজল ফ্ল্যাশে তার মুখ জ্বলে উঠতে দেখা গেলো শুধু।

    আলোর দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়েই গড়িয়ে ভিক্টরের লাশের দিকে সরে গেলো স্যাম। লাশটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ও।

    ঠিক তখনই ডান দিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লো কেউ। গুলির শব্দে গুমগুম করছে গুহাটা। ডান দিকে তাকাতেই মাজল ফ্ল্যাশের জ্যাকের চেহারা দেখতে পেলো স্যাম। গুলি করতে যাবে ঠিক তখনই ওপরের সুড়ঙ্গ থেকে রেমি গুলি ছুড়লো জ্যাকের দিকে। নিশানা ব্যর্থ হয়নি রেমির। জ্যাক এখন লাশে পরিণত হয়ে গেছে।

    ফিরতি গুলি ছুড়লো ফিস্ক।

    ভিক্টরের লাশের ওপর দিয়ে সেদিকে গুলি ছুড়লো স্যাম! রেমির পিস্তলটা খালি হয়ে গেছে এখন। ওটা ফেলে দিয়ে নিজের স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনটা বের করে আনলো এবার।

    সামনের সুড়ঙ্গ থেকেই ফিস্কের শব্দ ভেসে আসতে শুনতে পাচ্ছে ও। তবে কোনো আলো আসছে না। আলোর নিশ্চয়তা ছাড়া আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে বুলেট নষ্ট করার কোনো ইচ্ছা নেই স্যামের। তার মাথার ভাবনাটা পড়তেই পেরেই হয়তো রেমি তার হাতের ফ্ল্যাশলাইটটা ঠেলে দিলো স্যামের দিকে। ভিক্টরের লাশের থেকে হালকা একটু সরে হাত বাড়িয়ে ফ্ল্যাশলাইটটা নিজের দিকে নিয়ে নিলো স্যাম। লাশটা হয়তো খুব ভালো কোনো ঢাল না, কিন্তু এই লাশ না থাকলে অনেক আগেই বুলেটের আঘাতে মরে যেতে হতো তাকে।

    ফ্ল্যাশলাইটটা হাতে নিয়ে লাশের শরীরের নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো স্যাম। আঙুলটা ধরে রেখেছে বাটনের ওপর। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে। সাথে সাথে ভিক্টরের লাশের ওপর দিয়ে পিস্তলটা তাক ধরে রেখেছে ফিল্কের শব্দ ভেসে আসা সুড়ঙ্গটার দিকে।

    কিছুক্ষণ অপেক্ষার লাইট জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিলো স্যাম। কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু তাদের রসদের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। তাই বাটনে চাপ দিয়ে আলোটা জ্বালিয়েই সাথে সাথে নিভিয়ে ফেললো স্যাম।

    সাথে সাথেই ইভান গুলি করলো তাকে।

    মাজল ফ্ল্যাশের দিকে তাক ফিরতি গুলি ছুড়লো স্যাম। দুবার। তবে এবার আর কোনো ফিরতি গুলি ছুটে এলো না তার দিকে। একটা ধুপ শব্দ ভেসে এলো শুধু। যদিও স্যাম ফিস্ককে খতম করতে চেয়েছিলো, যাই হোক ইভানও কম বিপজ্জনক না। সবশেষ, এখন শুধু একজন বাকি।

    কিন্তু ফিস্ক কোথায়?

    কিভাবে বের করে আনা যাবে তাকে? ভাবতেই রেমির শূন্য হয়ে যাওয়া সিগ সয়্যারটার কথা মনে পড়ে গেলো স্যামের। হাত বাড়িয়ে পিস্তলটা তুলে নিয়ে রেমিকে ডেকে উচ্চস্বরে বলল, রেমি! আমার বুলেট শেষ হয়ে গেছে। সাহায্য করো আমাকে। তারপর শব্দ সৃষ্টির জন্য পিস্তলটা ছুঁড়ে দিলো মেঝের শক্ত অংশের দিকে।

    একটা লম্বা বিরতি নিয়ে রেমি জবাব দিলো, আমারও একই অবস্থা। বাইরে থেকে সাহায্য আনতে যাচ্ছি আমি।

    সাথে সাথেই সুড়ঙ্গ ধরে কাউকে দৌড়ে যেতে শোনা গেলো। শব্দটা শুনেই নিচের সুড়ঙ্গের দিকে পিস্তলটা তাক করে ধরলো স্যাম। ফিস্কের বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছে।

    বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষার পর যখন স্যামের মনে হলো ফিস্ক হয়তো আর বেরিয়ে আসবে না, ঠিক তখনই গুহার ডান দিকে মৃদু একটা আলো জ্বলে উঠতে দেখা গেলো। আলেক্সান্দ্রা তার সেল ফোনটা জ্বালিয়ে একটু একটু করে সুড়ঙ্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

    বেরিয়ে আয়, হারামজাদা, চেঁচিয়ে বলল মহিলা। এখন একমাত্র আমিই আছি। সাহস থাকলে আমার সাথে লড়াই কর এখন।

    বলে ধীরে ধীরে ফিস্কের গায়েব হয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আলেক্সান্দ্রা। স্যাম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুড়ঙ্গমুখের দিকে। অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চোখ সরিয়ে আনতে যাবে, ঠিক তখনই তাকে চমকে দিয়ে হুট করেই সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এলো ফিস্ক। তারপর পিস্তলটা আলেক্সান্দ্রার দিকে তাক করে ধরে চেঁচিয়ে বলল, তুমি ভেবেছিলে তুমি আমার সাইফার হুইল চুরি করে পালিয়ে যেতে পারবে?

    সাথে সাথেই ভিক্টরের লাশের আড়াল থেকে বেরিয়ে গুলি করলো স্যাম।

    গুলি খেয়েই ঝট করে পিছিয়ে গেলো ফিস্ক। চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্যামের দিকে। তু…তুমি? তোমার না বুলেট শেষ? বলতে বলতে পাশের ঝুঁকে পড়লো ফিস্ক। পিস্তলটাও তার হাত থেকে খসে পড়ে গেছে।

    মিথ্যা বলেছিলাম আমি।

    .

    ৫৬.

    আশা করছি ঐ গুহাগুলোতে পাঠিয়ে আপনাদেরকে খুব একটা অসুবিধায় ফেলে দেইনি, স্যাম ও রেমি ফোন করার পর জিজ্ঞেস করলো লাযলো। আমরা হয়তো আপনাদের অহেতুক পরিশ্রম করিয়েছি।

    কোনো সমস্যাই হয়নি, গুহায় পায়চারি করতে থাকা পুলিশদের দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। পুলিশদের বেশির ভাগই এসেছে আগ্নেয়াস্ত্র দল থেকে। ব্রিটেনে একমাত্র এই অফিসারদেরই পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করার অনুমতি আছে। কেন?

    আমাদের আসলে হালকা ভুল হয়েছিলো। ম্যাপে নিশ্চিতভাবেই চতুর্থ চেম্বারের কথা লেখা আছে, গুহার না। সত্যি বলতে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে নটিংহ্যাম পার্কে গুপ্তধন থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমি জানি না নাইজেল কেন ওখানে পাঠিয়েছিলো আপনাদের। কোনোভাবেই মিলছে না এটা।

    কথাটা শুনেই একে-অন্যের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। তারপর কল। কেটে দিয়ে নাইজেলের দিকে ফিরে তাকিয়ে রেমি জিজ্ঞেস করলো, আপনি আমাদের এখানে আনলেন কেন?

    প্রশ্নটা শুনেই আলেক্সান্দ্রার দিকে তাকালো নাইজেল। আলেক্সান্দ্রা এখন ইনভেস্টিগেটরদের একজনের কাছে তার স্টেটমেন্ট দিচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যই এই কাজটা করতে হয়েছে আমাকে। ইউনিভার্সিটির ক্লাসের সময় কয়েক বছর আগে আমি চার গুহায় এসেছিলাম একবার। বলে শ্রাগ করে দুর্বলভাবে হাসলো নাইজেল। ভেবেছিলাম আপনাদের এখানে তাদেরকে বিশ্বাস করাতে পারবো যে গুপ্তধনটা এখানেই আছে। এছাড়া তাদের হাত থেকে আমার বাঁচার আর কোনো উপায় ছিলো না।

    উপায়টা কাজে লেগেছে দেখছি, বলল স্যাম। সত্যিই কাজে লেগেছে উপায়টা। ফিস্ক এখন কাস্টডিতে আছে, ইভান আর জ্যাক মৃত। তাছাড়া আলেক্সান্দ্রারও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কপালটা শুধু হালকা কেটে গেছে মাত্র।

    তাদের দিকে তাকিয়ে ক্লান্তভাবে হাসলো রেমি। যাই হোক, ভালো একটা মিশন ছিলো। কিং জন ও তাঁর গুপ্তধনের রহস্যটা প্রায় সমাধানই করে ফেলেছিলাম।

    হ্যাঁ, মিশনটা ভালো ছিলো। তবে আমাদের শিডিউল কিন্তু এখন আবার ফাঁকা হয়ে গেছে। তো, প্রতিশ্রুত ঐ ছুটি কাটানোর জন্য কোথায় যেতে চাও তুমি?

    আমি তো ভেবেছিলাম তুমি সব কিছুই প্ল্যান করে রেখেছো?

    হ্যাঁ, কিছুটা করে রেখেছিলাম। তো, কোথা থেকে যাত্রা করেছিলাম আমরা?

    কারমেল থেকে।

    ঠিক তখনই সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে ইনভেস্টিগেটরদের একজনকে ভিতরের দিকে উঁকি দিতে দেখলো ওরা। সহজে আসা-যাওয়া করার জন্য সুড়ঙ্গমুখের আইভিলতাগুলো একটা দড়ি বেঁধে রাখা হয়েছে। ইনভেস্টিগেটর ভিতরে ঢুকে অন্য দুই অফিসারের সাথে কী নিয়ে যেন কথা বলছে।

    স্যামের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে অফিসারদের সাথে ইনভেস্টিগেটরকে আলাপ করতে দেখছে রেমি। যাই হোক, ভালোই গুলাগুলি করেছো তুমি।

    তুমিও।

    তখনই অফিসারদের একজন নোটবুক বের করতে করতে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল, আপনাদের পিস্তলগুলোর ব্যাপারে একটু বলবেন?

    ভিজিটর পারমিশন নেওয়া আছে ওগুলোর, বলল স্যাম। গ্রেট ব্রিটেনে হ্যান্ডগান নিয়ে চলাফেরা করা নিষিদ্ধ। কারো সাথে হ্যান্ডগান দেখলে সাথে সাথেই কর্তৃপক্ষ জব্দ করে ফেলে ওগুলোকে। কিন্তু স্যাম তার স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন পিস্তলটাকে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই মিথ্যাই বলল, অনুমতিপত্রটা লন্ডনে আছে।

    ধন্যবাদ, স্যার। আমরা খতিয়ে দেখবো ওটা, বলে আবারো ইনভেস্টিগেটর লোকটার কাছে ফিরে গেলো অফিসার।

    লোকটা চলে যেতেই স্যাম রেমিকে ফিসফিস করে বলল, এখান থেকে বেরুনোর পর রুবকে একবার কল করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তো আমাকে। লন্ডনে তাদের পিস্তলের কোনো অনুমতিপত্রই নেই। এখন সেখানে এই অনুমতিপত্র হাজির করতে হলে একমাত্র জাদুমন্ত্রের দ্বারাই করতে হবে। আর সেই জাদুমন্ত্র কেউ করতে পারলে সেটা একমাত্র রুব হেওয়ার্ডই করতে পারবে।

    ঠিক তখনই স্টেটমেন্ট দেওয়া শেষ করে স্যামের পাশে এসে বসলো আলেক্সান্দ্রা।

    মহিলা তার পাশে বসতেই স্যাম কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি তো ফিস্কের দলে ছিলেন। হুট করে তার বিরুদ্ধে গেলেন কেন?

    প্রশ্নটা শুনেই বিদ্রুপের হাসি হাসলো আলেক্সান্দ্রা। তারপর তার কপালে লাগানো ছোটো ব্যান্ডেজটা দেখিয়ে বলল, আমি কখনোই কাউকে আহত করতে চাইনি। কখনোই না। আমি শুধু গুপ্তধনগুলো খুঁজে বের করে চার্লসকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। আর এরপর… বলে রেমির দিকে তাকালো মহিলা। আমি জানতাম যে ফিস্ক একবার তার জিনিসটা পেয়ে গেলে অন্যদের মতো আমাকেও মেরে ফেলে যাবে। বলতে বলতে গলার স্বর ভারি হয়ে উঠছে। মহিলার। আবারো কপালে লাগানো ব্যান্ডেজটার ওপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল, আপনাদের সাথেও একই কাজ করতো ও। সে জন্যেই আমার মনে হলো রুখে দাঁড়ানো উচিৎ। আমি শুধু আমার দুটো সন্তানকে দেখাতে চাইছিলাম যে আমি অবশেষে সঠিক কিছু করেছি। বলে ক্রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো আলেক্সান্দ্রা। যাই হোক, এখন আর এসবের কোনো মূল্য নেই। চার্লস হয়তো তার গুপ্তধন খুঁজে পায়নি, কিন্তু সে ঠিকই আমাদেরকে মারতে চাওয়ার চেষ্টা করার পরও পার পেয়ে যাবে। সবসময়ই তো পার পেয়ে যায়।

    খুব সম্ভবত এটার ব্যাপারে এবার কিছু একটা করতে পারবো আমরা, স্যাম বলল।

    কিভাবে?

    চার্লস এভেরির ব্যাপারে আর্চারের পাঠানোর সিকিউরিটি রিপোর্টের কথাটা ভেবে স্যাম বলল, এই মুহূর্তে আমার পুরো একটা টিম চার্লস এভেরির কীর্তিকলাপের প্রমাণ একত্র করছে। তো, ওটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবেন না।

    আচ্ছা। তবে একটা উপকার করতে পারবেন? গুপ্তধন যদি খুঁজে পান, তাহলে কি কষ্ট করে সেটার একটা ছবি পাঠাতে পারবেন আমাকে? চার্লসকে সেই ছবিটা দেখানোর ইচ্ছা আছে আমার।

    এটা মনে হয় না সম্ভব হবে, স্যাম বলল। আমাদের একমাত্র আশা ছিলো ঐ ম্যাপটা। আর ঐ ম্যাপের পুরো অর্থও বের করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কিছুই পাইনি। পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না।

    এরপর আর কিছু বলতে পারলো না ওরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসাররা এসে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলো তাদেরকে। সেখানে আরো একবার স্টেটমেন্ট দিয়ে ছাড়া পেতে পেতে প্রায় কয়েক ঘন্টার মতো লেগে গেলো ওদের। সারাদিনের পরিশ্রমে এতোই ক্লান্ত হয়ে আছে যে হোটেলে ফিরেই সরাসরি বিছানা ঢলে পড়লো ওরা। এমনকি ডিনার করার মতো এনার্জিও নেই তাদের শরীরে।

    ****

    করে ফেলেছি ওটা!

    ট্যাবলেটে স্কাইপ কলে লাযলোর কণ্ঠে থাকা উত্তেজনার তীব্রতা শুনে ঘুম পুরোপুরি উড়ে গেছে স্যামের।

    কী করে ফেলেছো? রেমি জিজ্ঞেস করলো।

    সাইকারের অর্থ, বলল লাযলো। পাথুরে দুর্গে। পালের গোদার ডেরা থেকে অনেক দূরে। চতুর্থ চেম্বারঃ ওপরে মৃত্যু, নিচে মৃত্যু, সাথে আমার শেষ আহার।

    শুনে একে অন্যের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। তারপর ট্যাবেলেটের পর্দায় লায়লোর উল্লসিত চেহারার দিকে তাকিয়ে স্যাম বলল, চমৎকার। কিন্তু এটা দিয়ে কী বুঝানো হয়েছে?

    গুপ্তধনের অবস্থান, বলল লাযলো। তবে প্রথম অংশটা বাদে।

    প্রথম অংশ?

    আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে এখানে রবিন হুডের ডেরার কথা বলা হয়নি।

    এটা গতকাল জানাতে পারলে আমাদের অনেক উপকার হতো, স্যাম বলল।

    তো, বলল রেমি, রবিন হুডের সাথে সম্পৃক্ততা বাদ দিলে, ধাঁধা কোন জায়গাকে নির্দেশ করছে?

    যদিও ধাঁধার সঠিক অর্থটা খুবই অস্পষ্ট, সেলমা দিচ্ছে জবাবটা, আমাদের ধারণা এটা নিউইয়াক ক্যাসলকে বুঝাচ্ছে।

    নিউইয়াক ক্যাসল? বলল রেমি। ওখানে কেন?

    এখানের মৃত্য, চেম্বার, শেষ আহার শব্দগুলো কিং জন কোথায় মৃত্যুবরণ করেছিলো সেটাকেই নির্দেশ করছে।

    স্যরি, রেমি, রেমির দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। মনে হচ্ছে আমাদের ছুটিটা আরো কয়েকদিন পর থেকে শুরু করতে হবে।

    .

    ৫৭.

    পরদিন সকালে নিউইয়াক ক্যাসলের দিকে যাত্রা করলো স্যাম, রেমি ও নাইজেল। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না, বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যাসলের কাছে পৌঁছে ট্রেন্ট নদীর পাশে থাকা লটে গাড়ি পার্ক করলো ওরা। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের ওপর দিয়ে এককালের ভয়ংকর দুর্গের দিকে হেঁটে যাচ্ছে এখন। এই পাশ থেকে দেখে দুৰ্গটা এখনো অক্ষত বলে মনে হচ্ছে, তবে অপর পাশে পৌঁছেই দেখলো নদীর তীরে গড়ে উঠা এই বিশাল দুর্গের আর অল্প কিছুটা অংশই অক্ষত আছে মাত্র। গেইটহাউজ, উত্তর-পশ্চিম কোনায় থাকা একটা বিশাল ছয়কোণা টাওয়ার আর দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে থাকা নিচু টাওয়ারটা ছাড়া আর বাকি সবকিছুই ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে। কথিত আছে কিং জন দক্ষিণপূর্ব প্রান্তের টাওয়ারটাতেই মৃত্যুবরণ করেছিল।

    তেমন কিছু তো আর বাকি নেই দেখছি, পার্কের মতো মাঠটার দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। একসময় এখানেই ক্যাসল কিপ দাঁড়িয়েছিলো।

    ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জোরালো বাতাসে চুল উড়ছে রেমি। এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে নিতে নিতে রেমি দক্ষিণপূর্বের নিচু টাওয়ারটার দিকে ইশারা বলল, আমার মনে হচ্ছে গুপ্তধনটা ওখানেই আছে। কিং জন মারা গিয়েছিলেন ওখানে। আর ধাঁধাতেও পরিষ্কারভাবে মৃত্যুর কথা লেখা আছে।

    এটা খুব বেশি স্বাভাবিক হয়ে যায় না? জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    কেন? চোখের সামনেই লুকিয়ে রাখা। সাইফার হুইলটাও তো এভাবেই লুকানো ছিল।

    কিছু না বলে কয়েকটা লিফলেট তুলে নিলো স্যাম। এখানে ওরা ঘুরতে আসা অন্যান্য টুরিস্টদের ছদ্মবেশে এসেছে। কাউকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না যে তারা দুর্গের নিষিদ্ধ অংশে গুপ্তধন খুঁজতে এসেছে। তাই লিফলেট তুলে নেওয়ার ভান করে স্যাম বলল, কিং জনের মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েকবার এই দুৰ্গটা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তো একদম চোখের সামনে যে লুকাবে না তা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাহলে লুকিয়েছে কোথায়?

    সেটা জানার জন্যই তো এখানে এসেছি আমরা, তাই না? রেমি জিজ্ঞেস করলো।

    ফোন বের করে সেলমার পাঠানো ধাঁধাময় সাইফার মেসেজটা ওপেন করলো স্যাম।

    চতুর্থ চেম্বার : ওপরে চ মৃত্যু, সাথে শেষ আহার।

    রেমি পর্দায় টোকা দিয়ে বলল, চেম্বারের আরেকটা অর্থ কিন্তু রুম বা কক্ষ। তারমানে এটার অর্থ রাজা যে জায়গায় মারা গিয়েছিলো সেটাও হতে পারে।

    শেষ খাবার শব্দটা দিয়ে ডাইনিং হলকেও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে।

    কিন্তু ডাইনিং হল তো আর এখন নেই।

    টুর শুরু হচ্ছে, দক্ষিণ টাওয়ারের সামনে জমায়েত হওয়া ছোটো জটলাটার দিকে নির্দেশ করে বলল নাইজেল।

    অন্যদের অনুসরণ করে টাওয়ারে প্রবেশ করলো ওরা। পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠছে। আর চলতে চলতে গাইড লোকটা বলে যাচ্ছে, ১৬৪৬ সালে সামরিক যুদ্ধের পর পার্লামেন্ট দুৰ্গটাকে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। নিউইয়াক শহরে সেই প্লেগ ছড়িয়ে না পড়লে হয়তো বর্তমানে এই দুর্গের ধ্বংসস্তূপও অবশিষ্ট থাকতো না।

    হল পেরিয়ে রুমগুলোর একটাতে ঢুকতেই হঠাৎ শো করে বাতাস বয়ে গেলো যেন দুর্গের ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে। বাতাস কেটে যাওয়ার শব্দটা অনেকটা মানুষের গোঙানোর শব্দের মতো করে শোনাচ্ছে। শব্দটা শুনেই ভীড়ের ভিতর থেকে কেউ বলে উঠলো, ভূত! সাথে সাথেই হাসির রোল ছড়িয়ে পড়লো সমবেত জনতার ভিতরে।

    সত্যি বলতে, গাইড বলছে তাদেরকে, দুৰ্গটাকে ভুতুড়েও বলা হয়ে থাকে। কথিত আছে কয়েক শতাব্দী আগে খুন হওয়া মানুষগুলোর আত্মা নাকি এখনো ঘুরছে এই দুর্গে। বিশেষ করে এই রুমটায়। এখানে মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিং জুন। অনেক ইতিহাসবীদরা বলে থাকেন, শত্রুরা তাকে বিষাক্রান্ত করে মেরেছিলো। আর অনেক নিচে থাকা ডানজনটাতে শত শত গরীব বেচারাদের অত্যাচার করা হতো, অত্যাচারের পর ফেলে রাখা হতো খাদ্য-পানির অভাবে ভুগে মারা যাওয়ার জন্য। এমনকি মারা যাওয়ার পরও লাশ বের করে আনা হতো না, ফেলে রাখা হতো ইঁদুরের খাবারের জন্য। আর একসময় হাড়ের স্তূপে পরিণত হওয়া ছাড়া তাদের পুরো অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতো।

    তখনই রেমি ও নাইজেলকে টান দিয়ে দলটা থেকে পিছিয়ে গেলো স্যাম। নাইজেল হলে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে, আর ওদিকে স্যাম ও রেমি কিং জনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা রুমটা পরীক্ষা করে দেখছে। গুপ্ত দরজা, ফাপা মেঝে বা গুপ্ত প্যাসেজওয়ের খোঁজ করছে ওরা। কিন্তু বিশ মিনিট ধরে খোঁজাখুঁজির পর আশা পাওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পাওয়া গেলো না।

    কিং জন মনে হয় তাঁর গুপ্তধনের রহস্যটা সাথে নিয়েই মরেছে, বলল স্যাম।

    এখনো কিন্তু দুর্গের অনেকগুলো চেম্বার চেক করা বাকি আছে আমাদের, আশা দিয়ে বলল রেমি।

    তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আবারো দলটার সাথে গিয়ে যুক্ত হলো ওরা। গাইড লোকটা ইতিমধ্যেই দুর্গের রন্ধনশালা মানে রান্নাঘর নিয়ে আরেকটি গল্প বলে ফেলেছে। রন্ধনশালা থেকে পরে তারা এগিয়ে গেলো দুর্গের বৃত্তাকার সিঁড়ির দিকে। এরপর এক এক করে দুর্গের ড্রেনেজ সিস্টেম ও রুট সেলারটাও ঘুরে দেখলো ওরা। শেষে গিয়ে থামলো মেঝেতে থাকা একটা গর্তের সামনে। গর্তের মুখে একটা মইও রয়েছে। এই মইটাই নেমে গেছে কুখ্যাত ডানজনে। এই ডানজনেই রাজনৈতিক বন্দীদের আটকে ভয়ানক অত্যাচার করা হতো।

    আপনাদের মধ্যে কারো সাহস থাকলে মই ধরে নিচে নেমে দেখতে পারেন। ওখানে নামলেই দেয়ালে খোদাই করা গ্রাফিতিগুলো দেখতে পাবেন। ডানজানে বন্দী করা টেমপ্লর নাইটরা ঐ গ্রাফিতিগুলো এঁকে গিয়েছিলো।

    অবশ্যই মই ধরে নিচে নেমে গেলো তারা তিনজন। নামার সময় চারপাশ থেকে আসা ভুতুড়ে গোঙানোর শব্দ শুনতে পেলো তারা। যদিও তিনজন জানে যে এটা রেকর্ড করা শব্দ। অন্য সেলগুলোর একটা থেকে আসছে শব্দটা।

    নিচে নেমে দেয়ালের গ্রাফিতিগুলো পরীক্ষা করে দেখছে রেমি! আর স্যাম ও নাইজেল পরীক্ষা করে দেখছে পাথুরে দেয়ালগুলো। গুপ্ত দরজা, গুপ্ত সুড়ঙ্গের আশায় দেয়াল ঠেলেঠুলে দেখছে। কিন্তু কিছুই পেলো না।

    এখানে কি কিং জনের গুপ্তধন লুকানোর ব্যাপারে কোনো গুজব আছে? ডানজন থেকে ওপরে উঠে আসার পর গাইডকে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    প্রশ্নটা শুনে ভ্রু-কুঁচকে গেলো গাইডের। এখানে? এখানে গুপ্তধন লুকানোর গুজব থাকলে তো জলাশয়ে সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাসটা পুরোপুরি বদলে যাবে। তাই না? না এখানে কোনো গুপ্তধনের গুজব নেই। এখন চাইলে টুরের পরবর্তী অংশের জন্য অনুসরণ করতে পারেন আমাকে।

    একটা প্রশ্ন, রেমি বলল? প্রশ্নটা আসলে কয়েক শতাব্দী আগের একটা পুরোনো ধাঁধার ব্যাপারে। কিং জনের সাথে হয়তো কোনো সম্পর্ক আছে এটার।

    প্রশ্নটা শোনার আশায় কৌতূহলী দৃষ্টিতে রেমির দিকে তাকালো গাইড।

    চতুর্থ চেম্বার : ওপরে মৃত্যু। নিচে মৃত্যু। শেষ খাবারের সাথে। এটা যদি নিউইয়াক ক্যাসলের কোনো অবস্থানকে নির্দেশ করে থাকে, তাহলে কোনটাকে করছে বলে মনে হয় আপনার?

    এটা তো সহজ প্রশ্ন, বাঁকা হাসি হেসে বলল গাইড। এটা রুট সেলারকে নির্দেশ করছে। নিচের ডানজনের দিক থেকে গুণলে এটা চতুর্থ স্তরে আছে। আর এর ওপরের টাওয়ারেই কিং জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলো।

    আর এই স্তরটা কোথায়?

    রুট সেলার? এখানে আসার পথে তো ওটা হয়েই এসেছি আমরা, বলে রুট সেলারের দিকে নির্দেশ করলো লোকটা। যেহেতু মি, রিজওয়েল আপনাদের সাথে আছেন, তাই আপনারা চাইলে সেলারটা আরেকবার ঘুরে দেখতে পারেন।

    গাইডকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত পায়ে রুট সেলারে এসে উপস্থিত হলো ওরা। তবে সেলারটা দেখে হতাশই হতে হলো তাদের। অন্যান্য চেম্বারগুলোর মতো এটাতে গুপ্ত কিছু আছে বলেও মনে হচ্ছে না। আটশো বছর ধরে ধুলো, মাটি, আর্দ্রতা জমার পরেও পাথুরে দেয়ালটাকে এখনো পুরোপুরি নিরেটই দেখাচ্ছে।

    হতাশ হয়ে ফিরে যেতে যাবে, ঠিক তখনই দেয়ালে একটা ধনু আকৃতির একটা খোপ দেখতে পেলো স্যাম। খোপের আকৃতিটা অনেকটা জানালার মতো নকশা করা, তবে খোপটা তৈরি করা হয়েছে শক্ত ইটের গাঁথুনি দিয়ে। সেলারের বাকি নিরস ও রুক্ষ চেহারার সাথে এই নকশার মতো খোপটা কোনোভাবেই খাপ খাচ্ছে না। বারোশো শতাব্দীতে নিশ্চয় রসুইঘরে কোনো নকশা করতো না কেউ।

    রেমি, ঐ খোপের মতো অংশটা দেখো। অদ্ভুত না?

    ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নকল জানালার খোপের দিকে আলো ফেললো রেমি। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকার পর বলল, যে-ই এই দেয়াল খুঁড়ে থাকুক না কেন, তার শৈল্পিক মন ছিলো।

    কথাটার কোনো জবাব দিলো না স্যাম। কাছে এগিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাশলাইটের গোড়ালি দিয়ে খোপটায় টোকা দিলো। টোকা দিতেই ফাপা একটা শব্দ শোনা গেলো। এই ফাপা শব্দটা প্রমাণ করে দিচ্ছে যে হয় এই ইটগুলো খুব ভালোভাবে গাঁথা হয়নি, অথবা ভিতরের ফাঁপা অংশকে লুকিয়ে রাখার জন্য এই ইটের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।

    সাথে সাথেই দেয়ালটায় লাথি দিতে শুরু করলো স্যাম। বেশ কয়েকটা লাথি দেওয়ার পর অবশেষে আলগা হয়ে গেলো এক ইট। এরপর অবশ্য খোপের অন্যান্য ইটগুলো টেনে বের করতে খুব বেশি সমস্যা হলো না। কয়েক মিনিটের ভিতরের খোপের একটা অংশের সরিয়ে ফেললো। তারপর ফ্ল্যাশলাইট দিয়ে আলো ফেললো দেয়ালের আড়ালে থাকা অন্ধকার অংশটার দিকে?

    কী দেখতে পাচ্ছো? উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    শ্রাগ করলো স্যাম। বলল, মনে হয় কিং জনের গুপ্তধন খোঁজার পিছনে আমাদের আর সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই।

    চেম্বারটা খালি, তাই না? হতাশকণ্ঠে বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করলো নাইজেল।

    না, মুখে প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে বলল স্যাম। ওখানেই আছে, হাত বাড়ালেই ওগুলোকে স্পর্শ করতে পারবেন।

    .

    ৫৮.

    হামাগুড়ি দিয়ে সরু ফাটলটার ভিতরে ঢোকার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে হৃৎস্পন্দন হচ্ছে রেমির! নাইজেল ও স্যাম অনুসরণ করছে তাকে।

    প্রথম দেখায় জিনিসগুলোকে ধুলোপড়া পাথরের টুকরোর মতো মনে হলেও, কাছ থেকে আলো ফেলতেই দেখতে পেলো এগুলো আসলে প্রাচীন আমলের ধাতব সিন্দুক। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত একটার ওপর একটা রেখে সাজানো আছে সিন্দুকগুলো। প্রায় ত্রিশটার মতো সিন্দুক আছে এখানে। সবগুলোই ধুলোমাখা।

    এগুলোয় তালা লাগানো, নাইজেল বলল। এগুলোকে খুলবো কিভাবে?

    কিছু না বলে মেঝে থেকে একটা ইট তুলে নিলো স্যাম। তারপর ইটটা দিয়ে আঘাত করলো জং ধরা সিন্দুকগুলোর একটায়। এক আঘাতেই ভেঙে গেছে প্রাচীণ আমলের তালাটা।

    সিন্দুকের ডালাটা উঠিয়ে ভিতরের দৃশ্যটা দেখেই অভিভূত হয়ে গেলো স্যাম। প্রায় শত শত জং ধরা সিলভার কয়েনের ভরে আছে সিন্দুকটা। সবগুলো কয়েনেই রাজা প্রথম হেনরি, রাজা দ্বিতীয় হারল্ড এবং রাজা প্রথম উইলিয়ামের মাথা খোদাই করা আছে। পরের তিনটা সিন্দুকে ভরে আছে স্বর্ণ মুদ্রায়। পরের সিন্দুকগুলোয় এক এক করে মুক্তা, সিলভার প্লেট, স্বর্ণের কটোরা, মূল্যবান মনিমুক্তা খচিত তলোয়ার এবং ওগুলোর খোপ।

    ইতিহাস অনুযায়ী কিং জনের রুবি, পান্না, হীরা এবং বড়ো আকৃতির যে কোনো বিরল রত্নের ওপর প্রচুর ঝোঁক ছিলো।

    চমৎকার, বলে উবু হয়ে সিন্দুক থেকে একটা জিনিস তুলে আনলো স্যাম। অন্যরা কেউই এই জিনিসটা এখনো খেয়াল করেনি। এটা দেখো। বলে একটা সোনালি তীর বা সোনালি পাতার একটা তীর তুলে রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো স্যাম।

    অভিভূত দৃষ্টিতে তীরটার তাকালো রেমি। রবিন হুড?

    আমার জানামতে নটিংহ্যামের আর কারোরই সোনালি তীর ছিলো না, বলল নাইজেল। হয়তো কিংবদন্তিগুলো আসলেই সত্য ছিলো।

    জ্যাকপট, আরেকটা উন্মুক্ত সিন্দুকের দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। এটাতে দেখি রাজার মুকুট, রাজদণ্ড ও অক্ষিগোলকটা আছে। বলে রুবি ও মুক্তা খচিত সোনালি মুকুটটা উঁচিয়ে ধরলো স্যাম।

    এটার সাথে মানানসই পোশাকগুলোও দেখা উচিৎ তোমার, বলে কিং জনের পোশাকে ভর্তি বড়ো সিন্দুকটার দিকে নির্দেশ করলো রেমি।

    আমি কি ওগুলোর একটা পরে দেখতে পারি? প্রশস্ত হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    ঐ চেষ্টাও করো না, বলল রেমি। প্রায় আটশো বছর আগে এই পোশাকগুলো পরিধান করেছিলেন কিং জন। এগুলো এখন ঐতিহাসিক নিদর্শন।

    রাজা তো অনেক আগেই মরে গেছে, বাঁকা হাসি হেসে বল স্যাম। আশা করছি একটা পরে দেখলে রাজা কিছু মনে করবে না।

    আপনি এখন শতশত মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদকে স্পর্শ করে দেখছেন, নাইজেল বলল। কর্তৃপক্ষ যদি আপনার ইচ্ছার কথা জানতে পারে, তাহলে সারা জীবনের জন্য নটিংহ্যামের জেলখানায় পঁচতে হবে আপনাকে।

    মনে হয় না এই ব্যাপারটা পছন্দ করবো আমি, কৌতুকের সুরে হেসে বলল রেমি।

    যাই হোক, পরের টুর আসার আগেই জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা উচিৎ আমাদের সতর্ক করে বলল নাইজেল।

    মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো স্যাম। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। আর দশ মিনিটের ভিতরেই আমাদের গাইড এদিকে ফিরে আসবে।

    নিজেদের কাছে রাখার জন্য কয়েকটা এঙ্গেলে বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে ফাঁপা অংশটা থেকে বেরিয়ে এলো রেমি। স্যাম ও নাইজেলও বেরিয়ে এলো তার সাথে। দুজনে আবারো দেয়ালের ইটগুলো জায়গামতো বসিয়ে রাখতে শুরু করেছে।

    তাদের ইট বসানো শেষ হয়েছে এই সময়ই চেম্বারে এসে উপস্থিত হলো তাদের টুর গাইড। তাদেরকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, পেলেন আপনাদের গুপ্তধন?

    না, ভুল চেম্বার এটা, বলল স্যাম।

    দুৰ্গটাও ভুল, সাথে যোগ করলে রেমি।

    শুনে মুচকি হাসলো গাইড। আগেই বলেছিলাম আমি।

    কোনো রকমে মুখ স্বাভাবিক রেখে গাইডের সাথে তাল মিলাযলো স্যাম ও রেমি। নাইজেল তাকিয়ে আছে অন্য দিকে।

    অন্য সবার সাথে বাইরে বেরিয়েই লম্বা শ্বাস নিয়ে নিলো ওরা। এরপর নাইজেলের দিকে তাকিয়ে স্যাম বলল, তো, নাইজেল, স্টোরিটা নিয়ে নিন আপনি।

    শুনে হতবাক দৃষ্টিতে স্যামের দিকে তাকালো নাইজেল। কিছুই বুঝতে পারছি না।

    জবাবে রেমি নাইজেলের গালে একটা চুমু খেলোর থাকুন। গেট দিয়ে জনগণের ঢল নামার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে আমাদের।

    .

    ৫৯.

    পরদিন সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে আরেকবার নিউইয়াক ক্যাসলে ঘুরতে গেলো স্যাম ও রেমি। জায়গাটা মানুষে গিজগিজ করছে। সিকিউরিটি কোম্পানির গার্ডদের মানুষের ভীড় নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে যেন। শতাব্দীর সেরা গুপ্তধন আবিষ্কারের দৃশ্যটা দেখতে এসেছে সবাই। কোনো রকমে গেটের যতোটা কাছে সম্ভব গাড়িটা পার্ক করে ফ্রন্ট গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো ওরা। এই গেইটটা পাহারা দিচ্ছে নটিংহ্যামশায়ার পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

    তাদের দেখে এক গার্ড এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, স্যার, আপনাদের নাম?

    লংস্ট্রিট, বলল স্যাম। লর্ড অ্যান্ড লেডি লংস্ট্রিট।

    নাম বলার এই স্টাইলটা কিছুটা পুরোনো হয়ে গেছে বলে মনে হয় না তোমার? রেমি বলল।

    গার্ড ওদিকে তার নোটবুকটা চেক করে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, স্যরি, স্যার। আপনাদের নামটা তালিকায় নেই। দুঃখিত, আপনাদের ভিতরে ঢুকতে দিতে পারছি না আমি।

    আপনি কি মি. রিজওয়েলের সাথে একটু যোগাযোগ করতে পারবেন? রেমি জিজ্ঞেস করলো। তাকে গিয়ে কি আমাদের আসার কথাটা জানাতে পারবেন?

    অবশ্যই, মিলেডি। এটা জানাতে পারবো আমি, ভদ্রভাবে বলে গেটের সামনে থেকে গেলো গার্ড লোকটা।

    দশ মিনিট পরেই নাইজেলকে গেইটের কাছে আসতে দেখলো ওরা। তার সাথে সাথে পার্সি ওয়েভ এবং প্রফেসর সেড্রিক অলড্রিজও এগিয়ে আসছে তাদের দিকে।

    আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের, গেটের কাছে এসে বলল নাইজেল। সরকারি অধিদপ্তরের লোকেরা প্রায় পাগল বানিয়ে ফেলেছে আমাদের। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ব্রিটিশ মিউজিয়ামসহ অনেক মানুষের সাথে কথা বলতে হচ্ছে আমাদেরকে।

    আমি আর রেমি তো বিদেশি। এই ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো সাহায্য করতে পারবো না আমরা, স্যাম বলল।

    আমি বুঝতে পারছি না আপনারা কেন নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন? বলে উঠলেন অলড্রিজ। আপনারা দুজন না থাকলে তো কখনোই এই গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া যেতো না। ব্রিটিশ রাজ্যকে এই সহযোগিতা করার জন্য আপনারা সম্মানসূচক নাইটহুড উপাধিও পেতে পারতেন।

    স্যার স্যাম ফার্গো, মুখে প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে বলল রেমি। নাহ, এই নামের ব্যক্তির সাথে থাকতে পারবো না আমি।

    কথাটা শুনেই কড়া দৃষ্টিতে রেমির দিকে তাকালো স্যাম। তারপর আবার অন্য তিনজনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, সবাইকে বলে দিন যে আপনারা তিনজন একদল হয়ে সাইফার হুইলের ধাঁধা সমাধান করে এই গুপ্ত ইতিহাসটা পুনরুদ্ধার করেছেন।

    হ্যাঁ। সাথে মেজ ক্রাওলির থিউরির কথাটাও উল্লেখ করবেন। পেমব্রুকের আর্ল উইলিয়াম দ্য মার্শালের রাজসম্পদ লুকানোর ধারণাটা কিন্তু প্রথম উনিই দিয়েছেন, সাথে যোগ করলো রেমি।

    অবশ্যই, বলল নাইজেল। উইলিয়াম দ্য মার্শালের কারণেই রাজসম্পদগুলো কখনোই নিউইয়াক ক্যাসলের বাইরে যায়নি। তিনিই ঝড়ের মধ্যে জলাশয়ে রাজসম্পদ হারিয়ে যাওয়ার গল্প ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য যে এক সপ্তাহের ভিতরেই ফরাসিদের বিপক্ষে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন তিনি। সেই সাথে সম্পদের গুপ্ত ইতিহাসটাও হারিয়ে গিয়েছিলো তার সাথে।

    ইচ্ছা ছিলো আরো কিছুক্ষণ থাকার, তবে থাকতে পারছি না। কিছুক্ষণের মধ্যেই হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে বিমান ধরতে হবে আমাদের।

    আর কয়েকটা দিন থাকতে পারবেন না? জিজ্ঞেস করলেন পার্সি।

    আলতোভাবে মাথা নাড়লো স্যাম। খুব দুঃখিত আমরা। বাসায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমাদের, তাই যাওয়া লাগবেই।

    তবে এরপর তো অবশ্যই ফিরে আসবেন আবার? অনুনয় করে বলল নাইজেল।

    হ্যাঁ, আশা করছি, বলে সবাইকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো রেমি। স্যামও ঐদিকে উষ্ণভাবে করমর্দন করে নিলো সবার সাথে।

    এরপর বিদায় জানিয়ে আবারো গাড়িতে ফিরে এলো ওরা। স্যাম গাড়ি চালাচ্ছে, আর রেমি এখনো হাত নেড়ে নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অন্য তিনজনকে।

    চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত হাত নেড়েই গেলো রেমি। তারপর বলল, আমি নিশ্চিত, আমরা বিদায় নেওয়ার সময় পার্সি আর নাইজেলের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিলো।

    শুধু তাদের চোখ থেকেই ঝড়েনি, বলল স্যাম।

    কিছু না বলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো শুধু রেমি। তারপর বলল, হ্যাঁ, জানি আমি।

    ****

    গণ দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো একটু স্বস্তি পাচ্ছে স্যাম। রেমির দিকে তাকিয়ে দেখলো রেমিও অনেকটা স্বস্তির মধ্যে আছে। সত্যি বলতে ফোনের পর্দায় কিছু একটা দেখে উচ্চস্বরে হাসছে এখন।

    এতো মজার কী দেখলে?

    দেখো তুমি, বলে গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার পর তাদের তিনজনের তোলা ছবিটা স্যামকে দেখালো রেমি। বারোটা সিন্দুক খোলার পর এই ছবিটা তোলা হয়েছিল। ছবিতে সিন্দুকে থাকা স্বর্ণ, রত্নপাথর ও কিং জনের রাজকীয় মুকুটসহ আরো অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছে। আমি ছবিটা আলেক্সান্দ্রাকে পাঠিয়েছিলাম, আর সে পরে পাঠিয়েছিলো চার্লস এভেরিকে। এভেরি এই ছবিটা খুলে দেখতে যাবে, ঠিক তখনই পুলিশ এসে এরেস্ট করে নিয়ে যায় তাকে।

    শুনে হেসে উঠলো স্যামও। নিশ্চিতভাবেই এখন দুঃখের দহনে জ্বলছে লোকটা, বলে রিয়ারভিউ মিররে তাকিয়ে শেষবারের মতো নিউইয়াক ক্যাসলটা দেখে নিলো স্যাম। আমাদের এখানের কাজ তো শেষ। এখন তাহলে আমার কথা দেওয়া সেই ছুটির সময়টা শুরু করবো?

    ওটার কথা ভুলে যাও, ফার্গো। তোমার ঐ ছুটি কখনোই এটার থেকে ভালো হতে পারবে না, বলে শক্ত করে স্যামের হাঁটু চেপে ধরলো রেমি। এটাই আমার জীবনে কাটানো সবচেয়ে সেরা ছুটি।

    -সমাপ্ত-

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
    Next Article দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }