Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ২১. স্কাইপেতে কল করলো সেলমা

    ২১.

    স্যামের অনুরোধে স্কাইপেতে কল করলো সেলমা। স্যাম চাচ্ছিলো তার চেহারা দেখে খারাপ সংবাদের মাত্রাটা নির্ণয় করতে। আর্চারেরও আইডিয়াটা ভালো লেগেছে। তবে সে উঠে দাঁড়িয়ে একটু পাশে সরে গেলো যাতে পর্দার ওপাশে থাকা কেউ তাকে দেখতে না পায়। কিছুক্ষণ পরই বেজে উঠলো রেমির ট্যাবলেটটা। তবে কলটা ধরতেই সেলমার বদলে ব্রিকে দেখতে পেলো ওরা। স্যাম ও রেমিকে দেখেই স্বস্তির ভাব ফুটে উঠলো যেন তার চেহারায়। তাদেরকে দেখেই পর্দার দিকে উবু হয়ে বলল, থ্যাংকস গড, আমি খুবই দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম।

    দুঃশ্চিন্তা? স্যাম বলল, তার কণ্ঠে সতর্কতা মিশে আছে। অবশ্য সেলমার থেকে মিশন ব্যর্থ হওয়ার কথাটা শোনার পর সতর্ক না হয়েই বা উপায় কী? ব্রির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সেলমা ও লায়লোর দিকে তাকালো স্যাম। তাদের দুজনের মুখভঙ্গী দেখে আসলেই কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। তাই আবারো ব্রির দিকে চোখে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলে?

    আপনাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে ভেবে।

    ব্রি, রেমি বলছে, তোমার কেন মনে হলো যে আমাদের কোনো ক্ষতি হতে পারে?

    আগেরবার আপনাদের ডাইভিংর সময় ঘটা ঘটনাটার কারণে। আমরা ধারণা ওটা আমার জন্যই ঘটেছে।

    স্যাম এমন কিছু আশা করেনি। অস্বীকার করলে, হ্যাঁ, তা স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যায়। কিন্তু এটা? প্লিজ, খুলে বলো সব।

    আ-আমার মনে হয় আমি আমার কাজিনকে আপনাদের অনেক তথ্য জানিয়ে দিয়েছি।

    ল্যারেইন? রেমি বলে উঠলো।

    হ্যাঁ। আমি প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। তারা আমাদের দুজনকেই হুমকি দিয়েছিলো, দুজনকেই বেঁধে রেখেছিলো। আমার মতোই সেও একজন ভিক্টিম। অন্ততপক্ষে আমি এটাই ভেবেছিলাম। তাই যখন সে আপনাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলো, তখন এটা ভাবিনি যে তাকে কিছু বলে আপনাদেরকে বিপদে ফেলে দিচ্ছি আমি। আ- বলতে বলতে তার গাল বেয়ে অশ্রু পড়তে শুরু করেছে। কোনো রকমে নিজেকে শান্ত করে বলল, আমি খুবই দুঃখিত, মি. অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। আমি জানলে কখনোই তাকে কিছু বলতাম না।

    ব্রির চেহারাটা পরীক্ষা করে দেখছে স্যাম। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে মিথ্যা অভিনয় করছে। তারপরও নিজের সতর্কতা ফেলে দিয়ে এখনই তাকে মাফ করে দেওয়ারও কোনো ইচ্ছা নেই। তোমার কেন মনে হলো যে আড়ালে কিছু একটা ঘটছে? জিজ্ঞেস করলো শুধু।

    আপনাদের প্রথম ডাইভে ঘটা ঘটনার পর এটা মাথায় এসেছে আমার। আর ল্যারেইনও বারবার জিজ্ঞেস করছিলো আপনাদের সাথে আমার আর কথা হয়েছে কিনা। এ-এতে… বলতে বলতে পর্দার বাইরের দিকে ঝুঁকে গেলো ব্রি। একটা টিস্যু নিয়ে আবারো পর্দায় উদয় হয়ে বলল, এতে করে সন্দেহ বেড়ে যায় আমার। তাই সেলমা ও লাযলো যখন আমাকে বলল আপনারা সাইফার হুইলটা খোঁজার আরেকটা চেষ্টা করবেন, তখন ল্যারেইনকে মিথ্যা বলি আমি। তাকে বলেছি যে আপনারা কোথায় আছেন বা কী করছেন সেই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এজন্যই দুঃশ্চিন্তা বাড়ছিলো আমার। বলতে দুর্বলভাবে হাসার চেষ্টা করলো। আপনাদের যদি কিছু হয়ে যেতো…

    আর বলতে পারলো না কিছুই। কান্নায় ভেঙে পড়েছে ব্রি। ট্যাবলেটটা ব্রির সামনে থেকে তুলে নিয়ে রুমের অন্য পাশে সরে এলো সেলমা। পিছনে দেখা যাচ্ছে লাযলো ব্রিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

    নিজেই তো শুনলেন সংবাদটা, সেলমা বলল।

    স্যাম রেমির দিকে তাকিয়ে বলল, কোনো মন্তব্য?

    আমি বিশ্বাস করি তাকে, বলল রেমি।

    সেলমা? স্যাম জিজ্ঞেস করলো।

    হয়তো সে বিশ্বের সেরা অভিনেত্রী হলেও হতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে আমিও মিসেস ফার্গোর সাথে একমত। ওকে বিশ্বাস করছি আমি। তার কথায় যুক্তি আছে। আর সে যখন আমাদের কাছে ছুটে আসলো, তখন কিন্তু আপনারা কেউ ছিলেন না। তাকে শান্তও করা যাচ্ছিলো না তখন। অনেকক্ষণ লেগেছে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করার জন্য।

    চমৎকার, স্যাম বলল। এই একটাবারই আমরা চাচ্ছিলাম যেন সে তথ্যটা পাচার করে, এইবারই সে হঠাৎ করে সতর্ক হয়ে গেলো-

    অথবা, কঠিন দৃষ্টিতে স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল রেমি, ব্রি যেমনটা বলল, সে আমাদেরকে কোনো বিপদে ফেলতে চায়নি।

    যাই হোক, অন্তত পক্ষে তথ্য ফাসের উৎসটা তো জানা গেলো এবার।

    দুর্ভাগ্যবশত, সেলমা বলছে, এতে করে চার্লস এভেরি বা তার লোকদের কাউকেই ধরা যাচ্ছে না।

    সঠিক সময়ে সবই হবে।

    সেলমা তার কণ্ঠস্বর নামিয়ে বলল, ধরে নিচ্ছি ব্রি সত্য বলছে, তার মানে এখন আমাদেরকে এটাও ধরে নিতে হবে যে চার্লস এভেরির লোকেরাও জাহাজের পরিচিতিটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে। এখন যেহেতু তারা আরো আমাদের থেকে দুদিন সময় বেশি পেয়েছে।

    তাহলে আমরা কোন অবস্থানে আছি এখন?

    তথ্যাদি ঘাটাঘাটি করা অবস্থায়।

    তাহলে এখন তুমি কাজে লেগে গেলেই ভালো হবে, স্যাম বলল। ম্যাপটা কিসের দিক নির্দেশ করছে জানতে পারলে ভালোই হতো। আশা করছি, খুব সম্ভবত গুপ্তধনই হবে। | গুপ্তধন, নাকি সমাধিকে জানে? যেটাই হোক না কেন, কেউ একজন এটাকে লুকানোর জন্য বেশ ভালোই পরিশ্রম করেছে। বলে থেমে পিছনে থাকা লাযলো ও ব্রিকে একবার দেখে নিলো সেলমা। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে নিচুস্বরে বলল, আশা করছি এখন আর ওরা কিছু শুনতে পাবে না। যাই হোক, আমি আপনাদের জন্য সাউথ বিচ একটা রুম বুক করে রেখেছি। আপনাদের ভ্যাকেশনের স্টার্ট হিসেবে ধরে নিতে পারেন এটাকে। এতে করে আমরাও রিসার্চের কিছু সময় পাবো আর মিসেস ফার্গোও গত কয়েকদিনের অবসাদটা দূর করতে পারবেন।

    ঠিক কাজই করেছে, সেলমা। আমাদেরকে খবর জানিয়ো তাহলে।

    বলে কল কেটে দিয়ে ট্যাবলেটের কাভারটা বন্ধ করে দিলো স্যাম। এমন কিছু শোনার আশা করিনি আমি।

    এখন বুঝা গেলো যে কেন আমাদের ভালো একটা টোপে কেউ ধরা পড়েনি, বলে রেমির দিকে তাকালো আর্চার। মনে হয় নিয়োগের আগে মেয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড অতোটা ভালো করে খতিয়ে দেখেননি?

    সাধারণ যা যা দেখার সেসব দেখেছি, রেমি বলল। সে তো শুধু ফান্ড রেইজিংর কাজই করে।

    এই মুহূর্তে কী করা উচিৎ বলে মনে হয় তোমার? স্যাম জিজ্ঞেস করলো আর্চারকে।

    পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড জানা লাগবে। শুধু ব্রি মার্শালেরই না। তার কাজিন ল্যারেইনেরটাও। দেখি ঘেটে কী পাওয়া যায়। যদি কিছু নাও পাওয়া যায়, তাহলেও হয়তো মিস মার্শালের গল্পের সত্যতাটা পাওয়া যেতে পেরে। এতে করে তোমরা একটু স্বস্তিতে বিশ্রাম নিতে পারবে আর কী!

    রেমি? স্যাম জানতে চাইলো।

    আমি ব্রিকে সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে মুছে ফেলতে চাই। তো, হ্যাঁ, অবশ্যই খতিয়ে দেখার পক্ষে সায় আছে আমার।

    মাথা ঝাঁকালো আর্চার। আমি গিয়ে কাজ শুরু করে দেই তাহলে। বলে রেমির সাথে হাত মিলিয়ে বলল, আপনার সাথে আরেকবার দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগলো। তবে অপারেশনটা ব্যর্থ হওয়ায় দুঃখিত আমি।

    আরে, আপনার দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।

    স্যামও উঠে দাঁড়ালো সাথে সাথে। বলল, চলো, এগিয়ে দিয়ে আসি তোমাকে।

    আর্চারকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে স্যাম বলল, মেয়েটাকে রেমি খুবই বিশ্বাস করে।

    বুঝেছি ওটা। দুই মহিলার ব্যাপারেই ঘেটে দেখবো আমি। চিন্তা করো না তুমি।

    ****

    পরদিন সাউথ বিচ হোটেলের পুলের পাশে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো স্যাম। ঠিক তখনই আর্চার তাকে ফোন করলো প্রাথমিক রিপোর্ট জানানোর জন্য।

    রেমি এখনো পুলে সাঁতার কাটছে। তার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই স্যাম আর্চারকে ফোনে বলল, আমাদের দুঃশ্চিন্তা করার মতো কোনো কিছু পেয়েছো?

    রেমির ধারণা সঠিক ছিলো বলেই মনে হচ্ছে। ব্রি মার্শালকে সন্দেহ করার মতো কিছু পাইনি। তার কাজের ইতিহাসও একদম নিখুঁত। বলার মতো যেটা পেয়েছি, সেটা হলো মেয়েটা তার চাচার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলো।

    এই শেষ বাক্যটা কিভাবে বের করলে?

    স্যান ফ্রান্সিসকো অফিস থেকে দুজনকে ঐ বইয়ের দোকানের দিকে পাঠিয়েছিলাম আমি। মি. পিকারিংর মৃত্যুর পর তার বিড়ালের ভার নেওয়া লোকটা বলল, ব্রি নাকি প্রায়ই দেখতে যেতো লোকটা। তবে, তাঁর নিজের মেয়ে ল্যারেইন নাকি অতোটা যেতো না।

    খুব সম্ভবত ইস্ট কোস্টে থাকতো বলে অতোটা যেতে পারতো না।

    সম্ভবত। তবে আমার এজেন্টরা জানতে পেরেছে যে লোকটা তার ভাতিজির সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলো।

    এতে করে কিন্তু তার মেয়েকে দোষী ধরে নেওয়া যাচ্ছে না।

    না। তবে তার আর্থিক অবস্থা অবশ্য বলছে চাইলে কিছু সুযোগ নিতেও পারে। তার স্বামী তাকে অনেক ঋণের ভিতরে রেখে গেছে। তার ফার্মের মর্টগেজও পরিশোধ করা না।

    ক্রিমিনাল রেকর্ড? জিজ্ঞেস করলো স্যাম। ওদিকে পুলের অপর প্রান্তে থাকা রেমিও স্যামকে ফোনে কথা বলতে দেখে তার দিকে সরে আসতে শুরু করেছে।

    কোনো কিছুই নেই।

    এখন কী করলে ভালো হবে বলে মনে হয় তোমার?

    এটা নির্ভর করছে তুমি কতোটা গভীরে জড়াতে চাও এবং কতটা খরচ করতে চাও তার ওপর।

    খরচ নিয়ে ভেবো না একটুও, বলে সামনে তাকিয়ে দেখলো রেমি পুল থেকে উঠে এসেছে। মুক্তোর দানার মতো পানি ঝড়ে পড়ছে তার শরীর থেকে। লালচে বাদামি কেশের আফ্রোদিতি যেন। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে ফোনে আর্চারকে স্যাম বলল, যা যা দরকার লাগে করতে থাকো তুমি।

    আচ্ছে, ঠিক আছে। তাহলে ল্যারেইনের বাড়িতে দুইজন এজেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। বর্তমানে সে কী করছে সেটার ওপর নজর রাখবো আমরা। দেখি খুঁজতে গিয়ে অন্য কাউকেও পাওয়া যায় কিনা। যাই হোক, তোমাদেরকে এখন স্বাভাবিক আচরণই করতে হবে। বিশেষ করে ব্রি ও তার কাজিনের ব্যাপারে আলোচনাগুলোর সময়। আমরা তথ্য ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটা জেনে গেছি, এটা কাউকে বুঝতে দিতে চাচ্ছি না। এতে করে কেউ বুঝতে পারবে না যে আমরা এভেরির লোকদের অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি।

    আমরা ওটা দেখবো। আর কিছু?

    স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে রিপোর্টের কপি নিয়ে নিয়েছি আমি। তোমাদের হোটেল রুমে হানা দেওয়া নকল পুলিশদের কোনো আঙুলের ছাপের সাথে কারো মিল পাইনি। তবে বইয়ের দোকানের ডাকাতের সাথে একজনের ছাপের মিল পেয়েছি। জ্যাকব জ্যাক স্তানিস্লাভ নামের কেউ।

    তার মানে লোকটার অপরাধ তালিকা বেশ লম্বা?

    হ্যাঁ, আসলেই লম্বা ইতিহাস রয়েছে। এক ক্রিমিনাল পরিবারের সদস্য। অনেকগুলো নিখোঁজ ব্যক্তির কেসের সাথে নাম জড়িয়ে আছে ওর। ঐসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি এখনো।

    আচ্ছা।

    যদি আমি কিছু জানতে পারি, তাহলে জানাবো তোমাকে।

    ধন্যবাদ, বলে ফোন কেটে দিলো স্যাম।

    রেমি তোয়ালে দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে তার পাশে এসে লাউঞ্জে বসে বলল, কার সাথে কথা বলছিলে?

    আর্চার। ব্রির ব্যাপারে খতিয়ে দেখেছে। তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি ওর বিরুদ্ধে।

    হুমম, বলল রেমি। তার কণ্ঠস্বরে আত্মগৌরবের ছাপ মিশে আছে।

    ল্যারেইনের ব্যাপারে আরো ঘাটাঘাটি করছে এখন। জানা গেছে আর্থিকভাবে বেশ সমস্যার মধ্যে আছে ল্যারেইন। ফার্মটাও হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে।

    এর জন্য নিজের বাবার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে?

    মানুষ আরো ছোটো কারণে আরো খারাপ কিছু করে। তবে ভালো খবর এটা যে, আর্চারের তদন্ত এবং সেলমার গবেষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কোনো কাজ নেই। এর মানে তোমাকে বলা ছুটির সূচনাটা কিন্তু এখন করা যায়।

    ভালো বলেছো, ফার্গো, কিন্তু তোমার মাকে তো কথা দিয়েছিলাম আমরা যে বিকালে তাকে দেখতে যাবো।

    স্যামের মা ইউনিস। সত্তর বছর বয়সেও মহিলা বেশ শক্ত-সামর্থ্য আছে। থাকে কী-ওয়েস্টে। মা বুঝবে ব্যাপারটা।

    শুনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো রেমি। না যাওয়ার কারণ হিসেবে তাহলে কী বলবে তাঁকে?।

    স্যাম যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নিয়ে ভাবতে যাবে, ঠিক তখনই দিনে দ্বিতীয়বারের মতো বেজে উঠলো ফোনটা। সেলমা কল করেছে। স্যাম স্পিকার অন করে রিসিভ করলো ফোনটা। আপনাদের ছুটিতে ব্যাঘাত ঘটানোয় দুঃখিত, মি, ফার্গো। তবে লাযলো ভাবছে সে নাকি সাইফার হুইলটা খুঁজে বের করার উপায় পেয়ে গেছে।

    .

    ২২.

    বলো কী জানতে পেরেছো তোমরা? বলল স্যাম।

    সেলমা স্নেক আইল্যান্ডের কাছে ডুবে যাওয়া জাহাজটার ইতিহাস বিকৃত করছে ওদের কাছে। জামাইকা থেকে যাত্রা করা কয়েকটা জাহাজের একটা ছিলো এটা। ইন্টারনেটে অন্য জাহাজগুলোর ব্যাপারেও বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছি আমরা, তবে উপকারী কিছু পাইনি। আমাদের ধারণা আপনারা যেটা খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেটা হয়তো জামাইকাতে খুঁজে পাবেন।

    জামাইকা? রেমি বলল। বছরের এই সময়ের জামাইকাকে বেশ ভালো লাগে আমার।

    দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, সেলমা বলছে, আপনাদের যেতে হবে কিংস্টনে, সৈকতে না। নিশ্চিতভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো কয়েকটা অঞ্চলের একটা ওটা।

    কিংস্টনেই যাওয়া হচ্ছে তাহলে, স্যাম বলল। তো, ওখানে আমরা আসলে কী খুঁজতে যাবো, সেলমা?

    জাহাজের মালিকানার ব্যাপারে থাকা রেকর্ডগুলো। কোথা থেকে এসে জামাইকাতে থেমেছিলো সেটা। এতে করে সেকেন্ড হুইলের জন্য কোথায় খোঁজা লাগবে সেটার ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সাবধানে থাকবেন। যেহেতু আমরা খুব সহজেই তথ্যগুলো পেয়ে গেছি, তারমানে এভেরির লোকদেরও এই তথ্যগুলো বের করতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। তারাও হয়তো একই পথে এগুচ্ছে এখন।

    ****

    নরম্যান ম্যানলি ইন্টারন্যাশনালে ল্যান্ড করার আগেই তাদের জন্য দরকারি সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছে সেলমা। কাস্টম থেকে ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার পর বেরুতেই এক রেন্টাল কার কোম্পানির কর্মী প্রশস্ত হাসি হেসে স্বাগত জানালো ওদেরকে। জামাইকায় স্বাগতম, মি, অ্যান্ড মিসেস ফার্গো। কিছুটা ছান্দসিক টান মিশে আছে তার সুরের সাথে। স্বাগত জানিয়ে গাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র, গাড়ির চাবি এবং একটা ম্যাপ বাড়িয়ে দিলো লোকটা।

    স্যাম ম্যাপটার দিকে তাকিয়ে বলল, গাড়িতে জিপিএস আছে?

    অবশ্যই। নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, খুবই কার্যকরী একটা জিপিএস আছে। তারপরও একটা ম্যাপ দিয়ে দিলাম নিরাপত্তার জন্য। তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের সময় ম্যাপটাকে হাতপাখা হিসেবেও কাজে লাগাতে পারবেন।

    ধন্যবাদ, বলে কাগজগুলো স্বাক্ষর করে দিলো স্যাম।

    সব কাজ সম্পন্ন করার পর লোকটা তাদেরকে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো। একটা নীল বিএমডব্লিউ ৫২৮আই সেডান দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টের বাইরে। ফার্গোরা গাড়িটা ভালোভাবে চেক করে দেখার পর লোকটা বলল, এই চমৎকার বিকালে কি আপনাদের আরো কোনো সাহায্য করতে পারি আমি? আর কিছু লাগবে আপনাদের?

    হ্যাঁ, একটা ভালো রেস্টুরেন্টের খোঁজ দিলে ভালো হতো, স্যাম জানালো। কিংস্টনের দিকে যাচ্ছি আমরা।

    মূল্যের দিক দিয়ে ভালো নাকি মানের দিক দিয়ে?

    মানের দিক দিয়ে ভালোটা।

    অবশ্যই, এমন একটা জায়গা চিনি আমি। বলে কলম বের করে একটা কাগজে রেস্টুরেন্টের নাম এবং ঠিকানা লিখে দিলোলোকটা। কিংস্টনে অনেক ভয়ঙ্কর কিছু এলাকা আছে। এসব জায়গায় আমি সাধারণত পর্যটকদের পাঠাই না। তবে এই জায়গাটা এতোটা বিপজ্জনক না। এখানের মানুষেরা বেশ ভালো। আপনি ওখানে গিয়ে মেলিয়া নামের একজনের খোঁজ করবেন। তাকে গিয়ে বলবেন আপনাদেরকে কেমার পাঠিয়েছে। জামাইকার সবচেয়ে সেরা খাবারটাই পাবেন ওখানে। শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি।

    ধন্যবাদ, বলে ঠিকানা লেখা কাগজটা পকেটে পুরে নিলো স্যাম।

    ওহ, জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনাদের কি এখানে কোনো বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা?

    না, স্যাম বলল। প্রশ্নটা বেশ অদ্ভুত লাগলো তার কাছে। কেন?

    আপনারা আপনাদের গাড়ি রিসিভ করেছেন কিনা সেটার ব্যাপার দুইজন লোক খোঁজ নিতে এসেছিলো।

    আর আপনি কী বলেছেন তাদেরকে? স্যাম জানতে চাইলো।

    অন্যান্য কাস্টোমারদের যা বলি সেটাই বলেছি। আমরা আমাদের কাস্টোমারদের তথ্য অপরিচিতদের সাথে শেয়ার করি না।

    তারা কী গাড়ি ড্রাইভ করছিলো সেটা বলতে পারবেন?

    দুঃখিত! ওটা খেয়াল করিনি। তারা সরাসরিই ভিতরে চলে এসেছিলো, আর আমিও তখন অন্য একজনকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

    ধন্যবাদ, বলে লোকটার হাতে মোটা অঙ্কের বখশিস ধরিয়ে দিলো স্যাম। তারপর রেমিকে নিয়ে গিয়ে চড়ে বসলো গাড়িতে।

    চমৎকার, সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলছে রেমি। আমরা এসে নেমেছি মাত্র, আর এখনই পিছে চর লেগে গেলো?

    লাগুক, এবার তাদেরকে উষ্ণভাবেই স্বাগত জানাবো, বলে ফিশিং ভেস্টের গোপন পকেটে রাখা স্মিথ অ্যাণ্ড ওয়েসন পিস্তলটার ওপর হাত বুলাযলো স্যাম। তবে এতে বুঝা যাচ্ছে যে আমরা ঠিক পথেই এগুচ্ছি।

    দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তারাও কিন্তু সঠিক পথেই রয়েছে।

    অন্তত পক্ষে এবার আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, বলল স্যাম।

    ব্রিটিশ রীতি মেনে চলার কারণে এখানের গাড়িগুলোর ড্রাইভিং সিট গাড়ির ডানপাশে। গাড়ি চালাতে হচ্ছে তার রীতি অনুযায়ী রাস্তার বেঠিক পাশ দিয়ে। এভাবে প্রথম কয়েকটা মোড় ঘুরাতে বেশ সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে স্বচ্ছন্দ হয়ে গেছে। এয়ারপোর্ট ছেড়ে আসার পর থেকেই রিয়ারভিউ মিররে চোখ রাখছে স্যাম। কয়েক মাইল এগুনোর পর একটা সাদা এসইউভি চোখে পড়লো তার। যেহেতু এয়ারপোর্ট থেকে বেরুনোর রাস্তা একটাই, তাই গাড়িগুলো বেশ কিছুক্ষণ নজরে থাকাই স্বাভাবিক। এসইউভিটা অবশ্য এখন গতি বাড়িয়ে অন্য গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। তবে কিছুক্ষণ পরই গাড়িটাকে আবার গতি থামিয়ে পিছনে চলে যেতে দেখলো। স্যাম সামনে তাকিয়ে দেখলো যে রাস্তার বিপরীত লেনটা প্রায় খালিই বলা যায়। চাইলে খুব সহজেই অন্য গাড়িগুলোকে ওভারটেক করে দ্রুতগতিতে চলে যেতে পারতো এসইউভিটা।

    স্যামের ধারণা-হয় গাড়িতে থাকা পর্যটকেরা লেন বদল করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না, নয়তো গাড়িতে আসলেই সে এবং রেমি আছে কিনা এটা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে এভেরির লোকেরা। আর এসইউভিটাও এতো দূরে রয়েছে যে স্যামও ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে না ঐ গাড়িতে আসলে কারা আছে। শুধু রেমিকে বলল, আমাদের পিছে হয়তো ফেউ লেগেছে।

    এখনই? গাড়ির সাইড মিরর দিয়ে পিছনের দিকে তাকালো রেমি। কোন গাড়িটা?

    সাদা এসইউভি। পিছনের গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে আসছিলো, তবে পরে আবার মতলব পালটে পিছনে চলে গেছে।

    আমরা গাড়িতে আছি কিনা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে?

    সম্ভবত।

    এখন কী করব তাহলে?

    রেস্টুরেন্টের পথ ধরে এগিয়ে যাব। দেখি তারা আমাদের অনুসরণ করে কিনা।

    শহরে পৌঁছেই বামে মোড় নিলো স্যাম। তবে এসইউভিটা চলে গেছে সোজা পথে। দৃশ্যটা দেখে হালকা স্বস্তি পেলো স্যাম। গাড়িটা কে চালাচ্ছিলো দেখেছো? রেমিকে জিজ্ঞেস করলো।

    না। টিন্টেড গ্লাস।

    আরো একবার বামে বাঁক নিয়ে একটা বড়ো ট্রাকের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো স্যাম। আশা করছে ট্রাকের কারণে তাদেরকে দেখতে পারবে না কেউ। কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সাইড মিরর দিয়ে রাস্তার মোড়টার দিকে তাকালো। সাদা এসইউভিটাকে আর দেখা যাচ্ছে না এখন। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার আবারো গাড়ির ইঞ্জিন চালু করলো স্যাম। রাস্তার পাশ ঘেষে রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবার। কেমার যেমনটা বলেছিলো, শহরের এই অংশে পর্যটকদের কোনো ভিড় নেই। ছোটোখাটো খুপড়ি এবং টিনের ঘরের পাশ দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও পথচারীর সংখ্যার কমতি নেই। খোলা রাস্তার ওপর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে তারা। এমনকি গাড়ি আসলেও সরে যাওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ নেই তাদের মধ্যে। তাদের ধারণা গাড়িচালকই একসময় গাড়ির গতি কমিয়ে দিবে বা থামিয়ে দিবে। বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর একটা সময় রাস্তার পাশের ছোটোখাটো খুপড়িগুলো হারিয়ে গেলো। ওগুলোর বদলে এখন রাস্তার পাশে বড়ো বড়ো দালান দেখতে পাচ্ছে ওরা। সঠিক ঠিকানায় চলে আসার পর রেস্টুরেন্টের দিকে ছুটলো স্যাম। উজ্জ্বল বেগুনি রঙ করা একটা দালানেই রয়েছে রেস্টুরেন্টটা। এর আশেপাশে আরো অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সবগুলো দালানই রংধনুর ভিন্ন ভিন্ন বর্ণে রঙ করা। জামাইকার আসল প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠেছে।

    পিছনের লোকগুলোকে খসাতে পেরেছো? রেমি জানতে চাইলো।

    দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। তবে তারপরও রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করবো আমরা। এখানে পার্ক করে সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার কোনো মানেই হয় না।

    বলে গাড়িটা নিয়ে কোনার দিকে সরে গেলো স্যাম। এই এলাকাটায় প্রায় ডজন খানেকের মতো রেস্টুরেন্ট আছে। কেউ যদি প্রতিটাতেই গিয়ে গিয়ে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে যায়, তাহলেও যথেষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় হবে। এতে করে আর কিছু না হলেও অন্ততপক্ষে শান্তিতে খাবার খাওয়ার মতো সময় পাবে ওরা।

    .

    হেঁটে রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় তিন মিনিটের মতো লাগলো ওদের। ভাড়া করা গাড়ি থেকে বেরুতেই মনে হচ্ছে যেন জ্বলন্ত কড়াইয়ে এসে নেমেছে। অতিরিক্ত আর্দ্রতাটা সহ্য করতে পারছে না।

    একটু পরপরই কপালের ওপর জমা ঘাম মুছছে রেমি। চুলে আঙুল ঢুকিয়ে চুলগুলোকেও পনিটেইল করে নিয়েছে। রেস্টুরেন্টে এয়ার-কন্ডিশনার থাকার সম্ভাবনা আছে?

    শহরের এই অংশে এয়ার-কন্ডিশন খুঁজছো? ভালো একটা সিলিং ফ্যান থাকলেই সন্তুষ্ট আমি। তবে উজ্জ্বল বেগুনি রঙের দালানটায় ঢুকে হতাশই হতে হলো তাদের। একটা সিলিং ফ্যানই রয়েছে পুরো রেস্টুরেন্টে, তবে ওটা থেকে খুব একটা বাতাস আসছে না।

    হোটেলে ঢুকতেই একজন মহিলা স্বাগত জানালো ওদের। মহিলা দেখতে বেশ লম্বা, চুলগুলো কোঁকড়া, ছোটো ছোটো করে ছাঁটা, প্রায় মাথার খুলির সাথে লেগে রয়েছে যেন। তাদেরকে দেখে সাথে করে কাউন্টার থেকে দুটো মেন্যু কার্ডও তুলে নিয়ে এসেছে মহিলা।

    কেমারের কথামতোই মেলিয়ার খোঁজ করলো স্যাম।

    আমিই মেলিয়া, জবাবে জানালো মহিলা।

    এরপর স্যাম কেমারের কথা জানাতেই প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠলো মহিলার মুখে।

    কেমার? কেমারের মতোই মহিলার কণ্ঠস্বরেও ছান্দসিক টান মিশে আছে। খুবই ভালো একজন মানুষ এখানে পাঠিয়ে আপনাদের। প্লিজ, এইদিকে আসুন। আপনারা আমাদের বিশেষ অতিথি। আর আমাদের বিশেষ অতিথিরা বাইরের প্রাঙ্গণে বসে। ওখানকার জায়গাটা বেশ ঠাণ্ডা। সমুদ্র অভিমুখী হওয়ায় বাতাসের প্রবাহও পাওয়া যায়।

    বলে ডাইনিং রুমের ভিতর দিয়ে তাদেরকে একটা দরজার দিকে নিয়ে গেলো মেলিয়া। তারপর দরজা খুলে ক্যাচক্যাচ করতে থাকা এক সরু সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো ছাদের ওপরে থাকা বহিঃপ্রাঙ্গণে। ছাদটা থেকে নিচের রাস্তাও দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে মেলিয়ার কথামতোই বাতাসের ঝাঁপটাও ভেসে আসছে দক্ষিণ দিক থেকে।

    মেন্যু দুটো টেবিলে রেখে তাদেরকে বসতে বলল মেলিয়া। তাদের টেবিলটা পাশের দালানের ছাদের দিকে মুখ করে স্থাপন করা হয়েছে। ওপরে রয়েছে একটা বড়ো ছাতা। ছাতার নিচে ঠাণ্ডাটা একটু বেশি থাকে।

    চমৎকার, বলে চেয়ার টেনে টেবিলে বসলো রেমি।

    বসার আগে ছাদের ধারে গিয়ে নিচের দৃশ্যটা একবার দেখে নিলো স্যাম। দোতলা-দালানের ছাদ থেকে তাদের গাড়িটা দেখতে পাচ্ছে। তবে সাদা এসইউভি বা কোনো সন্দেহজনক পথচারী চোখে না পড়ায় বেশ সন্তুষ্টই হলো ও। এরমানে তাদেরকে কেউ অনুসরণ করেনি। সন্তুষ্ট হয়ে টেবিলে ফিরে এলো আবার। টেবিলের অবস্থানটা ছাদের একেবারে মাঝের দিকে খুশিই হলো স্যাম। এতে করে নিচ থেকে কেউ তাদেরকে দেখতে পারবে না।

    অবশ্য তারপরও এভেরির লোকেরা থেমে থাকবে না। নিচে রাখা ভাড়া করা গাড়িটা তাদের চোখে পড়লেই এলাকার প্রতিটা রেস্টুরেন্টেই খুঁজে দেখবে ওরা। এটা ভেবেই পকেট থেকে একশো ডলারের একটা নোট বের করে মেলিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, মেলিয়া, কেউ এখানে এসে আমাদের খোঁজ করলে কি আপনি আমাদেরকে এসে একটু সতর্ক করে দিতে পারবেন?

    ঝট করে হাত পিছিয়ে নিলো মেলিয়া। এই ছোটো কাজের জন্য এই টাকাটা অনেক বেশি হয়ে যায়। টাকা রেখে দিন, কেউ এসে খোঁজ করলে আমি এমনিতেই এসে জানিয়ে যাব আপনাদের। এখন বলুন, কী খেতে চান আপনারা?

    স্যাম মেনুটা হাতে তুলে নিয়ে বলল, আপনিই রিকমেন্ড করুন।

    মেলিয়া মুচকি হেসে বলল, মেনু থেকে বলবো নাকি মেনুর বাইরের কিছু? আপনারাই বলুন কী খেতে চান, যেটা বলবেন সেটারই ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।

    সত্যি বলতে তারা এই ধরনের রেস্টুরেন্টই বেশি পছন্দ করে। সংক্ষেপে বললে, স্কচ বনেট পেপার মেরিয়ান্ডে সস দিয়ে ঝলসানো মুরগি অর্ডার করলো ওরা।

    তাদের খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই আবার ফিরে এলো মেলিয়া। তার কালো মুখটায় কিছুটা দুঃশ্চিন্তার ছাপ মিশে রয়েছে এখন। কেউ এসে আপনাদের খোঁজ করলে আপনাদেরকে সতর্ক করে দেওয়ার কথাই তো বলেছিলেন আমাকে?

    হ্যাঁ, বলে দরজার মুখের দিকে তাকালো স্যাম। কী হয়েছে?

    আপনি যেটা বলেছিলেন সেটাই। একজন শ্বেতাঙ্গ এসে জিজ্ঞেস করলো আমরা কি একজন পুরুষের সাথে লালচুলো এক সুন্দরী মহিলাকে কোথাও দেখেছি কিনা। বলে রেমির দিকে তাকিয়ে ক্ষমাসুলভভাবে হাসলো মেলিয়া। আমরা তাদেরকে মানা করে দিয়েছি। লোকটাকে দেখতে চাইলে দেখতে পারেন। বলে স্যামকে ছাদের ধারের দিকে যাওয়ার নির্দেশ করলো মেলিয়া। ধারের কাছে যেতেই বলল, ঐ যে, কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ঐ লোকটাই এসেছিলো।

    সামনের দিকে তাকাতেই ছোটোখাটো দৈর্ঘ্য ও গাট্টাগোট্টা শরীরের একটা লোককে দেখতে পেলো স্যাম। তাদের দিকে থেকে উলটো দিকে ঘুরে ফোনে কথা বলছে লোকটার চেহারটা দেখতে পাচ্ছে না যদিও। এলাকার অন্যরা যেখানে খাকি বা শর্ট প্যান্ট এবং হাফ-হাতা শার্ট পরে রেখেছে, সেখানে এই লোকটা কালো লেদার কোট এবং গাঢ় রঙের স্ন্যাকস পরে আছে। চেহারা না দেখলেও লোকটাকে চিনতে কোনো ভুল হলো না স্যামের। এটা জ্যাক পিকারিংর দোকানে ডাকাতির সময়ও এই পোশাকেই ছিলো লোকটা। ঠিক তখনই রাস্তার অন্যপাশের একটা রেস্টুরেন্ট বেরিয়ে এলো দ্বিতীয় আরেকজন। বেরিয়ে রাস্তার এপাশ-ওপাশে একবার দেখে তাকালো জ্যাকের দিকে।

    তাড়াতাড়ি করে ছাদের ধার থেকে সরে এলো স্যাম। বিপদটা বুঝতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না তার। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কি অন্য কোনো রাস্তা আছে?

    হ্যাঁ, ফায়ার এস্কেপ আছে, বলে ছাদের অন্যপ্রান্তের দিকে নির্দেশ করলো মেলিয়া। ওটা থেকে একটা মই নেমে গেছে সরু গলিতে।

    এতেই কাজ হয়ে যাবে আমার, স্যাম বলল। রেমি?

    হ্যাঁ। আমারও।

    রেমির মত পেয়েই স্যাম তার পকেট থেকে বেশ কয়েকটা একশো ডলারের নোট বের করে রাখলো টেবিলের ওপর। মেলিয়া আপত্তি করতে শুরু করেছিলো, তবে স্যাম তাকে থামিয়ে বলল, বেশি দিচ্ছি না, ঠিকই দিচ্ছি। রাখুন।

    বলে মইয়ের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। রেমি তার ঠিক পিছে পিছেই আসছে। ওপর থেকে গলিটাকে খালি বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে। মইয়ের দুই পাশে দুইটা বড়ো বড়ো ময়লার ঝুড়িও আছে। এতে বেশ ভালোই হয়েছে, প্রয়োজনে ওগুলোকে কাজে লাগানো যাবে।

    মইয়ের ধাপে পা দিয়ে রেমির জন্য অপেক্ষা করছে ও। রেমিও মইয়ের ধাপে চড়ে বসতেই নামতে শুরু করলো স্যাম। লাঞ্চের জন্য দুঃখিত, নিচে নামতে নামতে বলল স্যাম।

    তুমি কি জানো যে ঐ মুরগীটাকে আমাদের জন্যই মারা হয়েছিলো?

    মেরে খুব একটা লাভ হয়নি।

    আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে ওখানে।

    আগে পিছন থেকে ঝামেলা খসাই, তারপর নাহয় প্ল্যান সাজাব।

    মাটি থেকে চার ফুট উঁচুতেই শেষ হয়ে গেছে মইটা। এইটুক দূরত্ব লাফিয়ে নামা স্যামের জন্য তেমন কোনো বিষয় না। নিচে নেমে রেমির জন্য অপেক্ষা করছে এখন। রেমিকে মই বেয়ে নামতে দেখার দৃশ্যটা উপভোগ করছে।

    রেমি দৃশ্যটা দেখে বলল, আমরা দৌড়াচ্ছি আমাদের জীবন নিয়ে, আর তুমি তাকিয়ে আছে আমার দিকে?

    মৃদু হেসে রেমির কোমড় ধরে তাকে মই থেকে নামিয়ে স্যাম বলল, অন্ততপক্ষে এতে তো আমি শান্তি নিয়েই মরতে পারবো।

    ময়লার ঝুড়ির আড়াল থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলো ওরা। রেমি গলির এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছে এভেরির লোকেরা আছে কিনা। কোন দিকে যাবো এখন?

    ভালো প্রশ্ন। যদি এভেরির লোকেরা তাদের পার্ক করা গাড়িটা থেকে খোঁজ শুরু করে, তাহলে তারা এখন তাদের বাম দিকে আছে। তাই স্যাম বলল, ডানে যাও।

    গলির শেষ প্রান্তে পৌঁছে উঁকি দিয়ে রাস্তাটা একবার দেখে আবার মাথা ফিরিয়ে আনলো স্যাম। ঠিক ঐ মুহূর্তেই সাদা গাড়িটা এসে উপস্থিত হলো রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ধরে পড়ে যাবে ওরা। তাই গলির অন্য প্রান্তের দিকে তাকালো স্যাম। বেশ কয়েকটা দরজা রয়েছে ঐদিকে। এগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দরজাটা আবার জালিকাময়। নিশ্চিতভাবেই দোকানে বাতাস চলাচলের জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইদিকে আসো, রেমিকে বলেই গলি ধরে দরজাটার দিকে দৌড় লাগালো স্যাম। সাথে আশা করছে জালিকা লাগানো কপাটটা যেন তালা দেওয়া না থাকে।

    .

    ২৩.

    স্যামের পিছু পিছু বিল্ডিংটায় ঢুকলো রেমি। তারা ঢুকতেই আবার খুট করে লেগে গেলো দরজাটা। দালানের অনুজ্জ্বল আলোটা চোখে সইতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগছে। দালানের ছোটো হলওয়ে ধরে দৌড়ে যাচ্ছে তারা। ময়লাটে সাদা দেয়ালগুলোতে অনেক ধরনের গ্রাফিতি এবং পূর্বে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটক ও শহরের নাম লেখা রয়েছে। দৌড়ে বাররুমে গিয়ে ঢুকলো ওরা। জোরালো রেগা মিউজিক চলছে রুমটাতে। রুমের রুক্ষ জনমন্ডলি দেখে রেমি ধারণা করলো এটা হয়তো বাইকার বারের জামাইকান সংস্করণ। সাধারণত তারা এরকম কোনো জায়গায় যায় না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। তারা ঢোকার পর থেকেই রুমের আট-দশজন মানুষ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকেই। মানুষগুলোর বেশির ভাগই হাফ-হাতা টি শার্টের ওপর চামড়ার ভেস্ট পরে রেখেছে। বেশির ভাগের হাতেই ট্যাটু এঁকে রাখা। যদিও তাদের কালো চামড়ার কারণে ট্যাটুগুলো ঠিকমতো নজরে পড়ছে না। এটাকে সমস্যা বলেই মনে হচ্ছে রেমির কাছে। এই ধরনের মানুষের ভিতর থাকলে তাদেরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে কোনো কষ্টই করতে হবে না।

    স্যাম তার পকেট থেকে কিছু নোট বের করে বারের ওপর রেখে বলল, আমার তরফ থেকে সবার জন্যই ড্রিংকস, মি. …? বলে প্রশ্ন তাকালো বারটেন্ডারের দিকে।

    বন্ধুদের কাছে জে-জে নামে পরিচিত আমি, ছান্দসিক সুরে বলল লোকটা। বন্ধু, আপনি যে পরিমাণ টাকা দিলেন, তাতে আপনাদেরকে নিজেদের লোক করে নিতেও কোনো সমস্যা নেই আমার।

    এরপর স্যাম তার পরিচয় দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো লোকটার দিকে। জে জের সাথে হাত মিলিয়ে বলল, আমার ওয়াইফ নিরাপদে থাকবে এখানে? আমার ফিরতে বেশিক্ষণ লাগবে না।

    একদম নিরাপদে থাকবে। কথা দিলাম আমি।

    সন্তুষ্ট হয়ে স্যাম রেমির দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, আমি গিয়ে দেখি আমাদের গাড়িটা আনতে পারি কিনা। একমুহূর্তের মধ্যেই ফিরে আসব। বলে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো স্যাম। দরজার ফাঁক দিয়ে একবার উঁকি দিয়ে তারপর বেরিয়ে গেলো বাইরের রাস্তায়

    স্যাম বেরিয়ে যেতেই বারটেন্ডারের দিকে তাকালো রেমি। তারপর তাকালো আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে। অবশ্য মানুষগুলোর কেউই তাকে উত্যক্ত করছে না। বরং ড্রিংকস খেতে খেতে উলটো আরো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। স্যামের মানুষ যাচাই করায় ভুল হয় না কখনো। জায়গাটাকে নিরাপদ না ভাবলে সে কখনোই রেমিকে এখানে একা রেখে যেতো না।

    তারপরও রেমির কাছে এখানে বসে অপেক্ষা করাটাকে বেশ কঠিনই লাগছে।

    জে-জে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো একবার। তারপর বলল, কার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, সুন্দরী রমনী?

    টুলটা ঘুরিয়ে বারটেন্ডারের দিকে তাকালো রেমি। হার্লে-ডেভিডসনের লোগোওয়ালা একটা কালো টিশার্ট পরে রেখেছে লোকটা। জটলা চুলগুলো পনিটেইল করে বাধা, তবে তার গাঢ় চোখগুলোয় কোনো আক্রোশ বা অনিষ্টকারী কোনো ছাপ নেই। খুব সম্ভবত স্যাম এই কারণেই লোকটাকে বিশ্বাস করেছে। কয়েকজন ডাকাত। তারা আমাদেরকে মেরে ফেলার পণ করে পিছু লেগেছে।

    নিশ্চয়ই ঐ সাদা চামড়ার মানুষগুলো? কিছুক্ষণ আগে দুই লোক এসেছিলো এক লাল-চুলো মহিলা ও এক আমেরিকানের খোঁজ করতে।

    কথাটা শুনেই নিজের দুর্বলতাটা বুঝতে পারলো রেমি। চুলে স্কার্ফ পরার ফ্যাশনটা এখন নেই বলে আক্ষেপ হচ্ছে তার। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তারা এখানে এসেছিলো?

    হ্যাঁ। মিনিট বিশেক আগে এসেছিলো। তবে আপনি কোনো দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আপনি এখানে নিরাপদই থাকবেন। ড্রিংকসের জন্য কিছু দিবো আপনাকে?

    শুধু পানি দিন, প্লিজ, বলল রেমি। এখনই কড়া অ্যালকোহল খাওয়ার সময় হয়নি।

    এরপর আর কিছু না বলে গ্লাসে পানি ঢেলে রেমির দিকে বাড়িয়ে দিলো জে-জে। তারপর নিজের কাজ করতে শুরু করলো। একটা ছোটো কাপড় নিয়ে বারের টেবিলটা মুছছে এখন।

    পানিতে চুমুক দিলো রেমি। চুমুক দিতে দিতে বারবারই ফিরে তাকাচ্ছে দরজার দিকে। বেশ কয়েক মিনিট পেরিয়ে গেছে, তবু স্যাম এখনো ফিরে আসেনি। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজার দিকেই এগিয়ে গেলো ও। দরজা দিয়ে মাথা বের করতেই বাইরে পার্ক করে রাখা অনেকগুলো মোটরসাইকেল দেখতে পেলেও স্যামের কোনো চিহ্ন দেখতে পাচ্ছে না।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই জে-জেও যুক্ত হলো তার সাথে। আপনার বদলে আমি উঁকি দিয়ে দেখলেই ভালো হবে। আমাকে এখানে কেউ আলাদাভাবে খেয়াল করতে আসবে না। কিন্তু আপনার ব্যাপার আলাদা। বলে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো জে-জে। ভাবটা এমন যেন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ব্রেক নিতে বেরিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ফিরে এলো। এসে রেমিকে তার আসনে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে বলল, আপনার স্বামী ফিরে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। লোকটা লুকানোয় দক্ষ, তবে আমি আবার খুঁজে বের করায় দক্ষ।

    সত্যিই মিনিট খানেকের ভিতরেই ফিরে এলো স্যাম। প্রায় দৌড়ে এসেছে বলা যায়। রেমির কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, বড়ো সমস্যায় পড়ে গেছি।

    জে-জে স্যামের দিকে এক গ্লাস পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কী সমস্যা, বন্ধু?

    স্যাম এক ঢোকে পানি গিলে দরজার দিকে ইশারা করে বলল, এভেরির লোকেরা… রাস্তার মধ্যেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখলাম… তাদের একজন অন্য প্রান্তের রেস্টুরেন্টগুলোতে আমাদের খোঁজ করছে।

    স্যামের কথা শুনে পাশের টেবিলেই থাকা বাইকারদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো জে-জে। ইশারা পেয়েই উঠে দাঁড়ালো তারা। দুইজন এগিয়ে গেলো সামনের দরজার দিকে, আর দুইজন গেলো পিছনের হলওয়ের দিকে। দ্বিতীয়বারের মতো এই রাস্তায় দেখা দিয়েছে ওরা, জে-জে বলল। এটা এখন আমারও মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    কাউন্টারের ওপর থেকে রেমি তার ব্যাগটা খাবলে নিয়ে বলল, আমরাও কি পিছনের পথটা দিয়ে বেরিয়ে যাবো?

    মাথা নাড়লো স্যাম। তাদের নজরে না পড়ে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বলে বারে অবশিষ্ট থাকা মানুষগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো একবার। যদিও সত্যি বলতে একটা উপায় কিন্তু এখনো আছে… বলে বারটেন্ডারের দিকে ঝুঁকে উপায়টার ব্যাপারে জানালো স্যাম। এতো নিচু স্বরে বলছে যে জোরালো মিউজিকের শব্দ ছাপিয়ে স্যামের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছে না রেমি।

    .

    ২৪.

    স্যামের কাছ থেকে পরিকল্পনাটা শুনে মাথা ঝাঁকালো জে-জে। সাথে সাথে কয়েকটা প্রশ্নও জিজ্ঞেস করলো। সবশেষে গভীর স্বরে হেসে স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল, প্ল্যানটা খুবই ভালো, বন্ধু। চোখের সামনে থেকেও লুকিয়ে থাকার মতো। অবশ্য এই কাজের জন্য কিছু ভলান্টিয়ার লাগবে আমাদের। বলে তাকালো মিউজিক বক্সের পাশে বসে থাকা এক কাপলের দিকে। অ্যান্টোয়ান, তোমরা দুইজন এদিকে আসো।

    দম্পতি বারের কাছে এসে পৌঁছাতেই জে-জে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিতে ড্রিংকস করতে চাও?

    কিসের বিনিময়ে? অ্যান্টোয়ান জানতে চাইলো।

    স্যাম বলল, বিনিময়ে শুধু কয়েক মিনিটের জন্য আপনাদের বাইকিং গিয়ারগুলো ধার দিতে আমাদেরকে।

    দ্রুতই তাদের সাথে চুক্তি করে নিয়ে তাদের থেকে চামড়ার ভেস্ট এবং হেলমেটগুলো নিয়ে নিলো ওরা। সাথে সাথে জে-জেও তার বাইকের চাবিটা বাড়িয়ে দিয়েছে স্যামের দিকে। আশা করছি, বাইকটার প্রতি যত্ন রাখবেন আপনি।

    ওটাকে একদম নিজেরটার মতো করেই ভাববো।

    বাইক চালানোর ব্যাপারে নিশ্চিত তো আপনি?

    স্যাম চাবিটা হাতে নিতে নিতে বলল, ওটার যদি কিছু হয়, তাহলে দিন গড়ানোর আগেই নতুন একটা বাইক পেয়ে যাবেন আপনি।

    পুরোনোটাই ভালো চলছে। নতুন লাগবে না। এটা কালো হার্লে বাইক। লাইসেন্স প্লেটে আমার বারের অ্যাডভার্টাইজিং ফ্রেমও লাগানো আছে।

    জে-জের থেকে সব বুঝে নিয়ে রেমির অতি-উচ্চমূল্যের পার্সটার দিকে তাকালো স্যাম। তাদের উপস্থিতি ফাঁস করে দেওয়ার জন্য ঐ একটা জিনিসই যথেষ্ট। অবশ্য সমস্যাটা দূর করতে বেশি সময় লাগলো না জে-জের। একটা ব্যাক-প্যাক দিয়ে দিয়েছে যাতে ওটাতে পার্সটা লুকিয়ে রাখতে পারে রেমি। ঠিক তখনই সামনের দরজায় দাঁড়ানো বাইকার দুজন জানালো যে এভেরির লোকেরা অন্য দোকানগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে, এবং এখন এই বারের দিকেই তাকিয়ে আছে।

    শুনে মাথা ঝাঁকালো জে-জে। তারপর জোরালো কণ্ঠে বলল, কে কে বাইক রাইডে যেতে চাও?

    তার কথাটা শুনে উঠে দাঁড়ালো বারের সবাই। হই-হুল্লোড়ের রব উঠে গেছে যেন ভিতরে।

    দেখেছেন? জে-জে বলল স্যামকে। কোনো সমস্যা হবে না। আমার বন্ধুরাই এখন আপনাদেরও বন্ধু।

    একটা সমস্যা আছে তবুও, স্যাম বলে উঠলো। ঐ লোকগুলোর সাথে অস্ত্র আছে।

    তাতে দুঃশ্চিন্তা করবেন না, জে-জে জানালো। আপনাদের নিরাপত্তার ভার বিলির ওপরে। ও ই নিরাপদে পৌঁছে দিবে আপনাদেরকে।

    সাথে সাথেই সুউচ্চ লম্বা একজন বাইকার এসে যুক্ত হলো তাদের সাথে। এসে ভেস্টের দুই পাশ প্রসারিত করে দেখালো স্যামকে। স্যাম দেখতে পেলো, ভেস্টের বামপাশের শোল্ডার হোলস্টারে একটা হ্যান্ডগান রয়েছে এবং ডানপাশে রয়েছে হাতলওয়ালা একটা ট্রেঞ্চ নাইফ, যেটাকে টেনে বড়ো করে ধাতব নাকলস হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ধারণা করলো রুমে বিলিই হয়তো একমাত্র অস্ত্রধারী না, অন্যদের কাছেও হয়তো কিছু না কিছু আছে। রুমের প্রতিটা মানুষই তাদের পক্ষে আছে ভেবেও বেশ স্বস্তি পাচ্ছে ও।

    বারটেন্ডারের দিকে ফিরে শেষবারের মতো হাত মিলিয়ে নিলো স্যাম। সবাইকেই তাদের প্রাপ্যটা দিয়ে দিবো আমরা।

    খুবই প্রশংসনীয় ভাবনা। তবে এটার দরকার পড়বে না। আপনারা নিরাপদে থাকলেই চলবে।

    এরপর আর কোনো কথা না বলে হেলমেটগুলো মাথায় লাগিয়ে নিলো ওরা। সাথে সাথে বাইরে বেরিয়ে থাকা চুলগুলোও হেলমেটের আড়ালে লুকিয়ে নিলো রেমি। তারপর অন্য বাইকারদের সাথে করে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। এগিয়ে গেলো তাদের মোটরসাইকেলগুলোর দিকে। জে-জের বাইকটা খুঁজে বের করে ওটাতে চড়ে বসলো স্যাম। রেমি বসেছে তার পিছনে। স্যামের কোমড়ে হাত পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে ও।

    বাইকে চাবি ঘুরাতেই গর্জন করে উঠলো হার্লের ইঞ্জিনটা। বাইকটা চালু করেই রিয়ারভিউ মিরর দিয়ে পিছনের দিকে তাকালো স্যাম। এভেরির লোকেরা এখন রাস্তা ক্রস করে বারের দিকেই এগিয়ে আসছে। এদের একজন আবার তাকিয়ে আছে স্যামদের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই আবার পিছনের দিকে দৌড় লাগালো এভেরির লোকেরা।

    তারা ঠিকই স্যামদেরকে চিনে ফেলেছে। ছদ্মবেশ নিয়েও ধোকা দেওয়া গেলো না। এভেরির লোকেরা গাড়িতে চড়ে বসতে পারলে সুবিধাটাও তাদেরই বেশি থাকবে। মোটর সাইকেলে করে তাদেরকে খসানোটা স্যামের পরিকল্পনারও অংশ ছিলো না।

    তাই লোকগুলো পৌঁছানোর আগেই বাইক নিয়ে সাদা এসইউভিটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো স্যাম। বিলিও এসে দাঁড়িয়েছে তার পাশে! বিলি আসতে স্যাম তাকে বলল, আপনার ট্রেঞ্চ নাইফটা কি একটু ধার দেওয়া যাবে?

    ভেস্টের আড়াল থেকে চাকুটা বের করে স্যামের দিকে বাড়িয়ে দিলো বিলি। স্যাম যেমনটা ভেবেছিলো, ঠিক তেমনই। দুই-ফলা বিশিষ্ট চাকুটা আসলেই প্রচণ্ড ধারালো।

    ওদিকে রেমি উদ্বিগ্ন হয়ে স্যামের কোমড় চেপে ধরে বলল, তারা কিন্তু এদিকেই এগিয়ে আসছে। চাকুর জায়গায় পিস্তল ভালো হতো না?

    ওটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করো না তুমি, বলে নিচে ঝুঁকে গাড়ির সামনের ডান চাকায় চাকুটা গেঁথে দিলো স্যাম। বের করে আরো বেশ কয়েকবার একই কাজ করলো।

    হাওয়া বেরিয়ে যেতেই রাস্তার সাথে মিশে গেলো টায়ারটা।

    এতে করে কিছুটা সময় পাবো আমরা, বলে চাকুটা আবার বিলির কাছে ফিরিয়ে দিলো স্যাম।

    আবারো চলতে শুরু করেছে তারা।

    রাস্তার কোনার দিকে গিয়েই পিছনের দিকে ফিরে তাকালো স্যাম। দেখলো যে এভেরির লোকের থমকে দাঁড়িয়ে আছে এসইউভিটার পাশে। এদের একজন আবার রাগে গজ গজ করে সমানে লাথি দিচ্ছে গাড়ির নষ্ট চাকাটায়।

    দৃশ্যটা দেখে হেসে উঠলো স্যাম। অবশেষে কিছু একটা তাদের পক্ষে এসেছে। এভেরির লোকেরা পিছ থেকে খসে যাওয়ায় বেশ স্বস্তিও পাচ্ছে ও।

    ****

    আমাদেরকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলো, বাইকারদের বিদায় জানিয়ে ভাড়া করা গাড়ির সিটে বসতে বসতে বলল রেমি।

    গাড়ি চালু করে রাস্তায় বেরিয়ে এলো স্যাম। ঘটনাপ্রবাহে প্রচণ্ড রেগে আছে ও। অনেক বেশি কাছে চলে এসেছিলো। জানি না কী ভেবে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলাম।

    ফোন বের করে মাত্রই হোটেলে যাওয়ার রুটটা দেখতে শুরু করেছিলো রেমি। স্যামের কথাটা শুনে তার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলল, কথাটা দিয়ে কী বুঝালে তুমি?

    আমরা জানতাম যে তারা এখানে আছে। তারপরও এখানে লাঞ্চ করতে আসাটা বোকামি ছিলো।

    এটার সমান দোষ কিন্তু আমারও। আমিও কিন্তু মানা করিনি।

    হ্যাঁ। তবে আমার আর ভালোভাবে বুঝা উচিৎ ছিলো।

    তোমার ধারণা, আমার উচিৎ ছিলো না? দীর্ঘশ্বাস ফেললো রেমি। প্রথমত, তারা যে প্রতি দরজায় দরজায় গিয়ে খুঁজবে তা ভাবার মতো কোনো কারণ ছিলো না আমাদের। গোপনে থেকে গাড়ির ওপর নজর রাখাটাই ছিলো সবচেয়ে কার্যকর ও উপযুক্ত কাজ। আমরা হলেও এটাই করতাম। আর দ্বিতীয়ত, এতে কিন্তু খুব একটা অসুবিধা হয়নি আমাদের। তো নিজের ওপর দোষারোপ করা বন্ধ করো।

    দরজায় দরজায় খোঁজার ব্যাপারে রেমি ঠিকই বলেছে। এভেরির লোকগুলো আসলেই যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এর মানে তারা যথেষ্টর থেকেও বেশি বিপজ্জনক শত্ৰু। তাই রিয়ারভিউ এবং সাইড মিররগুলোতেই চোখ লেগে রয়েছে তাদের। সাদা এসইউভি বা অন্য কোনো গাড়ি দেখা যাচ্ছে না তাদের পিছনে। তারপরও ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা নেই স্যামের। হোটেলে পৌঁছেই হোটেল থেকে চেক আউট করে নিলো। তারপর ভিন্ন নামে চেক ইন করলো অন্য একটা হোটেলে গিয়ে। রেন্টাল কার কোম্পানিতে ফোন করে গাড়িটাও বদলে দিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে স্যাম। সে চাচ্ছে, এভেরির লোকেরা যেন কোনোভাবেই তাদের অবস্থান এবং গাড়ি চিহ্নিত করতে না পারে।

    ****

    নতুন হোটেল রুমের কাঁচের কফি টেবিলের ওপর স্পিকার অন করে ফোন রেখে আরাম করে কাউচে বসলো স্যাম।

    ফোন ধরতে বেশি দেরি করলো না সেলমা। একবার রিং হওয়ার পরই সেলমার গলার স্বর শোনা গেলো স্পিকারে। আপনাদের কলের আশাই করছিলাম। আমার ধারণা আপনারা হয়তো ডিনার করছেন, তাই কল করে বিরক্ত করতে চাইনি।

    রুম সার্ভিসকে বলে দিয়েছি, স্যাম বলল। আমরা আসলে এখন ছদ্মবেশে আছি। দুপুরে লাঞ্চের সময় আক্রমণ হয়েছিলো আমাদের ওপর।

    তাই?

    এভেরির লোকেরা আমাদের আগেই এখানে পৌঁছে গেছে। বিমান থেকে নামার পর থেকেই আমাদের ফলো করছিলো। আমার ধারণা, তারা এখনো তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজে পায়নি।

    আপনার কেন মনে হলো এটা? জিজ্ঞেস করলো সেলমা।

    আসলে এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা। এছাড়া তো আমাদের পিছনে সময় নষ্ট করার কোনো কারণ দেখি না। তারা সারাটা দিনই আমাদের খোঁজে পুরো শহর জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। তারা যদি জিনিসটা পেয়ে যেতো, তাহলে অনেক আগেই চলে যেতো।

    হয়তো, স্যামের পাশে বসতে বসতে বলল রেমি, এভেরির লোকেরা আমাদের ওপর ক্ষেপে আছে।

    সন্দেহাতীতভাবেই ক্ষেপে আছে, বলে কাউচে গা এলিয়ে দিলো স্যাম। তারপর সেলমার কাছে জানতে চাইলো, যাই হোক, আমরা আসলে কিসের খোঁজ করছি?

    জাহাজের ঘোষণাপত্র এবং কোর্টের রেকর্ডসমূহ। আমরা এখন ম্যাপের কোডের অর্থ বের করার চেষ্টা করছি। আর, পিট এবং ওয়েন্ডি স্নেক আইল্যান্ডের কাছে ডোবা ঐ জাহাজটার তথ্য যোগাড় করার চেষ্টা করছে। আগেও বলেছিলাম, কোডের যেটুকু অর্থ বের করা গেছে তাতে আমাদের ধারণা-জাহাজটা জামাইকা থেকে ছেড়ে আসা অনেকগুলো যানের একটা ছিলো। আরো স্পষ্ট কিছু তথ্য বের করেছি আমরা। ১৬৯৪ থেকে ১৬৯৬ এর মধ্যকার ঘোষণাপত্র ঘেটে দেখলেই চলবে আপনাদের। আমরা যদি জাহাজের মালিককে খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে আমরা আসল সাইফার হুইলের খুঁজে বের করার খুব কাছে চলে যেতে পারবো। আর আমাদের ভাগ্য যদি ভালো হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো জিনিসটা এই জামাইকাতেই আছে।

    আমরা এই তথ্যগুলো আসলে পাবো কোথা থেকে? জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    কিংস্টনের জামাইকা আর্কাইভস এবং রেকর্ডস ডিপার্টমেন্টে পাবেন। আমি আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    ধন্যবাদ, সেলমা। আর বাসার সবাইকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাবে। খুবই পরিশ্রম করছে তোমরা।

    বলে ফোন কেটে দিয়ে ওয়াইনগ্লাসটা হাতে তুলে নিলো স্যাম। তাহলে সকাল থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের খোঁজাখুঁজির কাজ।

    রেমি তার গ্লাস দিয়ে স্যামের গ্লাসে হালকা টোকা দিয়ে বলল, অন্ত তপক্ষে ওটা একটা সরকারি দালান। ওখানে অনেক নিরাপত্তা থাকবে বলেই আশা করছি।

    ঠিক তখনই বিজলি চমকালো। ঝড় জমতে শুরু করেছে আকাশে। পুরো আকাশই চকমক করছে বিজলিতে। সাথে বিকট শব্দের বজ্রপাত তো আছেই।

    এটা কি কোনো সতর্কতা নাকি অশুভ কিছুর পূর্বাভাস? আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন নিজেকেই জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    .

    ২৫.

    ব্যক্তিগত অ্যাটোনি উইন্টন পেজের দেওয়া কাগজগুলো পড়ে দেখছেন চার্লস এভেরি। যদিও অনেক রাত হয়ে গেছে, কিন্তু সারাদিন ব্যস্ত থাকায় এর আগে লোকটার সাথে বসতে পারেননি। দ্রুতই ডিভোর্সের কাজটা শেষ করে ফেলতে চাচ্ছেন। কাগজগুলো দেখার পর বললেন, তো, মূল বক্তব্য কী?

    মূল বক্তব্যটা হলো, উইন্টন বলছে, আপনার স্ত্রী যা চাচ্ছে, তাঁকে সেটা দিয়ে দেওয়াই ভালো। নয়তো সারাজীবন এটা ভোগাবে আপনাকে।

    আমার একটা পয়সাও আমি তাকে দিচ্ছি না। শূন্য থেকে এই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছি আমি। আর সে সারাজীবন শুধু আমার টাকাই উড়িয়েছে।

    তিনি কিন্তু আপনার দুই সন্তানের জননী।

    ওরাও তার মায়ের পদাঙ্কই অনুসরণ করছে। দুটোই বখে গেছে।

    এজন্যেই তো উইলগুলো তৈরি করা। তবে আপনার স্ত্রী এখন অনেক বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আপনার জন্য।

    আসলেই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আলেক্সান্দ্রা। যদি কোনোভাবে নিজের ওপর সন্দেহ না এনে মহিলাকে সরিয়ে দেওয়ার উপায় থাকতো, তাহলে তিনি এতোক্ষণে তাই করতেন। নিশ্চিতভাবেই এই পথটা খোলা আছে তার জন্য। তবে এখন মহিলার তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নাক গলানোটা রীতিমতো হুমকির মতো হয়ে উঠেছে। তার ভাড়া করা ঐ ফরেনসিক অ্যাকাউন্টেন্টের ব্যাপারটা কী আসলে?

    আসলে অনেকগুলো যদি জড়িয়ে আছে এখানে। আপনার স্ত্রী যদি কোনোভাবে আপনার রেকর্ডগুলো হাতিয়ে নিতে পারে, তাহলে উনার পক্ষে আপনার গোপন কাজগুলোর সম্পর্কে তথ্য জেনে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা আসলে অনেকটা জুয়ার মতো।

    এই জুয়া খেলতে এভেরির কোনো আপত্তি নেই। তিনি তাঁর কাজের ব্যাপারে এমনিতেই খুব সতর্ক, আর তাছাড়া তিনি জানেন যে আলেক্সান্দ্রা অনেক আগে থেকেই তার গোপন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অবগত আছে। তারপরও খুব বেশি কিছু জানে না মহিলা। এই তো, সাম্প্রতিককালের ফার্গোদের ব্যাপারেই তো কিছু জানে না। ম্যাপ খোঁজার মাঝপথেই উদয় হয়েছে এই ফার্গোদের। তাদের জন্যই তাড়াহুড়ো করে অনেক বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যার জন্যই তাঁকে তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেও নাক গলাতে হয়েছে।

    ফার্গোদের কথা মনে পড়তেই ঘড়ির দিকে তাকালেন এভেরি। ফিস্কের এতোক্ষণে তাঁকে জামাইকায় অনুসন্ধানের ব্যাপারে রিপোর্ট করার কথা। জামাইকাতেই নাকি সাইফার হুইলের কাছে পৌঁছার মতো সূত্র আছে বলে জানিয়েছিলো ফিস্ক। এতোক্ষণে অবশ্যই ওটার ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পেয়ে যাওয়ার কথা তার। তাই সামনে বসা উইন্টন তাঁকে বৈধতা-অবৈধতার ব্যাপারে অনেক কিছু বললেও, তিনি তাকিয়ে আছেন তার ফোনটার দিকেই।

    অবশেষে আলো জ্বলে উঠলো ফোনের পর্দায়। তাড়াতাড়ি করে রিসিভারটা কানে লাগাতেই সেক্রেটারির গলায় শুনতে পেলেন, আপনার স্ত্রী…

    ঠিক তখনই ঝট করে অফিসের দরজা খুলে কেউ বাক্যটা শেষ করে দিয়ে বলল, … এসেছেন অফিসে। আলেক্সান্দ্রার স্বর ভেসে এলো দরজার মুখ থেকে। আমি জানিনা সে কেন তোমার কাছে ফোন করে আগাম জানাতে চায়। ভাবটা এমন যেন আমার এখানে ঢুকতে কোনো অনুমতি লাগবে। যেখানে এই দালানের অর্ধেক মালিক আমি।

    অর্ধেক-মালিক…

    আ-আ, সোনা। ডাক্তার তোমার ব্লাড প্রেশারের ব্যাপারে কী বলেছিলো মনে আছে? বলে পার্স থেকে একটা খাম বের করে পার্সটা কাউচে ছুঁড়ে রাখলো। উইন্টন, তোমাকে এতো পরিশ্রমের সাথে কাজ করতে দেখে খুব ভালো লাগছে আমার। অ্যাকাউন্টিং রেকর্ডের নোটিশটা পেয়েছো তো তুমি?

    কিসের নোটিশ?

    ওহ, খোদা। আমারই ভুল। এই যে এটা, বলে খামটা অ্যাটোনির দিকে বাড়িয়ে দিলো আলেক্সান্দ্রা। অবশ্যই, এটা নোটিশের একটা কপি মাত্র। তবে সব কাজ ঠিকমতো চললে খুব দ্রুতই অরিজিনালটা পেয়ে যাবে। আমি শুধু তোমাদেরকে আগাম জানিয়ে দিতে এসেছি।

    খামটা হাতে নিয়ে কাগজটা বের করে একবার দেখলো উইন্টন, তারপর ডেস্কের ওপর দিয়ে বাড়িয়ে দিলো এভেরির দিকে। এভেরি কাগজটা ভালো করে চোখ বুলিয়েও দেখলেন না। জানেন কাগজটা দেখলেই তিনি ক্ষেপে যাবেন। আর তিনি ক্ষেপলেই তার স্ত্রী চরম শান্তি পাবেন। স্ত্রীকে চরম শান্তি উপহার দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই নেই তার। এটা কি তোমার প্রতি রাতের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে? অফিসে এসে আমাকে খোঁচানো? নাকি ইদানিং তোমার সামাজিক কর্মকাণ্ডের শিডিউল খালি হয়ে আছে?

    সত্যি বলতে, ডিভোর্সের সংবাদটা জানাজানি হওয়ার পর থেকে কাজের পরিমাণ আরো বেশি বেড়ে গেছে। বলে দুই হাত দিয়ে ডেস্কে ভর করে এভেরির দিকে ঝুঁকে দাঁড়ালো আলেক্সান্দ্রা। মুখে শীতল হাসি ফুটে আছে তার। আমি যদি আগে একবার জানতাম যে তুমি আমার সামাজিক কাজগুলো এতো ঘৃণা করো, তাহলে অনেক আগে থেকেই শুরু করতাম এটা।

    আহারে! আগে শুরু করতে পারেনি বলে সমবেদনা জানাচ্ছি।

    কিছু না বলে টেবিলে রাখা কাগজগুলোর দিকে তাকালো আলেক্সান্দ্রা। এভেরি যদিও তড়িঘড়ি কাগজগুলো লুকানোর চেষ্টা করছেন, তবে আলেক্সান্দ্রার নজর আটকে আছে হলদেটে কাগজের একটা প্যাডের ওপর। এই প্যাডটাতেই সারাদিনের কাজের হিসাব, ফোন কলের রেকর্ড এবং প্রয়োজনীয় মানুষগুলোর নাম লিখে রাখেন এভেরি। হাত বাড়িয়ে প্যাডটা নিজের দিকে নিয়ে এলো আলেক্সান্দ্রা। ফার্গো? কাগজে লিখে রাখা নামটা দেখে বলল ও। নামটার নিচে দাগ দিয়ে রাখা আছে। নর্থ ডাকোটায় নতুন ব্যাবসা শাখা? এগুলো কি আমার উকিলকে জানানো উচিৎ?

    সাথে সাথেই প্যাডটা আলেক্সান্দ্রার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে এভেরি বললেন, তুমি তোমার নোটিশ দিয়েছে। এখন যাও।

    আরে, আমি ওটা দিতে আসিনি। আইন অনুযায়ী, ওটা আমার দেওয়ার কথা না। আমি শুধু তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিতে এসেছিলাম যে আমার উকিল তোমার অ্যাকাউন্টগুলো আটকে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে। হয়তো দেখবে এটিএমে তোমার কার্ডটা আর কাজ করছে না। তখন তো ক্ষেপে যাবে। বলে তিক্তভাবে হাসলো আলেক্সান্দ্রা। তারপর এভেরির হাতে ধরে রাখা প্যাডে একবার হাত বুলিয়ে এগিয়ে গেলো কাউচের দিকে। কাউচ থেকে পার্সটা তুলে নিয়ে বলল, নিজের খেয়াল রেখো, চার্লস। আর উইন্টন, তুমিও ভালো থেকো।

    কোনো রকমে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ দমন করার চেষ্টা করছেন এভেরি। আলেক্সান্দ্রা বেরিয়ে যেতেই বলে উঠলেন, দেখেছো? এতোগুলো বছর আমাকে কী সহ্য করে থাকতে হয়েছে তা ভেবে দেখো একবার।

    তিনি আপনাকে রাগানোর চেষ্টা করছেন শুধু।

    হ্যাঁ, এবং এতে সে সফলও হচ্ছে। উঠে গ্লাসে ড্রিংকস ঢেলে তাতে চুমুক দিলেন প্রথমে। তারপর আরো কয়েকটা চুমুক দিয়ে শান্ত হওয়ার পর বললেন, সে কি ওটা করতে পারবে? মানে আমার অ্যাকাউন্ট আটকে দিতে পারবে?

    এটা আসলে সকালে ব্যাংক খুললেই বুঝা যাবে। তবে যদি তার অ্যাটোর্নি যুক্তি দিয়ে বিচারককে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে অবশ্যই তিনি কাজটা করতে পারবেন। আমার ধারণা, উনার ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট তাঁকে এই আইডিয়াটা দিয়েছে। আপনার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে আপনার থেকে টাকা খরচের বিবরণ বের করতে চাচ্ছে আর কী।

    গ্লাস এবং হুইস্কির বোতল নিয়ে আবারো ডেস্কে এসে বসলেন এভেরি। সে যুদ্ধ শুরু করতে চাচ্ছে? আচ্ছা, করুক। আমিও দেখতে চাই কতোটা গভীরে এসে জড়াতে পারে ও।

    অথবা, আপনি কিন্তু উনার দাবিটা মেনে নিয়ে ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দিতে পারেন।

    না, কখনোই করবো না তা, বলে গ্লাসে চুমুক দিলেন এভেরি। তিনি এই কাজ করলে ঐদিন নরকও শীতল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা উনার।

    আরো কিছু বলতে যাবেন, ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো। ফিস্কের কল। অবশেষে।

    জামাইকার ব্যাপারে সংবাদ আছে একটা, ফিস্ক বলছে। অবশ্য আপনি হয়তো এটা পছন্দ করতে পারবেন না, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে এবার কাজ হবে।

    রাগে হাত দিয়ে গ্লাসটা চেপে ধরলেন এভেরি। কাজ হবে? তুমি কি বলতে চাচ্ছো তুমি এখনো ঐ ডকুমেন্টগুলো যোগার করতে পারোনি?

    ওটার ব্যাপারে আসলে… আসলে সত্যি বলতে, ফার্গোরা এখনো কিভাবে যেন বেঁচে আছে।

    কথাটা শুনেই রাগে খেঁকিয়ে উঠলেন এভেরি। কী বললে? কিভাবে দুটো মানুষ বারবার তোমাদের হাতের তলা থেকে ছুটে যাচ্ছে?

    আমি তো আগেই বলেছিলাম, বস, তারা সাধারণ কোনো দম্পতি না। স্যাম ফার্গো ডারপায় উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ছিলো, সম্ভবত সিআইএর সাথেও জড়িত ছিলো। তার স্ত্রী বোস্টন কলেজ থেকে… ফোনে ফিস্ককে কাগজ উল্টানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছেন এভেরি, …অ্যানথ্রোপোলজি এবং প্রাচীন ব্যবসায়ীক ইতিহাসের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়া মহিলা।

    এজন্যই তো গুপ্তধনের প্রতি আগ্রহ তার। তবে এতে কিন্তু মহিলা কিভাবে বেঁচে আছে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।

    মহিলা প্রচণ্ড বুদ্ধিমতি। এবং হাতের নিশানাও প্রচণ্ড দক্ষ।

    তাতে কী? গলফিনহোর কেউ কি ঐ মহিলার হাতে বন্দুক তুলে দিয়েছিলো? আমি তোমার থেকে ব্যর্থতার আর কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। নিশ্চিত ফলাফলের জন্যই টাকা দেওয়া হয় তোমাকে।

    ভুল তো হয়ই, বস। তবে তাদেরকে খোঁজা হচ্ছে।

    আমি তো শুনেছিলাম যে তোমার ভাড়া করাগলফিনহোর ক্রুরা খুব সহজেই সমুদ্রে ডাইভ করতে যাওয়া মানুষ দুটোকে সরিয়ে দিতে পারবে। অতিরিক্ত নাক গলানো মানুষদের সরিয়ে দেওয়ার মতো নাকি যথেষ্ট দক্ষ ওরা!

    আগেও যেমনটা বলেছিলাম, বস, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে একসময় ফার্গোদেরকে হাতের নাগালেও পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার লোকেরা তাদেরকে কার রেন্টাল কোম্পানি থেকে কিংস্টন পর্যন্ত অনুসরণ করে গিয়েছিলো। তবে, দুর্ভাগ্যবশতঃ ফার্গোরা এবারো কিভাবে যেন পালিয়ে গেছে। তবে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবে না আর।

    আমি তো ভেবেছিলাম তোমার লোকেদের কাজটা করার মতো দক্ষতা আছে।

    তারা অবশ্যই দক্ষ লোক, বস।

    তাহলে কিভাবে বারবার দুজন সমাজকর্মী তোমাদের হাত থেকে খসে যাচ্ছে? তোমার লোকগুলোর দক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে আমার।

    আমি আগেই বলেছিলাম, ফার্গোদের হাত অনেক লম্বা।

    কথাটা শুনেই ঝট করে গ্লাসটা টেবিলে আছড়ে রাখলেন এভেরি। তুমি বলেছিলে কাজটা তুমি সামলাতে পারবে। তোমার লোকদের এই কাজ করা দক্ষতা আছে।

    হ্যাঁ, বস, তাদের দক্ষতা আছে, এবং তারা ঠিকই কাজটা করবে।

    অবশ্যই করা উচিৎ তাদের। আমি ঐ ডকুমেন্ট এবং ফার্গোদের মৃত্যুর খবর শুনতে চাই। এটাই শেষ কথা আমার। তোমার লোকদের ওপর ভরসা না থাকলে, তুমি নিজেই স্বশরীরে করো। আমি ফলাফল চাই, ব্যর্থতা না।

    বুঝেছি, বস। একটা পরিকল্পনা করে রেখেছি। সব কিছু ঠিকঠাক করে আপনাকে জানাবো আমি।

    সাথে সাথেই কল কেটে রিসিভারটা ক্রেড়ালে আছড়ে রাখলেন এভেরি। তারপর আবার গ্লাসটা তুলে নিয়ে লম্বা চুমুক দিলেন তাতে।

    ধরে নিচ্ছি, সংবাদটা নিশ্চয় ভালো ছিলো না? বলল উইন্টন।

    এসব নিয়ে না ভেবে আমার স্ত্রীর ওপরে মনোযোগ দিলেই ভালো হবে তোমার জন্য। আর আমার অন্যান্য কাজ নিয়ে আমাকেই ভাবতে দাও।

    আপনি নিশ্চয় এটায় অবগত আছেন যে ওগুলোর কোনোটায় টাকা খরচ করলে তা আপনার স্ত্রীর কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে?

    হ্যাঁ! ঝুঁকির ব্যাপারে খুব ভালোভাবেই জানা আছে আমার।

    শুনে মাথা ঝাঁকালো উইন্টন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, যেহেতু আমার কাজ শেষ, তাই আজকের মতো উঠছি এখন।

    উইন্টন চলে যেতেই গ্লাসে আরেকবার হুইস্কি ঢাললেন এভেরি। তার চোখ ঘুরছে হলদেটে কাগজের প্যাডটার ওপর। ফার্গোদের নামটা যেন তার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে। ঝট করে প্যাড থেকে কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে মাটিতে ছুঁড়ে ফেললেন এভেরি। প্রচণ্ড রেগে আছেন এখন। যদিও এটা বুঝতে পারছেন না যে তিনি আসলে কোন কারণে রেগে আছেন। ফার্গোদের তার কাজে নাক গলানোর কারণে, নাকি আলেক্সান্দ্রার তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার কারণে?

    যেটাই হোক। সবগুলো মানুষকেই তিনি মৃত লাশ হিসেবে দেখতে চান।

    এটা মাথায় আসতেই তার মনে হলো, তিনি কি আসলেই আলেক্সান্দ্রাকে মারতে চান?

    সত্যি বলতে, হা, তিনি তাই চান। মহিলা হয়তো তাঁর দুই সন্তানের মা, কিন্তু সন্তানদের কেউই তার মতো হয়নি। নিশ্চিতভাবেই মায়ের গোলাম হয়েছে ওরা। তিনি শুধু দক্ষভাবে আলেক্সান্দ্রাকে সরিয়ে দিতে চান, যাতে করে। তাকে কেউ সন্দেহ না করে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, তিনি কিভাবে তা করবেন? কিভাবে খুনটাকে সাধারণ মৃত্যু হিসেবে ফুটিয়ে তুলবেন।

    তবে, আগের কাজ আগে। প্রথমে ফার্গোদেরকে সরাতে হবে।

    এক ঘণ্টা পর, আবারো ফিস্ক ফোন করলো তাকে। বলল, ভালো সংবাদ আছে আমার কাছে…

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
    Next Article দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.