Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প453 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩১. ব্রিটিশ মিউজিয়ামে

    ৩১.

    পরদিন সকালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গ্রেস হারবার্ট-মিলার এবং তার জ্ঞাতি ভাইয়ের ধার দেওয়া ঐতিহাসিক আর্টিফ্যাক্টগুলো দেখার অনুমতির জন্য ফোন করলো রেমি। ওপাশ থেকে এক তরুণী মেয়ে ফোন ধরে জানালো যে উইকেন্ডের অনুষ্ঠানের আগে মিস ওয়ালশ ওগুলো কাউকে দেখতে দিবে না।

    রেমি জানতে চাইলো এই অবস্থায় তাদেরকে কেউ সাহায্য করতে পারবে কিনা। তবে উত্তরে হতাশই হতে হলো তাকে। অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রদর্শনীতে রাখা আর্টিফ্যাক্ট বা স্টোররুমে রাখা অন্যান্য বস্তুগুলো কাউকে দেখতে দেবার মতো কোনো ক্ষমতা নেই কারো। সবকিছুই বিশাল এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। যদি তাদের কাছে অনুষ্ঠানের কোনো টিকেট থেকে না থাকে তাহলে পরের সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

    চমৎকার, বলে হতাশ হয়ে ফোনটা টেবিলের ওপর রাখলো রেমি। কোনো লাভই হলো না।

    হয়তো সেলমা সাহায্য করতে পারবে আমাদেরকে, স্যাম জানালো। অথবা লায়লো। তার তো এখানের কারো সাথে যোগাযোগ থাকার কথা।

    আশা করা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই এখন, বলে ঘড়ির তাকে তাকিয়ে আট ঘণ্টা সময় বিয়োগ করে নিলো রেমি। সেলমাদের সাথে তাদের সময়ের ব্যবধান প্রায় আট ঘন্টার মতো। এরপর প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সেলমাকে ইমেইল করে দিয়ে বলল, তো, এখন বসে অপেক্ষা করবো শুধু?

    বসে থাকার পরিবর্তে হাঁটতে বেরুতে পারি। গিয়ে মিউজিয়ামটাও একটু ঘেটে দেখে আসা যায় এই সুযোগে! কিসের বিরুদ্ধে লড়ছি সেটাও তো একটু দেখে আসা উচিৎ।

    ভালো বলেছো। তোমার এইভাবে চিন্তার ধরনটা ভালো লাগে আমার, ফার্গো।

    বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লো ওরা। হোটেল থেকে মিউজিয়ামের দূরত্ব খুব বেশি না। আধ-মাইলের মতো।

    মিউজিয়ামে যেতেও বেশিক্ষণ লাগেনি তাদের। এখন মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে থাকা আর্টিফ্যাক্টগুলো দেখছে। দেখতে দেখতে এক সময় রোজেটা

    ২১৪

    স্টোনের এসে দাঁড়ালো ওরা। এই পাথরটাকে রেমির কাছে সবসময়ই খুব রহস্যময় মনে হয়। আমাদের সাইফার হুইলের চাবিটাও যদি এখানে থাকতো, তাহলে খুব ভালো হতো না?

    রেমির কথা শুনে ভিড়ের থেকে নজর সরিয়ে প্রকাণ্ড পাথরটার দিকে তাকালো। প্রদর্শনীতে রাখা বস্তুগুলো দেখার বদলে মানুষের জটলার দিকেই বেশি নজর স্যামের। এভেরির লোকদের দেখা পাওয়া নিয়েই বেশি দুঃশ্চিন্তা তার। এত সহজে পাওয়া গেলে কি চ্যালেঞ্জের মজা থাকে?

    | সাইফারের অর্থ তো আর তোমাকে বের করতে হবে না, তাই এমনটা বলছো। বলে আশেপাশের দিকে তাকালো রেমি। তারপর ম্যাপটা দেখিয়ে বলল, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গ্যালারি। মিশরীয় ভাস্কর্যের রুম এটা।

    তখনই রেমির হাত ধরে পাথরের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে স্যাম বলল, একটু সাবধানে থাকতে হবে। যদি ঐ দুর্ঘটনায় মানে মিসেস হারবার্টের ওখানে ঘটা দুর্ঘটনাটায় লোকগুলো গুরুতর আহত হয়ে থাকে, তাহলে এভেরি হয়তো এখানে অন্য কাউকে পাঠিয়েছে।

    ভালো বলেছে। আর তাছাড়া আমরা ঐ লোকগুলোর চেহারাও চিনে ফেলেছি এখন। এভেরিও সতর্ক হতে চাইবে।

    যাই হোক, তোমার এই ম্যাপে কি বিশেষ অনুষ্ঠানটা কোথায় হবে সেটা বলা আছে?

    না। তবে দিক নির্দেশনার দেওয়ার মতো ভালো কোনো গাইড পেলে জানতে সমস্যা হবে না।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন গাইড পেয়ে গেলো ওরা। ধূসর চুলের এক মহিলা তাদেরকে বলল যে অনুষ্ঠানের জন্য রাখা প্রদর্শনীটা এখন তিন নম্বর রুমে রেখে দেওয়া আছে। সাথে জানালো, গ্রেট কোর্টে ঢুকে ডানের দিকে তাকালেই ওটার দরজাটা দেখতে পাবেন।

    | মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকাণ্ড কোর্টের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো স্যাম ও রেমি। কাঁচ ও স্টিলের মিশ্রণে বানানো সিলিং-এর কারণে রুমটাকে খুব উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আরো কিছুটা এগিয়ে যেতেই তাদের আকাঙিক্ষত রুমটা পেয়ে গেলো।

    অবশ্য রুমটার দরজা আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া এক গার্ডও দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।

    যদিও গার্ড লোকটা তাদেরকে কোনো নতুন তথ্য দিতে পারলো না। অথবা লোকটার হয়তো তাদের সাথে নিয়ে এসব নিয়ে আলোচনা করারও কোনো ইচ্ছা ছিলো না।

    হতাশ হয়ে রুমের সামনে থেকে সরে এসে রেমি জিজ্ঞেস করলো, কী করবো এখন? কোনো আইডিয়া আছে?

    কোনো আইডিয়াই নেই আমার। বলে ঘড়ি দেখলো স্যাম। যদি কপাল ভালো হয়ে থাকে, তাহলে সেলমা হয়তো এতক্ষণে কিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছে।

    তারপর বাইরে বেরিয়ে এক নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়িয়ে সেলমাকে কল করলো স্যাম! ফোনটা ওপরের দিকে ধরে রেখেছে যেতে রেমিও কথা শুনতে পারে ঠিকমতত। সেলমা কল রিসিভি করতেই বলল, সুসংবাদ আছে। কোনো? | স্যরি, মি. ফার্গো। এটা খুবই হাই কোয়ালিটি একটা অনুষ্ঠান। ওয়েটিং লিস্টটাও বিশাল লম্বা। এদের মধ্যে অনেক বড়ো বড়ো সেলেব্রিটিও আছে। আয়োজকদের যদি বুঝতে পারেন যে আপনারা ঐ সব সেলেব্রিটির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, তাহলে তো সুযোগ পাবেন। নাহলে ওখানে ঢোকার কোনো সুযোগই নেই আপনাদের।

    লাযলো? তার তো এখানে কারো সাথে যোগাযোগ থাকার কথা।

    একাডেমিয়ার লোকদের কিন্তু রাজপরিবারের সদস্যদের উর্ধ্বে গিয়ে কিছুতে পরিবর্তনের কোনো ক্ষমতা নেই। এমনকি মাল্টিমিলিয়নিয়রদেরও তা

    নেই। অবশ্য, আমার কাছে অন্য একটা সুসংবাদ আছে।

    কী নিয়ে ওটা…?

    পারিবারিক প্রতীক গবেষণার জন্য অবশ্য একাডেমিয়ার লোকেরা বেশ কাজের। যাই হোক, এসব প্রতীক নিয়ে কতটা জানেন আপনারা?

    রেমি বলল, এটুকুই জানি যে এটা নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে তোমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

    আসলেই, সেলমা বলল। ােযলোর মতো, খামার মালিকের স্ত্রী আর তার নটিংহামের জ্ঞাতি ভাই শুধু সাধারণ এক জমিদারের অবৈধ ছেলের বংশধরই না। ঐ সাধারণ জমিদারও আসলে এডমুন্ড মর্টিমারের অবৈধ ছেলে। এডমুন্ড মর্টিমার মানে দ্বিতীয় লর্ড মর্টিমারের বংশধর।

    আর এই মর্টিমারের গুরুত্ব…? স্যাম জানতে চাইলো।

    তিনি ছিলেন রজার ডি মর্টিমার অর্থাৎ তৃতীয় লর্ড মর্টিমারের বাবা। এই রজার মটিমারের সাথে রানি ইসাবেল প্রণয় ছিলো বলেও শোনা যায়। নিঃসন্দেহেই ইসাবেলের ছেলে তৃতীয় এডওয়ার্ডের হাতে তার মারা পড়ার

    এটাও একটা কারণ ছিলো।

    বুঝলাম। তো এসবের সাথে আমাদের সাইফার হুইলের সম্পর্ক কী?

    বলা কঠিন। এখনো এটা নিয়ে কাজ করছি, সাথে সাথে প্রতাঁকের বাকি অংশটা নিয়েও। ওটা একটা বিদেশি ভাষায় লেখা। সবকিছুরই আলাদা আলাদা অর্থ আছে।

    আচ্ছা, কিছু পেলে জানিয়ো তবে, বলে কল কেটে দিলো স্যাম।

    ২১৬

    এখন কী? ফোন রাখতেই বলল রেমি। | চলো কোনো পাবে যাই। লাঞ্চ করতে করতে পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে ভাবি।

    রাস্তায় নেমে হাঁটা শুরু করতেই এক রোলস-রয়েস এসে দাঁড়ালো তাদের পাশে। গাড়ির পিছন সিট থেকে একটা লোক তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। লোকটার চুলগুলো কালো, তবে কপালের দিকের কিছু অংশ ধূসর হয়ে আছে। তাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে লোকটা। তবে লোকটার চাহনিতে বন্ধুসুলভ কোনো ছাপ নেই।

    আপনার নিশ্চয় ফার্গো দম্পতি।

    রেমির হাত ধরে তাকে পিছে টেনে আনলো স্যাম। তারপর গাড়িটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, আপনি? চার্লস এভেরি?

    হতাশ করতে হলো আপনাদের। না, আমি কলিন ফিস্ক। আপনারাও মনে হয় আমার বসের মতো একই জিনিসের পিছনে ছুটছেন, তাই না?

    অরিজিনাল সাইফার হুইলটার পিছনেই তো?

    আপনার কথা বুঝতে পারছি না আমি।

    যাই হোক, গতকালকের গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার লোকদের কেউ মারা যায়নি।

    ওটা নিয়ে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি বলেও মনে পড়ছে না, বলল স্যাম।

    নিজে থেকেই জানালাম। নাহলে তোতা দুঃশ্চিন্তায় থাকবেন। যাই হোক, আপনারা মনে হয় মিউজিয়ামের অনুষ্ঠানের কোনো টিকেট পাননি?

    আলতোভাবে কাঁধ ঝাঁকালো স্যাম। প্রদর্শনী তো আর একবারই হবে। অন্য সময়েও আসা যাবে। | আহারে। দুঃখ! তবে আমি থাকবো অনুষ্ঠানে।

    কথাটা শুনে রেমি কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলো, তাই? তা আপনি কিভাবে টিকেট ম্যানেজ করলেন?

    এই তো, যোগাযোগের মাধ্যমে। মানুষের সাথে পরিচয় থাকলে আসলে সবই সম্ভব। আর এটা তো মিস করা যাবে না জাতীয় একটা অনুষ্ঠান। আমাকে তো থাকতে হবেই। অবশ্য আমার নাম ফার্গো হলে আলাদা ছিলো। যতদূর জানি এই নামটা কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত। যাই হোক, লন্ডনের ছুটি উপভোগ করতে থাকুন। এখানে কোথায় উঠেছেন? সেভয়তে না?

    আপনি কোথায় উঠেছেন?

    আপনাদেরটা বাদ দিয়ে অন্য কোনো একটায়। বলে শীতলভাবে হেসে ড্রাইভারকে গাড়ি টেনে নেওয়ার ইঙ্গিত করলো লোকটা।

    গাড়িটা চলে যেতেই স্যামের পাশে এসে দাঁড়ালো রেমি। বলল, অস্বস্তি কর ছিলো সাক্ষাৎটা।

    ২১৭

    আমি নিশ্চিত, ইচ্ছা করেই এমনটা করেছে।

    আমরা কোথায় উঠেছি তাই বা জানলো কিভাবে? আমরা তো নিজেদের নামে চেক-ইন করিনি।

    হয়তো ফাইভ স্টার হোটেলগুলোর তালিকা করে বের করেছে।

    আমাদের হয়তো তাহলে এখন থেকে মাঝারি মানের কোনো একটা হোটেলে থাকা উচিৎ, বলে স্যামের হাতের সাথে নিজের হাত পেঁচিয়ে নিলো রেমি। তো, কী যেন লাঞ্চ আর যুদ্ধ পরিকল্পনার ব্যাপারে বলছিলে? আমার মনে হয়, এখন দুটোই দরকার আমাদের। | কাছেধারেই একটা পাৰ খুঁজে পেলো ওরা। ওটাতে গিয়ে মাছ ও চিপসের সাথে দুজনের জন্য দুই পাইট গিনেস বিয়ার অর্ডার করলো। পাবের দেয়ালের সাথে ঘেষে থাকা একটা টেবিলে বসেছে ওরা, যাতে জানালা ও প্রবেশমুখ দুটোর দিকেই নজর রাখা যায়।

    খাওয়া শেষে আরেকটা বিয়ার অর্ডার করলো স্যাম। তবে রেমির আর বিয়ার পানের ইচ্ছা নেই। সে তাকিয়ে আছে তাদের টেবিলের পাশ কেটে যাওয়া দুই মহিলার দিকে। দুইজনের কথাবার্তাও কানে আসছে তার। তাদের মধ্যে একজনকে বলতে শুনলো, জানি না তুমি কেন এতো মন খারাপ করে আছো। তোমার এক্সও তো থাকবে ওখানে। ওটা শুধুই একটা বার্থডে পার্টি মাত্র, কয়েকজন আসবে, হ্যাপি বার্থডে গান গাইবে, চলে যাবে। এটুকুই তো। যাই হোক, তোমার খারাপ লাগলে আমিও যাবো না। অবশ্য তুমি হুট করে গিয়ে দেখা দিতে চাইলে আলাদা কথা।

    রেমি…? কী বলছি শুনছো তুমি?

    স্যামের দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো রেমি। স্যরি। না। শুনিনি কিছুই।

    বলছি, তুমি চাইলে এখন এটা থেকে সরে যেতে পারো। আমি একাই সামলাতে পারবো। ব্রির ব্যাপারে তো সন্দেহ দূর হয়েছে আমাদের, আর…

    | কী বললে? না। বেঁচে থাকতে চার্লস এভেরির মতো লোককে জিততে দিবো না আমি।

    এটা কোনো খেলা না। লোকটা আমাদেরকে খুন করার চেষ্টাও করেছে। রেমি আমরা অনুষ্ঠানে যাব। কী?

    এই মাত্র বেরিয়ে যাওয়া মহিলাগুলো এক বার্থডে পার্টিতে হুট করে গিয়ে উদয় হওয়া নিয়ে আলাপ করছিলো। আমরাও একই কাজ করতে পারি।

    কিছু না বলে চুপ করে রইলো স্যাম। রেমির ব্যাখ্যার অপেক্ষা করছে।

    ২১৮

    গত কয়েকবছরে অনেক ফান্ড-রেইজারকেই পার্টিতে আমন্ত্রণ করেছি আমরা। এদের মধ্যে অনেকেই দাওয়াত পেয়েও আসেনি। আবার দাওয়াত না পেয়েও পার্টিতে এসেছে অনেকজন। হয়নি এমন?

    হ্যাঁ, হয়েছে। অনেকবারই হয়েছে এমন।

    আমরাও এটাই করবো। খারাপ কী হতে পারে? ধরা পড়ে যাবো? ধরা পড়লে সসম্মানে উলটো ঘুরে ফিরে আসবো। আর ধরা না পড়লে? ধরা না পড়লে কিন্তু ঠিকই ভিতরে ঢুকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তুটা খুঁজতে পারবো।

    .

    ভাড়া করা মার্সিডিজের সিট থেকে প্রবেশমুখের দিকে তাকিয়ে আছে স্যাম। বিলাসবহুল গাড়িগুলো থেকে ফর্মাল পোশাক পরা মেহমানদের নামতে দেখছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ কড়াকড়ি। প্রচুর গার্ড দাঁড়িয়ে আছে প্রবেশমুখের সামনে। লিভারেড কর্মীরা দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আমন্ত্রণপত্র চেক করছে। আমন্ত্রণপত্র ছাড়া ভিতরে ঢোকা একেবারেই অসম্ভব। এই কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনিতে কারো নজর এড়িয়ে ভিতরে ঢোকা খুব একটা সহজ হবে না।

    কিভাবে ঢুকবো? কোনো আইডিয়া আছে? নিরাপত্তার বহর দেখে রেমিকে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    না। কী করবো? এমনভাবে হেঁটে যাবো যেন আমরা এই জায়গার মালিক?

    এটাতেও কাজ হবে বলে মনে হয় না। তাদের মনোযোগটা অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া লাগবে। ব্যতিক্রমী কিছু ভাবা লাগবে,..

    রাজপরিবারের সদস্যদের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়াটা এমনিতেও কঠিন কিছু না।

    এখানে কে কে আসছে তা জানো তুমি? গাড়ি থামাতে থামাতে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    অনুষ্ঠানটার নাম অ্যা রয়েল নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম। তাহলে তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, রাজপরিবারের দুই-একজন সদস্য থাকবেই।

    এটা শুধু একটা থিমও হতে পারে।

    এক বেয়ারা এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো তাদের জন্য। গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রবেশমুখের সামনে অপেক্ষমান মানুষদের সারিতে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা।

    স্যাম খেয়াল করে দেখলো যে উপস্থিত মেহমানদের অনেকেই প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। নিশ্চিতভাবেই রেমির দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। অনুষ্ঠানের জন্য রেমি একটি চমৎকার হাত-কাটা কালো সিল্কের গাউন এবং গলায় হীরার একটি নেকলেস পরে এসেছে। নিশ্চিতভাবেই তার রূপের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। এমনকি ভিতরে ঢুকতে পারার চিন্তা বাদ দিয়ে স্যামও তাকিয়ে আছে রেমির দিকে। আসলেই অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে রেমিকে।

    তারা দরজায় নাম ঘোষণা করে করে ভিতরে ঢোকাচ্ছে।

    রেমির কণ্ঠস্বর শুনে আবারো বাস্তবে ফিরে এলো স্যাম। দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, নাম গোপন করে ঢুকতে চাইলে এটা বেশ সমস্যা করবে আমাদের।

    তো, প্ল্যান কি এখন?

    ওটা নিয়েই ভাবছি, বলল স্যাম। তবে সত্যি বলতে কোনো পরিকল্পনাই আসছে না তার মাথায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজার একদম কাছাকাছি পৌঁছে গেলো ওরা। তাদের সামনে মাত্র আর দুইটা দম্পতিই আছে।

    আইডিয়া পাওয়ার আশায় আশেপাশে তাকালো স্যাম। ঠিক তখনই। দরজায় দাঁড়ানো বেয়ারাকে বলতে শুনলো, স্যার জন কিম্ব্যাল, লেডি কিম্ব্যাল।

    স্যাম, ফিসফিসিয়ে বলল রেমি। আমরা প্রায় এসে গেছি কিন্তু।

    ওটা চার্লস এভেরির ভাড়াটে লোকটার রোলস-রয়েস না? হুট করে গাড়িটা দেখেই বলে উঠলো স্যাম। ফিস্ক না কী যেন নাম লোকটার?

    রেমিও তাকালো গাড়িটার দিকে। হ্যাঁ, দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।

    লোকটার কাছে বা তার ড্রাইভারের সাথে পিস্তল থাকার সম্ভাবনা কতটা বলে মনে হয় তোমার?

    শতভাগ সম্ভাবনা আছে থাকার।

    মাথা ঝাঁকালো স্যাম। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল, আর কোনো সুন্দরী, ভীত মহিলা এই তথ্যটা জানলে কী হতে পারে বলে ধারণা তোমার?

    এমন কেউ আছে তোমার পরিচিত?

    সুন্দরী মহিলা? হ্যাঁ, এমন একজন আছে। তবে ভীত কেউ নেই।

    তাই? আচ্ছা, সেটা এখনই জানা যাবে…

    দরজার সামনে এসে পৌঁছে গেছে ওরা। দরজায় দাঁড়ানো লোকটা তাদের আমন্ত্রণপত্র দেখতে চাচ্ছে। ঠিক তখনই মুখে হাত চেপে ধরলো রেমি। তার চমৎকার সবুজ চোখগুলোতে কৃত্রিম ভয়ের ছাপ ফুটিয়ে তুলে বলল, ওহ খোদা। বলে আরো কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল, আমি আমার জীবনে আগে কখনো এতো ভয় পাইনি। ঐ লোকটার সাথে একটা পিস্তল আছে।

    কথাটা শুনেই ঘাড় উঁচিয়ে ভিড়ের তাকালো লোকটা। কোথায়?

    ঐ যে। রোলস-রয়েসটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা লোকটা। চুলগুলো কালো। লোকটা আমাদের দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখেছেন? খুব ভয় লাগছে আমার।

    এখানেই দাঁড়ান, আমি দেখছি।

    বলে তাদেরকে ওখানেই রেখে রোলস রয়েসটার দিকে পা বাড়ালো লোকটা। সাথে সাথে নিরাপত্তাকর্মীদের একটা দলও নিয়ে যাচ্ছে।

    সুযোগ পেয়েই রেমিকে টান দিয়ে নিয়ে ভিতরের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। ভিতরে ঢুকতেই আরেকজন গার্ড আটকালো তাদেরকে। তাদের আমন্ত্রণপত্র দেখতে চাচ্ছে। ওটা বাইরে দাঁড়ানো গার্ডকে দিয়ে এসেছি আমরা, বলে ফিস্কের দিকে এগিয়ে যাওয়া লোক তিনজনকে দেখালো স্যাম।

    গার্ড লোকটাকে কিছুটা দ্বিধান্বিত দেখাচ্ছে এখন। ভিতরে ঢুকতে দিবে কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যেন। কিছুক্ষণ চুপ করে অন্য গার্ডের থেকে তাকিয়ে থাকার পর বলল, আফা, ঠিক আছে। নাম বলুন আপনাদের।

    লংস্ট্রিট, ঝট করে বলে এলো রেমি। তার কুমারী নাম এটা।

    সাথে স্যাম যোগ করলো, মি. অ্যান্ড মিসেস।

    মি, অ্যান্ড মিসেস লংস্ট্রিট, বলে ঘোষণা করে উঠলো গার্ড লোকটা। তারপর ভিতরের দিকে ঠেলে দিলো তাদেরকে।

    তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে থেকে সরে গেলো স্যাম ও রেমি। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ভিড়ের মধ্যে মিশে যেতে চাচ্ছে। বিশেষ করে ফিস্কেরও তাদের পিছনে নিরাপত্তা কর্মীদের লাগিয়ে দেওয়া অসম্ভব কিছু না। যাক, ভালোয় ভালোয় ঢুকতে পেরেছি শেষমেশ, ভিতরে গিয়ে নিরাপদবোধ করার পর এবং কাউকে তাদের পিছনে ছুটে আসতে না দেখে বলল স্যাম।

    সাথে সাথে তাদের পাশ দিয়ে শ্যাম্পেইনের গ্লাস নিয়ে হেঁটে যেতে থাকা ওয়েটারের কাছে দুটো গ্লাসও নিয়ে নিলো স্যাম। একটা রেমির হাতে দিয়ে বলল, চিয়ার্স অপূর্ব সুন্দরী রমনীর প্রতি, যে কিনা একজন ভালো অভিনেত্রীও বটে।

    এবং চিয়ার্স শেষ মুহূর্তে অভিনয়ের আইডিয়া বের করা সেই সুদর্শন পুরুষের প্রতিও, বলে স্যামের গ্লাসে টোকা দিয়ে পানীয়তে চুমুক দিলো রেমি।

    এরপর আর সময় নষ্ট না করে মিউজিয়ামের প্রশস্ত করিডোর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো ওরা। করিডোর পেরিয়ে গ্যালারিতে ঢোকার পর একবার পিছনে ফিরে তাকালো স্যাম। তাকে কিছুটা দুঃশ্চিন্তিত দেখাচ্ছে।

    ব্যাপারটা নজর এড়ালো না রেমির। কোনো সমস্যা?

    এভেরির লোকদের পিছনে নিরাপত্তাকর্মীদের লেলিয়ে দেওয়াটা খুব সম্ভবত মৌমাছির চাকে ঢিল ছুঁড়ার মতো ব্যাপার ছিলো।

    আশা করছি, ওরা হুল ফুটানোর আগেই ভিতর থেকে সব তথ্য জেনে বেরিয়ে যেতে পারবো আমরা।

    আমিও, বলে প্রদর্শনীর সামনে জমায়েত হওয়া ভিড়ের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। এগিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের সবকিছুর দিকেই নজর রেখে এগুচ্ছে, চোখ রাখছে সন্দেহজনক মনে হওয়া মানুষগুলোর দিকে। সাদা পোশাকে থাকা বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষককে দেখতে পেলো ও। অবশ্য এই জায়গায় এটা খুবই স্বাভাবিক। ওদেরকে হুমকির চোখে না দেখে এভেরি বা ফিস্কের জন্য কাজ করা কেউ আছে কিনা সেটাই দেখছে শুধু।

    তবে কেউ নেই। পরিস্থিতি এখনো তাদের পক্ষেই আছে বলা যায়।

    গ্যালারির প্রবেশমুখে যেতেই এক মহিলা তিন ভাঁজ করা পুস্তিকা ধরিয়ে দিলো তাদের হাতে।

    পুস্তিকাটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলো রেমি। আর স্যাম এই ফাঁকে লম্বা। রুমে জমায়েত হওয়া মানুষগুলোকে দেখে নিচ্ছে। রুমের কেউই তাদেরকে দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না দেখে বেশ সন্তুষ্ট ও।

    চমৎকার, হুট করে বলে উঠলো রেমি।

    কী?

    রেমি তার হাতের পুস্তিকাটা দেখিয়ে বলল, প্রদর্শনীতে তারা যা যা দেখাচ্ছে, তা দেখলে তুমি হয়তো ভাবে অনুষ্ঠানের জন্য তাদের ভিন্ন কোনো নাম বাছাই করা দরকার ছিলো। অনুষ্ঠানটার আভিধানিক নাম ইলেজিটিমেট রয়েল চিলড্রেন অফ ইংল্যান্ড।

    ভালোভাবে ভাবলে কিন্তু এটাকে অ্যা রয়েল নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়ামর মতো অতোটা আকর্ষণীয় শোনাবে না। বলে রুমের দিকে চোখ বুলাতেই এক জায়গায় জড়ো হয়ে থাকা বৃদ্ধ পৃষ্ঠপোষকদের দেখতে পেলো স্যাম। নিশ্চিতভাবেই, অনুষ্ঠানের জন্য চেকবুক লিখতে গিয়ে এদের অনেকেরই বেশ কষ্ট হয়েছে।

    কথাটা শুনে হেসে উঠলো রেমি। ভালো বলেছো, ফার্গো। তো, কী নিয়ে এতো সবার এতো আগ্রহ সেটা তো এখন দেখা উচিৎ আমাদের, তাই না?

    বলে স্যামের হাত ধরে প্রদর্শনীতে সাজিয়ে রাখা জিনিসগুলো দেখতে শুরু করলো ওরা। প্রদর্শনীতে সবকিছুই বছর এবং পরিবারের নাম অনুযায়ী আলাদা আলাদা ভাগে সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

    অর্ধেকটা এগুনোর পরই গ্রেস হারবার্ট-মিলার এবং তার জ্ঞাতি ভাইয়ের দান করা সামগ্রির ডিসপ্লেটা খুঁজে পেলো ওরা। পেইন্টিং, যুদ্ধের বর্ম, অস্ত্র, গহনা থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু সাজিয়ে রাখা হয়ে এই প্রদর্শনীতে। সাইফার হুইলটাও থাকতে পারে। তবে চোখের সামনে নেই আর কী। হয়তো অন্যান্য সামগ্রির নিচে লুকিয়ে আছে। যাই হোক, দেরি না করে আইটেমগুলো পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করেছে ওরা। সময় নিয়ে প্রতিটি আইটেমই নিখুঁতভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছে।

    ছবি তুলে নাও তুমি, দেখা শেষের পর বলল স্যাম। ফিস্ক আসছে কিনা সেটার দিকে নজর রাখছি আমি।

    মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে ফোন বের করে ছবি তুলতে শুরু করলো রেমি। প্রতিটা আইটেমেরই ছবি তুলে নিচ্ছে ও। কয়েকমিনিট পর ছবি তোলা শেষে বলল, হয়ে গেছে আমার।

    ঠিক তখনই বিজনেস স্যুট পরা এক মহিলা এগিয়ে এলো তাদের দিকে। স্যটের বুকের কাছে থাকা আইডি কার্ডটা জানান দিচ্ছে যে মহিলা এই মিউজিয়ামেরই কর্মী। দেখতে খুবই চমৎকার না ওগুলো?

    স্যাম প্রথমে মহিলার সাথে সায় দিতে চাচ্ছিলো, কিন্তু তখনই মনে পড়লো যে সায় দিলে মহিলার থেকে আর বেশি তথ্য পাওয়া যাবে না। তাই গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল, কোনগুলো?

    মর্টিমার কালেকশনগুলোর কথা বলছি। আমাদের নতুন সংযোজন। প্রদর্শনীর জন্য আমিই সাজিয়েছি ওগুলো।

    শুনেই একে-অন্যের দিকে তাকালো স্যাম ও রেমি। তারপর রেমি মহিলার আরেকটু কাছে এগিয়ে মৃদু হেসে বলল, কাজটা নিশ্চয় খুবই আনন্দদায়ক ছিলো আপনার জন্য, মিস…?

    ওয়ালশ। মেরিল ওয়ালশ। আর হ্যাঁ, কাজটা আসলেই আনন্দায়ক ছিলো আমার জন্য।

    স্যাম জিজ্ঞেস করলো, কালেকশনের ব্যাপারে কী কী বলতে পারবেন আমাদের? দ্বিতীয় লর্ড মর্টিমার মানে এডমুন্ড মর্টিমার এখানের কোথায় স্থান পাচ্ছে?

    আসলে মর্টিমারের দাদী মাওদ ডি ব্রুজের প্রতি আগ্রহের কারণেই এই প্রদর্শনী আয়োজন করেছি আমরা। তার জন্যেই নামটা অ্যা রয়েল নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম রাখা হয়েছে। সন্তানদের মাধ্যমে তিনি শুধু সর্বশেষ দুই প্ল্যানটাজেনেট রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড এবং তৃতীয় রিচার্ডের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নন, অষ্টম হেনরি থেকে শুরু করে আরো বেশ কয়েকজন ইংরেজ সম্রাটের সাথেই সম্পর্কে আছে তার। সে জন্যেই গ্রেস হারবার্ট-মিলার আমাদেরকে প্রদর্শনীর জন্য আর্টিফ্যাক্টগুলো দেওয়ার প্রস্তাব জানানোর পর আমরা মানা করতে পারিনি।

    বাহ, বেশ তো, স্যাম বলল। মর্টিমারের অবৈধ ছেলেটার ব্যাপারে একটু। বলুন। শরীরে রাজপরিবারের রক্ত বয়ে যাওয়া ছাড়া ঠিক কোন কারণে ইতিহাসে এতো বিখ্যাত হয়ে আছে লোকটা?

    আসলে পূর্বপুরুষদের থেকে তার এবং তার বংশধরদের জীবনযাপন একটু অন্যরকম ছিলো। যেখানে তার পূর্বপুরুষেরা হত্যাযজ্ঞ, রাজাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্তের মতো কাজ করেছে, সেখানে তিনি জীবনযাপন করেছেন খুবই স্বাভাবিকভাবে। তবে ইতিহাসে তিনি স্থান পেয়েছেন অন্য একটা কারণে। তার সৎ ভাইয়ের সাথে আমাদের পরবর্তী চরিত্রের দ্বন্দ্বটা নিয়ে ভাবলেই এটা বুঝতে পারবেন।

    বলে পাশের ডিসেপ্লটার দিকে এগিয়ে গেলো মেরিল ওয়ালশ। এটা হিউ লি ডেসপেন্সরের অবৈধ নাতির প্রদর্শনী। কথিত আছে হিউ লি ডেসপেন্সারের সাথে নাকি রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এজন্যেই রানি ইসাবেলা লোকটাকে বেশ ঘৃণা করতেন, এবং জোর করেই স্বামীকে দিয়ে তাকে রাজ্য ছাড়াও করিয়েছিলেন। বলা হয়, এইসময়ই নাকি ডেসপেন্সার জলদস্যুতে পরিণত হয়েছিল।

    ডেসপেন্সারের সময়কাল ১৩২১-এর ওপরে কলম দিয়ে আঁকা এক মাস্তুলের একটা জাহাজের ছবি দেখতে পেলো ওরা। আর জাহাজের নিচে ছোট্ট একটা অনুচ্ছেদ লেখা, ডেসপেন্সর ছিলো সমুদ্রের দানব।

    ভালো করে দেখার জন্য আরো কাছে ঝুঁকলো রেমি। আমি ধরে নিচ্ছি। এই দ্বন্দ্বের কারণেই দুই সন্তানকে পাশাপাশি স্থান দিয়েছেন আপনারা?

    হ্যাঁ, বলল মিস ওয়ালশ। ডেসপেন্সর সমুদ্র দখল করে নেওয়ার পর মর্টিমার পরিবারের একটা জাহাজে আক্রমণ করেছিলো। কথিত আছে, ঐ জাহাজে নাকি রানি ইসাবেলের সম্পদ ছিলো। বলা হয়, ইসাবেলার সম্পদ খোয়ানোর কারণেই নাকি রজার মর্টিমারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। রজার মর্টিমার ছিলো রানি ইসাবেলের বন্ধু, এবং তিনিই. দ্বিতীয় এডওয়ার্ডকে সিংহাসনচ্যুত করার কাজে রানিকে সহায়তা করেছিলেন।

    ডেসপেন্সার? বলে উঠলো রেমি। যদি ইতিহাস ঠিকমতো মনে থাকে আমার, আমি তো জানতাম মর্টিমারের মৃত্যু হয়েছিলো ডেসপেন্সারের অনেক পরে।

    হ্যাঁ, ঠিক। তবে পারিবারিক সম্মানের একটা বিষয় জুড়েছিলো এটার সাথে। পারিবারিকভাবেই মর্টিমাররা শপথ করেছিলো যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা সিংহাসনে থাকা রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যাবে। ডেসপেন্সরের সাথে দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের প্রণয়টা পুরো ইংল্যান্ডকেই বিপদে ফেলে দিয়েছিলো। এজন্যেই তৃতীয় এডওয়ার্ড তার বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করার পরেও মর্টিমারকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন। কিন্তু, দ্বিতীয় এডওয়ার্ডকে সরিয়ে দেওয়ার পর মর্টিমারেরও উচিৎ ছিলো দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া। তিনি সেটা করতে পারেননি।

    এমনিতেও ইতিহাসের প্রতি স্যামের ঝোঁক বেশি। আগ্রহের সাথে সাথে মিস ওয়ালশের কথাগুলো শুনছে। সাথে সাথে প্রদর্শনীতে থাকা আর্টিফ্যাক্টগুলোও পরীক্ষা করে করে দেখছে। তো অবৈধ ছেলেরা কিভাবে আসলো এসবের মধ্যে? মানে শুধু পরিবারের অবৈধ সন্তান হওয়া ছাড়া আর কী কারণ আছে?

    মর্টিমারের সৎ-ভাই মানে স্যার এডমুন্ড হারবার্ট ডেসপেন্সরের চুরি করা রানি ইসাবেলের সম্পদের কিছু অংশ উদ্ধার করে আনতে পেরেছিলেন। এতে করে মর্টিমাররা আবারো তৃতীয় এডওয়ার্ডের সুনজরে আসতে পেরেছিলো। আর ওদিকে ডেসপেন্সরের অবৈধ ছেলে রজার ব্রিজম্যান জলদস্যুতাকেই পরিবারের ধারা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

    ব্রিজম্যান? ভাবলো স্যাম। হ্যাঁ, এখন এভেরির আগ্রহের কারণটা পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে।

    চমৎকার ইতিহাস, রেমি বলল। তবে এগুলোই কি সব?

    দুঃখিত?

    আমি বলতে চাইছি মর্টিমারদের আর্টিফ্যাক্টের পুরোটাই কি এখানে আছে? কিছুদিন আগেই গ্রেস হারবার্ট-মিলারের সাথে দেখা হয়েছিলো আমাদের। তিনিই জানালেন যে আর্টিফ্যাক্টগুলো তিনি আপনাদের দিয়ে দিয়েছেন। তাই মনে হলো যে এখানেই সবকিছু আছে, নাকি প্রদর্শনীতে শুধু অল্প কিছু জিনিসই রাখা হয়েছে?

    ওহ, স্বাভাবিকভাবেই, আসলে সবকিছুকে এখানে রাখার উপায় ছিলো না। খাপ খাওয়ানোর দিকটাও দেখতে হয়েছে। আমাদের থিমের সাথে যায় এমন জিনিসগুলোই শুধু দেখানো হচ্ছে প্রদর্শনীতে। আপনাদের কি পুরো কালেকশন দেখার আগ্রহ আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে পরবর্তীতে আপনাদেরকে ব্যক্তিগত ভাবে দেখানোর ব্যবস্থা করবো আমি।

    করলে খুবই ভালো হয়, বলল রেমি। আপনাদের কাছে জিনিসগুলো বিস্তারিত কোনো তালিকা আছে?

    প্রশ্নটা শুনে একটু চুপ করে গেলো মিস ওয়ালশ। রেমিকে ফোনে টাইপ করতে দেখে কিছুটা দ্বিধা হচ্ছে তার। তাই বলল, আপনাদের আগ্রহের কারণটা কি জানতে পারি আমি?

    আমরা লেখক, স্যাম বলল। আমরা আসলে মর্টিমার পরিবার নিয়ে সম্পূর্ণ ইতিহাসটা লেখার আশা করছি। এখানে এসে অবৈধ মর্টিমার-হারবার্ট ধারাটা সম্পর্কেও জানা হলো। এটাও বইয়ে যোগ করে দিবো আমরা।

    রেমিও স্যামের সাথে সায় দিয়ে ফোন উঁচিয়ে বলল, সেজন্যেই নোট নিচ্ছি।

    ওহ, তাহলে ঠিক মানুষের কাছেই এসেছেন আপনারা, মিস ওয়ালশ বলল। আপনাদের নাম ও যোগাযোগের নম্বরটা দিয়ে যান। খুশিমনেই আপনাদের কল করবো আমি। বলে পকেট থেকে একটা প্যাড ও কলম বের আনলো মিস ওয়ালশ।

    লংস্ট্রিট। মি. অ্যান্ড মিসেস লংস্ট্রিট, বলে নিজের ফোন নম্বরটা জানালো রেমি।

    আপনাদেরকে কল দিবো আমি।

    এরপর মহিলা তাদের থেকে বিদায় নিয়ে অন্য মেহমানদের দিকে চলে যেতেই স্যাম রেমিকে জিজ্ঞেস করলো, সবকিছু মাথায় নিয়ে নিয়েছে তো?

    হ্যাঁ। সাথে সাথে সেলমাকেও মেসেজ করে দিচ্ছি।

    ফটোগ্রাফিক স্মৃতিশক্তি রেমির। একবার কোনো কিছু জানলে সেটা সে কখনোই ভুলে না। তাই মিস ওয়ালশের বলা কথাগুলো মনে থাকা নিয়ে রেমির প্রতি কোনো সন্দেহ নেই স্যামের। তাহলে চলল, খোঁজ শুরু করা যাক। বলে সামনের দিকে তাকাতেই কলিন ফিস্ককে এগিয়ে আসতে দেখলো স্যাম। পিতলের প্রশস্ত হাতলসহ একটি লাঠি নিয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে লোকটা। যদিও লোকটার পায়ের চলনে খোঁড়ানোর কোনো ছাপ দেখা যাচ্ছে না। তাকিয়ে দেখো কে আসছে।

    চমৎকার। আর আমরা ভাবছিলাম আজ আমাদের কপাল হয়তো খুব ভালো যাচ্ছে।

    বাহ, কত অরিজিনাল টেকনিক দেখালে, ফিস্ক বলে উঠলো। বন্দুকধারী মানুষ? শুধু এটুকুই ভাবতে পারলে? আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম তোমাদের থেকে।

    কাজ তো করেছে, এটাই যথেষ্ট। সম্বোধনের পরিবর্তনটা নজর এড়ালো না স্যামের। স্পষ্টতই সিকিউরিটি লেলিয়ে দেওয়ানোটা পছন্দ হয়নি লোকটার। অবশ্য ফিস্কের সাথে ভাড়াটে গুণ্ডাদের কাউকেই আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। এটা দেখে চমকটা আর এড়াতে পারলো না স্যাম। তাই খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সাথে কেউ নেই?

    আমাদের বোকা ভেবো না। বিপদের সময় সুন্দরী বধূকে বাড়িতে রেখে আসার মতো যথেষ্ট বুদ্ধি অন্তত আছে আমাদের।

    কথাটার আড়ালে থাকা প্রচ্ছন্ন হুমকিটা বুঝতে কোনো সমস্যা হলো না স্যামের। রেমির সামর্থ্যের প্রতি তার পূর্ণ বিশ্বাস থাকলেও উদ্বেগটা দূর করতে পারছে না। তাই প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলল, আপনি এখানে কেন এসেছেন সেটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। তবে জিজ্ঞেস করেই বা লাভ কী? উত্তরটা তো আমাদের জানাই আছে।

    তাই নাকি? যাই হোক, মর্টিমারের কালেকশনটা খুঁজে পেয়েছো দেখছি। অবশ্য তাকে ডেসপেন্সরের ডিসপ্লের পাশে রাখাটা বেশ লজ্জাজনক।

    অতীত ইতিহাস অনুযায়ী, এটাকেই তো সঠিক জায়গা বলে মনে হচ্ছে।

    সঠিক ইতিহাস জানা থাকলে, ভিন্ন কথা বলতে, বলে শীতলভাবে হেসে উঠলো ফিস্ক। তারপর রেমির দিকে একবার নজর ঘুরিয়ে আবারো স্যামকে বলল, এখন, যদি তোমার মর্জি হয়, তাহলে চলো পিছনের হলের দিকে এগিয়ে যাই আমরা।

    কিভাবে ভাবলেন যে আমরা আপনার সাথে কোথাও যাবো?

    যাবে না যে, সেটা তো স্বাভাবিক ভাবেই বুঝা যায়। তাই যাওয়ার ব্যবস্থা করেই তো এসেছি। আমাদের সাহায্য করো, নাহলে… ঐ তরুণী কিউরেটরের কী নাম যেন, ওয়ালশ না? হ্যাঁ, এটাই তো। গ্যালারির অন্যপাশে তাকিয়ে কিউরেটরের অবস্থাটা দেখে নাও নিজের চোখেই।

    চোখ ঘুরিয়ে ওদিকে তাকালো স্যাম। দেখলো, মিস ওয়ালশ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে মহিলার। আর মহিলার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ফিস্কের দুই গুণ্ডা ইভান এবং নতুন আরেকজন।

    ওদিকে তাকিয়ে থেকেই স্যাম বলল, আর যদি সাহায্য করতে রাজি না

    তাহলে আর কী? মিস ওয়ালশের জন্য কফিনের ব্যবস্থা করতে হবে আর কী!

    আপনি ভাবছেন এখানে কাউকে খুন করে সহজেই চলে যেতে পারবেন আপনি? এই ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে?

    ওটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে। ওটার ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, তোমরা কতজন মানুষের আহত-নিহত হওয়া দেখতে চাও?

    কী ব্যবস্থা? অন্য প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    জানতে চাও? আচ্ছা বলছি। ষাট সেকেন্ডের মধ্যেই মিউজিয়ামের ফায়ার অ্যালার্মগুলো বেজে উঠবে। এরপর কী হবে তো জানোই। ঐতিহ্যবাহী কায়দায় মেহমানদেরকে ভিতর থেকে বের করা শুরু করবে মিউজিয়ামের কর্মীরা। তবে যেটা কেউ জানে না সেটা হলো, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়া এক লোকের জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা রয়েছে মিউজিয়ামের সামনে। এতোক্ষণে হয়তো এসেও পড়েছে। আর ঐ অ্যাম্বুলেন্সে যে পরিমাণ বিস্ফোরক আছে, তাতে মিউজিয়ামের সামনের দিকটা উড়িয়ে দিতে তেমন সমস্যাই হবে না। তো এখন তোমার সামনে দুটো পথ আছে। এক, তুমি চাইলে অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথে তোমার বউকে নিয়ে বেরুনোর জন্য অন্যদের সাথে মিশে যেতে পারো। এতে করে অন্যদের সাথে তোমার সুন্দরী বউয়ের দেহও ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে বিস্ফোরণে। নাহলে দুই, আমার এবং এই ভীত কিউরেটর মহিলার সাথে করে আসতে পারো। এতে করে তোমার বউসহ শত শত মানুষের জীবনও বাঁচাতে পারবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও। মারলোর হাতে থাকা চাকুটা খুবই ধারালো। কিউরেটরের বেশ কষ্ট হচ্ছে এতে। এই কথাটার মাধ্যমে বুঝালো। যে স্যাম তাদের সাথে যেতে না চাইলে কিউরিটরের গলায় চাকু ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই হত্যাযজ্ঞের সূচনা হবে। আর এতো কষ্ট করে আমাদের পিছনে সিকিউরিটি লেলিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ইভান ঠিকই তার পিস্তুলটা নিয়ে ঢুকতে পেরেছে।

    শুনেই মিস ওয়ালশের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদুটোর দিকে তাকালো স্যাম। জ্যাকেটের ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখা ইভান হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। ফিস্ক যে এখন তার কথাই বলছে, সেটা যেন জানে লোকটা। সাথে সাথে ফিস্কের কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য জ্যাকেটটা পাশে সরিয়ে পিস্তলটা বের করে তাক করে ধরলো রেমির দিকে।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই বেজে উঠলো ফায়ার অ্যালার্মটা। সাথে সাথে ফিস্কও বলে উঠলো, মি, ফার্গো, সিদ্ধান্ত তোমার হাতে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও।

    .

    ৩৩.

    ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠতেই স্যামের হাত খাবলে ধরলো রেমি। স্যামকে রেখে কোথাও যাচ্ছি না আমি।

    সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তোমার ওপর নয়, মিসেস ফার্গো।

    স্যাম জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে সাহায্য করলে রেমির সাথে কী করা হবে?

    তোমার মিসেস সুবোধ মেয়ের মতো একাকী হেঁটে গিয়ে মিউজিয়ামের সামনে দাঁড়ালেই আমার লোকেরা বিস্ফোরক সরিয়ে নিবে। তবে পুলিশ আসার আগেই সামনে গিয়ে পৌঁছাতে হবে তাকে। তবে সে ঠিকঠাক কাজটা করতে না পারলে তোমার কী হবে সেই প্রশ্ন করা উচিৎ মিসেস ফার্গোর। বলে রেমির দিকে তাকালো ফিস্ক। ভালোভাবে প্রবেশমুখের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, আর ফোন ব্যবহার করবে না। ভালোয় ভালোয় দায়িত্ব পালন করলে তোমার স্বামী নিরাপদেই থাকবে।

    স্যাম…

    আমি ঠিকই থাকবো, রেমি। তুমি যাও। বলে এক্সিটের দিকে তাকালো স্যাম। মিউজিয়ামের কর্মীরা মেহমানদের বের করছে এক্সিট দিয়ে।

    চলে যাওয়ার আগে শীতল দৃষ্টিতে ফিস্কের দিকে তাকালো রেমি। যাওয়ার আগে ফিস্ককে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য আরেকবার স্যামের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, এদের কোনো বিশ্বাস নেই। তাই সাবধানে থাকবে।

    স্যামও মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো তার কথায়। এরপর বলতে গেলে প্রায় জোর করেই এক্সিটের দিকে পা বাড়ালো রেমি। এক্সিটের কাছে পৌঁছে শেষবারের মতো আরেকবার ফিরে তাকালো স্যামের দিকে। আশা করছে স্যাম ফিরে চাইবে তার দিকে।

    স্যামদেরকে নিয়ে গ্যালারির প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে ফিস্কের লোকেরা। দরজা খোলার জন্য প্রায় জোর করেই মিস ওয়ালশের দিকে সাদা কী-কার্ডটা ছিনিয়ে নিতে হয়েছে। দরজার খোলার পর অবশেষে রেমির দিকে ফিরে তাকালো স্যাম। হাতের আঙুল ভাজ করে একবার কপালে ছুঁয়ে তাক করে দেখালো রেমির দিকে।

    রেমিও একই কাজ করলো। এটা তাদের নিজস্ব সংকেত। এই সংকেতের মাধ্যমেই তারা একজন আরেকজনকে ভালোবাসা ও দুঃশ্চিন্তা না করার ইশারা দেয়।

    তারপর জোর করেই শান্তভাবে পা চালিয়ে ভিড়ের অন্যদের সাথে মিশে গেলো রেমি। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক রেখার চেষ্টা করছে, ভয়টাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে। স্যামের সামর্থ্যের ব্যাপারে সে খুব ভালো করেই জানে। যদি ফিস্ককে কেউ হারাতে পারে, তাহলে তা স্যামই পারবে। তারপরও দুঃশ্চিন্তা দূর করতে পারছে না।

    এভাবেই হেঁটে বাইরে পৌঁছানোর পর শরীরে শীতল বাতাসের ছোঁয়া পেলো রেমি। চারপাশ থেকে ভেসে আসা সাইরেনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। অন্যান্য মেহমানরাও ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে প্রবেশমুখের সামনে।

    হাসি ও কথোপকথনের মৃদু গুঞ্জনে ভরে উঠেছে জায়গাটা। মেহমানদের কাউকেই অতটা আতঙ্কিত দেখাচ্ছে না।

    তবে বাইরে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের দেখা পেলো না রেমি। এমনকি, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তের অভিনয় করার মতো কোনো লোককেও না।

    ফিস্ক মিথ্যা বলেছে তাদেরকে।

    ঘটনা বুঝতে পেরেই মনে মনে গালি দিয়ে উঠলো রেমি। ধ্যাত, গাধার মতো লোকটার ধাপ্পা বিশ্বাস করেছি।

    সাথে সাথেই ঘুরে দরজার দিকে দৌড় লাগালে আবার। দরজায় দাঁড়ানো সিকিউরিটির লোকেরা এখনো মেহমানদেরকে বের করছে মিউজিয়াম থেকে। সে পুনরায় ঢোকার চেষ্টা করতেই এক গার্ড তাকে আটকে দিয়ে বলল, স্যরি, ম্যাম। এখন ভিতরে ঢুকতে পারবেন না। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এসে নিশ্চয়তা দেওয়া পর্যন্ত বাইরেই থাকতে হবে সবাইকে।

    আমার স্বামী, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো রেমি। সাথে সাথে চেহারাও আতঙ্কের ছাপ ফুটিয়ে তুলেছে। সে ডায়াবেটিকের রোগী। ইনসুলিন দেওয়ার জন্য রেস্টরুমে গিয়েছিলো। এখনো আসেনি। বাইরেও কোনো জায়গায় দেখতে পাচ্ছি না তাকে। ফাস্ট-ফ্লোরের রেস্টরুমে আছে ও। প্লিজ, একটু যদি ঢুকতে দিতেন…? বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি টলটল করছে। অবস্থায় ফুটিয়ে তুলেছে রেমি। তাকে পাওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে আসবো আমি।

    এক মুহূর্তের জন্য ভেবে নিলো গার্ড। তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, যান। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবেন।

    ধন্যবাদ। জলদিই করবো আমি।

    বলে মিউজিয়ামের বিশাল করিডোর ধরে হাঁটতে শুরু করলো রেমি। কিছুটা যাওয়ার পর পিছনে তাকিয়ে দেখলো গার্ড লোকটার তার দিকে কোনো মনোযোগই নেই। পারফেক্ট। এটাই চাইছিলো ও। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এখন। জন পঞ্চাশের মতো মেহমান আছে এখনো মিউজিয়ামের ভিতরে। দ্রুত গতিতে বামের বক্রাকার সিঁড়িটার কাছে এগিয়ে যেতেই দেখলো, সিঁড়ির দুই পাশে দুই তরুণী মহিলা দাঁড়িয়েছে। দুজনই মিউজিয়ামের কর্মী। সিঁড়ির সামনে অনবরত একই কথা বলে যাচ্ছে মেয়ে দুটো। ইমার্জেন্সি! প্লিজ, নিকটবর্তী এক্সিটের দিকে চলে যান সবাই। ধন্যবাদ।

    সিঁড়ির সামনে পৌঁছে রেমি মহিলাদের একজনকে বলল, এক্সকিউজ মি। আমার স্বামীকে নিয়ে একটু দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। কোথাওই খুঁজে পাচ্ছি না তাকে। খুব সম্ভবত ওপরতলায় আছে ও।

    এখানেই অপেক্ষা করুন, ম্যাম। সিকিউরিটি ওপর থেকে সবাইকেই বের করে আনছে।

    ধন্যবাদ, বলে পিছিয়ে যেতে গিয়ে জুতায় হোঁচট খেলো রেমি। টাল সামলাতে না পেরে ঝট করে পড়ে গেলো সামনে দাঁড়ানো মহিলার ওপর। পড়তে গিয়ে পার্সটাও হাত থেকে ছিটকে দূরে উড়ে গেছে। ওহ নো, বলে উঠলো রেমি। মহিলার সহায়তায় আবারো উঠে দাঁড়িয়ে বলল, খুবই দুঃখিত আমি।

    আপনি ঠিক আছেন তো?

    হ্যাঁ, রেমি বলল। আহত হইনি, তবে লজ্জিত প্রচুর। আপনি ব্যথা পাননি তো কোনো?

    না। দাঁড়ান। আপনার পার্সটা এনে দিচ্ছি।

    আরে না, কষ্ট করা লাগবে না আপনার। আমিই নিতে পারবো, বলে মহিলার পাশ কাটিয়ে গিয়ে পার্সটা মাটিতে থেকে তুলে গলায় ঝুলিয়ে নিলো রেমি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। ফালতু হাই হিল! বলে ওপরতলার দিকে তাকালো রেমি। আমার স্বামীকে দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো আমার আগেই বাইরে চলে গেছে।

    বলে মহিলার কাছে আবারো ক্ষমা চেয়ে ভিড়ের সাথে করে আবারো এক্সিটের দিকে পা বাড়ালো রেমি। যাওয়ার সময় পার্সের আড়ালে চুরি করা কী-কার্ডটা লুকিয়ে রেখেছে। যখন দেখলো পিছে থাকা মহিলাদের তার দিকে কোনো নজর নেই, তখনই সোজা দৌড় লাগালো একটা দরজার দিকে। আশা করছে ঐ দরজা দিয়েই স্যামের কাছে যাওয়া যাবে। দরজার সামনে পৌঁছে কী-কার্ড দিয়ে তালা খুলে নিলো; তারপর পার্সের ভিতর রেখে দিলো কী কার্ডটা। নিচের থেকে নেমে যাওয়া একটা সিঁড়ি রয়েছে দরজার ওপাশে। সিঁড়ির অন্যপ্রান্তে থাকা একটা ভোলা দরজা রয়েছে। কেউ তার ওপর নজর রাখছে না দেখে নিশ্চিত হয়ে আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে।

    সিঁড়ি থেকে নেমে হলওয়ে ধরে দৌড় শুরুর আগে জুতোগুলো খুলে নিলো রেমি। জুতোর শব্দ দিয়ে ফিস্ককে আগমনী বার্তা দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার। এগিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি দরজা খুলে পেলো ঠিকই, তবে সবগুলো দরজাই তালা দেওয়া। দরজাগুলো চেক করতে করতে হলওয়ের ৩ শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেলো একসময়। এই করিডোরটা আসলে ইংরেজি T-(টি) আকৃতির মতো। এখন তার দুই পাশেই দুটো রাস্তা আছে। প্রথমে বামদিকে তাকাতেই এক্সিট লেখা একটি দরজা দেখতে পেলো রেমি। সে নিশ্চিত ফিস্কের লোকেরা ঐদিক দিয়ে যায়নি। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত মিউজিয়াম থেকে বেরুবে না ফিস্কের দলটা। তাই ডান দিকেই পা বাড়ালো রেমি। দশ ফুটের মতো এগিয়ে যেতেই কণ্ঠস্বরের ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পেলো। করিডোরের শেষ মাথা থেকে ভেসে আসছে শব্দটা।

    ঝট করে দাঁড়িয়ে শব্দটা শোনার চেষ্টা করলো রেমি। অবশ্য কে কথা বলছে বা কী নিয়ে কথা বলছে তার কিছুই ধরতে পারছে না। তবে, এখন এটা নিশ্চিত যে সে ঠিক পথেই এগুচ্ছে।

    দেয়ালের কাছ ঘেষে নিঃশব্দে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও। কণ্ঠস্বরের শব্দও ধীরে ধীরে জোরালো শোনাতে শুরু করেছে এখন।

    খুঁজতে থাকো। কণ্ঠস্বরটাকে ফিস্কের মতো লাগলো তার কাছে।

    আপনি কী খুঁজছেন, এক মহিলার কণ্ঠস্বর, সেটা বললে হয়তো সাহায্য করতে পারতাম?

    তোমাকে বলেছি আগেই। গোলাকার একটা জিনিস, বেশ কিছু সংকেত আছে ওটাতে।

    রুমের একদম কাছে পৌঁছে গেছে রেমি। দেয়ালে পিঠে ঠেকিয়ে রুমের ভিতরের শব্দ শোনার চেষ্টা করছে। রুমের দরজাটা চাপানো, তবে শক্ত করে লাগানো নয়। হালকা একটু ফাঁকা হয়ে আছে। ফাঁকা দিয়েই ভিতরের দৃশ্যটা দেখতে পেলো রেমি। দরজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে সামনের কিছুর দিকে তাকিয়ে আছে ফিস্ক। আরেকটু ভালো করে উঁকি দিতেই দেখতে পেলো যে, মিস ওয়ালশ এক টেবিলের ওপর থাকা কিছু জিনিসে ঘাটাঘাটি করছে। ফিস্ক ওটার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর তাদের পাশে চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মারলো নামের লোকটা। তবে স্যাম বা ইভানের কাউকেই দেখতে পেলো না। দরজাটার আরো কাছে এগিয়ে গেলো ও। হালকা একটু ধাক্কা দিয়ে দরজাটা ফাঁক করে নিলেই তার কাজ হয়ে যাবে। দরজায় হাত দিয়ে মৃদু একটা ধাক্কা দিলো রেমি। এক ইঞ্চির মতো ফাঁক হয়ে গেছে দরজাটা। রুমটার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলো যে এটাই আসলে হারবার্ট কালেকশনের স্টোরেজটা। এখানেই প্রদর্শনীতে না থাকা সামগ্রিগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে। টেবিলের ওপর অনেকগুলো অস্ত্র দেখতে পেলো রেমি। হাতল ছুটে যাওয়া গদার মাথা, পুরোনো চামড়ার ঢাল, শারীরিক বর্মের টুকরো টুকরো অংশসহ অনেক কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে টেবিলের ওপর। তবে এগুলোর কোনোটাকেই আসলে এখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ঠিক তখনই তার চোখ পড়লো একটা পিতলের তারকার ওপর। এককালে চামড়ার বর্মটার সাথে জুড়েছিলো এই তারকাটা। ছুটে গিয়ে এখন আলাদা একটা অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। তারকার কোনাগুলো তীক্ষ্ণ ও ধারালো হওয়ায় যথেষ্ট জোরে ছুঁড়ে মারলে ভালোই ক্ষতি করা সম্ভব।

    আরো দেখতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ঝট করে খুলে ফাঁক হয়ে গেলো দরজাটা। চোখ তুলে তাকাতেই পিস্তলের নল দেখতে পেলো রেমি। ইভান বেরিয়ে এসেছে রুম থেকে। একদম নড়বে না।

    রুমের দিকে একবার চোখ বুলাতেই স্যামকে দেখতে পেলো রেমি। রুমের একপাশে যিপ-টাই দিয়ে হাত বেঁধে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্যামকে। তবে এছাড়া আঘাতের কোনো ছাপ দেখা যাচ্ছে না তার চেহারায়। সহিংসতার কোনো দরকার নেই, আমি এমনিই ঠিক থাকবো, ইভানের পিস্তলটার দিকে নির্দেশ করে বলল রেমি।

    তোমার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিলো।

    ফিরে যেতে কোনো সমস্যা নেই আমার।

    বেশি দেরি হয়ে গেছে এখন, বলে হ্যাঁচকা টান দিয়ে রেমিকে রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো ইভান।

    .

    ৩৪.

    রেমিকে রুমে টেনে এনে টেবিলের কাছে ঠেলে দিতে দেখেই রাগে জ্বলে উঠলো স্যাম। তার ইচ্ছা করছে এখনই ছুটে গিয়ে ইভানের মুখে ঘুষি লাগাতে, তার ঘাড় ভেঙে দিতে-কিন্তু সে জানে এখন এসব না করে অপেক্ষা করাটাই হবে শ্রেয়তর কাজ। ইভানের ছোটো হ্যান্ডগানটাতে হয়তো বেশি হলে দুটো বুলেট আছে, কিন্তু কাজ সারার জন্য তো দুটোই যথেষ্ট।

    এটা কী? রেমিকে দেখে বলে উঠলো ফিস্ক।

    অতিথি।

    উত্তরটা শুনে একটু হতাশ মনে হলো বৃদ্ধ নোকটাকে। এখানের কেউই কি কোনো কথা শুনে না? তারপর মিস ওয়ালশের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি থেমে গেছো কেন? খুঁজতে থাকো।

    রেমিকে ঠেলে আনতে দেখে মিস ওয়ালশও কাজ থামিয়ে দিয়েছিলো। ফিস্কের নির্দেশ শুনে আবারো কাগজের স্তূপের ভিতরে খোঁজা শুরু করলো মহিলা।

    টেবিলের দিকে ঝুঁকে টেবিলের ওপরে থাকা জুতোটা আবারো হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে রেমি। ইভানের ধাক্কা খেয়ে পড়ার সময় জুতোটা তার হাত থেকে ছিটকে গিয়েছিলো। সাথে সাথেই ইভান তার হাত খাবলে ধরে টেবিলের কাছ থেকে সরিয়ে আনলো তাকে।

    দৃশ্যটা দেখেই খেঁকিয়ে উঠলো স্যাম। আমার স্ত্রীকে একা ছেড়ে দাও।

    না ছাড়লে কী করবে?

    কী করবে দেখানোর জন্য উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো স্যাম, ঠিক তখনই মারলো তার কাঁধে চাপ দিয়ে আবারো চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, চুপচাপ এখানে বসে থাকো, নয়তো জবাই হয়ে যাবে।

    রেমি তার জুতো ও পার্সটা বুকের কাছে আগলে ধরে ফিরে তাকালো স্যামের দিকে। তাকে অভয় দিয়ে বলল, আমি ঠিক আছি, স্যাম।

    ইভান রেমিকে স্যামের পাশের চেয়ারের কাছে ঠেলে এনে বলল, বসো।

    স্যাম এবং রেমি দুইজনেরই বিকল্প পরিকল্পনা তৈরিতে বিশেষ দক্ষতা আছে। অন্তত স্যামের ধারণা এটাই। আর এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবেই এরকম একটা বিকল্প পরিকল্পনা দরকার তাদের। চেয়ারে বসতে বসতে স্যামকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো রেমি, ঠিক তখনই ইভান খেঁকিয়ে উঠলো তাদের দিকে। একদম চুপ। বলে রুমের অন্য প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালো ইভান।

    ওদিকে মিস ওয়ালশ আরো একটা বাক্সের সামগ্রি ঢেলে নিয়েছে টেবিলের ওপর। ওগুলোতে খোঁজাখুঁজি করছে এখন। কাজ করার ফাঁকেই একসময় তার পাশে চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মারলোর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কি ঐ জিনিসটা নিয়ে এতো কাছেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?

    জবাবে কিছু না বলে চুপচাপ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো মারলো। ভাবটা এমন যেন কথাটা তার গায়েই লাগেনি।

    মিস ওয়ালশকে নতুন বাক্সে থাকা কাগজগুলো নিয়ে ঘাটতে দেখে ঘড়ির দিকে তাকালো ফিস্ক। তারপর বলল, তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি ঐ জিনিসটা দেখোনি?

    ওরকম কিছু থাকলে আমি অবশ্যই দেখতাম। কিন্তু ওটা ছিলোই না।

    শুনে চোখ সরু করে তার দিকে তাকালো ফিস্ক। না থাকলে কাগজের স্তূপ ঘাটছো কেন? নিশ্চিতভাবেই ঐ জিনিসটা তো কোনো খামের ভিতরে থাকবে না।

    আপনি তো সংকেতওয়ালা একটা গোলাকার বস্তু খুঁজছেন, তাই না? এরকম কিছু একটার ছবি দেখেছিলাম আমি। বলে ফিস্কের দিকে বাক্সটা বাড়িয়ে দিলো মিস ওয়ালশ। চাইলে আপনি নিজেও খুঁজে দেখতে পারেন।

    কিছু না বলে বাক্স থেকে কাগজের একটা গাদা বের করে আনলো ফিস্ক। তারপর ইভান ও মারলোর দিকে ইশারা করে বলল, ফার্গোদের ওপর নজর রাখো।

    ফিস্ককে কাগজের গাদা নিয়ে খুঁজতে দেখে রেমির দিকে ফিরে তাকালো স্যাম। তুমি ঠিক আছে?

    হ্যাঁ, সত্যিই ঠিক আছি।

    তোমার এখানে ফিরে আসা উচিৎ হয়নি।

    তোমাদের জন্য দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিলো আমার। আর তাছাড়া মিউজিয়ামের সামনে বিস্ফোরক ভর্তি কোনো অ্যাম্বুলেন্সও ছিলো না।

    একটু কৌশল নেওয়াই লাগে, তাদের দিকে না তাকিয়েই টেবিলের কাছ থেকে বলে উঠলো ফিস্ক। আর, কাজেও তো লেগেছে ওটা।

    তো, যাই হোক, ফিস্কের কথায় পাত্তা না দিয়ে স্যামের কব্জিতে বেঁধে রাখা জিপ-টাইয়ের দিকে তাকালো রেমি। তোমার নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিলো।

    রেমির কথা শুনে মৃদু হাসলো স্যাম। তারপর চোখ তুলে তাকালো মিস ওয়ালশের দিকে। মহিলা এখনো কাগজগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছে। তবে কাগজগুলো স্পর্শের ব্যাপারে ফিস্কের থেকে বেশি সতর্ক মিস ওয়ালশ। নিশ্চিতভাবেই ঐতিহাসিক এই দলিলগুলোর নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছে মহিলা। নাহলে, হয়তো বুঝতে পারছে যে ফিস্ক লোকটা তার জিনিসটা পেয়ে গেলেই তাদের জীবনের ইতি ঘটবে।

    ঠিক তখনই একটা হলদেটে কাগজ উঠিয়ে ধরে উল্লাসের সাথে চেঁচিয়ে উঠলো ফিস্ক। পেয়ে গেছি।

    সাথে সাথেই জমে গেলো মিস ওয়ালশ।

    স্যাম ওদিকে তার হাতে লাগানো প্লাস্টিকের জিপ-টাইটা ছুটানোর চেষ্টা করছে। সাথে সাথে চোখ রাখছে ফিস্ক এবং ইভানের দিকেও। ফিস্ক ওদিকে আনন্দে অন্যদের উপস্থিতির কথা যেন ভুলেই গেছে। তারপর হঠাৎ করে মনে পড়তে তাদের দিকে চোখে তাকালো লোকটা। ইভান ও মারলোকে নির্দেশ দিয়ে বলল, তোমাদের কাজ শেষ করে ওপরে দেখা করবে আমার সাথে। সাহায্যের জন্য জ্যাককেও পাঠাচ্ছি।

    বলে বেরিয়ে গেলো ফিস্ক।

    এটা ভালো লক্ষণ না, মনে মনে ভাবলো স্যাম। তারপর ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার পিস্তলে তো মাত্র দুটো বুলেটই আছে, তাই না?

    ওটা নিয়ে ভেবো না। পকেটে আরো অনেকগুলো আছে। আর, মারলেও তার নতুন চাকুটা কাজে লাগানোর জন্য পাগল হয়ে আছে।

    সাথে সাথেই চাকুটা উঁচিয়ে ধরলো মারলো। মিস ওয়ালশের দিকে তাকিয়ে হাসছে যেন চাকুটা।

    হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলল রেমি। অনেক হয়েছে। মারবেই যখন, তার আগে অন্তত জুতোটা পরে নিতে দাও। সম্মান নিয়েই মরি। এই ধরো তো এগুলো, বলে পার্সটা স্যামের বুকে ঠেসে ধরলো রেমি। এমনভাবে ঠেলে দিয়েছে হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা ধরা ছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না স্যামের কাছে। তারপর উবু হয়ে ধীরে সুস্থে জুতোটা পায়ে লাগাতে শুরু করলো রেমি।

    হতভম্বের দৃষ্টিতে রেমির দিকে তাকিয়ে আছে ইভান। বিশ্বাসই করতে পারছে না যেন। একটু পরই মরতে যাওয়া একটা মানুষ কিভাবে তার ফ্যাশন নিয়ে ভাবতে পারে।

    স্যামও কিছুটা অবাক হয়ে আছে। তবে বুকের কাছে ধরে রাখা রেমির পার্সটার দিকে তাকাতেই ঘটনাটা বুঝতে পারলো ও। পার্সের আড়ালে একটা পিতলের তারকা রয়েছে। তারকার কোনাগুলো বেশ তীক্ষ্ণ। জিপ-টাইটা কাটার জন্য এই মুহূর্তে এই ধরনের কিছুরই আশা করছিলো ও।

    হঠাৎই মিস ওয়ালশের ঝাঁকিয়ে উঠার শব্দ এলো তার কানে। মারলো মহিলার গলায় চাকু ঠেকিয়ে ধরেছে। সাথে সাথেই পার্স ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে তারকাটা ছুঁড়ে মারলো স্যাম। মারলোর ঘাড়ে গিয়ে লাগলো অস্ত্রটা। চমকে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে মারলোর। চাকুটাও খসে পড়ে গেছে তার হাত থেকে। শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁসফাস করছে রীতিমতো। তারপর ঝট করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো রুমের মেঝেতে মারলোকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখেই রেমির দিকে পিস্তল উঁচিয়ে ধরলো ইভান। গুলি করতে যাবে ঠিক এমন সময়ই তার ওপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো স্যাম। গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। হাত বাধ অবস্থায়ই ইভানের সাথে হুড়োহুড়ি করছে ও। স্যামের গ্রাস থেকে বাঁচতে আবারো গুলি করলো ইভান। স্যামের গাল ঘেঁষে গেলো যেন বুলেটটা। পিস্তলটা ফেলে দিয়ে টেবিল থেকে গদাটা তুলে নিলো ইভান। তারপর সজোরে ঘুরালো স্যামের দিকে। কোনোরকমে পিছিয়ে গিয়ে গদার আঘাতটা প্রতিহত করলো স্যাম। তারপর আবার ঝাঁপিয়ে পড়লো ইভানের ওপর। ধাক্কার তীব্রতায় টেবিলে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে দুজনই।

    জলদি পালাও এখান থেকে! রেমিদের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো স্যাম।

    দেরি না করে মিস ওয়ালশকে সাথে নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রেমি।

    ওদিকে টেবিলের ওপর থেকে কাটা লাগানো গদার মাথাটা খাবলে ধরে আবারো স্যামের দিকে ঘুরালো ইভান। হাতবাধা অবস্থায় কোনোরকমে চামড়ার ঢালটা আঁকড়ে ধরে ছুঁড়ে মারলো ইভানের দিকে। তারপর ধাক্কা দিয়ে মারলোর লাশের ওপর ফেলে দিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

    রেমি ও মিস ওয়ালশ এতোক্ষণে অনেকটা দূর এগিয়ে গেছে। করিডোরের মোড়টার কাছে গিয়ে থেমে গেছে ওরা। মোড়ের একটা রাস্তা চলে গেছে মিউজিয়ামের দিকে, আর অন্যটা চলে গেছে ইমার্জেন্সি এক্সিটের দিকে। কোন দিকে যাবো? জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    দুই দিকেই তাকালো মিস ওয়ালশ। এতোটা চমকে আছে কোনদিকে যাবে সেটারও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

    তখনই স্যাম পিছন থেকে ছুটে এসে বলল, এক্সিটের দিকে যাও। জলদি! সে আশা করছে এক্সিট দিয়ে বেরুলেই বাইরের জমায়েত হওয়া ভিড়ের সাথে মিশে যেতে পারবে ওরা। তাছাড়া সিকিউরিটিকেও সতর্ক করতে পারবে।

    তবে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে দরজা খুলতেই হতাশ হতে হলো তাদেরকে। সামনের প্রবেশমুখ থেকে বেশ কিছুটা দূরে হওয়ায় ভিড়ের কোনো চিহ্নও নেই এখানে। তার বদলে বরং একটা অন্ধকার সরু রাস্তা খুঁজে পেলো ওরা। শুধুমাত্র মেইনটেইন্যান্সের জন্যই এই পথটা ব্যবহার করা হয়।

    যেভাবেই হোক এখন তাদেরকে মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে যেতেই হবে। এই মুহূর্তে ডান ও বামে দুটো রাস্তা আছে তাদের। বাম দিকের রাস্তাটাই বেছে নিলো স্যাম। কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো একটা সরু সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের বেজমেন্টের দিকে। নিচে একটা দরজাও দেখতে পাচ্ছে। এদিকে আসো, বলে অন্যদেরকে সাথে নিয়ে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে, ঠিক তখনই ইমার্জেন্সি এক্সিটের দরজা খোলার কাঁচকাঁচে শব্দ শুনতে পেলো।

    ইভান বেরিয়ে এসেছে বাইরে। পিস্তল হাতে নিয়ে তাদেরকেই খুঁজছে।

    কোনোরকমে শ্বাস আটকে সিঁড়ির দেয়ালের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ইভান চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। এর ফাঁকেই পকেটনাইফটা বের করে এনে স্যামের হাতের বাঁধনটা কেটে দিলো রেমি।

    হঠাৎ করেই ইভান ঘুরে দাঁড়ালো তাদের দিকে। ইভানকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই জমে গেলো ওরা। লোকটা তাদের এতো কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে স্যাম চাইলেও এখন লোকটার পায়ের গোড়ালি আঁকড়ে ধরতে পারবে। তবে ইভান তাদেরকে এখনো দেখেনি। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক তাকিয়ে ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে বলল, মারলো মরে গেছে… না। ফার্গোদেরও হারিয়ে ফেলেছি। তবে এদিকে চেক করে দেখছি আমি। আর তুমি রাস্তার দিকে নজর রাখো… তাদেরকে না পাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়া যাবে না। বস তাদেরকে…

    পাশের বিল্ডিং-এর পাওয়ার জেনারেটর চালু হয়ে যাওয়ায় ইভানের বাকি কথাগুলো আর শুনতে পেলো না ওরা। তারপর কথা শেষ করে এগিয়ে গেলো তাদের উলটো দিকে। স্যাম তাকিয়ে দেখলো কোনার দিকে গিয়ে হারিয়ে গেছে ইভান।

    আপাতত পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে আছে ভেবে স্বস্তি পেলো স্যাম। তারপর অন্য দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা ঠিক আছো?

    মাথা ঝাঁকালো অন্যরা।

    বেশ। তাহলে চলো এখন বেরিয়ে যাই এখান থেকে। বলে তার পিছনে থাকা দরজাটার দিকে তাকালো স্যাম। এই দরজাটা দিয়ে কি কোথাও যাওয়া যাবে?

    মাথা নাড়লো মিস ওয়ালশ। চমকটা মোটামুটি সামলে উঠেছে সে। এটা মেইনটেইন্যান্সের অফিস। ভিতর থেকে এটার কোনো দরজা নেই। আমাদের কি পুলিশে ফোন করা উচিৎ না?

    অবশ্যই উচিৎ। তবে পুলিশকে স্টেটমেন্ট দেওয়ার আগে নিজেদের প্রাণ বাঁচানো দরকার। ভিতরে কিভাবে ঢুকবো আমরা?

    আমরা যে পথ দিয়ে বেরিয়ে এসেছি, ওটাই সবচেয়ে সহজ পথ, বলল মিস ওয়ালশ। তবে তারা তো আমার কী-কার্ড নিয়ে গেছে।

    আমার কাছে একটা আছে, বলে পার্স থেকে কী-কার্ডটা বের করে আনলো রেমি। আপনাদের আরেককর্মীর থেকে ধার নিয়েছি এটা।

    চমৎকার, বলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে থেমে গেলো স্যাম। ওপরে সব কিছু স্বাভাবিক আছে নিশ্চিত হয়ে অন্যদেরকে উঠে আসার ইশারা করে বলল, সরাসরি দরজার কাছে চলে যাবে।

    কী-কার্ড দিয়ে দরজা খুলে পুনরায় মিউজিয়ামে ফিরে এলো ওরা। তবে দরজাটা পুরোপুরি না লাগানো পর্যন্ত কোনো স্বস্তি পাচ্ছে না স্যাম।

    সিকিউরিটি অফিসে যাওয়া দরকার আমাদের, মিস ওয়ালশ বলল। পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত আমরা ওখানেই নিরাপদ থাকতে পারবো।

    তারা যে কাগজটা নিয়ে গেছে, সিকিউরিটি অফিসের দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো স্যাম, ওটা কি আপনি ভালো করে দেখতে পেরেছিলেন?

    একটা স্কেচ ওটা। কিসের?

    একটা গোলাকার বস্তুর। কিছু সংকেতও আছে ওটাতে। হারবার্ট কালেকশনের তালিকা করার সময় খুব সম্ভবত এটা একবার দেখেছিলাম আমি। তাই লোকটা বলার সাথে সাথেই বুঝে গিয়েছিলাম।

    কী ধরনের সংকেত ছিলো ওটা কি মনে আছে আপনার?

    না, স্যরি। সংকেতটা মনে নেই আমার।

    ****

    এক ঘন্টা পর ক্লান্ত হয়ে অবশেষে আবারো তাদের হোটেল রুমে ফিরে এলো স্যাম ও রেমি। এতোটাই ক্লান্ত যে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়েছে দুজন। বিছানায় শুয়ে ওপরের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। আমি ভাবতেও পারছি না যে আমরা মৃত্যুর এতো কাছে চলে গিয়েছিলাম, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর বলল রেমি।

    ভালো প্রচেষ্টা ছিলো তাদের। তবে যথেষ্ট ছিলো না।

    প্রতিবারই তারা কিভাবে আমাদেরকে এক কদম এগিয়ে থাকে?

    ভালো প্রশ্ন, ভাবলো স্যাম। তথ্য ফাঁস হওয়ার পথ তো বন্ধ করে দিয়েছে তারা। আর্চারও তাদেরকে নিশ্চয়তা জানিয়েছে ওইদিনের পর থেকে ব্রিও আর কখনো তার কাজিন ল্যারেইনের সাথে যোগাযোগ করেনি। এবং তারপরও এভেরির লোকেরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের থেকে এক পদক্ষেপ করে এগিয়ে আছে। আমাদের কিছুদিন আগে থেকে শুরু করেছে ওরা। সময়ের সুবিধাটা পাচ্ছে আর কী!

    সেলমাকে কল করা দরকার। হয়তো সে কিছু জানাতে পারবে আমাদের।

    তুমি কল করবে না আমি করবো?

    কোনো উত্তর দিলো না রেমি। রেমির থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে স্যাম তার দিকে তাকাতেই দেখলো যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত রেমির দিকেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ও। সন্ধ্যার পরের ঘটনাটা নিয়ে মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে তার মধ্যে। সে জানে ফিস্কের তাকে জীবিত ফেরত পাঠানোর কোনো ইচ্ছা ছিলো না। কেউ বাঁচাতে না আসলে হয়তো লড়াইয়ের আপ্রাণ চেষ্টা করেও একটা সময় হাল ছেড়ে দিতে হতে তাকে। তারপরও এটা ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলো যে তার রেমিতো বাইরে নিরাপদেই আছে। তবে ইভান রেমিকে টেনে নিয়ে আসার পরই সবকিছু বদলে গেছে।

    তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেনি তার সুন্দরী বধূ। শুধু তাইই না, বুদ্ধি করে সুযোগমতো অস্ত্রও সরবরাহ করেছে। তাকে।

    এভাবেই পাশে শুয়ে রেমির ঘুমন্ত নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শুনছে স্যাম, আর ভাবছে রেমির চতুর, ছলনাময়ী অভিনয়ের ব্যাপারগুলো।

    ভালো দেখিয়েছে, রেমি, ভাবতে ভাবতে আনমনেই ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো স্যাম। এভাবেই ভাবতে ভাবতে একসময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো স্যাম।

    আর এই ঘুম ভাঙলো ফোন বাজার শব্দ শুনে। চোখ খুলে প্রথমে সূর্যালোক দেখে কিছু চমকে গেলো ও। ঠিকমতো বুঝতে পারছে না যে তারা এখন আসলে কোথায়। যখন বুঝতে পারলো যে তারা হোটেলে আছে, তখনই রেমিকে ঘুমজড়িত কণ্ঠে ফোনে বলতে শুনলো, হ্যালো…? দাঁড়ান একটু… কী বললেন?

    কে? স্যাম জিজ্ঞেস করলো।

    মিস ওয়ালশ, ফোন কানে নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বলল রেমি। তারপর ফোনে কথা বলা শেষে স্যামের দিকে ফিরে বলল, মহিলা বলছেন সাংকেতিক চিহ্নওয়ালা ঐ বস্তুটা কোথায় আছে তা তিনি জানেন।

    .

    ৩৫.

    কিভাবে আমাদের চোখ এড়িয়ে গেলো ওটা? জিজ্ঞেস করলো রেমি।

    এটাই স্বাভাবিক, গ্যাস প্যাড়ালে চাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল স্যাম। লম্বা রাস্তাটা আজ বেশ খালি, তাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারছে ওরা। যদিও জানে যে কেউ তাদেরকে অনুসরণ করবে না, তারপরও রিয়ারভিউ মিররে চোখ রাখছে স্যাম। আর এভেরির লোকেরা কেনই বা অনুসরণ করবে তাদেরকে? ফিস্ক তো যেটার জন্য এসেছিলো সেটা পেয়েই গেছে। চোখের সামনেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো ওটা, আর আমরাও সঠিক জায়গাটায় দেখিনি।

    অথবা, ভালোভাবে বললে, তারা আগে জানতো না যে তাদেরকে কী খুঁজতে হবে, তাই দেখার পরও বুঝতে পারেনি। তবে এখন তারা জানে। স্যাম আশা করছে ভুল সূত্র ধরে মিউজিয়ামে খুঁজতে গিয়ে তারা হয়তো বড়ো কোনো ভুল করে বসেনি।

    অল্প সময়ের ভিতরেই গ্রেস হারবার্ট-মিলারের খামারে গিয়ে পৌঁছে গেলো ওরা। আগেরবারের মতো এবারও তাদের গাড়ির শব্দ পেয়েই চেঁচিয়ে উঠলো হাঁস-মুরগিগুলো। খামারের সামনে চড়ে বেড়ানো ছাগলগুলোও শব্দ করতে করতে চলে গেছে ভিতরের দিকে।

    গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভওয়ে ধরে প্রবেশমুখের দিকে পা বাড়ালো স্যাম ও রেমি। প্রতি পদক্ষেপেই তাদের পায়ের নিচ থেকে মড়মড়ে শব্দ ভেসে আসছে। নিশ্চিতভাবেই, এই খামারে কেউ নিঃশব্দে বা কারো চোখে ধরা না পড়ে ঢুকতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই গিয়ে দরজায় টোকা দিলো স্যাম।

    কিন্তু কোনো জবাব এলো না ভিতর থেকে।

    একটু পিছিয়ে গিয়ে ওপরের চিমনির দিকে তাকালো স্যাম। চিমনি দিয়ে কোনো ধোঁয়া বেরুচ্ছে না। লক্ষণ সুবিধার লাগছে না। আমাদের হয়তো একটু চেক করে দেখা দরকার।

    রেমি কিছু না বলে শুধু মাথা ঝাঁকালো। স্যাম জানে রেমিও এখন একই কথা ভাবছে। হারবার্ট-মিলারদের কিছু একটা হয়েছে।

    সামনে থেকে পাশের ইট বিছানো রাস্তার দিকে পা বাড়ালো ওরা। শেওলা জমে থাকায় কিছু কিছু জায়গায় পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তাটা। আরেকটু এগিয়ে যেতেই রম্বসাকৃতির জানালাটা চোখে পড়লো স্যামের। তবে জানালায় সাদা পর্দা লাগানো থাকায় ভিতরের কিছু দেখতে পাচ্ছে না। বাড়ির পিছনের অংশটায় বেশ ভালো একটা শাক-সজির বাগান গড়ে তুলেছে হারবার্ট মিলাররা। এই দিকেও বেশ কিছু মুরগি আছে, গাজর ও সেলারি শাকের বাগানের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওগুলো।

    আরো কিছুটা এগুতেই পিছনের ঘন সবুজ রঙের দরজাটা খুঁজে পেলো ওরা। দরজাটার কাছে পৌঁছুতেই দরজার তালার কাছে কিছু ক্ষতচিহ্ন খুঁজে পেলো স্যাম। তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলো কেউ। এটা দেখার আশা করিনি আমি।

    আমিও না, রেমি বলল।

    কিছু না বলে দরজার নবটা ঘুরালো স্যাম। ভিতরে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই বাড়ির সামনে থেকে হাঁস, মুরগী ও ছাগলের উচ্চস্বরে চেঁচানোর শব্দ শুনতে পেলো ওরা। সাথে সাথে ড্রাইভওয়েতে গাড়ির চাকার ঘর্ষণের কর্কষ শব্দও।

    নিশ্চিতভাবেই, খুবই শক্তিশালী অ্যালার্ম ওটা, রেমি বলল। আমাদেরও ওরকম কিছুর ব্যবস্থা করা উচিৎ।

    আমার মনে হয় না যেলতান তাজা মুরগি দিয়ে লাঞ্চ করার লোভ সামলাতে পারবে।

    ওহ, ঠিক। ভুলে গিয়েছিলাম ওটা।

    পিছন থেকে নেমে আবার বাড়ির সামনের দিকে পা বাড়ালো ওরা। স্যাম আগে আগে যাচ্ছে। কারা এসেছে ওটা নিশ্চিত না হয়ে কাউকে দেখা দিতে চাচ্ছে না ও। রেমিকে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলে বাড়ির কোনায় গিয়ে সামনের দিকে উঁকি দিলো স্যাম। তাকাতেই একটা নীল রঙের ফিয়েট গাড়ির সামনের প্যাসেঞ্জার সিট থেকে গ্রেস হারবার্ট-মিলারকে নামতে দেখলো ও। মহিলার লাল-কালো ফুলেল জামা, ওলের কালো কোট এবং হোটো কালো টুপি দেখে স্যাম বুঝতে পারলো যে মহিলা মাত্রই চার্চ থেকে ফিরে এসেছে।

    তবে মহিলার স্বামীকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ভয় নেই দেখে রেমিকে এগিয়ে আসার ইশারা করলো স্যাম। তারপর মিসেস হারবার্ট মিলারকে স্বাগত জানানোর জন্য দুইজন একসাথে পা বাড়ালো বাড়ির সামনের দিকে।

    গাড়ির ড্রাইভারকে বিদায় জানিয়ে প্রবেশমুখের দিকে তাকাতেই ফার্গো দম্পতিকে দেখতে পেলো মহিলা। তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, মি. অ্যান্ড মিসেস ফার্গো, আমি জানতাম না যে আপনারা আজ এদিকে আসবেন…

    কিছু না জানিয়ে আসার জন্য দুঃখিত, মিসেস হারবার্ট-মিলার, বলল স্যাম। আপনার এবং আপনার স্বামীর সাথে আসলে কিছু কথা ছিলো আমাদের। উনি কি বাসায় আছেন?

    না। আজ সকালেই সে তার ভাইকে দেখতে চলে গেছে। তার ভাইয়ের শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না কয়েকদিন ধরে। তবে, চলুন, ভিতরে গিয়ে কথা বলি।

    বলে সামনের দরজার দিকে পা বাড়ালো মহিলা। সাথে সাথেই স্যাম এগিয়ে গিয়ে মহিলাকে থামিয়ে বলল, আসলে, আমার মনে হয় কেউ একজন তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছে।

    কথাটা শুনে কিছুটা চমকে গেলেন মিসেস হারবার্ট-মিলার। তারপর হেসে উঠে আবারো পা বাড়ালেন সামনের দিকে। পার্স থেকে চাবিটা বের করতে করতে বললেন, আমার তা মনে হয় না। লোকালয়ের থেকে অনেক দূরে থাকি আমরা। এখানে কে কার সময় নষ্ট করতে আসবে? এমন না যে আমাদের এখানে খুব মূল্যবান কিছু আছে।

    তারপরও, কেউ একজন আপনাদের পিছনের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছে বলে মনে হচ্ছে।

    বলে মহিলাকে সাথে নিয়ে আবারো পিছনের দরজার দিকে পা বাড়ালো ওরা। দরজার কাছে পৌঁছেই দরজার তালার পাশে থাকা ক্ষতচিহ্নগুলো দেখালো স্যাম।

    ওহ, খোদা, চমকে উঠে বললেন মিসেস হারবার্ট-মিলার।

    এগিয়ে গিয়ে স্যাম দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে বলল, বেরুনোর আগে তো নিশ্চয় দরজা লক করে গিয়েছিলেন?

    মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলেন মহিলা, তবে কিছু বললেন না।

    আমি নিশ্চিত তারা এতক্ষণে চলে গেছে, বলল স্যাম। তবে, আমার ঝুঁকি নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।

    কিন্তু এখানে পুলিশ আসতে আসতে অনেক সময় লেগে যাবে। জায়গাটা তো শহর থেকে অনেক বেশি ভিতরে।

    আপনি রেমির ফোন থেকে পুলিশকে জানান। ততক্ষণে আমি একটু চেক করে দেখছি।

    বলে ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুললো স্যাম। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে শব্দ শোনার চেষ্টা করছে। ভিতরে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই পিছনে থাকা রেমিকে বলতে শুনলো, দুঃশ্চিন্তা করবেন না। এসবে স্যামের ভালো দক্ষতা আছে।

    কেউ কেন তালা ভেঙে ঢুকতে যাবে এখানে? বললেন মিসেস গ্রেস হারবার্ট-মিলার।

    হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে পিছনের দরজা দিয়ে রান্নাঘরে পা রাখলো স্যাম। মাটির বারান্দা দিয়ে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আস্তেধীরে। সে নিশ্চিত যে অনধিকার প্রবেশকারীরা একটা জিনিসের জন্যই এসেছিলো, এবং এই বাড়িতে শুধু ঐ একটা জিনিসই নেই। তারপরও বাড়ির পুরোটাই চেক করে দেখলো স্যাম। চেক করা শেষে বাইরে অন্য দুইজনের সাথে একত্রিত হয়ে জানালো, তারা চলে গেছে।

    রেমি বলল, পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে ওরা।

    আতঙ্কে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে গ্রেসের। কোনো কিছু কি মিসিং আছে?

    হ্যাঁ, খুব সম্ভবত, অন্য দুজনের সাথে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে সামনের দরজার পাশে থাকা দেয়ালের দিকে নির্দেশ করে বলল স্যাম।

    স্যামের নির্দেশ করা জায়গাটায় তাকাতেই পারিবারিক ক্রেস্টের নিচে এবং দুই পেইন্টিংর মাঝখানে থাকা শূন্যস্থানটা চোখে পড়লো গ্রেসের। ঢাল? দুনিয়ায় এতো কিছু থাকতে এই ঢাল চুরি করবে কেন কেউ?

    আমাদের ধারণা, স্যাম বলল, ঢালের উত্তল কেন্দ্রে থাকা চিহ্নটা আসলে একটা পুরোনো সংকেত। একটা মানচিত্রের অর্থ বের করার সূত্র ওটা।

    ঢালের উত্তল অংশ? ওটা কী জিনিস আবার?

    এটা ঢালের কেন্দ্রে থাকা তামার গোলাকার একটা অংশ। এটাকে শিল্ড বসও বলা হয়। ঢালের হাতলের সাথে লাগানো থাকে এটা।

    আরো কিছুক্ষণ দেয়ালের শূন্যস্থানটার দিকে তাকিয়ে থেকে গ্রেস হারবার্ট মিলার বললেন, আপনি নিশ্চিত ওটায় সংকেত লুকিয়ে আছে? ওটা তো শুধু একটা কেল্টিক নকশা মাত্র!

    ঐ কেল্টিক নকশাটা আসলে সংকেত না। সংকেতটা রয়েছে নকশার বৃত্তের সীমানায়।

    ওটা… বলেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন মহিলা। মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, আমার বসা দরকার একটু।

    চলুন, ভিতরে নিয়ে যাই আপনাকে, বলে মহিলার হাতে ধরে তাকে বৈঠকখানার দিকে পা বাড়ালো রেমি। মহিলাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, ড্রিংকের জন্য কিছু দিব আপনাকে?

    না, না, আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ।

    স্যামও একটা চেয়ারে বসে বলল, আপনি বলেছিলেন, আমাদের আগেও দুইজন লোক আর্টিফ্যাক্টগুলোর ব্যাপারে জানতে এসেছিলো আপনার কাছে।

    শুনে শুধু মাথা ঝাঁকালেন গ্রেস হারবার্ট-মিলার।

    তাদের কি বর্ণনা দিতে পারবেন একটু?

    মনে হ… আপনার কি ধারণা তারাই…?

    যদি আপনার বর্ণনার সাথে আমাদের পিছনে লাগা লোকগুলোর মিল থাকে, তাহলে হ্যাঁ তারাই এসেছিল।

    কিন্তু কেন?

    সাংকেতিক চিহ্ন ও মানচিত্রের ব্যাপারে তো আগেই বলেছি। আমরা নিশ্চিত না, তবে ধারণা করছি যে কোনো গুপ্তধনের মানচিত্র ওটা।

    শুনে ভ্রু কুঁচকে গেলো গ্রেসের। ঐ পুরোনো কিংবদন্তিটা তাহলে সত্য?

    আপনি আগেও শুনেছেন এটা?

    হা। তবে ওটা তো শুধু বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি একটা গল্প মাত্র। কেউই এটাকে সত্য মনে করে না।

    কিংবদন্তিটা, পুলিশ আসার আগে মহিলার কাছ থেকে যতোটা সম্ভব তথ্য বের করতে চাচ্ছে স্যাম। আমাদেরকে কি গল্পটা বলতে পারবেন?

    অনেকদিন আগে শুনেছিলাম… চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে দেয়ালের শূন্যস্থানটার দিকে তাকালেন গ্রেস। তখন বোধহয় আমার বয়স ছিলো দশ বা এগারোর মতো। আমার কাজিন ভাইয়েরা আমাকে এই বলে ক্ষেপাতো যে, মেয়ে বলে আমি কখনো ওটার অংশ হতে পারবো না।

    কিসের অংশ?

    প্রটেক্টরশিপের। আমার এক কাজিনের কথাটা মনে আছে, আমাকে প্রায়ই বলতো, তুই কিছুই জানিস না? মেয়েরা রক্ষক হতে পারবে না। রক্ষক হওয়ার জন্য তোকে ছেলে হওয়া লাগবে।

    কিসের রক্ষক?

    অবশ্যই, কিং জনের সম্পদের।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
    Next Article দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }