Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প453 Mins Read0

    ৪১. ক্যাসল রাইজিংর দিকে যাত্রা

    ৪১.

    পরদিন সকালে ক্যাসল রাইজিংর দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিলো স্যাম ও রেমি। এখন পর্যন্ত তিনটা সাইট খুঁজে পেয়েছে ওরা। এর মধ্যে ক্যাসল একরও আছে। তবে এটার সাথে কিং জন বা গুপ্তসম্পদের কোনো সম্পর্কে নেই বলে এটাতে যাওয়ারও কোনো ইচ্ছা নেই তাদের। তাছাড়া নাইজেলও ক্যাসল রাইজিং যাওয়ারই পরামর্শ দিয়েছে তাদেরকে। এর সাথে রানি ইসাবেলারও সম্পৃক্ততা আছে। সেখানেই থাকতে রানি ইসাবেলা, বা বলা যায় সেখানেই নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিলো তাকে। সিংহাসন দখলের পর ইসাবেলার ছেলে তৃতীয় এডওয়ার্ড তাকে এবং তাঁর প্রেমিক রজার মর্টিমারকে সেখানেই নির্বাসিত করেছিলো। গুজব আছে ইসাবেলা নাকি সবার অলক্ষ্যে দুর্গ থেকে আসা যাওয়া করার জন্য একটা গুপ্ত সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতেন। এজন্যেই ক্যাসল রাইজিং-এ যাওয়ার প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশি।

    ফোনে লাযলো ও সেলমাকে জানানোর পর লাযলো অবশ্য তাদের সিদ্ধান্ত টা পছন্দ করতে পারেনি। গুপ্ত সংকেতের অর্থ পুরোপুরি বের না করা পর্যন্ত কোথাও খুঁজতে যাওয়াটা খুবই তড়িৎ সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। নিন্ম মানের ছবি আর সাইফার হুইলের ঝাপসা চিহ্ন থেকে অর্থ বের করার কাজটা খুব একটা সহজ না।

    যাই হোক, আমরা তো সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো না, বলল স্যাম।

    আর, তাছাড়া, রেমি যোগ করলো সাথে, চার্লস এভেরির থেকেও এগিয়ে থাকতে হবে আমাদেরকে।

    ওদেরকে ভুলে যান, বলল লাযলো। আপনারা কি জানেন গ্রেট ব্রিটেনে কতগুলো দুর্গের ধ্বংসস্তূপ আছে? খোঁজা শেষ করতে করতে বুড়ো হয়ে যাবেন আপনারা।

    রেমি ঠিকই বলেছে, স্যাম বলল। এভেরি আর ফিস্ক নাইজেলের অনুবাদ করা নোটবইটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এরমানে তারাও আমাদের মতো একই পথে আছে।

    গুপ্তধনগুলোও সর্বশেষ এই এরিয়াতেই দেখা গিয়েছিলো, বলল রেমি। আর তাছাড়া ম্যাপের সংকেতেও দুর্গের কথা বলা আছে। তো সম্ভাবনাকে বাদ দিবো কেন? কে জানে হয়তো সঠিক পথে এগুনোর মতো কোনো গুরুতুপূর্ণ তথ্যও পেয়ে যেতে পারি।

    তা ঠিক। হালকা ঘুরে দেখলে হয়তো তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না, বলল লাযলো। তো, ঘুরে দেখুন একবার। আমি এদিকের কাজ সামলাচ্ছি। কিছু বের করতে পারলে আপনাদের জানাবো।

    বলে ফোনটা সেলমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে কাজে ফিরে গেলো লাযলো। ওদিকে স্যামও স্পিকার অফ করে ফোনটা তুলে দিলো রেমির হাতে। ব্রির ব্যাপারে সেলমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখার পর অবশ্য বেশ খুশিই দেখাচ্ছে তাকে।

    ভালো সংবাদ? স্যাম জানতে চাইলো।

    মনে হয়। ব্রি এখন মোটামুটি ভালোই আছে শুনলাম। আগের মতো ঝামেলা নেই। সেলমা ভাবছে মিশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্রিকে আমাদের ওখানেই রেখে দিবে।

    ভালো একটা আইডিয়া। আমিও চাই না আবারো এভেরির খপ্পরে পড়ুক ও।

    তখনই তাদের দরজায় টোকা দিলো কেউ। নাইজেল এসে গেছে। গতরাতের ঘটনার পর নাইজেলকে আর কোনো বিপদে ফেলার ইচ্ছা ছিল না। তাদের। সেজন্যেই লোকটাকে তাদের সাথে আসতে মানা করেছিলো। তারপরও নাইজেল নিজে থেকেই জোর করে এসে তাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বলেছে যে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে ভালোভাবেই ধারণা আছে তার।

    ****

    নাইজেলের দিক নির্দেশনায় গাড়ি চালাচ্ছে স্যাম। আর রেমি বসে আছে গাড়ির পিছনের সিটে। গতরাতের ঘন কুয়াশা এখন কিছুটা পাতলা হয়েছে, তারপরও চারপাশ ঠিকই ঝাপসা হয়ে আছে। তাই ওয়াইপারগুলো চালু করে নিলো স্যাম।

    জায়গাটায় পৌঁছে দেখলো কার পার্কে ডজনখানেকের মতো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে মাত্র। এখনো খুব বেশি ট্যুরিস্ট এসে জমায়েত হয়নি এখানে। গাড়ি পার্ক করে ট্রাঙ্ক থেকে ব্যাকপ্যাক বের করে নিলো স্যাম।

    চমৎকার, দুর্গের দিকে হেঁটে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো রেমি। কুয়াশা জমে থাকায় দুর্গের রুক্ষ প্রান্তগুলোকে সূর্যের আলোতে রুপালি দেখাচ্ছে। ফোন বের করে দুর্গার কয়েকটা ছবি তুলে নিলো রেমি। আহ, সাথে যদি এখন একটা সত্যিকারের ক্যামেরা থাকতো।

    কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্যটা একবার দেখে নিলো ওরা। পাথরের কাঠামোটার প্রশংসা না করে পারছে না। তারপর আবার পা বাড়ালো দুর্গের দিকে। গ্রন্থ অনুসারে, দুৰ্গটা নির্মাণ করা হয়েছিলো দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে। বারো একর জায়গার ওপর বিস্তৃত পাথরের বিশাল কাঠামোটাকে দেখে মধ্যযুগীয় দুর্গ মনে হলেও, এটা সত্যিকার অর্থে নির্মাণ করা হয়েছিলো হান্টিং লজ হিসেবে।

    তবে দুঃখের বিষয় হলো তাদের আকাঙ্ক্ষিত কিছুই নেই এখানে। প্রায় একঘণ্টা ধরে দুর্গের প্রতিটি কোনায় কোনায় খুঁজেও কিছু না পাওয়ার স্যাম ধরেই নিলো যে লাযলো ঠিকই বলেছিলো। অন্তত এই দুৰ্গটা ক্ষেত্রে লায়লোর কথাই ঠিক। তারা আসলেই তাদের সময় নষ্ট করছে এখানে। অন্য কোথাও কি খোঁজ করা দরকার আমাদের? খোঁজাখুঁজি শেষে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে দুর্গের মাটিতে নামতে নামতে নাইজেলকে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    মাথায় এখন একটা জায়গার নামই ঘুরছে শুধু। কিং জনের সমাধি। আর ওটা খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ কাজ না।

    কেন না? জানতে চাইলে স্যাম। আমাদের হাতে তো সময় আছে।

    শত শত বছর ধরে জমা কাদামাটি সরানোর সময় আছে? আর তাছাড়া সমাধিটা কোথায় সেটাও সঠিকভাবে জানে না কেউ। একটা সাধারণ ধারণা আছে শুধু। বিশ্বাস করুন, অনেকেই খুঁজে দেখেছে, কিন্তু কেউই খুঁজে পায়নি জায়গাটা।

    সত্যি বলতে নাইজেল এখনই ক্যাসল রাইজিং-এর ওপর থেকে আশা সরাতে চাচ্ছে না। রানি ইসাবেলের ব্যবহার করা কথিত গুপ্তসুড়ঙ্গটা এখনো খুঁজে পায়নি ওরা। পাশ দিয়ে তার পরিচিত টুর গাইডকে এগিয়ে যেতে দেখেই স্যামদেরকে বলল, লোকটা আমাদের হিস্টোরিক্যাল সোসাইটিতে ছিলো… তার হয়তো কিছু জানা থাকতে পারে। এখনই ফিরে আসছি আমি।

    ****

    কারপার্কে যাওয়ার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নাইজেলের জন্য অপেক্ষা করছে স্যাম ও রেমি। যদিও নাইজেল কোনো অজানা নতুন তথ্য বের করে আনতে পারবে বলেও আশা করছে না ওরা। স্যামের যতটা ধারণা এই ধ্বংসস্তূপের আড়ালে তেমন কোনো গুপ্ত ইতিহাস লুকিয়ে নেই।

    অযথাই সময় নষ্ট ভেবে, কারপার্কের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো স্যাম। কারপার্কটা এখন প্রচুর গাড়ি ও স্কুলবাসে ভরে গেছে। এর ভিতর দিয়েই এগিয়ে আসতে থাকা একটা নীল বিএমডব্লিউ চোখে পড়লো তার। সত্যি বলতে নজরটা পড়েছে গাড়ির পিছনের সিটে থাকা কালো রঙের বিশালাকৃতির কুকুরটার ওপর। গাড়িটা পরের সারির দিকে এগিয়ে যেতেই ড্রাইভারকেও চোখে পড়লো তার। ড্রাইভারকে সে ভালোভাবেই চিনে। ড্রাইভারের কপালে থাকা ব্যান্ডেজটাও তাদের পরিচিতির প্রমাণ। কয়েকরাত আগে মিউজিয়ামে ইভানের কপালের এই জায়গাতেই আঘাত করেছিলো ও। ওটা ইভান। বিএমডব্লিউর ড্রাইভিং সিটে।

    তুমি নিশ্চিত?

    হ্যাঁ, বলে রেমিকে নিয়ে পিছনে সরে গেলো স্যাম। আশা করছে ইভানরা হয়তো তাদেরকে এখনো দেখতে পায়নি। সাথে জ্যাকও আছে। আর গাড়ির পিছনের সিটে একটা বিশাল কালো কুকুরও আছে। আমি নিশ্চিত যে ওটাই গতরাতে আমাদের ওপর আক্রমণ কুকুরটা।

    আহ, কালো দানোর গল্পটা তাহলে আর সত্য হলো না, বলল রেমি। গতরাতে কুকুরের পিছনে থাকা ছায়ামূর্তিটাকে চিনতেও দেরি হলো না তাদের। জ্যাকই ছিলো সেই ডেভিল।

    ফিস্ককে যদিও তাদের সাথে দেখা যাচ্ছে না, স্যাম বলার সাথে সাথেই অপর পাশ থেকে একটা কালো মার্সিডিজ এসে উপস্থিত হলো দৃশ্যপটে। ইভানের গাড়ির পিছনে এসে থেমেছে গাড়িটা। ফিস্কই ড্রাইভ করছে। গাড়ি থামতেই প্যাসেঞ্জার সিট থেকে সাদা পার্কা পরা এক সোনালিচুলো মহিলাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলো স্যাম। মহিলা গাড়ি থেকে নেমে যেতেই গাড়িটা নিয়ে সামনে চলে গেলো ফিস্ক। আর মহিলা এগিয়ে গেলো ইভানের গাড়ির দিকে।

    ইন্টারেস্টিং, ফিস্করাও তাহলে একই জায়গায় চলে এসেছে, বলল স্যাম। আমরা তো আরেকটু হলেই এই দুর্গটাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলাম।

    হয়তো রানি ইসাবেলার সুড়ঙ্গ ব্যবহারের ঘটনাটা আসলেই সত্য।

    তাড়াতাড়ি নাইজেলকে খুঁজে বের করা দরকার আমাদের।

    বলে সামনের দিকে পা বাড়ালো স্যাম। তবে রেমি তাকে অনুসরণ না করে ইভান, জ্যাক ও তাদের সাথে থাকা মহিলার ছবি তুলে নিলো প্রথমে। হয়তো সেলমা এই মহিলার পরিচয় বের করতে পারবে। বলে তাড়াতাড়ি করে স্যামের পিছন পিছন যেতে সেলমাকে ছবিগুলো পাঠানোর চেষ্টা করছে। রেমি। ধুর, সিগন্যাল নেই।

    নাইজেল কোথায়? টুর গাইডদের পোস্টে নাইজেলকে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    রেমি তার ফোন থেকে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, সে তো এখানে দাঁড়িয়েই তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলো।

    কিন্তু এখন এখানে নাইজেল বা তার বন্ধুর কেউই নেই।

    ব্যাকপ্যাক থেকে বাইনোকুলারটা বের করে সামনের চত্বরের দিকে তাকালো স্যাম। তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, বাইনোকুলারটা দুর্গের দেয়ালের সিঁড়ির দিকে তুলে আনতে আনতে বলল স্যাম। প্রচুর মানুষ জমা হয়ে গেছে এখন। ভীড়ের যে কোনো জায়গায় থাকতে পারে ওরা।

    চলো ওপরে উঠে দেখা যাক। ভালো ভিউ পাওয়া যাবে ওখান থেকে।

    চেষ্টা করে দেখা যায়, বলে স্কুল বাচ্চাদের এড়িয়ে সিঁড়ি ধরে ওপরতলায় উঠে এলো ওরা। ওপরতলায় পৌঁছে বাইনোকুলার ধরে নিচে তাকাতেই ইভানকে দেখলো এক গাইডের সাথে কথা বলছে। তবে নাইজেল বা তার বন্ধুদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। ইশশ আমি যদি লিপরিড করতে পারতাম। ইভান কী নিয়ে কথা বলছে সেটা শুনতে পারলে শান্তি লাগতো।

    রেমিও এসে দাঁড়ালো স্যামের পাশে। তারাও হয়তো কোনো ভালো কারণেই এসেছে এখানে। আমরা হয়তো কিছু একটা মিস করেছি। কী মিস করলাম?

    খুব সম্ভবত তারাও আমাদের মতোই এটাকেও সম্ভাব্য স্থানগুলোর একটা হিসেবে ভাবছে।

    আরো কিছুক্ষণ ইভানদের দিকেই তাকিয়ে রইলো স্যাম। তারা যেটা নিয়েই আলাপ করে থাকুক না ইভানকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব তাড়ার ভিতরে আছে। গাইডের সাথে কথা বলেই ঘুরে উলটো দিকে পা বাড়ালো ইভান। ইভান সম্ভবত কিছু একটা জানতে পেরেছে।

    তখনই রেমি নিচের দিকে নির্দেশ করে বলে উঠলো, ঐ তো নাইজেল!

    বাইনোকুলার নিয়ে সেদিকে তাকালো স্যাম। তবে জ্যাক এবং তার সাথে থাকা মহিলাকে নাইজেলের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে খুব একটা বেশি খুশি হতে পারলো না ও।

    .

    ৪২.

    এই লোক এখানে আসলো কিভাবে? কয়েকগজ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যুর গাইডকে দেখে বলে উঠলো আলেক্সান্দ্রা এভেরি। গতরাতে তারা এই টুর গাইডের ওপরই আক্রমণ করেছিলো। অবশ্য, লোকটা এখনো তাদেরকে দেখতে পায়নি।

    কুকুরের দড়িটা আলেক্সান্দ্রার হাতে দিয়ে জ্যাক তার পিস্তলটা বের করে বলল, আমি দেখছি ওকে।

    হাত বাড়িয়ে জ্যাককে আটকালো আলেক্সান্দ্রা। ওটা সরাও তো। মানুষে গিজগিজ করছে জায়গাটা, অন্ততপক্ষে এখানে হুটহাট পিস্তল বের করে বসো না। ভুলে যেও না যে আমরা গ্রেট ব্রিটেনে আছি। এখানে তারা পিস্তল বের করাটা পছন্দ করে না।

    আপনি নিশ্চয়ই ঐ লোকটাকে চিনেন? জিজ্ঞেস করলো জ্যাক।

    অবশ্যই চিনি আমি। তবে এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হলো লোকটা এখানে কেন! বলে এগিয়ে আসতে থাকা ইভানের দিকে তাকালো আলেক্সান্দ্রা। ইভানের হাত তার পকেটের পিস্তলে থাকলেও, জ্যাকের মতো হুটহাট অস্ত্র বের করে আনার প্রবণতা নেই তার মধ্যে। আলেক্সান্দ্রা বেশ সন্তুষ্ট ইভানকে শান্ত থাকতে দেখে। কিছু জানতে পেরেছো?

    এখানে কোনো সুড়ঙ্গ নেই, জবাবে বলল ইভান।

    ইভানের জবাব শুনে আবারো টু্যর গাইডের দিকে ফিরে তাকালো আলেক্সান্দ্রা। নাইজেল না কী রিজওয়েল যেন নাম লোকটার! হ্যাঁ, এটাই, ভেবে লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলো, মি. রিজওয়েল, আপনি এখানে? কী অদ্ভুত!

    ডাক শুনে চকিতেই থমকে দাঁড়ালো নাইজেল। একদমই খুশি দেখাচ্ছে না তাকে। গতকাল আমার শেষ ট্যুরে ছিলেন আপনি।

    হ্যাঁ, ট্যুরটা খুবই ভালো ছিলো। আপনি কি এখানেও গাইডের কাজ করেন?

    জিনিসটা কোথায়?

    কোন জিনিস?

    আমার নোটবুক।

    আপনার কথা বুঝতে পারছি না আমি।

    হয় আপনি চুরি করেছেন ওটা, নয়তো আপনার এই সঙ্গীদের কেউ একজন করেছে, জ্যাক আর ইভানের দিকে ইশারা করে বলল নাইজেল।

    আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি যে এটার সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

    আপনিই ট্যুরের সময় আমাকে পুরোনো ইংরেজি অনুবাদ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আর এখন এখানেও হাজির হয়ে গেছেন। কেন জানতে পারি?

    ঘুরে দেখতে এসেছি, লোকটার কথা বলার ধরনটা ভালো লাগছে না তার। আশেপাশের লোকদের বেশ কয়েকজন তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আপনার মতো লোকদের তো এটা অন্তত বুঝা উচিৎ।

    আপনারা কি আমাকে অনুসরণ করছেন?

    আর সহ্য করতে পারলো না ইভান। এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে নাইজেলের পেটে ঠেকিয়ে বলল, যথেষ্ট প্রশ্ন করেছো তুমি।

    চমৎকার, আমি আরো এটাকে ঠাণ্ডা মাথার লোক ভেবেছিলাম, মনে মনে ভাবলো আলেক্সান্দ্রা।

    সাথে এটা ভেবেও অবাক হলো যে ফিস্কের কি আসলেই নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা। না থাকলে তো ব্যাপারটা খুব হাস্যকর শোনাবে। যাই হোক, এখন থেকে অবশ্যই তাকে তার নিজের দিকটা ভালোভাবে খেয়াল করে চলতে হবে।

    অবশ্য এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভেবে খুব একটা লাভ হবে না। এখন নাইজেলকে পুলিশ ডাকা হতে বিরত রাখাটাই মূল কাজ। সাথে এই দুই পিস্ত লধারী থাকায় পুলিশ ডাকলে বড়োসররা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। তাই ইভানের হাত চেপে বলল, দয়া করে পিস্তলটা লুকিয়ে রাখো এখন। এখানে প্রচুর প্রত্যক্ষদর্শী দাঁড়িয়ে আছে। জনশূন্য জায়গায় না যাওয়া পর্যন্ত ওটা ব্যবহারের কথা ভেবো না।

    মাথা ঝাঁকিয়ে পিস্তলটা আবার পকেটে ডুকিয়ে রাখলো ইভান। তারপর নাইজেলের আরো কাছে ঘেঁষে বলল, আমার উপদেশ শুনবে? স্বাভাবিকভাবে হেঁটে কারপার্কে চলে যাও। কথা দিচ্ছি, তুমি ঠিকঠাক ভাবে কথা মেনে চললে ট্রিগার চাপবো না আমি।

    কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটা শুরু করলো নাইজেল। অন্য তিনজন আসছে তার পিছে পিছে। তবে ভিড়ের মধ্যে ঠিকঠাক মতো হেঁটে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে তাদের জন্য। পর্যটকদের বিশাল একটা দলের ভিতরে পড়ে গেছে ওরা। আরেকটু হলেই এস্কিমো পোশাক পরা এক মহিলা হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিয়েছিলো নাইজেলের গায়ে। সতর্ক না থাকলে ভিড়ের ভিতরে নাইজেলকে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনাও কম না। আর এখন এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নাইজেলকে হারানোর মতো ঝুঁকি নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আলেক্সান্দ্রার। তাই কুকুরের দড়িটা আবারো জ্যাকের হাতে তুলে দিয়ে নাইজেলের পাশে এগিয়ে গেলো ও। নাইজেলের হাতে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আমার সাথের দুজনের কিন্তু মাথার কোনো ঠিক নেই। ভালোয় ভালোয় আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলো, নাহলে কিন্তু আমি তোমার নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।

    কথাটা শুনেই ঢোক গিললো নাইজেল। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তার। মহিলার সম্বোধন পরিবর্তন করাটাও তার নজর এড়ায়নি। হঠাৎ করেই বিপদের মাত্রাটা ভালো করে বুঝতে পারছে এখন। আমি কাউকে কিছু বলবো না। আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ।

    সত্যি বলতে, তোমাকে এখানে পেয়ে সুবিধাই হয়েছে আমাদের। এখন তোমার সাথেই দেখা করতে যাবো বলে ভাবছিলাম। যাই হোক, সময় বাঁচালে, বলে মুচকি হাসলো আলেক্সান্দ্রা। গাড়িতে উঠার আগ পর্যন্ত নাইজেলকে আর ভয় দেখানোর ইচ্ছা নেই তার। আমাদেরকে আরো কিছু অনুবাদ করে দেওয়া লাগবে তোমার। কথা দিচ্ছি, কাজটা ঠিকঠাক মতো করে দিতে পারলে কেউই তোমাকে কোনো আঘাত করবে না।

    .

    ৪৩.

    নতুন করে পরিকল্পনা করার মতো তেমন কোনো সময় নেই এখন। সোনালিচুলো মহিলাকে নাইজেলের সাথে কথা বলতে দেখেই চুলগুলো তার জ্যাকেটের আড়ালে লুকিয়ে নিয়ে এবং চোখে একটা মোটা সানগ্লাস লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড় লাগালো রেমি। সাথে করে একটা সিগ পি৯৩৮ হ্যান্ডগানও নিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইভানদের দলটা কারপার্কের ওয়াকওয়েতে গিয়ে দাঁড়ালো রেমি।

    কড়া পাহারা দিয়ে নাইজেলকে নিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে দলটা। নাইজেলের একপাশে রয়েছে ইভান আর অন্যপাশে রয়েছে সোনালিচুলো মহিলা। আর কুকুর নিয়ে তাদের পিছু পিছু আসছে জ্যাক। তারা কেউ তাকে চিনতে না পারলেও কুকুরটা ঠিকই তার দিকে তাকিয়ে গজরাতে শুরু করেছে। আতঙ্কিত হয়ে রেমি পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে আনতে যাবে, ঠিক তখনই সোনালিচুলো মহিলাকে বলতে শুনলো, কুকুরটাকে শান্ত রাখো তো। অপদার্থ প্রাণী একটা। এখন ওটার ইচ্ছাপূরণ করার মতো সময় নেই আমাদের হাতে।

    কিছু না বলে দড়ি টেনে ধরে কুকুরটাকে আবারো শান্ত করে নিলো জ্যাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেমিকে পাশ কাটিয়ে গেলো দলটা। তবে রেমি এখনো তার জায়গা থেকে নড়েনি। টুর বাসের পিছনে দাঁড়িয়ে দলটার ওপর নজর রাখছে।

    নীল বিএমডব্লিউয়ের সামনে গিয়ে থেমে গেলো দলটা। ইভান তাকিয়ে চারপাশটা দেখে নিচ্ছে একবার। কেউ তাদের দিকে নজর রাখছে না নিশ্চিত হয়ে নাইজেলকে গাড়ির ট্রাংকে ঢুকিয়ে দিলো এরপর। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসে গাড়ি নিয়ে যে পথ দিয়ে এসেছিলো সেই পথ দিয়েই ফিরে গেলো আবার।

    তারা চলে যেতেই তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে এলো রেমি। স্যামের গাড়ি নিয়ে আসার অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরই গাড়ি নিয়ে এসে স্যাম জিজ্ঞেস করলো, কোন দিকে গেছে ওরা?

    জবাবে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে রেমি বলল, বামে মোড় নিয়েছে। ওরা। নাইজেলকে ট্রাংকে ভরে নিয়ে গেছে।

    আর আমাদের পরিকল্পনাটা?

    পুরোপুরি সফল ওটা।

    স্যামও বাম দিকে মোড় নিয়ে বলল, দেখো তো সেল সিগন্যাল পাওয়া যায় কিনা!

    সিগন্যাল এখনো দুর্বল, ফোন বের করে মাই আইফোন অ্যাপ্লিকেশনটা চালু করতে করতে বলল রেমি। স্যামের ফোনটাকে এখনো অফলাইন দেখাচ্ছে। রেমির আশঙ্কা হচ্ছে ইভানরা হয়তো নাইজেলের পকেটে থাকা ফোনটার খোঁজ পেয়ে গেছে। তাই ফোনটা অফ করে দিয়েছে। তবে দুর্গ থেকে মাইলখানেক দূরে যেতেই সিগন্যালের দেখা মিললো আবার। পেয়েছি সিগন্যাল।

    ওকে। তবে তোমার পকেটমারার ভয়ানক দক্ষতার প্রশংসা না করে পারছি না, রেমি। তুমি নিশ্চিত যে আগের জীবনে তুমি সন্ত্রাসচক্রের মূলহোতাদের কেউ ছিলে না?

    শুনে হেসে উঠলো রেমি। আরেহ, কারো পকেট থেকে কিছু চুরি করার থেকে পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে দেওয়াটা অনেক সহজ কাজ।

    মিউজিয়ামে মহিলার কী-কার্ডের ব্যাপারটা তাহলে কী ছিলো?

    ওটা তো মহিলার কাঁধে ঝুলছিলো, আমি শুধু টান দিয়ে নিয়েছি। তেমন কঠিন কাজ না এটা, বলে আবার ফোনের দিকে তাকালো রেমি। যাই হোক, উত্তর-পূর্ব দিকে যাচ্ছে ওরা।

    তাহলে আমরাও ওদিকে যাচ্ছি। দেখি নাইজেলকে কোথায় নিয়ে যায় ওরা। আর তুমি রাস্তার দিকে খেয়াল রাখো। ফিস্ক আবারো দেখা দিতে পারে যে কোনো সময়।

    ****

    উত্তরের রাস্তা ধরে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো ড্রাইভ করার পর অর্ধ-কাঠের তৈরি সাদা বর্ণের এক সরাইখানার সামনে এসে গাড়ি থামালো স্যাম। সরাইখানার সাইনবোর্ডে লেখা পিগ অ্যান্ড ল্যান্টার্ন।

    জায়গাটায় বেশ জনশূন্য। তবে তাদের অনুসরণ করা নীল গাড়িটাও দাঁড়িয়ে আছে সরাইখানার সামনে। সত্যি বলতে তাদের থেকে মাত্র কয়েক মিনিট আগেই এসে এখানে থেমেছে গাড়িটা। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে ট্রাংক থেকে নাইজেলকে বের করে আনলো ইভান। লোকটাকে প্রচণ্ড আতঙ্কগ্রস্ত দেখাচ্ছে এখন।

    আমাদের মনে হয় পুলিশকে ফোন করা উচিৎ, বলল রেমি।

    আমেরিকায় থাকলে ঠিকই ডাকতাম। পারলে হয়তো সোয়াট টিমকেও আনার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এখানে? পুলিশের আসতে কত সময় লাগবে তাই তো জানি না। আর তাছাড়া, বিএমডব্লিউয়ে থাকা অস্ত্রধারী লোকদুটোর দিকে ইশারা করে স্যাম বলল, তোমার কি মনে হয় ঐ দুই পাগলাটে খুনী নিরস্ত্র পুলিশকে খুন করতে কোনো দ্বিধা করবে? সুস্থ মস্তিষ্কে এমনটা হতে দিতে পারবো না আমি।

    কিন্তু আমরা তো নাইজেলকেও তাদের হাতে এভাবে ছেড়ে দিতে পারবো না।

    হা, পারবো না। তবে আপাতত নাইজেলের কোনো ক্ষতি করবে না ওরা। নাইজেলকে জীবিত দরকার তাদের। সে মরে গেলে অনুবাদ সম্ভব হবে না।

    ইশশ, লোকটাকে তখন যেতে না দিলেই ভালো হতো।

    তবে ওটা নিয়ে এখন আর ভেবে কোনো লাভ হবে না। নাইজেলকে অসহায়ভাবে সরাইখানার ভিতরে ঢুকতে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের।

    অন্যরা সরাইখানার ভিতরে ঢুকে গেলেও কুকুর নিয়ে জ্যাক চলে গেছে অন্যদিকে। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে সেও ঢুকে গেলো সরাইখানার ভিতরে। তবে এবার আর সাথে কুকুরটা নেই।

    স্যাম?

    ভাবছি, সরাইখানার সামনে এসে থামা অন্য একটা গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম। গাড়িটার পিছনের কাঁচে সদ্য বিবাহিত লেখা রয়েছে। গাড়িটা থামতেই তরুণ এক যুগল বেরিয়ে এসেছে ট্রাংক থেকে বিশাল বিশাল দুটো ব্যাগ বের করে পা বাড়ালো সরাইখানার প্রধান দরজার দিকে।

    দৃশ্যটা দেখেই একটা আইডিয়া মাথায় খেললো ওর…

    কনসোল থেকে রেমির ফোনটা হাতে নিয়ে সিগন্যালটা দেখে খুশি হয়ে বলল, তো একদিন গ্রাম্য সরাইখানায় ছুটি কাটানোর ব্যাপারে কী মত তোমার?

    এই ছুটির সাথে অপরাধী দমনও অন্তর্ভুক্ত আছে?

    আমি নিশ্চিত না ছুটির মেনুতে এটা আছে কিনা, বলতে বলতে সরাইখানার সাইনবোর্ডের দিকে তাকালো স্যাম। তবে কপাল ভালো হলে বিশেষ কিছু করার সুযোগ পেলেও পাওয়া যাতে পারে। বলে সাইনবোর্ডে থাকা নম্বরটাতে ফোন দিলো স্যাম।

    একবার রিং বাজতেই অন্য পাশ থেকে এক মহিলা জবাব দিলো, পিগ অ্যান্ড ল্যান্টার্ন থেকে বলছি।

    আজ রাতে থাকার মতো কি কোনো রুম আছে আপনাদের ওখানে?

    একটু অপেক্ষা করুন…, ফোনে কম্পিউটার কীবোর্ড চাপার শব্দ শুনতে পাচ্ছে ও। জ্বি, আছে। নাম?

    রেমির দিকে এক পলক তাকিয়ে স্যাম বলল, লংস্ট্রিট। মি. অ্যান্ড মিসেস লংস্ট্রিট।

    লংস্ট্রিট… আবারো কীবোর্ডের খুটখুটে শব্দ ভেসে আসছে অন্য পাশ থেকে। কয় রাতের জন্য?

    শুধু এক রাতের জন্য। আমরা অবশ্য দেরিতেই আসবো। সন্ধ্যার পর পর।

    ওকে। আপনারা পেমেন্ট কোন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করছেন?

    আমেরিকান এক্সপ্রেস, বলে রেমির দিকে ইশারা করলো স্যাম। রেমি এখনো তার কুমারি নামের ক্রেডিট কার্ডটা ব্যবহার করে। কার্ডটা বের করে তার হাতে দিতেই কার্ডের নম্বরটা মহিলাকে জানালো স্যাম।

    ধন্যবাদ, মি. লংস্ট্রিট। একরাতের জন্য আপনাদের নামে রুম বুক করে রেখেছি আমরা। চেক আউট আগামিকাল।

    মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কলটা কেটে দিলো স্যাম। এখন অপেক্ষার পালা।

    ঠিক তখনই একটা মেসেজ এলো রেমির ফোনে। সেলমার মেসেজ… মেসেজটা ওপেন করে বলল রেমি। এটা কখনো ভুলেও কল্পনা করিনি আমি। ইভানদের সাথে থাকা ঐ মহিলার নাম আলেক্সান্দ্রা এভেরি। চার্লস এভেরির স্ত্রী।

    আসলেই? ঐ মহিলা না সোশ্যাল প্রোগ্রামের সাথে জড়িত? পার্টি, ফান্ড রেইজার এসব নিয়েই তো ব্যস্ত থাকে সবসময়।

    শুনে নাক দিয়ে বিদ্রুপাত্মক শব্দ করলো রেমি। পুরুষেরা খুব সহজেই নারীদেরকে হুমকির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।

    এই কথাটা একমাত্র সত্য হবে তখনই, যখন তোমাকে কেউ হুমকির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিবে।

    হ্যাঁ। এই মহিলার ক্ষেত্রেও খাটে এটা। মহিলার সামনে পড়লে কথাটা মাথায় রেখো।

    মহিলার সামনে পড়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। এজন্যেই তো অন্ধকার নামার অপেক্ষা করছি।

    ****

    ঘন্টাখানেক পর সরাইখানার আলোটা মৃদু হয়ে যেতে দেখে বেশ খুশি হলো স্যাম। এখন খুব সহজেই কারো নজরে না পড়ে হোটেলে ঢোকা যাবে। এখানেই অপেক্ষা করো, রেমির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি একটু চেক করে দেখে আসছি।

    বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো স্যাম। প্রধান দরজাটা ছাড়াও সরাইখানায় ঢোকার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আরো দুটো প্রবেশদ্বার আছে। জ্যাক ও ইভানরাও এই দক্ষিণ দরজা ব্যবহার করেই ভিতরে ঢুকেছে।

    দক্ষিণের দরজা ধরে ভিতরে ঢুকলো স্যাম। দুটো রুম ছাড়া নিচতলার বাকি সবগুলো রুমই অন্ধকার হয়ে আছে এখন। ইভানরা এই দুই রুমের কোনো একটাতে আছে বলেই ধারণা ওর।

    তবে ঝুঁকি না নিয়ে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দরকার স্যামের। তাই বাইরে বেরিয়ে এলো আবার। তারপর বাইরের দক্ষিণ কোনা পেরিয়ে আলো জুলতে থাকা প্রথম জানালাটার দিকে এগিয়ে গেলো স্যাম। জানালাটায় যদিও পর্দা দেওয়া, তবে পর্দার হালকা ফাঁক দিয়ে ভিতরের দৃশ্যটা দেখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তার। রুমটায় এখন কেউ নেই। তবে চেয়ারের মাথায় আলেক্সান্দ্রার পার্কাটা দেখে রুমটা কার সেটা বুঝতে কোনো সমস্যাই হলো না তার।

    পরের রুমটার দিকে পা বাড়ালো এরপর। এই রুমের পর্দাও হালকা ফাঁকা হয়ে আছে। তবে সে গিয়ে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই পর্দাটা টেনে পুরোপুরি আটকে দিলো ভিতরের কেউ। তবে এর আগেই যা দেখার দেখে নিয়েছে স্যাম। রুমের ভিতরে এক চেয়ারে হাত বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে নাইজেলকে।

    নাইজেলের বিপদের মাত্রাটা নিয়ে ভাবতে যাবে, তখনই তৃতীয় আরেকটা জানালায় আলো জ্বলে উঠতে দেখলো স্যাম। আলোটা আসছে ইভান ও জ্যাকদের রুমের অন্য পাশে থাকা রুমটা থেকে। নবদম্পতিদের রুম ওটা।

    আর দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে ফিরে এলো স্যাম। রেমিকে বলল, রেডি তুমি?

    হ্যাঁ। তো, কী মহা পরিকল্পনা করলে তুমি?

    এই মুহূর্তের জন্য তেমন কোনো বড় কোনো মহা পরিকল্পনা নেই। শুধু ছোটো একটা পরিকল্পনা আছে। আর এই পরিকল্পনাটা সফল করতে হবে আমাদেরকান দিয়ে।

    .

    ৪৪.

    রাতে মনে হয় কাজের চাপ কম? চেক ইন করার সময় ডেস্কে থাকা ক্লার্ক মহিলাকে বলল স্যাম। পিঠে একটা ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে রেখেছে। রেমির ভাষ্যমতে এটা স্যামের ইমার্জেন্সি ব্যাগ। ছোটোখাটো কিছু যন্ত্রপাতি ও কয়েকটা ছুরি-চাকু রয়েছে ব্যাগটাতে। সাথে খুবই হালকা ওজনের শক্ত একগোছা রশিও আছে। এই ব্যাকপ্যাকটা ছাড়া এখন আর কোনো ব্যাগ বা লাগেজ নেই তাদের সাথে। পার্কিং লটে তো মাত্র দুটো গাড়িই দেখলাম।

    আমাদের জন্য এটাই অনেক ব্যস্ততা।

    বেশ শান্তশিষ্ট এলাকা তাহলে। আমাদের এমনটাই পছন্দ। তারপর কাউন্টারের দিকে নিচুস্বরে বলল, কিছু মনে করবেন না, আপনাদের হোটেলে কোনো পোষা প্রাণী নেই তো? আমার স্ত্রীর আবার একটু অ্যালার্জির সমস্যা আছে।

    মেহমানদের কারো সাথে পোষা কোনো প্রাণী নেই। অবশ্য মালিকের একটা কুকুর আছে।

    ওটা নিশ্চয় ঐ বড়ো কালো কুকুরটা না?

    হ্যাঁ। টেডিকে তাহলে দেখেছেন আপনারা? খুবই ভালো একটা কুকুর। অবশ্য গত দুইদিন অন্য একজনের কাছে ছিলো টেডি! তারাও এই হোটেলেই আছে। তবে চিন্তা করবেন না। আপনারা চাইলে আপনাদেরকে ওপরতলার রুমও দেওয়া যাবে।

    তার দরকার নেই, বলে মুচকি হেসে মহিলার হাতে একটা বিশ পাউন্ডের নোট বাড়িয়ে দিলো স্যাম। নিচ তলার রুমই পছন্দ আমাদের। পূর্ব দিকে হলে ভালো হয়। সূৰ্য্যোদয় দেখার ইচ্ছা আছে আমাদের।

    নোটটা হাতে নিয়ে মহিলা তার কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে বলল, নিচ তলার পূর্বদিকে একটা রুমই খালি আছে আমাদের। নববিবাহিত এক দম্পতির পাশের রুম। বলে রুমের চাবিটা স্যামের দিকে বাড়িয়ে দিলো মহিলা। ১০১ নম্বর রুম। কোনা ঘুরে পাম গাছের টবটা পেরুলেই পাবেন রুমটা।

    মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চাবিটা নিয়ে পামের টবটার দিকে পা বাড়ালো স্যাম ও রেমি। কোনা ঘুরে হল ধরে এগুতে যাবেই তখনই পরিকল্পনার বড়ো একটা ক্রটি পড়লো স্যামের কাছে। তার পরিকল্পনা ছিলো কারো নজরে না পড়ে রুমে চলে যাওয়া, কিন্তু এই মুহূর্তে ইভান বা জ্যাকের কেউ হুট করে হলে বেরিয়ে এলে তো আর সেটা সম্ভব হবে না।

    যাই হোক অন্ততপক্ষে কুকুরটা তো আর তাদের সাথে নেই, ভেবে ইভান ও জ্যাকদের রুমটা পেরিয়ে গেলো ওরা। তাদের রুমটা রয়েছে হলের একদম শেষ মাথায়। চাবি দিয়ে তালা খুলে রুমে ঢুকলো রেমি। রুমটা খুব বেশি বড়ো না। তবে একটা ডাবল বেড, নাইটস্ট্যান্ড, ছোটোখাটো ড্রেসার, টেলিভিশনসহ রুমটাকে খুব একটা খারাপও বলা যাচ্ছে না। এগুলোর সাথে নাইটস্ট্যান্ডের ওপর একটা আইসবাকেট ও দুটো গ্লাসও রয়েছে। রুমে ঢুকেই প্রথমে জানালার কাছে এগিয়ে গিয়ে পর্দাটা টেনে দিলো স্যাম। তারপর বলল, ইভানদের রুমে কান পেতে শোনার মতো একটা উপায় থাকলে ভালো হতো। আমার ফোনকে লিসেনিং ডিভাইসে রূপান্তরিত করার মতো কোনো অ্যাপ কি আছে আমাদের কাছে?

    হ্যাঁ, আছে। এটার নাম ফোন কল। আর এখন তোমার ফোন কল করলে চমকে দেওয়ার সমস্ত উপকরণই ভেস্তে যাবে, বলে একটা গ্লাস দেয়ালে ঠেকিয়ে কান পাতলে রেমি। অবশ্য, একটা পুরোনো কায়দা কিন্তু আছে।

    এটা কাজও করবে। কিন্তু ভুলে যেও না যে, তাদের ও আমাদের রুমের মাঝখানে আরো একটা রুমও আছে।

    নববিবাহিতদের সাথে রুম অদল-বদল করে নিতে পারি আমরা।

    আমিও এটার কথা ভাবছি। তবে, সত্যি বলতে তারা এই মুহূর্তে হোটেলে না থাকলেই বেশি খুশি হতাম আমি। কখন কী অঘটন ঘটে যায় তার তো কোনো ঠিক নেই, তাই না?

    কিছু না বলে বিছানার পাশে নাইটস্ট্যান্ডে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো রেমি। প্রায় ছয়টার মতো বাজে। এখান থেকে লন্ডনের দূরত্ব কতটুকু?

    গাড়িতে করে গেলে প্রায় তিন ঘন্টার মতো।

    স্যাভয়ে আমাদের ভাড়া করা রুমটা কিন্তু এখন খালিই পড়ে আছে।

    ভালো বলেছে, রেমি। এটার কথা ভাবিনি।

    শুনে মৃদু হাসলো রেমি। আশা করছি তারা এটা মেনে নিবে।

    জানার একটা উপায়ই আছে। চলো, পরীক্ষা করে দেখি।

    বলে রুম থেকে বেরিয়ে নববিবাহিত দম্পতিদের দরজায় গিয়ে টোকা দিলো স্যাম। এক তরুণ যুবক এসে দরজা খুলে সাড়া দিলো তাদেরকে।

    আমরা পাশের রুমে উঠেছি, স্যাম বলল। অভিনন্দন জানাতে এলাম।

    তরুণের স্ত্রীও এসে দাঁড়ালো তার পিছনে। মেয়েটার মুখে কৌতূহল ও উত্তেজনার ছাপ মিশে আছে। কে এসেছে?

    আমাদের পাশের রুমের দম্পতি।

    এগিয়ে এসে দরজাটা পুরোপুরি খুলে তাদেরকে স্বাগত জানালো মেয়েটা। হাই।

    সুযোগ পেয়ে দেরি না করে দ্রুত রুমে ঢুকে গেলো স্যাম ও রেমি। তারপর দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে রেমি বলল, অভিনন্দন। শুনেছি সদ্যই বিয়ে হয়েছে আপনাদের?

    হ্যাঁ, কয়েকদিন হয়েছে মাত্র।

    হানিমুনে এসেছেন, তাহলে? জিজ্ঞেস করলো স্যাম।

    এইতো কয়েকদিনের জন্য একটু ঘুরতে এসেছি, শ্রাগ করে বলল তরুণ লোকটা।

    স্যাভয়ে থেকেছেন কখনো?

    বিদ্রুপের স্বরে হেসে উঠলো লোকটা। আপনার কি মনে হয় ওখানে থাকার মতো ক্ষমতা থাকলে আর এখানে উঠতাম?

    তাহলে আমার কথা শুনুন, স্যাম বলল, আপনাদের যদি ড্রাইভ করে যেতে কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে স্যাভয়ে চলে যান। ওখানে একটা ফ্রি রুম অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য।

    স্যামের কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে নববিবাহিতা মেয়েটার।

    অবশ্য তার স্বামী এতটা চমকে যায়নি। চমকে যাওয়ার বদলে লোকটার মুখে সন্দেহের ছাপ ফুটে উঠেছে। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে স্যামের দিকে এক কদম এগিয়ে কঠোর গলায় বলল, আমার মনে হয় আপনাদের এখন যাওয়া উচিৎ।

    আগে আমার কথাটা ভালো করে শুনে দেখুন, পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করতে করতে বলল স্যাম। একটা বিশেষ কারণে এই রুমটা দরকার আমাদের। আর ঐদিকে স্যাভয়ে আমাদের ভাড়া করা সুইটটা এখন খালিই পড়ে আছে। বলে ওয়ালেট থেকে স্যুইটের কী-কার্ড এবং কয়েকশো পাউন্ডের নোট বের করে বিছানায় রাখলো ও। এই টাকায় হয়তো আপনাদের কয়েকবেলা খাবার, গ্যাস এবং এই রুমের দাম মিটে যাবে। আর আপনারা স্যাভয়ে না থাকতে চাইলেও, এই টাকায় অন্য যে কোনো হোটেলেও থাকতে পারবেন।

    কী ধরনের ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছেন আপনারা?

    রেমি তার সেল ফোনে সেলমার পাঠানো হোটেল রিজার্ভেশনের লিঙ্কটা ওপেন করে বলল, কোনো ফাঁদেই ফেলছি না। আপনাদেরকে রিজার্ভেশনে যুক্ত করে দিচ্ছি আমি। এখন আপনারা চাইলে এখানেও থাকতে পারেন, বা টাকাটা নিয়ে স্যাভয়েও চলে যেতে পারেন। রিজার্ভেশনের ইন্টারনেট পেজটা লোড হতেই মোবাইলটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনার নাম আর ইমেইলটা টাইপ করে দিন। সাথে সাথেই কনফার্মেশন মেইল পেয়ে যাবেন।

    তারপরও দ্বিধা করছে লোকটা। কিন্তু তার স্ত্রী কোনো দ্বিধা না করেই মোবাইলটা খাবলে নিলো রেমির হাত থেকে। পেজটা একবার দেখে বলল, দেখে তো সত্যিই মনে হচ্ছে।

    আসলেই সত্য এটা, বলল রেমি।

    সাথে সাথেই পেজটাতে তথ্যাদি টাইপ করতে শুরু করলো মেয়েটা।

    তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? বলে মেয়েটার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো লোকটা।

    সাথে সাথেই মোবাইল হাতে নিয়ে একটু দূরে সরে গেলো মেয়েটা। শুধু নাম আর ইমেইলই তো দিচ্ছি, ক্রেডিট কার্ডের ইনফরমেশন তো আর না! আর, আমার স্যাভয়েই হানিমুন কাটানোর ইচ্ছা, বলে সেন্ড বাটনে চেপে মোবাইলটা আবার রেমির হাতে ফিরিয়ে দিলো মেয়েটা। তারপর তার স্বামীকে বলল, ইমেইল চেক করো তোমার।

    কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ তো আমাদের জন্য শ্যাম্পেইনের বোতল নিয়ে আসছে। ..

    তো? খেঁকিয়ে উঠলো মেয়েটা। ওটা তো রুমের সাথে ফ্রি ছিলো। ষাট পাউন্ডের মধ্যে হোটেল রুমসহ ফ্রি শ্যাম্পেইন আর কততটাই বা ভালো হবে? এখন, জলদি তোমার ইমেইল চেক করো।

    কিছু না বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে আনলো লোকটা। ইমেইলটা দেখে প্রচণ্ড চমকে গেছে সে। এটা কি সত্য?

    মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো রেমি।

    কিন্তু কেন?

    ওটা আসলে অতোটা গুরুত্বপূর্ণ না, স্যাম বলল। শুধু এটা জেনে রাখুন যে এতে করে আমাদের অনেক বড়ো উপকার করেছেন আপনারা।

    এক মুহূর্তের জন্য পুরোপুরি বাকশূন্য হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো লোকটা। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না যেন। তারপর বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে। বলে বের করা জিনিসগুলো আবারো স্যুটকেসে ভরে নিলো ওরা।

    আবারো অভিনন্দন ও ধন্যবাদ আপনাদের, বলে দরজা পর্যন্ত দম্পতিকে এগিয়ে দিলো রেমি।

    ওহ আরেকটা কথা, সাথে যোগ করলো স্যাম। একটু নিরবে যাবেন। পাশের রুমের লোকগুলো ঘুমাচ্ছে। বলে ইভান ও জ্যাকদের রুমটা দেখালো ও।

    মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো তাদের সাথে হাত মিলিয়ে বিদায় নিলো লোকটা ও তার স্ত্রী।

    তারা চলে যেতেই রুমের দরজাটা আটকে দিলো রেমি। দরজা লাগানোর মিনিটখানেক পরেই পাশের রুমে মৃদু টোকার আওয়াজ শুনতে পেলো ওরা। টোকার সাথে সাথে ফিস্কের গলার শব্দও ভেসে আসছে। তাকে রুমের ভিতরে ঢুকতে দিতে বলছে।

    ব্যাপারটা অদ্ভুত। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারণ ছাড়া ফিস্ককে সাধারণত নোংরা কোনো কাজে হাত দেখেনি ওরা। তাহলে নাইজেল তাদের কাছে আসলেই এতো গুরুত্বপূর্ণ? তার কাছ থেকে কী জানতে চায় ওরা?

    আর বেশি না ভেবে আইসবাকেটের পাশ থেকে গ্লাসদুটো তুলে নিলো রেমি। তারপর স্যামকে একটা গ্লাস দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বলল, পাশের রুমে আড়িপাতার সময় হয়েছে এখন।

    .

    ৪৫.

    দরজা খুলতেই রুমে এসে ঢুকলো ফিস্ক। আলেক্সান্দ্রা নাইজেলের পাশের চেয়ারে বসে আছে, আর জ্যাক ও ইভান বসে আছে বিছানার ওপর। মি. রিজওয়েল, সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখিত। আশা করছি আপনার গাড়ি যাত্রাটা খুব বেশি অস্বস্তিকর ছিলো না। শুনেছি অনেক চাপাচাপি করে আনতে হয়েছে আপনাকে।

    চোখ রাঙিয়ে ফিস্কের দিকে তাকালো নাইজেল। আমার থেকে কী চান আপনারা?

    আপনার অনুবাদের দক্ষতা। শুনেছি পুরো ইংরেজির ওপর বিশেষ দক্ষতা আছে আপনার। কাজের বিনিময়ে আপনাকে অর্থ প্রদান করতেও রাজি আছি আমরা।

    এজন্যেই কি গতরাতে আমাকে আক্রমণ করে নোটবুক চুরি করেছিলো আপনার লোকেরা? আমাকে কিডন্যাপও এই কারণেই করা হয়েছে?

    কিছু মনে করবেন না এতে। হালকা একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে।

    খেঁকিয়ে উঠলো নাইজেল, হ্যাঁ, গাড়ির ট্রাংকে ভরে নিয়ে আসা আর চেয়ারের সাথে হাত বেঁধে রাখা হতো সামান্য ভুল বুঝাবুঝিই মাত্র।

    ইভানকে হাতের বাঁধনটা কেটে দেওয়ার ইশারা করে ফিস্ক আলেক্সান্দ্রার দিকে তাকিয়ে বলল, নোটবুকটা?

    ইভানের কাছে আছে ওটা।

    চাকু দিয়ে নাইজেলের বাধন কেটে দিয়ে নোটবুকটা ফিস্কের দিকে বাড়িয়ে দিলো ইভান। নোটবুকটা হাতে নিয়ে ফিস্ক বলল, আমার সহযোগীদের রুক্ষ আচরণটা ক্ষমা করবেন বলেই আশা করছি। যদি ক্ষমা নাও করতে পারেন, তাহলে কি আমরা কোনো চুক্তিতে যেতে পারি?

    কিসের ব্যাপারে চুক্তি করবো?

    আগেই বলেছি, অনুবাদ করে দিতে হবে আপনাকে। আপনার নোটবুকের কয়েকটা শব্দ আপনি এখনো অনুবাদ করেননি। আমাদের এক সঙ্গী বিকালে অন্য আরেক বিশেষজ্ঞকেও দেখিয়েছিলো এটা, তিনিও অনুবাদ করতে পারেননি। মজার ব্যাপার হলো, সেই লোকও আপনার সাথেই যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।

    ক্যাসল রাইজিং-এ উইলিয়ামের সাথে কি আপনারা এটা নিয়েই কথা বলছিলেন?

    আপনি চেনেন তাকে? বিশেষজ্ঞ জ্ঞানীদের দুনিয়া দেখছি অনেক ছোটো তাহলে, বলে নোটবুকের শেষ পাতাটা বের করে দিলো ফিস্ক।

    সামনে ঝুঁকে কাগজের লেখাটা দেখে নাইজেল বলল, আমি এটার অর্থ বলতে পারবো না।

    কেন না?

    খুব সম্ভবত এটাতে কিছু অক্ষর মিসিং আছে। অথবা হয়তো পুরো বানানটাই ভুল আছে। তাই এই শব্দগুলো অর্থ বের করতে পারবো না আমি। শুধু প্রথমটার অর্থ জানি, গর্ত।

    নাইজেল বলার পরই ফিস্ক বুঝতে পারলো আসলেই নোটবুকের লেখাটাতে কিছু অক্ষর কম আছে। সে ভেবেছিলো যে নাইজেল আর তার তালিকায় একই শব্দগুলো রয়েছে। সরাসরি ম্যাপ থেকে ডিসাইফার করে তৈরি করা হয়েছে তার তালিকাটা। অবশ্য, নাইজেলের তালিকাটা সে আগে অতোটা ভালো করে দেখেওনি। ধরেই নিয়েছিলো সাইফার হুইলের কপি থেকে ফার্গোরাও তার মতো একই শব্দগুলোই উদ্ধার করতে পেরেছে। তা নাহলে তো ফার্গোদের এতোদূর এগিয়ে আসা সম্ভব হতো না। ব্যাপারটা বেশ অবাক করার মতো। ফার্গোরা একটা বিকৃত কপি নিয়ে কাজ করেই এতদূর এগিয়ে এসেছে। নিশ্চিতভাবেই সে যতোটা ভেবেছিলো, ফার্গোরা তার থেকেও অনেক বেশি কার্যকরী।

    যাই হোক, ওটা নিয়ে আর বেশি না ভেবে ফোন বের করে চার্লস এভেরির বিশেষজ্ঞের পাঠানো মেসেজটা ওপেন করলো ফিস্ক। আসলেই একটা অক্ষর কম আছে নাইজেলের তালিকায় থাকা শব্দগুলোতে। তাই ফোনটা নাইজেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটায় দেখুন তো কাজ চলবে কিনা?

    আপনি নিশ্চয় জানেন যে এই দেশে আমি ছাড়াও পুরোনো ইংরেজির আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আছে?

    হ্যাঁ, জানি। তবে এই মুহূর্তে একমাত্র আপনিই এভেইলেবল আছেন, এবং আপনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। তো, আপনার ব্যাপারে এই ধারণাটা বদলাতে না চাইলে তাড়াতাড়ি এই শব্দগুলোতে চোখ বুলান।

    আর কিছু না বলে মোবাইলে থাকা শব্দগুলোর দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নাইজেল। আমার মনে হচ্ছে আপনাদের বিশেষজ্ঞ লোকটা এসকে এফ হিসেবে বিবেচনা করেছে। এখানের এই শব্দটা wulshol হবে না, হবে wulfhol. মানে উলফস হোল। অর্থাৎ নেকড়ের গর্ত বা ডেরা।

    আর এটা? বলে নিচে থাকা wulsesheasod শব্দটার দিকে নির্দেশ। করলো ফিস্ক।

    এটা হবে wulfesheafod, মানে উলফস হেড।

    এগুলোর কি মানে হতে পারে বলে ধারণা আপনার?

    যতদূর মনে হয় নেকড়ের ডেরা ও পালের গোদা বুঝানো হয়েছে। শব্দগুলো দিয়ে।

    আপনি নিশ্চিত?

    অবশ্যই আমি নিশ্চিত না। শব্দগুলো যে লিখেছে একমাত্র সে ই এটার সঠিক অর্থ বলতে পারবে।

    যে লিখেছে সে এখন মৃত। আপনিও সেটাতেই পরিণত হবেন যদি

    ফিস্ক কথা শেষ করার আগেই উঠে দাঁড়ালো আলেক্সান্দ্রা। তুমি যেটা চাও সেটা পেয়ে গেছে। আর এমনিতেও আমরা সকালের নাস্তার পর আর কিছু খাইনি।

    আমি কিভাবে ভাবলাম যে এই মহিলাকে সাথে রাখলে আমার উপকার হবে, মনে মনে ভাবলো ফিস্ক। তবে মুখে বলল, ইভান, আবারো বেধে ফেলো একে। তাকে পালিয়ে যেতে দিতে চাই না আমি।

    দাঁড়ান, বলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো নাইজেল। সাথে সাথেই ইভান ও জ্যাক বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো। নাইজেলকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে আবারো হাত বেঁধে দিলো তার। তবে নাইজেল হাল ছাড়লো না এরপরও। আপনারা আমাকে এখানে আটকে রাখতে পারবেন না।

    যতক্ষণ আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন, ততক্ষণ বেচে থাকবেন আপনি। এরমানে এখনো আপনাকে দরকার আছে আমাদের। বলে ইভানের দিকে তাকালো ফিস্ক। ওকে সবসময় পাহারা দিয়ে রাখবে। রুম খালি রেখে যাবে না কোথাও। রাস্তার ওপারেই একটা ভালো পাব আছে। খাবার দরকার লাগলে ওখান থেকেই নিয়ে আসবে।

    আর তুমি কোথায় যাচ্ছো? আলেক্সান্দ্রা জিজ্ঞেস করলো ফিস্ককে।

    সাহায্যের জন্য আরো কয়েকজন লোক লাগবে আমার। ফার্গোরা এখন অনেক বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতোটা ভেবেছিলাম তার থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক ওরা। ওদের একটা অবস্থা করে হোটেলে ফিরে যাবো এরপর। আপনার স্বামী ওখানেই অনুবাদের অগ্রগতি জানার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার মনে হয়, অনুবাদটা পেয়ে গেলেই আমাদের পরবর্তী গন্ত ব্যস্থলটা পেয়ে যাবো। সেখানে এই টুর গাইডকেও প্রয়োজন লাগতে পারে। আর, হ্যাঁ, আপনার কিন্তু অবশ্যই মি. এভেরিকে কল করা উচিৎ এখন।

    সে আমার এখানে আসার ব্যাপারে না জানলেই বেশি খুশি হবো আমি, শীতল কণ্ঠে জবাব দিলো আলেক্সান্দ্রা।

    এটাই ভেবেছিলাম আমি, বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো ফিস্ক। তারপর থেমে নাইজেলের দিকে ফিরে তাকিয়ে ইভানকে বলল, সে কোনো শব্দ করলেই মেরে ফেলবে তাকে। আমি নিশ্চিত সে না থাকলেও অন্য অনুবাদক ঠিকই খুঁজে পাবো আমরা।

    আমরা এখানে কাউকেই মারবো না, আলেক্সান্দ্রা বলল। তুমি তো জানোই যে আমাদের পাশের রুমেও অতিথি আছে।

    তাহলে তাদেরকে মেরে ফেলবেন। যেভাবেই হোক, ধরা পড়া বা কোনো সাক্ষী রাখা যাবে না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
    Next Article দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.