Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাগল মামার চার ছেলে – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প76 Mins Read0

    পাগল মামার চার ছেলে

    পাগল মামার চার ছেলে

    আমার সেজোমামার নাম পাগলচাঁদ সমাজপতি। এই একটা নামই তাঁকে প্রায় পাগল করে তুলেছিল। রাস্তায় বেরুলেই কেউ ডাকে ‘এই যে পাগলবাবু’, কেউ ডাকে ‘এই যে পাগলচন্দ্র’, কেউ বলে ‘পাগলাদা’।

    এতবার পাগল শুনলে কার না মাথা খারাপ হয়ে যায়। উপায় থাকলে নামটা কবেই পাল্টে ফেলতেন সেজোমামা। কিন্তু ওটা তাঁর বাবা, মানে আমাদের দাদুর দেওয়া নাম। তা-ছাড়া ম্যাট্রিক থেকে এম. এ পর্যন্ত যত সার্টিফিকেট আর ডিগ্রী লেখা আছে পাগলচাঁদ সমাজপতি। মনে অনেক দুঃখ থাকলেও তাই নামটা আর বদলানো যায় নি।

    নিজের বেলা তো পারেন নি, তাই সাধ মিটিয়ে চার ছেলের নাম দিয়েছেন− প্রলয়নাচন, প্রলয়মাতন, প্রলয়ন শিন, প্রলয়ঘাতন। অবশ্য ওদের একটা করে ডাকনামও আছে। আবু, টাবু, ছাবু এবং পাবু। সেজোমামা সগর্বে সেজোমামীকে বলেছেন, কেমন নাম দিয়েছি বলো তো? ঐ নামের জোরে আমার ছেলেরা পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে যাবে।

    সেজোমামী বলেছেন, তা হয়তো হবে। কিন্তু এতোগুলো প্রলয় একসঙ্গে ঘরে এনে ঢোকালে। আমার তো ভয়ই করছে।

    মামীর ভয়টা যে মিথ্যে নয়, তা পরে ছাড়ে-হাড়ে টের পাওয়া গিয়েছিলো। আমার চার মামাতো ভাইয়ের মতো এমন দুর্ধর্ষ বিচ্ছু ইরম্মদ ছেলে ভূ-ভারতে খুব বেশি জন্মায় নি। নিজেদের নামের গুণেই কিনা কে জানে, বাড়িতে দিনরাত তারা প্রলয় কাণ্ড ঘটিয়ে যায়।

    যদিও এই গল্পটা চারজন প্রলয়কে নিয়ে, তবে তার আগে আমার সেজোমামা আর সেজোমামী সম্বন্ধে দু’একটা কথা বলে নেওয়া দরকার। সেজোমামা টকটকে ফর্সা আর বেজায় মোটা। বেশির-ভাগ সময়ই দেখা যায় মোটারা খুব ভালো মানুষ আর ঠাণ্ডা মানুষ হয়। আমার সেজোমামাও তাই। নাকের তলায় স্যার আশুতোষের মতো গোঁফ। সব সময় হাসিখুশি। শার্টের বোতাম লাগাতে, গালিশ-দেওয়া ঢলঢলে ফুলপ্যান্ট। জুতোর ফিতে বাঁধতে আর দাঁড়ি কামাতে প্রায়ই ভুলে যান তিনি।

    একটা ওষুধ কোম্পানিতে বড় চাকরি করেন সেজোমামা, সারা বছরই তাঁকে হিল্লী-দিল্লী করে বেড়াতে হয়। এ মাসে যদি গৌহাটি যান, আসছে মাসে ভূবনেশ্বর, তার পরের মাসে জব্বলপুর বা এলাহাবাদ।

    সে যাই হোক, ছেলেদের কীর্তিকলাপ দেখে সেজোমামার মতো ঠাণ্ডা মানুষেরও রক্ত একেক দিন মাথায় চড়ে যায়। হুঙ্কার দিয়ে বলেন, সব ক’টাকে বাড়ি থেকে বার করে দেব।

    সেজোমামী একেবারে সেজোমামার উল্টো, ভয়ানক রোগা, গায়ে মাংস-টাংস নেই, শুধু হাড়, বারো মাস ভোগেন। মাপ নিলে সেজো-মামার চারভাগের এক ভাগ হবেন, চার ছেলের জ্বালায় সারাক্ষণ পাগল হয়ে থাকেন। তার ওপর অসুখ-বিসুখ তো আছেই। দুর্বল গলায় দিনরাত চেঁচিয়ে যান, এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে

    পারে এমন কি কেউ নেই? কিন্তু সেজোমামী যতই চিৎকার করুন, প্রলয়নাচন প্রলয়মাতনরা তা গ্রাহ্যই করে না।

    সেজোমামারা অনেকদিন শ্যামবাজারে ছিলেন। কিন্তু সেখানে বাড়িটা ছিল খুবই ছোট, মোটে আড়াইখানা ঘর; বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। তাই পরশুদিন বাড়ি বদলে চেতলায় এসেছেন।

    পুরানো আমলের এই একতলা বাড়িটা চমৎকার। পাঁচখানা বড়-বড় ঘর। সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা, পেছনে বাগান।

    পরশু এসেই কাল অফিসের কাজে রাঁচী যেতে হয়েছে সেজোমামাকে। ফিরবেন সাতদিন বাদে। এ ক’দিন নতুন জায়গায় একা সেজোমামীকে ছেলেদের সামলে রাখতে হবে। এখানে আসার পর পাশের বাড়ির বলাইবাবুদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আর সবাই অচেনা। এবার আসল গল্পটা শুরু করা যেতে পারে।

    আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর মুখ-টুখ ধুয়ে আবু-টাবু-হাবু-পাবু চার ভাই ডাইনিং রুমে গিয়ে খেতে বসেছে। সেজোমামী প্রত্যেকের প্লেটে ডিমসেদ্ধ, কলা, রুটি, মাখন আর এক গেলাস করে দুধ দিয়েছেন।

    পাবু চামচ দিয়ে তার ডিমটা কাটতে যাচ্ছিল, হাবু চেঁচিয়ে উঠল, ‘কাটবি না পাবু, দাঁড়া−’

    বলেই ছোঁ মেরে পাবুর প্লেট থেকে ডিমটা তুলে নিজের ডিমের পাশে রেখে মেপে দেখল, তারটা একটু ছোট। অমনি হাত-পা ছুঁড়ে লাফালাফি শুরু করে দিল, ‘আমাকে ছোট ডিম দিয়ে পাবুকে বড় ডিম দেওয়া চলবে না। ওকে আমি খুন করে ফেলব’-ব’লেই এক কামড়ে পাবুর ডিমের অর্ধেকটা খেয়ে ফেললো।

    পাবুও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার ছেলে নয়। সেও দুধের গেলাস ছুঁড়ে মারলো হাবুর দিকে। পাবুর হাতের টিপও দারুণ। গেলাসটা হাবুর থুতনিতে গিয়ে লাগলো। মেঝেময় ডিম, পাউরুটি, মাখন আর দুধের স্রোত।

    সেজোমামী দু’হাত তুলে সেই পুরনো কথাটা করুণ মুখে আরও একবার বললেন, ‘এই চার দস্যুর হাত থেকে কেউ কি আমাকে বাঁচাতে পারে না?’

    অদ্ভুত ব্যাপার। মামীর কথা শেষ না হতেই আচমকা কেউ যেন ঠাস্ করে হাবুর গালে বিরাশী ছক্কার একটা চড় কষালো, আর সে ঠিকরে পড়লো ওধারের দেওয়ালে। আবু আর টাবুর মাথা দু’টো আপনা হতেই ঠুকে গেল; সঙ্গে-সঙ্গে দু’জনের কপালে মার্বেল গুলি গজিয়ে উঠলো। তারপরেই দেখা গেল পাবুর কান দু’টো অদৃশ্য হাতে কেউ মুচড়ে দিচ্ছে।

    মুহূর্তে তৃতীয় পাণিপথের যুদ্ধ থেমে গেল। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না; অথচ তাদের মাথা, গাল আর কানের দশা কে এমন করে ছাড়ল, বুঝতে না পেরে বেজায় ভয় পেয়ে গেল পাবুরা। টু শব্দটি না করে চার ভাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর স্কুলে যাওয়ার সময় পর্যন্ত বাড়িটা শান্ত হয়ে রইলো। অবশ্য চেতলায় আসার আগেই পাগল-মামা চার ছেলেকে এখানকার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।

    যুদ্ধ থামায় সেজোমামী খুবই খুশি হয়েছেন। তবে ভয়ও পেয়েছেন যথেষ্ট। তারা পাঁচজন ছাড়া অন্য কেউ ডাইনিং রুমে ছিল না। তা’হলে কে ওভাবে চড় মারল, কান মুললো, মাথা ঠুকে দিল? খুবই গোলমেলে ব্যাপার।

    ছেলেদের স্কুল পাঠিয়ে সেজোমামী সোজা পাশের বলাইবাবুদের বাড়ি চলে গেলেন। ওরা কিছু জানলেও জানতে পারে। তেমন হলে পাগলমামা ফিরে এলেই বাড়ি বদলাতে হবে।

    সকালবেলার ঘটনাটা আগাগোড়া বলে গেলেন সেজোমামী। সব শুনে বলাইবাবুর মা পরম নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে বললেন, ‘এই কাণ্ড হয়েছে! কোনো ভয় নেই!’

    সেজোমামীর উদ্বেগ কাটে না। তিনি বললেন, ‘বিপদ-টিপদ হবে না তো?’

    ‘আরে না-না। বরং উল্টোটাই হবে।’

    ‘কে আমার বাঁদর ছেলেগুলোকে ঢিট্ করলো বলতে পারেন?’

    ‘দু’-চার দিন থাকো, নিজেই বুঝতে পারবে। না পারলে বলো, আমি বুঝিয়ে দেবো।’

    সেজোমামী বাড়ি ফিরে এলেন। বলাইবাবুর মা পরিষ্কার করে কিছু বললেন না। ফলে সেজোমামীর দুশ্চিন্তাটা থেকেই গেল।

    বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পর পাগল মামার চার ছেলে আবার স্বমূর্তি ধারণ করলো। সকালের বেদম মারধোরের কথা তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভুলে গেছে। চার ভাইয়ের শোবার জন্য চারখানা ছোটো খাট রয়েছে। খাটগুলোর পায়ায় চাকা লাগানো। স্কুল থেকে ফিরেই জলখাবার খেয়ে খাট চারটি টেনে এনে ঘরের মাঝখানে জোড়া লাগায় ওরা। তারপর ক্যারম বা লুডো খেলতে বসে।

    আজ ওরা লুডো খেলছে। একদলে আছে আজ পাবু আর আবু, অন্য দলে টাবু এবং হাবু। খেলাটা ভালোই চলছিল। হঠাৎ টাবু বাঁ হাতের কারসাজিতে একটা কাঁচা ঘুঁটিকে পাকিয়ে ফেললো। কিন্তু আবু-পাবুর চোখে ধূলো দেওয়া অত সোজা নয়। তারা চিৎকার করে উঠলো, ‘চোট্টা, চোট্টা-চোরামি করে খেলছিস।’

    টাবুরাও রুখে দাঁড়ালো, ‘কক্ষণো না, কক্ষণো না। ওটা আমার পাকা ঘুঁটি।’

    ‘মিথ্যুক, চোর, শয়তান−’ বলেই লুডোটা উল্টে দিল পাবু।

    তারপরেই চতুর্থ পাণিপথের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। সেজোমামী পাশের ঘরে ছিলেন; দৌড়ে এলেন এবং সরু গলায় চেঁচামেচি জুড়ে দিলেন, ‘মরবি, এক-এক করে তোরা একদিন নির্ঘাত শেষ হয়ে যাবি।’

    মামীর কথা কারো কানেও ঢুকলো না। চার ভাই হাতাহাতি চালিয়েই যেতে লাগল।

    অনেকক্ষণ চেঁচাবার পর ক্লান্ত হয়ে মামী তাঁর সেই পুরানো আর্জি-টাই আরও একবার শোনালেন। ‘কেউ কি এই হতচ্ছাড়াদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতে পারে না?’

    কথা শেষ হবার আগেই তাজ্জব ব্যাপার। চারখানা খাট গড়-গড়িয়ে চার দেওয়ালে গিয়ে ঠেকল। কাজেই মারামারিটা তক্ষুনি বন্ধ হয়ে গেল। সকালবেলার মতো চার ভাই ভয়ে সিঁটিয়ে রইল।

    ব্যাপারটা ক্রমশঃ জটিল হয়ে উঠছে।

    মামীর কিন্তু ভয়টা পুরোপুরি কেটে গেল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, হাতের কাছে একটা দারুণ জিনিস পাওয়া গেছে। শুধু মুখ ফুটে একটু আর্জি জানালেই হলো। মনে হচ্ছে সঙ্গে-সঙ্গে কাজ হবে। দুরন্ত, দুর্ধর্ষ ছেলেগুলোকে এতদিনে বশে আনতে পারবেন।

    বিকেলের এই ঘটনার পর ঘণ্টা দু’য়েক বেশ ভালোভাবেই কাটলো। তারপর যেই সন্ধে নামলো, অমনি সেজোমামী চেঁচাতে শুরু করলেন, ‘পড়তে বস রে, পড়তে বস রে-’

    কিন্তু প্রলয়নাচন বা প্রলয়মাতনদের দেখে মনে হলো না যে মায়ের কথা তাদের কানে ঢুকেছে।

    অগত্যা সেজোমামী কড়িকাঠের দিকে মুখ তুলে করুণ গলায় বললেন, ‘এমন কেউ কি নেই, যে বজ্জাতগুলোকে কান ধরে পড়তে বসায়।’

    ম্যাজিকের মতো কাজ হয়ে গেল। কার যেন অদৃশ্য হাত কান ধরে হিড়-হিড় করে টানতে-টানতে চার ভাইকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিলো। সঙ্গে-সঙ্গে দেওয়ালের তাকগুলোতে, যেখানে ওদের বই থাকে, সেখান থেকে এর গ্রামার, ওর জ্যামিতি, তার ইতিহাস ধপাধপ এসে আবু-টাবুদের সামনে পড়তে লাগলো। তার মানে এক্ষুনি পড়া শুরু করতে হবে।

    কিন্তু চার প্রলয় এমনই ঘাবড়ে গেছে যে, কারো গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। কি যে করবে, কেউই ভেবে ঠিক করতে পারলো না।

    সেজোমামীও ছাড়বার পাত্রী নন। হাতের কাছে দারুণ একটা অস্ত্র পেয়ে গেছেন; সেটা আবার কাজে লাগালেন। ওপরের দিকে মুখ তুলে বললেন, ‘দত্যিগুলো একদম পড়ে না; বছর-বছর ফেল করে। কেউ কি এদের পড়িয়ে দিতে পারে না?’

    বলা শেষ হলো কি হলো না, একজোড়া বেত কোত্থেকে যেন ঘরের ভেতর এসে হাওয়ায় নাচতে লাগল। চার ভাই ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। ওরা চুপচাপ তাকিয়ে আছে দেখে সপাং করে বেত দু’টো টেবিলের ওপরে আছড়ে পড়ল।

    প্রলয়নাচন, প্রলয়মাতনরা বুঝল চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। চারভাই ঘাড় গুঁজে, গলা ছেড়ে পড়তে শুরু করে দিল। আর বেত দুটো ঘরময় হাওয়াতে ঘুরে-ঘুরে তাদের পাহারা দিতে লাগল।

    দশটা পর্যন্ত পড়াশুনো করে, খাওয়া-দাওয়া চুকিয়ে গুটিগুটি গিয়ে শুয়ে পড়ল। অন্য দিন রাত্তিরে খাওয়া এবং শোওয়ার সময় ধুন্ধুমার বেধে যায়। আজ কিছুই হল না।

    পরের দিন সকালে ডাইনিং রুমে খাবার-দাবারের ভাগ নিয়ে আবার পঞ্চম পাণিপথের যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইটা আজ বাধল না। লুচি-হালুয়া দেওয়া হয়েছিল চারভাইকে।

    আবু টাবুর প্লেটের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘টেবো আমার চেয়ে বেশি হালুয়া পেয়েছে।’

    ওদিকে হাবু চেঁচিয়ে উঠেছে, ‘আমি পাবুর চেয়ে কম হালুয়া পেয়েছি।’

    ছুঁড়বার জন্য চারভাই যখন প্লেট তুলে উঠে দাঁড়িয়েছে, সেই সময় সেজোমামী কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে সেই কথাটি আবার বললেন, ‘কেউ কি এই পাজীগুলোকে ঠাণ্ডা করতে পারে না?’

    তখুনি কেউ যেন চারভাইয়ের হাত থেকে কাপ-প্লেট কেড়ে নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখল এবং তাদের কান ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল।

    অগত্যা ট্যাঁ-ফোঁ না করে প্রলয়নাচনেরা নিজের-নিজের ভাগের লুচি-হালুয়া খেয়ে সোজা পড়ার ঘরে চলে গেল।

    মামী মুখ তুলে বললেন, ‘আপনি কে জানি না। তবে আমার বড্ড উপকার করছেন। এখন থেকে আমার চার ছেলের বাঁদরামো ঘুচিয়ে ওদের ভাল করে দিন-’ বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন।

    ঘণ্টা দুই পড়াশুনো করে, স্নান সেরে খেয়ে চারভাই পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

    স্কুলে যাবার নাম করে বেরুলেও বেশিরভাগ দিন তারা স্কুলে যায় না। রাস্তায় ডাংগুলি খেলে কিংবা অ্যালজেব্রা কি বাংলা ব্যাকরণের বই বেচে সিনেমায় দিয়ে দেখে।

    আজ ওরা ঠিক করল, চেতলা ব্রিজ পেরিয়ে এসপ্ল্যানেডে ঘুরতে যাবে। কিন্তু তার আগেই কেউ যেন ওদের ঘাড় ধাক্কা দিতে-দিতে স্কুলের ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।

    এরপর থেকে রোজ সকাল পাঁচটা বাজতেই, কে যেন চার ভাইকে বিছানা থেকে তুলে বাথরুমে পাঠিয়ে দেয়। মুখ-টুখ ধোয়া, হলে এক জোড়া বেত তাদের ডাইনিং রুমের দরজা দেখিয়ে দেয়। ওরা যখন খায়, বেত দুটো হাওয়ায় নাচতে থাকে। খাওয়া হলে পড়ার ঘরে যখন আসে, বেতজোড়া তখনও পিছু ছাড়ে না। একটু ফাঁকি দিয়েছে কি, অমনি সপাং করে পিঠে বাড়ি পড়ে। স্কুল কামাই করারও উপায় নেই। অমনি গলা ধাক্কা দিতে দিতে কেউ তাদের ক্লাসে নিয়ে যাবে। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে টিফিন খাবার সময় থেকে রাত্তিরে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সারাক্ষণ বেতজোড়া ওদের সঙ্গে ঘুরতে থাকে।

    সেজোমামী তো বেজায় খুশি। ছেলেদের পেছনে চেঁচিয়ে তার যেতে শুরু করেছে। রাঁচীতে যে অসুখ করেছিল, তা এখন সেরে সেজো মামাকে চিঠি লিখে তিনি সব জানিয়েছেন।

    এদিকে প্রলয়নাচন প্রলয়মাতন প্রলয়খাশন প্রলয়মাতন, চার ভাইয়ের প্রলয় থেমে গেছে। পঞ্চম পাণিপথের যুদ্ধের লড়াই এ বাড়িতে আর হচ্ছে না। লড়াই তো দূরের কথা, জোরে কথা বলার পর্যন্ত উপায় নেই। তার ওপর রোজ নিয়ম করে স্কুলে যেতে হচ্ছে, বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়তে হচ্ছে। চার ভাইয়ের মনে আর সুখ নেই।

    একদিন রাত্তিরে পরামর্শ করে তারা ঠিক করল, এখানে আর থাকবে না। রাত পোহাবার আগেই চেতলা ছেড়ে চলে যাবে। এখান থেকে ভোরের বাস ধরে যাবে হাওড়া স্টেশন। সেখান থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস, বোম্বে মেল-প্রথমে যে ট্রেন পাওয়া যাবে, তাতেই চড়ে বসবে।

    যেমন ভাবা তেমনি কাজ। চার ভাই মাকে চিঠি লিখে অন্ধকার থাকতে-থাকতেই বেরিয়ে পড়ল।

    পরের দিন সকালে সেজোমামী দেখলেন, ছেলেদের ঘর ফাঁকা। টেবিলের ওপর একটা ভাঁজ করা কাগজ রয়েছে। সেটা খুলতেই দেখা গেল, কয়েক লাইন লেখা রয়েছে:

    শ্রীচরণেষু মা,

    তুমি নিশ্চয়ই ভূত পুষেছো। তার এত বেতের বাড়ি, কানমলা, চড় আর সহ্য হয় না। মার খেতে-খেতে সারা গায়ে কালসিটে পড়ে গেছে। দিনের পর দিন মাথা গুঁজে এতো পড়াশুনো করতে ভাল লাগে না।

    তাই আমরা চলে যাচ্ছি। এ-জীবনে আর দেখা হবে না। বাবা ও তুমি আমাদের প্রণাম নিও।

    ইতি−

    হতভাগ্য

    আবু-টাবু-হাবু-পাবু

    অন্য সময় হলে এ চিঠি পড়ে সেজোমামী কেঁদে-কেটে সারা বাড়ি মাথায় তুলতেন। আজ কিন্তু কিছু করলেন না। নিজের মনে ঘরের কাজ করতে লাগলেন। তিনি জানেন যাঁর ওপর ওদের দায়িত্ব দেওয়া আছে, তিনিই ওদের ব্যবস্থা করবেন।

    আটটা তখনও বাজে নি, দেখা গেল, লম্বা মোটা দড়ি দিয়ে চার ভাইকে বেঁধে অদৃশ্য কেউ টানতে-টানতে বাড়ি নিয়ে আসছে।

    এরপর টাবুরা একেবারে আশা ছেড়ে দিয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে, বাঁদরামো করা চলবে না। ঘাড় গুঁজে দুবেলা পড়তে হবে, মারামারি বন্ধ করতে হবে এবং রোজ স্কুলেও যেতে হবে।

    এসব ঘটনা ঘটে যাবার পর সেজোমামী আবার একদিন পাশের বাড়ির বলাইবাবুদের বাড়ি গেলেন এবং যা-যা হয়েছে সব বললেন।

    সমস্ত শুনে বলাইবাবুর মা বললেন, ‘সেদিন বলেছিলাম ভয় নেই, আমার কথা মিলল তো?’

    সেজোমামী বললেন, ‘মিলেছে। আচ্ছা মাসীমা একটা কথা বুঝতে পারছি না।’

    ‘কি কথা?’

    ‘যিনি আমার এত উপকার করছেন, তিনি কে?’

    ‘একজন কড়া হেডমাষ্টার। ও বাড়িতে অনেক দিন ছিলেন। মরার পরও বাড়ি ছেড়ে যাননি। বড্ড ভালমানুষ। কিন্তু ছেলেদের বেয়াদপি, বজ্জাতি একদম সহ্য করতে পারেন না। পাজী ছেলেরা দু’দিন ওখানে থাকলেই ঢিট্ হয়ে যায়।’

    এইসব ঘটনার বছরখানেক বাদে দেখা গেল, মামীর অসুখ-বিসুখ একদম সেরে গেছে। আর অ্যানুয়াল পরীক্ষায় আবু-টাবু-হাবু-পাবু, চার ভাই-ই ফার্স্ট’ হয়েছে।

    ***

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআকাশের নিচে মানুষ – প্রফুল্ল রায়
    Next Article লৌকিক এবং অলৌকিক গল্প – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.