Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাগল মামার চার ছেলে – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প76 Mins Read0

    রাজার আংটি ও জগাই

    রাজার আংটি ও জগাই

    পহেলগাঁও-এর এই উঁচু-নিচু রাস্তাটার দুধারে লাইন দিয়ে হোটেল, টুরিস্ট লজ, আর নানা ধরনের দোকানপাট। দোকানগুলোর ঝকঝকে কাচের আলমারিতে সাজান রয়েছে দারুণ দারুণ কাশ্মীরি শাল, পশমের টুপি, কোট, কাঠের আর পাথরের তৈরি কত রকমের যে জিনিস। দেখলেই সব কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে।

    বাঁ দিকের হোটেল-টোটেলের পেছন দিয়ে বয়ে গেছে লীডার নদী। তার নীল জল পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে একটানা ঝুমঝুম শব্দ করে যাচ্ছে। মনে হয় সারাদিন সারারাত নদীটা কত্থক নাচ নেচে চলেছে।

    নদীর পর যতদূর চোখ যায় ছবির মত সাজান অগুনতি পাহাড়। পাহাড় শুধু নদীর দিকেই নেই; সামনে পেছনে বা ডান দিকে-সব জায়গাতেই পাহাড় আর পাহাড়। তাদের গায়ে কত যে গাছ-পাইন, দেবদারু, উইলো। এইসব গাছ আকাশের দিকে রাজার মত মাথা তুলে রয়েছে।

    এখন বিকেল। সূর্যটাকে অবশ্য দেখা যাচ্ছে না; বাঁ দিকের পাহাড়গুলোর আড়ালে সেটা নেমে গেছে। শুধু উঁচু উঁচু গাছগুলোর মাথায় একটুখানি সোনালি রোেদ চিকচিক করছে।

    কিন্তু কাশ্মীরের এই উপত্যকায় ঐ রোদটুকুও আর বেশিক্ষণ থাকবে না। ঝুপ করে একটু পরেই সন্ধে নেমে যাবে; বিশেষ করে এই অক্টোবর মাসে।

    বাতাস এর মধ্যেই ভীষণ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কনকনে হিম উঠে আসছে চারপাশ থেকে। মাসখানেক পরেই যে কাশ্মীরে বরফ পড়তে শুরু করবে, এখনই তা টের পাওয়া যায়।

    মা আর বাবার সঙ্গে পহেলগাঁও-এর রাস্তায় বেড়াচ্ছিল রুকু। ওদের তিনজনের পরনেই দামী দামী গরম পোশাক। মাথায় পশমের টুপি। পায়ে উলের মোজা, চকচকে জুতো।

    রুকুদের পেছন পেছন হাঁটছিল জগাই। তার গায়ে খুব সস্তা দামের জামা-প্যান্ট আর রোঁয়াওলা মোটা উলের পুল-ওভার; পায়ে পুরোন কেডস। এতে কাশ্মীরের ঠাণ্ডা ঠেকান যায় না। ছেলেটা শীতে কাঁপছিল।

    রুকু আর জগাই একবয়সী হবে; দুজনের এগার চলছে। লম্বায় দুজনেই সমান সমান।

    রুকু কলকাতার একটা নাম-করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ে। খুব যত্নে থাকে বলে তার স্বাস্থ্য চমৎকার। গায়ের রঙ খুব ফর্সা, মাথায় কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। তার কোন ভাইবোন নেই।

    আর জগাই রোগা, কালো। সে-ও একসময় স্কুলে পড়ত; কিন্তু হঠাৎ মা-বাবা মরে যাওয়ায় দু’ বছর আগে রুকুদের বাড়ি কাজ করতে এসেছিল। তারপর থেকে ওখানেই আছে। পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই। কাজ না করলে কে তাকে খাওয়াবে?

    দিনরাত খেটেও রুকুদের বাড়ির কাউকে খুশি করতে পারে না জগাই। সারাক্ষণ সে বকুনি খায়। সব চাইতে বেশি বকাবকি করে রুকু। ছেলেটা যেমন রাগী, তেমনি হিংসুটে। একটুতেই ক্ষেপে উঠে চেঁচাতে থাকে। মা-বাবা আদর দিয়ে দিয়ে তাকে মাথায় তুলে ফেলেছে।

    এইসব কারণে সবসময় মনমরা হয়ে থাকে জগাই। ওর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ছেলেটার বড় দুঃখ।

    এই অক্টোবর মাসে কলকাতায় যখন মাইক বাজিয়ে, আলোয় আলোয় চারদিক ভরে দিয়ে পুজো হচ্ছে তখন রুকুরা যে দুম করে কাশ্মীর বেড়াতে এল তার পেছনে একটা দারুণ ঘটনা রয়েছে।

    ঠিক চারমাস আগে, সেই জুনের শুরুতে সন্ধেবেলা রুকু মা-বাবার সঙ্গে লেকে বেড়াতে গিয়েছিল। ওদের সঙ্গে জগাইও ছিল। কলকাতায় থাকলে রোজই বিকেলে দুঘণ্টা লেকে বেড়ায় রুকুরা। জগাইকেও ওদের সঙ্গে একটা বাস্কেট নিয়ে যেতে হয়। রুকুর বাবার কিছুক্ষণ পর পর কফি, রুকুর মায়ের চা আর রুকুর ওভালটিন খাওয়ার অভ্যেস। জগাইর বাস্কেটে তিনটে বড় ফ্লাস্ক আর তিনটে কাপ থাকে।

    সেদিন সারা লেকটা একপাক ঘুরে ওরা যখন স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে লেক গার্ডেনসের দিকে যেতে যেতে বাঁধান ব্রিজটার ওপর এসে উঠেছে সেইসময় নিচের জলে ঝপাং করে একটা শব্দ হল। মনে হল কেউ পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে অনেকের চিৎকার শোনা গেল। আর তক্ষুনি জলে আরেকবার ঝপাং শব্দ। জগাই বাস্কেটটা নামিয়ে রেখে তীরের মত ছুটে গিয়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে খুব ভাল সাঁতার জানে।

    লেকের এদিকটায় লোকজন বেশি ছিল না। আশপাশের রাস্তায় আলোগুলোও কেন যেন সেদিন জ্বলেনি; খুব সম্ভব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

    ব্রিজটার রেলিংয়ের ওপর দিয়ে অনেকখানি ঝুঁকে একটা অবাঙালী ফ্যামিলি দম বন্ধ করে তাকিয়ে ছিলেন। একজন মাঝবয়সী মহিলা সমানে কাঁদছিলেন। তাঁর পাশে যে বয়স্ক ভদ্রলোকটি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর মুখচোখ দেখে মনে হচ্ছিল, ভীষণ ঘাবড়ে গেছেন। কী যে তিনি করবেন, ভেবে উঠতে পারছিলেন না।

    রুকুরা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। কেন ওঁরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, কেন মহিলাটি কাঁদছেন আর কেনই বা বাস্কেট-টাস্কেট ফেলে জগাই ওভাবে ছুটে গিয়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল, বোঝা যাচ্ছিল না।

    রুকুর বাবা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বয়স্ক লোকটিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী হয়েছে বলুন তো? আমরা কি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি?

    ভদ্রলোক যা বলেছিলেন তা এইরকম। ওঁরা দিনকয়েক আগে কাশ্মীর থেকে কলকাতায় বেড়াতে এসেছেন। সেদিন এসেছিলেন লেকে। ঘুরতে ঘুরতে এই ব্রিজের ওপর আসতেই তাঁদের ছ’বছরের ছোট ছেলে হঠাৎ রেলিংয়ে উঠে কী যেন দেখতে গিয়ে পড়ে যায়। তারপরেই একটি ছেলে দৌড়ে এসে জলে লাফিয়ে পড়ে।

    বোঝা গিয়েছিল, ছোট ছেলেটাকে পড়তে দেখে জগাই লেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সত্যিই তাই, একটু পরেই একটা বাচ্চাকে টানতে টানতে পাড়ে নিয়ে আসে সে। বাচ্চাটার তখন জ্ঞান নেই।

    ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোক দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরেন। ভদ্রলোক বলেন, এক্ষুনি একজন ডাক্তার দরকার। আমরা তো এখানকার কিছুই চিনি না−

    −চিন্তা করবেন না, আমি ব্যবস্থা করছি।

    রুকুর বাবা জগাই, রুকু এবং তার মাকে বাড়ি পাঠিয়ে তক্ষুনি ট্যাক্সি ডেকে ওঁদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ভাল করে দেখে একটা ইঞ্জেকশান দিতেই ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল।

    এভাবে সাহায্য করার জন্য ভদ্রলোক রুকুর বাবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। বলেছিলেন, আপনাদের জন্যে আমার ছেলেটিকে ফিরে পেলাম। এ উপকার কোনদিন ভুলব না।

    রুকুর বাবা বলেছিলেন, আমি এমন কিছুই করিনি। যে কেউ এটুকু করত। আপনারা এখানে কোথায় উঠেছেন?

    একটা বিখ্যাত ফাইভ-স্টার হোটেলের নাম করেছিলেন ভদ্রলোক। রুকুর বাবা তাঁদের সেখানে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

    হোটেলের দিকে যেতে যেতে ভদ্রলোকটির পরিচয় জেনে নিয়েছিলেন। তাঁর নাম আনোয়ার করিম। শ্রীনগরে তাঁদের বাড়ি। আপেল, আখরোট এবং বাদামের বাগান আছে পনেরটা। এছাড়া কাশ্মীরি সালের ব্যবসা আছে। আর বড় বড় হাউসবোট রয়েছে কুড়িটা; সেগুলো ডাল লেকে ভাড়া খাটে।

    বোঝা যাচ্ছিল, আনোয়ার সাহেব খুবই বড়লোক। তিনি রুকুর বাবার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি জেনে নিয়েছিলেন।

    হোটেলের কাছে পৌঁছে হঠাৎ আনোয়ার সাহেবের কী মনে পড়তে ভীষণ ব্যস্তভাবে বলেছিলেন, আরে, সেই ছেলেটিকে তো কিছুই বলে আসা হল না। বড্ড অন্যায় হয়ে গেছে। ওর জন্যে আমার কিছু একটা করা উচিত ছিল−

    −কার কথা বলছেন?

    −যে আমার ছেলে মকবুলকে জল থেকে তুলে এনেছে। ও না হলে মকবুলকে বাঁচানোই যেত না। ঐ ছেলেটি কে?

    চট করে কি ভেবে নিয়ে রুকুর বাবা বলেছিলেন, আমার ছেলে রুকু। ওর জন্যে কিচ্ছু করতে হবে না। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা তো একটা ডিউটি। খুব ছোটবেলা থেকে ওকে আমরা এই শিক্ষাই দিয়েছি।

    −চমৎকার ছেলে আপনার। কাল বিকেলে আপনার বাড়ি গিয়ে ওর সঙ্গে আলাপ করে আসব।

    −নিশ্চয়ই আসবেন।

    পরের দিন আনোয়ার সাহেব প্রচুর মিষ্টি আর দামী দামী কেক নিয়ে রুকুদের লেক গার্ডেনসের বাড়ি এলেন। রুকুর সঙ্গে আলাপ করে তিনি খুব খুশি। তার মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে কতবার যে আশীর্বাদ করলেন। কাল আবছা অন্ধকারে কে তাঁর ছেলেকে লেকের জল থেকে তুলে এনেছিল বুঝতে পারেননি। তাছাড়া তখন তাঁর সনের যা অবস্থা অন্য দিকে তাকাবার মত সময় ছিল না।

    আগের দিন হোটেলে আনোয়ার সাহেবদের পৌঁছে দিয়ে এসেই রুকুর বাবা রুকুকে শিখিয়ে রেখেছিলেন, জগাই না, সে-ই মকবুলকে জল থেকে তুলে এনেছে। এ নিয়ে আনোয়ার সাহেব যখন তাকে আদর টাদর করবেন তখন সে যেন আঙুল বাড়িয়ে জগাইকে দেখিয়ে না দেয়।

    ওরা ইংরেজিতে কথা বলছিল। জগাই ইংরেজি না জানলেও -কাল জল থেকে সেই ছোট ছেলেটাকে তুলে আনার ব্যাপারেই যে কথা হচ্ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছে। আর এ জন্যই যে ঐ ভদ্রলোক রুকুকে আদর করছেন, তাও বোঝা যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল জগাইর।

    আনোয়ার সাহেব যে রুকুদের জন্য কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল, অক্টোবর মাসে পুজোর ছুটিতে তাদের কাশ্মীরে নিয়ে যাবেন। পুরো ছুটিটা রুকুরা সেখানে কাটিয়ে আসবে। শ্রীনগরের সুন্দর সুন্দর হ্রদ, বাগান ইত্যাদি তো তারা দেখবেই। তাছাড়া সোনমার্গ, গুলমার্গ, চন্দনবাড়ি, তেজোয়াস বা পহেলগাঁওয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। কাশ্মীরে যা যা দেখবার আছে সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবেন আনোয়ার সাহেব। শুধু তাই না, ডাল লেকে ক’দিন হাউসবোটেও থাকবে রুকুরা, ঝিলম নদীতে ট্রাউট মাছ ধরবে। ইচ্ছে হলে গুলমার্গে বরফের ওপর স্কীও করে আসবে।

    কলকাতা থেকে কাশ্মীরে ফিরে জুলাই মাসের গোড়াতেই ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আনোয়ার সাহেব। রুকুর বাবা অনেক আগে আগেই ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। জগাইকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়া ঠিক নয়, তাই তার টিকিটও করা হয়েছে।

    অক্টোবরে পুজোর ছুটি পড়বার সঙ্গে সঙ্গে রুকুরা কাশ্মীরে চলে এসেছে। প্রথমে শ্রীনগরে আনোয়ার সাহেবের বাড়িতে ক’দিন থেকে ওখানকার সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখেছে রুকুরা। তারপর আনোয়ার সাহেব শ্রীনগর থেকেই ফোনেই পহেলগাঁওয়ের এক হোটেলে একটা ভাল স্যুইট ‘বুক’ করে নিজের একখানা গাড়ি আর লোক দিয়ে রুকুদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। গাড়িটা রুকুদের কাছেই থাকবে, সঙ্গে যে লোকটাকে দিয়েছেন সে হবে ওদের ড্রাইভার এবং গাইড। তার নাম জামশিদ। চন্দনবাড়ির দিকে যতদূর যাওয়া যায় জামশিদ রুকুদের নিয়ে যাবে।

    ব্যবসার কাজে আটকে যাওয়ায় আনোয়ার সাহেব রুকুদের সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে আসতে পারেননি। সে জন্য রুকুর মা এবং বাবার কাছে বার বার ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তিনি।

    পরিষ্কার ঝকঝকে রাস্তা দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল রুকুরা। রাস্তায় এবং দু’ধারের দোকানগুলোতে প্রচুর লোকজন। এদের বেশির ভাগই টুরিস্ট। বাঙালী, শিখ, মারাঠী, গুজরাতি, রাজস্থানী-সারা ভারতের লোক তো এসেছেই, আমেরিকা ইওরোপ এবং ফার ইস্ট থেকেও অগুনতি টুরিস্ট এসেছে। প্রায় সবারই গলায় ঝুলছে একটা করে ক্যামেরা।

    রাস্তাটা উটের পিঠের মত খানিকটা উঁচুতে উঠেই যেখানে ঢালের দিকে নেমে গেছে, সেখানে আসতেই ঘোড়াওলা গলা মিলিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল, ইধর সাহাব, ইধর আইয়ে। বহোত আচ্ছা ‘তেজ’ ঘোড়া হ্যায় হামারা−

    এখানে রাস্তার ধারে পাইনগাছগুলোর নিচে অনেকগুলো বেঁটে বেঁটে টাট্ট দাঁড়িয়ে আছে। জন্তুগুলোর পিঠে বসবার জন্য নরম গদি, আর গলায় দড়ি বাঁধা। দড়ির একটা মাথা তাদের মালিকরা ঘরে রয়েছে।

    সকাল-বিকেল ঘোড়াওলারা টুরিস্টদের ডাকাডাকি করে, তাদের টাটুগুলোর পিঠে তুলে দু-তিন ফার্লং ঘুরিয়ে আনে। এজন্য মোটামুটি ভালই পয়সা পায়। কার টাট্ট, কত তেজী, কত ভাল দৌড়তে পারে, অনবরত তা চিৎকার করে করে জানাতে থাকে।

    তিনদিন পহেলগাঁওয়ে এসেছে রুকুরা, তিনদিনই টাট্টতে চড়েছে।

    রুকু বলল, বাবা, ঘোড়ায় চড়ব।

    রুকুর বাবারও সেই ইচ্ছাই ছিল। তিনটে ঘোড়া ভাড়া করে ফেললেন তিনি। একটা রুকুর জন্য, একটা তার মায়ের জন্য আর একটাতে তিনি চড়বেন।

    জগাইর জন্য কোনদিনই টাটু নেওয়া হয় না। রুকুরা ঘোড়ায় চড়ে যতক্ষণ না ফিরে আসে, সে এই পাইনগাছগুলোর তলায় দাঁড়িয়ে থাকে। আজও দাঁড়িয়ে রইল।

    রুকুদের তিনটে ঘোড়া পহেলগাঁওয়ের চকচকে রাস্তায় খট খট শব্দ তুলে একসময় দূরের বাঁক ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

    রুকুদের পর এল আরো কয়েকজন টুরিস্ট, বার-চোদ্দটা টাট্ট ‘ভাড়া করে সেগুলোর পিঠে চড়ে চলে গেল।

    পাইনগাছের তলায় এখন আর বেশি ঘোড়া নেই। খুব বেশি হলে চার-পাঁচটা।

    দূরে উঁচু গাছগুলোর মাথায় এখন আর রোদ নেই। সন্ধে নামতে শুরু করেছে। আবছা অন্ধকারে চারদিক ঢেকে যাচ্ছে। বাতাসে আরো বেশি করে হিমের গুঁড়ো মিশে গেছে। হিমের ছোঁয়ায় চামড়া যেন কেটে কেটে যাবে।

    কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল জগাইর মনে নেই। কার ডাকে চমকে উঠে ডানপাশে তাকাতেই দেখতে পেল একটা ঘোড়াওলা তার টাটুটাকে নিয়ে খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।

    ঘোড়াওলা একজন যুবক, ভারি সুন্দর তার চেহারা।

    এক ঘণ্টার মত দাঁড়িয়ে আছে জগাই, তাছাড়া তিন-চার দিন ধরে রোজ এখানে আসছে। ঘোড়াওলাদের সবাই মুখচেনা হয়ে গেছে কিন্তু একে আগে আর কখনো দেখেছে বলে মনে হল না। জগাই একটু অবাকই হল।

    চোখের ইশারায় অচেনা ঘোড়াওলা জগাইকে টাটুর পিঠে চড়তে বলল।

    জগাই বেশ ভয়ই পেল। তারপর জামার পকেট দেখিয়ে জানালা তার পয়সা নেই।

    ঘোড়াওলা ভাঙা ভাঙা হিন্দীতে বলল, না থাক পয়সা। রোজ তুমি এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাক। চল আজ তোমাকে একটু ঘুরিয়ে আনি।

    হিন্দীটা ভালই বোঝে জগাই। কেন না কলকাতায় রুকুদের দোকান-বাজার সে-ই করে। ট্যাক্সিওলা রিক্সাওলা আইসক্রিমওলাদের তাকেই ডেকে আনতে হয়। ওদের সঙ্গে হিন্দীতে কথা বলতে বলতে ভাষাটা মোটামুটি শিখে ফেলেছে সে।

    জগাইর লোভও হল, আবার ভয়ও হল। ভয়ের কারণ রুকুরা এসে তাকে দেখতে না পেলে ভীষণ রেগে যাবে। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ঘোড়াওলা তাকে টাটুতে চড়িয়ে দিল। জগাই না না করতে করতে নেমে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই টাটু সামনের দিকে ছুটতে শুরু করল।

    এমনিতে টাটুরা আস্তে আস্তে দৌড়য়। কিন্তু জগাইর টাট্ট দারুণ জোরে ছুটছে। আগে কখনো ঘোড়ায় চড়েনি সে, ভয়ে টাটুর গলা জড়িয়ে ধরল সে। সেই অবস্থাতেই একবার পেছন ফিরে তাকাল, কিন্তু ঘোড়াওলাটাকে কোথাও দেখা গেল না, চোখের পলকে সে উধাও হয়ে গেছে।

    খানিকটা যাবার পর, আগে যে টাটুগুলো টুরিস্টদের নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল-তাদের দেখতে পেল জগাই। ওদের মধ্যে রুকুরা রয়েছে।

    রুকুরাও ওকে দেখতে পেয়েছে। রুকুর বাবা চেঁচিয়ে বললেন, এই জগাই ঘোড়ায় উঠেছিস যে! এত বড় সাহস তোমার আমাদের না বলে টাটুতে চড়েছ! শিগগির নাম-বোঝা গেল, বাড়ির চাকর ঘোড়ায় চড়ায় তিনি ভীষণ রেগে গেছেন।

    নামতে পারছি না-জগাই কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই তার টাট্ট দুরন্ত গতিতে রুকুদের ছাড়িয়ে অনেক দূর চলে গেল।

    তারপর টাটুটা কখন যে ধবধবে সাদা কেশরওলা বিরাট এক আরবী ঘোড়া হয়ে গেছে, জগাই জানে না।

    একসময় চাঁদ উঠল। দুধের মত জ্যোৎস্নায় চারদিক ভেসে যাচ্ছে।

    হঠাৎ জগাইয়ের চোখে পড়ল, তার ঘোড়াটা রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটছে না, গাছপালা উপত্যকা আর লীডার নদীর ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে।

    উড়তে উড়তে অনেকক্ষণ পর টুক করে নিচে নেমে একটা বিরাট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। দেখেই বোঝা যায় এটা রাজার বাড়ি।

    প্রকাণ্ড ফটকের সামনে বিরাট চেহারার দারোয়ানেরা কাঁধে খোলা তলোয়ার এবং বর্শা নিয়ে পাহারা দিচ্ছে। ফটকের ভেতর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে প্রচুর আলো আর প্রচুর মানুষ।

    ভয়ে বুক শুকিয়ে গিয়েছিল জগাইয়ের। এমন ভয় জীবনে সে আর কখনো পায়নি। পহেলগাঁওয়ের সেই টাটুটা যে বিরাট ধবধবে আরবী ঘোড়া হয়ে যাবে, তারপর হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে তাকে এই রাজবাড়ির সামনে নিয়ে আসবে, কে ভাবতে পেরেছিল। এখান থেকে আর কি কোন দিন সে ফিরতে পারবে?

    কী করবে যখন জগাই বুঝে উঠতে পারছে না, সেই সময় কোত্থেকে যেন ক’টা লোক−তাদের মাথায় পাগড়ি, গায়ে দামী পোশাক−ছুটতে ছুটতে এসে জগাইকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে ভেতরের একটা ঘরে নিয়ে গেল।

    এ বাড়িতে বিজলি বাতি নেই। চারদিকে শুধু ঝাড় লণ্ঠন, সেগুলোর ভেতর নানা রঙের মোম জ্বলছে।

    লোকগুলো খুব যত্ন করে গরম জলে তার হাত-পা ধুইয়ে, বাজে জামা-প্যান্ট ছাড়িয়ে চমৎকার পোশাক পরিয়ে দিল। তারপর। আরেকটা ঘরে এনে কত রকমের ভাল ভাল খাবার আর ফল যে খাওয়াল! এমন খাবার-দাবার জীবনে চোখেই দেখেনি জগাই।

    ভয়টা অনেক কেটে এসেছিল জগাইর। সে একটা লোককে জিজ্ঞেস করল, এটা কার বাড়ি?

    লোকটা বলল, কাশ্মীরের রাজার।

    −আমাকে এখানে আনা হল কেন?

    −রাজামশাই নিজেই তা বলবেন।

    কাশ্মীরের রাজা কেউ আছেন কিনা, জগাই জানে না। কেন তিনি তাকে একটা বহুরূপী ঘোড়া পাঠিয়ে ধরে আনলেন তা-ই বা কে জানে। সেই ভয়টা আবার নতুন করে ফিরে এল। ভয়ে তার বুক গুরগুর করতে লাগল।

    খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। আরেক দল লোক এসে তাকে একটা প্রকাণ্ড হলঘরে নিয়ে এল। এখানকার জাঁকজমক দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল জগাইর।

    ঢুকবার মুখে যে বিরাট দরজাটা রয়েছে, সেখান থেকে পুরু লাল গালিচা একেবারে শেষ প্রান্তের উঁচু বেদী পর্যন্ত পাতা রয়েছে। দু’ধারে অনেকে বসে আছেন। এঁদের পোশাক, মাথার পাগড়ি, গলার হার ইত্যাদি দেখে বোঝা যায়, এঁরা বিরাট বিরাট লোক।

    গালিচার ওপর দু’পাশে হাতে রুপোর থালায় সাদা সুগন্ধি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা। একটি মেয়ে এসে তাকে দূরে বেদীর দিকে নিয়ে যেতে লাগল। সে যত এগুচ্ছে দু পাশের মেয়েরা তার মাথায় ফুল ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগল।

    জগাই জানে না এটা রাজ-দরবার। একসময় দরবারের শেষ মাথায় বেদীর কাছে পৌঁছে যায় সে।

    বেদীর ওপর সোনার সিংহাসনে যিনি বসে আছেন দেখামাত্র বোঝা যায় তিনিই রাজা। এই দরবারে যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবার থেকে তিনি সুন্দর। সব চাইতে দামী পোশাক তাঁর পরনে, মাথায় যে মুকুটটা রয়েছে তাতে কত যে হীরেপান্না মণিমুক্তো! তাঁর পাশে আর একটা সিংহাসন ফাঁকা পড়ে আছে, সেটাও সোনার।

    রাজা নিজে জগাইর হাত ধরে পাশের সিংহাসনে বসালেন। তারপর মিষ্টি করে হেসে তাকে বললেন, ঘোড়ায় চড়ে আসতে কষ্ট হয়নি?

    মাথা নাড়ল জগাই−হয়নি।

    −ভাল করে পেট ভরে খেয়েছ?

    ঘাড় কাত করে জগাই জানাল, খেয়েছে। আস্তে আস্তে তার ভয় কাটতে লাগল।

    রাজা এবার দরবারের দিকে ফিরে বলতে লাগলেন, আগে আপনাদের এই ছেলেটির পরিচয় দিই। এর নাম জগাই। বড় দুঃখী।

    তারপর জগাই কোথায় থাকে, কী করে এবং কীভাবে মকবুলকে বাঁচিয়েছে এবং ওকে ঠকিয়ে কীভাবে ওর কৃতিত্ব রুকুর বাবা কায়দা করে নিজের ছেলেকে দিয়েছেন−সব জানিয়ে রাজা বলতে লাগলেন, এমন একটি ভাল ছেলে যে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে একজনকে বাঁচিয়েছে তার জন্যে আমাদের কিছু করা উচিত। কাশ্মীরে এসে মনে দুঃখ নিয়ে জগাই ফিরে যাবে, এ হতে পারে না। আপনারা কী

    বলেন?

    সবাই মাথা নেড়ে জানালেন, নিশ্চয়ই কিছু করা উচিত।

    রাজা বললেন, আমি জগাইকে কাশ্মীরের মানুষের তরফ থেকে ওর ভাল কাজের জন্য এই আংটিটা দিতে চাই। নিজের আঙুল থেকে একটা আংটি খুলে জগাইর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

    জগাই উঠে দাঁড়িয়ে আংটিটা নিয়ে রাজাকে প্রণাম করল। সে শুনেছে কেউ কিছু দিলে প্রণাম করতে হয়।

    ওটা পরে ফেল। রাজা বললেন, −এই আংটিটা যাদু আংটি। এর কাছে যা চাইবে তাই পাবে। তবে লোভ করে বেশি কিছু চাইবে না। তা হলে আংটিটা হারিয়ে যাবে।

    হঠাৎ রুকুদের কথা মনে পড়ল জগাইর। আংটিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, আমি যাদের কাছে থাকি তারা সবসময় বকে, চোখ পাকিয়ে কথা বলে।

    −মনে মনে আংটিটাকে ব’লো, দেখবে ওরা ভাল ব্যবহার করবে।

    একটু সাহস করে জগাই এবার বলল, আমি যে মকবুলকে বাঁচিয়েছি, এই কথাটা আনোয়ার সাহেবকে ওরা জানাবে?

    −আংটিকে বললেই জানাবে।

    −ছেলেবেলায় মা-বাবা মরে যাবার পর আর পড়তে পারিনি। আমার ইচ্ছে স্কুলে ভর্তি হব।

    −আংটিকে জানালেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

    একসময় রাজ-দরবারে জগাইর সংবর্ধনা শেষ হল। রাজা জগাইকে বললেন, যাও, এবার গিয়ে শুয়ে পড়। ঘোড়ায় চড়ে আনেকটা দুর থেকে আসছ। দেখে মনে হচ্ছে তুমি বড় ক্লান্ত।

    জগাই বলল, আমি ফিরে যাব কি করে?

    −সে জন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না।

    রাজার ইশারায় দুটো লোক এসে জগাইকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে বিরাট খাটে ধবধবে নরম বিছানায় গরম লেপের ভেতর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সে।

    পরের দিন যখন ঘুম ভাঙল, জগাই দেখল পহেলগাঁওয়ের সেই হোটেলের সামনের বাগানে বেতের চেয়ারে বসে আছে। আনোয়ার সাহেব এখানেই তাদের জন্য ঘর ভাড়া করেছেন। রোদে ঝলমল করছে চারদিক। আর তাকে ঘিরে রুকুরা তো দাঁড়িয়ে আছেই, হোটেলের লোকজনকেও দেখা যাচ্ছে। কাল সারারাত সে ফিরে না

    আসায় সবাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিল।

    কিভাবে ঘুমের ঘোরে এখানে চলে এসেছে জগাই বুঝতে পারছে না।

    হঠাৎ কর্কশ গলায় রুকুর বাবা চেঁচিয়ে উঠলেন, সমস্ত রাত কোথায় ছিলি রে পাজি বজ্জাত ছোকরা?

    জগাই চমকে উঠলো। রুকুর বাবা, মা আর রুকু তার দিকে ভয়ঙ্কর চোখে তাকিয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আংটির কথা মনে পড়ে গেল জগাইর। দেখল, ডান হাতের মাঝখানের আঙুলে রাজার দেওয়া আংটিটা রয়েছে। তবে ওরা যে দামী পোশাক পরিয়েছিল সেটা নেই। সে যা চায় মনে মনে আংটিটাকে জানাল।

    তক্ষুনি মুখচোখের চেহারা একেবারে বদলে গেল রুকুদের। রুকুর মা আর বাবা কাছে এসে খুব নরম গলায় বললেন, সারা রাত তোর জন্যে ঘুমোতে পারিনি বাবা। কী দুশ্চিন্তায় যে কেটেছে। চল চল, ঘরে চল−

    রুকু বলল, মা, ঠাণ্ডায় জগাইর বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ওকে আমার কোট আর সোয়েটার দাও−

    রুকুর মা বললেন, হ্যাঁ, এখন তোরটা পরুক। কলকাতায় গিয়ে ওকে নতুন কোট-টোট করিয়ে দেব।

    এমন সুন্দর ব্যবহার রুকুদের কাছ থেকে আগে আর কখনো পায়নি জগাই।

    এর দু’দিন বাদে শ্রীনগরে ফিরে রুকুর বাবা আনোয়ার সাহেবকে জানিয়ে দিলেন, তাঁর ছেলে রুকু নয়, কলকাতার লেক থেকে মকবুলকে বাঁচিয়েছে জগাই।

    আরো দু-সপ্তাহ পর কলকাতায় ফিরে জগাইর পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলেন রুকুর মা আর বাবা। এখন দুটো মাস সে বাড়িতেই পড়বে, জানুয়ারি পড়লেই তাকে ভাল স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হবে।

    কাছে কেউ না থাকলে আংটিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে জগাই। তখনই কাশ্মীরের রাজার মুখ মনে পড়ে। তাঁর কথা যতবার ভাবে, দু’চোখ জলে ভরে যায়।

    ***

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআকাশের নিচে মানুষ – প্রফুল্ল রায়
    Next Article লৌকিক এবং অলৌকিক গল্প – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }