Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাগল মামার চার ছেলে – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প76 Mins Read0

    বুবুনের বাঘ আর পাঁচ ডাকাত

    ডাকাত ধরতে হলে ছবি আঁকতে পারা চাই, এমন কথা কেউ কি কখনও শুনেছ! যত উদ্ভটই হোক, ব্যাপারটা কিন্তু সত্যি। পাঁচ পাঁচটা ব্যাঙ্ক ডাকাত কী করে ধরা পড়ল সে কথা বলার আগে বুবুন আর তার ছবি আঁকার কথাটা বলে নেওয়া যাক।

    বুবুনের বয়স ঠিক ন’বছর দু মাস। হাইট চার ফুট দশ ইঞ্চি। নাকমুখ খুব ধারালো। ঝকঝকে চোখ দুটোতে বুদ্ধি আর দুষ্টুমি মেশানো। মাথাভর্তি ঘন চুল, সেগুলো মাঝে মাঝেই চোখের ওপর ঝামড়ে এসে পড়ে।

    লেখাপড়ায় দারুণ ভাল বুবুন। এ বছর ফার্স্ট হয়ে ক্লাস ফাইভে উঠেছে। এবারই না, সেই ওয়ান থেকেই ফার্স্ট’ হয়ে আসছে।

    শুধু পড়াশোনায় না, খেলাধুলাতেও বুবুন দারুণ। স্কুলের অ্যানুয়েল স্পোর্টসে পাঁচ ছ’টা কাপ মেডেল পাবেই। তা ছাড়া ক্লাসের ফুটবল আর ক্রিকেট টীমের ক্যাপ্টেনও সে-ই।

    স্কুলের পড়া সে যেমন মন দিয়ে করে থাকে, অন্য নানা ধরনের বইও পড়ে। অ্যানিমাল ওয়ার্ল্ড মানে জন্তু-জানোয়ারদের সম্বন্ধে এমন সব খবর বুবুন জানে যা শুনলে বড়দেরও তাক লেগে যাবে। সোবার্স গাভাসকার লয়েড রিচার্ডস মারাদোনা প্লাতিনি পেলে থেকে শুরু করে কোনোর্স বা নাভ্রাতিলোভা সম্পর্কে তাকে যে কোন প্রশ্ন করলে টকাটক উত্তর পাওয়া যাবে। তাদের বাড়িতে ছোটদের অনেক সায়েন্স ম্যাগাজিন আসে, সেগুলো আগাগোড়া পড়ে ফেলে বুবুন। তবে সব চাইতে বেশি যা পড়ে তা হলো ডিটেকটিভ গল্প। নানা ধরনের গোয়েন্দা কাহিনী পড়ে পড়ে সে একেবারে ঝুনো হয়ে গেছে। মনে মনে নিজেকে ব্যোমকেশ ফেলুদা বা কিরীটী কিংবা শার্লক হোমসের সমান সমান ভাবে বুবুন।

    ওরা থাকে সল্ট লেকের ‘এ’ সেক্টরে। এখানে প্রচুর গাছপালা, রাস্তাগুলো চওড়া চওড়া আর পরিষ্কার। চারদিকে ছবির মতো সুন্দর সুন্দর বাড়ি। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি। লোকজন এখানেকম। সারাদিন পাখির ডাক শোনা যায়।

    বুবুনদের বাংলো ধরনের দোতলা বাড়িটা ওদের পাড়ার সব বাড়ির থেকে সুন্দর। সামনের দিকে চমৎকার ফুলের বাগান, পেছন দিকে অনেক ঝাউ আর ইউকালিপ্টাস গাছ।

    বুবুনের বাবা নাম-করা হার্টের ডাক্তার, মা একটা কলেজে ইংরেজি পড়ান।

    বুবুনের বাবা সকালের খাবার খেয়ে হাসপাতালে যান, সেখান থেকে নার্সিং হোমে, তারপর ধর্মতলা স্ট্রীটে তাঁর চেম্বারে। মা দশটায় কলেজে যান। বাবা বাড়ি ফেরেন রাত্তিরে, মা বিকেলে। মা বাবা বেরুবার আগেই বুবুন খুব সকালে স্কুলে চলে যায়। তার মর্নিং স্কুল। গরম কালে সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে এগারটা, শীতের সময় সাতটা থেকে বারোটা। ছুটির পর একটা ড্রাইভার তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। ওদের সবসুদ্ধ তিনখানা গাড়ি।

    দুপুরবেলাটা বুবুন বাড়িতে একেবারে একা। তার আর কোন ভাইবোন নেই। তবে কাজের লোক আছে পাঁচ ছ’জন। এরা ছাড়া আরো কয়েকজন আছে। দুটো বিরাট বিরাট বুলডগ, একটা বাঁদর, চারটে বেড়াল, দেয়ালজোড়া অ্যাকুয়েরিয়ামে লাল নীল মাছ এবং কয়েক ডজন মুনিয়া পাখি। তারের জাল দিয়ে ঘিরে তাদের জন্য ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা সুন্দর শিংওলা হরিণও তাদের ছিল, দু বছর আগে সেটা মরে গেছে।

    ফাইভে উঠবার পর বুবুনের ঝোঁক চাপল, ছবি আঁকা শিখবে। মা বি-ডি মার্কেটের কাছে যে ছবি আঁকার নতুন স্কুলটা খুলেছে, সেখানে তাকে ভর্তি করে দিলেন। স্কুলটার নাম ‘কিশলয়’। প্রতি রবিবার সকালে ওখানে ক্লাস হয়।

    ছবি আঁকার জন্য রং, তুলি, স্কেচ পেন আর গোছা গোছা পেন্সিল কিনে দিলেন মা।

    বুবুনের যখন যেটা মাথায় চাপে তাই নিয়ে মেতে থাকে। স্কুলের পাঁচ ঘণ্টা আর বাড়িতে পড়ার জন্য ঘণ্টা তিনেক বাদ দিয়ে বাকি সময়টা সে ছবি এঁকে যেতে লাগল।

    প্রথম প্রথম কাগজেই আঁকছিল সে, পরে তার নজর পড়ল ডিসটেম্পার-করা ধবধবে দেওয়ালগুলোর দিকে। একদিন দুপুরবেলা মা-বাবার ঘরের দেয়াল জুড়ে মনের সুখে ফুল লতাপাতা বেড়াল কুকুর পাখি ইত্যাদি এঁকে ফেলল। দেয়ালের নিচের দিকটায় তুলি চালাতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ওপর দিকটায় হাত যায়নি বলে টেবিলের মাথায় চেয়ার বসিয়ে তাতে চড়ে নিতে হয়েছে।

    দেয়ালে আঁকার আইডিয়াটা বুবুনের মাথায় এসেছে বাবার বন্ধু অনুপম কাকুর বাড়িতে গৃহপ্রবেশের নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে। অনুপম কাকু তাঁদের বসবার ঘরের দেয়ালে আর্টিস্টদের দিয়ে তাক-লাগানো সব ছবি আঁকিয়েছেন। জিজ্ঞেস করে বুবুন জেনে নিয়েছিল, দেয়ালের এই ছবিগুলোকে মুরাল বলে।

    বুবুন ভেবেছিল, তার মুরাল দেখে মা-বাবা খুব খুশি হবেন। বরং তার উল্টোটাই হলো। বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে মা দেয়ালের হাল দেখে খুবই বকাবকি করলেন। রাত্তিরে বাবা ফিরেও রীতিমত ধমক-ধামক দিলেন।

    ‘দেয়ালটার এভাবে সর্বনাশ করলে?’

    ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল বুবুনের। বলল, ‘বা রে, অনুপম কাকুর বাড়িতে মুরাল দেখে কত ভাল বললে, আমার বেলায় যত রাগ।’

    বাবা বললেন, ‘ঐ রকম ছবি আঁকতে শেখো, তখন সবাই ভাল বলবে। তার আগে দেয়ালের কাছে একদম যাবে না।’

    পরের দিনই বাবা রঙের মিস্তিরি ডাকিয়ে ঘষে ঘষে বুবুনের সব ছবি তুলিয়ে দেয়ালটা ফের আগের মতো ডিসটেম্পার করিয়ে নিলেন।

    ক’দিন বাদে দুপুরবেলা বুবুনের মাথায় হঠাৎ নতুন একটা আইডিয়া এল। অ্যানিমাল ওয়ার্ল্ডের পাতা খুলে অদ্ভুত অদ্ভুত জন্তুর ছবি বার করে বাড়ির বেড়ালগুলোকে ধরে রং টং দিয়ে অবিকল তাদের মতো সাজাতে লাগল। ফলে সাদা বেড়ালটা হয়ে গেল টকটকে লাল। ছাই রঙেরটা হলো সবুজ। কালচে রঙেরটা ক্যাটকেটে নীল। আর যেটা ঘোর কালো, তার গায়ে ইচ্ছেমতো হলদে দাগ টেনে দিল। শুধু তাই না, তুলো আর পাটের দড়ি দিয়ে কোনটার লেজ আরো দেড় ফুট লম্বা করে দিল। কোনটার মুখে এঁটে দিল লম্বা মুখোশ।

    বাড়ির পোষা পশুপাখিগুলো বুবুনের খুবই বাধ্য। তারা একটুও আপত্তি করল না। তাদের চোখমুখ দেখে মনে হলো, রংচং মেখে নতুনভাবে সাজতে পেরে তারা ভীষণ খুশি হয়েছে। বুবুনও খুব খুশি।

    বেড়ালগুলোর দিকে তাকিয়ে এখন আর চেনাই যায় না। মনে হয় আমাজন কি মিসিসিপি নদীর পাড়ের জঙ্গল থেকে উদ্ভট চেহারার সব জন্তু সল্ট লেকে বেড়াতে এসেছে।

    বেড়ালগুলোর চেহারা বদলে দিয়ে ভাল লাগছিল ঠিকই, তবে সবাইকে না দেখাতে পারলে পুরোপুরি মজা জমছে না। হঠাৎ বুবুন ঠিক করে ফেলল, বেড়ালদের নিয়ে রাস্তায় বেড়াতে যাবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সেগুলোর গলায় সরু চেন বেঁধে যখন সে নিচে নামিয়ে নিয়ে এল তখন গেটের দারোয়ান রামসুখ ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে হাতের তোলাতে খৈনি ডলছিল। আচমকা বুবুনের সঙ্গে অদ্ভুত ক’টা জন্তু দেখে, ভয় পেয়ে টুল থেকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কোনরকমে সামলে নিয়ে বলল, ‘এগুলো কী জানবর (জানোয়ার) খোঁখাবাবু?’

    বুবুন বলল, ‘আফ্রিকার ভোঁদড়।’

    ‘আগে তো দেখিনি।’

    ‘কাল রাত্তিরে বাবা নিয়ে এসেছেন।’

    কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না দারোয়ানের। সন্দেহের চোখে বেড়ালগুলোকে দেখতে দেখতে বলল, ‘হামি তো গেটে বসে ছিলাম। লেকেন আখে তো পড়ল না।’

    বুবুন বলল, ‘বাবা বড় বাক্সে করে এনেছেন। যাই, এদের হাওয়া খাইয়ে আনি।’ বলে গেটের বাইরে চলে গেল। দুপুরে রাস্তায় একটু হাঁটাহাঁটির জন্য মা-বাবার পারমিশান নেওয়া আছে।

    পেছন থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে দারোয়ান বলল, ‘বেশি দূরে যেও না, জলদি জলদি ফিরে এসো।’

    ‘আচ্ছা−’

    এই সময়টা রাস্তা একরকম ফাঁকাই থাকে। মোড়ের মাথায় একদিকে সাইকেল রিকশার স্ট্যান্ড, তার উল্টোদিকে একটা ব্যাঙ্ক। ওখানে অবশ্য বেশ লোকজন চোখে পড়ে। রিকশাওলারা এবং ব্যাঙ্কের লোকেরা সবাই বুবুনকে চেনে।

    রাস্তায় যে দু-চারজন রয়েছে, অবাক হয়ে তারা বুবুনের সঙ্গী চারটে অদ্ভুত জন্তুকে দেখতে লাগল।

    মোড়ের মাথায় আসতেই রিকশাওলা আর ব্যাঙ্কের লোকজনেরা খানিকক্ষণ হাঁ হয়ে রইল। তারপর বলল, ‘এমন জন্তু তো আগে কখনও দেখিনি। এদের কোথায় পেলে?’

    দারোয়ান রামসুখকে যা বলেছিল, এদেরও ঠিক তাই বলল বুবুন। অর্থাৎ জন্তুগুলো হলো আফ্রিকার ভোঁদর। বাবা এগুলো উগান্ডা থেকে আনিয়েছেন। আফ্রিকার ভোঁদড় সম্পর্কে ব্যাঙ্কের লোকজন এবং রিকশাওলাদের নানারকম কৌতূহল মিটিয়ে কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে এল বুবুন।

    বিকেলে মা এবং রাত্তিরে বাবা বাড়ি ফিরে কতকগুলো বিদঘুটে চেহারার জন্তুকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে চমকে উঠলেন। তারপর ভাল করে লক্ষ্য করতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। বুবুনকে ডাকিয়ে এনে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বেড়ালগুলোর এই অবস্থা করল কে? নিশ্চয়ই তুমি?’

    ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে বুবুন বলল, ‘ভাবলাম ওদের একটু সাজিয়ে দিই।’ একটু থেমে বলল, ‘ওদেরও সাজতে ইচ্ছে করে। মুখে তো বলতে পারে না, তাই−’

    ‘পশুদের মনস্তত্ত্ব জেনে ফেলেছ দেখছি।’ বাবা রেগে উঠতে গিয়ে হেসে ফেললেন, ‘তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।’

    বুবুন চুপ করে রইলো।

    বাবা আবার বললেন, ‘যত পারো বেড়াল-টেড়ালের গায়ে রং লাগিয়ে হাত পাকাও! তবে দেখো ওগুলো যেন মরে টরে না যায়।’

    এরপর বুবুনের চোখ পড়ল পাখিগুলোর ওপর। সেগুলোর গায়ে মনের সুখে রং মাখিয়ে, কারো মাথায় ফেভিকল দিয়ে অদ্ভুত ঝুঁটি জুড়ে, তুলো দিয়ে কারো লেজ বড করে ফেলতে লাগল সে। তারপর তাদের পায়ে সুতো বেঁধে দুপুরে রাস্তায় ঘুরিয়ে আনল। ব্যাঙ্কের লোকজনেরা বা রিকশাওলারা জিজ্ঞেস করলে বুবুন বলল, ‘এটা কঙ্গোর কোকিল’, ‘ওটা ব্রাজিলের শালিখ’, ‘সেটা সাহারা মরুভূমির চড়ুই−’

    পাখি বেড়াল এবং বাঁদরের পর আজ বুবুনের নজর পড়ল বুলডগ দুটোর ওপর। বাবা ওদের দু’জনের নাম দিয়েছিল−ডম্বল আর কম্বল।

    কুকুর দুটো শুধু কথা বলতে পারে না, নইলে ওদের হাবভাব সব মানুষের মতো। কেউ কিছু বললে বা চোখের ইশারা করলে ঠিক বুঝতে পারে।

    ডম্বল কম্বলের মেজাজ সাঙ্ঘাতিক। বাড়িতে নতুন অচেনা লোকের হুট করে ঢোকার উপায় নেই। বাঘের মতো তাড়া করে যাবে। কিন্তু বাড়ির লোকের কাছে, বিশেষ করে বুবুনের কাছে তারা একেবারে ‘শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট’। বুবুন সাতটা চড় মারুক, কান মুলে দিক, চিমটি কাটুক-ওরা গলা দিয়ে একটু আওয়াজও বার করবে না; শুধু বেঁটে বেঁটে লেজ দুটো ঘন ঘন নাড়তে থাকবে।

    এ ক’দিন যখন বুবুন পাখি আর বেড়ালদের গায়ে রং টং মাখাচ্ছিল তখন ডম্বল কম্বল কাছে এসে বসে থাকত আর সমানে কুই কুই করে শব্দ করত। ওরা বলতে চাইত, ‘আমাদেরও সাজিয়ে দাও।’

    বুবুন বলত, ‘হবে হবে। একটু সবুর কর। তোদের এমন করে সাজাব, যে দেখবে তার মুণ্ডু ঘুরে যাবে!’

    অনেকদিন আশায় আশায় থাকার পর আজ ডম্বল কম্বলের সাজার পালা। সকালে স্কুলে যাবার সময়ই বুবুন সে কথা ওদের জানিয়ে গেছে। ছুটির পর বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি স্নান-খাওয়া সেরে ডম্বল কম্বলকে নিয়ে নিজের পড়ার ঘরে চলে এল সে।

    এই ঘরটায় শুধু তার বইপত্তরই থাকে না, রং, তুলি, স্কেচ পেন, ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, উইকেট, প্যাড, খেলার বুট, কেডস, সাইকেল− এমনি হাজার রকমের জিনিসও থাকে।

    ডম্বল কম্বলের কান ধরে নাড়তে নাড়তে বুবুন বলল, ‘তোদের কী সাজাই বল তো?’

    ডম্বল কম্বল কুঁই কুঁই করে জানালো, ‘তোমার যা ইচ্ছে−’

    অনেকক্ষণ চোখ-টোখ কুঁচকে, ঠোঁট টিপে কি ভাবল বুবুন। তারপর বইয়ের র‍্যাক থেকে ‘অ্যানিম্যাল ওয়ার্ল্ড’টা নামিয়ে এনে পাতা ওলটাতে ওলটাতে একটা ছবি দেখে থেমে গেল। ছবিটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।

    বাঘের ছবি দেখতে দেখতে বুবুনের চোখ ঝিকমিকিয়ে উঠল। মাথাটা একটু কাত করে ডম্বল কম্বলের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসে হেসে বলল, ‘তোদের আজ রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাজাব।’

    আধ ঘণ্টার ভেতর ডম্বল কম্বলের চেহারা একেবারে বদলে গেল। সারা গায়ে হলদে রঙের ওপর কালো কালো ডোরা আঁকা হয়েছে। মোটা মোটা পাটের দড়ি জোড়ার ফলে বেঁটে লেজ দুটো চার হাত লম্বা হয়ে গেছে।

    এপাশ থেকে, ওপাশ থেকে এবং পেছন থেকে তাদের দেখতে দেখতে বুবুন বলল, ‘সব ঠিক হয়েছে কিন্তু তোদের মুখ দুটো বিচ্ছিরি। ও দুটোকে কী করে বাঘের মুখ বানাই বল তো−’ বলতে বলতে হঠাৎ কিছু মনে পড়তে খুশিতে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো, ‘দাঁড়া দাঁড়া, তার ব্যবস্থা করে ফেলছি।’ বলেই ঘরের কোণে যে কাচের আলমারিটা রয়েছে সেদিকে ছুটে গেল।

    ক’দিন আগে মা বুবুনের জন্য ক’টা মুখোশ কিনে এনেছিলেন। তার মধ্যে তিনটে বাঘের মুখোশও রয়েছে। সেগুলো আলমারিতে রেখে দিয়েছিল সে।

    দুটো মুখোশ বার করে এনে ডম্বল কম্বলের মুখে পরিয়ে গলায় সুতো বেঁধে দিল বুবুন। এইবার ওদের ঠিক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো দেখাচ্ছে। সাজগোজ শেষ হয়েছে। বুবুন বলল, ‘চল, তোদের একটু ঘুরিয়ে আনি।’

    নিচে গেটের কাছে আসতে দারোয়ান একটুক্ষণ কুকুর দুটোকে লক্ষ্য করে হেসে ফেলল। মাথা নেড়ে নেড়ে বলল, ‘ওরা জরুর হামাদের ডম্বলিয়া কম্বলিয়া। খোঁখাবাবু ওদের বাঘ বানিয়েছে।’

    প্রথম দিন দারোয়ানটা চমকে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু খোঁখাবাবু মানে বুবুন যে বাড়ির পশুপাখিগুলোর গায়ে রং-টং করে চেহারা বদলে দিচ্ছে, তার এই খেলাটা পরে ধরে ফেলেছে।

    একটু হেসে ভম্বল কম্বলকে নিয়ে বাইরের রাস্তায় চলে গেল বুবুন।

    অন্যদিন রাস্তার লোকেরা বুবুনের সঙ্গে অদ্ভুত অদ্ভুত চেহারার জন্তু এবং পাখি-টাখি দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থেকেছে। কিন্তু সল্ট লেকের রাস্তায় হঠাৎ জোড়া বাঘ দেখে তারা পড়ি মরি করে ছুটতে লাগল। যারা উল্টোদিক থেকে আসছিল, থমকে দাঁড়িয়েই পেছন ফিরে দৌড় লাগাল।

    দারুণ মজা লাগছিল বুবুনের। ডম্বল কম্বলের পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘তোদের দেখে ভয় পেয়ে লোকগুলো কেমন ছুটছে, দেখছিস!’

    কুঁই কুঁই করে ডম্বল কম্বল জানালো−দেখেছে। লোকজনের ছোটাছুটিতে তাদেরও খুব মজা লাগছে।

    হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের মাথায় এসে বেশ অবাকই হলো বুবুন। বাঁ দিকের ফুটপাথ ঘেঁষে অন্যদিন গাদা গাদা সাইকেল রিকশা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ একটা রিকশাও দেখা যাচ্ছে না। চারদিক ফাঁকা আর কেমন যেন থমথমে।

    এবার বুবুন ওধারে তিনতলা বড় বাড়িটার দিকে তাকাল। ওটার নিচের তলায় ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কে এই সময়টা বেশ ভিড় থাকে। আজ লোকজন তেমন দেখা যাচ্ছে না।

    হঠাৎ বুবুনের চোখে পড়ল, ব্যাঙ্কের সামনে একটা নীল রঙের মোটর। সেটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা লোক। তার পরনে জীনস, পায়ে কেডস, চোখে কালো গগলস। লোকটার এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে রিভলবার। সে ছাড়া আরো একজন লোক ব্যাঙ্কের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পোশাকও অনেকটা এক ধরনের, তবে চোখে গগলস নেই। তার হাতেও রিভলবার।

    দু’জনেরই ভাবভঙ্গি যেন কেমন। চনমন করে তারা চারদিকে তাকাচ্ছে।

    কয়েক শো ডিটেকটিভ গল্প মাথার ভেতর গিসগিস করছে বুবুনের। তা ছাড়া খবরের কাগজে প্রায় রোজই একটা না একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতির খবর বেরোয়। সব মিলিয়ে বুবুনের মাথার ভেতর দ্রুত কমপিউটারের মতো কাজ চলতে লাগল। তার মনে হলো, এই লোকগুলো ভাল না; নিশ্চয়ই ব্যাঙ্কে ডাকাতি করতে এসেছে।

    বেশ ভয় পেয়ে গেল বুবুন। কী করবে যখন সে বুঝে উঠতে পারছে না সেই সময় নীল গাড়ির গায়ে হেলান-দেওয়া লোকটা ডম্বল কম্বলকে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে তার চুল খাড়া হয়ে উঠল; চোখ দুটো একেবারে গোল হয়ে গেল। ‘বাবা রে, গেছি রে−’ বলে চিৎকার করেই চোঁ চাঁ দৌড়ে ডান দিকের রাস্তা দিয়ে উধাও হয়ে

    গেল। হাত থেকে রিভলবারটা কখন যে ছিটকে গাড়িটার কাছে পড়ে গেছে, তার খেয়ালই নেই।

    গগলস-পরা লোকটার চিৎকারে দরজার কাছের লোকটা এধারে তাকিয়েই চমকে উঠল। সে-ও ডম্বল কম্বলকে দেখতে পেয়েছে। ‘মরে গেলাম, মরে গেলাম−’ করে চেঁচাতে চেঁচাতে রিভলবার টিভলবার ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়তে লাগল।

    এতক্ষণে ভয়টা অনেকখানি কেটে গেছে বুবুনের। ডম্বলের পিঠে আঙ্গুলের খোঁচা দিয়ে বলল, ‘ধর ওকে, ধর−’

    বলামাত্র গর্জন করতে করতে বন্ধুকের গুলির মতো ডাকাতটার পেছনে ধাওয়া করে গেল ডম্বল। কম্বলকে নিয়ে সাইকেল রিকশার স্ট্যান্ডটার কাছে দাঁড়িয়ে রইল বুবুন।

    লোকটা সোজাসুজি সামনের রাস্তায় প্রাণপণে ছুটছে কিন্তু ডম্বলের সঙ্গে পারবে কেন? ডম্বল যখন তাকে প্রায় ধরে ফেলেছে, সেই সময় লাফ দিয়ে একটা ল্যাম্পপোস্ট বেয়ে তর তর করে ওপরে উঠে গেল।

    বুবুন দূর থেকে চেঁচিয়ে বলল, ‘ডম্বল তুই ওখানে বসে থাক। ব্যাটা নামলেই ঘাড় মটকে দিবি।’

    ডম্বল ল্যাম্প-পোস্টের তলায় বসে ডাকাতটাকে পাহারা দিতে লাগল।

    ঠিক এই সময় ব্যাঙ্কের ভেতর থেকে আরো তিন ডাকাত বেরিয়ে এল। একজনের কাঁধে বিরাট একটা চটের থলে। বোঝাই যায় খলেটা টাকায় বোঝাই। তার দু’পাশের দু’জনের হাতে রিভলবার। বোঝা যায়, এরা তিনজনও ব্যাঙ্ক ডাকাত। টাকা লুট করে বেরিয়ে এসেছে।

    ডানদিকের লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে এধারে ওধারে তাকিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডাকল, ‘এই ছোনে, এই আজিজ−’ কাউকে দেখতে না পেয়ে তার মুখ রাগে কুঁচকে গেল।

    বুবুন বুঝতে পারছে, বাইরে যারা রিভলবার হাতে পাহারা দিচ্ছিল, এই তিনজন তাদের খুঁজছে।

    বাঁ দিকের লোকটা বলল, ‘জাহান্নামে যাক ওরা। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে বিপদে পড়তে হবে। চল−চল−’

    ওরা যখন নীল মোটরটার দিকে লম্বা পা ফেলে এগিয়ে আসছে সেই সময় ডান পাশের লোকটা কম্বলকে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে ‘উরি বাবা’ বলে দৌড়ে যেই গাড়ির ভেতর ঢুকতে যাবে, বুবুন বলল, ‘কম্বল, ওদের গাড়িতে ঢুকতে দিবি না। গো-কুইক−’

    বিদ্যুৎগতিতে কম্বল রাস্তা পেরিয়ে গেল!

    তিন ডাকাতের গাড়িতে করে পালানো সম্ভব হলো না। ‘মেরে ফেলল, বাঁচাও বাঁচাও−’ বলে চিৎকার করতে করতে তারা আগের দু’জনের মতো ছুটতে লাগল। তাদের পেছনে কম্বল আর বুবুনও ছুটছে।

    একটা ডাকাত মাইল খানেক দৌড়বার পর হুড়মুড় করে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। পড়েই অজ্ঞান। বাকি দুটো প্রাণের ভয়ে রাস্তার ধারের একটা বিরাট গাছে উঠে পড়ল। কোথায় পড়ে রইল তাদের রিভলবার আর টাকার বস্তা! গাছটার তলায় কম্বল পাহারা দিতে লাগল। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল বুবুন।

    রাস্তায় কেউ নেই। যারা ছিল, তিনটে লোকের পেছনে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে তাড়া করতে দেখে পলকে উধাও হয়ে গেছে। রাস্তায় না থাকলেও দুধারের সব বাড়ির ছাদে এবং জানলায় অনেক মুখ দেখা যাচ্ছে। তারা সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে, ‘পালিয়ে যাও খোকা, পালিয়ে যাও−’ বুবুনের জন্য ভয়ে আতঙ্কে তাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।

    এ জায়গাটা বুবুনদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এখানে তাকে কেউ চেনে না। গাছের মাথার ঐ লোক দুটো আর কম্বলের ব্যাপার তারা কিছুই জানে না। বুবুন চিৎকার করে বলল, ‘আপনারা সবাই বেরিয়ে আসুন। কোন ভয় নেই। গাছে যারা উঠেছে তারা খুবই খারাপ লোক। ওদের পুলিশে দিতে হবে।’

    বুবুন ভরসা দেওয়া সত্ত্বেও কেউ বাইরে এল না। বরং বার বার তাকে পালাতে বলল।

    বুবুন বলল, ‘তা হলে এক কাজ করুন, থানায় ফোন করে দিন। এক্ষুণি যেন পুলিশ চলে আসে।’

    কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল একটা বিরাট কালো ভ্যান বোঝাই হয়ে পুলিশ এসে পড়ল। যে ফোন করেছিল সে হয়ত বাঘের কথা জানিয়েছে। ভ্যানের পুলিশরা বন্দুক তুলে কম্বলের দিকে তাক করল। এমন ভয়ঙ্কর জন্তুকে বাইরে ছেড়ে রাখা যায় না।

    কম্বলকে ওরা হয়ত মেরেই ফেলত, তার আগেই চিৎকার করে উঠল বুবুন, ‘প্লীজ ওকে মারবেন না, মারবেন না। ও বাঘ নয়−’

    ভ্যানটার সামনের সীটে ড্রাইভারের পাশে একজন পুলিশ অফিসার বসেছিলেন। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘বাঘ নয় তো কী?’

    ‘আমাদের কুকুর কম্বল−’

    সন্দেহের চোখে কম্বলকে দেখতে লাগলেন পুলিশ অফিসার।

    বুবুন বলল, ‘বিশ্বাস না হয়, নেমে আসুন। আমি আপনাকে সব দেখাচ্ছি।’

    অফিসার ভাবলেন, একটা ছোট ছেলে যখন বাঘটাকে ভয় পাচ্ছে না তখন নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার আছে। আস্তে আস্তে তিনি ভ্যান থেকে নামলেন। বুবুন তাকে নিয়ে কম্বলের কাছে চলে এল। একটানে তার মুখোশ খুলে দিতেই বুলডগের মুখ বেরিয়ে পড়ল। বাড়তি লেজটাও টেনে খুলে ফেলল বুবুন। তবে কম্বলের গায়ে হলদে রঙের ওপর কালো কালো ডোরাগুলো থেকেই গেল।

    পুলিশ অফিসার ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, বললেন, ‘এ কি! বুলডগটাকে বাঘ সাজালে কে?’

    বুবুন বলল, ‘আমি।’ সে আরো জানালো তাদের বাড়ির পোষা পশুপাখিগুলোর গায়ে রং-টং করে তাদের চেহারা বদলে দেয় সে।

    পুলিশ অফিসার এবার খুব রেগে গেলেন, ‘এভাবে বাঘ সাজিয়ে তুমি লোকজনকে ভয় দেখাচ্ছ! এক্ষুণি থানায় নিয়ে তোমার বাঁদরামি ছুটিয়ে দিচ্ছি। ওঠ ভ্যানে−’

    বুবুন বলল, ‘আমাকে থানায় নেবার আগে ওদের ধরুন−’ বলে গাছের মাথায় সেই লোকদুটোকে দেখিয়ে দিল।

    ‘ওরা কারা?’

    ‘ব্যাঙ্ক ডাকাত।’

    অফিসার খানিকক্ষণ হাঁ হয়ে রইলেন। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। একসময় বললেন, ‘এর মানে কী? কোন ব্যাঙ্কে ওর ডাকাতি করেছে? গাছে উঠল কি করে?’

    খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত ঘটনা বলে গেল বুবুন।

    এদিকে পুলিশের দলটা ভ্যান থেকে নেমে এসেছিল। অফিসার তাদের বললেন, ‘যাও, চটপট গাছে উঠে দুই বদমাশকে ধরে আনো।’

    পাঁচ ছ’টা পুলিশ তক্ষুণি গাছের মাথা থেকে দুই ডাকাতকে নামিয়ে আনলো। তাদের হাতে হ্যাণ্ড-কাফ লাগিয়ে তক্ষুণি ভ্যানে পুরে ফেলা হলো।

    বুবুন বলল, ‘আরো দুটো ডাকাত আছে।’

    দারুণ ব্যস্তভাবে পুলিশ অফিসার বললেন, ‘কোথায়, কোথায়?’

    ‘আসুন আমার সঙ্গে।’

    রাস্তায় যে ঘাড় গুঁজে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, এবার তাকে তুলে ভ্যানে তোলা হলো। তারপর বুবুন সবাইকে নিয়ে এল সেই ল্যাম্প-পোস্টটার তলায় যেটার মাথায় একটা ডাকাত চড়ে বসে আছে আর নিচে পাহারা দিচ্ছে ডম্বল। তাকেও নামানো হলো।

    রাস্তায় ডাকাতদের রিভলবারগুলো এবং টাকার থলেটাও পাওয়া গেল।

    বুবুন বলল, ‘পাঁচটা ডাকাত ছিল। একটা পালিয়ে গেছে।’

    অফিসার বললেন, ‘কোন চিন্তা নেই। চারটে যখন ধরা পড়েছে তখন ওটাকেও ঠিক ধরে ফেলবো। এখন যে ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয়েছে সেখানে নিয়ে চল।’

    বুবুন তাদের পাড়ার সেই ব্যাঙ্কটায় পুলিশ অফিসারদের নিয়ে এল।

    ডাকাতরা ব্যাঙ্কের লোকজনকে দড়ি বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে একটা ঘরে ঢুকিয়ে, বাইরে থেকে শেকল তুলে দিয়েছিল। পুলিশ তাদের বাঁধন-টাধন খুলে মুক্ত করল। তারপর কিভাবে কখন ব্যাঙ্কে ডাকাতিটা হলো, এসব খবর টুকে নিয়ে, ক’জন পুলিশকে ব্যাঙ্কের সামনে পাহারায় রেখে বাকি পুলিশদের নিয়ে ভ্যানে উঠলেন। বুবুন এবং ডম্বল কম্বলকেও সঙ্গে নিলেন।

    থানার দিকে যেতে যেতে বুবুনের কাঁধে একটা হাত রেখে পুলিশ অফিসার বললেন, ‘ব্রেভো বয়, তোমার মতো বাহাদুর ছেলে আর দেখিনি। তুমি আর তোমার দুই রয়াল বেঙ্গল যা কাণ্ড করলে।’ বলতে বলতে হঠাৎ কী মনে পড়ে গেল, ‘আরে তোমার নামটাই তো জানা হয়নি।’

    বুবুন নাম বলল।

    ‘তোমার বাবার নাম?’

    ‘ডাক্তার শরদিন্দু সেন−’

    ‘তুমি ডাক্তার সেনের ছেলে! ঐ ব্যাঙ্কটার কাছেই তোমাদের বাড়ি−তাই না? তোমার মা তো প্রফেসর।’

    দেখা গেল, বুবুনের মা-বাবাকে অফিসার চেনেন। বুবুন মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ।’

    থানায় এসেই অফিসার বুবুনের মা-বাবাকে ফোন করলেন। এক ঘণ্টার মধ্যে দু’জনে চলে এলেন। তাঁদের চোখেমুখে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা। বুবুন কী করে বসেছে কে জানে। তারপর পুলিশ অফিসারের কাছে পুরো ঘটনা শুনে তাঁদের ভয় কাটল কিন্তু দু’জনের কেউ খুশি হলেন না।

    বাবা বেশ রাগের গলায় বললেন, ‘ছবি আঁকতে শিখে এই কীর্তি করে বেড়াচ্ছ! যথেষ্ট হয়েছে; এখন এসব বন্ধ কর। আর তোমাকে আঁকার স্কুলে যেতে হবে না।’

    বাবার ধমক-টমক খেয়ে চোখে জল এসে গেল বুবুনের। মুখ নীচু করে সে বসে রইল।

    পুলিশ অফিসার বুবুনের পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে ব্যস্তভাবে বাবাকে বললেন, ‘ওকে বকৰেন না ডাক্তার সেন। ভাগ্যিস বুবুন ছবি আঁকতে শিখেছিল, তাই না ঐ বজ্জাত ডাকাতগুলো ধরা পড়ল।’

    ‘কিন্তু কত বড় বিপদের ঝুঁকি ছিল বলুন তো। ডাকাতগুলো যদি গুলি-টুলি ছুঁড়ত!’

    ‘বিপদের ঝুঁকি না থাকলে কি বড় কাজ করা যায়!’

    আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বুবুন এবং ডম্বল কম্বলকে নিয়ে মা-বাবা বাড়ি ফিরে গেলেন।

    দিন চারেক পর পুলিশ অফিসার বুবুনদের বাড়ি এসে একটা দারুণ সুখবর দিয়ে গেলেন। অদ্ভুত উপায়ে ডাকাত ধরে দেবার জন্য পুলিশ থেকে বুবুনকে সোনার মেডেল দেওয়া হবে আর ব্যাঙ্ক দেবে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার।

    ***

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআকাশের নিচে মানুষ – প্রফুল্ল রায়
    Next Article লৌকিক এবং অলৌকিক গল্প – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }