পঞ্চম প্রবন্ধ
কোলদের নাচ নিয়ে কিছু বলা হয়েছে। এবার তাদের বিয়ের কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কোলদের অনেক শাখা আছে। ঠিক মনে নেই, তবে মনে হয় উরাঙ, মুণ্ডা, খেরওয়ার আর দোসাদ—এই চারটি জাতি তাদের মধ্যে প্রধান। এদের এক জাতির বিয়েতে আমি বরযাত্রী হয়ে কিছুদূর গিয়েছিলাম। বরকর্তা আমার পালকি নিয়ে গেল, কিন্তু আমাকে নেমন্তন্ন করল না। ভাবলাম, না করুক, আমি ঠিক যাব। সেই মতো বিকেলে পথে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি, পালকিতে বর আসছে। সঙ্গে দশ-বারোজন পুরুষ আর পাঁচ-ছয়জন যুবতী। যুবতীরাও বরযাত্রী। পুরুষরা আমাকে কেউ ডাকল না। মেয়েদের লজ্জা আছে, তারা হেসে আমাকে ডাকল। আমিও হেসে তাদের সঙ্গে চললাম। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলাম না। তারা যেভাবে বুক ফুলিয়ে, মুখ তুলে, হাওয়া ঠেলে দম্ভের সঙ্গে হাঁটছিল, আমি দুর্বল বাঙালি, আমার সেই দম্ভ, সেই শক্তি কোথায়? তাই কিছুদূর গিয়ে পিছিয়ে পড়লাম। তারা তা খেয়াল করল না। হয়তো দেখেও দেখল না। আমি বেঁচে গেলাম। তখন পথের ধারে একটা পাথরের স্তূপে বসে ঘাম মুছতে লাগলাম আর রাগে পাথরের মতো মেয়েগুলোকে গালি দিতে লাগলাম। তাদের সেপাই বললাম, সিদ্ধেশ্বরীর পাল বললাম, আরও কত কী বললাম। আরেকবার অনেক আগে এমন গালি দিয়েছিলাম। একদিন দুপুরে টিটাগড়ের বাগানে “লসিংটন লজ” থেকে হাতির মতো পা ফেলে আসছিলাম। তখন রেলওয়ে ছিল না, তাই এখনকার মতো দ্রুত হাঁটা বাঙালিদের মধ্যে তেমন ফ্যাশন হয়নি। আসতে আসতে পিছনে একটা হালকা টকটক শব্দ শুনলাম। ফিরে দেখি, গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলের এক সদস্যের মেয়ে একা আসছে। আমি তখন বালক, ষোলো বছরের বেশি বয়স নয়। তাই বয়সের মতো ঠিক করলাম, মেয়ের কাছে পিছিয়ে পড়া যাবে না। তাই যতটা পারি জোরে হাঁটতে লাগলাম। হয়তো যুবতীও তা বুঝল। আরেকটু বয়স হলে তার মন এদিকে যেত না। সে নিজেও অল্পবয়সি, আমার থেকে সামান্য বড়। তাই এই সুযোগে বাইচ খেলার মজা তার মনে এসেছিল। তাই সে একটু জোরে হাঁটতে লাগল। দেখতে দেখতে পশ্চিমের মেঘের মতো আমাকে ছাড়িয়ে গেল। যেন সঙ্গে একটু “দুয়ো” দিয়ে গেল—অবশ্য মনে মনে। তার ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ছিল, তাই বলছি। আমি লজ্জায় কাছের বটগাছের তলায় বসে সুন্দরীদের ওপর রাগ করে নানা কথা বলতে লাগলাম। যারা এত জোরে হাঁটে, তারা আবার কোমলাঙ্গী? খোশামোদিরা বলে, তাদের চুলের গোছা সরাতে হাওয়া ধীরে বয়। কলাগাছে ঝড়, আর শিমুল গাছে সমীর?
সে সব রাগের কথা এখন থাক। যে হারে, সে রাগে। কোলদের কথা হচ্ছিল। তাদের সব জাতির বিয়ে একরকম নয়। এক জাতি কোল আছে, উরাঙ কি অন্য কিছু, মনে নেই। তাদের বিয়ের রীতি খুব পুরনো। তাদের প্রত্যেক গ্রামের শেষে একটা করে বড় ঘর থাকে। সন্ধ্যার পর গ্রামের সব কুমারী একে একে সেই ঘরে এসে হাজির হয়। সেই ঘর তাদের ডিপো। বিয়ের বয়স হলে তারা আর বাবার বাড়িতে রাত কাটাতে পায় না। সবাই এসে শুয়ে পড়লে গ্রামের অবিবাহিত যুবকরা একে একে সেই ঘরের কাছে এসে রসিকতা শুরু করে। কেউ গান গায়, কেউ নাচে, কেউ রহস্য করে। যে কুমারীর বিয়ের সময় হয়নি, সে নির্দ্বিধায় ঘুমায়। কিন্তু যাদের সময় এসেছে, তারা বসন্তের পাখির মতো একদৃষ্টে সেই নাচ দেখে, একমনে গান শোনে। হয়তো থাকতে না পেরে শেষে ঠাট্টার জবাব দেয়, কেউ কেউ গালিও দেয়। গালি আর ঠাট্টার তফাত কম, বিশেষ করে যুবতীর মুখ থেকে বেরোলে যুবকের কানে দুটোই অমৃত। কুমারীরা গালি শুরু করলে যুবকরা আনন্দে মেতে ওঠে।
এভাবে প্রতি রাতে কুমার-কুমারীর কথার খেলা চলে। শেষে তাদের মধ্যে প্রণয় জন্মায়। প্রণয় কথাটা ঠিক নয়। কোলরা প্রেম-ভালোবাসার বড় সম্পর্ক রাখে না। মনোনীত কথাটা ঠিক। নাচ, হাসি, ঠাট্টার পর পরস্পর মনোনীত হলে সঙ্গী-সঙ্গিনীরা তা কানাঘুষো করে। ধীরে ধীরে গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর শুনে দুপক্ষের পরিবার সাবধান হয়। সাবধানতা অন্য কিছু নয়। কুমারীর আত্মীয়-বন্ধুরা বড় বড় বাঁশ কাটে, তির-ধনুক জোগাড় করে, অস্ত্রে শান দেয়। আর অবিরাম কুমারের আত্মীয়-বন্ধুদের গালি দেয়। চিৎকার আর হুঙ্কারের সীমা থাকে না। এদিকে দুপক্ষই গোপনে বিয়ের আয়োজন শুরু করে।
শেষে একদিন বিকেলে কুমারী হাসিমুখে সাজতে বসে। সবাই বুঝে চারপাশে দাঁড়ায়। হয়তো ছোট বোন বন থেকে নতুন ফুল এনে মাথায় পরিয়ে দেয়। সাজসজ্জা শেষ হলে কুমারী উঠে গাগরি নিয়ে একা জল আনতে যায়। অন্যদিনের মতো নয়, এদিন ধীরে ধীরে যায়, তবু মাথার গাগরি টলে। বনের ধারে জল, যেন কত দূর! কুমারী যাচ্ছে আর একদৃষ্টে বনের দিকে তাকাচ্ছে। তাকাতে তাকাতে বনের দুই-একটা ডাল নড়ে উঠল। তারপর এক নবযুবক, সখা সুবলের মতো লাফাতে লাফাতে বন থেকে বেরিয়ে এল। সঙ্গে হয়তো দুটো-চারটে ভ্রমরও ছুটে এল। কোল-কুমারীর মাথা থেকে গাগরি পড়ে গেল। কুমারীকে বুকে নিয়ে যুবক ছুটল। কুমারী এই অবস্থায় চিৎকার করতে বাধ্য, চিৎকারও করতে লাগল। হাত-পা ছুড়ল। এমনকি যুবককে চড়-চাপড়ও মারল। নইলে ভালো দেখায় না! কুমারীর চিৎকারে তার আত্মীয়রা “মার মার” বলে ছুটে এল। যুবকের আত্মীয়রাও কাছেই লুকিয়ে ছিল, তারাও বেরিয়ে পথ আটকাল। শেষে যুদ্ধ শুরু হল। যুদ্ধ রুক্মিণীহরণের নাটকের মতো, সবার তির আকাশের দিকে। তবে শুনেছি, দু-একবার নাকি সত্যি সত্যি মাথা ফাটাফাটিও হয়ে গেছে। যাই হোক, যুদ্ধের পর আপস হয়ে যায়। তারপর দুপক্ষ একসঙ্গে খেতে বসে।
এভাবে কন্যা হরণ করাই তাদের বিয়ে। আর কোনো মন্ত্র-তন্ত্র নেই। আমাদের শাস্ত্রে এই বিয়েকে আসুরিক বিয়ে বলে। একসময় পৃথিবীর সব জায়গায় এই বিয়ে প্রচলিত ছিল। আমাদের দেশে স্ত্রী-আচারের সময় বরের পিঠে বাউটি-বেঁধে নানা ওজনের করকমলের স্পর্শ হয়, তাও এই মারপিটের রীতির অবশেষ। হিন্দুস্থানে বর-কনের মাসি-পিসিরা একজোট হয়ে নানা ভঙ্গিতে, নানা ছন্দে, মেছুয়াবাজারের ভাষায় যে গালি দেওয়ার রীতি আছে, তাও এই মারপিটের নতুন রূপ। ইংরেজদের বর-কনেরা গির্জা থেকে গাড়িতে ওঠার সময় ফুলের বৃষ্টির মতো যে জুতোর বৃষ্টি হয়, তাও এই পুরনো রীতির অংশ।
কোলদের উৎসবের মধ্যে বিয়ে সবচেয়ে বড়। এজন্য খরচও অনেক। আট টাকা, দশ টাকা, কখনও কখনও পনেরো টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বাঙালির কাছে এটা তুচ্ছ, কিন্তু বন্যদের কাছে বড় বেশি। এত টাকা তারা কোথায় পাবে? তাদের এক পয়সা জমা নেই, উপার্জনও নেই। তাই খরচ চালাতে ঋণ করতে হয়। দুই-চার গ্রাম পর একজন করে হিন্দুস্থানি মহাজন থাকে, তারাই ঋণ দেয়। এই হিন্দুস্থানিরা মহাজন না মহাপিশাচ, তা নিয়ে আমার বড় সন্দেহ। তাদের কাছে একবার ঋণ করলে আর ছাড়া পাওয়া যায় না। যে একবার পাঁচ টাকা ঋণ করল, সে সেই দিন থেকে নিজের বাড়িতে কিছু নিয়ে যেতে পারবে না। যা উপার্জন করবে, তা মহাজনকে দিতে হবে। খাতকের জমিতে দুই মণ তুলো বা চার মণ যব হল, মহাজনের বাড়িতে তা নিয়ে যেতে হবে। মহাজন তা ওজন করবে, পরীক্ষা করবে, নানা কিছু করবে। শেষে হিসেব করে বলবে, মূল পাঁচ টাকার মধ্যে এই তুলোয় মাত্র এক টাকা শোধ হল, বাকি চার টাকা রইল। খাতক “আজ্ঞে” বলে চলে যায়। কিন্তু তার পরিবার খায় কী? চাষের ফসল মহাজন সব নিয়ে নিল। খাতক হিসেব জানে না, এক থেকে দশ গুনতে পারে না। তার ওপর মহাজনের ওপর তার পুরো ভরসা। মহাজন অন্যায় করবে, এটা তার বুদ্ধিতে আসে না। তাই মহাজনের জালে বাঁধা পড়ল। তারপর পরিবার খেতে পায় না। আবার মহাজনের কাছে খোরাকির জন্য ঋণ করতে হয়। ফলে খাতক জন্মের মতো মহাজনের কাছে বিক্রি হয়ে গেল। যা উপার্জন করবে, তা মহাজনের। মহাজন তাকে শুধু সামান্য খোরাকি দেবে। এটাই তার এ জন্মের বন্দোবস্ত।
কেউ কেউ এই সুযোগে “সামকনামা” লিখিয়ে দেয়। সামকনামা মানে দাসখত। যে এটা লিখিয়ে দিল, সে পুরোপুরি গোলাম হল। মহাজন গোলামকে শুধু খাবার দেয়। গোলাম বিনা পয়সায় তার সব কাজ করে—চাষ করে, মোট বয়, সব জায়গায় সঙ্গে যায়। নিজের সংসারের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। সংসারও খাবারের অভাবে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
কোলদের এই দুর্দশা খুব সাধারণ। তাদের একটাই উপায়—পালানো। অনেকে পালিয়ে রক্ষা পায়। যে পালাল না, সে জন্মের মতো মহাজনের কাছে বিক্রি থাকল।
ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে শুধু কোলদের জীবন বৃথা হয়, তা নয়। আমাদের বাঙালিদের মধ্যেও অনেকের দুর্দশা হয় ছেলের বিয়ে বা বাবা-মায়ের শ্রাদ্ধের জন্য। সবাই মনে মনে জানে, আমি বড়লোক, “ধুমধাম” না করলে লোকে আমার নিন্দে করবে। তাই ঋণ করে সেই বড়লোকি বজায় রাখে। তারপর সবকিছু বেচেও সেই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়। প্রায় দেখা যায়, “আমি ধনী” বলে প্রথমে অভিমান জন্মালে শেষে দারিদ্র্যে জীবন শেষ করতে হয়।
কোলরা সবাই বিয়ে করে। বাংলা ফসলের দেশ, এখানে অল্পেও চলে যায়। তাই বাংলায় বিয়ে এত সাধারণ। কিন্তু পালামৌতে খাবারের একেবারে অভাব। সেখানে বিয়ে এত সাধারণ কেন, সমাজতত্ত্ববিদরা তা নিয়ে কী বলেন, জানি না। তবে মনে হয়, হিন্দুস্থানি মহাজনরা সেখানে বসত করার আগে কোলদের এত খাবারের অভাব ছিল না। তাই বিয়ে সাধারণ হয়েছিল। এখন মহাজনরা তাদের সবকিছু নিয়ে নেয়। তাদের খাবারের অভাব হয়েছে। তাই বিয়ে আর আগের মতো সাধারণ থাকবে না বলে মনে হয়।
কোলদের সমাজ এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে মহাজনের দরকার নেই। যদি হিন্দুস্থানি সভ্যতা সেখানে না ঢুকত, তাহলে এখনও কোলদের মধ্যে ঋণের প্রথা শুরু হত না। ঋণের সময় আসেনি। ঋণ উন্নত সমাজের সৃষ্টি। কোলদের মধ্যে সেই উন্নতির এখনও দেরি আছে। সমাজে স্বাভাবিকভাবে যে অবস্থা আসেনি, কৃত্রিমভাবে সেই অবস্থা তৈরি করতে গেলে, বা সভ্য দেশের নিয়ম অসময়ে অসভ্য দেশে ঢোকাতে গেলে, ফল ভালো হয় না। আমাদের বাংলায় এর অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। একসময় ইহুদি মহাজনরা ঋণ দেওয়ার সভ্য নিয়ম অসভ্য ইংল্যান্ডে ঢুকিয়ে অনেক ক্ষতি করেছিল। এখন হিন্দুস্থানি মহাজনরা কোলদের সেইরকম ক্ষতি করছে।
কোলদের নববধূ আমি কখনও দেখিনি। কুমারী এক রাতে নববধূ! দেখতে অবাক লাগে! বাংলায় দুরন্ত মেয়েরা ধুলো খেলছে, ভাইকে মারছে, পরের গোরুকে গালি দিচ্ছে, পাড়ার ভালো লোকদের সঙ্গে ঝগড়া করছে। বিয়ের কথা উঠলে গালি দিয়ে পালাচ্ছে। তারপর এক রাতে সব বদলে যায়। বিয়ের পরদিন সকালে সে আর আগের দুরন্ত মেয়ে নেই। এক রাতে তার অদ্ভুত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি এমন এক নববধূ দেখেছি। তার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
বিয়ের রাত আনন্দে কাটল। পরদিন সকালে উঠে নববধূ ছোট ভাইকে আদর করল। কাছে মা ছিলেন। নববধূ মায়ের মুখের দিকে একবার তাকাল। মায়ের চোখে জল এল। নববধূ মুখ নিচু করল, কাঁদল না। তারপর ধীরে ধীরে এক নির্জন জায়গায় গিয়ে দরজায় মাথা রেখে অন্যমনে দাঁড়িয়ে শিশিরে ভেজা সামিয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল। সামিয়ানা থেকে টপ টপ করে উঠোনে শিশির পড়ছিল। সামিয়ানা থেকে উঠোনের দিকে তার দৃষ্টি গেল। উঠোনে এখানে-সেখানে আগের রাতের উচ্ছিষ্ট পাতা পড়ে আছে। রাতের কথা নববধূর মনে পড়ল। কত আলো! কত বাজনা! কত লোক! কত হৈচৈ! যেন স্বপ্ন! এখন সেখানে ভাঙা ভাঁড়, ছেঁড়া পাতা! নববধূর দৃষ্টি সেদিকে গেল। একটা দুর্বল কুকুরী—সদ্য প্রসূতি—পেটের জ্বালায় শুকনো পাতায়, ভাঙা ভাঁড়ে খাবার খুঁজছে। নববধূর চোখে জল এল। জল মুছে সে ধীরে ধীরে মায়ের ঘরে গিয়ে লুচি এনে কুকুরীকে দিল। এই সময় তার বাবা ভেতরে আসছিলেন। কুকুরীকে খেতে দেখে একটু হাসলেন। নববধূ আগের মতো দৌড়ে বাবার কাছে গেল না। মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা বললেন, “ব্রাহ্মণভোজনের পর কুকুরের ভোজন হয়। রাতে তা হয়ে গেছে। আজ আবার এ কেন মা?” নববধূ কিছু বলল না। বললে হয়তো বলত, এই কুকুরী সংসারী।
আগে বলেছি, নববধূ লুচি আনতে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে গিয়েছিল। দুদিন আগে হলে দৌড়ে যেত। যখন সেই ঘরে গেল, দেখল, মায়ের সামনে কিছু লুচি আর সন্দেশ রাখা আছে। নববধূ জিজ্ঞেস করল, “মা! লুচি নেব?” মা লুচিগুলো হাতে দিয়ে বললেন, “কেন মা, আজ চেয়ে নিলে? যা তোমার ইচ্ছে, তুমি নিজে নাও, ছড়াও, ফেলে দাও, নষ্ট করো। কখনও কাউকে জিজ্ঞেস করতে তো নাও? আজ কেন চেয়ে নিলে? তবে কি সত্যি আজ থেকে তুমি পর হলে, আমাকে পর ভাবলে?” এই বলে মা কাঁদতে লাগলেন। নববধূ বলল, “না মা! আমি ভাবলাম, বুঝি কার জন্য রেখেছ?” নববধূ হয়তো মনে মনে ভাবল, আগে আমাকে “ওই” বলতে, আজ কেন তবে “তুমি” বলে কথা বলছ?
নববধূর পরিবর্তন সবার কাছে স্পষ্ট নয়, সত্য। কিন্তু যিনি বুঝেছেন, তিনিই বুঝতে পেরেছেন, এই পরিবর্তন অদ্ভুত! এক রাতের পরিবর্তন বলে অবাক লাগে! নববধূর মুখ এক রাতে একটু গম্ভীর হয়, তবু তাতে একটু আনন্দের আভাস থাকে। এছাড়া যেন একটু সাবধান, একটু নম্র, একটু সঙ্কুচিত মনে হয়। ঠিক যেন শেষ রাতের পদ্ম। বালিকা কী বুঝল যে, তার মনের এই পরিবর্তন হঠাৎ এক রাতে হয়ে গেল!