Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস – বার্ট্রান্ড রাসেল

    বার্ট্রান্ড রাসেল এক পাতা গল্প493 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৭. সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে প্লাতনের মতবাদ

    ১৭. সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে প্লাতনের মতবাদ

    তিমাউস (Timaeus)-নামক বইটিতে প্লাতনের সৃষ্টিরহস্যের বিবরণ রয়েছে, এই বইটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন কিকের (Cicero), তাছাড়া মধ্যযুগে পাশ্চাত্য জগতে এই একটিমাত্র কথোপকথনের অস্তিত্ব মাত্র জানা ছিল। সেকালে এবং নবপ্নাতনবাদের প্রথম দিকে প্লাতনের যেকোনো মতের চেয়ে এর প্রভাব ছিল বেশি। ব্যাপারটা অদ্ভুত, কারণ, প্লাতনের যে কোনো লেখার চাইতে এই লেখাতে অনেক বেশি নির্বোধ উক্তি রয়েছে। দর্শনশাস্ত্র হিসেবে এর কোনো গুরুত্ব নেই কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এর প্রভাব এত বেশি ছিল যে, এর আলোচনা একটু বিস্তৃতভাবে করা উচিত।

    পূর্বতন কথোপকথনগুলোতে সাতেসের যে ভূমিকা, তিমাউস-এ সে ভূমিকা গ্রহণ করেছে একজন পীথাগোরীয় এবং সেই গোষ্ঠির মতবাদই প্রধান গৃহীত হয়েছে। এর ভিতরে রয়েছে (কিছু দূর পর্যন্ত) এই দৃষ্টিভঙ্গি : সংখ্যাই বিশ্বের ব্যাখ্যা। এতে প্রথমে রয়েছে রিপাবলিক-এর প্রথম পাঁচটি খণ্ডের সংক্ষিপ্তসার, তারপর আছে আটলান্টিক সম্পর্কে কল্পকাহিনী, যাতে বলা হয়েছে-এটা ছিল হারকিউলিসের স্তম্ভ থেকে দূরে অবস্থিত একটি দ্বীপ-এই দ্বীপের আয়তন ছিল লিবিয়া এবং এশিয়ার সংযুক্ত আয়তনের চাইতে বেশি। তিমাউস ছিলেন একজন পুথাগোরীর জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এরপর তিনি বলতে শুরু করেছেন মানুষ সৃষ্টি পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের ইতিহাস। তার বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসারঃ

    অপরিবর্তনীয়কে বোঝা যায় বুদ্ধি এবং যুক্তি দিয়ে, পরিবর্তনশীলকে বোঝা যায় মতের সাহায্যে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হওয়ায় বিশ্ব চিরন্তন হতে পারে না এবং বিশ্ব অবশ্যই ঈশ্বরসৃষ্ট। ঈশ্বর উত্তম তাই তিনি বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন চিরন্তনের ছকে। ঈর্ষাপরায়ণ না হওয়ায় ঈশ্বর চেয়েছিলেন সব জিনিসই যতটা সম্ভব তার নিজের মতো হোক। ঈশ্বর চেয়েছিলেন সব জিনিসই হোক উত্তম এবং যতটা সম্ভব কিছুই যেন মন্দ না হয়। তিনি দেখলেন, দৃশ্যমান গোলকের পুরোটাই চলমান কিন্তু তার চলন অনিয়মিত ও শৃঙ্খলাহীন, তিনি বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। (সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, প্লাতনের ঈশ্বরের সঙ্গে ইহুদি এবং খ্রিষ্টিয় ঈশ্বরের পার্থক্য রয়েছে, তার ঈশ্বর শূন্যতা থেকে বিশ্ব সৃষ্টি করেননি কিন্তু পূর্বে বর্তমান বস্তুগুলোর পুনর্বিন্যাস করেছেন)। তিনি আত্মার ভিতরে বুদ্ধিকে স্থাপন করেছেন এবং আত্মাকে দেহে। তিনি সম্পূর্ণ বিশ্বকে একটি জীবন্ত প্রাণী করেছেন- সে প্রাণীর আত্মা এবং বুদ্ধি রয়েছে। বিশ্ব মাত্র একটি, বহু নয়, যেমন- প্রাক সক্ৰাতেস অনেকেই শিক্ষা দিতেন। একাধিক বিশ্বের অস্তিত্ব থাকতে পারে না, কারণ ঈশ্বর সৃষ্ট চিরন্তন মৌলিক আদর্শের যতটা সম্ভব নিকটতম করে এই বিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বই একটি দৃশ্যমান জীব, এর ভিতরে অন্য সমস্ত জীব রয়েছে। এটা একটা গোলক, কারণ, সদৃশ অসদৃশের চাইতে সুন্দর এবং একমাত্র গোলকই সর্বদিকে সমান। এটা ঘূর্ণায়মান, কারণ, চক্রাকার গতি সর্বাপেক্ষা ত্রুটিহীন এবং চক্রাকার ঘূর্ণনই এর গতির একমাত্র রূপ হওয়ায় এর কোনো হাত বা পা লাগে না।

    চারটি উপাদান- অগ্নি, বায়ু, জল এবং ক্ষিতি। এগুলোর প্রতিটি আপাতভাবে একটি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত, এই সংখ্যাগুলো একটি অবিচ্ছিন্ন অনুপাতে রয়েছে অর্থাৎ অগ্নি বায়ুর যতটা, বায়ু জলের ততটা এবং জল ক্ষিতির ততটাই। ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টির জন্য সমস্ত উপাদানই ব্যবহার করেছেন, সে কারণেই এটি ত্রুটিহীন এবং এর বার্ধক্য কিংবা ব্যাধির আশঙ্কা নেই। এই বিশ্বের সমন্বয় হয়েছে অনুপাত দিয়ে তাই বন্ধুত্বই এর মূল সুর এবং ঈশ্বর যদি না করেন তাহলে এটা ধ্বংস হতে পারে না।

    ঈশ্বর প্রথম সৃষ্টি করেছেন আত্মা, তারপর দেহ। আত্মা সৃষ্টি হয়েছে অবিভাজ্য অপরিবর্তনীয় এবং বিভাজ্য-পরিবর্তনীয় দিয়ে। এটি তৃতীয় এবং মধ্যবর্তী ধরনের একটি সার। তারপর রয়েছে গ্রহগুলোর পুথাগোরীয় একটি বিবরণ, এই বিবরণ কালের উৎপত্তি ব্যাখ্যার পথিকৃৎ :

    স্রষ্টা এবং পিতা যখন দেখলেন তাঁর সমস্ত জীব চলমান এবং জীবন্ত, এরা চিরন্তন দেবতাদের প্রতিরূপ তখন তাঁর আনন্দ হলো এবং এই আনন্দে তিনি স্থির করলেন এই প্রতিরূপকে আরও মূলানুগ করতে। যেহেতু এটি ছিল চিরন্তন, তিনি চেষ্টা করলেন মহাবিশ্বকেও যতটা সম্ভব চিরন্তন করতে। আদর্শ জীবের প্রকৃতি চিরস্থায়ী কিন্তু এই গুণ একটি জীবের উপর আরোপ করা ছিল অসম্ভব। সেই জন্য তিনি স্থির করলেন নিত্যতার চলমান প্রতিরূপ সৃষ্টি করবেন এবং আকাশকে সুশৃঙ্খল করার পর তিনি সংখ্যা অনুসারে এই প্রতিরূপকে শাশ্বত কিন্তু চলমান করলেন। নিত্যতার নিজের অবস্থান একতার উপরে এবং এই প্রতিরূপকে আমরা বলি কাল।

    এর পূর্বে কোনো দিন অথবা রাত্রি ছিল না। চিরন্তন সার সম্পর্কে অবশ্যই বলা যায় না যে, তা ছিল কিংবা তা হবে, শুধুমাত্র আছে কথাটাই নির্ভুল। এর নিহিতার্থ হলো নিত্যতার চলমান প্রতিরূপ সম্পর্কে, তা ছিল এবং তা হবে-এরকম বলাই সঠিক।

    একই মুহূর্তে আকাশ এবং কালের আবির্ভাব হয়। প্রাণীরা যাতে গণিত শিখতে পারে তাই ঈশ্বর সূর্য সৃষ্টি করলেন-অনুমান করা যায় পর পর দিন এবং রাত্রি না হলে আমরা সংখ্যার কথা ভাবতামই না। দিন এবং রাত্রি, মাস এবং বছর দেখেই সংখ্যা জ্ঞান সৃষ্টি হয়েছে এবং আমাদের কাল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে আর এভাবেই এসেছে দর্শনশাস্ত্র। এই মহত্তম আশীর্বাদটির জন্য আমরা ঋণী সৃষ্টিশক্তির কাছে।

    (সামগ্রিক বিশ্ব ছাড়া) চার ধরনের প্রাণী রয়েছে : দেবতা, পাখি, মাছ এবং স্থলচর পশু। দেবতারা প্রধানত অগ্নি, স্থির নক্ষত্রগুলো ঐশ্বরিক এবং শাশ্বত প্রাণী। স্রষ্টা দেবতাদের বললেন যে, তিনি তাঁদের ধ্বংস করতে পারতেন কিন্তু করবেন না। অমর এবং ঐশ্বরিক অংশগুলো সৃষ্টি করার পর তিনি তাঁদের উপর ভার দিলেন অন্য সমস্ত জীবের মরণশীল অংশ (mortal part) নির্মাণ করার। (প্লাতনের অন্যান্য লেখার দেবতা সম্পর্কে যে সমস্ত বক্তব্য আছে, সেগুলোর মতোই এর উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। শুরুতে তিমাউস বলেছেন, তিনি শুধু সম্ভাব্যতা খুঁজছেন এবং তিনি নিশ্চিত হতে পারেন না। খুঁটিনাটি অনেক কিছু স্পষ্টত কল্পনা এবং আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা উচিত নয়)।

    তিমাউস বলছে, স্রষ্টা প্রতিটি তারকার জন্য একটি আত্মা সৃষ্টি করেছেন। আত্মাতে রয়েছে, অনুভূতি, ভালবাসা, ভীতি এবং ক্রোধ, এগুলোর ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে তাঁরা সৎ ভাবে জীবনযাপন করে কিন্তু উঠতে না পারলে করে না। মানুষ সৎ জীবনযাপন করলে মৃত্যুর পর অনন্তকাল তার নিজের তারকায় সুখে বাস করে। কিন্তু মন্দ জীবন যাপন করলে তার পুনর্জন্ম হয় স্ত্রীলোক হয়ে। যদি পুরুষ (কিংবা স্ত্রীলোক) মন্দ কাজ করতেই থাকে তাহলে পুরুষ (কিংবা স্ত্রীলোক) পরজন্মে হবে একটি জানোয়ার এবং যতক্ষণ না যুক্তির জয় হয় ততক্ষণ পর্যন্ত পুনর্জন্ম চলতেই থাকবে। ঈশ্বর কিছু আত্মা পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন, কিছু আত্মা চাঁদে, কিছু গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলোতে আর এদের দেহ সৃষ্টির ভার দিয়েছেন দেবতাদের উপর।

    দুধরনের কারণ রয়েছে, যেগুলো বুদ্ধিমান এবং যেগুলো অন্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় অন্যকে পরিচালন করতে বাধ্য। পূর্বোক্তদের মন রয়েছে এবং তারা উত্তম ও শ্ৰেয় কর্ম করে, শেষোক্তরা উৎপাদন করে আপনিক ক্রিয়া, তাদের কোনো নিয়ম কিংবা নক্সা থাকে না। উভয় সম্পর্কেই সম্যক অধ্যয়ন করা উচিত, কারণ, সৃষ্টি হলো মিশ্রণ-প্রয়োজনীয়তা এবং মন দিয়েই নির্মিত। (লক্ষ্য করা উচিত-প্রয়োজনীয়তা ঐশ্বরিক শক্তির উপর (নির্ভরশীল নয়)। এরপর তিমাএউস যে অংশ প্রয়োজনের দান তা নিয়ে আলোচনা করেছে।

    ক্ষিতি, বায়ু, অগ্নি এবং অপ (জল) প্রথম তত্ত্ব নয়, কিংবা অক্ষর অথবা উপাদান নয়, এমনকি তারা একস্বরবিশিষ্ট শব্দ অথবা প্রথম মিশ্রণ নয়। উদাহরণ, অগ্নিকে এই বস্তু বলা উচিত নয় কিন্তু বলা উচিত এই অবস্থা- অর্থাৎ এটা একটা বস্তু নয় বরং এটা হলো একটা বস্তুর অবস্থা। এখানে একটা প্রশ্ন আসে- তাহলে বোধগম্য সার (essemces) কি শুধুমাত্র নাম? বলা হয়েছে, এর উত্তর নির্ভর করে মন এবং সত্যিকারের মতো একই জিনিস কিনা এই প্রশ্নের উত্তরের উপরে। তা যদি না হয়, তাহলে জ্ঞান শুধুমাত্র সার-এর জ্ঞান, সুতরাং সার শুধুমাত্র নাম হতে পারে না। এখন মন এবং সত্য মতের ভিতর নিশ্চয়ই পার্থক্য রয়েছে, কারণ, একটি শিক্ষার দ্বারা প্রোথিত হয়, অপরটি প্রোথিত হয় প্ররোচনার ফলে। একটির সহগামী সত্যযুক্তি, অপরটি সেরকম নয়। সত্য মতের অংশীদার সমস্ত মানুষ কিন্তু মন হলো দেবতাদের গুণ এবং অতি সামান্যসংখ্যক মানুষের গুণ।

    এর ফলে এসেছে মানুষের স্থান সম্পর্কীয় একটি অদ্ভুত তত্ত্ব, যেমন স্থান সারের জগৎ (world of essence) এবং ক্ষণস্থায়ী ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুগুলোর জগতের মধ্যবর্তী একটা কিছু।

    এক ধরনের সত্তা আছে যা সদা অভিন্ন, অজাত এবং অবিধ্বংসেয়- সে বাইরে থেকে কোনো জিনিস নিজের ভিতর গ্রহণ করে না, নিজেও বাইরের কোনো জিনিসে প্রবেশ করে না। কিন্তু সে অদৃশ্য এবং কোনোরকম ইন্দ্রিয় দ্বারা গ্রাহ্য নয় এবং এ সম্পর্কে ধ্যানের ক্ষমতা শুধুমাত্র বুদ্ধিরই রয়েছে। এর সঙ্গে একই নামে অন্য একটি চরিত্র রয়েছে এবং সেটি অনেকটা এরই মতো, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, সমস্ত, সর্বদা গতিশীল, স্থানে উপস্থিত থাকে আবার স্থান থেকে অদৃশ্য হয়- মত এবং ইন্দ্রিয় দ্বারা তার সম্পর্কে চেতনা হয়। এবং তৃতীয় একটি চরিত্র রয়েছে তা হলো স্থান এবং তা চিরন্তন, তার ধ্বংস নেই, তা সমস্ত সৃষ্ট বস্তুরই বাসস্থান, ইন্দ্রিয়বোধগম্য নয়, একটা নকল যুক্তির সাহায্যে তাকে বোঝা যায় এবং তাকে বাস্তব বলা শক্ত। আমরা যেন সেটাকে একটা স্বপ্নের ভিতর দেখি এবং সমস্ত অস্তিত্ব সম্পর্কেই বলি, কোনো জায়গায় থাকা এবং একটি স্থান অধিকার করা এর অবশ্য প্রয়োজন কিন্তু যেটা আকাশেও নেই পৃথিবীতেও নেই, তার কোনো অস্তিত্বও নেই।

    এটা অতি কঠিন রচনাংশ, সম্পূর্ণ বোঝার ভান আমি করি না। আমার মনে হয় নিশ্চয়ই এ তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে জ্যামিতিক সম্পর্কীয় চিন্তন থেকে, গণিতশাস্ত্রের মতো জ্যামিতিকে মনে হয়েছে শুদ্ধ চিন্তনের বিষয় কিন্তু জ্যামিতিকে স্থান নিয়ে কাজ করতে হয়- স্থান ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের একটা দিক। সাধারণভাবে পরবর্তী দার্শনিকদের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে বার করা একটা কল্পনা বিলাস কিন্তু না ভেবে পারছি না যে, স্থান সম্পর্কীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে কান্ট (Kant) নিশ্চয়ই পছন্দ করতেন এই মতের সঙ্গে তাঁর মিলের জন্য।

    তিমাএউস বলছে, বাস্তব জগতের সত্য মৌলিক উপাদান, ক্ষিতি, বায়ু, অগ্নি এবং অপ নয় কিন্তু দুধরনের সমকোণী ত্রিভুজ- একটি বর্গক্ষেত্রের অর্ধেক এবং অপরটি সমবাহু ত্রিভুজের অর্ধেক। প্রাথমিকভাবে সবই ছিল বিশৃঙ্খল এবং সেগুলোকে বিন্যস্ত করে গঠন করার আগে মহাবিশ্বে বিভিন্ন মৌল উপাদানের ছিল বিভিন্ন স্থান কিন্তু তারপরই ঈশ্বর সেগুলোকে গঠন করেছেন আকার এবং সংখ্যার সাহায্যে এবং সেগুলোকে করলেন যথাসম্ভব সুন্দরতম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ, করলেন যেসব জিনিস থেকে সেগুলো সুন্দরও ছিল না, উত্তমও ছিল না। বলা হয়েছে, উপরোক্ত দুধরনের ত্রিভুজ আকৃতিগতভাবে সর্বাপেক্ষা সুন্দর গঠনের সুতরাং ঈশ্বর বস্তু গঠনের জন্য ঐগুলো ব্যবহার করেছেন। এই দুধরনের ত্রিভুজের সাহায্যে পাঁচ রকম সুষম ঘন বস্তুর ভিতরে চার রকমই গঠন করা যায়, এই চার রকম মৌলিক উপাদানের একটির প্রতিটি পরমাণু একটি সুষম ঘন বস্তু। ক্ষিতির পরমাণু ঘনক, অগ্নির পরমাণু চতুষ্কোণ, বায়ুর পরমাণু অষ্টকৌণিক এবং পানির পরমাণু বিংশকৌণিক। (দ্বাদশ কৌণিক সম্পর্কে আমি এখনই বলছি)।

    এউক্লিদের ত্রয়োদশ খণ্ডে বিবৃত সুষম ঘন বস্তু সম্পৰ্কীয় তত্ত্ব প্লাতনের সময়ের আধুনিক আবিষ্কার, এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ করেছিলেন থিয়েতেতস। তাঁর নামে যে কথোপকথন আছে সেখানে বিয়েতেতসকে অতি তরুণ মনে হয়। ঐতিহ্য অনুসারে তিনিই প্রমাণ করেছিলেন যে, সুষম ঘন বস্তু মাত্র পাঁচ প্রকার এবং আবিষ্কার করেছিলেন, তারা অষ্টকৌণিক এবং বিংশকৌণিক।৭৭ সুষম চতুষ্কৌণিক, অষ্টকৌণিক এবং বিংশকৌণিকের তলগুলো সমবাহু ত্রিভুজ দ্বাদশ কৌণিকের রয়েছে সুষম পঞ্চভুজ এবং এগুলিকে প্লাতনে ত্রিভুজ দুটি নিয়ে গঠন করা যায় না। সেইজন্য এগুলোকে তিনি চারটি মৌলিক উপাদানের সম্পর্কে ব্যবহার করেননি।

    দ্বাদশ কৌণিক সম্পর্কে প্লাতন শুধুমাত্র বলছেন, এছাড়া পঞ্চম একটি সংযোজন রয়েছে, ঈশ্বর সেটা ব্যবহার করেছেন মহাবিশ্বের সীমারেখা সৃষ্টির জন্য। ব্যাপারটা দুর্বোধ্য এবং এর ভাবার্থ হলো মহাবিশ্ব দ্বাদশ কৌণিক কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে মহাবিশ্ব একটি গোলক। জাদুবিদ্যায় পেন্টাগ্রামের (pentagram) চিরকালই একটা গুরুত্ব ছিল এবং আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এই গুরুত্বের জন্য দায়ী পুথাগোরীয়রা। তাঁরা এঁকে বলতেন স্বাস্থ্য (Health) এবং ব্যবহার করেছেন ভ্রাতৃসংঘটির সদস্যদের পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে।° দ্বাদশ কৌণিকের তলগুলো পঞ্চভুজ এবং কোনো এক অর্থে এটা মহাবিশ্বের একটি প্রতীক। এই আলোচ্য বিষয়টি আকর্ষণীয় কিন্তু এর সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু খুঁজে বার করা কঠিন।

    অনুভূতি সম্পর্কে আলোচনার পর তিমাউস মানুষের দুটি আত্মা ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে, একটি আত্মা অমর, তাকে সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর, অপরটি নশ্বর, তাকে সৃষ্টি করেছেন দেবতারা। নশ্বর আত্মা ভয়ংকর এবং অপ্রতিরোধ্য আবেগের বশীভূত সর্বপ্রথম হলো সুখানুভূতি, মন্দ কর্মে সর্বপ্রধান উৎসাহদাতা, তারপর হলো বেদনা। এই বেদনা শ্রেয়-তে বাধা, তাছাড়া রয়েছে দুই মূর্খ বুদ্ধিদাতা,-হঠকারিতা এবং ভীতি, রয়েছে ক্রোধ- যাকে শান্ত করা শক্ত এবং রয়েছে আশা- যা সহজে বিপথে চালিত করে। এগুলোকে তারা (দেবতারা) অযৌক্তিক অনুভূতি এবং দুঃসাহসী প্রেমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিধি অনুসারে মিশিয়ে সৃষ্টি করেছেন- এই সৃষ্টি মানুষ।

    অবিনশ্বর আত্মার অবস্থান মস্তকে, নশ্বর আত্মার অবস্থান বক্ষোদেশে।

    কিছু অদ্ভুত শারীরবিদ্যা রয়েছে, যেমন- অন্ত্রের কাজ খাদ্যগুলোকে ভিতরে রেখে অতিভোজন বন্ধ করা এবং তারপরে রয়েছে দেহান্তর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য। কাপুরুষ অথবা অসৎ পুরুষ পরজন্মে হবে স্ত্রীলোক। হাল্কা মনের মূর্খরা, যারা ভাবে গণিতশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান ছাড়াও আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান শেখা যায় তারা হবে পক্ষী; যারা দর্শনশাস্ত্রের কিছুই জানে না তারা স্থলচর বন্য পশু হবে; নির্বোধতম ব্যক্তিরা হবে মাছ।

    এই কথোপকথনের শেষ অনুচ্ছেদে রয়েছে সংক্ষিপ্তসারঃ

    এখন আমরা বলতে পারি মহাবিশ্বের চরিত্র সম্বন্ধে আমাদের আলোচনার একটা শেষ রয়েছে। বিশ্ব, নশ্বর এবং অবিনশ্বর পশু পেয়েছে এবং তাতেই ভরে উঠেছে আর হয়ে উঠেছে একটি দৃশ্যমান পশু- যার ভিতর আছেন দৃশ্যমান সচেতন ঈশ্বর, তিনি হলেন বৌদ্ধিকের প্রতিরূপ, মহত্তম, শ্রেষ্ঠতম, সুন্দরতম, সবচেয়ে নিখুঁত- তিনিই একমাত্র উৎপাদিত স্বর্গ।

    তিমাএউস-এর ভিতরে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা যায় এবং কতটুকুকে ভাবা উচিত কল্পনার খেলা- সেটা বোঝা শক্ত। আমার মনে হয় সৃষ্টির যে বিবরণ রয়েছে অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় আনয়ন-সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত এবং গুরুত্ব দেওয়া উচিত চারটি মৌলিক উপাদানের অনুপাত সম্পর্কে, সুষম কঠিন বস্তুর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উপরে এবং সেগুলো গঠনকারী ত্রিভুজের উপরে। স্পষ্টতই স্থান-কাল সম্পর্কীয় বিবরণগুলো ছিল প্লাতনীয় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সমস্ত জগৎ যে চিরন্তন আদর্শের নক্সার প্রতিরূপ, সেটাও ছিল প্লাতনের বিশ্বাস। বিশ্বে প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্যের মিশ্রণে বিশ্বাস প্রায় সব গ্রিকদের ভিতরেই ছিল দর্শনশাস্ত্র উদ্ভবের অনেক আগে থেকেই। প্লাতন এটা গ্রহণ করেছিলেন এবং এভাবে মন্দ সম্পৰ্কীয় সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন, খ্রিষ্টিয় ধর্মতত্ত্বও এই সমস্যায় বিব্রত। আমার মনে হয় বিশ্ব-জীবকে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দেহান্তর সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ, দেবতাদের উপর আরোপিত অংশ এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় অংশগুলোকে, আমার মনে হয়, একটা সম্ভাব্য সুসংবদ্ধ রূপ দেওয়ার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল।

    আগেও আমি বলেছি, সম্পূর্ণ কথোপকথনটি ভালোভাবে পড়ার যোগ্য, কারণ, প্রাচীন ও মধ্যযুগের চিন্তাধারার উপর এর বিরাট প্রভাব এবং এই প্রভাব, যা সবচেয়ে কম আজগুবি শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ নয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মেটামরফসিস – ফ্রানজ কাফকা
    Next Article সক্রেটিসের আগে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    Related Articles

    বার্ট্রান্ড রাসেল

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    প্লেটোর ইউটোপিয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    সক্রেটিসের আগে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Our Picks

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }