Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পিতা পুত্রকে – চাণক্য সেন

    চাণক্য সেন এক পাতা গল্প276 Mins Read0

    পিতা পুত্রকে – ৩০

    ত্রিশ

    পুত্র, পিতাকে মানুষ হিসেবে জানতে হলে তার জীবনের যে সব ঘটনার উপর সামাজিক, ন্যায়-অন্যায়, নীতি ও সাংস্কারিক নিষেধের পর্দা ঝোলানো থাকে, সেগুলো সরিয়ে দেওয়া দরকার। পিতা যদি পূজনীয় হন তাহলে তাঁকে সবকিছু আলো-আঁধার, সার্থকতা-ব্যর্থতা, জয়ধ্বনি ধিক্কার নিয়েই পূজনীয় হতে হবে। এ জ্ঞান ও নিরীক্ষা মানুষে মানুষে বন্ধুতা আদান-প্রদানকে মধুর স্থায়িত্ব দান করে।

    আমাদের প্রাচীন ঋষিগণ ঐতরীয় উপনিষদে (যা ঋকবেদের অংশ) মনুষ্য সৃষ্টির যে বিবরণ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা যতখানি বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবগ্রাহ্য সে রকম বিবরণ বাইবেল বা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না।

    পুরুষ দেহ থেকে স্ত্রীদেহে কীভাবে নতুন জীবন সিঞ্চিত হয়, সিঞ্চিত রেতঃ স্ত্রীর অবয়বের সঙ্গে অভিন্নতা প্রাপ্ত হয়, কী কারণে পিতা ও মাতা যুক্ত প্রয়াসে সন্তানকে প্রতিপালন করেন এবং তৎসঙ্গে পরস্পরকে— এসব উপনিষদে ঋষিরা অকপটে ব্যক্ত করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এও ঘোষণা করেছেন যে মানুষ ও পৃথিবীর কাছে অন্নের চেয়ে বড় কিছু নেই। বলছেন, অন্নকে নিন্দা কর না। প্রাণী অন্ন, শরীর অন্নাহ, শরীরের মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত, অতএব অন্নই অন্নে প্রতিষ্ঠিত। সঙ্গে সঙ্গে আরও ঘোষণা করেছেন, বিজ্ঞানই ব্রহ্ম, বিজ্ঞান হতেই ভূতবর্গ জাত হয়। জাত হয়ে বিজ্ঞানের দ্বারাই বর্ধিত হয়, বিনাশকালে বিজ্ঞানেরই অভিমুখে প্রতিগমন করে, বিজ্ঞানেই বিলীন হয়। এই যে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাণ জ্ঞানলাভের আহ্বান, উপনিষদ ছাড়া অন্য কোনো প্রাচীন ধর্মপুস্তকে আমরা দেখতে পাই না।

    ঐতরীয় উপনিষদে আরও দুটি ঘোষণা আছে, যা আমাকে অভিভূত করে দেয়। একটি ঘোষণা মানুষের মস্তিষ্কলব্ধ জ্ঞান বিজ্ঞানকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে অস্বীকার।

    মস্তিষ্কের সীমাকে বিদীর্ণ করে মানুষকে প্রবেশ করতে হয় ব্রহ্মরন্ধ্র দ্বারে। এই দ্বারটির নাম বিদূতি। এই ঘোষণার মহান তাৎপর্য বর্তমান যুগে মানুষের মস্তিষ্ক দ্বারা সৃষ্ট পরম শক্তিশালী সৃষ্টি ও ধ্বংসের শল্যবিদ্যাকে পরিহাস করে। বলে, এর চেয়ে আরও অনেক বড় শক্তি আছে, অনেক মহাজ্ঞাতব্য ও ধাতব্য বিষয় আছে যা জানতে হলে তোমাকে বিদূতির সাহায্য নিতে হবে। আমার মনে হয় ‘সময়ের ইতিহাস’ পুস্তকের প্রণেতা হকিন্স এই বিদূতির শক্তিতে সমৃদ্ধ, তাই তাঁর জ্ঞান সময়ের সীমানা পেরিয়ে আমাদের নিয়ে যায় এমন এক সীমাহীন অস্তিত্বের মধ্যে, বা ঘ্রাণ, দৃষ্টি, শ্রবণ, স্পর্শ এমনকি চিন্তনেরও বাইরে।

    আর একটি বিশেষ পাঠ রয়েছে ঐতরীয় উপনিষদে যা আমার কাছে পরম আকর্ষণীয়। একে বলা হয়েছে শান্তিপীঠ। পাঠের শেষ শব্দগুলো মানুষের কানে দৈব সংগীতের মতো শোনায়— “ঋতং সত্যং বদিষ্যামি তস্মাম তদ্বাক্তরমবতু, অভতু মাম্, অবতু বক্তারম, অবতু বক্তারম্।

    ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি। মিষ্টি বলব, সত্যি বলব; তোমার আমার বক্তার ও শ্রোতার সমান কল্যাণ হবে, আমরা সমান অংশগ্রহণ করব। এই যে শিক্ষক ও ছাত্র, পিতা ও পুত্র, বয়ঃশ্রেষ্ঠ ও বয়ঃনবীন, এদের মধ্যে সমতার ঘোষণা, এটাও যে কোনো প্রাচীন শাস্ত্রে দুর্লভ।

    .

    এই কাহিনি শেষ করবার মুখে এ কথাগুলো বলার তাৎপর্য নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। পিতা-পুত্র এক আদি ও অন্তহীন রাজপথে সমগামী বন্ধু। একে অন্যকে দেয় পূর্ণতা, দেয় জীবনের রহস্য জ্ঞান। এই পরম আকাঙ্ক্ষিত দ্বৈত সম্পর্ক পেতে হলে যা অবশ্য প্রয়োজনীয় তা হলো নির্মোক আত্মপরিচিতি। তুমি যদি আমাকে পরিপূর্ণ না জানো এবং আমিও তোমাকে পরিপূর্ণ না জানি, তাহলে এই আদর্শ পিতা—পুত্র সম্পর্ক থেকে যায় অনধিকৃত।

    কেন কোনো কোনো পুরুষ তাদের জীবন একই নারীতে সীমাবদ্ধ রাখে, কেন অন্য কোনো পুরুষ একাধিক নারীতে আসক্ত ও পরিব্যাপ্ত হয়—এসব নিয়ে এখন সিগমন্ড ফ্রয়েড থেকে অনেক মনস্তাত্ত্বিক ও কামতাত্ত্বিক প্রচুর বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রয়েডের মতে, প্রথম কৈশোরের সাত বছরের মধ্যে ছেলেমেয়েদের কাম জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হয়ে যায়। তাতে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে পিতা-মাতার প্রেম অথবা প্রেমহীন সম্পর্কের। কিংবা অন্য কোনো বিপরীত লিঙ্গের প্রভাব থেকে। অবশ্য এই নির্ধারক তত্ত্ব পরবর্তী অনেক মনস্তাত্ত্বিক পণ্ডিতেরা বর্জন করেছেন। সদ্যপ্রয়াত বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক এরিক এরিকসন তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, মানুষ পরিণত বয়সেও নিজের চেষ্টা ও দৃঢ়মন্যতার দ্বারা জীবনের কামভিত্তিক পরিবর্তন করতে সক্ষম।

    আমার শৈশব থেকে প্রথম যৌবন পর্যন্ত কেটেছিল গণেশপুর গ্রামে। এ গ্রামের মধ্যবিত্ত সমাজে লুকানো অথবা আধা লুকানো কামুক সম্পর্কে অপ্রাচুর্য ছিল না। সাধারণত মানুষদের মধ্যে বাধা নিষেধ ছিল খুবই কম। কামবিদ্যায় দীক্ষা বহু মানুষের দীর্ঘায়িত পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেই শুরু হতো। কিশোর কিশোরীরা অথবা প্রথম যৌবনের ছেলেমেয়েরা হোমোসেক্সুয়্যালিটি গ্রহণ করতে বাধ্য হতো, স্বাভাবিক সেক্সুয়্যাল সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ ও সম্মতির অভাবে। আমার জীবনের প্রথম গভীর প্রেম, যার শুরু প্রথম শৈশবে যার প্রভাব এখনও শেষ হয়নি তা হলো আমার দিদিকে নিয়ে। নিদ্রিত অবস্থায় বোতাম খোলা ব্লাউজের আবরণ থেকে বেরিয়ে আসা একজোড়া পদ্মের মতো দুটি স্তন আমি এরই শরীরে দেখতে পেয়েছিলাম।

    দিদির কাছে আমার এই গভীর প্রেম অজানা ছিল না, কিন্তু সে তাকে কোনোদিনই প্রশ্রয় দেয়নি। সাত আট বছর আগে কলকাতায় গিয়ে হঠাৎ কাকার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম দিদি মৃত্যুশয্যায়। প্রায় কাউকেই চিনতে পারছিল না। তবু মনে হলো আমাকে দেখে বুঝি চিনল। শুনলাম কয়েকদিন আগে বলেছিল আমাকে দেখবার খুব ইচ্ছে করছে। আমি এখনও, এই তিন কুড়ি দশ পেরিয়েও, দিদির সঙ্গে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখি।

    এদিক ওদিক খুচরো তথাকথিত ভালোবাসা আরও দু-চারটে ঘটেছিল বৈকি। কোনোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কোনোটাই ভবিষ্যৎ ছিল না। আমি ইউনিভার্সিটির ভালো ছেলে বলে যদি-বা মেয়েদের কিছুটা আকর্ষণ পেতাম, আমার দেহে পরিষ্কার গ্রামের ছাপ, আমি দরিদ্র, অতএব পদক্ষেপের সাহস আমার নিজেরও হতো না, অন্য পক্ষ থেকেও হতে দেখিনি।

    কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে একটা মন্তাজ ছায়াছবি তৈরি করা যায়, এক একজনকে এক এক ভঙ্গিতে, ছন্দে, গতিতে ও পরিবেশে মিশ্রিতভাবে দেখিয়ে। কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারী আলাদা। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবার সাধারণত সংরক্ষণশীল। পারিবারিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বিশেষ মূল্যবান। ধনী ঘরের ধারাবাহিকতাকে বলা হয় পারিবারিক কালচার। যেহেতু ভদ্র গৃহস্থ সমাজের ছেলেমেয়েরা অর্থাৎ উঁচু জাতে যাদের জন্ম তারা প্রায়ই কখনো নীচু জাতের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রেমিক সম্পর্কে ধরা পড়ত না আমাদের যৌবনে (এখনও এর ব্যতিক্রম খুব বেশি নয়) অতএব আর্থিক অবস্থার তারতম্য সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনেকটাই ছিল একরকম।

    এক অন্ধ ভদ্রলোকের কাহিনি মনে পড়ছে। সে ভদ্রলোকের বৈমাত্রেয় বোন, ধরা যাক তার নাম খুকু, কিছুকালের জন্য আমার ‘বান্ধবী’ ছিল। পশ্চিমে যাকে গার্লফ্রেন্ড বলা হয়, ভারতবর্ষের ‘বান্ধবীরা’ কিন্তু সে জাতের নয়। খোলা কথায় ভারতবর্ষে বান্ধবীরা এখনও সাধারণত সেক্স এড়িয়ে চলতে চায়। অবশ্যি এখন সন্তান সম্ভাবনা দূর করার সহজলভ্য উপায় এবং সমাজে অনেকখানি ইংরেজিতে যাকে বলে ‘পার্মিসিভনেস’ (বাংলায় কী বলা যায়, স্বাধীনতা?) যুবক যুবতিদের সম্পর্ককে অনেক সময় বিছানায় নিয়ে

    যায়। এখানে অনেক সময় মানে কোনো কোনো সময়। মনে রাখতে হবে, ভারতবর্ষের এক শতাংশ লোক, সংখ্যায় আট কোটি। আমাদের যাদের সঙ্গে পরিচয় বা তরল বন্ধুতা তাদের দিয়েই আমরা সমস্ত দেশ ও সমাজকে দেখতে অভ্যস্ত। আমি এখন এই সুপরিণত বয়সে শুনতে পাই যে পাড়ায় বাস করি সেখানে কয়েকটি ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছরের স্ত্রীলোক, বিবাহের বাইরেও পুরুষের সঙ্গে কাম সম্পর্কে সংযুক্ত। এই ‘অনেক’ মানে আমরা যে কটি খবর রাখি তাই। এদেশে আমেরিকা বা ইউরোপের মতো স্ত্রী-পুরুষদের কামচরিত্র নিয়ে কোনো গবেষণা হয় না। এখানে এখনও ‘সেক্সুয়্যাল হ্যাবিট অব ইন্ডিয়ানস’ শিরোনামা নিয়ে কোনো পুস্তক প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য আমি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তত্ত্ব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতকোত্তর থিসিসে দেখেছি যে কলেজে পড়া মেয়েদের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তরে জানা গেছে যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মেয়েদের বিয়ের আগে কাম সম্পর্কে (অন্তত মৌখিকভাবে) আপত্তি নেই। সেক্স নিয়ে নির্বোধ আলোচনা স্কুলের মধ্যম স্তর থেকে ছেলেমেয়েদের মুখে শোনা যায়। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এখনও ভারতবর্ষে মধ্যবিত্ত সমাজে অন্তত পঁচানব্বই শতাংশ বিবাহ পর্যন্ত অক্ষত-যোনি।

    আমাদের সময় ব্যাপারটা আরও বিভিন্ন বাধা নিষেধের পর্দায় গোপনীয় ও নিষিদ্ধ করে রাখা হতো। খুকু আমার ‘বান্ধবী’, মাঝে মাঝে তার স্তন স্পর্শ করতাম। তাকে চুম্বন করেছি বলে মনে পড়ে না। সে বিলক্ষণ জানত আমি তাকে বিয়ে কদাচ করব না। কদাচ কখনো রক্তের উত্তাপে ওই ধরনের কোনো আশ্বাস দিলে সে তৎক্ষণাৎ ব্যঙ্গ হাসির সঙ্গে তা নস্যাৎ করে দিত।

    ঠিক এরকম নয়, কিন্তু এরই কাছাকাছি ‘সম্পর্ক’ তৈরি হয়েছিল খুলনার এক মেয়ের সঙ্গে, যার বহুদিন পূর্বে মৃত্যু হয়েছে। সে দেখতে ছিল খুব সুন্দরী, আমার বোনের চেয়েও দু-এক বছরের ছোট। আমরা একই বাড়িতে উপরে নিচে বাস করতাম। বাড়িতে ইলেকট্রিসিটি ছিল না। হ্যারিকেনের আলো যতটা সাধ্য অন্ধকার দূর করত। একদিন একটা তক্তপোষের ওপর পাশাপাশি বসে আমি সম্পূর্ণ বিনা প্রতিরোধে শাড়ির ভিতর হাত ঢুকিয়ে তার দু-খানি বুক করাধৃত করেছিলাম। তখনও দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ‘ব্রা’ পরবার রীতি হয়নি। এই মেয়েকে বোধহয় আমি ভালোই বেসেছিলাম, চাকরি-বাকরি করে তাকে বউ বানাবার ইচ্ছেও আমাকে উত্তেজিত করত। কিন্তু মেয়েটি ছিল বুদ্ধিমতী। সে জানত, সে কোনোদিনই আমার স্ত্রী হবে না। অতএব তার নগ্ন বুক পর্যন্তই আমি পৌছতে পেরেছিলাম।

    পরে কলেজ জীবনে কলকাতায় বেশ বর্ধিষ্ণু পরিবারের, আমার সহপাঠী একটি মেয়ের সঙ্গে ‘ভাব’ হয়েছিল। তার মুখে বসন্তের দাগ সত্ত্বেও সে ছিল সুন্দরী, কথাবার্তায় চতুর ও তীক্ষ্ণ, লেখাপড়ায় মেধাবী এবং স্বভাব চটুল। আমাদের মধ্যে প্রায়ই প্রেম প্রেম কথা হতো। তাকে আমি স্পর্শ করিনি। সে আমাকে বলত ভীতু। স্পর্শ না করার কারণ ছিল, সে নিজেই আমাকে বলেছিল সে তার মামার সঙ্গে প্রেমাবদ্ধ। একদিন জ্বরাক্রান্ত হয়ে আমি পিসিমার বাড়িতে একটি ঘরে অন্ধকার-উত্তীর্ণ সন্ধ্যায় শুয়ে আছি। সে এসে পাশে বসল, কপালে হাত দিয়ে বলল, এ বাবাঃ, কী জ্বর! আমি বললাম, বেশি নয়, মাত্ৰ একশো দুই। জিজ্ঞেস করল, ‘মাথা ব্যথা করছে? আমি বললাম, বিশেষ না। সে কিছু না বলে মাথা টিপে দিতে লাগল। আমার বেশ আরাম মনে হলো। এক সময় সে আমার হাত তুলে নিয়ে তার বুকে রাখল। শাড়ির উপর নয়, ব্লাউজের উপরে। তার নাম সবিতা। আমি বললাম, তুমি আমাকে ভীষণ লোভ দেখাচ্ছ। কিন্তু তুমি অন্য পুরুষের প্রেমিকা। তোমার কাছ থেকে দূরে থাকাই আমার উচিত। তাই আমি থাকতে চাই। সবিতা বলল, তুমি দারুণ বোকা। বলে হঠাৎ উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এই হলো আমার আর এক বান্ধবী কাহিনির সারাংশ।

    বাস করতাম উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে। নিচের তলায় কাকিমাদের সঙ্গে মুরলা পিসি, তখন অমলেন্দু পিসেমশাই দেউলি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কলকাতায়। উপরে যে পরিবারটি বাস করত তারা দুই ভাই, মা, এক বোন। জননী মহাশয়া এককালে পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করতেন, এক পয়সাওয়ালা পুরুষের রক্ষিতা ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি প্রায় সর্বদাই অতীত জীবনের ‘পাপের জন্য উচ্চকণ্ঠে পরিতাপ করতেন ও ঈশ্বরের মার্জনা ভিক্ষা করতেন। তাঁর বড় পুত্র সিনেমা জগতে সুখ্যাতি পেয়েছিলেন যন্ত্রসংগীতে পারদর্শিতায়। ইনি বিবাহিত ছিলেন, প্রায়ই স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করতেন। এঁরও এক রক্ষিতা ছিল। তিনি অবাধে এ বাড়িতে আসতেন, সবারই খাতির পেতেন, এমনকি ভদ্রলোকের পত্নীরও। ছোট ভাইটি কলেজ পাস করে কী একটা চাকরিতে ঢুকেছিল। বোনটি ছিল সবচেয়ে ছোট, বেশ সুন্দরী, সবে স্কুল পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমার সঙ্গে এই মেয়েটিরও ‘ভাব’ হয়েছিল। আমার কাছে পড়তে আসত। সে ছাতের ছোট ঘরে বসে সেতার বাজাত। একমাত্র শ্রোতা ছিলাম আমি। আমাদের দুজনকে নিয়ে কিছু কথাবার্তা রটেছিল। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব মিহি সুরে বাঁধা বন্ধুতা। শরীরের ছোঁয়াও সে সুরটিকে ছিন্ন করেনি।

    একদিন মেয়েটি সন্ধেবেলা সেতার বাজাচ্ছে, আমি একটু দূরে বসে শুনছি। সে হঠাৎ সেতার বাজানো বন্ধ করে দিয়ে আমাকে বলল, “আমার ভীষণ বিপদ।”

    “কিসের বিপদ! তোমার আবার বিপদ হবে কেন?”

    “আপনি জানেন না! আমার এক দিদি ছিল, মা ও দাদা তার বিয়ে দিয়েছিল এক দুশ্চরিত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সাত আট বছর তার মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ধারণা সে আত্মহত্যা করেছে। যে লোকটা আমার জামাইবাবু, সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। মা ও দাদা সম্পূর্ণ রাজি। সে অনেক টাকা দিচ্ছে ওদের। আমার কোনো উপায় নেই।”

    দুজনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। নীরবতা ভেঙে মেয়েটি বলল, “আমাকে পালাবার কোনো পথ বলে দিতে পারেন?”

    আমি বললাম, “না “

    সে বলল, “আমি জানি পালাবার কোনো পথ আমার নেই।”

    এই ঘটনার দু’তিন মাস পরে আমরা ও বাড়ি থেকে উঠে গেলাম। সারা জীবন আমি বোধহয় লক্ষবার এক নিরুত্তর প্রশ্নের সামনে কয়েক মুহূর্ত নিস্তব্ধ হয়ে বসে দাঁড়িয়ে অথবা শুয়ে থেকেছি। সেই মেয়েটার কী হলো? কোথায় গেল সে? কী করে কাটল তার জীবন? সেও কি তার দিদির মতো আত্মহত্যা করল? এ প্রশ্নগুলো থেকে আমি রেহাই পাব না।

    আর একটি মেয়েকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন সারাজীবন আমাকে অনেক খোঁচা মেরেছে।

    গোয়াবাগান অঞ্চলেই এক বহুতল বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে বাস করতেন এক ব্রাহ্ম পরিবার। আমি যে বাড়ি থাকতাম সে বাড়ি থেকে ওদের প্রবেশ পথ দুশো গজের বেশি দূরে নয়। একদিন আমি কলেজে যাচ্ছি, সে বাড়ির দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন এক ভদ্ৰলোক ও একটি মেয়ে। মেয়েটি বলল, “বাবা, ইনিই তিনি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্ড হয়েছেন।

    ভদ্রলোক খুব স্নেহের সঙ্গে আমার পরিচয় নিলেন, নিজেদের পরিচয় দিলেন। বললেন, “তুমি এসো আমাদের বাড়িতে গল্প করতে, খুব আনন্দ হবে।”

    মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে বলল, “অবশ্য আসবেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্ড হওয়া ছেলে কাউকে চিনি না।

    এক সন্ধেবেলা গিয়ে হাজির হলাম ওদের বাড়িতে। পদবি ব্যানার্জী। ঘরে বেশ গোছানো আসবাবপত্র, সোফাসেট, কার্পেট। ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী আমাকে অভ্যর্থনা করে বসালেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তা হলো, গ্রাম-জেলা, বাবা-মা, ভাইবোন, কলেজ, পাঠ্যবিষয়, এসব নিয়ে। মিনিট দশেক পরে সেই মেয়েটি ঘরে ঢুকল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। খুব যে সুন্দরী তা নয়, অত বুদ্ধিমতী আমি এর আগে কখনো দেখিনি। চোখে সব সময় কৌতুক নাচছে। পাতলঅ ঠোঁটদুটি সর্বদা হাসিতে চঞ্চল। সে ঢুকেই বলল, “আমি কিন্তু নমস্কার করছি না। আমি আপনার চেয়ে বয়সে বড়। যদিও এক ক্লাস নিচে পড়ি। আমি বললাম, “তাহলে আর বড় রইলেন কী করে?” সমান সমান হয়ে গেলেন তো। আপনার কথামতো আপনি বয়সে বড়, যেহেতু আপনি আমার বয়স জানেন না। আপনার দাবি সত্যি নাও হতে পারে। কিন্তু আমি যে আপনার থেকে এক ক্লাস উঁচুতে পড়ি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সুতরাং বড় যদি কেউ হয়ে থাকে সে আমি। এখন থেকে আপনি আমাকে দাদা বলবেন।

    অনেক কণ্ঠের হাসি শুনে ওদিক চোখ ফেলে দেখলাম আরও দুটি মেয়ে ঘরে ঢুকেছে। ব্যানার্জী মশাই বললেন, “এ আমার বড় মেয়ে লতিকা। যার সঙ্গে আপনি এতক্ষণ কথা বলছিলেন ওর নাম যূথিকা। আমার ছোট মেয়ে কণিকা এখনও স্কুলে পড়ে।”

    অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলাম। আমার মনে হলো অনেক দিনের পরিচয় এ মেয়েটির সঙ্গে, যার নাম যূথিকা। ব্রাহ্ম পরিবারের সঙ্গে এই আমার পরিচয়। এ পরিচয় বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। আমি সপ্তাহে কখনো একবার, কখনো দুবার ওদের বাড়ি যেতাম। স্বল্পকালের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়ে গেল যে আমি যূথিকার বন্ধু এবং ওর কাছেই আমার আগমন। ভেতরের দিকে একটা ছোট ঘরে মাদুর পেতে যূথিকা ও আমি গল্প করতাম। কী বলতাম, কী আলোচনা হতো, আমার এখন কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলে যে অত আনন্দ পাওয়া যায় এই আমি প্রথম জানলাম। যূথিকার কৌতুকবোধের কথা বলছি। একটা ছোট্ট দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। আমি একদিন চাকরের হাত দিয়ে ওকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। লিখেছিলাম কলকতাতার ভাষা— থাকলুম, গেলুম, খেলুম, বসলুম, ইত্যাদি। জবাবে যে কাগজখানা এল তার ঠিক মাঝখানে লেখা শুধু একটি কথা : “হালুম।”

    টমোড়ি হোস্টেলে থাকার সময় অধ্যাপক মার্কাস গ্রে একটি এম.আর.এ দলের সঙ্গে আমাকে রেঙ্গুনে নিয়ে গিয়েছিলেন একটা বড় সভায় যোগদান করার জন্য। যুদ্ধের সময় তিন দিন তিন রাত্রি জাহাজ চেপে বার্মা যাবার সংবাদ পেয়ে আমার কাকামণি খুব রাগ করেছিলেন। আমার শুধু মনে আছে ডেকের যাত্রী হিসেবে প্রথম সারারাত বমি করেছিলাম। দ্বিতীয় দিনে রেহাই না হলে তৃতীয় দিনে রামকৃষ্ণ মিশনের এক সাধু আমার দুর্দশা দেখে আমাকে নিয়ে তাঁর কেবিনে জায়গা দিয়েছিলেন। পরে রেঙ্গুনে রামকৃষ্ণ মিশনে নিমন্ত্রিত হয়ে কৈ-মাছের ঝোল ও ভাত খাবার সুযোগ হয়েছিল।

    রেঙ্গুনে থাকার সময় যূথিকার সঙ্গে আমার প্রথম পত্রালাপ। ওরা তখন রাঁচি চলে গেছে। ঠিকানাটা আমার এখনও মনে আছে, হিম কুটির, হিঙ্গল, রাঁচি। চিঠির ভাষা ও হস্তাক্ষর সমান সুন্দর। কৌতুকে ব্যঙ্গ ভরা বাক্যগুলো। কিন্তু আন্তরিকতারও অভাব নেই। চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক যেন আরও গাঢ় হলো।

    এর মধ্যে আমাকে একদিন গ্রে সাহেব ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দাঁড়াতে বললেন, “বস।”

    বসবার সঙ্গে সঙ্গে তিনখানা চিঠি আমার সামনে রাখলেন। তিনখানা যূথিকার লেখা। আমি অনেকদিন ওর চিঠি না পেয়ে বেশ আহত ও চিন্তিত হয়েছিলাম।

    “এ চিঠিগুলো তোমার?”

    “হ্যাঁ।”

    “কে লিখেছে?”

    “আমার এক বন্ধু। যূথিকা ব্যানার্জী!

    “আমাদের কলেজে পড়ে?”

    “না।”

    “চিঠিগুলো নিয়ে নাও। তিনটে চিঠি না পেয়ে তুমি নিশ্চয়ই খুব ভাবনায় পড়েছ।”

    গ্রে’র মুখে হাসি। আমি সাহস করে বললাম, “এগুলো তোমার হাতে এল কী করে?”

    গ্রে আমার হাতে একখানা চিঠি তুলে দিলেন। বললেন, “এটা বনবিহারী ঘোষের রিপোর্ট।”

    রিপোর্টের সারাংশ হলো, এই ছেলেটা, যাকে তুমি দারুণ প্ৰশ্ৰয় দাও, একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম চালাচ্ছে। প্রত্যেক সপ্তাহে তার দুটো করে চিঠি আসে। চিঠিগুলো যদিও বিরুদ্ধ এবং বেশ হিউমারাস, তথাপি তার ভাষায় বন্ধুতার স্নেহ ও প্রীতি সমাচ্ছন্ন। আবার এই ছেলেটা এই কনফারেন্সে একটি বর্মী মেয়ের সঙ্গে খুব ভাব জমিয়েছে। ওদের প্রায়ই একসঙ্গে দেখতে পাই। বর্মী মেয়েরা খুবই সরল। আমাদের মেয়েদের মতো বাঁধা নিষেধে আবদ্ধ নয়। ছেলেটার চরিত্র সম্বন্ধে আমার বিশেষ সন্দেহ। তাই তোমাকে জানালাম।”

    গ্রে সাহেব বললেন, “বনবিহারীকে আমি কী বলেছিলাম জানতে চাও?”

    আমি কৌতূহল চেপে চুপ করে রইলাম। বলেছি, “ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুতা হবে এর মধ্যে আপত্তির কী আছে? একটি ছেলে যদি দুটি মেয়ের সঙ্গে ভাব জমায়, তাতেই বা আপত্তি কিসের? আমার তো কেম্ব্রিজে পড়ার সময় একসঙ্গে তিনটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল।”

    বছর দুই পরে জানতে পারলাম যূথিকা ব্যানার্জী ভবানীপুরে বকুলবাগান স্ট্রিটে একটি বাড়িতে বাস করে। আমার এক সহপাঠী বেরিয়ে গেল ওদের আত্মীয়। তার কাছে ঠিকানা নিয়ে হাজির হলাম বকুলবাগান স্ট্রিটের এক বাড়িতে। আমি তখন সবে স্টেটসম্যানে কাজ করছি।

    খবর পেয়ে যূথিকা এসে বসল। সেই আগের মতোই কৌতুকদীপ্ত, পাতলা হাসিতে কম্পমান ওষ্ঠাধর। সেই আগের মতোই আলাপে পটুতা, সংলাপে ঝংকার! জিজ্ঞেস করল, রেঙ্গুনে পাওয়া চিঠিগুলো আমি কী করেছি। বললাম, “চিঠি পেয়ে লোকে যা করে তাই।”

    “তার মানে?”

    “পড়েছি।”

    “পড়ার পরে কী করা হয়েছে?”

    “স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত হয়ে বাঁধাই করা হয়েছে। অতি সযত্নে, গভীর গোপনে সুরক্ষিত আছে।”

    “কথাবার্তায় চতুরতা অনেক বেড়েছে দেখছি। নির্ঘাৎ সাহেবি কাগজে চাকরি করার দোষ। সোজাসুজি বাংলা বললে কি কোনো ক্ষতি হয়?”

    “কিচ্ছু না। পুড়িয়ে ফেলেছি। তার মানে এই নয় যে ভুলে গেছি।”

    “আপনার চিঠিগুলোর কথা জানতে চাইলেন না যে?”

    “ওগুলো আপনাকে দেওয়া— সেগুলো কী করেছেন বা করবেন সে দায়িত্ব আপনার, আমার নয়।”

    “জানবার কৌতূহল নেই।”

    “ও চিঠিগুলো আমার জীবনের অংশ। আমার চিঠির চেয়ে আমি যে মহান। আশা করি রবীন্দ্রনাথের শাহজাহান পড়া আছে।”

    “বোধহয় আছে। তাহলে আমিই বলি, আপনার চিঠিগুলো ছবি হয়ে গেছে।”

    “তুমি কি কেবলই ছবি? কাগজে শুধু হাতে লেখা?”

    “এবার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পেরেছি। একটা কথা আপনাকে বহুদিন বলা হয়নি। ইচ্ছে করেই বলিনি। আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছেন। তার সঙ্গে সম্ভবত এ বছরই আমার বিয়ে হবে।”

    “এতবড় খবরটা এতদিন চেপে গেছেন? মনে কী হয়েছিল যে শুনেই আমি চৈতন্য হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ব? আপনার কী ধারণা হচ্ছিল বা এখনও আছে যে আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি?”

    “হাবুডুবু না খেলেও কিছুটা যে ডুবু খেয়েছেন সে বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই, আপনারও থাকা উচিত নয়। আপনাকে যে খবরটা দিতে পারিনি সেটা আমার দুর্বলতা। বন্ধু হিসেবে আপনাকে হারাতে আমি প্রস্তুত হতে পারিনি। তাই বহুদিন আপনার সঙ্গে সম্পর্ক না রেখেও আপনি এ বাড়িতে এসেছেন শুনে ছুটে এলাম কথা বলতে।”

    যূথিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। সে কোথায় আছে, কেমন আছে, কী করে তার জীবন কাটল এ খবর অনেক ইচ্ছা ও আগ্রহ সত্ত্বেও যোগাড় করতে পারিনি। অনেকবার ইচ্ছে হয়েছে স্টেটসম্যানের পার্সোনাল কলমে অথবা আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন দেবার। ‘চল্লিশ দশকের প্রথম দিকে গোয়াবাগান অঞ্চলে বাস করতেন জনৈকা যূথিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগে বিজ্ঞাপক অতিশয় আগ্রহী। বক্স নাম্বারে চিঠি লিখুন।” বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। আমি জানতাম বিজ্ঞাপন চোখে পড়লেও যূথিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়া দেবেন না।

    এবার বলি আর একটি মেয়ের কথা, যিনি এখন আমার সমবয়সী মহিলা, জ্ঞান ও শাস্ত্রীয় লেখক হিসেবে ভারত বিখ্যাত। ছোটবেলা থেকে আমি সাইনাস রোগে ভুগে আসছি। এটা আমার সারা জীবনের সম্পত্তি। পিসিমা নিয়ে গিয়েছিলেন একজন চিকিৎসকের কাছে, যিনি একই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকতা ও অপেশাদারি হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারি করতেন। ডাক্তার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। এঁরা ছিলেন ক্রিশ্চান। ডাক্তারবাবুর আমন্ত্রণে আমি তাঁর গৃহে প্রবেশের অধিকার পেয়েছিলাম। স্ত্রী, তিনটি কন্যা ও একটি পুত্রের সংসার। বড় কন্যাটি শুধু সুন্দর নয়, তার মুখে পবিত্র মেধার এমন একটা ঔজ্জল্য যা আমি আগে দেখিনি। দুজনেই আমরা ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়তাম। কিন্তু পড়াশোনার বিস্তার ও গভীরতা আমার চেয়ে তার অনেক বেশি। ডাক্তারবাবুদের বাড়ি গেলে সবসময়ই সবাই একসঙ্গে বসে কথাবার্তা হতো। যূথিকার মতো এই মেয়েটি কখনো আমার ‘বিশেষবন্ধু’ হতে পারেনি। আমি এদের সঙ্গে গির্জায় গেছি একাধিকবার। এরা মেথডিস্ট চার্চের অনুরক্ত ছিলেন। যেখানে পাদরি সারমন দেবার পরে উপস্থিত সকলে বুক চাপড়ে উচ্চকণ্ঠে “যীশাস! যীশাস!” বলে চিৎকার করতেন, যেন যিশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ যন্ত্রণার সবাই সমব্যথী। আমার পরিবারে বেশ একটু ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল যে এই পরিবারের পিতা ও মাতা আমাকে তাঁদের ধর্মে দীক্ষিত করে কন্যার সঙ্গে বিবাহ দিয়ে দেবেন। ব্যাপারটা এতই বালখিল্য যে এ নিয়ে আমি কারুর সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে রাজি হইনি।

    কন্যাটির নাম বলব না, তাঁর বিষয়ে লেখবার সম্মতি চাইনি, অতএব পাইনি। কখনো সখনো আমাদের দুজনের কিছুটা কথাবার্তা হতো। তার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও কিছুটা প্রীতির মোলায়েম উত্তাপের বেশি ছিল না। আমার প্রশ্নের উত্তরে একদিন কন্যাটি বলেছিল, সেই বাইবেলের প্রত্যেকটি অক্ষর ঈশ্বর-পুত্র যিশুর নিজের মুখের কথা বলে মানে ও বিশ্বাস করে।

    আমি ছাড়া কোনো হিন্দু যুবক অন্দরে প্রবেশ করার অধিকার তখনও পায়নি। এক সময় কলকাতার একটি মাসিক পত্রিকায় আমার একটি গল্প ছাপা হয়েছিল। গল্পের আধারশীলা চিল এই ক্রিশ্চান পরিবারটি। গল্পটি আমার বন্ধু পড়ে নিয়েছিল, যদিও আমি ওদের কাছে তার উল্লেখ পর্যন্ত করিনি। একদিন ওদের বাড়ি গেলে সে বলল, “গল্পটা মন্দ হয়নি, কিন্তু বাক্য ও বানানের মধ্যে ভুল আছে।”

    “আপনি পড়লেন কী করে?”

    “পত্রিকাগুলো সকলেরই পাঠের বিষয়। পেলাম, দেখলাম— “এবং জিতলাম না। তাই তো?”

    “একদিকে জিতলেন, কেননা গল্প লেখা আমার দ্বারা কদাচ সম্ভব হবে না। আপনি হয়তো বড় হয়ে অনেক গল্প উপন্যাস লিখবেন। আমি নিশ্চয়ই করে জানি আমার দ্বারা ও কাজ হবে না।”

    “অর্থাৎ আপনি নিজেকে কখনোই জনসমাজের কাছে খুলে ধরতে পারবেন না। নিশ্চয়ই জানেন কাহিনিকারদের কাহিনিতে তারা নিজেরা সর্বদা প্ৰচ্ছন্ন।”

    “হয়তো আপনি ঠিকই বলেছেন, কিন্তু আসল কথাটা হচ্ছে ভালো বাংলা জানেন বলে আপনার বেশ অহঙ্কার আছে। কিন্তু আপনার লেখায় কয়েকটি বাক্য ও বানান নির্দোষ নয়।”

    “মার্ক করে রেখেছেন?”

    “রেখেছি। আমি মাস্টারের মেয়ে ও নিজেও মাস্টারি করব। ওটা আমার মজ্জাগত, তাই সুযোগ পেলে ছাড়ি না।”

    “ভুলগুলো দেখতে পারি?”

    “নিশ্চয়ই। তা না হলে মাস্টারি করে লাভ কী? তবে একটা কথা বলব। এখানে বসে পড়বেন না। বাড়ি গিয়ে দেখবেন।”

    বাড়ি গিয়ে গল্পটা খুলে দেখলাম বেশ কয়েকটি বাক্য ও শব্দ ‘বন্ধুর’ হাতে সংশোধিত হয়েছে। প্রত্যেকটি সংশোধন বিশুদ্ধ।”

    পরে একদিন কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি জানতে চাইলাম, “এত ভালো বাংলা আপনি শিখলেন কেমন করে?”

    “আমি সংস্কৃত পড়েছি।”

    “সে তো আমিও পড়েছি।”

    “আপনি টোলের পণ্ডিতের কাছে পড়ে আদ্য মধ্য পাস করেছেন। আমি কলেজের অধ্যাপকের আলাদা করে পাঠ নিয়ে ‘উপাধি’ পাস করেছি।”

    “ব্যাকরণ তীর্থ?”

    “না। কাব্যতীর্থ।”

    “ব্যাকরণ তীর্থ হবার ভয়ে ‘উপাধি’ পরীক্ষা দিইনি। আপনি ক্রিশ্চান হয়ে কাব্যতীর্থ পর্যন্ত সংস্কৃত পাঠ করলেন কেন?“

    “আমার জীবনে কয়েকটি প্রবল ইচ্ছের মধ্যে একটি হলো বেদ, বেদান্ত, পুরাণ, উপনিষদ, ইত্যাদি সমগ্র প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করা।”

    “তাহলে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ছেন কেন?”

    “আমি কিপলিং-এর বাক্য বিশ্বাস করি না যে, প্রাচ্য পাশ্চাত্য কখনো মিলবে না, মিলবে না।”

    এ প্রসঙ্গ আমি আর বাড়ালাম না। কিপলিং-এর কিছুই আমার পড়া নেই। আমার কাছে তিনি সাম্রাজ্যবাদের কবি, অতএব অস্পৃশ্য।

    এমএ পড়ার সময় ঐ ক্রিশ্চান পরিবারের আর একটি হিন্দু যুবকের প্রবেশ ঘটল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ছাত্র। প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে সবেমাত্র সবচেয়ে বিখ্যাত কলেজের লেকচারার। তিনি নিযুক্ত হলেন আমার ‘বন্ধু’কে এমএ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে। বিএ অনার্সে সে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও প্রথম হতে পারেনি। এমএ পরীক্ষার লক্ষ্য : ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।

    হলেনও। এবং তার চেয়েও অনেক বড় ও মহত্তপূর্ণ ঘটনা ঘটল— শিক্ষক ও ছাত্রী পরস্পর প্রণয়াবদ্ধ হলেন।

    আমার এই বন্ধুর জীবন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি উপন্যাস লেখা যায়। লেখা উচিত। আমাকে এখানে সামান্য কয়েকটি বাক্যে তার কাহিনি সমাপ্ত করতে হচ্ছে। দীর্ঘ আট বছর তিনি লড়ে গিয়েছিলেন ক্রিশ্চান ধর্মের সঙ্গে। যাকে ভালোবেসেছিলেন, তিনি কেবল হিন্দু নন, কট্টর মার্কসবাদী। ভগবান ও ধর্মে অবিশ্বাসী। এদের বিবাহে দুই পরিবারেই গভীর আপত্তি। সাত বছর দুজনের মধ্যে দেখাদেখি নেই। দুজনেই অবিবাহিত। পরস্পরের প্রতি উত্তরোত্তর অধিক আকৃষ্ট। একদিন চৌরঙ্গির রাস্তায় চলতে চলতে আমার ‘বন্ধু’ দেখতে পেলেন অন্যদিক থেকে তাঁর পরম প্রিয় বন্ধু আসছেন। হঠাৎ এক মুহূর্তে বিপ্লব ঘটে গেল। মেয়েটি দ্রুতপদে এগিয়ে গিয়ে তার ভালোবাসার লোকের মুখোমুখি দাঁড়াল। বলল, “আমি এক্ষুনি, এই মুহূর্তে, মুক্তি পেয়ে গেলাম।”

    ভদ্রলোক অবাক হয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। “কীসের মুক্তি? কোন্ বন্ধন থেকে মুক্তি?”

    “আমি এক্ষুনি, তোমাকে এগিয়ে আসতে দেখে বুঝতে পারলাম সব ধর্ম সব ঈশ্বর মিথ্যা! সত্য একমাত্র জীবন। এই উপলব্ধি ঘটতে আমার সাত আট বছর লেগে গেল।”

    আমি তখন নাগপুর টাইমস্-এর এডিটর। হঠাৎ এই বন্ধুর চিঠি। “আজ ভাবছি কী করে জীবনের এই চব্বিশটা বছর মিথ্যের মধ্যে কেটে গেল। আমি এখন প্রকৃত সত্যের সন্ধান পেয়েছি। তার নাম সাধারণ মানুষ। সারা দুনিয়ার– বিশেষ করে আমার মাতৃভূমির খেটে খাওয়া অর্ধাহারী, অশিক্ষিত মানুষ। এদের মুক্তির একমাত্র পথ শ্রেণি সংগ্রাম। আমি এখন পুরোপুরি কমিউনিস্ট। আপনার যদি না জানা থাকে, তাহলে জানাচ্ছি ছ’মাস আগে আমাদের বিবাহ হয়েছে।”

    প্রায় বিশ বছর পরম সুখে ও গভীর মননে কাটল এই অসাধারণ দম্পতির। অধ্যাপক মহাশয় তাঁর কলেজে জনপ্রিয় ছিলেন। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে ক্যান্সারে তাঁর মৃত্যু হয়। আমার বন্ধুর সঙ্গে কদাচ কখনো কলকাতায় গেলে দেখা হতো। তিনি একটি কলেজে ইংরেজি অধ্যাপনা দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত পাঠ করে এমএ পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন এবং কলকাতারই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে রীডার পোস্টে চাকরি পেলেন। ক্রিশ্চান ধর্মে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাঁর মতে, এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কোনো মানে নেই। তিনি স্ত্রীলোক। তাই অধ্যাপকগণ তাঁকে প্রায় সমাজচ্যুত করে রাখলেন। বিভাগের যিনি প্রধান তিনি সর্বদা বলতেন, উনি তো খ্রিষ্টান। বিধবা হয়েও মাছ-মাংস-পেঁয়াজ খান। ইংরেজি পড়াতে গিয়ে অনেক বদনাম কুড়িয়েছেন। তাই সংস্কৃতে পড়াশুনা করে এখন বেদভাষা পড়াচ্ছেন।

    যে ছিল এককালের ছোটবেলার বন্ধু, সে হয়ে গেল অধ্যাপিকা মহিলা। দু-তিন বছর পর পর গোটা সংস্কৃত সাহিত্য নিয়ে একের পর এক তার গবেষণামূলক পুস্তক দেশে ও বিদেশে ছাপা হতে লাগল। সারা পৃথিবীল বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা কেন্দ্রে তাঁর অহরহ নিমন্ত্রণ। কিন্তু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াতেন সেখানে অবসর নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাঁকে পূর্ণ অধ্যাপক পদে উন্নীত করলেন। দিল্লি, পুনে ও ম্যাড্রাস থেকে পূর্ণ অধ্যাপক পদে নিয়ন্ত্রিত হয়েও তিনি কলকাতার সেই যে প্রাচীন অবর্ণনীয় আকর্ষণ, যা আমি কখনো অনুভব করিনি কিন্তু বহু বাঙালি করেছে, করছে ও করবে, তা কাটিয়ে চলে যেতে পারেননি।

    এখন পরিণত বয়সে বহুকালের পুরোনো বন্ধু সর্বপ্রথম কাছাকাছি হবার সুযোগ পেয়েছি। আমার দিল্লির বাড়িতে তিনি আদৃত অতিথি, তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে আমি সমাদৃত। আমাদের পঠন পাঠন লিখনের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি মার্কসবাদী বলে পরিপূর্ণ রাজনীতি ও সমাজ সচেতন। বৈদিক যুগের সমাজ ও সভ্যতা নিয়ে তাঁর কয়েকখানা বই পড়লে সে প্রাচীন সভ্যতার বাস্তব চেহারার সন্ধান পাওয়া যায়। লোকধর্মে ইট যেমন রামশীলা হয়ে ওঠে, অনৈতিহাসিক এক টুকরো জমি স্বর্ণমূর্তি লাভ করে রামজন্মভূমি হিসেবে, আমার বন্ধুর কিতাবে সে লোকধর্ম নেই। তিনি লোকায়ত পাণ্ডিত্যের সম্মানে উজ্জ্বল। আমাদের বৃদ্ধ বয়সের বন্ধুতা সুন্দর ও উপভোগ্য। জীবন অনেক সময়ে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত পুরস্কার এনে দেয়।

    যে পণ্ডিতমশাইয়ের টোলে পাঠ করে সংস্কৃতে আদি ও মধ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম, তিনি আমাকে এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে গৃহশিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন। আমার দুই ছাত্রী ও এক ছাত্র। বড় বোন কলেজে পড়ে, তাকে আলাদা পড়াতে হয়। এই পরিবারে আমি হয়ে গিয়েছিলাম বিশেষ সমাদৃত। প্রায় বাড়ির মানুষের মতো। কী করে আমার এবং বড় ছাত্রীর মধ্যে ভালোবাসা জন্মাল এবং তা পেয়ে গেল দ্রুত গভীরতা, এ রহস্য আমি আজও ভেদ করতে পারিনি। সে ছিল এক বিশীর্ণ নদীর মতো মোলায়েম ও অতিশয় সুন্দরী। কথাবার্তা বলত খুব কম। কিন্তু হাসির ঝরনা তার মুখ থেকে অহরহ প্রবাহিত হতো। এতটা প্রাণবন্ততা এক শীর্ণ সুন্দর দেহে জমজমাট থাকতে পারে কী করে, আমি ভেবে পেতাম না। পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিল না। প্রায়ই কোনো না কোনো ছোটখাটো অসুখ-বিসুখে কলেজ কামাই করতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়া তার প্রায় স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুতরাং ছাত্রী হিেেসব সে লোভনীয় ছিল না। কিন্তু সে তো আমার শুধু ছাত্রী ছিল না, সে ছিল অনেক কিছু। তাই তাকে আমি বিশেষ যত্নের সঙ্গে পড়াবার চেষ্টা করতাম।

    সে জানত আমি গরিব ঘরের ছেলে, ওদের বাড়ির টিউশনির অর্থে আমার এমএ পড়া চলছে, থাকি পিসিমার বাড়িতে—স্নেহ ভালোবাসা ও অভাব যেখানে একসঙ্গে রাজত্ব করে। সুতরাং সে ব্রাহ্মণ বাড়িতে আমার প্রায়ই নিমন্ত্রণ হতো। আমার ছাত্রী পাশে বসে খুব প্ৰচ্ছন্ন আনন্দের সঙ্গে খাওয়াত। একদিন আমি তাকে পাঠ্যপুস্তক থেকে শেলীর কবিতা পড়াচ্ছি। কবিতাটি আমার মুখস্থ। আমি প্রথম তার ব্যাখ্যা করে, পরে আবৃত্তি করছি :

    I can give not what men call love
    But which thou accept not
    The worship the heart lifts above
    And the Heavens rejects not,—
    The desire of the moth for the star,
    Of the night for the morrow,
    The devotion to something afar
    From the sphere of our sorrow

    আমি চোখ বুজে আবৃত্তি করছিলাম, চোখ খুলে দেখি আমার ছাত্রী ও শোতৃর গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে।

    আমরা দুজনে কিছুক্ষণ নীরবে বসে রইলাম। তারপর উঠে আমি ওর পাশে দাঁড়ালাম। শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। অনিশ্চিত অপ্রস্তুত মুখখানা তুলে নিয়ে ওষ্ঠাধারে চুমু খেলাম। দুটি শঙ্কিত শিহরিত আনন্দিত ও সন্দেহসঙ্কুল চোখ আমার চোখে মিনিটখানেক অনিশ্চল জড়িত হলো। যে চোখ দুটি আমি আজও ভুলিনি। পরের কাহিনি অতি অনাটকীয় অবশ্যম্ভাবী।

    “আমাদের বিয়ে হতে পারে?”

    “না।”

    “তুমি তোমার বাবা-মাকে বলতে পারবে?”

    “না।”

    “আমি যদি বলি?”

    “সর্বনাশ ঘটবে।”

    “এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই?”

    “না।”

    ভবিষ্যতের পরেও ভবিষ্যৎ থাকে। যেমন অতীতের আগেও অতীত। শুধু বর্তমানই অস্থির। চলে যাওয়া তার নিয়ম। ‘ভবিষ্যৎ নেই’ দিয়ে এ কাহিনির এখানেই শেষ। ভবিষ্যতের পরের ভবিষ্যৎ অন্য সময়ে বর্ণিত হবে।

    আমার তখন একুশ বছর বয়স। বুঝতে পারলাম আমি ভীষণ একা। এই একাকী অসহ্য হয়ে উঠল। আমাদের পরিবারে বাবা ও কাকার মধ্যে আর্থিক অবস্থার বিশেষ তারতম্য। আমরা যখনই কলকাতায় একসঙ্গে বাস করেছি, পরিস্থিতি সুখকর হয়নি, হতে পারত না। বাবা সংসারের দেয় সবটুকু টাকা পাঠাতেন কাকিমাকে। আমার মা থাকতেন সর্বদা নিঃস্ব। পারস্পরিক ব্যবহারে তারতম্য হতোই। তার সবটাই স্পর্শ করত আমার মা, ভাইবোনদের। আমাকে সবচেয়ে কম।

    কাকার বাড়িতে আমার নিজের স্থান ছিল আদরের। কিন্তু মা, ভাইবোনদের দুঃখ বেদনা অবহেলা ও সম্মানের অভাব স্পর্শ করত আমাকে।

    আমার বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলের বিয়ে হয়ে যাক। ভদ্রলোক নিশ্চয়ই ভয় পেতেন কোনো অজাত কুজাত মেয়েকে যদি ছেলে বিয়ে করে বসে। একুশ বছর বয়সে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম। একবারও মনে হলো না আমার মা কিছুতেই পুত্রবধূকে গ্রহণ করতে পারবেন না। আমি সবেমাত্র স্টেটসম্যানে চাকরি পেয়েছি। মা’র ইচ্ছা ছিল এবং আমার উচিত ছিল, কয়েক বছর তাঁর দুঃখ অভাব সব পূর্ণ করে—পরে বিবাহ করি।

    বিবাহ হলো স্বাভাবিক সামাজিক নিয়মে অর্থাৎ সম্বন্ধ করে। যে বাড়ির মেয়ে আমাদের ঘরে এল তাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও অনেক উঁচু। নিজেদের বড় বাড়ি বালিগঞ্জে। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পরিবারের সবাই অগ্রসর। যিনি সম্বন্ধ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন তিনি মেয়ের অনেক বয়সের বড় ভাই, উঁচু কাজ করেন। লন্ডনে শিক্ষিত। তাঁর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলাপ করে বোধহয় আমি তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাম। নিজেদের নিম্নমধ্যবিত্ত দরিদ্র সামাজিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মন যে কী ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত হয়েছিল এ সত্যটা হঠাৎ সজাগ হলো। আমি বিয়েতে রাজি হলাম। মা এবং কাকিমাদের সম্মতির অভাব আমাকে নিরস্ত করল না। বাবা রাজি আছেন এই আমার পক্ষে যথেষ্ট। মেয়েটির দাদা আমাকে বলেছিলেন তাঁর বোনের বয়স, আমি অকপটে বলেছিলাম, আমার বয়স তেইশ, প্রায় চব্বিশের কাছাকাছি। নিজেকে তখন ছাব্বিশ সাতাশ বছরের ক্ষতবিক্ষত মানুষ বলে মনে হতো। মাত্ৰ আড়াই বছর বাড়িয়ে বলেছিলাম। এই অপরাধ চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে আমার স্ত্রী কখনো ক্ষমা করেননি।

    বিবাহের তিন মাস পরেই আমরা দুজনে বৌবাজার অঞ্চলে একটা বাড়িতে আলাদা সংসার পাতলাম। মা-ভাইবোনেরা বাবার কাছে খুলনায় চলে গিয়েছিল। তিন মাস দুজনে সংসার করার সময় আমার স্ত্রী হলো অন্তঃস্বত্ত্বা। স্টেটস্ম্যান থেকে পদত্যাগ করে নাগপুর টাইমসের মতো একটি ছোট পত্রিকার সম্পাদক হয়ে মধ্যভারতে চলে যেতে তার পূর্ণ সম্মতি ও উৎসাহ ছিল। এক গ্রীষ্মের দিবসে আমরা নাগপুরে চলে এলাম। উঠলাম বাবার পরিচিত এক উকিলের বাড়িতে, যিনি পরে আমার বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধেয় ও স্নেহবান হয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের জাজ হয়ে তাঁর কর্মজীবনে অনেক সুখ্যাতি হয়েছিল।

    নাগপুর টাইমসের অফিস দেখে আমার ভীষণ ভয় হলো, বুঝিবা খুব বড় রকমের ভুল করে বসেছি। ছোট একটা নড়বড়ে একতলা বাড়ি, ওখানেই ছাপাখানা, হাত দিয়ে টাইপসেটিং ও ফ্ল্যাট মেশিনে পত্রিকার মুদ্রণ। স্টাফ বলতে দুজন সাব-এডিটর ও একজন রিপোর্টার। ম্যানেজিং এডিটর ভগবতীচরণ শুরু ব্রাহ্মণ জাতে বিবাহ করার জন্য পিতা কর্তৃক পরিত্যক্ত। তিওয়ারী নামে এক ব্যক্তি পত্রিকা ম্যানেজার। রবিশঙ্কর শুক্রের আসল প্রতিনিধি। তিনি পত্রিকার খরচ যোগান। সবকিছু সিদ্ধান্তের শেষ দায়িত্ব তাঁর।

    নিয়োগের ব্যবস্থা মতো পনেরো দিনের মধ্যেই আমি একটা বড়সড় বাংলো নিবাসের জন্য পেয়ে গেলাম। চারখানা শয়ন ঘর, মাঝখানে বড় বৈঠকখানা, সামনে প্রকাণ্ড বারান্দা। বাংলো থেকে আলাদা রান্নাঘর। বাড়ির সামনে বেশ বড় লন, গোটাছয়েক প্ৰকাণ্ড ইউক্যালিপটাস গাছ, যা আমি আগে দেখিনি। তিওয়ারীর সঙ্গে আমার বেশ সদ্ভাব হয়ে গেল। তাঁর সাহায্যে সম্পাদকীয় বিভাগে কিছু নতুন লোক নেওয়া হলো। এদের মধ্যে দুজন এখন সুখ্যাত ব্যক্তি। তরুণ কুমার ভাদুড়ি জব্বলপুর থেকে নাগপুরে এসে আমার পত্রিকার প্রথম।

    রিপোর্টার নিযুক্ত হন। পরে একসময়ে স্ত্রী ও শিশুকন্যা নিয়ে, তরুণ ভাদুড়ি আমাদের বাংলোরই একটা অংশে বাস করতেন। সেই শিশু এখন জয়া ভাদুড়ি। তরুণ সাংবাদিকতায় সুখ্যাতি অর্জন করে মধ্যপ্রদেশে ট্যুরিস্ট কর্পোরেশনে চেয়ারম্যান হতে পেরেছিল। রিপোর্টার ছাড়াও তার উপন্যাস ও উপন্যাসভিত্তিক ছায়াছবি তাকে আরও বিখ্যাত করেছে। অন্য লোকটির নাম ভেনুগোপাল রাও। সে লিঙ্ক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হয়েছে এবং এখন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার দিল্লিস্থ অফিসের অধিকর্তা।

    নাগপুর টাইমসের আস্তে আস্তে উন্নতি হতে লাগল। আমারও নাগপুর সাংবাদিক সমাজে কিছুটা প্রতিষ্ঠা হলো। অনেকে বলতেন আমি ভারতবর্ষের সর্বকনিষ্ঠ সম্পাদক। ‘হিতবাদ’ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক ও সার্ভেন্টস অব ইন্ডিয়া সোসাইটির একজন পদস্থ ব্যক্তি, এ.ডি. মনি, কয়েক বছর আগে যিনি প্রয়াত হয়েছেন, প্রায়ই স্থানীয় সম্পাদকের সভাতে এই কথাটি প্রচার করতেন।

    .

    ১৯৪৬ সাল পেরিয়ে এল ১৯৪৭। রবিশঙ্কর শুরু সি.পি. ও বেরারের প্রধানমন্ত্রী। ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজ বিদায় নেবার সময় প্রস্তুত। ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য কংগ্রেসী নেতৃত্ব তৈরি। রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে ইতিহাসের গর্ভ থেকে জন্ম নিচ্ছে একটি নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে এই নতুন রাষ্ট্রের খণ্ডিত অবয়ব। যার মাঝে এগারোশো মাইল ভারতভূমি। দেশ স্বাধীন হচ্ছে, অথচ মানুষদের মনে তেমন আনন্দ নেই। তারা যেন এক বিপন্ন রাত্রি থেকে অন্য এক বিপন্ন প্রভাতে পদক্ষেপ করছে।

    ‘নাগপুর টাইমস’ ছোট কাগজ। বিক্রি মাত্র পাঁচ হাজার। তবু সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখতে বসে আমার হৃদয় মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে উঠত। কী ভাষায় পাঠকদের কাছে ব্যাখ্যা করব সমাগতা প্ৰায় স্বাধীনতা। এ তো সেই মার্কিন পণ্ডিতদের মস্তিষ্ক নিঃসৃত Empire to Nation Theory-র প্রথম উদাহরণ। কাল যা ছিল সাম্রাজ্য আজ তা হচ্ছে স্বাধীন দেশ। অ্যালবার্ট ক্যামুর ভাষায়, “ঘটছে অনেক কিছু। : বদলাচ্ছে খুব কম।”

    লালকেল্লায় ইংরেজের পতাকা বিদায় নিচ্ছে। উড়ছে স্বাধীন ভারতের ত্রিবর্ণ ও অশোকচক্র পতাকা। গণতন্ত্র তৈরি হচ্ছে ইংল্যান্ডের মডেলে। আমাদের নেতারা বলেছেন, ১৯০৬ সাল থেকে নাকি আমরা পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি নিয়ে হাত পাকাচ্ছি। ইংরেজ আর শত্রু নয়, পরম মিত্র। ভারতের সংবিধান তৈরি হচ্ছে যার সৌধ ইংল্যান্ডীয় মডেলে গণতান্ত্রিক। কিন্তু সারা দেহ অর্থাৎ সমস্ত দেশ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট অব নাইনটিন থার্টি ফাইভ” থেকে সংগৃহীত। অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হচ্ছে কিন্তু আভ্যন্তরীণ সাম্রাজ্যবাদ রেখে দেওয়া হচ্ছে অন্তত কিছুকালের জন্য। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ইন্ডিয়ান ক্রিমিন্যাল প্রসিডিওর অর্থাৎ শান্তিরক্ষা, বিচার, আই.সি.এস মডেলে তৈরি আইরন ফ্রেম আই.এ.এস. স্বাধীন ভারতের বড় বড় স্তম্ভ।

    এই স্বাধীনতাকে স্বাগত ও প্রশংসা করে আমাকে সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ লিখতে হতো। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের প্রতিদিন প্ৰণাম করতে হতো সম্পাদকীয় স্তম্ভে। সমালোচনার ভাষা নিজ থেকেই নরম আবেদন-সংবেদন হয়ে উঠত। আমি নিজেই অবাক হয়ে যেতাম। অনেক পরে পরিণত বয়সে পরিষ্কার ভাষায় বলতে পেরেছি, Empire to Nation Theory সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যে স্বাধীন হবার পরে মাদার কান্ট্রির শাসন ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেছে। এর কাছাকাছি দ্বিতীয় নজির আইরিশ রিপাবলিক। যাকে তৃতীয় বিশ্ব বলা হয়, সেখানে বিপ্লবের পথ ত্যাগ করে যে সব দেশ স্বাধীন ও স্বেচ্ছায় প্রাক্তন শাসকদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে, সে সব দেশে গণতন্ত্র বাড়তে পারেনি। হয় একদলীয় একনায়কত্বে পরিণত হয়েছে, নয়তো সেনাপতি দখল করে নিয়েছে রাজশক্তি। ভারতবর্ষে সঙ্কট এখনও তত গভীর হতে পারেনি। কিন্তু ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে’ অর্ধেকের বেশি দেশবাসী এখনও দারিদ্র্য সীমানার নিচে কিংবা তাকে স্পর্শ করে; গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো রোগগ্রস্ত, ভ্রষ্টাচারে নৈতিক বল প্রায় নিঃশ্বেষ।

    কিন্তু সেই ১৯৪৭ সালে মনে তখনও ভয়ের সঙ্গে আশা, সন্দেহের সঙ্গে সাহস। এই দ্বন্দ্ব ভেধ করে একদিন আমার স্ত্রী জন্ম দিল আমার প্রথম সন্তানকে—তুমি সেই পুত্র। আমি হলাম পিতা। এই বিরাট ঘটনাটা আমাকে অভিভূত করে তুলল। স্বামী-স্ত্রী সঙ্গম করে, স্বামীর রেতঃ স্ত্রীর যোনিতে প্রবেশ করে সৃষ্টি হয় ভ্রূণ আস্তে আস্তে সে মানুষের দেহ লাভ করে। তারপরে একদিন মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে এই বিশাল অচেনা অজানা ঘটনাসঙ্কুল পরিবর্তনের তরঙ্গে সর্বদা উদ্বেলিত পৃথিবীতে। পিতা হবার দায়িত্ব সেই থেকে আজ পঞ্চাশ বছর অহরহ বিস্মিত স্তম্ভিত ভীত ও আনন্দিত করেছে। এ রহস্যের অর্থ আমি এখনও বুঝতে পারিনি। হয়তো এ রহস্য অভেদ্য, জ্ঞানের বাইরে, শুধু প্রশ্নের শরশয্যায় মৃত্যুহীন ভীষ্ম।

    কঠোপনিষদে বলা হয়েছে :

    অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত অন্তরাত্মা পুরুষ সর্বজনের হৃদয়ে সর্বদা অবস্থিত। ধান থেকে যেমন শীষ বের করে নিতে হয় তেমনি শরীর থেকে ধৈর্যের সঙ্গে সেই ক্ষুদ্রাকৃতি পুরুষকে বের করতে হবে। এই পুরুষই ব্রহ্ম।

    আমি অনেকবার ভেবেছি এই অঙ্গুষ্ঠ পরিচিত পুরুষই পিতা। তাকে আমরা শরীর থেকে বের করে দিতে পারি না অতএর পুত্র যেমন অসমাপ্ত, পিতাও তেমনি। দু’এর সংলাপ দুই অসমাপ্ত অপরিষ্কৃত, অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত পুরুষ ও তার নিজের আর এক অবতারের মধ্যে কথোপকথন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশ্রীকৃষ্ণকীর্তন – চণ্ডীদাস
    Next Article ডিসেন্ট অফ ম্যান – চার্লস ডারউইন (অসম্পূর্ণ বই)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.