Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পিশাচ দেবতা – অনীশ দাস অপু

    লেখক এক পাতা গল্প212 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মার্থার সাথে সাপার

    আজ শুক্রবার। এস্টেলের সাথে তার অভিসারের রাত। এস্টেল তার রক্ষিতা। প্রতি শুক্রবার পল মার্থাকে কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে রাতটা এস্টেলের বাড়িতে কাটিয়ে আসে। মার্থা স্ত্রী হিসেবে খুব ভাল। কখনও পলকে আলফালতু প্রশ্ন করে ব্রিতকর অবস্থায় ফেলে না। মার্থা খুব গোছানো স্বভাবের মেয়ে। বাড়িটাকে সবসময় ঝকঝকে, তকতকে করে রাখে। ব্যবসার স্বার্থে পলকে প্রায়ই বাড়িতে পার্টি দিতে হয়। মার্থা কখনও না বলে না। পলের মনে পড়ে না মার্থা তার সাথে কখনও ঝগড়া করেছে কিনা। পলকে খুব বিশ্বাস করে মার্থা। কখনও অন্য পুরুষের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলতে যায় না। বিছানাতেও মন্দ নয় সে। রাগ কি জিনিস। জানা নেই মার্থার। আর তার রান্নার হাত? উফ, রান্নার ব্যাপারে মার্থা একটা প্রতিভা বটে! একবার যে মার্থার হাতের রান্না খেয়েছে জীবনে সে সেই স্বাদের কথা ভুলতে পারবে না।

    মার্থাকে নিয়ে পল সুখী। এতই সুখী যে তার বন্ধুরা তাদের সুখকে ঈর্ষা করে। তাহলে পলের রক্ষিতার কাছে যাবার দরকারটা কি? আসলে মার্থা বড় চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে, সাত চড়ে রা করে না, আর তার মধ্যে রসবোধের বড় অভাব। কদাচিৎ তাকে হাসতে দেখেছে পল, তাও কসরৎ করে ওকে হাসাতে হয়েছে। আর এ ব্যাপারটাই পলের একদম ভাল লাগে না, সহ্যও হয় না।

    এস্টেল সম্পূর্ণ মার্থার বিপরীত। মার্থার মাঝে অনুপস্থিত দোষের সবগুলোই তাঁর মধ্যে বিরাজমান। এস্টেল অমনোযোগী, চট করে রেগে ওঠে, সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে, বেপরোয়া স্বভাবের, সুদর্শন পুরুষ দেখলেই গলে যায়। তবে সে যথেষ্ট হাসিখুশি, তার সাহচর্যে জীবনের আনন্দময়, মজার দিকটা খুঁজে পাওয়া যায়। আর শয্যাসঙ্গিনী হিসেবেও সে মার্থার চেয়ে যথেষ্ট উদ্দীপক। সন্ধ্যাগুলো তাদের কেটে যায় আনন্দ ফুর্তিতে, বয়ে যায় মদের বন্যা, আর বিছানায় ওঠে প্রবল ঝড়। সাপারে স্যান্ডউইচের বেশি কিছু থাকে না, তা-ও যেমন তেমন করে বানানো, কিন্তু মার্থার সুস্বাদু রান্না খেয়ে অভ্যস্ত পল এস্টেলের অখাদ্য রান্নাকে ক্ষমা সুন্দর চোখেই দেখে থাকে।

    এস্টেলের মত রগচটা, আগুনের গোলাকে বিয়ে করার কথা কল্পনাও করতে পারে না পল, কিন্তু টানা ছটা দিন মার্থার নিরানন্দ সাহচর্য তাকে এত ক্লান্ত করে তোলে যে সপ্তাহের ওই বিশেষ দিনটির জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে সে।

    আজ শুক্রবার। মার্থাকে পল বলে এসেছে তার ব্যবসায়ী মক্কেলদের সাথে জরুরী কাজ আছে, বাড়িতে ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ। তারপর যথারীতি চলে এসেছে প্রণয়ীর অ্যাপার্টমেন্টে।

    দরজার বেল বাজাল পল। সাধারণত বেল বাজানোর পরপরই দরজা খুলে দেয় এস্টেল, সেঁধিয়ে যায় পলের বাড়িয়ে দেয়া বাহুডোরের মাঝে। এ কাজটা মার্থা জীবনেও করবে না, জানে পল। অবশ্য এ নিয়ে তার আর আফসোসও নেই। আর এস্টেলের কাছে আসা মানেই ভালবাসার সাগরে মন্থন। এস্টেল যখন ওকে জড়িয়ে ধরে, গা থেকে ভেসে আসে তারই প্রেজেন্ট করা দামী সেন্টের গন্ধ, সুবাসটা পাগল করে তোলে পলকে। তারপর কলহাস্যে ভেঙে পড়ে দুজনে, চলে উজ্জ্বল। ঝাড়বাতির নিচে মিউজিকের তালে উদ্দাম নৃত্য, মাঝে মাঝে মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে শরীরটাকে আরও গরম করে নেয়-আহ, এরই নাম জীবন!

    কলিংবেল টিপে বরাবরের মত সুখ-স্বপ্নে বিভোর ছিল পল। কিন্তু দরজার আড়ালে দ্রুত পায়ের শব্দ না শুনে কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। তাহলে কি এস্টেল শুনতে পায়নি বেলের আওয়াজ? আবার বেল টিপে অপেক্ষা করতে লাগল সে।

    ঘড়ির দিকে তাকাল পল। ও কি নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এসেছে নাকি। দেরী করে ফেলেছে? না, কাটায় কাঁটায় আটটা বাজে। সাধারণত এ সময়েই সে আসে। তৃতীয়বারের মত বেল বাজাল পল। এস্টেলের কোন সাড়া নেই।

    ঝুঁকে, লেটার-বক্সের ফাঁক দিয়ে ভেতরে তাকাল পল। ছোট্ট হলঘরটা অন্ধকার এবং খালি। লিভিংরুমের দরজা বন্ধ। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক, অন্তত আলো জ্বেলে থাকার কথা, আর ওই দরজাটাও সব সময় ভোলা থাকে। আজ বন্ধ কেন? গানবাজনারও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ পল এলেই এস্টেল চালু করে দেয় রেকর্ড প্লেয়ার।

    অবাক হলো পল, রাগও হলো খুব। এস্টেল নিশ্চয়ই বাইরে গেছে। আজ তার আসার দিন আর আজকেই সে কোন সাহসে বেরুল? যাওয়াটা এতই যদি জরুরী, অফিসে তাকে অন্তত ফোন করে জানাতে পারত। আজ সারাদিন পল অফিসেই ছিল।

    হতাশায় এবং রাগে ফুলতে ফুলতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল পল। গাড়িতে ওঠার আগে একবার মুখ তুলে চাইল এস্টেলের বাড়ির জানালার দিকে। জানালা অন্ধকার, পর্দা তোলা। এস্টেল কোথায় যেতে পারে ভেবে পেল না পল।

    বাড়ি ফিরবে,, ঠিক করল ও। এ ছাড়া করার আছেটাই বা কি। মার্থা তাকে অসময়ে ফিরতে দেখে অবাক না-ও হতে পারে। তার প্রকৃতিই তো এমন। কোন কিছুতেই অবাক হয় না। পলের খুব খিদে পেয়েছে। রাগের চোটে অনেকের খুব খিদে পেয়ে যায়। মার্থা সুস্বাদু কিছু খাবার নিশ্চয়ই তাকে খাওয়াতে পারবে। কারণ মার্থার কিচেনে সব সময়ই কোন না কোন আইটেম রান্না করা থাকে।

    বিরসবদনে নিজের বাড়ি ঢুকল পল, হলস্ট্যান্ডে রেখে দিল ওভারকোট এবং হ্যাট, লক্ষ করল মার্থার কোটটাও ওখানে ঝুলছে, বেডরুমে ওয়ার্ডরোকের বদলে কোটটা এখানে কেন এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাল না সে, সোজা চলে এল লিভিংরুমে।

    আগুনের পাশে, বড় ইজি-চেয়ারটাতে শরীর মুচড়ে বসে আছে মার্থা, বই পড়ছে। কাজ না থাকলে এ কাজটাই সবসময় করে সে। বই পড়ার নেশা তার সাংঘাতিক। আর সিরিয়াস সব বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি। তবে একটা বিষয়ের সাথে বেশিদিন সেঁটে থাকে না। হয়তো এ মাসে তাকে দেখা গেল জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে পড়ে থাকতে, সামনের মাসে হয়তো ডুবে যাবে বোটানির জগতে, পরের মাসে অঙ্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকবে কিংবা ব্যালের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে। তবে যে বইই পড়ুক না কেন, খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে মার্থা। ইদানীং তাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের নেশায় পেয়ে বসেছে। ডাক্তার, ড্রাগস, অ্যানাটমি, সার্জারী ইত্যাদি বিষয়ের ওপর যত বই সে পাচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরীতে, সব বাড়িতে নিয়ে আসছে। সেদিন পল হাসতে হাসতে মার্থাকে বলছিল, আমাদের হাউজ ফিজিশিয়ানের আর কি দরকার, বাজি ধরতে পারি, তুমি ওনার চেয়ে অনেক বেশি জেনে ফেলেছ এ কদিনে। হালকা এই রসিকতায় কিন্তু হাসেনি মার্থা। কোন রসিকতায় সে হাসে না।

    তবে পলকে অবাক করে দিয়ে আজ হাসল মার্থা। ওর ধারণাই সত্যি হলো। ওকে অসময়ে ফিরতে দেখে মোটেও অবাক হয়নি মার্থা। হাসি দিয়ে শুধু বুঝিয়ে দিল পলকে দেখে সে খুশি হয়েছে।

    হ্যালো, ডিয়ার, বলল মার্থা। তোমার বিজনেস অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেলড় নাকি?

    হ্যাঁ। বিকেলে ফোন করে বলল আজ ওরা বসতে পারবে না।

    ভালই হলো। সারাদিন অফিস করার পরে তোমাকে আবার রাত জেগে কাজ করতে হবে না। বসো তুমি। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।

    দুঃখিত, বলল পল। তোমাকে জানানো উচিত ছিল রাতে আমি বাড়ি ফিরছি।

    দুঃখিত হবার কিছু নেই। ফ্রিজে সবসময়ই কিছু না কিছু খাবার থাকেই। লিভার আর বেকনের সাথে সুস্বাদু কিডনি চলবে?

    চলবে মানে দৌড়াবে। খুশি হয়ে উঠল পল। তুমি সত্যি চমৎকার একটা মেয়ে। একই সাথে বিবেকের দংশন অনুভব করল সে। বউটাকে শুধু শুধু ঠকাচ্ছে সে। আজ মার্থাকে দেখতেও সুন্দর লাগছে। সেজেছে বোধহয়।

    তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে। ব্যাপারটা কি? জিজ্ঞেস করল পল।

    আজ দিনটা বেশ ভাল গেছে আমার। কেন?

    না, মানে, এত হাসিখুশি আগে দেখিনি তো!

    হ্যাঁ, জবাব দিল মার্থা। আমি আজ বেশ সুখেই আছি।

    এক মুহূর্তের জন্য সন্দেহটা খোচা দিল পলকে, মার্থার গোপন নাগর-টাগর নেই তো? পরক্ষণে চিন্তাটা ঝেটিয়ে বিদায় করে দিল মাথা থেকে। মার্থা এমন কাজ করতেই পারে না। করলে শুক্রবার রাতটাকেই ব্যবহার করত সে, যে সময়টাতে সে বাইরে থাকে। কিন্তু মার্থা এতই বিশ্বস্ত যে স্বামীর অনুপস্থিতির অন্যায় কোন সুযোগ নেয়নি, শুধু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থেকেছে। ঈশ্বর ওর মঙ্গল করুন!

    আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। তুমি ততক্ষণ এই ড্রিংকটাতে চুমুক দিতে থাকো। শেরীর একটা গ্লাস ওর হাতে ধরিয়ে দিল মার্থা। অতিথির জন্য এই একটা মালকোহলই ওরা বাড়িতে রাখে। স্বামীকে বিশ্রামের সূযোগ দিয়ে কান্নাঘরে ঢুকল স্ত্রী।

    শেরীর গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে অন্যান্য শুক্রবারের সাথে আজকের দিনটার পার্থক্য মেলাতে চেষ্টা করছিল পল। প্রায় নটা বাজে। এতক্ষণে সে আর এস্টেল কয়েকটা ডাবল জিন মেরে দিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনের মেঝেতে পাতা ফারের কম্বলের ওপর শুয়ে শরীরের বন্দনায় মেতে উঠত, রেকর্ড প্লেয়ারে বাজত জ্যাজ মিউজিক-যে ধরনের মিউজিক মার্থার একেবারেই অপছন্দ। সে ঠাণ্ডা গান পছন্দ করে। তার সমস্ত অনুভূতিই ঠাণ্ডা আর ভোতা।

    মার্থা যে মোটা বইটা এতক্ষণ পড়ছিল, ওটা উল্টেপাল্টে দেখল পল। চিকিৎসা শাস্ত্র। পাতা ওল্টাতে গিয়ে নগ্ন নারীদেহের আঁকা ছবি চোখে পড়ল। ছবিটা দেখে তেমন মজা পেল না সে। মেয়েদের শরীর-বৃত্তান্ত। এঁকে দেখানো হয়েছে নানা ইন্টারন্যাল অর্গান, মেডিকেলের ছাত্রদের খুব উপকারে আসবে এই নিখুঁত বর্ণনা। মেয়েরা নিশ্চয়ই নিজেদের ন্যাংটো শরীরের অ্যানাটমি দেখে মজা পাবে না। সে মুখ বিকৃত করে বন্ধ করল বইটা, ছুঁড়ে দিল চেয়ারের ওপর। তারপর জ্যাকেটের পকেট থেকে পেপার ব্যাক থ্রিলার বের করে তাতে মনোনিবেশ করল।

    বইটার প্রচ্ছদে স্বর্ণকেশী, উদ্ভিন্নযৌবনা এক সুন্দরীর ছবি। তার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে কিছুই নেই। মেয়েটার ফিগার অবিকল এস্টেলের মত, তবে এস্টেলের চুল অত লম্বা নয়। এস্টেল আজ ওকে ধোকা দিয়েছে মনে পড়তেই তিড়বিড় করে জ্বলে উঠল ভেতরটা। শুক্রবার রাত তার আনন্দের রাত। আর আজ কিনা তাকে এভাবে গোবেচারা হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে!

    মন থেকে বিরক্তি আর রাগ দুটোই উধাও হয়ে গেল মার্থাকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে খুশি হয়ে উঠল পল। লিভার, কিডনি, বেকন…প্রতিটি আইটেমই দারুণ বেঁধেছে মার্থা। পেটে খিদে ছিল, প্লেট চেটেপুটে খেল সে। শেষে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলল, দারুণ হয়েছে রান্না!

    হবেই তো। আজ বিশেষভাবে বেঁধেছি যে, বলল মার্থা।

    তুমি খুব ভাল মেয়ে। আর তোমার ওপর খুব সহজে আস্থা রাখা যায়, আদুরে গলায় বলল পল।

    আস্থা আসলে রাখা যায় তোমার ওপরে, বলল মার্থা।

    মানে?

    এই যে তোমাকে যা দিই সব চেটেপুটে খেয়ে নাও।

    খাব না কেন? তোমার রান্নার হাত এত ভাল!

    এ কারণেই তোমাকে বোকা বানানো আমার জন্য সহজ হয়েছে।

    ঠাট্টা নাকি? মার্থা ঠাট্টা কি জিনিস জানেই না। ঠাট্টা করে ওকে কোনদিন হাসতে দেখেনি পল। তাই সে বুঝতে পারল না মন্তব্যটা কিভাবে নেবে।

    আমাকে বোকা বানিয়েছ মানে? অস্বস্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। তুমি আবার মানুষকে বোকা বানাতে জানো নাকি?

    জানব না কেন? আমি খুশি যে রান্নাটা তুমি উপভোগ করেছ। তোমার জন্য এটাই আমার শেষ রান্না, ডিয়ার। আর কোনদিন তোমাকে বেঁধে খাওয়াব না। ব্যাপারটা খুব মিস করব আমি। অথচ রান্নার শখ আমার কত!

    মার্থা, আবোল-তাবোল কি বলছ? শেষ রান্না

    হ্যাঁ। আমি আজ চলে যাচ্ছি।

    চলে যাচ্ছ?

    হুঁ। তবে ঠিক কখন যাব এখনই বলতে পারছি না। ব্যাপারটা নির্ভর করবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপরে। কেমন লাগছে তোমার?

    ভয় লাগছে পলের। বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে। বুকের ভেতরে ধুপধাপ লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া খাবারগুলো পেটের ভেতর হঠাৎ যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে, মোচড় দিচ্ছে পেট।

    কেমন লাগছে? আবার প্রশ্ন করল মার্থা।

    কি কেমন লাগছে?

    খাবারের কথা বলছিলাম। কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

    কেন হবে? তুমি তো বরাবরই ভাল রান্না করো। মার্থা, তোমার হয়েছেটা কি বলো তো? ইয়ার্কি করছ?

    আমি কখনও ইয়ার্কি করি না। গম্ভীর হলো মার্থা। আজ বিকেলে এস্টেলের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।

    আঘাতটা এত দ্রুত এসে লাগল, রীতিমত অসুস্থ বোধ করল পল। তবে কোন মন্তব্য করল না।

    হাসল মার্থা।

    বিড়বিড় করল পল: ওর খোঁজ পেলে কি করে?

    হঠাৎ বলতে পারো। তোমার ট্রাউজারের পকেটে ওর একটা চিঠি পেয়ে যাই আমি, লন্ড্রিতে দিতে যাচ্ছিলাম কাপড়টা। তবে এটা কয়েক মাস আগের ঘটনা। কি করব বা করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় লেগেছে আমার।

    এ জন্যেই আজ ওকে বাসায় পাইনি। হতবুদ্ধি দেখাল পলকে। তুমি নিশ্চয়ই বিকেলে ওর বাসায় গিয়েছ, বলেছ আমাদের ব্যাপারটা আর অজানা নেই তোমার কাছে–

    ঠিক ধরেছ, বলল মার্থা। এখন কেমন বোধ করছ?

    কেমন বোধ করছি মানে?

    মানে-সাপারটা খাওয়ার পরে হজমে কোন গোলমাল—

    বমি বমি লাগছে আমার, স্বীকার করল পল।

    বেচারা পেট! ওর আর দোষ কি!

    তুমি আমার খাবারে বিষ-টিষ মেশাওনি তো? ফিসফিস করল পল, কপালে এবং হাতে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

    সেটা নির্ভর করে বিষ বলতে তুমি কি বোঝো তার ওপর।

    কি বুঝি মানে! আর্তনাদ করে উঠল পল। তুমি আমার খাবারে তাহলে সত্যি বিষ মিশিয়েছ!

    না, বলল মার্থা, হাসছে।

    সত্যি বলছ?

    হাসিটা মুছে গেল মুখ থেকে। তোমাকে আমি কখনও মিথ্যা কথা বলিনি, পল। কোনদিন নয়। কিন্তু তুমি আমার সাথে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছ। তোমার সঙ্গে আমার ফারাকটা এখানেই। আমি কখনও মিথ্যা বলি না। আজও তোমার কাছে কিছু সুকাব না। আমি একটা প্ল্যান করেছিলাম, সেটার বিশদ বর্ণনা অত্যন্ত আনন্দের সাথেই তোমাকে দেব।

    ঠিক আছে, বলো।

    এমন সময় বেজে উঠল কলিংবেল। লাফিয়ে উঠল পল। মার্থা বসে রইল চুপচাপ।

    দেখো তো কে এসেছে, বলল সে। যে-ই হোক তাকে ভেতরে নিয়ে এসো। বাইরে খুব ঠাণ্ডা।

    পল দরজা খুলতে গেল।

    দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে দোরগোড়ায়। মি. পল ফেরো? জিজ্ঞেস করল লম্বা জন।

    জী।

    আপনার সাথে কথা আছে আমাদের। ভেতরে আসতে পারি?

    ঘরে ঢুকল ওরা। লম্বা পুলিশ অফিসার পলের সাথে লিভিংরুমে ঢুকে পড়ল। অন্যজন দাড়িয়ে রইল সদর দরজায়।

    উনিই কি মিসেস ফেরো! বলল লম্বু।

    জী। আমার স্ত্রী, জবাব দিল পল। কিন্তু আপনারা–

    মি, ফেরো, আজ কি আপনি ১৪, এক্সেল কোর্টে মিস এস্টেল মন্টজয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন?

    গিয়েছিলাম। কিন্তু ওর সাথে দেখা হয়নি। বাইরে গেছে।

    তখন কটা বাজে?

    দেখুন, আপনার প্রশ্নের মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছি না আমি।

    যা জানতে চেয়েছি তার জবাব দিন দয়া করে।

    আটটার সময় ওর বাসায় যাই আমি। কলিংবেল টিপলেও কোন সাড়া পাইনি। এস্টেল বোধহয় বাড়িতে ছিল না।

    মিসেস ফেরো, আপনার স্বামী আজ কখন বাড়ি ফিরেছেন?

    নটার অল্প আগে।

    এস্টেলের কিছু হয়নি তো? উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করল পল।

    জ্বী, জবাব দিল পুলিশ অফিসার। মারা গেছেন তিনি।

    প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেল পল, আরও অসুস্থ বোধ করল। মারা গেছে? এস্টেল? কিভাবে?

    সে ব্যাপারটাই আপনার কাছে জানতে চাইছি। ওর লাশের পাশে, বেড-সাইড টেবিলের ওপর আপনার নাম-ঠিকানা লেখা এই কাগজের টুকরোটা পেয়েছি আমরা।

    কাগজে পরিষ্কার হস্তাক্ষরে পলের নাম আর ঠিকানা লেখা। হাতের লেখাটা মার্থার। পল স্ত্রীর দিকে মুখ তুলে চাইল। খুব মিষ্টি করে হাসল মার্থা।

    ওকে যদি আমিই খুন করতাম, বলল পল, নিশ্চয়ই নিজের নাম-ঠিকানা লিখে রেখে আসতাম না।

    সেটা অবশ্য আমরাও ভেবেছি। বলল পুলিশ অফিসার।

    ওর খোঁজ পেলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল পল।

    রাত আটটার আগে একটা উড়ো কল পাই আমরা। এক মহিলা ফোন করেছিল। বলল ওই ফ্ল্যাটে যেন চলে যাই, কারণ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মারা গেছে। খবরটা ভুয়াও হতে পারত, কিন্তু আমরা অনুসন্ধান করে দেখব ঠিক করি। বেল বাজিয়েছি কয়েকবার, কারও সাড়া পাইনি। শেষে হল পোর্টারের কাছ থেকে পাসকি নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ি। এস্টেল মনটজয় গলা কাটা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়ে ছিলেন বিছানায়, এ ছাড়া আরও

    থেমে গেল অফিসার, ঘুরল মার্থার দিকে, ও রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে।

    কোথায় যাচ্ছেন, মিসেস ফেরো? জিজ্ঞেস করল সে।

    একটা জিনিস দেখাব আপনাকে, বলল মার্থা।

    মার্থার পেছন পেছন রান্নাঘরে গেল অফিসার, পলও গেল। মার্থা টান মেরে একটা ড্রয়ার খুলল, ভেতরে অনেকগুলো কিচেন নাইফ। সবচে ধারাল নাইফটা অফিসারের হাতে দিল সে।

    আমিই আপনাদের ফোন করেছি, বলল মার্থা, এ জিনিসটা দিয়ে ওই মেয়েটাকে হত্যা করেছি। আমার লুকোবার কিছু নেই। আপনি এখন আমাকে স্বচ্ছন্দে জেল-হাজতে পুরে দিতে পারেন। আমি যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছি। সুন্দরী এস্টেলের কি দশা আমি করেছি তা আমার স্বামীকে বলার দরকার নেই। আমিই ওকে বলছি।

    পলের দিকে ঘুরল মার্থা।

    এস্টেলের সাথে আমি নিজেই যোগাযোগ করি, শুরু করল সে। নিজের পরিচয় দিই ওকে, ও তারপর আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়। আমরা তোমাকে নিয়ে গল্প করেছি, এমন গল্প যা ছেলেদের শোনা বারণ, শুধু মেয়েরাই এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। খুব জমে উঠেছিল আমাদের আড়া। কথায় কথায় ওকে জানাই আমি খুব ভাল রান্না করতে পারি। যে কোন জিনিস সুস্বাদে পরিণত করতে আমার জুড়ি নেই। কথা বলতে বলতে আমি অফিসারের হাতের ওই কিচেন নাইফটা হ্যান্ডব্যাগ খুলে বের করি, এস্টেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর গলায় ধারাল ব্লেড চালিয়ে দিই। ডাক্তারী বই পড়ে আগেই জেনে নিয়েছিলাম কোথায় ছুরি চালালে দ্রুত মারা যায় মানুষ। গরু জবাই করার মত রক্ত ঝরছিল এস্টেলের কাটা গলা দিয়ে। তবে অত রক্ত দেখেও আমার বমি-টমি আসেনি। আমি এরপর ওকে টেনে ওর বেডরুমে নিয়ে যাই, শুইয়ে দিই বিছানায়। তারপর একটা কাগজে তোমার নাম-ঠিকানা লিখে ফেলি। কাগজটা নিজেই দেখেছ। এ ধরনের কেসে পুলিশকে কারও না কারও সাহায্য করতেই হয়। তারপর এস্টেলের গা থেকে জামা-কাপড় খুলে বিছানার পাশে একটা চেয়ারে রেখে দিই। তারপর কেটে নিই ওর কিডনি জোড়া।

    ব্যস, ব্যস, ম্যাডাম। অনেক হয়েছে। এবার আসুন আপনি, বলল পুলিশ অফিসার, চোখে নির্জলা আতঙ্ক ফুটে উঠেছে, সে মার্থার কনুই চেপে ধরে তাকে নিয়ে হলঘরের দিকে এগোল।

    লিভিংরুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় এক ঝটকায় পুলিশ অফিসারের শক্ত মুঠ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল মার্থা, ইজি চেয়ারের ওপর রাখা মোটা মেডিকেলের এইটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল:

    এস্টেলকে কাটা ছেড়া করার সময় আমি অ্যানাটমির সাহায্য নিয়েছি, ডিয়ার। অত্যন্ত দক্ষ হাতে কাজটা করেছি আমি। আমার প্রথম অপারেশন! যদি ওই সময় আমাকে দেখতে অভিভূত না হয়ে পারতে না। চমৎকার ভাবে ওর কিডনি দুটো বিচ্ছিন্ন করেছি ওর শরীর থেকে।

    ও যা বলছে তা সত্যি? জিজ্ঞেস করল পল।

    জ্বী, ছোট্ট করে জবাব দিল অফিসার।

    পল ঘুরে দাঁড়াল মার্থার দিকে। তুমি ওর–

    কিডনি দুটো কেটেছি, ডিয়ার। হ্যাঁ। হেসে উঠল মার্থা। পরিতৃপ্তি এবং আনন্দের হাসি। কলকণ্ঠে সে হাসতেই লাগল। ওকে এভাবে কখনও হাসতে দেখেনি পল। সে হাসতেই লাগল-হাসতেই লাগল-হাসতে হাসতে বলল মান্ধা, ওটা ছিল আমার জীবনের সবচে সুখের এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। আমি ওর কিডনি কেটে নিয়েছি। আর সে জিনিসই তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছ তুমি! সাপারে!

    [মূল: রোজমেরী টিম্পারলির ‘সাপার উইথ মার্থা’]

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদুনিয়া কাঁপানো ভূতের গল্প – অনীশ দাস অপু
    Next Article খুনির রং – অনীশ দেব

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }