Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প327 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১২. হাসপাতালের নবনির্মিত গৃহটি

    হাসপাতালের নবনির্মিত গৃহটি দেখিতে ভারি সুন্দর হইয়াছে। ইটের উপরে লাল-রঙ-করা ছোটখাটো ঝকঝকে সুশ্রী বাড়িখানা দেখিয়া আপসোস হয় যে একটা না দেখিয়া যাদবের মরা উচিত হয় নাই। সামনে কানিশের নিচে ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা হইয়াছে—যাদব মেমোরিয়াল হস্পিটাল। তবু লোকে মুখে বলিতে বলে, শশী ডাক্তারের হাসপাতাল। যাদবকে যে লোকে ভুলিয়া গিয়াছে তা নয়। যাদবের সঙ্গে হাসপাতালের সম্পর্কটা প্রত্যক্ষগোচর হইয়া থাকে নাই,–অথচ এদিকে শশীকেই সকলে হাসপাতালটি গড়িয়া তুলিতে দেখিয়াছে এবং এখন সে-ই সমাগত রোগীদেও সযত্নে বিতরণ করিতেছে ওষুধ।

    হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার হাঙ্গামা শেষ হইয়াছে, শশীর যশ ও সম্মানের বৃদ্ধি স্থগিত হয় নাই। জনসাধারণের সমবেত মনটা চিরদিন একাভিমুখী, যখন যেদিক ফেরে সেই দিকেই সবেগে ও সতেজে চলিতে আরম্ভ করে। জনরবের তিলটি যে দেখিতে দেখিতে তাল হইয়া উঠে তার কারণও তাই। লোকমুখে ছোট ঘটনা বড় হয়-মানুষও হয়। শশী অসাধারণ কাজ কিছুই করে নাই। যাদব যে কৰ্তব্যভার তার উপরে চাপাইয়া দিয়া গিয়াছিলেন সেটুকু কেবল ভালোভাবে সম্পন্ন করিয়াছে। ফলটা হইয়াছে অচিন্তিতপূর্ব। নেতার আসনে বসাইয়া সকলে তাহাকে অনেক উঁচুতে তুলিয়া দিয়াছে। কয়েকটি স্থানে বক্তৃতা করিয়া শশীর বলিবার ক্ষমতাটাও খুলিয়া গিয়াছে আশ্চর্যরকম। সভা-সমিতিতে এখন তাহাকে প্রায়ই বলিতে হয়, সকলে নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে তার কথা শোনে। শশী আবেগের সঙ্গে কথা বলিলে সভায় আবেগের সঞ্চার হয়, হাসির কথা বলিলে আকস্মিক সমবেত হাসির শব্দে সভার আশেপাশের পশুপাখি চমকাইয়া ওঠে।

    সময় সময় শশীর মনে হয় সে যে গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে ঠিক করিয়াছিল সেইজন্য গ্রামের জীবন এমন অসংখ্য বাঁধনে তাহাকে বধিয়া ফেলিয়াছে। এই আকস্মিক জনপ্রিয়তা তাকে এখানে ভুলাইয়া রাখিবার জন্য। ভাগ্যে এটা পুরস্কার নয়, ঘুম। এ তো সে চায় নাই, এ ধরনের সম্মান ও প্রতিপত্তিঃ জীবনের এই গম্ভীর রূপ তাকে কিছু কিছু অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে সত্য, কিন্তু এ ধরনের সার্থকতা দিয়া সে কী করিবে?

    একদিন সকালবেলা পরান ডাক্তারখানায় আসিয়া হাজির। শুষ্ক শীর্ণ মূর্তি, গলায় কল্ফটার জড়ানো, দেখিয়া দুঃখ হয়। দেখিয়া দুঃখ হইবার অবসর শশীর ছিল না। কত দায়িত্ব তাহার, কত কাজ। শশীর মতো ডাক্তারবন্ধু থাকিতেও এমন রোগা হইয়া গিয়াছে পরান? কী হইয়াছে পরানের? গলায় ঘা, খাইতে পারে না? সে তো অনেক দিন আগে হইয়াছিল, মতির চিঠি পাইয়া তাহাকে আনিতে কলিকাতা যাওয়ার সময়। সে ঘা এখনো শুকায় নাই? শশী আশ্চর্য হইয়া যায়, বলে যে, গলার ঘা এতদিন থাকিবার কথা নয়—সে যে ওষুধ দিয়াছিল পরান বুঝি তা ব্যবহার করে নাই? এতকাল সে ঘুমাইতেছিল নাকি?

    হাসপাতালের ব্যস্ত-সমস্ত ডাক্তারের মতো ভাব শশীর,–যেন তার কাছে এসময় পরানের পর্যন্ত খাতির নাই! কথা বলিতে বলিতে সে একটা প্রেসক্রিপশন লিখিতে থাকে। রোগী যে খুব বেশি আসিয়াছে তা নয়, হাসপাতালের ভয় ভাঙিতে গ্রামের লোকের কিছু সময় লাগিবে। জন-সাতেক পুরুষ রোগী শশীর টেবিলের সামনে দাঁড়াইয়া আছে, আর দরজার বাহিরে ঘোমটা দিয়া বসিয়া আছে একটি বউ, একটি পৌঢ়া স্ত্রীলোক, বোধ হয় সে বউটির শাশুড়ি, পিঠে এক হাত আর সামনে এক হাত দিয়া আধজড়ানো ভাবে বউটিকে ধরিয়া রাখিয়াছে। সম্ভবত দুজনেই পরস্পরের কাছে খুঁজিতেছে সাহস। এই তো ক-জন রোগী, পরানকে শশী বসিতে বলারও সময় পাইল না? পরানের পায়ে জুতা নাই, শার্টে ইস্ত্রি নাই, চুলে টেরি নাই বলিয়া নয় তো? ঘরের কোনে বসিয়া মনে মনে বিশ্বজয় করিবার সময় যে ছিল বন্ধু, যার প্রতি স্মরণ করিয়া বাদলঘন উতল দুপুরে কুসুমকে সে ঘর হইতে বিদায় দিয়াছিল, একটা এতটুকু হাসপাতাল সৃষ্টি করার গৌরবে তাকেই শশী আজ এমন অবহেলা করিবে নাকি! টেবিলের এপাশে একটা চেয়ার আছে, তাতে না হোক অনেকটা তফাতে যে টুলখানা আছে তাতে পরানকে শশী বসিতে দিক।

    গলায় বড় যন্ত্রণা হয় ছোটোবাবু।

    শশী মুখ তুলিয়া বলিল, এসো দেখি কাছে সরে। হাঁ করো।

    চেয়ারে বসিয়া স্পষ্ট দেখা গেল না, দরজার কাছে আলোতে যাইতে হইল। ভালো করিয়া দেখিয়া শশী বলিল, ঘা-টা ভালো মনে হচ্ছে না পরান। এক কাজ করো তুমি; একটু বোসো, এদের বিদায় করে দিয়ে আবার দেখব।

    টুলটার উপর পরান বসিয়া রহিল। একে একে সমাগত রোগীদের দেখা শেষ করিয়া শশী হাসপাতালের দক্ষিণকোণের ছোট ঘরখানায় পরানকে ডাকিয়া লইয়া গেল। এটা তার খাসকামরা। এই খাসকামরাটি উপলক্ষ করিয়া কমিটির সভ্যদের সঙ্গে শশীর একটু মনোমালিন্য হইয়াছিল। গাঁয়ের ছোট একটা হাসপাতালের নগণ্য ও অবৈতনিক ডাক্তার, হাকিম-হুকিমের মতো তার আবার খাসকামরা কিসের? শশী কারো কথা শোনে নাই। স্বার্থপরের মতো এই ঘরখানা সুন্দরভাবে সাজাইয়া লইয়াছে। শশীর মনের গতি কে অনুধাবন করিবে? কমিটির প্রাচীন সভ্যদের তো জানিবার কথা নয় যে হাসপাতালের বেগার-খাটা শশী ডাক্তার দরকারের সময় ছাড়াও হাসপাতালে পড়িয়া থাকিতে ভালোবাসিবে! বাড়িতে শশীর যে মন টেকে না এ কথা এ জগতে বোধহয় শুধু টের পাইয়াছে গোপাল !

    পরানের গলায় ঘা শশী যত পরীক্ষা করে ততই তার মুখ গম্ভীর হইয়া আসে। বলে— টোক গেলো পরান, ঢোক গেলো। কেন পারছ না? পারা তো উচিত। আচ্ছা, একটু জল খাও তবে। ঢোক গিলিতে না-পারার মতো অবস্থা তোমার হয়নি পরান, ভয়ে পারছ না।

    জল খাইয়া পরান একটু সুস্থ হয়। ঢোকও গেলে, একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলে, হঠাৎ কেমন ভয় হল ছোটোবাবু, প্রাণটা কেমন আঁকুপাঁকু করে উঠল।

    শশী বলে, না-খেয়ে না-খেয়ে যা শুকিয়েছ প্রাণটাকে, আকুপাকু করবে না? রোজ একবার এসে দেখিয়ে যেও গলাটা, আজ ঠিক বুঝতে পারলাম না। একটা ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি, বিকালে আর একবারে নিজে লাগিও।

    তুলিতে করিয়া পরানের গলায় ওষুধ লাগাইয়া বলে, পারবে দিতে নিজে? না পারো তো কাজ নেই, ও বেলা একবার যাবখন তোমাদের বাড়ি, লাগিয়ে দিয়ে আসব।

    পরান বিদায় নেয়। খোলা জানালায় দাঁড়াইয়া শশী তার লম্বা পা দুটির ছোট ছোট পদক্ষেপ চাহিয়া দেখে। তারপর টেবিলের সামনে চেয়ার টানিয়া বসিয়া মোটা একটা ডাক্তারি বই খুলিয়া নিবিষ্টচিত্তে পড়িতে আরম্ভ করে। মাঝে মাঝে মুখ তুলিয়া ভাবে, অন্য বই টানিয়া পাতা উল্টায়, কী একখানা বই খুঁজিয়া লইতে সমস্ত বইয়ের নামের উপর চোখ বুলায়। তারপর অসময়ে ব্যস্তভাবে শশী আজ বাড়ি ফেরে। আলমারি খুলিয়া একখানা বই লইয়া পড়িতে বসে।

    বেলা পড়িয়া আসিলে হাসপাতালে যাওয়ার আগে সে পরানের বাড়ি গেল। অনেক দিন যায় নাই। অনেক দিন আর কত, দিন কুড়ি। অবস্থা বিশেষে তাও দীর্ঘকাল হইয়া উঠে। পরান বাড়ি ছিল না। মাঠে গিয়াছে। এখন রবিশস্য বুনিবার সময় দুর্বল শরীরেও মাঠে না গেলে তার চলে না।

    কুসুম বলিল, বললাম যেও না, তবু গেল।

    বলে গেছে শিগগির আসবে।

    শশী বলিল, শিগগির আসবে। শিগগির আসবে বলে হাঁ করে বসে থাকবে নাকি আমি? আমার কাজ নেই?

    কাজের মানুষ বুঝি একটুও বসে না? দুদণ্ড আয়েশ করতে বসলে মনে খুতখুতানি ধরে, এ রোগ ভালো নয় ছোটোবাবু। চাকর তো নন কারো, অ্যাঁ?

    শশী বলিল, বাড়ি খালি দেখছি? পরানের মা কই?

    কুসুম উদাসভাবে বলিল, কে জানে কোথায় গেছে বুড়ি যা পাড়া-বেড়ানি।

    শশী সন্দিগ্ধভাবে বলিল, তুমি পাঠাওনি কোথাও, ছল করে?

    আমি? আমি পাঠাব?—লজ্জায় মুখ লাল করিয়াও কুসুম একটু হাসিল, বলিল, কী মানুষ বাবা? যদি পাঠিয়েই থাকি ছল করে, এমন স্পষ্ট করে সে কথা বলতে হয়? কীরকম বিচ্ছিরি লাগে শুনলে?

    শশী বলিল, আজ তোমার কথা ভারি মিষ্টি লাগছে বউ।

    মিষ্টি খেয়ে মুখটা আজ মিষ্টি হয়ে আছে।

    শশী খুশি হইয়া বলিল, তোমার হাসি দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায় বে। লোকজনের ভিড়ে জ্বালাতন হই, তুমি ছাড়া এমন করে আমার কাছে আর কেউ হাসে না। আমার একটিও বন্ধু নেই বউ!

    বউও নেই!–কুসুম নিখুঁত পরিপূর্ণ হাসি হাসিল। তারপর সে জিজ্ঞাসা করিল, ওর গলায় কী হয়েছে?

    শশী বলিল, আজ বলব না, পরশু শুনো।

    কেন, আজ বলতে দোষ কী?

    নিজে আগে জেনে নিই ভালো করে তবে তো বলব? দুধ ছাড়া ওকে আর কিছু খেতে দিও না বউ।

    আর কিছু খেতে পারলে তা দেব? দুধ খেতেও কষ্ট হয়।

    পরানের প্রতীক্ষায় শশী আরও খানিকক্ষণ বসিয়া রহিল। কুসুম আর কথা বলিল না, হাসিলও না। প্রতিপূর্ণ বাক্যের আদানপ্রদান আর কতক্ষণ রেশ রাখিয়া যায়? কুসুম উশখুশ করে। একবার উঠিয়া গিয়া উত্তরের ঘরে চোকে, বাহিরে আসিয়া আকাশে বেলার দিকে তাকায়, তারপর শশীর পাশ দিয়া বড়ো ঘরে ঢুকিবার সময় চাবির গোছাটা শশীর পিঠে ফেলিয়া দিয়া বলে, আহা লাগল?

    এবার শশী উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলে, আর বসবার সময় নেই বউ। পরান এলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিও।

    কুসুম কোনোদিন রাগ করে না, আজ ভয়ানক রাগিয়া উঠিয়া চাবির গোছাটা কাঁধে ফেলিয়া মুখ কালো করিয়া বলিল, বসবার সময় নেই, না?

    শশী একটু আশ্চর্য হইয়া বলিল, হাসপাতালে রোগী এসে বসে আছে তা তো জানো?

    কথাগুলি দুর্বোধ্য নয়, তবু মনে হইল কুসুম যেন চেষ্টা করিয়া মানে বুঝিতেছে। শশী যেন তার অচেনা, এমনি তাকানো কুসুমের।

    সে তো রোজ থাকে।–কুসুম বলিল।

    শশী বিব্রতভাবে একটু হাসিয়া বলিল, বসতে বলো, বসছি। অমন খামকা রাগ কোরো না বউ। সময়ে কাজ না করলে কাজ নষ্ট নয়, বসে গল্প করা পালায় না। তুমি রইলে আমিও রইলাম—

    সে তো ন বছর ধরেই আছি। এক-আধ দিন নয়।

    কথা বলিয়া চোখের পলকে কোথায় যে গেল কুসুম না গেলে কী হইত বলা যায় না। এমন তো সে কখনও যায় না। প্রতিমুহুর্তে কিছু ঘটিবার প্রত্যাশা তাহার কখনও লয় পাইত না। আজ কী হইল কুসুমের, কেন সে হঠাৎ শশীকে এমনভাবে ফেলিয়া চলিয়া গেল, তার রাগ দেখিয়া আজ যখন শশী আত্মহারা হইয়া উঠিতেছিল? শশীর বিবর্ণমুখে ক্লেশের ছবি ফুটিয়াছে দেখিলে অন্তত উল্লাস তো জাগিত কুসুমের। এমন কখনও হয় নাই। তালবনের উঁচু টিলাটার উপর দাঁড়াইয়া একদিন সূর্যাস্ত দেখিবার সময় শশীর অন্তর বড়ো ব্যাকুল হইয়াছিল, অভূতপূর্ব ভাবাবেগে সে থরথর করিয়া কাঁপিয়াছিল, আর অপরাহ্ন বেলায় গৃহচ্ছায়ায় একা দাঁড়াইয়া সে যেন তেমনি বিহ্বল হইয়া গেল অন্য এক ভাবাবেশে। এ তো গ্রাম শশী, খড়ের চালা দেওয়া গ্রাম্য গৃহস্থের এই গোবরলেপা ঘর, যে রমণী কথা বলিয়া চলিয়া গেল, গায়ে তার ব্লাউজ নাই, কেশে নাই সুগন্ধি তেল, তার জন্য বিবর্ণ মুখে এত কষ্ট পাইতে নাই। ওর আবেগ তো গেঁয়ো পুকুরের ঢেউ। জগতে সাগরতরঙ্গ আছে।

    হাসপাতালে ভিনগাঁয়ের লোক বসিয়া ছিল। শশীকে এখনি যাইতে হইবে। এখনি? কুসুমের কাছ হইতে আসিয়া এখনি ভিনগায়ে যাইতে হইবে। কতকগুলি কথা যে ভাবিয়া দেখিতে হইবে শশীর, একটু যে শান্ত করিতে হইবে মনটা।

    কুড়ি টাকা দিতে হবে বাবু।

    কুড়ি টাকা ভিনগাঁয়ের লোকের চমক লাগে।

    ঘ্যানঘ্যান কোরো না। টাকা না দিতে পারো হাতুড়ে দেখাওগে।

    ভিনগাঁয়ের লোক অবসন্ন মন্থর পদে ভিনগাঁয়ে ফিরিয়া যায়। রোগীদের আজ ওষুধের সঙ্গে গাল দেয় শশী!  এত রাগ কেন শশীর, এত নীচতা কেন? কথায় ব্যবহারে কেন এত অমার্জিত রুক্ষতা? সামনে দাঁড়াইয়া কে আজ ভাবিতে পরিবে শশীর মনে বড় চিন্তার আবির্ভাব হয়, জীবনকে বৃহত্তর ব্যাপ্তি দিবার পিপাসা সর্বদা জাগিয়া থাকে।

    পরান আসিলে শশী বলে, যাব বলে দিয়েছিলাম, বাড়িতে ছিলে না যে?

    পরান কৈফিয়ত দিয়া বলে, অত বেলা থাকতে যাবেন বুঝতে পারিনি।

    শশী আজও রাগিয়া বলে, বেলা থাকতে যাব না তো কি অন্ধকার হলে যাব? অন্ধকারে কেউ গলায় ঘা দেখতে পায়, না, তাতে ওষুধ লাগাতে পারে? আজ কিছু হবে না, কাল সকালে এসো।

    সকালে পরান আসিল না, বিকালেও নয়। আগের দিন বিকালে নিজের বিচলিত অবস্থা মনে করিয়া শশী একটু ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। মাঝে মাঝে কেন যে তার এরকম পাগলামি আসে। সামনে যে মানুষ উপস্থিত থাকে তাকেই আঘাত করিতে ইচ্ছা হয়, জিনিসপত্র ভাঙিয়া তছনছ করিয়া ফেলিবার সাধ যায়। নিজেকে তখন বড় অসুখী মনে হয় শশীর। মনে হয়, অনেক কিছু চাহিয়া সে কিছুই পাইল না। ঘর গোছানোর নামে যেমন ঘরখানা জঞ্জালে ভরিয়াছে, জীবনটা তেমনি বাজে কাজে নষ্ট হইল। কী লাভ হইবে তার গ্রাম ছাড়িয়া গিয়া; চিরকাল যদি সে এমন কিছু চাহিয়া যায় যাহা অবিলম্বে পাওয়া যায় না, যার জন্য অপেক্ষা করিতে করিতে মনের উপভোগ করিবার ক্ষমতা পর্যন্ত ক্ষীণ হইয়া আসে? শশীর সন্দেহ হয়, তার মাথায় বুঝি একধরনের গোলমাল আছে। ভবিষ্যতে যারা অন্যরকমভাবে বাঁচিতে চায় বর্তমানকে তারা এরকম নীরস, নিরর্থক মনে করে না। তার অভাব কিসের, দুঃখ কিসের? সুন্দর সুস্থ শরীর তার, অর্থ ও সম্মানের তার অভাব নাই এবং আর কারো না থাক তার জন্য অন্তত একজনের বুকভরা স্নেহ আছে। যতদিন এখানে আছে এসব তো সে অনায়াসে উপভোগ করিতে পারে, জীবনে বজায় রাখিতে পারে মৃদু একটু রোমাঞ্চ। পরের বাড়ি থাকার মতো এখানে দিনযাপন করিয়া তার লাভ কী?

    পরদিন সকালে সে পরানের বাড়ি গেল। না, পরান আজও বাড়ি নাই। মোক্ষদা দাওয়ায় বসিয়া ছিল, সে বলিল, গলায় ঘা দেখাইতে পরান বাজিতপুর গিয়াছে।

    হাসপাতাল, গলা দেখাইতে পরান গিয়াছে বাজিতপুর রাগে শশীর গা জ্বালা করিতে লাগিল। একদিন একটু কড়া কথা বলিয়াছে বলিয়া তাকে ডিঙাইয়া বাজিতপুর যাইবে চিকিৎসার জন্য, স্পর্ধা তো কম নয় পরানের!

    কুসুম রাধিতেছিল, আসিয়া জলচৌকি দিল। শশী বলিল, না, বসব না। মোক্ষদা বলিল, বোসো বাবা, বোসো-বাড়ি এসে না-বসে কি যেতে আছে। কত বললাম পরানকে-কাজে যাচ্ছিস বাজিতপুর যা, আমাদের শশী থাকতে আর কারোকে গলাটা দেখাসনি বাপু, শশীর কাছে নাকি সরকারি ডাক্তার তা ছেলে জবাব যা দিলে! মুখপোড়ার যত ছিষ্টেছাড়া কথা। বললে, ছোটোবাবু ব্যস্ত মানুষ, বিরক্ত হন, তাকে জ্বালাতন করে কী হবে মা?

    আগে সব কথায় কুসুম মুচকি-মুচকি হাসিত। আজ তার মুখে হাসি দেখা গেল না। বলিল, ছোটোবাবুর ওষুধে ঘা বেড়ে গেল কি-না, তাই তো গেল বাজিতপুর।

    মোক্ষদা চটিয়া বলিল, তাই তো গেল বাজিতপুর তোকে বলে গেছে, তাই গেল বাজিতপুর যা মুখে আসবে বানিয়ে বানিয়ে বলবি তুই? যা না মা রান্নাঘরে?

    শশী সত্যসত্যই উদ্‌বিগ্নভাবে কুসুমের হাসি দেখিবার প্রতীক্ষা করিতেছিল, এতক্ষণে সে হাসিল। বলিয়া গেল, বানিয়ে কেন বলব মা, তোমার ছেলেই তো আমাকে বলছিল। যা শুনেছি বললাম।

    মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি লইয়া শশী বাড়ি ফিরিল। কী ভাবিয়াছে পরান? সেদিন যে ওষুধ দিয়াছিল তাতে পরানের গলার ঘা প্রথমে একটু বাড়িয়া যাওয়া আশ্চর্য নয়, তাতেই কি ভয় পাইয়া গেল পরান, আর তার চিকিৎসায় বিশ্বাস রহিল না?

    দিনরাত্রি কাটে, মনে মনে শশী ছটফট করে। পরানের গলায় ক্যানসার হইয়াছে মনে হইয়াছিল শশীর, সেটা ঠিক কি-না জানিতে না-পারিয়া তার স্বস্তি ছিল না। হয়তো না। হয়তো অবহেলা করিয়া সাধারণ ক্ষতকেই পরান অতখানি বাড়াইয়া ফেলিয়াছে। পরান আসে না, নিজে গিয়া তাকে যে শশী জিজ্ঞাসা করিবে বাজিতপুরের সরকারি ডাক্তার কী বলিল, তাও শশীর অভিমানে বাঁধে। কুসুমও যদি একদিন কোনো ছলে আচমকা আসিয়া হাজির হইত। কেন সে আসে না? সে যায় না বলিয়া? যাওয়া-আসার সপ্তাহ মাসের ফাঁক তো এমন সে কত ফেলিয়াছে, তবু প্রায় কুসুমের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হইবার বাঁধা তো হয় নাই কখনও! একদিন খুব ভোরে বাড়ির সামনে রাস্তায় নামিয়া দাঁড়াইতেই শশীর চোখে পড়িল কুসুমও নিজের বাড়ির সামনে পথে দাঁড়াইয়া আছে। কুসুমও যে শশীকে দেখিতে পাইয়াছে তা বোঝা গেল। কই, হাতছানি তো দিল না কুসুম, আগাইয়া তো সে আসিল না? শশী একটু দাঁড়াইয়া রহিল। খোলা মাঠে বিলীন কায়েতপাড়ার নির্জন রাস্তাটি আজও শশীর জীবনে রাজপথ হইয়া আছে, যে তাকে যতটুকু নাড়া দিয়াছে এই পথে তাদের সকলের পড়িয়াছে পদচিহ্ন। তাহদের মধ্যে অবশিষ্ট আছে শুধু কুসুম, এ পথে আজ শুধু কুসুম হাঁটে।

    আস্তে আস্তে শশী কুসুমের কাছে আগাইয়া গেল।

    তোমায় দেখে দাঁড়িয়েছিলাম বউ, ভাবছিলাম কাছে যাবে।

    আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন, আমি কাছে যাব?

    তাতে কিছু দোষ আছে নাকি! শশী হাসিল, কই, কথা শুধোবার জন্যে তালবনে আর তো আমায় ডাকো না বউ?

    কী আর শুধোব? নতুন কিছু কি ঘটেছে গাঁয়ে!

    ঘটেছে বইকী! অতবড় হাসপাতাল হল, কেমন চলছে হাসপাতাল, রোগীপত্র কেমন হচ্ছে, এসব তো শুধোতে পারো? আমার সম্বন্ধে তোমার কৌতুহল যেন কমে যাচ্ছে বউ।

    এবার কুসুম মিষ্টি করি হাসিল, ওমা, তাই নাকি? তা হবে হয়তো একটা কমে একটা বাড়ে, এই তো নিয়ম জগতের। আকাশের মেঘ কমে, নদীর জল বাড়ে,–নইলে কি জগৎ চলে ছোটোবাবু?

    বিবাদ হয় নাই, বিবাদ তাদের হইবার নয়, তবু কুসুমের সম্বন্ধে শশীর মনে ভয় ঢুকিয়াছিল যে ব্যবহার যেন তার কড়া হইয়া উঠিতেছে। তাতে ভয়ের কী আছে শশী জানে না, শুধু কষ্ট হইয়াছিল। এখন খুশি হইয়া শশী বলিল, কৌতুহল কমে কি বাড়ল?

    কী জানি কী বাড়ল, একটা কিছু অবশ্যি বেড়েছে।

    পরানের কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিয়া শশী এইসব কথা বলিল কুসুমের সঙ্গে। এই দরকারটাই তার যেন বেশি ছিল। তারপর চলিয়া আসিবার আগে সে পরানের খবর জানিতে চাহিল। গলায় ঘা কমিয়াছে পরানের।

    কমিয়াছে? ভালোই হইয়াছে। বাজিতপুরের ডাক্তারের ওষুধেই তবে গলার ঘা কমিল পরানের? শশীর ওষুধে বাড়িয়া গিয়াছিল। পরানের এতবড় অন্যায় ব্যবহারের কথা শশী ভাবিতে পারে না। বাড়াইবার সুযোগ দিয়া আর কমানোর সুযোগ দিল না, শশীর ওষুধে যে গলার ঘা বাড়িয়ছিল তাই হইয়া রহিল স্থায়ী সত্য একদিনের জন্য ওষুধ লাগাইতে নাই বা আসিতে নাই তার কাছে?

     

    গলার ঘা ভালো হইয়া গিয়াছে পরানের। শরীর সারে নাই। অতবড় কাঠামো বলিয়া আরও তাকে রোগা দেখায়। একটা টনিক খাইলে পারে। একটু স্ট্রিকনিন দিয়া শশী তাকে এমন টনিক তৈরি করিয়া দিতে পারে যে একমাসে চেহারা ফিরিয়া যাইবে,– রোগা শরীরে অত খাটে, মাসকুলার ফেটিগে স্ট্রিকনিন বড় উপকারী! বলিতে বাঁধে শশীর। কে জানে তার দেওয়া টনিক এক ডোজ খাইয়া শরীর আরও খারাপ হইয়াছে বলিয়া সে যদি আবার বাজিতপুরে সরকারি ডাক্তারের কাছে ছোটে?

    শরীরের দিকে একটু তাকাও পরান।—এটুকু বলে শশী।

    চাষা তো ছিলাম না ছোটোবাবু, চাষার কাজটা সইছে না।—বলে পরান, বলিয়া সে একটু হাসে, তাও বেশির ভাগ জমি শ্বশুরের কাছে বাঁধা।

    শশী বলে, ছেলে তো নেই শ্বশুরের, তিনটি শুধু মেয়ে—যা আছে জামাইদের দিয়ে যাবে। জমি তোমার নামেমাত্র বাঁধা।

    পরান প্রকাণ্ড হাই তোলে, বলে, শ্বশুরের ইচ্ছা এখানকার জমিজমা বেচে আমরা তার কাছে গিয়ে থাকি।

    যাও না কেন?

    তাই কি হয় ছোটোবাবু? গা ছেড়ে বাড়িঘর ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি পড়ে থাকব!

    প্রতিধ্বনির মতো শোনায় কথাটা, যেন কার কথা কে বলিতেছে! কোনো বিষয়ে এক জোরালো নিটোল সিদ্ধান্ত পরান তো করিয়া রাখে না। শশী যেন শুনিতে পায় কুসুমের বাবা অন্তত বলিতেছে, চলো মা কুসি, এখানকার সব বেচে দিয়ে আমার ওখানে থাকবি চল তোরা, আর কুসুম জবা দিতেছে, তাই কি হয় বাবা? গাঁ ছেড়ে বাড়িঘর ছেড়ে তোমার ওখানে পড়ে থাকব?

    শীত জমিবার আগে এবার যামিনী কবিরাজের কাশিটা চিরতরে থামিয়া গেল, দুদিনের জ্বরে বেচারি গেল মারা। পাঁচন সিদ্ধ করিবার কড়াই পড়িয়া রহিল, আলমারিতে শিশি বোতল টিনের কৌটাভরা নানারকম ওষুধ রহিল, বেড়ায় ঠেকানো রহিল ইকো— বুড়ো যামিনীর হৃদকম্পন আর হামানদিস্তার ঠকঠক শব্দটা গেল থামিয়া। খবর পাইয়া আসিল সেনদিদির দাদা কৃপানাথ-সেও কবিরাজ আসিল সে সপরিবারে, তামাক টানিতে লাগিল যামিনীর হুকায় আর আলমারি খুলিয়া দেখতে লাগিল যামিনীর সঞ্চিত ওষুধ। মনে হইল, যামিনীর পাঁচন-সিদ্ধ হইতে থাকিবে, যামিনীর হামানদিস্তায় আবার শব্দ উঠিবে ঠুকঠুক।

    কেবল সেনদিদি আর এ জীবনে সধবা হইতে পরিবে না।

    তবে শোনা গেল, সেনদিদির নাকি ছেলে হইবে।

    শুনিলে অবশ্য বিশ্বাস করিতে ইচ্ছে হয় না, কিন্তু অবিশ্বাস করিবার উপায় নাই। এ তো কানে-শোনা রটনা নয়, চোখে-দেখা ঘটনা। সেনদিদির অমন রূপ কাড়িয়া চোখ কানা করিয়া দেবতার কী মমতা হইল যে সেনদিদিকে তিনি শেষে একটি ছেলে দিলেন? আহা, দিন জীবনে মানুষের এটুকু ক্ষতি পূরণ না থাকিলে কি চলে সন্ধ্যাবেলা শ্ৰীনাথ মুদির মেয়ে বকুলতলে পুতুল ফেলিয়া গেল, ভোরবেলা সে পুতুল কুড়াইয়া কতকাল আর কাটিবে সেনদিদির।

    ম্লান হইল শশী, একেবারে বিষন্ন বিবর্ণ হইয়া গেল। মাথা নিচু-করা বাক্যহীন স্তব্ধতায় সে মূক হইয়া রহিল। কেন, কী হইল শশীর, গাওদিয়ার নামকরা ডাক্তারের, উদীয়মান তরুণ নেতার? সেনদিদি তাকে ছেলের মতো ভালোবাসিত, আর সে বাসে না তারও অকাট্য প্রমাণ কিছুই নাই, আজ যদি ছেলের মতো ভালোবাসিবার জন্য নিজস্ব একটি ছেলে পায় সেনদিদি, তাতে শশী কেন বিচলিত হয়।

    গোপাল সভয়ে জিজ্ঞাসা করে, হ্যা রে শশী, তোর তো অসখ-বিসুখ হয়নি বাবা?

    শশী বলে, না।

    না হলেই ভালো। একটু সাবধানে থাকিস এ সময়।

    শশী ডাক্তারকে গোপাল বলে সাবধানে থাকিতে। বলে সবিনয়ে কৃপাপ্রার্থীর মতো। হয়তো গোপালের বলিবার কথা ওটা নয়। শশীর মান, বিষণ্ণ মুখ দেখিয়া হয়তো গোপালের হৃদপিণ্ডটা ধড়াস ধরাস করে, সেই শব্দটা পৌঁছাইয়া দিতে চায় শশীর কানে। আর তো ছেলে নাই গোপালের, শুধু শশী।

    বাজিতপুরে কী কাজ ছিল শশীর কে জানে, গ্রামের অসংখ্য কাজ ফেলিয়া হঠাৎ সে বাজিতপুরে চলিয়া যায়। সিনিয়র উকিল রামতারণের বাড়িতে একটি দিন চুপচাপ কাটাইয়া দেয়, তারপর যায় সরকারি ডাক্তারের বাড়ি। সরকারি ডাক্তারের সঙ্গে শশীর সম্প্রতি খুব ঘনিষ্ঠতা হইয়াছিল, বাড়িতে অতিথি হওয়ায় এবার ভদ্রলোকের ক্ষীণাঙ্গিনী, এক স্বামী ও দুই ছেলের সংসার লইয়া বিশেষরূপে বিব্রত স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ-পরিচয় হইল। মানসিক বিপর্যয়ের সময় সংসারে একএকটি তুচ্ছ মানুষের কাছে আশ্চর্য সান্তনা মেলে। কাজে অপটু, ভীরু ও নিরীহ এই মহিলাটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে শশীকে যেন কিনিয়া ফেলিল। চা দিতে চা উছলাইয়া পড়িতেছে, ছেলে ধরিতে আঁচল খসিতেছে, আচল তুলিতে ছড়াইয়া পড়িতেছে চুল, তাড়াতাড়ি ঘরের বাহিরে যাইতে চৌকাটে হোঁচটও লাগিল।

    থাকিয়া থাকিয়া বলে, আর পারি না বাবা!

    সত্যই পারে না। তবু জোড়াতালি দিয়া কোনোরকমে সবই সে করে। সেজন্য আড়ালও খোঁজে না, সব ক্রটি-বিচূতি তার প্রকাশ্য এক ঘন্টার মধ্যে মানুষের কাছে নিজের স্বরূপ মেলিয়া ধরে বলিয়াই বোধ হয় তাকে তার স্বামীরও ভালো লাগে, শশীরও লাগিল!

    তেইশগাছা, আমাদের গা থেকে ছ মাইল,–মামাকে চেনেন? হরিশচন্দ্র নিয়োগী। আমি মামাবাড়ি গেছি সেই কোন ছেলেবেলায়—আর এই এবার এখানে এসে একবার। আমার বাবা মুন্সেফ ছিলেন কি-না, সঙ্গে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াতাম।

    এখন কর্তার সঙ্গে বেড়ান।

    তা নয়? এই তো ছ মাস হল এসেছি এখানে, এর মধ্যে বলে কি-না বদলি হব।

    পরদিন সকালে গ্রামে ফিরিবার জন্য শশী নদীর ঘাটে আসিয়া দাঁরাইল। একটা নৌকা ভাড়া করিতে হইবে। ঘাটে কুসুমের বাবা অনন্তের সঙ্গে শশীর দেখা হইয়া গেল।

    অনন্ত বলিল, ডাক্তারবাবু এখানে?

    শশী বলিল, একটু কাজে এসেছিলাম। একটা নৌকা নিয়ে গাঁয়ে ফিরব।

    অনন্ত বলিল, নিজের নৌকা আনেননি? আমিও গাওদিয়া যাচ্ছি ডাক্তারবাবু, আমার নৌকাতেই চলুন না। একটু তবে বসুন নৌকায় উঠে, বাজার থেকে একজোড়া শাড়ি কিনে আনি ঝাঁ করে মেয়েটার জন্যে।–আরে হেই হানিফ, আন বাবা এদিকে সরিয়ে আন নৌকা, ডাক্তারবাবু উঠবেন।

    অল্পক্ষণের মধ্যে কুসুমের জন্য একজোড়া শাড়ি কিনিয়া অনন্ত ফিরিয়া আসিল। নৌকায় উঠিয়া শশীর একটু তফাতে হাত-পা মেলিয়া বসিয়া বলিল, মেয়ে যেতে লিখেছে ডাক্তারবাবু। লিখেছে, একেবারে বড় নৌকা নিয়ে এসে দুদিন এখানে থেকে সবাইকে নিয়ে ফিরে যাব। আপনি আমার যা উপকার করলেন ডাক্তারবাবু, কী আর বলব।

    শশী অবাক হইয়া বলিল, আমি আবার কি উপকার করলাম আপনার?

    অনন্ত বলিল, মেয়ে কি যেমায় লেখেনি ডাক্তারবাবু, আপনার পরামর্শে আমার কাছে গিয়ে থাকা ঠিক করেছে? যা মাথাপাগলা মেয়ে আমার, আপনার পরামর্শ যে শুনল তাই আশ্চর্য। বলছি কি আজ থেকে? সেই যেবার বেয়াই অপঘাতে মরল তখন থেকে মেয়েজামাইকে তোষামোদ করছি, কাজ কি বাবু তোদের এত কষ্ট করে এখানে থাকায়, আমার কাছে এসে থাক। জামাইয়ের মতামতের জন্যে ভাবিনি ডাক্তারবাবু, সে জলের মানুষ, মেয়ে রাজি হলে সেও রাজি হত। মেয়েই ছিল বেঁকে। বলত, শাশুড়ি আছে, ননদ আছে, ওরা আমার বাপের বাড়ি দিয়ে থাকতে চাইবে কেন? বেশ ভালো কথা, ননদের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রইলাম। তখন রইল শুধু এক শাশুড়ি, সেও অরাজি নয়— এবার তবে আয়? তাও না, দশটা গুজর দিয়ে মেয়ে আমার এখানকার মাটি কামড়ে রইল। নিত্য অভাব, কী সুখে যে ছিল কে জানে।

    তা ঠিক, কী সুখে কুসুম গাওদিয়ায় ছিল এতকাল? অনন্ত সম্পন্ন গৃহস্থ তার গায়ের সাঠিনের কোট আর কোমরে বাঁধা উড়ানিই তা ঘোষণা করে! বাপের কাছে কুসুম পরম সুখে থাকিতে পারিত। এতদিনে কুসুমের তবে সুমতি হইয়াছে? শশীকে জানাইয়া সুমতিটা হইলে খুব বেশি ক্ষতি হইত না। তার পরামর্শে মতিগতি ফিরিয়াছে, বাপকে একথা লিখিবার কী উদ্দেশ্য ছিল কুসুমের?

    কোমরে-বাঁধা উড়ানি ও কোটটা খুলিয়া রাখিয়া আরাম করিয়া বসিয়া অনন্ত বলিল, শ্রাবণ মাসে আগের বার যখন নিতে আসি, আপনার সঙ্গেই যেবার এলাম বাজিতপুর পর্যন্ত-সেবারে রাজি হয়েছিল। যেতে যেতে আবার মত পালটাল।

    বড় ছেলেমানুষ পরানের বউ। শশী বলিল।

    অনন্ত বলিল, ছোট মেয়ে, বড় দু-বোনের বিয়ের পর ঐ ছিল কাছে, বড় আদরে মানুষ হয়েছিল—একটু তাই খেয়ালি হয়েছে প্রকৃতি। সবচেয়ে ভালো ঘর বর দেখে ওর বিয়ে দিলাম, ওর আদেষ্টেই হল কষ্ট। সংসারে মানুষ চায় এক, হয় আর, চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তারবাবু। পুতুল বই তো নই আমরা, একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।

    শশী একটু হাসিয়া বলিল, তাকে একবার হাতে পেলে দেখে নিতাম।

    অনন্ত বলিল, তেমন করে চাইলে পাবেন বইকী, ভক্তের তো দাস তিনি।

    নদী ছাড়িয়া নৌকা খালে ঢোকে, অনন্তের সঙ্গে একথা ওকথা বলিতে বলিতে খাপছাড়া ভাবে জিজ্ঞাসা করিল, পরান বুঝি সব বেচে দেবে? বাড়ি-ঘর জমি-জায়গা?

    অনন্ত বলিল, আমার কাছে গিয়া থাকলে এখানে বাড়ি-ঘর রেখে কী করবে? তাড়াহুড়ো কিছু নেই, আস্তে আস্তে সব বেচবে। কেউ কিনবে যদি আপনার জানা থাকে—

    বলব, জানা থাকলে আপনাকে বলব।

    কুসুম তবে সত্য সত্যই যাইবে চিরকালের জন্য গাওদিয়া ছাড়িয়া? এত তাড়াতাড়ি করিবার কী দরকার ছিল? শশীও তো যাইবে, কুসুমের চেয়েও অনেক দূরদেশে, অনাত্মীয় মানুষের মধ্যে। শশীর বিদায় নেওয়া পর্যন্ত কুসুম কি গ্রামে থাকিতে পারিত না? হয়তো পরানের শরীর ভাঙিয়া গিয়াছে বলিয়া কুসুম তাড়াতাড়ি সরিয়া যাইতে চায়, সেখানে বিশ্রাম জুটিবে পরানের, অন্নচিন্তায় সে ব্যাকুল হইবে না, ভোবে পাঁচটায় ভাঙা শরীর লইয়া ছুটিতে হইবে না মাঠে। কাজটা খুব বুদ্ধিমতীর মতোই করিতেছে কুসুম। তবু, শশীকে একবার কি বলিতে পারিত না? মতি ও কুমুদের ব্যাপারটা শুনিবার জন্য একদিন কত ভোরে কুসুম তাকে তালবনে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল, এতবড় একটা উপলক্ষ পাইয়াও কুসুম কি তার পুনরভিনয় করিতে পারিত না? কথাটা বলিবার ছুতায় অসময়ে একবার কি সে আসিতে পরিত না শশীর ঘরে,-গোপাল উঠিয়া দাওয়ায় বসিয়া থাকিবে এরকম একটা প্রত্যাশা করিয়া? কুসুম রাগ করিয়াছে নাকি!

    বাড়িতে পা দেওয়ামাত্র গোপাল বলিল, কোথায় গিয়াছিলি শশী? ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব পরশু থেকে তাঁবু গেড়ে বসে আছেন গাঁয়ে, দশবার তার চাপরাশি তোকে ডাকতে এল, শীতলবাবু দুবেলা লোক পাঠাচ্ছেন। কোথায় গেলি কবে ফিরবি তাও কিছু বলে গেলি না। যা যা, ছুটে যা, দেখা করে আয়গে সাহেবের সঙ্গে। ভালো পোশাক পরে যা।

    শশী বলিল, এত বেলায় বাড়ি ফিরলাম, খাব না, দাব না, ছুটে সায়েবের সঙ্গে দেখা করতে যাব? কী যে বলেন তার ঠিক নেই।

    গোপালের উৎসাহ নিভিয়া গেল বলিল, আমি কথা কইলেই তুই চটে উঠিস শশী।

    শশী বলিল, চটব কেন, সকাল থেকে খাইনি কিছু, খিদে তেষ্টা তো আছে মানুষের?

    খাসনি! গতকাল থেকে খাসনি কিছু?–গোপাল ব্যস্ত হইয়া উঠিল, শিগগির স্নান করে নে তবে ও কুন্দ, তোরা সব গেলি কোথায় শুনি? সকাল থেকে কিছু খায় নি শশী, সব কটাকে দূর করব এবার বাড়ি থেকে।

    বিকালে শশী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা করিয়া আসিল। সাতগাঁর স্কুল, গাওদিয়ার হাসপাতাল সব শীতলবাবু তাঁহাকে দেখাইয়াছেন, শশীকে বসাইয়া অনেকক্ষণ হাসপাতালের সম্বন্ধে কথা বলিলেন। যাদবের মরণের ইতিহাসটা মন দিয়া শুনিলেন। এ বিষয়ে অদম্য কৌতুহল দেখা গেল তার। শশী নিজে দাঁড়াইয়া সব দেখিয়াছে? ব্যাপার নিজে তবে সে একটু ব্যাখ্যা করুক না? শশীর আজ কিছু ভালো লাগিতেছিল না, তাছাড়া যাদবের ও পাগলাদিদির মরণকে তার ব্যাখ্যা করিবার উপায় নাই। চিরদিন শুধু তার মনে মনেই থাকিবে। তারপর এক কাপ চা খাওয়াইয়া হাসপাতালের ফান্ডে একশত টাকা চাঁদা দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া ম্যাজিস্ট্রেট শশীকে বিদায় দিলেন। সেখান হইতে সে শীতলবাবুর বাড়ি গেল। কিছু না বলিয়া উধাও হওয়ার জন্য শশীকে একচোট বকিলেন শীতলবাবু, তারপর তিনিও এককাপ চা খাওয়াইয়া শশীকে বিদায় দিলেন। তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। শীতলবাবু সঙ্গে আলো দিতে চাহিয়াছিলেন, পকেটে টর্চ আছে বলিয়া শশী বারণ করিয়া আসিয়াছে।

    সমস্ত পথ একবারও সে টর্চেও আলো ফেলিল না, অন্ধকারে হটিতে লাগিল। হাসপাতালে নিজের ঘরে গিয়া সে বসিল। হাসপাতালের কুড়ি টাকা বেতনের কম্পাউন্ডার বোধহয় আজ এসময় শশীর আবির্ভাব প্রত্যাশা করে নাই, কোথায় যেন চলিয়া গিয়াছে। প্রায় দু-ঘণ্টা পরে সে ফিরিয়া আসিল। শশী কিন্তু তাহাকে কিছুই বলিল না। হাসপাতালে ছটি বেড, তার মধ্যে দুটি মাত্র দুজন রোগী দখল করিয়াছে। তাদের দেখিয়া কম্পাউন্ডারকে তাদের সম্বন্ধে উপদেশ দিয়া শশী বাড়ি ফিরিল। কী আজ বিগড়াইয়া গিয়াছে মন বাসুদেব বাড়ুজ্যের বাড়িটা অন্ধকার, সামনে সেই প্রকাণ্ড জামগাছটা, যার ডাল ভাঙিয়া পড়িয়া একটা ছেলে মরিয়াছিল। মরণের সঙ্গে কত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শশীর, তবু সেই ছেলেটাকে আজো সে ভুলিতে পারিল না। চিকিৎসায় ভুল হইয়াছিল কি? দেহের ভিতরে কি এমন কোনো আঘাত লাগিয়াছিল ছেলেটার, সে যাহা ধরিতে পারে নাই? আজ আর সেকথা ভাবিয়া লাভ নাই। তবু শশী ভাবে। গ্রামের এমন কত কী শশীর মনে গাঁথা হইয়া আছে। এজন্য ভাবনাও হয় শশীর। গ্রাম ছাড়িয়া সে যখন বহু দূরদেশে চলিয়া যাইবে, গ্রাম্যজীবনের অসংখ্য ছাপ যদি মন হইতে তার মুছিয়া না যায়? চিন্তা যদি তার শুধু এইসব খণ্ডখণ্ড ছবি দেখা আর এইসব ঘটনার বিচার করায় পর্যবসিত হয়? শ্রীনাথের দোকানে একটু দাঁড়ায় শশী। কী খবর শ্রীনাথ? মেয়ের জ্বর? কাল একবার নিয়ে যেও হাসপাতালে, ওষুধ দেব। চলিতে চলিতে শশী ভাবে যে তার কাছে অসুখের কথাই বলে সকলে, ওষুধ চায়। বাঁধানো বকুলতলাটা ঝরা ফুলে ভরিয়া আছে: এত ফুল কেন? বাড়ির সামনে বাধানো দেবধর্মী গাছতলা। সেনদিনি বুঝি আর সাফ করে না? বাড়িতে ঢুকিবার আগে শশী দেখিতে পায় পরানের বড় ঘরের জানালাটা আলো হইয়া আছে। বাপ আসিয়াছে বলিয়া কুসুম বোধহয় আজ তার বড় ঝুলানো আলোটাকে তেল ভরিয়া জ্বালিয়া দিয়াছে।

    মনটা কেমন করিয়া ওঠে শশীর। হয়তো পরশু, হয়তো তার একদিন পর কুসুম গাঁ ছাড়িয়া যাইবে, আর আসিবে না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅহিংসা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article পদ্মা নদীর মাঝি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }