Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পুরাণের গল্প – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এক পাতা গল্প134 Mins Read0

    বিষ্ণুর অবতার

    পুরাণে আছে যে, বিষ্ণু সময় সময় নানারূপ জন্তু ও মানুষের রূপ ধরিয়া অনেক আশ্চর্য কাজ করিয়াছিলেন। বিষ্ণুর এইসকল রূপ ধারণকে তাহার এক একটি ‘অবতার’ বলা হয়।

    এই যে সৃষ্টি তাহার জীবন নাকি এক কল্প কাল। এক এক কল্প পরে ‘প্রলয়’ অর্থাৎ সৃষ্টিনাশ হইয়া আবার নাকি নূতন সৃষ্টি হয়। এখনকার এই জগতের সৃষ্টি হইবার পূর্বে আর এক জগতের প্রলয় হইয়াছিল। বিষ্ণু তাহার পূর্বেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে প্রলয়ের কাল উপস্থিত হইয়াছে। তখন তিনি একটি খুব ছোট মাছের রূপ ধরিয়া কৃতমালা নামক নদীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেই সময়ে সূর্যের পুত্র বৈবস্বত মনু সেই নদীর নিকটে থাকিয়া তপস্যা করিতেছিলেন। একদিন মনু কৃতমালার জলে নামিয়া তর্পণ করিতেছেন, এমন সময় হঠাৎ তিনি দেখিলেন যে একটি নিতান্ত ছোট মাছ তর্পণের জলের সঙ্গে তাঁহার অঞ্জলির ভিতর উঠিয়াছে।

    সেই মাছটিই ছিলেন বিষ্ণু, কিন্তু মনু তাহা জানিতেন না। তিনি মাছটিকে জলে ফেলিয়া দিতে যাইবেন, এমন সময় সে তাঁহাকে মিনতি করিয়া বলিল, “আমাকে জলে ফেলিবেন না। বড় মাছেরা আমাকে খাইয়া ফেলিবে।” এ কথায় মনু তাহাকে তাঁহার ঘরে আনিয়া কলসীর ভিতরে রাখিয়া দিলেন। কিন্তু সে মাছ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে লাগিল যে দেখিতে দেখিতে আর সে সেই কলসীতে ধরে না। কলসী হইতে চৌবাচ্চায় রাখিলেন, খানিক পরেই আর সে তাহাতেও ধরে না; চৌবাচ্চা হইতে পুকুরে রাখিলেন, শেষে তাহাতেও ধরে না, সেখান হইতে হ্রদে রাখিলেন, ক্রমে তাহাও তাহার পক্ষে ছোট হইয়া গেল।

    তখন মনু তাঁহাকে কাঁধে করিয়া সমুদ্রের জলে ফেলিবামাত্র সে লক্ষ যোজন বড় হইয়া যাওয়ায়, তিনি যারপরনাই আশ্চর্যাম্বিত হইয়া বলিলেন, “ভগবন্‌, আপনি কে? আপনি নিশ্চয় স্বয়ং বিষ্ণু! আপনাকে নমস্কার।” মাছ বলিল, “তুমি ঠিক বুঝিয়াছ আমি দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের নিমিত্ত মৎস্যরূপ ধারণ করিয়াছি। আজ হইতে সাতদিনের মধ্যে সকল সৃষ্টি সাগরের জলে ডুবিয়া যাইবে। সেই সময়ে তোমার নিকট একখানি নৌকা আসিবে, তুমি সপ্তর্ষিদিগকে আর সকল জীবের দুটি দুটিকে সঙ্গে লইয়া তাহাতে উঠিয়া বসিও তখন আমিও আবার আসিব, আমার শিঙে তোমার নৌকাখানাকে বাঁধিয়া দিও। এই বলিয়া বিষ্ণু চলিয়া গেলেন; তারপর ক্রমে তাঁহার কথামতো সমস্তই ঘটিতে লাগিল। সমুদ্র উথলিয়া উঠিল, নৌকা আসিল, সেই মাছও আসিয়া দেখা দিল—সে এখন দশ লক্ষ যোজন বড়, তাহার দেহ সোনার, আর মাথায় একটা শিং। সেই শিঙে নৌকা বাঁধিয়া দিলে আর কোনো বিপদের আশঙ্কা রহিল না।

    ইহাই হইল বিষ্ণুর মৎস্যাবতার, তারপর কূর্মাবতার। সমুদ্রের ভিতর অমৃত ছিল, সেই অমৃত পাইবার জন্য দেবতারা দৈত্যগণের সহিত মিলিয়া সমুদ্রকে মন্থন করিয়াছিলেন। সেই মন্থনের দণ্ড হইয়াছিল মন্দার পর্বত, আর দড়ি হইয়াছিল বাসুকি নাগ। মন্থন আরম্ভ হওয়ামাত্রই সেই পর্বত জলের ভিতরে ঢুকিয়া যাইতে লাগিল, কাজেই দেবতারা দেখিলেন যে তাঁহাদের সকল পরিশ্রমই মাটি হইতে চলিয়াছে। সেই সময় বিষ্ণু বিশাল কচ্ছপের রূপ ধরিয়া পর্বতটাকে পিঠে করিয়া লইয়াছিলেন, নচেৎ নিশ্চয় তাহা একেবারেই তল হইয়া যাইত, মন্থন অসম্ভব হইত, দেবতাদের ভাগ্যেও আর অমৃত খাওয়া ঘটিত না।

    কূর্মাবতারের পর বরাহবতার। হিরণ্যাক্ষ আর হিরণ্যকশিপু নামে দুইটা ভারি ভয়ানক দৈত্য ছিল। দেবতাদিগকে যে তাহারা কিরূপ নাকাল করিয়াছিল, সে আর বলিবার নহে। হিরণ্যাক্ষ ছেলেবেলায় হাতি আর সিংহে চড়িয়া সূর্যটাকে লইয়া খেলা করিত। তারপর একদিন সে করিল কি, কুকুর যেমন মুখে করিয়া পিঠা লইয়া ছুট দেয়, তেমনিভাবে সে পৃথিবীটাকে মুখে লইয়া জলের ভিতরে গিয়া ঢুকিল। ইহাতে ব্রহ্মা নিতান্তই ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। কিন্তু তাঁহার এমন শক্তি হইল না যে দুষ্ট দৈত্যের মুখ হইতে পৃথিবীটাকে ছিনাইয়া আনেন। তখন তিনি উপায় না দেখিয়া বিষ্ণুর স্তব আরম্ভ করিলেন। বিষ্ণু একটা শূকরের বেশ ধরিয়া তাঁহার নাকের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। তারপর সেই শূকর বাড়িতে বাড়িতে পর্বতপ্রমাণ হইয়া জলের দিকে ছুটিয়া চলিল।

    সেই জলের নিকটে নারদ মুনি ছিলেন, তিনি সেই শূকরকে দেখিয়াই চিনিতে পারিয়া জোড়হাতে বলিলেন, “আজ্ঞা করুন কি করিব।” শূকর বলিল, “আমি যতক্ষণ হিরণ্যাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করিব, ততক্ষণ তুমি কেবলই জল শুষিতে থাকিবে।” নারদ দুহাতে জল তুলিয়া ক্রমাগত মুখে দিতে লাগিলেন, যতক্ষণ না হিরণ্যাক্ষের সহিত বিষ্ণুর যুদ্ধ শেষ হইয়াছিল, ততক্ষণ তিনি থামেন নাই। সেই যুদ্ধ জলে পাঁচশত বৎসর, আর স্থলে পাঁচশত বৎসর, সব সুদ্ধ এক হাজার বৎসর চলিয়াছিল। তারপর সেই শূকর হিরণ্যাক্ষকে মারিয়া মুখে করিয়া, পৃথিবীকে জল হইতে তুলিয়া আনিয়া ব্রহ্মাকে দিল।

    ইহার পর নৃসিংহবতার। এবারে বিষ্ণু অর্ধেক মানুষের আর অর্ধেক সিংহের মতো অতি ভীষণ মূর্তি ধারণ করিয়া হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপুকে বধ করিয়াছিলেন। হিরণ্যাক্ষের মৃত্যুতে ভয়ানক রাগিয়া গিয়া হিরণ্যকশিপু তাহার প্রতিশোধ লইবার জন দশ হাজার বৎসর ঘোরতর তপস্যা করে। তাহার দেহে গাছ হইল, তাহাতে পাখিরা বাসা করিল, তথাপি সে তপস্যা ছড়িল না। তখন ব্রহ্মা আর থাকিতে না পারিয়া তাহাকে বর দিতে আসিলে, সে বলিল, “আপনার সৃষ্ট কোনো বস্তু বা জীব আমাকে বধ করিতে পারবে না, এই বর আমাকে দিন।” ব্রহ্মা সেই বর তাহাকে দিয়া চলিয়া গেলেন, আর অমনি সেই দৈত্য তাহার জ্ঞাতিবন্ধুগণের সহিত মিলিয়া সৃষ্টি তোলপাড় করিয়া তুলিল। ইন্দ্র, বরুণ, কুবের কাহাকেও সে নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিতে দিল না, সকলেরই ধনসম্পত্তি কাড়িয়া লইল। তখন দেবতাগণ তাহার জ্বালায় অস্থির হইয়া বিষ্ণুর নিকট নিজ নিজ দুঃখ জানাইলে বিষ্ণু বলিলেন, “তোমাদের কোনো ভয় নাই, আমি শীঘ্রই এই দৈত্যকে বধ করিয়া তোমাদের দুঃখ দূর করিব।”

    কিন্তু বিষ্ণুর উপরেই হিরণ্যকশিপুর সর্বাপেক্ষা অধিক রাগ ছিল। সে তাঁহার পূজা বন্ধ করিয়া দিবার জন্য কোনো চেষ্টারই ত্রুটি করে নাই। তাহার নিজের পুত্র প্রহ্লাদ বিষ্ণুভক্ত ছিল, সেজন্য দুষ্ট দৈত্য সেই বালককে কি ভীষণ যন্ত্রণাই দিয়াছিল। কিন্তু প্রহ্লাদ কিছুতেই হরিনাম পরিত্যাগ করে নাই। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোর হরি কোথায় আছে?” প্রহ্লাদ বলিল, “তিনি সর্বত্রই আছেন।” হিরণ্যকশিপু একটা থাম দেখাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এই থামের ভিতর আছে?” প্রহ্লাদ বলিল, “অবশ্য আছেন।” হিরণ্যকশিপু তখন খড়গ লইয়া মহারোষে সেই স্তম্ভে আঘাত করিল। আমনি বজ্রপাতের ন্যায় ভীষণ গর্জনে বিষ্ণু সেই স্তম্ভের ভিতর হইতে বাহির হইলেন, তাঁহার দেহ অর্ধেক মানুষের, অর্ধেক সিংহের ন্যায়; নখ অতি ভীষণ; কেশর উড়িয়া মেঘে ঠেকিয়াছে মুখ দিয়া আগুন বাহির হইতেছে। দৈত্যেরা ক্ষণমাত্র তাঁহার সহিত ভীষণ যুদ্ধ করিল। কিন্তু সেই ভয়ংকর নৃসিংহ মূর্তি নিজের নিঃশ্বাস দ্বারাই আর সকল দৈত্যকে মুহূর্তে ভস্ম করিয়া, দেখিতে দেখিতে হিরণ্যকশিপুর বুক নখে চিরিয়া তাহার রক্ত খাইতে আরম্ভ করিলেন।

    এত করিয়াও সেই ভীষণ মূর্তির রাগ দূর হইল না, তাঁহার মুখের আগুনও নিভিল না। তখন দেবতাগণ যারপরনাই ভয় পাইয়া তাঁহাকে থামাইবার উপায় দেখিতে লাগিলেন কিন্তু কাহারও তাঁহার নিকটে যাইতে ভরসা হইল না। ইন্দ্র বলিলেন, “আমার চোখ ঝলসিয়া যাইবে।” ব্রহ্মা বলিলেন, “আমার দাড়ি পুড়িয়া যাইবে।”

    গণেশ অনেক সাহস করিয়া তাঁহার ইঁদুরে চড়িয়া কিছুদূর আসিয়াছিলেন, কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ নৃসিংহের ফুঁ লাগিয়া তাঁহার ইঁদুরটি উলটিয়া যাওয়াতে তাঁহাকে তাঁহার সেই বিশাল ভুঁড়িসুদ্ধ গড়াগড়ি যাইতে হইল।

    শেষে আর কোনো উপায় না দেখিতে পাইয়া দেবতাগণ মহাদেবের শরণাপন্ন হইলে, মহাদেব অতি অদ্ভুত শরভের মূর্তি ধরিয়া নৃসিংহের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেই শরভকে দেখিবামাত্র নৃসিংহের রাগ থামিয়া গেল, সকলের ভয়ও দূর হইল।

    দেবতাদিগের সহিত অসুরেরা চিরকালই ঘোরতর শত্রুতা করিত, আর অনেক সময়ই তাহাদের লাঞ্ছনা করিত যতদূর হইতে হয়। প্রহ্লাদের পিতা কি করিয়াছিল, তাহা আমরা পূর্বেই শুনিয়াছি। প্রহ্লাদের নাতি ‘বলি’ও তাহার চেয়ে নিতান্ত কম করে নাই। এদিকে বলি ধার্মিক ছিল খুবই, কিন্তু তাহা হইলে কি হয়? সে যে অসুর, কাজেই দেবতাদের সঙ্গে শত্রুতা না করিয়া থাকিতে পারিত না।

    একবার সে ইন্দ্রের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাঁহাকে দলবলসুদ্ধ স্বর্গ হইতে তাড়াইয়া দিল। তখন দেবতাগণ আর কি করিবেন? তাঁহারা অতিশয় দুঃখিত হইয়া বিষ্ণুর আশ্রয় লইলেন। এদিকে ইন্দ্রের মাতা অদিতিদেবীও একমনে বিষ্ণুকে ডাকিয়া এই প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, “হে দেব। আমাকে এমন একটি পুত্র দান কর, যে এই সকল অসুরকে বধ করিতে পারে।” কিছুকাল এইরূপে প্রার্থনা করার পর বিষ্ণু তাঁহাকে দেখা দিয়া বলিলেন, “মা, তুমি দুঃখ করিও না, আমি নিজেই তোমার পুত্র হইয়া অসুর বধ করিব।”

    সেই পুত্রের নাম বামন। এমন সুন্দর ছোট্ট খোকা আর কেহ কখনো দেখে নাই। ঐরূপ ছোট্ট ছিলেন বলিয়াই তাঁহার নাম বামন। দেবতারা তাঁহার স্তব করিতে লাগিলেন, আর কত সুন্দর সুন্দর জিনিস যে তাঁহাকে দিলেন কি বলিব। কেহ দিলেন পৈতা, কেহ দিলেন লাঠি, কেহ কমণ্ডলু, কেহ কাপড়, কেহ বেদ, কেহ জপের মালা।

    বড় হইয়াও সেই খোকা তেমনি ছোট্টটিই রহিয়া গেলেন। তারপর একবার বলি এক বিশাল যজ্ঞ আরম্ভ করিল, মুনি-ঋষি কত যে তাহাতে আসিলেন তাহার সংখ্যা নাই। বামনও সেই যজ্ঞের কথা শুনিয়া বেদের মন্ত্র আওড়াইতে আওড়াইতে তথায় গিয়া উপস্থিত হইলেন, বলি দেখিল, কোথা হইতে একটি ছোট্ট মুনি আসিয়াছেন, তাহার মাথায় জটা, হাতে দণ্ড কমণ্ডলু আর ছাতা। সে অতিশয় আদরের সহিত তাহাকে নমস্কার করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি ঠাকুর, আপনার কি চাই?” বামন বলিলেন, “আমি তোমার নিকট তিন পা জমি চাই।”

    এ কথায় বলি হাসিয়া বলিল, “সে কি ঠাকুর, তিন পা জমি দিয়া কি করিবে? এ তো ছেলেমানুষের কথা। বড়-বড় গ্রাম চাও, টাকাকড়ি লোকজন যত খুশি চাও।”

    বামন বলিলেন, “আমার অত জিনিসের দরকার নাই! আমার তিন পা জমি হইলেই চলিবে। বেশি লোভ করা ভালো নয়।”

    তখন বলি বলিল, “আচ্ছা, তবে তুমি তিন পা জমিই নাও।” তারপর হাতে জল লইয়া সে বামনকে তিন পা জমি দান করিতে যাইবে, এমন সময় তাহার গুরু শুক্রাচার্য ব্যস্তভাবে তাহাকে বাধা দিয়া বলিলেন, “মহারাজ, কর কি? ওঁকে যে সে লোক ভাবিও না। ইনি আর কেহ নহেন, নিজে বিষ্ণুই বামন সাজিয়া আসিয়াছেন। ইহাকে কিচ্ছুই দিও না, দিলে তোমার সর্বনাশ হইবে।”

    বলি বলিল, “সামান্য একজন ভিক্ষুককেও আমি অমনি ফিরাই না,ইঁহাকে কেমন করিয়া ফিরাইব? বিশেষত আমি ‘দিব’ বলিয়াছি।”

    এই বলিয়া বলি তিনপাদ ভূমি দান করিবামাত্র দেখিল, সেই খোকা আর খোকা নাই সে এখন আকাশের চেয়েও উঁচু বিরাট পুরুষ হইয়া গিয়াছে। তারপর দেখিতে দেখিতে সেই বিরাট পুরুষে নাভি দিয়া আর একটি পা বাহির হইল। তখন তিনি এক পদে পৃথিবী, এক পদে স্বর্গ আর তৃতীয় পদে স্বর্গেরও উপরে মহর্লোক জনলোক প্রভৃতি ঢাকিয়া ফেলিয়া, বলির যত রাজ্য সকলই কড়িয়া লইলেন। ইহার পর দুষ্ট অসুরগুলিকে বধ করা তো বিষ্ণুর পক্ষে অতি সহজ কাজ। তিনি সে কাজ শীঘ্র শীঘ্র শেষ করিয়া, পুনরায় ইন্দ্রকে ত্রিভুবনের রাজ্য দিয়া দিলেন।

    যাহা হউক, বলি ধার্মিক লোক ছিল; সুতরাং শ্রীবিষ্ণু তাহাকে বধ না করিয়া স্নেহের সহিত বলিলেন, “তুমি এক কল্পকাল বাঁচিয়া থাক। এই ইন্দ্রের পরে তুমি ইন্দ্র হইবে। এখন তুমি সুতল নামক পাতালে গিয়া বাস কর। সে অতি সুন্দর স্থান। দেখিও আর কখনো যেন দেবতাদের সঙ্গে বিরোধ করিও না।” তদবধি বলি পাতালে বাস করিতেছে।

    ইহাই হইল বিষ্ণুর বামন অবতার। ইহার পরের অবতার পরশুরাম। সে অবতার বিষ্ণু জমদগ্নি মুনির পুত্র হইয়া জন্মগ্রহণ করেন।

    সে কালে ক্ষত্রিয়েরা বড়ই উদ্ধত হইয়া উঠিয়াছিল। তাহাদিগকে সাজা দিবার জন্যই পরশুরামের জন্ম।

    তখনকার প্রধান ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন কার্তবীর্য, অর্থাৎ কৃতবীর্যের পুত্র, অর্জুন। দত্তাত্রেয়ের বরে অর্জুনের এক হাজার হাত হইয়াছিল। সেই এক হাজার হাতে এক হাজার অস্ত্র লইয়া তিনি দেবতাদিগকে অবধি যুদ্ধে হারাইয়া দিতেন, এজন্য তাঁহার দর্পের আর সীমাই ছিল না।

    একবার কার্তবীর্য মৃগয়া করিতে গিয়া বনের ভিতর অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়েন। সেই সময়ে মহর্ষি জমদগ্নি তাঁহাকে নিমন্ত্রণপূর্বক, নিজের আশ্রমে আনিয়া বিবিধ উপচারে আহার করাইয়াছিলেন। ভালো লোক হইলে ইহাতে সে মুনির প্রতি কতই কৃতজ্ঞ হইত। আর হয়তো তাঁহার কত উপকার হইত। কিন্তু কার্তবীর্য সেরূপ স্বভাবের লোক ছিলেন না। মুনি যে তাঁহাকে কত ক্লেশ হইতে বাঁচাইলেন, সে কথা তাঁহার মনেই আসে না। তিনি একদৃষ্টে কেবল মুনির গাইটিকেই দেখিতে লাগিলেন। সেটি কামধনু, মুনি তাহার নিকট যাহা চাহেন, তাহাই পান, রাজার লোক তাহা খাইয়া শেষ করিতে পারে না। রাজা ভাবিলেন, এ গাইটি তাঁহার না হইলেই চলিতেছে না। কাজেই তিনি মুনিকে বলিলেন, “ভগবন্, গাইটি আমাকে দিন।” মুনি সে কথায় রাজি না হওয়ায় রাজা সেটি তাঁহার নিকট হইতে কড়িয়া লইয়া গেলেন।

    পরশুরাম কার্তবীর্যকে বধ করিয়া সেই গাই ফিরাইয়া আনিলেন। তারপর তিনি বনে চলিয়া গিয়াছেন এমন সময় কার্তবীর্যের পুত্রেরা আসিয়া অতি নিষ্ঠুরভাবে মহর্ষি জমদগ্নির প্রাণনাশ করিল।

    পরশুরাম আশ্রমে ফিরিয়া সেই দারুণ সংবাদ শুনিবামাত্র ক্রোধে অধীর হইয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন যে পৃথিবীর যত ক্ষত্রিয় সব তিনি মারিয়া শেষ করবেন। তারপর ভীষণ কুঠার হস্তে সেই যে তিনি ক্ষত্রিয় মারিতে আরম্ভ করিলেন, তাহাদিগকে শেষ না করিয়া আর ক্ষান্ত হইলেন না। একবার নয়, দুবার নয়, ক্রমাগত একুশবার তিনি এইরূপে পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করেন। ক্ষত্রিয়ের রক্তে কুরুক্ষেত্রে পাঁচটি কুণ্ড প্রস্তুত করিয়া তাহাতে পিতার তর্পণ করিলে, তবে তাঁহার ক্রোধ কিঞ্চিৎ শান্ত হইল।

    ক্ষত্রিয়েরাই ছিল পৃথিবীর রাজা; তাহাদিগকে বধ করিয়া তাঁহাদের সকলের রাজ্যই পরশুরামের হইল। সেই সব রাজ্য তখন তিনি মহর্ষি কশ্যপকে দান করিলেন। দান করিয়া তাঁহার মনে এই চিন্তা হইল যে সকলই তো পরের রাজ্য হইল। এখন কোথায় বাস করি? এই ভাবিয়া তিনি অস্ত্রদ্বারা সমুদ্রের জল সরাইয়া এক নূতন রাজ্যের সৃষ্টি করিলেন। তদবধি উহাই তাঁহার বাসস্থান হইল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগল্পমালা – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    Next Article টুনটুনির বই – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    Related Articles

    উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    টুনটুনির বই – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    July 15, 2025
    উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    গল্পমালা – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

    July 14, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.