Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    ইশতিয়াক খান এক পাতা গল্প307 Mins Read0

    অধ্যায় চব্বিশ – ক্রিটের রাজা মিনোস

    সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ১৭২০ থেকে ১৬২৮ সালের মধ্যে। ক্রিটের বাসিন্দা মিনোয়ানরা সমুদ্রের দেবতার কাছে নিজেদেরকে সঁপে দিলেন।

    নীল নদের বদ্বীপের উত্তরে একেবারে ভূমধ্যসাগরের কাছে একটি পর্বতসংকুল ও দীর্ঘ দ্বীপ খুঁজে পাওয়া যায়। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ- পূর্বদিক থেকে বিস্তৃত এক অজ্ঞাতনামা ও এলোমেলো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে এই দ্বীপটির অবস্থান ছিল। এই দ্বীপের বাসিন্দারা সম্ভবত এশিয়া মাইনর থেকে অভিযোজন করে এসেছিলেন বহু বছর আগে। মিশরে হিকসোসদের পাশাপাশি তারাও রাজার শাসনে থাকা দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছেন এবং সেখানে তাদের নাম না জানা সম্রাটের জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

    প্রাসাদটি নসোসের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত ছিল। উত্তরের সমুদ্রতট থেকে একটু ভেতরের দিকে অবস্থিত এই জায়গাটি কৌশলগত দিক দিয়ে বেশ সুবিধাজনক ছিল; কারণ এখান থেকে খুব সহজেই দ্বীপটির পূর্ব ও পশ্চিমদিকের উপর নজর রাখা যেত। এটি তৈরি হওয়ার অল্পকাল পরেই দ্বীপের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে আরও ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটি প্রাসাদ নির্মিত হয়– নসোসের উত্তরদিকের তীরে মাল্লিয়াতে এবং দক্ষিণ তীরে ফাইস্টোসে।

    প্রাচীন যুগের এই মানুষগুলো তেমন কোনো লিখিত তথ্য রেখে না যাওয়াতে আমরা সঠিকভাবে বলতে পারি না এসব প্রাসাদে কারা বসবাস করতেন। তবে প্রতিটি প্রাসাদকে ঘিরেই ছিল জনবসতীপূর্ণ শহর, অসংখ্য রাস্তা ও বাড়ির সন্নিবেশ। ধারণা করা হয় যে এই শহরের বাসিন্দারা সমুদ্র পেরিয়ে অন্যান্য সভ্য জনগোষ্ঠীর সাথে বাণিজ্য করতেন। তাদের বর্ণিল মাটির জগগুলো (খুব সম্ভব মদ অথবা তেল ধারণ করার কাজে ব্যবহৃত) শুধু আশেপাশের দ্বীপগুলোতেই নয় এমনকি নীল নদ ও ভূমধ্যসাগরের তীরেও যেখানে সেমাইটরা থাকতেন—খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

    তারা মানব বলিদানের চর্চাও করতেন। ভূমিকম্প ছিল সেখানের নিয়মিত ঘটনা। একবার এক প্রবল ভূমিকম্পে জুকটাস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত মন্দিরটি ধসে পড়ে যায়। মন্দিরটি উত্তরের সাগর অভিমুখী ছিল। ভেতরে থাকা সকল বাসিন্দার সলিল সমাধী হয় এবং প্রায় তিন হাজার বছর ধরে তাদের কঙ্কালগুলো মোটামুটি অবিকৃত অবস্থায় ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পুরো দৃশ্যটি এভাবে খুঁজে পান : ‘একজন তরুণকে পাথর ও কাদামাটির বেদিতে বেঁধে শুইয়ে রাখা হয়েছে এবং তার শরীরের উপর একটি ব্রোঞ্জের তৈরি ছুরি রাখা। বেদির সামনে একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি ( ৪০-এর মতো বয়স), যার হাতে উৎসবের আংটি ও সিলমোহর। ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় একজন মহিলা উপুড় হয়ে পড়ে আছেন।’

    মানব বলিদান খুব বেশি হতো না। সেই অঞ্চলের শুধু আরেকটি জায়গাতেই বলি দেওয়ার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে; তা হচ্ছে নসোস শহরের পশ্চিম অংশের একটি বাড়িতে। সেখানে দুজন বাচ্চাকে বলি দেওয়া হয়েছিল এবং কোনো এক ধরনের ধর্মীয় আচারের অংশ হিসেবে তাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে শামুক দিয়ে রান্না করা হয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা জানতে পারিনি এই বলিদানের পেছনের কারণটি কী ছিল অথবা নসোসের পূজারিদেরকে কী ভয়াবহ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এই ধরনের চরমপন্থা অবলম্বন করতে হয়েছিল।

    তবে সকল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা কিছু ঘটনা অনুমান করে নিতে পারি।

    খ্রিষ্টপূর্ব ১৭২০ সালের দিকে নসোসে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং প্রাচীন প্রাসাদটি ধসে পড়ে। ধ্বংসাবশেষের উপরেই নির্মিত হয় আরেকটি প্রাসাদ, যার নির্মাণকাজে ভেঙে যাওয়া প্রাসাদের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রাসাদটি আরও অনেক বেশি বিলাসবহুল ছিল। নসোসের জনসাধারণ ততদিনে অনেক উন্নতি করেছে। তাদের তখন আরও ‘রাজকীয়’ একজন রাজার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল।

    গ্রিকরা এই দ্বীপটিকে ‘ক্রিট’ নাম দিয়েছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে এই দ্বিতীয় প্রাসাদের যুগে নসোস শহরে মিনোস নামের একজন শক্তিশালী রাজা বসবাস করতেন।

    গ্রিক পুরাণের ভাষ্য অনুযায়ী, মিনোস ছিলেন একজন ক্রিটান অভিজাত ব্যক্তির সৎ-ছেলে।

    তিনি দেশের শাসনভার নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং ক্রিটের জনগণকে বলেন যে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন যে দেবতারা তাকে রাজা হওয়ার জন্য পছন্দ করেছেন। তিনি দেবতাদের কাছে যেটাই চাইবেন সেটাই তাকে দেওয়া হবে। তখন দ্বীপবাসীরা তার এই দাবির প্রতি চ্যালেঞ্জ জানালেন। অগত্যা মিনোস দেবতা পোসাইডনকে বললেন তার জন্য মহিষ পাঠাতে যেটিকে বলি দেওয়া হবে।

    তৎক্ষণাৎ একটি অনন্যসাধারণ মহিষ সমুদ্র থেকে হেঁটে এসে ক্রিটান তটে উপস্থিত হলো। মহিষটি এতটাই অসাধারণ ছিল যে মিনোস এটিকে বলি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। তিনি এটিকে নিজের মহিষের পালের সাথে যুক্ত করে নিলেন এবং তার পরিবর্তে আরও ছোটোখাটো একটি মহিষকে বলি দিলেন।

    ক্রিটানরা মিনোসকে রাজা হিসেবে মেনে নিলেন। চারদিকে তার সুনাম ছড়িয়ে গেল এবং সবাই তার প্রশংসা করতে লাগলেন। কিন্তু মিনোসের লোভের কারণে তার উপর পোসাইডন রাগান্বিত হলেন এবং তার স্ত্রী পাসিফির প্রতি অভিশাপ ছুড়ে দিলেন—তিনি সেই মহিষের প্রতি যৌন কামনায় অস্থির হয়ে গেলেন। অবশেষে কালজয়ী স্থপতি ডেডালাস-এর সহায়তায় পাসিফি ও পোসাইডনের মহিষ যৌন মিলনে জড়ালেন।

    তাদের মিলনের ফলস্বরূপ পাসিফি একটি ভয়াবহ রকমের বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন। তার সন্তানটি মানুষের মতো দেখতে হলেও তার চেহারাটি ছিল মহিষের মতো। মিনোস বাচ্চাটিকে দেখার পর তাকে নসোস প্রাসাদের নিচে একটি কারাগারে বন্দি করে রাখলেন। পাসিফিকে সাহায্য করার জন্য শাস্তিস্বরূপ ডেডালাসকে এই কারাগার নির্মাণের কাজ করতে হয়েছিল। ল্যাবিরিন্থ নামের এই কারাগারটিতে অনেকগুলো বাঁকানো পথ ছিল, যে কারণে বাচ্চাটি কখনোই সেখান থেকে পালাতে পারেনি। বাচ্চাটিকে তার মা অ্যাস্টেরিয়াস নাম দিলেও সবাই তাকে মিনোটর নামেই ডাকত। এই কারাগারেই মিনোটর বড়ো হতে থাকে। মিনোস তাকে মানুষের মাংস খাওয়াতেন। গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের সাথে একটি যুদ্ধের পর তিনি নির্দেশ দেন মিনোটরকে খাদ্য হিসেবে বছরে সাতজন তরুণ ও সাতজন তরুণী পাঠাতে হবে।

    এই গল্পটি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে লিখিত দ্য লাইব্রেরি নামের একটি গল্প সংকলনে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পুরাণের কাহিনির ধোঁয়াশার পেছনে আমরা একটি সভ্যতার চিহ্ন খুঁজে পাই, যাদের ব্যাপারে আর কোথাও কোনো গল্প পাওয়া যায়নি।

    এমনও হতে পারে যে মিনোস কোনো একজন কালজয়ী শাসকের নাম ছিল না বরং বেশ কয়েকজন রাজার নাম ছিল যারা সবাই নসোসের শাসক ছিলেন এবং ক্রিট দ্বীপের প্রাচীনতম সভ্যতার সাথে জড়িয়ে ছিলেন। অন্য শহরের সাথে পণ্য আদানপ্রদানের গল্পটি প্রমাণ করে যে প্রাচীন যুগে মিনোয়ানরা সমুদ্রপথে বাণিজ্য করতেন। দ্বিতীয় প্রাসাদের পণ্যগুলোর ভগ্নাংশ প্রাচীন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং অন্য দেশের মালামালও নসোস শহরে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। নসোসে একটি এলাবাস্টারের তৈরি পাত্রে তৃতীয় হিকসোস রাজার নাম লেখা ছিল এবং হিকসোসদের রাজধানী আভারিসের একটি দেওয়ালে মিনোয়ানদের মতো করে রং করা একটি দেওয়ালচিত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

    মিনোয়ানরা নিয়মিত ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরের সাথে যোগাযোগ করত। সম্ভবত তারা মেসোপটেমিয়াতেও বাণিজ্য করার জন্য গিয়েছিল। গিলগামেশের রাজ্যে কিছু ছবি ও সিলমোহরের উপর আমরা তাকে দেখতে পাই স্বর্গ থেকে আসা মহিষের সাথে লড়াই করতে। এই গল্পগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ সালের মাঝে কাদামাটির ট্যাবলেটে আবির্ভূত হতে শুরু করে। সেই সময়ই মিনোয়ানদের সভ্যতা চরম উৎকর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই ট্যাবলেটগুলোতে দেখা যায় গিলগামেশ একটি অর্ধমানব-অর্ধমহিষের সাথে লড়ছেন এবং মহিষটির পরনে একটি কুস্তিগিরের বেল্ট। দানবটির চেহারা মানুষের মতো আর শরীর মহিষের মতো, যা মিনোটরের বিপরীত (তার মাথা মহিষের মতো, শরীর মানুষের মতো)। তবে এই দুটি দানবের মাঝে থাকা সাদৃশ্য এটাই প্রমাণ করে যে মিনোয়ান ও মেসোপটেমিয়ান নাবিকরা একজন আরেকজনকে গল্প শুনিয়েছেন।

    চিত্র-১০ : নাচিয়ে ষাঁড় 
    চিত্র-১০ : নাচিয়ে ষাঁড় 

    পূর্বে আলোচিত এনাক্রোনিস্টিক পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে মিনোসের শাসকরা গ্রিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক নজরানা আদায় করত। এই ব্যাপারটি থেকে মিনোসের দ্বিতীয় প্রাসাদের আমলে ক্রিট দ্বীপের সামরিক শক্তিমত্তার একটি বড়ো প্রমাণ পাওয়া যায়। দ্য লাইব্রেরি থেকে জানা যায় যে মিনোসই ‘প্রথম সভ্যতা, যারা সমুদ্রপথের আধিপত্য দখল করেছিল। তারা আশেপাশের সকল দ্বীপে নিজেদের শাসন বিস্তার করেছিলেন। আশেপাশের বেশ কয়েকটি দ্বীপে মিনোয়ান শহর আবিষ্কৃত হয়েছে; যেমন মেলোস, কিয়া এবং ছোটো কিন্তু গোলযোগপূর্ণ থেরা। শহরগুলো শুধু বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবেই নয় বরং নৌঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডিডেস লিখেছেন যে মিনোসই হচ্ছে প্রথম রাজ্য যাদের নৌবাহিনী ছিল।

    ‘তিনি হেলেনিক সমুদ্রের অধিপতি হতে পেরেছিলেন। তিনি উত্তরের সিক্লেডেস দ্বীপপুঞ্জ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের কারিয়ান নামক যাযাবর গোত্রকে হটিয়ে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন। তিনি তার দুই পুত্রকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি এই অঞ্চলের জলদস্যুদের দমন করেন যা সমুদ্রপথে বাণিজ্যকে আরও নিরাপদ করে দেয় এবং তার রাজস্ব আয় নিশ্চিত হয়’—বলেন থুসিডিডেস।

    হেরোডোটাসের মতে, কারিয়ানরা দ্বীপেই থেকে যায় কিন্তু তারা মিনোসের প্রজায় রূপান্তরিত হয়। কারিয়ানরা ছিলেন অভিজ্ঞ নাবিক। তারা মিনোসের জন্য জাহাজ চালনায় নিয়োজিত হন। মিনোয়ান সাম্রাজ্যটি অনেকটাই সমুদ্র ও জলভিত্তিক ছিল।

    খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৮০ সাল নাগাদ মিনোয়ানরা তাদের ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যায়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জলদস্যুরা সব সময়ই ঝামেলার উৎস ছিল। থুসিডিডেস ব্যাখ্যা করেন যে জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই নসোস শহরকে দ্বীপের একেবারে ভেতরের দিকে—সমুদ্রতট থেকে যত দূরে সম্ভব-নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মিনোসের নৌবাহিনী এই জলদস্যুতার অবসান ঘটায়; অন্তত ক্রিটের আশেপাশের সামুদ্রিক এলাকায়। জলদস্যুরা না থাকায় দ্বীপবাসী মানুষগুলো ‘ধনসম্পদ আয়ের দিকে মন দিতে পারে এবং তাদের জীবন আরও সুসংহত হয়’—বলেন থুসিডিডেস।

    বাণিজ্য বাড়তে থাকে, নতুন নতুন দালান নির্মিত হয়, শিল্পীরা আরও বেশি করে ছবি আঁকার সুযোগ পান এবং অঙ্কন ও কারুশিল্প পৌঁছে যায় এক নতুন উচ্চতায়।

    তবে রাজা মিনোসের গল্পে একটি নিরন্তর ঝুঁকির কথা আমরা শুনতে পাই-প্রাসাদের নিচে আটকে রাখা ‘মহিষ দানব’। চোখের আড়ালে থাকা এই প্রাণীটির অশুভ অস্তিত্ব শহরবাসীকে সব সময় পোসাইডনের অসন্তুষ্টির কথা মনে করিয়ে দিত। এটি শুধু মিনোসের প্রতি আনুগত্য দেখানো মানুষদের জন্যই ঝুঁকি ছিল না বরং স্বয়ং রাজা মিনোসের জন্যও এটি আশঙ্কাজনক ছিল। এটি ছিল একটি অবাধ্য ও ক্ষুধার্ত শক্তিমত্তার প্রতীক যা এই রাজপ্রাসাদের মূল ভিত্তির প্রতি নিরন্তর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছিল। এই কারণেই তার জন্য নিয়মিত বলিদানের প্রয়োজন পড়ত।

    নসোসের রাজপ্রাসাদটি বিভিন্ন দেওয়ালচিত্র দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছিল। কার্বন, হলুদ রঙের মাটি, লোহার খনিজ এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানকে শুষ্ক চুনাপাথরের প্লাস্টারের উপর বসিয়ে উজ্জ্বল রং তৈরি করা হতো, যেগুলো এসব দেওয়ালচিত্র রং করার কাজে ব্যবহার হতো। এই ছবিগুলোতে দেখা যায় পবিত্র মহিষরা শিং মাটিতে নামিয়ে রেখেছে আর উপাসকরা মহিষের শিঙের উপর দিয়ে ডিগবাজি খেয়ে তাদের পিঠে উঠে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে আবারও লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ছে।

    নসোসের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে একটি ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যটি আগে উল্লেখিত ‘মহিষ-নৃত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। মহিষ-নাচের সবচেয়ে ভয়ংকর ও অন্তিম মুহূর্তটিকে এই ভাস্কর্যে অমর করে রাখা হয়েছে।

    খুব সম্ভব এই নৃত্যে অংশগ্রহণকারী উপাসকরা ছিলেন তরুণ এবং তাদের শরীরের গঠন ছিল ক্রীড়াবিদদের মতো। একইসাথে, তারা মৃত্যুর জন্যও প্রস্তুত ছিলেন। মিনোটরের গল্পটি আমাদেরকে এক প্রাচীন ভিন্নধর্মী মানব বলিদানের কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে মানুষকে বেদিতে না বসিয়ে ক্রুদ্ধ মহিষের সামনে ছেড়ে দেওয়া হতো।

    নসোসের ধ্বংসাবশেষ খনন করে ‘মহিষ সভা’ নামে পরিচিত বড়ো আকারের সভাকক্ষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই সম্ভবত এই ‘মহিষের নৃত্য’ নামের আচারটি পালন করা হতো। এই সভার চারপাশে অনেক বড়ো বড়ো দরজা, সিঁড়ি ও বারান্দা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং আশেপাশের অন্যান্য সভাকক্ষকে এর সাথে লম্বা করিডরের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

    ক্রিটের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে মিনোটরের গল্পের আরও একটি যোগসূত্র রয়েছে। মিনোটর যেভাবে ১৪ জন মানুষকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলেছিল, সেভাবে আমরা নসোসের বলিদান মন্দিরে এক ধরনের ভোজের আয়োজনের চিহ্ন খুঁজে পাই।

    কী ধরনের দৈব রাগকে প্রশমিত করার জন্য এই ধরনের বলির প্রয়োজন হতো?

    গ্রিকদের বর্ণনাতেও পরবর্তীকালে মিনোটরের গল্পটি উঠে এসেছে। তাদের মতে পোসাইডন ছিলেন সমুদ্রের দেবতা; তার অন্য নাম ছিল আর্থশেকার (ভূমিকম্পের স্রষ্টা)। মহিষটি ছিল পোসাইডনের পবিত্র পশু। ক্রিট দ্বীপ এবং তার আশেপাশের সমুদ্র সারাক্ষণ ভূমিকম্পের দমকে প্রকম্পিত হতো এবং তার ফলস্বরূপ বড়ো বড়ো ঢেউ এসে দ্বীপটির তীরে আঘাত হানত। সর্বক্ষণ আর্থশেকারের কাছে মিনতি জানালেই কেবল সমুদ্রের হুমকি থেকে বাঁচা যেত।

    ক্রিটের কাছের একটি দ্বীপ থেরায় ভূমিকম্পের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেল। সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ১৬২৮ সালের দিকে। সেই দ্বীপে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ছিল এবং সেখান থেকে ইতোমধ্যে একাধিকবার অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তারপরও দ্বীপটিতে আকরোটিরি নামে একটি সমৃদ্ধ শহর গড়ে ওঠে যেখানে অনেক মানুষের বসবাস ছিল।

    তবে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়তে শুরু করলে শহরটির প্রাচীরগুলো ভেঙে যায়। কিন্তু আকরোটিরি শহরের কর্মঠ জনগোষ্ঠী দ্রুত সেগুলোর পুনর্নির্মাণ করে ফেলে। পরবর্তীতে ভূমিকম্পের সংখ্যা আর তীব্রতা বাড়তে শুরু করলে তারা শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। মাটি থেকে খুঁড়ে আনা শহরের ধ্বংসাবশেষের মাঝে কোনো মানুষের কংকাল ছিল না এবং সেখানে কোনো রুপা বা কোনো মূল্যবান গয়না খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা যায় যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই শহরের সকল বাসিন্দা তাদের জানমাল নিয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল।

    দ্বীপটিতে খুঁজে পাওয়া পাথর ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষকে পরীক্ষা করে ধারণা করা গিয়েছে যে ন্যূনতম দুই মাস থেকে শুরু করে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলেছে—বিরামহীনভাবে। একদিকে থেরায় ভূমিকম্প আর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত চলছিল, অপরদিকে আশেপাশে দ্বীপগুলোর বাসিন্দারা ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করছিলেন একইরকম পরিণতির জন্য; আবার কেউ কেউ প্রার্থনা করছিলেন যাতে এই দুর্যোগ তাদের কাছে না আসে। কারও কারও প্রার্থনা রূপান্তরিত হয়েছিল মানব বলিদানে

    আগ্নেয়গিরির কারণে দ্বীপের চেহারা পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। পুরো শহরটি ১৫ ফুট ছাইয়ের নিচে চাপা পড়েছিল। আগ্নেয়গিরির ভেতর থেকে বড়ো বড়ো পাথরের টুকরো উড়ে এসে সেই ছাইয়ের উপর আছড়ে পড়েছিল। দ্বীপের একপাশের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখান দিয়ে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়েছিল। অবশেষে অগ্ন্যুৎপাত থামার পর আর সেখানে একটি গোলাকার দ্বীপ ও তার কেন্দ্রবিন্দুতে আগ্নেয়গিরি ছিল না; সেটি একটি রিং আকৃতির ভূমিতে রূপান্তরিত হয় যার মাঝখানে জলাধার।

    এভাবেই ধ্বংস হয় মিনোয়ান শহর আকরোটিরি; যেটি খনন করে বের করার আগে পর্যন্ত ছাইয়ের নিচে চাপা অবস্থায় লুকিয়ে ছিল ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। এই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ক্রিটের মিনোয়ানদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তা নিশ্চিত নয়। থেরাতে দুর্যোগ ঘটার পরও মিনোয়ানদের সভ্যতা স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে একটি পর্যায়ে এসে ছন্দপতন ঘটে। তাদের জনসংখ্যা কমে যেতে থাকে, বাড়িঘরের চেহারা মলিন হতে থাকে এবং বাণিজ্য স্তিমিত হয়ে পড়ে।

    ধরে নেওয়া যায় যে এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার পেছনে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতই দায়ী।

    থেরার বিভিন্ন নমুনা থেকে ধারণা করা যায় যে আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল জুনের শেষের দিকে বা জুলাই মাসের প্রথমে; যে সময়টা হচ্ছে খাদ্যশস্য খেত থেকে কাটার জন্য উপযুক্ত সময়। পাশের দ্বীপ থেকে ছাই উড়ে এসে ক্রিট দ্বীপের পূর্বদিকে পড়েছিল এবং খুব সম্ভব পুরো এক মৌসুমের শস্য ধ্বংস করে দিয়েছিল। থেরার সমুদ্রতীরের ছাই আমাদেরকে ধারণা দেয় যে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে একটি বড়ো আকারের সুনামি ঝড়ের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল এবং এই ঝড়ের কারণে আশেপাশের সব দ্বীপ পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সুনামিটি যখন ক্রিটের তীরে এসে আঘাত হানে তখন তা কমপক্ষে ত্রিশ ফুট উচ্চতার ছিল।

    পরের বেশ কয়েক মাস ধরে শুধু বজ্রসহ বৃষ্টি আর একের পর এক সর্বগ্রাসী ঝড় আঘাত হানতে থাকল এবং সাথে তাপমাত্রা কমে যেতে থাকল। সেই সময় প্রতিদিনের সূর্যাস্তগুলো ছিল গভীর, লাল রক্তের মতো।

    মিনোয়ানদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আগ্নেয়গিরিটি সরাসরি জড়িত না থাকলেও জলবায়ুর এই আকস্মিক পরিবর্তনের প্রভাবটিকে মিশরে নীল নদের পানি কমে যাওয়ার সাথে তুলনা করা যায়। সবাই ধরে নিয়েছিলেন সাগরের দেবতা পোসাইডন রেগে গিয়েছেন। রাজপ্রাসাদের নানা উদ্যোগ বিফলে যায়। দেবতাদের রাগ কমে না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপৃথিবীর ইতিহাস ২ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার
    Next Article অশরীরীজগৎ – ইশতিয়াক হাসান

    Related Articles

    ইশতিয়াক খান

    পৃথিবীর ইতিহাস ২ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.