Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর ইতিহাস ২ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    ইশতিয়াক খান এক পাতা গল্প641 Mins Read0

    ৫২. চমকপ্রদ পরাজয়

    অধ্যায় ৫২ – চমকপ্রদ পরাজয়

    খ্রিস্টপূর্ব ৭০৪ থেকে ৬৮১ সালের মাঝে অ্যাসিরীয়ার সেন্নাশেরিব তার প্রায় প্রতিটি শত্রুকে পরাজিত করেন। কিন্তু শুধু এক ব্যর্থ যুদ্ধযাত্রার কারণে সবাই তাকে মনে রেখেছেন।

    ব্যাবিলন পদদলিত করার ৫ বছরের মাথায় দ্বিতীয় সারগন মারা যান। মরার সময় তিনি উত্তরসূরি হিসেবে রেখে যান তার এক পুত্রকে, যে পিতাকে ঘৃণা করত। সেন্নাশেরিব তার শাসনামলে একবারের জন্যেও পিতা হিসেবে সারগনের অস্তিত্ব স্বীকার করেননি। তার আমলের কোনো শিলালিপি বা লেখনীতে একবারও সারগনের ‘স’ও জায়গা পায়নি।

    নিজের ছেলের ব্যাপারে সারগনের তেমন কোনো উচ্চ ধারণা ছিল না, এবং এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তিনি পিছপা হননি। এটা টের পাওয়া যায়, যখন সারগনের মৃত্যুর পর বিভিন্ন প্রদেশে ‘স্বাধীনতা অর্জনের উৎসব শুরু হয়। সবাই নিশ্চিত ছিলেন, রাজপুত্র একজন মেরুদণ্ডহীন নির্বোধ। তারা অ্যাসিরীয় শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে বিভোর হয়ে পড়লেন। পশ্চিমে ফিলিস্তিনের প্রাচীন শহরগুলো বিদ্রোহের পরিকল্পনা আঁটতে বসল এবং উপসাগরের একেবারে মাথায় বসে মেরোদাক-বালাদান (হ্যাঁ, সেই ক্ষমতাপ্রাপ্ত সাবেক শাসক) নিজ ভূখণ্ডকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।

    তবে সেন্নাশেরিবের কাপুরুষতার বিষয়ে সবাই একমত ছিলেন না। জেরুজালেমের এক বিজ্ঞ ব্যক্তি তার রাজাকে দক্ষিণে দানা বাঁধতে থাকা বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত হতে নিষেধ করলেন। হিব্রুদের ধর্মীয় নেতা ইজাইয়াহ সতর্ক করলেন, ‘তাদেরকে যে লৌহদণ্ড আঘাত করেছিল, তা হয়তো ভেঙে গেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই, সাপের ঔরসে জন্ম নিয়েছে একটি ড্রাগন।’

    ব্যাবিলনের লোকজন এতটা সাবধানী ছিল না। সেন্নাশেরিব ‘মারদুকের হাত থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার’ প্রাচীন রীতির মাধ্যমে ব্যাবিলনের যুদ্ধ-দেবতার কাছে নতি স্বীকারের প্রথা পালন করেননি। কোনো আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াই তিনি নিজেকে ব্যাবিলনের রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন, যেটি ছিল ব্যাবিলন ও তার প্রধান উপাস্যের প্রতি অপমানসূচক।

    সেন্নাশেরিবের অভিষেক অনুষ্ঠান শেষ হতে-না-হতেই ব্যাবিলনের এক কর্মকর্তার ছেলে নিজেকে ব্যাবিলনের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন। তিনি প্রায় এক মাস ক্ষমতায় ছিলেন। মজার বিষয় হলো, ততদিনে বুড়ো হয়ে যাওয়া মেরোদাক-বালাদান তার দক্ষিণের জলাভূমি থেকে হেলতে দুলতে উঠে এসে নতুন এই রাজাকে উৎখাত করলেন। তার সঙ্গে ছিল এলামের রাজার সৌজন্যে পাওয়া ৮০ হাজার তিরন্দাজ ও ঘোড়সওয়ার বাহিনী। বলাই বাহুল্য, অ্যাসিরীয়াকে কাঁচকলা দেখানোর কোনো সুযোগ ছাড়তে এলামের রাজা সর্বদাই নারাজ ছিলেন।

    আরও একবার, সেই পুরনো ও ভাঙা রেকর্ডের মতো করে মেরোদাক- বালাদান ঘোষণা দিলেন, তিনিই প্রাচীন ব্যাবিলনীয় প্রথার পুনঃপ্রচলন করতে যাচ্ছেন। তার এক শিলালিপিতে লেখা ছিল, ‘মহান প্রভু, দেবতা মারদুক, ব্যাবিলনের রাজা মারদুক-আপলা-ইদ্দিনা দ্বিতীয়কে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইনিই সে মেষপালক, যিনি ছন্নছাড়া মানুষদের একত্রিত করবেন।’

    এসব ঘটনায় যারপরনাই বিরক্ত হলেন সেন্নাশেরিব। ব্যাবিলনকে শায়েস্তা করার জন্য তিনি তার প্রধান সেনাপতি ও সেনাবাহিনীর একাংশকে পাঠালেন। অপরদিকে মেরোদাক-বালাদান খুব তাড়াহুড়া করে অন্যান্য চালদিয়ান গোত্র, পশ্চিমের আরামিয়ান ও পূর্বের এলামাইটদের সঙ্গে জোট গঠন করলেন। এই যৌথবাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি কিশ শহরে অ্যাসিরীয়দের মোকাবিলা করলেন, এবং তাদেরকে পিছু হঠতে বাধ্য করলেন।

    এ পর্যায়ে এসে সেন্নাশেরিবের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সেনাবাহিনীর পূর্ণশক্তি সহ তিনি নিজেই আসসুরের রুদ্রমূর্তি হিসেবে যৌথবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

    মেরোদাক-বালাদান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাঁচলেন। তিনি সমুদ্রের কাছে অবস্থিত জলাভূমিতে লুকিয়ে থাকলেন। এ অঞ্চল পুরোপুরি তার নখদর্পণে ছিল। বাকি পথ পেরিয়ে সেন্নাশেরিব ব্যাবিলনে এসে পৌঁছালেন। দূর থেকে অ্যাসিরীয় রাজাকে দেখে নগরবাসীরা সানন্দে ফটক খুলে দিল। বীরদর্পে শহরে প্রবেশ করলেন সেন্নাশেরিব। তবে তিনি ঠিক করলেন ব্যাবিলনকে একটা শিক্ষা দেবেন- তিনি পুরো শহরে লুঠতরাজ চালালেন, প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে বন্দি করলেন এবং যারা তার বিরুদ্ধে জোটে যোগ দিয়েছিল, তাদের সবার গোলাঘরে সঞ্চিত শস্য ও ফসলি জমি ধ্বংস করলেন।

    তিনি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেই জলাভূমিতে মেরোদাক-বালাদানকে খুঁজে বেড়ালেন, কিন্তু সেই বুড়ো ও ধূর্ত শেয়াল তাকে সাফল্যের সঙ্গে ফাঁকি দিতে পেরেছিলেন।

    কিন্তু ব্যাবিলনের এহেন পরিণতি দেখেও শিক্ষা নিল না প্রাচীন ফিলিস্তিনি শহর একরন। এ শহরকে ঘিরে গড়ে উঠল পূর্ণমাত্রার বিদ্রোহ। তারা অ্যাসিরীয়ার প্রতি বিশ্বস্ত রাজাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখল। ফিনিশীয় শহর টাইরে ও সিডনও বিদ্রোহে যোগ দিল। তবে জুদাহর রাজা হেজেকিয়াহ ইজাইয়াহর সতর্কবাণীতে দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন।

    সেন্নাশেরিব ব্যাবিলন ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। উদ্দেশ্য, বিদ্রোহীদের পুরোপুরি শায়েস্তা করা। তার পক্ষ নিয়ে ব্যাবিলন শাসন করার জন্য তিনি প্রতীকী রাজা হিসেবে বেল-ইবনিকে নিয়োগ দিলেন। এই ব্যক্তি তারই রাজসভায় বেড়ে উঠেছিলেন। সেন্নাশেরিব এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘সে আমার নিজের ঘরে পালিত পোষা কুকুরের মতো বড় হয়েছে’। এক্ষেত্রে আমরা তার বিশ্বস্ত প্রকৃতির পরিচয় পাই। যদিও তার প্রশাসনিক দক্ষতা কতটুকু ছিল, কিংবা তিনি যোদ্ধা হিসেবে কেমন ছিলেন, তা জানা যায় না।

    এরপর অ্যাসিরীয় সেনাবাহিনী বিপদসংকুল পশ্চিমের পথে রওনা হল।

    সেন্নাশেরিবের নিয়োগ দেওয়া লেখকদের বর্ণনায়, তিনি পশ্চিমের সেমাইটদের ভূখণ্ড পর্যন্ত পথে যেসব জনবসতি পেয়েছিলেন, তার সবই দখল ও লুট করেন। সব শহর আগবাড়িয়ে তার কাছে বশ্যতা স্বীকার করা না পর্যন্ত তিনি তার এই অভিযান চালিয়ে যান।

    তবে বিদ্রোহী ভূখণ্ডের মধ্যদিয়ে যেতে তার যতখানি সময় লেগেছিল, তা থেকে প্রমাণ হয়, তিনি পশ্চিম ফ্রন্টে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

    হঠাৎ করেই রঙ্গমঞ্চে নতুন ও অপ্রত্যাশিত এক হুমকির আবির্ভাব হল।

    সেন্নাশেরিব খবর পেলেন, মিশরের কুশ-বংশোদ্ভূত রাজা তিরহাকাহ তার বিরুদ্ধে লড়তে আসছেন।

    বাস্তবে, তিরহাকাহ তখনও ফারাও হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি ছিলেন ফারাও পিয়ানখের ছোটছেলে। তার পিতা ১৫ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন।

    সেসময় পিয়ানখের ভাই শাবাকা সিংহাসনের অধিকর্তা ছিলেন। পিয়ানখের দুই ছেলেসন্তান থাকা সত্ত্বেও, সে আমলের নুবিয়ান রীতি অনুযায়ী, রাজা মারা গেলে তার জীবিত ভাইদের সিংহাসনের ওপর অপেক্ষাকৃত জোরালো দাবি থাকে। শাবাকার মৃত্যুর পর তিরহাকাহর বড়ভাই রাজা হলেন। তিরহাকাহ তার সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন। তাকে একপর্যায়ে সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হল।

    তিরহাকাহ ও তার মিশরীয় বাহিনীর দেখা মিলতে মিলতে হেজেকিয়াহ অ্যাসিরীয়া-বিরোধী বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে মনস্থির করে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে মেরোদাক-বালাদানের বড় অবদান ছিল। তিনি তার গোপন আস্তানা থেকে বারবার বার্তা পাঠিয়ে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। যখন হেজেকিয়াহ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, মেরোদাক-বালাদান এমনকি তার জন্য চিঠি ও উপহারও পাঠালেন, কারণ ‘তিনি শুনেছেন হেজেকিয়াহর শরীর ভালো না।

    হেজেকিয়াহ খুশিমনেই সেসব উপহার গ্রহণ করলেন। তিনি চালদিয়ান দূতদের তার রাজপ্রাসাদ ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। টু কিংস পুঁথি’র ভাষ্যমতে, ‘এমন কোনোকিছু ছিল না, যা হেজেকিয়াহ তাদেরকে দেখাননি’। এমনকি, তিনি এই দূতদের জন্য নিজের অস্ত্রভাণ্ডারও উন্মুক্ত করে দেন।

    স্বভাবতই, এসব ঘটনায় শঙ্কিত হন বিজ্ঞ ধর্মগুরু ইজাইয়াহ। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি তাদেরকে কী দেখিয়েছেন?’। রাজা উত্তর দেন, ‘সবকিছুই’।

    ইজাইয়াহ আশঙ্কা প্রকাশ করলেন, ‘আপনার রাজপ্রাসাদে যা যা আছে, আপনার পূর্বসূরি ও উত্তরাধিকারীরা যা যা সঞ্চয় করেছে, তার সবটুকুই কেড়ে

    নেওয়া হবে।

    অপ্রত্যাশিতভাবে হেজেকিয়াহ উত্তর দিলেন, ‘ভালোই হবে। অন্তত আমার জীবদ্দশায় তবে শান্তির প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পারবো।’

    এই মত প্রকাশের অল্প সময় পরেই প্রথম অ্যাসিরীয়া-বিরোধী উদ্যোগ হিসেবে হেজেকিয়াহ কারাবন্দি রাজা একরনের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেন। একরনের বিদ্রোহীরা আশঙ্কা করছিলেন, তাদের ভূগর্ভস্থ কারাগারে রাজার অব্যাহত উপস্থিতি অন্যান্য অ্যাসিরীয়াপন্থী শক্তিদের সেই শহরে হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

    একরনের রাজাকে কড়া প্রহরার মধ্যদিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসা হল।

    লাচিশ শহরে হামলারত অবস্থায় সেন্নাশেরিব এই ‘বেয়াদবির’ খবর পেলেন। তিনি হেজেকিয়াহর কাছে কয়েকজন বিশেষ দূত পাঠালেন। এরা কেউ সাধারণ দূত ছিলেন না। তার সেনাপতি, প্রধান কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক বড়সড় সেনাদল নিয়ে হেজেকিয়াহর দোরগোড়ায় হাজির হলেন। হেজেকিয়াহর রাজসভার তিন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।

    ধারণা করা হয়, সেন্নাশেরিব সরাসরি হামলা চালানোর আগে তাদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অ্যাসিরীয় সেনা-সদস্যরা জেরুজালেমের প্রাচীরের সামনের ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঘটনা কোন্‌দিকে গড়ায় তা বোঝার জন্য শহরের অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী প্রাচীরের ওপর বসে কান পেতে রইলেন। অ্যাসিরীয়ার দূতরা উচ্চকণ্ঠে হিব্রু ভাষায় বললেন, ‘হেজেকিয়াহকে জানান, অ্যাসিরীয়ার রাজা তার জন্য একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। আপনার নিজস্ব কোনো শক্তিমত্তা বা কৌশল নেই। আপনি অন্য কারও ওপর নির্ভর করতে পারবেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন মিশর আপনাকে রথ ও ঘোড়সওয়ার বাহিনী দিয়ে সহায়তা করবে, কিন্তু দেশটিকে লাঠির মতো ব্যবহার করতে গেলে আপনি টের পাবেন, মিশর আসলে একটি কণ্টকযুক্ত নলখাগড়ার মতো—তাদের ওপর নির্ভর করতে গেলে তারা উল্টো আপনার হাত কেটে দেবে।’

    এসব শুনে হেজেকিয়াহ’র তিন প্রতিনিধি সর্বাধিনায়ককে অনুরোধ করলেন আরামিয়ানদের ভাষায় তাদের সঙ্গে কথা বলতে। এ ভাষাটি তারা বুঝতেন এবং অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশের মানুষেরাও বুঝতেন, কিন্তু জেরুজালেমের আমজনতার কাছে এটি অজানা ছিল।

    ‘দয়া করে প্রাচীরে বসে থাকা মানুষরা বোঝে, এরকম কোনো ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, আর্জি জানালেন তিন দূত। কিন্তু অ্যাসিরীয় সর্বাধিনায়ক এতে রাজি হলেন না, বরং বেশ রূঢ় ভাষায় উত্তর দিলেন, ‘এই বার্তা তাদের জন্যেও। তোমাদের মতো, তাদেরকেও নিজ বিষ্ঠা খেতে ও মূত্র পান করতে হবে।

    প্রাচীরের উপর বসে থাকা লোকজনকে রাজা আগেই বলে রেখেছিলেন তারা যেন কোনো ধরনের উসকানিতে প্রত্যুত্তর না দেয়। রাজার নির্দেশ মেনে তারা চুপচাপ বসে রইলেন। তবে জেরুজালেমের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের সামনে এই সশস্ত্র হুমকি বেশ কাজে দেয়। এতে হেজেকিয়াহর মনোবল ভেঙে যায়। কাব্যের ভাষায়, তিনি ‘তার নিজের কাপড়চোপড় ভাড়া দিলেন এবং ঘুস হিসেবে লাচিশ শহরে অবস্থানরত সেন্নাশেরিবের কাছে ১১ টন রুপা এবং প্রায় ১ টন সোনা পাঠালেন। তিনি একইসঙ্গে একরনের রাজার শরীর থেকে ডাণ্ডাবেড়ি খুলে তাকে মুক্ত করলেন। ধারণা করা হয়, এই দুর্ভাগা লোকটি অ্যাসিরীয়দের শিবিরে হাজির হয়ে তার দুর্দশার কথা খুলে বললেন—কীভাবে একরনের অভিজাতরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।

    এই উদ্যোগে সাময়িকভাবে হলেও সমস্যা থেকে মুক্তি পেল জেরুজালেম। সেন্নাশেরিবের সামনে ছিল মিশরীয়দের সঙ্গে মোকাবিলা করার ব্যস্ততা। ফলে হেজেকিয়াহকে মাফ করতে না-পারলেও সে-মুহূর্তে তার কিছু করার ছিল না। দুই দেশের বাহিনী এলতেকেহ যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হল। এ যুদ্ধের বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে যুদ্ধের পর মিশরীয় বাহিনী দেশে ফিরে যায় এবং সেন্নাশেরিব তাদেরকে ধাওয়াও করেননি। এ থেকে যা বোঝা যায়, তা হল, এটি ছিল খুব কষ্টসাধ্য একটি বিজয়।

    মিশরের ঝামেলা আপাতত মিটে যাওয়ায় তিনি বিদ্রোহী শহরগুলোর দিকে নজর দিতে পারলেন। প্রথমেই তিনি একরনে হামলা চালালেন। খুব অল্প সময়েই বিদ্রোহীদের পতন হল সেখানে। এরপর তিনি জেরুজালেম অভিমুখে যাত্রা করলেন।

    কিন্তু জেরুজালেমের বিরুদ্ধে খুব বেশিদিন যুদ্ধ চালাননি সেন্নাশেরিব। অজ্ঞাত কারণে, অ্যাসিরীয়দেরকে এই যুদ্ধে জয়ী বলা যায় না। তা সত্ত্বেও সেন্নাশেরিব যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। তার সভা- লেখকদের বর্ণনা পড়লেই বোঝা যায়, অসফল এক অভিযানকে সাফল্যের আলোয় চিত্রায়নের ব্যর্থ প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

    ‘ইহুদিদের হেজেকিয়াহর ভাগ্যে যা ঘটেছিল : আমি তার আশেপাশের সব শহর গুঁড়িয়ে দিই আমার যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে। আমি তাদেরকে একরনের রাজার হাতে সোপর্দ করি। সেখান থেকে চলে আসার সময় আমি ২ লাখ মানুষ ও অগণিত পশুপাখিকে বন্দি করে নিয়ে আসি।’

    ‘এছাড়াও, আমি হেজেকিয়াহকে খাঁচায় আবদ্ধ পাখির মতো তার নিজ শহর জেরুজালেমে আটকে রাখি। আমি তার চারপাশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি এবং তাকে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলি। আমার রাজত্বের ভয়াবহ চমক তাকে ম্লান করে দেয়।’

    তবে বাস্তবে ঘটনা মোটেও এরকম ছিল না। সেন্নাশেরিব অ্যাসিরীয়াতে ফিরে এলেন। যুদ্ধের অবসান হল। কিন্তু তখনও জেরুজালেমের প্রাচীর অক্ষত ছিল এবং শহরটিও স্বাধীন থেকে গিয়েছিল।

    টু কিংস পুঁথি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ‘প্রভুর এক দেবতার’ আগ্রাসনে এক রাতের মাঝেই সেন্নাশেরিবের ১ লাখ ৮৫ হাজার সেনা প্রাণ হারান। লেখক আমাদের জানান, ‘পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই চারপাশে শুধু মরদেহ দেখতে পেল। ফলে অ্যাসিরীয়ার রাজা সেন্নাশেরিব শিবির গুটিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হলেন। তিনি নিনেভেহতে ফিরে গেলেন এবং সেখানেই থাকতে লাগলেন।

    হেরোডোটাস এ ঘটনার কিছুটা ভিন্ন একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তার দাবি, তিনি এই বর্ণনা মিশরের পূজারিদের কাছ থেকে শুনেছেন। তার মতে, সেন্নাশেরিবের অ্যাসিরীয় শিবিরে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেয়। তারা ‘সেনাদের তির রাখার তূণ ও ঢালের হাতল ফুটো করে দিয়েছিল’। এ কারণে সেন্নাশেরিব হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং দেশে ফিরে যান।

    এছাড়াও, সেন্নাশেরিবের বাহিনী পঙ্গপালের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধ-শিবিরের অনেকেই তাদের নিজ নিজ তাঁবুতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ইঁদুর ও পঙ্গপালের যৌথ আক্রমণে এটাই প্রমাণ হয় যে, জেরুজালেমের প্রাচীরের বাইরে প্লেগ হানা দিয়েছিল, যেটি অ্যাসিরীয় রাজাকে প্রাণ নিয়ে পালাতে উদ্বুদ্ধ করে।

    সেন্নাশেরিব নিনেভেহকে তার নতুন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। অ্যাসিরীয় ইতিহাসের একেবারে শেষ পর্যন্ত শহরটি এই মর্যাদা ধরে রাখতে সমর্থ হয়। তিনি তার প্রাসাদের চারপাশে আরও নতুন নতুন অনেকগুলো প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এসব প্রাসাদের দেয়ালে বড় বড় চিত্রকর্ম আঁকানোর ব্যবস্থা করেন তিনি সেখানে তার বিভিন্ন যুদ্ধজয় ও শহর দখলের বিস্তারিত দেখানো হয়েছে। তবে একটি ছবিতেও জেরুজালেমের কথা বলা হয়নি।

    বছরখানেক পর, ব্যাবিলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চালদিয়ানরা খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে, পুতুল-শাসক বেল-ইবনি সেন্নাশেরিবের মতো বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন না এবং তিনি তার খেয়াল-খুশিমতো দক্ষিণের শাসনকাজ চালাচ্ছিলেন। পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য দুয়েকজন অ্যাসিরীয় কর্মকর্তা ব্যাবিলন পরিদর্শন করলেন। এরপর সেন্নাশেরিব স্বয়ং হাজির হলেন। উদ্দেশ্য, সব অরাজকতা দূর করা।

    তিনি হতাশা ও বিরক্তির সঙ্গে জানতে পারলেন, মেরোদাক-বালাদান আবারও সিংহাসন ফিরে পাওয়ার জন্য একটি সেনাবাহিনী গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সেন্নাশেরিবের আগমনের সংবাদ পেয়ে আবারও তিনি লেজ তুলে সমুদ্রের তীরবর্তী জলাভূমিতে পালিয়ে গেলেন।

    কিন্তু এবার অ্যাসিরীয় সৈন্যরা জলাভূমির মধ্যদিয়ে বড় আকারে তল্লাশি অভিযান চালতে শুরু করল। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এই কুচক্রী বৃদ্ধকে ধরে আনা। লুকানোর জায়গাগুলো সব প্রকাশ্যে চলে আসার ভয়ে মেরোদাক-বালাদান তার সব মিত্রদের একত্র করে সমুদ্রপথে এলামের উদ্দেশে রওনা দিলেন।

    সেন্নাশেরিব চেয়েছিলেন মেরোদাক-বালাদানের শিরশ্ছেদ করতে, কিন্তু তিনি তাতে সফল না হলেও অন্তত লোকটিকে দীর্ঘদিনের জন্য দেশছাড়া করতে সক্ষম হন, যা তার জন্য প্রশান্তিদায়ক ছিল। সেন্নাশেরিবের লেখকদের বর্ণনা মতে, ‘সে একাই সমুদ্রপথে পালিয়ে গেল। তার সঙ্গে ছিল তার পিতা-পিতামহ ও সকল পূর্বসূরির হাড়গোড়, যেগুলো তিনি কফিন খুঁড়ে বের করেছিলেন, তার দেশের মানুষ—যাদের সবাইকে তিনি জাহাজে নিয়ে তেতো-সাগরের (পারস্য উপসাগর) অপর পারে চলে যান।’

    সেন্নাশেরিব বেল-ইবনিকে ব্যাবিলনে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং তার জায়গায় নিজের প্রিয় বড়ছেলে আশুর-নাদিন-শুমিকে ব্যাবিলনের শাসকের পদে বসালেন।

    এ বিষয়ের নিষ্পত্তির পর তিনি তার দীর্ঘদিনের শত্রুর বিনাশ করার জন্য সমুদ্র পেরিয়ে এলামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। তিনি নিজস্ব নৌবহর তৈরির জন্য ফিনিশীয় জাহাজনির্মাতাদের দায়িত্ব দিলেন। সেসব জাহাজে তিনি সাইপ্রাস দ্বীপের টায়ার ও সিডন থেকে নাবিক ভাড়া করে আনলেন। এরপর তিনি সেই নৌবহর সঙ্গে নিয়ে আসসুর থেকে টাইগ্রিস নদী ধরে উপসাগরের দিকে রওনা হলেন। একপর্যায়ে তিনি আরাহতু খালের কাছে এসে পৌঁছালেন। এখানে এসে তিনি জাহাজগুলোকে স্থলভূমিতে উঠিয়ে রোলারের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বললেন। এরপর আবারও ইউফ্রেতিস নদের দেখা পেলে জাহাজগুলো পানিতে ভাসানো হল। সেন্নাশেরিব নিজে এই পুরোটা সময় স্থলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

    এলামের অভিযান সফল হয়। অ্যাসিরীয়ার নৌবহর একের পর এক বন্দরে নোঙর ফেলতে থাকে এবং সেগুলো সেন্নাশেরিবের দখলে চলে আসে। অবশেষে সেন্নাশেরিব সে শহরে এসে উপস্থিত হলেন, যেখানে মেরোদাক-বালাদান লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ও মানবসম্পদ খরচ বৃথা বলে প্রমাণিত হল। তিনি জানতে পারলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে অল্প কিছুদিন আগেই মেরোদাক-বালাদান মারা গেছেন।

    সেন্নাশেরিব জয় ও হতাশার মিশ্র অনুভূতি নিয়ে নিনেভেহ শহরে ফিরে গেলেন।

    এই অভিযানের মাধ্যমেই সেন্নাশেরিবের দুর্ভোগের অশনি সংকেত শোনা যায়। যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এলামাইটরা জেনে গেলেন, কোথায় গেলে অ্যাসিরীয় রাজাকে পাওয়া যাবে। সেন্নাশেরিব যেসব শহরে লুট চালিয়েছিলেন এবং নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করেছিলেন, সেসব অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এলামাইটরা সংঘবদ্ধ হতে লাগল।

    তারা পরিকল্পনার জন্য বেশ খানিকটা সময় নিলেন। ব্যাবিলনে বেশ কয়েকজন এলামাইট গুপ্তচর লুকিয়ে থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে লাগলেন। ৬ বছর পর, আশুর-নাদিন-শুমি শহরের উত্তরে একটি এলাকা পরিদর্শনে গেলে এলামাইট রাজা কাহল্লুশু’র নেতৃত্বাধীন একটি বাহিনী সীমানার অপর পার থেকে ছুটে এসে তাকে আটক করলেন। তারা তাকে এলামে নিয়ে গেলেন। সেন্নাশেরিব তার প্রিয় ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য এগিয়ে আসার আগেই এলামের এই বাহিনী ব্যাবিলনে ছুটে গেল এবং একজন ব্যাবিলনীয় সিংহাসনের একজন দাবিদারের সঙ্গে একতাবদ্ধ হল।

    প্রায় ৩ মাস পর সেন্নাশেরিব ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালেন। তার বাহিনী খুব সহজেই শহরের বাইরে অবস্থানরত ব্যাবিলনীয় বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হল। তিনি সেই ভুয়া দাবিদারকে আটক করলেন। ইতোমধ্যে শহরের ভেতরে মুসেজিব-মারদুক নামের এক চালদিয়ান সিংহাসন দখল করে ফেলেছেন। বুদ্ধিমানের মতো তিনি মন্দিরের সব স্বর্ণ বের করে এনে সেগুলোর বিনিময়ে তার সেনাদলের জন্য আরও অসংখ্য এলামাইট ভাড়াটে যোদ্ধা জোগাড় করলেন।

    ফলে অ্যাসিরীয়া, ব্যাবিলন ও এলামের মধ্যে একটি পুরোদস্তুর যুদ্ধ বেধে গেল।

    প্রায় ৪ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলল। এ সময়ের মাঝে সেন্নাশেরিব দুইবার এলামে হামলা চালান। এলামদের রাজা নিজে টাইগ্রিসের তীরে এসে একটি প্রতিশোধমূলক অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

    সেন্নাশেরিবের লেখকরা এই যুদ্ধের এমন বর্ণনা দেন, যা পড়ে মনে হয় এর চেয়ে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অ্যাসিরীয়ার ইতিহাসে এর আগে আর দেখা যায়নি। এই বিস্তারিত বর্ণনার আড়ালে যুদ্ধজয়ের ব্যর্থতা ঢাকার স্থূল প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। তবে এ-বিষয়টি সে-আমলে খুবই সাধারণ ছিল, যা আমরা আগেও বিভিন্ন বর্ণনায় দেখেছি।

    অপরদিকে, ব্যাবিলনের লেখকরা মোটা দাগে লিখেছেন, ‘অ্যাসিরীয়া এই যুদ্ধে পরাজিত হল’। তারা আর কোনো রঙচঙে বা কাব্যিক বর্ণনায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।

    চালদিয়ান রাজা ও তার এলামাইট মিত্রদের হাতে ব্যাবিলনের দায়িত্ব ছেড়ে বাধ্য হয়েই নিনেভেহ শহরে ফিরে গেলেন সেন্নাশেরিব। ততদিনে সেন্নাশেরিবের বাহিনী তার সাম্রাজ্যের প্রত্যেকটি অংশে যুদ্ধ করে ফেলেছে। ব্যাবিলন ‘সমস্যার’ সমাধানে সেনাবাহিনী নিয়ে তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে যাওয়া যে সুষ্ঠু সমাধান নয়, তা সেন্নাশেরিবের মতো একগুঁয়ে মানুষও বুঝতে পেরেছিলেন। ব্যাবিলনের সিংহাসন আবারও দখল করার আগে ভূ-রাজনৈতিক পটপরিবর্তন জরুরি ছিল।

    পরের বছরেই এল সে পরিবর্তন। এলাম থেকে খবর পাওয়া গেল, ব্যাবিলনে হামলা চালানো সেই রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার কথা বন্ধ হয়ে গেছে এবং তিনি কাউকে কোনো নির্দেশ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। খুব সম্ভবত তার স্ট্রোক হয়েছিল।

    এলামাইটদের অনুপস্থিতিতে সেন্নাশেরিব আবারও ব্যাবিলনে আক্রমণ করলেন।

    এবার তিনি সফল হলেন এবং ব্যাবিলনের ফটক ধসে পড়ল।

    সেন্নাশেরিব চালদিয়ান শাসককে আটক করলেন এবং তাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিনেভেহতে চালান করে দিলেন। এরপর এক হঠকারী সিদ্ধান্তে তিনি এই ঝামেলাযুক্ত শহরটিকে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন

    সেন্নাশেরিবের নিজের ভাষায়, ‘আমি ধ্বংস করলাম, ভয়াবহতা ছড়িয়ে দিলাম, আমি সবকিছু আগুনে পুড়িয়ে দিলাম। প্রাচীর এবং বহিঃপ্রাচীর, মন্দির ও দেবতাদের মূর্তি, ইট ও মাটির তৈরি মিনার, যতগুলো ছিল, যেখানে ছিল, সব আমি ধ্বংস করে দিলাম এবং ধ্বংসাবশেষ নিক্ষেপ করলাম আরাহতু খালে। শহরের ভেতর দিয়ে আমি আরও অনেকগুলো খাল খনন করালাম। সেগুলোতে পানি দিয়ে ভরিয়ে তুললাম। আমি এমন ব্যবস্থা করলাম, যাতে এই মন্দির ও দেবতাদের শহরের কোনো অস্তিত্ব না থাকে, কেউ যেন একে মনেও না রাখে। আমি শহরটিকে পুরোপুরি পানিতে ডুবিয়ে দিলাম এবং ব্যাবিলনের শেষ ধূলিকণাও (অন্যান্য ধনসম্পদের সঙ্গে) দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিলাম, এবং এর কিছু অংশ নববর্ষের উদযাপনকারী মন্দিরে একটি আচ্ছাদিত সংরক্ষণাগারে রেখে দিলাম।’

    ব্যাবিলনকে হ্রদে রূপান্তর করা, এর পুরো অঞ্চলকে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া এবং বস্তুত মারদুকের শহরকে একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল দেবতাদের প্রতি একধরনের অপমান। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে তিনি মারদুকের মূর্তিকেও সঙ্গে করে অ্যাসিরীয়ায় নিয়ে এলেন।

    অবশেষে, ব্যাবিলন নামের ‘সমস্যার’ সমাধান হলো। তবে রাজপুত্র আশুর- নাদিন-শুমির বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এলামাইটরা তাকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে কোনোকিছুর দাবি জানায়নি। খুব সম্ভবত তারা অ্যাসিরীয়াকে এতটাই ঘৃণা করত যে, রাজপুত্রকে তিল তিল করে যন্ত্রণা দিয়ে মারার মাঝেই তারা শান্তি খুঁজে পেয়েছিল। এভাবেই সেন্নাশেরিব তার প্রিয় বড়ছেলেকে হারালেন।

    বাকি সন্তানরা সেন্নাশেরিবের জন্য শুধু দুর্ভাগ্যই এনে দিয়েছিল। ৭ বছর পর, খ্রিস্টপূর্ব ৬৮১ সালে তিনি তার দুই কনিষ্ঠ পুত্রের হাতে নিহত হন। সেসময় তিনি দেবতা নাবুর উদ্দেশে বলিদানের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছিলেন। নিনেভেহ শহরে লিখিত শব্দের স্বর্গীয় দেবতা নাবু’র মন্দিরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

    তিনি অ্যাসিরীয়া ও ব্যাবিলনের রাজা এবং অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি সাফল্যের চূড়ায় ছিলেন, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কিন্তু এত এত যুদ্ধজয়, এত শহর ধ্বংস করা, এত মানুষ বন্দি করা ও ধনসম্পদ জোগাড় করা—এসবই ম্লান হয়ে গেছে, কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ তাকে চেনেন সেই ব্যক্তি হিসেবে, যিনি জেরুজালেম দখল করতে পারেননি।

    এ ব্যাপারে বিশেষ ধন্যবাদ পাবেন প্রখ্যাত ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন। তিনি তার ‘দ্য ডেসট্রাকশান অব সেন্নাশেরিব (সেন্নাশেরিবের পতন)’ কাব্যে তার এই ব্যর্থতার গল্প বিস্তারিত আকারে বর্ণনা করেছেন। এ কারণে ইংরেজি ভাষা জানেন এরকম শিক্ষার্থীরা সেন্নাশেরিবের অসামান্য সামরিক কেরিয়ারের বিষয়ে তেমন কিছু না জানলেও, তার একমাত্র পরাজয়ের কাহিনি প্রায় সবারই জানা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপদ্মজা – ইলমা বেহরোজ
    Next Article পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    Related Articles

    ইশতিয়াক খান

    পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.