Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর ইতিহাস ২ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    ইশতিয়াক খান এক পাতা গল্প641 Mins Read0

    ৫৯. সাইরাস দ্য গ্রেট

    অধ্যায় ৫৯ – সাইরাস দ্য গ্রেট

    খ্রিস্টপূর্ব ৫৮০ থেকে ৫৩৯ সালের মাঝে মেদেস, পারস্য এবং অবশেষে, ব্যাবিলনের দখল নেন সাইরাস।

    নেবুচাদনেজারের রাজত্বের পূর্বপ্রান্তে মেদিয়ান ও পারস্য রাজ্যের রাজা অ্যাস্টিয়াজেস দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন। তার লিদীয় স্ত্রী আরিয়েনিস কয়েক বছর আগে মানদানে নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ততদিনে মানদানের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। হেরোডোটাস লেখেন, “তিনি স্বপ্ন দেখলেন যে তার কন্যা এত বেশি পরিমাণে মূত্রত্যাগ করেছে যে তাতে শুধু পুরো শহর নয়, সমগ্র এশিয়া বন্যায় ডুবে গেছে।” এটা একই সঙ্গে ঘৃণ্য ও বিপজ্জনক একটি স্বপ্ন ছিল। তার সভার বিজ্ঞরা পূর্বাভাস দিলেন যে মানদানের কোনো এক সন্তান বড় হয়ে রাজত্ব দখল করে নেবে।”

    অ্যাস্টিয়াজেসের খুব সম্ভবত কোনো ছেলে ছিল না। তার নাতি তার উত্তরাধিকারী হবার কথা ছিল। এ কারণে, স্বপ্নের এই ব্যাখ্যা খুব একটা খারাপ কোনো খবর ছিল না তার জন্য। তবে তিনি খুব ভালো করে জানতেন যে মানদানের স্বামী তাকে বাদ দিয়ে তার ছেলের কাছে সরাসরি ক্ষমতা চলে যাওয়ার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখতেন না।

    সুতরাং তিনি খুব সাবধানতার সঙ্গে মেয়ের স্বামী খুঁজে বের করলেন। শুরুতেই বাদ গেল মেদিয়ান অভিজাত পরিবারের লোকজন, যারা সারাক্ষণ একবাতানায় তাকে ঘিরে রাখতেন। তিনি তার অধীনস্থ ও স্বল্প মর্যাদাসম্পন্ন (এবং ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বহুদূরে থাকা) একজনকে খুঁজে বের করলেন। তিনি ছিলেন পারস্যের প্রতিনিধি প্রথম সাইরাসের ছেলে ক্যামবিসেস। ক্যামবিসেস তার মেদিয়ান প্রভুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন এবং অ্যাস্তিয়াজেস তাকে খুব একটা উচ্চাভিলাষী মনে করতেন না।

    তবে আনশানের বাসিন্দা ক্যামবিসেস উচ্চাভিলাষী না হলেও একজন ‘পুরুষ’ ছিলেন; বিয়ের অল্পদিনের মাঝেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন মানদানে। সেসময় অ্যাস্তিয়াজেস আরেকটি স্বপ্ন দেখলেন, যা ছিল নেবুচাদনেজারের পবিত্র গাছ পড়ে থাকার স্বপ্নের পুরোই বিপরীত। তিনি দেখলেন, তার মেয়ের দেহ থেকে আঙুরবাগান বের হয়ে এসেছে এবং তিনি নিজেও সেখানে আটকে গেছেন। এই স্বপ্নের ব্যাখা দিলেন জ্ঞানীরা এভাবে—তার নাতি শুধু তাকে ছাড়িয়ে যাবেন, বিষয়টা এরকম নয়। ‘সে আপনাকে উৎখাত করবে’, জানালেন তারা।

    অ্যাস্তিয়াজেস একপ্রকার বাধ্য হয়েই তার মেয়েকে একবাতানায় বেড়াতে আসতে বললেন। সেখানে এসে অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় থাকা মানদানে তার বাবার প্রাসাদে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে লাগলেন। ধারণা করা হয়, ইতোমধ্যে ক্যামবিসেস বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও অনাগত সন্তানকে ত্যাগ করেন, কারণ তার স্ত্রী বাবার প্রাসাদ ছেড়ে আসতে পারছিলেন না।

    অবশেষে মানদানে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। স্বামীর বাবার নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নাম রাখেন ‘সাইরাস’। অ্যাস্তিয়াজেস নিজের রক্তসম্পর্কের কোনো আত্মীয়কে নিজহাতে হত্যা করতে চাননি। এছাড়াও, এই গুরুতর অপরাধের সঙ্গে নিজের সরাসরি সংযুক্তি এড়াতে তিনি তার চাচাতো ভাই এবং একজন প্রধান কর্মকর্তা, হারপাগাসকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাকে এই সন্তানের ‘ব্যবস্থা’ করার নির্দেশ দিলেন ।

    তার নাতি পৃথিবীতে আসার আগেই মারা গেছে, এ ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন অ্যাস্তিয়াজেস। তিনি ভেবেছিলেন, সন্তান হারিয়ে মানদানে তার স্বামীর কাছে ফিরে যাবেন এবং সিংহাসনের প্রতি হুমকি দূর হবে।

    তবে হারপাগাস কোনো বোকা মানুষ ছিলেন না। তিনি এমন কিছু করতে চাননি, যেটার জন্য পরে তাকে পস্তাতে হবে। অ্যাস্তিয়াজেসের মতো, তিনিও এ দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘শিশুটিকে মরতে হবে। তবে তা হতে হবে অ্যাস্তিয়াজেসের বাহিনীর কোনো এক লোকের হাতে। আমার কোনো লোক এই কাজ করতে পারবে না।’

    তিনি অ্যাস্তিয়াজেসের সেনাবাহিনীর এক সদস্যের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করলেন। তিনি দ্রুত বাচ্চাটাকে বাসায় এনে তার স্ত্রীর কাছে সোপর্দ করলেন। অল্পদিন আগেই তার প্রিয় স্ত্রী একটি মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি রাজার ছেলের বদলে তার নিজের সন্তানের মরদেহ পর্বতের কাছাকাছি জায়গায় কবর দিলেন। এভাবেই এক সামান্য সেনাসদস্যের ঘরে বড় হতে লাগলেন সাইরাস।

    হেরোডোটাসের বর্ণনায়, সাইরাসের এ উপাখ্যানে মেদেস ও পারস্যবাসীদের মাঝে বিদ্যমান অস্বস্তিকর রাজনৈতিক সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। মেদেস ছিল ক্ষমতাসীন গোত্র। তবে পারস্যের প্রতিনিধি রাজার সন্তানকেও সহসা মেরে ফেলার উপায় ছিল না। এমনকি শীর্ষ রাজা নিজেও তা পারেননি।

    কিন্তু কপালের লিখন খণ্ডানো যায় না। অন্তত পৌরাণিক ইতিহাসে তো যায়ই না। সুতরাং, বিধিবাম। ১০ বছর বয়সে সাইরাসের দাদা তাকে আবিষ্কার করেন এক সাধারণ সেনাসদস্যের সন্তান হিসেবে। সাইরাস তখন গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিলেন। গ্রামের এই ছোট চত্বরের ‘শাসক’ ছিল সাইরাস। তার কথাতেই অন্যান্য শিশুরা ওঠাবসা করত; তার পছন্দের খেলাই তারা সবাই খেলতে বাধ্য হত। এক অর্থে বলা যায়, তিনি ছিলেন গ্রামের সকল ছেলেদের রাজা।

    ততদিনে তাকে হত্যা করার সময় পেরিয়ে গেছে। ১০ বছর বয়সি সাইরাসকে হত্যা করলে সে-ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ারও কোনো সুযোগ ছিল না। পরিস্থিতিকে মোটামুটি স্বাভাবিক করতে অ্যাস্তিয়াজেস সাইরাসকে তার পরিবারের সদস্য হিসেবে মেনে নিলেন। তার সভার জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাকে আশ্বস্ত করলেন, গ্রামের ছেলেদের শাসন করার মাধ্যমে আঙুরবাগানের সেই অশনি সংকেতের বাস্তবায়ন হয়েছে। রাজার প্রতি আর কোনো হুমকি নেই।

    ফলে, সাইরাসকে আনশানে তার পিতামাতার বাসস্থানে পাঠানো হল—যে বাবা-মাকে সে কখনো দেখেনি বা তাদের সঙ্গে পরিচিতও হয়নি।

    তারপর অ্যাস্তিয়াজেস হারপাগাসের খোঁজ করলেন। ধরা পড়ে গিয়ে হারপাগাস স্বীকার করলেন, তিনি অর্পিত দায়িত্ব নিজে পালন না করে আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়েছিলেন। অ্যাস্তিয়াজেস এমন ব্যবহার করলেন যেন তিনি তার চাচাতো ভাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। বললেন, “সমস্যা নেই, সব কিছু ঠিকভাবেই এগিয়েছে।”

    তিনি হারপাগাসকে আশ্বস্ত করেন, “আমি আমার মেয়ের বৈরী আচরণ ও মনোভাবের কথা জেনে খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি ( তিনি একটু কমিয়েই বলেছেন, নিঃসন্দেহে), এবং আমি যা করেছি তাতে একটুও ভালো বোধ করিনি। এবার তোমার নিজের ছেলেকে রাজপ্রাসাদে পাঠাও, যাতে সে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। আমরা সবাই মিলে ভোজে অংশ নেব।”

    হারপাগাস তার তরুণ সন্তানকে রাজপ্রাসাদে পাঠালেন। নির্দয় অ্যাস্তিয়াজেস সেই শিশুটিকে হত্যা করলেন। তারপর গেম অফ থ্রোনস সিরিজের কায়দায় সেই সন্তানের দেহাবশেষ সহযোগে খাবার রান্না করিয়ে সেটা নৈশভোজের মূল আইটেম হিসেবে পরিবেশন করার ব্যবস্থা করলেন।

    হেরোডোটাস বর্ণনা করেন : ‘নৈশভোজের একপর্যায়ে অ্যাস্তিয়াজেসের মনে হল, হারপাগাস পেটপুরে খেয়েছেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হারপাগাস, তুমি কি খাবার উপভোগ করেছ?’ তিনি উত্তরে জানালেন, ‘হ্যাঁ, আমি উপভোগ করেছি।’ তখন অ্যাস্তিয়াজেসের ভৃত্যরা তার ছেলের মাথা, হাত ও পায়ের অবশিষ্টাংশ সেখানে নিয়ে এল। এ মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখেও হারপাগাস ‘নিজেকে সংযত রাখলেন’। তিনি অ্যাস্তিয়াজেসকে বললেন, ‘রাজার কোনো ভুল হতে পারে না।’ এরপর তিনি তার সন্তানের মরদেহের যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, তা সংগ্রহ করে চুপচাপ বাসায় ফিরে গেলেন।

    এ পুরো ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে গোলমেলে ও চিন্তার উদ্রেককারী। এক্ষেত্রে দেখা আমরা ধরে নিতে পারি মেদেসের শাসকরা বড় আকারে মনুষ্য-আবেগের অবদমন করতেন। এখানে বেশকিছু ছোট-বড় ঘটনা থেকে আমরা সেসময়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাই। কয়েকটি ঘটনার কথা শোনা যাক।

    এক মেদিয়ান রাজা অন্যান্য মেদিয়ানদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ ও পাগলাটে আচরণ করতে লাগলেন, এবং এর মাত্রা দিনে দিনে বাড়ছিল। এক মেদিয়ান কর্মকর্তার চোখের সামনে তারই চাচাতো ভাইয়ের অনুগত সেনারা তার সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করল। পারস্যের রাজকীয় পরিবারকে রাজার নির্দেশ মেনে চলতে হত, কিন্তু তাদেরকে প্রকাশ্যে অপমান করা যেত না। আবার পারস্যের কিছু নিম্নবর্ণের পরিবারের যত্নও নিতে হত তাকে-তা না হলে তারা বিদ্রোহ করে বসতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল। সব মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল সবকিছুই।

    অ্যাস্তিয়াজেস তখনো মেদেস ও পারস্যের স্বীকৃত প্রভু ছিলেন। বিবাহসূত্রে তিনি তখনো ব্যাবিলনের রাজার শ্যালক ছিলেন এবং তাকে তখনো তৎকালীন জ্ঞাত পৃথিবীর দ্বিতীয় (অথবা তৃতীয়) শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হত।

    অপরদিকে, আনশানে পারস্যের রক্ষক ক্যামবিসেসের বাড়িতে বেড়ে উঠতে লাগলেন সাইরাস। স্বভাবতই, তার মা তার মেদিয়ান পিতা অ্যাস্তিয়াজেসকে ঘৃণা করতেন। অ্যাস্তিয়াজেসের রাজপ্রাসাদে তখনো হারপাগাস চাকরি করছেন—নিঃসন্দেহে তার মাঝে প্রজ্বলিত ছিল প্রতিশোধের আগুন। চুপচাপ ভাইয়ের অধীনে চাকরি করলেও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষায় তিনি দিন গুনছিলেন।

    অ্যাস্তিয়াজেস এসব সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে জানতেন না, এমনটা ভাবার অবকাশ নেই। আনশান থেকে একবাতানা পর্যন্ত প্রতিটি সড়কে একজন করে রক্ষী নিয়োগ দিলেন তিনি। উদ্দেশ্য, তার প্রাসাদ অভিমুখে কোনো সেনাবাহিনী রওনা হলে তিনি অগ্রিম সংবাদ পাবেন।

    ৪৩ বছর রাজত্ব করার পর সুবিশাল এক সাম্রাজ্য রেখে দেহত্যাগ করেন রাজা নেবুচাদনেজার। কিন্তু আমরা এমনকি এটাও জানি না যে কোথায় তার মরদেহ সমাধিস্থ রয়েছে। তার মৃত্যুর পরের ৬ বছরের হিসেব-নিকেশ বেশ ঘোলাটে। নিঃসন্দেহে সিংহাসনের বড় দাবিদার ছিলেন পুত্র আমেল-মারদুক। তবে যতদূর জানা যায়, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক অতটা ভালো ছিল না। এ দুজনের সম্পর্কে অপছন্দের বিষয়টি বাইবেলের গল্পে উঠে এসেছে। পুরনো রাজা মারা যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জেহোইয়াচিনকে মুক্তি দেন আমেল-মারদুক নেবুচাদনেজার কখনোই চাননি এমনটা ঘটুক।

    টু কিংস আমাদেরকে জানায়, ‘কুটিল মেরোদাক যখন ব্যাবিলনের রাজা হলেন, তখন তিনি বছরের দ্বাদশ মাসের ২৭তম দিনে জেহোইয়াচিনকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন। তিনি তার সঙ্গে সুন্দর করে কথা বললেন এবং সম্মানজনক আসনে বসালেন। জেহোইয়াচিন তার কারাগারের পোশাক একপাশে সরিয়ে রাখলেন, এবং বাকি জীবন নিয়মিত রাজার টেবিলে বসে খাবার খেতে লাগলেন।’ আরও অনেক পরের এক লেখায়, দ্বাদশ শতাব্দীর ইহুদি ধর্মাবলম্বী ইতিহাসবিদ জেরাখমিল বলেন, প্রকৃতপক্ষে নেবুচাদনেজার আমেল-মারদুককে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এছাড়াও, বাবা নেবুচাদনেজারের মৃত্যুর পর তার ছেলে আমেল-মারদুককে মুক্তি দেয় এবং বাবার মরদেহকে কবর থেকে খুঁড়ে বের করে শকুনের খাদ্য হওয়ার জন্য খোলা ময়দানে ছুড়ে দেয়। এসব ঘটনা থেকে একটা বিষয়ই নিশ্চিত হওয়া যায়, আর তা হল, নেবুচাদনেজার ও তার ছেলের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না।

    ব্যাবিলন ক্রনিকলের (উপাখ্যানের) অনেক ঘটনা আংশিক ও অসম্পূর্ণ। তবে ফারাওদের ক্রনিকলার বা কাহিনি লেখক বেরোসাস একটি নাটকীয় ঘটনার কথা লিখে রেখে গেছেন : ‘আমেল-মারদুক চাতুর্যের সঙ্গে রাজ্য শাসন করতেন এবং আইনের তোয়াক্কা করতেন না।’ যার ফলে তার বোনের স্বামী চক্রান্তের মাধ্যমে তাকে হত্যা করেন এবং দেশের শাসনভার দখল করে নেন। তবে নতুন শাসক মাত্র ৪ বছর পরই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর শিশুসন্তান লাবাশি-মারদুক সিংহাসনে বসে ৯ মাস দেশ শাসন করে। তার অশুভ কর্মপন্থার জন্য তার বন্ধুরা (!) তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে—উপাখ্যানে এমনই বলা হয়েছে। একই আমলের অন্যান্য লেখকরা একই ধরনের উপাখ্যান রচনা করেন। গ্রিক ইতিহাসবিদ মেগাসথেনেসের বর্ণনায়, আমেল-মারদুককে ‘তার সভাসদরা হত্যা করেন’ এবং লাবাশি-মারদুকও ‘সহিংসতার কারণে মারা যান’।

    শেষপর্যন্ত ব্যবিলনের মুকুট যার মাথায় ওঠে, তার নাম ছিল নাবোনিডাস। তিনি হলেন সেই সেনা কর্মকর্তা, যিনি মেদেস ও লিদিয়ানদের মধ্যে ৩০ বছর আগে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ততদিনে তার বয়স ষাটের ঘরে পৌঁছে গেছে। তার এক সন্তানের বয়স ৪০-এর কোঠায় এবং ততদিনে তিনি সেনা ও কূটনীতিক হিসেবে কয়েক দশকের অভিজ্ঞটা সঞ্চয় করে ফেলেছেন। কিন্তু তার দেহে রাজকীয় রক্ত ছিল না। ধারণা করা হয়, তিনি হারান শহর থেকে এসেছিলেন, কারণ তার দীর্ঘজীবী মাতা আদ্দা-গুপ্পি চন্দ্র-দেবতা সিনের পূজারি হিসেবে দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করেছিলেন। হারানের এক শিলালিপিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ দেওয়া হয়।

    নাবোনিডাস নিজেই স্বীকার করেন—তিনি একটি সম্মানিত পরিবারে জন্ম নিলেও সেটি কোনো রাজপরিবার ছিল না। একটি সিলিন্ডারের ওপর খোদাই-করা শিলালিপিতে হারান ও সিপ্পার শহরের মন্দিরগুলোকে পুনঃস্থাপন করার বর্ণনা দেন নাবোনিডাস। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘আমি নাবোনিডাস। আমার মধ্যে রাজকীয় রক্ত নেই, আমি ‘কেউ’ হওয়ার মতো সম্মানের অধিকারী নই।’ তারপরও, তিনি রাজা হওয়ার পর সেনা কর্মকর্তা ও প্রশাসন, উভয়ই তার প্রতি সমর্থন জানায়। তার রাজত্বের প্রথমভাগের বর্ণনা ব্যাবিলনের ক্রনিকলে নেই, কিন্তু তার নিজের লেখা শিলালিপিতে তিনি বলেন, ‘আমাকে তারা প্রাসাদের কেন্দ্রে নিয়ে এল। তারা আমার সামনে নতজানু হয়ে আমার পায়ে চুমু দিতে লাগল, এবং আমার রাজা হওয়ার বিষয়টি উদ্‌যাপন করতে লাগল। আমি আমার পূর্বসূরি নেবুচাদনেজারের বলিষ্ঠ প্রতিনিধি হলাম। তার সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হল।’

    তবে নাবোনিডাস যে ব্যাবিলনের দায়িত্ব পেলেন, তা ৬ বছরের গৃহযুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তার পূর্বসূরির মতো মিশরের দিকে সেনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো রসদ ও সম্পদ ছিল না নাবোনিডাসের হাতে। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন একটি সুবিশাল সাম্রাজ্যের অধিকর্তা, এবং তার খুব বেশি শত্রু ছিল না। পূর্বপ্রান্তে তার বিশ্বস্ত মিত্র আসতিয়াজেস তখনো মেদেস ও পারস্যের রাজা ছিলেন। পারস্যের রাজা ক্যামবাইসেস ৫৫৯ সালে মারা যান। ৩ বছর আগে, তরুণ সাইরুস পারস্যের রাজা হন। গ্রিক ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস সিকুলাস আমাদেরকে জানান, ‘সাইরাস ৫৫তম অলিম্পিয়াডের শুরুর বছরে সাইরাস পারস্যের রাজা হন।’ তিনি আরও জানান, সকল ইতিহাসবিদ এই তারিখের বিষয়ে একমত। তার দাদা তাকে শৈশবে হত্যা করার চেষ্টা করলেও, রাজা হওয়ার পর এ-বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি সাইরাস। তিনি তার মেদিয়ান উচ্চ রাজার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখেন এবং একইসঙ্গে ব্যাবিলনের প্রতিও।

    অপরদিকে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এশিয়া মাইনরের শক্তিশালী লিদিয়ানদের শাসন করছিলেন আলিয়াত্তেসের ছেলে ক্রোইসাস। তিনি তার সাম্রাজ্যকে আরও বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। ফ্রিজিয়ানরা তখন লিদিয়ার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। লিদিয়ানদের উপকূলবর্তী গ্রিক আইওনিয়ান শহরগুলোর সঙ্গে মৈত্রী ছিল। হেরোডোটাস মন্তব্য করেন, ‘প্রাচুর্যের চূড়ায় ছিল সারডিস। এবং অ্যাথেন্সের সোলোনসহ সে-আমলের সব শিক্ষিত গ্রিক নাগরিক সেখানে সফরে যেতেন।’ সোলোন তখন তার নিজ শহর থেকে ১০ বছরের নির্বাসন কাটাচ্ছে। এশিয়া মাইনরের বাণিজ্যপথগুলো ক্রোইসাসকে তার ২০০ বছর আগের পূর্বসূরি মাইডাসের মতো অর্থবিত্ত এনে দিয়েছিল। মাইডাসের মতো ক্রোইসাসও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হতেন।

    নাবোনিডাস ক্রোইসাসকে ব্যাবিলন ও লিদিয়ানদের মাঝে আনুষ্ঠানিক মৈত্রী তৈরিতে রাজি করালেন। এমনকি, মিশরের সঙ্গে তার শান্তিচুক্তি ছিল। একটা সময় মনে হল যেন তার কোনো শত্রুই নেই, সবাই বন্ধু।

    স্বভাবতই, এ পরিস্থিতি খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

    সাইরাস তার দাদার অপরাধ ভুলেননি। তার মা খুব সম্ভবত সেটি মনে করিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। হেরোডোটাসের ভাষায়, তিনি ছিলেন ‘তার প্রজন্মের সবচেয়ে সাহসী ও সবার প্রিয়’ ব্যক্তি। তার নিজ পরিবার আচায়মেনিড ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী পার্সি পাসারগাদি গোত্রের অংশ। এই গোত্রের সদস্যরা তার পক্ষেই ছিলেন। মেদিয়ান আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তাদের সমর্থনের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। তিনি অন্যান্য গোত্রদেরকেও তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য রাজি করানোর উদ্যোগ নিলেন। মেদিয়ানদের শাসন সবার জন্যই বোঝার মতো ছিল। সাইরাস সবাইকে বলতে লাগলেন, ‘নিজেদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে—আপনারা মেদেসের সঙ্গে সবদিক দিয়েই সমতুল্য, যুদ্ধকৌশল সহ।’

    এছাড়াও, বৃদ্ধ হারপাগাসও তার পাশে ছিলেন। হেরোডোটাস আমাদেরকে বলেন, ‘তিনি (হারপাগাস) মেদেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একের পর এক দেখা করেন এবং সবাইকে একথাটি বোঝানোর চেষ্টা করেন যে সাইরাসকে নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত এবং সবাই মিলে আসতিয়াজেসের রাজত্বের অবসান ঘটানো প্রয়োজন।’ ধারণা করা হয়, আসতিয়াজেসের আচরণ ততদিনে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছিল, কারণ মেদেসের বেশিরভাগ গোত্র হারপাগাসের পরিকল্পনায় একাত্ম হয়ে পড়ে।

    সবকিছু প্রস্তুত হওয়ার পর সাইরাস ও তার পার্সিবাহিনী একবাতানা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করল। আসতিয়াজেসের রক্ষীরা সতর্কবাণী জারি করলেন। বৃদ্ধ রাজার তখনো স্মরণশক্তি অটুট ছিল। যেসব জ্ঞানী ব্যক্তি তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে বয়ান দিয়েছিলেন, তিনি তাদেরকে একবাতানার প্রাচীরের বাইরে শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। তারপর তিনি নিজের বাহিনীকে জমায়েত করলেন এবং হারপাগাসকে তাদের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করলেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক হারপাগাস পুরো বাহিনীকে নিয়ে প্রাচীরের বাইরে এলেন এবং পারস্যবাসীদের সঙ্গে যোগ দিলেন। বেশিরভাগ সেনাপতিকেও তিনি সঙ্গে নিয়ে এলেন। তার জন্য এটি ছিল অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত।

    আসতিয়াজেসের হাতেগোনা কিছু বিশ্বস্ত সেনা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেলেন। আসতিয়াজেসকে বন্দি করা হল। সাইরাস একবাতানার নিয়ন্ত্রণ নিলেন এবং নিজেকে মেদেস ও পারস্যের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন। হেরোডোটাস বললেন, ‘এভাবেই আসতিয়াজেসের রাজত্বের অবসান হল। তিনি ৩৫ বছর দেশ শাসন করেছিলেন। ১২৮ বছর হ্যালিস নদী পেরিয়ে এশিয়ার বড় একটি অংশে আধিপত্য চালানোর পর মেদেস, পারস্যের অধীনে চলে যেতে বাধ্য হল।’ হেরোডোটাস এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য আসতিয়াজেসের নির্দয় আচরণকেই দায়ী করেন। সাইরাস আর রক্তপাত ঘটানোর পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি তার নিজের দাদাকে হত্যা না-করলেও তাকে বাকি জীবন বন্দি রাখেন। এই ‘আরামদায়ক বন্দিত্বের’ মধ্যেই বার্ধক্যজনিত কারণে একসময় তার মৃত্যু হয়।

    আচাযমেনিদ পরিবার পারস্যের পূর্বাঞ্চল শাসন করত। পুরনো মিত্র ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে লড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না সাইরাসের। কিন্তু তার সাম্রাজ্য শাসন করার ইচ্ছে ছিল। আসতিয়াজেসের মৃত্যুর পর তিনি ধরে নিলেন লিদিয়ান ও মেদেসের মধ্যে থাকা সন্ধির অবসান ঘটেছে। তিনি তার দাদার ভাই ক্রোইসাসের রাজত্ব দখলের উদ্দেশে রওনা হলেন।

    দুই দেশের সেনাবাহিনী হ্যালিস নদীর পারে যুদ্ধে রত হল। তবে এ যুদ্ধে কোনো ফল এল না। ক্রোইসাস পেছনে হটতে বাধ্য হলেন। তিনি ব্যাবিলনের কাছে সাহায্য চেয়ে লোক পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাইরাস বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি ক্রেইসাসকে কোনো সময় দিলেন না। তিনি লিদিয়া অভিমুখে আরও চাপ দিতে লাগলেন এবং অবশেষে সারদিসের সামনে লিদিয়ান সেনাবাহিনীকে কোণঠাসা করতে সমর্থ হলেন। তিনি উটাহিনী এনে লিদিয়ান ঘোড়সওয়ারদের ছত্রভঙ্গ করলেন (ঘোড়াগুলো উট দেখে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়)। এরপর তিনি সারদিসে তীব্র আক্রমণ চালালেন। ১৪ দিনের মাথায় এ শহরের পতন হল।

    সাইরাস ভাবলেন, তার বাহিনীকে পুরস্কার দেওয়ার সময় এসেছে। তিনি তাদেরকে শহরে অবাধে লুটপাট চালানোর অনুমতি দিলেন। ইতোমধ্যে ক্রোইসাসের হাত-পা বেঁধে তাকে কয়েদি হিসেবে সাইরাসের পাশে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লুটপাটের ঘটনায় ক্রোইসাসের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সাইরাস তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। আপনার খারাপ লাগছে না?’ উত্তরে ক্রোইসাস বললেন, ‘আমি তো যুদ্ধে হেরে গেছি। এ সম্পদ এখন আর আমার নয়। আপনার সেনাবাহিনী আপনার সম্পদই লুণ্ঠন করছে।’ তার এই তাৎপর্যপূর্ণ কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে লুটপাট বন্ধের নির্দেশ দিলেন সাইরাস।

    সাইরাস ছিলেন বাস্তববাদী। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের স্বার্থ জড়িত রয়েছে, ততক্ষণ তিনি অন্যদের প্রতি বদান্যতা দেখাতেন। পরবর্তীকালে যেসব লেখক তাকে বীরের মর্যাদা দিয়েছেন, তারাও বলেছেন এই মহান রাজার কৌশল ছিল বলপ্রয়োগ, ভয় ও আধিপত্য বিস্তার। গ্রিক জেনারেল জেনোফন পার্সিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। তিনি ‘দ্য এডুকেশান অব সাইরাস’ বইটি লেখেন। সেখানে তিনি জানান, কীভাবে সাইরাসের সংযম, ন্যায়পরায়ণতা ও বুদ্ধিমত্তা ও ‘আত্মিক মহত্ত্ব’ তাকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। জেনোফন বলেন, ‘একজন রাজার জন্য মানুষ ছাড়া জগতের বাকি সব প্রাণীর ওপর আধিপত্য কায়েম করা অপেক্ষাকৃত সহজ।’ তবে পারস্যের সাইরাস অসংখ্য মানুষ, শহর ও আরও অনেক জাতিকে নিজের বশে নিয়ে আসে। তার প্রতি অনেকেই স্বেচ্ছায় বিশ্বস্ততা দেখান। আবার অনেকে বাধ্য হন। তাদের কেউ কেউ খুব কাছেই ছিলেন, আবার কারো কারো কাছে পৌঁছাতে ২/৩ দিনের নৌকাযাত্রা করা লাগত। কেউ কেউ এতটাই দূরে ছিলেন যে তাদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক মাস লেগে যেত। তারা কখনো সাইরাসকে চোখের দেখাও দেখেনি, এবং কখনো দেখার আশাও করত না। কিন্তু তারপরও, তারা সবাই সাইরাসের বশ্যতা মেনে নিতে রাজি ছিলেন। এইদিক দিয়ে সাইরাস ছিলেন অনন্য এক শাসক।

    সাইরাসের ন্যায়বিচার বা ‘আত্মিক বদান্যতা’ থাকলেও, তার সবচেয়ে কার্যকরী দক্ষতা ছিল মানুষের মনে ভয় তৈরি করতে পারা। জেনোফন মন্তব্য করেন, ‘তিনি প্রায় সবার মনেই ভীতির সঞ্চার করতে পারতেন। সবাই তাকে সমীহ করে চলত।’ একথা বলে তড়িঘড়ি করে তিনি সাইরাসের ন্যায়বিচার নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন এবং জানান, ‘কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করার চেষ্টা করেনি।’ ভয়-ভীতি দেখিয়ে যেসব জিনিস তিনি অর্জন করতে পারতেন না, সেগুলো তিনি তার বিপুল সম্পদ ব্যবহার করে কিনে নিতেন। তিনি তার নিজের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য করতেন না; বিশেষত যখন এসব উদ্যোগ থেকে বড় কিছু অর্জনের সম্ভাবনা থাকত। জেনোফন বলেন, ‘সবাইকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে পটানোর ব্যাপারে তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তিনি মানুষকে এত বেশি খাবার দিতেন যে তারা তাদের ভাই, বাবা মা ও সন্তানদের কথাও ভুলে যেয়ে সাইরাসের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়তেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাইরাস ছাড়া আর কে ছিল, যিনি একটি সাম্রাজ্য দখল করে নেওয়ার পরও মানুষ তার মৃত্যুর পর তাকে ‘পিতা” বলে অভিহিত করতেন?’

    এখানে ‘পিতা” উপাধির ব্যবহার কিছুটা বিচিত্র। বিষয়টি আরো বিচিত্র হয় যখন জেনোফেন জানান, ‘পিতা (ফাদার) সাইরাস’ বিভিন্ন উপহারের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যজুড়ে অসংখ্য মানুষকে ‘রাজার তথাকথিত চোখ ও কানে’ পরিণত করেন। অর্থাৎ, অন্যভাবে বলতে গেলে, সেই প্রাচীন আমলে রাজা সাইরাস প্রচুর পরিমাণে টাকাপয়সা খরচ করে একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করলে বা তার নামে নেতিবাচক কোনো কথা বললে বা কাজ করতে উদ্যত হলে, এই ‘চোখ ও কানরা’ তাকে সেই খবর দিয়ে দিতেন। তারপর সেই ‘অপরাধীর’ কপালে কী ঘটত, তা বলাই বাহুল্য।

    এতকিছু সত্ত্বেও জেনোফোন পাঠকের কাছে সাইরাসকে এক ভিন্ন আলোয় দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার মতে, তিনি এক অভিনব সম্রাট ছিলেন। তবে এক্ষেত্রে তার ভুল ছিল, তিনি এই ‘নতুনত্ব’কে ন্যায়বিচার, দানশীলতা, মহানুভবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। সাইরাস তার আগের যেকোনো তথাকথিত মহান রাজার মতোই শক্তিমত্তা ও ভয়-ভীতির মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তবে তার সাম্রাজ্য একদিক দিয়ে অবশ্যই নতুন ছিল, তা হল, এতে বিভিন্ন জাতির মানুষকে এক পতাকার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার অধীনে মেদেস, লিদিয়ান (ফ্রিজিয়া সহ) এবং উত্তরের অ্যাসিরীয়া (যেটি তার দাদা দখল করেছিলেন)—এসব অঞ্চল পারস্যের অধীনে ছিল। সাইরাস হারপাগাসকে উপকূলীয় আইওনিয়ান শহরগুলো দখল করার দায়িত্ব দেন। তিনি নিজে পূর্বে মেদিয়ান অঞ্চলের দিকে মনোযোগ দেন। প্রাচীন লেখা ও শিলালিপি থেকে জানা যায়, তিনি একেবারে সিন্ধুনদ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি সিন্ধু উপত্যকায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। তিনি সমুদ্রপথেও কোনো অভিযানে যাননি। তখনো পারস্যের নৌ-শক্তিমত্তা তেমন সুবিধার ছিল না।

    শুধু তিনটি রাজত্ব অবশিষ্ট ছিল : উত্তরে স্কাইথিয়ানদের ছন্নছাড়া অঞ্চল, দক্ষিণে মিশরীয়দের রাজত্ব এবং সবচেয়ে শক্তিশালী, পশ্চিমের ব্যাবিলনীয়রা।

    নাবোনিদাস তার নিজের সাম্রাজ্যের দিকে খুব বেশি একটা খেয়াল রাখছিলেন না। বস্তুত, তিনি তার ছেলে বেলশাজারকে সহ-শাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার হাতে ব্যাবিলনের শাসনভার দিয়ে নিজে দক্ষিণে অ্যারাবিয়া অঞ্চলে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। সেখানে তিনি তার নিজ রাজত্ব থেকে বহু দূরে, নিভৃতে বসবাস করতে শুরু করেন।

    অ্যারাবিয়া, বা আরব অঞ্চলে নাবোনিদাস ঠিক কী করছিলেন?

    ব্যাবিলনের ইতিহাসে তার রাজত্বের পরই ধস নামে। ‘দ্য ভার্স অ্যাকাউন্ট অব নাবোনিদাস’ বইটি পারস্যে বসে তার শত্রুরা লিখেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসক হিসেবে তার ভুল-ত্রুটি ও অযোগ্যতাগুলো তুলে ধরা। তবে এই বইতে আসল সত্যটি প্রকাশ পায়, যখন লেখকরা নাবোনিদাসকে মারদুক নয়, বরং অন্য এক দেবতার প্রতি অনুরক্ত হিসেবে তুলে ধরে। ‘দ্য অ্যাকাউন্ট’ এই দেবতা বা ঈশ্বরকে নান্না বলে অভিহিত করে এবং জানায়, এই দেবতাটি ব্যাবিলনীয়দের কাছে অপরিচিত ছিলেন।

    এই দেবতা
    যাকে এই দেশের কেউ দেখেনি
    তিনি (নাবোনিদাস) তাকে এক উচ্চ স্থানে বসালেন,
    এবং তাকে নান্না বলে অভিহিত করলেন,
    তার মাথায় পরিয়ে দিলেন মুকুট,
    তাকে চন্দ্রগ্রহণের সময়ের চাঁদের মতো দেখাল।

    প্রকৃতপক্ষে, পারস্যবাসীদের কাছে অপরিচিত হলেও, এই দেবতা ব্যাবিলনীয়দের কাছে অপরিচিত ছিল না। নান্না প্রাচীন উর শহরের চন্দ্রদেবতা সিন-এর অপর নাম।

    নাবোনিদাস নিশ্চিতভাবেই সিনের উপাসক ছিলেন। তার নিজের মা, যিনি ছিলেন চন্দ্রদেবতার পূজারি, তিনি একথা উল্লেখ করেন। তবে নাবোনিদাসের এই ভক্তি তার জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও তার নিজের লেখা শিলালিপিতে (অন্যদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন, অবশ্যই) দাবি করেন, তার ক্ষমতায় আরোহণ (ও নেবুচাদনেজারের বংশধরদের পতনের) সম্ভব হয়েছে শুধু সিন/নান্নার আশীর্বাদে। তবে তার এই ভক্তি তাকে সেই সিংহাসন থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, যা তিনি অনেক ঝামেলা করে দখল করেছিলেন।

    নেবুচাদনেজারের শাসনামলে মারদুকের পূজারিরা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। নাবোনিদাস খুব শিগগির এসব পূজারির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তারা এতটাই বৈরী মনোভাব দেখাচ্ছিল যে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ‘ব্যাবিলনে আর থাকা সম্ভব নয়।’

    শিলালিপিতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘তারা (সিনের) মর্যাদাকে উপেক্ষা করতে লাগল। এবং (সিন) আমাকে ব্যাবিলন ছেড়ে তেমার পথে নামতে বাধ্য করল। দীর্ঘ ১০ বছর আমি আমার নিজের শহর ব্যাবিলনে প্রবেশ করিনি।’

    তার সমাধানটি অনেক সহজ ছিল। তিনি ব্যাবিলনের শাসনভার ছেলে বেলশাজারের হাতে তুলে দেন এবং মারদুকের শহর ছেড়ে চলে যান। তিনি আরবের গভীরে ভ্রমণ করেন এবং মরু-শহর তেমায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন। ‘দ্য অ্যাকাউন্টে’ উল্লেখ করা হয় :

    তিনি সব ছেড়েছুড়ে নিজ ছেলের হাতে রাজত্ব ছেড়ে দেন,
    এবং তিনি তার সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তেমার দিকে রওনা হলেন-যেটি একেবারে পশ্চিমে,
    যখন তিনি এসে পৌঁছালেন, তিনি যুদ্ধ করে তেমার রাজপুত্রকে হত্যা করলেন,
    শহর ও দেশের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও তিনি জবাই করলেন এবং নিজে তেমায় বসবাস করতে লাগলেন।

    তিনি মরিয়া হয়ে এই কাজ করেছিলেন, এমনটা বলা যাবে না। তেমা ছিল বিভিন্ন বাণিজ্যপথের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত একটি শহর, যার মধ্যদিয়ে মূল্যবান স্বর্ণ ও লবণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আসা-যাওয়া করতেন।

    তবে তা সত্ত্বেও, তিনি দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলেন। নিজের ধর্ম পালন ও একে ছড়িয়ে দেওয়ার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ থাকার বিষয়টি তার মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছিল—একটি রক্ষা করতে হলে অন্যটিতে ছাড় দিতে হতো। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে বলি দিলেন। তিনি নতুন বছরের উৎসবে যোগ দিতে ব্যাবিলনে গেলেন না। এই অনুষ্ঠানে রাজা মারদুকের সঙ্গে ইশতার তোরণ পর্যন্ত হেঁটে যান এবং দেশ ও সিংহাসনের ওপর নিজ আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন—এ বিষয়ে আগেও বলা হয়েছে। নাবোনিদাস, তার নতুন করে পাওয়া ধর্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাননি।

    এতে ব্যাবিলন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সাইরাসের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়।

    খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ সালে সাইরাস ব্যাবিলনের পূর্ব সীমান্তে ছোট ছোট বাহিনী পাঠাতে শুরু করেন। এ বিষয়টি একসময় গুরুতর আকার ধারণ করে এবং নাবোনিদাস নিজেই উত্তর দিকে, তার নিজ রাজ্যের একেবারে কেন্দ্রে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেন।

    যতক্ষণে তিনি এসে পৌঁছালেন, ততক্ষণে সাইরাস ব্যাবিলনে সরাসরি হামলা চালানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন।

    আবারো সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা নাবোনিদাস ব্যাবিলনের বাহিনীকে শত্রুপক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার হুকুম দিলেন। তারা টাইগ্রিস নদী পার হয়ে সাইরাসের নেতৃত্বাধীন পারস্যবাহিনীর মুখোমুখি হল—ওপিস নামের একটি জায়গায়। হেরোডোটাস মন্তব্য করেন, ‘ব্যাবিলনীয়রা যুদ্ধ শুরু করল। কিন্তু তারা যুদ্ধে হেরে শহরের দিকে পিছু হটতে বাধ্য হল।’

    নাবোনিদাসের নির্দেশে, ব্যাবিলনীয়রা তাদের চারপাশে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেদেরকে এক জায়গায় আবদ্ধ করে রাখল। জেনোফনের বর্ণনা মতে, সেই আবদ্ধ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য তাদের কাছে ২০ বছরের খাবার ও পানির মজুত ছিল। সাইরাস ধীরে ধীরে শক্তিমত্তা অর্জন করছিলেন, আর ‘কোনো একদিন’ এই মহিরুহ এসে তাদের ওপর হামলা চালাবেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে মোটামুট নিশ্চিত হয়ে ব্যাবিলনীয়রাও সে অনুযায়ী নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছিল। নিঃসন্দেহে এটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ ছিল। তবে এ থেকে এটাও বোঝা যায় যে, সাইরাসকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে নিজ সেনাবাহিনীর ওপর তাদের অত বেশি ভরসা ছিল না।

    সাইরাস বুঝতে পারলেন, এই সুবিশাল শহরের প্রতিরক্ষা দেওয়া সেনাদের উপোস করে হারাতে হলে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। তাই তিনি ভিন্ন একটা পরিকল্পনা আঁটলেন।

    জেনোফন এর বর্ণনা দেন। সেসময় ব্যাবিলনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হত তাইগ্রিস। এর গভীরতা ছিল দুই মানুষের উচ্চতার চেয়েও বেশি। নেবুচাদনেজার তার শহরকে বলিষ্ঠ করে রেখেছিলেন, ফলে এক খুব সহজে প্লাবিত করার উপায় ছিল না। তা সত্ত্বেও, সাইরাসের মনে ভিন্ন এক কৌশল কাজ করছিল। তিনি তাইগ্রিস থেকে শহর পর্যন্ত অসংখ্য পরিখা খনন করানোর ব্যবস্থা করলেন। তারপর এক ‘কালো’ রাতে সবগুলো পরিখা খুলে দিলেন।

    বিভিন্ন দিক থেকে পানি এসে পুরো শহর ডুবে গেল। যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনায় না যেয়ে বলা যায়, পারস্যের সেনারা কাদামাটির ভেতর দিয়ে আগাতে লাগল, এবং শহরের প্রাচীরের নিচ দিয়ে শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ল। কাদামাটিতে মাখা এই সেনারা রাতের আঁধারে শহরে ঢুকে পড়ল। তারা কর্দমাক্ত মদ্যপের অভিনয় চালাতে লাগল। এভাবে, ছোট একটি দল রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়তে সক্ষম হল। সেসময় সেখানে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। শত শত অভিজাত ব্যক্তি সেখানে মদ খেয়ে চুর হয়ে ছিলেন। মোক্ষম মুহূর্তে পারস্যের সেনাবাহিনী সেখানে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছিল।

    নাবোনিদাস শহরের অন্য জায়গায় ছিলেন। তাকে আহত না করেই আটক করা হয়। তবে বেলশাজ্জার যুদ্ধে নিহত হন। ভেতর থেকে ফটক খুলে দেওয়া হয়। বাকি পারস্যবাসীরা শহরে ঢুকে পড়েন এবং শহরের পতন হয়। দিনটি ছিল ১৪ অক্টোবর, খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সাল।

    নাবোনিদাস মারদুককে খেপিয়ে তুলেছিলেন, এবং এ-কারণেই মারদুক ব্যাবিলনকে শাস্তি দিচ্ছেন—এই গল্প নিঃসন্দেহে সাইরাসের কানে এসেছিল। তিনি এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলেন। তিনি নিজেকে ‘মারদুকের নির্বাচিত’ ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করলেন। তিনি ঘোড়ায় চড়ে শহরে এলেন। উদ্দেশ্য, প্রথাগত ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে ‘মারদুকের হাত ধরা’। তিনি অবশ্যই বিবাহ- সূত্রে নেবুচাদনেজারের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। এর চেয়ে অনেক কম আত্মীয়তার সম্পর্কের অজুহাত দেখিয়েও মানুষ সিংহাসনের দখল নিয়েছে। তাছাড়াও, তিনি সভা-লেখকদের সহায়তা পেয়েছেন। তারা অনেক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বর্ণনা লিখিয়ে নেন, যেখানে তাকে ব্যাবিলনের মুক্তিদাতা ও প্রাচীন মহত্ব ফিরিয়ে আনার বীর হিসেবে দেখানো হয়।

    একইভাবে, তিনি ইহুদিদেরকেও জানালেন যে, তিনি তাদের নিজস্ব দেবতা ইয়াহওয়েহ’র সম্মান পুনরুদ্ধার করবেন। এই ঘোষণায় নির্বাসিত ইহুদিদের মধ্যে তিনি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেন। বুক অব এজরার শুরুতেই বলা হল, ‘পারস্যের রাজা সাইরাসের প্রথম বছর’, অর্থাৎ, ব্যাবিলনে আধিপত্য স্থাপনের প্রথম বছরে, প্রভু সাইরাসকে নির্দেশ দিলেন একটি ঘোষণা দিতে।

    সাইরাস বললেন, ‘প্রভু, স্বর্গের মালিক—আমাকে পৃথিবীর সকল রাজত্ব দিয়েছেন এবং জেরুজালেমের জুদাহ অঞ্চলে তার উদ্দেশে একটি মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন।’

    সাইরাস ব্যাবিলনের কোষাগারে সলোমনের মন্দির থেকে লুট করা যেসব ধনসম্পদ পেলেন, সেগুলো ফিরিয়ে দিলেন। এটা ছিল সম্পদের ব্যবহারে তার নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার আরও একটি উদাহরণ।

    এ কাজে করে তিনি ইহুদিদের কাছ থেকে ‘প্রভুর আদিষ্ট’ খেতাব পেলেন।

    নির্বাসিতরা জেরুজালেমে ফিরে আসতে শুরু করার এক বছরেরও কম সময় পর বড় এক উৎসবের অংশ হিসেবে তারা দ্বিতীয় মন্দিরটি নির্মাণ করেন। পূজারিরা তাদের জন্য নির্ধারিত আবাসে ফিরে গেলেন—এগুলো নেবুচাদনেজারের হামলা ও শহর দখলের পর আর ব্যবহৃত হয়নি। ট্রামপেট ও বড় বড় ড্রামের বাদ্য সহকার গান গাওয়া হল। কিন্তু নতুন করে গড়ে তোলা ভিত্তি আগের সেই শানশওকত ফিরে পেল না। যাদের একটু বয়স বেশি, তারা দিন-রাতের মতো এই ব্যবধানকে মেনে নিতে পারলেন না। তরুণ নির্বাসিতরা আনন্দে চিৎকার করছিল, আর বয়োবৃদ্ধরা রাগে-দুঃখে কাঁদছিল, কিন্তু কেউ কান্না আর আনন্দের শব্দ আলাদা করে বুঝতে পারছিল না।

    সাইরাসের নিজের বিজয় ছিল নিরঙ্কুশ। তিনি নেবুচাদনেজারের বিশাল প্রাসাদটিকে তার রাজকীয় আবাস হিসেবে গ্রহণ করলেন আর একবাতানাকে গ্রীষ্মকালীন আবাস হিসেবে নির্ধারণ করলেন। এটি ছিল উঁচু পর্বতের ওপর অবস্থিত, শীত মৌসুমের বেশিরভাগ সময় যা বরফে ঢাকা থাকত। কিন্তু গ্রীষ্মের মাসগুলোতে একবাতানা পারস্যের উষ্ণ আবহাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক ছিল। আনশানে তার প্রাসাদটিও বিকল্প বাসস্থান হিসেবে টিকে রইল। কিন্তু এতগুলো বিকল্প থাকা সত্ত্বেও নিজের নতুন সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে তিনি নতুন রাজধানী হিসেবে পাসারগাদ শহরের গোড়াপত্তন করলেন।

    তার অধীকৃত পারস্য সাম্রাজ্যে বশীভূত জনগোষ্ঠীর জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন এল না; ক্ষমতার পট-পরিবর্তনেও তারা তেমন কোনো বাধা ছাড়াই যার-যার দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে লাগলেন। সাইরাসের সাম্রাজ্যের অভিনবত্ব ছিল এটাই যে তিনি সবাইকে ‘পারস্যবাসী’ বা পারস্যের নাগরিকে রূপান্তর না করে বরং নিজ রাজত্বকে ছোট ছোট টুকরো কাপড় দিয়ে বানানো পোশাকের মতো শাসন করলেন। অ্যাসিরীয় শাসনের সঙ্গে সাইরাসের শাসনের সবচেয়ে বড় পার্থক্য এটাই যে তিনি কারো জাতীয়তাবাদের অনুভূতি বা ব্যক্তি- পরিচয় বিলীন করার চেষ্টা করেননি। বরং তিনি সকল পরিচয়ের মানুষের উপকারী অভিভাবক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালান। ইতোমধ্যে তিনি তার ‘কান থেকে কানে’ নীতি অবলম্বন করে যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে লাগলেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপদ্মজা – ইলমা বেহরোজ
    Next Article পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    Related Articles

    ইশতিয়াক খান

    পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.