Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর ইতিহাস ২ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    ইশতিয়াক খান এক পাতা গল্প641 Mins Read0

    ৩৪. অতি প্রাচীনকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ

    অধ্যায় ৩৪ – অতি প্রাচীনকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ

    খ্রিস্টপূর্ব ১৩২১ থেকে ১২১২ সালের মাঝে মিশরের ১৯তম রাজবংশের রাজত্ব শুরু হয়। রামেসেস দ্বিতীয় হিট্টিটদের সঙ্গে কাদেশে যুদ্ধ করেন, কিন্তু যুদ্ধে কোনো ফলাফল আসে না। অ্যাসিরীয়রা ১ শতাব্দী ধরে জবরদখল শুরু করে।

    হোরেমহেব দীর্ঘ ২৮ বছর মিশরের সিংহাসন আঁকড়ে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

    তিনি তুতানখামুনের শুরু-করা কাজটি শেষে করেন—আমুনের মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ। এরপর তিনি আতেনের মন্দিরের বাকি অংশকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তার পুরনো সেনা কমরেডদের যাজক হিসাবে বেছে নেন এবং আমুনকে আবারও উপাস্য হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। যেহেতু তিনি মিশরের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন, তাই তিনি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন যে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলাপরায়ণতা তাদেরকে উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতালোভী যাজক হওয়া থেকে প্রতিহত করবে। তার বয়স ৮০ ছাড়িয়ে যায় এবং একপর্যায়ে তিনি মারা যান।

    তার কোনো পুত্র না-থাকায় তিনি উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন সৈনিককে বেছে নেন। এই সৈনিকের নাম ছিল রামেস প্রথম। তিনিই প্রথম ফারাও ছিলেন, যার পূর্ববর্তী কোনও রাজবংশের সঙ্গে কোনো ধরনের রক্তের সংযোগ (বাস্তব বা কাল্পনিক) ছিল না। তিনি বয়সে হোরেমহেবের চেয়ে খুব ছোট ছিলেন না এবং তিনি সিংহাসনে মাত্র এক বছর থাকার পরে মারা যান। এ স্বল্প সময়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছুই করে যেতে পারেননি।

    কিন্তু এই সাদামাঠা সূচনা থেকেই মিশরের মহান ঊনবিংশ রাজবংশের গোড়াপত্তন। রামসেস প্রথম তার সিংহাসনটি পুত্র সেতির কাছে ছেড়ে যান। সেতি বিখ্যাত হন অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করে। বস্তুত তিনি যেখানেই ফাঁকা জায়গা পেয়েছেন, সেখানেই মন্দির নির্মাণ করে রেখে গেছেন। সেতির মৃত্যুর পর তার জায়গায় বসেন পুত্র রামসেস দ্বিতীয়। দ্বিতীয় রামসেস তার রাজত্বকালের দৈর্ঘ্য, অবকাঠামোগত প্রকল্পের সংখ্যার সেনাবাহিনীর কিংবদন্তিতুল্য শক্তিমত্তা এবং ঘটনাচক্রে, তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

    সুপ্পিলুলিউমার পুত্রের হত্যার পর এবং প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মহান হিট্টিট রাজার মৃত্যুর পর, এই দুই জাতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সমঝোতা চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়।

    দুই দেশের সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই সশস্ত্র সংঘর্ষ হতে লাগল।

    দ্বিতীয় রামসেস যখন মিশরীয় সিংহাসনে বসলেন, তখন হিট্টিটের সিংহাসন ছিল সুপ্পিলুলিউওমার নাতি মুওয়াতাল্লির কাছে। ততদিনে মিশর তাদের একেবারে উত্তরের শহর কাদেশের দখল হারিয়েছে। প্রায় ১০০ বছর মিশরের শাসনে থাকার পর শহরটি হিট্টিটদের দখলে চলে গেছিল।

    পঁচিশ বছর বয়সেই নতুন ফারাওর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। তিনি পনেরো বছর বা তারও বেশি বয়সে প্রথম বিয়ে করেছিলেন এবং ইতোমধ্যে কমপক্ষে ৭টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পশ্চিম সামাইটিক রাজ্যের বিরুদ্ধে তার পিতার পক্ষ নিয়ে ২টি অভিযানে লড়েছেন। জাতশত্রু হিট্টিটদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার জন্যেও তিনি বেশিদিন অপেক্ষা করেননি। ১২৭৫ সালে, সিংহাসন গ্রহণের মাত্র ৩ বছর বা তারও কিছু সময় পর, তিনি কাদেশ নগর ফিরে পাওয়ার জন্য একটি অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করেন। কাদেশ ততদিনে একটি সুনির্দিষ্ট যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়েও অনেক বড় কিছুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে টানাহ্যাঁচড়ার মাঝে পড়ে শহরটির গুরুত্ব অন্য পর্যায়ে চলে যায়।

    কাদেশ এমন এক জায়গায় অবস্থিত ছিল যে এটি মিশরীয় ও হিট্টিট, উভয় জাতির জন্যই দখলে রাখা কঠিন ছিল। শহরটি যাদের দখলেই থাকুক না কেন, বিষয়টা বড় গলায় প্রচার করার মতো সম্মানজনক ছিল।

    ১২৭৫ সালের শেষের দিকে, দ্বিতীয় রামেস তার গুপ্তচরদের কাছ থেকে শুনেছিলেন যে মুওয়াতাল্লি কাদেশের ধারেকাছেও নেই। ফলে সে-সময়টি আক্রমণের জন্য নিখুঁত ছিল, এবং দ্বিতীয় রামসেস অপ্রত্যাশিত রকমের বড় একদল সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন (তার নিজের গণনা অনুযায়ী, ৪টি বাহিনীতে বিভক্ত প্রায় ২০ হাজার সেনা, যারা আমুন, রা, তাহ এবং সেট নামে পরিচিত ছিল)। এই বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি উত্তর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কাদেশের কাছাকাছি পৌঁছাতে অন্তত ২ মাস সময় লেগেছিল। তবে একটি হিট্টিট ওয়াচ টাওয়ারের প্রহরীদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা জানালেন, হিট্টিটদের মুল সেনাবাহিনী তখনও কাদেশ থেকে বহুদূরে, তাদের মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি রয়েছে এবং তাদের শিগগির ফেরার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তিনি দেবতাদের গুরুত্ব অনুসারে তার ৪ বাহিনীকে সাজালেন। প্রথমে আমুন, তার পিছে রা, তাহ এবং সেটের বাহিনীকে সাজিয়ে তিনি শহরের দিকে আগাতে লাগলেন।

    তবে এই ওয়াচ টাওয়ার বাস্তবে ছিল একটি সুপরিকল্পিত ফাঁদ। মুওয়াতাল্লি ৪৮ হাজার সৈন্য নিয়ে কাদেশের ঠিক পেছনে লুকিয়ে ছিলেন। এ ‘আয়োজনের’ জন্য হিট্টিটদের নিয়মিত সেনা ও ভাড়াটে সেনা, উভয়ই জমায়েত হয়েছিলেন। প্রায় ৩ হাজার সেনা রথে ছিলেন। প্রতিটি ঘোড়ায় টানা রথে একজন চালক, একজন তিরন্দাজ ও তিরন্দাজকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একজন বর্মধারী সেনা ছিলেন। রামসেস তার সেনাবাহিনীর প্রথম অংশসহ ঠিক কাদেশের পশ্চিমদিকে একটি শিবির স্থাপন করেছিলেন। হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড়ের মতো পেছন থেকে মুওয়াতাল্লির বাহিনী তাদেরকে আক্রমণ করে বসল। আমুন বাহিনীর পেছনে থাকা রা-বাহিনীকে কচুকাটা করলেন তিনি। ফলে আমুন বাহিনীর ৫ হাজার সেনাসহ রামসেস দ্বিতীয় তার বাকি দুই বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। বস্তুত, প্রায় ৭০ হাজার সেনা কাদেশের প্রাচীরের বাইরে সংগ্রামে রত হল।

    আমুন বাহিনী এবং রাজা রামসেস দ্বিতীয়, উভয়কেই নিশ্চিহ্ন করা অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হিট্টিটরা নিজেদেরকে একটি সমস্যার মাঝে আবিষ্কার করলেন। আমুন বাহিনী মোটামুটি ছোট একটি সমতলভূমিতে শিবির স্থাপন করেছিল। ফলে যখন হিট্টিটদের রথগুলো সেখানে ঢুকে পড়ল, তারা কিছুটা ‘ক্রসফায়ার’ পরিস্থিতিতে পড়ে একে অপরকে ধ্বংস করতে শুরু করল। শিগগির ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথের স্তূপ জমে গেল সেখানে।

    হিট্টিট পদাতিক সেনারা তখনও মিশরীয়দের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিল, কিন্তু তারা জানত না যে, দ্বিতীয় রামসেসের বিকল্প পরিকল্পনা ছিল। ভূখণ্ডের সেনাবাহিনী বিপদে পড়লে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য আগে থেকেই তিনি উপকূলের ধারে কিছু সেনা মোতায়েন করে রেখেছিলেন। খুব সম্ভবত, সমুদ্রপথে এই সেনাদলটি মিশর থেকে এসেছিল। দক্ষিণদিক থেকে তাহ বাহিনী আমুনের সঙ্গে যোগ দিতে এগিয়ে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর থেকে উপকূলীয় বাহিনীও যুদ্ধে যোগ দেয়। এই দ্বিমুখী হামলায় হিট্টিট বাহিনী ভড়কে যায়। সংখ্যা বেশি হলেও তাদের বাহিনীর একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ভাড়াটে সেনা, যারা যুদ্ধ কৌশলে সুপ্রশিক্ষিত ছিলেন না। মুওয়াতাল্লির বাড়তি সেনা ছিল, কিন্তু তিনি সেগুলোকে পেছনের দিকে রেখেছিলেন। খুব সম্ভবত তিনিও মিশর থেকে আরও বাহিনী এসে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। বিকাল গড়িয়ে সন্ধে এলে হিট্টিটরা পিছু হটল। নিজেদের গুছিয়ে আবারও হামলা চালানোই ছিল এর নেপথ্যের কারণ।

    ভোর হতেই আবার শুরু হয় যুদ্ধ। তবে এবার আর মিশরীয়দের চমকে দেওয়ার মতো কোনো কৌশল ছিল না হিট্টিটদের হাতে। বরং মিশরীয়দের উন্নত যুদ্ধকৌশল ও অভিজ্ঞতা অনেক বেশি কার্যকর হল। একপর্যায়ে যুদ্ধে স্থবিরতা দেখা দিল এবং মুওয়াতাল্লি সন্ধির প্রস্তাব দিলেন।

    রামসেস দ্বিতীয় হিট্টিটদের সঙ্গে নিঃশর্ত সন্ধি চুক্তি করতে রাজি হলেন না। তবে অবশেষে তিনি ঘরে ফিরে যেতে রাজি হলেন। কিন্তু সঙ্গে যুদ্ধবন্দি ও লুট- করা ধনসম্পদ না নিয়ে তিনি ফিরলেন না। কাদেশের কর্তৃত্ব হিট্টিটদের হাতে রেখেই তিনি সেনাদল নিয়ে মিশরে ফিরে এলেন এবং নিজেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দিলেন।

    এ কাহিনিকে অপ্রতিরোধ্য বিজয়গাথা মনে না হলেও একে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করে দ্বিতীয় রামসেসের অসামান্য সাফল্য হিসেবে দেখানো শুরু হয়। অন্তত ৯টি মন্দিরে এই যুদ্ধে রামসেস দ্বিতীয়’র বীরত্বকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শিলালিপি তৈরি করা হয়। এগুলোতে মিশরীয় সেনাদের হিট্টিট সেনাদের জবাই করার বিস্তারিত চিত্র দেখানো হয়। এমনকি, এই যুদ্ধের বর্ণনা (অতিরঞ্জিত, বলাই বাহুল্য) স্কুলের শিশুদের জন্য আবশ্যিক করা হয়। ঠিক একইভাবে কয়েক শতাব্দী পর রোম সাম্রাজ্যে গলদের বিরুদ্ধে সিজারের বিজয়ের গল্পও শোনানো হয়েছিল। কাদেশের যুদ্ধের ফলাফল ছিল নিরুত্তাপ ‘ড্র’, কিন্তু এর কাল্পনিক বিজয়গাথা হয়ে দাঁড়ায় মিশরীয়দের শক্তিমত্তার পরিচায়ক।

    মিশর তখনও শক্তিশালী ছিল, কিন্তু এটি এমন একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল যাদের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত রাখতে প্রকৃত শক্তিমত্তার চেয়ে সুনামের ওপর বেশি নির্ভর করতে হত।

    মিশরের সেনাবাহিনী এত দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী হলে রামসেস দ্বিতীয় কাদেশ থেকে লেজ উঁচিয়ে দেশে ফিরে আসতেন না। প্রকৃত যুদ্ধবিগ্রহের দিকে মনোযোগ না দিয়ে তিনি নিজের ব্র্যান্ডিং-এর দিকে মনোযোগ দেন। চারপাশে ছড়িয়ে দিতে থাকেন তার আধিপত্যের বিভিন্ন নিদর্শন। তিনি তার নিজের দেশের নিরাপদ সীমানায় বসে আরও বেশি করে মন্দির, মূর্তি ও মিনার বানাতে থাকেন। এ-ধরনের নির্মাণকাজের দিক দিয়ে তিনি তার আগের সকল ফারাও রাজাকে ছাড়িয়ে যান।

    মজার বিষয় হল, রামসেস দ্বিতীয় মিশরের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বসেরা ফারাও হিসেবে পরিচিতি পেলেও, বাস্তবতা হল তিনি ২০০ বছর আগের শাসক টুথমোসিস তৃতীয়র দখলীকৃত সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের একটি বড় অংশ হারিয়ে ফেলেছিলেন।

    উত্তরের সেই প্রবল পরাক্রমশালী রাজ্য হিট্টিটরাও খুব বেশি শান্তিতে ছিল না। ততদিনে ব্যাবিলনের রাজার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন মুওয়াতালি। অন্তত আমরা এটুকু ধরে নিতে পারি, কারণ তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যাবিলন থেকে ডাক্তার আনিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। মুওয়াতালির মৃত্যুর পরে তার ভাইয়ের একটি চিঠি রয়ে যায়, যেখান থেকে আমরা জানতে পারি, রাজার চিকিৎসার (পড়ুন : ব্যর্থ চিকিৎসা) পরেও সে ডাক্তার আর ব্যাবিলনে ফেরেননি। ফলে দেশটির পক্ষ থেকে চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়। উত্তরে মুওয়াতালির ভাই চিঠিতে জানান, ‘আপনার ডাক্তার আমার রাজসভার এক সদস্যকে বিয়ে করে এখানেই থিতু হয়েছেন। সুতরাং তাকে জেলে আটকে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। বারবার এ-ধরনের অভিযোগ তুলে আমাকে বিব্রত করবেন না! চিন্তা করুন, একজন কারাবন্দি ডাক্তার আমার কোনো কাজে লাগবে?’

    হিট্টিট ও অ্যাসিরীয়দের মধ্যেও সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না।

    আসসুরের নতুন রাজা আদাদ-নিরারি উত্তরের উদ্দেশে যুদ্ধযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মিটান্নিদের সঙ্গে যুদ্ধে অদখলীকৃত ভূখণ্ডকে নিজের বলে দাবি করলেন তিনি। দক্ষিণে, ব্যবিলনের সীমান্তে অন্তত একবার সাফল্যের সঙ্গে আক্রমণ করেন এবং এ যুদ্ধের ডামাডোলে অ্যাসিরীয়া ব্যাবিলনের উত্তরাঞ্চলের বেশ খানিকটা অংশ দখল করে নেয়। আদাদ-নিরারি নিজের কৃতিত্বে এতটাই সন্তুষ্ট হলেন যে তিনি নিজেকে ‘পৃথিবীর রাজা’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। একটি শিলালিপিতে লেখা হয়েছিল, ‘সুপ্রসিদ্ধ রাজপুত্র আদাদ-নিরারি! তিনি দেবতাদের মধ্যে সম্মানিত, প্রভু, দেবতাদের ভূখণ্ডের অধিপতি, শহরের গোড়াপত্তনকারী, কাসসাইট বিধ্বংসী; তিনি উত্তর ও দক্ষিণের সব শত্রুকে বিনাশ করেন, তাদের ভূখণ্ডকে পদদলিত করেন, সব মানুষকে বন্দি করেন, রাজ্যের সীমানা বাড়ান; তিনিই সে রাজা, যার পায়ের নিচে পৃথিবীর সব রাজা ও রাজপুত্র কুর্নিশ করে।’

    পূর্বদিক থেকে অ্যাসিরীয়দের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে কৌশলগত পরিকল্পনা করার মাঝপথে রাজা মুওয়াতাল্লি হঠাৎ করেই মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র সিংহাসনের দখল নিলেন এবং প্রথমেই পরবর্তী শক্তিশালী ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রয়াত রাজার ভাই ও তার আপন চাচার কাছ থেকে সবধরনের ক্ষমতা সরিয়ে নিলেন। তিনি এমনকি চাচাকে নির্বাসনেও পাঠাতে সচেষ্ট হলেন। তবে তার চাচা হাউসালিস নির্বাসনে যেতে রাজি হলেন না। উলটো তিনি তার নিজস্ব সমর্থকদের জড়ো করে রাজাকে আটক করে ফেললেন এবং নিজেকে রাজা হাউসিলিস তৃতীয় হিসেবে ঘোষণা দিলেন।

    হাট্টুসিলিস তৃতীয়র শাসনামল থেকে টিকে থাকা নথির মধ্যে একটির নাম হচ্ছে ‘দ্য অ্যাপলজি’ (ক্ষমা প্রার্থনা)। এই নথিতে তিনি যুক্তি দেন, দেবতারা তাকে দেশ শাসন করার অধিকার দিয়েছেন এবং যেহেতু তিনি সাফল্যের সঙ্গে সিংহাসন দখল করতে পেরেছেন, সেহেতু প্রমাণ হয় যে দেবতারা তাকে দেশ শাসন করার অধিকার দিয়েছেন! এই যুক্তিটি বেশ অদ্ভুত, কারণ এখানে আসলে একই কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুইভাবে বলা হয়েছে। খানিকটা ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’র মতো পরিস্থিতি।

    স্বভাবতই, তার এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। সে আমলে হাটুসাস নগরের আরও কিছু নথি থেকে জানা যায়, এই রাজার শাসনামলের প্রায় পুরো সময়টা গেছে গৃহযুদ্ধের মোকাবিলায়।

    শিগির হাউসিলিস বুঝতে পারলেন, তিনি তার নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন না, কারণ দক্ষিণে মিশরীয়রা এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অ্যাসিরীয়দের হুমকি এগিয়ে আসছিল। অ্যাসিরীয় আদাদ-নিরারির পর রাজা হন শালমানেসার প্রথম, যিনি তার পূর্বসূরির চেয়েও আরও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। তিনি ততদিনে মিটান্নিদের রেখে যাওয়া পুরো অঞ্চলের দখল নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হিট্টিট সৈন্যরা আরামাইয়ান বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত যুদ্ধেও শালমানেসারের বাহিনীকে পরাভূত করতে পারেনি। শালমানেসার গর্বভরে বলেন, ‘আমি তাদের সমগ্র বাহিনীকে কচুকাটা করেছি। ১৪ হাজার ৪০০ সেনাকে পরাভূত করে তাদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল, তাদেরকে আমি বন্দি করি।’ অর্থাৎ, তিনি বন্দিদের অন্ধ করে দিয়েছিলেন, যা শিগগির অ্যাসিরীয়দের নিষ্ঠুর যুদ্ধকৌশলে রূপান্তরিত হয়। শালমানেসার মোট ১৮০টি শহর দখলের দাবি করেন। তিনি এই শহরগুলোকে গুঁড়িয়ে দেন এবং হিট্টিট ও আরামাইয়ানদের মিত্রবাহিনীকে ‘ভেড়ার মতো জবাই করেন।’

    অ্যাসিরীয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে না পেরে হাটুসিলিস মিশরের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন।

    তবে মিশরের তৎকালীন রাজা রামসেস দ্বিতীয়র জন্য হাটুসিলিসের প্রস্তাবে রাজি হওয়া অতটা সহজ ছিল না, কারণ ততদিনে হিট্টিটদের বৈধ রাজা এবং হাটুসিলিসের ভাতিজা (মুওয়াতাল্লি’র পুত্র, যার নাম আমরা জানি না) ততদিনে চাচার কারাগার থেকে পালিয়ে এসে সেই মিশরেই আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি রামসেস দ্বিতীয়র আছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। একই প্রস্তাব তিনি শালমানেসারকেও দেন, তবে সেই রগচটা অ্যাসিরীয় রাজা কাউকে আশ্রয় দেওয়ার মতো মহানুভব ছিলেন না। তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হননি।

    রামসেস দ্বিতীয়র সামনে হিট্টিটদের ভূমি দখল করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি সে সুযোগ নিলেন না। তিনি মুওয়াতাল্লির পুত্রকে নিজ দেশ থেকে বের করে দিলেন এবং তার চাচার সঙ্গে সন্ধিচুক্তি করলেন। এই চুক্তিকে আরও গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার জন্য তিনি হাসিলিস তৃতীয়র ২ কন্যাকেও বিয়ে করলেন। রামসেসের জন্য এই শান্তিপ্রক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। পশ্চিমের সেমাইটদের অঞ্চলগুলো ততদিনে তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। ভূমধ্যসাগরের তীরের ছোটখাটো রাজারা কাদেশে রামসেসের বিজয়গাঁথার মিথ্যে বর্ণনা শোনেননি; তারা শুধু দেখেছেন মিশরের ফারাওকে লেজ তুলে সেখান থেকে পালাতে। ফলে তারা প্রায় সারাক্ষণই বিপ্লব ও বিদ্রোহে ব্যস্ত ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে, কোনোমতেই রামসেসের বাহিনী হিট্টিটদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার মতো অবস্থায় ছিল না। ফলে মিশর বাধ্য হয়ে তার শত্রুর সঙ্গে মিত্রতা তৈরি করে।

    প্রায় ৯০ বছর বয়সে রামসেস দ্বিতীয় মারা যান। তিনি মিশরের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব-করা রাজাদের মধ্যে ২য় অবস্থানে ছিলেন। তিনি সারা মিশরজুড়ে নিজের নানান কীর্তি রেখে যান। আমুনের মন্দির, তার নিজের মূর্তি ও মিনার, তার নির্মিত শহর ও শিলালিপি মিশরের সব জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়।

    এমনকি, জাদুঘরে সংরক্ষিত তার মমিটিও বিশেষায়িত। তার তুলনামূলকভাবে লম্বা নাককে মমি-বিশেষজ্ঞরা বড় বড় গোলমরিচ দিয়ে সংরক্ষণ করেছিলেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপদ্মজা – ইলমা বেহরোজ
    Next Article পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    Related Articles

    ইশতিয়াক খান

    পৃথিবীর ইতিহাস ১ – সুসান ওয়াইজ বাউয়ার

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.