Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    নবনীতা দেবসেনের গল্প

    September 1, 2025

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর সেরা ভৌতিক গল্প – অনীশ দাস অপু

    লেখক এক পাতা গল্প330 Mins Read0

    প্রেতিনীর প্রেম

    ছেলেবেলায় বেটসভিলের মরগান প্ল্যানটেশন হাউসটিকে আমরা ভাবতাম হানাবাড়ি।

    তবে ভূতের ভয় আমাকে কখনও কাবু করতে পারেনি। তাই যখন সুযোগ পেলাম, গত শরতে বাড়িটি কিনে ফেললাম।

    নিউ ইয়র্ক শহর আমার আর ভাল্লাগছিল না–এর তীব্র দাবদাহ, মাথা খারাপ করে দেয়া চিৎকার চেঁচামেচি আর শব্দ এবং প্যাঁচপেঁচে গরমে প্রায় শূন্য থিয়েটারে হপ্তায় নটি করে শশা পরিচালনা করে আমি বেজায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।

    নাটকের আয়ের পাঁচ শতাংশ আয় আমার ভাগে আসে। এ নাটক আরও বছরখানেক চলবে–সে আমি থাকি আর না-ই থাকি–কাজেই বোঁচকা নিয়ে ফিরে এলাম বেটসভিল।

    রিয়েল এস্টেট এজেন্ট যখন আমাকে মরগান প্ল্যানটেশনের কথা বলল তখনই বুঝতে পেরেছিলাম লোকটা বড়ই সাদাসিধা। বৃক্ষ আচ্ছাদিত একটি রাস্তা দিয়ে আমরা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, মাঠ ঘাট পেরিয়ে, নিদ্রিত একটি নদীর ওপরের কাঠের পুরানো সেতু পার হয়ে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।

    গাড়ি থামল। আঙুল তুলে দেখাল এজেন্ট। দীর্ঘদিন অবহেলিত পড়ে থাকা একটি ড্রাইভওয়ের শেষ মাথায় নিতান্তই অসুখী চেহারার প্রকাণ্ড বাড়িটি আমার দৃষ্টিগোচর হলো। বাড়ির লম্বা লম্বা জর্জিয়ান কলাম বা থামগুলো যথেচ্ছ বেড়ে ওঠা গাছপালার আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়েছে। বৃত্তাকার ড্রাইভওয়েটি আগাছাভরা রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে। দেখে বিশ্বাস করা মুশকিল এখানে একদা পান্না সবুজ রঙের লন ছিল, পায়ের নিচে শোভা পেত মখমল ঘাসের কার্পেট।

    ম্যাগনেলিয়া গাছও রয়েছে প্রচুর মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে, বাড়ির দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে ফুলভরা পাহারাদের চেহারা নিয়ে।

    আর এসবের মাঝখানে, উঁচু উঁচু ঘাস ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে পাথরের এক নিগ্রো, দুহাত দুপাশে ছড়ানো তার, যেন দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে।

    আমি এ বাড়িটা নেব, বললাম আমি।

    লম্বা, ঢালু কাঁধের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট তার টাক মাথায় খড়ের টুপিটি ঠেলে দিয়ে টেনে টেনে বলল, আপনি একবার বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখবেন না?

    দরকার নেই– অ্যাপ্রেইজার বলেছে বাড়ির অবস্থা ভালো।

    সে চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকাল। এ জায়গা ঠিকঠাক করতে কিন্তু কিছু খরচাপাতি হবে।

    আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। শহুরে রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে এর পার্থক্য হলো ওরা যেভাবেই হোক ক্রেতার কাছে মাল গছিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে, বাড়ির ভালোমন্দ দিকগুলোর কথা তারা বলেও না। কিন্তু সরল লোকটি আমার সঙ্গে কোনরকম ফাঁকিবাজির চেষ্টা করছে না।

    বাড়িটির দিকে আবার তাকালাম আমি। শেষ বিকেলের নরম রোদের রেখা পড়েছে ম্যানসনটির ওপর। সিভিল ওঅরের আগে এ বাড়িটির চেহারা কেমন ছিল কল্পনায় দেখতে পেলাম আমি সাজানো গোছানো হলে একে হয়তো আবার আগের মতই লাগবে। আমি এ বাড়ি কিনব, পুনরাবৃত্তি করলাম।

    ঠিক আছে, মিস্টার স্পোর। আমি আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র রেডি করছি।

    দশদিন পরে বাড়িটির মালিক হয়ে গেলাম আমি। আধ ডজন লোক ভাড়া করলাম এর নানারকম সংস্কার এবং বাগানটি ঠিকঠাক করার জন্য, তিন মহিলা ভেতরের কামরাগুলো পরিষ্কারের কাজে লেগে গেল। পরবর্তী দুই হপ্তা ঝোঁপঝাড় এবং বাড়ির পঞ্চাশ বছরের ধুলো আকাশের বুকে ভারী একটি আচ্ছাদন হয়ে ঝুলে রইল।

    অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য নিউ ইয়র্ক থেকে উড়ে এল পিয়েরে স্যাভর। ছোটখাট ফরাসীটি যখন এ বাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি, রিসেপশন হলের শতবর্ষী পারস্য টাইল ফ্লোর ইত্যাদি দেখল ঘনঘন টুসকি বাজাতে শুরু করল। বাড়িটির দশখানা শয্যাকক্ষ, ৩৫ বাই ৩৫ ফুট আয়তনের ভোজন কক্ষ এবং নিউ ইয়র্কে আমার পেন্থহাউজ সমান পাঠকক্ষ সাজাতে ভয়ানক ব্যস্ত থাকতে হলো পিয়েরেকে। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকবারই নানান জিনিস কিনতে দোকানে গেল ও।

    এসব যখন চলছে, এমন একদিনে আমি হাঁটাহাঁটি করছি বাইরের জমিনে, আমার প্রথম দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। দেখি আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে দুটি বাচ্চা ছেলে ভীতচকিত ভঙ্গিতে মাছ ধরছে।

    ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে ওদের আমি হাই বলেছি, ওরা বঁড়শি ফেলে দে ছুট। আমি কত ডাকাডাকি করলাম কিন্তু ওরা আর ফিরলই না। আমি আসলে বলতে চাইছিলাম ওদের যখন খুশি এখানে এসে মৎস্য অভিযান চালাতে পারে।

    ওখানে আরেক লোক ছিল, এক সাংবাদিক, নাম টড জনসন। এ সারাক্ষণ মদ নিয়ে আছে। কৈশোরে আমি বেটসভিল বিকন পত্রিকার ডেলিভারি বয় ছিলাম। সে এ পত্রিকায় কাজ করে। মহল্লার ছেলে মরগান ম্যানসন কিনেছে, এরকম একটি শিরোনাম দিয়ে সে আমাকে নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখতে চাইছিল।

    সামনের বারান্দায় বসে, তিন গ্লাস মদ পেটে যাওয়ার পরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে লাগল টড জনসন। আমি যাদেরকে প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম তাদের নিয়ে শুরু করল গল্প।

    জো ডর যুদ্ধে মারা গেছে শুনে আমি মর্মাহত হওয়ার ভান করলাম– যদিও এ লোক কিংবা তার নাম কোনটিই আমার স্মরণে আসছিল না।

    তারপর ধরো গে ভারননের কথা ভারনন মুর যার সঙ্গে তুমি স্কুলে যেতে। সে মন্টোগোমারি কাউন্টিতে টাকার লোভে এক বিধবাকে বিয়ে করে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যায়। ওখানে এখন একটি মোটেল চালাচ্ছে! সে বকবক করেই যেতে লাগল শুধু বিরতি দিল জানতে সে আরেকটি ড্রিংক খেতে চাইলে আমি কিছু মনে করব কিনা।

    টড জনসনের কচকচানি আমার আর ভাল্লাগছিল না। যখন মরগান প্ল্যানটেশন নিয়ে গপ্পো ফেঁদে বসল, ভাবছিলাম কোন্ ছুতোয় ওকে বিদায় করা যায়।

    তুমি ওকে দেখনি, দেখেছ কি? চশমার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকাল টড। বলিরেখা ভরা মুখে প্রত্যাশা।

    কে? আমি একটু অবাক হয়েই জানতে চাইলাম।

    স্যালি-স্যালি মরগান! মনে নেই –ও তো এখানকার ভূত।

    আমার ঠিক মনে পড়ছে না…।

    আরি, ঠিকই মনে আছে তোমার, উদাস গলায় বলল সে।

    ও গৃহযুদ্ধের সময় জনি মরগানকে বিয়ে করেছিল। ও ভালবাসত জনিকে। অবশ্য জনির আরও অনেক কাজিন এবং তার বেশিরভাগ বন্ধুকেই ভালবাসত স্যালি। এমনকী কয়েকটা নিগারের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল ওর। ওরা বলে ওর স্বামী নাকি জানত না কী ঘটছে। পরে জনি যখন যুদ্ধ করতে দূরের শহরে চলে যায় এবং ইউনিয়ন সোলজাররা এখানে আসে– স্যালি ইয়াংকি অফিসারদের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রায় গোটা ইউনিয়ন আর্মিই তার মধু পান করেছে। খ্যাক খ্যাক করে হাসতে গিয়ে শ্বাসনালীতে মদ ঢুকে বিষম খেল টড।

    কিছুক্ষণ খকরখকর কেশে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে নিল সে। সে যাকগে, জনির কানে যখন এসব যায় ওইসময় সে উত্তরের হাসপাতালে শয্যাশায়ী। সে ওখান থেকে পালায়, ২৫০ মাইল রাস্তা হেঁটে বাড়ি পৌঁছয় এবং স্যালিকে সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে গুলি করে। স্যালি গড়াতে গড়াতে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। টড হাত নেড়ে নেড়ে দেখাল কীভাবে স্যালি সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিল। সিঁড়ির নীচে এসে চিৎ হয়ে পড়ে যায় ও এবং অভিশাপ দেয় জনিকে। বলে জনি ইহজীবনে আর কোনও নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারবে না। তারপর সে মারা যায় এবং ওরা তাকে ওইদিনই কবর দেয়।

    কিছুক্ষণ চুপ করে রইল টড। ঢক ঢক করে মদ গিলছে, কণ্ঠমণিটা ওঠানামা করছে। গ্লাস শেষ করল সে। তবে বুড়ো জনি ওসবে মোটেই পাত্তা দেয়নি এবং যুদ্ধের পরে সে বিয়ে করে। হানিমুন শেষে তারা এ বাড়িতে ফিরে আসে। নতুন মনিবনীকে স্বাগত জানাতে ভূত্যের দল দাঁড়িয়ে ছিল সার বেঁধে। জনি এবং তার বধূ বেডরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে, সিঁড়ির মাথায় হাজির হয়ে যায় স্যালি। তাকে দেখে নতুন বউ ভয়ে চিৎকার করে ওঠে এবং সে ও ভূত্যের দল তাড়া খাওয়া শেয়ালের মতো বাড়ি থেকে ছুটে পালায়। জনি তো একদম হতভম্ব এবং বিবশ –সে নিজের হাতে স্যালিকে কবর দিয়েছে– জানে স্যালি মৃত। জনি যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, নড়াচড়া করতে পারছিল না। স্যালি, পরনে পাতলা নাইট গাউন, সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে তার স্বামীকে আলিঙ্গন করে। জনির বাটলার বব রয় বুকে সাহস এনে বাড়ি ফিরে এসেছিল কী ঘটছে দেখতে। সে বলেছে তার প্রভু নাকি ভূতটাকে বহুবার চলে যেতে বলেছে কিন্তু সে যায়নি। অবশেষে দুজনে মিলে ওপরতলায় তাদের বেডরুমে চলে যায়। ভোর হওয়ার ঠিক আগে আগে জনি যখন নিচে নেমে আসে ততক্ষণে সে পরিণত হয়েছে বদ্ধ উন্মাদে–কয়েক মুহূর্ত পরে আস্তাবলে ঢুকে সে আত্মহত্যা করে। গুলির শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার পরে চাকরবাকররা শুনতে পাচ্ছিল হাসছে স্যালি। তারপর থেকে সে কুড়ি জনেরও বেশি পুরুষকে শয্যাসঙ্গী করেছে, এদের মধ্যে একজন ধর্মযাজকও ছিল। সে এখানে এসেছিল তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে।

    আমরা দুজনেই কিছুক্ষণ নিশুপ হয়ে রইলাম। এবারে সব কথা মনে পড়ে গেছে। তখন অবশ্য ছোট ছিলাম বলেই হয়তো স্যালির নষ্টামির কেচ্ছাকাহিনি আমার কানে আসেনি। নিউ ইয়র্কে আমার বন্ধুরা এ গল্পটি খুব পছন্দ করবে, ভাবলাম আমি। এক হানাবাড়িতে এক কামুকী প্রেতিনী।

    টড আমাকে লক্ষ করছিল। আমার চেহারায় অবিশ্বাস এবং মুখে মুচকি হাসি দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমিও এ গল্প বিশ্বাস করতাম না যদি না সেই ঘটনাগুলো ঘটত।

    বলতে থাকো, মজা করে বললাম আমি।

    সে আঙুলের কড় গুনতে লাগল। এক–স্যালিকে তারপর থেকে বেশ কয়েকবারই দেখা গেছে, অতি সম্প্রতি দেখা মিলেছে বছরখানেক আগে; দুই- গত কুড়ি বছরে তুমি হলে পঞ্চম ব্যক্তি যে এই বাড়িটি কিনলে; তিন–এর আগের মালিকদের সবাই বলেছে এটি একটি ভূতুড়ে বাড়ি, একজন ছাড়া। সে কিছু বলেনি সে আত্মহত্যা করেছিল!

    টড চলে যাওয়ার পরে স্কচের খালি বোতলটির দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালাম আমি। বুঝতে পারছিলাম সাংবাদিকটা কেন ভূতে বিশ্বাস করে।

    মাসের শেষে প্ল্যানটেশন খানিকটা এস্টেটে রূপ নিতে লাগল। পিয়েরে নিউ ইয়র্ক থেকে হাজির হলো ফ্যাব্রিক স্যাম্পল নিয়ে, চেকে সাইন করার জন্য এবং তার সঙ্গী হলো আধ ডজন লোক যারা ড্যান স্পেন্সারের নির্বুদ্ধিতার গল্প শুনেছে।

    সেই রাতে ওদের আমি হোটেলের ডাইনিংরুমে অ্যাপায়িত করলাম, কফি খেতে খেতে বললাম স্যালির গল্প। সবাই গল্প শুনে খুশি। জানি আগামী সপ্তাহে এ গল্প নিয়ে নিউ ইয়র্কের পার্টিগুলোয় অনেক হাসাহাসি চলবে। আর্ল উইলসন এবং উইঞ্চলের কলামেও যে এ গপপো স্থান পাবে তা আর বিচিত্র কী!

    গৃহসজ্জার কাজ চমৎকার এগোচ্ছিল এবং সপ্তাহখানেক পরেই ওই বাড়িতে উঠে গেলাম আমি।

    নতুন বাড়িতে প্রথম রাতে স্টাডিরুমে ফায়ারপ্লেসের পাশে বসে আমার এজেন্টের পাঠানো একটি নাটকের পাণ্ডুলিপিতে চোখ বুলাচ্ছিলাম। সন্তুষ্টি এবং শান্তি ঘিরে ছিল আমাকে। নিজেকে সুখি মনে হচ্ছিল।

    বাইরে গাছের ডালে বাতাসের ফিসফিস ভেসে আসছিল, অলস জিভ বের করে অগ্নিশিখা কীভাবে লাকড়িগুলোকে চেটে দিচ্ছে দেখছিলাম মাঝে মাঝে এবং ভাবছিলাম কেন বাড়িঘর নিয়ে এত এত পদ্য লেখা হয়েছে।

    জীবনে এই প্রথমবার বাড়িতে আছি আমি!

    এরপরে বিছানায় গেলাম। মস্ত খাটে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

    আলো চোখে পড়তে জেগে গেলাম আমি। এক মুহূর্ত সময় লাগল ঠাহর হতে কোথায় আছি। তারপর আমি তাকে দেখতে পেলাম এক অপূর্ব সুন্দরী নারী। তার টসটসে ওষ্ঠদ্বয় ভেজাভেজা, পিঠে চুল নয় যেন স্ট্রবেরী রঙের জলপ্রপাত, ঝকঝকে সবুজ চোখ, আশ্চর্য ভরাট দুই বক্ষ সগৌরবে নিজেদের তেজ এবং যৌবন ঘোষণা করছে।

    মহিলাটির পরনের নেগলিজি খুবই পাতলা। রুদ্ধশ্বাস দেহবল্লরীর মাথা নষ্ট করা প্রতিটি খাঁজভাজ তাতে দারুণভাবে প্রস্ফুটিত।

    আমি উঠে বসলাম, নিতান্তই আহাম্মকের মতো প্রশ্ন করলাম। কে.. এখানে কী করছ? ঠিক এভাবে বলিনি তবে হঠাৎ শুকিয়ে আসা গলা দিয়ে চির্চি করে এরকম কোনও কথাই বোধকরি বেরিয়ে এসেছিল।

    মোমের আলো প্রতিফলিত ঠোঁট ফাঁক করে দারুণ আবেদনভরা খসখসে গলায় সে বলল, তুমি ড্যান স্পেন্সর, পরিচালক- তাই না?

    তখনই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেল। পেশীতে ঢিল পড়ল আমার, মুখে হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করলাম। ব্যাপারটি এখন বুঝতে পেরেছি। যদিও প্রথম দর্শনে ভয়ের চোটে ভেবেছিলাম ওটা বুঝি স্যালি। এখন সব খাপে খাপে বসে গেছে। মেয়েটা আমার নাম জানে; সন্দেহ নেই নিউ ইয়র্কের ওই দলটাই একে পাঠিয়েছে ফাজলামি করে।

    তোমাকে কে পাঠিয়েছে, হানি, অবশেষে জিজ্ঞেস করলাম আমি, সেলোফোনের মতো পোশাকটির ওপর থেকে আমার দৃষ্টি সরছেই না।

    আমার প্রশ্ন শুনে যেন মেয়েটি থতমত খেয়ে গেল –সরল বিস্ময় ফুটল চোখে, আপত্তির সুরে বলল, কে পাঠিয়েছে মানে? আমি নিজেই এলাম।

    উচ্চারণেও কোনও খামতি নেই। হয় সে খুব ভাল কোনও অভিনেত্রী, যদিও এতে সন্দেহ আছে কারণ একে আমি আগে কখনও দেখিনি; অথবা স্থানীয় কেউ যার স্বপ্ন পাদপ্রদীপের আলোয় আসা এবং এজন্য যোগাযোগের দ্রুততম রাস্তাটিই সে বেছে নিয়েছে।

    আমি ওকে দেখতে দেখতে এসব কথাই ভাবছিলাম। ওর দেহ, রূপ, কণ্ঠ… অভিনয়ে সুযোগ পাবার জন্য একে পরিচালকের অংকশায়িনী না হলেও চলে; আমি কোনকিছু প্রাপ্তির আকাক্ষা ছাড়াই ওর জন্য সপ্তাহের একটি দিন ব্যয় করতে রাজি!

    অবশেষে আমি আবার কথা বললাম তবে তাতে আবেগের স্পর্শ থাকল না। তুমি ভুল করছ। আমার নাম স্পেন্সার সে ঠিক আছে এবং আমি একজন পরিচালকই বটে, তবে তোমাকে আমি তো চিনলাম না, মিস.. মিস?

    আরি, এক উদ্ভিন্নযৌবনা তরুণী যখন হাঁপাতে শুরু করে তখন আপনি তো বিনয়ের অবতার হয়েই উঠবেন, নাকি?

    …লোল্যান্ড– মিস লোল্যান্ড! আমার এটাই নাম! চাদরের নিচে আমার দেহরেখার ওপর তার চোখ ঘুরছে। সে হাসল, তারপর ঝুঁকে এল সামনে এবং ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল মোমবাতি। প্রথমে আঁধার গ্রাস করল কামরা তারপর আমার গায়ের ওপর থেকে টান মেরে সরিয়ে ফেলা হলো চাদর এবং মৃদু দুলে উঠল খাট। মেয়েটি আমার পাশে চলে এসেছে- উষ্ণ এবং বাস্তব, মোটেই ভূত-প্রেত কিছু নয়।

    পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে দেখি চলে গেছে মিস লোল্যান্ড। কাল রাতে কী ঘটেছিল বিস্তারিত মনে নেই তবে এটুকু স্মরণে আছে সারা রাত আমি যেন খাঁচাবন্ধ কতগুলো নখ ও দাঁতঅলা বাঘিনীর সঙ্গে কুস্তি লড়েছি।

    আর সে অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!

    পরের দিন সন্ধ্যায় তার দেখা মিলল না। আমি বড়ই হতাশ হলাম। কয়েকদিন তার বিরহে নিঘুম রাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করার পরে ঠিক করলাম ওর ব্যাপারে কিছু খোঁজ খবর নেব। জানার চেষ্টা করব কোথায় থাকে সে।

    উঠোনে যারা কাজ করে তারা আমার প্রশ্ন শুনে মাথা চুলকাল, পিচিক করে থুতু ফেলল, তাদের বিমূঢ় দেখাল এবং বলল বেটসভিলে তারা ওই নামের কোনও মহিলাকে চেনে না। বাড়ির ভৃত্যরা কোনও সাহায্য করতে পারল না।

    সুখের স্বপ্ন হয়ে পঞ্চম রাতে ফিরে এল মিস লোল্যান্ড –ধীরে দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি তখন বিছানায় বসে বই পড়ছি।

    তুমি আমার খোঁজ করছিলে? প্লেটে গরম দুধ পেয়ে তৃপ্ত বেড়ালের মতো গরগর করল সে।

    মাথা ঝাঁকালাম আমি। মেয়েটি তার গুরু নিতম্বে হাত রেখে মাথাটি একদিকে কাত করে প্রশ্ন করল, আমার মত অচেনা-অজানা একটি মেয়ের কেন তুমি খোঁজ করছিলে? উমম?

    বললাম আমি তাকে।

    হাসল সে, তারপর ঝট করে খুলে ফেলল পরনের গাউন, নিভিয়ে দিল বাতি এবং ঘর পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে ওঠার আগেই এক লাফে চলে এল আমার পাশে।

    তারপর দুজনে মিলে বিছানায় তুললাম তাণ্ডব।

    আমার দর্শনার্থী পরের রাতে এল, তার পরের রাতে এবং তার পরের রাতেও। তার সঙ্গে প্রতিটি মিনিট আমি উপভোগ করছিলাম।

    এভাবে বারোটি রাত কাবার হয়ে গেল অথচ আমি মেয়েটি সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না। তবে যতবারই আমি এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করেছি প্রতিবারই সে দক্ষিণী টানে টেনে টেনে বলেছে, আমার সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ নয়, হানি।

    তারপর হুট করেই একদিন উধাও হয়ে গেল মিস লোল্যান্ড। আমি আবার ওর সম্পর্কে নানাজনকে নানান প্রশ্ন করে বেড়াতে লাগলাম এবং আগের বারের মতোই কোনও তথ্য মিলল না। মেয়েটিকে আমার বিভিন্ন কারণে সন্ধান পাবার দরকার ছিল, এবং তার সবগুলোই শারীরিক। তার অনুপস্থিতিতে আমার দুচোখ থেকে বিদায় নিল ঘুম এবং আশ্চর্যের ব্যাপার আমি খুব একাকী বোধ করছিলাম।

    তবে বাড়ির নির্জনতার অবসান ঘটল যখন পিয়েরে এবং তার তিনজন হেল্পার দুটো ভ্যানে চাপিয়ে দরজা জানালার পর্দা, নতুন আসবাব, পেইন্টিং, কার্পেটসহ ঘর সাজানোর আরও টুকিটাকি গৃহস্থালী সামগ্রী নিয়ে এল। ফরাসী মানুষটি নিজের কাজটি ভালোই বোঝে। সে গোটা বাড়িতে চক্কর দিতে লাগল, শ্রমিকদের হুকুম করছে, হেল্পারদেরকে নির্দেশ দিচ্ছে, যেন এক সার্জেন্ট।

    এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ির ভোল বদলে গেল। এক বৃহস্পতিবার তার সহকারীদের বিদায় করল পিয়েরে ।

    আর সেই রাতে মেয়েটি এল–সেই দম বন্ধ করা রূপ নিয়ে, তার চোখে কী এক আলো ঝকমক করছিল, সঙ্গে সাত দিনের জমানো তীব্র কামনা।

    তোমার কিউট চেহারার বন্ধুটি কে? কোনও ভূমিকা ছাড়াই জানতে চাইল সে।

    কোন্ বন্ধু?

    বড় বড় বাদামী চোখের ছোটখাট মানুষটি, মুচকি হাসল সে, ঠোঁটে জিভ বুলাচ্ছে।

    ওকে একা থাকতে দাও, বেবি। তুমি তো আমাকে পেয়েছ, বললাম আমি।

    ঠোঁট ফোলাল ও। জানি আমি তোমাকে পেয়েছি। তার চক্ষু সরু হয়ে এল। কিন্তু সে নিজেকে ধরা দিতে চায় না। আমি এরকমটাই পছন্দ করি… আর তুমি তুমি বড্ড অধীর।

    আমি অধীর, বিস্ফোরিত হলাম আমি। মাই গড, উওম্যান, আমার পিঠের নখের খামচিগুলো কি আমি নিজে দিয়েছি!

    মেয়েটিকে যেন এক মুহূর্তের জন্য উদ্বিগ্ন দেখাল তারপর ঘুরে এল আমার পেছনে ভালবাসার ক্ষত দেখার জন্য। পুওর বেবি, কুঁইকুঁই করল সে, চুমু খেল দাগগুলোর ওপর। তারপর জোরে কামড় বসিয়ে দিল।

    সেই রাতে সে চলে যাওয়ার আগে তাকে অনুরোধ করলাম আমার সঙ্গে বোস্টনে যেতে। ওখানে আমার নতুন নাটকের উদ্বোধনী হবে। লাল চুলের মাথাটি নেড়ে সে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল, ওহ নো, আমি যেতে পারব না।

    কেন পারবে না? গোঁ ধরলাম আমি।

    আমার পক্ষে যাওয়া অসম্ভব, কাঁদতে শুরু করল ও। প্লিজ তুমি যেয়ো না। আমি জানি না পুরুষ মানুষ ছাড়া আমি কীভাবে চলব… মানে তুমি পাশে না থাকলে…

    বিছানায় উঠে বসল ও, প্রবল আকুলতা নিয়ে তাকাল আমার দিকে। বলো তুমি আমাকে ভালবাস। বলো তুমি আমাকে সবসময় ভালবাসবে। প্লিজ…. ড্যান। মন থেকে বলার দরকার নেই, মুখে বলো।

    জানালার শাটার দিয়ে ভেসে আসা চাঁদের আলোয় তার চোখের জল চিকচিক করছে। মেয়েটি আক্ষরিক অর্থেই সুন্দরী –এমন রূপবতী আমি জীবনে দেখিনি। আমি চুম্বনে চুম্বনে ওর অঞ পান করতে করতে বললাম, আমি তোমাকে ভালবাসি… আমি তোমাকে ভালবাসি… ভালবাসব সবসময়।

    কিছুক্ষণ পরে শিহরিত সুখ নিয়ে ও শয্যা ত্যাগ করল।

    আমি এখন যাব। বোস্টনে গিয়ে নিজের প্রতি যত্ন নিও। আর আমার কাছে ফিরে এসো। প্লিজ… আমি জীবনেও কাউকে এতটা ভালবাসিনি, ড্যান। বিশ্বাস করো– এর আগে আমি এমন করে কারও প্রেমে পড়িনি।

    ওর পেছনে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আই লাভ য়ু, ফিসফিস করে বললাম আমি। এবং অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এক সেকেন্ডের জন্য কথাটি আমি বিশ্বাসও করে ফেলেছিলাম।

    পরদিন সকালে পিয়েরে ডাইনিংরুমে ঢুকল যুঁসতে ফুঁসতে যেন রোয়া তোলা মোরগ।

    আমি ওকে গুড মর্নিং বলতে যাচ্ছিলাম, সে বাধা দিয়ে ঢেঁকিয়ে উঠল, অলরাইট, ড্যান। ঠাট্টা ঠাট্টাই কিন্তু তুমি বড় বেশি মশকরা করে ফেলেছ। মেয়েটা কে?

    বেকুব বনে গেলাম আমি শুধু বিড়বিড় করে বললাম, কোন্ মেয়ে? সাধু সেজো না! যে মেয়েটাকে.. যে মেয়েটাকে আজ সকালে তুমি আমার বিছানায় পাঠিয়েছ।

    পিয়েরে সিরিয়াস এবং খাপচুরিয়াস মানে ক্ষেপে বোম হয়ে আছে। মেয়েটা! ও নিশ্চয় রাতের বেশিরভাগ সময় আমার সঙ্গে কাটিয়ে তারপর পিয়েরের ঘরে যায়নি। এ অসম্ভব! মেয়েটার বর্ণনা দাও তো শুনি, বললাম আমি।

    চেপে রাখা রাগে কাঁপতে কাঁপতে মেয়েটির বর্ণনা দিল পিয়েরে… সেই একই নারী।

    কী ঘটেছে? প্রশ্নটি আমাকে করতেই হলো যদিও এর জবাব আমি চাই না।

    কী ঘটবে? কিছুই ঘটেনি। তোমার কি ধারণা একটা মেয়ে হুট করে আমার বিছানায় উঠে এল আর আমি তাকে নিয়ে রঙ্গ-তামাশা করব? আমি কিছু নীতি মেনে চলি! আমার নৈতিকতা আছে! ওটা তো একটা বেবুশ্যে! সাহস কত বলে কিনা আমি কেন ওর কাছে ধরা দিচ্ছি না!

    তাহলে ব্যাপার এই! আমাকে দিয়ে ওর মনের আশ পুরোপুরি মেটেনি তাই গিয়েছিল পিয়েরের কাছে।

    আমি দুঃখিত, পিয়েরে । আন্তরিক দুঃখিত। তবে সত্যি জানি না মেয়েটা কে। জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কেউ ওর পরিচয় বলতে পারল না।

    পিয়েরে বুঝল আমি সিরিয়াস। সে এখনও রেগে থাকলেও আমাকে আর ঝাড়ি দিল না। কিছু মহিলা হলো জন্তুর মতো-কিছুতেই তৃপ্ত হয় না, ঘোঁতঘোঁত করল ও। এদের শরীর দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাতদিনই গরম হয়ে থাকে।

    পিয়েরে শান্ত হলে বললাম আজ রাতেই আমি বোস্টনের উদ্দেশে যাত্রা করছি, ও আমার সঙ্গে যাবে কিনা।

    না, ইস্ট উইংয়ের কাজ এখনও শেষ করে উঠতে পারিনি। কালকের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে চাই। ভালো কথা ইস্ট বিউটিফুলের ক্লারা কেনেট আসছে একজন ফটোগ্রাফার নিয়ে। সে তোমার এবং এ বাড়ির লে আউটের জন্য কিছু ছবি তুলবে। কাজেই যত জলদি পারো ফিরে এসো।

    বললাম পরদিনই আমি ফিরে আসছি। বেটসভিল শহর ধরে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঠিক করলাম একবার খবরের কাগজের অফিসে থামব। দেখি টড মেয়েটা সম্পর্কে কিছু জানে কিনা।

    নাহ, ধীরে ধীরে বলল টড, তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখাচ্ছে, লোল্যান্ড নামে কোনও মেয়ে এ তল্লাটে নেই। সন্দেহের সুর ফুটল কণ্ঠে। তুমি জানতে চাইছ কেন? জরুরি কিছু?

    আমি একটু চিন্তা করে দেখলাম ওকে এ মুহূর্তে আর কিছু বলা ঠিক হবে না।

    না? সে অনিসন্ধিৎসু টেরিয়ারের মতো একদিকে কাত করল মাথা। বেশ তো। তবু আমি একবার খোঁজ নিয়ে দেখব। তুমি বোস্টন থেকে ফিরে এলে জানাব।

    বোস্টনে যাওয়াটাই ছিল ভুল– এমন ভুল জীবনে করিনি। নাটক হলো ফ্লপ– এমনই ঢিলা গল্প যে প্রথমবার পর্দা পড়ার আগেই অর্ধেক দর্শক চলে গেল। আর আবহাওয়াটাও ছিল বিশ্রী হোটেল রুমটা ভয়ানক গরম এবং মড়ার ওপর খাড়ার ঘার মতো ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হলাম আমি।

    বেটসভিলে যখন ফিরে এলাম, শহরের আকাশ কালো মেঘে থমথম করছে, ঝড়ের পূর্বাভাস। সোজা গেলাম সংবাদপত্রের অফিসে। আমাকে ঢুকতে দেখে উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠল টড, ধাক্কা লেগে একটা চেয়ার পড়ে গেল । ড্যান, চেঁচাল সে। একটা খবর পেয়েছি। সে মদ খাচ্ছিল।

    গুড, বললাম আমি।

    শোনো- ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। তুমি এই মেয়েটাকে কোথায় দেখেছ?

    সেটা বলা ঠিক হবে না, টড।

    আমার দিকে আড়চোখে তাকাল টড। বললে বলবে না বললে নাই। ডেস্ক ড্রয়ারে হাত বাড়িয়ে একটি ছবি বের করল। বাড়িয়ে দিল আমার দিকে, উত্তেজনায় কাঁপছে হাত, এই মেয়েটা? প্রায় আবছা গলায় জিজ্ঞেস করল ও।

    হ্যাঁ, সেই মেয়েটাই… তবে ছবিতে তার পরনে নাটকের সাজসজ্জা! আমি ভালো করে তাকালাম; আরি, একে দেখতে লাগছে যেন স্কারলেট ওহারার ভূমিকায় অভিনয় করছে।

    আমার দিকে এক নজর তাকিয়েই তার জবাব পেয়ে গেল টড। সে একটু নেচে নিল, প্রথমে এক পায়ে, তারপর অন্য পায়ে লাফাতে লাফাতে বলল, জানতাম… আমি জানতাম! ওই বাড়িতে ও এসেছিল, তাই না! মাথায় লাল চুল এবং ফিগারটা এরকম… শূন্যে হাতের ভঙ্গিমায় সে খাজভাঁজগুলোর আকার দেখাল।

    আমি ধপাশ করে বসে পড়লাম চেয়ারে, সামনে কী আসছে ভাবতে গিয়ে হিম হয়ে গেল বুক। ঠিক আছে, টড। তুমি কী জানো, বলো?

    এ সেই-স্যালি! তার বাবার পদবি ছিল লোল্যান্ড। স্যালি লোল্যান্ড। ঈশ্বর আমাদের মঙ্গল করুন। তুমি ওকে দেখেছ! সে হাসতে হাসতে চড় মারল নিজের পায়ে। তুমি এখন নিশ্চয় বিশ্বাস করবে যে ভূত আছে, আমার গম্ভীর মুখ দেখে থেমে গেল তার হাসি। বলল, আমি দুঃখিত, ড্যান। তোমাকে নিয়ে আমি আমি মজা করতে চাইনি। আমি কোনও কথা না বলে চলে আসছি, তখনও সে বিড়বিড় করে ক্ষমাপ্রার্থনা করে চলছে।

    নীলচে কালো মেঘ স্তূপ হয়ে আছে গোটা দিগন্ত জুড়ে, আকাশে কীসের যেন অশুভ সংকেত। যখন আমি বাড়ি পৌঁছেছি ততক্ষণে নদীর দিক থেকে গুড়গুড় মেঘের ডাক ভেসে আসতে শুরু করেছে। পিয়েরেকে কাছে পিঠে কোথাও দেখতে পেলাম না। দোতলায় উঠে এলাম আমি। জিনিসপত্র বাঁধাছাদা শেষ করেছি মাত্র, হাউহাউ করে হামলে পড়ল ঝড়।

    শাটারের ভেতর থেকে গোঙাতে লাগল বাতাস, অঝোর ধারায় শুরু হয়ে গেছে বর্ষণ, বুনো জন্তুর মতো ছাদের ওপর যেন আঁচড়াতে, খামচাতে লাগল। দপদপ করে উঠল বাতিগুলো, নিভু নিভু হয়ে এল, তারপর আবার জ্বলে উঠল পূর্ণশক্তিতে। বাইরে কান ফাটানো শব্দে বাজ পড়ছে… আমি যেন হঠাৎ করেই একটা গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গিয়েছি।

    কী করব মাথায় আসছিল না তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম এ বাড়ি থেকে এখুনি পালাতে হবে। তারপরের করণীয় সম্পর্কে পরে চিন্তা করা যাবে। চাকরগুলো কাজ শেষে চলে যাওয়ার আগে স্টাডিরুমে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমি ফায়ারপ্লেসের সামনে গিয়ে বসলাম। ভাবছি কী করা যায়। আমার মাথাটা কেন জানি কাজ করছিল না, ভোঁতা লাগছিল সবকিছু। এমনসময় পিয়েরের গোঙানি শুনতে পেলাম।

    দৌড় দিলাম সিঁড়িতে। ফার্স্ট ল্যান্ডিংয়ে আধখাড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে। আছে পিয়েরে, রক্তশূন্য মুখ, একেবারেই বিধ্বস্ত চেহারা। পাগলা বাছুরের মত বনবন করে ঘুরছে চোখের মণি। ড্যান, গলা নয় যেন ব্যাঙের ডাক। ভেঙ্গে গেছে স্বর। এক কদম এগোল আমার দিকে, মিস করল সিঁড়ি এবং গড়াতে গড়াতে নেমে এল নিচে।

    পিয়েরে, মাই গড, কী হলো তোমার?

    মেয়েটা.. ওই মেয়েটা, শিউরে উঠল ও, শরীর এমনভাবে কাঁপছে যেন হাই ভোল্টেজের বিদ্যুতের তার স্পর্শ করেছে।

    সিধে হওয়ার চেষ্টা করল ছোটখাট ফরাসি মানুষটা। আমার ট্রাউজার্স খামচে ধরল। ওকে দূর করো। ও যেন আর আমার কাছে আসতে না পারে। ফোঁপাতে লাগল সে।

    ওকে ধরে একটা ঝাঁকি দিলাম যাতে হুঁশ ফিরে আসে।

    আসল কথায় এসো। কী হয়েছে?

    ও… ও গত রাতে আমার বিছানায় এসেছিল… তারপর সারারাত ধরে… ও, হিস্টিরিয়া রোগীর মতো চোখ ঘোরাল পিয়েরে। আমি অত বলবান পুরুষ নই, ড্যান। ও আমাকে মেরে ফেলবে! আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো, প্লিজ!

    আমি ওকে টেনে তুললাম। ঠিক আছে, চলো যাই। তোমার ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে নাও।

    ওর আতংকটা ফিরে এল। না, না। ব্যাগ গোছাতে হবে না। এখুনি চলল। ও ওখানে।

    ওর ভয় সংক্রামক। আমিও যেন স্যালির উপস্থিতি অনুভব করছিলাম; আর কোনও উষ্ণ অনুভূতি নয়, ভীতিকর কিছু একটা, যেন খুলে দেয়া হয়েছে নরকের দুয়ার এবং ওখানকার বাসিন্দারা রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছে শিকারের সন্ধানে।

    আবার তেজ হারাতে লাগল বাতিগুলো–ত্রিশ সেকেন্ড স্তিমিত হয়ে রইল– তারপর ধীরে ধীরে নিভে গেল। আলো বলতে শুধু ফায়ারপ্লেসের আগুনের আভা।

    ড্যান, ভয়ে চিৎকার দিল পিয়েরে। ও আসছে!

    ঠিক আছে ঠিক আছে! ওকে কম্পিত গলায় সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলাম। আমি ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে গাড়িতে যাচ্ছি।

    কিন্তু পিয়েরে আমার সঙ্গে সেঁটে রইল। বজ্রের আলোয় দেখলাম লন ভেসে যাচ্ছে জলাতে। মুহূর্তেই দুজনে কাকভেজা। হঠাৎ বাড়ির পাশের ম্যাগনোলিয়া গাছের ওপর তীব্র আলোর একটা ঝলকানি ছুটে এসে ঝলসে দিল আমার চোখ। আঁধারে তখনও সয়ে ওঠেনি চাউনি, পলকে গাছটা বিকট শব্দে হুড়মুড় করে পড়ে গেল আমার গাড়ির ওপর, কয়েক ইঞ্চির জন্য রক্ষা পেলাম দুজনেই।

    অবিশ্বাস্য ভয়ের একটা অনুভূতি আমাকে গ্রাস করল। আমি বড় শহরে বাস করে অভ্যস্ত –সেখানে ভূত-প্রেতের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু স্যালি নামের প্রেতিনীর সত্যি অস্তিত্ব রয়েছে। এখন আর আমার কোনই সন্দেহ নেই যে ও-ই একটু আগে বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমার মন আমাকে সাবধান করে দিল যদি আমরা লন পার হওয়ার চেষ্টা করি অশুভ শক্তিটা আবার বাধা দেবে হয়তো আগেরবারের চেয়েও ভয়ঙ্করভাবে।

    পর্চে দাঁড়িয়ে আমার বাড়িটিকে চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেখে অসুস্থবোধ করতে লাগলাম আমি। লন, ফুলগাছ, ঝোঁপঝাড় কিছুই আস্ত রইল না। ভয়ানক বৃষ্টি আর শিলা পড়ে সবকিছু একেবারে তছনছ হয়ে গেল। কাঁচ ভাঙার তীব্র ঝনঝন জানিয়ে দিল আমার নতুন গ্রীন হাউসটিকেও শেষ করেছে স্যালি।

    আমি এক ছুটে বাড়িতে ঢুকলাম; গোঙাতে গোঙাতে পিয়েরে আমার পিছু নিল। একা থাকতে ভয় করছে ওর। আমাদের পেছনে এত জোরে বন্ধ হয়ে গেল দরজা যে সেই শব্দে লাফিয়ে উঠল কলজে।

    বাতাসে স্যালির শরীরে গন্ধ, ঝড়ের তাণ্ডব ছাড়িয়ে তার যৌনাবেগ যেন দপদপ করছিল। ভয় এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে আমি সিঁড়ি গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অবশেষে গলা বাড়িয়ে ডাক দিলাম, স্যালি! স্যালি লোল্যান্ড, কোথায় তুমি?

    জবাবে শুধু জানালার গায়ে আছড়ে পড়া বাতাসের হুংকার আর শাটারের কাঁচকোচ আওয়াজ শোনা গেল।

    আবারও ডাকলাম আমি। কাজটা এমন নির্বোধের মতো এবং মেলোড্রামাটিক মনে হচ্ছিল যে নিজেকে স্রেফ একটা গবেট লাগছিল। তবে আমার ভয়ে প্রায় অসার হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের একটি অংশ জানত স্যালি আমার কথা শুনছে… কোথাও বসে। আমি ওক কাঠের প্রকাণ্ড দরজাটির দিকে ঘুরলাম। মনে হলো চাপা গলায় যেন হেসে উঠল ও। বাতাসে ভেসে আসা জলের ছাঁট লেগে পুরানো কাঠ খানিকটা ফুলে উঠেছে তবে কপাট খুলবে না- সে আমরা যতই ঠেলাঠেলি কিংবা টানাটানি করি না কেন। অবশ্য চেষ্টা করার আগেই বুঝে গেছি স্যালি আমাদের পালাবার সমস্ত পথ বন্ধ করে রেখেছে।

    আমি সিঁড়ি গোড়ায় গিয়ে দাঁড়ালাম। স্যালি, আমাদের যেতে দাও… প্লিজ, আমাদের ছেড়ে দাও।

    আবার ভেসে এল ভৌতিক চাপা হাসি– তবে এবারে আগের চেয়ে জোরে। সেই হাসি যেন আতঙ্কের বিরাট একটা হাত হয়ে আমার নাড়িভুঁড়ি চেপে ধরল।

    পিয়েরে অসহায়ের মতো সিঁড়ি গোড়ায় পড়ে গেল। সে ভয়ানক কাঁপছে। ভয়ে বারবার মুঠো খুলছে এবং বন্ধ করছে।

    স্যালি, হাঁক ছাড়লাম আমি। আমার কথা শোনো… প্লিজ। প্রথমে কিছু শোনা গেল না, তারপর ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে আমি শুনতে পেলাম ওটা।

    গুণগুণ করছে কেউ অমানুষিক এবং প্রচণ্ড ভীতিকর একটা গুণগুণানি যেন একটা ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা তার দুর্ভাগা সঙ্গীকে নিজের জালে আটকে ফেলে তাকে গলাধঃকরণ করতে যাচ্ছে।

    এখন একটাই মাত্র কাজ আছে করার।

    আমি পিয়েরেকে মেঝেতে ফেলে রেখে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম।

    গুণগুণানির সুরটা বদলে গেল… যে গাইছে সে যেন একটু অবাকই হয়েছে। ভয়ে আমার কলজে উড়ে গেছে। কিন্তু স্যালির সঙ্গে মুখোমুখি হতে হবে ওরই নিজস্ব যুদ্ধক্ষেত্রে।

    মাস্টার বেডরুমে ঢুকে আমি শুয়ে পড়লাম। বাইরে ম্যানিয়াকের মতো দাপাদাপি করছে ঝড়, বাড়ির অপরপাশের ম্যাগনেলিয়া গাছটি এবারে ধরাশায়ী হলো ওয়েস্ট উইং এবং গোটা কিচেনসহ।

    আমার ঘরের দরজা খুলে গেল। সে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, একপাশে হেলানো মাথা, বিস্মিত।

    হ্যালো, স্যালি লোল্যান্ড, আমি উচ্চস্বরে ডাকলাম ওকে।

    এক সেকেন্ডের জন্য ঝিকিয়ে উঠল সবুজ চোখ, তারপর সরু হয়ে এলো। সে বিস্ময় এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন করল, তুমি ভয় পাওনি?

    আমি ডানে বামে মাথা নাড়লাম, তার পাতলা নেগলিজির ওপর আঠা হয়ে লেগে আছে দৃষ্টি। আতঙ্ক সত্ত্বেও আমার ভেতরে জেগে উঠতে লাগল কামনা। আমি বিছানা থেকে নেমে ওর দিকে এক কদম বাড়ালাম। বাইরে চিৎকার দিল বাতাস, ছাদের ওপর কী যেন পড়ল দুম করে, এতই জোরে যে গোটা বাড়ি কেঁপে উঠল।

    স্যালি এক হাত তুলে ইশারা করল আমাকে থামতে। ড্যান, ওর গলার স্বরে এমন অনিশ্চয়তার সুর আগে কখনও শুনিনি। তুমি এখানে কেন এসেছ?

    তোমার কী মনে হয়?

    বলো আমাকে, গর্জন করল স্যালি।

    কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি।

    আঘাত পাওয়া, হতভম্ব ছোট্ট মেয়েটির মতো স্যালি বলল, আমাকে কেউ কোনদিন ভালবাসেনি… শুধু আমার শরীরটাকে ভালবেসেছে! তুমিও তাদের থেকে আলাদা নও… অন্তত আমি তা মনে করি না।

    তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ, স্যালি। আমি তোমার সব কথাই জানি… গত একশ বছরে কারা তোমার প্রেমিক ছিল তাদের কথা। যদিও তুমি মৃত। কিন্তু আমার কাছে তুমি যে কোনও নারীর চেয়েও বেশি জীবিত। আমি সবকথাই জানি আমি তোমাকে এখনও ভালবাসি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি যা বলছি তা সত্যি এবং আমার এ উপলব্ধি হয়তো প্রকাশও পেল আমার গলার স্বরে।

    স্যালি আমার চোখে গভীরভাবে তাকাল, তার চাউনি যেন ভেদ করে গেল আমার হৃদপিণ্ড, তারপর সে ঠোঁট কামড়ে ধরে পিটপিট করল চোখ অশ্রু ঠেকাতে।

    আমাকে কেউ কোনদিন কখনও ভালবাসেনি, ড্যান।

    আমি ওকে আমার বুকে নিতে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু সে চট করে একপাশে সরে গিয়ে আমাকে ধাক্কা মারল। দাঁড়াও, প্লিজ… আমাকে একটু ভাবতে দাও।

    আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম। নরম এবং গরম। ও গুঙিয়ে উঠল। না… এখন না।

    তারপর হাসল স্যালি, সিরিয়াস গলায় বলল, চলো, নিচে যাই, ড্যান।

    আমরা হাত ধরাধরি করে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে নিচে, পিয়েরে যেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, সেখানে চলে এলাম।

    তুমি এ বেচারাকে ভয়ে আধমরা করে ফেলেছ, জোর করে মুখে হাসি ফোঁটালাম আমি। আমি তোমাকে যেভাবে সামাল দিতে পারি ও তা পারে না।

    তুমি সবসময়ই বড় অধীর আর ব্যাকুল, ড্যান । কিন্তু ও আমার কাছে কিছুতেই ধরা দিতে চায় না। সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। অন্যমনস্কভাবে বলল স্যালি, ফিরিয়ে দিল না আমার হাসি। বাড়ির পেছন দিকটায় ফিরল। ওখানে মাতামাতি করছে ঝড়। স্যালি যখন কথা বলল, গলার স্বর খসখসে। শোনাল, আরেকবার বলো আমার জন্য তুমি কতটা ফিল কর, ড্যান।

    আমি তোমাকে ভালবাসি, স্যালি। ভালবাসব সবসময়। একদম সত্যি কথা!

    স্যালি আবার পিটপিট করল চোখ, তারপর যেন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, এমন ভঙ্গিতে হাঁটা দিল সদর দরজায়। এদিকে এসো, আদেশ করল ও। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। খোলো এটা।

    অবাক আমি তবু ওর হুকুম পালন করলাম। দরজাটি সহজেই খুলে গেল। শটগানের গুলির মত বৃষ্টির ধারাল ফোঁটাগুলো আঘাত হানল আমার মুখে, ভারসাম্য প্রায় হারিয়ে ফেলছিলাম। বাইরের ধ্বংসযজ্ঞের দিকে নজর বুলালাম। খুবই ভয়াবহ অবস্থা। স্যালির গলার স্বর ভেসে এল পেছন থেকে, আশ্চর্য করুণ এবং একাকি, বিদায়, ড্যান। তারপরই দরজা বন্ধ করে দিল সে।

    স্যালি, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দাও, চেঁচালাম আমি।

    জবাবে আর্তনাদ ছাড়ল বাতাস।

    স্যালি, পিয়েরের কী হবে?

    পাগলের মত এক দৌড়ে বাড়ির পেছনে চলে এলাম, ভেতরে ঢুকবার রাস্তা খুঁজছি। কোনও লাভ নেই। এ বাড়ি ফোর্ট নক্সের চেয়েও দুর্ভেদ্য। ঢোকার কিছু উপায় নেই।

    আবছা মনে পড়ে জলকাদা, মাটিতে পড়ে থাকা গাছপালা, বেড়া ইত্যাদির মাঝে হামাগুড়ি দিয়ে অবশেষে হাইওয়েতে উঠে পড়ি আমি। তখন প্রায় মাঝরাত। হোঁচট খেতে খেতে রওনা হই বেটসভিলের দিকে।

    টডকে ওর অফিসেই পেয়ে গেলাম; সে অপ্রত্যাশিত হারিকেন ঝড় নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় বিস্তারিত একটি লেখা লিখবে ঠিক করেছিল। আমি বললাম আমার এক বন্ধু সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে। ওকে একা সরিয়ে নিতে ভয় পাচ্ছি পাছে ইন্টারনাল কোনও ইনজুরি হয়। টড অবশ্য আমার চোখমুখ দেখেই বুঝে ফেলেছিল আমি মিথ্যা বলছি। আমার মিথ্যাচারিতার সঙ্গে ভৌতিক কোনও বিষয় জড়িত।

    টড, একজন ডেপুটি শেরিফ এবং একজন অ্যাম্বুলেন্স অ্যাটেনডেন্টকে নিয়ে আমি ফিরে এলাম মরগান ম্যানসনে। চার মাইল রাস্তা পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগল।

    গাড়ির হেডলাইটের আলোয় ধ্বংসপ্রাপ্ত জায়গাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে টড ফিসফিস করে বলল, মাই গড! আমার মুখে তখন কোনও রা নেই। বাড়িটিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন পাঁচশ বছর ধরে এর গায়ে কোনও রঙের প্রলেপ পড়েনি। প্রলয়ংকরী বাতাসে জানালা ভেঙে কজার সঙ্গে ঝুলে আছে, বাড়ির পশ্চিম অংশের ছাদ পুরোটাই ধসে গেছে, যেখানে লন আর বাগান ছিল সেখানে এক পুকুর কাদাজল থই থই… আর সদর দরজাটা ভেঙে বাতাসের বাড়িতে ডানে-বামে শুধু মুখ নাড়ছে।

    পিয়েরের কোনও চিহ্নই নেই… তখনও পেলাম না, পরেও নয়।

    ডেপুটি এবং করোনার বলল তাদের ধারণা পিয়েরে ঝড়ো বাতাসে বেরিয়ে পড়েছিল এবং দুর্ঘটনাবশতঃ ডুবে মরেছে।

    কিন্তু আমার ধারণা আসল সত্যটি আমি জানি আসলে কী হয়েছে পিয়েরের সম্ভবতঃ টডও কিছু সন্দেহ করেছে তবে সে মুখ বুজে রইল।

    আমি একটা প্রবাদে খুব বিশ্বাস করি কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। আমি স্যালির ওই ছোট্ট সেক্সি স্বর্গে সুখেই থাকতে পারতাম।

    ও ছিল দারুণ কামুকী এক নারী –একটু হিংস্র তবে চমৎকার –ওর চাহিদাও ছিল প্রচুর। তবে আমার চাহিদা ছিল আরও বেশি।

    বিকৃত কিছু কারণে ও হয়তো আমার প্রেমেও পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্যালি তার কামনার নেশা মেটাতে পিয়েরেকে ধরে নিয়ে গেছে ভূত প্রেতদের প্রেতলোকে যেখান থেকে বেচারা কোনদিন ফিরে আসতে পারবে না। ওখানে সে থাকবে ভূতপেত্নীদের খেলার সঙ্গী হয়ে।

    ব্যাপারটি আমার কাছে মস্ত একটা ঠাট্টার মতো লাগছে। ঠাট্টাটির কথা মনে হলেই আমি হাসতে শুরু করি, উন্মাদের মতো হাসতেই থাকি কেবল সে হাসি আর থামে না। ও আমাকে… নিজেকে এবং পিয়েরেকে নিয়ে দারুণ একটি ঠাট্টা করেছে।

    স্যালি-উষ্ণ, যৌনাবেদনময়ী স্যালি চেয়েছিল কেউ তার সঙ্গে প্রেম করবে… সবসময়! তাই সে দুর্ভাগা পিয়েরেকে বাছাই করেছে। দেখুন, আবারও আমি হাসতে লেগেছি!

    স্যালি ভেবেছে পিয়েরে তার খেলার পুতুল হবে কিন্তু ছোট ফরাসী মানুষটিকে সে কিছুতেই হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারছিল না। সেজন্যই শোধ নিতে হয়তো…

    আর স্যালির সবসময়ের ভালবাসার খিদে মেটাতে গিয়ে পিয়েরে বেচারার যে কী দশা হবে তা-ই ভাবছি এখন! এবং কেবলই হাসি পেয়ে যাচ্ছে।

    –অ্যাডোবি জেমস

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅশুভ ছায়া – অনীশ দাস অপু
    Next Article ভূত প্রেত রক্তচোষা – অনীশ দাস অপু

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    মায়া রয়ে গেল – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    নবনীতা দেবসেনের গল্প

    September 1, 2025

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.