Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৃথিবীর সেরা ভৌতিক গল্প – অনীশ দাস অপু

    লেখক এক পাতা গল্প330 Mins Read0

    এলিসিয়া

    সান্ডারফোর্ডের চোখের রঙ ওর গায়ের মতোই–হলুদ। এলিজাবেথ অ্যানকে কঠোরভাবে বলা আছে সান্ডারফোর্ড কিংবা সে যেন কখনোই চিলেকোঠার ঘরে না যায়।

    এলিজাবেথ অ্যান বাবা-মার সাথে এই প্রথম ওদের গ্রামের বাড়িতে এসেছে। ওরা থাকে আমেরিকার বোস্টনে।

    গ্রামের বিশাল বাড়িটি ওদের কেয়ারটেকার দেখাশোনা করে। সে-ই। আসলে বলেছে চিলেকোঠার ঘরে যেন অ্যান জীবনেও না যায়।

    কেন, প্রশ্ন করেছিল অ্যান। জবাবে রহস্যময় ভঙ্গিতে হেসে চুপ করে থেকেছে কেয়ারটেকার।

    মা মেয়েকে নিষেধ করে দিয়েছেন চিলেকোঠার ঘরে না ঢুকতে। ব্যাখ্যা দিয়েছেন শতাব্দী প্রাচীন অন্ধকার ও ঘর চামচিকা আর ধুলো-ময়লায় বোঝাই। ভয় পেতে পারে অ্যান। অসুখ বাধিয়ে বসাও বিচিত্র নয়।

    চিলেকোঠার ঘর দেখার প্রচুর আগ্রহ এলিজাবেথ অ্যানের। তবে বাবা মার খুবই বাধ্য মেয়ে সে। ওঁরা কিছু নিষেধ করলে সে কাজ জীবনেও করবে না অ্যান।

    কিন্তু আজ নেহায়েত ঠেকায় পড়ে চিলেকোঠার ঘরে আসতে হয়েছে। অ্যানকে। সান্ডারফোর্ডের কারণে।

    সান্ডারফোর্ড ওরফে স্যান্ডি ভীষণ ছটফটে, দুষ্ট। কোথাও একদণ্ড স্থির থাকতে জানে না। ফুড়ুৎ করে অ্যানের কোল থেকে নেমে ছুটেছে চিলেকোঠার ঘরের দিকে। অ্যানকেও বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে পেছন পেছন। চিলেকোঠার ঘরের সিঁড়িতে দাঁড়াল অ্যান। ব্যস্ত চোখ খুঁজছে সান্ডারফোর্ডকে। সিঁড়ির মাথায় কতগুলো বাক্সের মধ্যে হলদে লেজটাকে দেখতে পেল সে। সান্ডি, এদিকে আসো, নরম গলায় ডাকল অ্যান।

    চিলেকোঠার ঘরের দরজায় তালা নেই। সামান্য ফাঁক হয়ে আছে কবাট। একটা হলুদ ঝিলিক দেখল অ্যান ফাঁকটার আড়ালে, অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল সান্ডারফোর্ড।

    সান্ডারফোর্ড, চলে আয় বলছি, এবার গলা চড়ল অ্যানের। তোর ও ঘরে যাওয়া নিষেধ, জানিস না?

    কোনো সাড়া নেই সান্ডারফোর্ডের।

    এদিকে এসো, এলিসিয়া। সান্ডারফোর্ড আমার কাছে। মিষ্টি, নরম একটা কণ্ঠ ভেসে এল চিলেকোঠার ঘর থেকে। জমে গেল অ্যান। বড় বড় হয়ে গেল চোখ, ঘুরে তাকাল কণ্ঠের উৎসের দিকে।

    একটা আরাম কেদারা। দেখলেই বোঝা যায় বহু পুরানো। ওতে বসে মৃদু দুলছেন এক বৃদ্ধা। তার মাথার চুল ধবধবে সাদা, চেহারা ভারী বিষণ্ণ। তাঁর কোলে সান্ডারফোর্ড, লেজ গুটিয়ে বসে আছে। দুজনেই তাকিয়ে আছে। অ্যানের দিকে। অতি প্রাচীন চেহারার বৃদ্ধার গায়ে নীল একটা গাউন।

    এদিকে এসো, বৃদ্ধা আস্তে আস্তে হাত বোলাচ্ছেন সান্ডারফোর্ডের মাথায়। তোমার বেড়াল আমার কাছে। দেখতেই পাচ্ছ। ও আমার বন্ধু হয়ে গেছে, এলিসিয়া। হাসলেন তিনি। তবে তাঁর চোখ হাসছে না। আধো অন্ধকারে মনে হলো জ্বলছে চোখ জোড়া, চাউনিটাও কেমন কঠিন।

    আমার নাম এলিসিয়া নয়, ঢোক গিলল অ্যান।

    জানি, জানি সে কথা, সোনা, দ্রুত বলে উঠলেন তিনি। তবে তোমার চেহারা অবিকল এলিসিয়ার মতো। এত মিল তার সাথে তোমার যে তোমাকে এলিসিয়াই মনে হচ্ছে। তোমাকে এলিসিয়া ডাকলে তুমি কি খুব রাগ করবে? তোমাকে তো আমি এলিসিয়াই ভাবছি। তোমরা এ বাড়িতে আসার পর থেকে তোমাকে আমি দেখছি। তুমি যখন বাগানে খেলা করো তখন তোমাকে আমি দেখি। এ জানালা দিয়ে। ছোট একটা জানালার দিকে হাত তুলে দেখালেন বৃদ্ধা। এত স্বচ্ছ চামড়া, অ্যানের মনে হলো চামড়া ভেদ করে জানালার গরাদগুলোও দেখতে পাচ্ছে সে। আমি কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি তুমি আসবে। বিশেষ করে আজকের দিনটার জন্য। আজ যে তুমি এগারোতে পা দিয়েছ, সোনা, আবার হাসলেন তিনি মিষ্টি করে।

    বৃদ্ধা ঠিকই বলেছেন আজ এলিজাবেথ অ্যানের এগারোতম জন্মদিন।

    কিন্তু ওখানে দাঁড়িয়ে কেন, এলিসিয়া, সোনা, বললেন তিনি। উঠে এসো। ঘরে এসো। তোমার সাথে কথা বলার জন্য কতদিন ধরে মুখিয়ে আছি আমি।

    চিলেকোঠার ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না অ্যানের, ভয় লাগছে। মহিলার আচরণে কেমন অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার আছে। অ্যান ভাবল, মাকে এ মহিলার কথা জানাবে।

    এসো! গোঁ ধরে রইলেন বৃদ্ধা। তোমাকে আমার এলিসিয়ার ছবি দেখাব। দেখবে এলিসিয়ার সাথে তোমার কত মিল।

    ধন্যবাদ। কিন্তু ছবি দেখতে ইচ্ছে করছে না, বলল অ্যান।

    আমি যাই, হঠাৎ মনে পড়ল কেন এখানে এসেছে সে। স্যন্ডি, এসো, ডাকল বটে, কিন্তু বেড়ালটা একটুও নড়ল না। আগের মতো বৃদ্ধার কোলে মুখ গুঁজে বসে রইল। মহিলা তার গাউনের নীল পকেটে গুঁজে রাখা ছোট একটা ছবি বের করে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন অ্যানকে।

    এসো, এলিসিয়া। ছবি দেখ। তারপর সান্ডারফোর্ডকে যেতে দেব। এমনভাবে কথাটা বললেন যেন সান্ডারফোর্ডের যাওয়া না যাওয়া তার উপর নির্ভর করছে। সান্ডারফোর্ডকে ধরে রাখার তাঁর কী অধিকার আছে?

    না, এলিজাবেথ অ্যান উপরে যাবে না। সে সিঁড়ির চার নম্বর ধাপে উঠল। এখান থেকে গলা বাড়িয়ে ছবিটা দেখা যাবে, তারপর সান্ডারফোর্ডকে নিয়ে নেমে যাবে নিচে। সে আরেক ধাপ সিঁড়ি উঠল।

    হ্যাঁ, এসো সোনা। এসো।

    ছবি না দেখলে অদ্ভুত মহিলা সান্ডারফোর্ডকে ছাড়বেন না বুঝতে পারল সময় বয়ে গেল এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া। ছবিটি মহিলার হাত থেকে যেন পিছলে গেল, পাখা মেলল শূন্যে। তারপর ল্যান্ড করল ধুলোভরা মেঝেয়।

    অ্যান ঝুঁকল মেঝের উপর থেকে ছবিটি কুড়িয়ে নিতে, ঠিক তখন চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামল সান্ডারফোর্ড, সিঁড়ির দিকে ছুটল।

    ছবিটি হাতে নিয়ে সিধে হলো অ্যান। তাকাল শতাব্দী প্রাচীন রকিং চেয়ারটার দিকে। চেয়ার খালি। হঠাৎ করেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন বৃদ্ধা।

    খোলা দরজাটা বন্ধ করে দিল অ্যান। অদ্ভুত, ভাবল ও, গোটা ব্যাপারটা আসলে অদ্ভুত একটা কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। নিজেকে প্রবোধ দিল ও। চিলেকোঠার ঘর নিয়ে নানা কথা ভেবেছি আমি তাই কল্পনায় ওই বুড়ি মহিলাকে দেখেছি।

    কিন্তু পুরোটাই যদি কল্পনা হয়ে থাকে তাহলে এ ছবি এল কোত্থেকে!!

    ছবিটি সাদা কালো, হলদেটে রঙ ধরেছে। ছোট একটি মেয়ের ফটোগ্রাফ। অবিকল এলিজাবেথ অ্যানের মতো দেখতে।

    ছবিটা উল্টে দেখল অ্যান, পেছনে লেখা এলিসিয়া ফ্রস্ট, বয়স এগারো।

    ছবি নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকল অ্যান, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের উপর রেখে দিল।

    আজ অ্যানের জন্মদিন। বাবা অবশ্য কাউকে দাওয়াত দেননি। শুধু বিশাল একটি কেক এনেছেন আর মা তার মেয়ের পছন্দের পায়েল্লা আর পুডিং বেঁধেছেন।

    খাওয়া-দাওয়া শেষে, বাবা ড্রইংরুমে বসে পাইপ কুঁকছেন, রান্নাঘরে মাকে বাসন ধোয়ার কাজে সাহায্য করছে অ্যান।

    ন্যাকড়া দিয়ে একটা প্লেট মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করল অ্যান, এলিসিয়া কে, মা?

    ওর মা মাংসের বাটি ধুতে ব্যস্ত, মেয়ের প্রশ্ন তেমন খেয়াল করলেন না, হালকা গলায় বললেন, জানি না মা। কে সে?

    আমিও জানি না, জবাব দিল অ্যান। তবে এ নামে কেউ বোধহয় ছিল। ওই মেয়েটার একটা ছবি পেয়েছি আমি চিলেকোঠার ঘরে …

    মা ঝট করে ঘুরলেন মেয়ের দিকে। তোমাকে না ওখানে যেতে মানা করেছি?

    যেতে চাইনি তো, মিনমিন করে বলল অ্যান। স্যান্ডিটা দৌড়ে গেল। আমাকেও তাই…

    ঠিক আছে। আর যাবে না। হ্যাঁ, কী বলছিলে যেন?

    বলছিলাম এলিসিয়া ফ্রস্ট, বয়স এগারো। মেয়েটার চেহারা অবিকল আমার মতো। বয়সও মিলে যায়।

    এলিসিয়া ফ্রস্ট? মা এক মিনিট কী যেন ভাবলেন, চিলেকোঠার ঘরে? হুম…ওখানে অবশ্য অনেক পুরানো জিনিসপত্র আছে। তবে কোনো ছবি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।… ফ্রস্ট…দাঁড়াও! দাঁড়াও! মনে পড়েছে…ওটা তোমার গ্রেট-গ্রান্ডমাদারের নাম। এলিসিয়া ফ্রস্ট ছিলেন তোমার গ্রেট- গ্রান্ডমাদারের বোন। ছোট বেলায় মারা গেছেন তিনি।

    অ্যান আরেকটা প্লেট মুছতে লাগল।

    কিন্তু … বলে চললেন মা, ওনার কোনো ছবি দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। কোথায় পেলে, ট্রাঙ্কে?

    মেঝেতে কুড়িয়ে পেয়েছি, বলল অ্যান।

    কোথায় ছবিটা?

    আমার ঘরে।

    প্লেট মোছা হলে অ্যান ছবিটা দেখাল মাকে। মনে মনে আফসোস হচ্ছে এখন ওই বৃদ্ধার কথাও বলতে হবে। যদিও অ্যান মনে প্রাণে বিশ্বাস করে স্রেফ কল্পনায় সে বুড়িকে দেখেছে।

    হ্যাঁ, বললেন মা। তোমার গ্রেট-গ্রান্ডমাদারের বোনই বটে। ওই সময়ে তোলা ছবি। এ ছবিটি তোলার পরেই নিশ্চয় তিনি মারা যান। লোকে বলে মেয়েটির মৃত্যুর পর তার মা মানে তোমার গ্রেট–গ্রেট গ্রান্ডমাদার, এলিজাবেথ অ্যান-পাগল হয়ে যান। বছরের পর বছর এ বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি আর শুধু এলিসিয়া নাম ধরে ডেকেছেন।

    চিলেকোঠায় একটা রকিং চেয়ার দেখলাম–ওটা বোধহয় আমার গ্রেট-গ্রেট গ্রান্ডমাদারের, তাই না? জিজ্ঞেস করে অ্যান।

    হ্যাঁ। ওটা আমি বিয়ের পর থেকে ওখানে দেখে আসছি।

    আমার চেহারা কি এলিসিয়ার মতো?

    অনেকটা তো বটেই, জবাব দিলেন মা। চোখে চশমা পরে খুঁটিয়ে দেখলেন ছবিটি। তারপর মেয়েকে ওটা ফেরত দিয়ে বললেন, ভুল বললাম। অনেকটা নয়, পুরোটাই। আদর করে মেয়ের রেশম কালো চুল নেড়ে দিলেন। তোমরা দুজনেই খুব সুন্দরী।

    ব্যাপারটির পরিসমাপ্তি ঘটল ওখানেই। ছবির কথা অ্যান ভুলে গেল বেমালুম। তবে, পরদিন বিকেলে সে নিজের ঘরে ঢুকছে, কে যেন দূর থেকে ডাক দিল। এলিসিয়া-আ! ঘুরল অ্যান, ওর ঘর থেকে চিলেকোঠার ঘরটা পরিষ্কার দেখা যায়। দরজা বন্ধ করে এসেছিল অ্যান। কিন্তু এখন ওটা হাট করে খোলা।

    বুকের ভেতর যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়ল অ্যানের। আমি কিছু শুনিনি, নিজেকে প্রবোধ দিল ও। সব আমার কল্পনা। আমি যাব না। আমি আর চিলেকোঠার ঘরে যাব না।

    এলিসিয়া-আ-আ! দূরাগত ডাকটি মৃদু, তবে নরম এবং পরিষ্কার।

    যাব না আমি, নিজেকে বোঝাল অ্যান, ও ঘরে কেউ নেই। কারও অস্তিত্ব নেই। আমি স্রেফ কল্পনায় বুড়িকে দেখেছি। অ্যান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল, চিলেকোঠার দরজা আবার বন্ধ করে দিল। তারপর চলে এল নিজের ঘরে।

    অ্যান জানত না এজন্য ওকে কী দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

    .

    গভীর ঘুমের স্তর থেকে অস্বস্তি নিয়ে জেগে গেল এলিজাবেথ অ্যান, দেখল তার পায়ের কাছে বসা সান্ডারফোর্ড, আঁধারে চোখ জ্বলছে। আর তার পেছনে নীল গাউন পরা চিলেকোঠার সেই বুড়ি। তবে হাসছেন না তিনি, শ্বাপদের মতো জ্বলছে চোখ।

    তোমাকে আমি ডেকেছিলাম, বললেন তিনি কঠিন গলায়। তুমি আসনি। তুমি ভীষণ বেয়াদব। আমরা সারাটা বিকেল তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। আসনি কেন?

    মহিলার গলার স্বর ভয় পাইয়ে দিল অ্যাকে। গায়ের কথাটা চিবুক পর্যন্ত টেনে নিল। আমতা আমতা করে বলল, আপনি মানে…।

    মানে মানে করতে হবে না, হিসিয়ে উঠলেন বৃদ্ধা। যখনই ডাকব, চলে আসবে তুমি…

    ভয়ে চোখে জল এসে গেল অ্যানের। মাকে ডাকার জন্য হাঁ করল, কিন্তু গলা থেকে আওয়াজই বেরুল না।

    হঠাৎ মহিলার চেহারা বদলে গেল, মিষ্টি এবং বিমর্ষ লাগল তাঁকে। এলিসিয়া, আমার সোনা… আমি তোকে ভয় দেখাতে চাইনি রে, সোনা। তোর অভাব খুব অনুভব করছি আমি। অবশেষে তোর দেখা পেয়েছি। কথা দে, প্রতিদিন তুই আমার কাছে আসবি।

    নিজের জায়গায় ফিরে যান, ফুঁপিয়ে উঠল অ্যান, আপনার ঘরে যান, প্লিজ…

    যাব রে, মা। যাচ্ছি তো, শিরা ওঠা হাত বাড়িয়ে অ্যানের গাল ছুঁলেন তিনি আদর করে। শুধু আমাকে কথা দে, কাল আমার ওখানে আসবি। কথা বলবি এই নিঃসঙ্গ, অসহায় বুড়ির সাথে।

    আচ্ছা, ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল অ্যান।

    সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল মহিলা, আর সান্ডারফোর্ড চোখ বুজে পায়ের কাছে ঘুমিয়ে পড়ল।

    .

    পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গত রাতের কথা কিছুই মনে থাকল না অ্যানের। বাথরুমে ঢুকল মুখ হাত ধুতে। আয়নার দিকে তাকাল এবং চমকে উঠল।

    ডানদিকের গালে লালচে তিলের মতো একটা দাগ। আঙুল দিয়ে ওখানে ঘষল অ্যান। উঠল না দাগটা। হঠাৎ গত রাতের কথা মনে পড়ে গেল। মহিলা ডান গালে হাত ছুঁইয়েছিল। কিন্তু … কিন্তু ওটা তো স্বপ্ন ছিল, তাই না? আসলে মশা কামড় দিয়েছে, তাই ফর্সা গালে লালচে দাগ ফুটে আছে। নিজের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে নাস্তার টেবিলে গেল অ্যান।

    ওর মা মেয়ের গাল পরীক্ষা করে বললেন, মশা কামড়েছে। তোমার ঘরে অ্যারোসল স্প্রে করে দিচ্ছি। আর মশা ঢুকতে পারবে না।

    তবে কাল রাতের স্বপ্নটা নিয়ে সারাটা দিন বিব্রত থাকল অ্যান। ঘুমাবার সময় যত এগিয়ে এল, অস্বস্তিটা বেড়ে চলল। একবার ভাবল মাকে বলবে ঘটনাটা। উঁহু, মা শুনলে এমন ঠাট্টা শুরু করে দেবেন, রীতিমতো লজ্জায় পড়ে যাবে অ্যান। বলবেন হরর গল্প পড়ে হরর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সে। থাক্‌, মাকে বলতে হবে না।

    ঘুমাবার সময়, জীবনে এই প্রথম খাটের তলা, আলমারি ইত্যাদি দেখে নিল ও। তারপর দরজায় খিল দিল। টেনেটুনে দেখল ঠিকঠাক বন্ধ হয়েছে কিনা।

    বিছানায় উঠে পড়ল অ্যান, হাত বাড়িয়ে বাতির সুইচ অফ করল।

    আজ রাতে আমি ঘুমাব না, মনে মনে বলল অ্যান। তাই করল সে। এক ঘণ্টা আঁধারে চোখ মেলে তাকিয়ে রইল।

    তারপর ঘুমে চোখ বুজে আসছে, ঠিক তখন ঘটনাটা ঘটল। বাম পায়ে কীসের শক্ত পুঁতো খেয়ে লাফিয়ে উঠল অ্যান। ধড়মড় করে উঠে বসল।

    বিছানার কিনারায় বসে আছেন সেই বৃদ্ধা। হাসছেন। চাঁদের আলোয় ঘরের ভিতরটা বেশ পরিষ্কার। মহিলার চোখ জ্বলছে সান্ডারফোর্ডর মতো, শক্ত করে ধরে আছেন অ্যানের পায়ের গোড়ালি।

    সান্ডারফোর্ড তাঁর পাশেই, ভয়ানক লাগছে ওকে। শরীরটা ফুলে যেন দ্বিগুণ হয়েছে। হাঁ করা মুখ, ধবধবে সাদা দাঁত বের হয়ে আছে।

    অ্যান শুনল মহিলা বলছেন ফিসফিস করে…এবার আমার সময়… এলিসিয়া…তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছ…বলেছিলে আসবে… আসনি… আমাকে তাই আসতে হয়েছে…আমি তোমাকে আজ নিয়ে যাব আমার সাথে…

    ধস্তাধস্তি করল অ্যান, কিন্তু বুড়ির গায়ে কী শক্তি, অবলীলায় ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বিছানার প্রান্তে। আমি তোমাকে শিক্ষা দেব… তোমার কত বড় সাহস. . .কথা দিয়ে কথা রাখ না…

    অ্যান গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে গোঙানি ছাড়া কিছুই বেরুল না। প্রাণপণ চেষ্টা করছে বুড়ির বজ্রমুষ্ঠি থেকে পা ছুটিয়ে নেয়ার।

    আমরা এবার চলে যাব … আমরা তিনজন… সারাজীবনের জন্য… আমার এলিসিয়া…

    হাত বাড়াল অ্যান কিছু একটা আঁকড়ে ধরার জন্য। কিন্তু হাতে কিছুই বাঁধল না, ওকে বুড়ি ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে চলেছেন…

    এবার তিনি অ্যানের চুল ধরলেন মুঠো করে। ব্যথায় গায়ে আগুন ধরে গেল ওর। প্রাণপণ শক্তিতে বুড়ির বুকে দুহাত দিয়ে রাম ধাক্কা মারল অ্যান। ফুসফুস থেকে সমস্ত দম বেরিয়ে যাবার মতো হিস শব্দ শুনল ও। বন্ধন মুক্ত হয়ে গেল অ্যান।

    দ্রুত গড়ান দিয়ে মেঝেতে নামল অ্যান, আর তখন সান্ডারফোর্ড ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর, নখ বসে গেল কাঁধে। তীব্র ব্যথাটা যেন ফুসফুসে শক্তি যোগাল অ্যানের, মুখ হাঁ করল ও, গলার গভীর থেকে বেরিয়ে এল চিৎকার। সান্ডারফোর্ডকে দুহাতে ধরল ও, ছুঁড়ে ফেলে দিল মেঝেতে। ওর কব্জি চেপে ধরল শুকনো, খটখটে একটা হাত। করে ঘুরল অ্যান। ভৌতিক বুড়ি, দাঁতহীন মাড়ি বেরিয়ে পড়েছে, ভয়ানক লাগছে দেখতে। ঠিক যেন একটা ডাইনি।

    ওদিকে বন্ধ দরজায় ক্রমাগত দমাদম করাঘাত পড়ছে। অ্যানের মার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে এল, কী হয়েছে, অ্যান? দরজা বন্ধ করে রেখেছ কেন… অ্যান?

    ডাইনি বুড়ির কী শক্তি! অ্যানকে হাত মুচড়ে জানালার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অ্যান আবার চিৎকার দিল। বুড়ির গলা সাপের মতো হিসহিস করে উঠল কানের পাশে, তোকে আসতেই হবে… আজ থেকে তুই আমার এলিসিয়া… আমার …

    হ্যাঁচকা টানে অ্যান ছিটকে পড়ল জানালার ওপর, খট করে খুলে গেল জানালা। টের পেল ওকে জানালা দিয়ে টেনে বের করার চেষ্টা করছে বুড়ি। জানালার ফ্রেম ধরে ফেলল অ্যান, প্রাণপণে ঝুলে রইল…

    এমন সময় ভেঙে পড়ল বেডরুমের দরজা, জ্বলে উঠল আলো। জানালার ফ্রেম ছেড়ে দিল অ্যান, পড়ে গেল মেঝেতে। ওর বাবা-মা ছুটে গেলেন ওর দিকে।

    এরপরের ঘটনাগুলো যেন ঘোরের মধ্যে ঘটতে লাগল। কাঁদছে অ্যান, ওর মা কাঁধে সান্ডারফোর্ডের নখের আঁচড় পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, ব্যান্ডেজ করছেন, ফোঁপাতে ফোঁপাতে অ্যান বলছে, না, স্যান্ডিকে মেরো না। ওর কোনো দোষ নেই। সান্ডারফোর্ড ভয়ের চোটে আলমারির আড়ালে পালিয়েছে।

    অনেক সময় লাগল অ্যানের ধাতস্থ হতে। তারপর বলল, সবকিছুর নষ্টের গোড়া চিলেকোঠার রকিং চেয়ারটা…ওটা পুড়িয়ে ফেল… তারপর সে বাবা-মাকে সমস্ত ঘটনা বলল।

    বাবা চিলেকোঠা থেকে আরাম কেদারাটা নিয়ে এলেন। কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলেন। দাউ দাউ জ্বলে উঠল আগুন। সে দৃশ্য অ্যান দেখল স্থির চোখে, তার পায়ের নিচে বসে থাকল সান্ডারফোর্ড।

    সে-ও দেখল শতাব্দী প্রাচীন আরাম কেদারাটাকে গ্রাস করছে আগুনের লেলিহান শিখা, পুড়ে যাচ্ছে ওটা।

    –লুইজি ফ্রাঙ্কি

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅশুভ ছায়া – অনীশ দাস অপু
    Next Article ভূত প্রেত রক্তচোষা – অনীশ দাস অপু

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.