Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

    জগদানন্দ রায় এক পাতা গল্প239 Mins Read0

    ১. এক-কোষ প্রাণী – খড়িমাটির পোকা

    প্রথম শাখা
    এক-কোষ প্রাণী

    আমরা আগেই বলিয়াছি, জীব-মাত্রেরই শরীর কোষ দিয়া প্রস্তুত। একটি ছোটো গাছের বা পিঁপড়ার মত একটি ছোটো প্রাণীর শরীরে কোটি কোটি কোষ থাকে। এই সকল কোষের প্রত্যেকটি পুষ্ট হইয়া আপনা হইতেই ভাঙিয়া দুইটি কোষের উৎপত্তি করে। ক্রমে সেই দুইটি হইতে চারিটি এবং চারিটি হইতে আটটি ইত্যাদি করিয়া অসংখ্য নূতন কোষের সৃষ্টি হয় এবং ইহাতে পিঁপড়াটি পূর্ণাকার পায়। কিন্তু তোমরা যদি কোনো জন্তুর শরীর হইতে একটি কোষ পৃথক্ করিয়া পরীক্ষা কর, তাহা ঐ রকমে ভাঙিয়া চুরিয়া নূতন কোষ প্রস্তুত করিবে না; শরীর হইতে তফাৎ করিলেই কোষ সাধারণতঃ মরিয়া যায়।

    আমরা যে প্রাণীদের কথা বলিব তাহারা এক একটা কোষ লইয়াই জন্মে এবং শেষ পর্য্যন্ত তাহাদের দেহে একটার বেশি কোষ থাকে না। ইহারাই সৃষ্টির সকল জীবজন্তুর আগেকার প্রাণী। ইহাকে ইংরাজিতে আমিবা (Amœba) বলে। বাংলায় ইহাদের নাম নাই, আমরা উহাদিগকে এক-কোষ প্রাণী বলিব।

    এক-কোষ প্রাণী ভাঙায় থাকে না; জলেই ইহাদের বাস। পুকুরের শেওলার গায়ে এক রকম আঠালো জিনিস লাগিয়া থাকে, ইহা বোধ হয় তোমরা দেখিয়াছ। এই আাঠালো জিনিসের মধ্যেই উহারা বাস করে। তা’ছাড়া নর্দ্দমা ও চৌবাচ্চার জলেও উহাদের সন্ধান পাওয়া যায়। তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, আজ-ই চৌবাচ্চার ভিতরকার শেওলায় এক-কোষ প্রাণীদের খোঁজ করিবে এবং তাহাদিগকে পিঁপড়ের মত বা উকুনের মত বেড়াইতে দেখিবে। কিন্তু ইহারা সে রকমের প্রাণী নয়। ইহাদের মুখ, চোখ, কান, মাথা, পা কিছুই নাই; তার উপরে আবার আকারে এত ছোট যে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া একেবারে দেখাই যায় না। অণুবীক্ষণে ইহাদিগকে বেশ পরিষ্কার বাব্‌লার আঠার মত দেখায়, কেবল তাহারি মাঝে এক একটা গাঢ় জমাট রকমের অংশ নজরে পড়ে। বলা বাহুল্য উহা আঠা নয়; পাখীর ডিমের ভিতরকার সাদা অংশটায় যে সকল জিনিস থাকে, ইহা তাহা দিয়াই প্রস্তুত। প্রথমে দেখিলে এক-কোষ প্রাণীকে জীবিত বস্তু বলিয়া মনেই হয় না; অনেকক্ষণ পরে যখন তাহারা নড়িয়া চড়িয়া বেড়ায়, তখনি তাহাদিগকে প্রাণী বলিয়া বুঝা যায়। তোমরা যদি বাড়ীতে বাসিয়া এক-কোষ প্রাণী দেখিতে চাও তবে ছোটখাটো অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া দেখিয়ো।

    এক-কোষ প্রাণীদের নড়াচড়া বড় মজার ব্যাপার। আমরা চলিতে গেলে, পা দিয়া চলি; সাপ ও কেঁচো বুকে হাঁটিয়া চলে। এক-কোষ প্রাণীদের পা, বুক, মাথা, পেট কিছুই নাই। জলের মধ্যে চলিতে গেলে, ইহারা শরীর হইতে আঙুলের মত কতকগুলি লম্বা অংশ বাহির করে এবং সমস্ত শরীরটাকে অতি ধীরে ধীরে সেই দিকে টানিয়া লইয়া যায়। যখন ইহাদের শরীর হইতে আঙুল বাহির হয়, তখনি আন্দাজ করা যায় যে, ইহারা চলিতে আরম্ভ করিবে। চলিবার সময়ে তোমার শরীর হইতে যদি দুখানা পা বাহির হয়, এবং স্থির হইয়া বসিবার সময়ে পা দুখানি শরীরের সঙ্গে মিশিয়া যায়, ইহা যেমন আশ্চর্য্য, চলিবার পূর্ব্বে এক-কোষ প্রাণীদের দেহ হইতে আঙুল গজাইয়া উঠাও ঠিক্ সেই রকম আশ্চর্য্য।

    এখানে এক-কোষ প্রাণীর একটি ছবি দিলাম। ইহার প্রকৃত আকার অপেক্ষা ছবির আাকার অনেক হাজার গুণ বড়। দেখ ইহা কেমন লম্বা লম্বা আঙুল বাহির করিয়াছে।

    এক-কোষ প্রাণীরা জড়ের মত বস্তু হইলেও তাহারা প্রাণী। প্রাণীরা আহার করিয়া সবল ও পুষ্ট হয়, এবং তার পরে সন্তান উৎপন্ন করিয়া মরিয়া যায়। এই কথা তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি। কাজেই এক-কোষ প্রাণীদেরও আহার করিতে হয় ও সন্তান উৎপন্ন করিতে হয়।

    তোমরা বোধ হয় ভাবিতেছ, যাহাদের মুখ নাই, গলা নাই, পেট নাই, তাহারা কি রকমে খাইবে। কিন্তু তাহাদের সত্যই ক্ষুধা পায় এবং তাহারা খাবার খায়। তাহাদের আহার বড় অদ্ভুত ব্যাপার। তোমাকে যদি রসগোল্লা বোঝাই একটা বড় টবের মধ্যে গলা পর্য্যন্ত ডুবাইয়া রাখা যায়, তাহা হইলে তোমার পেট ভরে কি? নিশ্চয়ই পেট ভরে না; কারণ লোকে গা দিয়া খায় না; মুখ দিয়াই খায়। কিন্তু এক কোষ প্রাণীরা সত্যই সর্ব্বাঙ্গ দিয়া খায়। আশ্চর্য্য নয় কি?

    এখানে একটা ছবি দিলাম। দেখ,—এক-কোষ প্রাণী সর্ব্ব শরীর দিয়া গাছের বীজের মত একটা খাদ্য জিনিসকে জড়াইয়া ধরিয়াছে। এই রকমে ধরিয়া ইহারা খাদ্যের সমস্ত সার ভাগ শরীর দিয়া চুষিয়া খায় এবং আমরা আম খাইতে গেলে যেমন আঁটিটাকে ফেলিয়া দিই, সেই রকমেই খাদ্যের অসার ভাগটাকে ইহারা শরীর হইতে বাহির করিয়া ফেলে। ছবির দ্বিতীয় অংশ দেখিলে বুঝিবে, এক-কোষ প্রাণীটি খাদ্যের অসার অংশ পিছনে ফেলিয়া দূরে সরিয়া আসিয়াছে।

    এই প্রাণীর দল কত ছোট তাহা তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি। ইহাদের চেয়ে ছোট যে-সকল উদ্ভিদ্ জলে জন্মে, তাহা খাইয়াই ইহারা বাঁচে। মানুষ মানুষকে খুন করে, ইহা আমরা জানি। লড়ায়ের সময়ে মানুষ যে কত মানুষকে মারিয়াছে, তাহার হিসাব হয় না। কিন্তু একজন মানুষের পেট ক্ষুধায় জ্বলিয়া উঠিলে, সে আর একটা মানুষকে ধরিয়া কামড়াইয়া খাইতেছে,—এ রকম কথা আমরা প্রায়ই শুনিতে পাই না। কিন্তু এক-কোষ প্রাণীরা কাছে খাবার না পাইলে তাহাদের জাত-ভাইদের ধরিয়া খাইয়া ফেলে। এই রকমে পরস্পর খাওয়া-খায়ি করিবার জন্য তাহাদের মধ্যে প্রায়ই লড়াই বাধে। গুগ্‌লি এবং শামুক বড় প্রাণী। ক্ষুধা পাইলে এক-কোষ প্রাণীরা এই সকল বড় বড় প্রাণীদিগকেও ছাড়ে না,—ইহাদের গায়ে লাগিয়া শরীরের রস চুষিতে আরম্ভ করে।

    বাতাস না পাইলে কোনো প্রাণীই বাঁচে না। বাতাসে কি কি জিনিস আছে, তোমরা জান কি? ইহাতে নাইট্রোজেন্ নামে এক রকম বাষ্প আছে, এবং অক্সিজেন্ নামে আরো একটা বাষ্প আছে। মোটামুটি এই দুইটা জিনিস লইয়াই বায়ু প্রস্তুত। নাইট্রোজেনের কোনো রকম রঙ্ নাই, অক্সিজেনেরও কোনো রঙ্ নাই। যদি রঙ্ থাকিত, তাহা হইলে আমরা যেমন কুয়াসার আসা-যাওয়া চোখে দেখিতে পাই, বাতাসেরও আসা-যাওয়া চোখেই দেখিতে পাইতাম। যাহা হউক, বাতাসে যে নাইট্রোজেন্ বাষ্প আছে, তাহা প্রাণীর জীবন-রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষ কোনো কাজে লাগে না—বাতাসের অক্সিজেন্‌টাই প্রাণীর শরীরের জন্য সর্ব্বদা দরকার। এই-জন্যই বাতাস না পাইলে প্রাণীরা বাঁচে না। আমরা কি রকমে বাতাসের অক্সিজেন্ শরীরের ভিতরে লই,—তোমরা জান না কি? আমরা নাক মুখ দিয়া বাতাস টানিয়া, তাহা শরীরের ভিতরকার ফুস্‌ফুসে লইয়া যাই, সেখানে বাতাসের অক্সিজেন্ শরীরের রক্তের সঙ্গে মিশিয়া যায়। ইহাতে রক্ত পরিষ্কার হয়, শরীরে বল হয়, জীবনের কাজ নির্ব্বিঘ্নে চলে এবং আরো কত কি হয়। নাক-মুখ দিয়া বাতাস লওয়া বন্ধ করিলে, ঐ-সকল কাজও বন্ধ হইয়া যায়, তখন মানুষ মারা যায়। তোমরা ইতিহাসে অন্ধকূপ হত্যার কথা নিশ্চয়ই পড়িয়াছ। একটা খুব ছোট ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করিয়া সেখানে অনেক লোককে কয়েদ করা হইয়াছিল,—এক রাত্রিতেই কয়েদিদের অনেকেই মরিয়া গিয়াছিল। বাতাস না পাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়াছিল।

    তোমরা বোধ হয় ভাবিতেছ, বাতাস যদি প্রাণীদের এত দরকার, তবে জলের মাছ ও গুগ্‌লিরা বাতাস না টানিয়া কি রকমে বাঁচে? এই প্রশ্নের উত্তর অতি সহজ। বাতাস যে, কেবল মাটির উপরে ও আকাশেই আছে, তাহা নয়। জলও অনেক বাতাস শুষিয়া রাখিতে পারে; এই জন্য নদী, সমুদ্র ও খালবিলের জলের সঙ্গে অনেক বাতাস মিশানো থাকে। মাছ ও অন্য জলচর প্রাণীরা জলে মিশানো বাতাসের অক্সিজেন্ বাষ্প টানিয়া লইয়া বাঁচিয়া থাকে। এক-কোষ প্রাণীদেরও বাঁচিয়া থাকার জন্য অক্সিজেনের দরকার। ইহারাও ঠিক্ মাছের মত করিয়া জলে মিশানো বাতাস হইতে অক্সিজেন্ টানিয়া লয়। কিন্তু অক্সিজেন্ টানিয়া লইবার জন্য যেমন মানুষ ও বড় বড় স্থলচর প্রাণীদের শরীরে ফুস্‌ফুস্ আছে এবং জলচর প্রাণীদের “কানকো” আছে, এক-কোষ প্রাণীদের শরীরে সে-রকম কিছুই নাই। ইহাদের যেমন নাক কান মুখ পেট কোনো অঙ্গই নাই, সেই রকম নিশ্বাস লইবারও যন্ত্র নাই। ইহারা সকল শরীর দিয়া জলের বাতাসের অক্সিজেন্ টানিয়া বাঁচিয়া থাকে। এই অক্সিজেনই তাহাদের খাদ্য পরিপাক করে এবং শরীর পুষ্ট করে। এক-কোষ প্রাণীদের দেহে এক বিন্দু রক্ত দেখিতে পাওয়া যায় না, কাজেই হৃদ্‌পিণ্ডের দরকার হয় না।

    প্রাণীদের মধ্যে কেহ স্ত্রী, কেহ পুরুষ হইয়া জন্মে। কিন্তু এক-কোষ প্রাণীদের স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নাই। ইহাদের সকলি অদ্ভুত। যে রকমে ইহাদের সন্তান জন্মে, তাহা আরো অদ্ভুত। ভালো করিয়া খাওয়া-দাওয়া করার পরে শরীর মোটা ও পুষ্ট হইলেই, এই প্রাণী নিজের দেহটিকে দুই ভাগে ভাগ করিয়া ফেলে। এই রকমে একটি প্রাণী দুইটি হইয়া দাঁড়ায় এবং পরে আবার এই দুইটি প্রাণীই শরীর ভাঙিয়া ভাঙিয়া আরো নূতন প্রাণীর সৃষ্টি করিতে থাকে। এক-কোষ প্রাণীর সেই আঠার মত দেহটিকে নাড়িয়া চাড়িয়া তোমরা যদি তাহার কোষ-সামগ্রীকে খণ্ড খণ্ড করিয়া দাও, তবে দেহের প্রত্যেক খণ্ড হইতে এক-একটা নূতন প্রাণীর সৃষ্টি হইবে। তোমরা দ্বিতীয় চিত্রটিকে আর একবার দেখ। একটি আমিবা কি প্রকারে নিজের দেহ বিভক্ত করিয়া দুইটি হইয়াছে, চিত্র দেখিলে তাহা বুঝিবে। ইহারা যেন রক্তবীজের ঝাড়,—মৃত্যু নাই। কিন্তু মাছ বা অন্য ছোট জলচর প্রাণীদের কাছে ইহাদের হার মানিতে হয়। মাছেরা কাছে পাইলেই এক-কোষ প্রাণীদিগকে গিলিয়া ফেলে,—তখন তাহাদের আর রক্ষা থাকে না।

    যাহাই হউক, এক-কোষ প্রাণীদের জীবনের কাজ এবং তাহাদের সন্তান-উৎপাদন সকলি অদ্ভুত।

    খড়িমাটির পোকা

    যে-সব প্রাণীর শত্রু বেশি, তাহারা ক্রমে নিজের শরীর বদলাইয়া শত্রুকে ফাঁকি দেয়। সজারু শরীরকে বড় বড় কাঁটা দিয়া ঢাকিয়া রাখে। কোনো শত্রু যদি তাহাকে ধরিতে আসে, তবে গায়ের কাঁটা দেখিয়া কাছে ঘেঁষিতে পারে না। শত্রু আসিতেছে জানিলেই, শামুক তাহার সমস্ত শরীর পিঠের উপরকার সেই শক্ত খোলের ভিতরে টানিয়া লয়। ইহাতে শত্রুর মুখে ছাই পড়ে। এ সম্বন্ধে আগেই তোমাদের কিছু বলিয়াছি।

    এক-কোষ প্রাণীদের শত্রু অনেক। নিজেরা কাম্‌ড়াকাম্‌ড়ি করিয়া মরে, তার পরে জলের অন্য জন্তুরা কাছে পাইলেই তাহাদিগকে গিলিয়া ফেলে। শত্রুর হাত হইতে বাঁচিবার জন্য এক-কোষীদের মধ্যে কয়েক জাতি এক মজার ফন্দি আঁটিয়াছে। এখানে সেই চালাক এক-কোষ প্রাণীর কতকগুলি ছবি দিলাম।

    ছবিগুলি দেখিলে মনে হইবে, যেন কেহ অনেক কারুগিরি করিয়া এইগুলি আঁকিয়াছে। কিন্তু তাহা নয়—শামুক বা গুগ্‌লির যেমন খোলা থাকে, ঐগুলি সেই রকমের জিনিস এবং আপনা হইতেই উহা এক-কোষীদের গায়ে জন্মে। এই প্রাণীরা কত ছোট তাহা তোমরা আগেই শুনিয়াছ; ইহারা হাজারে হাজারে একত্র না হইলে এক ইঞ্চির মতও ছোট জায়গা জুড়িতে পারে না। খালি চোখে ইহাদিগকে দেখাই দায়। তাই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে ফেলিয়া তাহাদিগকে দেখিলে যে-রকম দেখায় ছবিতে তাহাই আঁকিয়া দিলাম। দেখ,—ইহাদের গায়ে কত রকম খোলা।

    খোলা-ওয়ালা এই সকল প্রাণী সমুদ্রে থাকে, কাজেই তোমাদের পুকুরের জলে খালে বা নদীতে ইহাদের সন্ধান পাইবে না। সমুদ্রের জলে যে চূণ মিশানো থাকে, তাহা টানিয়া লইয়া উহারা গায়ের খোলা প্রস্তুত করে। ইহাদেরি এক জ্ঞাতি-ভাইকে তোমরা চেষ্টা করিলে দেখিতে পাইবে। পরিষ্কার কাচের গ্লাসে জল রাখিয়া তাহাতে কতকগুলা লতাপাতা কয়েক দিনের জন্য রাখিয়া দিয়ো। সেগুলি যখন একটু পচিতে আরম্ভ করিবে, তখন গ্লাসের পরিষ্কার জল লাল্‌চে হইয়া পড়িবে এবং উপরে একটা পাত্‌লা সর পড়িবে। এই জল যদি তোমরা অণুবীক্ষণ দিয়া দেখিতে সুবিধা পাও, তবে খোলা-ওয়ালা এক-কোষ প্রাণীদের জ্ঞাতি-ভাইদের দেখিতে পাইবে। তখন এক বিন্দু জলে হাজার হাজার এই প্রাণী ঘুরিয়া বেড়াইতেছে দেখিবে। ইহাদের প্রত্যেকের দেহে শুঁয়ো লাগানো থাকে; সেই শুঁয়ো নাড়িতে নাড়িতে তাহারা আনন্দে ঘুরিয়া বেড়ায়। পূর্ব্বে যে আমিবা অর্থাৎ এক-কোষ প্রাণীর কথা বলিয়াছি, তাহারা ইচ্ছা করিলে শরীর হইতে আঙুলের মত শুঁয়ো বাহির করিতে পারে; কিন্তু ইহাদের শুঁয়ো স্থায়িভাবে গায়ে আঁটা থাকে। কাচের বোতলে শুক্‌নো খড় বা পাতা রাখিয়া তাহাতে খানিকটা গরম জল ঢালিয়া রাখিলে, কয়েক দিন পরে জলে এই রকম শুঁয়োওয়ালা এক-কোষ প্রাণী অনেক দেখা যায়। কিন্তু ইহাদের গায়ের উপরে কখনই খোলা হয় না,— খোলা কেবল সমুদ্রের এক-কোষীদের গায়ের উপরে দেখা যায়।

    তোমরা ছবিতে যে খোলা-ওয়ালা এক-কোষ প্রাণী দেখিলে, তাহার প্রত্যেকটি এক-একটি প্রাণী, ইহাই বোধ হয় মনে করিতেছ। কিন্তু তাহা নয়; একটা খোলাতে একটা প্রাণী থাকে না। প্রথমে একটি প্রাণী সমুদ্র-জল হইতে চূণ টানিয়া লইয়া খোলা গড়িতে আরম্ভ করে; কিন্তু সেটি যখন বড় হইয়া নিজের শরীর ভাঙিয়া দুইটি প্রাণী হইয়া দাঁড়ায়, তখন একটি খোলায় দুইটির স্থান হইতে পারে না। এই অবস্থায় খোলার উপরকার ছোট ছিদ্র দিয়া সেই নূতন প্রাণীটি বাহির হইয়া পড়ে এবং পুরাণো খোলার গায়ে নিজের জন্য নূতন খোলা প্রস্তুত করে। এই রকমে একই প্রাণীর পুত্রপৌত্রাদি মিলিয়া, প্রথম খোলার চারিদিকে থাকে-থাকে অনেক ছোট কুঠারি গড়িয়া বাস করে। সুতরাং, তোমরা ছবিতে যে-সব থোলা দেখিতেছ, তাহার প্রত্যেকটি হাজার হাজার এক-কোষ প্রাণীর ঘর।

    এই সকল ছোট প্রাণীরা সমুদ্রের তলায় কাদার মধ্যে বা শেওলার গায়ে জন্মিয়া কিছু দিন বাঁচিয়া থাকে এবং তাহার পর মরিয়া যায়। ইহাদের জন্মমৃত্যুর সঙ্গে মানুষের কোনো সম্বন্ধ নাই, হঠাৎ এই কথাই মনে হয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহা নয়। মানুষ ইহাদের দ্বারা যে উপকার পায়, তাহার কথা শুনিলে তোমরা অবাক্ হইয়া যাইবে। তোমরা চূণের পাথর দেখিয়াছ কি? পাহাড়ে এই পাথর অনেক পাওয়া যায়। আমাদের দেশের আসাম অঞ্চলে চূণের পাথর অনেক আছে। ইহা খুব ভালো করিয়া আগুনে পোড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিলে সুন্দর চূণ হয়। এই পাথুরে-চূণ আমরা পাণের সঙ্গে খাই এবং তাহা দিয়া ঘর-বাড়ী প্রস্তুত করি। এই চূণের পাথর জিনিসটা কি, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। বৈজ্ঞানিকেরা পরীক্ষা করিয়াছেন, ইহা এক-কোষ প্রাণীদেরই গায়ের জমাট খোলা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সেগুলি লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরিয়া সমুদ্রের তলে জমা হইয়া চূণের পাথরের সৃষ্টি করিয়াছে। হিমালয় ও আল্‌প্‌স্ পর্ব্বত খুব উঁচু, তাহা বোধ হয় তোমরা শুনিয়াছ। এই সকল পর্ব্বত এককালে সমুদ্রের তলে ছিল, ক্রমে জল ছাড়িয়া এখন সেগুলি এত উঁচু হইয়াছে। আল্‌প্‌স্ পর্বতের মাথাতেও চূণের পাথর পাওয়া যায়। ভাবিয়া দেখ, কতকাল ধরিয়া এক-কোষ প্রাণীরা সমুদ্রের তলায় বাস করিয়া আসিতেছে! তার পর ভাবিয়া দেখ, যাহাদের গায়ের খোলায় চূণের পাথরের হাজার হাজার পাহাড় হইয়াছে, তাহাদের সংখ্যাই বা কত! কেবল ইহাই নয়। যে খড়িমাটি দিয়া তোমরা বোর্ডে অঙ্ক লেখ এবং দাঁত মাজো, তাহাও এক-কোষ প্রাণীদের গায়ের খোলা দিয়া প্রস্তুত; তাহাতে মাটির নাম-গন্ধ নাই। খড়িমাটিরও পাহাড় আছে,—শত শত মাইল জুড়িয়া প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাহাড়। সুতরাং বলিতে হয়, খড়িমাটির পাহাড়ও এককালে সমুদ্রের তলায় ছিল, এখন জল হইতে গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়াছে।

    নানা রকম এক-কোষ প্রাণীর মধ্যে আমরা তোমাদিগকে কেবল কয়েকটির সামান্য পরিচয় দিলাম। ইহা ছাড়া আরো যে সকল এক-কোষ প্রাণী আছে, তাহাদের নানা রকম কাজ দেখা যায়। তোমরা বোধ হয় শুনিয়াছ, সমুদ্রের স্থির জলে রাত্রিতে অনেক মাইল জুড়িয়া এক রকম আলো দেখা যায়। নানা লোকে ইহার নানা নাম দেয়। কেহ কেহ ইহাকে বাড়বানল বলেন। এক রকম এক-কোষ প্রাণী এই আলো উৎপন্ন করে। জোনাকি পোকার শরীর হইতে যেমন আলো বাহির হয়, ইহাদের শরীর হইতে সেই রকম আলো বাহির হয়; ইহাই সমুদ্রের জল আলো করিয়া রাখে। যে-সকল ছোট প্রাণী শত শত মাইল জুড়িয়া সমুদ্রের জল আলোকিত করে, তাহাদের সংখ্যা কত ভাবিয়া দেখ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল – চিত্রা দেব
    Next Article অসাধু সিদ্ধার্থ – জগদীশ গুপ্ত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }