Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

    জগদানন্দ রায় এক পাতা গল্প239 Mins Read0

    ৬.১.১ কঠিনবর্ম্মী : চিংড়িমাছ

    কঠিনবর্ম্মী : চিংড়িমাছ

    চিংড়িকে আমরা মাছ বলি, কিন্তু সত্য কথা বলিতে গেলে ইহাকে জালের পোকা বলিতে হয়। ইহা প্রজাপতি মাকড়সা কেন্নো বা বিছেরই জাত-ভাই। আমরা যখন বেশ মজা করিয়া চিংড়ি মাছ খাই, তখন জলের পোকা খাইতেছি ইহা মনেই হয় না। কিন্তু চিংড়ি-মাছ খাঁটি পোকা।

    এখানে একটা চিংড়ি মাছ এবং একটা বিছের ছবি দিলাম। দেখ,—দেহে কত মিল। ইহাদের প্রত্যেকেরই শরীর আংটির মত অনেকগুলি ভাঙা ভাঙা অংশ দিয়া প্রস্তুত। আবার প্রত্যেক গাঁটের গোড়া হইতে জোড়া জোড়া পা বাহির হইয়াছে। বিছেরা এই সব পা দিয়া চলিয়া বেড়ায়। চিংড়ি মাছেরা তাহার কতকগুলি পা দিয়া খাবার ধরিয়া খায় এবং আর কতকগুলি দিয়া জলে সাঁতার কাটে। দুইয়েরই মুখে লম্বা লম্বা শুঁয়ো আছে।

    আমরা এখানে কেবল দুই-একটি মিলের কথা বলিলাম। তোমরা খোঁজ করিলে ইহা ছাড়া আরো অনেক মিল নিজেরাই দেখিতে পাইবে। কেবল বিছের সঙ্গেই যে চিংড়ি মাছের দেহের মিল তাহা নয়। তোমরা শুঁয়োপোকা প্রজাপতি মাকড়সা ইত্যাদি অনেক পোকা-মাকড়ের সঙ্গেই ইহাদের মিল ধরিতে পারিবে। এই সকল দেখিয়া শুনিয়াও যদি তোমরা চিংড়ি মাছকে পোকা না ভাবিয়া মাছই মনে করিতে থাক, তবে ভুল করিবে।

    চিংড়ি অনেক রকম দেখা যায়। আমাদের দেশে খাল, বিল বা পুকুরের ধারে কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিলে তোমার জলের ভিতরে এক রকম ছোট চিংড়িকে ছুটিয়া চলিতে দেখিবে। ইহাদের গায়ে যে-শক্ত আবরণ থাকে, তাহা কাচের মত স্বচ্ছ। এইজন্য আবরণের ভিতর দিয়া শরীরের অনেক অংশ স্পষ্ট দেখা যায়। এই চিংড়িকে অনেকে ঘুসো চিংড়ি বলে। পুকুরের কাদায় যে-সকল ছোট চিংড়ি দেখা যায়, তাহাদের ছট্‌কা চিংড়ি বলে। ইহাদের গায়ের রঙ্ কালো। গল্‌দা চিংড়ি তোমরা সকলেই দেখিয়াছ। এগুলি লম্বায় কখনো কখনো আধ হাতের উপরেও দেখা যায়। গায়ের রঙ্ সাদা ও কতকটা কালো বা নীলে মিশানো। ইহা ছাড়া চারি পাঁচ আঙুল লম্বা ও সাদা চিংড়ি আমাদের জলাশয়ে পাওয়া যায়। এগুলিকে রস্‌না চিংড়ি বলে।

    সমুদ্রের জলেও চিংড়ির অভাব নাই। সেখানে নানা আকারের চিংড়ি দেখা যায়। আবার শীতের দেশে যে-রকম আকৃতির চিংড়ি পাওয়া যায়, গ্রীষ্মের দেশে সে-রকম খুঁজিয়া মিলে না। চিংড়িদের আকৃতি এই রকম বিচিত্র হইলেও, শরীরের মোটামুটি গড়ন ও জীবনের কাজ সকল চিংড়িরই এক।

    যদি ইহাদের চলাফেরা সাঁতার-কাটা পরীক্ষা করিতে ইচ্ছা কর, তবে একটি কাচের পাত্রে জল ভরিয়া তাহাতে একটি ছোট জীবন্ত চিংড়ি মাছ ছাড়িয়া দিয়ো। এই রকম পাত্রে আবদ্ধ থাকিয়া সেটি যখন চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইবে, তখন তাহার জীবনের অনেক কাজ তোমরা স্বচক্ষেই দেখিতে পাইবে।

    চিংড়ির যে ছবি দেওয়া হইয়াছে, তাহা একবার এখন ভালো করিয়া দেখ; ইহার দশ জোড়া পা আছে, কিন্তু মুখের দিকে ইহার পা পাঁচ জোড়া মাত্র। কিন্তু এই সকল পা দিয়া তাহারা হাঁটে না এবং সব পায়ে নখ থাকে না, বা সেগুলিতে আঙুলের মত কোনো অংশ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। প্রথম বা দ্বিতীয় পা দুটাই মোটা হয় এবং প্রত্যেকের শেষে কামারের দোকানের সাঁড়াশির মত দু’টো অংশ জোড়া থাকে। এই সাঁড়াশি-লাগানো পা-দুখানিকে চিংড়ির দাড়া বলে। দাড়া দিয়া ধরিয়া ইহারা খাদ্য মুখে তুলিয়া দেয়,—ইহা আমাদের হাতের মত কাজ করে। দেহের পিছনে গাঁটে গাঁটে যে আরো পাঁচ জোড়া পায়ের মত অংশ আছে, তাহা সাঁতার কাটিবার জন্য। এইগুলি দিয়া চিংড়িরা জল কাটিয়া সাঁতার দেয়। দেহের শেষে চিংড়ির যে পাখার মত লেজ থাকে, তাহা তোমরা অবশ্যই দেখিয়াছ। কতকগুলি শক্ত খোলা একত্র হইয়া এই লেজের সৃষ্টি করিয়াছে। চিংড়িরা জলের মধ্যে সোজা সাঁতার দিতে দিতে এক এক সময়ে হঠাৎ পিছু-সাঁতার দেয়। সমস্ত দেহটাকে না ঘুরাইয়া ইহারা ঐ লেজের সাহায্যেই পিছু-সাঁতার দিতে পারে।

    চিংড়ি ভাজা তোমরা নিশ্চয়ই খাইয়াছ, আমরাও খাইয়াছি। ইহাদের গায়ের উপরে খোলা কি রকমে সাজানো থাকে, তোমরা দেখ নাই কি? এবার বাজার হইতে চিংড়ি মাছ আসিলে নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়ো। পরীক্ষা করিলে দেখিবে, ইহাদের মাথাটা একখানা বড় খোলা দিয়া ঢাকা আছে। এই খোলার গায়েই করাতের মত একটা অংশ খাড়া হইয়া দাঁড়াইয়া থাকে। ইহা চিংড়িদের খড়্গ। শত্রু আসিয়া আক্রমণ করিলে আমরা বন্দুক বাহির করি ও তলোয়ার হাতে লইয়া শত্রুকে তাড়া করি। চিংড়ি মাছদের ঘরবাড়ি নাই, তলোয়ার বন্দুকও নাই; আছে কেবল মাথার উপরে করাতের মত খাঁড়া। শত্রুরা উৎপাত আরম্ভ করিলেই, তাহারা ঐ খাঁড়া দিয়া শত্রুকে তাড়াইয়া দেয়। ইহা তাহাদের আত্মরক্ষার অস্ত্র।

    চিংড়িদের মাথা ভয়ানক জটিল যন্ত্র। ইহাতে অনেক ছোট-খাটো অংশ জোড়া থাকে; এইজন্যই সকল অঙ্গের চেয়ে মাথাটাই জটিল হইয়া পড়িয়াছে। চিংড়ির মাথায় পায়ের মতো ছয় জোড়া অবয়ব লাগানো দেখা যায়। আমরা আগেই বলিয়াছি, পোকা-মাকড়দের দেহে যত গাঁট থাকে, প্রায়ই তাহার প্রত্যেকটি হইতে জোড়া জোড়া পা বা ডানা প্রভৃতি নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাহির হয়। সুতরাং মাথায় যে ছয় জোড়া পায়ের মত অংশ আছে, তাহা দেখিলে বুঝা যায়, চিংড়িদের মাথা ছয়টা গাঁটে প্রস্তুত। প্রকৃত ব্যাপার তাহাই বটে, কিন্তু চিংড়ির দেহ পরীক্ষা করিলে তাহার মাথার ঐ রকম ছয়টা গাঁট দেখিতে পাইবে না। এই ছয়টা গাঁট জোট বাঁধিয়া এক হইয়া গিয়াছে। কোনো এক সময়ে যে এই ছয়টা গাঁট পৃথক্ ছিল, তাহা মাথার ছয় জোড়া পায়ের মত অংশ দেখিলেই আন্দাজ করা যায়।

    যাহা হউক, এখন চিংড়ির মুখটি কি রকম তাহা দেখা যাউক। মাথার পূর্ব্বের ছয় জোড়া অঙ্গ ছাড়া ইহাদের দাড়ার কাছ হইতে আরো তিন জোড়া অঙ্গ বাহির হয়। এগুলি দেখিতে কতকটা আঙুলের মত; কেবল শেষের দুই জোড়ায় শুঁয়োর মত অংশ জোড়া থাকে। দাড়া দিয়া ধরিয়া চিংড়িরা যে খাদ্য মুখের গোড়ায় আনে, তাহারা ঐ শেষের তিন জোড়া বিশেষ অঙ্গ দিয়া তাহাই মুখে পূরিয়া দেয়।

    মুখে খাবার পূরিলেই খাওয়া শেষ হয় না। যাহাতে খাদ্য মুখ হইতে পড়িয়া না যায়, তাহার জন্য উপর ও নীচের ওষ্ঠ চালনা করিতে হয়। তাহার পরে সহজে হজম করার জন্য খাদ্য চিবাইয়া পেটে পূরিতে হয়। চিংড়িদের মুখে যে শেষ তিন জোড়া অঙ্গের কথা বলিলাম, তাহা দিয়াই এই সকল কাজ চলে। দুই জোড়া দিয়া তাহারা খাদ্য আটকাইয়া রাখে এবং আর এক জোড়ায় তাহা চিবায়। এই তিন জোড়াতে কতকটা আমাদের মুখের চোয়ালের মত কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু খাদ্য চিবাইবার জন্য দাঁত কেবল এক জোড়াতেই থাকে।

    বড় চিংড়ি মাছের মাথা-ভাজা তোমরা খাইয়াছ কি? খাইবার সময় তোমরা হয় ত ইহাদের চোয়াল ও দাঁত দেখিয়া থাকিবে। দাঁত হাড়ের মত শক্ত, অথচ বেশ ধারালো। আমরা কোনো জিনিস ছিঁড়িয়া খাইবার সময়ে, চোয়াল উপর নীচে নাড়াচাড়া করি, ইহাতে খাদ্য খণ্ড খণ্ড ভাগ হইয়া যায় কিন্তু চিবানো হয় না। চিবাইতে হইলে চোয়ালকে পাশাপাশি চালাইতে হয়; ইহাতে খাবার পিষিয়া যায়। গোরু যখন “জাওর কাটায়,” তখন তাহারা চোয়াল পাশা-পাশি চালায়। চিংড়ি মাছেরা চোয়াল এই রকম কেবল পাশা-পাশিই চলাইতে পারে। ইহাতে খুব শক্ত খাদ্যও দাঁতের ধারে পিষিয়া কাদার মত হইয়া যায়।

    চিংড়ির চোখ, কান ও নাক

    চিংড়ির আকৃতি ও মুখের গড়নের কথা তোমরা শুনিলে,—এখন ইহাদের চোখ কান নাক ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের কথা বলিব।

    চিংড়ির মাথায় যে শুঁয়ো লাগানো থাকে, তাহা তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। শুঁয়ো দুই জোড়া থাকে। এক জোড়া খুব লম্বা। চিংড়িরা যখন জলের ভিতরে চলিয়া বেড়ায়, তখন এই শুঁয়ো দুইটি পিঠের উপরে পড়িয়া থাকে; ইহা তখন প্রায় লেজ পর্য্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু এই দুইটি ছাড়া চিংড়ির মাথায় আরো দু’টা শুঁয়ো দেখা যায়। এগুলি প্রথম শুঁয়োর চেয়ে অনেক ছোট। গাছের গুঁড়ি হইতে যেমন ছোট ডাল বাহির হয়, এই দুইটি শুঁয়োর প্রত্যেকটি হইতে সেই রকম তিনটি শুঁয়ো বাহির হইতে দেখা যায়। যখন জলের ভিতরে সাঁতার কাটিয়া চলে, তখন চিংড়িরা এই দুইটি ডাল-পালা-ওয়ালা শুঁয়োকে একবার ডাইনে এবং একবার বামে ফেলিয়া চলিতে আরম্ভ করে। তাহারা শুঁয়ো দু’টিকে বৃথা নাড়ায় না। প্রত্যেক শুঁয়োর গোড়ায় তাহাদের কান থাকে। জলের ভিতরকার শব্দ শুনিবার জন্য উহারা শুঁয়ো নাড়িতে নাড়িতে চলে।

    কান বলিতে আমরা যাহা বুঝি, চিংড়িদের কান মোটেই সে-রকম নয়। শুঁয়োর গোড়ায় ছোট থলির মত এক-একটা অংশই ইহাদের কান। এই থলির ভিতরে লালার মত এক রকম জিনিস এবং কয়েক কণা বালি ভিন্ন আর কিছুই দেখা যায় না। চিংড়িরা অতি অল্প শব্দও এই কান দিয়া শুনিতে পায়।

    তোমরা যদি চিংড়ি মাছের কান দেখিতে চাও, তবে মাথার যেখানে তাহার ছোট শুঁয়ো জোড়াটি লাগানো আছে, সেই জায়গায় খোঁজ করিয়ো। লোমে-ঢাকা থলির মধ্যে উহার অদ্ভুত কান নিশ্চয়ই দেখিতে পাইবে।

    কানের ঠিক উপরে চিংড়ির দুইটি বেশ বড় বড় চোখ আছে। আমাদের চোখ যেমন মাংসের মধ্যে বসানো থাকে, ইহার চোখ সে রকম দেখিবে না। দুইটা ছোট কাঠির মাথায় যেন চোখ দুটি বসানো আছে।

    চিংড়ির চোখ বড় মজার জিনিস। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া যদি ইহাদের চোখ পরীক্ষা করিবার সুবিধা পাও, তবে প্রত্যেক চোখে মধুর চাকের উপরকার ছোট কুঠারির মত শত শত কুঠারি দেখিতে হইবে। এই প্রত্যেক কুঠারিই চোখ। তাহা হইলে বলিতে হয়, চিংড়ির মাথায় যে কালো কালো দুটি চোখ দেখা যায়, তাহার প্রত্যেকটিতেই শত শত ছোট চোখ আছে। কিন্তু এতগুলি চোখ আছে বলিয়াই ইহারা যে বড় প্রাণীদের চেয়ে অনেক ভালো করিয়া দেখিতে পায়, তাহা বলা যায় না। ইহাদের চোখের পাতা নাই; কাজেই, ডাইনের এবং বামের শত শত চোখ সর্ব্বদা খোলা থাকে।

    তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, ছোট প্রাণী হইলেও চিংড়িদের চোক কান খুব জোরালো না হইলেও বেশ সজাগ।

    অন্ধকারে যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন আমরা হাত বা পা দিয়া ছুঁইয়া কাছে কি কি জিনিস আছে ঠিক করি। চিংড়িরা তাহাদের লম্বা লম্বা শুঁয়ো দিয়া ছুঁইয়া দূরে কি জিনিস আছে তাহা বুঝিয়া লয়। সুতরাং ইহাদের স্পর্শ-শক্তিও কম নয়।

    খাদ্য দ্রব্য লুকানো থাকিলে কেবল চোখে দেখিয়া তাহার খোঁজ পাওয়া যায় না। তখন গন্ধ শুঁকিয়া লুকানো খাদ্য বাহির করিতে হয়। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুব বেশি। কেবল গন্ধ শুঁকিয়া শুঁকিয়া অনেক কুকুর গভীর জঙ্গল হইতে শিকার ধরিয়া আনে। চিংড়িরা মাংসাশী প্রাণী। জলের মধ্যে পচা মাছ বা মাংস যাহা কিছু থাকে, তাহাই সন্ধান করিয়া ইহারা খায়। কাজেই লুকানো খাবার সংগ্রহ করা ইহাদের খুবই দরকার হয়। এই কাজের জন্য্য চিংড়িদের খুব ঘ্রাণশক্তি আছে। কিন্তু যে নাক দিয়া ইহারা গন্ধ লয়, তাহা শরীরের ঠিক কোন্ জায়গায় আছে, তাহার সন্ধান পাওয়া যায় নাই। পণ্ডিতেরা আন্দাজ করেন, চিংড়ির কান যেমন শুঁয়োর গোড়ায় আছে, নাকও হয় ত শুঁয়োরই কোনো এক জায়গায় আছে।

    চিংড়ির শ্বাস-প্রশ্বাস

    তোমাদিগকে আরো অনেকবার বলিয়াছি, জীবন্ত থাকিয়া শরীর পুষ্ট করিতে হইলে, প্রাণীদের শরীরে অক্সিজেনের দরকার হয়। বাতাসে অক্সিজেন আছে। বড় বড় প্রাণীরা নাক-মুখ দিয়া বাতাসের অক্সিজেন টানিয়া শরীরের ভিতরকার ফুস্‌ফুসে প্রবেশ করায় এবং ফুস্‌ফুসের রক্ত সেই অক্সিজেন শুষিয়া লয়। জলের প্রাণী জলে-মিশানো বাতাসের অক্সিজেন শুষিয়া লয়। এই সকল কথা তোমরা আগে শুনিয়াছ। কিন্তু চিংড়ি মাছেরা শরীরে অক্সিজেন লইবার জন্য এই দুই উপায়ের কোনোটাই অবলম্বন করে না। অক্সিজেন টানিবার জন্য ইহাদের দেহে একটি বিশেষ যন্ত্র আছে। চিংড়িদের মাথা যে চওড়া খোলা দিয়া ঢাকা থাকে, সেইটা খুলিয়া ফেলিলেই উহার নিশ্বাসের যন্ত্র দেখিতে পাইবে। চিংড়ি মাছের মাথার খোলা ছাড়াইবার সময়ে হয় ত তোমরা ঐ যন্ত্র দেখিয়াছ। ইংরাজিতে ইহাকে গিল্ (Gill) বলে, আমরা তাহাকেই কান্‌কো বলিব।

    চিংড়ির মাথার দুই পাশে ঐ কান্‌কো দু’টা থাকে। ইহা দেখিতে সাদা এবং পাখীর কোঁকড়ানো পালকের মত অনেক ছোট অংশ দিয়া প্রস্তুত। মাথার দুই পাশে মালার মত গোলাকারে সেগুলি উপরে উপরে সাজানো থাকে। এখানে চিংড়ি কান্‌কোর একটা ছবি দিলাম।

    গোরু পাখী মাছ প্রভৃতি মেরুদণ্ডযুক্ত প্রাণীদের রক্ত লাল। ইহা ছাড়া অপর প্রাণীদের রক্তের বিশেষ রঙ্ নাই। চিংড়ি মাছের শরীরে রক্ত আছে, কিন্তু সে রক্ত রাঙা নয়—প্রায় জলের মত বর্ণহীন। এই রক্ত চিংড়ির কান্‌কোর সেই পালকের মত অংশের ভিতর দিয়া চলা-ফেরা করে এবং তাহাই জলে-মিশানো বাতাসের অক্সিজেন শুষিয়া লয়।

    কান্‌কো কঠিন খোলা দিয়া ঢাকা থাকে, তবে কি করিয়া তাহার উপরে জল আসে,—বোধ হয় তোমরা ইহাই ভাবিতেছ।

    খোলার ভিতরকার কান্‌কোর উপরে জল আসা-যাওয়ার বড় সুন্দর ব্যবস্থা আছে। চিংড়ির মাথায় খোলা খুব শক্ত করিয়া আঁটা থাকিলেও পায়ের গোড়ার কাছে খোলার ধারগুলিতে বেশ ফাঁক থাকে। বাহিরের জল ঐ সকল ফাঁক দিয়া খোলার ভিতরে প্রবেশ করিয়া কান্‌কোকে সর্ব্বদাই ঘেরিয়া রাখে। দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া যদি অনেক লোক একটি ছোট ঘরে অনেক ক্ষণ বাস করে, তবে সকলেই নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন টানিয়া লয় বলিয়া ঘরের বাতাসের অক্সিজেন কমিয়া আসে এবং নানা রকম খারাপ বাষ্প শরীর ও নাক দিয়া বাহির হইয়া বাতাসকে খারাপ করিয়া দেয়। তাই ঘরে পরিষ্কার বাতাস প্রবেশ করাইবার জন্য দরজা-জানালা খুলিয়া রাখিতে হয়। চিংড়ি মাছের খোলার ভিতরে যে জল প্রবেশ করে, ঐ রকমে তাহারও অক্সিজেন কমিয়া আসে। এই জন্য জল যাহাতে ভিতরে আবদ্ধ না থাকিয়া স্রোতের জলের মত চলাফেরা করে, তাহার ব্যবস্থা থাকা দরকার হয়। এই ব্যবস্থা চিংড়ির দেহে ভালোই আছে। পিছনের পায়ের কাছে খোলার তলায় যে পথ থাকে, তাহা দিয়া জল ভিতরে মাথার উপরে থাকে। যাহা হউক চিংড়িরা যাহা খায়, তাহা মাথার উপরকার সেই থলিতে ঠেলিয়া উঠে। চিংড়ি মাছ খাইবার জন্য কুটিবার সময়ে ঐ থলির মত উদরটা স্পষ্ট দেখা যায়। উদরের সঙ্গে সরু লম্বা নল লাগানো থাকে। ইহাই চিংড়িদের অন্ত্র বা নাড়িভুঁড়ি। এই নল পিঠের উপর দিয়া আসিয়া লেজের তলায় শেষ হইয়াছে; পেটের মল এই পথ দিয়া লেজের কাছে আসে এবং শরীর হইতে বাহির হইয়া যায়। চিংড়ি মাছ কুটিবার সময়ে পিঠের উপরের এই নল তোমরা খোঁজ করিলে দেখিতে পাইবে।

    ইহা ছাড়া চিংড়ির দেহে আর দুইটি সরু নল আছে। অন্ত্রের উপরে ইহাদের যকৃৎ অর্থাৎ লিভার থাকে। তাহা হইতে ঐ দুটি নল দিয়া পিত্তরস অন্ত্রে আসিয়া পড়ে; ইহাতে খাদ্য হজম হয়।

    চিংড়ির শরীরে রক্তের চলাচল

    আগেই বলিয়াছি, চিংড়িদের শরীরে রক্ত আছে, কিন্তু সে রক্ত লাল নয়। যাহা হউক, রক্ত থাকিলে তাহা যাহাতে সর্ব্বাঙ্গে চলা-ফেরা করে এবং বদ্ রক্ত যাহাতে পরিষ্কার হয়, শরীরে এই সকল ব্যবস্থা থাকা দরকার। চিংড়ির দেহে ইহার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। বড় প্রাণীদের দেহের হৃৎপিণ্ড তালে তালে দপ্ দপ্ করিয়া পম্পের মত শিরার মধ্যে রক্তের স্রোত চালায়। চিংড়ির দেহেও এই রকম হৃৎপিণ্ড আছে। আগের ছবিখানি দেখিলেই জানিতে পারিবে, তাহা উদরের উপরে অর্থাৎ পিঠের খুব কাছে থাকে। কান্‌কোতে যে রক্ত অক্সিজেন টানিয়া নির্ম্মল হইয়াছে, তাহা হৃৎপিণ্ডের থলিতে আসিয়া জমা হয়। তার পরে হৃৎপিণ্ড সঙ্কুচিত হইয়া যখন সেই আবদ্ধ রক্তে চাপ দিতে থাকে, তখন তাহা পিচ্‌কারির জলের মত শিরা-উপশিরা দিয়া সর্ব্বাঙ্গে ছড়াইয়া পড়ে।

    চিংড়ির স্নায়ুমণ্ডলী

    চিংড়িরা কি রকম সজাগ প্রাণী তাহা বোধ হয়, তোমরা সকলে জান না। জল একটু নাড়াচাড়া করিলে বা জলের কাছে সামান্য শব্দ করিলে চিংড়িরা চক্ষুর নিমেষে যে, কোথায় পালাইয়া যায়, তাহার সন্ধানই হয় না। ইহা হইতে বুঝা যায়, চিংড়িদের স্নায়ুমণ্ডলীর কাজ বেশ ভালো চলে। জোঁক ও কেঁচোর শরীরে যেমন এক জোড়া স্নায়ুর সূতো দেহের তলা দিয়া চলিয়া শাখা-প্রশাখায় বাম ও ডাইন অঙ্গকে আচ্ছন্ন করে, ইহাদের দেহেরও স্নায়ুমণ্ডলী ঠিক সেই রকমেই সর্ব্ব শরীরে ছড়ানো থাকে। তা’ ছাড়া এই দুই শাখার স্নায়ু চিংড়ির মাথায় তাল পাকাইয়া একটা বড় রকমের টেলিগ্রাফ্-আফিসের সৃষ্টি করে। কাজেই বাহিরের অতি ছোটখাটো খবর পাইতে উহাদের দেরি হয় না। মাথার এই বড় টেলিগ্রাফ্-আফিস্‌টিই তাহাদের মস্তিষ্ক।

    আমরা এ-পর্য্যন্ত যে-সকল প্রাণীর কথা বলিয়াছি, তাহার মধ্যে চিংড়িদের মস্তিষ্কই বেশি উন্নত। দেহের কোন্ জায়গায় মস্তিষ্ক আছে, তাহা ছবি দেখিলেই তোমরা বুঝিতে পারিবে।

    স্ত্রী-পুরুষ ভেদ

    চিংড়িদের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ আছে। ইহাদের কতক স্ত্রী এবং কতক পুরুষ হইয়া জন্মে। স্ত্রী-চিংড়িরা দেহের তলার একটি সরু ছিদ্র দিয়া অনেক ডিম প্রসব করে। কিন্তু প্রসবের পর সেগুলিকে জলে ফেলিয়া দেয় না। শরীর হইতে আাঠার মত এক রকম পদার্থ বাহির করিয়া ডিমগুলিকে শরীরের তলায় সেই সাঁত্‌রাইবার ডানার গায়ে লাগাইয়া রাখে।

    তোমরা নিশ্চয়ই চিংড়িদের এই রকম ডিম দেখিয়াছ। ডিম ফুটিয়া বাচ্চা হইলে সাধারণ চিংড়িরা আর বাচ্চাদিগকে আট্‌কাইয়া রাখে না; তাহারা যে-যেখানে পারে সেইদিকে চলিয়া যায়। কয়েক জাতীয় বড় চিংড়ি বাচ্চাদিগকে অনেক দিন কাছে-পিঠে রাখে। বেশ বড় না হওয়া পর্য্যন্ত সেগুলি মায়ের কাছ-ছাড়া হয় না।

    চিংড়ির খোলস ছাড়া

    কঠিন আবরণে শরীর ঢাকা থাকিলে, মাঝে মাঝে তাহা বদ্‌লানো দরকার হয়। আবরণ পাকাপাকি রকমে দেহ ঢাকিয়া রাখিলে, শরীর বাড়িতে পায় না। তোমরা বোধ হয় শুনিয়াছ, আগে চীনদেশের মেয়েরা ছেলে-বেলায় লোহার জুতা পায়ে পরিত এবং তাহা জন্মে পা হইতে খুলিত না। কাজেই বয়সের সঙ্গে তাহাদের শরীর বাড়িত, কিন্তু পা দুখানি বুড়ো বয়সেও ছেলে-মানুষের পায়ের মত ছোটই থাকিয়া যাইত। গায়ের খোলা মাঝে মাঝে না বদ্‌লাইলে চিংড়িদেরও ঐ দশা হইত,—তাহারা আর বাড়িতে পারিত না; ডিম হইতে বাহির হওয়ার পর ইহাদের যে-রকম আকৃতি ছিল, চিরজীবন তাহাই থাকিয়া যাইত। সাপ যেমন খোলস ছাড়ে, তেম্‌নি চিংড়িরা মাঝে মাঝে গায়ের খোলা ছাড়িয়া বড় হয় এবং সেই বড় দেহের উপরে আবার নূতন করিয়া খোলা জন্মে।

    চিংড়ি-সম্বন্ধে অনেক কথাই বলা হইল। কিন্তু এই সকল কথা শুনিয়া তোমরা চিংড়িকে যত নিরীহ প্রাণী বলিয়া মনে করিতেছ, তাহারা সে-রকম নয়। সর্ব্বাঙ্গ খোলায় ঢাকিয়া, লম্বা পায়ের সাঁড়াশির মত নখ ও মাথার খাঁড়া বাহির করিয়া বড় বড় চিংড়িরা যখন জলের ভিতর দিয়া চলে, তখন চিংড়িদিগকে লড়ায়ের সেপাই বলিয়া মনে হয়। এই চেহারা দেখিয়া অন্য জলচর প্রাণীরা উহাদিগকে বাঘ ভালুকের মত ভয় করিয়া ছুটিয়া পলায়। ইহাদের মত ঝগড়াটে প্রাণী বোধ হয় সমস্ত সমুদ্র খুঁজিয়াও পাওয়া যায় না। জলের ছোট প্রাণীদিগকে কাছে পাইলেই ইহারা তাহাদের সহিত অকারণে ঝগড়া বাধায় এবং অনেক সময়ে সেগুলিকে মারিয়া খাইয়া ফেলে। নিজেদের মধ্যেও ইহারা কম ঝগড়া করে না। লড়াইয়ে আমাদের হাত পা কাটিয়া বা ভাঙিয়া গেলে আমরা চিরকালের জন্য খোঁড়া বা নুলো হইয়া থাকি। ঝগড়া-ঝাঁটি করিতে গিয়া যদি চিংড়িদের দুচার খানা পা খসিয়া যায়, বা লেজের পাখ্‌না খসিয়া পড়ে, তবে তাহারা একটুও ভাবনা করে না। পুরাতন পায়ের জায়গায় কয়েক দিনের মধ্যে নূতন পা গজাইয়া উঠে।

    চিংড়িরা যেমন ঝগড়াটে, তেমনি মাংসাশী। নদীতে মরা জন্তুর শরীর পচিতে থাকিলে, চিংড়ির দলই তাহার অধিকাংশই খাইয়া ফেলে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল – চিত্রা দেব
    Next Article অসাধু সিদ্ধার্থ – জগদীশ গুপ্ত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }