Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

    জগদানন্দ রায় এক পাতা গল্প239 Mins Read0

    ৭. কোমলাঙ্গী : শঙ্খ, শামুক, গুগলি

    সপ্তম শাখার প্রাণী
    কোমলাঙ্গী
    (Mollusca)
    শঙ্খ, শামুক, গুগ্‌লি

    ষষ্ঠ শাখার প্রাণীদের পরিচয় দিলাম। এখন সপ্তম শাখার পোকা-মাকড়ের কথা তোমাদিগকে বলিব। ইহারা কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী। সাধারণ প্রাণীদের মত হাত, পা, ডানা কিছুই নাই। আছে কেবল গায়ের উপরে শক্ত খোলা এবং তাহারি ভিতরে নরম শরীর। গুগ্‌লি শামুক ছিনুক কড়ি শঙ্খ সকলই এই শাখার প্রাণী। ইহাদের দেহে হাড় নাই। মাংসপিণ্ড লইয়াই ইহাদের দেহ। এই জন্যই এই দলের প্রাণীকে কোমলাঙ্গ বলিলাম।

    তোমরা কখনো শামুক গুগ্‌লি বা ঝিনুকের গায়ের খোলা ভাঙিয়া দেখিয়াছ কি? খোলা ভাঙিলেই লুকানো দেহটা বাহির হইয়া পড়ে। ইহাদের এই দেহের যন্ত্র খুব জটিল এবং সকলের ঠিক এক রকমও নয়। যাহা হউক, শামুক-গুগ্‌লিদের খোলা ভাঙিলে ইহাদের সমস্ত দেহের উপরে একটা পাত্‌লা পর্‌দা নজরে পড়ে। আমরা যেমন শীতের সময়ে গায়ের আগাগোড়া কম্বলে ঢাকিয়া ঘুমাই, শামুক-গুগ্‌লিরা খোলার তলাকার সেই পাত্‌লা পর্দ্দায় দেহগুলিকে ঢাকিয়া রাখে। ইহাদের সকল অঙ্গই পর্‌দার ভিতরে লুকানো থাকে। যখন দরকার হয়, তখন সেই পর্‌দার ভিতর হইতে অঙ্গ বাহির করে।

    ঐ পর্‌দার গুণ বড় আশ্চর্য্যজনক। শামুক-গুগ্‌লিদিগকে বাচ্চা বেলায় মটর বা কলাইয়ের মত ছোট দেখায়। তখন ইহাদের গায়ের খোলাও খুব পাত্‌লা থাকে। যেমন বয়সের সঙ্গে দেহ বাড়ে, পর্‌দাগুলিও বড় হইয়া খোলার বাহিরে আসিয়া দাঁড়ায়। কিন্তু এই সময়ে দেহের বৃদ্ধির সঙ্গে খোলা বড় হয় না। জলাশয়ের জল হইতে চূণ টানিয়া লইয়া ঐ পর্‌দাই খোলাগুলিকে বাড়াইতে আরম্ভ করে।

    তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, পুকুর বা নদীর জলে আবার চূণ কোথায়? কিন্তু সকল জলে সত্যই অল্প পরিমাণে চূণ মিশানো থাকে। সকল মাটিতেই কম বা বেশি চূণ আছে। এই চূণই জলে গোলা থাকে।

    দেহের বৃদ্ধির সঙ্গে কি-রকমে নূতন খোলার সৃষ্টি হয় তোমরা যদি একটি গুগ্‌লি বা শামুকের খোলা পরীক্ষা কর, তবে তাহা জানিতে পারিবে। গাছের গুঁড়ি করাত দিয়া চিরিলে কাঠের গায়ে যে গোলাকার দাগ সাজানো থাকে, তাহা হয় ত তোমরা দেখিয়াছ। গাছের গুঁড়ি প্রতিবৎসরে যেমন এক-একটু মোটা হয়, তেমনি কাঠে ঐ-রকম একএকটা দাগ রাখিয়া দেয়। শামুক-গুগ্‌লির খোলা গাছের মতই ধীরে ধীরে বাড়ে এবং অনেক সময়ে বাড়ার দাগও খোলার গায়ে আঁকা থাকে।

    শঙ্খ ও কড়ি সমুদ্রের প্রাণী। কড়ি ছোট বড় কত রকমের হয় তোমরা অবশ্যই দেখিয়াছ। গেঁটে কড়ির গায়ে গাঁটের মত উঁচু উঁচু অংশ থাকে। শঙ্খেরও ঐ-রকম নানা আকৃতি দেখা যায়। কোনো শঙ্খের খোলায় ঢেউ-খেলানো সুন্দর উঁচু উঁচু অংশ সাজানো দেখা যায়। কোনো শঙ্খের খোলা আবার শিঙের মত চূড়া-ওয়ালা দেখা যায়। শঙ্খের গায়ের খোলার এই বিচিত্র আকৃতি ভিতরকার সেই পাত্‌লা পরদার গুণেই হয়। আমাদের আঙুল ও হাত পায়ের তেলোর চাম্‌ড়া কেমন কোঁচ্‌কানো থাকে তাহা তোমরা অবশ্যই দেখিয়াছ। কড়ি, গুগ্‌লি ও শঙ্খের গায়ের পর্‌দা ঐ-রকমে প্রায়ই কোঁচ্‌কাইয়া যায়। ইহাতে গায়ের উপরকার খোলাটিও ভিতরকার পর্‌দার মত কোঁচ্‌কাইয়া উৎপন্ন হইতে থাকে। তাহা হইলে দেখা যাইতেছে, গায়ের পর্‌দা যে কেবল খোলাই উৎপন্ন করে তাহা নয়; খোলার বিচিত্র আকৃতিও ঐ পরদা দিয়া উৎপন্ন হয়।

    মুক্তা খুব মূল্যবান্ জিনিস। মুক্তা যত বড় হয়, তাহার মূল্যও তত বাড়ে। কিন্তু জিনিসটা চূণ দিয়াই প্রস্তুত। ঝিনুকের শরীরের ভিতর মুক্তা হয়। আমরা ছেলেবেলায় গল্প শুনিয়াছিলাম, স্বাতী নক্ষত্রে বৃষ্টির জল হাতীর মাথায় পড়িলে গজমোতি হয় এবং ঝিনুকের গায়ে পড়িলে মুক্তা জন্মে। কিন্তু ইহা সত্য নয়। আমাদের গায়ের কোনো জায়গায় আঘাত লাগিলে যেমন সেইখানে রক্ত জমা হয়, ঝিনুকদের শরীরের ভিতরকার পর্‌দায় কোনো রকম উত্তেজনা আসিলে ঠিক সেইপ্রকারে রস বাহির হয়। এই রস জমাট বাঁধিয়া ক্রমে মুক্তা হইয়া দাঁড়ায়। বালির কণা বা অন্য কোনো ছোট জিনিস দেহের ভিতরে আট্‌কাইলেও পর্‌দার উত্তেজনা হয়।

    আমাদের দেশের পুকুরের পাঁকের মধ্যে গুগ্‌লি পাওয়া যায়। কয়েকটি গুগ্‌লি ধরিয়া কাঁচের পাত্রের জলে ছাড়িয়া দিয়ো এবং জলের তলায় বালি ছিটাইয়া রাখিয়ো। এই অবস্থায় গুগ্‌লির অনেক চাল-চলন তোমরা দেখিতে পাইবে। ইহাদের মাথার উপরে শিঙের মত দুইটা শুঁয়ো থাকে এবং তাহারি পিছনে আরো দুইটি শুঁয়োর মাথায় দু’টা কালো চোখ থাকে। গুগ্‌লিদের পা নাই। দেহের তলাকার একখণ্ড চেপ্‌টা মাংসই ইহাদের পা। মাংসপিণ্ড হইলেও তাহাতে অনেক মাংসপেশী লাগানো থাকে এবং খোলার মধ্যেও একটা দড়ির মত মোটা মাংসপেশী লাগানো দেখা যায়। ইচ্ছা করিলেই ঐ-সকল পেশীর জোরে তাহারা মুখ চোখ পা এবং শুঁয়ো খোলার মধ্যে টানিয়া লইতে পারে।

    ডাঙায় যে-সকল শামুক বেড়ায় তাহারা ধীরে ধীরে চলিতে থাকিলে পিছনে এক রকম ভিজে দাগ রাখিয়া যায়। তোমরা বোধ হয়, ইহা দেখিয়াছ। মুখের গ্রন্থি হইতে লালা বাহির হইয়া যেমন আমাদের মুখ ভিজাইয়া রাখে, ইহাদের শরীর হইতে সেই রকম লালার মত জিনিস পা ভিজাইয়া রাখে। এই লালা দিয়া তাহারা অনায়াসে পিছ্‌লাইয়া চলিতে পারে। জলের শামুক-গুগ্‌লির পায়ের তলা হইতেও ঐ রকম লালা বাহির হয়।

    শামুক-গুগ্‌লিদের মুখ তোমরা দেখ নাই। ব্যাঙাচির মুখের মত ইহাদের মুখ মাথার নীচে থাকে। এই মুখে ছুঁচের মত অনেক দাঁত লাগানো আছে। খাবার জিনিষের উপরে চাপিয়া এই দাঁত দিয়া উহারা খাবার কাটিয়া খায়। বুড়ো হইলে আমাদের দাঁত পড়িয়া যায়, এবং দাঁতের ক্ষয়ও হয়। এই রকমে নষ্ট হইয়া গেলে আমাদের আর নূতন দাঁত গজায় না। তাই বুড়োরা শক্ত জিনিস খাইতে পারে না। শামুক-গুগ্‌লিদের দাঁত মানুষের দাঁতের মত শক্ত নয়। কাজেই শেওলা প্রভৃতি খাইতে খাইতে তাহাদের দাঁত শীঘ্রই ক্ষয় হইয়া যায়। কিন্তু দাঁত নষ্ট হইলে অন্য প্রাণীর যে রকম অসুবিধা হয়, ইহাদের তাহা হয় না। এক প্রস্ত দাঁত ক্ষয় হইলেই আর এক প্রস্ত দাঁত মুখে আসিয়া হাজির হয়। মজার ব্যাপার নয় কি?

    যে ব্যবস্থায় নূতন দাঁত মুখে আসিয়া দাঁড়ায়, তাহা আরো মজার। শামুক-গুগ্‌লিরা অনেক ছোট দাঁত দেহের মধ্যে জড়াইয়া রাখে। ইহার খানিকটা নষ্ট হইয়া গেলেই আর খানিকটা তাজা দাঁত আপনা হইতেই বাহির হইয়া মুখে উপস্থিত হয়।

    যাহারা জলে বাস করে তাহাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা কি রকম, তাহা তোমরা আগেই শুনিয়াছ। চিংড়ি মাছ জলে বাস করে। কান্‌কো দিয়া জলে-মিশানো অক্সিজেন্ টানিয়া ইহারা বাঁচিয়া থাকে। শামুক-গুগ্‌লিদের মধ্যে কয়েক জাতি ঐ-রকমে কান্‌কো দিয়া অক্সিজেন্ টানে, আবার কতক বড় প্রাণীদের মত ফুস্‌ফুস্ দিয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজ চালায়।

    সাধারণ শামুক-গুগ্‌লিকে ডাঙায় উঠাইয়া রাখিলে, খোলার ঢাক্‌নিগুলিকে তাহারা জোরে বন্ধ করিয়া দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে খোলার ভিতরে খানিকটা জলও আট্‌কাইয়া রাখে। এই আবদ্ধ জলের অক্সিজেন্ টানিয়া ইহারা ডাঙার উপরেও দুই এক দিন বাঁচিয়া থাকিতে পারে। তোমরা জল হইতে গুগ্‌লি উঠাইয়া খোলার ঢাক্‌নি খুলিয়া পরীক্ষা করিয়ো,—দেখিবে খোলার ভিতরে অনেকটা জল জমা আছে।

    শামুকজাতীয় সকল প্রাণীই জলে বাস করে না। ডাঙায় জন্মিয়া এবং ডাঙার গাছপালা খাইয়া জীবন ধারণ করে, এ-রকম শামুকও অনেক দেখা যায়। ইহাদিগকে জলে ফেলিয়া দিলে বাঁচে না। নদীয়া, চব্বিশ পরগণা, হুগলি প্রভৃতি জেলায় কিছু দিন এক রকম বড় ডাঙার শামুকের ভয়ানক উপদ্রব হইয়াছিল। ইহাদের জ্বালায় বাগানের গাছপালা রাখা যাইত না। তোমরা এই রকম ডাঙার শামুক হয় ত দেখিয়াছ। ইহারা আমাদেরি মতো চিত্র ৭৬—ডাঙার শামুক। ফুস্‌ফুস্ দিয়া নিশ্বাসের কাজ চালায়। যদি ইহাদের দেহ পরীক্ষা করিতে পার, তবে দেখিবে, ইহাদের ঘাড়ের কাছে একটা লম্বা ফাটাল আছে। ঐ ফাটাল দিয়া বাহিরের বাতাস তালে তালে ইহাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। জলের শামুকদের মধ্যেও দুই এক জাতি এই রকমে নিশ্বাস লয়। আমাদের দেশের ডোবা ও ধানের ক্ষেতের অল্প জলে এক রকম শামুক দেখা যায়। ইহারা জল ও স্থল দু’জায়গাতেই চরিয়া বেড়ায়। তাহাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা ঠিক ঐরকমের। তোমরা বর্ষার শেষে এই শামুক ধরিয়া একটি পাত্রে রাখিয়া দিয়ো,—দেখিবে, সে মাঝে মাঝে পাত্রের উপর হইতে খোলার ভিতরে বাতাস ভরিয়া লইতেছে এবং কিছুক্ষণ জলে ভাসিয়া আবার ড়ব দিতেছে। বাতাসে খোলা ভর্ত্তি থাকিলে দেহটা হাল্‌কা হয়। তাই তখন ইহারা অনায়াসে ভাসিতে পারে।

    আমরা এ-পর্য্যন্ত কেবল পুষ্করিণী ও ডাঙার শামুকদের কথা বলিলাম। এখন তোমাদিগকে সমুদ্রের শামুকদের কথা বলিব। কড়ি ও বাজাইবার শাঁখ তোমরা দেখিয়াছ। এগুলি সমুদ্রের শামুকদের গায়েরই খোলা। তোমরা যে শাঁখ বাজাও, তাহা একবার পরীক্ষা করিয়ো। দেখিবে, শঙ্খের খোলা ঠিক গুগ্‌লি বা শামুকের খোলার মত নয়। ইহার এক দিক্‌টা যেন সরু হইয়া নলের মত হইয়াছে। কড়ি পরীক্ষা করিলেও তোমরা তাহাই দেখিতে পাইবে, কিন্তু কড়ির খোলা লেজের মত সরু হইয়া আসে না। ইহার এক প্রান্ত যেন একটু কাটা থাকে। সমুদ্রের শামুকদের খোলায় এই সরু অংশের প্রয়োজন কি, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। উহাদের গায়ের পর্‌দা নলের আকারে ঐ পথ দিয়া দেহের বাহিরে আসে। শঙ্খেরা ঐ পথ দিয়া দেহের ভিতরে জল প্রবেশ করায়। এই রকমে জলে-মিশানো বাতাসের অক্সিজেন্ টানিয়া লইয়া উহারা বাঁচিয়া থাকে।

    শঙ্খ বা কড়ি দেখিতে সুন্দর। কিন্তু যখন জীবন্ত থাকে, তখন ইহাদের দেখিয়া ছোট জলচর প্রাণীরা ছুটিয়া পলাইয়া যায়। আমাদের পুষ্করিণীর শামুক-গুগ্‌লিরা শেওলা বা জলের পচা জিনিস খাইয়া বাঁচিয়া থাকে। কিন্তু শঙ্খের দল মাংস ভিন্ন অন্য কিছু খায় না। সমুদ্রের ছোট শামুক বা ঝিনুকরা উহাদের অত্যাচারে অস্থির হইয়া পড়ে। চিত্র ৭৭—কড়ি। ছুতোর মিস্ত্রিরা আগর দিয়া কি রকমে কাঠে ছিদ্র করে, তোমরা বোধ হয় তাহা দেখিয়াছ। মিস্ত্রিরা এই যন্ত্র দিয়া খুব শক্ত কাঠেও অল্প সময়ের মধ্যে ছিদ্র করিয়া দিতে পারে। শঙ্খদের মুখে আগরের মত এক একটা শুঁড় লাগানো থাকে। ইচ্ছা করিলে সেটিকে ইহারা হাতীর শুঁড়ের মত যে দিকে খুসী নাড়াইতে পারে। হাতীর শুঁড়ে দাঁত লাগানো থাকে না। শঙ্খের শুঁড়ের শেষে করাতের দাঁতের মত অনেক ধারালো দাঁত সাজানো থাকে। শামুক গুগ্‌লি, ঝিনুক বা খোলা-ওয়ালা অপর প্রাণী কাছে পাইলেই, তাহারা সেই শুঁড় দিয়া খোলাতে ছিদ্র করিয়া ফেলে এবং সেই ছিদ্রের ভিতর ঐ-সকল প্রাণীদের নরম মাংস খাইয়া ফেলে। শুঁড়ের ধার এত বেশি যে, তাহা দিয়া পাথরের মত শক্ত জিনিসেও ছিদ্র করা যায়। ঝিনুকের খোলার মত গোলাকার ছোট পাথর সমুদ্রের তলায় অনেক পড়িয়া থাকে। শঙ্খের দল ঝিনুক ভাবিয়া প্রায়ই এই সকল পাথরের গায়ে ছিদ্র করিয়া ফেলে। এই রকম ছিদ্রযুক্ত অনেক পাথর সমুদ্রের তলায় পাওয়া যায়। যাহা হউক শঙ্খদের শুঁড়ে কত ধার, তাহা একবার ভাবিয়া দেখ। ইহারা সামান্য প্রাণী নয়।

    কড়ির গা কেমন চক্‌চকে, এবং তাহাতে কেমন সুন্দর রঙ্ লাগানো থাকে, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। লক্ষ্মীপূজার সময়ে যে বড় বড় কড়ি সাজাইয়া রাখা হয়, দেখিলে মনে হয় যেন সেগুলিতে রঙ্ লাগাইয়া দেওয়া হইয়াছে। জীবন্ত কড়ির গায়ে একটা সরু চাম্‌ড়া লাগানো থাকে। এই জন্য উহাদের খোলায় কোনো আঘাত লাগিতে পারে না। ইহাতেই কড়ির উপরটা বেশ চক্‌চকে থাকে।

    শামুক গুগ্‌লি, শঙ্খ ও কড়িদের স্ত্রী-পুরুষ ভেদ আছে। ইহাদের ডিম হইতে বাচ্চা বাহির হয়। কাহারো আবার দেহের মধ্যেই ডিম ফুটিয়া বাচ্চা বাহির হয়। কোনো কোনো জাতি, পতঙ্গদের মত নিরাপদ জায়গায় ডিম পাড়িয়া চলিয়া যায়। আবার কোনো শামুককে এক রকম থলিতে ডিম পাড়িতে দেখা যায়।

    শামুক, গুগ্‌লি, শঙ্খ প্রভৃতির দেহের উপরে একটিমাত্র খোলা থাকে। গুগ্‌লি ও শামুকের খোলার এক-একটা ঢাক্‌নি থাকে বটে, কিন্তু ইহাকে খোলা বলা যায় না। ডাঙার শামুকদের খোলায় প্রায়ই ঢাক্‌নি দেখা যায় না। শীতকাল আসিলে শরীর হইতে এক রকম রস বাহির করিয়া ইহারা ঢাক্‌নি প্রস্তুত করিয়া লয় এবং শত্রুদের ভয়ে খোলা ও ঢাক্‌নি দিয়া সর্ব্বাঙ্গ ঢাকিয়া মড়ার মত পড়িয়া থাকে। তোমরা যদি খুব শীতের সময়ে ডাঙার শামুক কাছে পাও, তাহা হইলে উহার ঢাকনি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়ো। দেখিলে মনে হইবে যেন শামুক মরিয়া গিয়াছে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহা নয়। সমস্ত শীতকাল ধরিয়া ইহারা কিছুই খায় না। আগে বেশি রকমে খাইয়া যে বল সঞ্চয় করিয়া রাখে, তাহাতেই উহাদের জীবনের কাজ দুই তিন মাস অনায়াসে চলিয়া যায়, এবং ঢাক্‌নির ফাঁক দিয়া যে একটু বাতাস ভিতরে প্রবেশ করে, তাহাতে নিশ্বাসের কাজও এক রকম চলিতে থাকে।

    এখন তোমাদিগকে ঝিনুকদের কথা বলিব। ইহাদের দেহের উপরে দুইখানা খোলা থাকে। সাধারণ শামুকদের যেমন মুখ, শুঁয়ো, চোখ ইত্যাদি আছে, ইহাদের তাহা নাই। তোমাদের পুকুর হইতে একটা ঝিনুক আনিয়া কাঁচের পাত্রে রাখিয়া পরীক্ষা করিয়ো। দেখিবে, দুই খোলার জোড়ের জায়গা হইতে ঠোঁটের মত কতকটা মাংস বাহির হইয়াছে।

    ঝিনুকের খোলা গ্রীষ্মকালে পুকুরের জল শুকাইলে অনেক পাওয়া যায়। তোমরা দু’খানা খোলা লইয়া পরীক্ষা করিলে দেখিবে, খোলার ভিতরে একএকটি করিয়া দাগ আছে। ঐ দাগের জায়গায় ঝিনুকদের দেহের মোটা মাংসপেশী লাগানো থাকে। ইহা সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করিয়া ঝিনুকেরা ইচ্ছামত খোলার মুখ খুলিতে বা বন্ধ করিতে পারে।

    দেহের মধ্যে ঝিনুকদের কান্‌কো আছে এবং তাহার সহিত কতকগুলি শুঁয়োর মত অংশ লাগানো আছে। এই গুলিকে নাড়িলে খোলার ফাঁক দিয়া কান্‌কোর উপরে জলের স্রোত বহিতে থাকে। ঝিনুকেরা এই রকমে কান্‌কোর সাহায্যে জলে-মিশানো অক্সিজেন্ টানিয়া লয়। সাধারণ শামুকদের মত ঝিনুকের দল পেটুক ও হিংস্র নয়। জলের স্রোতের সঙ্গে যে জলচর পোকা-মাকড় উহাদের দেহের ভিতর প্রবেশ করে, ঝিনুকেরা তাহা খাইয়াই বাঁচিয়া থাকে।

    অন্য শামুকদের মতই ঝিনুকেরা ডিম পাড়ে। কিন্তু ইহাদের ডিম বড় অদ্ভুত। প্রত্যেক ডিমের গায়ে একএকটা শুঁয়ো লাগানো থাকে। মায়ের পেট হইতে পড়িয়া শুঁয়ো নাড়িয়া সেগুলি ভাসিয়া বেড়ায় এবং শেষে জলের তলায় পড়িয়া যায়। জলের তলাতে ডিম ফুটিলে ঝিনুকের বাচ্চা বাহির হয়।

    আমাদের দেশে সকলে ঝিনুকের মাংস খায় না। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় এই মাংসের বড়ই আদর। ঐ সকল দেশে হাজার হাজার লোক সমুদ্র হইতে ঝিনুক ধরিয়া বাজারে বিক্রয় করে। আমেরিকার এক নিউ-ইয়র্ক সহরেই বৎসরে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ঝিনুকের মাংস বিক্রয় হয়।

    সমাপ্ত

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল – চিত্রা দেব
    Next Article অসাধু সিদ্ধার্থ – জগদীশ গুপ্ত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }