Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়

    জগদানন্দ রায় এক পাতা গল্প239 Mins Read0

    ৫.১ কেঁচো

    পঞ্চম শাখার প্রাণী

    এ-পর্য্যন্ত আমরা জলের প্রাণীদের কথা বলিয়া আসিয়াছি। এইবারে ডাঙার প্রাণীর কথা আরম্ভ করিব। তোমাদের বাগানে গাছে গাছে যে-সব প্রজাপতি ফুলে ফুলে উড়িয়া বেড়ায়, তাহাদের কথা এখন বলিব না। ইহাদের সকলেই উচ্চ শ্রেণীর প্রাণী; অনেক যন্ত্র ও ইন্দ্রিয় লইয়া ইহাদের সৃষ্টি হইয়াছে; তাহার উপরে আবার ইহারা স্বাভাবিক বুদ্ধি লইয়া জন্মে। যে-সকল ডাঙার প্রাণী শরীরের বিশেষ উন্নতি করিতে পারে নাই এবং যাহাদিগকে আমরা ঘৃণা করি, প্রথমে তাহাদেরি মধ্যে কয়েটির পরিচয় দিব।

    কেঁচো

    তোমরা সকলেই কেঁচো দেখিয়াছ। কি বিশ্রী প্রাণী! হাত, পা, চোখ, নাক, কিছুই নাই। বাদলের দিনে জল-কাদায় যখন বুকে হাঁটিয়া চলে, তখন তাহাদের দেখিলেই যেন গা ঘিন্-ঘিন্ করে। কিন্তু ইহারা অতি নিরীহ প্রাণী,—সাপের মত কামড়ায় না এবং কখনো কাহারো অনিষ্টও করে না; নিজের আহারের চেষ্টায় লুকাইয়া ঘুরিয়া বেড়ায়।

    জলে কেঁচোরা স্থান পায় না; নিশ্চিন্ত হইয়া যে, ডাঙায় ঘুরিয়া বেড়াইবে তাহারো উপায় নাই। কেঁচো দেখিলে পিঁপ্‌ড়েরা দল বাঁধিয়া তাহাকে আক্রমণ করে; মাছেরা কেঁচো পাইলে পরম আনন্দে ভোজ লাগায়। এই সকল উপদ্রবের হাত হইতে উদ্ধার পাইবার জন্য কেঁচো মাটীর তলায় লুকাইয়া বাস করে। রাত্রি আসিলে, তাহারা চুপি চুপি গর্ত্ত হইতে বাহির হয় এবং খাবার চেষ্টায় একটু এদিক্ ওদিক্ ঘুরিয়া বেড়ায়। কেবল বাদলের সময়ে ইহারা দিনের বেলায় গর্ত্তের বাহিরে আসে। অল্প জল গায়ে লাগিলে ইহাদের খুব আনন্দ হয়।

    কোঁচোর দেহটা কি রকম তোমরা বোধ হয় ভালো করিয়া দেখ নাই। বড় বড় গাছের তলায় বা অন্য ভিজে জায়গায় মাটির নীচে প্রায়ই অনেক কোঁচো থাকে। এই রকম জায়গায় মাটি খুঁড়িয়া দুই একটা বড় কেঁচো সংগ্রহ করিয়ো এবং তাহাদের দেহ পরীক্ষা করিয়া দেখিয়ো। পরীক্ষার জন্য যদি ইহাদিগকে জীবন্ত রাখিতে চাও, তবে একটি ছোট পাত্রে কিছু ভিজা মাটি ও পচা পাতা মিশাইয়া তাহাতে তিন চারিটি কেঁচো ছাড়িয়া দিয়ো। এই রকমে তাহারা বেশ আরামে থাকিবে। তার পরে যখন দরকার হইবে, দুই-একটাকে পাত্র হইতে উঠাইয়া তোমাদের ঘরে মেজের উপরে বা কাগজের উপরে ছাড়িয়া দিয়ো। এই রকমে ইহাদের দেহের খুঁটিনাটি ও তাহাদের চলাফেরা ভালো করিয়া দেখিতে পাইবে। ছোট জিনিসকে বড় করিয়া দেখার জন্য এক রকম কাচ আছে; ইহাকে আতসী কাচ (Magnifying Glass) বলে। সেই রকম কাচ দিয়া পরীক্ষা করিলে, তোমরা কেঁচোর শরীরের ছোটখাটো অংশও বেশ স্পষ্ট দেখিতে পাইবে।

    এখানে কোঁচোর একটা ছবি দিলাম। দেখ,—মুখটা কত সরু। এই রকম ছুঁচ্‌লো মুখ আছে বলিয়াই ইহারা সহজে মাটিতে গর্ত্ত করিতে পারে। তার পরে দেখ,—শরীরের আগাগোড়ায় খুব ঘন ঘন দাগ কাটা আছে। গুণিলে এই দাগের সংখ্যা একশত পর্য্যন্ত হইতে দেখা যায়। ছবিতে কিন্তু ততগুলি দাগ দেওয়া হয় নাই। এক-একটি দাগ আংটির মত কেঁচোর দেহ ঘেরিয়া থাকে। বাচ্চা কেঁচোর গায়ে তোমরা হয় ত এই রকম দাগ দেখিতে পাইবে না, কিন্তু আতসী কাচ দিয়া দেখিলে নিশ্চয়ই দাগ নজরে পড়িবে। পিঁপ্‌ড়ে, প্রজাপতি, ফড়িং প্রভৃতি পোকার শরীরের উপরটা নরম হাড়ের মত একটা জিনিস দিয়া ঢাকা থাকে এবং তাহা আংটির আকারে সাজানো থাকে। কেঁচোর গায়ের আংটিগুলি সে-রকম শক্ত জিনিসে প্রস্তুত নয়। সেগুলিতে কেবল রবারের মত মাংসপেশীই আছে। প্রজাপতি প্রভৃতি প্রাণীরা প্রথমে ডিমের আকারে জন্মে। তার পরে উহারা ডিম হইতে বাহির হইয়া শুঁয়ো-পোকার মত হয়; তার পরে কিছুদিন নির্জ্জীবভাবে অনাহারে পড়িয়া থাকে; এবং সকলের শেষে তাহারা ডানা-ওয়ালা প্রাণী হইয়া দাঁড়ায়। পতঙ্গদের শরীরের এই সব পরিবর্ত্তনের কথা তোমাদিগকে পরে বলিব। কেঁচোর শরীরের এই রকম পরিবর্ত্তন হয় না,—ইহারা চিরজীবনই বুকে হাঁটিয়া চলে। তা’ছাড়া শুঁয়োপোকাদের দেহের আংটির গায়ে যেমন পা লাগানো থাকে, ইহাদের তাহা থাকে না। এই সকল কারণে কেঁচো শুঁয়োপোকাদের দলের প্রাণী নয়। যে-সকল জলের প্রাণীর কথা তোমরা আগে শুনিয়াছ, তাহাদেরি সঙ্গে কেঁচোর খুব নিকট সম্বন্ধ আছে। তাই ইহারা আজও ভিজে জায়গা ভিন্ন অন্য কোনো স্থানে থাকিতে পারে না। কেঁচোর চোখ নাই। যারা মাটির তলায় অন্ধকারে চিরজীবন কাটায়, তাদের চোখের দরকারও হয় না। কিন্তু শুঁয়ো-পোকাদের চোখ আছে এবং আরো অনেক ইন্দ্রিয় আছে, ইহারা প্রাণীদের মধ্যে খুব উন্নত; কেঁচো নিতান্ত অধম প্রাণী। পাছে তোমরা কেঁচো ও শুঁয়ো-পোকাদের একই রকমের প্রাণী বলিয়া মনে কর,—সেই ভয়ে এই কথাগুলি বলিলাম।

    তোমরা যদি কেঁচোর গায়ে ধীরে ধীরে আঙুল বুলাইতে পার, তবে বুঝিবে আঙুলে যেন কাঁটা-কাঁটা কি ঠেকিতেছে। লেজের দিক্ হইতে মাথার দিকে আঙুল টানিয়া লইলে, ইহা বুঝা যায়; মাথার দিক্ হইতে লেজের দিকে আঙুল টানিলে, আঙুলে কিছুই ঠেকে না। তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, কেঁচোর দেহে যে আংটির মত দাগ কাটা আছে, তাহাই বুঝি আঙুলে ঠেকে,—কিন্তু তাহা নয়। এখানে কেঁচোর শরীরের গোটা তিনেক আংটীর ছবি দিলাম। আতসী কাচে যে রকম বড় দেখায় ছবিগুলি ঠিক্ সেই রকমে আঁকা আছে। দেখ,—প্রত্যেক আংটীতে শুঁয়োর মত চারিটি করিয়া অংশ লাগানো আছে এবং সেগুলি আবার বাঁকিয়া লেজের দিকে ঝুঁকিয়া আছে। কাজেই যখন তুমি লেজ হইতে মাথার দিকে আঙুল টানিয়া লও, তখন সেই বাঁকা ও শক্ত শুঁয়োগুলি খাড়া হইয়া উঠিয়া আঙুলে বাধা দেয়। কিন্তু মাথা হইতে লেজের দিকে আঙুল টানিলে সেগুলি আরো ঝুঁকিয়া পড়ে, ইহাতে আঙুলে একটুও বাধা লাগে না।

    বাদলের দিনে কেঁচো কি রকমে মাটির উপর দিয়া বুকে হাঁটিয়া চলে তোমরা দেখিয়াছ কি? যদি না দেখিয়া থাক, তবে বাদল হইলেই তোমাদের বাড়ীর আঙিনার কেঁচোগুলার চলা-ফেরা লক্ষ্য করিয়ো। ইহারা প্রথমে শরীরের মুখের দিকের খানিক অংশ টানিয়া লম্বা করে। এই রকমে তাহারা কিছু দূর আগাইয়া যায় বটে, কিন্তু লেজের দিকটা মোটেই অগ্রসর হয় না। ইহার পরেই তাহারা সেই মুখের দিকের অংশটাকে কোঁচ্‌কাইয়া পিছনের শরীরটাকে টানিতে থাকে। পিছনের দেহ ইহাতে অগ্রসর হয়। কোঁচ্‌কাইলেই শরীর পিছাইয়া পড়ে; কিন্তু কেঁচোর শরীরে প্রত্যেক অংশটিতে যে শুঁয়োগুলি লেজের দিকে ঝুঁকিয়া থাকে, সেগুলি মাটির গায়ে বাধা পাইয়া খাড়া হইয়া উঠে; কাজেই কোঁচ্‌কাইলেও কেঁচোর সম্মুখের দেহ আর পিছাইতে পারে না। এই রকমে ইহারা একবার সাম্‌নের দিক্‌টাকে বাড়াইয়া অগ্রসর হয় এবং পরে তাহাই শুঁয়ো দিয়া আট্‌কাইয়া পিছনের দেহটাকে টানিয়া লয়। এই উপায়ে কেঁচোরা খুব তাড়াতাড়ি সামনের দিকে চলিতে পারে। কিন্তু পিছু হটিয়া চলা ইহাদের অসাধ্য। পিছনে চলিতে গেলেই শুঁয়োগুলি মাটিতে বাধা পাইয়া খাড়া হইয়া উঠে, তখন কেঁচো আর পিছাইতে পারে না। কেঁচোর চলা-ফেরা লক্ষ্য করিলে দেখিবে, তাহারা কখনই পিছাইয়া চলে না।

    কেঁচোর মুখে দাঁত নাই; খুব শক্ত মাংসপেশী দিয়া তাহাদের মুখ প্রস্তুত। সেই মুখ দিয়া তাহারা খাবার খায় এবং গর্ত্তও খোঁড়ে। মানুষ ও অন্য বড় প্রাণীদের শরীরে উদর ও নাড়ীভুঁড়ি অর্থাৎ পাকাশয় পৃথক্ থাকে। কিছু খাইলে খাবার প্রথমে উদরে (Stomach) যায়; সেখানে একটু হজম হইলে তাহা দড়ার মত মোটা ও লম্বা পাকাশয় অর্থাৎ অন্ত্রে (Intestines) গিয়া পৌঁছে। এখানে খাদ্য ভালো করিয়া হজম হয় এবং তাহাতে যে সারবস্তু থাকে তাহা শরীরে টানিয়া লয়। তেমরা হয় ত ছাগল বা ভেড়ার পেটের ভিতরকার উদর ও পাকাশয় দেখিয়া থাকিবে। দড়াদড়ির মত অংশটাই পাকাশয় এবং তাহারি উপরে যে থলির মত অংশ থাকে, তাহা উদর। কেঁচোদের শরীরে স্পষ্ট উদর বা পাকাশয় নাই। ইহাদের দেহের ভিতরটা দেখিলে মনে হয় যেন একটা নল মাথা হইতে লেজ পর্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছে। ইহাই তাহাদের গলার ছিদ্র, উদর, পাকাশয় ইত্যাদি সকলেরি কাজ করে। সুতরাং কেঁচোকে যদি পেট-সর্ব্বস্ব প্রাণী নাম দাও, তাহা হইলে ঠিক্ কথাই বলা হয়।

    খাবার হজম করিবার জন্য বড় প্রাণীদের দেহের ভিতর হইতে নানা প্রকার রস বাহির হইয়া উদরে ও পাকাশয়ে আসিয়া পড়ে। খাবারের সঙ্গে যে মাছ মাংস ডিম আমাদের পেটে যায়, তাহা এক রকম রসে হজম হয়। আবার ঘি তেল চর্ব্বি প্রভৃতি জিনিস অন্য কয়েক রকম রসে পরিপাক হয়। কেঁচোরা এই রকম সুখাদ্য জিনিস খায় না, তাহাদের পাক যন্ত্রও জটিল নয়। কেঁচোরা মাটি খায় এবং কখনো রাখে। কখনো দুই একটা টাট্‌কা পাতা বা ঘাস টানিয়া গর্ত্তের মুখে মাটির সঙ্গে যে পচা লতা-পাতা প্রভৃতি মিশানো থাকে, তাহাই উহাদের দেহগুলিকে পুষ্ট করে। এই রকমে সার ভাগ লইলে খাঁটি মাটি বাকি থাকে, তাহা ইহার লেজের দিকে ছিদ্র দিয়া গর্ত্তের বাহিরে ফেলিয়া দেয়। কেঁচোর গর্ত্তের উপরে জিলাপির মত প্যাঁচ-পয়ালা যে মাটি জমা থাকে তাহা বোধ হয় তোমরা দেখিয়াছ। উহাই সেই পরিত্যক্ত মাটি; ইহাকে কেঁচোর বিষ্ঠাও বলা যাইতে পারে।

    যাহা হউক মাটিতে মিশানো পচা লতা-পাতা হজম করার জন্য কেঁচোদের কষ্ট করিতে হয় না। ইহাদের মুখ হইতে একরকম লালা বাহির হয়, তাহ৷ দিয়াই ইহারা খাবারের মাটি ভিজাইয়া ফেলে এবং তাহা দিয়াই খাদ্য হজম করে। চূণ, কাঠের ছাই এবং কষ্টিক্ ইত্যাদি জিনিস হাতে লাগাইলে হাতের চামড়ার ক্ষয় হয় এবং শেষে হাতে ঘা হইয়া পড়ে। এই সকল জিনিসকে ক্ষার বলে। কেঁচোর মুখ হইতে যে লাল বাহির হয়, তাহাতেও ক্ষারের গুণ আছে। এইজন্য তাজা সবুজ পাতায় কেঁচোর লালা লাগিলে, তাহার রঙ্ লাল হইয়া যায়।

    এখানে কেঁচোর শরীরের ভিতরকার যন্ত্রের একটা ছবি দিলাম। ভিতরে যে নলটি রহিয়াছে, উহাই কেঁচোর পাকযন্ত্র। ইহার উপরে যে গাঢ় কালো অংশগুলি পাকনালীকে ঘেরিয়া আছে, উহা কেঁচোর রক্তের শিরা। মানুষ ও অন্য মেরুদণ্ডযুক্ত প্রাণীদের দেহের রক্ত লাল,—কেঁচোর রক্তও লাল। তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি, প্রাণীর রক্ত অণুবীক্ষণে পরীক্ষা করিলে, তাহাতে একরকম ছোট লাল-কণা ভাসিতে দেখা যায়, এই লাল-কণাই রক্তকে লাল করে, আসলে রক্ত সাদা। কেঁচোর রক্ত লাল হইলেও তাহাতে লাল-কণা একটিও থাকে না। কাজেই বলিতে হয়, কেঁচোর রক্ত স্বভাবতঃ লাল।

    গায়ে রক্ত থাকিলে তাহা যাহাতে শরীরের সকল জায়গায় চলাচল করে তাহার ব্যবস্থা দরকার। মানুষ ও অন্য বড় প্রাণীদের শরীরে হৃদ্‌পিণ্ড আছে, তাহা দিবারাত্রি দপ্-দপ্ করিয়া শরীরের ভিতরকার শিরায় এবং উপশিরায় রক্তের স্রোত চালায়। কেঁচোর বুকে হৃদ্‌পিণ্ড নাই; তাহাদের দেহের যে-সকল শিরা রক্তে ভরা থাকে, তাহাই দপ্ দপ্ করে এবং সঙ্গে তাহারি শাখাপ্রশাখা ও সরু শিরা দিয়া সর্ব্বাঙ্গে রক্ত ছড়াইয়া পড়ে।

    কিছুক্ষণ শরীরের ভিতরে চলাচল করিলে সকল প্রাণীরই রক্ত খারাপ হইয়া যায়। কাজেই তখন বদ্ রক্তকে তাজা করিয়া না লইলে শরীরের কাজ চলে না। বড় বড় প্রাণীদের দেহে রক্ত নির্ম্মল করিবার খুব ভালো ব্যবস্থা আছে। তাহারা প্রতি নিশ্বাসে বাতাসের অক্সিজেন বাষ্প ফুস্‌ফুসে প্রবেশ করায় এবং তাহাই রক্ত সাফ্ করে। কোনো মলিন জিনিসকে সাফ্ করিলে অনেক ময়লা জড় হয়। শরীরের রক্ত যখন সাফ্ হয়, তখনো সেই রকমে অনেক ময়লা শরীরে জমা হয়। বড় প্রাণীদের দেহের এই ময়লার অধিকাংশই মূত্রের আকারে শরীর হইতে বাহির হইয়া যায়। যে যন্ত্রে এই ময়লা জমা হয়, তাহাকে ইংরাজিতে Kidney অর্থাৎ মূত্রাশয় বলে। কেঁচোর দেহে রক্ত চলাচল করে, কিন্তু রক্ত সাফ্ করিবার জন্য ফুস্‌ফুস্ নাই। তোমরা হয় ত দেখিয়াছ, কেঁচোর গায়ের উপরটা সর্ব্বদাই ভিজে ভিজে থাকে এবং পাত্‌লা চামড়ার নীচের শিরা দিয়া রক্ত চলাচল করে। ইহাতে বাহিরের বাতাসের অক্সিজেন অতি সহজে রক্তের সহিত মিশিয়া যায় এবং অঙ্গারক বাষ্প প্রভৃতি শরীরের পক্ষে খারাপ বাষ্পও পাতলা চাম্‌ড়া ভেদ করিয়া বাহিরে আসে। সুতরাং বলিতে হয়, কেঁচো তাহার সকল শরীর দিয়া নিশ্বাস লয়। মানুষের মুখ নাক চাপিয়া রাখিলে, শরীরে অক্সিজেন যাইতে পারে না; কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থাকিলে তাহার মৃত্যু হয়। কিন্তু কেঁচোদের সে বালাই নাই,—মুখ চাপিয়া ধরিলে কেঁচো মরে না। রক্তের আবর্জ্জনা এক সুন্দর উপায়ে ইহাদের শরীর হইতে বাহির হয়। দেহে যে আংটির মত অনেক অংশ আছে, তাহাদের সহিত এক একটি নল লাগানো থাকে। এই নলের একটা মুখ পেটের ভিতরে থাকে এবং অপর মুখটা দেহের পাশে আসিয়া শেষ হয়। রক্তের ও শরীরের অনেক আবর্জ্জনা ঐ নলের মুখ দিয়া বাহিরে আসিয়া পড়ে।

    দেহে স্নায়ু না থাকিলে প্রাণীরা জড়ের মত হয়। স্নায়ু আছে বলিয়াই তাহারা বাহিরের অবস্থা জানিতে পারে, কিছু গায়ে ঠেকিলে তাহা বুঝিতে পারে, শত্রুরা আক্রমণ করিলে তাহা জানিয়া নিজেদের রক্ষা করিতে পারে। প্রাণীর দেহের স্নায়ু-মণ্ডলী আরো যে সকল কাজ করে, তাহা তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি। কেঁচোর দেহে অনেক স্নায়ু আছে; এই জন্যই গায়ে হাত দিলে ইহারা পলাইতে চেষ্টা করে এবং ব্যাঙ্ বা অপর প্রাণীরা চাপিয়া ধরিলে বেদনায় ঝট্‌ফট্ করে।

    কেঁচোর দেহে কি রকমে স্নায়ু সাজানো থাকে, এখানে তাহার একটি ছবি দিলাম। দেখ,—পেটের তলা দিয়া কেমন মোটা স্নায়ু মুখ হইতে লেজের দিকে চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু এই স্নায়ুর সূতা একটি নয়, যদি ছবিখানি ভালো করিয়া পরীক্ষা কর, তবে জানিতে পারিবে, ছুইটি স্নায়ু পাশাপাশি সাজানো আছে, তাই উহাকে মোটা দেখাইতেছে। এই জোড়া স্নায়ু মুখের ঠিক্ নীচে তফাৎ হইয়া মুখের উপরে আসিয়া আবার একত্র হইয়াছে। বড় প্রাণীদের মস্তিষ্কে যেমন দেহের সমস্ত স্নায়ু নানা দিক্ হইতে আসিয়া জড় হয়, এখানে যেন তাহাই হইয়াছে।

    কিন্তু এই স্নায়ু দুইটিতেই কেঁচোর স্নায়ুমণ্ডলী শেষ হয় নাই। ঐ দুইটির প্রত্যেকটি হইতে অনেক ছোট স্নায়ু ডালপালার মত বাহির হইয়া দেহ আচ্ছন্ন করিয়া রাখে। বাম দিকের স্নায়ুগুলি যে-রকমে সাজানো থাকে ডাইনের স্নায়ু সেই রকমেই সাজানো দেখা যায়; কিন্তু দুই দিকের স্নায়ুর মধ্যে কোনো যোগ থাকে না। শরীরের ডাইনে এবং বামে এই রকম সম্পূর্ণ পৃথক্ স্নায়ু অনেক প্রাণীর দেহেই দেখা যায়। কেঁচো, ফড়িং, প্রজাপতি প্রভৃতি পোকা-মাকড়দের দেহেও ইহা আছে। এই রকম স্নায়ু-ওয়ালা প্রাণীদের দ্বিপার্শ্বিক (Bilateral) বলা হয়। চক্ষুহীন হইয়াও কেঁচোরা এই স্নায়ু দিয়া আলো-আঁধার বুঝিতে পারে এবং একটু জোরে বাতাস বহিয়া গায়ে ঠেকিলে তাহা জানিতে পারে।

    যে-রকমে কেঁচোদের বাচ্চা হয়, তাহা বড়ই আশ্চর্য্য রকমের। প্রত্যেক লাউ, কুমড়া ও শশা গাছে যেমন স্ত্রী-ফুল ও পুরুষ-ফুল ফোটে এবং তার পরে যেমন পুরুষ-ফুলের রেণু স্ত্রী-ফুলে ঠেকিলে তাহাতে ফল ধরে—কেঁচোর বাচ্চা হওয়াতেও অবিকল তাহাই দেখা যায়। প্রত্যেক কেঁচোর দেহেই এক অংশে খুব ছোট ডিম হয় এবং আর এক অংশে পুরুষ-ফুলের রেণুর মত আর একটা জিনিস জমা হয়। ডিমের গায়ে এই জিনিসটা লাগিলেই ডিম বড় হইতে আরম্ভ করে।

    আমি অনেক কেঁচো পরীক্ষা করিয়া উহা দেখিয়াছি, তোমরাও একটি মোটা কেঁচো পরীক্ষা করিয়া দেখিয়ো। পরীক্ষায় দেখিতে পাইবে, তাহার মুখের দিকে একটা জায়গায় যেন আংটির মত একটি সাদা অংশ রহিয়াছে। তোমাদের পোষা কুকুরের গলায় যেমন গলাবন্ধ অর্থাৎ ‘কলার’ পরাইয়া থাক,—ইহা যেন ঠিক্ সেই রকমের ‘কলার’। ইহারি ভিতরে কেঁচোদের অনেক ডিম হয়। যখন ডিম ছোট থাকে, তখন ঐ ‘কলার’ কেঁচোর গায়ে খুব শক্ত করিয়া আঁটা থাকে। কিন্তু ডিম বড় হইলে ‘কলার’ আর সে-রকম গায়ে-গায়ে লাগিয়া থাকে না, তাহা আপনা হইতেই ঢিলা হইয়া যায়। এই অবস্থায় কেঁচোরা তাহা আর শরীরে আট্‌কাইয়া রাখিতে চায় না; ধীরে ধীরে ডিমে-ভরা ‘কলার’টিকে মাথার উপর দিয়া গলাইয়া মাটিতে ফেলিয়া দেয়। তোমরা হয় ত ভাবিতেছ এই ডিম মাটিতে পড়িলেই ফুটিয়া গিয়া বাচ্চা উৎপন্ন করিবে। কিন্তু তাহা করে না। স্ত্রী-ফুলের গায়ে যেমন পুরুষ-ফুলের রেণু লাগা দরকার, তেমনি এই সব ডিমের গায়ে কেঁচোর দেহের সেই রকমের পদার্থটি লাগা প্রয়োজন। নচেৎ ডিমে বাচ্চা হয় না। যে উপায়ে কেঁচোর ডিমে পুরুষ-পদার্থ লাগে সে বড় মজার। এই জিনিসটা প্রায়ই কেঁচোদের গলার কাছে জন্মে। ডিমে-ভরা ‘কলার’টি শরীর হইতে খসাইয়া ফেলিবার সময়ে যখন তাহা গলার ঐ জায়গায় আসে, তখন পুরুষ-পদার্থের সঙ্গে ডিমের যোগ হইয়া যায়। ইহা হইলে ডিম ফুটিয়া বাচ্চা বাহির হইবার আর কোনো বাধা থাকে না।

    ডিমে-ভরা ‘কলার’ অর্থাৎ গলাবন্ধ শরীর হইতে খসিয়া পড়িলে কেঁচোরা আর তাহা যত্ন করে না এবং একবারও তাহার খোঁজ লয় না,—কাদা বা ভিজে মাটির সঙ্গে মিশিয়া তাহা পড়িয়া থাকে! তার পরে ডিমগুলি বেশ পুষ্ট হইলে, তাহা হইতে কেঁচোর বাচ্চা বাহির হয়।

    আগে যে-সব প্রাণীর কথা বলিয়াছি, তাহাদের অনেকেই নিজের দেহ খণ্ড খণ্ড করিয়া সন্তান উৎপন্ন করে। জবা-গাছের ডাল পুঁতিলে যেমন নূতন জবা-গাছ জন্মে, ইহা যেন সেই রকমের। কেঁচোরা সাধারণত সে-রকমে সন্তান উৎপন্ন করে না বটে, কিন্তু যদি কোনো রকমে ইহাদের দেহ খণ্ডিত হইয়া পড়ে, তবে সম্মুখের খণ্ড হইতে লেজ বাহির হইয়া এক-একটা নূতন কেঁচো জন্মে। যদি তোমরা পরীক্ষা করিতে চাও, তবে একটা বাচ্চা কেঁচোকে টুক্‌রা করিয়া কাটিয়া ভিজে মাটির মধ্যে রাখিয়া দিয়ো। কিছু দিন পরে হয় ত দেখিবে, উহার শরীরের সম্মুখের টুক্‌রা হইতে এক একটি নূতন কেঁচো হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই পরীক্ষা অতি সাবধানে করিতে হয়। বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডায় কেঁচোদের ঐ রকম পরিবর্ত্তন দেখা যায় না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল – চিত্রা দেব
    Next Article অসাধু সিদ্ধার্থ – জগদীশ গুপ্ত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }