Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    পৌষ ফাগুনের পালা – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    গজেন্দ্রকুমার মিত্র এক পাতা গল্প1063 Mins Read0

    ০১. লোকে বলে ধর্মের জয় অধর্মের পরাজয়

    পৌষ-ফাগুনের পালা – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    উৎসর্গ

    মাতৃদেবীর শ্রীচরণে

    .

    যারা আমার সাঁঝ-সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিয়ে আলো, আপন হিয়ার পরশ দিয়ে; এই জীবনের সকল সাদা কালো যাদের আলো-ছায়ার লীলা; সেই যে আমার আপন মানুষগুলি নিজের প্রাণের স্রোতের ‘পরে আমার প্রাণের ঝরণা নিল তুলি; তাদের সাথে একটি ধারায় মিলিয়ে চলে, সেই তো আমার আয়ু, নাই সে কেবল দিন গণনার পাঁজির পাতায়, নয় সে নিশাস-বায়ু।

    …. …. …. …. …. ….

    এই ভালো আজ এ সঙ্গমে কান্নাহাসির গঙ্গা-যমুনায়
    ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায়।

    –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    *

    বাংলাদেশের সাহিত্যের উপাদান বাংলার নর-নারী; তাদের দুঃখ-দারিদ্র্যময় জীবন, তাদের আশা-নিরাশা, হাসি-কান্না-পুলক- বহির্জগতের সঙ্গে তাদের রচিত ক্ষুদ্রজগৎগুলির ঘাত-প্রতিঘাত, বাংলার ঋতুচক্র, বাংলার সকাল সন্ধ্যা-সকাল, আকাশ- বাতাস, ফলফুল। বাঁশবনের, আমবাগানের নিভৃত ছায়ায় ঝরা সজনেফুল বিছানো পথের ধারে যে সব জীবন অখ্যাতির আড়ালে আত্মগোপন করে আছে– তাদের কথাই বলতে হবে, তাদের সে গোপন সুখ-দুঃখকে রূপ দিতে হবে।

    –বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    *

    পৌষ-ফাগুনের পালা

    ভোর হ’তে না হ’তে আসতে শুরু হয় হাওড়া ও শেয়ালদার প্ল্যাটফর্মে প্ল্যাটফর্মে– কেরাণী ও কুলিবোঝাই ট্রেনগুলো। হাজার হাজার মানুষ নামে সে সব গাড়ি থেকে। লিলুয়া-বেলুড়-দমদমের নানান কারখানার শ্রমিক এরা, অসংখ্য অগণিত অফিসের কেরানি। এই দু দলই বেশি– কিন্তু তা ছাড়াও আসে বহুরকমের মানুষ, সারাদিন ঘুরে ঘুরে গস্ত ক’রে সন্ধ্যার সময় ফেরে বিপুল মালের বোঝা টেনে; আসে হোটেল-রেস্তোরাঁ মিষ্টান্নভাণ্ডারের বয়-খানসামা-কারিগর; বিপুল পণ্যের পসরা নিয়ে আসে ব্যাপারীর দল, শাকসবজি-ফলমূলের ফসল নিঃশেষ ক’রে টেনে আনে গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে; ইস্কুল- কলেজের ছেলে-মেয়েরাও আসে কিছু কিছু; আসে কর্মপ্রার্থী বেকারের দল। আরও ছোট- বড় বহু উদ্দেশ্য ও আশা নিয়ে আসে বহু বিচিত্র মানুষ। সকাল থেকে বেলা দশটা- এগারোটা পর্যন্ত বিরাট জনতা দলে দলে এসে পৌঁছতে থাকে এই সুবিপুল মহানগরীর দুটি দ্বারপ্রান্তে।

    এরা থাকে নানান জায়গায়। বহুদূর– চল্লিশ-পঞ্চাশ মাইল কিংবা আরও দূরে থাকে কেউ কেউ। দূরবর্তী স্টেশন থেকেও হয়ত দু-তিন মাইল তফাতের ঝিঁঝিঁ-ডাকা, জোনাকি- জ্বলা জনবিরল নিভৃত গ্রাম সে-সব। আবার খুব কাছাকাছি জায়গা থেকেও আসে অনেকে। কলকাতার একেবারে কাছে, গায়ে গায়ে লেগে থাকা গণ্ডগ্রাম ও উপনগরীর জনাকীর্ণ স্টেশন থেকেও বিস্তর লোক আসে। সংখ্যায় এরাই বরং বেশি। বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, কালিঘাট, উল্টোডাঙ্গা, দমদম, আগরপাড়া, সোদপুর, বালি, উত্তরপাড়া, বেলুড়, রামরাজাতলা, সাঁতরাগাছি, মৌরীগ্রাম, কদমতলা, বড়গেছে, মাকড়দা– আরও অসংখ্য নামের স্টেশন থেকে আসে তারা গাড়ি-বোঝাই হয়ে। ট্রেনগুলো যেন অজগরের মতো স্টেশনে স্টেশনে গিলতে গিলতে আসে মানুষগুলোকে– একেবারে এখানে পৌঁছে উগরে দেয়। ঐটুকু ট্রেনের একটা কামরায় অতগুলো মানুষ ছিল তা চোখে দেখেও বিশ্বাস হ’তে চায় না। যেমন বিশ্বাস হ’তে চায় না কাছাকাছির ঐসব স্টেশনগুলোয় দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য লোক শেষ পর্যন্ত উঠবে এই ঠাস-বোঝাই কামরাগুলোর মধ্যে।

    নিঃশেষে শুষে নেয় এই শহর আর তার আশপাশের কলকারখানা অফিসগুলো– বহুদূরস্থিত উপকণ্ঠের কর্মক্ষম মানুষগুলোকে। অনেককে ভোরবেলাই বেরোতে হয় ফেরে একেবারে রাত্রে। বহুদূরের গ্রাম থেকে আসে যারা, অথচ ঠিক আটটায় যাদের হাজিরা দিতে হয়, তাদের কেউ কেউ সূর্য অনুদয়েই ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। গরমের দিনেও দিবালোকে তাদের মুখ দেখতে পায় না ঘরের লোক। মেচাদা-বাগনান থেকে যারা লিলুয়ার কারখানায় চাকরি করতে আসে, তাদের ছেলেমেয়েরা রবিবার বাড়ির মধ্যে একটা অপরিচিত লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখে অবাক হয়ে যায়।

    এমনি করে আসতে আসতে বেলা দশটার মধ্যেই নিঃশেষে চলে আসে খেটে-খাওয়া মানুষের দল। পড়ে থাকে শুধু রুগ্ন অশক্ত শিশু ও ছেলেমেয়েরা। তারপর সারাটা দিন যেন ঘুমিয়ে থাকে এই সব জায়গাগুলো।

    এখন– এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা লাভ ও ভারতভঙ্গের পর হয়ত আর অতটা নেই। এই শহর এগিয়ে গেছে বহুদূর পর্যন্ত। এখন জনবিরল ও নিভৃত সুপ্তশান্ত গ্রাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। অসংখ্য সমস্যার জটিল ও কুটিল ঘূর্ণাবর্তে শান্তি বা সুপ্তি গেছে তলিয়ে। কিন্তু উনিশ শ’ কুড়ি-পঁচিশ-ত্রিশেও এরকম ছিল না। তখন সকাল আটটা থেকেই এই সব জায়গাগুলোতে শুরু হয়ে যেত প্রমীলার রাজত্ব। আপন আপন গৃহস্থালিতে খেটে খাওয়া বাঁধা জীবনযাত্রার মেয়ে তারা। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সীমিত, শক্তি ছিল সামান্য। তাদের জ্ঞান ছিল সংসারের ক্ষুদ্র সীমায় আবদ্ধ। অতি সংকীর্ণ গণ্ডিবাঁধা পথে আবর্তিত হ’ত তাদের জীবনযাত্রা। বাইরের বিপুল জগৎ তাদের কাছে অস্পষ্ট ধারণার বস্তু মাত্র। সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজেদের বিশেষ বিশেষ সমস্যার ঠুলি পরে তারা সংসারের ঘানি- গাছে ঘুরে মরত দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। ছোট ছোট সুখ-দুঃখ ছোট ছোট আশা-কামনা– অতি ক্ষুদ্র স্বার্থ-বুদ্ধি কলহ-কচকচির মধ্যেই একদিন তারা চোখ মেলত এ-পৃথিবীতে; আবার তার মাঝেই একদিন বুজে যেত সে-চোখ চিরকালের মতো। অতি ছোট ছোট তৃপ্তি বা অতৃপ্তি বুকে নিয়ে সেদিন যাত্রা করত তারা বিধাতার দরবারে যিনি এ পৃথিবীতে পাঠিয়েও তার সঙ্গে পূর্ণ পরিচয়ের সুযোগ দেন নি তাদের।

    আমার এ কাহিনী আরম্ভ হচ্ছে এমনি সময়েই– এমনি মানুষদের নিয়েই। শ্যাওলাদামে ভর্তি টোপাপানায় ঢাকা ডোবার মতোই নিস্তরঙ্গ তাদের জীবন। সেখানে বাইরের ঝড়ঝাঁপটা সামান্য স্পন্দন মাত্র জাগাতে পারে– তরঙ্গ তুলতে পারে না। বাহির বিশ্বের বিপুল কোন বিপর্যয় তাদের কাছে দূরশ্রুত মেঘ-গর্জনের মতোই, বড় বড় সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস তাদের অলস-অবসর বিনোদনের উপাদান মাত্র। সে- সব যুগান্তকারী ঘটনার পরিণাম তাদের কাছে অকিঞ্চিৎকর, তার থেকে নিজেদের কূপমণ্ডুক জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ সমস্যাও ঢের বড়।

    তবু কাল বদলায়। বিশ্ব-সংসার নিজের নিয়মে আবর্তিত হয়। সে পরিবর্তন তাদের আপাত-স্থির জীবনেও চাঞ্চল্য আনে, ভাঙ্গন সৃষ্টি করে।

    এ কাহিনী সেই নিস্তরঙ্গতার ও সেই চাঞ্চল্যের। সেই স্থাবরতার ও সেই ভাঙ্গনের।

    লেখক

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    লোকে বলে ধর্মের জয় অধর্মের পরাজয়– এ হবেই। যে সৎপথে থাকে, যে ধর্মকে ধরে থাকে শেষ পর্যন্ত তারই জিৎ হয় এ সংসারে। বহু লোকের মুখেই কথাটা শুনেছে মহাশ্বেতা। ছেলেবেলা থেকেই শুনে আসছে। নানা বিভিন্ন রূপে, নানা বিভিন্ন শব্দবিন্যাসে। তবে শব্দে বা রূপ যে তফাৎই থাক– সব কথারই সার-মর্ম এক। দীর্ঘ-দিন ধরে শোনার ফলে বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল কথাটায়। আর সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি ক’রেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে একটা অস্পষ্ট আকারহীন আশার প্রাসাদও গড়ে তুলেছিল। কিন্তু সে প্রাসাদের ভিত্তিমূল এবার নড়ে উঠেছে, সেই বিশ্বাসটাকেই আর ধরে রাখা যাচ্ছে না কোনমতে।

    ‘মিছে কথা! মিথ্যে কথা ওসব! কথার কথা। লোকের বানানো গালগপ্প!… ধৰ্ম্মপথে থাকো তাহ’লেই তোমার সব হবে। মুখে আগুন অমন সব হওয়ার। মুড়ো খ্যাংরা মারতে হয় অমন একচোকো ধম্মের মুখে আর ঐ ধম্মের গৎ যারা আওড়ায় তাদের মুখে! গুণে গুণে সাত ঘা ঝ্যাঁটা মারতে হয়! আমার দরকার নেই আর ওসব ধম্মের বুলিতে। অরুচি ধরে গেছে একেবারে। জন্মের শোধ অরুচি ধরে গেছে। সব মিছে, সব ভুয়ো।- আসল কথা যে যা সুবিধে করে নিতে পারো এ সংসারে–নাও। হরেহম্মে হোক, লুটপাট করে হোক– আপনার কাজটি বাগিয়ে নাও– তোমারই জিৎ। কিচ্ছু হবে না। হবেই বা কি? অকা সরকার বলত না যে মাকড় মারলে ধোকড় হয়–চালতা খেলে বাকড় হয়, তাই ঠিক।… যার বুদ্ধি আছে, ক্ষ্যামতা আছে, বুকের পাটা আছে– এ সংসারে তারই জয়-জয়কার — বুঝেছ? খোদ ভগবানও তাকে ভয় করে চলে।’

    কথাগুলো যে কাকে বোঝায়–নিজেকে না প্রতিপক্ষকে, তা মহাশ্বেতা নিজেও জানে না। বেলা নটা দশটার সময় পুকুরঘাটে যখন কেউ থাকে না তখন সকালের এক-পাঁজা এঁটো বাসন নিয়ে গিয়ে জলে ভিজোতে দিয়ে বসে বসে আপনমনেই গজরাতে থাকে সে। যেন বাতাসের সঙ্গে ঝগড়া করে।

    মাঝে মাঝে শ্রোতাও জুটে যায় অবশ্য। ওবাড়ির জাঠতুতো বড় জা লীলার মা মাঝে মাঝে এই সময়টায় ঘাটে আসেন। তাঁর ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে, দুই বৌ-ই বলতে গেলে সংসার বুঝে নিয়েছে– সুতরাং কাজ কম। প্রথম প্রথম বৌদের সঙ্গে ঝগড়া করে দিন কাটত, এখন তারাই গিন্নি, তাদের স্বামীর রোজগারে সংসার চলে, কাজেই সেদিক দিয়ে বেশি সুবিধে হয় না। একটা কথা বললে তারা দশটা শুনিয়ে দেয়। এখন সকাল থেকে একটি গামছা কোমরে, একটি গামছা বুকে দিয়ে তিনি বাগানে ঘুরে বেড়ান। নিজের বাগানে উচ্ছে গাছে ঠেকো দেওয়া, শসা গাছের মাচা ঠিক করা হয়ে গেলে — কোন কোন দিন নিচু বেড়া ডিঙ্গিয়ে এসে এদের বাগানেরও তদ্বির করেন। অবশ্য একেবারে নিঃস্বার্থ ভাবে নয়– কারণ যেমন নিঃসঙ্কোচে তিনি এসে এদের বাগানে বেগার খাটেন তেমনি নিঃসঙ্কোচেই যাবার সময় এদের বাগান থেকে ডুমুরটা, খাড়াটা– সুবিধে হ’লে গোটাকতক আমড়া, এমন কি কাঁদি থেকে দুটো চারটে কাঁচ-কলাও পেড়ে নিয়ে যান। এরা তা’ জানে, কারণ লীলার মা চুরি করেন না– প্রকাশ্যেই নেন। প্রমীলা প্রথম প্রথম ঝগড়া করত– বৃথা দেখে এখন আর করে না। লীলার মা সপ্রতিভভাবেই হেসে বলতেন, ‘রাগ করিস কেন নতুন বৌ, এ তো আমার নেয্য পাওনা–ফী। কাজ করে দিই–তার মজুরি নেই?

    প্রমীলা হয়ত বলত, ‘কে কাজ করতে বলে আপনাকে? কে সাধে?

    ‘ওমা–সাধাসাধির আবার কী আছে? এ তো পরের বাগানের কাজ নয়–আপনার লোক, দশরাত্তিরের জ্ঞাতি। আমারটা করব তোদেরটা করব না? এ আবার কি কথা!’

    ভোর থেকে বাগানের তদ্বির ক’রে এই সময়টা লীলার মার স্নান করতে আসার সময় হয়। বিশেষ করে মহাশ্বেতার গলার আওয়াজ পেলে হাতের দুটো একটা কাজ বাকি রেখেও চলে আসেন। ওধারের ঘাটের একটা পৈঠেতে বসে হাঁক দিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘কী হ’ল লা সেজ বৌ, আজ আবার ধম্মকে নিয়ে পড়লি কেন?’

    ‘এর আবার পড়াপড়ির কি আছে! অসহ্যি হয় বলেই বলা। তোমরা তো দেখছ, সেই সাত বছরের মেয়ে এদের বাড়ি এসেছি, একদিনের জন্যে কারুর মন্দ করেছি, না কারুর কুচ্ছো করে বেড়িয়েছি? ভূতের খাটুনি খেটেছি চিরকাল–গুরুজনরা যা বলেছে করেছি; কখনও উঁচু বাগে চেয়ে দেখেছি এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না.. তা কী ফলটা হ’ল বলতে পারো? আমি যে দাসি সেই দাসিই রয়ে গেলুম এ বাড়িতে। যিনি রাণীগিরি করতে এসেছিলেন তিনি রাণীগিরি করে যাচ্ছেন। এই কি ধম্মের বিচার হ’ল? কেন, আমি তাঁর কি করেছি?’

    কৌতুকের ও তৃপ্তির হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায় লীলার মার। যতদূর সম্ভব কণ্ঠে সহানুভূতি টেনে এনে বলেন, ‘আর দুটো চারটে বছর কাদায় গুণ ফেলে কাটিয়ে দে, তারপর আর তোর ভাবনা কি? যেটের এখনই তো তোর ছেলেরা সব মাথাধরা হয়ে উঠেছে, ওরাই তো বড়ো– দুদিন পরে তো ওরাই বাড়ির কত্তা হবে। তখন তোর কাছেই জোড়হস্ত থাকতে হবে সবাইকে।

    ‘ওগো রেখে বোস, রেখে বোস। ওসব কথা আমাকে শোনাতে এসো না। বলে অত সুখ তোর কপালে, তবে কেন তোর কাঁথা বগলে।… আমার কপাল কত পোস্কার দেখছ না। আমার দিদ্‌মা বলতেন যে, যে আঁটকুড়ো হয় তার পৌত্তুরটি আগে মরে।… ছেলেদের কথা আর তুলো না। ওরা আরও এক কাটি সরেশ। নিজেরা তো নিজেদের গণ্ডা বুঝে নিতে পারেই না, আমি কিছু বলতে গেলে উলটে আমার সঙ্গে ঝগড়া করে।…হবে না, কেমন ঝাড়ের বাঁশ সব। ওদের গুষ্টি চিরকাল মহারাজা মহারাণীর সামনে হাতজোড় করে কাটালে আর যথাসম্ভব এনে তাদের খপ্পরে তুলে দিলে– ওরাও তাই শিখবে তো! এখনই সপুরী সব সেইখেনে দেখগে যাও হাতজোড় করে আছে। তাও যদি তারা মুখপানে চাইত একটু।…লজ্জা ঘেন্না পিরবিত্তি কিছু কি আছে ওদের! থাকবেই বা কি করে, জন্মে এস্তক যা দেখছে তাই তো শিখবে! বলে আগন্যাঙলা যেমনে যায় পেছন্যাঙলা তেমনে ধায়। ঝ্যাঁটা মারো এমন সংসারে আর এমন ছেলে-পুলেতে!’

    নির্গমনের পথ পেলেই নাকি বাষ্পের বেগ প্রবলতর হয়ে ওঠে, সেইটাই নাকি বাষ্পযন্ত্রের মূল কথা। মহাশ্বেতার অন্তরের পুঞ্জীভূত বিষ-বাষ্পও বহিরাগমনের এই সামান্য পথ বেয়ে প্রবলতর বেগ ধারণ করে। তারই উত্তেজনায় সে আর কিছু করার মতো খুঁজে না পেয়ে হাত দিয়ে ঢেইয়ে জল তুলে তুলে অকারণেই ঘাটের পৈঠেগুলোকে ধুতে শুরু করে!

    আসলে মহাশ্বেতার সবচেয়ে বড় ব্যথার জায়গাটাতেই ঘা দিয়েছেন লীলার মা। জীবনে সব কর্তৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে মনে মনে এই শেষ আশাটিকেই ধরে ছিল সে। ছেলেরা তো তার আপন, ওরা তো তার পেটেই হয়েছে–ওদের ওপর তার কর্তৃত্বটা খাটবে। আর ওরা বড় হয়ে উঠলে সেই কর্তৃত্ব একদিন সংসারের ওপরও প্রতিষ্ঠিত হবে।

    কিন্তু সেই সর্বশেষ আশাটিতেই বুঝি ছাই পড়তে যাচ্ছে। ছেলেরা কেউ লেখাপড়া শেখে নি, কেউ শিখছে না–। ওর মা বলেন, ‘বামুনের ঘরের গোরু! ওরে তোর জন্মদাতাকে দেখে শিখলি না– ভদ্দরলোকের ছেলে বামুনের ছেলে মুখু হ’লে কী হয়। যেমন করে পারিস লেখাপড়া শেখা। খানিকটা অন্তত ইংরিজি শিখুক। করছিস কি!’ কিন্তু সেটা নিয়ে তত মাথা ঘামায় না মহাশ্বেতা। সে জানে যে এদের বংশে তেমন কেউ হবে না। লেখাপড়া শিখুক না শিখুক–ওদের দাদামশায়ের মতো অমানুষ হয়ে উঠবে না। সভ্যতা সহবৎ এ আর নতুন ক’রে জানবার দরকার নেই, এ ওদের মধ্যেই আছে। এদের–মানে ওদের বাপ-কাকার ধারা খানিকটা তো পাবেই।… আর রোজগার? তার জন্যেও ভাবে না সে। ওদের গুষ্টিরা কে কত লেখাপড়া শিখেছিল? তারা যদি মোট মোট টাকা রোজগার করে আনতে পারে–ওরা পারবে না! সে একরকম ঠিক হয়েই যাবে, বয়স বাড়লেই বাপ-কাকারা যেখানে হোক ঢুকিয়ে দেবে!…ওদের বাপ-কাকার সে আমল থেকে কালের হাওয়া যে খানিকটা পাল্‌টেছে, এ কথাটা মহাশ্বেতার মাথায় ঢোকে না। সেটা বোঝবার মতো শিক্ষাদীক্ষা বা অনুকূল আবহাওয়া কিছুই তো সে পায় নি!

    না, সে সব চিন্তা নেই ওর।

    ওর জ্বালা অন্যত্র। ছেলেগুলো, মেয়েটা–যত বড় হচ্ছে সব যেন এক-কাঠা হচ্ছে, সবাই গিয়ে জড়ো হচ্ছে ওদিকে, শত্রুর দিকে। কেউ কি তার দিক টানতে নেই! এই জন্যেই তো আরও এত আক্রোশ ওর জায়ের ওপর। গুণতুক যে কিছু করে সে সম্বন্ধে মহাশ্বেতার মনে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু কেন? কেন? এত করেও কি আবাগী সর্বনাশীর মনস্কামনা পূর্ণ হ’ল না? ছেলের বাপকে তো স্বামী-স্ত্রী মিলে চিরকাল ভেড়া করে রাখলে– আবার ছেলেমেয়েগুলোকেও ধরেছে! মেয়েটাও তো ওর দিকে হ’তে পারত! কী মন্তর যে ঝাড়ে মেজবৌ, ছেলেমেয়েগুলো সব যেন ওর কথায় ওঠে বসে। একটা কিছু বলবার জো নেই– নেয্য কথা, যথা-কথা বলবার থাকলেও বলতে পারে না–ঐ ওদের জন্যে। শত্রু হাসবার লজ্জায় অপমানে সরে আসতে হয় মুখে কুলুপ এঁটে।

    এ বাড়িতে এসে পর্যন্ত কম সইতেও তো হ’ল না মহাশ্বেতাকে। সাত বছরের মেয়ে সে এসেছে বৌ হয়ে–এখনকার দিনে সে বয়সে মেয়েরা পুতুল খেলে। সাত বছরের বৌ আর বাইশ বছরের বর। কথাটা শুনলে হাসে সবাই। এমন কি সেদিনও হেসেছিল অনেকে। কিন্তু এমন অসম বিবাহ দেওয়ার জন্যে মহাশ্বেতা অন্তত তার মাকে দোষ দিতে পারে না। সেদিন না হোক, পরে সে বুঝেছে যে কী অবস্থায় পড়ে তাঁকে এ বিবাহে মত দিতে হয়েছে। বরং সেদিন যে তাঁর মনে সামান্য এই বয়সের ব্যবধানটুকু বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি, এ জন্য মায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়।

    মহাশ্বেতার মা শ্যামা তখন একেবারে অসহায়। সরকার বাড়ির নিত্যসেবার আধসের চাল, কখানা বাতাসা আর একপো দুধ এই তাঁর তখন একমাত্র ভরসা– তিন চারটি ছেলেমেয়ে নিয়ে ঐটুকু সম্বল করেই দিন কাটছে তাঁর, অর্থাৎ দিনের পর দিন উপবাস করছেন। স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে থাকতেন অর্ধেক দিন, সে জন্য সে চালটুকুও ভোগে আসত না প্রায়ই, কারণ পূজোর কাজটা পরকে ডেকে চালাতে হ’ত সে সময়। যে পরের বাঁধা কাজে বেগার দিতে আসবে সে অবশ্যই শুধু হাতে যবে না। অতগুলি প্রাণীর ঐ সামান্য সম্বলটুকুও তাকে ধরে দিতে হত। ঠাকুরের সেবা না হ’লে ঐ তিনদিক চাপা ঘরখানাও থাকে না– একেবারেই পথে বসতে হয়। উপবাস করে পড়ে থাকবার জন্যেও তো মাথার ওপর একটা আচ্ছাদন চাই।

    এই চরম দুঃসময়ের মধ্যেই সরকারগিন্নী মঙ্গলা প্রস্তাবটা এনেছিলেন। দোষে গুণে জড়ানো বিচিত্র মানুষ মঙ্গলা, কিন্তু দোষ যা-ই থাক, তিনি যে ওদের যথার্থ মঙ্গলাকাঙ্ক্ষিণী ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই প্রথম ওদের বাড়ি আসার দিনটি থেকেই, শ্যামা ওঁর কাছে নানাভাবে উপকৃত। তাছাড়া তিনিই সেদিন বলতে গেলে শ্যামাদের একমাত্র অভিভাবিকা। মনিবগিন্নী তো বটেই। সুতরাং তিনি যখন এই বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলেন এবং ‘তুই ভাবিস নি বামনী, যেমন করে হোক হয়ে যাবে’ এই আশ্বাস দিয়ে বিয়ের ভারটা সত্যি সত্যিই একরকম নিজের হাতে তুলে নিলেন– তখন আর শ্যামার ইতস্তত করা সম্ভব হয় নি, সে অবস্থা তাঁর ছিল না। তাই সাত বছরের মেয়ের চেয়ে বরের পনেরো বছর বেশি বয়সটা সেদিন কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি।

    কিন্তু বয়সের এই প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানটাই মহাশ্বেতার কাছে খুব বড় কথা ছিল না। বাইশ বছরের পুরুষ তারপর ঢের দেখেছে মহাশ্বেতা, এখনও ঢের দেখছে–ঐ বয়সে অমন রাশভারী পুরুষে পরিণত হ’তে আর কাউকে দেখে নি। তার কপালেই যেন এমনি সৃষ্টিছাড়া হয়ে জন্মেছিল অভয়পদ। শুধু কি বয়সের, আরও বহু ব্যবধান ছিল দুজনে। মহাশ্বেতা চিরদিনই বেঁটেখাটো গোল-গোল– অভয়পদ লম্বা চওড়া দশাসই পুরুষ। মহার রঙ্ মাজামাজা, অভয় ফিট্ গৌরবর্ণ। অত বড় পুরুষ ঘনকালো চাপ দাড়ি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিল একরত্তি একটুখানি মেয়েকে। সেই প্রথম চারচোখে চাওয়ার ক্ষণটি থেকেই মহাশ্বেতা স্বামীকে যে ভয় ও সমীহের চোখে দেখেছিল, সারা জীবনেও তার আর কোন পরিবর্তন হয় নি। পরবর্তীকালে তার সম্বন্ধে স্বামীর স্নেহেরও কিছু কিছু পরিচয় পেয়েছে, তাঁকে পরম আশ্রয় বলে অবলম্বন করতে পেরেছে, তবু সেই স্বল্পভাষী গম্ভীর স্থিতধী মানুষটির সম্বন্ধে তার সেই সবিস্ময় সম্ভ্রমের ভাবটা কখনও কাটে নি; আজও সে তাঁকে মনে মনে ভয় ও সমীহ করে চলে।

    শ্বশুরবাড়িতে এসে পর্যন্ত কাকেই বা সে ভয় না করত!

    একে তো ঐ বয়সে, বলতে গেলে মূলসুদ্ধ উৎপাটিত হয়ে, সম্পূর্ণ নতুন আবহাওয়ায় নতুন জগতে আসা। তার ওপর উপদেশ ও হুঁশিয়ারীরও অন্ত ছিল না সেদিন। শ্বশুরবাড়িতে কী ভাবে চলতে হয়, কীরকম আচরণ করলে বাপের বাড়ির নিন্দা হ’তে পারে এবং সেটা যে কী পর্যন্ত গর্হিত কথা ও বাপ-মার সম্বন্ধে অপমানকর কোন মতেই সে নিন্দা যে হ’তে দেওয়া উচিত নয়– সে সম্পর্কে বিচিত্র ও বিবিধ উপদেশে বিহ্বল ও দিশেহারা হয়েই এ বাড়িতে প্রবেশ করেছিল সে। সে জন্যে ভয়ের অন্ত ছিল না। তার ভালমানুষ শাশুড়িকে পরবর্তীকালে আর কেউ ভয় করছে বলে জানা নেই মহাশ্বেতার কিন্তু সে করেছে। ফলে সে দেবর ননদ কারুর কাছেই জ্যেষ্ঠাবধূর পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হ’তে পারে নি কোনদিন। সকলেই তাকে অবহেলা করেছে, ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করে নি কখনও। তার অনেক পরে মেজ বৌ এসে অনায়াসে তাকে ডিঙ্গিয়ে এ বাড়ির কর্তৃত্বের রাশ টেনে নিয়েছে নিজের হাতে।

    আসলে বুদ্ধি ও সাংসারিক অভিজ্ঞতাতেও সে সকলের পিছনে পড়ে আছে চিরকাল। বুদ্ধিটা হয়ত স্বাভাবিক ভাবেই তার কম, তার ওপর যখন তার বিয়ে হয়েছে তখন তার মস্তিষ্ক পরিণত হবার কথা নয়, বুদ্ধিও নিতান্ত অপরিণত। আর এখানে এসে এমন ভাবেই এদের সংসারের ঘানিগাছে আটকে গেছে যে, আর কোন দিকে তাকিয়ে দেখার–এ বাড়ি বা এ সংসারের বাইরেকার কোন অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ ঘটে নি। সুবিপুল জগৎ তার কাছে এই বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সুতরাং সব দিক থেকেই, সে যেন তার সেই সাত বছরের বয়ঃসীমার কাছাকাছিই থেকে গিয়েছে।

    কিন্তু মেজ জা প্রমীলা এসেছিল অনেক বেশি বয়সে। তাছাড়া স্বভাবতই সে তীক্ষ্ণবুদ্ধিশালিনী। ভগবান এক একটি মেয়েকে অনেকের ওপর আধিপত্য করবার সহজ সনদ দিয়েই পৃথিবীতে পাঠান, প্রমীলাও সেই ধরনের মেয়ে। সে এসে স্বাভাবিকভাবেই শাশুড়ি, জা, ননদদের ডিঙ্গিয়ে গেছে। চেহারাও অবশ্য তার খারাপ নয়, কিন্তু পুরুষ রূপের চেয়ে অনেক বেশি আকৃষ্ট হয় মেয়েদের বুদ্ধির দীপ্তিতে, ব্যবহারে, কথাবার্তায়। প্রমীলার বেলাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। ছোট দেওর দুর্গাপদ তো দিনকতক উন্মত্তই হয়ে উঠেছিল ওকে নিয়ে; ছোট বৌ তরলার কী দুঃখেই না দিন কেটেছে সে সময়টা– নিতান্ত তার কপালে আছে স্বামী পুত্র ভোগ করা তাই ফিরে পেয়েছে দুর্গাপদকে, সেও নিতান্ত দৈবাৎ। কিন্তু তবু পুরোটা পেয়েছে বলে মনে করে না মহাশ্বেতা– নইলে আজও তো সেই মেজ বৌয়ের কথায় দুর্গাপদ ওঠে বসে, মাইনের টাকা পাই-পয়সাটি এনে ধরে দেয় তাকেই।

    অবশ্য সেদিক দিয়ে অভয়পদ সম্বন্ধে কিছু বলবার নেই মহাশ্বেতার। দেবতাদের চরিত্রেও দোষ আছে, অভয়পদর চরিত্রে নেই। সেদিক দিয়ে সাক্ষাৎ মহাদেব। মহাশ্বেতার ক্ষোভ অন্যত্র। অভয়পদও মুখে স্বীকার না করুক, মনে মনে প্রমীলাকেই ঐ সংসারের প্রকৃত গৃহিণী বলে জানে। আর বোধ হয় সেই জন্যেই, না কখনও সে মহাশ্বেতার সঙ্গে কোন সাংসারিক বিষয়ে আলোচনা করে, না তাকে কোন কথা খুলে বলে। স্নেহ আছে– কিন্তু সে স্নেহ ছেলেমানুষের প্রতি বয়স্ক লোকের। জীবনের অংশীদার বলে গ্রহণ করতে পারলে না কখনও। ঠিক এমনভাবে গুছিয়ে হয়ত ভাবতে পারে না মহাশ্বেতা কিন্তু এই ধরনেরই আকারহীন একটা নিরুদ্ধ অভিমান তাকে নিরন্তর পীড়া দিতে থাকে। কিছুতেই কোন মতে স্বস্তি পায় না।

    এত কথা ছেলেমেয়েদের জানবার কথা নয়, তারা জানেও না। এর মূল চলে গেছে বহুদূর অতীতে। এর ইতিহাস শুরু হয়েছে তাদের জন্মের পূর্ব থেকে। এ অভিমানের কারণ ও মূল্য বোঝবার মতো জীবন-অভিজ্ঞতাও তাদের নেই। তারা শুধু এর বহিঃপ্রকাশটাই দেখে। কারণ খুঁজে পায় না বলেই ভাবে অকারণ। মহাশ্বেতাকে দোষী করে তাই।

    এমন কি সেদিনের মেয়ে স্বর্ণলতা পর্যন্ত বলে, ‘মা যেন সব্বদা কী এক জ্বালায় ছিট্‌ফিটিয়ে বেড়াচ্ছে। তোমার বাপু মনটা ভাল নয়, যাই বলো। বড্ড রীষ তোমার তোমার কোনদিন ভাল হবে না, দেখে নিও। দিদিমা ঠিকই বলে, খল যান রসাতল। তোমার ভাল হবে কী করে?’

    মহাশ্বেতা শোনে আর আরও জ্বলে যায়। ললাটে করাঘাত করে। ছুটে চলে যায় নির্জন জায়গায় মনের বিষ উদ্গীরণ করতে।

    ২

    স্বামী অভয়পদের বিরুদ্ধে মহাশ্বেতার বিস্তর নালিশ। সে স্ত্রীর সঙ্গে কোন দিন কোন বিষয়ে আলোচনা করে না; সে স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘকাল– প্রথম সন্তান হওয়ার পর থেকেই এক ঘরে বাস করে না; তারই পয়সায় শুধু নয়, বেশির ভাগ তারই গতরে এতবড় বাড়িটা উঠেছে অথচ তার বৌ শোয় সবচেয়ে পুরানো আর সবচেয়ে চাপা ঘর-খানায় (তারই ব্যবস্থা) এবং সে নিজে শোয় চলনে, তাও একখানা কাঠের বেঞ্চির ওপর; যুদ্ধের সময় চোরাই মাল সরিয়ে মোটা টাকা কামিয়েছিল, সেই সব টাকাটাই সে মেজ ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে, শুধু তাই নয়– আজ পর্যন্ত মাইনের সমস্ত টাকাটা ধরে দেয় ভাইয়ের হাতে; খায় সে-ই সবচেয়ে খারাপ; কাপড় পরে সবচেয়ে মোটা আর খাটো; এক ময়লা জিনের কোট ছাড়া কোন জামা পরল না আজ পর্যন্ত; চিরকাল হেঁটে অফিস করেছে এখান থেকে–তিন ক্রোশ তিন ক্রোশ ছ’ ক্ৰোশ পথ। এখন হাঁটতে পারে না, ট্রেনে যায় কিন্তু ট্রামে কখনও চড়ে নি– অথচ তারই পয়সায় বড়মানুষ হয়ে ভায়েরা কত কাপ্তেনি করছে; সংসারে খাটে মজুরের মতো কিন্তু সে সংসার পরিচালনার ব্যাপারে একটা কথাও বলে না কোনদিন, এমন কি মেজকর্তার ‘কুচকুরে-পানায় ছেলেগুলো যে একটাও লেখাপড়া শিখছে না– সে সম্বন্ধেও সে সম্পূর্ণ উদাসীন; ইত্যাদি, ইত্যাদি। তার পুরো নালিশের ফর্দ লিপিবদ্ধ করলে একটা বড় পুঁথি হয়ে যাবে।

    কিন্তু তৎসত্ত্বেও, অভয়পদের এই সর্বশেষ কীর্তির জন্য মহাশ্বেতা সত্যিই প্রস্তুত ছিল না। সে যে ওর সঙ্গে এমন শত্রুতা করবে, এতবড় সাধে বাদ সাধবে তা কখনও কল্পনাও করে নি সে। যার সম্বন্ধে এই দীর্ঘকাল, প্রায় দু যুগ ধরে যে প্রচণ্ডতম অথচ অসহায় বিদ্বেষ বহন করে আসছে– তাকে এতদিন পরে আঘাত দেবার এমন অমোঘ ব্রহ্মাস্ত্রটি যে কেড়ে নেবে অভয়পদই– এ সে স্বপ্নেও ভাবে নি।

    আর কী কৌশলেই না মেজকর্তা অম্বিকাপদ এই কাজটি করিয়ে নিলে! উঃ সত্যি, বুদ্ধির কথা ধরলে নিত্য উঠে মেজকর্তার ‘পাদোক জল’ খাওয়া উচিত, এত বড় ধূর্ত, এমন ফন্দিবাজ বোধহয় আর দ্বিতীয় কেউ নেই। অন্তত মহাশ্বেতার জীবনে আর কারুর কথা মনে পড়ে না। তার চেয়েও এক কাঠি সরেশ হ’ল মেজগিন্নী। বিধাতা নির্জনে এসে এদের জোড় মিলিয়েছেন।

    না, একটা অনাথ বালক আশ্রয় পেল তাতে কোন ক্ষোভ নেই মহাশ্বেতার। প্রথম যখন খবরটা কানে গেল যে মেজ বৌয়ের সদ্য বিধবা বোন সরমা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে, একমাত্র অনাথ ছেলেটার মুখে জল দেবার কেউ নেই, পাড়ার লোকের দয়ার ওপর নির্ভর করে একা সেই ভুতুড়ে ভাঙ্গা বাড়িতে পড়ে আছে–তখন কথাটা ঠোঁটের ডগায় এসেছিল মহাশ্বেতার, ‘আহা ছেলেটাকে এখানে এনে রাখলে তো হয়।’ আগেকার মতো বোকা থাকলে বলেই ফেলত হয়ত কিন্তু ইদানীং অনেক অগ্রপশ্চাৎ ভাবতে শিখেছে সে, ওর মুখ থেকে কথাটা বেরোলেই মেজবৌ লুফে নেবে, আর সেই সঙ্গে সে সম্পৰ্কে ভবিষ্যতে কোন কথা শোনাবার মত পথটিও চিরকালের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ভেবেই অতিকষ্টে মুখের কথা মুখে চেপে রেখেছিল মহাশ্বেতা।

    অথচ ঠিক সেই কাণ্ডটিই তো হ’ল।

    সরমা বেচারির চিরকালই পোড়া কপাল। বিয়ে হয়েছিল যখন তখন ওর বর কোন্ সরকারি ইস্কুলে মাস্টারি করে– তখনকার দিনের ঈপ্সিত পাত্র। কারণ বিদ্বান এবং সরকারি-চাকরে একাধারে। কিন্তু বিয়ের পরই দেখা গেল ওর স্বামী প্রভাস চিররুগ্ন; রোগ তার সর্বাঙ্গে, বলতে গেলে সর্ববিধ। বারোমাসই ভোগে এবং প্রায়ই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। ফলে মাসের পর মাস ইস্কুল কামাই হ’তে থাকে। নেহাৎ সরকারি ইস্কুল বলেই কাজটা অনেকদিন টিকে ছিল কিন্তু সমস্ত রকম নিয়ম-কানুন এবং কর্তৃপক্ষের ধৈর্যের সীমা যেদিন লঙ্ঘন করল সেদিন আর টিকল না।

    সেও প্রায় দশ বছরের কথা। এর পর থেকেই প্রভাস বসে বসে খাচ্ছে। তবু তখনও মা ছিলেন, মার জন্য ছোটভাইকে কিছু কিছু দিতে হ’ত– এমনই বরাত, কিছু দিন বাদেই মাও মারা গেলেন। কোথাও থেকে কোন আয়ের পথ রইল না। কখনও এক আধটা মাস্টারি যে না পেয়েছে তা নয়, কিন্তু কোনটাই রাখতে পারেনি। একমাস কি আঠারো দিন কাজ করার পরই যদি দু-মাস কামাই হয় তো সে মাস্টারকে রাখাই বা যায় কী করে? প্রাইভেট টিউশ্যনিও মধ্যে মধ্যে পেয়েছে–দেশে-ঘাটে সে টিউশানির কীই বা মূল্য–তবু তাও তো থাকে নি। সর্বত্র একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অর্থাৎ এই দীর্ঘকাল বসে বসেই খেতে হয়েছে এবং কিছু কিছু চিকিৎসার খরচও যোগাতে হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাবার উপায় থাকত না প্রায়ই। চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তার ডাকতে হয়, ওষুধ কিনতে হয়। ইদানীং চোখ বুজেই থাকত প্রায় সরমা পাড়াঘর থেকে শোনা টোটকা-টুটকি ভরসা ক’রে। কিন্তু এক-এক সময় যখন খুব বাড়াবাড়ি হত তখন আর চুপ করে থাকা যেত না। তার ফলে একে একে যথাসর্বস্ব –জমি জায়গা, গহনা, আসবাব, মায় বাসন-কোসন বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়া আত্মীয়স্বজনদের কাছে ভিক্ষা তো আছেই। কিন্তু ক্রমাগত সাহায্য করা কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়– সুতরাং তারা প্রায় সকলেই সম্পর্ক ত্যাগ করেছে। একেবারে এমনি অসহায় ও নিঃস্ব অবস্থায় এনে পৌঁছে দিয়ে প্রভাস যেদিন মারা গেল সেদিন সরমা আর কোনও পথই কোথাও দেখতে পায় নি– আত্মহত্যা ছাড়া। সেই পথই সে বেছে নিয়েছে। আসন্ন শ্রাদ্ধ ও ছেলের ভবিষ্যতের সমস্যা ভগবান ও পাড়ার লোকের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজে সে কড়িকাঠ ও পুরনো শাড়ির সাহায্যে সব জ্বালা থেকে মুক্তি লাভ করেছে।

    খবরটা পাওয়া গেল সন্ধ্যাবেলা, ছোট দেওর দুর্গাপদর মুখে। সরমার গ্রামের একটি ছেলে ওদের অফিসে কাজ করে– তার মুখেই শুনেছে দুর্গাপদ। খবরটা শুনে মহাশ্বেতার চোখে জল এসে গিয়েছিল, ছেলেটাকে আনবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল সে– কিন্তু সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের এতবড় ব্রহ্মাস্ত্রটা নষ্ট করতেও মন ওঠে নি, দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে ছিল।

    সব মাটি করল অভয়পদ।

    তিনভাই এক সঙ্গে খেতে বসেছিল। অম্বিকাপদই কথাটা তুলল, ‘আমার সেজশালির কেলেঙ্কারিটা শুনলে দাদা?’

    অভয়পদ মুখ তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইল।

    ‘কাল নাকি গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে সে!’

    অভয়পদ মাথা নামিয়ে ধীরে সুস্থে ভাত মাখতে মাখতে শুধু প্রশ্ন করল, ‘ছেলেটা?’

    ‘ছেলেটা পাড়ার লোকের ওপর জিম্মে– আর কি! ঘরে নাকি একটা কাঁথাকানিও আর নেই বেচবার মতো। শ্রাদ্ধশান্তি করে শুদ্ধ হবারও একটা খরচ চাই তো, সেই জন্যেই বোধ হয় কোনদিকে কোন কূলকিনারা না পেয়ে গলায় দড়ি দিলে ছুঁড়িটা। কীই বা করবে– এমন অবস্থা হয়েছিল, ভিক্ষেও তো বোধ হয় আর কেউ দিত না। নিত্যি নেই দেয় কে, নিত্যি রুগী দেখে কে! তা প্রভাসচন্দ্রের তো দুটোই ছিল কিনা।’

    অভয়পদ কোন কথা কইল না, যেমন খাচ্ছিল তেমনি খেয়ে যেতে লাগল। রান্নাঘরের ভেতরেই ওরা খেতে বসেছে। বড় মেজ দুই বৌই সেখানে উপস্থিত। দেখা বা শোনা কোনটারই অসুবিধা নেই।

    খানিকটা পরে অম্বিকাপদই আবার প্রসঙ্গটা তুলল, ‘তাহ’লে কিছু তো সাহায্য করা দরকার–কী বলো দাদা?’

    ‘সাহায্য কী করতে চাও?’ শান্ত নিরাসক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল অভয়পদ।

    যাহোক কিছু। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকেও কিছু আসবে নিশ্চয়, কিন্তু খরচও তো কম হবে না, নমো-নমো করে করলেও বেশ কিছু লাগবে। ছেলেটার তো শুনেছি লেখাপড়া বন্ধ হয়ে আছে। অথচ ওর নাকি মাথা খুব ভাল, পড়াশুনোয় চাড়ও খুব। পাড়ার লোকের কাছ থেকে বই চেয়ে নিয়ে নিয়ে নিজে নিজেই পড়ে যা পারে।’

    ‘ছেলেটাকে এখানে বরং আনিয়ে নাও, যা হয় করে এখানেই শুদ্ধ হবেখন্।’

    সংক্ষেপে এই কথা বলে একেবারে উঠে দাঁড়ায় অভয়পদ। রাত্রের খাওয়া তার খুবই কম, সেটুকু সারা হয়ে গেছে।

    ঠিক এতটার জন্যে বোধহয় অম্বিকাপদও তৈরি ছিল না, কিংবা সবটাই অভিনয় (মহাশ্বেতার বিশ্বাস তাই)– সে একটু অবাক হয়ে বললে, ‘এখানে আনিয়ে নেব? মানে বরাবরের মতো? নইলে একবার নিয়ে এলে তো আর ঘাড় থেকে নামানো যাবে না!’

    ‘সেইটেই যথার্থ উপকার করা হবে, নইলে দু-দশ টাকা সাহায্য করলেই বা কি না করলেই বা কি?’ ওর শুদ্ধ হওয়া কি আর আটকে থাকবে? যেমন করেই হোক হয়েই যাবে।’

    ‘কিন্তু তাই বলে এতবড় একটা দায়িত্ব নেওয়া–। এখানে আনলে মানুষ করার সব দায়টাই তো চাপবে আমাদের ওপর!’

    তোমার এখানে এতগুলো লোক খাচ্ছে, একটা ছেলে বাড়তি খেলে টেরও পাবে না। আর মানুষ করা? মানুষ যদি হয় তো সে আপনিই হবে– না হয় সেখানে থাকলেও যা করত এখানেও তাই করবে। জবাবদিহি তো কারুর কাছে করতে হবে না সে জন্যে!’

    অভয়পদ আর দাঁড়াল না। তার পক্ষে এতগুলো কথা বলাই ঢের।…

    আর বলার দরকারই বা কি! অম্বিকাপদর মুখ স্মিত প্রসন্ন ভাব ধারণ করল। প্রমীলা স্বামীকে উপলক্ষ্য করে এবং সম্ভবত মহাশ্বেতাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘সত্যি, অনেক তপস্যা ক’রে এমন দাদা পেয়েছিলে! মানুষ নয়– সাক্ষাৎ দেবতা। আমাদের সঙ্গে মিলোতে গিয়েই আমরা ভুল করি, দোষ দিই–কিন্তু আমাদের মাপে মেলবার লোকই নয় যে।… ওঁকে এখনও তোমরা কেউ চিনতে পারো নি এ আমি জোর করে বলতে পারি।’

    মহাশ্বেতা এতক্ষণ অসহ্য ক্রোধে দাঁতে দাঁত ঘষছিল। এবার আর থাকতে পারল না, বলে উঠল, ‘কেমন করে চিনবে মেজবৌ, যাদের গোড়ে গোড় দেয় সদাসব্বদা, তারাই চেনে! মনের মতো কথা বললেই দেবতা– নইলে যারা হক্ কথা বলে তারা সব জানোয়ার বই তো কিছু নয়!’

    ‘পড়ল কথা সভার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে! তোমারই বা অসৈরণ হয় কেন দিদি! তোমায় তো কেউ বলে নি। তাছাড়া কে হক্ কথা বলে আর কে মিছে কথা বলে তা তো ঠিক করে বোঝবার কোন উপায় নেই! তা তোমার হক্ কথাটা কী শুনিই না?’

    ‘আর শুনে দরকার কি ভাই! যার কথা শোনবার তা তো শোনা হয়েই গেছে। দেববাক্য তো বেরিয়েছে মুখ দিয়ে– আর কেন?’

    ‘তবে কি তুমি বলতে চাও, এনে কাজ নেই ছেলেটাকে? পষ্ট করে খুলে বলোই না মনের কথা! অনাথ আতুর একটা ছেলে তোমাদের বাড়ির দুটো পাতকুড়োনো ভাত খেয়ে মানুষ হ’ত– তা না হয় হবে না। কী করা যাবে, মনে করব সেও নেই, মরে গেছে। চোখে তো দেখতে যাচ্ছি না। তা ছাড়া–রাস্তা তো কেউ তার ঘোচায় নি, কত লোকই তো ভিক্ষে করে জীবন কাটাচ্ছে!….তার জন্যে এত রাগারাগির কী আছে? বঠাকুর যাই বলুন, তোমার যদি মত না থাকে তো তাকে আনবে কে এখানে? আনব কি দুবেলা তোমার ঐ মধুর বাক্যি আর খোঁটা শোনবার জন্যে? তারপর শোকাতাপা ছেলেটা রেলে গলা দিক কি পুকুরে ঝাঁপ দিক– আমাদের মুখটা আরও উজ্জ্বল হোক আর কি! চোখের বাইরে যা-খুশি হোকগে, মরুক বাঁচুক আমরা তো আর দেখতে যাচ্ছি না। আমরা কেন এখানে এনে মাঝখান থেকে নিমিত্তের ভাগী হই?…. না বাপু, ও বটঠাকুর যাই বলুন, বড়গিন্নীর যখন মত নেই, তখন তুমি ও ব্যাপারে আর যেও না, এই সাফ বলে দিলুম!’

    মহাশ্বেতা এতক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে শুনছিল, মুগ্ধ হয়ে শুনছিলও বলা যায়–সে গালে হাত দিয়ে একদিকে মাথাটা হেলিয়ে বলল, ‘বাব্‌বা, কী বানাতেই পারিস তুই মেজবৌ! তাকে আনা আমার ইচ্ছে নয়– একথা আমি কখন বললুম লা, কার গলা জড়িয়ে বলতে গেলুম? বলে শুনে এস্তক চোখে জল রাখতে পারছি না, মনটা ছট্-ফট্ করছে– একটা দুধের বালক বাপ-মা মরা অনাথ– তার যদি একটা গতি হয় আমি তাতে বাদ সাধব! না তাকে আমি কথা শোনাতে যাবো?…. আমি কি এমনই পিচেশ?… উঃ ধন্যি বাবা, ধন্যি! দিনকে রাত করতে পারিস তোরা। আমারই ঘাট হয়েছিল তোদের কাছে মুখ খুলতে যাওয়া। বলি না তো কখনও, মুখে তো কুলুপ এঁটেই থাকি! যে যা খুশি করুক, মরুক হাজুক–এই শিক্ষা হয়ে গেল, আর যদি কখনও দুটি ঠোঁট ফাঁক করি!’

    বলতে বলতে রাগে দুঃখে অভিমানে অবিচারবোধে দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ে মহাশ্বেতার– সে ছুটে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

    আর যেতে যেতেই– সেই অবস্থাতেই– নিজের নির্বুদ্ধিতার পূর্ণ অর্থটা হৃদয়ঙ্গম হয়। এ বিষয় নিয়ে অন্তত মেজবৌকে কোন কথা শোনাবার পথটা সেও বন্ধ করে দিয়ে এল চিরদিনের মতো। আর শুধু অভয়পদকে দিয়েই নয়, তাকে দিয়েও বলিয়ে নিলে মেজবৌ, ছেলেটাকে এখানে আনাবার কথা!

    ৩

    অরুণ প্রথমে এসে অতটা বুঝতে পারে নি। প্রথমত দুটো প্রবল শোক, একান্ত নিঃসহায় এবং পরমুখাপেক্ষী হওয়ার দুর্ভাবনা, তারপর একেবারে অপরিচিত পরিবেশ–সবটা মিলিয়ে সে একটু বিহ্বল হয়েও পড়েছিল। কোন জিনিস ভাল করে লক্ষ করার মতো মানসিক অবস্থা তার ছিল না। তাছাড়া, কোন ঘটা না থাক– শ্রাদ্ধশান্তির কিছুটা ঝঞ্ঝাটও আছে–সেজন্য নিজেকে যথেষ্ট বিব্রত থাকতে হয়েছিল। কিন্তু সে সবগুলো মিটে গেলে থিতিয়ে বসার পর যখন চারিদিকে চাইবার মতো দৈহিক ও মানসিক অবস্থা হ’ল, তখন সে বেশ একটু অবাকই হয়ে গেল। ছেলে তিন কর্তার মিলিয়ে যেটের আটটি তখনই– মেয়ে অবশ্য একটি। লেখাপড়ার বয়স এদের সকলেরই হয়েছে, প্রথম তিনজনের তো উৎরেই গেছে। মেজকর্তা ও ছোটকর্তার তিন ছেলে এবং বড়কর্তার ছোটটি তবু ইস্কুল পাঠশালায় যায় একবার ক’রে– বড়গুলো তাও যায় না। যারা যায় তারাও কেউ কখনও বাড়িতে বই নিয়ে বসে না। এরা তাহ’লে পড়ে কখন?

    অরুণের পড়াশুনো হয় নি, হ’তে পারে নি ব’লে। কিন্তু ভদ্রলোক ব্রাহ্মণের ঘরের ছেলেরা যে পড়াশুনোর একটা ঠাট্ বজায় রাখারও চেষ্টা করে না এবং সেজন্যে তাদের অভিভাবকরাও কিছুমাত্র উদ্বিগ্ন নন, এটা তার সমস্ত অভিজ্ঞতায় অতীত। তাই সে প্রথমদিকে একদিন বোকার মতো একটা প্রশ্নও করে ফেলেছিল মেজছেলে কেষ্টকে, ‘ভাই তোমরা পড় কখন?’

    কেষ্ট বা কৃষ্ণপদকে প্রশ্ন করার কারণ– এ বাড়ির মধ্যে তাকেই ওর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও ভদ্র ব’লে মনে হয়েছিল। সে কথাও কয় এদের মধ্যে কম।

    কেষ্ট এ প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত বোধ করেছিল। সে একবার ঢোক গিলে, বাইরের দিকে চেয়ে উত্তর দিয়েছিল, ‘না, মানে পড়ি– এই কদিন গোলমালে সব ওলটপালট হয়ে গেছে আর কি। বসতে হবে– এবার বসতে হবে!’

    কিন্তু তার এই আত্মসম্মান বজায় রাখার ক্ষীণ চেষ্টাটুকুকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠেছিল স্বর্ণ, ‘তবেই হয়েছে। তুমি কাকে কী জিজ্ঞেস করছ অরুণদা! পড়া! মেজদাকে তুমি গাছে ওঠার কথা জিজ্ঞেস করো, ঘুড়ি ওড়াবার কথা বলো–মাছ ধরতে বলো, পোঙ্কার পোঙ্কার জবাব পাবে। এমন কি খটির বাজারে কোন্ জিনিসের কি দর, তা পজ্জন্ত ওর মুখস্থ। ঐ লেখাপড়ার কথাটি বাপু জিগ্যেস করো নি! ওটা এ বাড়ির ধাতে সয় না!’

    কেষ্ট আরও অপ্রতিভ হয়ে ওঠে। লজ্জাটা রাগে রূপান্তরিত হয়ে চোটটা গিয়ে পড়ে স্বর্ণর ওপর, ‘দ্যাখ কুঁচি, মেলাই ফ্যাচ ফ্যাচ করিস নি বলে দিলুম। মারব টেনে গালে একটি চড়, ছোট মুখে বড় কথা বলা বার করে দেব একেবারে!’

    ঠোঁটের একটা অবজ্ঞাসূচক ভঙ্গি ক’রে বিচিত্র সুর টেনে সমান তেজের সঙ্গে জবাব দেয় ‘কুঁচি, ইঃ! টেনে চড় মারবে? তবেই তো আমি ভয়ে ইঁদুরের গত্ত খুঁজলুম আর কি। মেয়েছেলের গায়ে হাত দিয়ে দ্যাখ না একবার, মেজকাকী তোমার কী খোয়ারটা করে! …. অত তো তেজ দেখাচ্ছ, বেশ তো কই বার করো না, দেখাও না অরুণদাকে তোমার কখানা আর কী কী বই আছে! নিয়ে এসো না, দেখি!’

    ‘যাঃ যাঃ! ওকে দেখাতে যাবো কী জন্যে? ও কি আমাদের গার্জেন নাকি! যাকে দরকার বুঝব তাকে দেখাব!’ কেষ্ট একটা অবজ্ঞার ভঙ্গি ক’রে চলে যায় সেখান থেকে।

    আবারও খিল খিল করে হেসে ওঠে স্বর্ণ। বলে, ‘মুখসাপোর্টটুকু তবু রাখা চাই ছেলের! ওধারে মুখ শুকিয়ে আসি।… সে যাকগে মরুক গে, মোদ্দা ওদের মুখ চাইলে তোমার পড়া হবে না। তুমি তোমার নিজের মতো নিজে পড়বে।’

    দশ-বারো বছরের মেয়ে, সে তুলনাতেও বরং কিছু বেঁটেই দেখায় স্বর্ণকে। অর্থাৎ সেদিক দিয়ে মায়ের ধাতে গেছে। যদিও গায়ের রংটা তার দেখবার মতো, মুখচোখও কাটাকাটা, অভয়পদর মেয়ে বলে চিনতে ভুল হয় না। কিন্তু স্বভাবটি পেয়েছে মায়ের কাছ থেকে, এই বয়সেই গিন্নি-গিন্নি ভাব, হাতপা ঘুরিয়ে মুখচোখ নেড়ে কথা বলে বয়স্কা ঠাকুমা-দিদিমার মতো।

    ঐটুকু মেয়ের অমনি পাকা কথা আর গিন্নিদের মতো চোখমুখ ঘুরিয়ে কথা বলা দেখলেই হাসি পায় অরুণের। আজও হাসি পেল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই মুখখানি ম্লান হয়ে উঠল তার। মাথা হেঁট করে ডান পাশের বুড়ো আঙ্গুলটা দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা ঘষতে ঘষতে বলল, আমি –মানে আমার তো বই পত্তর কিছুই নেই, ভেবেছিলুম এদের বই চেয়ে নিয়ে পড়ব। তেমন বই-ই তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।’

    ‘আছে। তেমন খুঁজলে এক-আধখানা বেরোবে বৈকি! মেজকাকার চেষ্টার তো কসুর নেই। বই সবাইকে কিনে দিয়েছিল– একেবারেই বাজে খরচ দেখে এদান্তে আর বড়গুলোকে দেয় না। তবে সে সব বই যে কোথায় আছে, কেমন আছে, তা বলতে পারব নি। সে বই খুঁজে বার করে তবে তুমি পড়বে– এই ভরসায় যদি থাকো তাহলে এহকালে আর তোমায় পড়তে হচ্ছে না, এ আমি পষ্টাপুষ্টি বলে দিচ্ছি! দাদার ভরসা বাঁয়ে ছুরি!… আর সে তুমি পড়বেই বা কি, ওরা তো সেই কোন্ কেলাস থেকে সব পড়া ছেড়েছে তার ঠিক নেই, সে বইতে তোমার কী হবে? তুমি তো আগে আগে ইস্কুলে পড়েছ শুনেছি।… না না, তোমায় অন্য ব্যবস্থা করতে হবে! দাঁড়াও মেজকাকীকে বলিগে—’

    ছুটেই চলে যাচ্ছিল, অরুণ খপ্ করে ওর একটা হাত ধরে ফেললে। ধরে ফেলেছিল হঠাৎ একটা ঝোঁকের মাথায়, তারপরই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে তাড়াতাড়ি হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললে, ‘তা তোমার বই কই? তুমিও তো কিছু পড় না দেখি!

    স্বর্ণ ওর ধরন দেখে আবারও হেসে উঠল। তারপরই কিন্তু মুখটা গম্ভীর করে পাকাগিন্নীর ভঙ্গিতে বললে, ‘হ্যাঁ, মেয়েছেলের আবার পড়া! যাবো তো পরের বাড়ি, আজ না হোক দুদিন বাদে সেই যেতেই তো হবে। আর সেখানে গিয়ে তো সেই হাঁড়িবেড়ি ধরা আর গোবর নিকোনো! গোচ্ছার পড়ে হবেই বা কি! না, ওসব বাপু আমার ভাল লাগে না। ততক্ষণ মা কি মেজকাকীকে সংসারের যোগাড় দিলে ঢের কাজ হবে।’

    এবার অরুণও না হেসে পারল না। বললে, ‘কিন্তু পরের বাড়ি গিয়ে গয়লা ধোপার হিসেবটাও তো রাখতে হবে। তাছাড়া বাপের বাড়িতে চিঠিও লিখতে ইচ্ছে করবে তো দুচারখানা। আজকাল তো সব মেয়েই পড়ে কিছু কিছু। একটু লেখাপড়া জানা থাকলে নিজের ছেলেমেয়েদেরও পড়াতে পারা যায়।

    ‘কে জানে বাপু! আমাদের তো হিসেব-টিসেব সব মেজকাকাই রাখে। অবিশ্যি মেজকাকী ছোটকাকীও কিছু কিছু জানে। ছোটকাকী তো বইটই হাতে পেলে বেশ পড়ে দেখিছি।… তা বেশ তো, তুমি পড়াশুনা আরম্ভ করো– আমি বরং তোমার কাছে পড়া বলে নেব, য়্যা? সেই বেশ হবে।’

    অরুণ হেসে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল কিন্তু সেটা দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করল না স্বর্ণ- এক দৌড়ে চলে গেল রান্নাঘরে মেজকাকীর কাছে।

    ‘হ্যাঁ গা মেজকাকী, তোমাদের তো মুখুর সংসার, কারুর কিছু হবে না। তা ঐ ছেলেটাকেও কি বসিয়ে মুখুর ডিম করবে?’

    প্রমীলাও এই মেয়েটিকে ভালবাসে। এক মেয়ে বলে নয়–ওর মতো পরিষ্কার মন আর কারুর নেই বলে। ওর আপন-পর জ্ঞান কম, সবাইকেই আপন বলে মনে করে। তাছাড়া আজকাল মহাশ্বেতা কিছু কথা শোনাতে এলেই স্বর্ণ মেজকাকীর হয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়। সেটাও সম্ভবতঃ ওর প্রতি প্রমীলার প্রীতির একটা প্রধান কারণ।

    কে লা, কার কথা বলছিস?’ প্রমীলা একটু অবাক হয়েই ওর মুখের দিকে চায়। বাড়ির মধ্যে এই একটিই মেয়ে বলে স্বর্ণলতার আদর বেশি, তার সর্বত্রই অবারিত দ্বার। আজকাল বড়দের কাছে কোন কিছু চাইতে হ’লে ছেলেরা ওকেই মুরুব্বি ধরে। কুঁচি সুপারিশ করলেই আর্জি মঞ্জুর হয়– এ তারা বার-বারই দেখেছে।

    আজও সে সস্নেহে স্বর্ণর একটা হাত ধরে বলল, ‘বলি ব্যাওরাটা কী? গিন্নিমা আজ আবার সকালে কার ওপর সদয় হয়ে উঠলেন?’

    ‘এই তোমার বোনপোর কথাই বলছি!’ হাতমুখ-চোখ ঘুরিয়ে বলে স্বর্ণ, ‘বলি ও তো এবাড়ির ছাঁচে নয়, ওর লেখা-পড়ায় চাড় আছে, ওর বিদ্যে হবেও। তা ওর বই-পত্তরের কিছু ব্যবস্থা করে দাও!’

    ‘বল্ না গিয়ে তোর মেজকাকাকে। মেজকাকা তো তোর কথায় ওঠে বসে!’ প্রমীলা ওর গাল দুটো টিপে দিয়ে বলে।

    ‘হ্যাঁ, তা আর নয়! মেজকাকা যে কার কথায় ওঠে বসে তা এবাড়ির সবাই জানে। আমাকে ঘাঁটিও নি বাপু! এখন ওর কি করবে তাই বলো।’

    ‘হবে গো গিন্নী হবে। এই তো আসছে মাস থেকে নতুন কেলাস শুরু হবে সব ইস্কুলে, তোমার মেজকাকা বলেছে ওকে একেবারে ইস্কুলে ভর্তি করে দিয়ে বইপত্তর কিনে দেবে!’

    ‘বেশ বাপু বেশ। একটা সুরাহা হ’লেই ভাল।’

    রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে বোধকরি অরুণকেই খবরটা দিতে আসছিল স্বর্ণ, কিন্তু রোয়াক পেরিয়ে দালানে পড়তেই পড়ে গেল একেবারে মায়ের সামনে। মহাশ্বেতা এখান থেকে সবই শুনতে পেয়েছে, সে মুখের একটা বিশ্রী ভঙ্গি করে চাপাগলায় বলে উঠল, ‘পরের মেয়ের জন্যে তো মাথাব্যথার অন্ত নেই একেবারে! নিজের ভাইদের লেখা-পড়ার কী হচ্ছে তা তো কোন দিন ভাবতে দেখি না। কৈ, এত তো পীরিত, তাদের জন্যে একটা মাস্টার রাখতে তো বলতে পারিস মহারাজা-মহারাণীকে!’

    ‘হ্যাঁ–তা আর নয়। যা রত্ন সব এক-একখানি গর্ভে ধারণ করেছে! ওদের জন্যে মাস্টার রাখবে! কত পড়ার চাড় ওদের দেখছ না! বলি মেজকাকা কি চেষ্টার কমতিটা করছে শুনি। ওদের ইস্কুলে দেয় নে? না বই কিনে দেয় নে? সেসব কোথায় গেল? ছেলেদের ইস্কুলে পাঠাতে পেরেছিলে? মাস মাস একরাশ করে টাকা গুণগার দিয়ে এদান্তে না বন্ধ করেছে।… কত গুণের ছেলেরা তোমার তা দ্যাখো না –শুধু শুধু পরের ওপর রীষ করে জ্বলে পুড়ে মরো!’

    ‘মুয়ে আগুন। মুয়ে আগুন লাগুক তোমার! কথার ছিরি দ্যাখো না। ভায়েরা সব যেন শত্তুর ওর। পরঘরী এখন থেকে ঘর ভাঙছেন! মর্ মর্! একধার থেকে তোরা মরিস তো আমি শান্তি পাই, আমার হাড় জুড়োয়। ঘর-জ্বালানে পর-ভোলানে কোথাকার? কবে মরবি তুই, কবে খালধারে যাবি তাই বলে যা আমায়!’

    ‘দাঁড়াও আগে তোমাকে পাঠাই, তবে তো যাব!’

    মুচ্‌কে হেসে আবার ছুটে চলে যায় স্বর্ণ। মার গালাগাল তার গা-সওয়া হয়ে গেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউপকণ্ঠে – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
    Next Article শেষ অশুভ সংকেত – কাজী মাহবুব হোসেন

    Related Articles

    গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    উপকণ্ঠে – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    August 7, 2025
    গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    কলকাতার কাছেই – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    August 7, 2025
    গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    পাঞ্চজন্য – গজেন্দ্রকুমার মিত্র

    August 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.